أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪৩)
[ وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّعۡبُدُ اللّٰہَ عَلٰی حَرۡفٍ ۚ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে;]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
০৮-১৮ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:০৮
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ لَا ہُدًی وَّ لَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ ۙ﴿۸﴾
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ জ্ঞান, পথনির্দেশ ও দীপ্তিমান কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে।
২২:৯
ثَانِیَ عِطۡفِہٖ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ لَہٗ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ نُذِیۡقُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿۹﴾
সে বিতণ্ডা করে অহংকারে ঘাড় বাঁকিয়ে লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য । তার জন্য লাঞ্চনা আছে দুনিয়াতে এবং কেয়ামতের দিনে আমরা তাকে আস্বাদন করার দহন যন্ত্রণা।
২২:১০
ذٰلِکَ بِمَا قَدَّمَتۡ یَدٰکَ وَ اَنَّ اللّٰہَ لَیۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِیۡدِ ﴿٪۱۰﴾
‘এটা তোমার কৃতকর্মেরই ফল, আর আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি বিন্দুমাত্রও যুলুমকারি নন।
২২:১১
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّعۡبُدُ اللّٰہَ عَلٰی حَرۡفٍ ۚ فَاِنۡ اَصَابَہٗ خَیۡرُۨ اطۡمَاَنَّ بِہٖ ۚ وَ اِنۡ اَصَابَتۡہُ فِتۡنَۃُۨ انۡقَلَبَ عَلٰی وَجۡہِہٖ ۟ۚ خَسِرَ الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃَ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡخُسۡرَانُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۱۱﴾
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; তার কোন মঙ্গল হলে তাতে সে প্রশান্তি লাভ করে এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়; সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইহকালে ও পরকালে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।
২২:১২
یَدۡعُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَضُرُّہٗ وَ مَا لَا یَنۡفَعُہٗ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الضَّلٰلُ الۡبَعِیۡدُ ﴿ۚ۱۲﴾
সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যা তার কোন অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম বিভ্রান্তি।
২২:১৩
یَدۡعُوۡا لَمَنۡ ضَرُّہٗۤ اَقۡرَبُ مِنۡ نَّفۡعِہٖ ؕ لَبِئۡسَ الۡمَوۡلٰی وَ لَبِئۡسَ الۡعَشِیۡرُ ﴿۱۳﴾
সে ডাকে এমন কিছুকে যার অপকার তার উপকার অপেক্ষা নিকটতর; কত নিকৃষ্ট এই অভিভাবক এবং কত নিকৃষ্ট এই সহচর।
২২:১৪
اِنَّ اللّٰہَ یُدۡخِلُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یُرِیۡدُ ﴿۱۴﴾
যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন।
২২:১৫
مَنۡ کَانَ یَظُنُّ اَنۡ لَّنۡ یَّنۡصُرَہُ اللّٰہُ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ فَلۡیَمۡدُدۡ بِسَبَبٍ اِلَی السَّمَآءِ ثُمَّ لۡیَقۡطَعۡ فَلۡیَنۡظُرۡ ہَلۡ یُذۡہِبَنَّ کَیۡدُہٗ مَا یَغِیۡظُ ﴿۱۵﴾
যে কউ মনে করে , আল্লাহ্ তাকে কখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করবেন না, সে আকাশের দিকে একটি রশি বিলম্বিত করার পর কেটে দিক, তারপর দেখুক তার এ কৌশল তার আক্রোশের হেতু দূর করে কি না।
২২:১৬
وَ کَذٰلِکَ اَنۡزَلۡنٰہُ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یُّرِیۡدُ ﴿۱۶﴾
আর এভাবেই আমরা সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে তা নাযিল করেছি; আর নিশ্চয় আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে হেদায়াত করেন।
২২:১৭
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ الَّذِیۡنَ ہَادُوۡا وَ الصّٰبِئِیۡنَ وَ النَّصٰرٰی وَ الۡمَجُوۡسَ وَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡۤا ٭ۖ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡصِلُ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ﴿۱۷﴾
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা স্বাবেয়ী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক এবং যারা অংশীবাদী হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের উপর সাক্ষী।
২২:১৮
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یَسۡجُدُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ وَ النُّجُوۡمُ وَ الۡجِبَالُ وَ الشَّجَرُ وَ الدَّوَآبُّ وَ کَثِیۡرٌ مِّنَ النَّاسِ ؕ وَ کَثِیۡرٌ حَقَّ عَلَیۡہِ الۡعَذَابُ ؕ وَ مَنۡ یُّہِنِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ مُّکۡرِمٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ ﴿ؕٛ۱۸﴾
তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে; সিজদা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমন্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু, এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে; আর অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউই নেই; নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।(সাজদাহ-৬)
০৮- ১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# ব্যক্তিগত জ্ঞান, যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
# এমন জ্ঞান যা কোন যুক্তির মাধ্যমে অর্জিত হয়, অথবা কোন জ্ঞানের অধিকারীর পথনির্দেশনা দানের মাধ্যমে লাভ করা যায়।
# এমন জ্ঞান, যা আল্লাহর নাযিল করা কিতাব থেকে লাভ করা যায়।
# এর তিনটি অবস্থা রয়েছেঃ এক, মূর্খতাপ্রসূত জিদ ও হঠকারিতা। দুই, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা। তিন, যে ব্যক্তি বুঝায় ও উপদেশ দান করে তার কথায় কর্ণপাত না করা।
# প্রথমে ছিল তাদের কথা যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট ছিল। আর এ আয়াতে তাদের কথা বলা হয়েছে যারা শুধু নিজেরাই পথভ্রষ্ট নয় বরং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে।
# দ্বীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে।
# এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়। কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের আনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়। আর মু’মিন যখন পূর্ণধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দ্বীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভাবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠে আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌঁড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে। ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধি-নিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি লাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।
# প্রথম আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ, মূলত ও যথার্থই তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয় আয়াতে তাদের ক্ষতিকে উপকারের চেয়ে নিকটতর বলা হয়েছে। কারণ, তাদের কাছে দোয়া চেয়ে এবং অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য তাদের সামনে হাত পাতার মাধ্যমে সে নিজের ঈমান সঙ্গে সঙ্গেই ও নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে বসে। তবে যে লাভের আশায় সে তাদেরকে ডেকেছিল তা অর্জিত হবার ব্যাপারে বলা যায়, প্রকৃত সত্যের কথা বাদ দিলেও প্রকাশ্য অবস্থার দৃষ্টিতে সে নিজেও একথা স্বীকার করবে যে, তা অর্জিত হওয়াটা নিশ্চিত নয় এবং বাস্তবে তা সংঘটিত হবার নিকটতর সম্ভাবনাও নেই। হতে পারে, আল্লাহ তাতে আরো বেশী পরীক্ষার সম্মুখীন করার জন্য কোন আস্তানায় তার মনোবাঞ্চনা পূর্ণ করেছেন। আবার এও হতে পারে যে, সে আস্তানায় সে নিজের ঈমানও বিকিয়ে দিয়ে এসেছে এবং মনোবাঞ্চনাও পূর্ণ হয়নি।
# মানুষ বা শয়তান যে-ই হোক না কেন, যে তাকে এ পথে এনেছে সে নিকৃষ্টতম কর্মসম্পাদক ও অভিভাবক এবং নিকৃষ্টতম বন্ধু ও সাথী।
# যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠাণ্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে-চিন্তে আল্লাহ, রসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো-মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরস্কার ঝরে পড়ুক সর্বাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে।
# আল্লাহ ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান ছিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করারও কেউ নেই।
# এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বহু মত বিরোধ হয়েছে। বিভিন্ন তাফসীরকার এর ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তার সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছেঃ
একঃ যে মনে করে আল্লাহ তাঁকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) সাহায্য করবেন না সে ছাদের গায়ে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করুক।
দুইঃ যে মনে করে আল্লাহ তাঁকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে) সাহায্য করবেন না সে কোন দড়ির সাহায্যে আকাশে যাবার ও সাহায্য বন্ধ করার চেষ্টা করে দেখুক।
তিনঃ যে মনে করে আল্লাহ তাঁকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) সাহায্য করবেন না সে আকাশে গিয়ে অহীর সূত্র কেটে দেবার ব্যবস্থা করুক।
চারঃ যে মনে করে আল্লাহ তাঁকে (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) সাহায্য করবেন না সে আকাশে গিয়ে তাঁর রিযিক বন্ধ করার চেষ্টা করে দেখুক।
পাঁচঃ যে মনে করে আল্লাহ তাকে (অর্থাৎ যে নিজেই এ ধরনের চিন্তা করে তাকে) সাহায্য করবেন না সে নিজের গৃহের সাথে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করুক।
ছয়ঃ যে মনে করে আল্লাহ তাকে (অর্থাৎ যে নিজেই এ ধরনের চিন্তা করে তাকে) সাহায্য করবেন না সে আকাশে পৌঁছে সাহায্য আনার চেষ্টা করে দেখুক।
এর মধ্যে প্রথম চারটি ব্যাখ্যা তো পূর্বাপর আলোচনার সাথে সম্পর্কহীন। আর শেষ দু’টি ব্যাখ্যা যদিও পূর্বাপর আলোচনার বিষয়বস্তুর নিকটতর তবুও বক্তব্যের যথার্থ লক্ষ্যে পৌঁছে না। ভাষণের ধারাবাহিকতার প্রতি দৃষ্টি রাখলে পরিষ্কার জানা যায় যে, কিনারায় দাঁড়িয়ে বন্দেগীকারী ব্যক্তিই একথা মনে করে। যতক্ষণ অবস্থা ভালো থাকে ততক্ষণ সে নিশ্চিন্ত থাকে এবং যখনই কোন আপদ-বিপদ বা বালা-মসিবদ আসে অথবা তাকে এমন কোন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় যা তার কাছে অপ্রীতিকর, তখনই সে আল্লাহর পথ থেকে সরে যায় এবং সব আস্তানার বেদীমূলে মাথা ঘসতে থাকে। এ ব্যক্তির এ অবস্থা কেন? এর কারণ সে আল্লাহর ইচ্ছা ও ফায়সালায় সন্তুষ্ট নয়। সে মনে করে ভাগ্য ভাংগা-গড়ার মূল সূত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো হাতেও আছে। তাই সে আল্লাহ থেকে নিরাশ হয়ে আশা-আকাংখার ডালি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ধর্না দেয়। তাই বলা হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ ধরনের চিন্তা করে সে নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে দেখে নিতে পারে, এমন কি আকাশ চিরে ওপরে ঢুঁ মারতে পারলে তাও করে দেখে নিতে পারে, তার কোন কৌশল আল্লাহর তাকদীরর এমন কোন ফায়সালাকে বদলাতে পারে কি না যা তার কাছে অপ্রীতিকর ঠেকে। আকাশে পৌঁছে যাওয়া এবং ছিদ্র করা মানে হচ্ছে মানুষ যত বড় বড় প্রচেষ্টার কথা কল্পনা করতে পারে তার মধ্যে বৃহত্তম প্রচেষ্টা চালানো। এ শব্দগুলোর কোন শাব্দিক অর্থ এখানে উদ্দেশ্য নয়।
# “মুসলমান”, যারা আপন আপন যুগে আল্লাহর সকল নবীকে ও তাঁর কিতাবসমূহকে মেনে নিয়েছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যারা পূর্ববর্তী নবীদের সাথে তাঁর প্রতিও ঈমান এনেছে। তাদের মধ্যে সাচ্চা ঈমানদাররাও ছিল এবং তারাও ছিল যারা ঈমানদারদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু “কিনারায়” অবস্থান করে বন্দেগী করতো এবং কুফর ও ঈমানের মাঝখানে দোদুল্যমান ছিলো।
# প্রাচীন যুগে সাবেয়ী নামে দু’টি সম্প্রদায় সর্বজন পরিচিত ছিল। এদের একটি ছিল হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের অনুসারী। তারা ইরাকের উচ্চভূমিতে (অর্থাৎ আল জাযীরা) বিপুল সংখ্যায় বসবাস করতো। হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালামের অনুগামী হিসেবে তারা মাথায় পানি ছিটিয়ে ধর্মান্তরিত হবার পদ্ধতি মেনে চলতো। তারকা পূজারী দ্বিতীয় দলের লোকেরা নিজেদের হযরত শীশ ও হযরত ইদরিস আলাইহিমাস সালামের অনুসারী বলে দাবী করতো। তারা মৌলিক পদার্থের ওপর গ্রহের এবং গ্রহের ওপর ফেরেশতাদের শাসনের প্রবক্তা ছিল। হারান ছিল তাদের কেন্দ্র। ইরাকের বিভিন্ন এলাকায় তাদের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছিল। এ দ্বিতীয় দলটি নিজেদের দর্শন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতার কারণে বেশী খ্যাতি অর্জন করে। কিন্তু এখানে প্রথম দলটির কথা বলা হয়েছে। এ সম্ভাবনাই প্রবল। কারণ সম্ভবত কুরআন নাযিলের সময় দ্বিতীয় দলটি এ নামে অভিহিত ছিল না।
# ইরানের অগ্নি উপাসকগণ, যারা আলোক ও অন্ধকারের দু’জন ইলাহর প্রবক্তা ছিল এবং নিজেদেরকে যরদ্শতের অনুসারী দাবী করতো। মায্দাকের ভ্রষ্টতা তাদের ধর্ম নৈতিক চরিত্রকে সাংঘাতিকভাবে বিকৃত করে দিয়েছিল। এমন কি তদের মধ্যে সহোদর বোনের সাথে বিয়ের প্রথাও প্রচলিত ছিল।
# আরব ও অন্যান্য দেশের মুশরিকবৃন্দ, যারা ওপরের বিভিন্ন দলীয় নামের মতো কোন নামে আখ্যায়িত ছিল না। কুরআন মজীদ তাদেরকে অন্যান্য দল থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য “মুশরিক” ও “যারা শিরক করেছে” ধরনের পারিভাষিক নামে স্মরণ করছে। অবশ্য মু’মিনদের দল ছাড়া বাকি সবার আকীদা ও কর্মধারায় শির্ক অনুপ্রবেশ করেছিল।
# মানুষদের বিভিন্ন দলের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে যে মতবিরোধ ও বিবাদ রয়েছে এ দুনিয়ায় তার কোন ফায়সালা হবে না। তার ফায়সালা হবে কিয়ামতের দিন। সেখানে তাদের মধ্যে কারা সত্যপন্থী এবং কারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তার চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেয়া হবে। যদিও এক অর্থে দুনিয়ায় আল্লাহর কিতাবগুলোও এ ফায়সালা করে, কিন্তু এখানে ফায়সালা শব্দটি “বিবাদ মিটানো” এবং দুই পক্ষের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত বিচার করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে এক দলের পক্ষে এবং অন্য দলের বিপক্ষে যথারীতি ডিক্রি জারী করা হবে।
# সিজ্দা মানে আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং পুরোপুরি মেনে নিয়ে মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত এবং তাঁর ইচ্ছার চুল পরিমাণও বিরোধিতা করতে পারে না-এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মু’মিন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাঁর সামনে নত হয় কিন্তু কাফেরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই।
# দেহ বিশিষ্ট সমস্ত জিনিসের ছায়া থেকে এ আলামতই জাহির হচ্ছে যে, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, জন্তু-জানোয়ার বা মানুষ সবাই একটি বিশ্বজনীন আইনের শৃংখলে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সবার কপালে আঁকা আছে বন্দেগী ও দাসত্বের টিকা। আল্লাহর সাব্যভৌম ক্ষমতার ক্ষেত্রে কারোর সামান্যতম অংশও নেই। কোন জিনিসের ছায়া থাকলে বুঝতে হবে, সেটি একটি জড় বস্তু। আর জড় বস্তু হওয়ার অর্থ হলো, সেটি একটি সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তার অনুগত গোলাম। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
# শুধু পৃথিবীরই নয়, আকাশেরও এমন সব বস্তু, পিণ্ড বা সত্ত্বা যাদেরকে প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মানুষ দেব-দেবী এবং আল্লাহর আত্মীয়, স্বজন গণ্য করে এসেছে, তারা আসলে গোলাম ও তাবেদার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের মধ্যেও কারোর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় কোন অংশ নেই।
পরোক্ষভাবে এ আয়াত থেকে এদিকে একটি ইঙ্গিত এসেছে যে, প্রাণসত্তা সম্পন্ন সৃষ্টি কেবলমাত্র দুনিয়াতেই নয় বরং মহাশূন্যের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহেও আছে। একথাটিই সূরা শূরার ২৯ আয়াতেও বলা হয়েছে।
# ফেরেশতা, নক্ষত্রমণ্ডলী এবং পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য জগতে মানুষের মতো বুদ্ধিমান জীব বা পশু, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ, বায়ু ও আলোর মতো অ-বুদ্ধিমান ও স্বাধীন ক্ষমতাহীন যাবতীয় সৃষ্টি।
# যারা নিছক বাধ্য হয়েই নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে, সানন্দে ও আনুগত্যশীলতা সহকারেও তাঁকে সিজদা করে। পরবর্তী বাক্যে তাদের মোকাবিলায় মানব সম্প্রদায়ের অন্য যে দলের কথা বলা হচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হতে অস্বীকার করে। কিন্তু অন্যান্য স্বাধীন ক্ষমতাহীন সৃষ্টিরমতো তারাও প্রাকৃতিক আইনের বাঁধান মুক্ত নয় এবং সবার সাথে বাধ্য হয়ে সিজদা করার মধ্যে তারাও রয়েছে। নিজেদের ক্ষমতার পরিসরে বিদ্রোহের নীতি অবলম্বনের কারণে তারা আযাবের অধিকারী হয়।
# এর অর্থ হচ্ছে, যদিও কিয়ামতের দিনে এসব বিভিন্ন দলের বিরোধের নিষ্পত্তি করে দেয়া হবে তবুও যথার্থ অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী হলে যে কেউ আজো দেখতে পারে কে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে এবং শেষ ফায়সালা কার পক্ষে হওয়া উচিত। পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সর্বত্র একই আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব পূর্ণ শক্তিতে ও সর্বব্যাপীভাবে চলছে, সমগ্র বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা একথারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্রতম ধূলিকণা থেকে শুরু করে আকাশের বড় বড় গ্রহ নক্ষত্র পর্যন্ত সবাই একটি আইনের শৃংখলে বাঁধা রয়েছে এবং তা থেকে এক চুল পরিমাণ এদিক ওদিক নড়ার ক্ষমতা কারোর নেই। মু’মিন তো অন্তর থেকেই তাঁর কাছে মাথা নত করে কিন্তু যে নাস্তিকটি তাঁর অস্তিত্বই অস্বীকার করে এবং যে মুশরিকটি প্রতিটি ক্ষমতাহীন সত্তার সামনে মাথা নত করে সেও বাতাস ও পানির মতো সমানভাবে তার আনুগত্য করতে বাধ্য। কোন ফেরেশতা, জিন, নবী, অলী ও দেবদেবীর মধ্যে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলী ও ক্ষমতার সামান্যতম নামগন্ধও নেই। তাদেরকে আল্লাহ সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষমতা ও উপাস্য হবার মর্যাদা দান করা অথবা বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভুর সম জাতীয় ও সদৃশ গণ্য করার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কোন শাসকবিহীন আইন, স্রষ্টাবিহীন প্রকৃতি ও পরিচালকবিহীন ব্যবস্থার পক্ষে এত বড় বিশ্ব-জাহানের অস্তিত্ব দান করা, নিজেই তাকে সুষ্ঠ নিয়ম-শৃংখলার সাথে পরিচালনা করা এবং এ বিশ্ব-জাহানের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ও প্রজ্ঞার বিস্ময়কর কর্মকুশলতা দেখানো কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বিশ্ব-জাহানের এ উন্মুক্ত গ্রন্থটি সামনে থাকার পরও যে ব্যক্তি নবীদের কথা মানে না এবং বিভিন্ন মনগড়া বিশ্বাস অবলম্বন করে আল্লাহর ব্যাপারে বিরোধে প্রবৃত্ত হয় তার মিথ্যাশ্রয়ী হওয়া ঠিক তেমনিভাবে প্রমাণিত যেমন কিয়ামতের দিন প্রমাণিত হবে।
# এখানে লাঞ্ছনা ও সম্মান অর্থ সত্য অস্বীকার ও তার অনুসরণ। কারণ, লাঞ্ছনা ও সম্মানের আকরেই এর অনিবার্য ফল দেখা যায়। যে ব্যক্তি চোখ মেলে প্রকাশ্য ও উজ্জ্বল সত্য দেখে না এবং যে তাকে বুঝায় তার কথাও শোনে না সে নিজেই নিজের জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননার ডাক দেয়। সে নিজে যা প্রার্থনা করে আল্লাহ তার ভাগ্যে তাই লিখে দেন। তারপর আল্লাহই যখন তাকে সত্য অনুসরণ করার মর্যাদা দান করেননি তখন তাকে এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার ক্ষমতা আর কার আছে?
# এখানে তেলাওয়াতের সিজদা ওয়াজিব। সূরা হজ্জের এ সিজদাটির ব্যাপারে সবাই একমত। তেলাওয়াতের সিজদার তত্বজ্ঞান, তাৎপর্য ও বিধান জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আ’রাফ, ১৫৭ টীকা।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*দলীলবিহীন তর্ক ও স্বার্থবাদীতা ঈমানের পরিপন্থি : এতাে সব অকাট্য প্রমাণাদি থাকা সত্তেও কেউ কেউ আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে থাকে। (আয়াত ৮, ৯ ও ১০) এসব অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও আল্লাহকে নিয়ে বিতর্ক তােলা এমনিতেই একটা বিস্ময়কর ও অবাঞ্জিত ব্যাপার। উপরন্তু তা অজ্ঞতাপ্রসূত, প্রমাণবিহীন এবং কোনাে প্রামাণ্য পুস্তকের সাক্ষ্যবিহীন এক উদ্ভট ও ভিত্তিহীন বিতর্ক। যে ধরনের মানুষ এই অন্যায় বিতর্ক তােলে, তার ধরণটা এখানে তুলে ধরা হয়েছে এই বলে যে, ‘সে অহংকারে ঘাড় বাঁকিয়ে বিতর্ক করে, যেহেতু তার কাছে কোনাে সংগত যুক্তি নেই, তাই সেই শূন্যতা পূরণ করতে গিয়ে সে এইসব দম্ভ ও আস্ফালনের আশ্রয় নেয়। যাতে সে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করতে পারে।’ অর্থাৎ সে নিজে বিপথগামী হয়েই ক্ষান্ত হয় না, বরং অন্যদেরকেও বিপথগামী করে। এ ধরনের দম্ভ, আস্ফালন, যা নিজেকে ও অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে, তা প্রতিহত ও চূর্ণ করা অপরিহার্য তার জন্যে পৃথিবীতে অপমান রয়েছে। বস্তুত অপমান হলাে অহংকারের বিপরীত। আজ হােক বা কাল হােক, আল্লাহ তায়ালা সেই অহংকারীদের অহংকার চূর্ণ না করে ছাড়েন না, যারা নিজেরাও বিপথগামী অন্যদেরকেও বিপথগামী করে। কখনাে কখনাে তাদেরকে সাময়িক অবকাশ দেন, যাতে অপমান আরাে ভয়ংকর হয়। আর পরকালে তাদের জন্য যে আযাব রয়েছে, সেটা তাে আরাে কঠিন ও আরাে যন্ত্রণাদায়ক। ‘আর তাকে কেয়ামতের দিন জাহান্নামে দহনের শাস্তি দেবাে।’ পরক্ষণেই এই হুমকি যেন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। আয়াতের ভাষায় সামান্য পরিবর্তন করেই সম্বােধন করে বলা হয়েছে, ‘এ সব তােমারই কর্মফল । আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ওপর অত্যাচারী নন।’ যেন দহনের আযাবের সাথে সাথে ধমক দিয়েও শাস্তি দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী আয়াতে আর এক ধরনের মানুষের নমুনা তুলে ধরা হয়েছে। এই নমুনাটা যদিও তৎকালে আরবে দেখা যেতাে। কিন্তু এটা সকল যুগেই দেখা যায়। এই শ্রেণীটা ঈমানকে লাভ ও ক্ষতির মাপকাঠিতে পরিমাপ করে এবং একে বাজারের ব্যবসার মতাে মনে করে। ‘কিছু লােক এমনও আছে যারা দ্বিধা-দ্বন্দের সাথে আল্লাহর এবাদাত করে। যদি তার কোনাে পার্থিব স্বার্থ লাভ হয় তাহলে সে প্রশান্তি লাভ করে। কিন্তু যদি তার ওপর কোনাে বিপদ আসে, তবে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়'(আয়াত ১১-১৩) আসলে মােমেনের জীবনে ঈমানই হচ্ছে স্থির ও অবিচল মানদন্ড- পার্থিব লাভ ক্ষতি নয়। তার চারপাশের গােটা দুনিয়া হাজারাে ডিগবাজি খাক, সে এই মানদন্ডের ওপর অবিচল ও অনড় থাকবে। যতাে বিপর্যয় আসুক, যতাে দুর্যোগ এসে তার চারপাশের সহায়-সম্পদকে তছনছ করে দিক, সে অটল থাকবেই। মােমেনের জীবনে ঈমান, আকীদা ও আদর্শের মূল্য এ রকমই। তাই তার ওপর মােমেনকে অটল অনড় হয়ে থাকতে হবে। তার কোনােরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগার অবকাশ নেই এবং কোনাে পুরস্কারের অপেক্ষায় থাকার সুযােগ নেই। কেননা ঈমান নিজেই নিজের পুরস্কার। এটা মােমেনের সহায় ও আশ্রয়স্থল। আল্লাহ তায়ালা তার হেদায়াত লাভের জন্যে ও প্রশান্তি লাভের জন্যে ঈমানকে একটা মস্ত আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছেন। তাই মােমেন উপলব্ধি করে ঈমানের প্রকৃত মূল্য কী ঈমান তার পুরস্কার কতাে বড়ো যখন সে তার চারপাশের অন্য সবাইকে দেখতে পায় বাতাসের টানে, স্বার্থের টানে ও অস্থিরতার চাপে তাদের নীতি ও অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। অথচ সে নিজের আদর্শ ও ঈমানের ওপর স্থির ও অবিচল, প্রশান্তি ও পরিতৃপ্ত এবং আল্লাহর প্রতি শর্তহীনভাবে অনুগত ও একাত্ম। পক্ষান্তরে যে শ্রেণীটার কথা এখানে বলা হয়েছে, তারা ঈমানকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করে, যদি তার কোনাে পার্থিব স্বার্থ লাভ ঘটে, তাহলে সে বড়ােই সন্তুষ্ট হয়। আর বলে, ঈমান বড়াে ভালাে জিনিস। এ দ্বারা ফায়দা পাওয়া যায়, ক্ষতি দূর করা যায়, ব্যবসায়ে লাভবান হওয়া যায়। আর যদি তার ওপর কোনাে বিপর্যয় আসে, তাহলে সে পেছনে ফিরে যায়, তার দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুনিয়ার ক্ষতি হয় এ জন্যে যে, যে দুনিয়াবী মুসিবতে সে আক্রান্ত হয়েছে, তাতে সে সবর করেনি এবং সে ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য কামনা ও সে সাহায্যের জন্যে অপেক্ষা করেনি। আর আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ জন্যে যে, সে তার ঈমান থেকে ফিরে গেছে। এবং বিপথগামী হয়েছে। কোরআনের বর্ণনাভংগিতে তার এবাদাতকালীন অবস্থাকে ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সাথে’ বলে চিত্রিত করেছে। অর্থাৎ তার ঈমান টলটলায়মান ও অস্থির। যেন প্রথম ধাক্কাতেই সে ঈমানের অবস্থান থেকে সরে পড়বে। এজন্যে বিপদের আক্রমণের সাথে সাথেই সে পিছিয়ে যায়। বৈষয়িক লাভ ক্ষতির হিসেব কেবল ব্যবসায় বাণিজ্যেই করতে হয়। ঈমান ও আদর্শের ক্ষেত্রে এ হিসেব করা চলে না। আকীদা, বিশ্বাস ও আদর্শকে শর্তহীন ও পার্থিব স্বার্থমুক্ত হয়ে গ্রহণ করা উচিত। আদর্শকে গ্রহণ করতে হয় খােদ আদর্শের সৌন্দর্যের কারণেই এবং হেদায়াত লাভের উদ্দেশ্যেই। ঈমান ও আকীদা নিজেই তার পুরস্কার। এর বাইরে তার আর কোনাে পুরস্কার কামনা করা উচিত নয়। কেননা এতে যে মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। মােমেন আল্লাহর এবাদাত করে নিছক তিনি তাকে হেদায়াত করেছেন এ কারণে কৃতজ্ঞতার বশে। এর জন্যে যদি সে আলাদা কোনাে পুরস্কার পায়, তবে সেটা নিছক আল্লাহর মেহেরবানী। ঈমান ও এবাদাতের কারণে তাকে এর যােগ্য গন্য করা হয়। মােমেন তার আল্লাহকে পরীক্ষা করে না। তিনি তার ভাগ্যে যা কিছুই বরাদ্দ করেন, সে হাসি মুখে তা মেনে নেয়। সুখ দুঃখ যাই হােক তার কাছে সে আত্মসমর্পণ করে। কেননা সেটা তার ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত পরীক্ষা। ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে এটা কোনাে ব্যবসা নয় । এটা হচ্ছে স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির আত্মসমর্পণ। আদেশদাতার কাছে অনুগত গােলামের আত্মসমর্পণ। বিপদ এলেই যে ব্যক্তি ঈমান থেকে ফিরে যায়, সে নিসন্দেহে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ‘ওটা হচ্ছে প্রকাশ্য ক্ষতি।’ অর্থাৎ সে পরীক্ষার দরুন সহায় সম্পদ, স্বাস্থ্য বা সন্তানের যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তা ছাড়াও শান্তি, তৃপ্তি ও সন্তোষেরও ক্ষতি ভােগ করে। ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা না থাকার কারণে এবং তার ফয়সালা মেনে না নেয়ার কারণে সে পরকালের সুখ, আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে। এর চেয়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি আর কিছু হতে পারে না। যে ব্যক্তি এভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আল্লাহর এবাদাত করে, সে আল্লাহকে ছেড়ে কোথায় যাবে? ‘সে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া যাদেরকে ডাকে তারা তার লাভও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না।’ জাহেলী নিয়মে কোনাে দেবতা বা মূর্তির কাছে সাহায্য চায়। সর্বকালের জাহেলী পদ্ধতিতে সে কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট সাহায্যের জন্যে হাত পাতে । মানুষ যখনই এক আল্লাহর প্রতি মনােনিবেশ করার পথ পরিহার করে এবং আল্লাহর দেখানাে পথে চলতে অস্বীকার করে, তখনই সে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যদের কাছে হাত পাতে, এ সবই গােমরাহী এবং নিস্ফল পন্থা। কেননা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ সাহায্য দিতে পারে না। ‘এ হচ্ছে অনেক দূরের গোমরাহী।’ অর্থাৎ সঠিক পথ থেকে অনেক দূরে। ‘সে এমন সত্ত্বাকে ডাকে যার উপকারের চেয়ে ক্ষতিই নিকটতর।’ অর্থাৎ কোনাে দেবতা, শয়তান অথবা মানুষের কাছে সাহায্য চায় । অথচ এদের কেউ ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পারে না। বরং এদের দ্বারা ক্ষতির কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্ষতি দুই ধরনের, মানসিক ক্ষতি ও বাস্তব ক্ষতি। মানসিক ক্ষতি হলাে যে, তা মনকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলে। মনের একাংশকে ভিত্তিহীন ধ্যান-ধারণায় ও অপরাংশকে হীনমন্যতায় ভারাক্রান্ত করে ফেলে। আর বাস্তব ক্ষতি হলাে যে, কার্যত সে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারাে কাছ থেকে কিছুই অর্জন করে না। আর সবচেয়ে বড়াে ক্ষতি হলাে, আখেরাতের ক্ষতি ও গােমরাহী। ‘কত নিকৃষ্ট বন্ধু!’ অর্থাৎ সেই ক্ষমতাহীন বন্ধু, যার কোনাে ক্ষতি বা উপকার সাধনের শক্তি নেই। ‘আর কত নিকৃষ্ট সাথী!’ অর্থাৎ যার কারণে মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যেসব মূর্তি ও দেব-দেবী বা নেতৃস্থানীয়দেরকে সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করে তারা সমভাবে মানুষের ক্ষতি ও অনিষ্টকারী । অবশ্য যারা বিভিন্ন মানুষকে খোদা বা খোদার ন্যায় মান্য গন্য বলে গ্রহণ করে, তারাও একইভাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এবং সকল যুগে ও সকল স্থানে এ ধরনের মানুষের সাক্ষাত পাওয়া যায়।
* পক্ষান্তরে আল্লাহর ওপর ঈমান এনে তাঁর এবাদাত করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কারণ তিনি তার প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের জন্যে পার্থিব জীবনের যাবতীয় সহায়-সম্পদের চেয়ে উত্তম, মূল্যবান ও উপকারী সম্পদ সংরক্ষণ করেন। ঈমান আনার কারণে বিপদ-মুসিবতে পড়ে কেউ যদি পার্থিব সহায় সম্পদ হারিয়েও ফেলে, তথাপি আখেরাতে সে তার চেয়ে বহু মূল্যবান জান্নাতের অধিকারী হবে। ‘নিশ্চয় আল্লাহ ঈমানদার ও সৎ কর্মশীল লােকদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান…'(আয়াত ১৪) দুনিয়াতে কেউ যদি কোনাে বিপদ মুসিবতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার অস্থির না হয়ে ধৈর্যধারণ করা উচিত, আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের আশায় থাকা উচিত, তিনি বিপদ থেকে উদ্ধার করতে, ক্ষতি পূরণ করে দিতে এবং তার বিকল্প ও প্রতিদান দিতে সক্ষম এই ভরসা রাখা উচিত। কিন্তু যে ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর সাহায্য লাভ সম্পর্কে আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং হতাশ হয়ে যায়, তার যা ইচ্ছে তাই করুক। তাতে তার কোনাে লাভ হবে না এবং তার সংকট মোচন হবে না। ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ কথাই বলেছেন এভাবে ‘যে ব্যক্তি এরূপ ধারণা করে যে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কখনাে সাহায্য করবেন না, সে যেন আকাশ পর্যন্ত একটা রশি টানিয়ে নেয়, তারপর তা কেটে দেয়। অতপর সে ভেবে দেখুক, তার এ কৌশল তার ক্রোধভাজন জিনিসটাকে দূর করে কিনা।’ এটা হচ্ছে মনের আক্রোশ ও তার আনুষংগিক আচরণগুলাের একটা সক্রিয় দৃশ্য। এ দৃশ্যটা মনের সর্বোচ্চ বিরক্তির অবস্থাকে প্রতিফলিত করছে। কারাে ওপর যখন বিপদ-মুসিবত আসে এবং সে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখে না, তখনই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি বিপদ-আপদ ও ক্ষয়-ক্ষতিতে আল্লাহর সাহায্য সম্পর্কে হতাশ হয়ে যায়, তার সংকট মােচনের সকল সম্ভাবনা তিরােহিত হয়ে যায় এবং তার বিপদ-মুসিবত ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কখনাে দুনিয়া ও আখেরাতে কোনাে সাহায্য করবেন না, সে আকাশের সাথে একটা রশি টানিয়ে তাতে ঝুলতে থাকুক অথবা গলায় ফাস লাগাক। অতপর রশিটা কেটে দিয়ে মাটিতে পড়ে থাক কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে ফাস লাগাক। তারপর দেখুক, তার এ কৌশল তার কষ্ট দূর করে কিনা। মনে রাখতে হবে, বিপদ মুসিবতে আল্লাহর সাহায্যের আশা করা ছাড়া ধৈর্যধারণের আর কোনাে উপায় থাকে না, আল্লাহর দিকে মন রুজু করা ছাড়া সংকট মােচন সম্ভব হয় না এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা ছাড়া বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় না। এ সময়ে যে কোনাে হতাশা ব্যাঞ্জক তৎপরতা বিপদকে আরাে তীব্র ও অসহনীয় করে তােলে। সুতরাং বিপন্ন ব্যক্তির একমাত্র কর্তব্য হলাে আল্লাহর রহমতের আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করা এবং যে সব কাজে আল্লাহর রহমত আশা করা যায় তা বেশী পরিমাণে করতে থাকা।
* *মােমেন ও কাফেরদের ব্যাপারে আল্লাহর ফয়সালা : বস্তুত আল্লাহ তায়ালা এই কোরআনকে এ ধরনের হেদায়াত ও গােমরাহীর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং হেদায়াত ও গোমরাহী নমুনা তুলে ধরার জন্যে নাযিল করেছেন, যাতে আল্লাহ তায়ালা। যাদের বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তারা সঠিক পথের সন্ধান পায়। ১৬ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা এ কথাই বলেছেন। এ আয়াতের বক্তব্য এই যে, যে ব্যক্তি হেদায়াত তথা সৎ পথে চলার ইচ্ছা করে, তাকে সৎ পথের সন্ধান দেয়া ও সৎ পথে চলার শক্তি যােগানাের পক্ষে আল্লাহর ইচ্ছা সক্রিয় হয়। অনুরূপভাবে, যে ব্যক্তি গােমরাহী চায় তথা অসৎ পথে চলতে ইচ্ছা করে, আল্লাহর ইচ্ছা তারও সহযােগী ও সহায়ক হয়ে যায়। এখানে শুধু হেদায়াতের উল্লেখ করার কারণ হলাে, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর সাথে হেদায়াতকামী সুস্থ মনেরই সাযুজ্য বেশী । তবে বিভিন্ন রকমের আকীদা বিশ্বাস পােষণকারী দল ও শ্রেণীর ফায়সালা কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা করবেন। কারা সঠিক বা বাতিল আকীদার অধিকারী, কারা সুপথগামী বা বিপথগামী, সেটা তিনিই ভালাে জানেন। (আয়াত ১৭) ‘যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদী, যারা সাবী, যারা খৃষ্টান, যারা অগ্নি উপাসক ও যারা পৌত্তলিক, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করবেন। তিনিই সর্ব বিষয়ে সাক্ষী।’ এসব দল-উপদলের পরিচিতি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাকেই হেদায়াত করেন, যে হেদায়াত চায়, তাই সেই প্রসংগেই এই দলগুলাের উল্লেখ করা হয়েছে। তিনিই ভালাে জানেন, কে সুপথগামী ও কে বিপথগামী। সকলের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব তার ওপরই বর্তায় এবং তিনিই সব কিছুর চুড়ান্ত মীমাংসা করবেন। তিনিই সকল বিষয়ে সাক্ষী। যেখানে মানুষ মাত্রেই নিজ নিজ চিন্তাধারা, ধারণা বিশ্বাস ও মনােভংগির অনুগামী, সেখানে মানুষ ছাড়া বাদ বাকী গােটা সৃষ্টি জগত নিজ জন্মগত ও স্বভাবগত প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে স্বীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহর মহাজাগতিক, প্রাকৃতিক নিয়মবিধির অনুগত এবং আল্লাহর সামনে সিজদারত। ১৮ নং আয়াতের বক্তব্য এটাই। যে কোনাে চিন্তাশীল মন এ আয়াত নিয়ে চিন্তা গবেষণা না করে পারে না। এ আয়াতে মানুষের জানা অজানা বহু সৃষ্টি, মহাশূন্যের বহু জ্যোতিষ্ক, বহু পাহাড় পর্বত, বৃক্ষ লতা ও পশুপাখীকে মানব জাতি অধ্যুষিত পৃথিবীতে সমবেত ও একমাত্র আল্লাহর সামনে ঐক্যবদ্ধভাবে সিজদারত দেখানাে হয়েছে, আর এরই পাশাপাশি একমাত্র মানুষকেই উপস্থাপন করা হয়েছে তার ব্যতিক্রম হিসাবে, এই সমগ্র সৃষ্টি জগতের কাতারে একমাত্র বিবদমান সৃষ্টি হিসাবে- যার কেউ সিজদা করে, কেউ করে না। তাই এই মানুষ এ মহাবিশ্বে এক আজব ও অদ্ভুত সৃষ্টি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এখানে এ কথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে যে, যে আযাবের কবলে পড়বে, সে চরম লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হবে। যাকে আল্লাহ তায়ালা অপমানিত করেন, তাকে সম্মান করার মতাে আর কেউ অবশিষ্ট থাকে না। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মানিত না হলে আর কোথা থেকেও সম্মান জোটে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারাে অনুগত হয়, সে চরম অধপতিত ও লাঞ্চিত হয়ে থাকে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে ঐসমস্ত লোকদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলা সম্বন্ধে কোন প্রকার দলীল ছাড়াই তর্ক করে। আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে এমন কথা ও মন্তব্য করে থাকে যা তাঁর সত্তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ثَانِيَ অর্থ সে বাঁকায়, عِطْفِه অর্থ তার পার্শ্ব, গর্দান ইত্যাদি। অর্থাৎ সে যখন বিতণ্ডা করে তখন ঘাড় বাঁকা করে বিতণ্ডা করে। এর দ্বারা মূলত সত্য গ্রহণে তার অহংকার ও বিমুখতা বুঝানো হয়েছে। এমন ভংগিমা ও রসালো কথা বলে মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُوْلُ اللّٰهِ لَوَّوْا رُؤُوْسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّوْنَ وَهُمْ مُّسْتَكْبِرُوْنَ)
“যখন তাদেরকে বলা হয়: তোমরা এসো, আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদেরকে দেখতে পাও যে, তারা অহংকার করে ফিরে যায়।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৫)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا تُتْلٰي عَلَيْهِ اٰيٰتُنَا وَلّٰي مُسْتَكْبِرًا كَأَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا)
“যখন তার কাছে আমার আয়াত তেলাওয়াত করা হয়, তখন সে অহঙ্কারবশত এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে তা শুনতেই পায়নি। ” (সূরা লুক্বমান ৩১:৭)
তার এ সকল কৃতকর্মের জন্য সে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হবে আর আখিরাতে তাকে দেয়া হবে কঠিন শাস্তি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(خُذُوْھُ فَاعْتِلُوْھُ اِلٰی سَوَا۬ئِ الْجَحِیْمِﭾﺫثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَاْسِھ۪ مِنْ عَذَابِ الْحَمِیْمِﭿﺚذُقْﺐ اِنَّکَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْکَرِیْمُﮀاِنَّ ھٰذَا مَا کُنْتُمْ بِھ۪ تَمْتَرُوْنَ)
“(বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে, অতঃপর তার মস্তকের ওপর ফুটন্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও। (এবং বলা হবে:) আস্বাদন গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে পরাক্রমশালী। এটা তো সেটাই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।” (সূরা দুখান ৪৪:৪৭-৫০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা আল্লাহ তা‘আলার শানে এমন কথা বলে যা থেকে তিনি মুক্ত তাদেরকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
২. যারা আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে অনর্থক কথা বলে তাদের কোন প্রকার দলীল নেই।
১১-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যাদের ঈমান খুব দুর্বল, অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি, ঈমানের সজীবতা ও স্বাদ পায়নি বরং হয়তো কোন ভয়ের কারণে ইসলাম গ্রহণ করেছে বা কোন কিছু পাওয়ার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছে। এসকল ব্যক্তিরা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে عَلٰي حَرْفٍ বা এক কিনারে দাঁড়িয়ে। حَرْفٍ অর্থ কিনারা, প্রান্ত। অর্থাৎ কিনারায় দাঁড়িয়ে মানুষ যেমন স্থিতিশীল ও অটল থাকতে পারে না, যে কোন মুহূর্তে গর্তে পড়ে যেতে পারে, ঠিক এসকল ব্যক্তিরা ইসলাম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহে পতিত। নিভু নিভু ঈমান নিয়ে আমল করতে থাকে, যখন কোন ভাল কিছু পায় তখন খুব খুশি থাকে, মনে মনে বলে ঈমান এনে লাভই হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি কোন বিপদাপদ আক্রান্ত করে, জিহাদে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বা কোন অভাব-অনটনে পড়ে, তখন মনে মনে বলে, ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আমাদের এ বেহাল দশা। তখন তারা আবার কুফরীতে ফিরে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এদের দুনিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত, আখেরাতও ক্ষতিগ্রস্ত।
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোন ব্যক্তি মদীনায় আগমন করত, অতঃপর তার যদি স্ত্রী, পুত্র-সন্তান প্রসব করত এবং তার ঘোড়া বাচ্চা দিত তখন বলত, এ দীন ভাল। আর যদি তার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র সন্তান না জন্মাতো এবং তার ঘোড়া বাচ্চা না দিত তখন বলত, এটা মন্দ দীন। গৃহপালিত পশুর মধ্যে যদি বরকত হত তখন সে বলত, ইসলাম ভাল ধর্ম। আর যদি এমনটি না হত তাহলে সে বলত যে, ইসলাম হল মন্দ ধর্ম। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪২)
সুতরাং ইসলামের কোন বিধানকে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই। যারা ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে সন্দেহ করবে সে মুসলিম থাকবে না, এমনকি ইসলামের সকল ইবাদত করার পরেও যদি কোন ইবাদত বা বিধানকে ঘৃণা করে তাহলেও সে মুসলিম থাকবে না। তাই আমাদের উচিত ইসলামের পথে অটল থাকা, কোন বিপদাপদ আসলে এ সন্দেহ না করা যে ইসলামের কারণে এ বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। বরং তা আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, এ বিপদ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা এবং শেষ পর্যন্ত এতে মঙ্গল বিদ্যমান রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এসব লোকদের আরো বিবরণ তুলে ধরে বলেন: তারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া এমন বাতিল মা‘বূদদেরকে কল্যাণ লাভের আশায় এবং অকল্যাণ থেকে বাঁচতে আহ্বান করে যারা তাদের কোন ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰٓؤُلَا۬ءِ شُفَعَا۬ؤُنَا عِنْدَ اللّٰهِ ط قُلْ أَتُنَبِّئُوْنَ اللّٰهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمٰوٰتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ط سُبْحٰنَه۫ وَتَعٰلٰي عَمَّا يُشْرِكُوْنَ)
“তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল: ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।” (সূরা ইউনুস ১০:১৮) এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসে আরো আলোচনা করা হয়েছে।
(مَنْ كَانَ يَظُنُّ أَنْ لَّنْ يَّنْصُرَهُ اللّٰهُ…)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাহায্য করবেন না দুনিয়াতে ও আখিরাতে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলেন, সে যেন তার ঘরের কাছে রশি লটকিয়ে দিয়ে নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় এবং এভাবে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। তথাপি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাহায্য করেই যাবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(اِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَیَوْمَ یَقُوْمُ الْاَشْھَادُﮂﺫیَوْمَ لَا یَنْفَعُ الظّٰلِمِیْنَ مَعْذِرَتُھُمْ وَلَھُمُ اللَّعْنَةُ وَلَھُمْ سُوْ۬ئُ الدَّارِ)
“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে ও যেদিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে। যেদিন যালিমদের কোন আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্য রয়েছে লা‘নত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।” (সূরা মু’মিন ৪০:৫১-৫২)
তার এ সকল রাগের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন দিনও সাহায্য করা বন্ধ করবেন না। (ইবনু কাসীর ৫/৪১২) বরং আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যথারীতি সাহায্য করেই যাবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। সন্দেহের ভিত্তিতে ইবাদত করা যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো ইবাদত করা যাবে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মানুষের অহঙ্কারের কারণে যে সাহায্য করা বন্ধ করে দিয়েছেন এমনটি নয়। বরং সবর্দাই তাকে সাহায্য করবেন।
১৭-১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
পৃথিবীতে যাদেরকে আসমানী কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে যেমন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি বিশ্বাসী মু’মিন, ইয়াহূদী, সাবেয়ী (সাবেয়ী বলা হয় তাদেরকে যারা স্বীয় ফিতরাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তাদের কোন অনুসরণীয় স্বীকৃত দীন নেই) খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক প্রতিমাপূজারীন এ সকল ফেরকাবন্দীদের মাঝে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ফায়সালা করবেন। মু’মিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন আর বাকী সকল কাফির-মুশরিকদেরকে জাহান্নামে দেবেন। বান্দার সকল আমল আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যক্ষ করছেন এবং তার আমল অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেবেন। কারো প্রতি জুলুম করবেন না।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্বের কথা বর্ণনা করেছেন, আকাশ ও জমিনে যারা রয়েছে প্রত্যেকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সাজদাবনত হয়। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন: এ সিজদার অর্থ ঐ সমস্ত জিনিসের আল্লাহ তা‘আলার নিয়ম-বিধির অনুগত হওয়া। কারো এ শক্তি নেই যে, সে বিধির বিপরীত করবে। তাদের নিকট সিজদা বলতে আনুগত্য, ইবাদতের সিজদা নয় যা একমাত্র জ্ঞানসম্পন্ন জীবের সাথে সম্পৃক্ত। তবে কেউ কেউ তা মূল অর্থেই ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন। তারা বলেন: প্রতিটি সৃষ্টি নিজ নিজ পদ্ধতিতে সিজদা করে থাকে। যেমন: যারা আকাশমণ্ডলীতে রয়েছে তথা ফেরেশতাগণ, যারা পৃথিবীতে রয়েছে বলতে প্রত্যেক মানুষ, জিন ও পশুপক্ষী ও অন্যান্য জীবজন্তু সব কিছুকে বুঝানো হয়েছে। এরা সবাই নিজ নিজ ভঙ্গিমায় আল্লাহ তা‘আলাকে সিজদা করে এবং তাঁর তাসবীহ পাঠ করে। সকলেই সকলের তাসবীহ বুঝতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(أَوَلَمْ يَرَوْا إِلٰي مَا خَلَقَ اللّٰهُ مِنْ شَيْءٍ يَّتَفَيَّأُ ظِلَالُه۫ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشَّمَا۬ئِلِ سُجَّدًا لِّـلّٰهِ وَهُمْ دٰخِرُوْنَ)
“তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সাজদাবনত হয়ে?” (সূরা নাহল ১৬:৪৮)
এখানে চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; কারণ হল মুশরিকরা এদের ইবাদত করে থাকে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলছেনন তোমরা এদের সিজদা করছ, অথচ এরা তো আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিজদা করে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ)
“তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়; সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৩৭)
হাদীসে এসেছে: আবূ যার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি কি জান এ সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম: আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এটা আরশের নীচে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে সাজদাহ করে। আবার ওটা তাঁর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে। তাকে উঠার অনুমতি দেয়া হয়। সত্বরই এমন সময় আসছে যে, সে সিজদা করবে কিন্তু তার সিজদা কবুল করা হবে না, উঠার অনুমতি চাইবে কিন্তু অনুমতি দেয়া হবে না। ওকে বলা হবে, তুমি যেখান থেকে এসেছিলে সেখানেই ফিরে যাও। ফলে তা পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৯৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৫৯) এভাবেই একজন সাহাবীর কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি স্বপ্নে গাছকে দেখেছেন তার সাথে সিজদা করছে। (তিরমিযী হা: ১০৫৩, হাসান)
সুতরাং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে। চন্দ্র, সূর্য, গাছ, তারকা ইত্যাদির উপাসনা করা যাবে না। কারণ তারাও কেবল আল্লাহ তা‘আলারই উপাসনা করে। তাই আমাদের উচিত সকল কিছুর উপাসনা বাদ দিয়ে কেবল তাঁরই ইবাদত করা চন্দ্র-সূর্য যার ইবাদত করে অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই যাবতীয় ইবাদত করতে হবে।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কাউকে সিজদা করা যাবে না।
৩. সকল সৃষ্টিই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে, যদিও আমরা বাহ্যত তা বুঝতে পারি না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮-১০ নং আয়াতের তাফসীর:
উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আল্লাহ তাআলা অনুসরণকারীদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি তাদের অনুসৃত পীর মুরশিদদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা কিছু না জেনে বিনা দলীলে শুধু নিজেদের মত ও ইচ্ছানুযায়ী আল্লাহর ব্যাপারে বাক বিতণ্ডা করে থাকে। সত্য হতে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং গর্ব ভরে ঘাড় ঘুরিয়ে থাকে। সত্যকে বেপরোয়াভাবে তারা প্রত্যাখ্যান করে। যেমন ফিরাউনীরা হযরত মূসার (আঃ) স্পষ্ট মু’জিযাগুলি দেখেও বেপরোয়ার সাথে তাকে অমান্য করে। অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদেরকে যখন বলা হয়ঃ আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের (সঃ) দিকে এসো, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার নিকট হতে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে।” (৪:৬১) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা এসো আল্লাহর রাসূল (সঃ) তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদেরকে দেখতে পাও যে, তারা দম্ভভরে ফিরে যায়।” (৬৩:৫)। হযরত লোকমান (আঃ) স্বীয় পুত্রকে বলেছিলেনঃ অর্থাৎ ‘মানুষকে অবজ্ঞা করে তুমি তোমার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ো না।” অর্থাৎ নিজেকে বড় মনে করে তাদেরকে দেখে অবজ্ঞা করো না। অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তার কাছে আমার আয়াত আবৃত্তি করা হয় তখন সে দরে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (৩১:৭)।
(আরবী) এর (আরবী) টি (আরবী) (পরিণামের লাম) অথবা (আরবী) (কারণ বোধক লাম)। কেননা, কোন কোন সময় এর উদ্দেশ্য অপরকে পথভ্রষ্ট করা হয় না। সম্বতঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য অস্বীকারই হবে। আবার ভাবার্থ এও হতে পারেঃ আমি তাকে এরূপ দুশ্চরিত্র এ জন্যেই করে দিয়েছি যে, সে যেন পথ ভ্রষ্টদের সরদার হয়ে যায়। তার জন্যে দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা ও অপমান রয়েছে, যা তার অহংকারের প্রতিফল। এখানে সে অহংকার করে বড় হতে চাচ্ছিল। আমি তাকে আরো ছোট করে দেবো। এখানেও সে তার উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থকাম হবে। আর আখেরাতেও জাহান্নাম তাকে গ্রাস করে ফেলবে। তাকে ধমকের সুরে বলা হবেঃ এটা তোমার কৃতকর্মের ফল। আল্লাহর সত্তা যুলুম হতে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(ফেরেশতাদের বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্য স্থলে। অতঃপর তার মস্তিষ্কের উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও। আর বলা হবেঃ আস্বাদ গ্রহণ করো, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। এটা তো ওটাই, যে বিষয়ে তুমি সন্দেহ করতে।” (৪৪:৪৭-৫০)
হযরত হাসান (রঃ) বলেনঃ “আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে, তাদেরকে দিনে সত্তর হাজার বার করে জ্বালানো হবে।” (এটা ইবনু আবি হাতিম-(রঃ) বর্ণনা করেছে)
১১-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
মুজাহিদ (রঃ) ও কাতাদা (রঃ) বলেন যে, (আরবী) এখানে এর অর্থ হলো সন্দেহ। অন্যেরা বলেন যে, (আরবী) এর অর্থ হলো প্রান্ত। তারা যেন দ্বীনের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। উপকার হলে তা খুশীতে ফুলে ওঠে এবং ওর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর ক্ষতি হলে ওটা পরিত্যাগ করে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কেউ কেউ হিজরত করে মদীনায় গমন করতো। সেখানে গিয়ে যদি তার স্ত্রী সন্তান প্রসব করতো এবং জীবজন্তুতে ধন মালে বরকত হতো তখন বলতোঃ “এটা খুবই ভাল দ্বীন। আর এরূপ না হলে বলতোঃ “এই দ্বীন তো খুবই খারাপ।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) হতেই আর একটি রিওয়াইয়াত আছে যে, তিনি বলেনঃ “আরবের লোকের (বেদুইনরা) নবীর (সঃ) কাছে আসতো এবং ইসলাম গ্রহণ করে ফিরে যেতো। অতঃপর মেঘ-বৃষ্টি পেলে এবং জীবজন্তু, ঘরবাড়ী ও মালধনে বরকত হলে খুশী হয়ে বলতোঃ “এই দ্বীন বড়ই উত্তম।” আর এর বিপরীত হলে বলতোঃ “এই দ্বীনে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নেই।” তখন (আরবী) এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আওফী (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এ ধরনের লোকও ছিল যারা মদীনায় আসতো, অতঃপর সেখানে তাদের পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে, উষ্ট্রীর বাচ্চা হলে এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকলে খুবই খুশী হতো; এই দ্বীনের পঞ্চমুখে প্রশংসা করতে শুরু করতে। আর কোন বালামসীবত আসলে, মদীনার আবহাওয়া স্বাস্থ্যের প্রতিকূল হলে, ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে এবং সাদকার মাল না পেলে শয়তানের ওয়াস ওয়াসায় পড়ে যেতো এবং পরিষ্কারভাবে বলে ফেলতোঃ “এই দ্বীনে তো শুধু কাঠিন্য ও দুর্ভোগই রয়েছে।”
আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) বলেন যে, এটা হলো মুনাফিকের স্বভাব। দুনিয়া পেয়ে গেলে তারা দ্বীনের উপর খুশী হয়। আর দুনিয়া হাসিল না হলে বা কোন পরীক্ষা এসে গেলে তারা হঠাৎ করে পট পরিবর্তন করে ফেলে এবং ধর্মত্যাগী হয়ে যায়। এরা হলো বড়ই দুর্ভাগা। তাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই নষ্ট। এর চেয়ে বড় ধ্বংস ও ক্ষতি আর কি হতে পারে?
আল্লাহর পরিবর্তে তারা যে সব ঠাকুর, মূর্তি ও বুযুর্গের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, যাদের কাছে ফরিয়াদ করে এবং যাদের কাছে নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে যায় ও রিযক চায় তারা তো নিজেরাই অপারগ। লাভ বা ক্ষতি করার কোন ক্ষমতাই তাদের নেই। এটাই হলো সবচেয়ে বড় পথভ্রষ্টতা। দুনিয়াতেও তারা এই সব দেবতার উপাসনা করে কোন উপকার পায় না, আর পরকালে কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন তারা হবে তা বলবার নয়। এই মূর্তিগুলি তো তাদের অত্যন্ত মন্দ অভিভাবক ও খারাপ সঙ্গী বলে প্রমাণিত হবে। অথবা এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ এরূপ যারা করে তারা নিজেরাই খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ও মন্দ স্বভাবের লোক। কিন্তু প্রথম তাফসীরই উত্তম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
# মন্দ লোকদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা ভাল লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন। যাদের অন্তরে বিশ্বাসের জ্যোতি রয়েছে এবং যাদের আমলে সুন্নাত প্রকাশ পায়, যারা সৎকার্যের দিকে অগ্রসর হয় ও মন্দ কার্য হতে দূরে থাকে। তারা সুউচ্চ প্রাসাদ লাভ করবে এবং উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হবে। কেননা, তারা সুপথ প্রাপ্ত। তাদের ছাড়া অন্যেরা হলো অচেতন। মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা-ই করে থাকেন। তার কাজে বাধা দেয়ার কেউই নেই।
১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যে এটা ধারণা করে নিয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) দুনিয়াতেও সাহায্য করবেন না এবং আখেরাতেও না তার এই বিশ্বাস রাখা উচিত যে, তার এটা শুধু ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। তাঁকে আল্লাহ পাক সাহায্য করতেই থাকবেন, যদিও সে এর রাগে মৃত্যু বরণ করে। বরং তা তো উচিত যে, সে যেন তার ঘরের ছাদে রশি লটকিয়ে দিয়ে নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় এবং এভাবে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। নবীর (সঃ) জন্যে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সা হায্য আসবে না এটা কখনো সন্ত্র নয়, যদিও সে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে যায়। ভাবার্থ এও হতে পারেঃ তার বুঝের উল্টোই হবে, অর্থাৎ বীর (সঃ) জন্যে আকাশ থেকে আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য নাযিল হবেই। হাঁ, তবে যদি তার ক্ষমতা হয় তা হলে সে একটি রঞ্জু লটকিয়ে দিয়ে আকাশে চড়ে যাক এবং অবতারিত আসমানী সাহায্য কর্তন করে দিক। কিন্তু প্রথম অর্থটিই বেশী প্রকাশমান। এতেই তার পূর্ণ অপারগতা এবং উদ্দেশ্যের ব্যর্থতা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় দ্বীন, স্বীয় কিতাব এবং স্বীয় নবীর (সঃ) উন্নতি বিধান করবেনই। যেহেতু এসব লোক এটা দেখতে পারে না, এজন্যে তাদের উচিত যে, তারা যেন নিজে নিজে যায় এবং নিজেদেরকে ধ্বংস করে দেয়। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করবো পার্থিব জীবনে এবং যে দিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে।” (৪০:৫১)
এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা রঞ্জু লটকিয়ে দিয়ে গলায় ফাস লাগিয়ে দিক, পরে রঙ্কু বিচ্ছিন্ন করুক, অতঃপর দেখুক, তার প্রচেষ্টা তার আক্রোশের হেতু দূর করে কি না!
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই কুরআনকে আমি অবতীর্ণ করেছি যার আয়াতগুলি শব্দ ও অর্থের দিক দিয়ে খুবই স্পষ্ট। তার পক্ষ হতে তার বান্দাদের উপর এটা হুজ্জত। পথ প্রদর্শন করা আল্লাহ তাআলারই হাতে।
তার হিকমত বা মাহাত্ম তিনিই জানেন। তিনি সবারই বিচারপতি। তিনি ন্যায় বিচারক, প্রবল প্রতাপান্বিত, বড়ই নিপুণ, শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ও সর্বজ্ঞাতা। তাঁর কাজের উপর কেউ কোন অধিকার রাখে না। তিনি যা চান তা-ই করে থাকেন। সবারই কাছে তিনি হিসাব গ্রহণকারী এবং তা খুবই তাড়াতাড়ি।
* (আরবী) এর বর্ণনা মতভেদসহ সূরায়ে বাকারার তাফসীরে গত হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ বলছেন যে, এই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ফায়সালা কিয়ামতের দিন পরিষ্কারভাবে হয়ে যাবে। তিনি ঈমানদারদেরকে জান্নাত দিবেন এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবেন। সবারই কথা ও কাজ, প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবকিছুই তার কাছে প্রকাশমান।
* আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, ইবাদতের হকদার একমাত্র তিনিই। তিনি এক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার সামনে সমস্ত কিছুই মাথা নত করে, তার খুশীতেই হোক অথবা বাধ্য হয়েই হোক। প্রত্যেক জিনিসের সিজদা ওর স্বভাবের মধ্যেই রয়েছে। ছায়ার ডানে বামে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত থাকার কথাও কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে। বলা। হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি যার ছায়া দক্ষিণে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়?” (১৬:৪৮) সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিও তার সামনে সিজদায় পড়ে যায়। পথকভাবে এই তিনটি। জিনিসের বর্ণনা করার কারণ এই যে, কতকগুলি লোক এগুলির উপাসনা করে থাকে। অথচ ঐগুলি নিজেরাই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হয়। এ জন্যেই তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজুদা করো না, বরং সিজুদা করো ঐ আল্লাহকে যিনি ওগুলিকে সৃষ্টি করেছেন।” (৪১:৩৭)।
হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই সূর্য কোথায় যায় তা জান কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন। তিনি তখন বলেনঃ “এটা আরশের নীচে গিয়ে আল্লাহকে সিজদা করে। আবার ওটা তার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে। সত্বরই এমন সময় আসছে যে, ওকে বলা হবেঃ “তুমি যেখান থেকে এসেছিলে সেখানেই ফিরে যাও।” (এহাদীসটি সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের হাদীসে আছে যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর সৃষ্টি বস্তু সমূহের মধ্যে দু’টি সৃষ্ট বস্তু। এ দুটোতে কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ লাগে না বরং আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাখলুক সমূহের যার উপরই ঔজ্জ্বল্য নিক্ষেপ করেন তখন ওটা তার সামনে সিজদাবনত হয়।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ এবং সুনানে আবি দাউদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে)
আবুল আলিয়া, (রাঃ) বলেন যে, সূর্য, চন্দ্র এবং সমস্ত তারকা অস্তমিত হয়ে সিজদায় পড়ে থাকে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট অনুমতি নিয়ে ডান দিক হতে ফিরে এসে আবার নিজের উদয় স্থলে পৌঁছে। আর পাহাড় পর্বত ও গাছপালার সিজদা হলো ওগুলোর ডানে বামে ছায়া পড়ে। একটি লোক নবীর (সঃ) নিকট এসে নিজের এক স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ “আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি যেন একটি গাছের পিছনে নামায পড়ছি। আমি যখন সিজদায় গেলাম তখন দেখি যে, গাছটিও সিজদায় গেল এবং আমি শুনতে পেলাম যে, গাছটি সিজদায় গিয়ে নিম্ন লিখিত দুআ পড়তে রয়েছেঃ – (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! এই সিজদার কারণে আমার জন্যে আপনি আপনার নিকট প্রতিদান ও সওয়াব লিপিবদ্ধ করুন! আর আমার গুনাহ্ মাফ করে দিন। এবং এটাকে আমার জন্যে আখেরাতে সঞ্চিত ধন হিসেবে রেখে দিন! আর এটাকে ককূল করে নিন যেমন কবূল করেছিলেন আপনার বান্দা হযরত দাউদের (আঃ) সিজদাকে।” (এটা হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “এরপর আমি একদিন দেখি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিজ্জদার আয়াত পাঠ করেন, অতঃপর সিজদা করেন এবং সিদায় এই দুআটিই পাঠ করেন।” (এটা ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) এবং ইবনু হিব্বান (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সমস্ত জীবজন্তুও আল্লাহকে সিজ্দা করে থাকে। যেমন মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের পশুর পিঠকে তোমরা মিম্বর বানিয়ে নিয়ো না। কেননা, বহু সওয়ারী জন্তু সওয়ার অপেক্ষাও ভাল হয় এবং বেশী যিকারী হয়ে থাকে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ মানুষের অনেকে আল্লাহকে সিদা করে থাকে। আবার তাদের মধ্যে অনেকে এমনও আছে যে, তাদের উপর আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। তারা অহংকার করে ও উদ্ধত হয়।
ঘোষিত হচ্ছেঃ আল্লাহ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউই নেই। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করেন।
জাফর (রঃ) তাঁর পিতা মুহাম্মদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক হযরত আলীকে (রাঃ) বলেঃ “এখানে এমন একজন লোক রয়েছে যে আল্লাহর ইচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না।” তখন হযরত আলী (রাঃ) লোকটিকে ডেকে বলেনঃ “আচ্ছা বলতো, তোমার সৃষ্টি তোমার ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে, না আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে?” সে উত্তর দেয়ঃ “আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে। আবার তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি নিজের ইচ্ছায় রোগাক্রান্ত হও, না আল্লাহর ইচ্ছায় সে জবাবে বলেঃ “আল্লাহর ইচ্ছায়।” তিনি প্রশ্ন করেনঃ “রোগমুক্তি তোমার ইচ্ছায় হয়, না আল্লাহর ইচ্ছায়?” উত্তরে সে বলেঃ “আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “বলতো, এখন তিনি যেখানে ইচ্ছা তোমাকে নিয়ে যাবেন, না তুমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারবে?” জবাবে সে বলেঃ “তিনি যেখানে ইচ্ছা করবেন। তাহলে তার ইচ্ছার স্বাধীনতার ব্যাপারে আর বাকী থাকলো কি? জেনে রেখো যে, তুমি যদি এর বিপরীত জবাব দিতে তবে আমি তোমার মস্তক উড়িয়ে দিতাম।” (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা করে তখন শয়তান সরে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে এবং বলেঃ “হায়, আফসোস! ইবনু আদমকে সিজদা করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং সে সিজদা করেছে, ফলে সে জান্নাতী হয়েছে। পক্ষান্তরে, আমি এতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি, কাজেই আমি জাহান্নামী হয়ে গেছি।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) রিওয়াইয়াত করেছেন)
হযরত উব্বা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সূরায়ে হাজ্জকে অন্যান্য সূরার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কি এই হিসেবে যে, তাতে দুটি সিদা রয়েছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হা যে এ দুটি আয়াত পাঠ করে সিজ্দা করে না তার উচিত আয়তি দুটি পাঠই না করা। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযীও (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি সবল সবল নয়)
হযরত খালিদ ইবনু মা’দান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সূরায়ে হাজ্জকে অন্যান্য সূরা সমূহের উপর এই ফযীলত দেয়া হয়েছে যে, তাতে দুটি সিজুদা রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, অন্য সনদেও এটা বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু এটা বিশুদ্ধ নয়)
আবুল জাহাম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ) হুদায়বিয়ায় এই সূরাটি পাঠ করেন এবং দুটি সিজদা দেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “এই সূরাটিকে দু’টি সিজ্দার ফযীলত দেয়া হয়েছে।” (এটা হাফিজ আবু বকর ইসমাঈলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তঁাকে কুরআন কারীমে পনরোটি সিজ্দা পড়িয়ে দেন। তন্মধ্যে তিনটি সূরায়ে মুফাস্সালে এবং দুটি সূরায়ে হাজ্জে।” (এটা ইমাম আবূ দাউদ (রঃ) ও ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এগুলি এটাকে পূর্ণভাবে সবল করছে)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#943)
[ وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّعۡبُدُ اللّٰہَ عَلٰی حَرۡفٍ ۚ
And of the people is he who worships Allah on an edge.]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 08-18
www.motaher21.net
22:8
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ لَا ہُدًی وَّ لَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ ۙ﴿۸﴾
And of the people is he who disputes about Allah without knowledge or guidance or an enlightening book [from Him],
Clarifying the State of the Leaders of the Innovators and Those Who lead People astray
Allah has already told us about the ignorant imitators who are led astray:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيدٍ
And among mankind is he who disputes about Allah, without knowledge, and follows every rebellious Shaytan. (22:3)
And here He tells us about those who call others to misguidance, the leaders of disbelief and innovation:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُّنِيرٍ
And among men is he who disputes about Allah, without knowledge or guidance, or a Book giving light (from Allah).
meaning, with no correct rational thought, and no clear transmitted text; what they say is based only on their opinions and whims.
Allah’s saying
22:9
ثَانِیَ عِطۡفِہٖ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ لَہٗ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ نُذِیۡقُہٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿۹﴾
Twisting his neck [in arrogance] to mislead [people] from the way of Allah . For him in the world is disgrace, and We will make him taste on the Day of Resurrection the punishment of the Burning Fire [while it is said],
ثَانِيَ عِطْفِهِ
Bending his neck in pride,
Ibn Abbas and others said,
“Too proud to follow the truth when he is called to it.”
Mujahid, Qatadah and Malik said, narrating from Zayd bin Aslam:
ثَانِيَ عِطْفِهِ
(Bending his neck in pride),
means, twisting his neck, i.e., turning away from the truth to which he is called, bending his neck out of pride and arrogance.
This is like the Ayat:
وَفِى مُوسَى إِذْ أَرْسَلْنَـهُ إِلَى فِرْعَوْنَ بِسُلْطَـنٍ مُّبِينٍ فَتَوَلَّى بِرُكْنِهِ
And in Musa, when We sent him to Fir`awn with a manifest authority. But (Fir`awn) turned away along with his hosts. (51:38-39)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْاْ إِلَى مَأ أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَـفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُوداً
And when it is said to them:”Come to what Allah has sent down and to the Messenger,” you see the hypocrites turn away from you with aversion. (4:61)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْاْ يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ لَوَّوْاْ رُءُوسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّونَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ
And when it is said to them:”Come, so that the Messenger of Allah may ask forgiveness from Allah for you,” they twist their heads, and you would see them turning away their faces in pride. (63:5)
And Luqman said to his son:
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ
And turn not your face away from men with pride. (31:18)
meaning, do not turn away from them in an arrogant manner.
And Allah says:
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ ءَايَـتُنَا وَلَّى مُسْتَكْبِراً
And when Our verses are recited to him, he turns away in pride. (31:7)
لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ
and leading (others) too (far) astray from the path of Allah.
This either refers to those who are stubborn, or it means that the person who does this has been created like this so that he will be one of those who lead others astray from the path of Allah.
Then Allah says:
لَهُ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ
For him there is disgrace in this worldly life,
meaning, humiliation and shame, such as when he is too arrogant to heed the signs of Allah, so Allah will send humiliation upon him in this world and will punish him in this world, before he reaches the Hereafter, because this world is all he cares about and all he knows.
وَنُذِيقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَذَابَ الْحَرِيقِ
22:10
ذٰلِکَ بِمَا قَدَّمَتۡ یَدٰکَ وَ اَنَّ اللّٰہَ لَیۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِیۡدِ ﴿٪۱۰﴾
“That is for what your hands have put forth and because Allah is not ever unjust to [His] servants.”
ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ
and on the Day of Resurrection We shall make him taste the torment of burning. That is because of what your hands have sent forth,
means, this will be said to him by way of rebuke.
وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّمٍ لِّلْعَبِيدِ
and verily, Allah is not unjust to the servants.
This is like the Ayah:
خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاءِ الْجَحِيمِ
ثُمَّ صُبُّواْ فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ
ذُقْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْكَرِيمُ
إِنَّ هَـذَا مَا كُنتُمْ بِهِ تَمْتَرُونَ
(It will be said:) “Seize him and drag him into the midst of blazing Fire, Then pour over his head the torment of boiling water.
Taste you (this)! Verily, you were (pretending to be) the mighty, the generous! Verily, this is that whereof you used to doubt!” (44:47-50)
22:11
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّعۡبُدُ اللّٰہَ عَلٰی حَرۡفٍ ۚ فَاِنۡ اَصَابَہٗ خَیۡرُۨ اطۡمَاَنَّ بِہٖ ۚ وَ اِنۡ اَصَابَتۡہُ فِتۡنَۃُۨ انۡقَلَبَ عَلٰی وَجۡہِہٖ ۟ۚ خَسِرَ الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃَ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡخُسۡرَانُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۱۱﴾
And of the people is he who worships Allah on an edge. If he is touched by good, he is reassured by it; but if he is struck by trial, he turns on his face [to the other direction]. He has lost [this] world and the Hereafter. That is what is the manifest loss.
The meaning of worshipping Allah as it were upon the edge
Allah says:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ
And among mankind is he who worships Allah as it were upon the edge:if good befalls him, he is content therewith;
Mujahid, Qatadah and others said:
عَلَى حَرْفٍ
(upon the edge),
means, in doubt.
Others said that;
it meant on the edge, such as on the edge or side of a mountain, i.e., (this person) enters Islam on the edge, and if he finds what he likes he will continue, otherwise he will leave.
Al-Bukhari recorded that Ibn Abbas said:
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ
(And among mankind is he who worships Allah as it were upon the edge).
“People would come to Al-Madinah (to declare their Islam) and if their wives gave birth to sons and their mares gave birth to foals, they would say, `This is a good religion,’ but if their wives and their mares did not give birth, they would say, `This is a bad religion.”‘
Al-`Awfi reported that Ibn Abbas said,
“One of them would come to Al-Madinah, which was a land that was infected with a contagious disease. If he remained healthy there, and his mare foaled and his wife gave birth to a boy, he would be content, and would say, `I have not experienced anything but good since I started to follow this religion.”
وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ
but if a Fitnah strikes him,
Fitnah here means affliction, i.e., if the disease of Al-Madinah befalls him, and his wife gives birth to a babe girl and charity is delayed in coming to him, the Shaytan comes to him and says:”By Allah, since you started to follow this religion of yours, you have experienced nothing but bad things,” and this is the Fitnah.
This was also mentioned by Qatadah, Ad-Dahhak, Ibn Jurayj and others among the Salaf when explaining this Ayah.
Mujahid said, concerning the Ayah:
انقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ
he turns back on his face.
“(This means), he becomes an apostate and a disbeliever.”
خَسِرَ الدُّنْيَا وَالاْخِرَةَ
He loses both this world and the Hereafter.
means, he does not gain anything in this world. As for the Hereafter, he has disbelieved in Allah the Almighty, so he will be utterly doomed and humiliated.
So Allah says:
ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ
That is the evident loss.
i.e., the greatest loss and the losing deal.
22:12
یَدۡعُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَضُرُّہٗ وَ مَا لَا یَنۡفَعُہٗ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الضَّلٰلُ الۡبَعِیۡدُ ﴿ۚ۱۲﴾
He invokes instead of Allah that which neither harms him nor benefits him. That is what is the extreme error.
يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُ وَمَا لَا يَنفَعُهُ
He calls besides Allah unto that which can neither harm him nor profit him.
means, the idols, rivals, and false gods which he calls upon for help, support and provision — they can neither benefit him nor harm him.
ذَلِكَ هُوَ الضَّلَلُ الْبَعِيدُ
That is a straying far away.
22:13
یَدۡعُوۡا لَمَنۡ ضَرُّہٗۤ اَقۡرَبُ مِنۡ نَّفۡعِہٖ ؕ لَبِئۡسَ الۡمَوۡلٰی وَ لَبِئۡسَ الۡعَشِیۡرُ ﴿۱۳﴾
He invokes one whose harm is closer than his benefit – how wretched the protector and how wretched the associate.
يَدْعُو لَمَن ضَرُّهُ أَقْرَبُ مِن نَّفْعِهِ
He calls unto him whose harm is nearer than his profit;
means, he is more likely to harm him than benefit him in this world, and in the Hereafter he will most certainly cause him harm.
لَبِيْسَ الْمَوْلَى وَلَبِيْسَ الْعَشِيرُ
certainly an evil Mawla and certainly an evil `Ashir!
Mujahid said,
“This means the idols.”
The meaning is:
“How evil a friend is this one upon whom he calls instead of Allah as a helper and supporter.”
وَلَبِيْسَ الْعَشِيرُ
and certainly an evil `Ashir!
means the one with whom one mixes and spends one’s time
22:14
اِنَّ اللّٰہَ یُدۡخِلُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یُرِیۡدُ ﴿۱۴﴾
Indeed, Allah will admit those who believe and do righteous deeds to gardens beneath which rivers flow. Indeed, Allah does what He intends.
The Reward of the Righteous
Allah says:
إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الاَْنْهَارُ
Truly, Allah will admit those who believe and do righteous good deeds to Gardens underneath which rivers flow.
The mention of the misguided who are doomed is followed by mention of the righteous who are blessed.
They are those who believe firmly in their hearts and confirm their faith by their actions, doing all kinds of righteous deeds and avoiding evil actions. Because of this, they will inherit dwellings in the lofty ranks of the gardens of Paradise.
So Allah tells us that He sends those astray and guides these, and says:
إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
Verily, Allah does what He wills
22:15
مَنۡ کَانَ یَظُنُّ اَنۡ لَّنۡ یَّنۡصُرَہُ اللّٰہُ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ فَلۡیَمۡدُدۡ بِسَبَبٍ اِلَی السَّمَآءِ ثُمَّ لۡیَقۡطَعۡ فَلۡیَنۡظُرۡ ہَلۡ یُذۡہِبَنَّ کَیۡدُہٗ مَا یَغِیۡظُ ﴿۱۵﴾
Whoever should think that Allah will not support [Prophet Muhammad] in this world and the Hereafter – let him extend a rope to the ceiling, then cut off [his breath], and let him see: will his effort remove that which enrages [him]?
Allah will definitely help His Messenger
Allah says:
مَن كَانَ يَظُنُّ أَن لَّن يَنصُرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالاْخِرَةِ فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاء ثُمَّ لِيَقْطَعْ
Whoever thinks that Allah will not help him in this world and in the Hereafter, let him stretch out a rope to the ceiling and let him strangle himself.
Ibn Abbas said,
“Whoever thinks that Allah will not help Muhammad in this world and the Hereafter, let him stretch out a rope (
إِلَى السَّمَاء
to the ceiling), to the ceiling in his house, (
ثُمَّ لِيَقْطَعْ
and let him strangle himself), let him hang himself with it.”
This was also the view of Mujahid, Ikrimah, Ata’, Abu Al-Jawza, Qatadah and others.
The meaning is:
whoever thinks that Allah will not support Muhammad and His Book and His Religion, let him go and kill himself if it annoys him so much. For Allah will most certainly help and support him.
Allah says:
إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ فِى الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الاٌّشْهَـدُ
Verily, We will indeed make victorious Our Messengers and those who believe in this world’s life and on the Day when the witnesses will stand forth. (40:51)
Allah says here:
فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ
Then let him see whether his plan will remove that whereat he rages! As-
Suddi said,
“Meaning, in the case of Muhammad.”
Ata’ Al-Khurasani said,
“Let him see whether that will cure the rage he feels in his heart.”
22:16
وَ کَذٰلِکَ اَنۡزَلۡنٰہُ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یُّرِیۡدُ ﴿۱۶﴾
And thus have We sent the Qur’an down as verses of clear evidence and because Allah guides whom He intends.
وَكَذَلِكَ أَنزَلْنَاهُ
Thus have We sent it down, (the Qur’an),
ايَاتٍ بَيِّنَاتٍ
as clear Ayat,
clear in its wording and its meaning, evidence from Allah to mankind.
وَأَنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يُرِيدُ
and surely, Allah guides whom He wills.
He sends astray whomsoever He wills and He guides whomsoever He wills, and He has complete wisdom and definitive proof in doing so.
لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْـَلُونَ
He cannot be questioned about what He does, while they will be questioned. (21:23)
Because of His wisdom, mercy, justice, knowledge, dominion and might, no one can overturn His ruling, and He is swift in bringing to account
22:17
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ الَّذِیۡنَ ہَادُوۡا وَ الصّٰبِئِیۡنَ وَ النَّصٰرٰی وَ الۡمَجُوۡسَ وَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡۤا ٭ۖ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡصِلُ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ﴿۱۷﴾
Indeed, those who have believed and those who were Jews and the Sabeans and the Christians and the Magians and those who associated with Allah – Allah will judge between them on the Day of Resurrection. Indeed Allah is, over all things, Witness.
Allah will judge between the Sects on the Day of Resurrection
Allah says:
إِنَّ الَّذِينَ امَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالصَّابِيِينَ وَالنَّصَارَى وَالْمَجُوسَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا إِنَّ اللَّهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
Verily, those who believe, and those who are Jews, and the Sabians, and the Christians, and the Majus, and those who worship others besides Allah; truly, Allah will judge between them on the Day of Resurrection.
Verily, Allah is over all things a Witness.
Allah tells us about the followers of these various religions, the believers (Muslims) and others such as the Jews and Sabians.
We have already seen a definition of them in Surah Al-Baqarah and have noted how people differ over who they are. There are also the Christians, Majus and others who worship others alongside Allah. Allah will (
يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
judge between them on the Day of Resurrection) with justice;
He will admit those who believed in Him to Paradise and will send those who disbelieved in Him to Hell, for He is a Witness over their deeds, and He knows all that they say and all that they do in secret, and conceal in their breast
22:18
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یَسۡجُدُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ وَ النُّجُوۡمُ وَ الۡجِبَالُ وَ الشَّجَرُ وَ الدَّوَآبُّ وَ کَثِیۡرٌ مِّنَ النَّاسِ ؕ وَ کَثِیۡرٌ حَقَّ عَلَیۡہِ الۡعَذَابُ ؕ وَ مَنۡ یُّہِنِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ مُّکۡرِمٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ ﴿ؕٛ۱۸﴾
Do you not see that to Allah prostrates whoever is in the heavens and whoever is on the earth and the sun, the moon, the stars, the mountains, the trees, the moving creatures and many of the people? But upon many the punishment has been justified. And he whom Allah humiliates – for him there is no bestower of honor. Indeed, Allah does what He wills.
Everything prostrates to Allah
Allah tells us that He alone, with no partner or associate, is deserving of worship. Everything prostrates to His might, willingly or unwillingly, and everything prostrates in a manner that befits its nature, as Allah says:
أَوَ لَمْيَرَوْاْ إِلَىخَلَقَ اللَّهُ مِن شَىْءٍ يَتَف
[4/7, 4:42 PM] Engr Motaher: 22:18
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یَسۡجُدُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ وَ النُّجُوۡمُ وَ الۡجِبَالُ وَ الشَّجَرُ وَ الدَّوَآبُّ وَ کَثِیۡرٌ مِّنَ النَّاسِ ؕ وَ کَثِیۡرٌ حَقَّ عَلَیۡہِ الۡعَذَابُ ؕ وَ مَنۡ یُّہِنِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ مُّکۡرِمٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ ﴿ؕٛ۱۸﴾
Do you not see that to Allah prostrates whoever is in the heavens and whoever is on the earth and the sun, the moon, the stars, the mountains, the trees, the moving creatures and many of the people? But upon many the punishment has been justified. And he whom Allah humiliates – for him there is no bestower of honor. Indeed, Allah does what He wills.
Everything prostrates to Allah
Allah tells us that He alone, with no partner or associate, is deserving of worship. Everything prostrates to His might, willingly or unwillingly, and everything prostrates in a manner that befits its nature, as Allah says:
أَوَ لَمْيَرَوْاْ إِلَىخَلَقَ اللَّهُ مِن شَىْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَـلُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالْشَّمَأيِلِ سُجَّدًا لِلَّهِ وَهُمْ
Have they not observed things that Allah has created:(how) their shadows incline to the right and to the left, making prostration unto Allah, and they are lowly. (16:48)
And Allah says here:
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الاَْرْضِ
See you not that whoever is in the heavens and whoever is on the earth prostrate themselves to Him,
means, the angels in the regions of the heavens, and all the living creatures, men, Jinn, animals and birds.
وَإِن مِّن شَىْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ
and there is not a thing but glorifies His praise. (17:44)
وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ
and the sun, and the moon, and the stars,
These are mentioned by name, because they are worshipped instead of Allah, so Allah explains that they too prostrate to their Creator and that they are subjected to Him.
لَا تَسْجُدُواْ لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُواْ لِلَّهِ الَّذِى خَلَقَهُنَّ
Prostrate yourselves not to the sun nor to the moon, but prostrate yourselves to Allah Who created them. (41:37)
In the Two Sahihs it was recorded that Abu Dharr said,
“The Messenger of Allah said to me,
أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ هَذِهِ الشَّمْسُ
Do you know where this sun goes?
I said, `Allah and His Messenger know best.’
He said,
فَإِنَّهَا تَذْهَبُ فَتَسْجُدُ تَحْتَ الْعَرْشِ ثُمَّ تَسْتَأْمِرُ فَيُوشِكُ أَنْ يُقَالَ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِيْت
It goes (sets) and prostrates beneath the Throne, then it awaits the command. Soon it will be told,
“Go back the way whence you came.””
وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ
and the mountains, and the trees,
Ibn Abbas said, “A man came and said,
`O Messenger of Allah, I saw myself in a dream last night, as if I was praying behind a tree. I prostrated, and the tree prostrated when I did, and I heard it saying,
“O Allah, write down a reward for me for that, and remove a sin from me for that, store it with You for me and accept it from me as You accepted from Your servant Dawud.”‘
Ibn Abbas said,
“The Messenger of Allah recited an Ayah mentioning a prostration, then he prostrated, and I heard him saying the same words that the man had told him the tree said.”
This was recorded by At-Tirmidhi, Ibn Majah, and Ibn Hibban in his Sahih.
وَالدَّوَابُّ
Ad-Dawabb,
means all the animals.
It was reported in a Hadith recorded by Imam Ahmad that;
the Messenger of Allah forbade using the backs of animals as platforms for speaking, for, perhaps the one who was being ridden was better and remembered Allah more than the one who was riding.
وَكَثِيرٌ مِّنَ النَّاسِ
and many of mankind,
means, they prostrate willingly, submitting themselves to Allah of their own free will.
وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ
But there are many (men) on whom the punishment is justified.
means, those who refuse prostration, are stubborn and arrogant.
وَمَن يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاء
And whomsoever Allah disgraces, none can honor him. Verily, Allah does what He wills.
It was recorded that Abu Hurayrah said,
“The Messenger of Allah said:
إِذَا قَرَأَ ابْنُ ادَمَ السَّجْدَةَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِي يَقُولُ
يَا وَيْلَهُ أُمِرَ ابْنُ ادَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّار
When the son of Adam recites the Ayat containing the prostration, the Shaytan withdraws weeping and says,
“Ah! Woe (to me)! the son of Adam was commanded to prostrate and he prostrated, so Paradise is his; I was commanded to prostrate and I refused, so I am doomed to Hell.”
This was recorded by Muslim.
In his book Al-Marasil, Abu Dawud recorded that Khalid bin Ma`dan, may Allah have mercy upon him, reported that Allah’s Messenger said,
فُضِّلَتْ سُورَةُ الْحَجِّ عَلَى سَايِرِ الْقُرْانِ بِسَجْدَتَيْن
“Surah Al-Hajj has been favored over the rest of the Qur’an with two prostrations.”
Al-Hafiz Abu Bakr Al-Isma`ili recorded from Abu Al-Jahm that;
Umar did the two prostrations of (Surah) Al-Hajj when he was in Al-Jabiyah, and he said,
“This Surah has been favored with two prostrations.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran