أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬৮)
[الزَّانِي لَا يَنكِحُ إلاَّ زَانِيَةً
ব্যভিচারী পুরুষ-ব্যভিচারীণীকে ছাড়া বিয়ে করে না।]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
০৩- নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:০৩
اَلزَّانِیۡ لَا یَنۡکِحُ اِلَّا زَانِیَۃً اَوۡ مُشۡرِکَۃً ۫ وَّ الزَّانِیَۃُ لَا یَنۡکِحُہَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوۡ مُشۡرِکٌ ۚ وَ حُرِّمَ ذٰلِکَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۳﴾
ব্যভিচারী পুরুষ-ব্যভিচারীণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করে না এবং ব্যভিচারিণী নারী, তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া কেউ বিয়ে করে না , আর মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ব্যভিচারী নারী পুরুষের সামাজিক অবস্থান : এরপর এই আচরণের কদর্যতা এবং এই ন্যক্কারজনক কাজের প্রতি আরাে অধিক ঘৃণা সৃষ্টির জন্যে নীচের আয়াতটিতে কিছু মানসিক শাস্তির কথা বলা হয়েছে যেন মুসলিম জামায়াতের সদস্যদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা আসতে না পারে। ‘যেনাকারী কোনাে পুরুষ কোনাে যেনাকারী মেয়েকে বিয়ে করবে, অথবা বিয়ে করবে কোনাে মােশরেক মেয়েকে, অনুরূপভাবে যেনাকারী (কোনো) মেয়েকে কোনাে যেনাকারী পুরুষ বা কোনাে মােশরেকই বিয়ে করবে। মােমেনদের জন্যে এসব (মেয়েদের) বিয়ে করাকে হারাম। করা হয়েছে।’ এতে বুঝা যাচ্ছে, মােমেন থাকা অবস্থায় এসব কদর্য কাজে কেউ লিপ্ত হতে পারে না। আল্লাহর এই নিষিদ্ধ কাজে যখনই কেউ লিপ্ত হয়ে যায় তখন সে ঈমান ও ঈমানের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে যায়। আর এই ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে কোনাে মােমেন ব্যক্তি তাকে এই জন্যে বিয়ে করতে পছন্দ করবে না যেহেতু সে ঘৃণ্য কাজের দরুণ সে ঈমান থেকে দূরে সরে গেছে, কেননা এমন সম্বন্ধকে সে ঘৃণা করবে এবং তার মনটা উক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সরে আসতে চাইবে। ইমাম আহমাদ তাে একজন যেনার অপরাধে অপরাধী ব্যক্তির সাথে একজন পবিত্র ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনকে হারাম বলেছেন, তবে তাওবা করলে স্বতন্ত্র কথা। যাই হােক আলােচ্য আয়াতটিতে বুঝা যাচ্ছে যে কোনাে মােমেন ব্যক্তি প্রকৃতিগতভাবে কোনাে যেনাকারিনীকে বিয়ে করা পছন্দ করে না। আর কোনাে মােমেন নারীও স্বভাবতই কোনাে যেনাকার ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া পছন্দ করবে না (এখানে একথা পরিষ্কার হওয়া দরকার যে সর্বান্তকরণে তাওবা করলে পূর্বেকার সকল পাপ মুছে যায় এবং আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তিতে সে নবজাত শিশুর মতাে নিস্পাপ হয়ে নতুন জীবন শুরু করে। সুতরাং এরপর পাক ছাফ থাকলে পূর্বেকার অপরাধের জন্যে দায়ী করা তাে দূরের কথা পূর্বের কোনাে কথা উল্লেখও জায়েয নয়)। আলােচ্য আয়াতে ‘হুররিমা’ শব্দটিতে যদিও হারাম করে দেয়া হয়েছে অর্থ বুঝায়, কিন্তু ভাষাবিদদের মতে বাক্য বিন্যাসে একথার তাৎপর্য বুঝায় পবিত্র ব্যক্তি উক্ত অপরাধের কারণে (অপবিত্র বিধায়) যেনার অপরাধে অপরাধীদের থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভীষণভাবে দূরত্ব বজিয়ে রাখতে চায়। বলা হয়েছে, আর হারাম করে দেয়া হয়েছে সেটাকে মােমেনদের জন্যে… এভাবে এই ঘৃণ্য অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের থেকে পরিষ্কার ও পবিত্র মুসলিম জামায়াতের সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যা ইতিপূর্বে তাদেরকে ঈমানের বন্ধনে বেঁধে রেখেছিলাে। এ আয়াতটির শানে নুযুল জানাতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, মারসাদ ইবনে আবি মারসাদ নামক এক ব্যক্তি মক্কা থেকে দুর্বল ও পথ না জানা মােমনদেরকে (মক্কায় যে সকল দুর্বল বা পথ-না-জানা মােমেন মােশরেকদের হাতে নযরবন্দী ছিলেন, উসারা শব্দটি দ্বারা সম্ভবত তাদেরকই বুঝানাে হয়েছে- সম্পাদক) মদীনায় পৌছে দেয়ার খেদমত আনজাম দিতাে। ইনাক নামক একজন চরিত্রহীনা মহিলা ছিলাে সে লােকটির বান্ধবী। এ লোকটি কোরায়শদের হাতে আবদ্ধ এক ব্যক্তিকে মক্কায় পৌছে দেবে বলে কথা দিয়েছিলাে। লােকটি (মারসাদ) বলছে, আমি এক চাঁদনী রাতে রওয়ানা হয়ে এসে একটি প্রাচীরের কাছে পৌছুলাম। এ সময় হঠাৎ করে ইনাক সেখানে হাযির হলাে। দেখলাম প্রাচীরের পাদদেশে একটি তৃণভূমি। মহিলাটি একেবারে কাছাকাছি যখন এসে গেলাে তখন আমাকে চিনে ফেললাে, বললাে, কে? মারসাদ? আমি বললাম, হাঁ, আমি মারসাদ! তখন সে আমন্ত্রণ জানিয়ে বললাে, স্বাগত বন্ধু, এসাে, এসাে না আমরা এক সাথে রাতটি কাটাই। মারসাদ বললেন, শােননা ইনাক, আল্লাহ রব্বুল আলামীন ব্যাভিচারকে হারাম ঘােষণা করেছেন। তখন মহিলাটি আমার ওপর ক্ষেপে গেলাে এবং আমাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে চীৎকার করে মক্কাবাসীদের ডাকাডাকি শুরু করলো। বলতে লাগলাে, কে কোথায় আছে দেখে যাও, এ লােকটা তোমাদের আশ্রিতদেরকে পার করে দিচ্ছে, এর ফলে আট জন ব্যক্তি আমার দিকে ধেয়ে এলাে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দেয়াল ঘেরা বাগিচার মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখলাম একটি গর্ত বা গুহা, জান বাঁচানাের জন্যে তার মধ্যেই আমি ঢুকে পড়লাম। লােকগুলাে আমার পিছু পিছু এলাে এবং আমাকে খুঁজে না পেয়ে সে গর্তের মুখে এসে একের পর এক পেশাব করলাে। কি করবাে, পেশাব আমার ওপর পড়লেও আমি চুপ করে পড়ে রইলাম। আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখার ব্যাপারে ওদেরকে অন্ধ করে দিলেন। যাই হােক আমাকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে লােকগুলাে যখন চলে গেলাে তখন ওয়াদা অনুযায়ী সে লােকটিকে নিয়ে আমি মদীনার পথে রওয়ানা হয়ে গেলাম। ইতিমধ্যে এযখার নামক এক প্রকার ঘাসে ভরা এক প্রান্তরে আমরা পৌছুলাম ও সেখানে গিয়ে আমার উটটিকে আমি ছেড়ে দিলাম। উটটি তৃপ্তির সাথে ঘাস পাতা খেয়ে নেয়ার পর পুনরায় সফর শুরু করলাম, অবশেষে মদীনায় নবী(স.)-এর কাছে পৌছে গেলাম। অতপর সমন্ত ঘটনা জানিয়ে তাকে আমি পরপর দু’বার জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইনাককে আমি বিয়ে করে নেই? রসূল(স.) নীরব হয়ে রইলেন, কোনাে জওয়াবই দিলেন না, অবশেষে নাযিল হলাে, আয যানী… যেনাকারী যেনাকারিনীকে ছাড়া বিয়ে করবে… মােমেনদের জন্যে তা হারাম তখন রাসূল(স.) বললেন, হে মারসাদ, যেনাকারী যেনাকারিণী বা মােশরেক নারীকেই বিয়ে করবে। সুতরাং, তুমি ওকে বিয়ে করাে না।(এ হাদীসটি রেওয়ায়াত করেছেন আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসাঈ) সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এ রেওয়ায়াতটি তাওবা না করা পর্যন্ত কোনাে মােমেনের জন্যে ব্যাভিচারকারিনীকে বিয়ে না করার পক্ষেই রায় দিয়েছে। অনুরূপভাবে কোনাে মােমেন নারীরও কোনাে ব্যাভিচারীর সাথে (তাওবা না করা পর্যন্ত) বিয়ে হতে পারে না। ইমাম আহমদ এই হাদীসটিকেই দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তিনি অন্যদের সাথে দ্বিমত পােষণ করে এ সকল অসম বিবাহকে হারাম ঘোষণা করেছেন। অবশ্য একেবারে হারাম মনে করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। (বিস্তারিত বিবরণের জন্যে ফেকার কিতাবসমূহ দেখুন) তবে সর্বাবস্থায় পাপাচারটি এমন জঘন্য কাজ যে, এতে লিপ্ত অপরাধী ব্যক্তি মুসলিম জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হতে বাধ্য এবং ওদের সাথে মুসলিম জামায়াতের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতেই হবে, আর এটা চাবুক মারা বা তার থেকেও কঠিন একটি সামাজিক শাস্তি! দেখুন, ইসলাম এই জঘন্য অপরাধের জন্যে এই কঠিন চূড়ান্ত ও অকাট্য শাস্তি দানের ব্যবস্থা তখনই করেছে যখন মানুষের স্বাভাবিক প্রয়ােজন মেটানাের পথকে ইসলাম সুগম ও সহজ করেছে। ইসলাম মানুষের প্রকৃতিক প্রয়ােজন ও স্বাভাবিক ঝোঁক প্রবণতাকে অস্বীকার করেনি, বরং মানব জীবনের প্রসার ও শান্তি সমৃদ্ধির জন্যে নারী পুরুষের সম্পর্ক ও মিলনকে পবিত্র বলে জানিয়েছে। যিনি তাদের মধ্যে সেসব প্রবণতা ও শক্তি দিয়েছেন, সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের জন্যে সুনির্দিষ্ট এক বিধান দিয়েছেন। তার দেয়া সেই সীমারেখার মধ্যে থেকে তারা পারস্পরিক যে সম্পর্ক সম্বন্ধ স্থাপন করবে, তারই মধ্যে তাদের শান্তি সমৃদ্ধি তৃপ্তি ও পারস্পরিক দরদ মহব্বত বিরাজ করছে। এজন্যে মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা দমন করা নয়, বরং প্রয়ােজন সেগুলােকে নিয়ন্ত্রিত করাই ইসলামের কাম্য। লাগামহীন অবস্থায় জীবন যাপন সম্ভব নয়, বরং সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের সম্বন্ধকে সুসংবদ্ধ করা জরুরী। কারাে হক নষ্ট না করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সাথে আল্লাহর বন্দেগী করা- তাঁরই হুকুম মতাে এবং তারই বিধান মতাে সব কিছু ভােগ ব্যবহার করাই ইসলামের কামনা। একমাত্র এভাবেই শান্তি ও সভ্যতার সুদৃঢ় ইমারত গড়ে উঠবে। *অবাধ যৌনতা প্রতিরােধ করার ব্যাপারে ইসলামের নীতি : ইসলাম সেই ঘৃণ্য পশুত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেছে যা শরীরে শরীরে পার্থক্য করে না অথবা যা পরিবারের সংহতি রক্ষা করতে চায় না, পারিবারিক বন্ধনসমূহ গড়ে তুলতে চায় না। এখানে ইসলাম শুধুমাত্র মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করেই থেমে যায় না! আধুনিক পৃথিবীর উন্নয়নশীল মানুষের অনুকরণে মানুষের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না। ইসলাম চায় এমন সমাজ ব্যবস্থা গড়তে, যার মধ্যে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে অন্তর ও আত্মার সম্পর্কও গড়ে উঠবে, দুটি জীবনের সম্মিলনে একটি যৌথ জীবন গড়ে উঠবে, যৌথ আশা-আকাংখা, ব্যথা-বেদনা পরস্পর সহমর্মিতা এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের স্বপ্নসাধের মধ্য দিয়ে এক উন্নত ভবিষ্যত গড়ার কাজ চলবে, যার প্রভাব পড়বে তাদের সন্তানদের ওপর। তারা স্বপ্ন দেখবে নতুন পৃথিবী গড়ার এবং এসব পরিকল্পনা তাদের যৌথ সংসারের আবেষ্টনীতে রচিত হবে, এমন সংসারে সন্তানদের সামনে তাদের উচ্চাভিলাষী এমন পিতা মাতা থাকবে যারা একে অপরকে কখনাে ছাড়তে পারে না। এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই ইসলাম ব্যাভিচারের দন্ড কে এতাে কঠিন বানিয়েছে, কারণ তার মধ্যে কোনাে মানবতা বােধ নেই, নেই কোনাে সৌহার্দ সম্প্রীতি, নেই কোনাে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার লক্ষ্য, বরং আছে পশুর হিংস্রতা, দানবীয় তান্ডব, হিংসার দাবানল ও হৃদয়হীনতার গ্লানি যা মানুষের জীবন লক্ষ্যকে মাটিতে মিশিয়ে দেয় এবং গােটা মানব সমাজকে হিংস্র পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দেয়। এই মানব সমাজে তথাকথিত উন্নত মানুষের কাছে থাকে না নারীতে নারীতে। কোনাে পার্থক্য, থাকে না পুরুষে পুরুষে কোনাে ব্যবধান। সেখানে সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে তারা ক্ষণিকের জন্যে শুধু রক্ত-মাংসেরই ক্ষুধা মেটায়। তারপর তারা পরস্পর থেকে পরক্ষণেই যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই সাময়িক স্বাদ গ্রহণ শেষে জীবনের মধ্যে ভালাে কোনাে কিছুর ভিত্তি তারা দেখতে পায় না, না পৃথিবীতে তারা রেখে যায় স্থায়ী কোনাে নীড়, যা পরবর্তীদের জন্যে কোনাে আশ্রয়স্থানে পরিণত হতে পারে। জীবনের কোনাে পরিণতিও তাদের থাকে না, আর এটা সে তাদের আকাংখার বিষয় বলেও তারা মনে করে না। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত এই মিলনের মাধ্যমে সত্যিকারে কোনাে হৃদয়াবেগ বা আন্তরিক কোনাে প্রেম প্রীতিও গড়ে ওঠে না, কেননা প্রেমাস্পদের সাথে স্থায়ীভাবে থাকার কামনা বাসনাই তাে পরস্পরের গভীর ভালবাসা ও হৃদয়াবেগ সৃষ্টি করে, যার কারণে তাদের মানষিক অস্থিরতা দূর হয় এবং একাকীত্বের বিরহ নিবারণ হয়। এই বন্ধনকেই অনেকে বলে প্রেম প্রণয়, যা নিয়ে রচিত কত গান কবিতা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণবিহীন এই প্রেম প্রীতি পশুদের মতাে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা আনে, কারণ প্রেমের মাঝে বিনােদনের পােষাক পরে এসব পশুত্ব ও পাশব মনোবৃত্তি সমাজকে গ্রাস করে ফেলে। ইসলাম মানবতা প্রতিষ্ঠা ও তা বৃদ্ধির একমাত্র পূর্ণাংগ ব্যবস্থা। এজন্যে এ ব্যবস্থা মানুষের প্রকৃতিগত যে কোনাে প্রয়ােজন মেটানাের নিশ্চয়তা দিয়েছে এবং কোনাে স্বাভাবিক চাহিদাকেই অস্বীকার করেনি- একে নিয়ন্ত্রণ করেছে মাত্র এবং এসব চাহিদাকে পবিত্র বলে ঘােষণা করেছে। একে পাশব বৃত্তির উর্ধে উন্নীত করেছে; এমনকি যেসব স্থানের চতুর্দিকে বহু ব্যক্তি মনস্তাত্তিক শান্তি ও সামাজিক শৃংখলার ওজুহাতে ঘােরাফেরা করে সেসব স্থানগুলােকেও ইসলামের সম্মােহনী ব্যবস্থা পরিবর্তন করে তাকে মর্যাদার স্তরে টেনে তুলেছে। ব্যাভিচার, বিশেষ করে পতিতাবৃত্তি মানুষের স্বভাবগত পারস্পরিক পবিত্র আকর্ষণ থেকে এবং তার আত্মার স্বাভাবিক গতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, সরিয়ে দেয় তাকে তার উঁচু আশা-আকাংখা থেকে, সরিয়ে দেয় তাকে সর্বপ্রকার নিয়ম-শৃংখলা সামাজিক মর্যাদাবােধ গুণাবলী থেকে, যা সুদীর্ঘ মানবেতিহাসে বরাবরই সমাদৃত হয়ে এসেছে। অপরদিকে এর মাধ্যমে তার মধ্যে জীব জানােয়ারের মতাে উলংগপনা ও নির্লজ্জতা জন্ম দিয়েছে বরং পশুদের থেকেও তারা নির্লজ্জতার দিকে নীচে নেমে গেছে। পশু পাখির মধ্যেও অনেকগুলাে এমন আছে, যারা জোড়া জোড়া থাকা শুধু যে পছন্দ করে- তাই নয়, বরং একে অপরকে কখনাে ছেড়ে যায় না, দেখে মনে হয় তারা যেন এক সংগঠিত বিবাহিত জীবন যাপন করছে। ব্যভিচারের কারণে দায়িত্বমুক্ত এক জীবন গড়ে ওঠে, সম্পর্ক স্থাপিত হয় সাময়িক ইন্দ্রিয়-ক্ষুধা মেটাবার প্রয়ােজনে, সমাজের অনেক জায়গায় পতিতাদের অস্তিত্ব স্বীকৃতাবস্থায় কোনাে সমাজেই তাদের স্বীকৃত মর্যাদা নেই। সুস্থ অবস্থায় কেউই তাদের মর্যাদা দেয় না, তাদেরকে ব্যবহার করা হয় শুধু পাশবিক প্রয়ােজন মেটানাের জন্যে। যেসব প্রাকৃতিক কারণে মানুষের মধ্যে এসব প্রবণতা গড়ে ওঠেছে এবং যে সব বস্তুভিত্তিক প্রয়ােজন মেটানাের জন্যে আধুনিক সমাজে এবং প্রাচীনকালের অনেক সমাজে এসব উচ্ছৃংখলতাকে লালন করা হয়। ইসলাম এগুলাের ব্যাপারে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ দিয়ে তাকে দমন করেনি, বরং এক সুশৃংখল নিয়মের অধীনে সেগুলাে পূরণের ব্যবস্থা করেছে, যাতে মানুষে মানুষে সৌহার্দ সম্প্রীতি গড়ে ওঠে, একের প্রতি অপর মানুষ দরদ অনুভূতি অনুভব করে এবং দুর্দিনে অসুস্থায় একে অপরকে ছেড়ে না যায়। মানুষের স্বাভাবিক প্রয়ােজনকে ইসলাম মােটেই অস্বীকার করে না, কোনাে কৃত্রিম ব্যবস্থার আশ্রয়ও নেয় না, ইসলাম এগুলাে দমনও করতে চায় না এসবকে গলাটিপে হত্যাও করে দিতে চায় না এবং আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত মানুষের প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণকে ইসলাম অবহেলাও করে না, বরং ইসলাম এটাকে মানুষের অন্যতম বড় প্রয়োজন বলে স্বীকৃতি দিয়ে তার জন্যে প্রয়ােজনীয় এমন সব বিধান রচনা করে দেয় যে, তার অনুসরণেই মানুষ উন্নত জীবনের মর্যাদা খুঁজে পায়। মানুষের জীবনের অপরিহার্য এ বিষয়টিকে সুবিন্যস্ত করার জন্যে ইসলাম এ কাজকে রাষ্ট্রের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে ঘােষণা করে। *ইসলামী দন্ডবিধির উদ্দেশ্য ও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় : এলোমেলো ও লাগামহীন ইন্দ্রিয় চর্চার মাধ্যমে মানুষ যে ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে যেতে শুরু করেছিলাে সেখান থেকে ইসলামই তাকে টেনে তুলে সভ্য ও শান্তিপূর্ণ এক সমাজে পরিণত করলাে, আর যেনার অপরাধ দমনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে নারী পুরুষের মধ্যে সংহতি ও শান্তি আনলাে, তাদেরকে সাময়িক শয্যা সংগী না বানিয়ে নিত্যদিনের সাথী বানালাে, নারীকে অসহায় অংকশায়িনী অবস্থা থেকে উন্নীত করে নিরাপদ গৃহ বেষ্টনীর দায়িত্বশীল প্রহরী ও শান্তি সম্প্রীতির ধারক বাহক বানিয়ে দিলাে। এভাবে সমাজের অপরাধ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করলাে, সন্তানের অনিশ্চিত বংশ পরিচয়ের গ্লানি থেকে রক্ষা করে তাকে মর্যাদাশীল নাগরিক হওয়ার সুযােগ করে দিলাে, মানুষে মানুষে ঘৃণা ছড়ানাে বন্ধ করলাে এবং নিরাপদ বাড়ীগুলােতে বিরাজমান শান্তির হুমকিকে দূরীভূত করে সেখানে পারস্পরিক আস্থা ও মহব্বতের পরিমন্ডল গড়ে তুললাে… বলতে গেলে এসব কিছুরই মূলে রয়েছে এই কঠিন শাস্তির অপূর্ব অবদান, যা আপাত দৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হলেও তা সমাজের ধ্বংসস্তুপে জীবনের সজীবতা বয়ে আনে। এ মহান খেদমত আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান যে বিষয়টি কাজ করেছে তা হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিরাজমান জৈবিক চাহিদাকে মেটানাের সহজ সরল পথ প্রদর্শন করা এবং নারী-পুরুষের সম্মিলনের জন্যে শৃংখলাপূর্ণ নিয়ম বিধান করা এবং স্থায়ীভাবে পারিবারিক জীবনের বুনিয়াদ গড়ে তােলার লক্ষ্যে স্বামী স্ত্রীর জন্যে এমন কিছু মূলনীতি স্থাপন করা যাতে করে স্থায়ী ও প্রলন্বিত শান্তির জীবন গড়ে ওঠে… অন্তরের মধ্যে অবশ্যই এ বিশ্বাসকে লালন করতে হবে যে মানুষের প্রয়ােজন মেটানোর এই ব্যবস্থায় সকল সমস্যার প্রথম এবং আসল সমাধান। অন্য যতাে সব ব্যবস্থা ও সতর্কতা সবই হচ্ছে এই ব্যবস্থার অধীন। আমাদের এও বুঝতে হবে যে, ইসলাম এই কঠিন শাস্তি প্রয়ােগের পূর্বে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করেছে যেখানে সহজ সরলভাবে মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রয়ােজন মেটানাের নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকবে, যার কারণে বাঁকা পথ ধরার সত্যিকারে কোনাে প্রয়ােজনই তাদের তাদের থাকে না। তারপর শাস্তি দানের পূর্বে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হতে হবে এবং যথাযােগ্য সাক্ষ্যের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত হতে হবে। অবশ্যই ইসলাম সারাবিশ্বের সকল মানুষের জন্যে এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা শুধু যে কঠিন শাস্তি-বিধির ওপর দাঁড়িয়ে আছে- কিছুতেই তা নয়, বরং এ ব্যবস্থার মূলে রয়েছে যে আসল বিষয়, তা হচ্ছে মানুষের জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্যে প্রয়ােজনীয় সব কিছুর প্রতি প্রচুর বরাদ্দ দান। তার যা কিছু প্রয়ােজন তা পাওয়ার সকল পথ তার জন্যে সুগম করে দেয়ার পরও যদি সে সীমালংঘন করে, দুর্গন্ধময় ও ক্লেদাক্ত ময়দানে যথেচ্ছ ভ্রমণে যদি তারপরও সে অভিলাষী হয়, একমাত্র তখনই তার জন্যে এই চরম ও চূড়ান্ত শাস্তি থাকবে। তবে হাঁ, যদি এমন কোনাে বাধ্যবাধকতা দেখা দেয় যখন সে আল্লাহর দেয়া সীমা লংঘন করার উদ্দেশ্যে নয়- বরং বড়ই ঠেকায় পড়ে কোনাে কর্দমাক্ত যমীনে অথবা কোনাে মরু মরীচিকায় পা বাড়িয়ে দিয়েছে- সে অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আলােচ্য এ সূরার মধ্যে মানুষকে অন্যায় থেকে বাঁচানাের জন্যে বহু উপায়ের উদাহরণ দেয়া হয়েছে যার বর্ণনা যথাস্থানে ইনশাআল্লাহ পাওয়া যাবে। অতপর এসব কিছুর পরও যদি কোনাে অপরাধজনক কাজ সংঘটিত হয়ে যায়, অর্থাৎ সব রকমের সাবধানতা অবলম্বন করা সত্তেও কিংবা সীমালংঘন করার উদ্দেশ্যে নয়, পরিস্থিতি বাধ্য করার কারণে যদি কোন অঘটন ঘটে যায়, সে অবস্থাতে তাদের থেকে হদ জারি করা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং সে কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচানাের জন্যে কোনাে পথ থাকলে তা প্রয়ােগের চেষ্টা করতে হবে, যেমন রসূল(স.) বলেছেন, মুসলমানদের থেকে শাস্তির ব্যবস্থাসমূহকে যথাসাধ্য দূরে রাখাে। বাঁচার কোন পথ বের করতে পারলে ওদের জন্যে পথ করে দাও। শােনাে, কোনাে নেতা ভুল করে যদি কাউকে ক্ষমা করে, সেটা অবশ্যই ভুল করে শাস্তি দেয়া থেকে উত্তম।(হাদীসটি হযরত আয়েশা(রা.)-এর বরাত দিয়ে তিরমিযী শরীফে আনা হয়েছে) এই কারণেই তাে চারজন বিশ্বস্ত চাক্ষুষ সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে ‘যারা নিজেদের চোখে বাস্তব ঘটনা সংঘটিত হতে দেখেছে বলে সাক্ষ্য দেবে’- শাস্তির জন্যে এ শর্তটি রাখা হয়েছে, অথবা এমনভাবে কেউ নিজে অপরাধ স্বীকার করবে যে তারপর সে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবে না, তবেই তার ওপর এ শাস্তি আরােপিত হবে। ধারণা করা হয় যে, এ শাস্তি হচ্ছে কাল্পনিক, এজন্যে এটার প্রয়ােগ মােটেই গ্রহণযােগ্য নয়। ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি যে, এ নির্দেশের ভিত্তি শাস্তি নয়, অর্থাৎ শাস্তি দান করাই এ আইনের উদ্দেশ্য নয়, বরং মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বাঁচানােই হচ্ছে এ আইনের লক্ষ্য। এজন্যে যেসব কারণে এ অপরাধ সংঘটিত হয় ইসলাম প্রথমত সেগুলােকে বন্ধ করতে চায়, চায় মানুষকে সভ্য-ভদ্র ও বিবেচক বানাতে, তাদের বিবেককে পরিচ্ছন্ন করতে এবং তাদের মধ্যে আল্লাহভীতির এমন প্রেরণা সৃষ্টি করতে, যা তাদের অন্তরকে নিয়ন্ত্রিত করবে। এভাবে কোনাে মােমেন ব্যক্তি এমন অপরাধ করা থেকে দূরে থাকবে, যা এসব অপরাধী ও মুসলিম জামায়াতের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় এবং মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ককে নষ্ট করে। ইসলাম শাস্তি দেয় তাদেরকে যারা বাধ্য হয়ে নয় বরং সখ মেটানাের জন্যে অপরাধ করে- এতে সমাজের ও বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর কি ক্ষতি হয় তার কোনাে পরওয়াই তাদের থাকে না যার কারণে এতােগুলাের সাক্ষীর পক্ষে স্বচক্ষে সে অপরাধ দেখার সুযােগ সৃষ্ট হয়ে যায়। অথবা ইসলাম শাস্তি দেয় এমন খাঁটি ঈমানদার ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরকে যারা আত্মশুদ্ধির জন্যে বা বিশেষ অবস্থার দরুণ অপরাধ করার পর একান্ত আত্ম শ্লাঘায় ভুগতে থাকে এবং আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে দুনিয়াতেই শাস্তি চেয়ে নেয়। তাদের কাছে আখেরাতের শাস্তির চাইতে দুনিয়ার শাস্তি অত্যন্ত তুচ্ছ মনে হয়, অর্থাৎ তারা আখেরাতের ওপর এত দৃঢ় বিশ্বাসী যে, অপরাধ করার পর আখেরাতের শাস্তি যেন নিজেদের চোখে প্রত্যক্ষ করতে থাকে এবং এজন্যে সে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী শাস্তি নিজেরাই চেয়ে নেয়। এমনই এক অতি বিরল নযীর স্থাপিত হয়েছে সত্যিকারে আল্লাহর জান্নাতী বান্দা মায়েয ও গামেদী বংশীয়া তার সংগিনীর দ্বারা, তারা প্রত্যেকেই নবী(স.)-এর কাছে পৃথক পৃথকভাবে এসে হদ জারি করে পবিত্র করে দেয়ার জন্যে আবেদন জানিয়েছেন। চিন্তা করে দেখুন, কতাে গভীর ছিলাে তাদের ঈমান, কত তীব্রভাবে তারা আখেরাতের আযাবকে ভয় করেছেন। এই অপরাধ করার পর তাওবা করলে ক্ষমার দরজা খােলা রয়েছে একথা তারা জানতেন না তা নয়, তবু, তাদের মনে হয়েছে, মালিকের হুকুম অমান্য করা হয়েছে, শাস্তি চেয়ে নিলে হয়তাে তিনি খুশী হয়ে যাবেন, হয়তাে আদালতে আখেরাতে আর তাদের লজ্জিত হতে হবে না। হাঁ, মায়েযের দ্বারা এই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। হাদীসে এ ঘটনার বিবরণে আরাে জানা যায়, নবী(স.) তার কথায় কান দিচ্ছিলেন না। যখনই মায়েজ স্বীকারােক্তি করছিলেন, তখনই নবী(স.) অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। এদিক থেকে ওদিকে মুখ নেয়ায় মায়েজও অন্য দিকে গিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবার তার ওপর হদ জারি করার আবেদন জানাচ্ছিলেন। নবী(স.) চাইছিলেন, সে থেমে যাক, কিন্তু উপর্যুপরি চার বার এভাবে স্বীকারােক্তি করে হদ জারি করার আবেদন করার পর চারজন সাক্ষীর সমান স্বীকারোক্তি যখন হয়ে গেলাে তখন রসূল(স.) তার ওপর হদ জারি করার (অর্থাৎ পাথর মেরে হত্যা করার) হকুম দিলেন। যেহেতু এ অপরাধের ব্যাপারে আর কোনাে প্রকার সন্দেহ রইলাে না, অতপর এ হুকুম তামিল করা হলাে। আমার কাছে হদ জারি করার মকদ্দমা যেমন করে প্রমাণিত হয়ে গেলাে তাতে হদ জারি (আমার জন্যে) ওয়াজিব হয়ে গেলো। (হাদীসটি আবু দাউদ কিতাবুল হুদুদ আল আফউ আনিল হুদুদ মা-লাম তালুস সুলতানে’ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। প্রস্তরাঘাত যখন করা হচ্ছিলাে, তখন নবী(স.) বলছিলেন, কেউ বেহেশতী দেখতে চাইলে তাকাও ওই ব্যক্তির দিকে। সে এমন তাওবা করেছে যা সমগ্র মদীনার লােকদের মধ্যে তােমরা বন্টন করে দিলেও তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে) সুতরাং, যখন কোনাে ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে এবং বিষয়টি বিচারকের কাছে পৌছুবে, তখন হদ জারি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে, সে হদ জারি করতে আর কোনাে প্রকার। শৈথিল্য করা হবে না, আল্লাহ তায়ালার আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনাে দয়া বা সহানুভূতি দেখানাের কোনাে সুযােগ আর থাকবে না, কারণ এমন অবস্থায় যৌন উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে যারা ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে তাদের প্রতি দরদ দেখানাের অর্থ হবে গােটা সমাজের ওপর যুলুম করা, মানবতাবােধ ও মানব শৃংখলাকে বিপর্যস্ত করা এবং মানুষের বিবেককে হত্যা করা। এই অপরাধীদের ওপর দরদ সহানুভূতি কৃত্রিম বা মেকী বলে গ্রহণ করা হবে। কারণ রহমানুর রহীম আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার প্রতি সব থেকে বেশী দরদী। আল্লাহ তায়ালা নিজেই সে সব অপরাধীদের জন্যে যখন উক্ত শাস্তির ব্যবস্থা দিয়েছেন তখন বুঝতে হবে তাদের ও গোটা মানবতার কল্যাণের জন্যেই সে শাস্তির ব্যবস্থা তিনি দিয়েছেন। কেননা সূরা আল আহযাবে এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন ঘােষণা এসেছে, ‘যখন আল্লাহ ও তার রসূলের পক্ষ থেকে কোনাে বিষয়ের জন্যে চূড়ান্ত ফয়সালা এসে যাবে তখন কোনাে মােমেন পুরুষ বা নারীর জন্যে সে বিষয়ে কিছু মাত্র মতামত প্রকাশের কোনাে অধিকার থাকবে না।’ আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কিসে ভালাে তা তিনিই সবচেয়ে ভালাে জানেন, তিনি জানেন তাদের প্রকৃতিসমূহকে। অতএব, চরম অহংকারী কোনাে ব্যক্তির পক্ষে এই বাহ্যিক শাস্তির অবস্থা দেখে একে কঠিন শাস্তি বলে মন্তব্য করা শােভা পায় না, কারণ ওরা তাে সেই সব মানুষ যাদের নিজেদের মধ্যেই ব্যাভিচারের ছড়াছড়ি চলছে এবং এর প্রসারের জন্য তারা সামাজিকভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছে, তাদের মানব প্রকৃতি অধপতনের গহবরে পতিত হয়ে গেছে। যেনাকারীর শাস্তির কড়াকড়িতে শুধুমাত্র যে দলীয় জীবনের সংহতি অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্য অর্জিত হয় তাই নয়, এর দ্বারা পরিবেশের পবিত্রতাও অটুট থাকে। যেখানে মানুষ শান্তির সাথে বাস করতে পারে। তবে, এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, ব্যক্তি সমাজ ও সভ্যতাকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যে ইসলাম যে একমাত্র এই কঠিন শাস্তির ওপরই নির্ভর করে তা নয়, আমরা ইতিমধ্যে আলােচনা করেছি যে ইসলাম এমন সমাজ ও পরিবেশ গড়তে চায় যেখানে মানুষ সহজে উক্ত অপরাধের সুযােগ পাবে না এবং এর প্রয়োজনও থাকবে না, মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা মেটাবার জন্যে সেখানে সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা রয়েছে এবং সে ব্যবস্থাকে সহজ করে দেয়া হয়েছে, মুক্ত মেলামেশা ও ব্যাভিচারের দিকে আমন্ত্রণ জানানাের মতাে উপায় উপাদানকে সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# অ-তাওবাকারী ব্যভিচারীর জন্য ব্যভিচারিণীই উপযোগী অথবা মুশরিক নারী। কোন সৎ মু’মিন নারীর জন্য সে মোটেই উপযোগী পুরুষ নয়। আর মু’মিনদের জন্য জেনে বুঝে নিজেদের মেয়েদেরকে এ ধরনের অসচ্চরিত্র লোকদের হাতে সোপর্দ করা হারাম। এভাবে যিনাকারীনী (অ-তাওবাকারী) মেয়েদের জন্য তাদেরই মতো যিনাকারীরা অথবা মুশরিকরাই উপযোগী। সৎ মু’মিনদের জন্য তারা মোটেই উপযোগী নয়। যেসব নারীর চরিত্রহীনতার কথা মু’মিনরা জানে তাদেরকে বিয়ে করা তাদের জন্য হারাম। যে সমস্ত পুরুষ ও নারী তাদের চরিত্রহীনতার পথে গা ভাসিয়ে দিয়েছে একমাত্র তাদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য। তবে যারা তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। কারণ তাওবা ও সংশোধনের পর “যিনাকারী” হবার দোষ আর তাদের জন্য প্রযুক্ত হয় না। যিনাকারীর সাথে বিয়ে হারাম হবার অর্থ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এ নিয়েছেন যে, আদতে তার সাথে বিয়ে অনুষ্ঠিতই হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক কথা হচ্ছে, এর অর্থ নিছক নিষেধাজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ করে যদি কেউ বিয়ে করে তাহলে আইনগতভাবে তা বিয়েই হবে না এবং এ বিয়ে সত্ত্বেও উভয় পক্ষকে যিনাকারী গণ্য করতে হবে একথা ঠিক নয়। নবী ﷺ একটি সার্বজনীন নিয়ম হিসেবে বলেনঃ الحرام لايحرم الحلال “হারাম হালালকে হারাম করে দেয় না।” (তাবারানী ও দারুকুতনী) অর্থাৎ একটি বেআইনী কাজ অন্য একটি আইনসঙ্গত কাজকে বেআইনী করে দেয় না। কাজেই কোন ব্যক্তির যিনা করার কারণে সে যদি বিয়েও করে তাহলে তা তাকে যিনায় পরিণত করে দিতে পারে না এবং বিবাহ চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ যে ব্যভিচারী নয় সেও ব্যভিচারী গণ্য হবে না। নীতিগতভাবে বিদ্রোহ ছাড়া কোন অপরাধ এমন নেই, যা অপরাধ সম্পাদনকারীকে নিষিদ্ধ ব্যক্তিতে (Outlaw) পরিণত করে। যার পরে তার কোন কাজই আইনসঙ্গত হতে পারে না। এ বিষয়টি সামনে রেখে যদি আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা যায়, তাহলে আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে এই মনে হয় যে, যাদের ব্যভিচারী চরিত্র জনসমক্ষে পরিচিত তাদেরকে বিয়ে করার জন্য নির্বাচিত করা একটি গোনাহর কাজ। মু’মিনদের এ গোনাহ থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে ব্যভিচারীদের হিম্মত বাড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ শরীয়াত তাদেরকে সমাজের অবাঞ্ছিত ও ঘৃণ্য জীব গণ্য করতে চায়।
অনুরূপভাবে এ আয়াত থেকে এ সিদ্ধান্তও টানা যায় না যে, যিনাকারী মুসলিম পুরুষের বিয়ে মুশরিক নারীর সাথে এবং যিনাকারীনী মুসলিম নারীর বিয়ে মুশরিক পুরুষের সাথে সঠিক হবে। আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, যিনা একটি চরম নিকৃষ্ট কুকর্ম। যে ব্যক্তি মুসলমান হয়েও এ কাজ করে সে মুসলিম সমাজের সৎ ও পাক-পবিত্র লোকদের সাথে আত্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। তার নিজের মতো যিনাকারীদের সাথেই আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত অথবা মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত, যারা আদৌ আল্লাহর বিধানের প্রতি বিশ্বাসই রাখে না।
এ প্রসঙ্গে নবী ﷺ থেকে যেসব হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলোই আসলে আয়াতের সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। মুসনাদে আহমাদ ও নাসাঈতে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আসের (রাঃ) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, উম্মে মাহ্যাওল নামে একটি মেয়ে পতিতাবৃত্তি অবলম্বন করেছিল। এক মুসলমান তাকে বিয়ে করতে চায় এবং এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চায়। তিনি নিষেধ করে এ আয়াতটি পড়েন। তিরমিযী ও আবু দাউদে বলা হয়েছে, মারসাদ ইবনে আবি মারসাদ একজন সাহাবী ছিলেন। জাহেলী যুগে মক্কার ঈনাক নামক এক ব্যভিচারিণীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। পরে তিনি তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা করেন এবং রসূলুল্লাহর ﷺ কাছে অনুমতি চান। দু’বার জিজ্ঞেস করার পরও তিনি নীরব থাকেন। আবার তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করেন, এবার তিনি জবাব দেনঃ يا مرثد الزَّانِى لاَ يَنْكِحُ إِلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً فلاَ يَنْكِحُهَا “হে মারসাদ! ব্যভিচারী এক ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না, কাজেই তাকে বিয়ে করো না।” এছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ও হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) থেকেও বিভিন্ন হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। সেগুলোতে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ “কোন দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি জানে তার স্ত্রী ব্যভীচারিনী এবং এরপরও সে তার স্বামী থাকে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না।” (আহমাদ, নাসাঈ, আবু দাউদ) প্রথম দুই খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) উভয়ই এ ব্যাপারে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা ছিল এই যে, তাঁদের আমলে যে অবিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনার অভিযোগে গ্রেফতার হতো তাদেরকে তাঁরা প্রথমে বেত্রাঘাতের শাস্তি দিতেন তারপর তাদেরকেই পরস্পরের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতেন। ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি বড়ই পেরেশান অবস্থায় হযরত আবু বকরের (রাঃ) কাছে আসে। সে এমনভাবে কথা বলতে থাকে যেন তার মুখে কথা ভালভাবে ফুটছিল না। হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমরকে (রাঃ) বলেন ওকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে একান্তে জিজ্ঞেস করুন ব্যাপারখানা কি? হযরত উমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করতে সে বলে, তাদের বাড়িতে মেহমান হিসেবে এক ব্যক্তি এসেছিল। সে তার মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে বসেছে। হযরত উমর (রাঃ) বলেনঃ قَبَّحَكِ اللَّهُ الا سترت على ابْنَتَكَ “তোমার মন্দ হোক, তুমি নিজের মেয়ের আবরণ ঢেকে দিলে না? ” শেষ পর্যন্ত পুরুষটি ও মেয়েটির বিরুদ্ধে মামলা চলে। উভয়কে বেত্রাঘাতের শাস্তি দেয়া হয়। তারপর উভয়কে পরস্পরের সাথে বিয়ে দিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) এক বছরের জন্য তাদেরকে দেশান্তর করেন। এ ধরনেরই আরো কয়েকটি ঘটনা কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী তাঁর আহকামুল কুরআন গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন (পৃষ্ঠা ৮৬, ২য় খণ্ড)।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
আমর বিন শু‘আইব তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ছিল যাকে বলা হত “মুরসেদ”। সে মুসলিম বন্দীদেরকে মক্কা থেকে মদীনায় নিয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কায় একজন অসতী মহিলা ছিল, তার নাম ছিল “আন্নাক”। ঐ লোকটি বিবাহ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে রইলেন, তাকে কোন উত্তর দিলেন না। এমতাবস্থায় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী হা: ৩১৭৭, নাসাঈ হা: ৩২২৮, সনদ হাসান)
এ আয়াতের ব্যাপারে তাফসীরে অনেক মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেন: অধিক সময় এ রকমই হয়ে থাকে তাই এ রকম বলা হয়েছে। আয়াতের অর্থ হলন সাধারণতঃ ব্যভিচারী ব্যক্তি বিবাহের জন্য নিজের মত ব্যভিচারিণীকেই পছন্দ করে থাকে। সে জন্য দেখা যায় অধিকাংশ ব্যভিচারী নারী-পুরুষ তাদেরই অনুরূপ ব্যভিচারী নারী-পুরুষের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করে থাকে বা করতে পছন্দ করে। মূলত এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল মু’মিনদেরকে সতর্ক করা যে, ব্যভিচার যেমন একটি জঘন্যতম কাজ ও মহাপাপ, তেমনি ব্যভিচারী ব্যক্তির সাথে বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক গড়াও অবৈধ। ইমাম শাওকানী (رحمه الله) এ মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন: এখানে نكاح বলতে বিবাহ উদ্দেশ্য নয়, বরং সহবাস করা অর্থে ব্যবহার হয়েছে। উদ্দেশ্য হলন ব্যভিচারের নিকৃষ্টতা ও জঘন্যতা বর্ণনা করা। আর আয়াতের অর্থ হলন ব্যভিচারী ব্যক্তি নিজ যৌনকামনা চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ রাস্তা অবলম্বন করে ব্যভিচারিণী মহিলার কাছেই যেয়ে থাকে। অনুরূপ ব্যভিচারিণী মহিলাও যৌনকামনা চরিতার্থ করার জন্য ব্যভিচারী পুরুষের কাছে যেয়ে থাকে। কিন্তু মু’মিনদের জন্য এ রকম কাজ করা হারাম। এখানে ব্যভিচারীর সাথে মুশরিক নারী-পুরুষের আলোচনা এজন্য করা হয়েছে যে, শিরকের সাথে ব্যভিচারের সামঞ্জস্য আছে। একজন মুশরিক যেরূপ আল্লাহ তা‘আলাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যের নিকট মাথা নত করে, অনুরূপ একজন ব্যভিচারী নিজের জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্য নিজের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্যের সাথে মিলামিশা করে।
কিন্তু আল্লামা শানকিতী (رحمه الله) বলেছেন, এখানে نكاح দ্বারা মিলন করা বা সহবাস করার অর্থ সঠিক নয়। কারণ ব্যভিচারী নারী-পুরুষের সাথে মুশরিক নারী-পুরুষের কথা সম্পৃক্ত করেছেন। একজন ব্যভিচারী মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় একজন মুশরিক নারীকে বিবাহ করা। আবার একজন ব্যভিচারী নারীর জন্য বৈধ নয় একজন ব্যভিচারী মুশরিক পুরুষকে বিবাহ করা। যেমন সূরা বাকারার ২২১ নং আয়াতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং কোন অবস্থাতেই মুশরিক নারী-পুরুষকে বিবাহ করা বৈধ নয়।
কেউ কেউ বলেছেন, এ আয়াতটি মানসুখ বা রহিত। এ কথার কোন দলীল নেই। কারণ সূরা নূর মদীনায় অবতীর্ণ, কোন কিছু তাকে রহিত করেনি।
ব্যভিচারী নারী-পুরুষকে মু’মিনদের জন্য বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে। সুতরাং এরূপ জঘন্যতম কাজ করা থেকে সতর্ক থাকতে হবে, সেই সাথে যারা এরূপ কাজ করে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মু’মিন সর্বদা মু’মিনকে বিবাহ করবে, যিনাকারী বা মুশরিক নারী-পুরুষ তার জন্য হারাম। পক্ষান্তরে ব্যভিচারী নারী-পুরুষ তাদের মত ব্যক্তিদেরকে পছন্দ করে থাকে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, ব্যভিচারীর উপর একমাত্র ঐ লোকই সন্তুষ্ট হতে পারে যে নিজে ব্যভিচারিণী বা শিরককারিণী। সে ঐ সব অসৎ কাজকে খারাপ মনেই করে না। এরূপ অসতী ও ব্যভিচারিণীর সাথে ঐ পুরুষই মিলতে পারে যে তার মতই অসৎ, ব্যভিচারী বা মুশরিক। যে এ কাজের অবৈধতা স্বীকার করে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, এখানে নিকাহ দ্বারা সঙ্গম বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ব্যভিচারিণী মহিলার সাথে শুধুমাত্র ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিকই ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে। এই উক্তিটিই মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ), উরওয়া ইবনে যুবাইর (রঃ), যহ্হাক (রঃ), মাকহুল (রঃ), মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) এবং আরো বহু তাফসীরকার হতে বর্ণিত আছে। মুমিনদের উপর এটা হারাম। অর্থাৎ ব্যভিচার করা, ব্যভিচারিণী নারীদেরকে বিয়ে করা এবং পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক নারীদের এই ব্যভিচারী পুরুষদের সাথে বিয়ে দেয়া মুমিনদের জন্যে হারাম।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের ভাবার্থ হলোঃ মুসলমানদের জন্যে ব্যভিচার হারাম। কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, অসতী ও ব্যভিচারিণী নারীদেরকে বিয়ে করা মুসলমানদের উপর হারাম। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যারা সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নয় এবং উপপতি গ্রহণকারিণীও নয়।” (৪:২৫) অর্থাৎ যে নারীদেরকে বিয়ে করা মুসলমানদের উচিত তাদের মধ্যে উপরোক্ত তিনটি গুণ থাকতে হবে। তারা হবে সচ্চরিত্রের অধিকারিণী, তারা ব্যভিচারিণী হবে না এবং উপপতি গ্রহণকারিণীও হবে না। পুরুষদের মধ্যেও এই তিনটি গুণ থাকার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ জন্যেই ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, সৎ ও চরিত্রবান মুসলমানদের বিয়ে অসতী নারীর সাথে শুদ্ধ নয় যে পর্যন্ত না সে তাওবা করে। হ্যাঁ, তবে তাওবা করার পর শুদ্ধ হবে। অনুরূপভাবে সতী ও চরিত্রবতী নারীর বিয়ে অসৎ ও ব্যভিচারী পুরুষের সাথে বৈধ নয় যে পর্যন্ত না সে বিশুদ্ধ মনে তার ঐ অপবিত্র কাজ হতে তাওবা করে। কেননা, কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছে যে, মুমিনদের জন্যে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক উম্মে মাহমূল নাম্নী একটি অসতী মহিলাকে বিয়ে করার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবি) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মহিলাটিকে বিয়ে করার জন্যে লোকটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়)
হযরত আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, মুরসিদ ইবনে আবি মুরসিদ (রাঃ) নামক একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি মুসলমান বন্দীদেরকে মক্কা থেকে মদীনায় আনয়ন করতেন। আন্নাক নাম্নী একটি অসতী নারী মক্কায় বাস করতো। অজ্ঞতার যুগে এই মহিলাটির সাথে ঐ সাহাবীর সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেনঃ “একবার বন্দীদেরকে আনয়নের জন্যে আমি মক্কায় গমন করি। রাত্রিকালে একটি বাগানের প্রাচীরের নীচে আমি পৌছি। চাঁদনী রাত ছিল। ঘটনাক্রমে আন্নাক তথায় পৌছে যায় এবং আমাকে দেখে নেয়। এমন কি আমাকে চিনে ফেলে। সে ডাক দিয়ে বলেঃ “কে ওটা মুরসিদ?” আমি উত্তরে বলিঃ হ্যাঁ, আমি মুরসিদই বটে। সে খুবই খুশী হয় এবং বলেঃ ‘চলো, আজ রাত্রে আমার ওখানেই থাকবে। আমি বলিঃ হে আন্নাক! জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যভিচারকে হারাম ঘোষণা করেছেন। সে নিরাশ হয়ে যায়। সুতরাং আমাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে সে উচ্চস্বরে চীকার করে বলেঃ “হে তাঁবুতে অবস্থানকারীরা! তোমরা সতর্ক হয়ে যাও, চোর এসে গেছে। এটাই হলো ঐ লোক যে তোমাদের বন্দীদেরকে চুরি করে নিয়ে যায়।” লোকেরা তার চীৎকার শুনে জেগে ওঠে এবং আটজন লোক আমাকে ধরবার জন্যে আমার পিছনে ছুটতে শুরু করে। আমি মুষ্টি বন্ধ করে খন্দকের পথ ধরে পলায়ন করি এবং একটি গুহায় প্রবেশ করে আত্মগোপন করি। তারা ঐ গুহার নিকট পৌঁছে যায় কিন্তু আমাকে দেখতে পায়নি। তারা সেখানে প্রস্রাব করতে বসে। আল্লাহর শপথ! তাদের প্রস্রাব আমার মাথার উপর পড়ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাদের চক্ষু অন্ধ করে দেন। তাদের দৃষ্টি আমার উপর পড়েনি। এদিক ওদিক খোজ করে তারা ফিরে যায়। আমি কিছুক্ষণ ঐ গুহায় কাটিয়ে দিলাম। শেষে যখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, তারা আবার শুয়ে গেছে। তখন গুহা থেকে বের হয়ে পুনরায় আমি মক্কার পথ ধরি। সেখানে পৌঁছে আমি বন্দী মুসলমানকে আমার কোমরের উপর উঠিয়ে নিয়ে সেখান থেকে পালাতে শুরু করি। লোকটি খুব ভারী ছিল বলে আযখার নামক স্থানে পৌঁছে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাকে কোমর থেকে নামিয়ে আমি তার বন্ধনগুলো খুলে দিই। অতঃপর তাকে উঠিয়ে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে আমি মদীনায় পৌঁছে যাই। আন্নাকের ভালাবাসা আমার অন্তরে বদ্ধমূল ছিল বলে তাকে বিয়ে করার জন্যে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার কথা শুনে নীরবতা অবলম্বন করেন। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করিঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আন্নাককে বিয়ে করতে পারি কি? তিনি এবারও নীরব থাকেন। ঐ সময় (আরবি) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈও (রঃ) তাঁদের সুনান গ্রন্থের কিতাবুন নিকাহতে এ হাদীসটি আনয়ন করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যভিচারীর উপর চাবুক লাগানো হয়েছে সে তার অনুরূপের সাথেই বিবাহিত হতে পারে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এটা তারসুনানে তাখরীজ করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তারা হলো পিতা-মাতার অবাধ্য, পুরুষের সাদৃশ্য স্থাপনকারিণী স্ত্রী লোক এবং দাইয়ুস। (যে পুরুষ তার স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সহবাসে দেয় ও তার উপার্জন খায়) তিন প্রকারের লোকের প্রতি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা করুণার দৃষ্টিতে দেখবেন না। তারা হচ্ছেঃ পিতা-মাতার অবাধ্য, সদাসর্বদা মদ্যপানে অভ্যস্ত এবং দান করার পরে দানের খোটা দানকারী। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোকের প্রতি আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তারা হলোঃ সদা মদ্যপানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং পরিবারের মধ্যে মালিন্য কায়েমকারী।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দাইয়ুস জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (এ হাদীসটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন পুণ্যশীল স্বাধীনা নারীকে বিয়ে করে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর সনদ দুর্বল। নির্লজ্জ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয়)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হ্যরত হারূন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ “আমার স্ত্রীর প্রতি আমার খুবই ভালবাসা রয়েছে, কিন্তু তার অভ্যাস এই যে, সে কোন স্পর্শকারীর হাতকে ফিরিয়ে দেয় না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও।” সে বললোঃ “তাকে ছেড়ে আমি ধৈর্যধারণ করতে পারবো না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “তাহলে তুমি তাকে উপভোগ কর।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু আবদির রহমান আন্ নাসাঈ (রঃ) তাঁর সুনান গ্রন্থের কিতাবু নিকাহুতে বর্ণনা করেছেন) কিন্তু তিনি বলেন যে, এ হাদীসটি প্রমাণিত নয়। এর বর্ণনাকারী আবদুল করীম সুদৃঢ় নন। এর অন্য একজন বর্ণনাকারী হারূন অপেক্ষাকৃত সবল বটে, কিন্তু তাঁর রিওয়াইয়াত মুরসাল। আর এটাই সঠিকও বটে। এই রিওয়াইয়াতই মুসনাদে বর্ণিত আছে। কিন্তু ইমাম নাসাঈ (রঃ)-এর ফায়সালা এই যে, এটা মুসনাদ করা ভুল এবং সঠিক এটাই যে, এটা মুরসাল। এই হাদীসটি অন্যান্য কিতাবসমূহে অন্য সনদেও বর্ণিত আছে। ইমাম আহমাদ (রঃ) তো এটাকে মুনকার বা অস্বীকৃত বলেছেন। ইবনে কুতাইবা (রঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ একথা যে বলা হয়েছে যে, সে কোন স্পর্শকারীর হাতে ফিরিয়ে দেয় না, এর দ্বারা দানশীলতা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সে কোন ভিক্ষুককেই বঞ্চিত করে না। কিন্তু ভাবার্থ যদি এটাই হতো তবে হাদীসের শব্দ (আরবি)-এর স্থলে (আরবি) ব্যবহৃত হওয়াই উচিত ছিল। একথাও বলা হয়েছে যে, তার অভ্যাস এইরূপ বলে মনে হতো, এ নয় যে, সে বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়ে পড়তো। কেননা, প্রকৃতপক্ষেই যদি এই দোষ তার মধ্যে থাকতো তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কখনোই ঐ সাহাবীকে তাকে রেখে দেয়ার অনুমতি দিতেন না। কারণ এটা তো দাইয়ুসী, যার জন্যে কঠোরভাবে শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে। হ্যাঁ, এটা সম্ভব যে, স্বামী তার স্ত্রীর অভ্যাস এরূপ মনে করেছিল এবং এই জন্যেই আশংকা প্রকাশ করেছিল। তখন নবী (সঃ) তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে তালাক দেয়ার। কিন্তু সে যখন বললো যে, তার স্ত্রীর প্রতি তার খুবই ভালবাসা রয়েছে তখন তিনি তাকে রেখে দেয়ারই অনুমতি দেন। কেননা, তার প্রতি তার মহব্বত তো পুরোমাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং শুধু একটি বিপদ ঘটবার সন্দেহের উপর ভিত্তি করে তাকে ছেড়ে দিলে তাড়াতাড়ি আর একটি অঘটন ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এসব ব্যাপারে মহামহিমান্বিত আল্লাহই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
মোটকথা অসতী ও ব্যভিচারিণী মহিলাদেরকে বিয়ে করা সৎ ও পুণ্যশীল মুমিনদের জন্যে নিষিদ্ধ। তবে সে তাওবা করলে তাকে বিয়ে করা বৈধ। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে একটি লোকে প্রশ্ন করেঃ “একটি অসতী নারীর সাথে আমার জঘন্য সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ এখন আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেছেন। সুতরাং এখন আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। (এটা আমার জন্যে বৈধ হবে কি?)” তখন কতকগুলো লোক বলে ওঠেন যে, ব্যভিচারিণী ও মুশরিকা মহিলাকে শুধুমাত্র ব্যভিচারীই বিয়ে করতে পারে। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “না, এই আয়াতের অর্থ এটা নয়। (হে প্রশ্নকারী ব্যক্তি!) তুমি ঐ মহিলাটিকে এখন বিয়ে করতে পার। যাও, কোন পাপ হলে তা আমার যিম্মায় থাকলো।” এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হযরত ইয়াহইয়া (রঃ)-কে এই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে, এটা এর পরবর্তী আয়াত (আরবি) দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। ইমাম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস শাফেয়ীও (রাঃ) এ কথাই বলেন।
اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#968)
[الزَّانِي لَا يَنكِحُ إلاَّ زَانِيَةً
The fornicator does not marry except a [female] fornicator.]
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 03-
www.motaher21.net
24:3
اَلزَّانِیۡ لَا یَنۡکِحُ اِلَّا زَانِیَۃً اَوۡ مُشۡرِکَۃً ۫ وَّ الزَّانِیَۃُ لَا یَنۡکِحُہَاۤ اِلَّا زَانٍ اَوۡ مُشۡرِکٌ ۚ وَ حُرِّمَ ذٰلِکَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۳﴾
The fornicator does not marry except a [female] fornicator or polytheist, and none marries her except a fornicator or a polytheist, and that has been made unlawful to the believers.
Allah tells:
الزَّانِي لَا يَنكِحُ إلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً
The Zani marries not but a Zaniyah or a Mushrikah;
Here Allah tells us that the Zani (male who is guilty of illegal sex) does not have intercourse except with a Zaniyah (female who is guilty of illegal sex) or a Mushrikah (female idolator), meaning that no one would go along with him in this action except a sinful woman who is also guilty of Zina, or a Mushrikah who does not think it is unlawful.
By the same token,
وَالزَّانِيَةُ لَاا يَنكِحُهَا إِلاَّ زَانٍ
and the Zaniyah, none marries her except a Zani,
a sinful man who is guilty of fornication,
أَوْ مُشْرِكٌ
or a Mushrik (a man)
who does not think it is unlawful.
وَحُرِّمَ ذَلِكَ عَلَى الْمُوْمِنِينَ
Such a thing is forbidden to the believers.
meaning, indulging in this, or marrying prostitutes, or marrying chaste women to immoral men.
Qatadah and Muqatil bin Hayyan said:
“Allah forbade the believers from marrying prostitutes.”
This Ayah is like the Ayah (about marrying slave-girls):
مُحْصَنَـت غَيْرَ مُسَـفِحَـتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ
they should be chaste, not committing illegal sex, nor taking boyfriends. (4:25)
And His saying:
مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِى أَخْدَانٍ
desiring chastity not committing illegal sexual intercourse, nor taking them as girlfriends. (5:5)
Imam Ahmad recorded that:
Abdullah bin `Amr, may Allah be pleased with him, said that a man among the believers asked the Messenger of Allah for permission (to marry) a woman known as Umm Mahzul, who used to commit adultery, and who had stated the condition that she should spend on him. So he asked the Messenger of Allah for permission, or he mentioned the matter to him.
The Messenger of Allah recited to him:
الزَّانِى لَا يَنكِحُ إِلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَأ إِلاَّ زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذلِكَ عَلَى الْمُوْمِنِينَ
The Zani marries not but a Zaniyah or a Mushrikah; and the Zaniyah, none marries her except Zani or a Mushrik. Such a thing is forbidden to the believers.
Ibn Abi Hatim recorded that Abu Hurayrah said,
لَاا يَنْكِحُ الزَّانِي الْمَجْلُودُ إِلاَّ مِثْلَهُ
A Zani who has been flogged should not marry anyone except someone who is like him.
A similar report was recorded by Abu Dawud in his Sunan
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran