(বই#৯৬৩) [ فَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ তারা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।] সূরা:- আল্-মুমিনূন। সুরা:২৩ পারা:১৮ ৮৪-৯২ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬৩)
[ فَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
পারা:১৮
৮৪-৯২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৮৪
قُلۡ لِّمَنِ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۴﴾
তাদেরকে জিজ্ঞেস করোঃ যদি তোমরা জানো তাহলে বলো এ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা বাস করে তারা কারা?
২৩:৮৫
سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۸۵﴾
অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ্‌র।’ বলুন, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
২৩:৮৬
قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبۡعِ وَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۸۶﴾
জিজ্ঞেস কর, ‘কে সপ্তাকাশ ও মহা আরশের অধিপতি?’
২৩:৮৭
سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۸۷﴾
অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ্‌।’ বলুন, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?’
২৩:৮৮
قُلۡ مَنۡۢ بِیَدِہٖ مَلَکُوۡتُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُوَ یُجِیۡرُ وَ لَا یُجَارُ عَلَیۡہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۸﴾
তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো, কার কর্তৃত্ব চলছে প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর? আর কে তিনি যিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারে না?
২৩:৮৯
سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ فَاَنّٰی تُسۡحَرُوۡنَ ﴿۸۹﴾
অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ্‌।’ বলুন, ‘তাহলে কোথা থেকে তোমরা জাদুগ্রস্থ হচ্ছো?’
২৩:৯০
بَلۡ اَتَیۡنٰہُمۡ بِالۡحَقِّ وَ اِنَّہُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ ﴿۹۰﴾
যা সত্য তা আমি তাদের সামনে এনেছি এবং এরা যে মিথ্যেবাদী এতে কোন সন্দেহ নেই।
২৩:৯১
مَا اتَّخَذَ اللّٰہُ مِنۡ وَّلَدٍ وَّ مَا کَانَ مَعَہٗ مِنۡ اِلٰہٍ اِذًا لَّذَہَبَ کُلُّ اِلٰہٍۭ بِمَا خَلَقَ وَ لَعَلَا بَعۡضُہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿ۙ۹۱﴾
আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো। এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ‌ পাক-পবিত্র।
২৩:৯২
عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَ الشَّہَادَۃِ فَتَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿٪۹۲﴾
তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তারা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।
৮৪-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*নির্ভেজাল তাওহীদের দাওয়াত : এখানে আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসীদের স্বীকৃত ও ঘােষিত সত্যগুলােকেই ওদের সামনে তুলে ধরছেন। ওদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটানাের জন্যে এবং এর মাধ্যমে ওদেরকে নির্ভেজাল তাওহীদের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে। অবশ্য ওরা যদি স্বভাব ধর্মের ওপর টিকে থাকে এবং এ থেকে বিচ্যুত না হয়ে থাকে। অন্যথায় হেদায়াত ওদের ভাগ্যে জুটবে না। তাই বলা হচ্ছে, ‘বলাে পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তােমরা জান, তবে বলে…'(আয়াত ৮৪-৮৯) যুক্তি তর্কের ধরন দেখেই বুঝা যায় ওদের বিভ্রান্তি কোন পর্যায়ের। এটা এমন পর্যায়ের বিভ্রান্তি যার সাথে যুক্তির তাে দূরের কথা, সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিরও সম্পর্ক নেই। এই যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে ইসলামের সূচনালগ্নে আরব উপদ্বীপের মােশরেক সম্প্রদায়ের আকীদা-বিশ্বাসে কতােটুকু পচন ধরেছিলাে সেটা প্রকাশ পায়। তাদেরকে যদি পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যকার যাবতীয় প্রাণী ও বস্তুর মালিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু ওরা যখন গায়রুল্লাহর উপাসনা করতে যায় তখন এই বাস্তব সত্যটিকে বেমালুম ভুলে যায়। তাই নবীকে বলা হচ্ছে, ‘বলাে, তবুও কি তােমরা স্মরণ করবে না?’ এরপর তাদেরকে সপ্ত আকাশ এবং মহান আরশের মালিক, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এখানে সপ্ত আকাশ বলতে সাতটি কক্ষপথ, অথবা সাতটি নক্ষত্রপুঞ্জ অথবা সাতটি নীহারিকা অথবা সাতটি জগত অথবা যে কোনাে সাতটি মহাকাশীয় জাতীয় সৃষ্টি জগত। আর ‘মহা আরশ’ গোটা সৃষ্টি জগতের ওপর আল্লাহর কর্তৃত্ব ও প্রভুত্বের প্রতীক হিসেবে এসেছে। মােট কথা, যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সপ্ত আকাশ এবং মহান আরশের প্রভু কে? তখন তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা! মাটিতে পড়ে থাকা নিথর ও মর্যাদাহীন প্রস্তর মূর্তিগুলােকে আল্লাহর শরীক ঠাওরাতে গিয়ে ওরা মহান আরশের মালিককে ভয় করে না, সপ্ত আকাশের প্রভুকে ভয় করে না। তাই নবীকে বলতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, ‘বলো, তবুও কি তােমরা ভয় করাে না?’ এরপর তাদেরকে গােটা জগতের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও শাসনের মালিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, অর্থাৎ কোন সেই মহান সত্ত্বা যিনি গােটা বিশ্ব জগতকে নিয়ন্ত্রণ করেন, পরিচালনা করেন, শাসন করেন। কোন সেই মহান সত্ত্বা যিনি নিজের শক্তি বলে যাকে ইচ্ছা রক্ষা করতে পারেন, কেউ তাতে বাধ সাধতে পারে না এবং কেউ তার কাছ থেকে কাউকে রক্ষা করতে পারে না? এই মহান সত্ত্বা কে? তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু এর পরেও তারা কি ভাবে আল্লাহর এবাদাত থেকে দূরে সরে যায়। তাদের বিবেক-বুদ্ধি সঠিকভাবে কাজ করছে না কেন? কেন ওরা বিভ্রান্তির মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে? ওরা কি যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বলাে, তাহলে কোথা থেকে তােমাদেরকে যাদু করা হচ্ছে? এই অস্থিরতা, এই বিভ্রান্তি আর এই লক্ষ্যহীনতা যাদুর প্রভাবেই হয়ে থাকে! এই মােক্ষম সুযােগে কাফের মােশরেকদের মাঝে রসূলুল্লাহ(স.) যে তাওহীদের বিশ্বাস ও মতবাদ প্রচার করেছেন তার সত্যতা ও বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এবং আল্লাহর সন্তান ও শরীক সম্পর্কিত ওদের দাবীর অসারতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে পূর্বের যুক্তিতর্কের পর নিচের বক্তব্যটি আসছে, ‘কিছুই নয়, আমি তাদের কাছে সত্য পাঠিয়েছেন…'(আয়াত ৯১-৯২) আলােচ্য আয়াতে উপরের বিষয়গুলাে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত. মােশরেকদের সাথে যুক্তি তর্কের পথ পরিহার করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত. ওদের মিথ্যাবাদিতা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। যেমন আয়াতে বলা হয়েছে, ‘কিছুই নয়, আমি তাদের কাছে সত্য পাঠিয়েছি এবং তারাই মিথ্যাবাদী।’ এরপর ওদের মিথ্যাবাদিতার দিকগুলাে চিহ্নিত করে বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ কোনাে সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সাথে অন্য কোনাে মাবুদ নেই’ এরপর ওদের মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রমাণ করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ‘যদি থাকত তাহলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেতাে’ অর্থাৎ প্রত্যেক স্ৰষ্টা তার সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেতাে এবং নিজস্ব নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তা পরিচালিত করতাে। ফলে জগতের প্রতিটি অংশের জন্যে অথবা প্রাণী জগতের প্রতিটি দলের জন্যে বিশেষ বিশেষ নিয়ম-নীতি সৃষ্টি হয়ে যেতাে যা গােটা বিশ্ব জগত পরিচালনায় সাধারণ নিয়ম-নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত হতাে। শুধু তাই নয়, বরং প্রত্যেক স্রষ্টা অন্য স্রষ্টার ওপর প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে জগত পরিচালনায় মত্ত হয়ে পড়তাে। অথচ এই জগতের অস্তিত্ব ও শৃংখলা নির্ভর করে একক নিয়ম-নীতির ওপর একক পরিচালনার ওপর এবং একক ব্যবস্থাপনার ওপর বলা বাহুল্য যে, গােটা জগতে এ জাতীয় কোনাে অব্যবস্থা ও অনিয়মের কোনাে অস্তিত্ব নেই। বরং এই জগতের একক গঠন প্রণালী একক স্রষ্টারই পরিচয় বহন করে। এর একক নিয়ম-নীতি একক পরিচালক ও নিয়ন্ত্রকেরই সাক্ষ্য বহন করে। এই জগতের প্রতিটি অংশ ও প্রতিটি বস্তুর সাথে অন্যান্য অংশের ও অন্যান্য বস্তুর একটা সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়, একটা শৃংখলা লক্ষ্য করা যায়। পরস্পরের মাঝে কোনাে সংঘর্ষ নেই, কোনো বিরােধ নেই এবং কোনাে গােলযােগ নেই। তাই বলা হচ্ছে, ‘তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।’ দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। এসব বিষয়ের পূর্ণাংগ জ্ঞান কোনাে মখলুকের নেই। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এসব বিষয় জানতে পারে না। তাই বলা হচ্ছে, ‘তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি উর্ধ্বে।’

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# মূলে—–শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ “এসব জিনিসও আল্লাহর” তবে অনুবাদে নিছক আমাদের ভাষায় সুন্দর করে প্রকাশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বাকরীতি অবলম্বন করা হয়েছে।

# তাহলে কেন তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে এবং তাঁর ছাড়া অন্যের বন্দেগী করতে ভয় করো না? কেন তোমরা এ ভয় করো না, আকাশ ও পৃথিবীর বাদশাহ যদি কখনো আমাদের কাছ থেকে হিসেব নেন তাহলে আমরা তাঁর কাছে কি জবাব দেবো?

# মূলে—–শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—–(বাদশাহী) ও—–(মালিকানা) উভয়েরই অর্থ। আর এর সঙ্গে রয়েছে চরম আতিশয্যের অর্থও। এ বিস্তারিত বর্ণনার প্রেক্ষিতে আয়াতে পেশকৃত প্রশ্নের পূর্ণ অর্থ হচ্ছেঃ প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর নিরংকুশ কর্তৃত্ব কার এবং প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর পুরোপুরি মালিকানা ক্ষমতা আছে কার হাতে?

# মূলে আছে দু’টি শব্দ———–এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, “কোথায় থেকে তোমরা যাদুকৃক হচ্ছো? ” যাদু ও তেলেসমাতের স্বরূপ এভাবে বর্ণনা করা যায় যে, একটি জিনিসকে তার আসল অর্থ, তাৎপর্য ও সঠিক চেহারার বিপরীতে এনে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং দর্শকের মনে এরূপ ভুল ধারণা সৃষ্টি করে যে, যাদুকর কৃত্রিমভাবে যা পেশ করছে তা-ই হচ্ছে ঐ জিনিসের আসল স্বরূপ। কাজেই আয়াতে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে, কে তোমাদের ওপর এমন যাদু করে দিয়েছে যার ফলে এসব কথা জানা সত্ত্বেও প্রকৃত সত্য তোমরা বুঝতে পারছো না? কার যাদু তোমাদেরকে এমন উদভ্রান্ত করে দিয়েছে, যার ফলে যে মালিক নয় তাকে তোমরা মালিক বা তার শরীক হিসেবে দেখছো এবং যারা কোনো কর্তৃত্বের অধিকারী নয় তাদেরকে তোমরা আসল কর্তৃত্বের অধিকারীর মতো বরং তাঁর চাইতেও বেশী বন্দেগীর হকদার মনে করছো? কে তোমাদের চোখে আবরণ দিয়েছে, যার ফলে যে আল্লাহ‌ সম্পর্কে তোমরা একথা স্বীকার করো যে, তাঁর হাত থেকে তোমাদেরকে তাঁর জিনিসগুলো কিভাবে ব্যবহার করেছো সেকথা কখনো জিজ্ঞেস করবেন না এবং যিনি সারা বিশ্ব-জগতের একচ্ছত্র অধিপতি তিনি কখনো তোমাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না যে, তাঁর রাজত্বের মধ্যে তোমরা নিজেদের রাজত্ব চালাবার অথবা অন্যদের রাজত্ব মেনে নেবার অধিকার কোথায় থেকে লাভ করলে? কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যাদুর অভিযোগ এনেছিল এ বিষয়টি যদি সামনে থাকে তাহলে প্রশ্নের ধরণ আরো বেশী অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনুরূপভাবে প্রশ্নের ধরণ আরো বেশী অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনুরূপভাবে প্রশ্নের এ শব্দাবলীর মধ্যে এ বিষয়বস্তুটিও ফুটে উঠেছে যে, নিবোর্ধের দল! যিনি তোমাদেরকে আসল সত্যটি (তোমাদের স্বীকৃতি অনুযায়ী যার আসল সত্য হওয়া উচিত) বলেন, তিনি তো তোমাদের চোখে যাদুকর আর যারা রাতদিন তোমাদেরকে সত্য বিরোধী কথা বলে বেড়ায় এমনকি যারা তোমাদেরকে সুস্পষ্ট বুদ্ধি ও যুক্তি বিরোধী, অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ বিরোধী, তোমাদের নিজেদের স্বীকৃত সত্য বিরোধী প্রকাশ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথায় বিশ্বাসী করে দিয়েছ তারাই যে আসল যাদুকর তাদের সম্পর্কে তোমাদের মনে কখনো এ সন্দেহ জাগে না।

# আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কেউ সার্বভৌম ক্ষমতার (আল্লাহর গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকার অথবা সেগুলোর কোন অংশ) অধিকারী নিজেদের একথায় তারা মিথ্যেবাদী। আর মৃত্যুর পর পুর্নাবার জীবন সম্ভব নয়, একথায়ও মিথ্যেবাদী। তাদের মিথ্যা তাদের নিজেদের স্বীকৃতিগুলো থেকে প্রমাণিত। একদিকে আল্লাহকে পৃথিবী ও আকাশের মালিক ও সব জিনিসের ওপর ক্ষমতাশালী বলে মেনে নেয়া এবং অন্যদিকে একথা বলা যে, তিনিই একমাত্র সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী নন বরং অন্যদের ও (যারা অনিবার্যভাবে তাঁর অধীনই হবে) তাতে কোন অংশ আছে, এ দু’টি কথা সুস্পষ্টভাবে পরস্পর বিরোধী। অনুরূপভাবে একদিকে আমাদেরকে ও এ বিশাল বিশ্ব-জাহানকে আল্লাহ‌ সৃষ্টি করেছেন বলে স্বীকার করা এবং অন্যদিকে আল্লাহ‌ তাঁর নিজের তৈরী করাসৃষ্টি দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করতে পারেন না বলে দাবী করা একেবারেই বুদ্ধি ও যুক্তি বিরোধী কথা। কাজেই তাদের মেনে নেয়া সত্য থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, শিরক করা ও আখেরাত অস্বীকারকরা দু’টোই তাদের অবলম্বিত মিথ্যা বিশ্বাস।

# এখানে কেউ যেন ভুল ধারণা না করেবসেনযে, নিছক খৃস্টবাদের প্রতিবাদে একথা বলা হয়েছে। না, আরবের মুশরিকরাও নিজেদের উপাস্যদেরকে আল্লাহর সন্তান গণ্য করতো। এ ভ্রষ্টতার ব্যাপারে দুনিয়ার অধিকাংশ মুশরিক ছিল তাদেরসহযোগী। যেহেতু খৃস্টানদের “খোদার পুত্র” আকীদাটির প্রচার বেশী হয়ে গেছে তাই কোন কোন শ্রেষ্ঠ মুফাসসিরও এ ভুল ধারণা প্রকাশ করেছেন যে, এ আয়াতটি তারই প্রতিবাদে নাযিল হয়েছে। অথচ শুরু থেকেই মক্কার কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারাই থেকেছে সমগ্র ভাষণটির মূল লক্ষ। এ প্রক্ষাপটে হঠাৎ বক্তব্য খৃস্টানদের দিকে মোড় নেয়ার কোন অর্থই হয় না। তবে আনুসঙ্গিকভাবে এর মধ্য দিয়ে খৃস্টান-মুশরিক নির্বিশেষে যারাই আল্লাহর সাথে নিজেদের উপাস্য ও নেতাদের বংশধারা মিলিয়ে দেয় তাদের সবার আকীদা-বিশ্বাসের খন্ডন হয়ে যায়।

# বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্রভু হতো আলাদা আলাদা ইলাহ এবং এরপর তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বজায় থাকতো যেমন তোমরা এ সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থার অসংখ্য শক্তি ও বস্তু এবং অগণিত গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছো, এটা কোন ক্রমেই সম্ভব ছিল না। বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা স্পষ্টতই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌঁছে ছাড়তো না। এ বক্তব্যই সূরা আম্বিয়ায় এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যেতো।” ( ২২ আয়াত ) সূরা বনী ইসরাঈলেও এ একই যুক্তির অবতারণা করা হয়েছেঃ—————“যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো, যেমন লোকেরা বলে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের স্থানে পৌঁছুবার চেষ্টা করতো।”

# কোন কোন সমাজে একটা বিশেষ ধরনের শিরক দেখতে পাওয়া যায়। এর প্রথামিক রূপ হলো শাফায়াত বা সুপারিশ করে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষমতা সংক্রান্ত মুশরিকা আকীদা। তারপর আল্লাহ‌ ছাড়া অন্যান্য কোন কোন সত্তার অদৃশ্য ও ভূত-ভবিষ্যতের জ্ঞান আছে বলে ধারণা করা। এখানে এ বিশেষ ধরনের শিরকের প্রতি একটি সূক্ষ্মইঙ্গিত রয়েছে, আয়াতটি এ শিরকের উভয় দিককে খন্ডন করে।

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:

মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদে রুবুবিয়াহ তথা সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, হায়াত-মওতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা তা বিশ্বাস করতন সে কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আকাশ-জমিনের মালিক, সৃষ্টিকর্তা, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ ও বিপদ থেকে মুক্তি দান কে করে থাকেন মক্কার মুশরিকরা এক কথায় উত্তর দিবে, সব আল্লাহ তা‘আলা করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَا۬ءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْأَمْرَ ط فَسَيَقُوْلُوْنَ اللّٰهُ ج فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُوْنَ)

“বল:‎ ‘কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত হতে কে বের করে এবং মৃতকে জীবিত হতে কে বের করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে?’ তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ তা‘আলা।’ বল:‎ ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’’ (সূরা ইউনুস ১০:৩১) এরূপ অনেক আয়াত রয়েছে যা প্রমাণ করে মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়াহ স্বীকার করত।

(أَفَلَا تَتَّقُوْنَ)

অর্থাৎ তোমরা জান এবং স্বীকারও করছন সব কিছু আল্লাহ তা‘আলা করে থাকেন, তবুও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে মূর্তিপূজো ছাড়বে না? তিনি যদি এসব কিছু করে থাকেন তাহলে তিনিই কি সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার নন?

তারা এ কথাও স্বীকার করত যে, সকল কিছুর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে। তারপরও তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যদেরকে শরীক করত এবং বলত যে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এরূপ করতে দেখেছি। যেমন তাদের কথা:

(إِنَّا وَجَدْنَآ اٰبَا۬ءَنَا عَلٰٓي أُمَّةٍ وَّإِنَّا عَلٰٓي اٰثٰرِهِمْ مُّقْتَدُوْنَ)‏

“আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের ওপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:২৩)

আর এ ব্যাপারে তাদের কোন দলীলও ছিল না যে, তারা দলীল পেশ করবে; বরং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করত। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَمَنْ يَّدْعُ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ لا لَا بُرْهَانَ لَه۫ بِه۪ لا فَإِنَّمَا حِسَابُه۫ عِنْدَ رَبِّه۪ ط إِنَّه۫ لَا يُفْلِحُ الْكٰفِرُوْنَ)

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য মা‘বূূদের ইবাদত করে, যার পক্ষে তার কোন প্রমাণ নেই; তার হিসেব তার প্রতিপালকের নিকট; নিশ্চয়ই কাফিরগণ সফলকাম হবে না।” (সূরা মু’মিনূন ২৩:১১৭)

অতএব বলা যায় যে, দলীল-প্রমাণ ব্যতীত কোন আমল করা যাবে না, বরং যতটুকু প্রমাণ পাওয়া যাবে ততটুকুই মানতে হবে; এর কমও না আবার বেশিও না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সমস্ত জিনিসের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. সর্বদা সত্য পথে থাকবে হবে। সত্য হতে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।
৩. কোন প্রকার শিরক করা যাবে না।
৯১-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:

(مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنْ وَّلَدٍ…..)

উক্ত আয়াতটিতে তিনটি মাসআলাহ বর্ণিত হয়েছে:

১. আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান নেই, তিনি এ থেকে পবিত্র।
২. আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কোন মা‘বূূদ নেই, এ থেকেও তিনি পবিত্র।
৩. একাধিক মা‘বূদ হওয়া অসম্ভব তার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যে, যদি একাধিক মা‘বূূদ থাকত তাহলে প্রত্যেক মা‘বূূদ যা সৃষ্টি করেছে সে তা নিয়ে আলাদা হয়ে যেত এবং একজন অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَوْ كَانَ فِيْهِمَآ اٰلِهَةٌ إِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ج فَسُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)‏

“যদি আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে বহু ইলাহ্ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে তা হতে ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, মহান।” (সূরা আম্বিয়া ২১:২২) এ সম্পর্কে সূরা বানী ইসরাঈলের ৪২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন। সুতরাং মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যে শিরক করে তা থেকে তিনি পবিত্র। এ সম্পর্কে সূরা রাদের ৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই উপাস্য। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই।
২. একাধিক উপাস্য থাকলে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হত।
৩. আল্লাহ তা‘আলার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই, তিনি তা থেকে পূতঃপবিত্র।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয় সম্পর্কে সর্বদা অবগত।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা স্বীয় একত্ব, সৃষ্টির কর্তৃত্ব, স্বেচ্ছাচারিতা ও আধিপত্য সাব্যস্ত করছেন যাতে অবহিত হওয়া যায় যে, প্রকৃত মা’রূদ একমাত্র তিনিই। তার ইবাদত ছাড়া আর কারো ইবাদত করা মোটেই উচিত নয়। তিনি এক, তাঁর কোনই অংশীদার নেই। তাই তিনি স্বীয় সম্মানিত রাসূল (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তুমি এই মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর- এই পৃথিবী এবং এতে যা কিছু আছে সে সব কার, যদি তোমরা জাননা? তারা অবশ্যই উত্তরে বলবেঃ আল্লাহর; সুতরাং তুমি তাদেরকে বলঃ তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? সৃষ্টিকর্তা এবং মালিক যখন একমাত্র আল্লাহ, তিনি ছাড়া কেউ নয় তখন তিনি একাই কেন মা’বুদ হবেন না? কেনই বা তার সাথে অন্যদের ইবাদত করা হবে? প্রকৃত ব্যাপার এই যে, তারা তাদের মা’বৃদদেরকেও আল্লাহর সৃষ্ট ও তাঁর দাস বলেই বিশ্বাস করে। কিন্তু তাদেরকে তাঁর নৈকট্য লাভকারী মনে করে এই উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করে যে, তাদের মাধমে তারাও তাঁর নৈকট্য লাভ করবে। সৰাং নবী (সঃ)-কে বলা হচ্ছে, তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে সপ্তাকাশ ও আরশের অধিপতি? অবশ্যই তারা উত্তর দেবে যে, এগুলোর অধিপতি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তাহলে হে রাসূল (সঃ)! তুমি আবারও তাদেরকে বলঃ এই স্বীকারোক্তির পরেও কি তোমরা এতোটুকুও বুঝ না যে, ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই? কেননা, সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা তো তিনি ছাড়া আর কেউই নয়? তিনিই আকাশকে মাখলুকের জন্যে ছাদ স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন। যেমন হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর শান বা মাহাত্ম্য খুবই বড়। তাঁর আরশ আকাশসমূহের উপর এই ভাবে রয়েছে। তিনি স্বীয় হস্ত মুবারক দ্বারা ইশারা করে গম্বুজের মত দেখিয়ে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

অন্য হাদীসে আছে যে, সপ্ত আকাশ, সপ্ত যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সমস্ত মাখলূক কুরসীর তুলনায় এমনই যেমন কোন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে কোন বৃত্ত। আর কুরসীও সমুদয় জিনিসসহ আরশের তুলনায় ঠিক অনুরূপ। পূর্বযুগীয় কোন কোন গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, আরশের একদিক হতে অন্য দিকের দূরত্ব হলো পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ। সপ্ত যমীন হতে ওর উচ্চতা পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ। আরশের উচ্চতার কারণেই ওর এই নামকরণ করা হয়েছে।

হ্যরত কাব আহবার (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আরশের তুলনায় আকাশ এমনই যেমন আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে কোন লণ্ঠন থাকে। হযরত মুজাহিদ (রঃ)-এরও উক্তি এটাই যে, আল্লাহ তা’আলার আরশের তুলনায় আসমান ও যমীন এমনই যেমন কোন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে কোন আংটি পড়ে থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আরশের বড়ত্ব ও বিরাটত্বের সঠিক পরিমাপ আল্লাহ ছাড়া আর কেউই করতে পারে না।

পূর্বযুগীয় কোন কোন মনীষীর উক্তি এই যে, আরশ লাল রঙ-এর ইয়াকৃত বা মণি-মানিক্য দ্বারা নির্মিত। এই আয়াতে (আরবী) এবং (আরবী) এই সূরার শেষে (আরবী) বলা হয়েছে। অর্থাৎ অত্যন্ত বড় ও খুবই সুন্দর। সুতরাং দৈর্ঘে, প্রস্থে, বিরাটত্বে ও সৌন্দর্যে ওটা অতুলনীয়। এ কারণেই কেউ কেউ এটাকে রক্তিম বর্ণের ইয়াকূত বলেছেন।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তোমাদের প্রতিপালকের নিকট রাত দিন কিছুই নেই। তাঁর চেহারার জ্যোতিতেই তাঁর আরশ জোতির্ময় হয়েছে। মোটকথা, এই প্রশ্নের জবাবে মুশরিক ও কাফিররা এ কথাই বলবে যে, আসমান, যমীন এবং আরশের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। তাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেন, হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলঃ তবুও আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করছে না কেন? কেন তোমরা তাঁর সাথে অন্যদের উপাসনা করছো?

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নের হাদীসটি প্রায়ই বর্ণনা করতেনঃ “অজ্ঞতার যুগে একটি স্ত্রী লোক পাহাড়ের চূড়ায় ছাগল চরাতো। তার সাথে তার পুত্রও থাকতো। একদা তার পুত্র তাকে জিজ্ঞেস করে, “আম্মা! বলুন তো, আপনাকে কে সৃষ্টি করেছেন? উত্তরে সে বলে, ‘আল্লাহ।’ পুত্র প্রশ্ন করে- ‘আমার আব্বাকে কে সৃষ্টি করেছেন? সে জবাব দেয়, ‘আল্লাহ।’ ছেলে আবার জিজ্ঞেস করে, “আমাকে সৃষ্টি করেছেন কে? সে উত্তর দেয়, আল্লাহ। পুত্র পুনরায় প্রশ্ন করে, এই আকাশের সৃষ্টিকর্তা কে? সে জবাবে বলে, ‘আল্লাহ। ছেলে প্রশ্ন করে, যমীন সৃষ্টি করেছেন কে? সে উত্তর দেয়, ‘আল্লাহ। পুত্র জিজ্ঞেস করে, এই পাহাড়গুলো কে সৃষ্টি করেছেন?’ জবাবে সে বলে, এইগুলোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। ছেলে প্রশ্ন করে, এই ছাগলগুলোর সৃষ্টিকর্তা কে?’ মা উত্তর দেয়, এই ছাগলগুলোর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই বটে। ছেলেটি এসব উত্তর শুনে বলে, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তা’আলার এত বড় মাহাত্ম! অতঃপর তার অন্তরে আল্লাহর বিরাটত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব এমনভাবে স্থান পেলো যে, সে কাঁপতে শুরু করলো এবং কম্পনের ফলে পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচে পড়ে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করলো।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু বকর আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) তাঁর কিতাবুত তাফাককুর ওয়াল ইতেবার’ নামক গ্রন্থে আনয়ন করেছেন। এর একজন বর্ণনাকারী য়েছেন ইমাম আলী ইবনুল মাদীনীর পিতা উবাইদুল্লাহ ইবনে জাফর আল মাদীনী। তাঁর র্কে সমালোচনা করা হয়েছে। এসব ব্যাপার আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ জিজ্ঞেস কর সবকিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রায়ই নিম্নলিখিত শব্দগুলোর মাধ্যমে শপথ করতেন, “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ!” কোন গুরুত্বপূর্ণ শপথের সময় বলতেনঃ “যিনি অন্তরসমূহের মালিক এবং যিনি অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী তার শপথ!”

ঘোষিত হচ্ছে জিজ্ঞেস কর, কে তিনি যিনি সকলকে আশ্রয় দান করে থাকেন এবং যার উপর আশ্রয়দাতা নেই? অর্থাৎ তিনি এতো বড় নেতা ও অধিপতি যে, সমস্ত সৃষ্টি, আধিপত্য ও হুকুমত তাঁরই হাতে রয়েছে। আরবে এই প্রথা ছিল যে, গোত্রপতি কাউকে আশ্রয় দান করলে সবাই তার অনুগত হয়ে যেতো কিন্তু গোত্রের কেউ কাউকে আশ্রয় দিলে গোত্রপতিকে তার অনুগত মনে করা হতো না। সুতরাং এখানে আল্লাহ তা’আলার শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তিনি ব্যাপক ক্ষমতাবান এবং সবারই শাসনকর্তা। তার ইচ্ছা কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি যা করেন তাতে তিনি জিজ্ঞাসিত হন না এবং তারা জিজ্ঞাসিত হবে।” (২১: ২৩) অর্থাৎ কারো ক্ষমতা নাই যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে তার কোন কাজের কৈফিয়ত তলব করে। তার শ্রেষ্ঠত্ব, বিরাটত্ত্ব, প্রভাব, মর্যাদা, ক্ষমতা, কৌশল এবং ন্যায়পরায়ণতা অতুলনীয়। মমস্ত মাখলুক তার সামনে অপারগ, অক্ষম ও নিরুপায়। তিনি সমস্ত সৃষ্টজীবের কাছে তাদের কাজের কৈফিয়ত তলবকারী। এইরূপ গুণে গুণান্বিত কে? এই প্রশ্নের জবাবেও এই মশরিকরা বলতে বাধ্য হবে যে, আল্লাহ তাআলাই এতো বড় ক্ষমতার অধিকারী। এই রূপ প্রবল পরাক্রান্ত সম্রাট একমাত্র আল্লাহ। তাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি তাদেরকে বল, এর পরেও কি করে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছ? এই স্বীকারোক্তির পরেও কেমন করে তোমরা অন্যদের উপাসনা করছো? এটা তোমাদের জন্যে মোটেই শোভনীয় নয়।

আল্লাহ পাক বলেনঃ বরং আমি তো তাদের কাছে সত্য পৌছিয়েছি, কিন্তু তারা তো মিথ্যাবাদী। তাদের কাছে আমি তাওহীদে রুবুবিয়্যাতের সাথে সাথে তাওহীদে উলুহিয়্যাত বর্ণনা করেছি, সঠিক প্রমাণাদি ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী পৌছিয়ে দিয়েছি এবং তারা যে ভুল পথে রয়েছে তা আমি প্রকাশ করে দিয়েছি যে, আমার সাথে অন্যদেরকে শরীক করার ব্যাপারে তারা মিথ্যাবাদী। তাদের মিথ্যাবাদী হওয়া স্বয়ং তাদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। যেমন তিনি এই সূরারই শেষাংশে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে ডাকে অন্য ইলাহকে, ঐ বিষয়ে তার কোন সনদ নেই; তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয়ই কাফিররা সফলকাম হবে না।” (২৩: ১৭) সুতরাং মুশরিকরা কোন দলীলের মাধ্যমে এটা করছে না, বরং তারা তাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ করছে মাত্র। যেমন আল্লাহ তা’আলা তাদের উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এর উপরই পেয়েছি এবং আমরা তাদের পিছনে তাদেরই অনুকরণকারী। (৪৩: ২৩)

৯১-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা নিজেকে সন্তান ও শরীক হতে মুক্ত বলে ঘোষণা করছেন। অধিকারিত্বে, ব্যবস্থাপনায় ও ইবাদতের হকদার হওয়ার ব্যাপারে তিনি একক। তার সন্তানও নেই এবং অংশীদারও নেই। যদি কয়েকটি মাবুদ মেনে নেয়া হয় তবে প্রত্যেক মাবুদের স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরী। আর এরূপ হলে সৃষ্টিজগতে শৃঙ্খলা বজায় থাকা সম্ভব নয়। অথচ সৃষ্টিজগতের শৃঙ্খলা ও পরিচালনা পূর্ণরূপে বিদ্যমান রয়েছে। উর্ধজগত, নিম্নজগত, আসমান, যমীন ইত্যাদি পরস্পরের পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে নিজ নিজ নির্ধারিত কাজে নিযুক্ত ও ব্যস্ত রয়েছে। এগুলো বিধিবদ্ধ আইন-শৃঙ্খলা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণও এদিক-ওদিক হয় না। সুতরাং জানা গেল যে, এসবের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ, কয়েকজন নয়। কয়েকটি মাবুদ মেনে নেয়া অবস্থায় এটাও প্রকাশমান যে, একে অৱে উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইবে। একজন বিজয়ী হলে অপরজন আর মা’বূদ থাকে না। আবার বিজয়ীজন বিজয় লাভে অসমর্থ হলে সেও আর মাবুদ থাকে না। এ দুটো দলীল এটাই প্রমাণ করছে যে, মা’বুদ একজনই এবং তিনিই আল্লাহ। দার্শনিকদের পরিভাষায় এই দলীলকে দলীলে তামানু’ বলা হয়। তাদের যুক্তি এই যে, যদি দুই বা ততোধিক আল্লাহ মেনে নেয়া হয় তবে একজন চাইবে দেহকে গতি বিশিষ্ট রাখতে এবং অপরজন চাইবে ওটাকে গতিবিহীন রাখতে। এখন যদি দু’জনেরই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় তবে দু’জনই অপারগ প্রমাণিত হবে। তাহলে কেউই আল্লাহ হতে পারবে না। কেননা ওয়াজিব কখনো অপারগ হয় না। আর দু’জনেরই উদ্দেশ্য যে সফল হবে এটাও সম্ভব নয়। কারণ, একজনের চাহিদা অপরজনের বিপরীত। সুতরাং দু’জনেরই চাহিদা পূর্ণ হওয়া অসম্ভব। আর এই অসম্ভব অবস্থার সৃষ্টি এ কারণেই হচ্ছে যে, দুই বা ততোধিক আল্লাহ মেনে নেয়া হয়েছিল। সুতরাং এই বেশী সংখ্যা বাতিল হয়ে গেল। এখন বাকী থাকলো তৃতীয় অবস্থা, অর্থাৎ একজনের চাহিদা পূর্ণ হলো এবং অপরজনের পূর্ণ হলো না। যার চাহিদা পূর্ণ হলো সে তো থাকলে বিজয়ী ও ওয়াজিব, আর যার চাহিদা পূর্ণ হলো না সে হয়ে গেল পরাজিত ও মুমকিন বা সম্ভাবনাময়। কেননা, ওয়াজিবের বিশেষণ এটা নয় যে, সে পরাজিত হবে। তাহলে এই অবস্থাতেও আল্লাহর সংখ্যার আধিক্য বাতিল হয়ে গেল। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মাবুদ একজনই।

এই উদ্ধত, যালিম ও সীমালংঘনকারী মুশরিকরা যে আল্লাহ তাআলার সন্তান থাকার কথা বলছে এবং তার শরীক স্থাপন করছে তা থেকে তিনি বহু ঊর্ধে। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। সৃষ্টজীবের কাছে যা কিছু অজ্ঞাত আছে। এবং যা কিছু তাদের কাছে প্রকাশমান এই সবকিছুরই খবর আল্লাহ তা’আলা রাখেন। মুশরিকরা যাদেরকে তাঁর শরীক করছে তাদের থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। তিনি তাদের থেকে বহু ঊর্ধে রয়েছেন। তিনি হলেন অতুলনীয়।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#963)
فَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ ]
Exalted be He over all that they associate as partners to Him!]
Sura:23
Para:18
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 84-92
www.motaher21.net

23:84

قُلۡ لِّمَنِ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہَاۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۴﴾

Say, [O Muhammad], “To whom belongs the earth and whoever is in it, if you should know?”

 

The Idolators believe in Tawhid Ar-Rububiyyah, which requires them to believe in Tawhid Al-Uluhiyyah

Allah states that the fact that He is One and that He is independent in His creation, control, dominion and guides one to realize that there is no God except Him and that none should be worshipped except Him Alone, with no partner or associate. He tells His Messenger Muhammad to say to the idolators who worship others besides Him, even though they admit His Lordship, that He has no partner in Lordship. But despite this they still attributed partners in divinity to Him, and worshipped others besides Him even though they recognized the fact that those whom they worshipped could not create anything, did not own anything, nor do they have any control over anything. However, they still believed that these creatures could bring them closer to Allah,

مَا نَعْبُدُهُمْ إِلاَّ لِيُقَرِّبُونَأ إِلَى اللَّهِ زُلْفَى

We worship them only that they may bring us near to Allah. (39:3)

So Allah says:

قُل لِّمَنِ الاَْرْضُ وَمَن فِيهَا

Say:”Whose is the earth and whosoever is therein!”

meaning, “Who is the Owner Who has created it and whatever is in it of animals, plants, fruits and all other kinds of creation.”

إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

23:85

سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۸۵﴾

They will say, “To Allah .” Say, “Then will you not remember?”

 

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ

“If you know!”

They will say:”It is Allah’s!”

means, they will admit that this belongs to Allah Alone with no partner or associate.

If that is the case,

قُلْ أَفَلَ تَذَكَّرُونَ

Say:”Will you not then remember!”

that none should be worshipped except the Creator and Provider.

قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
23:86

قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبۡعِ وَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۸۶﴾

Say, “Who is Lord of the seven heavens and Lord of the Great Throne?”

 

Say:”Who is Lord of the seven heavens, and Lord of the Great Throne!”

means, “Who is the Creator of the higher realm with its planets, lights and angels who submit to Him in all regions and in all directions! Who is the Lord of the Great Throne, which is the highest of all created things!”

Allah says here:

وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

and Lord of the Great Throne,

meaning the Mighty Throne.

At the end of the Surah, Allah says:

رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

the Lord of the Supreme Throne! (23:116),
meaning splendid and magnificent.
The Throne combines the features of height and vastness with splendor and magnificence. This is why it was said that it is made of red rubies.

Ibn Mas`ud said,

“There is no night or day with your Lord, and the light of the Throne is from the Light of His Face.”

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَ تَتَّقُونَ

23:87

سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۸۷﴾

They will say, “[They belong] to Allah .” Say, “Then will you not fear Him?”

 

They will say:”Allah.”

Say:”Will you not then have Taqwa!”

meaning, since you admit that He is the Lord of the heavens and the Lord of the Mighty Throne, will you not fear His punishment for worshipping others besides Him and associating others with Him

23:88

قُلۡ مَنۡۢ بِیَدِہٖ مَلَکُوۡتُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُوَ یُجِیۡرُ وَ لَا یُجَارُ عَلَیۡہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۸﴾

Say, “In whose hand is the realm of all things – and He protects while none can protect against Him – if you should know?”

 

قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ

Say:”In Whose Hand is the sovereignty of everything!”

i.e., sovereignty is in His Hands.

مَّا مِن دَابَّةٍ إِلاَّ هُوَ ءاخِذٌ بِنَاصِيَتِهَأ

There is not a moving creature but He has grasp of its forelock. (11:56)

meaning, He has control over it.

The Messenger of Allah used to say,

لَاا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِه

By the One in Whose hand is my soul.

When he swore an oath, he would say,

لَاا وَمُقَلِّبِ الْقُلُوب

By the One Who turns over (controls) the hearts.

He, may He be glorified, is the Creator, the Sovereign, the Controller,

وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

And He protects (all), while against Whom there is no protector, if you know!

Among the Arabs, if a leader announced his protection to a person, no one could go against him in that, yet no one could offer protection against that leader.

Allah says:

وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ

And He protects (all), while against Whom there is no protector,

meaning, He is the greatest Master, and there is none greater than Him. His is the power to create and to command, and none can overturn or oppose His ruling. What He wills happens, and what He does not, will not happen.

Allah says:

لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْـَلُونَ

He cannot be questioned about what He does, while they will be questioned. (21:23)

He cannot be asked about what He does because of His greatness, Pride, overwhelming power, wisdom and justice, but all of His creation will be asked about what they did, as Allah says:

فَوَرَبِّكَ لَنَسْـَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ

عَمَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

So, by your Lord, We shall certainly call all of them to account. For all that they used to do. (15:92-93)

23:89

سَیَقُوۡلُوۡنَ لِلّٰہِ ؕ قُلۡ فَاَنّٰی تُسۡحَرُوۡنَ ﴿۸۹﴾

They will say, “[All belongs] to Allah .” Say, “Then how are you deluded?”

 

سَيَقُولُونَ لِلَّهِ

They will say:”(All that belongs) to Allah.”

means, they will admit that the Almighty Master Who protects all while against Him there is no protector is Allah Alone, with no partner or associate.

قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ

Say:”How then are you deceived and turn away from the truth!”

means, how can your minds accept the idea of worshipping others besides Him when you recognize and acknowledge that!

Then Allah says

23:90

بَلۡ اَتَیۡنٰہُمۡ بِالۡحَقِّ وَ اِنَّہُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ ﴿۹۰﴾

Rather, We have brought them the truth, and indeed they are liars.

 

بَلْ أَتَيْنَاهُم بِالْحَقِّ

Nay, but We have brought them the truth,

which is the declaration that there is no god worthy of worship besides Allah, and the establishment of clear, definitive and sound proof to that effect,

وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

and verily, they are liars.

means, in their worship of others alongside Allah when they have no evidence for doing so, as Allah says at the end of this Surah:

وَمَن يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا اخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ

إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ

And whoever invokes, besides Allah, any other god, of whom he has no proof; then his reckoning is only with his Lord. Surely, the disbelievers will not be successful. (23:117)

The idolators have no evidence for what they are doing, which has led them into lies and misguidance. Rather they are following their forefathers and predecessors who were confused and ignorant, as Allah describes them:

إِنَّا وَجَدْنَأ ءَابَأءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى ءَاثَـرِهِم مُّقْتَدُونَ

“We found our fathers following a certain way and religion, and we will indeed follow their footsteps.” (43:23)

23:91

مَا اتَّخَذَ اللّٰہُ مِنۡ وَّلَدٍ وَّ مَا کَانَ مَعَہٗ مِنۡ اِلٰہٍ اِذًا لَّذَہَبَ کُلُّ اِلٰہٍۭ بِمَا خَلَقَ وَ لَعَلَا بَعۡضُہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿ۙ۹۱﴾

Allah has not taken any son, nor has there ever been with Him any deity. [If there had been], then each deity would have taken what it created, and some of them would have sought to overcome others. Exalted is Allah above what they describe [concerning Him].

 

Allah has no Partner or Associate

Allah declares Himself to be above having any child or partner in dominion, control and worship.

He says:

مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ

No son did Allah beget, nor is there any god along with Him. (If there had been many gods), then each god would have taken away what he had created, and some would have tried to overcome others.

meaning, if it were decreed that there should be a plurality of deities, each of them would have exclusive control over whatever he had created, so there would never be any order in the universe. But what we see is that the universe is ordered and cohesive, with the upper and lower realms connected to one another in the most perfect fashion.

مَّا تَرَى فِى خَلْقِ الرَّحْمَـنِ مِن تَفَـوُتٍ

you can see no fault in the creation of the Most Gracious. (67:3)

Moreover, if there were a number of gods, each of them would try to subdue the other with enmity, and one would prevail over the other.

This has been mentioned by the scholars of Ilm-ul-Kalam, who discussed it using the evidence of mutual resistance or counteraction.

This idea states that if there were two or more creators, one would want to make a body move while the other would want to keep it immobile, and if neither of them could achieve what they wanted, then both would be incapable, but the One Whose existence is essential (i.e., Allah) cannot be incapable. It is impossible for the will of both to be fulfilled because of the conflict.

This dilemma only arises when a plurality of gods is suggested, so it is impossible for there to be such a plurality, because if the will of one is fulfilled and not the other, the one who prevails will be the one whose existence is essential (i.e., God) and the one who is prevailed over will be merely possible (i.e., he is not divine), because it is not befitting for the one to be defeated whose existence is essential.

Allah says:

وَلَعَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ

سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ

and some would have tried to overcome others!

Glorified be Allah above all that they attribute to Him!

meaning, high above all that the stubborn wrongdoers say when they claim that He has a son or partner

23:92

عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَ الشَّہَادَۃِ فَتَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿٪۹۲﴾

[He is] Knower of the unseen and the witnessed, so high is He above what they associate [with Him].

 

عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ

All-Knower of the unseen and the seen!

means, He knows what is hidden from His creatures and what they see.

فَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

Exalted be He over all that they associate as partners to Him!

means, sanctified and glorified and exalted be He above all that the wrongdoers and liars say

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply