أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬৫)
[قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ
সে বলে, ‘হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান ।]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
পারা:১৮
৯৯-১০০ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৯৯
حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَحَدَہُمُ الۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ ﴿ۙ۹۹﴾
অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, ‘হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান।
২৩:১০০
لَعَلِّیۡۤ اَعۡمَلُ صَالِحًا فِیۡمَا تَرَکۡتُ کَلَّا ؕ اِنَّہَا کَلِمَۃٌ ہُوَ قَآئِلُہَا ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾
যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’ না, এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে ‘বারযাখ’ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।
৯৯:১০০ আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৯-১০০ নং আয়াতের তাফসীর:
কাফির-মুশরিকদের যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে আবেদন পেশ করবে সে কথা তুলে ধরা হয়েছে। মৃত্যুর কঠিন যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আবেদন করবে: হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতে আবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন, যাতে ফেলে আসা জীবনের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারি। এ আকাক্সক্ষা প্রত্যেক কাফির-মুশরিক মৃত্যুর সময় করবে। যেমন তাদের উক্তি:
(وَلَوْ تَرٰٓي إِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نٰكِسُوْا رُؤُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ ط رَبَّنَآ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوْقِنُوْنَ)
“আর যদি তুমি দেখতে, যখন পাপীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে স্বীয় মাথা নীচু করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, (এখন) তুমি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ কর; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।” (সূরা সাজদাহ ৩২:১২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَأَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ أَنْ يَّأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَآ أَخَّرْتَنِيْٓ إِلٰٓي أَجَلٍ قَرِيْبٍ لا فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِيْنَ)
“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে যদি কিছু কালের জন্য অবকাশ দিতেন তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎ কর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩:১০-১১) এরূপ সূরা আন‘আমের ২৭-২৮ নং, ইবরাহীমের ৪৪ নং, সূরা আ‘রাফের ৫৩ নং এবং সূরা মু’মিনের ১১-১২ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।
তাদের এমন আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: ‘এটা একটি উক্তি মাত্র যা সে বলেছে’ অর্থাৎ এটা তার মুখের কথা যার কোন মূল্য নেই, এরূপ কথা দুনিয়াতে কতবার বলেছে। দুনিয়াতে যখন কোন বিপদে পড়ত তখন বলত, এ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে আর কোন অন্যায় করবে না। কিন্তু যখনই মুক্তি লাভ করেছে তখনই তাতে জড়িত হয়েছে।
সুতরাং যা আমল করার তা মৃত্যুর পূর্বেই করতে হবে। মৃত্যু এসে গেলে আর কোন আমল করার সুযোগ পাওয়া যাবে না।
بَرْزَخٌ – হল এমন একটি জায়গা যা দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে প্রতিবন্ধক। যেখানে সৎ বান্দারা আরাম-আয়েশ ও নেয়ামত ভোগ করবে আর অবাধ্যরা শাস্তি ভোগ করবে। আর তা হবে মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত, কবরস্থ করা হোক আর না-ই করা হোক।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মৃত্যু চলে আসলে আর কোন আমল করার সুযোগ থাকে না।
২. অসৎ ব্যক্তিরা মৃত্যুর পূর্বে দুঃখ করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আবেদন করবে দুনিয়াতে পুনরায় আসার জন্য কিন্তু তাদেরকে সে সুযোগ দেয়া হবে না।
৩. মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময়কে বারযাখী জীবন বলা হয়। এ জীবনে ঈমানদার ব্যক্তিরা জান্নাতের আরাম-আয়েশের অংশ পেয়ে থাকে, আর কাফির-মুশরিকরা জাহান্নামের শাস্তির অংশ পেয়ে থাকে।
তাফসীর তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মূলে—–শব্দ দু’টি ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহকে সম্বোধন করে বহুবচনের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে আবেদন করার একটি কারণ এ হতে পারে যে, এটি সম্মানার্থে করা হয়েছে যেমন বিভিন্ন ভাষায় এ পদ্ধতির প্রচলন আছে। দ্বিতীয় কারণ কেউ কেউ এও বর্ণনা করেছেন যে, আবেদনের শব্দ বারবার উচ্চারণ করার ধারণা দেবার জন্য এভাবে বলা হয়েছে। যেমন তা—–(আমাকে ফেরত পাঠাও, আমাকে ফেরত পাঠাও, আমাকে ফেরত পাঠাও, আমাকে ফেরত পাঠাও) এর অর্থ প্রকাশ করে। এছাড়া কোন কোন মুফাস্সির এ ধারণা প্রকাশ করেছেন যে,—–সম্বোধন করা হয়েছে আল্লাহকে এবং—–শব্দের মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে এমন সব ফেরেশতাদেরকে যারা সংশ্লিষ্ট অপরাধী আত্মাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অর্থাৎ কথাটি এভাবে বলা হয়, “হায় আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠাও”।
# কুরআন মজীদের বহু জায়গায় এ বক্তব্যটি উচ্চারিত হয়েছে। অপরাধীরা মৃত্যুর সীমানায় প্রবেশ করার সময় থেকে নিয়ে আখেরাতে প্রবেশ করে জাহান্নামে দাখিল হওয়া পর্যন্ত বরং তার পরও বারবার এ আবেদনই করতে থাকবেঃ আমাদের আর একবার মাত্র দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হোক। এখন আমরা তাওবা করছি, আর কখনো নাফরমানি করবো না, এবার আমরা সোজা পথে চলবো। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, সূরা আল আন’আম, ২৭ ও ২৮ ; আল আ’রাফ ৫৩ ; ইবরাহীম ৪৪ ও ৪৫ ; আল মু’মিনূন ১০৫ থেকে ১১৫ ; আশ শু’আরা ১০২ ; আস সাজ্দাহ ১২ থেকে ১৪ ; ফাতের ৩৭ ; আয যুমার ৫৮ ও ৫৯ ; আল মু’মিন ১০ থেকে ১২ ও আশ্ শূরা ৪৪ আয়াত এবং এ সঙ্গে টীকাগুলোও)।
# সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-২৮
بَلْ بَدَا لَهُمْ مَّا كَانُوْا یُخْفُوْنَ مِنْ قَبْلُ١ؕ وَ لَوْ رُدُّوْا لَعَادُوْا لِمَا نُهُوْا عَنْهُ وَ اِنَّهُمْ لَكٰذِبُوْنَ
আসলে একথা তারা নিছক এ জন্য বলবে যে, তারা যে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল তা সে সময় আবরণমুক্ত হয়ে তাদের সামনে এসে যাবে। নয়তো তাদেরকে যদি আগের জীবনের দিকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে আবার তারা সে সবকিছুই করে যাবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। তারা তো মিথ্যুকই
# তাদের একথা আসলে বুদ্ধি-বিবেক ও চিন্তা-ভাবনার কোন সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তার ভিত্তিতে কোন যথার্থ মত পরিবর্তনের ফল হবে না। বরং তা হবে নিছক সত্যের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের ফল, যার পরে কোন কট্টর কাফেরও আর অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।
# ফেরত পাঠানো হবে না। নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য তাকে আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে, মানুষকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় যদি এ দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হয় তাহলে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার মধ্য থেকে একটি অবলম্বন করতে হবে। মৃত্যুর পর সে যা কিছু করেছে সেসব তার স্মৃতি ও চেতনায় সংরক্ষিত করে রাখতে হবে। অথবা এসব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিয়েপ্রথমবার যেমন স্মৃতির কোঠা শূন্য করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক তেমনি অবস্থায় আবার তাকে সৃষ্টি করা হবে। উল্লেখিত প্রথম অবস্থায় পরীক্ষার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ এ দুনিয়ায় মানুষ সত্যকে প্রত্যক্ষ না করে নিজেই বুদ্ধি-বিবেকেরসাহায্যে সত্যকে জেনে তাকে মেনে নেয় কিনা এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা করার স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও এ দু’টি পথের মধ্য থেকে কোন্টি অবলম্বন করে-এরি ভিত্তিতেই হচ্ছে তার পরীক্ষা। এখন যদি তাকে সত্য দেখিয়েও দেয়া হয় এবং গোনাহের পরিণাম বাস্তবে দেখিয়ে দিয়ে গোনাহকে নির্বাচন করার পথই তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এরপর তাকেপরীক্ষাগৃহে পাঠানোই অর্থহীন হয়ে যায়। এরপর কে ঈমান আনবে না এবং কে আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে? আর দ্বিতীয় অবস্থাটি সম্পর্কে বলা যায় যে, এটি পরীক্ষিতকে আবার পরীক্ষা করার মতো অবস্থা। যে ব্যক্তি একবার এ পরীক্ষায়অকৃতকার্য হয়েছে তাকে আবার সে একই ধরনের আর একটি পরীক্ষায় পাঠানো নিরর্থক। কারণ সে আবার সেই আগের মতোই করবে।
# এ অনুবাদও হতে পারে, “এ তো এখন সে বলবেই”। এর অর্থ হচ্ছে, তার এ কথা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়। সর্বনাশ হবার পর এখন সে একথা বলবে না তো আর কি বলবে। এ নিছক কথার কথা। ফিরে আসবে যখন তখন আবার সেসব কিছু করবে যা আগে করে এসেছে। কাজেই তাকে প্রলাপ বকতে দাও ফেরার দরজা তার জন্য খোলা যেতে পারে না।
# “বরযখ”—–শব্দটি ফার্সী “পরদা”—–শব্দটি আরবীকরণ। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, এখন তাদের ও দুনিয়ার মধ্যে রয়েছে একটি প্রতিবন্ধক। এটি তাদেরকে দুনিয়ায় ফিরে যেতে দেবে না এবং কিয়ামত পর্যন্ততারা দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝখানের এ যবনিকার আড়ালে অবস্থান করবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে মোশরেকদের একাংশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং কেয়ামতের দিন তাদের পরিণাম কী হবে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা এই যে, তারা কোরআন শোনে, কিন্তু বিবেক বুদ্ধিকে তালাবদ্ধ ও স্বভাব প্রকৃতিকে বিকৃত করে এবং দম্ভ ও অহংকারে দিশাহারা হয়ে শোনে ৷ শোনার সাথে সাথে রসূল(স.)-এর সাথে তর্ক জুড়ে দেয়। অথচ তর্ক করার সময় বিবেক বুদ্ধিকে এতো বেশী অর্গলবদ্ধ ও একগুঁয়ে করে রাখে যে, বিপক্ষের কোনো যুক্তি তারা শুনতে চায় না। তারা দাবী করে মে, কোরআন হলো প্রাচীনকালের রূপকথা ও কিংবদন্তী । অথচ তর্কের সময় বিপক্ষীয় বক্তব্য শোনা থেকে বিরত থাকে এবং অন্যদেরকেও শুনতে নিষেধ করে। এভাবে একদিকে তাদের দুনিয়ার অবস্থা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং অপরদিকে কেয়ামতের দিন তাদের যে মারাত্মক দুঃখজনক অবস্থা হবে তারও বিবরণ দেয়া হচ্ছে । সেখানে তারা আগুনের কাছে আটক থাকবে। আগুন তাদেরকে তাদের ভয়াবহ পরিণতির আভাস দিতে থাকবে। আর তারা কেবল অনুশোচনা করতে থাকবে এবং আক্ষেপ করে বলতে থাকবে যে, পারতো । কিন্তু তাদের এই আক্ষেপের জবাবে তাদেরকে প্রচন্ডভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং মিথ্যুক বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদের কেউ কেউ তোমার কথা শোনে । আর আমি তাদের মনের ওপর আবরণ রেখে দিয়েছি, ফলে তারা বুঝতে পারে না….’ (আয়াত ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮) একটি অবাস্তব বিতর্কের অপনোদন : এখানে তাদের অবস্থার দুইটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চিত্র দুটি পরস্পরের ঠিক বিপরীত । একটি হচ্ছে দুনিয়ার চিত্র, যেখানে তারা অহংকারে মেতে থাকবে, অপরটি আখেরাতের চিত্র, যাতে তাদের আক্ষেপ ও অনুশোচনা প্রতিফলিত হয়েছে । কোরআনের এ আয়াতগুলোতে এই দুটি চিত্র তুলে ধরার উদ্দেশ্য হলো, মানুষের স্বভাব প্রকৃতিকে ও বিবেক বুদ্ধিকে প্রবলভাবে ঝাকুনি দিয়ে তার মরিচা দূর করা, তার অর্গলবদ্ধ মন ও বিবেক উন্মুক্ত করে দেয়া এবং সময় থাকতে কোরআন বুঝতে আগ্রহী করে তোলা ৷ ২৫ নং আয়াতে ‘আকিন্নাতুন’ শব্দটির অর্থ হলো মনের উপলব্ধির অন্তরায় এবং ‘ওয়াকরুন’ এর অর্থ কানের শ্রবণের অন্তরায় । আর এখানে যে বিশেষ ধরনের মানুষের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা শোনে কিন্তু বোঝে না, যেন তাদের বুঝবার মতো মন এবং শুনবার মতো কান নেই । এ ধরনের মানুষ সবযুগে, সকল প্রজন্মে ও সকল স্থানে পাওয়া যায়৷ এরা আদম সন্তান বটে । তবে তারা শুনেও শোনে না এবং বুঝেও বোঝে না- এ ধরনের এক বিশেষ শ্রেণীর মানব সন্তান সবসমই সমাজে থাকে। তাদের কান ও মন নিষ্ক্রিয় ও অকর্মণ্য হয়ে যায়। তাদের কান যা শোনে, তার অর্থ তাদের অন্তরে পৌছতে পারে না। ‘তারা যদি প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখতে পায় তবু তার প্রতি ঈমান আনে না। অবশেষে তোমার কাছে এসে তর্ক শুরু করে দেয়। কাফেররা বলে, ‘এটা তো প্রাচীনকালের কিংবদন্তী ছাড়া কিছু নয়।’ অর্থাৎ কানের মতো তাদের চোখও অকর্মণ্য, যা দেখে তা যেন দেখেও দেখে না, অথবা যা দেখে, তা তাদের অন্তরে ও বিবেকে পৌছে না। প্রশ্ন এই যে, এই শ্রেণীটির অসুবিধা কোথায়? আল্লাহর দ্বীনকে গ্রহণ করার পথে তাদের অন্তরায়টা কী? তাদের যখন চোখ, কান ও বিবেক বুদ্ধি সবই আছে, তখন বাধা কিসের? আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন, “আমি তাদের অন্তরে উপলব্ধির অন্তরায় ও কানে শ্রবণের অন্তরায় আরোপ করেছি। ফলে তারা যদি সমস্ত নিদর্শনও দেখতে পায়, তবু তার প্রতি ঈমান আনবে না ।” এ আয়াত থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্তই রয়েছে যে, এই সত্য দ্বীনের সপক্ষে তারা যতো দলীল প্রমাণ ও নিদর্শনই দেখুক বা শুনুক, তাদের চোখ ও কান যা দেখবে ও শুনবে তা তাদের বিবেকবুদ্ধি বা বোধশক্তির কাছে পৌছানোর দায়িত্ব পালন করবে না, ফলে তারা বুঝবে না এবং ঈমানও আনবে না। তবে এখানে আমরা অনুসন্ধান চালাতে পারি যে, আল্লাহর এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে কিনা এবং থাকলে তা কী? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আমার পথে সর্বাত্মক চেষ্টা-সাধনা করবে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথ দেখাবো ।’ (সূরা আনকাবুত) ৷ তিনি আরো বলেন, “কসম বিবেকের এবং যিনি বিবেককে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন তার এবং যিনি মনকে কোনটা খারাপ কাজ ও কোনটা সৎ কাজ, তা জানিয়ে দিয়েছেন তার । সেই ব্যক্তি সফল, যে মনকে পবিত্র করে এবং সেই ব্যক্তি ব্যর্থ যে মনকে কলংকিত করে ।’ (সূরা আশ শামস) এ কয়টি আয়াত থেকে জানা গেলো যে, যারা সৎ পথের সন্ধান লাভের চেষ্টা করবে, তাদেরকে সৎ পথের সন্ধান দেয়াই আল্লাহর নীতি এবং এও জানা গেলো যে, যে ব্যক্তি নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে, সে সফল হয়। কিন্তু যে মুশরিকদের কথা আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, তারা সঠিক পথের সন্ধানই নেয়নি যে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন। তারা তাদের সত্ত্বার অভ্যন্তরে বিদ্যমান গ্রহণযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করারই চেষ্টা করেনি যে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে সত্যকে গ্রহণ করা সহজ করে দেবেন। তারা প্রথম থেকেই তাদের সহজাত গ্রহণযন্ত্র গুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের ও হেদায়াতের মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছেন । তাই তাদের প্রথম কৃতকর্ম ও প্রথম ইচ্ছার ফল হিসাবেই আল্লাহর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সব কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তক্রমে হয়ে থাকে । আর আল্লাহর সিদ্ধান্ত এই যে, যে চেষ্টা সাধনা করে, তাকে তিনি সুপথ দেখাবেন, যে নিজেকে পবিত্র করে ও সংশোধন করে তাকে সফল করবেন। আর এও তাঁর সিদ্ধান্ত যে, যারা হেদায়াতকে এড়িয়ে চলবে ও উপেক্ষা করবে, তাদের অন্তরে ও কানে অন্তরায় সৃষ্টি করবেন এবং সত্যকে বুঝতে দেবেন না। ফলে সকল দলীল প্রমাণ দেখলেও তারা ঈমান আনবে না। যারা বলে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের কারণেই আমরা গোমরাহ হয়েছি, মুশরিক হয়েছি বা পাপী হয়েছি, তারা ভুল কারণ দর্শায়। আল্লাহ তায়ালা অন্য এক সূরায় তাদের এই সব উক্তি উদ্ধৃত করেছেন, এর জবাব দিয়েছেন এবং যারা এ সব কথা বলে তাদেরকে নির্বোধ আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা নাহলে বলেন, “মোশরেকরা বলে, আল্লাহর যদি ইচ্ছা থাকতো, তাহলে আমরা ও আমাদের বাপ দাদারা আল্লাহকে ছাড়া আর কারো এবাদাত করতাম না এবং আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো কিছুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরাও এ রকমই করতো সুস্পষ্ট প্রচারের কাজ করা ছাড়া রাসুলদের কি আর কোনো দায়িত্ব আছে? আমি প্রত্যেক জাতির কাছে একজন রসূল পাঠিয়েছি, (এই নির্দেশ দিয়ে) যে, আল্লাহর এবাদাত করো এবং তাগুতকে এড়িয়ে চলো। এরপর তাদের কতককে আল্লাহ সুপথে চালিয়েছেন, কতকের ওপর গোমরাহী কার্যকর হয়েছে । কাজেই তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের কী পরিণতি হয়েছিলো ।’ এ আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তাদেরকে সতর্ক করার পরও তারা গোমরাহীর পথ-আঁকড়ে ধরে রাখার কারণেই তারা গোমরাহ হয়েছে। যারা অদৃষ্ট, মানুষের ক্ষমতা ও অক্ষমতা, মানুষের স্বাধীনতা ও অধীনতা ইত্যাদি সংক্রান্ত বিতর্ক উত্থাপনের মাধ্যমে যতো সব অনুমান সর্বস্ব জটিল ধর্মীয় তত্ত্বের উদ্ভব ঘটায়, তারা এ সম্পর্কে কোরআনের উপস্থাপিত সহজ সরল ও বাস্তব বিশ্লেষণ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। কোরআনের বর্ণিত সেই সরল ও সহজ বিশ্লেষণটি হলো, পৃথিবীতে যা কিছুই সংঘটিত হয়, তা আল্লাহর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুসারেই সংঘটিত হয়। মানুষ কোনো কাজের প্রতি যেভাবেই মনোনিবেশ করুক না কেন, আপন স্বভাবের চৌহদ্দীর মধ্যেই তা করে। এই স্বভাব আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তা আল্লাহর সিদ্ধান্তেরই অধীন । তাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত যেমন ছিলো, স্বভাবের কার্যকারিতাও তেমনই থাকতে বাধ্য। অপরদিকে তার তৎপরতা যেমনই হোক, দুনিয়া ও আখেরাতে তার অনিবার্য কিছু ফলাফল দেখা দেয় এবং সেই ফলাফলও আল্লাহর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের আওতাধীন। সুতরাং এ পর্যায়েও সে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অধীন । এতাবে যাবতীয় কর্মকান্ড আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার আওতাভুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু সেটা হয় এভাবে যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন সেই ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সে আল্লাহর পরিকল্পিত কাজটি করে। এই হলো মোটামুটিভাবে অদৃষ্ট তত্ত্বের সঠিক ব্যাখ্যা । এর অতিরিক্ত যা কিছু বলা হবে, তা এক সীমাহীন বিতর্কের উদ্ভব ঘটাবে । কোরআন থেকে মানুষকে দুরে রাখার ষড়যন্ত্র : কোরআনে মোশরেকদের কাছে সত্য ও হেদায়াতের অকাট্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছিলো এবং ঈমান আনার জন্যে উদ্বুদ্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছিলো । বিশ্ব প্রকৃতিতে ও মানব সত্ত্বার মধ্যে যে অগণিত নিদর্শন রয়েছে, সেগুলোর দিকে কোরআন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানুষ যদি এগুলোর দিকে আন্তরিকতার সাথে দৃষ্টি দেয়, তাহলে তার ঈমান আনার জন্যে এগুলোই যথেষ্ট। কিন্তু মোশরেকরা হেদায়াত লাভের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করেনি। বরঞ্চ তারা তাদের স্বভাব প্রকৃতি ও সহজাত শক্তিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলো এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়াত লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছিলেন । তাই তারা যখন রসূল(স.) এর কাছে আসতো, তখন তাদের চোখ, কান ও অন্তর থাকতো তালাবদ্ধ । তাই রসূল(স.) তাদেরকে যে সত্য ও সঠিক কথা বলতেন, তা বুঝা ও সরল মনে মেনে নেয়ার পরিবর্তে তা নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হতো এবং কিভাবে ও কোন ওজুহাতে তা অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করবে, তাই ভাবতো। এ কথাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন এভাবে, ‘অবশেষে তারা যখন তোমার কাছে আসে, তখন তোমার সাথে তর্ক ও বাদানুবাদ করতে ‘আসাতীর’ শব্দটি ‘উসতুরার’ বহুবচন । দেবদেবীর অলৌকিক কর্মকান্ড সম্বলিত কিংবদন্তী ও কল্পকাহিনীগুলোকেই তারা আসাতীর বলতো । বিশেষভাবে পারসিকদের কিংবদন্তীগুলো ছিলো তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তারা ভালোভাবেই জানতো যে, কোরআনে কোনো কল্পকাহিনীর অস্তিত্বই নেই। তবু তারা তর্কে লিপ্ত হতো শুধু কোরআনকে অস্বীকার করার বাহানা খুঁজে পাওয়ার জন্যে এবং সন্দেহ সংশয়ের খোঁড়া ওজুহাত বের করার জন্যে । আর এই বাহানা ও ওজুহাত তারা পূর্বতন নবী রসূলদের জীবন ও তাদের জাতিগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্তির কাহিনীগুলোর মধ্যে খুঁজে পেতো । তারা এই সব ও এই অজুহাতে পুরো কোরআনকে আসাতীর তথা কল্পকাহিনী বলে আখ্যায়িত করতো । কোরআন শ্রবণ থেকে মানুষকে বিরত রাখা ও কোরআনকে কল্পকাহিনী প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে মালেক বিন নাযার নামক জনৈক মুশরিক নেতা পারসিক কাহিনীকারদের কাছ থেকে রুস্তম ও ইসফিন্দিয়ারের গল্প শিখে এসেছিলো ৷ কা’বা শরীফের চত্ত্বরে যেখানে রসূল(স.) বসতেন, তার কাছেই সে গল্পের আসর জমিয়ে বসতো এবং বলতো, মোহাম্মদ যদি তোমাদেরকে প্রাচীনকালের কাহিনী শোনায়, তাহলে এসো, আমি তোমাদেরকে আরো সুন্দর মজার কাহিনী শোনাবো ৷ অতপর সে তার ঝুলি থেকে বের করে এক এক করে কাহিনী শোনাতো ৷ এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে কোরআন শ্রবণ থেকে ফিরিয়ে রাখা । তারা অন্যদেরকে কোরআন শুনতে নিষেধ করতো আর নিজেরাও কোরআন শ্রবণ থেকে বিরত থাকতো ৷ তারা ভয় পেতো পাছে কোরআন শুনতে গিয়ে নিজেরাই তার প্রভাবে পড়ে যায় কিনা। আল্লাহ তায়ালা এ কথাই বলেছেন ‘তারা কোরআন শ্রবণ থেকে অন্যদেরকেও নিষেধ করে, নিজেরাও বিরত থাকে …..” তারা ভালো করেই জানতো যে, কোরআন ‘আসাতীর’ বা কল্পকাহিনী নয় এবং মানুষকে যদি কোরআন শুনতে বাধা না দেয়া হয়, তবে কেবল একে কল্পকাহিনী বলে প্রচার চালালে কোনো লাভ হবে না। বড় বড় কোরায়শ নেতারা পর্যন্ত শুধু তাদের অনুসারীদেরকে নিয়ে নয় বরং নিজেদেরকে নিয়েও সর্বদা ভীত থাকতো যে, কখন না জানি কোরআনের বাণী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায় । নাযার ইবনুল হারেস মক্কার জনগণকে প্রাচীন পারসিক ও অন্যান্য কল্পকাহিনী শুনিয়েও নিশ্চিন্ত থাকতে পারতো না যে, মহাশক্তিধর হক ও দুর্বল বাতিলের মধ্যকার লড়াইতে এই কৌশল কোনো সাফল্য এনে দিতে পারবে। তাই তারা মানুষকে কোরআন শুনতে সরাসরি নিষেধ করতো এবং নিজেরাও বিরত থাকতো । এ পর্যায়ে আখনাস বিন শুরাইক, আবু সুফিয়ান বিন হারব ও আমর বিন হিশাম (আবু জাহল)-এর লুকিয়ে কোরআন শোনার ঘটনা সীরাত গ্রন্থাবলীতে এক উল্ল্যেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবৃতি হয়েছে। এই তিন মুশরিক নেতা কোরআনের দুর্নিবার আকর্ষণে স্থির থাকতে না পেরে গভীর রাতে সংগোপনে রসূল(স.)-এর তেলাওয়াত শুনতে গিয়ে কিভাবে পরস্পরের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলো, তার বিবরণ রয়েছে ওই ঘটনায় । (দেখুন, সীরাতে ইবনে হিশাম, প্রথম খন্ড ও ফি যিলালিল কোরআনের সংশ্লিষ্ট অংশ) ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম পরিণতি : ২৬ নং আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, তাদের নিজেদেরকে ও অন্যদেরকে কোরআন শ্রবণ থেকে বিরত রাখার এই চেষ্টা আসলে তাদের আত্মঘাতী চেষ্টা ছাড়া আর কিছু ছিলো না। “তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করে মাত্র । অথচ তা বুঝতেই পারে না ।” বস্তুত যে ব্যক্তি নিজেকে ও অন্যদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি, শান্তি ও সুপথপ্রাপ্তি থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্যে কোনোরকম চেষ্টা করে, সে নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কীই বা করতে পারে। যারা নিজেদেরকে ও জনগণকে ইসলামের পথ থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টায় নিজেদের সর্বনাশই ডেকে আনছে । তাদেরকে যতোই প্রতাপশালী মনে হোক না কেন, আসলে তারা বড়ই অসহায় । পরকালীন চেহারাটা দেখে নেয়া উচিত, যা ২৭ নং আয়াতে দেখানো হয়েছে, “তখন যদি তুমি তাদেরকে দেখতে, যখন জাহান্নামের সামনে তাদেরকে দাড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায় আফসোস, আমাদেরকে যদি ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে আমরা আর আমাদের প্রতিপালকের আয়াতগুলোকে অস্বীকার করতাম না এবং মোমেনদের দলভুক্ত হয়ে যেতাম ।” এটা তাদের দুনিয়ার অবস্থার ঠিক বিপরীত অবস্থা । সেখানে তাদের আক্ষেপ, অনুতাপ ও অনুশোচনা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। এখানে অবশ্য তারা আল্লাহর দ্বীনকে যতো খুশী উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করতে পারছে, যতো খুশী দূরে থাকতে ও অন্যদেরকে দূরে ঠেলতে পারছে এবং লম্বা লম্বা বুলি আওড়াতে পারছে । “যদি তুমি দেখতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের সামনে দাড়া করানো হবে…..’ অর্থাৎ সেই দৃশ্যটা যদি দেখতে, যখন দোযখের সামনে তাদেরকে বন্দী করে রাখা হবে, তখন আর কোনো কিছুকেই উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও অস্বীকার করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না, তখন আর কারো সাথে তর্ক বসাস করার স্পর্ধা থাকবে না এবং কাউকে বিভ্রান্ত করারও আর কোনো সুযোগ থাকবে না। যদি দেখতে, তবে দেখতে সেই ভয়াবহ দৃশ্য । দেখতে, তারা বলছে, হায় আফসোস, যদি অর্থাৎ কেয়ামতের মাঠে পৌছেই তাদের বোধোদয় হবে যে, কোরআন কোনো জ্বীন ভুতের কথা ছিলো না বরং আমাদের ‘প্রতিপালকের আয়াত’ ছিলো ৷ তখনই তাদের আফসোস হবে যে, দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারলে আর এই সব আয়াতকে অস্বীকার করতো না এবং তারা মোমেন বান্দা হয়ে যেতো । কিন্তু ওই সব আফসোস থেকেই যাবে, কখনো তা দূর হবে না। কিন্তু নিজেদের স্বভাব সম্পর্কে অজ্ঞতার দরুনই তারা এসব অসার কথা বলবে। আসলে বেঈমানী তাদের মজ্জগত স্বভাব । তাদেরকে দুনিয়ায় ফেরত পাঠানোর কোনো উপায় যদি হয়েও যেতো, তবু তাদের এ কথা কখনো সত্য হতো না যে, তারা ঈমান আনতো, তারা তাদের অনুসারীদের সামনে নিজেদেরকে সত্যবাদী, মুক্তিলাভকারী ও সফলকাম বলে যে সব বুলি আওড়াতো, তাদের সেই বুলির অসারতা প্রকাশিত হওয়ার আশংকায়ই এসব কথা বলবে । ‘বরঞ্চ তারা যা কিছু ইতিপূর্বে লুকিয়ে রাখতো, সে সবই তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়বে। যদি তাদেরকে ফেরত পাঠানো হতো, তবে তারা আবারো সেই কাজ করতো যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো । আর তারা বাস্তবিক পক্ষেই মিথ্যুক ।” (আয়াত নং ২৮) । তাদের মজ্জাগত স্বভাব আল্লাহ তায়ালা জানেন ৷ তিনি জানেন যে, বাতিলকে তারা কখনো ত্যাগ করবে না। কেবল দোযখের সামনে আটকে থাকা অবস্থায় ভয়ে দিশাহারা হয়ে তারা এ ধরনের অভিলাষ প্রকাশ করবে এবং এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেবে। আসলে দুনিয়ায় ফেরত পাঠালেও তারা পুনরায় সেই সব নিষিদ্ধ কাজই করবে, যা আগে করতো । তাদের সমস্ত ওয়াদা ও মিথ্যা ও অসার। এই শোচনীয় পরিস্থিতিতে মুশরিকদেরকে রেখে সূরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই জবাব তাদের মুখমন্ডলে প্রচন্ড চপেটাঘাত হেনে তাদেরকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করছে এবং লাঞ্ছিত করছে।
* আলােচ্য সূরার শেষ পর্বে মােশরেকদের চরম পরিণতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই পরিণতি কেয়ামতের একটা দৃশ্যের আকারে উত্থাপন করা হচ্ছে। প্রথমেই আসছে মুমুর্ষ অবস্থার দৃশ্য। এটা পার্থিব জীবনের শেষ দৃশ্য। এরপর সর্বশেষ দৃশ্য আসবে শিংগা ফুৎকারের পর। সূরার সমাপ্তিতে একক উপাস্য ও একক মাবুদের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কোনাে উপাস্যকে ডাকে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে এবং তাদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে ভয় দেখানাে হয়েছে। সাথে সাথে রসূলকে নিজ প্রভু ও মালিকের নিকট দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম দয়ালু। *তাওবার দরজা যখন বন্ধ হয়ে যাবে : যখন তাদের কারাে কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, ‘হে আমার পালনকর্তা আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করাে যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি করিনি।’ এটা হচ্ছে মুমুর্ষুকালীন অবস্থার চিত্র, মৃত্যুর মুখােমুখি হওয়ার মুহূর্তে তাওবার ঘােষণার দৃশ্য, জীবন ফিরিয়ে দেয়ার কাকুতির দৃশ্য, যাতে অতীতের ত্রুটি বিচ্যুতির সংশােধন করা যায় এবং ছেড়ে আসা ছেলে সন্তান ও ধন সম্পদের খেয়াল রাখতে পারে… জীবনের এই চরম মুহূর্তের দৃশ্যটি যেন চাক্ষুষ ও দৃশ্যমান সে ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের এই আরযি, এই আকুতির জবাব জনসমক্ষে ঘােষণা দিয়ে এই ভাষায় জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ‘অবশ্যই না, এ তাে তার একটি কথার কথা।’ অর্থাৎ এ জাতীয় কথার কোনাে অর্থ নেই, কোনাে মর্ম নেই। যারা এ ধরনের কথা বলে তাদের প্রতি তেমন কোনাে গুরুত্ব দেয়া হয় না, ভ্রুক্ষেপ করা হয় না। ভয়ঙ্কর ও সংকটময় মুহূর্তে এ জাতীয় কথা মানুষের মুখ দিয়ে বের হয়ে থাকে। এর পেছনে কোনাে সদিচ্ছা থাকে না, কোনাে আন্তরিকতা থাকে না। এগুলাে নিছক কথার কথা। এরই সাথে মূমূর্ষকালীন অবস্থার দৃশ্যের সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুর মাধ্যমে গােটা পৃথিবী থেকে সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়ে, সকল দ্বার রুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং সামনে পর্দা নেমে আসে। এরপর ঘােষণা করা হয়, তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। অর্থাৎ মৃত্যুর পর মানুষ যে জগতে পা রাখবে তা জাগতিক জীবনও নয় এবং পরকালীন জীবন নয়, বরং মাঝামাঝি একটি জগত। এই জগতকেই বলা হয়, ‘বারযাখ’ এর জগত। এই জগতে বাস করতে হবে পুনরুত্থান এর দিন পর্যন্ত।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৯৯-১০০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, মৃত্যুর সময় কাফির ও পাপীরা ভীষণ লজ্জিত হয় এবং দুঃখ ও আফসোসের সাথে আকাঙ্ক্ষা করে যে, হায়! যদি তাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে তারা সৎ কাজ করতো! কিন্তু ঐ সময় তাদের এই আশা ও আকাঙ্ক্ষা বৃথা। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত। অর্থাৎ “আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিলে আমি সাদকা দিতাম এবং সকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দিবেন না; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (৬৩:১০-১১) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত। অর্থাৎ “যেদিন তাদের শান্তি আসবে সেই দিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, তখন যালিমরা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছুকালের জন্যে অবকাশ দিন! আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিবো এবং রাসূলদের অনুসরণ করাবো! (উত্তরে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই?” (১৪:৪৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং হায়! তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে অধোবদন হয়ে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম; এখন আপনি আমাদেরকে পুনরায় প্রেরণ করুন, আমরা সকর্ম করাবো, আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী!” (৩২:১২) অন্য এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হায়! তুমি যদি দেখতে! যখন তাদেরকে জাহান্নামের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবেঃ হায়! যদি আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না। হতে- নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” (৬: ২৭-২৮) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যালিমদেরকে দেখবে, যখন তারা শাস্তি অবলোকন করবে তখন বলবেঃ আমাদের ফিরবার কোন পথ আছে কি?” (৪২:৪৪) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি দু’বার আমাদেরকে মৃত্যু দান করেছেন এবং দু’বার জীবিত করেছেন, এখন আমরা আমাদের পাপসমূহ স্বীকার করে নিয়েছি, সুতরাং (জাহান্নাম হতে) বের হওয়ার কোন পথ আছে কি?” (৪০:১১) অন্যত্র মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা ওর মধ্যে চীৎকার করে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে (জাহান্নাম হতে) বের করে নিন এবং পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দিন), তাহলে আমরা (পূর্বের) কৃত (মন্দ) আমল বাদ দিয়ে ভাল আমল করাবো। (উত্তরে বলা হবেঃ) তোমাদেরকে কি আমি এমন বয়স দান করিনি যে, যে উপদেশ গ্রহণ করার (ইচ্ছা করতো) সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারতো? আর তোমাদের কাছে তো ভয় প্রদর্শকের আগমন ঘটেছিল, সুতরাং (আজ ওসব কথা বলে কোন লাভ নেই, বরং) তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, অত্যাচারীদের জন্যে কোনই সাহায্যকারী নেই।” (৩৫:৩৭) এ সব আয়াতে এই বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, এইরূপ পাপী লোকেরা মৃত্যুর সময় এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জাহান্নামের পাশে দণ্ডায়মান অবস্থায় দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাক্ষা করবে এবং সৎ আমল করার অঙ্গীকার করবে। কিন্তু ঐ সময় তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না। এটা ঐ কথা যা ঐ ভয়াবহ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তারা বলে ফেলবে। আর প্রকৃতপক্ষে ওটা শুধু তাদের মুখের কথা। যদি তাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়েও দেয়া হয় তবুও তারা ভাল কাজ করবে না। বরং পূর্বে যেমন ছিল তেমনই থাকবে। তারা তো মিথ্যাবাদী। কতই না ভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যে এই পার্থিব জীবনে ভাল কাজ করে থাকে। আর ঐ লোকগুলো কতই না হতভাগ্য যারা ঐ বিচার দিবসে ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততির আকাক্ষা করবে না এবং দুনিয়ার সৌন্দর্য ও জাঁকজমক তারা কামনা করবে না, বরং দুনিয়ায় মাত্র কয়েক দিন বাস করে সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করার আকাঙ্ক্ষা করবে। কিন্তু সেই দিনের আকাঙ্ক্ষা, কামনা ও বাসনা সবই বৃথা হবে। এটাও বর্ণিত আছে যে, যখন তারা এরূপ আকাঙ্ক্ষা করবে তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলবেনঃ “এটা শুধু তোমাদের মুখের কথা। এর পরেও তোমরা ভাল কাজ করবে না।”
হযরত আ’লা ইবনে যিয়াদ (রঃ) কতই না সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ “তোমরা এটা মনে করে নাও যে, আমার মৃত্যু এসে গিয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তাআলার নিকট কয়েক দিনের অবকাশ চেয়েছিলাম যাতে আমি পুণ্য অর্জন করতে পারি। তিনি আমাকে অবকাশ দিয়েছেন। সুতরাং এখন অন্তর খুলে পুণ্য কামানো আমার উচিত।”
হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “তোমরা কাফিরদের এই আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করে নিজেদের জীবনের মুহূর্তগুলো আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগিয়ে দাও।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, যখন কাফিরকে কবরে রাখা হয় এবং সে তার জাহান্নামের বাসস্থান দেখে নেয় তখন বলেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ফিরিয়ে দিন, আমি তাওবা করাবো ও সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করাবো।” উত্তরে বলা হবেঃ “তোমাকে যে বয়স দেয়া হয়েছিল তা তুমি শেষ করে ফেলেছো।” (এটা মুহাম্মাদ ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছে) অতঃপর তার কবরকে সংকুচিত করে দেয়া হবে এবং সর্প ও বিচ্ছু তাকে দংশন করতে থাকবে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, পাপীদের কবর অত্যন্ত বিপদপূর্ণ ও ভয়াবহ জায়গা। তাদের কবরের মধ্যে কালো সর্প তাদেরকে দংশন করতে থাকে। এই সর্পগুলোর মধ্যে একটি বিরাটাকার সাপ প্রত্যেকের শিয়রে থাকে এবং অনুরূপ আর একটি সাপ থাকে তার পায়ের কাছে। সাপ দু’টি তাকে দংশন করতে করতে এগুতে থাকে এবং দেহের মধ্যভাগে এসে উভয়ে মিলিত হয়। এটাই হলো বারযাখের শাস্তি যার কথা আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতে বলেছেন।
(আরবী) এর অর্থ করা হয়েছেঃ তাদের সম্মুখে বারযাখ থাকবে। বারযাখ হলো দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে পর্দা বা আড়। সে না সরাসরি দুনিয়ায় আছে যে, পানাহার করবে এবং না সরাসরি আখিরাতে আছে যে, আমলের পূর্ণ প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। বরং রয়েছে এ দু’য়ের মাঝামাঝি জায়গায়। সুতরাং এই আয়াতে অত্যাচারী ও সীমালংঘন কারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, আলমে বারযাখেও তাদেরকে কঠিন শাস্তির মধ্যে রাখা হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তাদের সামনে জাহান্নাম রয়েছে।” (৪৫:১০) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তার সামনে রয়েছে খুবই কঠিন শাস্তি।” (১৪:১৭) কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর বারযাখের এই শাস্তি চালু থাকবে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “ওর মধ্যে সদা সর্বদা সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।” অর্থাৎ যমীনের মধ্যে (তাকে সব সময় শাস্তি দেয়া হবে)।
اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#965)
[قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ
He says, “My Lord, send me back”.]
Sura:23
Para:18
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 99-100
www.motaher21.net
23:99
حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَحَدَہُمُ الۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ ﴿ۙ۹۹﴾
[For such is the state of the disbelievers], until, when death comes to one of them, he says, “My Lord, send me back
The Disbelievers’ Hope when death approaches
Allah tells:
حَتَّى إِذَا جَاء أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ
Until, when death comes to one of them, he says:
Allah tells us about what happens when death approaches one of the disbelievers or one of those who have been negligent with the commands of Allah. He tells us what he says and how he asks to come back to this world so that he can rectify whatever wrongs he committed during his lifetime.
…
رَبِّ ارْجِعُونِ
23:100
لَعَلِّیۡۤ اَعۡمَلُ صَالِحًا فِیۡمَا تَرَکۡتُ کَلَّا ؕ اِنَّہَا کَلِمَۃٌ ہُوَ قَآئِلُہَا ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾
That I might do righteousness in that which I left behind.” No! It is only a word he is saying; and behind them is a barrier until the Day they are resurrected.
لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّ
“My Lord! Send me back, so that I may do good in that which I have left behind!”
No!
This is like the Ayat:
وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقْنَـكُمْ مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِىَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ
And spend of that with which We have provided you before death comes to one of you, until His saying:
وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
(And Allah is All-Aware of what you do. (63:10-11)
وَأَنذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ
And warn mankind of the Day when the torment will come unto them upto His saying;
مَا لَكُمْ مِّن زَوَالٍ
(that you would not leave (the world for the Hereafter). (14:44)
And His saying:
يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُ يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَأءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَأءَ فَيَشْفَعُواْ لَنَأ أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِى كُنَّا نَعْمَلُ
On the Day the event is finally fulfilled, those who neglected it before will say:”Verily, the Messengers of our Lord did come with the truth, now are there any intercessors for us that they might intercede on our behalf Or could we be sent back so that we might do deeds other than those deeds which we used to do.” (7:53)
And;
وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُواْ رُءُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَأ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَـلِحاً إِنَّا مُوقِنُونَ
And if you only could see when the criminals shall hang their heads before their Lord (saying):”Our Lord! We have now seen and heard, so send us back, that we will do righteous good deeds. Verily, we now believe with certainty.” (32:12)
And;
وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُواْ عَلَى النَّارِ فَقَالُواْ يلَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِـَايَـتِ رَبِّنَا
If you could but see when they will be held over the (Hell) Fire! They will say:”Would that we were but sent back! Then we would not deny the Ayat of our Lord. ..” until His saying;
وَإِنَّهُمْ لَكَـذِبُونَ
(And indeed they are liars). (6:27-28)
And;
وَتَرَى الظَّـلِمِينَ لَمَّا رَأَوُاْ الْعَذَابَ يَقُولُونَ هَلْ إِلَى مَرَدٍّ مِّن سَبِيلٍ
And you will see the wrongdoers, when they behold the torment, they will say:”Is there any way of return!” (42:44)
And;
قَالُواْ رَبَّنَأ أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَأَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلْ إِلَى خُرُوجٍ مِّن سَبِيلٍ
They will say:”Our Lord! You have made us to die twice, and You have given us life twice! Now we confess our sins, then is there any way to get out!” (40:11)
and the Ayah after it:
And;
وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَأ أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَـلِحاً غَيْرَ الَّذِى كُـنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَأءَكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّـلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ
Therein they will cry:”Our Lord! Bring us out, we shall do righteous good deeds, not what we used to do.”
(Allah will reply:) “Did We not give you lives long enough, so that whosoever would receive admonition could receive it And the warner came to you. So taste you (the evil of your deeds). For the wrongdoers there is no helper.” (35:37)
Allah says that they will ask to go back, when death approaches, on the Day of Resurrection, when they are gathered for judgment before the Compeller (Allah) and when they are in the agonies of the punishment of Hell, but their prayer will not be answered.
Here Allah says:
كَلَّ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَايِلُهَا
No! It is but a word that he speaks;
The word Kalla (No!) is a word that is used to rebuke, and the meaning is:
“No, We will not respond to what he asks for and We will not accept it from him.”
كَلَّ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَايِلُهَا
It is but a word that he speaks,
refers to his asking to go back so that he can do righteous deeds;
this is just talk on his part, it would not be accompanied by any action. If he were to go back, he would not do any righteous good deeds, he is merely lying, as Allah says:
وَلَوْ رُدُّواْ لَعَـدُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَـذِبُونَ
But if they were returned, they would certainly revert to that which they were forbidden. And indeed they are liars. (6:28)
Qatadah said:
“By Allah, he will not wish to go back to his family and tribe, or to accumulate more of the things of this world or satisfy his desires, but he will wish that he could go back to do acts of obedience to Allah. May Allah have mercy on a man who does that which the disbeliever will wish he had done when he sees the punishment of Hell.”
Barzakh and Punishment therein
Allah says:
وَمِن وَرَايِهِم بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
and in front of them is Barzakh until the Day when they will be resurrected.
Abu Salih and others said that:
وَمِن وَرَايِهِم
(and in front of them),
means before them.
Mujahid said,
Al-Barzakh is a barrier between this world and the Hereafter.
Muhammad bin Ka`b said,
“Al-Barzakh is what is between this world and the Hereafter, neither they are the people of this world, eating and drinking, nor are they with the people of the Hereafter, being rewarded or punished for their deeds.”
Abu Sakhr said,
“Al-Barzakh refers to the graves. They are neither in this world nor the Hereafter, and they will stay there until the Day of Resurrection.”
وَمِن وَرَايِهِم بَرْزَخٌ
and in front of them is Barzakh.
In these words is a threat to those wrongdoers at the time of death, of the punishment of Barzakh.
This is similar to the Ayat:
مِّن وَرَايِهِمْ جَهَنَّمُ
In front of them there is Hell. (45:10)
وَمِن وَرَايِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
and in front of him will be a great torment. (14:17)
إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
until the Day when they will be resurrected.
means, he will be punished continually until the Day of Resurrection, as it says in the Hadith:
فَلَ يَزَالُ مُعَذَّبًا فِيهَا
He will continue to be punished in it.
meaning, in the earth
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran