أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪৪)
[ وَ هُدُوْۤا اِلَى الطَّیِّبِ مِنَ الْقَوْلِ١ۖۚ
তাদেরকে পবিত্র কথা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
১৯-২৪ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:১৯
ہٰذٰنِ خَصۡمٰنِ اخۡتَصَمُوۡا فِیۡ رَبِّہِمۡ ۫ فَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا قُطِّعَتۡ لَہُمۡ ثِیَابٌ مِّنۡ نَّارٍ ؕ یُصَبُّ مِنۡ فَوۡقِ رُءُوۡسِہِمُ الۡحَمِیۡمُ ﴿ۚ۱۹﴾
এরা দু’টি বিবদমান দল; তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে। সুতরাং যারা অবিশ্বাস করে, তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি।
২২:২০
یُصۡہَرُ بِہٖ مَا فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ وَ الۡجُلُوۡدُ ﴿ؕ۲۰﴾
যার ফলে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে।
২২:২১
وَ لَہُمۡ مَّقَامِعُ مِنۡ حَدِیۡدٍ ﴿۲۱﴾
আর তাদের জন্যে থাকবে লৌহনির্মিত হাতুড়িসমূহ।
২২:২২
کُلَّمَاۤ اَرَادُوۡۤا اَنۡ یَّخۡرُجُوۡا مِنۡہَا مِنۡ غَمٍّ اُعِیۡدُوۡا فِیۡہَا ٭ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿٪۲۲﴾
যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে তাতে; এবং বলা হবে, ‘আস্বাদন কর দহন-যন্ত্রণা।
২২:২৩
اِنَّ اللّٰہَ یُدۡخِلُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ یُحَلَّوۡنَ فِیۡہَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَہَبٍ وَّ لُؤۡلُؤًا ؕ وَ لِبَاسُہُمۡ فِیۡہَا حَرِیۡرٌ ﴿۲۳﴾
যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেথায় তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ-কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা এবং সেথায় তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
২২:২৪
وَ ہُدُوۡۤا اِلٰی الطَّیِّبِ مِنَ الۡقَوۡلِ ۚۖ وَ ہُدُوۡۤا اِلَی صِرَاطِ الۡحَمِیۡدِ ﴿۲۴﴾
তাদেরকে পবিত্র কথা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে দেখানো হয়েছে শ্রেষ্ঠ গুণাবলী সম্পন্ন আল্লাহর পথ।
১৯-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:
(هٰذٰنِ خَصْمٰنِ اخْتَصَمُوْا فِيْ رَبِّهِمْ…) শানে নুযূল:
সাহাবী আবূ যার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াত হামযা (رضي الله عنه) ও তার দুই কাফির প্রতিদ্বন্দ্বী উবাইদা ও হারেস এবং আলী (رضي الله عنه) ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী উতবাহ ও শাইবাহ প্রমুখের ব্যাপারে বদরের যুদ্ধের দিন নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪৩, সহীহ মুসলিম হা: ৩০৩৩)
(هٰذٰنِ خَصْمٰنِ)
‘এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ’ অর্থাৎ ১৭ নং আয়াতে উল্লিখিত বিভিন্ন দলের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: এ দু’ দল তথা মু’মিনদের দল ও অন্য (ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক, সাবেয়ী ও মুশরিক) সকল কাফিরদের দল সবাই দাবী করে, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যারা কাফির (ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক, সাবেয়ী ও মুশরিক) তাদের জন্য জাহান্নামের আগুনের পোশাক প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে এবং জাহান্নামে তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢেলে দেয়া হবে। পানি এত গরম হবে যে, তাদের পেটে যা কিছু আছে এবং তাদের গায়ের চামড়া গলে যাবে। আর জাহান্নামের ফেরেশতাদের হাতে লোহার হাতুড়ি থাকবে যা দ্বারা তাদের মাথায় আঘাত করবে। যখনই জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখন ফেরেশতারা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে আবার জাহান্নামে ফিরিয়ে দিবে আর তিরস্কার করে বলবেন জাহান্নামের শাস্তি আস্বাদন কর। জাহান্নামীদের জন্য আগুনের পোশাক সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(سَرَابِيْلُهُمْ مِّنْ قَطِرَانٍ وَّتَغْشٰي وُجُوْهَهُمُ النَّارُ)
“তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল; (সূরা ইবরাহীম ১৪:৫০) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(أُولٰ۬ئِكَ الَّذِيْنَ أُبْسِلُوْا بِمَا كَسَبُوْا ج لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ أَلِيْمٌۭ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)
“এরাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হবে; কুফরীর কারণে এদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানীয় ও মর্মন্তুদ শাস্তি।” (সূরা আন‘আম ৬:৭০) জাহান্নামীদের পানীয় হিসেবে থাকবে গরম পানি যা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنْ يَّسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَا۬ءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوْهَ)
“তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে।” (সূরা কাহফ ১৮:২৯) ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: (শানে নুযূল ও তাফসীরে বর্ণিত কথা) উভয়ই ঠিক এবং আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যশীল।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেকেই দাবী করে তারা সঠিক পথের ওপর রয়েছে কিন্তু যাদের কোন সঠিক দলীল নেই তাদের দাবী গ্রহণযোগ্য নয়।
২. জাহান্নামীদের শাস্তির বিবরণ জানতে পেলাম।
৩. জাহান্নামীদের শাস্তি দেয়ার জন্য দায়িত্বশীল ফেরেশতা থাকবে।
২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
জাহান্নামীদের দুর্দশা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা যারা ঈমানদার ও সৎ কর্মপরায়ণ তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বর্ণনা নিয়ে এসেছেন। যারা সৎ কর্ম করবে ও ঈমান আনবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নীচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। সেথায় তাদেরকে অলঙ্কৃত করা হবে স্বর্ণের কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা এবং সেথায় তাদের পোশাক হবে রেশমের। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(عٰلِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَّإِسْتَبْرَقٌ ز وَّحُلُّوْآ أَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ ج وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُوْرًا – إِنَّ هٰذَا كَانَ لَكُمْ جَزَا۬ءً وَّكَانَ سَعْيُكُمْ مَّشْكُوْرًا)
“তাদের পরিধানে থাকবে মিহি রেশমের সবুজ পোশাক ও মোটা রেশম এবং তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণে, আর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়। অবশ্যই, এটা তোমাদের পুরস্কার এবং তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা স্বীকৃত।” (সূরা দাহর ৭৬:২১-২২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মু’মিনের অযুর পানি যে পর্যন্ত পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলংকার পৌঁছবে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫০)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
তাদেরকে দুনিয়াতে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হয়েছিল। সে পবিত্র বাক্য হল তাওহীদের কালেমা ও আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সম্বলিত কথা। আর তারা পরিচালিত হয়েছিল সৎ পথে। তাই তারা সেখানেও পবিত্র বাক্য ব্যতীত আর কোন অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأُدْخِلَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ ط تَحِيَّتُهُمْ فِيْهَا سَلٰمٌ)
“যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে তাদেরকে দাখিল করানো হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেথায় তারা স্থায়ী হবে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, সেথায় তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:২৩) এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসেও আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আখিরাতে সৌভাগ্যবান হওয়ার জন্য শর্ত হল দুনিয়াতে ভাল কাজ করা।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# এখানে আল্লাহ সম্পর্কে বিরোধকারী সমস্ত দলগুলোকে তাদের সংখ্যাধিক্য সত্ত্বেও দু’টি পক্ষে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি পক্ষ নবীদের কথা মেনে নিয়ে আল্লাহর সঠিক বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে। দ্বিতীয় পক্ষ নবীদের কথা মানে না এবং তারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে। তাদের মধ্যে বহু মতবিরোধ রয়েছে এবং তাদের কুফরীর বিভিন্ন বিচিত্র রূপও পরিগ্রহ করেছে।
# ভবিষ্যতে যে বিষয়টির ঘটে যাওয়া একেবারে সুনিশ্চিত তার প্রতি জোর দেবার জন্য সেটি এমনভাবে বর্ণনা করা হয় যেন তা ঘটে গেছে। আগুনের পোশাক বলতে সম্ভবত এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যাকে সূরা ইবরাহীমের ৫০ আয়াতে سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ বলা হয়েছে।
সুরা: ইবরাহীম
আয়াত নং :-৫০
سَرَابِیْلُهُمْ مِّنْ قَطِرَانٍ وَّ تَغْشٰى وُجُوْهَهُمُ النَّارُۙ
আলকাতরার পোশাক পরে থাকবে এবং আগুনের শিখা তাদের চেহারা ঢেকে ফেলতে থাকবে।
# কোন কোন অনুবাদক ও ব্যাখ্যাদাতা قَطِرَانٍ শব্দের অর্থ করেছেন গন্ধক আবার কেউ কেউ করেছেন গলিত তামা। কিন্তু আসলে আরবী ভাষায় “কাতেরান” শব্দটি আলকাতরা, গালা ইত্যাদির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
# তাদেরকে রাজকীয় ও ঝাঁকালো পোশাক পরানো হবে, এ ধারণা দেওয়াই এখানে উদ্দেশ্য। কুরআন নাযিলের যুগে রাজা-বাদশাহ ও বড় বড় ধনীরা সোনা ও মনি-মুক্তার অলংকার পরতেন। আমাদের যুগেও উপমহাদেশের রাজা-মহারাজা ও নওয়াবরাও এ ধরনের অলংকার পরতেন।
# যদিও পবিত্র কথা শব্দের অর্থ ব্যাপক কিন্তু এখানে এর অর্থ হচ্ছে সে কালেমায়ে তাইয়েবা ও সৎ আকীদ-বিশ্বাস যা গ্রহণ করে সে মু’মিন হয়েছে।
# যেমন ইতিপূর্বে ভূমিকায় বলা হয়েছে, আমার মতে এখানে সূরার মক্কী যুগে অবতীর্ণ অংশ শেষ হয়ে যায়। এ অংশের বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী মক্কী সূরাগুলোর মতো। এর মধ্যে এমন কোন আলামতও নেই যা থেকে সন্দেহ করা যেতে পারে যে, সম্ভবত এর পুরো অংশটি বা এর কোন একটি অংশ মাদানী যুগে নাযিল হয়। শুধুমাত্র এ هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ (এ দু’টি দল যাদের মধ্যে তাদের রবের ব্যাপারে বিরোধ আছে) আয়াতটির ব্যাপারে কোন কোন তাফসীরকার একথা বলেন যে, এটি মাদানী আয়াত। কিন্তু তাদের এ বক্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে শুধুমাত্র এই যে, তারা বদর যুদ্ধের দুই পক্ষকে এখানে দুই পক্ষ ধরেছেন। অথচ এটি কোন মজবুদ ভিত্তি নয়। কারণ এখানে যে দুই পক্ষের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এর আগে ও পরে এমন কোন জিনিস নেই যা থেকে এ ইঙ্গিতকে বদর যুদ্ধের দুই পক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায়। শব্দগুলোর অর্থ ব্যাপক এবং পরবর্তী ইবারত পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, এখানে কুফর ও ঈমানের এমন বিরোধের কথা বলা হয়েছে যা শুরু থেকে চলে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এর সম্পর্ক যদি বদর যুদ্ধের দুই পক্ষের সাথে থাকতো তাহলে এর জায়গা হতো সূরা আনফালে, এ সূরায় নয় এবং এ বক্তব্য ধারার মধ্যেও নয়। এ তাফসীর পদ্ধতি যদি সঠিক বলে মেনে নেয়া হয় তাহলে এর অর্থ হবে, কুরআনের আয়াতগুলো একেবারে বিক্ষিপ্তভাবে নাযিল হয়েছে এবং তারপর সেগুলোকে কোন প্রকার সম্পর্ক সম্বন্ধ ছাড়াই এমনিই যেখানে ইচ্ছা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপনা ও শৃংখলা এ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*কাফেরদের মর্মান্তিক শাস্তির কিছু দৃশ্য : এরপর তুলে ধরা হচ্ছে কেয়ামতের একটা দৃশ্যকে একটা বাস্তব ও চাক্ষুস দৃশ্য হিসেবে। এতে সম্মান ও অবমাননার চিত্র ফুটে উঠেছে, ‘এই হচ্ছে দুই বিবদমান দল…'(আয়াত ১৯-২৩) এ আয়াতগুলােতে একটা মর্মান্তিক দৃশ্য দেখানাে হয়েছে। যা তৎপরতায়ও পরিপূর্ণ এবং প্রেরণাময় কল্পনাও তাকে দীর্ঘায়িত করেছে। একদিকে আগুনের তৈরী পােশাক কেটে প্রস্তুত করা হয়েছে। অপরদিকে মাথায় ঢালার জন্যে গরম পানি প্রস্তুত, যা মাথায় ঢালা মাত্রই চামড়া ও নাড়িভুড়ি গলে যায়। এর পাশাপাশি রয়েছে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত লােহার লাঠি। আযাব ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে, অসহনীয় হয়ে উঠছে। ফলে কষ্টের দরুণ এক একবার জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু আবার তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হয় এবং ধমক দিয়ে বলা হয়, ‘দগ্ধীভূত হওয়ার আযাব ভুগতে থাকো।’ কল্পনায় এই দৃশ্যকে যেন বারবার দেখানাে হয়, ফলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও ফেরত পাঠানাের ভয়াবহ অবস্থা পর্যন্ত পৌঁছে যায় যাতে পুনরায় দৃশ্যটা দেখানাে যায়। কল্পনায় এই ভয়াবহ ক্রমবর্ধমান আযাবের দৃশ্য দেখাতে গিয়ে অপরদিকটা দেখানাে বাদ রাখা হয়নি। কেননা আসল বিষয়টি এই যে, আল্লাহর সামনে দুটো বিবদমান দল দাঁড়িয়ে যাবে। একটা হলাে কাফেরদের দল, যাদের মর্মান্তিক পরিণতির দৃশ্য আমরা এই মাত্র দেখলাম। অপর দলটা মােমেনদের। তারা সেখানে জান্নাতে থাকবে। সেই জান্নাতের নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে। তাদের পােশাক আগুনের নয় রেশমের। তদুপরি তারা আরাে বহু নয়নাভিরাম মনিমুক্তা ও স্বর্ণের অলংকারে সজ্জিত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে প্রশংসনীয় কাজ ও উত্তম কথা বলার পথে চালিত করেছিলেন। তাই তাদের সৎ কথা ও সৎ কাজে কোনাে কষ্ট হয়নি। ভালাে কথা ও ভালাে কাজ করার পথের সন্ধান পাওয়া একটা উল্লেখযােগ্য নেয়ামত, যা সুখ শান্তির উপকরণগুলাের অন্যতম। আল্লাহকে নিয়ে দ্বন্দ্বের এ হচ্ছে শেষ পরিণতি। দুই দলের দুই ধরনের পরিণতি। কাজেই সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী যার জন্য যথেষ্ট হয় না, তার এই পরিণতির দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। যারা কোনাে জ্ঞান ও প্রমাণ ছাড়া আল্লাহকে নিয়ে বাদানুবাদ করে, এ পরিণতি থেকে তাদের জন্যে যথেষ্ট শিক্ষণীয় রয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:
বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু যার (রাঃ) শপথ করে বলতেনঃ (আরবী) এই আয়াতটি হযরত হামযা (রাঃ) ও তাঁর দু’জন কাফির প্রতিদ্বন্দ্বী যারা বদরের যুদ্ধে তার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেমেছিল এবং উত্তা’ ও তার দুই সঙ্গীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়।” (এটা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করা হয়েছে)
হযরত কায়েস ইবনু ইবাদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) বলেনঃ “আমি কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমার যুক্তি পেশ করার জন্যে আল্লাহ তাআলার সামনে হাঁটুর ভরে পড়ে যাবো। হযরত কায়েস (রাঃ) বলেন যে, তার ব্যাপারেই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) বদরের যুদ্ধের দিন এই লোকগুলি একে অপরের সামনে এসেছিল। মুসলমানদের পক্ষ হতে ছিলেন হযরত আলী (রাঃ), হযরত হামযা (রাঃ) ও হযরত উবাইদাহ্ (রাঃ) এবং তাদের মুকাবিলায় কাফিরদের পক্ষ হতে এসেছিল যথাক্রমে শায়বা উবা’ এবং ওয়ালীদ। অন্য একটি উক্তি রয়েছে যে, এই দুটি বিবাদমান দল দ্বারা মুসলমান ও আহলে কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। আহলে কিতাব মুসলমানদেরকে বলতোঃ “আমাদের নবী (আঃ) তোমাদের নবীর (সঃ) পূর্বে এসেছিলেন এবং আমাদের আসমানী কিতাব তোমাদের আসমানী কিতাবের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের অপেক্ষা আমরাই আল্লাহ তাআলার বেশী নিকটবর্তী। পক্ষান্তরে, মুসলমানরা তাদেরকে বলতেনঃ “আমাদের কিতাব তোমাদের কিতাবের ফায়সালাকারী এবং আমাদের নবী (সঃ) হলেন খাতেমুল আম্বিয়া। কাজেই আমরা তোমাদের চেয়ে উত্তম।” অতঃপর মহান আল্লাহ ইসলামকে জয়যুক্ত করেন এবং এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতে মু’মিন ও কাফিরের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে যারা কিয়ামত সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নামের উক্তি উদ্দেশ্য। জাহান্নাম প্রার্থনা করেছিল। “আমাকে শাস্তির মাধ্যম বানিয়ে দিন!” আর জান্নাত আবেদন জানিয়েছিলঃ “আমাকে রহমত (এর মাধ্যম) করুন।” মুজাহিদের (রঃ) উক্তি এই সমুদয় উক্তিকে অন্তর্ভূক্ত করে। বদরের ঘটনাও এরই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মু’মিনরা আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনা করছিলেন। আর কাফিররা ঈমানের জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে, সত্যের পতন ঘটাতে এবং বাতিলকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছিল। ইমাম ইবনু জারিরও (রঃ) মুজাহিদের (রঃ) উক্তিটিই পছন্দ করেছেন এবং এটা অতি উত্তমও বটে। কেননা, এরপরেই রয়েছে যে, কাফিরদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক। এটা হবে তামার আকৃতি বিশিষ্ট। আর তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। এর ফলে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত হয়ে যাবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তাদের মাথার উপর গরম ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের নাড়িভূঁড়ি ইত্যাদি পেট থেকে বেরিয়ে পায়ের উপর পড়ে যাবে। তারপর যেমন ছিল তেমনই হয়ে যাবে। আবার এইরূপ করা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আবদুল্লাহ ইবনু সুররী (রঃ) বলেন যে, ফেরেশতা গরম পানির ঐ বাতিকে ওর কড়া দুটি ধরে আনয়ন করবেন এবং জাহান্নামীর মুখে ঢেলে দিতে চাইবেন। তখন সে হত বুদ্ধি হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ফেরেশতা তখন তার মাথার উপর লোহার হাতুড়ী মারবেন। ফলে তার মাথা ফেটে যাবে। সেখান দিয়ে ফেরেশতা ঐ ফুটন্ত পানি ঢেলে দিবেন এবং ওটা সরাসরি তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করবে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে হাতুড়ীগুলি দ্বারা জাহান্নামীদেরকে মারা হবে, যদি ওগুলির একটি যমীনে এনে রেখে দেয়া হয় তবে সমস্ত দানব ও মানব মিলেও তা উঠাতে সক্ষম হবে না। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)। বলেছেনঃ “যদি ঐ হাতুড়ি দ্বারা হাড়ের উপর মারা হয় তবে তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ঐভাবে জাহান্নামীদের দেহও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর যেমন ছিল তেমনই করে দেয়া হবে। যে রক্ত পূজ জাহান্নামীদের খাদ্য হবে যদি ওর এক বাতি দুনিয়ায় বহিয়ে দেয়া হয় তবে ওর দুর্গন্ধে সমস্ত দুনিয়াবাসী ধ্বংস হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐ হাতুড়ির আঘাত লাগা মাত্রই জাহান্নামীদের দেহের এক একটি অঙ্গ খসে পড়বে এবং সে হায়! হায়! বলে চীৎকার করবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
হযরত সালমান (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামের আগুন হবে কঠিন কালো ও ভীষণ অন্ধকারময়। ওর শিখাও উজ্জ্বল নয় এবং ওর অঙ্গারও আলোকোজ্জ্বল হবে না। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। হযরত যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) বলেন যে, জাহান্নামী তাতে শ্বাসও নিতে পারবে না।
হযরত ফু্যাইল ইবনু আইয়ায (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর শপথ! জা হান্নামীদের সেখান থেকে ছুটবার কোন আশাও থাকবে না। তাদের পায়ে থাকবে ভারী বেড়ি এবং হাতে থাকবে শক্ত হাত কড়া। তবে অগ্নি শিখা তাদেরকে এতো উচুতে উঠিয়ে দেবে যে, যেন তারা বাইরে বেরিয়েই যায়। আর কি! কিন্তু ফেরেশতাদের ঘনের আঘাত খেয়ে তারা নীচে পড়ে যাবে। তাদেরকে বলা হবেঃ এখন আস্বাদ গ্রহণ কর দহন-যন্ত্রণা। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদেরকে বলা হবে তোমরা ঐ আগুনের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে।” তোমরা ওটাকে মিথ্যা জানতে কথা ও কাজে উভয় দিক দিয়েই।
২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
উপরে জাহান্নামীদের এবং তাদের শাস্তি, তাদের পায়ের শৃংখল, হাতের কড়া, তাদের আগুনে জ্বলে যাওয়া এবং তাদের আগুনের পোষাক হওয়া ইত্যাদি বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা এখন জান্নাতের তথাকার নিয়ামতরাজি এবং ওর অধিবাসীদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া প্রার্থনা করছি। তিনি বলেনঃ যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন, যার প্রাসাদ ও বাগ-বাগিচার চতুর্দিকে পানির নহর প্রবাহিত রয়েছে। তারা যেদিকে চাইবেসে দিকেই ওকে ফিরাতে পারবে। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ কংকন ও মনি মুক্তা দ্বারা।
নবী (সঃ) বলেছেনঃ “মু’মিনের অংলকার ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে যে পর্যন্ত তার অযুর পানি পৌঁছে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে) হযরত কা’ব আহ্বার (রঃ) বলেনঃ “বেহেশতে একজন ফেরেশতা রয়েছেন যার নামও আমার জানা আছে, তিনি জন্মের পর হতেই মুমিনদের জন্যে অলংকার তৈরী করতে রয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ কাজেই লেগে থাকবেন। যদি ঐ কংকন গুলির মধ্যে একটি কংকনও দুনিয়ায় প্রকাশ পায় তবে সূর্যের কিরণ এমনভাবে হারিয়ে যাবে যেমন ভাবে ওর উদয়ের পর চন্দ্রের কিরণ হারিয়ে যায়।
উপরে জাহান্নামীদের পোশাকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে জান্নাতীদের পোষাকের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেথায় তাদের পোষাক পরিচ্ছদ হবে রেশমের। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্কুল রেশম, তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়। অবশ্য, এটাই তোমাদের পুরস্কার এবং তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা স্বীকৃত।” (৭৬:২১-২২)
সহীহ্ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা রেশম পরিধান করো না। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশম (এর পোশাক) পরিধান করবে, সে আখেরাতে এর থেকে বঞ্চিত হবে।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ঐ দিন (আখেরাতে) রেশমী পোষাক থেকে বঞ্চিত থাকবে সে জান্নাতে যাবে না। কেননা, জান্নাতীদের পোষাক তো এটাই হবে।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হয়েছিল। যেমন অন্যত্র তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবিষ্ট করা হবে বেহেশতে যার নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত থাকবে, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম।” (১৪:২৩) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “প্রত্যেক দরজা দিয়ে ফেরেশতারা তাদের কাছে প্রবেশ করবে এবং সালাম করে বলবেঃ তোমাদের ধৈর্যের পরিণাম কতই না উত্তম হলো!” অন্য এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেথায় তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য ‘সালাম’ আর সালাম ব্যতীত।” (৫৬:২৫-২৬)
সুতরাং তাদেরকে এমন জায়গা দেয়া হলো যেখানে শুধু মনোমুগ্ধকর শব্দ ও সালাম’ আর ‘সালাম’ই তারা শুনতে পাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।” (২৫৪ ৭৫) অপরপক্ষে জাহান্নামীদেরকে সদা ধমক ও শাসন গর্জন করা হবে এবং বলা হবেঃ “আস্বাদ কর দহন যন্ত্রণা।’
মহান আল্লাহ বলেনঃ তাদেরকে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হয়েছিল এবং তারা পরিচালিত হয়েছিল পরম প্রশংসাভাজন আল্লাহর পথে ।’ তারা অত্যন্ত আনন্দিত হবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের মুখ দিয়ে বের হবে আল্লার প্রশংসা। কেননা তথায় তারা অগণিত ও অতুলনীয় নিয়ামত লাভ করবে।
সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “যেমন বিনা ইচ্ছায় ও বিনা কষ্টে শ্বাস-প্রশ্বাস আসে ও যায়, অনুরূপভাবে জান্নাতীদের প্রতি তাসবীহ্ ও প্রশংসার ইলহাম হবে। কোন কোন তাফসীরকারের উক্তি এই যে, (আরবী) দ্বারা কুরআন কারীমকে ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে বুঝানো হয়েছে এবং হাদীসের অন্যান্য যিকেও বুঝানো হয়েছে। আর (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসলামী পথ। এই তাফসীরও প্রথম তাফসীরের বিপরীত নয়।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#944)
[ وَ اِلَى الطَّیِّبِ مِنَ الْقَوْلِ١ۖۚ
And they are guided unto goodly speech.]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 19-24
www.motaher21.net
22:19
ہٰذٰنِ خَصۡمٰنِ اخۡتَصَمُوۡا فِیۡ رَبِّہِمۡ ۫ فَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا قُطِّعَتۡ لَہُمۡ ثِیَابٌ مِّنۡ نَّارٍ ؕ یُصَبُّ مِنۡ فَوۡقِ رُءُوۡسِہِمُ الۡحَمِیۡمُ ﴿ۚ۱۹﴾
These are two adversaries who have disputed over their Lord. But those who disbelieved will have cut out for them garments of fire. Poured upon their heads will be scalding water
The Reason for Revelation
Allah tells:
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ
These two opponents dispute with each other about their Lord;
It was recorded in the Two Sahihs that Abu Dharr swore that this Ayah —
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ
(These two opponents dispute with each other about their Lord;)
was revealed concerning Hamzah and his two companions, and Utbah and his two companions, on the day of Badr when they came forward to engage in single combat.
This is the wording of Al-Bukhari in his Tafsir of this Ayah.
Then Al-Bukhari recorded that Ali bin Abi Talib said,
“I will be the first one to kneel down before the Most Merciful so that the dispute may be settled on the Day of Resurrection.”
Qays (sub-narrator) said, “Concerning them the Ayah was revealed:
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ
(These two opponents dispute with each other about their Lord),
He (Qays) said,
“They are the ones who came forward (for single combat) on the day of Badr:
Ali, Hamzah and Ubaydah
vs.,
Shaybah bin Rabi`ah, Utbah bin Rabi`ah and Al-Walid bin `Utbah.”
This was reported only by Al-Bukhari.
Ibn Abi Najih reported that Mujahid commented on this Ayah,
“Such as the disbeliever and the believer disputing about the Resurrection.”
According to one report Mujahid and Ata’ commented on this Ayah,
“This refers to the believers and the disbelievers.”
The view of Mujahid and Ata’ that this refers to the disbelievers and the believers, includes all opinions, the story of Badr as well as the others. For the believers want to support the religion of Allah, while the disbelievers want to extinguish the light of faith and to defeat the truth and cause falsehood to prevail.
This was the view favored by Ibn Jarir, and it is good.
The Punishment of the Disbelievers
Allah says:
فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ
then as for those who disbelieved, garments of fire will be cut out for them,
meaning, pieces of fire will be prepared for them.
Sa`id bin Jubayr said:
“Of copper, for it is the hottest of things when it is heated.”
يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُوُوسِهِمُ الْحَمِيمُ
يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ
22:20
یُصۡہَرُ بِہٖ مَا فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ وَ الۡجُلُوۡدُ ﴿ؕ۲۰﴾
By which is melted that within their bellies and [their] skins.
boiling water will be poured down over their heads. With it will melt (or vanish away) what is within their bellies, as well as (their) skins.
meaning, when the boiling water –which is water that has been heated to the ultimate degree- is poured down over their heads.
Ibn Jarir recorded from Abu Hurayrah that the Prophet said:
إِنَّ الْحَمِيمَ لَيُصَبُّ عَلَى رُوُوسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْجُمْجُمَةَ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلُتَ مَا فِي جَوْفِهِ حَتَّى يَبْلُغَ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصِّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَان
The boiling water will be poured over their heads and will penetrate their skulls until it reaches what is inside, and what is inside will melt until it reaches their feet. This is the melting, then he will be restored to the state he was before.
It was also recorded by At-Tirmidhi, who said it is Hasan Sahih.
This was also recorded by Ibn Abi Hatim, who then recorded that Abdullah bin As-Sariy said,
“The angel will come to him, carrying the vessel with a pair of tongs because of its heat. When he brings it near to his face, he will shy away from it. He will raise a hammer that he is carrying and will strike his head with it, and his brains will spill out, then he will pour the brains back into his head. This is what Allah says in the Ayah:
يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ
With it will melt what is within their bellies, as well as (their) skins.”
وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ
22:21
وَ لَہُمۡ مَّقَامِعُ مِنۡ حَدِیۡدٍ ﴿۲۱﴾
And for [striking] them are maces of iron.
And for them are hooked rods of iron.
Ibn Abbas said,
“They will be struck with them, and with each blow, a limb will be severed, and they will cry out for oblivion.
22:22
کُلَّمَاۤ اَرَادُوۡۤا اَنۡ یَّخۡرُجُوۡا مِنۡہَا مِنۡ غَمٍّ اُعِیۡدُوۡا فِیۡہَا ٭ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿٪۲۲﴾
Every time they want to get out of Hellfire from anguish, they will be returned to it, and [it will be said], “Taste the punishment of the Burning Fire!”
كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا
Every time they seek to get away therefrom, from anguish, they will be driven back therein,
Al-A`mash reported from Abu Zibiyan that Salman said,
“The fire of Hell is black and dark; its flames and coals do not glow or shine.”
Then he recited:
كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا
Every time they seek to get away therefrom, from anguish, they will be driven back therein,
وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
“Taste the torment of burning!”
This is like the Ayah:
وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُواْ عَذَابَ النَّارِ الَّذِي كُنتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ
and it will be said to them:”Taste you the torment of the Fire which you used to deny.” (32:20)
The meaning is that they will be humiliated by words and actions.
22:23
اِنَّ اللّٰہَ یُدۡخِلُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ یُحَلَّوۡنَ فِیۡہَا مِنۡ اَسَاوِرَ مِنۡ ذَہَبٍ وَّ لُؤۡلُؤًا ؕ وَ لِبَاسُہُمۡ فِیۡہَا حَرِیۡرٌ ﴿۲۳﴾
Indeed, Allah will admit those who believe and do righteous deeds to gardens beneath which rivers flow. They will be adorned therein with bracelets of gold and pearl, and their garments therein will be silk.
The Reward of the Believers
When Allah tells us about the state of the people of Hell — we seek refuge with Allah from that state of punishment, vengeance, burning and chains — and the garments of fire that have been prepared for them, He then tells us about the state of the people of Paradise — we ask Allah by His grace and kindness to admit us therein.
He tells us:
إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الاَْنْهَارُ
Truly, Allah will admit those who believe and do righteous good deeds, to Gardens underneath which rivers flow,
means, these rivers flow throughout its regions, beneath its trees and palaces, and its inhabitants direct them to go wherever they want.
يُحَلَّوْنَ فِيهَا
wherein they will be adorned (– with jewelry –),
مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُوْلُوًا
with bracelets of gold and pearls,
means, on their arms, as the Prophet said in the agreed-upon Hadith:
تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُوْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوء
The jewelry of the believer (in Paradise) will reach as far as his Wudu’ reached.
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
and their garments therein will be of silk.
in contrast to the garments of fire worn by the inhabitants of Hell, the people of Paradise will have garments of silk, Sundus and Istabraq fine green silk and gold embroidery, as Allah says:
عَـلِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّواْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ وَسَقَـهُمْ رَبُّهُمْ شَرَاباً طَهُوراً
إِنَّ هَـذَا كَانَ لَكُمْ جَزَاءً وَكَانَ سَعْيُكُم مَّشْكُوراً
Their garments will be of green Sundus, and Istabraq. They will be adorned with bracelets of silver, and their Lord will give them a pure drink. (And it will be said to them):”Verily, this is a reward for you, and your endeavor has been accepted.” (76:21-22)
In the Sahih, it says:
لَاا تَلْبَسُوا الْحَرِيرَ وَلَاا الدِّيبَاجَ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّهُ مَنْ لَبِسَهُ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الاْاخِرَة
Do not wear fine silk or gold embroidery in this world, for whoever wears them in this world, will not wear them in the Hereafter.
Abdullah bin Az-Zubayr said,
“Those who do not wear silk in the Hereafter are those who will not enter Paradise. Allah says:
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
(and their garments therein will be of silk).”
And He tells us
22:24
وَ ہُدُوۡۤا اِلٰی الطَّیِّبِ مِنَ الۡقَوۡلِ ۚۖ وَ ہُدُوۡۤا اِلَی صِرَاطِ الۡحَمِیۡدِ ﴿۲۴﴾
And they had been guided [in worldly life] to good speech, and they were guided to the path of the Praiseworthy.
وَهُدُوا إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ
And they are guided unto goodly speech.
This is like the Ayat:
وَأُدْخِلَ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَاتِ جَنَّـتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الَانْهَـرُ خَـلِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَـمٌ
And those who believed and did righteous deeds, will be made to enter Gardens under which rivers flow — to dwell therein forever, with the permission of their Lord. Their greeting therein will be:”Salam (peace)!” (14:23)
جَنَّـتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ ءَابَايِهِمْ وَأَزْوَجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَالمَلَـيِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِّن كُلِّ بَابٍ
سَلَـمٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
And angels shall enter unto them from every gate (saying):”Salamun `Alaykum (peace be upon you!)”, for you persevered in patience! Excellent indeed is the final home!” (13:23-24)
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْواً وَلَا تَأْثِيماً
إِلاَّ قِيلً سَلَـماً سَلَـماً
No evil vain talk will they hear therein, nor any sinful speech. But only the saying of, “Peace! Peace! (Salaman! Salaman!).” (56:25-26)
They will be guided to a place in which they will hear good speech.
وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَـماً
Therein they shall be met with greetings and the word of peace and respect. (25:75),
unlike the scorn which will be heaped upon the people of Hell by way of rebuke, when they are told:
ذُوقُواْ عَذَابَ الْحَرِيقِ
(Taste the torment of burning!). (22:23)
وَهُدُوا إِلَى صِرَاطِ الْحَمِيدِ
and they are guided to the path of Him Who is Worthy of all praises.
to a place in which they will give praise to their Lord for all His kindness, blessings and favors towards them, as it says in the Sahih Hadith:
إِنَّهُمْ يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَس
They will be inspired with words of glorification and praise, just as they are inspired with breath.
Some scholars of Tafsir said that,
the Ayah,
وَهُدُوا إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ
(And they are guided unto goodly speech), refers to the Qur’an;
and it was said that it means La ilaha illallah or words of remembrance prescribed in Islam.
And the Ayah:
وَهُدُوا إِلَى صِرَاطِ الْحَمِيدِ
(and they are guided to the path of Him Who is Worthy of all praises),
means, the straight path in this world.
These interpretations do not contradict that mentioned above. And Allah knows best.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran