(বই#৯৫১) [ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِ আর যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেয় ঠিক যেমন তার সাথে করা হয়েছে তেমনি।] সূরা:- আল্ – হাজ্জ। সুরা:২২ ৫৮-৬০ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৫১)
[ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِ
আর যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেয় ঠিক যেমন তার সাথে করা হয়েছে তেমনি।]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
৫৮-৬০ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:৫৮
وَ الَّذِیۡنَ ہَاجَرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ثُمَّ قُتِلُوۡۤا اَوۡ مَاتُوۡا لَیَرۡزُقَنَّہُمُ اللّٰہُ رِزۡقًا حَسَنًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَہُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ ﴿۵۸﴾
যারা হিজরত করেছে আল্লাহর পথে এবং পরে (শত্রুর হাতে) নিহত হয়েছে অথবা মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ; তিনিই তো সর্বোৎকৃষ্ট রুযীদাতা।
২২:৫৯
لَیُدۡخِلَنَّہُمۡ مُّدۡخَلًا یَّرۡضَوۡنَہٗ ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَعَلِیۡمٌ حَلِیۡمٌ ﴿۵۹﴾
তিনি তাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে প্রবেশ করাবেন যা তারা পছন্দ করবে এবং নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক জ্ঞানময়, পরম সহনশীল।
২২:৬০
ذٰلِکَ ۚ وَ مَنۡ عَاقَبَ بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبَ بِہٖ ثُمَّ بُغِیَ عَلَیۡہِ لَیَنۡصُرَنَّہُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَعَفُوٌّ غَفُوۡرٌ ﴿۶۰﴾
এতো হচ্ছে তাদের অবস্থা, আর যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেয় ঠিক যেমন তার সাথে করা হয়েছে তেমনি এবং তারপর তার ওপর বাড়াবাড়িও করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আল্লাহ‌ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন, আল্লাহ গোনাহমাফকারী ও ক্ষমাশীল।
৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলোতে ঐ সকল মু’মিন বান্দাদেরকে মহা সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দীন কায়েমের লক্ষ্যে নিজের এলাকা, দেশ, স্ত্রী-সন্তান ও সহায়-সম্পদ বর্জন করে হিজরত করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কবরে উত্তম রিযিক দান করবেন, তারা বিছানায় মারা যাক বা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় শহীদ হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَنْ يَّخْرُجْ مِنْۭ بَيْتِه۪ مُهَاجِرًا إِلَي اللّٰهِ وَرَسُوْلِه۪ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُه۫ عَلَي اللّٰهِ)

“কেউ আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হতে মুহাজির হয়ে বের হলে অতঃপর তার মৃত্যু হলে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর ওপর।” (সূরা নিসা ৪:১০০) আর কিয়ামতের দিন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেখানে তারা সবুজ পাখি হয়ে উড়ে বেড়াবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ أَمْوَاتًا ط بَلْ أَحْيَا۬ءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ)‏

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত ধারণা কর না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালক হতে জীবিকা প্রাপ্ত হয়।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৬৯)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির মধ্যে থাকবে, তাদের বাসা আরশের সাথে ঝুলন্ত থাকবে, জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা তারা ঘুরে বেড়াবে, আবার বাসায় ফিরে আসবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৮৮৭)

ذٰلِكَ অর্থাৎ আমি মুহাজিরদের সঙ্গে বিশেষ করে শহীদী অথবা স্বাভাবিক মরণের যে ওয়াদা করেছি তা অবশ্যই পূর্ণ হবে।

العقوبة (প্রতিশোধ) এমন শাস্তি ও সাজাকে বলা হয় যা কোন কাজের বিনিময়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ যদি কেউ অন্য কারো প্রতি অত্যাচার করে তাহলে অত্যাচারিত ব্যক্তির জন্য সেই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করার অধিকার আছে যে পরিমাণ অত্যাচার তার প্রতি করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার পর যখন অত্যাচারী ও অত্যাচারিত উভয়ে সমান হয়ে যায়, তারপর অত্যাচারী যদি অত্যাচারিতের ওপর আবার অত্যাচার করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সে অত্যাচারিতকে অবশ্যই সাহায্য করেন। সুতরাং এ সন্দেহ করা উচিত নয় যে, অত্যাচারিত ব্যক্তি ক্ষমা না করে প্রতিশোধ নিয়ে ভুল করেছে। না, তা ভুল নয়। যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা এর অনুমতি দিয়েছেন। সে জন্য আগামীতেও সে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের অধিকারী হবে।

(إِنَّ اللّٰهَ لَعَفُوٌّ غَفُوْرٌ)

এ আয়াতে ক্ষমা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল, তোমরাও ক্ষমা কর। এর অন্য একটি অর্থ এও হতে পারে যে, অত্যাচারী যে পরিমাণ অত্যাচার করেছে সে পরিমাণ প্রতিশোধ নেয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কোন পাকড়াও করবেন না। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তা অনুমতি দিয়েছেন। বরং তা ক্ষমাযোগ্য। প্রতিশোধ গ্রহণ অত্যাচারীর কাজের অনুরূপ হওয়ার জন্য দৃশ্যতঃ এক রকম অত্যাচার হলেও আসলে প্রতিশোধ গ্রহণ কোন অত্যাচার নয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. হিজরত করার ফযীলত সম্পর্কে জানলাম।
২. অত্যাচারিত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেনন এ কথা জানতে পারলাম।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*মুহাজির ও মাযলুমদের সাহায্যের ওয়াদা : ‘যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে…'(আয়াত ৫৮-৫৯) আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করার অর্থ হচ্ছে মনের সকল কামনা বাসনা, মনের সকল লােভ লালসা ও মায়া মমতা সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ করা। এই কামনা বাসনা, লােভ লালসা ও মায়া মমতা পরিবার পরিজনকে কেন্দ্র করে হতে পারে, দেশ ও মাতৃভূমিকে কেন্দ্র করে হতে পারে, অতীত স্মৃতিকে কেন্দ্র করে হতে পারে, বিষয় সম্পদকে কেন্দ্র করে হতে পারে, এমনকি গােটা জীবনের প্রতিটি ঘটনা ও অবস্থাকে কেন্দ্র করেও হতে পারে। এসব কিছুকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আকীদার খাতিরে, ঈমানের খাতিরে এবং আদর্শের খাতিরে ত্যাগ করাই হচ্ছে প্রকৃত হিজরত। এই ত্যাগ তখনই সম্ভব যখন মানুষ এই পৃথিবীর সব কিছুর তুলনায় পরকালীন জীবনকেই শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করতে শিখে। হিজরতের বিধান ছিলাে মক্কা বিজয়ের পূর্বে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে। মক্কা বিজয়ের পর এই বিধান আর কার্যকর নয়। তবে এরপর জিহাদের বিধান এবং আমলের বিধান রয়েছে। কাজেই যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, সৎ কাজ করবে তারা এর বিনিময়ে হিজরতের সওয়াব লাভ করবে। পবিত্র হাদীসে এ কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করে যারা মৃত্যু বরণ করেছে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা উত্তম জীবিকা দান করবেন। এই মৃত্যু শাহাদাতের হােক, অথবা স্বাভাবিক উভয় অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এই উত্তম জীবিকা দান করবেন। কারণ তারা ঘর বাড়ি, বিষয় সম্পদ সব কিছু ত্যাগ করে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে এবং এই অবস্থায় যে কোনাে ভাগ্য ও পরিণতি বরণ করতে প্রস্তুত ছিলাে। জীবনের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই ছিলাে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। হিজরতের মাধ্যমে যে কোনাে উপায়ে শাহাদাত লাভের আকাংখাও তাদের মাঝে ছিলাে। কাজেই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করার ওয়াদা দিয়েছেন। আর তাই হলাে উত্তম জীবিকা। এই জীবিকা হবে তাদের ত্যাগ করা সকল বিষয়-সম্পত্তি হতে উত্তম। শুধু তাই নয়, বরং তাদেরকে তাদের পছন্দনীয় স্থানেও জায়গা দেয়া হবে। সেই জায়গা হচ্ছে জান্নাত। কারণ, তারা আল্লাহকে খুশী করার জন্যে ঘর বাড়ি ত্যাগ করেছিলো। এখন বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে খুশী করার জন্যে তাদের পছন্দনীয় জায়গায় চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের আয়ােজন করে দেবেন। এটা কত বড়াে সম্মান ও গৌরবের বিষয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বলবেন, তােমরা যেখানে থাকতে চাইবে, আমি সেখানেই তোমাদের রাখবাে। ‘আল্লাহ জ্ঞানময় ও সহনশীল’ আয়াতের এই শেষাংশের অর্থ হচ্ছে যে, মােহাজেরদের ওপর কি ধরনের যুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতন চালানাে হয়েছে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ ওয়াকিফহাল রয়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলে এই যালেম ও অত্যাচারী লােকদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ, তিনি সহনশীল, তাই ইচ্ছা করেই ওদেরকে আপাতত ছেড়ে দিয়েছেন। তবে শেষ বিচারের দিন তিনি যালেম ও মযলুম উভয় শ্রেণীর লােকদের বিচার যথাযথভাবে করবেন। এমন লােক অনেকই আছে যারা যুলুম নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে নেয় না। বরং যুলুমের বদলা নেয়, শাস্তির বদলায় শাস্তি দেয়, আঘাতের বদলায় আঘাত দেয়। এই ক্ষেত্রে অত্যাচারী ও আগ্রাসনবাদীরা যদি দমে না গিয়ে পুনরায় সে মযলুমদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে বা আক্রমণ করে বসে তাহলে আল্লাহ তায়ালা মযলুমদেরই পক্ষ নেবেন এবং যালেমদেরকে শায়েস্তা করবেন। নিচের আয়াতে সে কথাই বলা হচ্ছে, ‘তা এই জন্যে যে, যে ব্যক্তি নিপীড়িত'(আয়াত নং ৬০) তবে এর জন্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে এই যে, নিপীড়িত ব্যক্তিরা কেবল বদলা নেবে, নিজেরা যুলুম করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না এবং শক্তির মহড়া দেখাতে যাবে না। ঠিক যতােটুকু অত্যাচার করা হয়েছে ততােটুকু পর্যন্তই বদলা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কোনােমতেই যেন এতে বাড়াবাড়ির প্রশ্রয় না দেয়া হয়। যুলুম অত্যাচারের বদলা নেয়ার প্রসংগ উল্লেখ করার পর বলা হচ্ছে যে, ‘আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল’ এর অর্থ হচ্ছে, ক্ষমা ও মার্জনা কেবল আল্লাহ তায়ালাই করে থাকেন। এই গুণের একচ্ছত্র অধিকারী একমাত্র তিনিই । মানুষ কিন্তু এমন নয়। তাই সে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমা করেনা, মাফ করে না; বরং সে অনেক ক্ষেত্রে বদলার পথই বেছে নেয়, যুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, মানুষ হিসাবে এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার রয়েছে। কারণ, তারা অত্যাচারিত হয়ে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। তাই আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে সাহায্য করে থাকেন। যুলুম অত্যাচারের বদলা নিতে গিয়ে পুনরায় যুলুম অত্যাচারের শিকার হলে আল্লাহর সাহায্য অনিবার্য, এই ওয়াদা ব্যক্ত করার পর আল্লাহর কুদরতের বেশ কিছু নিদর্শন এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ করা হচ্ছে যে, মযলুমদের সাহায্য করার ক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রয়েছে। কারণ তিনি গােটা জগতকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, পরিচালনা করছেন। একটি সূক্ষ্ম ও চিরস্থায়ী নিয়মের অধীনে এই বিশ্বচরাচর পরিচালিত হয়ে আসছে, এই নিয়ম ও ব্যবস্থার যিনি রূপকার তিনি নিশ্চয়ই অপার কুদতরের মালিক।
কাজেই তিনি কোনাে কিছু করার ওয়াদা করে থাকলে সে ওয়াদা বাস্তবায়িত না হয়ে পারে না ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# মূল শব্দ হচ্ছে عَلِيمٌ অর্থাৎ তিনি জানেন কে প্রকৃতপক্ষে তাঁর পথে ঘর-বাড়ি ত্যাগ করেছে এবং সে কোন ধরনের পুরস্কার লাভের যোগ্য। মূলে আরো বলা হয়েছে حَلِيمٌ অর্থাৎ এ ধরনের ছোট ছোট ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্বলতার কারণে তাদের বড় বড় কর্মকাণ্ড ও ত্যাগকে তিনি বিনষ্ট করে দেবেন না। তিনি সেগুলো উপেক্ষা করবেন এবং তাদের অপরাধ মাফ করে দেবেন।
# প্রথমে এমন মজলুমদের কথা বলা হয়েছিল যারা জুলুমের জবাবে কোন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আর এখানে এমন মজলুমদের কথা বলা হচ্ছে যারা জুলুমের জবাবে শক্তি ব্যবহার করে। ইমাম শাফেঈ এ আয়াত থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, জুলুমের কিসাস সেভাবেই নেয়া হবে যেভাবে জুলুম করেছে। যেমন কোন ব্যক্তি একজনকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে এ অবস্থায় তাকেও পানিতে ডুবিয়ে মারা হবে। আবার কোন ব্যক্তি একজনকে পুড়িয়ে মেরেছে জবাবে তাকেও পুড়িয়ে মারা হবে। কিন্তু হানাফীয়াদের মতে হত্যাকারী যেভাবেই হত্যা করুক না কেন তার থেকে একই পরিচিতি পদ্ধতিতেই কিসাস গ্রহণ করা হবে।

# এ আয়াতের দু’টি অর্থ হতে পারে এবং সম্ভবত দু’টি অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এক, জুলুমের জবাবে যে রক্তপাত করা হবে আল্লাহর কাছে তা ক্ষমাযোগ্য, যদিও রক্তপাত মূলত ভালো জিনিস নয়। দুই, তোমরা যে আল্লাহর বান্দা তিনি ভুল-ত্রুটি মার্জনা করেন ও গোনাহ মাফ করে দেন। তাই তোমাদেরও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের ভুল-ত্রুটি ও অপরাধ মার্জনা করা উচিত। মু’মিনরা ক্ষমাশীল, উদার হৃদয় ও ধৈর্যশীল, এগুলো তাদের চরিত্রের ভূষণ। প্রতিশোধ নেবার অধিকার অবশ্যই তাদের আছে। কিন্তু নিছক প্রতিশোধ স্পৃহা ও প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা লালন করা তাদের জন্য শোভনীয় নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যে ব্যক্তি নিজের দেশ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং দোস্ত বন্ধুদেরকে ছেড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তাঁর রাসূল (সঃ) ও তাঁর দ্বীনের সাহায্যার্থে সব কিছু ছেড়ে যায়, অতঃপর সে জিহাদের ময়দানে হাজির হয়ে শত্রুদের হাতে নিহত হয় অথবা ভাগ্যের লিখন হিসেবে বিছানাতেই মৃত্যু বরণ করে, তার জন্যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বড় পুরস্কার ও সম্মানজনক প্রতিদান রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ী হতে বের হয়, অতঃপর মৃত্যু হয়ে যায়, তার প্রতিদান আল্লাহর দায়িত্বে সাব্যস্ত হয়ে যায়।” (৪:১০০) তার উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হবে। সে জান্নাতের জীবিকা লাভ করবে, যার ফলে তার চক্ষুদ্বয় ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আল্লাহ তো সর্বোৎকৃষ্ট রিক দাতা। তিনি তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন যেখানে সে খুবই আনন্দিত হবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ। বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়, তবে তার জন্যে রয়েছে। আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ এবং সুখময় উদ্যান।” (৫৬:৮৮-৮৯) আল্লাহ তাআলা তাঁর পথের মুজাহিদদেরকে এবং তার নিয়ামতের অধিকারীদেরকে ভালরূপেই জানেন। তিনি বড়ই সহনশীল। বান্দাদের গুনাহসমূহ তিনি মার্জনা করেন। আর তাদের হিজরত তিনি ককূল করে নেন। তার উপর ভরসাকারীদেরকে তিনি উত্তমরূপে অবগত আছেন। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারা মুহ্যজির হোক আর না-ই হোক, তাদের প্রতিপালকের কাছে রিক পেয়ে থাকে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো মৃত মনে। করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তারা জীবিকা প্রাপ্ত।” (৩:১৬৯) এই ব্যাপারে বহু হাদীস রয়েছে যেগুলি বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর পথের শহীদদের প্রতিদান ও পুরস্কার তাঁর যিম্মায় স্থির হয়ে গেছে। এটা এই আয়াত দ্বারাও এবং এই ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সমূহ দ্বারাও প্রমাণিত।

হযরত শুরাহবীল ইবনু সামত (রাঃ) বলেনঃ “রোমের একটি দুর্গ অবরোধ করার কাজে আমাদের বহু দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। ঘটনাক্রমে হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) সেখান দিয়ে গমন করেন। তিনি আমাদেরকে বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথ প্রস্তুতির কাজে মারা যায় তার প্রতিদান ও রিযুক বরাবরই আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তার উপর চালু থাকে। ইচ্ছা হলে তোমরা (আরবী) আয়াতটি তিলাওয়াত কর।” (এটা ইবনু হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু কুবায়েল (রাঃ) এবং হযরত রাবী আহ্ ইবনু সায়েফ মুগাফেরী (রাঃ) বলেনঃ “আমরা রাওদাসের যুদ্ধে ছিলাম। আমাদের সাথে। হযরত ফুযালাহ্ ইবনু উবায়েদও (রাঃ) ছিলেন। আমাদের পার্শ্ব দিয়ে দু’টি জানাযা নিয়ে যাওয়া হয়। এই মৃত দুই ব্যক্তির একজন ছিলেন শহীদ এবং অপরজন স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। জনগণ শহীদ ব্যক্তির জানার উপর ঝুঁকে পড়ে। হযরত ফুযালাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “ব্যাপার কি?” জনগণ উত্তর দেয়ঃ জনাব! এটা শহীদ ব্যক্তির জানাযা। আর অপর ব্যক্তি শাহাদাত হতে বঞ্চিত হয়েছে। একথা শুনে হযরত ফুযালাহ্ (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমার কাছে এ দুজনই সমান। এ দু’জনের যে কোন একজনের কবর হতে উত্থিত হলেও আমার কোন পরোয়া নাই। তোমরা আল্লাহর কিতাব শুনো।” অতঃপর তিনি (আরবী) এই আয়াতটি পাঠ করেন।”

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি সাধারণভাবে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির কবরের পার্শ্বে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “তোমরা আর কি চাও? জায়গা হলো জান্নাত এবং রি হলো উত্তম।” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ রাওদাসের যুদ্ধে হযরত ফুযালাহ্ (রাঃ) আমীর ছিলেন।

মুকাতিল ইবনু হাইয়ান (রঃ) এবং ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) এই আয়াতটি সাহাবীদের ঐ ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যাদের সাথে মুশরিকদের এক সেনাবাহিনী মর্যাদা সম্পন্ন মাসগুলিতেও যুদ্ধে লিপ্ত হয়, অথচ মুসিলম বাহিনী ঐ মর্যাদা সম্পন্ন মাসগুলিতে (মর্যাদা সম্পন্ন মাস অর্থাৎ যে মাসগুলিতে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ, ওগুলি হলো চারটি মাস। যুলকা’দা’ যুল হাজ্জ, মুহাররম, এবং রজব) যুদ্ধ হতে বিরত থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মুশরিক বাহিনী তা মানে নাই। ঐ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সাহায্য করেন এবং মুশরিকদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#951)
[ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِ
Retaliated with the like of that which he was made to suffer.]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 58-60
www.motaher21.net
22:58

وَ الَّذِیۡنَ ہَاجَرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ثُمَّ قُتِلُوۡۤا اَوۡ مَاتُوۡا لَیَرۡزُقَنَّہُمُ اللّٰہُ رِزۡقًا حَسَنًا ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَہُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ ﴿۵۸﴾

And those who emigrated for the cause of Allah and then were killed or died – Allah will surely provide for them a good provision. And indeed, it is Allah who is the best of providers.

 

The Great Reward for Those Who migrate in the Cause of Allah

Allah says:

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا

Those who emigrated in the cause of Allah and after that were killed or died,

Allah tells us that those who migrate for the sake of Allah, seeking to earn His pleasure and that which is with Him, leaving behind their homelands, families and friends, leaving their countries for the sake of Allah and His Messenger to support His religion, then they are killed, i.e., in Jihad, or they die, i.e., they pass away without being involved in fighting, they will have earned an immense reward.

As Allah says:

وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَـجِراً إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلىَ اللَّهِ

And whosoever leaves his home as an emigrant unto Allah and His Messenger, and death overtakes him, his reward is then surely incumbent upon Allah. (4:100)

لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا

surely, Allah will provide a good provision for them.

means, He will reward them from His bounty and provision in Paradise with that which will bring them joy.

وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

22:59

لَیُدۡخِلَنَّہُمۡ مُّدۡخَلًا یَّرۡضَوۡنَہٗ ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَعَلِیۡمٌ حَلِیۡمٌ ﴿۵۹﴾

He will surely cause them to enter an entrance with which they will be pleased, and indeed, Allah is Knowing and Forbearing.

 

لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلً يَرْضَوْنَهُ
And verily, it is Allah Who indeed is the Best of those who make provision. Truly, He will make them enter an entrance with which they shall be well-pleased,
This means Paradise, as Allah says elsewhere:

فَأَمَّأ إِن كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ

فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّـتُ نَعِيمٍ

Then, if he be of those brought near (to Allah), rest and provision, and a Garden of Delights. (56:88-89)

Allah tells us that He will grant him rest and provision and a Garden of Delights, as He tells us here:
لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا
(surely, Allah will provide a good provision for them).

Then He says:

لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلً يَرْضَوْنَهُ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ

Truly, He will make them enter an entrance with which they shall be well-pleased, and verily, Allah indeed is All-Knowing,

meaning, He is All-Knowing about those who migrate and strive in Jihad for His sake and who deserve that (reward).

حَلِيمٌ

Most Forbearing,

means, He forgives and overlooks their sins, and He accepts as expiation for their sins, their migration (Hijrah) and their putting their trust in Him. Concerning those who are killed for the sake of Allah, whether they are Muhajirs (migrants) or otherwise, they are alive with their Lord and are being provided for, as Allah says:

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَتاً بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

Think not of those as dead who are killed in the way of Allah. Nay, they are alive, with their Lord, and they have provision. (3:169)

There are many Hadiths on this topic, as stated previously. With regard to those who die for the sake of Allah, whether they are emigrants or not.

This Ayah and the Sahih Hadiths guarantee that they will be well provided for and that Allah will show them kindness.
Ibn Abi Hatim recorded that Shurahbil bin As-Simt said:
“We spent a long time besieging a stronghold in the land of the Romans. Salman Al-Farisi, may Allah be pleased with him, passed by me and said, `I heard the Messenger of Allah say:

مَنْ مَاتَ مُرَابِطًا أَجْرَى اللهُ عَلَيْهِ مِثْلَ ذَلِكَ الاَْجْرِ وَأَجْرَى عَلَيْهِ الرِّزْقَ وَأَمِنَ مِنَ الفَتَّانِينَ وَاقْرَوُوا إِنْ شِيْتُمْ
Whoever dies guarding the borders of Islam, Allah will give him a reward like that reward (of martyr) and will provide for him and keep him safe from trials.
Recite, if you wish:

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا

وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلً يَرْضَوْنَهُ

وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌ

Those who emigrated in the cause of Allah and after that were killed or died, surely, Allah will provide a good provision for them. And verily, it is Allah Who indeed is the Best of those who make provision.
Truly, He will make them enter an entrance with which they shall be well-pleased, and verily, Allah indeed is All-Knowing, Most Forbearing.”
He also recorded that;
Abdur-Rahman bin Jahdam Al-Khawlani was with Fadalah bin Ubayd when they accompanied with two funerals, at (an island of) sea one of whom had been struck by a catapult, and the other had passed away. Fadalah bin Ubayd sat by the grave of the man who had passed away and someone said to him, “Are you neglecting the martyr and not sitting by his grave!”
He said, “I would not mind which of these two graves Allah would resurrect me from, for Allah says:

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا

Those who emigrated in the cause of Allah and after that were killed or died, surely, Allah will provide a good provision for them.”

And he recited these two Ayat, then said,

“What should I seek, O you servant, if I were to enter an entrance to His pleasure, and be provided good provisions By Allah, I would not mind which of these two graves Allah would resurrect me from.

22:60

ذٰلِکَ ۚ وَ مَنۡ عَاقَبَ بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبَ بِہٖ ثُمَّ بُغِیَ عَلَیۡہِ لَیَنۡصُرَنَّہُ اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَعَفُوٌّ غَفُوۡرٌ ﴿۶۰﴾

That [is so]. And whoever responds [to injustice] with the equivalent of that with which he was harmed and then is tyrannized – Allah will surely aid him. Indeed, Allah is Pardoning and Forgiving.

 

ذَلِكَ وَمَنْ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِ

That is so.

And whoever has retaliated with the like of that which he was made to suffer….

Muqatil bin Hayan and Ibn Jurayj mentioned that this was revealed about a skirmish in which the Companions encountered some of the idolators. The Muslims urged them not to fight during the Sacred Months, but the idolators insisted on fighting and initiated the aggression. So the Muslims fought them and Allah granted them victory.

ثُمَّ بُغِيَ عَلَيْهِ لَيَنصُرَنَّهُ اللَّهُ

and then has again been wronged, Allah will surely help him.

إِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ

Verily, Allah indeed is Oft-Pardoning, Oft-Forgiving.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply