(বই#৯৬৭) [ سُوۡرَۃٌوَفَرَضْنَاهَا এটি একটি সূরা,এতে দিয়েছি অবশ্য পালনীয় বিধান,] সূরা:- আন-নূর। সুরা:২৪ পারা:১৮ ০১- ০২ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬৭)
[ سُوۡرَۃٌوَفَرَضْنَاهَا
এটি একটি সূরা,এতে দিয়েছি অবশ্য পালনীয় বিধান,]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
০১- ০২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:০১
سُوۡرَۃٌ اَنۡزَلۡنٰہَا وَ فَرَضۡنٰہَا وَ اَنۡزَلۡنَا فِیۡہَاۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لَّعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۱﴾
এটি একটি সূরা, আমি এটি নাযিল করেছি এবং একে ফরয করে দিয়েছি আর এর মধ্যে সুস্পষ্ট নির্দেশসমূহ নাযিল করেছি, হয়তো তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে।

২৪:০২
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِہِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡہَدۡ عَذَابَہُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲﴾
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো। আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো।৩ আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে।

(২৪-নূর) : নামকরণ:

পঞ্চম রুকূ’র প্রথম আয়াত اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : এটি পঞ্চম ও ষষ্ঠ হিজরীর মধ্যে অবতীর্ণ সূরা। ‘এমন এক সূরা যা আমিই নাযিল করেছি এবং এর মধ্যে বর্ণিত সুস্পষ্ট আয়াতগুলাের মাধ্যমে আমার বিধানগুলােকে বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছি, যাতে করে তােমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারাে… তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবন ধারণ সামগ্রী।'(আয়াত ১-২৬) এ সূরাটির নাম রাখা হয়েছে নূর- আলাে বা আলােকবর্তিকা…….এখানে শুভ্র সমুজ্জ্বল, আলােক বর্তিকা সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে, যার সম্পর্ক রয়েছে স্বয়ং আল্লাহর নিজ অস্তিত্বের সাথে, এই সূরারই এক আয়াতে যেমন রয়েছে আল্লাহ তায়ালাই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর নূর। এ আলাের প্রভা ও প্রকাশ অবশ্যই আলােকিত অন্তর ও আত্মাগুলােকে প্রভাবিত করে, এ প্রভাবসমূহ অতপর মানুষের মধ্যে আদব শৃংখলা ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত চরিত্র আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই কথাগুলােই হচ্ছে এ সূরাটির মূল আলোচ্য বিষয়। তাই দেখা যায়, সমগ্র সূরাটি জুড়ে রয়েছে সেই সব শিক্ষা, যা ব্যক্তি থেকে নিয়ে পরিবার পর্যন্ত একটা সমাজ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিক্ষার আলােকেই অন্তর আলোকিত হয়, জীবন সমুজ্জল হয়। গােটা বিশ্ব প্রকৃতির মধ্যে যে আলােকমালা রয়েছে তার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়ে মানবাত্মাগুলােকে স্নিগ্ধ পবিত্র আলাে দান করে, এ আলােই মানুষের অন্তরসমূহে প্রবিষ্ট হয় এবং এটা বিবেকের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। এসব কিছুই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সুবিশাল আলােক বর্তিকা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। সূরাটি শুরু হয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী ও অকাট্য এক ঘােষণার সাথে, যার মধ্যে সূরার মধ্যে বর্ণিত আলােচ্য বিষয়সমূহের পূর্বাভাস এবং আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নির্দেশাবলী, তার দেয়া সীমারেখাগুলো ও বাধ্যতামূলক কাজগুলার বর্ণনা-সবই স্থান পেয়েছে। আরাে বর্ণিত হয়েছে জীবনের নিয়ম-শৃংখলা ও চারিত্রিক মূলনীতিগুলাে। এরশাদ হচ্ছে, এটি এমন এক সূরা যা আমি নাযিল করেছি এবং এর মধ্যে বর্ণিত বিধানগুলােকে ফরয করে দিয়েছি। আরাে আমি নাযিল করেছি এর মধ্যে সুস্পষ্ট আয়াতগুলােকে, যাতে করে তােমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।… অতপর এ সূরাটির প্রারম্ভিক কথাতে কিছু চারিত্রিক বলিষ্ঠতা গড়ে তােলার জন্যে অত্যন্ত জোরালাে ভাষায় আল কোরআনের দৃষ্টিভংগি ব্যক্ত হয়েছে, মানুষের জীবনে শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্যে চরিত্র বল কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাও জানিয়েছে। ইসলামী আকীদাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্যে এর প্রয়ােজন কত বেশী এবং মানব জীবনের জন্যে যে চিন্তাধারা ইসলাম দিয়েছে তার মধ্যে এর স্থান কতাে উঁচু তাও বলা হয়েছে। মূল যে বিষয়টিকে ঘিরে সূরাটির আলােচ্য বিষয়গুলাে আবর্তিত হয়েছে তা হচ্ছে মানুষকে সত্যিকারে ভালাে মানুষরূপে গড়ে তােলার জন্যে প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণ। এর জন্যে এর উপায় উপাদানকে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে এবং এর সীমানাগুলােকে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। মানুষের আবেগ অনুভূতি ও মনুষ্য হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা যে প্রেম প্রণয়ের বীজ নিহিত রেখেছেন তারও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে, এসব সুচারু বৃত্তিগুলােও জানানাে হয়েছে। এগুলাে যে আল্লাহর আলাে ও তার নিদর্শনসমূহের দান এবং এগুলাের সাথেই যে রয়েছে এসব হৃদয়াবেগের নিবিড় সম্পর্ক তাও বলা হয়েছে। আল্লাহর এসব নিদর্শন সারা বিশ্বব্যাপী এবং মানুষের গােটা জীবন জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এ আয়াতগুলােতে কঠোরতা ও শিথিলতা যাই প্রদর্শন করা হয়েছে, সে সবের লক্ষ্য একটিই, আর তা হচ্ছে মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে তাদেরকে প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণ দান করা, তাদের চেতনা ও আবেগ-অনুভূতিকে সন্নিহিত করা, জীবনকে সুন্দর করার লক্ষ্যে চারিত্রিক মাপকাঠির এতােটা উন্নয়ন করা যেন জীবনের সব কিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে ও আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নূরের সাথে এর একটা সংযােগ সাধিত হয়। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এক নিয়ম শৃংখলা গড়ে ওঠে, বাড়ীঘর ও পরিবারের মধ্যে সুস্থ ও সুন্দর ব্যবস্থা রক্ষিত হয়, দল ও দলীয় নেতৃত্ব সবাই যেন আল্লাহর ওপর ঈমানের মূল উৎস থেকে জীবনের সুমধুর রস গ্রহণ করতে পারে, সবশেষে সেই কেন্দ্রীয় নূরের সাথে সবাই গিয়ে মিলিত হয়, এটা মূলত আল্লাহ রব্বুল ইযযতেরই নূর। এই নূরই সব কিছুর মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে সব কিছুকে আলােকিত করে, সমুজ্জ্বল করে ও পবিত্র বানায়। মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্যে প্রয়ােজনীয় সকল প্রশিক্ষণ আসে সেই প্রথম এবং সেই একই নূর থেকে, যা গােটা ভুবন, আকাশ, ভূমন্ডল ও বিশ্ব প্রকৃতির সব কিছুকে আলােকিত করে রেখেছে, সকল অন্ধকার অপসারিত করেছে, অন্তর ও বিবেকের মধ্যস্থিত পুঞ্জীভূত আবর্জনা থেকে মানুষকে ও সকল প্রাণী পবিত্র করেছে। সূরাটির মূল আলােচ্য বিষয় হচ্ছে, মানুষ গড়ার প্রােগ্রাম। তার আলােচনাকে মােট পাঁচটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে, এক. এ অধ্যায়ে যেনার ওপর প্রথম ও চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞার ঘােষণা দেয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ক শাস্তির বিধান সম্পর্কেও ঘােষণা দেয়া হয়েছে। চরম ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়েছে এ জঘন্য অপরাধের প্রতি এবং মুসলিম জামায়াত থেকে যেনাকারীদেরকে একঘরে করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুসলিম জামায়াতের সাথে তাদের কোনাে সম্পর্ক রাখা হয়নি, ওরাও মুসলিম জামায়াতের কেউ নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর সূরাটিতে পাথর মেরে হত্যা করার হুকুম জারি করা হয়েছে এবং এই কঠোরতার কারণও জানানাে হয়েছে। তারপর স্বামী-স্ত্রী পরস্পর মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে লানত পাঠানাের অবস্থায় তাদেরকে পৃথক হওয়া থেকে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। এরপর মিথ্যা দোষারােপ (ইফ্ক)-এর ঘটনা বিবৃত হয়েছে… আর এ অধ্যায়ের শেষ পর্যায়ে বলা হয়েছে যে, নষ্ট পুরুষ নষ্ট মেয়ের জন্যে এবং নষ্ট মেয়ে নষ্ট পুরুষের জন্যে, অপরদিকে চরিত্রবান পুরুষ এর উপযােগী চরিত্রবতী স্ত্রী লােক এবং চরিত্রবতী স্ত্রী লােক চরিত্রবান পুরুষের জন্যে উপযােগী, অর্থাৎ যারা যেমন তাদের সম্পর্কও তাদের মতন মানুষের সাথেই হতে পারে। দুই. এ পর্যায়ে এসব অপরাধজনক কাজ ও ব্যবহার থেকে বাচার উপায়গুলো বিবৃত হয়েছে, এখানে সে সব লােকদেরকেও সমাজচ্যুত করতে বলা হয়েছে, যারা মানুষকে অন্যায় কাজে প্ররােচিত করে বা কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বদনাম করে। তারপর ভদ্রজনদের বসতবাড়ীতে যেসব নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা প্রয়ােজন সেগুলাে বলতে গিয়ে প্রথমে গৃহবাসীকে সালাম দানের অভ্যাস গড়ে তােলার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তারপর হুকুম দেয়া হয়েছে দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখার জন্যে এবং নিষেধ করা হয়েছে মােহাররম পুরুষদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে। এরপর বালেগ বালেগা ছেলেমেয়েদের যথাশীঘ্র পাত্রস্থ করার জন্যে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে যুবতী মেয়েদেরকে দেহপসারিনী হওয়ার কাজে এগিয়ে দেয়া থেকে। এ সবই হচ্ছে মনে মগযে ও দৈহিক দিক দিয়ে সচ্চরিত্রের অধিকারী থাকার জন্যে রক্ষাকবচ। এসব উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে পশু প্রবণতা থেকে রক্ষা পেতে পারে, অর্থাৎ মানুষের মধ্যে আর একটি দিক পাশব প্রবৃত্তি ঘুমন্ত অবস্থায় সব সময়েই থাকে। একটু সুযােগ বা উস্কানি পেলেই সেটা জেগে উঠে। এই পথ-বৃত্তিকে দাবিয়ে রাখার জন্যে এবং সকল উস্কানির মােকাবেলা করার জন্যে প্রয়ােজনীয় সকল সতকর্তা অবলম্বন করার শিক্ষা আলােচ্য অধ্যায়ে পাওয়া যায় । তিন. সকল নিয়ম শৃংখলার মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ স্থাপন করা হয়েছে, অতপর এ সবকে আল্লাহর নূরের সাথে সম্পর্কিত বলে জানানাে হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, যে ঘরে এসব নিয়ম শৃংখলা বর্তমান আছে সে ঘর আল্লাহর ঘর হিসাবেই আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে। অপরদিকে যারা কুফরী করবে, মানবে না আল্লাহর দেয়া নিয়ম শৃংখলা তাদের সৎকাজগুলাে মিথ্যা মায়া-মরীচিকার মতাে চাকচিক্যময় হবে, অথবা সেগুলাে এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন, যেন মনে হয় অন্ধকারের স্তরগুলাে একের পর আর একটি পরতে পরতে সাজানাে। এরপর, দেখানাে হয়েছে কিভাবে দিগন্তব্যাপী ছড়ানাে রয়েছে আল্লাহর নূর। সকল সৃষ্টির মধ্যে আনুগত্য পাওয়া যায়, সব কিছুকে আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুযায়ী চলতে দেখা যায়, আসলে এ সব কিছুই হচ্ছে আল্লাহর নূরের বহিপ্রকাশ। সে সুদূর নীল আকাশে মৃদুমন্দ গতিতে মেঘমালার সন্তরণ, রাত্রি দিনের আনাগোনা এবং সকল জীবজন্তু পানি থেকে পয়দা হওয়ার বাস্তবতা, তারপর একই পানি থেকে পয়দা হওয়া সত্তেও বিভিন্নরূপ ও কর্মক্ষমতার অধিকারী হওয়া, বিভিন্ন পেশায় বিভক্ত হওয়া, বিভিন্ন শ্রেণীতে ও দলে নিয়ােজিত হওয়া, যা নিয়ত প্রত্যেক দর্শক ও সকল দৃষ্টির সামনে ভাসছে- এসব কিছুও মূলত সে মহান আল্লাহর নূরের বহিপ্রকাশ। চার. এখানে আলােচনা হয়েছে মােনাফেকদের সম্পর্কে । রসূল (স.)-এর সাথে আদব রক্ষা করে চলাকে সবার জন্যে ওয়াজিব করে দেয়া সত্তেও মােনাফেকরা একথা মানতাে না- যদিও তারা মুসলমানদের মধ্যে মিলে মিশে থাকতে ও নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিতাে। বাহ্যিক কাজ কর্ম ও আনুষ্ঠানিক এবাদাত (যেমন নামায রােযা ইত্যাদি) দ্বারা নিজেদেরকে মুসলমান সমাজের লােক বলে বুঝানাের চেষ্টা করতাে। তাদের সামনে খাঁটি মােমেনদের আদব কায়দা ও সঠিক আনুগত্যের চিত্র তুলে তাদেরকে এসব শৃংখলা মেনে চলতে আহ্বান জানানাে হচ্ছে। তাদেরকে আল্লাহর এ ওয়াদাও শােনানাে হচ্ছে যে, যদি খাঁটি ভাবে তারা আল্লাহ তায়ালা ও রসূলের আনুগত্য করে তাহলে তারা আল্লাহর খলীফা হিসাবে দুনিয়ায় বাস করবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়ায় বিভিন্ন ক্ষমতার আসনে তাদেরকে সমাসীন করা হবে, কাফেরদের ওপরও তাদেরকে বিজয়ী করা হবে। এরপর আসছে পঞ্চম পর্যায়, এর মধ্যে নিজেদের বাড়ীর বাইরে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের বাড়ীতে প্রবেশের জন্যে অনুমতি চাওয়া ও মেহমানদারী করার আদব শেখানাে হয়েছে। মুসলিম জামায়াতের লােকেরা সবাই এক পরিবারের লােক এই হিসাবে তাদের বাড়ীতে প্রবেশের নিয়ম শৃংখলার তালীমও দেয়া হয়েছে। এরপর একথার ঘােষণার সাথে সূরাটি শেষ করা হচ্ছে যে, আকাশ মন্ডলী এবং পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিকারী ও মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন, তার জ্ঞান সবাইকে ঘিরে রেখেছে। তার জানা আছে ওদের মধ্যে কে ধ্বংস হবে আর কে নিষ্ঠার সাথে তার দিকে রুজু করবে, তাদের সকল ব্যাপারের জ্ঞানই তার কাছে আছে- তিনিই সব কিছু সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। আসুন, এবারে আমরা বিস্তারিত আলােচনার দিকে এগিয়ে যাই।

* ‘এ এমন একটি সূরা যার মধ্যে ইসলামের বিধি বিধানকে ফরয বলে ঘােষণা করে দিয়েছি, আর আমি এর মধ্যে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি যাতে করে তােমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারাে।’ অন্য সূরার তুলনায় সমগ্র কোরআনের মধ্যে এ হচ্ছে এক অতুলনীয় ভূমিকা সম্বলিত সূরা। এখানে নতুন একটি কথা দেখতে পাচ্ছি ‘ফারাদ্বনাহা’ অর্থাৎ আমি একে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। এ কথার যে অর্থ আমরা বুঝেছি তা হচ্ছে, সূরাটির মধ্যে বর্ণিত কথাগুলােকে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা, এর দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে, বাড়ী ঘরের নিয়ম শৃংখলা মেনে চলা এবং পরস্পরের সাথে ব্যবহারের আদব কায়দা রক্ষা করা তেমনই ফরয, যেমন অন্যান্য শাস্তিযােগ্য আইন মানা ফরয। মানুষের স্বভাব প্রকৃতির মধ্যেই এই আদব রক্ষা করার প্রবণতা বর্তমান রয়েছে; অবশ্যই প্রবৃত্তির তাড়নে অথবা মানবিক দুর্বলতার কারণে মানুষ এসব আদব কায়দা অনেক সময় ভুলে যায়, সেজন্যেই আলােচ্য সূরার মধ্যে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেসব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। সুস্পষ্ট যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানব সমাজে শান্তি রক্ষায় এসব আদব-কায়দার গুরুত্ব কত বেশি।

*ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি : এ ভূমিকার পরেই শক্তিশালী এক যুক্তি সহকারে যেনাকারীর প্রতি শাস্তির ঘােষণা শােনানাে হয়েছে, এসব আচরণ কতাে জঘন্য তা জানানাে হয়েছে। এসব অসদাচরণ মুসলিম সমাজের শান্তি শৃংখলা বিঘ্নিত করার সাথে সাথে দাম্পত্য জীবনকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দেয়, পারস্পরিক আত্মীয়তা ও সামাজিক বন্ধনকে নষ্ট করে। দেখুন আল্লাহর আয়াত, ‘যেনাকারী পুরুষ ও নারীর প্রত্যেককে একশত চাবুক মারাে… আর যেনাকারী নারীকে যেনাকারী পুরুষ বা কোনাে মােশরেক ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে করবে না। মােমেনদের জন্যে এ কাজ (বিয়ে) কে হারাম করে দেয়া হয়েছে।’ এটা ছিলাে ইসলামের প্রথম যুগে ব্যভিচারকারী পুরুষ ও নারীর শাস্তি এবং সূরায়ে ‘নিসা’তে এ শাস্তির ঘােষণা দেয়া হয়েছে, বলা হয়েছে, ‘আর তােমাদের মধ্যে যেসব নারী এসব লজ্জাকর কাজে লিপ্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে (হে মােমেনরা) তােমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করাে। তারা সাক্ষ্য দিলে সে মহিলাদেরকে বাড়ীতে আমৃত্যু আবদ্ধ করে রাখাে, অথবা আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে অন্য কোনাে পথ বের না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করাে।’ এক্ষেত্রে বুঝা যাচ্ছে বাড়ীতে আবদ্ধ করে রাখা দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দাও, অর্থাৎ বাড়ীর পরিবেষ্টনীতে রেখে তাদেরকে কর্মব্যস্ত রাখাে যেন তারা পুনরায় অনুরূপ অপরাধ করতে না পারে এবং অনুতপ্ত হওয়ার (তওবা করার) সুযােগ পায় । অনুরূপ অপরাধে জড়িত পুরুষের জন্যও (গৃহে আবদ্ধ রাখা ছাড়া) এধরনের শাস্তি রয়েছে। এরপর সূরায়ে নূরের মধ্যে যেনার শাস্তি সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছে। সূরায়ে ‘নিসাতেও ইতিমধ্যে এভাবে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, চাবুক মারার এ শাস্তি হচ্ছে অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্যে অর্থাৎ বিয়ের মাধ্যমে যারা নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকার সুযােগ পায়নি তাদের জন্যেই এ হালকা শাস্তি। এ শাস্তি মুসলিম, বালেগ, সুস্থ মস্তিঙ্ক ও স্বাধীন ব্যক্তির জন্যে। অতপর যে ব্যক্তি বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করার চারিত্রিক নিরাপত্তা লাভে ধন্য হতে পেরেছে, সে যদি অনুরূপ পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাহলে তার জন্যেই রয়েছে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করার শাস্তি। পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার শাস্তির বিধান রসূল(স.)-এর সুন্নত থেকে জানা যায়, আর আল কোরআন থেকে প্রমাণিত হয়েছে চাবুক মারার শাস্তি। প্রথম দিকে অবতীর্ণ আল কোরআনের আয়াত দ্বারা সংক্ষেপে ও সাধারণভাবে যে শাস্তি দেয়া যায়, তারই ব্যবস্থা আগে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে রসূল(স.) বিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্যে প্রস্তরাঘাতে হত্যার শাস্তি দিয়েছেন। এতে বুঝা গেলাে, বিবাহের মাধ্যমে নিরাপদ জীবন লাভে ধন্য ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের জন্যে এক শত চাবুক মারাই তাদের উপযুক্ত শাস্তি। এখন বিবাহিত পুরুষ নারীদেরকে চাবুক মারা ও প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার এ উভয়ই শাস্তি দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ ফকীহরা একই ব্যক্তিকে দুটি শাস্তি এক সাথে দেয়ার বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। আবার অবিবাহিতদের জন্যে চাবুক মারা এবং দেশান্তর করার উভয় শাস্তি একই সাথে দেয়া হবে কিনা সে বিষয়েও মতভেদ পাওয়া যায়, যারা স্বাধীন নয় তাদের ওপর যেনার শাস্তি আরােপিত হবে কিনা সে বিষয়েও ফকীহরা দ্বিধা বিভক্ত। এসব মতভেদ অনেক দীর্ঘ, যার বিস্তারিত বিবরণে আমরা যেতে চাই না। এসবের ওপর ব্যাপক আলােচনা ফেকাহর পুস্তকাদিতে রয়েছে। আমরা শুধু শরীয়াতের এই বিধানের তাৎপর্য বুঝতে চাই, এজন্যে আলােচনাকে এ বিধানের মৌলিক বিষয়গুলাের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। এ আলােচনায় আমরা সুস্পষ্ট যে বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি, তা হচ্ছে অবিবাহিতদের জন্যে চাবুক মারার শাস্তি এবং বিবাহিতদের জন্যে প্রস্তরাঘাতে হত্যার শান্তি- এ শাস্তি সেসব স্বাধীন বয়প্রাপ্ত বিবাহিতদের জন্যে, যারা বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক প্রয়ােজন মেটানাের সঠিক উপায় লাভ করেছে, এসব সরল সহজ উপায় লাভ করার পরও যদি তারা বাঁকা পথ অবলম্বন করে এবং সমাজকে কলুষিত করার দুঃসাহস করে তাহলে বুঝতে হবে, তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায় না, সমাজের শান্তি রক্ষার ব্যাপারে তাদের কোনাে পরওয়া নেই, এজন্যেই তাদের জন্যে কঠোরতম শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে, এটাই তাদের জন্যে উপযুক্ত শাস্তি। এই কঠোরতার কারণ হচ্ছে, কোনাে ব্যক্তি বিশেষের জন্যে গােটা সমাজকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না, অপরদিকে অবিবাহিত মানুষ, যার প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানাের কোনাে উপায় নেই, সে যদি উত্তেজনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নে পড়ে বিপথগামী হয়, সে অবস্থায় মেহেরবান মালিক হালকা শাস্তি দান করে তাকে শােধরানাের সুযােগ দিয়েছেন। সে যদি তাওবা করে তাহলে আবার স্বাভাবিক ও সম্মানের জীবনে ফিরে আসার সুযােগ পাবে। বিবাহিত মানুষ দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা থাকায় সেই সব বিষয় বুঝতে পারে এবং অবিবাহিত মানুষের ছলনায় এমন গভীরভাবে সেই সব স্বাদ পায় যা অবিবাহিত মানুষ কল্পনাও করতে পারে না, ফলে তারা রিপুর ডাকে সাড়া দেয়- যদি তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় না থাকে। এজন্যে তাদের শাস্তিও অধিক কঠিন। আল কোরআন এখানে শুধুমাত্র অবিবাহিত মানুষের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে, যার বর্ণনা ইতিপূর্বে এসে গেছে। সুতরাং যে বিষয়ে তাকে পাকড়াও করা হবে কড়াকড়িভাবেই এবং এ ক্ষেত্রে কোনাে ক্ষমা বা শিথিলতা প্রদর্শন করা হবে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘যেনাকারী নারী ও যেনাকারী পুরুষ, ওদের প্রত্যেককে একশত চাবুক মারবে আর তাদেরকে দেয়া এ শাস্তি মােমেনদের একটি দল যেন দেখে।’ হদ (শাস্তির আইন প্রয়ােগ) সম্পর্কে এটা অকাট্য ও চূড়ান্ত নির্দেশ। যারা এ অপরাধ করবে তাদের প্রতি যেন কোনাে শিথিলতা প্রদর্শন করা না হয়, দন্ড জারি করা যেন বন্ধ না হয় এবং আল্লাহর আইনের প্রতি শিথিলতা প্রদর্শন, অথবা দন্ড কায়েম করার ব্যাপারে কোনাে একার নরম ভাবও যেন দেখানাে না হয়, আর এই শাস্তিটা প্রকাশ্যে এবং মােমেনদের একটি দলের উপস্থিতিতে দিতে হবে যেন এই কঠিন শাস্তির দৃশ্য তাদের অন্তরে এক প্রচন্ড ভীতির সঞ্চার করে এবং যারা এসব অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার চিন্তা করে এবং উপস্থিত জনতা- সবার মনে এটি ভীষণভাবে দাগ কাটে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

নামকরণ:

নূর অর্থ আলো। এ সূরাতে এমন কিছু বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে যা পালন করলে মানুষের জীবন প্রকৃতপক্ষেই আলোকিত হয়ে উঠবে। সে আখিরাতে চির সুখের উদ্যান জান্নাত লাভ করবে। যার কারণে উক্ত সূরাকে সূরা নূর বলে নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া নূর শব্দটি অত্র সূরার ৩৫ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

সূরা নূর সামাজিক বিধি-বিধানসম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। সূরাতে ব্যভিচারের শাস্তি, লিআনের বিধান-পদ্ধতি, ইফকের ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি ও মু’মিনদের কর্তব্য, শয়তানের অনুসরণ থেকে সতর্কতা, অন্যের বাড়িতে প্রবেশের নিয়ম-বিধান, মু’মিন নর-নারীর দৃষ্টি সংযতকরণ ও সতিত্ব সংরক্ষণ, মহিলাদের পর্দার বিধান ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। সূরার শেষের দিকে ঐসব মু’মিনদের আলোচনা করা হয়েছে যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয় না ও তাদের বৈশিষ্ট্য, মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা এবং সমষ্টিগত মজলিসের আদব তুলে ধরা হয়েছে।

১-২ নং আয়াতের তাফসীর:

সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা বললেন: “এটি একটি সূরা যা আমি নাযিল করছি।” অথচ সকল সূরাই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে নাযিলকৃত। এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করার কারণ হল যে, এ সূরার বিধি-বিধানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে যা অবশ্য পালনীয়।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অবিবাহিত নারী ও পুরুষের যিনা বা ব্যভিচার করার শাস্তি বর্ণনা করছেন। ব্যভিচার হলন শরয়ী পন্থায় বিবাহ বন্ধন ব্যতীত যেকোন নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক। (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ৪/২১) আয়াতে এ ব্যভিচারই উদ্দেশ্য এবং দলীল-সাক্ষ্যের আলোকে প্রমাণিত হলে হদ কায়েম করা হবে। এছাড়া মানুষের হাতের, পায়ের, কানের, মুখের ও চোখের ব্যভিচার হয়ে থাকে, সেগুলোর জন্য হদ কায়েম করা হবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৬২৪৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৫৭)

ইসলামের নৈতিক মানদণ্ডে যে সকল আচরণ জঘন্যতম নৈতিক ও সামাজিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় তার মধ্যে ব্যভিচার নিকৃষ্টতম। ব্যভিচার এমন একটি মারাত্মক অপরাধ যা পারিবারিক জীবন-যাপন বিপর্যস্ত করে। একজন নারীর জীবনকে আজীবনের জন্য কলংকিত করে, মানুষের বংশনামা নষ্ট করে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলার কঠিন শাস্তিযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়।

ইসলাম এ শাস্তিযোগ্য ও জঘন্যতম অপরাধ প্রতিরোধে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সামর্থ্য থাকলে বিবাহ করা, নিজ-নিজ দৃষ্টি সংরক্ষণ করা, নারীদের ঘরে অবস্থান করা, বাহিরে সৌন্দর্য প্রকাশ করে চলাফেরা না করা, মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকি সফর না করাসহ অনেক ব্যবস্থা রয়েছে। সংক্ষিপ্ততার কারণে আলোচনা সম্ভব নয়।

ব্যভিচারের শাস্তি: ব্যভিচারের প্রাথমিক শাস্তি যা ইসলামে অস্থায়ীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল তা সূরা নিসার ১৫ নং আয়াত আলোচনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছেন যতক্ষণ এ ব্যাপারে কোন স্থায়ী শাস্তি নির্ধারণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে সমস্ত ব্যভিচারিণী মহিলাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হবে। কিন্তু সূরা নূরের এ আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা আমার কাছ থেকে (ব্যভিচারী নারী-পুরুষের শাস্তি) শিখে নাও, আল্লাহ তা‘আলা তাদের স্থায়ী শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাহলন অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্য একশত বেত্রাঘাত ও এক বছর দেশান্তর আর বিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত ও রজম। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৯০) সুতরাং বুঝা গেলন ব্যভিচারী নারী-পুরুষ অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করতে হবে। এটা অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। একশত বেত্রাঘাতের সাথে এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে, যদিও এ ব্যাপারে তিনটি মত রয়েছে তবে এটিই সঠিক যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৯৫-৬, সহীহ মুসলিম হা: ১৬৯৮)

আর বিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করা। কিন্তু বাস্তবে তিনি বিবাহিত ব্যভিচারীদের শাস্তি দিয়েছেন পাথর মেরে, আর একশত বেত্রাঘাত (যা ছোট শাস্তি) বড় শাস্তির সাথে একত্রীভূত করে বিলুপ্ত করেছেন। অতএব এখন বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের একমাত্র শাস্তি পাথর মেরে হত্যা করা। যদি একজন বিবাহিত হয়, অপর জন অবিবাহিত হয় তাহলে বিবাহিতের ওপর বিবাহিতের বিধান, আর অবিবাহিতের উপর হলে অবিবাহিতের বিধান কায়েম করা হবে। যা সহীহ বুখারী হা: ২৬৯৫-৬, সহীহ মুসলিম হা: ১৬৯৮ দ্বারা প্রমাণিত। এ শাস্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং বাস্তবায়ন করেছেন, খোলাফায়ে রাশেদী এ শাস্তি প্রদান করেছেন, পরবর্তীকালের ইমাম ও আলেমগণ সকলে এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং এ বিধানকে অস্বীকার করা বা বর্তমান যুগে উপযোগী নয় বা মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে উল্লেখ করা মূলত এ বিধানকে অস্বীকার করা, যা কুফরী কাজ।

অতএব যদি কোন নারী-পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদেরকে শরীয়ত নির্ধারিত পন্থায় শাস্তি প্রদান করতে হবে।

তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এ বিধান কায়েম করতে গিয়ে কোন প্রকার দয়া প্রদর্শন করা বা স্বজনপ্রীতি করা বা ক্ষমতাসীনদের ওপর বিধান কায়েম না করে শুধু দুর্বলদের ওপর কায়েম করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এটাকে আল্লাহ তা‘আলা ও আখেরাতের প্রতি ঈমানের সাথে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে: আয়িশাহ  হতে বর্ণিত, কুরাইশগণ একদা মাখযুমী গোত্রের এক মহিলার ব্যাপারে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল, যে মহিলাটি চুরি করেছিল। এ ব্যাপারে কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎-এর সম্মুখে কথা বলবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎-এর প্রিয় পাত্র উসামা ব্যতীত এ ব্যাপারে কথা বলার দুঃসাহস কার আছে? তখন উসামা এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বললেন: তুমি কি আল্লাহ তা‘আলার হদ-এর ব্যাপারে আমাকে সুপারিশ করছ? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ দাঁড়ালেন এবং খুতবা প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন: তোমাদের পূর্ববর্তীরা, তারা ধ্বংস হয়েছে এজন্য যে, যখন তাদের মধ্যে সম্মানী লোকেরা চুরি করত তখন তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিত। আর যদি গরীব লোকেরা চুরি করত তাহলে তাদের ওপর হদ কায়েম করত। আল্লাহ তা‘আলার শপথ! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৭৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৬৮৮)

শাস্তি কায়েম করার শর্ত:

(১) ব্যভিচারকারীর স্বীকৃতি, অর্থাৎ ব্যক্তি যদি নিজেই স্বীকার করে যে, আমি ব্যভিচার করেছি, তাহলে তার ওপর বিধান কায়েম করা যাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮১৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৩১৮)
(২) যে নারীর স্বামী নেই তার গর্ভবতী হওয়া। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮২৯, সহীহ মুসিলম হা: ১৬৯১)

(৩) সাক্ষ্যদানকারীর সাক্ষ্য, তবে অবশ্যই চার জন ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْمُحْصَنٰتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوْا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَا۬ءَ فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمٰنِيْنَ جَلْدَةً وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ج وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ)

“যারা সতী-সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; তারাই তো পাপাচারী।” (সূরা নূর ২৪:৪)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সা‘দ বিন উবাদা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎-কে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে কোন পুরুষকে দেখি (অর্থাৎ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়) তাহলে কি আমি চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বললেন: হ্যাঁ। (সহীহ মুসলিম হা: ১৪৯৮)

এমনকি যদি চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে তাহলে যারা এ কথা বলবে তাদের ওপর হদ কায়িম করা হবে। তা হলন আশিটি বেত্রাঘাত করা। তবে সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তির কয়েকটি শর্ত রয়েছে।

আর এ শাস্তি প্রদান করার সময় অবশ্যই মু’মিনদের একটি দল প্রত্যক্ষ করবে, যাতে মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হয়।

১. বিধি-বিধানের দিক দিয়ে এ সূরাটি বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার।
২. আল্লাহ তা‘আলার বিধান ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে শান্তি ও শৃংখলা নিয়ে আসে।
৩. অবিবাহিত কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাকে একশত বেত্রাঘাত করা হবে এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। আর যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাকে রজম করে হত্যা করা হবে।
৪. হদ কায়েমের ব্যাপারে কোন প্রকার দয়া প্রদর্শন ও স্বজনপ্রীতি করা যাবে না।
৫. কেউ নিজে নিজের ব্যভিচারের কথা স্বীকার করলে সেক্ষেত্রে কোন সাক্ষীর প্রয়োজন হবে না।
৬. বৈধ স্বামী-স্ত্রী ব্যতীত অন্য সকল প্রকার নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক ইসলামে হারাম।
৭. শাস্তি প্রদানের দৃশ্য মিডিয়াতে প্রচার করা উচিত, যাতে মু’মিনগণ তা প্রত্যক্ষ করে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১-২ নং আয়াতের তাফসীর

‘আমি এই সূরা অবতীর্ণ করেছি’ এ কথার দ্বারা এই সূরার বুযুর্গী ও প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করাই উদ্দেশ্যে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, অন্যান্য সূরাগুলোর বুযুর্গী ও প্রয়োজনীয়তা নেই।

(আরবি) এর অর্থ মুজাহিদ (রঃ) ও কাতাদা (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হালাল, হারাম, আদেশ, নিষেধ, ওয়াদা ইত্যাদির বর্ণনা এতে রয়েছে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ আমি তোমাদের উপর ও তোমাদের পরবর্তী লোকদের উপর এটা নির্ধারিত করে দিয়েছি। এর মধ্যে সুস্পষ্ট ও খোলাখুলি উজ্জ্বল নির্দেশাবলী বর্ণনা করেছি যাতে তোমরা উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করতে পার, আমার হুকুমসমূহ স্মরণ রাখো এবং ওগুলোর উপর আমল কর।

এরপর আল্লাহ তা’আলা ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর শাস্তির বর্ণনা দিচ্ছেন। ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী বিবাহিত ও বিবাহিতা হবে অথবা অবিবাহিত ও অবিবাহিতা হবে। সুতরাং অবিবাহিত পুরুষ এবং অবিবাহিতা নারী যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে তাদের শাস্তির বিধান হলো ওটাই যা এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ একশ’ বেত্রাঘাত। আর জমহুর উলামার মতে তাদেরকে এক বছরের জন্যে দেশান্তরও করতে হবে। ইমাম আবু হানীফা। (রঃ)-এর মত এর বিপরীত। তাঁর মতে এটা নেতার ইচ্ছাধীন, তিনি ইচ্ছা করলে দেশান্তর করবেন বা করবেন না। জমহুর উলামার দলীল হলো নিম্নের হাদীসটিঃ

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ও হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, দু’জন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। একজন বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার ছেলে এ লোকটির বাড়ীতে মজুর ছিল। সে এর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে ফেলেছে। আমি তার মুক্তিপণ হিসেবে একশটি বকরী ও একটি দাসী একে প্রদান করি। অতঃপর আমি আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে, আমার ছেলের উপর শরঈ শাস্তি হলো একশ’ বেত্রাঘাত ও এক বছরকাল দেশান্তরকরণ। আর এর স্ত্রীর শাস্তি হলো রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা।” তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সঠিক ফায়সালা করছি। একশ’ বকরী ও দাসী তুমি ফিরিয়ে পাবে এবং তোমার ছেলের উপর একশ’ বেত্রাঘাত ও এক বছরকাল দেশান্তর।” আর আসলাম গোত্রের। উনায়েস নামক একটি লোককে তিনি বললেনঃ “হে উনায়েস! সকালে তুমি এই লোকটির স্ত্রীর নিকট গমন করো। যদি সে ব্যভিচারের কথা স্বীকার করে নেয় তবে তুমি তাকে রজম করবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথামত উনায়েস সকালে ঐ স্ত্রী লোকটির নিকট গমন করলো এবং সে ব্যভিচারের কথা স্বীকার করে নেয়ায় তাকে রজম করে দিলো। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অবিবাহিত ব্যভিচারীকে একশ’ বেত্রাঘাতের সাথে সাথে এক বছরের জন্য দেশান্তরও করতে হবে। আর যদি বিবাহিত হয় তবে রজম করে দেয়া হবে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ) তাঁর এক ভাষণে হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর নিজের কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর এই কিতাবে রজম করার হুকুমের আয়াতও ছিল। আমরা তা পাঠ করেছি, মুখস্থ করেছি এবং আমলও করেছি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগেও রজম হয়েছে এবং তার (ইন্তেকালের) পরে আমরাও রজম করেছি। আমি ভয় করছি যে, কয়েক যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর না জানি লোকেরা হয়তো বলতে শুরু করে দেবে যে, তারা রজম করার হুকুম আল্লাহর কিতাবে পাচ্ছে না। আল্লাহ না করুন তারা হয়তো আল্লাহর এই ফরয কাজকে যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন, ছেড়ে দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। রজমের সাধারণ হুকুম ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে যে ব্যভিচার করবে এবং বিবাহিত হবে, সে পুরুষ হোক বা নারীই হোক, যখন তার ব্যভিচারের উপর শরঈ দলীল পাওয়া যাবে অথবা সে গর্ভবতী হবে বা স্বীকারোক্তি করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ)-এর মুআত্তা গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আর সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম গ্রন্থে এর চেয়েও দীর্ঘভাবে বর্ণনা করা হয়েছে)

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে তার এক ভাষণে বলতে শুনেছেনঃ “লোকেরা বলে যে, তারা রজম অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার কথা আল্লাহর কিতাবে পায় না। কুরআন কারীমে শুধুমাত্র চাবুক মারার হুকুম রয়েছে। জেনে রেখো যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) রজম করেছেন, তারপরে আমরাও রজম করেছি। কুরআনে যা নেই, উমার (রাঃ) তা লিখিয়ে নিয়েছেন লোকদের একথা বলার ভয় যদি আমি না করতাম তবে রজমের আয়াত আমি ঐ ভাবেই লিখিয়ে নিতাম যেভাবে ওটা অবতীর্ণ হয়েছিল। (এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। সুনানে নাসাঈতেও এ হাদীসটি রয়েছে)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার (রাঃ) ভাষণে রজমের বর্ণনা দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ “রজম জরুরী এবং ওটা আল্লাহর হদসমূহের মধ্যে একটি হদ। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) রজম করেছেন এবং তার পরে আমরাও রজম করেছি। যদি আমি লোকদের একথা বলার ভয় না করতাম যে, কুরআন কারীমে যা নেই তা উমার (রাঃ) বাড়িয়ে দিয়েছেন তবে আমি কুরআনের এক পার্শ্বে রজমের আয়াত লিখে দিতাম।” উমার ইবনে খাত্তাব। (রাঃ), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এবং অমুক ও অমুকের সাক্ষ্য এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) রজম করেছেন এবং আমরাও রজম করেছি। মনে রেখো যে, তোমাদের পরে এমন লোক আসবে যারা রজমকে, শাফাআতকে এবং কবরের আযাবকে অবিশ্বাস করবে। আর কতকগুলো লোককে যে কয়লা হয়ে যাওয়ার পরেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে, এটাকেও অবিশ্বাস করবে। (এটাও মুসনাদে আহমাদে বর্ণনা করা হয়েছে)

হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা রজমের হুকুমকে অস্বীকার করার ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকো (শেষপর্যন্ত)।” এটাও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। (ইমাম তিরমিযীও (রঃ) এটা আনয়ন করেছেন এবং এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন)

কাসীর ইবনে সাত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মারওয়ানের নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। সেখানে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিতও (রাঃ) ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমরা কুরআন কারীমে পড়তাম- “বিবাহিত পুরুষ বা নারী ব্যভিচার করলে তোমরা অবশ্যই রজম করবে।” মারওয়ান তখন জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কুরআন কারীমে এটা লিখেন না যে?” উত্তরে হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ “আমাদের মধ্যে যখন এই আলোচনা চলতে থাকে। তখন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছি যে, একটি লোক (একদা) নবী (সঃ)-এর কাছে আগমন করে। সে তার সামনে এরূপ এরূপ বর্ণনা দেয়। আর সে রজমের কথা বর্ণনা করে। কে একজন বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি রজমের আয়াত লিখিয়ে নিন! রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, এখনতো আমি এটা লিখিয়ে নিতে পারি না।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদেই বর্ণিত হয়েছে। সুনানে নাসাঈতেও এ রিওয়াইয়াতটি আছে)

এসব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, রজমের আয়াত পূর্বে লিখিত ছিল। তারপর তিলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে এবং হুকুম বাকী রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ লোকটির স্ত্রীকে রজম করার নির্দেশ দেন যে তার চাকরের সাথে ব্যভিচার করেছিল। অনুরূপভাবে তিনি হযরত মায়েয (রাঃ) ও এক গামেযিয়্যাহ মহিলাকে রজম করিয়েছিলেন। এসব হাদীসে এর উল্লেখ নেই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) রজমের পূর্বে তাদেরকে চাবুক লাগিয়েছিলেন। বরং এসব বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট হাদীসে শুধু রজমের বর্ণনা আছে। কোন হাদীসেই চাবুক মারার বর্ণনা নেই। এ জন্যেই জমহুর উলামার এটাই মাযহাব। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং ইমাম শাফেয়ীও (রঃ) এদিকেই গিয়েছেন। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, প্রথমে চাবুক মেরে পরে রজম করা উচিত যাতে কুরআন ও হাদীস উভয়ের উপরই আমল হয়ে যায়। মেযন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে সুরাজা নাম্নী একটি মহিলাকে নিয়ে আসা হয় যে বিবাহিতা ছিল এবং ব্যভিচার করেছিল। তখন তিনি বৃহস্পতিবারে তাকে চাবুক মারিয়ে নেন এবং শুক্রবারে তাকে রজম করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “কিতাবুল্লাহর উপর আমল করে আমি তাকে চাবুক লাগিয়েছি এবং সুন্নাতে রাসূল (সঃ)-এর উপর আমল করে তাকে রজম করার নির্দেশ দিয়েছি।”

হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমার কথা গ্রহণ কর, তোমরা আমার কথা গ্রহণ কর! আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্যে পন্থা বের করে দিয়েছেন। অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিতা নারী ব্যভিচার করলে একশ’ চাবুক ও এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও বিবাহিতা নারী ব্যভিচার করলে রজম।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আরবাআ ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে। অন্তরের দয়া তো অন্য জিনিস, ওটা তো থাকবেই। কিন্তু আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ইমামের অবহেলা ও ত্রুটি প্রদর্শন নিন্দনীয়। যখন ইমাম বা বাদশাহর কাছে এমন কোন ঘটনা ঘটবে যাতে হদ জারী করা অপরিহার্য, এরূপ ক্ষেত্রে বাদশাহর উচিত হদ জারী করা এবং ওটা ছেড়ে না দেয়া। হাদীসে এসেছেঃ “তোমরা পরস্পরের মধ্যকার হদকে উপেক্ষা কর। হদযুক্ত কোন ঘটনা আমার কাছে পৌছে গেলে হদ জারী করা অপরিহার্য হয়ে যাবে।” অন্য হাদীসে এসেছেঃ “যমীনে হুদূদ কায়েম হওয়া যমীনবাসীদের জন্যে চল্লিশ দিনের বৃষ্টিপাত অপেক্ষা উত্তম।” এ কথাও বলা হয়েছে যে, তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে’। আল্লাহ পাকের এই উক্তির ভাবার্থ হচ্ছে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে প্রহারকে হালকা করো না। মধ্যমভাবে চাবুক মারে। মেরে যে অস্থি ভেঙ্গে দেবে এটাও ঠিক নয়। অপবাদদাতার উপর হদ জারী করার সময় তার দেহে কাপড় থাকতে হবে। তবে ব্যভিচারীর উপর হদ জারী করার সময় তার দেহে কাপড় রাখা চলবে না। এটা হলো হযরত হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমান (রাঃ)-এর উক্তি। এটা বর্ণনা করার পর তিনি (আরবি) পাঠ করেন। তখন হযরত সাঈদ ইবনে আবি উরূবাহ (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এটা কি হুকুমের অন্তর্ভুক্ত?’ উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যা, হুকুমের অন্তর্ভুক্ত এবং চাবুক অর্থাৎ হদ কায়েম করা প্রহারকে কঠিন করার অন্তর্ভুক্ত।”

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তার দাসী ব্যভিচার করলে তিনি তার পায়ের উপর ও কোমরের উপর চাবুক মারেন। তখন হযরত নাফে’ (রাঃ) তাঁর সামনে আল্লাহর বিদান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে’- আল্লাহ তা’আলার এই উক্তিটি পাঠ করেন। হ্যরত ইবনে উমার (রাঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “তোমার মতে কি আমি এই দাসীর উপর কোন দয়া দেখিয়েছি? জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেননি এবং একথাও বলেননি যে, তার মাথার উপর চাবুক মারা হবে। আমি তাকে সাধ্যমত চাবুক মেরেছি এবং পূর্ণ শাস্তি দিয়েছি।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো তবে তোমাদের উচিত আল্লাহর নির্দেশ পুরোমাত্রায় পালন করা এবং ব্যভিচারীদের উপর হদ জারী করার ব্যাপারে টালবাহানা না করা। তাদেরকে কঠিনভাবে প্রহার করতে হবে, কিন্তু এই প্রহার এমন হওয়া উচিত নয় যাতে অস্থি ভেঙ্গে যায়। এ কারণে যে, যেন তারা পাপকার্য থেকে বিরত তাকে এবং তাদের এই শাস্তি দেখে অন্যেরাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। দয়া খারাপ জিনিস নয়। হাদীসে এসেছে যে, একটি লোক বলেঃ “আমি বকরী যবেহ করি, কিন্তু আমার মনে ব্যথা আসে এবং মমতা লাগে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “এতেও তুমি পুণ্য লাভ করবে।”

আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে যাতে সবারই অন্তরে ভয় সৃষ্টি হয় এবং ব্যভিচারী লাঞ্ছিতও হয়। যাতে অন্য লোকেরাও এ কাজ থেকে বিরত থাকে। প্রকাশ্যভাবে শাস্তি দিতে হবে। গোপনে মারধর করে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। একটি লোক এবং তদপেক্ষা বেশী লোক হলেই একটি দল হয়ে যাবে এবং আয়াতের উপর আমল হয়ে যাবে। এটার উপর ভিত্তি করেই ইমাম মুহাম্মাদ (রঃ)-এর মাযহাব এই যে, একটি লোকও একটি জামাআত। আতা’ (রঃ)-এর উক্তি এই যে, দু’জন হতে হবে। সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, চারজন হওয়া চাই। যুহরী (রঃ)-এর মতে তিন বা তদপেক্ষা বেশী হতে হবে। ইমাম মালিক (রঃ) বলেন যে, চার বা তার চেয়ে বেশী হওয়া উচিত। কেননা, ব্যভিচারে চারজনের কমে সাক্ষী হয় না। চার অথবা তদপেক্ষা বেশী সাক্ষী হতে হবে। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এরও মাযহাব এটাই। রাবীআ (রঃ) বলেন যে, পাঁচজন হওয়া চাই। হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর মতে দশজন হওয়া উচিত। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, একটি দল হতে হবে যাতে উপদেশ, শিক্ষা ও শাস্তি হয়। নযর ইবনে আলকামা (রঃ) এই জামাআতের প্রয়োজনীয়তার কারণ এই বর্ণনা করেছেন যে, যাদের উপর হদ জারী করা হচ্ছে তাদের জন্যে এরা আল্লাহর নিকট করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
www.motaher21.net

اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#967)
[ سُوۡرَۃٌوَفَرَضْنَاهَا
A surah which made obligatory.]
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 01-02
www.motaher21.net

24:1

سُوۡرَۃٌ اَنۡزَلۡنٰہَا وَ فَرَضۡنٰہَا وَ اَنۡزَلۡنَا فِیۡہَاۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لَّعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۱﴾

[This is] a surah which We have sent down and made [that within it] obligatory and revealed therein verses of clear evidence that you might remember.

 

The Importance of Surat An-Nur

Allah says:

سُورَةٌ أَنزَلْنَاهَا

A Surah which We have sent down,

Here Allah is pointing out the high esteem in which He holds this Surah, which is not to say that other Surahs are not important.

وَفَرَضْنَاهَا

and which We have enjoined,

Mujahid and Qatadah said,

“This means:We have explained what is lawful and unlawful, commands and prohibitions, and the prescribed punishments.”

Al-Bukhari said, “Those who read it:Faradnaha, say that it means:

“We have enjoined them upon you and those who come after you.”

وَأَنزَلْنَا فِيهَا ايَاتٍ بَيِّنَاتٍ

and in it We have revealed manifest Ayat,

means, clearly explained,

لَّعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

that you may remember.
The Explanation of the Prescribed Punishment for Zina (Illicit Sex)

Then Allah says

24:2

اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِہِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡہَدۡ عَذَابَہُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲﴾

The [unmarried] woman or [unmarried] man found guilty of sexual intercourse – lash each one of them with a hundred lashes, and do not be taken by pity for them in the religion of Allah, if you should believe in Allah and the Last Day. And let a group of the believers witness their punishment.

 

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِيَةَ جَلْدَةٍ

The Zaniyah and the Zani, flog each of them with a hundred stripes.

This honorable Ayah contains the ruling on the law of retaliation for the person who commits illegal sex, and details of the punishment.

Such a person will either be unmarried, meaning that he has never been married, or he will be married, meaning that he has had intercourse within the bounds of a lawful marriage, and he is free, adult and of sound mind.

As for the virgin who is unwedded, the prescribed punishment is one hundred stripes, as stated in this Ayah.

In addition to this he is to be banished from his homeland for one year, as was recorded in the Two Sahihs from Abu Hurayrah and Zayd bin Khalid Al-Juhani in the Hadith about the two Bedouins who came to the Messenger of Allah.

One of them said, “O Messenger of Allah, this son of mine was employed by this man, and committed Zina with his wife. I paid a ransom with him on behalf of my son one hundred sheep and a slave-girl, but when I asked the people of knowledge, they said that my son should be given one hundred stripes and banished for a year, and that this man’s wife should be stoned to death.”

The Messenger of Allah said:

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَااَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللهِ تَعَالى

الْوَلِيدَةُ وَالْغَنَمُ رَدٌّ عَلَيْكَ وَعَلى ابْنِكَ جَلْدُ مِايَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ

وَاغْدُ يَا أُنَيْسُ لِرَجُلٍ مِنْ أَسْلَمَ إِلَى امْرَأَةِ هذَا فَإِنِ اعْتَرَفَتْ فَارْجُمْهَا

By the One in Whose Hand is my soul, I will judge between you both according to the Book of Allah.

Take back the slave-girl and sheep, and your son is to be given one hundred stripes and banished for one year.

O Unays — he said to a man from the tribe of Aslam — go to this man’s wife, and if she confesses, then stone her to death.

Unays went to her and she confessed, so he stoned her to death.

This indicates that if the person who is guilty of illegal sex is a virgin and unmarried, he should be banished in addition to being given one hundred stripes.

But if married, meaning he has had intercourse within the bounds of lawful marriage, and he is free, adult and of sound mind, then he should be stoned to death.

Imam Malik recorded that Umar, may Allah be pleased with him, stood up and praised and glorified Allah, then he said;

“O people! Allah sent Muhammad with the truth, and revealed to him the Book. One of the things that was revealed to him was the Ayah of stoning to death, which we have recited and understood. The Messenger of Allah carried out the punishment of stoning and after him we did so, but I am afraid that as time goes by, some will say that they did not find the Ayah of stoning in the Book of Allah, and they will go astray because they abandoned one of the obligations revealed by Allah. Stoning is something that is prescribed in the Book of Allah for the person — man or woman — who commits illegal sex, if he or she is married, if decisive evidence is produced, or if pregnancy results from that, or if they confess to it.”

It was also recorded in the Two Sahihs in the lengthy Hadith of Malik, from which we have quoted briefly only the portion that is relevant to the current discussion.
Do not feel pity for Them when carrying out the Prescribed Punishment

Then Allah says:

وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ

Let not pity withhold you in their case, in a punishment prescribed by Allah,

Meaning, with a ruling prescribed by Allah.

So the meaning of the Ayah is:

“Do not feel too sorry for them where the laws of Allah are established.”

This does not mean that we should not naturally feel pity when carrying out the punishment. What is prohibited here is the kind of pity that may make the judge ignore the punishment altogether. This is what is not permitted for the judge.

Mujahid said,
وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ
(Let not pity withhold you in their case, in a punishment prescribed by Allah),

“If the matter is taken to the ruling authority, the punishment has to be carried out and cannot be stopped.”

This was also narrated from Sa`id bin Jubayr and Ata’ bin Abi Rabah.

It was recorded in a Hadith:

تَعَافَوُا الْحُدُودَ فِيمَا بَيْنَكُمْ فَمَا بَلَغَنِي مِنْ حَدَ فَقَدْ وَجَبَ

Compromise with the matter of prescribed punishment mutually sorting it out among yourselves, for once a matter where the prescribed punishment is required reaches me, I am obliged to carry it out.

Allah’s saying:

إِن كُنتُمْ تُوْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الاْخِرِ

if you believe in Allah and the Last Day.

means, then do that, carry out the punishments on those who commit illegal sex, and strike them hard without causing any wound, so that he and others like him will be deterred by the terror of that.

In Al-Musnad, it was recorded that one of the Companions said,

“O Messenger of Allah, when I slaughter a sheep I feel pity for it.”

He said,

وَلَكَ فِي ذلِكَ أَجْرٌ

You be rewarded for that.
Carry out the Prescribed Punishment in Public

Then Allah says:

وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَايِفَةٌ مِّنَ الْمُوْمِنِينَ

And let a party of the believers witness their punishment.

This is more humiliating for the people who are guilty of illegal sex, if they are flogged in front of the people. This is because it is more effective as a deterrent and it conveys the sense of scandal and rebuke.

Al-Hasan Al-Basri said,
وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَايِفَةٌ مِّنَ الْمُوْمِنِينَ
(And let a party of the believers witness their punishment).

“Publicly.”

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply