(বই#৯৫৭) [عَمَّا قَلِیۡلٍ لَّیُصۡبِحُنَّ نٰدِمِیۡنَ ﴿ۚ۴۰﴾ অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে।’] সূরা:- আল্-মুমিনূন। সুরা:২৩ ৩১- ৪১ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৫৭)
[عَمَّا قَلِیۡلٍ لَّیُصۡبِحُنَّ نٰدِمِیۡنَ ﴿ۚ۴۰﴾
অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে।’]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
৩১- ৪১ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৩১
ثُمَّ اَنۡشَاۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ قَرۡنًا اٰخَرِیۡنَ ﴿ۚ۳۱﴾
তাদের পরে আমি অন্য এক যুগের জাতির উত্থান ঘটালাম।
২৩:৩২
فَاَرۡسَلۡنَا فِیۡہِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡہُمۡ اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿٪۳۲﴾
এরপর তাদেরই একজনকে তাদের নিকট রসূল করে পাঠিয়েছিলাম; সে বলেছিল, ‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’
২৩:৩৩
وَ قَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِہِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ الۡاٰخِرَۃِ وَ اَتۡرَفۡنٰہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۙ مَا ہٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ ۙ یَاۡکُلُ مِمَّا تَاۡکُلُوۡنَ مِنۡہُ وَ یَشۡرَبُ مِمَّا تَشۡرَبُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۳﴾
আর তারা সম্প্রদায়ের নেতারা, যারা কুফরী করেছিল ও আখেরাতের সাক্ষাতে মিথ্যারোপ করেছিল এবং যাদেরকে আমরা দিয়েছিলাম দুনিয়ার জীবনের প্রচুর ভোগ-সম্ভার , তারা বলেছিল, ‘এ তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ; তোমরা যা খাও, সে তা-ই খায় এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে;
২৩:৩৪
وَ لَئِنۡ اَطَعۡتُمۡ بَشَرًا مِّثۡلَکُمۡ اِنَّکُمۡ اِذًا لَّخٰسِرُوۡنَ ﴿ۙ۳۴﴾
যদি তোমরা তোমাদেরই মত এক জন মানুষের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২৩:৩৫
اَیَعِدُکُمۡ اَنَّکُمۡ اِذَا مِتُّمۡ وَ کُنۡتُمۡ تُرَابًا وَّ عِظَامًا اَنَّکُمۡ مُّخۡرَجُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۵﴾
সে কি তোমাদেরকে একথা জানায় যে, যখন তোমরা সবার পরে মাটিতে মিশে যাবে এবং হাড়গোড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে?
২৩:৩৬
ہَیۡہَاتَ ہَیۡہَاتَ لِمَا تُوۡعَدُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۶﴾
অসম্ভব, তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতিই দেয়া হয়েছে তা অসম্ভব।
২৩:৩৭
اِنۡ ہِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنۡیَا نَمُوۡتُ وَ نَحۡیَا وَ مَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوۡثِیۡنَ ﴿۪ۙ۳۷﴾
একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি-বাঁচি এখানেই এবং আমরা পুনরুত্থিত হব না?
২৩:৩৮
اِنۡ ہُوَ اِلَّا رَجُلُۨ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا وَّ مَا نَحۡنُ لَہٗ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۳۸﴾
এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে নিছক মিথ্যা তৈরী করছে এবং আমরা কখনো তার কথা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।”
২৩:৩৯
قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا کَذَّبُوۡنِ ﴿۳۹﴾
রসূল বললো, “হে আমার রব! এ লোকেরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো এ ব্যাপারে এখন তুমিই আমাকে সাহায্য করো।”
২৩:৪০
قَالَ عَمَّا قَلِیۡلٍ لَّیُصۡبِحُنَّ نٰدِمِیۡنَ ﴿ۚ۴۰﴾
আল্লাহ বললেন, ‘অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে।’
২৩:৪১
فَاَخَذَتۡہُمُ الصَّیۡحَۃُ بِالۡحَقِّ فَجَعَلۡنٰہُمۡ غُثَآءً ۚ فَبُعۡدًا لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۴۱﴾
তারপর এক বিরাট আওয়াজ সত্য-ন্যায়ের সাথে তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে আমরা তাদেরকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনার মত করে দিলাম। কাজেই যালেম সম্প্রদায়ের জন্য রইল ধ্বংস।
৩১- ৪১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩১-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:

পূর্বের আয়াতগুলোতে নূহ (عليه السلام) ও তাঁর জাতি এবং যারা অবাধ্য ছিল তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনার পর এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ‘অতঃপর তাদের পরে অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম’। নূহ (عليه السلام)-এর জাতিকে ধ্বংস করার পর অন্য যে জাতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তারা হল সামূদ জাতি, যাদের কাছে সালেহ (عليه السلام)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল। কারণ এ ঘটনা তাদের ঘটনার সাথে সাদৃশপূর্ণ। কেউ বলেছেন, তারা হল আদ জাতি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে নাবী হিসেবে শু‘আইব (عليه السلام)-কে প্রেরণ করলেন। পূর্বের নাবীর মত তিনিও তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু জাতির যারা নেতৃস্থানীয় এবং ক্ষমতাসীন তারা কুফরী করল এবং আখিরাতকে অস্বীকার করল। যেমন পূর্বের অন্যান্য জাতির নেতৃস্থানীয় লোকেরা কুফরী করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল যিনি রাসূল হবেন তিনি আমাদের মত খাওয়া, পান করা থেকে অমুখাপেক্ষী হবেন, তিনি আমাদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন। তাই তারা তাদের মত খায়, পান করে এমন রাসূলকে মেনে নিতে পারল না। এখানে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় পূর্বের যুগের কাফিররাও জানত যে, যাকে তাদের কাছে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে তিনি আমাদের মত রক্ত মাংসের মাটির তৈরি একজন মানুষ, খাওয়া-পান করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে একশ্রেণির মুসলিম রয়েছে যারা আমাদের রাসূলকে মাটির তৈরি বিশ্বাস করতে চায় না। অথচ সকল নাবীকে মানুষের মধ্য হতেই প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া কুরআনে অনেক দলীল রয়েছে যা প্রমাণ করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মত মাটির তৈরি রক্ত মাংসের মানুষ।

(وَأَتْرَفْنٰهُمْ فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا)

অর্থাৎ আখিরাতে বিশ্বাস না করা ও পার্থিব সুখ-বিলাসের আতিশয্য… এ দুটি ছিল রাসূলের প্রতি ঈমান না আনার মূল কারণ। আজও বাতিলপন্থীরা উক্ত দু’কারণে হক পন্থীদের বিরোধিতা ও সত্যের দাওয়াত থেকে বিমুখ হয়।

সুতরাং সালেহ (عليه السلام)-এর জাতিরা বলল, তোমরা যদি তোমাদের মত একজন মানুষের অনুসরণ কর তাহলে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ মানুষ মানুষকে হিদায়াত দিতে পারে না, সে জন্য তার সাথে কোন ফেরেশতা থাকবে বা বড় কোন নিদর্শন থাকবে।

هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ

অর্থাৎ তোমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত করা হবে বলে সে যে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছে তা অসম্ভব, কোন দিনও তা হতে পারে না। বরং আমাদের যে দুনিয়ার জীবন এ জীবনই শেষ, জীবিত আছি, মারা যাব, আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে না। এ ব্যক্তি তোমাদেরকে যে পুনরুত্থানের প্রতিশ্র“তি প্রদান করছে, মূলত সে এ কথা বলে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করছে।

এভাবে সালেহ (عليه السلام)-কে মিথ্যারোপ করলে নূহ (عليه السلام)-এর মত তিনিও আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেনন ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করুন‎; কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে।’

(قَالَ رَبِّ انْصُرْنِيْ)

অর্থাৎ সালেহ (عليه السلام)-এর দু‘আ কবূল করে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেনন অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে কিন্তু সে অনুতাপ কোন কাজে আসবে না। অতঃপর তাদেরকে বিকট আওয়াজ পাকড়াও করল এবং তারাও ধ্বংস হলো। এ সম্পর্কে সূরা হূদসহ অন্যন্য সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই তাওহীদের দিকে স্বজাতিকে আহ্বান করেছেন।
২. প্রত্যেক যুগের নেতৃস্থানীয় ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরাই সত্যের বিরোধিতা করেছে এবং রাসূলদের সাথে বেআদবী করেছে।
৩. পৃথিবীর সকল বস্তুবাদীদের জন্য এখানে শিক্ষা রয়েছে যে, পূর্বের যুগের মানুষেরা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করত ফলে তাদের পরিণাম ভাল হয়নি।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# কেউ কেউ এখানে সামূদ জাতির কথা বলা হয়েছে বলে মনে করেছেন। কারণ সামনের দিকে গিয়ে বলা হচ্ছেঃ এ জাতিকে “সাইহাহ” তথা প্রচণ্ড আওয়াজের আযাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং কুরআনের অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছ, সামূদ এমন একটি জাতি যার ওপর এ আযাব এসেছিল। ( হূদ ৬৭ ; আল হিজ্‌র ৮৩ ও আল কামার ৩১ ) অন্য কিছু মুফাস্‌সির বলেছেন, এখানে আসলে আদ জাতির কথা বলা হয়েছে। কারণ কুরআনের দৃষ্টিতে নূহের জাতির পরে এ জাতিটিকেই বৃহৎ শক্তিধর করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। বলা হয়েছেঃ وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ – (اعراف : 69) (আ’রাফ:৬৯) এ দ্বিতীয় কথাটিই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ “নূহের জাতির পরে” শব্দাবলী এ দিকেই ইঙ্গিত করে। আর “সাইহাহ্” (প্রচণ্ড আওয়াজ, চিৎকার, শোরগোল, মহাগোলাযোগ) এর সাথে যে সম্বন্ধ স্থাপন করা হয়েছে নিছক এতটুকু সম্বন্ধই এ জাতিকে সামূদ গণ্য করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ এ শব্দটি সাধারণ ধ্বংস ও মৃত্যুর জন্য দায়ী বিকট ধ্বনির জন্য যেমন ব্যবহার হয় তেমনি ধ্বংসের কারণ যাই হোক না কেন ধ্বংসের সময় যে শোরগোল ও মহা গোলযোগের সৃষ্টি হয় তার জন্য ব্যবহার হয়।

# এখানে বর্ণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভেবে দেখার মতো। নবীর বিরোধিতায় যারা এগিয়ে এসেছিল, তারা ছিল জাতির নেতৃস্থানীয় লোক। তাদের সবার মধ্যে যে ভ্রষ্টতা একযোগে কাজ করছিল তা ছিল এই যে, তারা পরকাল অস্বীকার করতো। তাই তাদের মনে আল্লাহর সামনে কোন জবাবদিহি করার আশঙ্কা ছিল না। আর এ জন্যই দুনিয়ার এ জীবনটাই ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং “বৈষয়িক কল্যাণ ও সাফল্যের” ঊর্ধ্বে অন্য কোন মূল্যবোধের স্বীকৃতি তাদের কাছে ছিল না। আবার যে জিনিসটি তাদেরেক এ ভ্রষ্টতার মধ্যে একবারেই নিমজ্জিত করে দিয়েছিল তা ছিল এমন পর্যায়ের প্রাচুর্য ও সুখ-সম্ভোগ যাকে তারা নিজেদের সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবার প্রমাণ মনে করতো। এ সঙ্গে তারা একথাও মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না যে, যে আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক ব্যবস্থাও জীবনধারার ভিত্তিতে অগ্রসর হয়ে তারা দুনিয়ায় এসব সাফল্য অর্জন করেছে তা ভুলও হতে পারে। মানুষের ইতিহাস বার বার এ সত্যটির পুনরাবৃত্তি করে চলেছে যে, সত্যের দাওয়াতের বিরোধিতাকারীদের দলে সবসময় এ তিন ধরনের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী লোকরাই আসে আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যখন মক্কায় তাঁর সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এটিই ছিল সেখানকার পরিস্থিতি।

# কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন যে, তারা নিজেদের মধ্যে এসব কথা বলাবলি করতো। না, বরং সাধারণ লোকদেরেক সম্বোধন করে তারা একথা বলতো। জাতির সরদাররা যখনআশঙ্কা করলো, জনগণ নবীর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব এবং হৃদয়গ্রাহী কথায় প্রভাবিত হয়ে যাবে এবং তাদের প্রভাবিত হয় যাবার পর আমাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আর কাদের ওপর চলবে তখন তারা নিজেদের বক্তৃতার মাধ্যমে এসব কথা জনগনের সামনে তুলে ধরে তাদেরেক বিভ্রান্ত করতে থাকলো। ওপরে নূহের জাতির আলোচনায় যে কথা বলা হয়েছিল। এটি তারই দ্বিতীয় একটি দিক। তারা বলতো, আল্লাহর পক্ষ থেকে এসব নবুওয়াত টবুয়ত কিছুই দেয়া হয়নি এটা হচ্ছে আসলে ক্ষমতা লিপ্সা, এরই মোহে অন্ধ হয়ে এ ব্যক্তি এসব আবোল তাবোল বলছে। তারা বলেঃ ভাইসব! একটু ভেবে দেখো, এ ব্যক্তি কোন্‌ ব্যাপারেতোমাদের থেকে আলাদা? তোমাদের শরীর যেমন রক্ত-মাংসের তারও তাই। তোমাদের ও তার মধ্যে কোন ফারাক নেই। তাহলে কেন সে বড় হবে এবং তোমরা তার ফরমানের আনুগত্য করবে? তাদের এসব ভাষণের মধ্য যেন একথা নির্বিবাদে স্বীকৃত ছিল যে, তারা যে তাদের নেতা এ নেতৃত্ব তো তাদের লাভ করারই কথা, তাদের শরীরের রক্ত মাংস ও তাদের পানাহারের ধরণধারণের প্রতি দৃষ্টি দেবার প্রশ্নই দেখা দেয় না, তাদের নেতৃত্ব আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ এটা তোআপনা-আপনিই প্রতিষ্ঠিত এবং সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। আসলে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এ নতুন নেতৃত্ব, যা এখন প্রতিষ্ঠা লাভের পথে। এভাবে তাদের কথাগুলো নূহের জাতির নেতাদের কথা থেকে কিছু বেশী ভিন্নতর ছিল না। তাদের মতে কোন নতুন আগমনকারীর মধ্যে যে “ক্ষমতা লিপ্সা” অনুভূত হয় অথবা তার মধ্যে এ লিপ্সা থাকার যে সন্দেহ পোষন করার যেতে পারে সেটিই হচ্ছে নিন্দনীয় ও অপবাদযোগ্য। আর নিজেদর ব্যাপারে তারা মনে করতো যে, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা তাদের প্রকৃতিগত অধিকার, এ অধিকারের ক্ষেত্রে তারা সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তা কোন ক্রমেই নিন্দনীয় ও আপত্তিকর হবার কথা নয়।

# এ শব্দগুলোর দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর অস্তিত্বকে তারাও অস্বীকার করতো না। তাদেরও আসল ভ্রষ্টতা ছিল শির্‌ক। কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ জাতির এ অপরাধই বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন আল আরাফ ৭ ; হূদ ৫৩-৫৪ ; হা-মীম আস্‌সাজদাহ ১৪ এবং আল আহকাফ ২১-২২ আয়াত।

# মূলে غُثَاءَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মানে হয় বন্যার তোড়ে ভেসে আসা ময়লা আবর্জনা, যা পরবর্তী পর্যায়ে কিনারায় আটকে পড়ে পচেযেতে থাকে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*স্বার্থবাদীদের মর্মান্তিক পরিণতি : এরপর রসূলদের একই ধরনের তৎপরতা ও একইভাবে স্ব স্ব জাতি কর্তৃক প্রত্যাখ্যানের পুনরাবৃত্তির দৃশ্য এখানে তুলে ধরা হয়েছে। (আয়াত ৩১-৪১) উল্লেখ্য যে, এ সূরায় নবীদের কিসসা-কাহিনীর যা কিছু আলােচিত হয়েছে, তার উদ্দেশ্য বিস্তারিত ও পূর্ণাংগ ঘটনা তুলে ধরা নয়। এগুলাের উদ্দেশ্য শুধু এটা প্রমাণ করা যে, সকল নবী একই বার্তা নিয়ে এসেছেন এবং সকলে প্রায় একই ধরনের অভ্যর্থনা জনগণের কাছ থেকে লাভ করেছেন। এ কারণেই হযরত নূহ(আ.)-কে দিয়ে শুরু করা হয়েছে যাতে এর সূচনা কোথা থেকে ও কিভাবে হয়েছে তা চিহ্নিত করা যায়। আর সর্বশেষ রসূলের আগমনের পূর্বে এ কাজের সমাপ্তি কিভাবে ঘটেছে, তাও যাতে চিহ্নিত করা যায়, সে জন্যে সর্বশেষ হযরত ঈসা ও মূসার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। নবীদের এই সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতার মাঝখানের কারাে নাম উল্লেখ করা হয়নি, যাতে শুরু ও শেষের মধ্যবর্তী স্তরগুলাের সাদৃশ্য প্রমাণিত হয়। বরঞ্চ প্রত্যেক পর্যায়ে যে একই দাওয়াত দেয়া হয়েছে ও একই ধরনের জবাব পাওয়া গেছে, সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা এটা বলাই এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেছেন, অতঃপর তাদের পরে আমি আরো একটা জাতি সৃষ্টি করেছিলাম। তারা কারা, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে খুব সম্ভবত তারা হযরত হুদের জাতি আ’দ। অতঃপর আমি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসূল পাঠালাম। সে বলেছিলাে, ‘তােমরা শুধু আল্লাহর এবাদাত কর, তিনি ছাড়া তােমাদের আর কোনাে মাবুদ নেই। তবুও কি তােমরা সংযত হবে না?’ এও সেই একই দাওয়াত, যা ইতিপূর্বে হযরত নূহ(আ.) দিয়েছিলেন। সে জাতিগুলোর ভাষা যদিও ভিন্ন ছিলাে, কিন্তু তাদের কাছে একই দাওয়াত দেয়া হয়েছিলাে এবং কোরআন সেই দাওয়াত হুবহু উদ্ধৃত করেছে। এর কী জবাব ছিলাে? জবাবটা ছিলাে প্রায় হুবহু নূহের জাতির জবাবের অনুরূপ, তার জাতির নেতারা, যারা কুফরী করতাে, আখেরাতের সাক্ষাতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতো এবং যাদেরকে আমি দুনিয়ার জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি দিয়েছিলাম, তারা বলেছিলাে, ‘এ ব্যক্তি তাে তােমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছু নয়। তোমরা যা আহার করাে, সেও তো তাই আহার করে থাকে এবং তােমরা যা পান করাে, সেও তাই তাই পান করে থাকে। তােমরা যদি তােমাদেরই মতাে একজন মানুষের কথা মতাে চলে, তাহলে তােমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এ আয়াতের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বারংবার যে আপত্তিটা তােলা হয়েছে, সেটা ফেরেশতার মধ্য থেকে না হয়ে মানুষের মধ্য থেকে নবী ও রসূলের আবির্ভূত হওয়া নিয়েই তােলা হয়েছে। আসলে এসব ভােগবাদী ও বিলাসী ধনিক শ্রেণীর মানসিকতা ও সৎ চরিত্রের অধিকারী মানুষের আত্মমর্যাদাবােধের মাঝে সম্পর্কচ্ছেদ থেকেই এই আপত্তিটার উৎপত্তি হয়েছে। কারণ বিলাসিতা, ভােগবাদ ও পুঁজিবাদ মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিকে এতােটা বিকৃত এবং অনুভূতি শক্তিকে এতটা অকর্মণ্য করে ফেলে যে, পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর প্রতি সে কোনাে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না এবং তা থেকে কোনাে শিক্ষাও সে গ্রহণ করে না। এ কারণেই ইসলাম বিলাসিতা, ভােগবাদ ও পুঁজিবাদের বিরােধিতা করে এবং তার সামাজিক বিধি ব্যবস্থা ও অবকাঠামােকে এমনভাবে গড়ে তােলে যে মুসলিম সমাজে কোনাে পুঁজিবাদী, ভােগবাদী ও বিলাসী শ্রেণীর অস্তিত্ব বরদাশত করে না। কেননা এই শ্রেণীটা দূষিত বর্জ্য পদার্থের মতাে, যা গোটা পরিবেশকে এমনভাবে নষ্ট করে ফেলে যে, সর্বত্র নােংরা কীট গিজ গিজ করতে থাকে। পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে বলা হচ্ছে যে, এসব ভােগবাদী পুঁজিপতি শ্রেণী মৃত্যুর পরের পুর্নজন্মকে অস্বীকার করে এবং এই আজব সংবাদ প্রচারকারী রসূলের ওপর বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, ‘এই ব্যক্তি কি তােমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, তােমরা মরে গিয়ে মাটি ও হাডিডতে পরিণত হবার পর পুনরায় তােমাদেরকে সেখান থেকে জীবিত করে বের করে আনা হবে?’..(আয়াত ৩৫-৩৭) এ ধরনের লােকেরা বৃহত্তর জীবনের আবশ্যকতা ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে না এবং বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে তার শেষ গন্তব্যে উপনীত হওয়ার সুক্ষ্ম বিষয়টা অনুধাবন করে না। যেহেতু পৃথিবীর জীবন পূর্ণাংগ নয়, তাই পৃথিবীতে তার শেষ গন্তব্যে পৌছাও সম্ভব নয়। কেননা কাজ ভালােই হােক বা মন্দই হােক, তার পূর্ণাংগ ফল লাভ করা ইহকালে অসম্ভব। এই পূর্ণাংগ ফল কেবল আখেরাতেই লাভ করা যায় । সৎ কর্মশীল ঈমানদার লােকেরা সেখানে সর্বোত্তম জীবনের সর্বোচ্চ মার্গে উপনীত হবে। সেখানে না থাকবে কোনাে ভয় ভীতি ও ক্লান্তি অবসাদ, আর না থাকবে কোনাে উন্নতি অবনতি। পক্ষান্তরে অসৎ কর্মশীল ও পাপাচারীরা সেখানে নিকৃষ্টতম জীবনের সেই সর্বনিম্ন ধাপে উপনীত হবে, যেখানে তাদের মানবত্ব নিরর্থক প্রমাণিত হবে এবং তারা পাথরে বা পাথরের পর্যায়ে পর্যবসিত হবে। এ ধরনের লােকেরা এসব নিগূঢ় তত্ত্ব বােঝে না। তারা জীবনের ইহকালীন স্তরকে পরকালীন স্তরের প্রমাণ বলে গণ্য করে না। তারা এ কথা অনুধাবন করে না যে, যে শক্তি জীবনের এই প্রাথমিক স্তরটার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা করেছেন, তিনি মৃত্যুর পর্যায়ে এসে জীবনের গতি স্তব্ধ করেন না, যেমনটি তার মনে করে থাকে। এ জন্যে তারা এ কথা শুনে অবাক হয়ে যায় যে, মৃত্যুর পর তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। অজ্ঞতার কারণে তারা এটাকে অসম্ভব মনে করে। তারা বরঞ্চ জোর দিয়েই বলে যে, এটা কখনাে হবে না। তাদের মতে জীবনও একটা এবং মৃত্যুও একটা। একবার একটা প্রজন্ম মারা যায় এবং তারপর আর একটা প্রজন্ম জীবন ধারণ করে। যারা মারা যায় এবং মাটি ও হাড়ে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তাদের পুনরুজ্জীবিত হওয়া একেবারেই সুদূর পরাহত, যেমন এই আজব লোকটি [রাসূল (সা.)] বলে থাকে। তারা এতােটুকু অজ্ঞতা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকে না, বরং তাদের রসূলকে আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে মনগড়া খবর পরিবেশনের দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে। যারা আল্লাহকে জানেও না, চিনেও না, তারা কিনা এই মুহূর্তে হঠাৎ করেই আল্লাহকে চিনে ফেললাে। কেননা রসূলের ওপর অপবাদ আরােপ করার জন্যে আল্লাহকে জানার দরকার হয়ে পড়েছে। ‘এই ব্যক্তি আল্লাহর ওপর অপবাদ আরােপকারী ছাড়া আর কিছু নন। আমরা তা ওপর ঈমান আনতে প্রস্তুত নই।'(আয়াত ৩৮) এই পর্যায়ে এসে রসূলের আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না, যেমন ইতিপূর্বে হযরত নূহের তা ছাড়া গত্যন্তর ছিলাে না। এমনকি হুবহু হযরত নূহের ভাষায়ই আল্লাহর সাহায্য চাইলেন। আর সংগে সংগেই আল্লাহ তায়ালা এই প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। কেননা সে জাতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলাে এবং তাদের শােধরানাের আর কোনাে আশা অবশিষ্ট ছিলাে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওরা অচিরেই অনুতপ্ত হবে।’ কিন্তু সেই অনুতাপ ও তাওবায় কোনাে লাভ হবে না। ‘ন্যায় সংগতভাবেই তাদেরকে পাকড়াও করলাে এক বিকট চিৎকার… ফলে আমি তাদেরকে আবর্জনায় পরিণত করলাম।’ (আয়াত ৪০) ‘গুসা’ বলা হয় স্রোতের পানিতে ভেসে আসা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত মূল্যহীন ঘাসপাতা খড়কুটো ইত্যাকার আবর্জনাকে। মােশরেকরা মানুষ হিসাবে আল্লাহর তরফ থেকে যেসব সদগুণ পেয়েছিলাে, নবীর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান মাধ্যমে যখন সেই সদগুণগুলাে হারিয়ে বসলাে, পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব লাভের পেছনে যে মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, সে সম্পর্কে উদাসীন হলাে এবং আল্লাহর নিকটতম ফেরেশতাদের সাথে তাদের সংযােগ ও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলাে, তখন আর তাদের ভেতরে সম্মান পাওয়ার যোগ্য কোনাে উপাদান অবশিষ্ট রইলাে না। ফলে তারা স্রোতে ভেসে আসা খড়কুটোর মতাে হয়ে গেলে, বস্তুত এ উপমাটা পবিত্র কোরআনের একটা বিশেষ ও বিরল বাচনভংগির অন্যতম। তাদের এই নিকৃষ্টতার সাথে যুক্ত হয়েছে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থতা, ‘অতএব যালেমদের ওপর অভিসম্পাত।’ এ অভিসম্পাত বিবেকের জগতে যেমন, সামাজিক জগতেও তেমনি। এ অভিসম্পাত তাদের জীবদ্দশায় যেমন কার্যকর মৃত্যুর পরের স্মৃতিতেও তেমনি কার্যকর।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৩১-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর পরেও বহু উম্মতের আগমন ঘটে। বলা হয়েছে যে, (আরবী) দ্বারা আদ সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সামূদ সম্প্রদায়কে। তাদের উপর বিকট শব্দের শাস্তি এসেছিল। যেমন এই আয়াতে রয়েছে। তাদের কাছেও রাসূল এসেছিলেন এবং আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, বিরোধিতা করে এবং তার আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ শুধুমাত্র এটাই যে, তিনি মানুষ। তারা কিয়ামতকেও অস্বীকার করে। শারীরিক পুনরুত্থানকে তারা অবিশ্বাস করে এবং বলেঃ “ওটা অসম্ভব ব্যাপার। এই লোকটি নিজেই এটা বানিয়ে বলছে। আমরা এসব বাজে কথা বিশ্বাস করতে পারি না।” নবী (আঃ) তখন বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য করুন। কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে।” উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “অচিরেই তারা অনুতপ্ত হবে।” অতঃপর সত্যসত্যই এক বিকট আওয়ায তাদেরকে আঘাত করলো এবং তাদেরকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ্য করে দেয়া হলো। সুতরাং যালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেল। তারা এই শাস্তির যোগ্যই ছিল। প্রচণ্ড ঝটিকার সাথে সাথে ফেরেশতার বিকট ও ভয়াবহ শব্দ তাদেরকে টুকরা টুকরা করে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিলো। ভূষির মত তারা উড়ে গেল। রয়ে গেল শুধু তাদের ঘরবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদেরকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম। সুতরাং ধ্বংস হয়ে গেল যালিম সম্প্রদায়। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদের প্রতি যুলুম করিনি, বরং তারা নিজেরাই ছিল যালিম।” (৪৩:৭৬) সুতরাং আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা ও তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ব্যাপারে মানুষের সতর্ক হওয়া উচিত।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#957)
[عَمَّا قَلِیۡلٍ لَّیُصۡبِحُنَّ نٰدِمِیۡنَ ﴿ۚ۴۰﴾
“After a little, they will surely become regretful.”]
Sura:23
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 31-41
www.motaher21.net

23:31

ثُمَّ اَنۡشَاۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ قَرۡنًا اٰخَرِیۡنَ ﴿ۚ۳۱﴾

Then We produced after them a generation of others.

 

The Story of `Ad or Thamud

Allah tells:

ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا اخَرِينَ

فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولاًأ مِنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَأ تَتَّقُونَ

23:32

فَاَرۡسَلۡنَا فِیۡہِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡہُمۡ اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ مَا لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرُہٗ ؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿٪۳۲﴾

And We sent among them a messenger from themselves, [saying], “Worship Allah ; you have no deity other than Him; then will you not fear Him?”

 

وَقَالَ الْمَلَُ مِن قَوْمِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِلِقَاء الاْخِرَةِ وَأَتْرَفْنَاهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هَذَا إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُونَ

23:33

وَ قَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِہِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ الۡاٰخِرَۃِ وَ اَتۡرَفۡنٰہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۙ مَا ہٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ ۙ یَاۡکُلُ مِمَّا تَاۡکُلُوۡنَ مِنۡہُ وَ یَشۡرَبُ مِمَّا تَشۡرَبُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۳﴾

And the eminent among his people who disbelieved and denied the meeting of the Hereafter while We had given them luxury in the worldly life said, “This is not but a man like yourselves. He eats of that from which you eat and drinks of what you drink.

 

وَلَيِنْ أَطَعْتُم بَشَرًا مِثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ
23:34

وَ لَئِنۡ اَطَعۡتُمۡ بَشَرًا مِّثۡلَکُمۡ اِنَّکُمۡ اِذًا لَّخٰسِرُوۡنَ ﴿ۙ۳۴﴾

And if you should obey a man like yourselves, indeed, you would then be losers.

 

Then, after them, We created another generation. And We sent to them a Messenger from among themselves (saying):”Worship Allah! You have no other God but Him. Will you not then have Taqwa!”

And the chiefs of his people who disbelieved and denied the meeting in the Hereafter, and whom We had given the luxuries and comforts of worldly life, said:”He is no more than a human being like you, he eats of that which you eat, and drinks of what you drink. If you were to obey a human being like yourselves, then verily, you indeed would be losers.”

Allah tells us that after the people of Nuh, He created another nation.

It was said that this was `Ad, because they were the successors of the people of Nuh.

Or it was said that they were Thamud, because Allah says:
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ
(So, the Sayhah overtook them in truth).

Allah sent to them a Messenger from among themselves, and he called them to worship Allah Alone with no partner or associate, but they belied him, opposed him and refused to follow him because he was a human being like them, and they refused to follow a human Messenger. They did not believe in the meeting with Allah on the Day of Resurrection and they denied the idea of physical resurrection.

They said:

أَيَعِدُكُمْ أَنَّكُمْ إِذَا مِتُّمْ وَكُنتُمْ تُرَابًا وَعِظَامًا أَنَّكُم مُّخْرَجُونَ

23:35

اَیَعِدُکُمۡ اَنَّکُمۡ اِذَا مِتُّمۡ وَ کُنۡتُمۡ تُرَابًا وَّ عِظَامًا اَنَّکُمۡ مُّخۡرَجُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۵﴾

Does he promise you that when you have died and become dust and bones that you will be brought forth [once more]?

 

هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوعَدُونَ

23:36

ہَیۡہَاتَ ہَیۡہَاتَ لِمَا تُوۡعَدُوۡنَ ﴿۪ۙ۳۶﴾

How far, how far, is that which you are promised.

 

“Does he promise you that when you have died and have become dust and bones, you shall come out alive (resurrected)! Far, very far is that which you are promised!

meaning, very unlikely.

إِنْ هِيَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ

23:37

اِنۡ ہِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنۡیَا نَمُوۡتُ وَ نَحۡیَا وَ مَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوۡثِیۡنَ ﴿۪ۙ۳۷﴾

Life is not but our worldly life – we die and live, but we will not be resurrected.

 

There is nothing but life of this world! We die and we live! And we are not going to be resurrected!

23:38

اِنۡ ہُوَ اِلَّا رَجُلُۨ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا وَّ مَا نَحۡنُ لَہٗ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۳۸﴾

He is not but a man who has invented a lie about Allah, and we will not believe him.”

 

إِنْ هُوَ إِلاَّ رَجُلٌ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا

He is only a man who has invented a lie against Allah,

meaning, `in the Message he has brought to you, and his warnings and promise of resurrection.’

وَمَا نَحْنُ لَهُ بِمُوْمِنِينَ

قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ

23:39

قَالَ رَبِّ انۡصُرۡنِیۡ بِمَا کَذَّبُوۡنِ ﴿۳۹﴾

He said, “My Lord, support me because they have denied me.”

 

and we are not going to believe in him.”

He said:”O my Lord! Help me because they deny me.”

meaning, the Messenger prayed against his people and asked his Lord to help him against them.

His Lord answered his prayer:

قَالَ عَمَّا قَلِيلٍ لَيُصْبِحُنَّ نَادِمِينَ

23:40

قَالَ عَمَّا قَلِیۡلٍ لَّیُصۡبِحُنَّ نٰدِمِیۡنَ ﴿ۚ۴۰﴾

[ Allah ] said, “After a little, they will surely become regretful.”

 

(Allah) said:”In a little while, they are sure to be regretful.”

meaning, `for their opposition towards you and their stubborn rejection of the Message you brought to them.’

23:41

فَاَخَذَتۡہُمُ الصَّیۡحَۃُ بِالۡحَقِّ فَجَعَلۡنٰہُمۡ غُثَآءً ۚ فَبُعۡدًا لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۴۱﴾

So the shriek seized them in truth, and We made them as [plant] stubble. Then away with the wrongdoing people.

 

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ

So, The Sayhah overtook them in truth,

meaning, they deserved that from Allah because of their disbelief and wrongdoing. The apparent meaning is that the Sayhah was combined with the furious cold wind,

تُدَمِّرُ كُلَّ شَىْءٍ بِأَمْرِ رَبِّهَا فَأْصْبَحُواْ لَا يُرَى إِلاَّ مَسَـكِنُهُمْ

Destroying everything by the command of its Lord! So they became such that nothing could be seen except their dwellings! (46:25)


فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَاء

and We made them as rubbish of dead plants.

means, they are dead and destroyed, like the scum and rubbish left by a flood, i.e., something insignificant and useless that is of no benefit to anyone.


فَبُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

So, away with the people who are wrongdoers.

As Allah’s statement:

وَمَا ظَلَمْنَـهُمْ وَلَـكِن كَانُواْ هُمُ الظَّـلِمِينَ

We wronged them not, but they were the wrongdoers. (43:76)

means, who are wrongdoers because of their disbelief and stubborn opposition to the Messenger of Allah, so let those who hear this beware of disbelieving in their Messengers.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply