أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯২৮)
[ بَلْ مَتَّعْنَا
*সম্পদের প্রাচুর্য পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার পরিণতি :]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
৪৪-৪৭ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:৪৪
بَلۡ مَتَّعۡنَا ہٰۤؤُلَآءِ وَ اٰبَآءَہُمۡ حَتّٰی طَالَ عَلَیۡہِمُ الۡعُمُرُ ؕ اَفَلَا یَرَوۡنَ اَنَّا نَاۡتِی الۡاَرۡضَ نَنۡقُصُہَا مِنۡ اَطۡرَافِہَا ؕ اَفَہُمُ الۡغٰلِبُوۡنَ ﴿۴۴﴾
বরং আমরাই তাদেরকে ও তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম; তার উপর তাদের আয়ুষ্কাল ও হয়েছিল দীর্ঘ। তারা কি দেখছে না যে, আমরা যমীনকে চারদিক থেকে সংকুচিত করে আনছি । তবুও কি তার বিজয়ী হবে।
২১:৪৫
قُلۡ اِنَّمَاۤ اُنۡذِرُکُمۡ بِالۡوَحۡیِ ۫ۖ وَ لَا یَسۡمَعُ الصُّمُّ الدُّعَآءَ اِذَا مَا یُنۡذَرُوۡنَ ﴿۴۵﴾
বলুন, আমি তো শুধু ওহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু যারা বধির তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয় তখন তারা সে আহবান শুনে না।
২১:৪৬
وَ لَئِنۡ مَّسَّتۡہُمۡ نَفۡحَۃٌ مِّنۡ عَذَابِ رَبِّکَ لَیَقُوۡلُنَّ یٰوَیۡلَنَاۤ اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۴۶﴾
আর আপনার রব এর শাস্তির কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা অবশ্যই বলে উঠবে, ‘হায় দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম যালেম।
২১:৪৭
وَ نَضَعُ الۡمَوَازِیۡنَ الۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٌ شَیۡئًا ؕ وَ اِنۡ کَانَ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ اَتَیۡنَا بِہَا ؕ وَ کَفٰی بِنَا حٰسِبِیۡنَ ﴿۴۷﴾
কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লাসমূহ; সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনের হয়, তবুও তা আমি উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।
৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*সম্পদের প্রাচুর্য পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার পরিণতি : এই জোরদার যুক্তি তর্কের মাধ্যমে মােশরেকদের আকীদা-বিশ্বাসের অগ্রহণযােগ্যতা প্রমাণ করার পর পরবর্তী আয়াতগুলােতে মহান আল্লাহর সীমাহীন শক্তি ও ক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মর্মস্পর্শী ভাষায় তাদের বিভ্রান্তির কারণ উদঘাটন করা হয়েছে। অতপর বিজয়ী শক্তির পদদলিত হয়ে পৃথিবীর ব্যাপকতা ও বিশালতা কমে ক্রমেই যে তা সংকীর্ণ হয়ে আসছে, সেই সত্যের দিকে মনােযােগ আকর্ষণ করা হয়েছে, ‘বরং আমি তাদেরকে ও তাদের পূর্ব পুরুষদেরকে অনেক ভােগের উপকরণ দিয়েছি…'(আয়াত ৪৪) অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিশালায়তন ভূ-সম্পত্তি ও ভােগের উপকরণ তাদের স্বভাব প্রকৃতিকে বিকৃত করে দিয়েছে। বিলাসিতা, প্রাচুর্য ও ভােগবাদ সাধারণত মনমগযকে বিকারগ্রস্ত করে দেয় এবং চেতনা অনুভুতিকে বিকল করে দেয়। পরিণামে আল্লাহ সংক্রান্ত অনুভূতি দুর্বল হয়ে যায় এবং নিদর্শনাবলীর প্রতি কৌতুহলতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার স্পৃহা কমে যায়। এটাই হচ্ছে সম্পদ ও প্রাচুর্যের পরীক্ষা। মানুষ যখন নিজেকে জাগ্রত ও সচেতন করতে চায় না এবং নিজেকে সতর্কভাবে পাহারা দেয় না, তখন সে এ পরীক্ষায় বিফল হয়। আর যখন সে নিজেকে আল্লাহর সাথে যুক্ত রাখে, তখন সে প্রাচুর্যের মধ্যেও আল্লাহকে ভুলে না। এ জন্যেই এ আয়াতে মানুষের চেতনা ও অনুভূতিকে নাড়া দেয়া হয়েছে এবং পৃথিবীর কোনাে না কোনাে প্রান্তে প্রতিনিয়ত সংঘটিত ঘটনাবলীকে তার সমনে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীর কোনাে না কোনাে প্রান্তে প্রতিনিয়ত কোনাে না কোনো বৃহৎ দেশকে গুটিয়ে ফেলে ক্ষুদ্রতর ও সংকীর্ণতর দেশে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। অথচ ইতিপূর্বে তা ছিলাে এক একটা সম্রাজ্য। একদিন যে দেশ ছিলাে বিজয়ী, তা আজ সহসা হয়ে যাচ্ছে বিজিত। একদিন যে দেশ ছিলাে বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত, সহসা তা হচ্ছে যাচ্ছে জনবিরল। একদিন যে দেশ ছিলাে উন্নত ও সমৃদ্ধ, সহসা তা হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র ও দেউলে । এ আয়াত এমন একটা দৃশ্য অংকিত করেছে যেন আল্লাহ তায়ালা নিজের অসীম শক্তিশালী হাত দিয়ে পৃথিবীর ভূ-ভাগকে গুটিয়ে আনছেন এবং প্রান্তসীমা সংকুচিত করে আনছেন। ফলে তা যেন এক গুরুগম্ভীর ও মায়াবী ভুবনে রূপ নিচ্ছে। ‘তবে কি তারা বিজয়ী?’ অর্থাৎ তারা কি ধরা ছোঁয়ার বাইরে যে, অন্যদের ওপর যেসব দুর্যোগ ও আযাব নামে, তা তাদের ওপর নামতে পারবে না? এই হৃদয় কাঁপানাে দৃশ্যের নিরীখে রসূল(স.)-কে আদেশ দেয়া হচ্ছে যেন তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, ‘বলাে, আমি তােমাদেরকে ওহীর মাধ্যমে সতর্ক করছি মাত্র। যারা বধির তারা তাে কোনাে সতর্কবাণী শুনতে পায় না।’ অর্থাৎ তারা যেন সেই বধিরদের মতা না হয়, যারা শুনতে পায় না। তাহলে তাদের পায়ের তলা থেকে ভূমন্ডলকে গুটিয়ে সংকীর্ণ করে ফেলা হবে এবং সেখানে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তােলা হবে। এই সাথে তাদের মনে যাতে উল্লেখিত আয়াতের বক্তব্য আরাে গভীরভাবে রেখাপাত করে সে জন্যে তাদের সামনে তাদের আল্লাহর আযাবে পতিত হওয়ার সম্ভাব্য দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে, আর যদি তাদের ওপর তােমার প্রভুর আযাবের একটা ঝাপটাও আসে, তবে তারা অবশ্যই আর্তনাদ করে ওঠবে যে, হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সত্যি দুরাচারী ছিলাম। ‘নাফহা’ (ঝাপটা) সাধারণ আনন্দদায়ক ঘটনায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে তা আযাবের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। আয়াতের মর্ম এই যে, তােমার প্রভুর আযাবের সামান্যতম ধাক্কা খেলেও তারা দিশেহারা হয়ে পড়বে এবং নিজেদের অপরাধের স্বীকারােক্তি দিতে আরম্ভ করবে। কিন্তু তখন আর স্বীকারােক্তিতে কোনাে লাভ হবে না। ইতিপূর্বে সূরার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘যেসব অপরাধী জাতির ওপর আল্লাহর আযাব এসেছে, তারাও বিলাপ করছে যে, হায় আমাদের পােড়া কপাল, আমরা যুলুম করে ফেলেছি। কিন্তু তারা বিলাপরত থাকা সত্তেও আমি তাদেরকে কর্তিত ফসল ও নিভানো আগুনের মতাে স্পন্দনহীন বানিয়ে দিয়েছি।'(আয়াত ১৪-১৫) এ থেকে জানা গেলাে, সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পর এই স্বীকারোক্তি ও বিলাপ সম্পূর্ণ নিল । এর চেয়ে বরং সময় থাকতে এবং আযাব এসে যাওয়ার আগে ওহীর হুঁশিয়ারী শুনে সতর্ক হওয়া শ্রেয়।
এ পর্বের সর্বশেষ যে আয়াতে কেয়ামতের দিনের দৃশ্যাবলী দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে তা হলাে, ‘কেয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের খাতিরে দাড়িপাল্লা স্থাপন করবো। কাজেই কারাে ওপর একবিন্দুও যুলুম হবে না। যদি সরিষার বীজ পরিমাণও কোনাে কাজ থেকে থাকে, তবে আমি তা উপস্থাপন করবাে। হিসেব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট।’ ‘সরিষার বীজ’ দ্বারা খালি চোখে দর্শনযােগ্য এমন ক্ষুদ্রতম জিনিসকে বােঝানাে হয়েছে, যার ভার দাড়িপাল্লায় সবচেয়ে কম। কেয়ামতের দিন এটাও পরিত্যক্ত হবে না ও বৃথা যাবে না। আল্লাহর সূক্ষ্ম দাড়িপাল্লায় তার যথাযথ ও নিখুঁত পরিমাপ হবে। অতএব প্রত্যেকের ভেবে দেখা উচিত পরকালের জন্যে কি সম্বল যােগাড় করেছে। আল্লাহর হুশিয়ারীর প্রতি প্রত্যেকের গুরুত্ব দেয়া উচিত। যারা পার্থিব অলসতা, উদাসীনতা ও ব্যংগ বিদ্রুপের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে, তাদের দুনিয়া বা আখেরাতে আযাবের শিকার হওয়ার আগেই সংযত হওয়া উচিত। যদি দুনিয়ার আযাব থেকে কোনাে পাপী বেঁচেও যায়, তবে আখেরাতের আযাব থেকে বাঁচতে পারবে না। সেখানে দাড়িপাল্লা থাকার কারণে কারাে যুলুমের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং কাৱাে কণা পরিমাণও ভালাে মন্দ কাজ নিষ্ফল হবে না। এভাবে আখেরাতের সূক্ষ্ম ও নিখুত দাড়িপাল্লার সাথে দুনিয়ার সূক্ষ্ম ও নির্ভুল প্রাকৃতিক নিয়মের সমন্বয় ঘটানাে হয়েছে। সমন্বয় ঘটানাে হয়েছে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বভাব প্রকৃতির সাথে। আর এই পরিপূর্ণ সমন্বয় ও ঐক্যতান সহকারে সকল মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ভাগ্য মহান আল্লাহর একক ইচ্ছা ও মর্জির হাতে সমর্পিত হয়েছে। এভাবে তাওহীদের আলোচনা সম্পন্ন করা হয়েছে, যা এ সূরার কেন্দ্রীয় আলােচ্য বিষয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# আমার এ মেহেরবানী ও প্রতিপালন থেকে তারা এ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে যে, এসব কিছু তাদের ব্যক্তিগত অধিকার এবং এগুলো ছিনিয়ে নেবার কেউ নেই। নিজেদের সমৃদ্ধি ও নেতৃত্ব-কর্তৃত্বকে তারা অক্ষয় ও চিরস্থায়ী মনে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং এর মধ্যে এমনই মত্ত হয়ে গেছে যে, তাদের মনে কখনো একথা একবারও জাগেনি যে, ওপরে আল্লাহ বলে একজন আছেন, যিনি তাদের ভাঙা-গড়ার ক্ষমতা রাখেন।
# এ বিষয়টি ইতিপূর্বে সূরা রা’আদের ৪১ আয়তে উল্লেখিত হয়েছে এবং সেখানে আমি এর ব্যাখ্যা করেছি (দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা রা’আদ ৬০ টীকা )। এখানে এ প্রেক্ষাপটে এটি অন্য একটি অর্থ প্রকাশ করছে। সেটি হচ্ছে এই যে, পৃথিবীর চারদিকে একটি বিজয়ী ও পরাক্রান্ত শক্তির কর্মতৎপরতার নিদর্শনাবলী দেখতে পাওয়া যায়। অকস্মাৎ কখনো দুর্ভিক্ষ, কখনো বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারী, আবার কখনো প্রচণ্ড শীত বা প্রচণ্ড গরম এবং কখনো অন্য কিছু দেখা দেয়। এভাবে আকস্মিক বিপদ-আপদ মানুষের সমস্ত কীর্তি ও কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়ে যায়। হাজার হাজার, লাখো লাখো লোক মারা যায়। জনবসতি ধ্বংস হয়ে যায়। সবুজ-শ্যামল শস্য ক্ষেতগুলো বিধ্বস্ত হয়। উৎপদান কমে যায়। ব্যবসায় বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। মোট কথা মানুষের জীবন ধারণের উপায় উপকরণের কখনো এদিক থেকে আবার কখনো ওদিক থেকে ঘাটতি দেখা দেয়। নিজের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেও মানুষ এ ক্ষতির পথ রোধ করতে পারে না। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আস সাজদাহ ৩৩ টীকা )
# যখন তাদের সমস্ত জীবনোপকরণ আমার হাতে রয়েছে, আমি যে জিনিসটি চাই কমিয়ে দিতে পারি, যেটি চাই বন্ধ করে দিতে পারি, সেক্ষেত্রে তারা কি আমার মোকাবিলায় বিজয়ী হবার এবং আমার পাকড়াও থেকে নিষ্কৃতি লাভ করার ক্ষমতা রাখে? এ নিদর্শনাবলী কি তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চিন্ততা দান করে যে, তাদের শক্তি চিরস্থায়ী, তাদের আয়েশ-আরাম কোনদিন নিশেষিত হবে না এবং তাদেরকে পাকড়াও করার কেউ নেই?
# সে আযাব যা দ্রুত নিয়ে আসার জন্য তারা জোরেশোরে দাবী জানাচ্ছে এবং বিদ্রূপের স্বরে বলছে, নিয়ে এসো সেই আযাব, কেন তা আমাদের ওপর নেমে আসছে না?
# ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আ’রাফ ৮ ও ৯ টীকা । এই দাঁড়িপাল্লা কোন ধরনের হবে তা অনুধাবন করা আমাদের জন্য কঠিন। মোটকথা সেটি এমন কোন জিনিস হবে যা বস্তু ওজন করার পরিবর্তে মানুষের নৈতিক গুণাবলী, কর্মকাণ্ড ও তার পাপ-পূণ্য ওজন করবে এবং যথাযথ ওজন করার পর নৈতিক দিক দিয়ে কোন্ ব্যক্তি কোন্ ধরনের মর্যাদার অধিকারী তা জানিয়ে দেবে। পূণ্যবান হলে কি পরিমাণ পূণ্যবান এবং পাপী হলে কি পরিমাণ পাপী। মহান আল্লাহ এর জন্য আমাদের ভাষার অন্যান্য শব্দ বাদ দিয়ে “দাঁড়িপাল্লা” শব্দ এজন্য নির্বাচিত করেছেন যে, এর ধরণটি হবে দাঁড়িপাল্লার সাথে সামঞ্জস্যশীল অথবা এ নির্বাচনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বুঝিয়ে দেয়া যে, একটি দাঁড়িপাল্লার পাল্লা যেমন দু’টি জিনিসের ওজনের পার্থক্য সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি আমার ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লাও প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের কাজকর্ম যাচাই করে কোন প্রকার কমবেশী না করে তার মধ্যে পূণ্যের না পাপের কোন দিকটি প্রবল তা একদম হুবহু বলে দেয়।
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
# (بَلْ مَتَّعْنَا هٰٓؤُلَا۬ءِ وَاٰبَا۬ءَهُمْ)
অর্থাৎ যদি তাদের বা তাদের পূর্বপুরুষদের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসে অতিবাহিত হয় তাহলে কি তারা মনে করে যে, তারা সঠিক পথে আছে এবং ভবিষ্যতেও তাদের কোন কষ্ট হবে না? বরং তাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনের সুখ-বিলাস তো আমার ঢিল দেয়া নীতির অংশবিশেষ। এতে কারো ধোঁকায় পড়া উচিত নয়।
(نَأْتِي الْأَرْضَ نَنْقُصُهَا)
কুফরীর এলাকা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে আর ইসলামের এলাকা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। কুফরীর পায়ের তলা হতে মাটি সরে যাচ্ছে এবং ইসলামের বিজয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মুসলিমরা দেশের পর দেশ জয় করে যাচ্ছে।
(أَفَهُمُ الْغٰلِبُوْنَ)
কুফরীর অনগ্রসরতা ও ইসলামের অগ্রসরতা দেখেও কি কাফিররা মনে করে যে, তারাই বিজয়ী? অর্থাৎ কক্ষনো নয়, তারা কোনদিন জয়ী হতে পারবে না, হয়তো মুসলিমদের ভুলের জন্য ক্ষণিক সময়ের জন্য জয়ী হতে পারে।
(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ….)
‘এবং ক্বিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড’ আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে ন্যায় বিচারের মানদণ্ড দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবেন। প্রত্যেকের আমল ওজন করে দেখবেন, যার সৎ আমলের পাল্লা ভারি হবে সে চিরসুখে থাকবে। পক্ষান্তরে যার সৎ আমলের পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা বিন্দু পরিমাণও জুলুম করবেন না।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا)
“তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি জুলুম করেন না।” (সূরা ক্বাহ্ফ ১৮:৪৯)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(يٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِنْ تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِيْ صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمٰوٰتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللّٰهُ ط إِنَّ اللّٰهَ لَطِيْفٌ خَبِيْرٌ)
“হে আমার ছেলে! কোন কিছু যদি সরিষার দানার পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে পাথরের ভিতরে অথবা আসমানে কিংবা ভূ-গর্ভে, তথাপি তাও আল্লাহ উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” (সূরা লুক্বমান ৩১:১৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَاَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭕﺫ فَھُوَ فِیْ عِیْشَةٍ رَّاضِیَةٍﭖﺚ وَاَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِیْنُھ۫ﭗﺫ فَاُمُّھ۫ ھَاوِیَةٌﭘ)
“অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবন যাপন করবে আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া।” (সূরা ক্বারিয়াহ ১০১:৬-৯)
কিয়ামতের দিন আমল, আমলকারী ও আমলনামা তিনটিই ওজন করা হবে। (আক্বীদাহ ওয়াসিতিয়্যাহ)
মানুষের আমল ও কর্মসমূহ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অনুভূত নয়, তার বাহ্যিক কোন রূপ বা অস্তিত্ব নেই। তাহলে তার ওজন কিভাবে সম্ভব? আধুনিক যুগে এ প্রশ্নের কোন গুরুত্ব নেই। যেহেতু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার এ প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে নিরাকার বস্তুও ওজন করা যাচ্ছে। যখন মানুষ দ্বারা এটা সম্ভব তখন আল্লাহ তা‘আলা র জন্য আকারহীন জিনিসকে ওজন করা কেমন করে কঠিন হতে পারে?
সুতরাং প্রত্যেক আমল, আমলকারী ও যে দফতরে আমল লিখে রাখা হয় তা ওজন করা হবে। যাদের ভাল আমলের পাল্লা ভারী হবে তাদের সুখের সীমা থাকবে না, অন্যথায় দুখের সীমা থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
#মানুষকে রিযিক দিয়ে থাকেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
# কিয়ামতের দিন ন্যায়ের মানদণ্ড স্থাপন করা হবে এবং ন্যায় বিচার করা হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪৪-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতারণা এবং নিজেদের গুমরাহীর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাদেরকে পানাহার ও ভোগের সামগ্রী প্রদান করেছি এবং দীর্ঘ বয়স দিয়েছি বলেই তারা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের কৃতকর্ম আমার কাছে পছন্দনীয়। এরপর মহান আল্লাহ তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেনঃ তারা কি দেখে না যে, আমি কাফিরদের জনপদগুলিকে তাদের কুফরীর কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি? এই বাক্যের আরো অনেক অর্থ করা হয়েছে। যা আমরা সূরায়ে রা’দে বর্ণনা করে দিয়েছি। কিন্তু সর্বাধিক সঠিক অর্থ এটাই। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের আশে পাশের জনপদগুলিকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি এবং আমি নিদর্শনসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকি যাতে লোকেরা তাদের পাপকার্য হতে ফিরে আসে।” (৪৬:২৭) হযরত হাসান বসরী (রঃ) এর একটি ভাবার্থ করেছেনঃ “আমি ইসলামকে কুফরীর উপর জয়যুক্ত করে আসছি। সুতরাং তোমরা কি এর দ্বারাও উপদেশ গ্রহণ করবে না যে, কিভাবে আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদেরকে তার শত্রুদের উপর বিজয় দান করেন এবং কিভাবে পূর্ববর্তী মিথ্যা প্রতিপাদনকারী উম্মতদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন ও মুমিনদেরকে মুক্তি দান করেছেন? “এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তবুও কি তারা বিজয়ী হবে? অর্থাৎ এখনো কি তারা নিজেদেরকে বিজয়ী মনে করছেঃ না, না। বরং তারা পরাজিত, লাঞ্ছিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস প্রাপ্ত।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও আমি শুধু ওয়াহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি। যে সব শাস্তি থেকে আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন করছি এটা আমার নিজের পক্ষ হতে নয়, আল্লাহ তাআলার কথাই আমি তোমার কাছে প্রচার করছি মাত্র। কিন্তু আল্লাহ যাদের অন্তর্চক্ষু অন্ধ করে দিয়েছেন এবং কর্ণে ও অন্তরে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্যে মহান আল্লাহর একথাগুলি কোন উপকারে আসবে না। বধিরকে সতর্ক করা বৃথা। কেননা, সে তো কিছু শুনতেই পায় না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের শাস্তির কিছুমাত্র তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেবে এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলে ফেলবেঃ হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম যালিম।
আল্লাহ পাক বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করবো ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। এই দাঁড়িপাল্লা একটিই হবে। কিন্তু যে আমলগুলি তাতে ওজন করা হবে ওগুলি অনেক হবে বলে একে বহু বচন আনা হয়েছে। ঐদিন কারো প্রতি সামান্য পরিমাণও অত্যাচার করা হবে না। কেননা, হিসাব গ্রহণকারী হবেন স্বয়ং আল্লাহ, তিনি একাই সমস্ত মাখলুকের হিসাব নেয়ার জন্যে যথেষ্ট। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক কারো উপর যুলুম করেন না।” (১৮:৪৯) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ অনুপরিমাণও যুলুম করবেন না, পুণ্যকে তিনি বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং নিজের নিকট হতে প্রতিদান প্রদান করবেন।” (৪:৪০) আল্লাহ তাআলা হযরত লুকমানের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমার প্রিয় বৎস! কোন কিছু যদি শরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নীচে, আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্ম দর্শী, খবর রাখেন সব বিষয়ের।” (৩১:১৬)।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ দু’টি কথা এমন আছে যে, যুবানে (পড়তে) হাকা, মীযানে ভারী এবং রহমানের (আল্লাহর) নিকট খুব পছন্দনীয়। তা হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি’ পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমি মহান আল্লাহর”।
হযরত আমর ইবনু আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মধ্যে একটি লোককে হাশরের মাঠে একত্রিত জনগণের সামনে নিজের কাছে আহ্বান। করবেন। অতঃপর তার সামনে তিনি তার পাপের নিরানব্বইটি খাতা খুলে দিবেন। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত দীর্ঘ হবে এক একটি খাতা। তারপর মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ “এই খাতাগুলির মধ্যে তোমার কৃত যে পাপগুলি রয়েছে তার কোনটাই তুমি অস্বীকার কর কি? আমার পক্ষ থেকে যে রক্ষক ফেরেশতারা তোমার আমলগুলি লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিল তারা তোমার প্রতি কোন যুলুম করে নাই তো?” উত্তরে সে বলবে? “হে আমার প্রতিপালক! না আমার অস্বীকার করার কোন উপায় আছে, না আমি একথা বলতে পারি যে, আমার প্রতি যুলুম করা হয়েছে।” তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ “আচ্ছা, তোমার কোন ওজর বা কোন পুণ্য আছে কি?” সে হতবুদ্ধি হয়ে জবাব দেবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! না, আমার ওজর করারও কিছু নেই এবং আমার কোন পুণ্যও নেই।” তখন মহান আল্লাহ বলবেনঃ “হাঁ হাঁ, তোমার একটি পূণ্য আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” অতঃপর ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। তাতে লিখিত থাকবেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।” অতঃপর আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেনঃ “তোমরা ওটা পেশ কর।” লোকটি বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! এই কাগজের টুকরাটি ঐ সব বড় বড় খাতার মুকাবিলায় কি করতে পারে?” আল্লাহ তাআলা উত্তর দিবেনঃ “নিশ্চয়ই তুমি অত্যাচারিত হবে না।” অতঃপর ঐ সমুদয় খাতা নিক্তির এক পাল্লায় রাখা হবে এবং কাগজের ঐ টুকরাটি আর এক পাল্লায় রেখে দেয়া হবে। তখন কাগজ খণ্ডের পাল্লাটি নীচের দিকে চেপে যাবে এবং ঐ খাতাগুলোর পাল্লাটি উপরের দিকে উঠে যাবে। পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর নাম অপেক্ষা কোন কিছুই বেশী ভারী হবে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে ইবনু মাজাহ এবং জামে তিরমিযীতেও এটা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন তুলাদণ্ড রাখা হবে। অতঃপর একটি লোককে আনয়ন করে এক পাল্লায় রেখে দেয়া হবে এবং তার উপর গণনাকৃত পাপরাশিও তাতে রেখে দেয়া হবে। তখন ঐ পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। ফলে তাকে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সে পিছন দিকে ফিরবে এমন সময় আল্লাহর পক্ষ হতে একজন আহ্বানকারী ডাক দিয়ে বলবেঃ “তোমরা তড়ািতাড়ি করো না, তার একটি জিনিস বাকী রয়ে গেছে।” অতঃপর কাগজের একটি টুকরা বের করা হবে যাতে লিখা থাকবেঃ ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ওটাকে ঐ লোকটির সাথে পাল্লায় রাখা হবে। তখন এই পাল্লা নীচের দিকে ঝুঁকে পড়বে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সামনে বসে পড়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কতকগুলি গোলাম (ক্রীতদাস) রয়েছে যারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমার খিয়ানত করে এবং আমার অবাধ্যাচরণও করে। আমি তাকে মারধোরও করি এবং গাল-মন্দও দিই। এখন বলুন তো, তাদের ব্যাপারে আমার অবস্থা কি হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তাদের খিয়ানত, . অবাধ্যাচরণ, মিথ্যা প্রতিপাদন ইত্যাদি একত্রিত করা হবে। আর তোমার তাদেরকে মারধোর করা, গাল-মন্দ দেয়া ইত্যাদিও জমা করা হবে। অতঃপর তোমার শাস্তি যদি তাদের অপরাধের সমান হয়ে যায় তবে তো তুমি পবিত্রাণ পেয়ে যাবে। তোমার শাস্তিও হবে না এবং তুমি পুরস্কারও পাবে না। তবে যদি তোমার শাস্তি তাদের অপরাধের তুলনায় কম হয় তবে তুমি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করবে। কিন্তু যদি তোমার শাস্তি তাদের দোষের তুলনায় বেশী হয়ে যায় তবে তোমার ঐ বেশী শাস্তির প্রতিশোধ নেয়া হবে।” একথা শুনে ঐ সাহাবী উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)! বলেনঃ “তার কি হলো? সে কি কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করে নাই? “কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করবো ন্যায় বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয় তুবও তা আমি উপস্থিত করবো; হিসাব গ্রহণকারী রূপে আমিই যথেষ্ট।” সাহাবী তখন বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এদের থেকে পৃথক হওয়া ছাড়া আমি অন্য কিছুই আর ভাল মনে করছি না। আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমি এদেরকে আযাদ করে দিলাম।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#928)
[ بَلْ مَتَّعْنَا
Nay, We gave the luxuries of this life .]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 44-47
www.motaher21.net
21:44
بَلۡ مَتَّعۡنَا ہٰۤؤُلَآءِ وَ اٰبَآءَہُمۡ حَتّٰی طَالَ عَلَیۡہِمُ الۡعُمُرُ ؕ اَفَلَا یَرَوۡنَ اَنَّا نَاۡتِی الۡاَرۡضَ نَنۡقُصُہَا مِنۡ اَطۡرَافِہَا ؕ اَفَہُمُ الۡغٰلِبُوۡنَ ﴿۴۴﴾
But, [on the contrary], We have provided good things for these [disbelievers] and their fathers until life was prolonged for them. Then do they not see that We set upon the land, reducing it from its borders? So it is they who will overcome?
How the Idolators are deceived by their long and luxurious Lives in this World, and the Explanation of the Truth
Allah tells:
بَلْ مَتَّعْنَا هَوُلَاء وَابَاءهُمْ حَتَّى طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ
Nay, We gave the luxuries of this life to these men and their fathers until the period grew long for them.
Allah explains that they have been deceived and misled by the luxuries that they enjoy in this world and the long life that they have been given, so they believe that they are following something good.
Then Allah warns them:
أَفَلَ يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الاَْرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا
See they not that We gradually reduce the land (in their control) from its outlying borders!
This is like the Ayah:
وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرَى وَصَرَّفْنَا الاٌّيَـتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
And indeed We have destroyed towns round about you, and We have shown the Ayat in various ways that they might return. (46:27)
Al-Hasan Al-Basri said:
“This means the victory of Islam over disbelief.”
The meaning is:Do they not learn a lesson from the fact that Allah supported those (believers) against their enemies, He destroyed the disbelieving nations and the evil-doing townships, and He saved His believing servants.
So Allah says:
أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ
Is it then they who will overcome!
meaning, on the contrary, they are the ones who will be overcome, who will be defeated, humiliated and brought low.
21:45
قُلۡ اِنَّمَاۤ اُنۡذِرُکُمۡ بِالۡوَحۡیِ ۫ۖ وَ لَا یَسۡمَعُ الصُّمُّ الدُّعَآءَ اِذَا مَا یُنۡذَرُوۡنَ ﴿۴۵﴾
Say, “I only warn you by revelation.” But the deaf do not hear the call when they are warned.
قُلْ إِنَّمَا أُنذِرُكُم بِالْوَحْيِ
Say:”I warn you only by the revelation.”
meaning, `I only convey to you the warning of Allah’s punishment and vengeance, and this is no more than that which Allah reveals to me.’ But this is of no benefit to the one whom Allah has made blind and has put a seal over his hearing and his heart.
He says:
وَلَا يَسْمَعُ الصُّمُّ الدُّعَاء إِذَا مَا يُنذَرُونَ
But the deaf will not hear the call, (even) when they are warned.
Allah says:
وَلَيِن مَّسَّتْهُمْ نَفْحَةٌ مِّنْ عَذَابِ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ
21:46
وَ لَئِنۡ مَّسَّتۡہُمۡ نَفۡحَۃٌ مِّنۡ عَذَابِ رَبِّکَ لَیَقُوۡلُنَّ یٰوَیۡلَنَاۤ اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۴۶﴾
And if [as much as] a whiff of the punishment of your Lord should touch them, they would surely say, “O woe to us! Indeed, we have been wrongdoers.”
And if a breath of the torment of your Lord touches them, they will surely, cry:”Woe unto us! Indeed we have been wrongdoers!”
If these disbelievers were affected by the slightest touch of Allah’s punishment, they would confess their sins and admit that they had wronged themselves in this world
21:47
وَ نَضَعُ الۡمَوَازِیۡنَ الۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٌ شَیۡئًا ؕ وَ اِنۡ کَانَ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ اَتَیۡنَا بِہَا ؕ وَ کَفٰی بِنَا حٰسِبِیۡنَ ﴿۴۷﴾
And We place the scales of justice for the Day of Resurrection, so no soul will be treated unjustly at all. And if there is [even] the weight of a mustard seed, We will bring it forth. And sufficient are We as accountant.
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْيًا
And We shall set up Balances of justice on the Day of Resurrection, then none will be dealt with unjustly in anything.
meaning, “We shall set up the Balances of justice on the Day of Resurrection.”
The majority of scholars state that it is one Balance, and the plural form is used here to reflect the large number of deeds which will be weighed therein.
فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْيًا
وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
then none will be dealt with unjustly in anything. And if there be the weight of a mustard seed, We will bring it. And sufficient are We to take account.
This is like the Ayat:
وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
and your Lord treats no one with injustice. (18:49)
إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِن تَكُ حَسَنَةً يُضَـعِفْهَا وَيُوْتِ مِن لَّدُنْهُ أَجْراً عَظِيماً
Surely, Allah wrongs not even of the weight of speck of dust, but if there is any good, He doubles it, and gives from Him a great reward. (4:40)
يبُنَىَّ إِنَّهَأ إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِى صَخْرَةٍ أَوْ فِى السَّمَـوَتِ أَوْ فِى الاٌّرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ
“O my son! If it be equal to the weight of a grain of mustard seed, and though it be in a rock, or in the heavens or in the earth, Allah will bring it forth. Verily, Allah is Subtle, Well-Aware.” (31:16)
In the Two Sahihs it was recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said:
كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيم
Two words which are light on the tongue, heavy in the Balance and beloved to Ar-Rahman:
“Subhan Allahi wa bi hamdihi, Subhan Allahil `Azim (Glory and praise be to Allah, Glory be to Allah the Almighty).”
Imam Ahmad also recorded that A’ishah said that;
one of the Companions of the Messenger of Allah sat down before him and said, “O Messenger of Allah, I have two slaves who lie to me, betray me and disobey me, and I hit them and insult them. How do I stand with regard to them?”
The Messenger of Allah said:
يُحْسَبُ مَا خَانُوكَ وَعَصَوْكَ وَكَذَّبُوكَ وَعِقَابُكَ إِيَّاهُمْ فَإِنْ كَانَ عِقَابُكَ إِيَّاهُمْ بِقَدْرِ ذُنُوبِهِمْ كَانَ كَفَافًا لَا لَكَ وَلَا عَلَيْكَ وَإِنْ كَانَ عِقَابُكَ إِيَّاهُمْ دُونَ ذُنُوبِهِمْ كَانَ فَضْلً لَكَ وَإِنْ كَانَ عِقَابُكَ إِيَّاهُمْ فَوْقَ ذُنُوبِهِمْ اقْتُصَّ لَهُمْ مِنْكَ الْفَضْلُ الَّذِي بَقِيَ قَبْلَك
The extent to which they betrayed you, disobeyed you and lied to you will be measured against the punishment you meted out to them. If your punishment was commensurate with their misconduct, then you will be equal and you will not have anything counted for you or against you.
If your punishment of them was less than that what they deserved for their misconduct, then this will count in your favor. If your punishment of them was more than what they deserved for their misconduct, then Allah will take what is due to them from you.
Then the man started to weep before the Messenger of Allah, and the Messenger of Allah asked,
مَالَهُ لَاا يَقْرَأُ كِتَابَ الله
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْيًا وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
What is the matter with him Has he not read the words of Allah,
And We shall set up Balances of justice on the Day of Resurrection, then none will be dealt with unjustly in anything. And if there be the weight of a mustard seed, We will bring it. And sufficient are We to take account.
The man said, “O Messenger of Allah, I think there is nothing better than keeping away from these people — meaning his slaves — I call upon you to bear witness that they are all free.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran