أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৫৬)
[ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا کَذَّبُوۡنِ ﴿۲۶﴾
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।’ ]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
২৩- ৩০ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:২৩
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰی قَوۡمِہٖ فَقَالَ یٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۲۳﴾
আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট, সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’
২৩:২৪
فَقَالَ الۡمَلَؤُا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِہٖ مَا ہٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ ۙ یُرِیۡدُ اَنۡ یَّتَفَضَّلَ عَلَیۡکُمۡ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَاَنۡزَلَ مَلٰٓئِکَۃً ۚۖ مَّا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ۚ۲۴﴾
তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, “এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ। এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। আল্লাহ পাঠাতে চাইলে ফেরেশতা পাঠাতেন। একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি ।
২৩:২৫
اِنۡ ہُوَ اِلَّا رَجُلٌۢ بِہٖ جِنَّۃٌ فَتَرَبَّصُوۡا بِہٖ حَتّٰی حِیۡنٍ ﴿۲۵﴾
‘এ তো এমন লোক যাকে উন্মাদনা পেয়ে বসেছে; কাজেই তোমরা এর সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর।’
২৩:২৬
قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا کَذَّبُوۡنِ ﴿۲۶﴾
নূহ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।’
২৩:২৭
فَاَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡہِ اَنِ اصۡنَعِ الۡفُلۡکَ بِاَعۡیُنِنَا وَ وَحۡیِنَا فَاِذَا جَآءَ اَمۡرُنَا وَ فَارَ التَّنُّوۡرُ ۙ فَاسۡلُکۡ فِیۡہَا مِنۡ کُلٍّ زَوۡجَیۡنِ اثۡنَیۡنِ وَ اَہۡلَکَ اِلَّا مَنۡ سَبَقَ عَلَیۡہِ الۡقَوۡلُ مِنۡہُمۡ ۚ وَ لَا تُخَاطِبۡنِیۡ فِی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ۚ اِنَّہُمۡ مُّغۡرَقُوۡنَ ﴿۲۷﴾
আমি তার কাছে অহী করলাম, “আমার তত্বাবধানে এবং আমার অহী মোতাবেক নৌকা তৈরী করো। তারপর যখন আমার হুকুম এসে যাবে এবং চুলা উথলে উঠবে তখন তুমি সব ধরনের প্রাণীদের এক একটি জোড়া নিয়ে এতে আরোহণ করো এবং পরিবার পরিজনদেরকেও সঙ্গে নাও, তাদের ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে আগেই ফায়সালা হয়ে গেছে এবং জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলো না, তারা এখন ডুবতে যাচ্ছে।
২৩:২৮
فَاِذَا اسۡتَوَیۡتَ اَنۡتَ وَ مَنۡ مَّعَکَ عَلَی الۡفُلۡکِ فَقُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ الَّذِیۡ نَجّٰنَا مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۲۸﴾
অতঃপর যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আরোহণ করবে, তখন বলো, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন যালেম সম্প্রদায় হতে।’
২৩:২৯
وَ قُلۡ رَّبِّ اَنۡزِلۡنِیۡ مُنۡزَلًا مُّبٰرَکًا وَّ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡمُنۡزِلِیۡنَ ﴿۲۹﴾
আর বলো, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী।”
২৩:৩০
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ وَّ اِنۡ کُنَّا لَمُبۡتَلِیۡنَ ﴿۳۰﴾
এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে; আমি তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
২৩- ৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# তুলনামূলক আলোচনার জন্য দেখুন আল আ’রাফের ৫৯ থেকে ৬৪ ; ইউনুসের ৭১ থেকে ৭৩ ; হূদের ২৫ থেকে ৪৮ ; বনী ইসরাঈলের ৩ আয়াত এবং আল আম্বিয়ার ৭৬-৭৭ আয়াত ।
# নিজেদের আসল ও যথার্থ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের বন্দেগী করতে তোমাদের ভয় লাগে না? যিনি তোমাদের ও সারা জাহানের মালিক, প্রভু ও শাসক তাঁর রাজ্যে বাস করে তাঁর পরিবর্তে অন্যদের বন্দেগী ও আনুগত্য করার এবং অন্যদের সার্বভৌম কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেবার ফলাফল কি হবে সে ব্যাপারে কি তোমাদের একটুও ভয় নেই?
# মানুষ নবী হতে পারে না এবং নবী মানুষ হতে পারে না, এ চিন্তাটি সর্বকালের পথভ্রষ্ট লোকদের একটি সম্মিলিত ভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন বারবার এ জাহেলী ধারণাটির উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ করেছে এবং পুরোপুরি জোর দিয়ে একথা বর্ণনা করেছে যে, সকল নবীই মানুষ ছিলেন এবং মানুষদের জন্য মানুষের নবী হওয়া উচিত। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আল আরাফ ৬৩-৬৯ ; ইউনুস ২ ; হূদ ২৭-৩১ ইউসুফ ১০৯ ; আর রা’দ, ৩৮ ; ইবরাহীম ১০-১১ ; আন নাম্ল ৪৩ ; বনী ইসরাঈল ৯৪-৯৫ ; আল কাহাফ ১১০; আল আম্বিয়া ৩ ; আল আম্বিয়া ৩৪ ; আল মু’মিনূন ৩৩-৩৪ ও ৪৭ ; আল ফুরকান ৭-২০ ; আশ্শুআরা ১৫৪-১৮৪ ; ইয়াসীন ১৫ ও হা-মীম আস্ সাজ্দাহ ৬ আয়াত এবং এই সঙ্গে টীকাগুলোও।)
# এটাও সত্য বিরোধীদের একটি পুরাতন অস্ত্র। যে কেউ সংস্কারমূলক কাজের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, এর উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতা দখল করা। এ অভিযোগটিই ফেরাউন হযরত মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে এনেছিল। সে বলেছিল, তোমরা দেশে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করার জন্য এসেছো
সুরা: ইউনুস
আয়াত নং :-৭৮
قَالُوْۤا اَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَیْهِ اٰبَآءَنَا وَ تَكُوْنَ لَكُمَا الْكِبْرِیَآءُ فِی الْاَرْضِ١ؕ وَ مَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِیْنَ
তারা জবাবে বললো, “তুমি কি যে পথে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি সে পথ থেকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে এবং যাতে যমীনে তোমাদের দু’জনের প্রাধান্য কায়েম হয়ে যায়, সেজন্য এসেছো? তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।”
# বনী ইসরাঈলকে উদ্ধার করা যদি হযরত মূসা (আ) ও হারুনের (আ) মূল দাবী হতো তাহলে ফেরাউন ও তার দরবারের লোকদের এ ধরনেরআশঙ্কা করার কোন প্রয়োজন ছিল না যে, এ দুই মহান ব্যক্তির দাওয়াত ছড়িয়ে পড়লে সারা মিসরের লোকদের ধর্ম বদলে যাবে এবং দেশে তাদের পরিবর্তে এদের দু’জনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। হযরত মূসা (আ) মিসরবাসীকে আল্লাহর বন্দেগীর প্রতি যে আহবান জানাচ্ছিলেন এটিই তো ছিল তাদেরআশঙ্কার কারণ। এর ফলে যে মুশরিকী ব্যবস্থার ওপর ফেরাউনের বাদশাহী, তার সরদারদের নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল তা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
تَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ (يونس : 78)
এ অভিযোগ হযরত ঈসা আলাইহিসসালামের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল। বলাহয়েছিলঃ এ ব্যক্তি ইহুদিদের বাদশাই হতে চায়। আর কুরাইশ সরদাররাও নবী ﷺ সম্পর্কেও এ একই সন্দেহ পোষণ করতো। এ জন্য কয়েকবারই তারা তাঁর সাথে এভাবে সওদাবাজী করতে চেয়েছে যে, যদি তুমি কর্তৃত্ব লাভ করতে চাও, তাহলে “বিরোধী” দল ছেড়ে দিয়ে “সরকারী” দলে এসে যাও। তোমাকে আমরা বাদশাহ বানিয়ে নেবো। আসলে যারা সারা জীবন দুনিয়া ও তার বৈষয়িক স্বার্থ এবং তার গৌরব ও বাহ্যিক চাকচিক্য লাভ করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে তাদের পক্ষে একথা কল্পনা করা কঠিন বরং অসম্ভব হয় দাঁড়ায় যে, এ দুনিয়ায় এমন কোন মানুষ থাকতে পারে। তারা নিজেরাই যেহেতু নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য প্রতিদিন হৃদয়গ্রাহী শ্লোগান ও সংস্কারের মিথ্যা দাবী পেশ করতে থাকে তাই এ প্রতারণা ও জালিয়াতী তাদের দৃষ্টিতে হয় একবারেই একটি স্বাভাবিক জিনিস। তারা মনে করে সংস্কার কথাটা প্রতারণা ওজালিয়াতি ছাড়া কিছু নয়। সততা ও আন্তরিকতার সাথে কখনো সংস্কারমূলক কোনো কাজ করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তিই এ নামটি উচ্চারণ করে সে নিশ্চয়ই তাদেরই মত ধোঁকাবাজ। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে সংস্কারকদের বিরুদ্ধে “ক্ষমতা লোভের” এ অপবাদ চিরকাল ক্ষমতাসীন লোকেরা ও তাদের তোষামোদী গোষ্ঠীই লাগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তারা যেন একথা বলতে চায় যে, তারা নিজেরা ও তাদের মহান প্রভুরা যে ক্ষমতা লাভ করেছেতা যেন তাদের জন্মগত অধিকার। তা অর্জন করার ও তা দখল করে রাখার জন্য তারা কোনক্রমে অভিযুক্ত হতে পারে না। তবে এ “খাদ্যে” যাদের জন্মগত অধিকার ছিল না এবং এখন যারা নিজেদের মধ্যে এর “ক্ষুধা” অনুভব করছে তারা চরমভাবে নিন্দাবাদ লাভের যোগ্য।
# কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন যে, তারা নিজেদের মধ্যে এসব কথা বলাবলি করতো। না, বরং সাধারণ লোকদেরেক সম্বোধন করে তারা একথা বলতো। জাতির সরদাররা যখনআশঙ্কা করলো, জনগণ নবীর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব এবং হৃদয়গ্রাহী কথায় প্রভাবিত হয়ে যাবে এবং তাদের প্রভাবিত হয় যাবার পর আমাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আর কাদের ওপর চলবে তখন তারা নিজেদের বক্তৃতার মাধ্যমে এসব কথা জনগনের সামনে তুলে ধরে তাদেরেক বিভ্রান্ত করতে থাকলো। ওপরে নূহের জাতির আলোচনায় যে কথা বলা হয়েছিল। এটি তারই দ্বিতীয় একটি দিক। তারা বলতো, আল্লাহর পক্ষ থেকে এসব নবুওয়াত টবুয়ত কিছুই দেয়া হয়নি এটা হচ্ছে আসলে ক্ষমতা লিপ্সা, এরই মোহে অন্ধ হয়ে এ ব্যক্তি এসব আবোল তাবোল বলছে। তারা বলেঃ ভাইসব! একটু ভেবে দেখো, এ ব্যক্তি কোন্ ব্যাপারেতোমাদের থেকে আলাদা? তোমাদের শরীর যেমন রক্ত-মাংসের তারও তাই। তোমাদের ও তার মধ্যে কোন ফারাক নেই। তাহলে কেন সে বড় হবে এবং তোমরা তার ফরমানের আনুগত্য করবে? তাদের এসব ভাষণের মধ্য যেন একথা নির্বিবাদে স্বীকৃত ছিল যে, তারা যে তাদের নেতা এ নেতৃত্ব তো তাদের লাভ করারই কথা, তাদের শরীরের রক্ত মাংস ও তাদের পানাহারের ধরণধারণের প্রতি দৃষ্টি দেবার প্রশ্নই দেখা দেয় না, তাদের নেতৃত্ব আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ এটা তোআপনা-আপনিই প্রতিষ্ঠিত এবং সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। আসলে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এ নতুন নেতৃত্ব, যা এখন প্রতিষ্ঠা লাভের পথে। এভাবে তাদের কথাগুলো নূহের জাতির নেতাদের কথা থেকে কিছু বেশী ভিন্নতর ছিল না। তাদের মতে কোন নতুন আগমনকারীর মধ্যে যে “ক্ষমতা লিপ্সা” অনুভূত হয় অথবা তার মধ্যে এ লিপ্সা থাকার যে সন্দেহ পোষন করার যেতে পারে সেটিই হচ্ছে নিন্দনীয় ও অপবাদযোগ্য। আর নিজেদর ব্যাপারে তারা মনে করতো যে, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা তাদের প্রকৃতিগত অধিকার, এ অধিকারের ক্ষেত্রে তারা সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তা কোন ক্রমেই নিন্দনীয় ও আপত্তিকর হবার কথা নয়।
#এ শব্দগুলোর দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর অস্তিত্বকে তারাও অস্বীকার করতো না। তাদেরও আসল ভ্রষ্টতা ছিল শির্ক। কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ জাতির এ অপরাধই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন আল আরাফ ৭ ; হূদ ৫৩-৫৪ ; হা-মীম আস্সাজদাহ ১৪ এবং আল আহকাফ ২১-২২ আয়াত।
এখানে একথাটিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার দোষ ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য যে ব্যক্তিই অগ্রসর হবে এবং এর মোকাবিলায় সংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থা পেশ করবে তার জন্য অবশ্যই সংস্কারের পথে যেসব শক্তিই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে তাদেরকে সরিয়ে দেবার জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং যেসব শক্তিসংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থাকে কার্যত প্রবর্তিত করতে পারবে তাদেরকে ক্ষমতাসীন করা অপিরহার্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া এ ধরনের লোকের দাওয়াত যখনই সফল হবে, তার স্বাভাবিক পরিণতিতে সে জনগণের ইমাম ও নেতায় পরিণত হবে এবং নতুন ব্যবস্থায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি হয় তার নিজের হাতে থাকবে নয়তো তার সমর্থক ও অনুসারীরা জনগণের ওপর কর্তৃত্বশীল হবে। দুনিয়ায় এমন কোন্নবী ও সংস্কারক ছিলেন যিনি নিজের দাওয়াতকে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করা যার প্রচেষ্টারউদ্দেশ্য ছিল না? আর এমন কে আছেন যার দাওয়াতের সাফল্য তাঁকে যথার্থই নেতায়পরিণতকরেনি? তারপর এ বিষয়টি কি সত্যিই কারো বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করার জন্য যথেষ্ট যে, সে আসলে ক্ষমতা লোভী ছিল এবং তার আসল উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব লাভ এবং তা সে অর্জন করেছিল? অসৎ প্রকৃতির সত্যের দুশমনরা ছাড়া কেউ এ প্রশ্নের জবাবে হাঁ বলবে না। আসলে ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতা কাংখিত হওয়া এবং কোন সৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা কাংখিত হওয়ারমধ্যে রয়েছে যমীন আসমান ফারাক। এটা এত বড় ফারাক যেমন ফারাক আছে ডাক্তারের ছুরির ও ডাকাতের ছুরির মধ্যে। ডাক্তার ও ডাকাত উভয়ই ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের পেটে ছুরি চালায় এবং এর ফলে অর্থ লাভ করে যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র এ কারণে উভয়কে একাকার করে ফেলে তাহলে এটা হবে নিছক তার নিজেরই চিন্তা বা মনের ভুল। নয়তো উভয়ের নিয়ত, কর্মপদ্ধতি ও সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের মধ্যে এত বেশী পার্থক্য থাকে যে, কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ডাকাতকে ডাক্তার এবং ডাক্তারকে ডাকাত মনে করার মতো ভুল করতে পারে না।
# নূহের সম্প্রদায় আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না এবং তারা একথাও অস্বীকার করতো না যে, তিনিই বিশ্ব-জাহানের প্রভু এবং সমস্ত ফেরেশতা তাঁর নির্দেশের অনুগত, এ বক্তব্য তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। শির্ক বা আল্লাহকে অস্বীকার করা এ জাতির আসল ভ্রষ্টতা ছিল না বরং তারা আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতা এবং তাঁর অধিকারে অন্যকে শরীক করতো।
# নূহের সম্প্রদায় আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করতো না এবং তারা একথাও অস্বীকার করতো না যে, তিনিই বিশ্ব-জাহানের প্রভু এবং সমস্ত ফেরেশতা তাঁর নির্দেশের অনুগত, এ বক্তব্য তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। শির্ক বা আল্লাহকে অস্বীকার করা এ জাতির আসল ভ্রষ্টতা ছিল না বরং তারা আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতা এবং তাঁর অধিকারে অন্যকে শরীক করতো।
# আমার প্রতি এভাবে মিথ্যা আরোপ করার প্রতিশোধ নাও। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ (القمر : 10)
“কাজেই নূহ নিজের রবকে ডেকে বললোঃ আমাকে দমিত করা হয়েছে, এমন তুমিই এর বদ্লা নাও।”
সূরা নূহে বলা হয়েছেঃ
وَقَالَ نُوحٌ رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا – إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا
“আর নূহ বললোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! এ পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একজন অধিবাসীকেও ছেড়ে দিও না। যদি তুমি তাদেরকে থাকতে দাও তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে এবং তাদের বংশ থেকে কেবল দূষ্কৃতকারী ও সত্য অস্বীকারকারীরই জন্ম হবে।”´( ২৭ আয়াত )
# কেউ কেউ تَّنُّورُ (তান্নূর) বলতে ভূমি বুঝেছেন। কেউ এর অর্থ করেছেন ভুমির উচ্চমত অংশ। কেউ বলেছেন, فَارَ التَّنُّورُ মানেহচ্ছে প্রভাতের উদয়। আবার কারোর মতে একটি حمى الوطيسى এর মতো একটি উপমা, যার মানে হয় “পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া।” কিন্তু বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করার পথে যখন কোন বাধা নেই তখন কুরআনের শব্দাবলীর কোনো প্রকার সম্বন্ধ-সামঞ্জস্য ছাড়াই পরোক্ষ অর্থে গ্রহণ করার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ দেখা যায় না। এ শব্দাবলি পড়ার পর প্রথমে মনের মধ্যে যে অর্থটির উদয় হয় তা হচ্ছে এই যে, কোন বিশেষ চুলা পূর্ব থেকেই এভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে, তার নিম্নদেশ ফেটে পানি উথলে ওঠারমাধ্যমে প্লাবনের সূচনা হবে। অন্য কোন অর্থের কথা চিন্তা করার প্রয়োজন তখনই আসে যখন এত বড় প্লাবন একটা চুলার নিচে থেকে পানি উথলে ওঠার মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকবে বলে মানুষ মেনে নিতে রাজিহয় না। কিন্তু আল্লাহর কর্মকাণ্ড বড়ই অদ্ভুত। তিনি যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করেন তখন এমন পথে করেন যারা কোন কল্পনাই সে করতে পারে না।
# কোন জাতির ধ্বংসের জন্য কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করার হুকুম দেয়া তার চরম অসদাচার, লাম্পট্য ও দুশ্চরিত্রতার প্রমাণ।
# নামিয়ে দেয়া মানে নিছক দেয়া নয় বরং আরবী প্রবাদ অনুযায়ী এর মধ্যে “আপ্যায়নের” অর্থও রয়েছে। অন্য কথায় এ দোয়ার অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! এখন আমরা তোমার মেহমান এবং তুমিই আমাদের আপ্যায়নকারী মেজবান।
# এর মধ্যে রয়েছে গ্রহণেযাগ্য শিক্ষা। এ শিক্ষা হচ্ছেঃ তাওহীদের দাওয়াত দানকারী নবীগন সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং শির্কপন্থী কাফেররা ছিল মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর আজ মক্কায় সে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যা এক সময় ছিল হযরত নূহ ও তার জাতির মধ্যে। এর পরিণামও তার চেয়ে কিছু ভিন্ন হবার নয়। আল্লাহর ফায়সালায় যতই বিলম্ব হোক না কেন একদিন অবশ্যই তা হয়েই যায় এবং অনিবার্যভাবে তা হয় সত্যপন্থীদের পক্ষে এবং মিথ্যাপন্থীদের বিপক্ষে।
# এর অন্য একটি অনুবাদ এও হতে পারে, “পরীক্ষা তো আমি করতেই চেয়েছিলাম” অথবা “পরীক্ষা তো আমাকে করতেই হবে”। তিনটি অবস্থায়ই এ সত্যটি অবগত করানোই উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ কোন জাতিকেই নিজের রাজ্যে নিজের অসংখ্যা জিনিসের ওপর কর্তৃত্ব দান করে এমনিই তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন না। বরং তাকে পরীক্ষা করেন এবং নিজের কর্তৃত্ব ক্ষমতাকে সে কিভাবে ব্যবহার করছে তা দেখতে থাকেন। নূহের জাতির সাথে যা কিছু ঘটেছে এ নিয়ম অনুযায়ীই ঘটেছে এবং অন্য কোন জাতিই আল্লাহর এত প্রিয় নয় যে, লুণ্ঠিত দ্রব্যের ভাণ্ডার থেকে নিজের ইচ্ছে মতো নেবার জন্য তাকে অবাধ স্বাধীনতা দিবেন। এ ব্যাপারে অবশ্যই সবার সাথে একই ব্যবহার করা হয়।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
* বর্তমান এই পাঠ-এর আলােচনায় দেখা যাচ্ছে, সকল মানবগােষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে এবং প্রাকৃতিক বস্তু নিচয়ের মধ্যে ঈমানের যেসব উপাদান ও প্রমাণাদি রয়েছে, সেগুলাে থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে ঈমানের সে শিক্ষা ও তাৎপর্যের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে, যা নিয়ে রসূলরা আগমন করেছেন। এখানে দেখানাে হয়েছে, কেমন করে যুগ যুগ ধরে মানুষ অপরিবর্তনীয় এই ঈমানী দাওয়াতে সাড়া দিয়েছে, কিভাবে তারা রসূলদের আহ্বানকে গ্রহণ করেছে এবং তারা নূহ(আ.)-এর যামানা থেকে নিয়ে অগনিত রসূলদের উদাত্ত দাওয়াতের প্রতি কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, অতপর আমরা রসূলদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে দেখতে পাচ্ছি, দেখছি রসূলদের উম্মতদেরকে, দেখতে পাচ্ছি তাদের সবাইকে সময়ান্তরে একই কথা পেশ করতে, একই যুক্তি একই দলীল একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের কথা বলতে। অবশেষে দেখতে পাচ্ছি মােহাম্মদ রসূলুল্লাহ(স.)-এর যবানীতে আরবী ভাষায় সেই একই কথার দাওয়াত। দুনিয়ার বুকে যতাে রসূলই এসেছেন তারা নিজ নিজ জাতির কাছে পেশ করেছেন এই একই কথা। নূহ(আ.) তাঁর জাতির কাছেও তা পেশ করেছিলেন এবং পরবর্তী রসূলরাও তাদের জাতির কাছে তাই তুলে ধরেছেন। এই দাওয়াতের জওয়াবে যুগ যুগান্তর ধরে সকল মানব গােষ্ঠী একই কথা বলেছে, তাদের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই শব্দ সমষ্টি দ্বারা ব্যক্ত করেছে। আবার তাকিয়ে দেখুন আল্লাহর কথার দিকে, অবশ্যই আমি মহান নূহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছি… এ লােকটিকে তাে এক পাগলামীতে পেয়ে বসেছে; ঠিক আছে, তাহলে তােমরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকো।’ (আয়াত ২৩-২৫) *নূহ (আ.)-এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও তার জাতির প্রতিক্রিয়া : ‘হে আমার জাতি, আল্লাহর দাসত্ব করে। তিনিই তােমাদের ইলাহ, তিনি ছাড়া…’ এ হচ্ছে এমন এক সত্য কথা যা কোনাে দিন বদলায় না, যার ওপর সকল কিছুর অস্তিত্ব টিকে আছে এবং গােটা সৃষ্টি জগত যার সাক্ষ্য দান করছে। ‘তােমরা কি ভয় করাে না?’ এই অস্বীকৃতির পরিণতি কী হতে পারে তা চিন্তা করে কি তােমাদের একটুও ভয় লাগে না? যে সত্যের পক্ষে গােটা সৃষ্টি জগত সাক্ষ্য দিচ্ছে সেই চুড়ান্ত ও মহাসত্যকে তােমরা যখন অস্বীকার করছে, তখন তােমাদের অন্তরে কি একটুও ভয় জাগে না? তোমরা তাে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছে যে, এই সরল সমুজ্জল সত্যকে তােমরা অস্বীকার করছো এবং এতদসত্তেও কি সেই চরম ও পরম সত্যকে অস্বীকার করার পাগলামীতে তােমাদেরকে পেয়ে বসেছে। এই পাগলামীর পরিণতিতে যে ভীষণ বেদনাদায়ক আযাব রয়েছে তা কি তােমরা একবারও ভেবে দেখেছাে? কিন্তু, হায়! এসব যুক্তিপূর্ণ কথা, আবেগময় আহ্বান এবং প্রাণস্পর্শী মর্মবাণী সে বলদর্পী, জ্ঞানপাপী, নেতৃত্বলােভী ও সুবিধাভােগী কাফের সরদারদের পাথর কঠিন হৃদয় দুয়ার থেকে ফিরে। আসে। এসব কথা নিয়ে কোনাে আলােচনা করতে বা সেসব যুক্তি প্রমাণ নিয়ে কোনাে চিন্তা ভাবনা করতেও তারা রাযি নয়, একবার ভেবে দেখতেও তারা প্রস্তুত নয় যে তাদের সে বিশাল বিশাল ব্যক্তিদের সামনে তুচ্ছ এই আহ্বানকারী ব্যক্তিটির আহ্বান আদৌ কোনাে চিন্তার বিষয় কিনা! তারা এ মহা সত্যকে বুঝার জন্যে, কোনাে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দিকে না তাকিয়ে যদি উন্মুক্ত দিগন্তের দিকে তাকাতাে তাহলেও তারা বুঝতে পারতাে, কে আসল মালিক মনিব ও জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। কিন্তু সত্যকে জানার ইচ্ছা নিয়ে কোনাে দিকেই তারা তাকাতে প্রস্তুত নয়… গােটা সৃষ্টি যে বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং নূহ(আ.)-এর সাথে কথা বলার সময় যা তারা নিজেরাও দেখছে, তাকেই তারা পরিত্যাগ করছে, এরশাদ হচ্ছে, তার জাতির কাফের সরদাররা বললাে, এ ব্যক্তি তাে তােমাদের মতােই একজন মানুষ, সে তােমাদের মধ্যে সব থেকে মর্যাদাবান হতে চায়।’ এই সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকেই তারা নুহ(আ.)-এর মহান দাওয়াতের দিকে তাকাচ্ছিলাে, যার কারণে তারা এ দাওয়াতের মহিমা ও মর্যাদা বুঝতে সক্ষম হয়নি। তাদের হৃদয়ের এ দৃষ্টির সংকীর্ণতাই তাদের সে মহান সত্যকে দেখতে দেয়নি, তাদের চোখের ওপর তা পর্দা ফেলে রেখেছে, যার কারণে তারা দেখেও দেখেনি, শুনেও শােনেনি এবং এতে দীর্ঘকাল ধরে উপস্থাপিত সত্যের প্রতি কোনাে সম্মানও তারা প্রদর্শন করেনি, তাদের ইন্দ্রিয়গুলাে এমনভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাে যে, তাদের বিবেকের কাছে সত্যকে ধরা পড়তে দেয়নি। তাদের সামনে ছিলাে মাত্র একটি বিষয় এবং তা ছিলাে এই যে, তাদের মধ্য থেকেই একজন ব্যক্তির কাছে কেমন করে আসমানী কথা আসতে পারে। এজন্যেই তাদের ধারণা গড়ে উঠেছিলাে যে আসমানী বাণীর ব্যাপারটি আসলে বাজে কথা। সে লােকটি এসব চটকদার কথা বলে নিজেকে বড় বানাতে চায় এবং তাদের সবার ওপর সে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব করার নেশায় মেতে উঠেছে। তাদের এই কূ-ধারণাই তাদেরকে নূহ(আ.)-এর সকল ইচ্ছা ও চেষ্টাকে প্রতিরােধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাে, এভাবে তারা শুধু তাকেই প্রতিরােধ করছিলাে না, প্রকারান্তরে তারা প্রতিরােধ করছিলাে সেই দাওয়াতকে যা নিয়ে তিনি তাদের কাছে হাযির হয়েছিলেন, তাদের এই অপচেষ্টায় তার প্রতি অশ্রদ্ধা পােষণের সাথে সাথে তার আনীত দ্বীনের দাওয়াতকেও অমর্যাদা করা হচ্ছিলাে, আর তাদের এই হঠকারিতা ও যুক্তি বিরোধী কাজের জন্যে গােটা মানব জাতির প্রতিও তারা অমর্যাদা দেখাচ্ছিলাে। এর মাধ্যমে তারা একথাই জানাচ্ছিলাে যে এ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা সম্মান দিতে পারেন না এবং তাদের মধ্যে কেউ রসূল হওয়ার যােগ্যই নয়। রসূলের আগমন যদি প্রয়ােজনই হয় তাহলে ফেরেশতাদের মধ্য থেকেই তাে আসবে। তাদের কথার উদ্ধৃতি দেখুন, ‘আল্লাহ তায়ালা রসূল পাঠাতে চাইলে অবশ্যই ফেরেশতাদেরকে এ কাজের দায়িত্ব দিতেন।’ সে হতভাগা জাতির মুখ দিয়ে এসব কথা এজন্যেই বের হতাে যে, তাদের আত্মার মধ্যে সে মহান মর্যাদাপূর্ণ রূহ প্রবেশ করেনি, মানুষকে তার আসল স্থানে পৌছে দিতে পারে এবং মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবে পরিণত করতে পারে এবং পারে সব থেকে বড় মর্যাদার অধিকারী বানাতে। অতপর এক পর্যায়ে অপর মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়ার যােগ্যও তারা হতে পারে, পারে মানুষকে তাদের শুভ্র সমুজ্জ্বল মূল উৎসের দিকে নিয়ে যেতে। এসব কূট কথা দ্বারা তারা সকল বিষয়কে বাঁকা নযরে দেখছিলাে এবং সকল মানুষকে অতীতের খারাপ মানুষের নিরীখে বিচার করছিলাে। তারা ধারণাই করতে পারছিলাে না যে, মানুষ ভালো হতে পারে এবং এই মানুষ গঠনমূলক কাজের যােগ্যও হতে পারে। তাই তাদের কথাকে উদ্ধৃত করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ‘কই এসব কথা তাে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে কখনাে শুনিনি।’ এভাবে যখনই মানুষের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্যবােধ লােপ পায়, তখন তার সামনে বাস্তবে যেসব জিনিস ঘটছে সেগুলাে নিয়ে তারা আর চিন্তা ভাবনা করতে পারে না, পারে না প্রকৃতির বুকে অবস্থিত বাস্তব ঘটনাবলী থেকে কোনাে শিক্ষা নিতো। ওরাই হচ্ছে সেসব মানুষ যারা অতীতের আবর্জনার স্তূপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে এবং তার ওপরেই নির্ভর করে। অতপর, তারা যদি অতীতের সে আবর্জনার কুঠরির মধ্যে তাদের মনমতাে জিনিস না পায়, তখন সে বিষয়টিকেই তারা অস্বীকার করে এবং হঠকারিতার সাথে সে সত্য বিষয়টিকে ডাষ্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়! এই সকল অস্বীকারকারী, যারা আজ নীরব হয়ে গেছে, তারা মনে করে যে, একবার যা ঘটেছে তা দ্বিতীয় বারও ঘটতে পারে, আর যা ঘটেনি তা আর কখনাে ঘটা সম্ভব নয়। এভাবে তাদের বিবেচনায় জীবন স্থবির হয়ে যায়, তার স্পন্দন থেমে যায়, অতি সংগােপনে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার পদচারণা, চলতে থাকে ওরা পূর্ব-পুরুষদের কথা বলছে, হায় ওরা যদি বুঝতো যে আসলে তারা জড় ইট পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। যারা মানুষের গােলামী থেকে তাদেরকে মুক্ত করতে এসেছে তাদেরকেই ওরা পাগল বলছে? অথচ তারা তাে ওদেরকে সত্য পথ দেখাতেই চেষ্টা করছে এবং এজন্যে চিন্তা ভাবনা করতে আহ্বান জানাচ্ছে, তাদেরকে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন লক্ষ্যে? অন্তরকে পরিষ্কার করতে আহ্বান জানাচ্ছে, পেশ করছে তাদের সামনে গােটা সৃষ্টি জগতে ছড়িয়ে থাকা ঈমান আনার জন্যে এমন অসংখ্য যুক্তি প্রমাণ, যা তাদের সাথে যেন কথা বলছে; কিন্তু হায়, এ দাওয়াতকে নিছক আন্তরিতা ও দোষারোপের মনােবৃত্তি নিয়ে তারা প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের কথাকে উদ্ধৃত করতে গিয়ে এরশাদ হচ্ছে, ‘এ লােকটাকে তাে এক পাগলামীতে পেয়ে বসেছে। অতএব, তােমরা কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখাে। অর্থাৎ, পাগল যখন হয়েই গেছে অচিরেই সে মরে যাবে, তােমরা তার এসব পাগলামী থেকে রেহাই পাবে, রেহাই পাবে তার এই দাওয়াত থেকে রেহাই পাবে নতুন যে কথাটা এনে তােমাদের পেরেশান করছে তার থেকেও।
*ইসলামী আন্দোলনের প্রতি তাগুতের শ্যোন দৃষ্টি : কোরআনে হাকীমে হযরত মূসা(আ.)-এর ঘটনার সূচনা হয়েছে এই মিথ্যাচার ও চ্যালেঞ্জের সূচনা থেকেই। আর তার ইতি টানা হয়েছে মিসরের নীল নদীতে ফেরাউন এবং তার সেনাবাহিনীর ডুবে মারা যাওয়ার মাধ্যমে। হযরত নূহ(আ.)-এর ঘটনার তুলনায় মূসা(আ.)-এর ঘটনা ব্যাপক পরিধিতে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ(স.) এবং তার প্রতি ঈমান আনয়নকারী মুষ্টিমেয় মুসলমানের সাথে মক্কার মােশরেকরা যে ধরনের আচরণ করেছিলাে, তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মূসা(আ.)-এর কওমের আচরণকে এখানে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত মূসা(আ.)-এর ঘটনার যে ধারা এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাকে মােট পাঁচটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। পরে এর সাথে একটি উপসংহার সংযােজিত হয়েছে। এ পর্বগুলো এখানে বর্ণনার পেছনে কি কি কারণ রয়েছে তাও বিবৃত হয়েছে। এ পাঁচটি পর্ব ধারাবাহিকভাবে নিচে প্রদত্ত হলো। (আয়াত ৭৫-৭৮) ফেরাউন এবং তার সর্দারদের কাছে যেসব নিদর্শনসহ হযরত মূসা(আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন, তার সংখ্যা ছিলাে নয়টি, সূরা আল আ’রাফে তা বিবৃত হয়েছে। আলােচনার প্রসংগের কোনাে প্রয়ােজন না থাকার দরুন সে নিদর্শনসমূহের অবতারণা এবং তার বিস্তারিত বর্ণনা এখানে করা হয়নি। সংক্ষেপে ইংগিত করাই এখানে যথেষ্ট ছিলাে। মােট কথা হচ্ছে ফেরাউন এবং তার সর্দারদের আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অগ্রাহ্য করার কথা বলা। অথচ তারা অহংকার করতে আরম্ভ করলাে। বস্তুত তারা ছিলাে অপরাধী সম্প্রদায়। পরে যখন আমার কাছ থেকে তাদের সামনে সত্য এসে উপস্থিত হলাে। এখানে আমার কাছ থেকে (আল্লাহর কাছ থেকে) শব্দটি বলার মাধ্যমে তাদের মারাত্মক অপরাধ চিত্রায়িত করাই উদ্দেশ্য, কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করেছিলাে। তারা বলে, এতে সুস্পষ্ট যাদু। দলীল প্রমাণাদির ওপর অনির্ভরশীল দম্ভপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে একথা বুঝানাে হয়েছে যে, এটা এমন এক বাক্য, যা সর্বযুগের মিথ্যারােপকারীদের কাছে অতি পরিচিত। কোরআন এবং মূসা(আ.)-এর মােজেযার মধ্যকার দূরত্ব এবং স্থান কাল ভিন্ন হওয়া সত্তেও কোরায়শ গােত্রের মােশরেকরাও অনুরূপ মন্তব্য করেছিলাে। যার বর্ণনা আলােচ্য সূরার সূচনাতে দেয়া হয়েছে। ‘মুসা বললো, সত্য যখন তােমাদের সামনে এলাে, তখন তােমরা তার সম্পর্কে এমন কথা বলছাে? এ কি যাদু অথচ যাদুকররা তাে কখনাে সফলকাম হয় না।’ ওপরের আয়াতে মূসা(স.)-এর অস্বীকৃতিপূর্ণ প্রথম প্রশ্নটি উহ্য করে রাখা হয়েছে, যেহেতু দ্বিতীয় প্রশ্নটি প্রথমটির কথা বুঝিয়ে দেয়। যেন মূসা(আ.) তাদের বলেছিলেন, সত্য যখন তােমাদের সামনে এলাে, তখন তােমরা তার সম্পর্কে এমন কথা বলছাে, এ কি যাদু? প্রথম প্রশ্নে সত্যকে যাদুর দ্বারা আখ্যায়িত করাকে অস্বীকৃতি জানানাে হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নে কেউ সত্যকে যাদু বলে বলুক তাতে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। যাদু মানুষকে সৎপথ দেখায় না। কোনাে নির্দিষ্ট আকীদা বিশ্বাসকে অন্তর্ভুক্ত করে না। যার খােদায়ীত্ব এবং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্কের কোনাে সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই, যা জীবনের কোনাে সাংগঠনিক বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করে না। সুতরাং যাদুকে কখনাে এসব জিনিসের সাথে মিলিয়ে দেখা যায় না। যাদুকররা এমন কোনাে কাজ করে না, যা উল্লেখিত উদ্দেশ্যসমূহ সাধনে সহায়ক হতে পারে এবং এ ধরনের মিশন বাস্তবায়ন করতে পারে। তারা কখনাে কৃতকার্য হয় না। কারণ তাদের সকল কাজই কল্পনাপ্রসূত এবং ভেজালে পরিপূর্ণ।এখানে আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের সর্দারদের কাছে ওই সকল বাস্তব কারণ উন্মোচন করেছেন, যা তাদেরকে আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহ মেনে নেয়া থেকে বাধা প্রদান করে। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা বললাে, তােমরা কি এই উদ্দেশ্যে….’ (আয়াত ৭৮) সুতরাং সে আসল কারণটি হচ্ছে, উত্তরাধিকার সূত্রে যে চিন্তা চেতনা ও আকীদা বিশ্বাস তারা পেয়ে আসছে তা ভেংগে চুরমার হয়ে যাওয়ার আশংকা, যার ওপর মূলত তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিলাে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যমীনের কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা, যে কর্তৃত্ব তারা তাদের পৈতৃক ভ্রান্ত আকীদা থেকে গ্রহণ করেছিলাে। নিসন্দেহে এটা ছিলাে এক সার্বজনীন কারণ, যা যুগে যুগে স্বৈরাচারী যালেম শাসকদের, দ্বীনের দাওয়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নানাবিধ ওযর আপত্তি পেশ করা, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের প্রতি অপবাদ দেয়া এবং আল্লাহর রাহে আহ্বান ও আহ্বানকারীদের প্রতিরােধ করতে অশ্লীলতার আশ্রয় নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। নিসন্দেহে সে কারণ হচ্ছে পৃথিবীতে প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য বিস্তার করা। জানা কথাই তা ভ্রান্ত আকীদা বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রভাব প্রতিপত্তিশালীরা চায় ধারণা কল্পনা এবং কুসংস্কার পরিপূর্ণ এবং দুর্নীতি ও ডেজালে পরিপূর্ণ ভ্রান্ত আকীদা বিশ্বাস সর্বসাধারণের অন্তরে বিদ্যমান থাকুক। কারণ বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের প্রতি অন্তর উন্মােচিত হওয়া এবং বুদ্ধি-বিবেকের আলাের দিশা পাওয়াটা পৈতৃক মূল্যবােধের ওপর একটা বিপদ স্বরূপ, স্বৈরাচারী যালেমদের মর্যাদা এবং জনসাধারণের তাদের প্রতি যে ভীতি বিদ্যমান, তার জন্যে ঝুঁকিরূপ এবং যেসব নিয়ম নীতির ওপর এ ভয়ভীতি প্রতিষ্ঠিত এবং নির্ভরশীল, তার জন্যে এটা হচ্ছে বিপজ্জনক। পরিশেষে কল্পনা এবং মূর্তিপূজার ওপর প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্বের জন্যেও এটা সমস্যা। যুগে যুগে বিভিন্ন নবী রসূলরা যে এক আল্লাহ এবং দ্বীন ইসলামের প্রতি মানুষকে আহ্বান করেছেন, সেই আল্লাহ ছাড়া মানুষকে অসংখ্য রবের বান্দা ও গােলাম বানাবার ওপর প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্বের ওপরও বিরাট আশংকা ও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী রসূলদের ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্যে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তাদের দাওয়াতের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলাে সারাজাহানের প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্যে প্রতিষ্ঠিত করা এবং ভ্রান্ত প্রভুদের থেকে মানুষের। জনসাধারণকে অবমূল্যায়নকারী এসব প্রভুর হক এবং হেদায়াতের বাণী সর্বসাধারণের কাছে পৌছার পথে যারা প্রতিবন্ধক ছিলো এবং ওই সাধারণ ঘােষণার পথেও যারা বাধা দিয়েছিলাে, তারা সমগ্র জগতের প্রভুত্ব এক আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠা এবং বান্দার দাসত্ব থেকে মানব সমাজকে মুক্ত করার যে বাণী ইসলাম বহন করে নিয়ে এসেছিলাে, তার পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলাে। কারণ তারা এটা ভালাে করেই জানতাে যে, এটা হচ্ছে তাদের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, তাদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লব, তাদের রাজত্বের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং মানব সমাজের জন্যে প্রয়ােজনীয় স্বাধীনতার পানে অগ্রসর হওয়ার এক অমূল্য ঘোষণা। উল্লিখিত কারণটি মজুত ছিলাে সর্বযুগেই। যখনই কেউ মহান রাব্বুল আলামীনের পথে মানব সমাজকে আহ্বান করেছে তখনই তারা একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। কুরায়শ গোত্রের প্রতিভাবান পুরুষরা মুহাম্মদ(স.)-এর রেসালাতের সত্যতা ও মর্যাদা সম্পর্কে যেমন অবহিত ছিলো, তেমনি তারা শিরকী আকীদা বিশ্বাসের ধ্বস ও ভ্রান্ততা সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকিফহাল ছিলাে। কিন্তু তারা তাদের পৈতৃক মর্যাদা বিনষ্ট হওয়ার আশংকা করতো, যা কুসংস্কার এবং প্রাচীন রীতি নীতিতে পরিপূর্ণ আকীদা-বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাে। যেমন ফেরাউন সম্প্রদায়ের নেতারা যমীনের কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব চলে যাওয়াকে ভয় পেতাে। তাই তারা টিটকারীর সুরে বললাে, ‘তােমাদের উভয়ের কথা আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।’ ফেরাউন এবং তার সর্দাররা যাদুবিদ্যা বর্ণনায় মত্ত হয়ে পড়লাে। তারা সর্বসাধারণকে এ যাদু বিদ্যার সাথে নিমজ্জিত রাখার ইচ্ছা পােষণ করলাে। তাই তারা তখনকার সমাজের যাদুকরদের বৈঠক অনুষ্ঠিত করলাে, যেখানে তারা তাদের যাদুবিদ্যার দ্বারা মূসা এবং বাহ্যদৃষ্টিতে যাদু সাদৃশ্য নিদর্শনাবলীকে চ্যালেঞ্জ করে, যাতে জনগনকে বুঝতে পারে যে, হযরত মূসা(আ.) অভিজ্ঞ যাদুকর বৈ আর কিছুই নয়। পৈতৃক আকীদা বিশ্বাস এবং যমীনের কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব অবসানের যে আশংকা তারা করেছিলাে এর মাধ্যমে একদিন তার অবসান ঘটবে। ফেরাউন সম্প্রদায় প্রত্যাশিত এই প্রকৃত বিপদে অনুভূতি ব্যক্ত করাই যাদুকরদের সম্মেলন অনুষ্ঠানের বাস্তব কারণ ছিলাে।
* *মানব ইতিহাসের প্রথম ধ্বংসলীলা : এতাে দীর্ঘকাল ধরে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয়া সত্তেও সে হতভাগ্য জনপদের কঠিন হৃদয়ের মধ্যে নূহ(আ.) কোনাে প্রবেশ পথ বের করতে সক্ষম হননি, আর তিনি বুঝতে পারছিলেন না তাদের এই উপহাস বিদ্রুপ ও তার প্রতি ওদের কষ্টদায়ক ব্যবহারের ইতি কোথায়। তবে তার সান্ত্বনা যে তিনি সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর দিকে রুজু থাকতে পেরেছেন, তাই ওদের প্রত্যাখ্যানজনিত জ্বালা নিবারণের জন্যে তিনি তার কাছেই অভিযোগ করছেন, আর এ উপর্যুপরি অস্বীকৃতির কষ্ট লাঘবের জন্যে নূহ(আ.) তারই সাহায্য প্রার্থনা করছেন। বলছেন, ‘হে মালিক আমার, ওরা আমাকে মিথ্যাবাদী বানালাে, এ জন্যে তুমিই আমাকে সাহায্য করাে। এভাবে কোনাে জাতির জীবন স্পন্দন যখন স্থবির হয়ে যায়, তাদের মন পাথর হয়ে যায় তারপরও হে আলাের পথের দাওয়াতদানকারী, হে সত্য পথের দিকে আহবানকারী আল্লাহর পথে জীবনের সাড়া জাগানাের জন্যে তােমাকে অগ্রসর হতেই হবে, অগ্রসর হতে হবে স্থিরীকৃত লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্যে। তখনই তুমি তাদের চূড়ান্ত পরিণতি সমাগত দেখতে পাবে… সে সময় তােমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সত্য পথের অভিযাত্রী তুমি, যাত্রা পথে আড় হয়ে দাড়িয়ে থাকা সে জগদ্দল পাথরগুলােকে হয় তুমি ভেংগে চুরমার করে দিয়ে বীর বিক্রমে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবে, আর না হয় স্পন্দনহীন সে জীবনগুলােকে পেছনে পথের ওপর ফেলে রেখে তােমার গন্তব্য পথে তুমি অগ্রসর হবে।… তাই দেখা যায়, নূহ(আ.) সাড়ে নয় শত বছর ধরে চেষ্টা করেও যখন সে জীবন্মৃত জাতির বুকে সাড়া জাগাতে পারলেন না তখন তিনি ওপরে বর্ণিত প্রথম পথটিই অবলম্বন করলেন। তিনি বুঝলেন, পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত সে কলুষ সমাজ সংশােধনের সকল নির্মাণের পথ হারিয়ে ফেলেছে, সর্বনাশের যে সীমায় তারা পৌছে গেছে সেখান থেকে তাদেরকে ফেরানাের আর কোনাে উপায় নেই, তখন বিশ্ব সম্রাটের দরবারে তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে আবেদন জানালেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাে দেখছিলেনই কি পর্বত পরিমাণ ধৈর্য নিয়ে কতাে দীর্ঘকাল ধরে তার এই নেক বান্দা তার জাতির সংধােধনের জন্যে চেষ্টা চালিয়েছে, তাই সাথে সাথে তিনি তার ডাকে সাড়া দিলেন, নূহ(আ.)-এর জাতির ভাগ্যে চরম বিপর্যয় নেমে এলাে। যেহেতু এরাই মানব জাতির অধ্যায় প্রথম মানব গােষ্ঠী, এরা যখন সত্য পথের ওপর আড় হয়ে দাড়িয়ে সত্য পথের যাত্রাকে নির্মমভাবে রুদ্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকর হলাে, তখন তারা আল্লাহর আক্রোশকে তাদেরকে ধরাপৃষ্ঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে আহ্বান জানালাে। তাই এরশাদ হচ্ছে, আমি তার কাছে ওহী পাঠিয়ে হুকুম দিলাম, আমারই সাহায্যক্রমে এবং আমারই পরিকল্পনা মাফিক… আর, যারা যুলুম করেছে, তাদের পক্ষে খবরদার আমার কাছে কোনাে আবেদন করাে না, অবশ্যই তারা আজ নিমজ্জিত হবে।'(আয়াত ২৭) এভাবেই চলে আসছে আবহমানকাল ধরে আল্লাহর সৃষ্টিজগত পরিচালনার রীতি। এভাবেই তিনি চিরকাল মানব জাতির জীবন যাপনের নির্দিষ্ট পথকে নিস্কন্টক ও বাধামুক্ত করে চলেছেন। হযরত নূহ(আ.)-এর আমলে মানব জাতি পচন ও দূষণে জর্জরিত হয়ে যখন সেই চারাগাছের দশায় উপনীত হলাে, যার বিকাশ ও বৃদ্ধি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাধাগ্রস্ত হয় এবং তকিয়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায়, তখন বন্যাই হয়ে দাড়ালো তার একমাত্র ঔষুধ। কেননা বন্যা সমস্ত মলিনতা ও আবর্জনাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় এবং নতুন করে সুস্থ জীবনের বীজ বপনের পথ সুগম করে। বন্যার পর পরিচ্ছন্ন ভূমিতে নতুন করে জীবনের উন্মেষ ঘটে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার বিকাশ বৃদ্ধি ও প্রসার অব্যাহত থাকে আমি তাকে ওহী যােগে আদেশ দিলাম যে, আমার চোখের সামনে ও আমার ওহীর নির্দেশনার ভিত্তিতে নৌকা তৈরী করা। নৌকা বন্যা থেকে আত্মরক্ষা এবং নিরাপদ জীবনের বীজ রক্ষায় ও তার পুনর্বপণে সাহায্য করে। আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিলাে এই যে, হযরত নূহ(আ.) নিজ হাতে নৌকা তৈরী করবেন। কেননা আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্যে মানুষের পার্থিব উপায় উপকরণকে অবলম্বন করে সাধ্যমতাে সর্বোচ্চ চেষ্টা সাধনা করা অপরিহার্য। আল্লাহর সাহায্য অলস ও নিস্ক্রিয় হয়ে বসে থাকা লােকদের কপালে জোটে না। যারা কোনাে কাজ না করে কেবল আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষায় থাকে, তাদের জন্যে সাহায্য বরাদ্দ করা আল্লাহর রীতি নয়। যেহেতু হযরত নূহ(আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে মনস্থ করেছিলেন, তাই তাকে প্রাকৃতিক উপায় উপকরণ অবলম্বন করতে বাধ্য করেন, সেই কাজে তাকে সাহায্য সহযােগিতাও করেন এবং নৌকা নির্মাণ কৌশলও শিক্ষা দেন, যাতে আল্লাহর পরিকল্পনা সফল ও তার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়। কলুষিত পৃথিবীকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযানটা কখন শুরু হবে, তার একটা আলামতও আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, অবশেষে যখন আমার আদেশ এসে পড়বে এবং উনুন উথলে পানি উঠবে, অর্থাৎ উনুনের তলা থেকে পানি ছিটকে বেরুবে। এটাই ছিলাে সেই সংকেত, যা দেখে হযরত নূহ(আ.)-কে নৌকায় জীবনের বীজগুলাে বােঝাই করার ত্বরিত উদ্যোগ নিতে হয়েছিলাে। ‘তখন প্রত্যেক শ্রেণীর প্রাণী থেকে এক এক জোড়া করে নৌকায় তুলে নিয়ো।’ অর্থাৎ তৎকালে যে সমস্ত শ্রেণীর পশু, পাখি ও উদ্ভিদ হযরত নূহের কাছে পরিচিত ছিলাে এবং যা সংগ্রহ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিলাে। ‘এবং তােমার পরিবার পরিজনকেও, তবে যাদের সম্পর্কে ইতিপূর্বেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তারা ছাড়া।’ তারা হচ্ছে আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যানকারীরা ও আল্লাহর রাসূল কে মিথ্যুক সাব্যস্তকারীরা। আগে থেকে ঘােষিত আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম তাদের ওপর প্রযােজ্য। এই সিদ্ধান্ত ও নিয়ম হলাে, আল্লাহর নিদর্শন ও বিধানকে প্রত্যাখ্যানকারীদের ধ্বংস অনিবার্য। হযরত নূহ (আ.)-এর ওপর সর্বশেষ যে আদেশ জারী হলাে তা এই যে, তিনি যেন এমন কারাে সম্পর্কে কোন অনুরোধ না করেন, যাদের ওপর আল্লাহর সিদ্ধান্ত প্রযােজ্য, যারা অত্যাচারী, তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলে না। কারণ তারা তাে ডুববেই। কেননা আল্লাহর নিয়ম কাউকে খাতির করে না এবং কোনাে প্রিয়জনের মন রক্ষার জন্যে তার সঠিক ও স্থায়ী পথ থেকে একবিন্দুও বিচ্যুত হয় না। আল্লাহর এই আদেশ এসে যাবার পর সে জাতির ভাগ্যে কী ঘটেছিলাে, সে বিবরণ এখানে দেয়া হয়নি। যাই হােক, সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিলাে যে, তারা সবাই ডুববেই। অবশ্য তাদের বিপর্যয়ের বিবরণ না দিলেও হযরত নূহকে আল্লাহর শােকর করা, প্রশংসা করা ও তার কাছে সৎ পথের সন্ধান চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর যখন তুমি ও তােমার অন্যান্য সাথীরা নৌকায় সঠিকভাবে বসবে, তখন বলবে, সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে অত্যাচারী জাতির কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।…'(আয়াত ২৮,২৯)। এখানে শিক্ষা দেয়া হলাে যে, এভাবেই আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়, তাঁর কাছে ধর্ণা দিতে হয়, তার গুণাবলী বর্ণনা করতে হয়, তার নিদর্শনাবলীর স্বীকৃতি দিতে হয়। এভাবেই তার বান্দারা বিশেষত নবীরা তার কাছে পরম ভক্তি ও বিনয় সহকারে দোয়া করে থাকেন, যাতে পরবর্তীকালের লােকেরাও তাদের অনুসরণ করতে পারে। এরপর এই কাহিনীর ওপর সামগ্রিকভাবে এতে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার নিদর্শনাবলী প্রতিফলিত হয়েছে। পরীক্ষা অনেক রকমের হয়ে থাকে যেমন, ধৈর্যের পরীক্ষা, কৃতজ্ঞতার পরীক্ষা, পুণ্য সঞ্চয়ের পরীক্ষা, মনোযােগ আকর্ষণের জন্যে পরীক্ষা, শাস্তি দেয়ার জন্যে পরীক্ষা, সৎ লােক ও অসৎ লােক বাছাই করার জন্যে পরীক্ষা, মূল্যায়নের জন্যে পরীক্ষা ইত্যাদি। নূহ(আ.)-এর কাহিনীতেও হযরত নূহ(আ.)-এর জন্যে, তার জাতির জন্যে ও তার ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৩-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আলোচ্য আয়াতগুলোতে নূহ (عليه السلام)-এর জাতিকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত, দাওয়াত পেয়ে জাতির অবস্থান এবং তাদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন নূহ (عليه السلام)-কে। তাঁর জাতি ছিল মূর্তিপূজক, ভাল লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে তারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজা বাদ দিয়ে এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার দিকে আহ্বান করেন এবং তাদেরকে জানিয়ে দেনন আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূূদ নেই, তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার। নূহ (عليه السلام)-এর জাতির মধ্যে যারা সম্ভ্রান্ত, উচ্চ বংশের এবং ক্ষমতাসীন তারা কুফরী করল এবং নূহ (عليه السلام)-কে তাদের মত একজন সাধারণ মানুষ বলে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল। তাদের দাবীন এ ব্যক্তি তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা যদি আমাদের হিদায়াত দেয়ার জন্য কাউকে প্রেরণ করতেন তাহলে ফেরেশতা প্রেরণ করতেন। অথবা এ লোকটির মাঝে পাগলামী রয়েছে, তার মৃত্যু অবধি অপেক্ষা কর। নূহ (عليه السلام)-কে জাতির লোকেরা এভাবে প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিনি প্রার্থনা করলেন যে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করুন। যেমন তিনি বললেন,
(فَدَعَا رَبَّه۫ أَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ)
“তখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল: আমি তো পরাজিত, অতএব, তুমি আমাকে সাহায্য কর।” (সূরা ক্বামার ৫৪:১০)
নূহ (عليه السلام)-এর এ প্রার্থনা শুনে আল্লাহ তা‘আলা ওয়াহী করলেন যে, তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওয়াহী অনুযায়ী নৌযান তৈরী কর, কারণ আমি তোমাকে দেখছি ও শুনছি। যখন তুফান প্রেরণের নির্দেশ চলে আসবে, তথা পৃথিবী বিদীর্ণ হয়ে পানি প্রবাহিত হবে এমনকি আগুন জ্বালানো হয় এমন স্থান থেকেও পানি বের হবে তখন প্রত্যেক প্রকার প্রাণির নর-নারী নৌকাতে তুলে নিবে এবং তোমার পরিবারকেও তুলবে তবে ‘তাদেরকে ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে’ যেমন তাঁর পুত্র। আর আমার কাছে এমন ব্যক্তিদের জন্য দু‘আ করবে না যারা জুলুম করেছে। কারণ তারা ডুবে যাবেই। এ সম্পর্কে আরো আলোচনা সূরা হূদে করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নূহ (عليه السلام)-কে লক্ষ্য করে বলেন, যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আসন গ্রহণ করবে তখন বলবে: সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন:
“এবং যিনি জোড়াসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু যাতে তোমরা আরোহণ কর। যাতে তোমরা তাদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের নেয়ামত স্মরণ কর যখন তোমরা তার ওপর স্থির হয়ে বস; এবং বলঃ পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে। আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১২-১৪)
তখন নূহ (عليه السلام) এ কথাই বললেন যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলতে বললেন। যেমন নূহ (عليه السلام) বলেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা বাণী:
(وَقَالَ ارْكَبُوْا فِيْهَا بِسْمِ اللّٰهِ مَجْر۪هَا وَمُرْسٰهَا ط إِنَّ رَبِّيْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ )
“সে বলল: ‘এতে আরোহণ কর, আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি, আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরা হূদ ১১:৪১)
এবং তিনি আরো বললেন: হে আমার রব! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করান যা হবে কল্যাণকর; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী। নূহ (عليه السلام) সম্পর্কে পূর্বে আরো একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সঠিক কোন ইলাহ নেই।
২. প্রত্যেক সমাজের বিত্তবান বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা সঠিক পথের বিরোধিতা করেছে এবং সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
৩. মযলুমের ডাকে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই সাড়া দিয়ে থাকেন।
৪. নূহ (عليه السلام)-এর নৌযানে সকল প্রাণী এক জোড়া করে উঠানো হয়েছিল।
৫. সর্বাবস্থায় প্রশংসা করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#956)
[ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا کَذَّبُوۡنِ ﴿۲۶﴾
“My Lord, support me because they have denied me.”]
Sura:23
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 23-30
www.motaher21.net