(বই#৯৩৮) [ لَاا يَحْزُنُهُمُ মহাভীতি তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না।] সূরা:- আল্ আম্বিয়া। সুরা:২১ ৯৮-১০৩ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৩৮)
[ لَاا يَحْزُنُهُمُ
মহাভীতি তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না।]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
৯৮-১০৩ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:৯৮

اِنَّکُمۡ وَ مَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ حَصَبُ جَہَنَّمَ ؕ اَنۡتُمۡ لَہَا وٰرِدُوۡنَ ﴿۹۸﴾
নিশ্চয় তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।
২১:৯৯
لَوۡ کَانَ ہٰۤؤُلَآءِ اٰلِہَۃً مَّا وَرَدُوۡہَا ؕ وَ کُلٌّ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۹۹﴾
যদি তারা ইলাহ হত তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না; আর তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে,
২১:১০০
لَہُمۡ فِیۡہَا زَفِیۡرٌ وَّ ہُمۡ فِیۡہَا لَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾
সেথায় থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেথায় তারা কিছুই শুনতে পাবে না।
২১:১০১
اِنَّ الَّذِیۡنَ سَبَقَتۡ لَہُمۡ مِّنَّا الۡحُسۡنٰۤی ۙ اُولٰٓئِکَ عَنۡہَا مُبۡعَدُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾ۙ
নিশ্চয় যাদের জন্য আমার নিকট থেকে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা (জাহান্নাম) হতে দূরে রাখা হবে।
২১:১০২
لَا یَسۡمَعُوۡنَ حَسِیۡسَہَا ۚ وَ ہُمۡ فِیۡ مَا اشۡتَہَتۡ اَنۡفُسُہُمۡ خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾ۚ
তারা ওর (জাহান্নামের) ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না এবং সেথায় তাদের মন যা চায় তারা চিরকাল তা ভোগ করবে।
২১:১০৩
لَا یَحۡزُنُہُمُ الۡفَزَعُ الۡاَکۡبَرُ وَ تَتَلَقّٰہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ ؕ ہٰذَا یَوۡمُکُمُ الَّذِیۡ کُنۡتُمۡ تُوۡعَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾
মহাভীতি তাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে না এবং ফিরিশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে (এবং বলবে), ‘এ তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।’

৯৮-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৯৮-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলোতে কাফির-মুশরিক ও তাদের বাতিল মা‘বূদেগুলো জাহান্নামের ইন্ধন হবে, পক্ষান্তরে মু’মিনরা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা কাফির-মুশরিকদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন: তোমরা এবং তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ছাড়া যাদের ইবাদত কর তারা সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে, সেখান থেকে কোনদিন বের হতে পারবে না। মুশরিকদের সাথে তাদের মা‘বূদদেরকে জাহান্নামে দেয়ার কারণ হল যাতে তারা বুঝতে পারে তারা যাদের ইবাদত করত তারা প্রকৃত মা‘বূদ নয়, তারা যদি প্রকৃত মা‘বূদ হত তাহলে তাদের সাথে আজ জাহান্নামে থাকত না, বরং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করত। বলা হয় এ আয়াতটি মক্কার মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। তারা লাত, মানাত, উযযা ইত্যাদি পাথরের মূর্তির ইবাদত করত। এরা ছিল জড় ও জ্ঞানহীন। আয়াতটি তাদের ব্যাপারে নাযিল হলেও পৃথিবীর সকল যুগের সকল মুশরিকদের জন্য তা প্রযোজ্য।

আর সেথায় কঠিন আযাবের কারণে তারা আর্তনাদ করবে এবং এ কঠিন আর্তনাদের কারণে তারা সেখানে কিছুই শুনতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلٰي وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّ)

“ক্বিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, বোবা ও বধির করে।” (সূরা ইসরা ১৭:৯৭)

কিন্তু ঐসকল মা‘বূদ জাহান্নামে যাবে না যারা তাদের ইবাদত করার নির্দেশ দেয়নি এবং মানুষ তাদের ইবাদত করুক এতে তারা সন্তুষ্ট নয়। বরং তারা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন ঈসা (عليه السلام), উযাইর ও ফেরেশতাসহ অন্যান্য ওলী-আওলিয়া। এরা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর শামিল।

পক্ষান্তরে যাদের সৌভাগ্যের ব্যাপারে পূর্বেই ফায়সালা হয়ে গিয়েছিল যে, তারা দুনিয়াতে ভাল কাজ করবে সে সকল ব্যক্তিরা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে, সেখানে প্রবেশ করবে না। এমনকি তারা জাহান্নামের শব্দও শুনতে পাবে না, বরং জান্নাতে তারা যা কিছু মন চাইবে তাই পাবে।

কিয়ামতের দিন যখন মানুষ মহাভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যাবে, জাহান্নাম দেখে ভয় পাবে তখন মু’মিনদের কোন দুশ্চিন্তা হবে না। বরং সকল প্রকার চিন্তামুক্ত থাকবে, রহমতের ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবে: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “নিশ্চয়ই যারা বলে: আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে: তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে; সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা চাইবে। এটা হল ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন।” (সূরা হামীম সাজদাহ ৪১:৩০-৩২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(الَّذِيْنَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَا۬ئِكَةُ طَيِّبِيْنَ يَقُوْلُوْنَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)

“ফেরেশ্তাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর‎।’’ (সূরা নাহল ১৬:৩২)

সুতরাং আমরা যদি জান্নাতের আশা করি তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সৎ আমল করতে হবে আর অসৎ আমল পরিহার করতে হবে, অন্যথায় জাহান্নামে জ্বলতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুশরিকরা ও তাদের বাতিল মা‘বূদরা সবাই জাহান্নামে যাবে এবং তাতে পুড়বে।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ থাকলে কিয়ামতের দিন মুশরিকরা রক্ষা পেত।
৩. কিয়ামতের দিন যখন কাফির-মুশরিকরা ভয় পাবে তখন ঈমানদারদের কোন ভয় থাকবে না।
৪. কারা দুনিয়াতে ভাল আমল করবে সে সম্পর্কে পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা জানেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
কেয়ামতের দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহদ্রোহী লােকদের কি অবস্থা দাঁড়াবে তাও বর্ণনা করা হয়েছে। এ প্রসংগে বলা হয়েছে, ‘কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে’ অর্থাৎ বিস্ময়ে ও আতংকে তারা বিস্ফোরিত ও অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকবে। এর পর তারা হঠাৎ করেই বলে উঠবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম, বরং আমরা গােনাহগারই ছিলাম’ যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে এবং আচমকা কোনাে বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটে যায় তখন মানুষের অবস্থা এরূপই দাঁড়ায়। এ রূপ অবস্থায় মানুষ আতংকে ও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়ে, তাদের দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে, অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকে, হা-হুতাশ করতে থাকে, বিলাপ করতে থাকে। অপরাধ স্বীকার করে অনুতাপ করতে থাকে। কিন্তু তখন এগুলাে কোনােই কাজে আসে না। আতঙ্ক ও বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে যখন মানুষ এই বিলাপ ও অনুতাপ করতে থাকবে, তখন আল্লাহর অমােঘ ও চুড়ান্ত ফয়সালা এই ভাষায় পেশ করা হবে, ‘তােমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তােমরা যাদের পূজা করাে, সেগুলাে জাহান্নামের ইন্ধন, তােমরা তাতে প্রবেশ করবেই।'(আয়াত ৯৮)। দৃশ্যটি এমনভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে যেন সে কাফেরের দল বিচারের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছে। বিচার শেষে তাদেরকে এবং তাদের দেব-দেবীদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে তাদেরকে নির্দয় ও নিষ্ঠুর ভাবে নিক্ষেপ করা হচ্ছে ঠিক যেমনটিভাবে ফল খেয়ে ফলের দানা ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। আর ঠিক এই মুহুর্তে তাদের দেব-দেবীদের উপাস্য হওয়ার মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রমাণ করতে গিয়ে বলা হবে, ‘এগুলাে যদি উপাস্যই হতাে, তাহলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতাে না।'(আয়াত ৯৯) এই কাফেররা যখন পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছে তখন তাদের সামনে এই বক্তব্য একটা আত্মিক প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হচ্ছে যেন সেটা এই মুহূর্তেই পরকালে ঘটে চলছে। এরপর বর্ণনাভংগির মাধ্যমে ভাবটা এমন ভাবে ফুটিয়ে তােলা হচ্ছে যার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সে কাফের গােষ্ঠী সত্যি সত্যিই জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। ফলে সেখানে তাদের অবস্থানের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে, তাদের পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এই বর্ণনার তাদের করুণ অবস্থার কথা জানা যাচ্ছে, ভয়ে ও আতঙ্কে তাদের চিন্তাশক্তি লােপ পাওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, ‘প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে। তারা সেখানে শুধু শাস্তির চিৎকারই শুনতে পাবে এবং কিছুই শুনতে পারবে না।'(আয়াত নং ৯৯ ও ১০০) অপরদিকে মােমেনরা এসব থেকে মুক্ত থাকবে। কারণ, তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর রহমত ও ফযলে সঠিক কাজ করেছে। ফলে তাদের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে কামিয়াবী ও নাজাত । এ প্রসংগে বলা হচ্ছে, ‘যাদের জন্যে প্রথম থেকেই…'(আয়াত ১০১-১০২) আগুন জ্বলে ওঠার পর তার লেলিহান শিখা যখন সব কিছুকে গ্রাস করে নেয় এবং জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলে তখন এক প্রকার অনুচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়। এই শব্দ ভীতিকর যা শুনে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়, হৃদয়ে কম্পন ধরে যায়। তাই জান্নাতীদেরকে এই ভীতিকর শব্দের আতঙ্ক থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। জাহান্নামের লেলিহান শিখার ছােবল থেকে তাে তারা মুক্ত থাকবেই। এমনকি মােশরেকরা যে মহা আতঙ্কে পতিত হবে, তা থেকেও এ সকল মােমেন বান্দা নিরাপদ থাকবে। তাছাড়া সদা সুখ, শান্তি ও আরামে তারা বসবাস করবে। বিভিন্ন নেয়ামত ভােগ করবে। ফেরেশতারা তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানাবে, তাদেরকে সংগ দান করবে, যেন তাদের মন-মস্তিষ্ক সব ধরনের ভয় ভীতি ও আতংক থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এ প্রসংগে বলা হচ্ছে, ‘মহা ত্রাস তাদেরকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে না…'(আয়াত ১০৩ )

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াতের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যাবারা আপত্তি করে বলেন যে, এভাবে তো কোবলমাত্র আমাদেরই মাবুদরা জাহান্নামে যাবে না বরং ঈসা, উযাইর ও ফেরেশতারাও জাহান্নামে যাবে, কারণ দুনিয়ায় তাদেরও ইবাদাত করা হয়। এর জবাবে নবী ﷺ বলেনঃ

كل من احب ان يعبد من دون الله فهو مع من عبده

“হ্যাঁ, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে নিজে একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার বন্দেগী করা হোক সে তাদেরই সাথে হবে যারা তার বন্দেগী করেছে।”

এ থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় মানুষকে আল্লাহর বন্দেগী করার শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং লোকেরা তাদেরকেই উপাস্যে পরিণত করে অথবা যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর যে, দুনিয়ায় তাদের বন্দেগী ও পূজা করা হচ্ছে এবং এ কর্মে তাদের ইচ্ছা ও আকাংখার কোন দখল নেই, তাদের জাহান্নামে যাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তারা এ শিরকের জন্য দায়ী নয়। তবে যারা নিজেরাই উপাস্য ও পূজনীয় হবার চেষ্টা করে এবং মানুষের এ শিরকে যাদের সত্যি সত্যিই দখল আছে তারা সবাই নিজেদের পূজারী ও উপাসকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনুরূপভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করায় তারাও জাহান্নামে যাবে। কারণ, এ অবস্থায় তারাই মুশরিকদের আসল মাবুদ হিসেবে গণ্য হবে, এ দুর্বৃত্তরা বাহ্যত যাদেরকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল তারা নয়। শয়তানও এর আওতায় এসে যায়। কারণ, তার উদ্যোগে যেসব সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করা হয় আসল উপাস্য তারা হয় না। বরং আসল উপাস্য হয় শয়তান নিজেই। কারণ, তার হুকুমের আনুগত্য করে এ কাজটি করা হয়। এছাড়াও পাথর, কাঠের মূর্তি ও অন্যান্য পূজা সামগ্রীও মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে, যাতে তারা তাদের ওপর জাহান্নামের আগুন আরো বেশী করে জ্বালিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাদের ব্যাপারে তারা আশা পোষণ করছিল যে, তারা তাদের সুপারিশকারী হবে, তারা উল্টো তাদের আযাব কঠোরতর করার কারণে পরিণত হয়েছে দেখে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।
# মূলে زَفِيرٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ভয়ংকর গরম, পরিশ্রম ও ক্লান্তিকর অবস্থায় মানুষ যখন টানা টানা শ্বাস নিয়ে তাকে সাপের ফোঁসফোঁসানীর মতো করে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে বের করে তখন তাকে “যাফীর” বলা হয়।

# এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা দুনিয়ায় নেকী ও সৌভাগ্যের পথ অবলম্বন করেছে। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ পূর্বাহ্ণে ওয়াদা করেছেন যে, তারা এর আযাব থেকে সংরক্ষিত থাকবে এবং তাদেরকে নাজাত দেয়া হবে।
# হাশরের দিন এবং আল্লাহর সামনে হাজির হবার সময়, যা সাধারণ লোকদের জন্য হবে চরম ভীতি ও পেরেশানীর সময়, নেক লোকেরা সে সময় একটি মানসিক নিশ্চিন্ততার মধ্যে অবস্থান করবে। কারণ, সবকিছু ঘটতে থাকবে তাদের আশা-আকাংখা ও কামনা-বাসনা অনুযায়ী। ঈমান ও সৎকাজের যে পুঁজি নিয়ে তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিল তা সে সময় পর্যন্ত আল্লাহর মেহেরবানীতে তাদের মনোবল দৃঢ় করবে এবং ভয় ও দুঃখের পরিবর্তে তাদের মনে এ আশার সঞ্চার করবে যে, শীঘ্রই তারা নিজেদের প্রচেষ্টা ও তৎপরতার সুফল লাভ করবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৯৮-১০৩ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মক্কাবাসী কুরায়েশ মুশরিকদেরকে সম্বোধন করে বলছেনঃ তোমরা ও তোমাদের উপাস্য মূর্তিগুলি জাহান্নামের আগুনের ইন্ধন হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওর ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।” হাবশী ভাষায় (আরবী) শব্দকে (আরবী) বলা হয়, যার অর্থ হলো ইন্ধন বা খড়ি। এমনকি একটি কিরআতে বা পঠনে (আরবী) এর স্থলে (আরবী) রয়েছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো ‘জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে। তারা যদি মা’রূদ হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করতো না। তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে। সেথায় থাকবে তাদের আর্তনাদ। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ সেথায় তাদের জন্যে থাকবে আর্তনাদ ও চীৎকার।” সেথায় তারা (এই আর্তনাদ ও চীৎকার ছাড়া) কিছুই শুনতে পাবে না। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন শুধু মুশরিকরাই জাহান্নামে রয়ে যাবে তখন তাদের আগুনের বাসে বন্দী করে দেয়া হবে। তাতে থাকবে আগুনের পেরেক। ওর মধ্যে অবস্থান করে প্রত্যেকেই মনে করবে যে, জাহান্নামে সে ছাড়া আর কেউ নেই।” অতঃপর তিনি- (আরবী) এই আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীরও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)

(আরবী) দ্বারা করুণা ও সৌভাগ্য বুঝানো হয়েছে। জাহান্নামীদের এবং তাদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখন সৎ লোক ও তাদের পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ যাদের জন্যে আমার নিকট হতে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে ঐ জাহান্নাম হতে দূরে রাখা হবে। তাদের সৎ আমলের কারণে সৌভাগ্য তাদের অভ্যর্থনার জন্যে পূর্ব হতেই প্রস্তুত ছিল। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৎকর্মশীলদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে এবং অতিরিক্ত প্রতিদানও বটে।” (১০:২৬) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “উত্তম কাজের জন্যে উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কি হতে পারে? (৫৫:৬০) তাদের দুনিয়ার আমল ছিল ভাল, তাই তারা আখেরাতে পুরস্কার ও উত্তম বিনিময় লাভ করলো। আর শাস্তি থেকে রক্ষা পেলো ও আল্লাহর করুণা প্রাপ্ত হলো।

তাদেরকে জাহান্নাম হতে এতো দূরে রাখা হবে যে,তারা ওর ক্ষীণতর শব্দও শুনবে না এবং জাহান্নামীদেরকে জ্বলতে পুড়তেও দেখতে পাবে না। পুলসিরাতের উপর দুখীদেরকে বিষাক্ত সাপে দংশন করবে এবং ওটা হিসৃহিস্ শব্দ করবে। জান্নাতীরা এই শব্দও শুনতে পাবে না। তাদেরকে কষ্ট ও বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখা হবে শুধু এটাই নয়, বরং সেখানে তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল ভোগ করবে। বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) (আরবী) (যাদের জন্য আমার নিকট হতে পূর্ব থেকে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা হতে (জাহান্নাম হতে) দূরে রাখা হবে) এই আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “আমি, ওমর (রাঃ), উছমান (রাঃ) এই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত।” অথবা তিনি হযরত সা’দের (রাঃ) নাম নিয়েছিলেন। এমন সময় নামাযের জন্যে তাকবীর দেয়া হয় এবং তিনি। (আরবী) এ উক্তিটি পাঠরত অবস্থায় স্বীয় চাদরখানা টানতে টানতে দাড়িয়ে যান। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উছমান (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই লোকগুলিই আল্লাহর বন্ধু। বিদ্যুত অপেক্ষাও দ্রুত গতিতে তারা পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে কাফিররা হাঁটুর ভরে পড়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা ঐ বুযর্গ ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ ভক্ত ছিলেন এবং মুশরিকদের প্রতি ছিলেন অসন্তুষ্ট। কিন্তু তাদের পরবর্তী লোকেরা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের পূজা শুরু করে দিয়েছিল। যেমন হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ), ফেরেশতা মণ্ডলী, সূর্য, চন্দ্র, হযরত মারইয়াম (আঃ) ইত্যাদি।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা আবদুল্লাহ ইবনু যাবআ’রী নবীর (সঃ) নিকট আগমন করে এবং বলতে শুরু করেঃ “আপনি ধারণা করছেন যে, আল্লাহ তাআলা (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেছেন। যদি এটা সত্য হয় তবে কি সূর্য, চন্দ্র, ফেরেশতা মণ্ডলী, হযরত উযায়ের (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতি সবাই আমাদের মূর্তিগুলির সাথে জাহান্নামে চলে যাবে?” তার এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তাআলা (আরবী) (৪৩:৫৭-৫৮) এই আয়াত দুটি অবতীর্ণ করেন। এরপর তিনি (আরবী) এই আয়াত নাযিল করেন। (এটা আবুবকর ইবনু মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ননা করেছেন)

একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওয়ালীদ ইবনু মুগীরার সাথে মসজিদে বসে ছিলেন। এমন সময় নায়র ইবনু হারিছ তথায় আগমন করে। ঐ সময় মসজিদে আরো বহু কুরায়েশও বিদ্যমান ছিল। নাহ্র ইবনু হারিছ। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে কথা বলছিল। কিন্তু সে নিরুত্তর হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলি পাঠ করেন। যখন তিনি ঐ মজলিস হতে উঠে চলে যান তখন আবদুল্লাহ ইবনু যাবআ’রী আগমন করে। লোকেরা তাকে বলেঃ আজ নাফর ইবনু হারিস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে কিন্ত শেষে একেবারে নিরুত্তর হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমাদের সম্পর্কে একথা বলে উঠে গেছেন যে, আমরা এবং আমাদের এই উপাস্য দেবতারা সবাই জাহান্নামের আগুনের ইন্ধন হয়ে যাবো।” তাদের এই কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবন যাবআ’রী বলেঃ “আমি থাকলে তাঁকে উত্তর দিতাম যে, আমরা ফেরেশতাদের পূজা করে থাকি, ইয়াহুদীরা উযায়েরের (আঃ) পূজা করে এবং খৃস্টানরা ঈসার (আঃ) পূজা করে। তাহলে এরা সবাই জাহান্নামে যাবেন। তার এই উত্তর সবারই খুব পছন্দ হয়। রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে এটা বর্ণনা করা হলে তিনি বলেনঃ “যে নিজের ইবাদত করিয়েছে সে ইবাদতকারীদের সাথে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু এই বুযুর্গ ব্যক্তিরা নিজেদের ইবাদত করান নাই। আসলে তো এই লোকগুলি তাঁদের নয়, বরং শয়তানদের পূজা করছে। শয়তানই তাদেরকে তাদের ইবাদতের পন্থা হিসেবে বাতলিয়ে দিয়েছে। তাঁর জবাবের সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা জবাব হিসাবে পরবর্তী আয়াত (আরবী) অবতীর্ণ করেন। সুতরাং অজ্ঞ লোকেরা যে সব সৎ লোকের উপাসনা করতো তাঁরা পৃথক হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের মধ্যে যে বলেঃ তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই মাবুদ, তার প্রতিফল জাহান্নাম এবং এই ভাবেই আমি অত্যাচারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” হযরত ঈসার (আঃ) ব্যাপারে তাদের তর্ক-বিতর্কের কারণে আল্লাহ তাআলা নিম্নের আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন মারইয়াম তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমাদের সম্প্রদায় শোর গোল শুরু করে দেয়। তারা বলেঃ আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ, না ঈসা (আঃ)? এরা তো বাক বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে একথা বলে। বস্তুত এরা তো এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। সে তো ছিলে আমারই এক বান্দা, যার উপর আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে করেছিলাম বানী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত। আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হতো। ঈসা (আঃ) তো কিয়ামতরে নিদর্শন; সুতরাং তোমরা কিয়ামতে সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।” (৪৩:৫৭-৬১)

ইবনু যাবআ’রী বড়ই ভুল করেছিল। কেননা, এই আয়াতে সম্বোধন করা হয়েছে মক্কাবাসী কাফিরদেরকে এবং উক্তি করা হয়েছে তাদের প্রতিমা ও পাথরগুলি সম্পর্কে যেগুলির তারা আল্লাহকে ছেড়ে ইবাদত করতো। এ উক্তি হযরত ঈসা (আঃ) প্রভৃতি পবিত্র ও একত্ববাদী লোকদের সম্পর্কে নয়। তাঁরা তো গায়রুল্লাহর ইবাদত হতে মানুষকে বিরত রাখতেন!

ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, এখানে যে (আরবী) শব্দটি রয়েছে তা আরবে নির্জীব ও বিবেকহীনদের জন্যে এসে থাকে। এই ইবনু যাবআ’রী এর পরে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। সে প্রসিদ্ধ কবিদের একজন ছিল। প্রথমতঃ সে মুসলমান হওয়ার পর সে বড়ই ক্ষমাপ্রার্থী হয়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ মহা-ভীতি তাদেরকে বিষাদষ্টি করবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর ভয়, শিঙ্গার ফুৎকারের আতংক, জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশের সময়ের ভীতি বিহবলতা এবং জান্নাতী ও জাহান্নামীদের মাঝে মৃত্যুকে যবাহ্ করে দেয়ার আতংক ইত্যাদি কিছুই তাদের থাকবে না। তারা চিন্তা ও দুঃখ হতে বহু দূরে থাকবে। তারা হবে পুরোপুরি ভাবে উৎফুল্ল ও আনন্দিত। অসন্তুষ্টির চিহ্নমাত্র তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হবে না। ফেরেশতা মণ্ডলী তাদেরকে অভ্যর্থনা করে বলবেঃ এই তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#938)
[ لَاا يَحْزُنُهُمُ
Will not grieve them,]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 98-103
www.motaher21.net

21:98

اِنَّکُمۡ وَ مَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ حَصَبُ جَہَنَّمَ ؕ اَنۡتُمۡ لَہَا وٰرِدُوۡنَ ﴿۹۸﴾

Indeed, you [disbelievers] and what you worship other than Allah are the firewood of Hell. You will be coming to [enter] it.

 

The Idolators and their gods are Fuel for Hell

Allah says to the people of Makkah, the idolators of the Quraysh and those who followed their religion of idol worship:

إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ

Certainly you and that which you are worshipping now besides Allah, are (but) Hasab for Hell!

Ibn Abbas said:

“Kindling.”

This is like the Ayah:

وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ

whose fuel is men and stones. (66:6)

According to another report, Ibn Abbas said:
حَصَبُ جَهَنَّمَ
(Hasab for Hell),

means firewood in (the dialect of the people of) Zanjiyyah.

Mujahid, Ikrimah and Qatadah said:

“Its fuel.”

Ad-Dahhak said:

“The fuel of Hell means that which is thrown into it.”

This was also the view of others.

أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ

(Surely) you will enter it.

means, you will go into it.

21:99

لَوۡ کَانَ ہٰۤؤُلَآءِ اٰلِہَۃً مَّا وَرَدُوۡہَا ؕ وَ کُلٌّ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۹۹﴾

Had these [false deities] been [actual] gods, they would not have come to it, but all are eternal therein.

 

لَوْ كَانَ هَوُلَاء الِهَةً مَّا وَرَدُوهَا

Had these been gods, they would not have entered there,

means, if these idols and false gods which you worshipped instead of Allah, had really been gods, they would not have entered the Hellfire.

وَكُلٌّ فِيهَا خَالِدُونَ

and all of them will abide therein forever.

means, the worshippers and the objects of their worship will all abide therein forever.

21:100

لَہُمۡ فِیۡہَا زَفِیۡرٌ وَّ ہُمۡ فِیۡہَا لَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾

For them therein is heavy sighing, and they therein will not hear.

 

لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ

Therein they will be breathing out with deep sighs and roaring,

This is like the Ayah:

لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ

they will have (in the Fire), Zafir and Shahiq. (11:106)
Zafir refers to their exhalation, and Shahiq refers to their inhalation.

وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ

and therein they will hear not.
The State of the Blessed

Here Allah tells

21:101

اِنَّ الَّذِیۡنَ سَبَقَتۡ لَہُمۡ مِّنَّا الۡحُسۡنٰۤی ۙ اُولٰٓئِکَ عَنۡہَا مُبۡعَدُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾ۙ

Indeed, those for whom the best [reward] has preceded from Us – they are from it far removed.

 

إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَى

Verily, those for whom the good has preceded from Us,

Ikrimah said,

“Mercy.”

Others said it means being blessed.

أُوْلَيِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ

they will be removed far therefrom.

When Allah mentions the people of Hell and their punishment for their associating others in worship with Allah, He follows that with a description of the blessed who believed in Allah and His Messengers. These are the ones for whom the blessing has preceded from Allah, and they did righteous deeds in the world, as Allah says:

لِّلَّذِينَ أَحْسَنُواْ الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ

For those who have done good is the best reward and even more. (10:26)

هَلْ جَزَاءُ الاِحْسَـنِ إِلاَّ الاِحْسَـنُ

Is there any reward for good other than good. (55:60)

Just as they did good in this world, Allah will make their final destiny and their reward good; He will save them from punishment and give them a great reward.

أُوْلَيِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ

21:102

لَا یَسۡمَعُوۡنَ حَسِیۡسَہَا ۚ وَ ہُمۡ فِیۡ مَا اشۡتَہَتۡ اَنۡفُسُہُمۡ خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾ۚ

They will not hear its sound, while they are, in that which their souls desire, abiding eternally.

 

لَاا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا

they will be removed far therefrom. They shall not hear the slightest sound of it,

means, they will not feel its heat in their bodies.

وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنفُسُهُمْ خَالِدُونَ

while they abide in that which their own selves desire.

means, they will be safe from that which they fear, and they will have all that they love and desire.

It was said that this was revealed to point out an exception in the case of those who are worshipped instead of Allah, and to exclude `Uzayr and the Messiah from their number.

Hajjaj bin Muhammad Al-A`war reported from Ibn Jurayj, and Uthman bin Ata’ reported from Ibn Abbas:

إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ

Certainly you (disbelievers) and that which you are worshipping now besides Allah, are (but) Hasab for Hell! (Surely) you will enter it).

Then He made an exception and said:

إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَى

Verily, those for whom the good has preceded from Us.

It was said that this referred to the angels and `Isa, and others who are worshipped instead of Allah.

This was the view of Ikrimah, Al-Hasan and Ibn Jurayj.

Muhammad bin Ishaq bin Yasar said in his book of Sirah:

“According to what I have heard, the Messenger of Allah sat down one day with Al-Walid bin Al-Mughirah in the Masjid, and An-Nadr bin Al-Harith came and sat down with them. There were also other men of Quraysh in the Masjid.

The Messenger of Allah spoke, then An-Nadr bin Al-Harith came up to him and the Messenger of Allah spoke to him until he defeated him in argument.

Then he recited to him and to them,

إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ

Certainly you and that which you are worshipping now besides Allah, are (but) Hasab for Hell! (Surely) you will enter it. Until His Statement,
وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ
(and therein they will hear not).

Then the Messenger of Allah got up and went to sit with Abdullah bin Al-Zab`ari As-Sahmi.

Al-Walid bin Al-Mughirah said to Abdullah bin Al-Zab`ari, “By Allah, An-Nadr bin Al-Harith could not match the son of Abd Al-Muttalib in argument.

Muhammad claims that we and these gods that we worship are fuel for Hell.”

Abdullah bin Az-Zab`ari said:”By Allah, if I meet with him I will defeat him in argument. Ask Muhammad whether everyone that is worshipped instead of Allah will be in Hell with those who worshipped him, for we worship the angels, and the Jews worship `Uzayr, and the Christians worship Al-Masih, `Isa bin Maryam.”

Al-Walid and those who were sitting with him were amazed at what Abdullah bin Az-Zab`ari said, and they thought that he had come up with a good point.

He said this to the Messenger of Allah, who said:

كُلُّ مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُعْبَدَ مِنْ دُونِ اللهِ فَهُوَ مَعَ مَنْ عَبَدَهُ إِنَّهُمْ إِنَّمَا يَعْبُدُونَ الشَّيْطَانَ وَمَنْ أَمَرَهُمْ بِعِبَادَتِه

Everyone who likes to be worshipped instead of Allah will be with the ones who worshipped him, for indeed they are worshipping the Shaytan and whoever told them to worship him.

Then Allah revealed the words:

إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَى أُوْلَيِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ

لَاا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنفُسُهُمْ خَالِدُونَ

Verily, those for whom the good has preceded from Us, they will be removed far therefrom (Hell). They shall not hear the slightest sound of it (Hell), while they abide in that which their own selves desire.

It was revealed about the mention of `Isa, `Uzayr and rabbis and monks who were also worshipped, who had spent their lives in devotion towards Allah, but the misguided people who came after them took them as lords instead of Allah.

Concerning the notion of worshipping the angels as daughters of Allah, the following words were revealed:

وَقَالُواْ اتَّخَذَ الرَّحْمَـنُ وَلَداً سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ

And they say:”The Most Gracious has begotten children.” Glory to Him! They are but honored slaves. Until His saying,

وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّى إِلَـهٌ مِّن دُونِهِ فَذلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نَجْزِى الظَّـلِمِينَ

And if any of them should say:”Verily, I am a god besides Him,” such a one We should recompense with Hell. Thus We recompense the wrongdoers. (21:26-29)

Concerning `Isa bin Maryam, the fact that he is worshipped alongside Allah, and the amazement of Al-Walid and the others who were present at the argument (of Abdullah bin Az-Zab’ari), the following words were revealed:

وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلً إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ

وَقَالُواْ ءَأَالِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلاَّ جَدَلَا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ

إِنْ هُوَ إِلاَّ عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَـهُ مَثَلً لِّبَنِى إِسْرَءِيلَ

وَلَوْ نَشَأءُ لَجَعَلْنَا مِنكُمْ مَّلَـيِكَةً فِى الاٌّرْضِ يَخْلُفُونَ

وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَ تَمْتَرُنَّ بِهَا

And when the son of Maryam is quoted as an example, behold, your people cry aloud (laugh out at the example). And say:”Are our gods better or is he!” They quoted not the above example except for argument. Nay! But they are a quarrelsome people. He was not more than a slave. We granted Our favor to him, and We made him an example for the Children of Israel. And if it were Our will, We would have made angels to replace you on the earth. And he shall be a known sign for the Hour. Therefore have no doubt concerning it. (43:57-61)

meaning, the miracles and signs that happened at his hands, such as raising the dead and healing the sick, are sufficient as signs of the approach of the Hour,

فَلَ تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ هَـذَا صِرَطٌ مُّسْتَقِيمٌ

Therefore have no doubt concerning it. And follow Me (Allah)! This is the straight path. (43:63)”

What Ibn Az-Zab`ari said was a serious mistake, because the Ayah was addressed to the people of Makkah concerning their worship of idols which were inanimate and could not think. It was a rebuke for their worship of them, so Allah said:

إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ

Certainly you (disbelievers) and that which you are worshipping now besides Allah, are (but) Hasab for Hell!

How could this be applied to Al-Masih, `Uzayr and others who did righteous deeds and did not accept the worship of those who worshipped them.

21:103

لَا یَحۡزُنُہُمُ الۡفَزَعُ الۡاَکۡبَرُ وَ تَتَلَقّٰہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ ؕ ہٰذَا یَوۡمُکُمُ الَّذِیۡ کُنۡتُمۡ تُوۡعَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾

They will not be grieved by the greatest terror, and the angels will meet them, [saying], “This is your Day which you have been promised” –

 

لَاا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الاْاَكْبَرُ

The greatest terror will not grieve them,

It was said that;

this means death, as was narrated by Abdur-Razzaq from Yahya bin Rabi`ah from Ata.’

Or it was said that;

the greatest terror refers to the blast of the Trumpet, as Al-`Awfi said narrating from Ibn Abbas and Abu Sinan, Sa`id bin Sinan Ash-Shaybani.

This was the view favored by Ibn Jarir in his Tafsir.

وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَيِكَةُ هَذَا يَوْمُكُمُ الَّذِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ

and the angels will meet them, (with the greeting:) “This is your Day which you were promised”.

meaning, the angels will greet them on the Day of Resurrection when they emerge from their graves with the words:
هَذَا يَوْمُكُمُ الَّذِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
(“This is your Day which you were promised”),

meaning, hope for the best

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply