أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৭২)
[تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
অনুমতি না নিয়ে ও সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
২৭- ২৯ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:২৭
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ بُیُوۡتِکُمۡ حَتّٰی تَسۡتَاۡنِسُوۡا وَ تُسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَہۡلِہَا ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۲۷﴾
হে ঈমানদারগণ! নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না গৃহবাসীদের সম্মতি লাভ করো এবং তাদেরকে সালাম করো। এটিই তোমাদের জন্য ভালো পদ্ধতি, আশা করা যায় তোমরা এদিকে নজর রাখবে।
২৪:২৮
فَاِنۡ لَّمۡ تَجِدُوۡا فِیۡہَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدۡخُلُوۡہَا حَتّٰی یُؤۡذَنَ لَکُمۡ ۚ وَ اِنۡ قِیۡلَ لَکُمُ ارۡجِعُوۡا فَارۡجِعُوۡا ہُوَ اَزۡکٰی لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ﴿۲۸﴾
যদি তোমরা গৃহে কাউকেও না পাও, তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ না অনুমতি দেওয়া হয়, ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
২৪:২৯
لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ مَسۡکُوۡنَۃٍ فِیۡہَا مَتَاعٌ لَّکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَ مَا تَکۡتُمُوۡنَ ﴿۲۹﴾
তবে তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি নেই যদি তোমরা এমন গৃহে প্রবেশ করো যেখানে কেউ বাস করে না এবং তার মধ্যে তোমাদের কোন কাজের জিনিস আছে তোমরা যা কিছু প্রকাশ করো ও যা কিছু গোপন করো আল্লাহ সবই জানেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# সূরার শুরুতে যেসব বিধান দেয়া হয়েছিল সেগুলো ছিল সমাজে অসৎ প্রবণতা ও অনাচারের উদ্ভব হলে কিভাবে তার প্রতিরোধ করতে হবে তা জানাবার জন্য। এখন যেসব বিধান দেয়া হচ্ছে সেগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে অসৎবৃত্তির উৎপত্তিটাই রোধ করা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এমনভাবে শুধরানো যাতে করে এসব অসৎ প্রবণতা সৃষ্টির পথ বন্ধ হয়ে যায়। এসব বিধান অধ্যয়ন করার আগে দু’টি কথা ভালোভাবে মনের মধ্য গেঁথে নিতে হবেঃ
একঃ অপবাদের ঘটনার পরপরই এ বিধান বর্ণনা করা পরিষ্কারভাবে একথাই ব্যক্ত করে যে, রসূলের স্ত্রীর ন্যায় মহান ও উন্নত ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে এত বড় একটি ডাহা মিথ্যা অপবাদের এভাবে সমাজের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রচার লাভকে আল্লাহ আসলে একটি যৌন কামনা তাড়িত পরিবেশের উপস্থিতির ফল বলে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহর দৃষ্টিতে এ যৌন কামনা তাড়িত পরিবেশ বদলানোর একমাত্র উপায় এটাই ছিল যে, লোকদের পরস্পরের গৃহে নিঃসংকোচে আসা যাওয়া বন্ধ করতে হবে, অপরিচিত নারী-পুরুষদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাত ও স্বাধীনভাবে মেলামেশার পথরোধ করতে হবে, মেয়েদের একটি অতি নিকট পরিবেশের লোকজন ছাড়া গায়ের মুহাররাম আত্মীয়-স্বজন ও অপরিচিতদের সামনে সাজসজ্জা করে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে, পতিতাবৃত্তির পেশাকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে, পুরুষদের ও নারীদের দীর্ঘকাল অবিবাহিত রাখা যাবে না, এমনকি গোলাম ও বাঁদীদেরও বিবাহ দিতে হবে। অন্য কথায় বলা যায়, মেয়েদের পর্দাহীনতা ও সমাজে বিপুল সংখ্যক লোকের অবিবাহিত থাকাই আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী এমন সব মৌলিক কার্যকারণ যেগুলোর মাধ্যমে সামাজিক পরিবেশ একটি অননুভূত যৌন কামনা সর্বক্ষণ প্রবাহমান থাকে এবং এ যৌন কামনার বশবর্তী হয়ে লোকদের চোখ, কান, কণ্ঠ, মন-মানস সবকিছুই কোন বাস্তব বা কাল্পনিক কেলেংকারিতে (Scandal) জড়িত হবার জন্য সবসময় তৈরী থাকে। এ দোষ ও ত্রুটি সংশোধন করার জন্য আলোচ্য পর্দার বিধিসমূহের চেয়ে বেশী নির্ভুল, উপযোগী ও প্রভাবশালী অন্য কোন কর্মপন্থা আল্লাহর জ্ঞান-ভাণ্ডারে ছিল না। নয়তো তিনি এগুলো বাদ দিয়ে অন্য বিধান দিতেন।
দুইঃ এ সুযোগে দ্বিতীয় যে কথাটি বুঝে নিতে হবে সেটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহর শরীয়াত কোন অসৎকাজ নিছক হারাম করে দিয়ে অথবা তাকে অপরাধ গণ্য করে তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত করে দেয়াই যথেষ্ট মনে করে না বরং যেসব কার্যকারণ কোন ব্যক্তিকে ঐ অসৎকাজে লিপ্ত হতে উৎসাহিত করে অথবা তার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় কিংবা তাকে তা করতে বাধ্য করে, সেগুলোকেও নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তাছাড়া শরীয়াত অপরাধের সাথে সাথে অপরাধের কারণ, অপরাধের উদ্যোক্তা ও অপরাধের উপায়-উপকরণাদির ওপরও বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এভাবে আসল অপরাধের ধারে কাছে পৌঁছার আগেই অনেক দূর থেকেই মানুষকে রুখে দেয়া হয়। মানুষ সবসময় অপরাধের কাছ দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকবে এবং প্রতিদিন পাকড়াও হতে ও শাস্তি পেতে থাকবে, এটাও সে পছন্দ করে না। সে নিছক একজন অভিযুক্তই (Prosecutor) নয় বরং একজন সহানুভূতিশীল সহযোগী, সংস্কারকারী ও সাহায্যকারীও। তাই সে মানুষকে অসৎকাজ থেকে নিষ্কৃতি লাভের ক্ষেত্রে সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই সকল প্রকার শিক্ষামূলক, নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে।
# মূলে حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। লোকেরা সাধারণত একে حتى تستاذنوا (অর্থাৎ যতক্ষণ না অনুমতি নাও) অর্থে ব্যবহার করে। কিন্তু আসলে উভয় ক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। একে উপেক্ষা করা চলে না। حتى تستاذنوا বললে আয়াতের অর্থ হতোঃ “কারোর বাড়িতে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না অনুমতি নিয়ে নাও।” এ প্রকাশ ভংগী পরিহার করে আল্লাহ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا শব্দ ব্যবহার করেছেন। استيناس শব্দ انس ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে। আমাদের ভাষায় এর মানে হয় পরিচিত, অন্তরঙ্গতা, সম্মতি ও প্রীতি। এ ধাতু থেকে উৎপন্ন تستانسوا শব্দ যখনই বলা হবে তখনই এর মানে হবে, সম্মতি আছে কি না জানা অথবা নিজের সাথে অন্তরঙ্গ করা। কাজেই আয়াতের সঠিক অর্থ হবেঃ “লোকদের গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তাদেরকে অন্তরঙ্গ করে নেবে অথবা তাদের সম্মতি জেনে নেবে।” অর্থাৎ একথা জেনে নেবে যে, গৃহমালিক তোমার আসাকে অপ্রীতিকর বা বিরক্তিকর মনে করছে না এবং তার গৃহে তোমার প্রবেশকে সে পছন্দ করছে। এজন্য আমি অনুবাদে “অনুমতি নেবা’র পরিবর্তে ‘সম্মতি লাভ’ শব্দ ব্যবহার করেছি। কারণ এ অর্থটি মূলের নিকটতর।
# জাহেলী যুগে আরববাসীদের নিয়ম ছিল, তারা حَيِّيتٌم صَبَاحًا , حُيِّيتُم مساءً (সুপ্রভাত, শুভ সন্ধ্যা) বলতে বলতে নিঃসংকোচে সরাসরি একজন অন্যজনের গৃহে প্রবেশ করে যেতো। অনেক সময় বহিরাগত ব্যক্তি গৃহ মালিক ও তার বাড়ির মহিলাদেরকে বেসামাল অবস্থায় দেখে ফেলতো। আল্লাহ এর সংশোধনের জন্য এ নীতি নির্ধারণ করেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির যেখানে সে অবস্থান করে সেখানে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (Privacy) রক্ষা করার অধিকার আছে এবং তার সম্মতি ও অনুমতি ছাড়া তার এ গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা অন্য ব্যক্তির জন্য জায়েয নয়। এ হুকুমটি নাযিল হবার পর নবী ﷺ সমাজে যেসব নিয়ম ও রীতি-নীতির প্রচলন করেন আমি নীচে সেগুলো বর্ণনা করছিঃ
একঃ নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্তিগত গোপনীয়তার এ অধিকারটিকে কেবলমাত্র গৃহের চৌহদ্দীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং একে একটি সাধারণ অধীকার গণ্য করেন। এ প্রেক্ষিতে অন্যের গৃহে উঁকি ঝুঁকি মারা, বাহির থেকে চেয়ে দেখা এমনকি অন্যের চিঠি তার অনুমতি ছাড়া পড়ে ফেলা নিষিদ্ধ। হযরত সওবান (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদ করা গোলাম) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম ﷺ বলেনঃ اذا دخل البصر فلا اذن “দৃষ্টি যখন একবার প্রবেশ করে গেছে তখন আর নিজের প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেবার দরকার কি?” (আবু দাউদ) হযরত হুযাইল ইবনে শুরাহবীল বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন এবং ঠিক তাঁর দরজার ওপর দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলেন। নবী (সা) তাকে বললেন, هكذا عنك , فائما الاستيذان من النظر “পিছনে সরে গিয়ে দাঁড়াও, যাতে দৃষ্টি না পড়ে সে জন্যই তো অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ (আবু দাউদ) নবী করীমের ﷺ নিজের নিয়ম ছিল এই যে, যখন কারোর বাড়িতে যেতেন, দরজার ঠিক সামনে কখনো দাঁড়াতেন না। কারণ সে যুগে ঘরের দরজায় পরদা লটকানো থাকতো না। তিনি দরজার ডান পাশে বা বাম পাশে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইতেন। (আবু দাউদ) রসূলুল্লাহর ﷺ খাদেম হযরত আনাস বলেন, এক ব্যক্তি বাইরে থেকে রসূলের ﷺ কামরার মধ্যে উঁকি দিলেন। রসূলুল্লাহর ﷺ হাতে সে সময় একটি তীর ছিল। তিনি তার দিকে এভাবে এগিয়ে এলেন যেন তীরটি তার পেটে ঢুকিয়ে দেবেন। (আবু দাউদ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ مَنْ نَظَرَ فِى كِتَابِ أَخِيهِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ فَإِنَّمَا يَنْظُرُ فِى النَّارِ “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তার পত্রে চোখ বুলালো সে যেন আগুনের মধ্যে দৃষ্টি ফেলছে।” (আবুদ দাউদ) বুখারী ও মুসলিমে উদ্ধৃত হয়েছে, নবী (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَنَّ امْرَأً اطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ إِذْنٍ فَخَذَفْتَهُ بِحَصَاةٍ ، فَفَقَأْتَ عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ جُنَاحٌ “যদি কোন ব্যক্তি তোমার গৃহে উঁকি মারে এবং তুমি একটি কাঁকর মেরে তার চোখ কানা করে দাও, তাহলে তাতে কোন গোনাহ হবে না।” এ বিষয়বস্তু সম্বলিত অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছেঃ مَنِ اطَّلَعَ فِى دَارِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَفَقَأُوا عَيْنَهُ فَقَدْ هَدَرَتْ عَيْنُهُ “যে ব্যক্তি কারোর ঘরে উঁকি মারে এবং ঘরের লোকেরা তার চোখ ছেঁদা করে দেয়, তবে তাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না।” ইমাম শাফঈ এ হাদীসটিকে একদম শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং তিনি কেউ ঘরের মধ্যে উঁকি দিলে তার চোখ ছেঁদা করে দেবার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু হানাফীগণ এর অর্থ নিয়েছেন এভাবে যে, নিছক দৃষ্টি দেবার ক্ষেত্রে এ হুকুমটি দেয়া হয়নি। বরং এটি এমন অবস্থায় প্রযোজ্য যখন কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে গৃহ মধ্যে প্রবেশ করে, গৃহবাসীদের বাধা দেয়ায়ও সে নিরস্ত হয় না এবং গৃহবাসীরা তার প্রতিরোধ করতে থাকে। এ প্রতিরোধ ও সংঘাতের মধ্যে যদি তার চোখ ছেঁদা হয়ে যায় বা শরীরের কোন অংগহানি হয় তাহলে এজন্য গৃহবাসীরা দায়ী হবে না। (আহকামুল কুরআন-জাস্সাস, ৩য় খণ্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)
দুইঃ ফকীহগণ শ্রবণ শক্তিকেও দৃষ্টিশক্তির হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন অন্ধ ব্যক্তি যদি বিনা অনুমতিতে আসে তাহলে তার দৃষ্টি পড়বে না ঠিকই কিন্তু তার কান তো গৃহবাসীদের কথা বিনা অনুমতিতে শুনে ফেলবে। এ জিনিসটিও দৃষ্টির মতো ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারে অবৈধ হস্তক্ষেপ।
তিনঃ কেবলমাত্র অন্যের গৃহে প্রবেশ করার সময় অনুমতি নেবার হুকুম দেয়া হয়নি। বরং নিজের মা-বোনদের কাছে যাবার সময়ও অনুমতি নিতে হবে। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কি আমার মায়ের কাছে যাবার সময়ও অনুমতি চাইবো? জবাব দিলেন, হ্যাঁ। সে বললো, আমি ছাড়া তাঁর সেবা কারার আর কেউ নেই। এক্ষেত্রে কি আমি যতবার তাঁর কাছে যাবো প্রত্যেক বার অনুমতি নেবো? জবাব দিলেন, اتحب ان تراها عريانة “তুমি কি তোমার মাকে উলংগ অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর?” (ইবনে জারীর এ মুরসাল হাদীসটি আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের উক্তি হচ্ছে, عليكم ان تستاذنوا على امهاتكم واخواتكم “নিজেদের মা-বোনদের কাছে যাবার সময়ও অনুমতি নিয়ে যাও।” (ইবনে কাসীর) বরং ইবনে মাসউদ তো বলেন, নিজের ঘরে নিজের স্ত্রীর কাছে যাবার সময়ও অন্ততপক্ষে গলা খাঁকারী দিয়ে যাওয়া উচিত। তাঁর স্ত্রী যয়নবের বর্ণনা হচ্ছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ যখনই গৃহে আসতে থাকেন তখনই আগেই এমন কোন আওয়াজ করে দিতেন যাতেন তিনি আসছেন বলে জানা যেতো। তিনি হঠাৎ ঘরের মধ্যে এসে যাওয়া পছন্দ করতেন না। (ইবনে জারীর)
চারঃ শুধুমাত্র এমন অবস্থায় অনুমতি চাওয়া জরুরী নয় যখন কারোর ঘরে হঠাৎ কোন বিপদ দেখা দেয়। যেমন, আগুন লাগে অথবা কোন চোর ঢোকে। এ অবস্থায় সাহায্য দান করার জন্য বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা যায়।
পাঁচঃ প্রথম প্রথম যখন অনুমতি চাওয়ার বিধান জারি হয় তখন লোকেরা তার নিয়ম-কানুন জানতো না। একবার এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসে এবং দরজা থেকে চিৎকার করে বলতে থাকে االج (আমি কি ভেতরে ঢুকে যাবো?) নবী ﷺ তাঁর বাঁদী রওযাহকে বলেন, এ ব্যক্তি অনুমতি চাওয়ার নিয়ম জানে না। একটু উঠে গিয়ে তাকে বলে এসো, السلام عليكم اادخل؟ (আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভিতরে আসতে পারি?) বলতে হবে। (ইবনে জারির ও আবু দাউদ) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, আমি আমার বাবার ঋণের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। তিনি দু-তিনবার বললেন, “আমি? আমি?’ অর্থাৎ এখানে আমি বললে কে কি বুঝবে যে, তুমি কে? (আবু দাউদ) কালাদাহ ইবনে হাম্বল নামে এক ব্যক্তি কোন কাজে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলেন। সালাম ছাড়াই এমনিই সেখানে গিয়ে বসলেন। তিনি বললেন, বাইরে যাও এবং আস্সালামু আলাইকুম বলে ভেতরে এসো। (আবু দাউদ) অনুমতি চাওয়ার সঠিক পদ্ধতি ছিল, মানুষ নিজের নাম বলে অনুমতি চাইবে। হযরত উমরের (রা.) ব্যাপারে বর্ণিত আছে নবী করীমের ﷺ খিদমতে হাজির হয়ে তিনি বলতেনঃ السلام عليكم يارسول الله ايدخل عمر؟ “আস্সালামু আলাইকুম, হে আল্লাহর রসূল! উমর কি ভেতরে যাবে?” (আবু দাউদ) অনুমতি নেবার জন্য নবী করীম ﷺ বড় জোর তিনবার ডাক দেবার সীমা নির্দেশ করেছেন এবং বলেছেন যদি তিনবার ডাক দেবার পরও জবাব না পাওয়া যায়, তাহলে ফিরে যাও। (বুখারী মুসলিম, আবু দাউদ) নবী (সা.) নিজেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। একবার তিনি হযরত সা’দ ইবনে উবাদার বাড়ীতে গেলেন এবং আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে দু’বার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু ভেতর থেকে জবাব এলো না। তৃতীয় বার জবাব না পেয়ে তিনি ফিরে গেলেন। হযরত সা’দ ভেতর থেকে দৌড়ে এলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার আওয়াজ শুনছিলাম। কিন্তু আমার মন চাচ্ছিল আপনার মুবারক কন্ঠ থেকে আমার জন্য যতবার সালাম ও রহমতের দোয়া বের হয় ততই ভালো, তাই আমি খুব নীচু স্বরে জবাব দিচ্ছিলাম। (আবু দাউদ ও আহমাদ) এ তিনবার ডাকা একের পর এক হওয়া উচিত নয় বরং একটু থেমে হতে হবে। এর ফলে ঘরের লোকেরা যদি কাজে ব্যস্ত থাকে এবং সেজন্য তারা জবাব দিতে না পারে তাহলে সে কাজ শেষ করে জবাব দেবার সুযোগ পাবে।
ছয়ঃ গৃহমালিক বা গৃহকর্তা অথবা এমন এক ব্যক্তির অনুমতি গ্রহণযোগ্য হবে যার সম্পর্কে মানুষ যথার্থই মনে করবে যে, গৃহকর্তার পক্ষ থেকে সে অনুমতি দিচ্ছে। যেমন, গৃহের খাদেম অথবা কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কোন ছোট শিশু যদি বলে, এসে যান, তাহলে তার কথায় ভেতর প্রবেশ করা উচিত নয়।
সাতঃ অনুমতি চাওয়ার ব্যাপারে অযথা পীড়াপীড়ি করা অথবা অনুমতি না পাওয়ায় দরজার ওপর অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জায়েয নয়। যদি তিনবার অনুমতি চাওয়ার পর গৃহকর্তার পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়া যায় বা অনুমতি দিতে অস্বীকার জানানো হয়, তাহলে ফিরে যাওয়া উচিত।
# কারোর শূন্য গৃহে প্রবেশ করা জায়েয নয়। তবে যদি গৃহকর্তা নিজেই প্রবেশকারীকে তার খালি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে প্রবেশ করতে পারে। যেমন গৃহকর্তা আপনাকে বলে দিয়েছেন, যদি আমি ঘরে না থাকি, তাহলে আপনি আমার কামরায় বসে যাবেন। অথবা গৃহকর্তা অন্য কোন জায়গায় আছেন এবং আপনার আসার খবর পেয়ে তিনি বলে পাঠিয়েছেন, আপনি বসুন, আমি এখনই এসে যাচ্ছি। অন্যথায় গৃহে কেউ নেই অথবা ভেতর থেকে কেউ বলছে না নিছক এ কারণে বিনা অনুমতিতে ভেতরে ঢুকে যাওয়া কারোর জন্য বৈধ নয়।
# এজন্য নারাজ হওয়া মন খারাপ করা উচিত নয়। কোন ব্যক্তি যদি করো সাথে দেখা করতে না চায় তাহলে তার অস্বীকার করার অধিকার আছে। অথবা কোন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সে অক্ষমতা জানিয়ে দিতে পারে। ফকীহগণ اِرجِعُوا (ফিরে যাও) এর হুকুমের এ অর্থ নিয়েছেন যে, এ অবস্থায় দরজার সামনে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই বরং সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত। অন্যকে সাক্ষাত দিতে বাধ্য করা অথবা তার দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে বিরক্ত করতে থাকার অধিকার কোন ব্যক্তির নেই।
# এখানে মূলত হোটেল, সরাইখানা, অতিথিশালা, দোকান, মুসাফির খানা ইত্যাদি যেখানে লোকদের জন্য প্রবেশের সাধারণ অনুমতি আছে সেখানকার কথা বলা হচ্ছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
** আমরা ইতিপূর্বে বলেছি যে, ইসলাম তার ঈপ্সিত পরিচ্ছন্ন ও সৎ সমাজ গড়ার ব্যাপারে কেবল শাস্তির ওপরই নির্ভর করে না, বরঞ্চ সব কিছুর আগে সে নির্ভর করে প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থার ওপর। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত চাহিদাকে প্রতিহত করে না, তবে এগুলােকে সুশৃংখল ও পরিশীলিত করে এবং এগুলাের জন্যে এমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করে যেখানে কোনাে কৃত্রিম উত্তেজনা সৃষ্টিকারী উপকরণ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে ইসলামী প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, বিপথগামিতার সুযােগ যতাে দূর পারা যায় সংকীর্ণ করতে হবে, খারাপ পথে ঠেলে দেয় এমন উপকরণগুলােকে দূর করতে হবে এবং যৌন আবেগকে উঙ্কে দেয় এমন উপকরণ যাতে সমাজে প্রবেশ করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে স্বাভাবিকভাবে এবং শরীয়ত সম্মত পরিচ্ছন্ন পন্থায় যৌন চাহিদা পূরণের পথের সকল বাধাও দূর করতে হবে। এ কারণেই ইসলাম মুসলমানদের বাড়ী ঘরকে এতােটা পবিত্র ও সুরক্ষিত করেছে যে, সে কাউকে তার পবিত্রতাকে লংঘন করার অনুমতিই দেয় না। অনুমতি না নিয়ে কোনাে আগন্তুকের অতর্কিতে অন্যের গৃহে প্রবেশ করাকেও অনুমতি দেয় না। এভাবে গৃহবাসীর অজান্তে তাদের গােপনীয় জিনিস ও আবরনীয় অংগে কারাে দৃষ্টি পড়ার আশংকা থাকে না। এর পাশাপাশি মুসলিম নারী পুরুষের দৃষ্টি সংযত করা এবং যৌন কামনা বাসনাকে উঙ্কে দেয়ার মতাে সাজ-গােজ করে বেপর্দাভাবে ঘােরাফেরা করা থেকে বিরত থাকার বিধানও বলবৎ রয়েছে। একই উদ্দেশ্যে দরিদ্র নারী ও পুরুষের বিয়ে সহজ করার বিধানও চালু রয়েছে ইসলামে। কেননা ব্যাভিচার প্রতিরােধের প্রকৃত নিশ্চয়তা নিহিত রয়েছে বিয়ের ব্যবস্থায়। অনুরূপভাবে, দাসীবাদীদেরকে দেহ ব্যবসায় নিয়ােগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে, যাতে করে এই অপরাধ সমাজে সহজ সাধ্য হয়ে যেতে না পারে। *কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি নেয়ার গুরুত্ব : এবার ইসলামের প্রতিরোেধ ব্যবস্থাগুলাের ওপর বিস্তারিতভাবে দৃষ্টি দেয়া যাক। ‘হে মােমেনরা, তােমরা অন্যদের বাড়ীতে প্রবেশ করাে না গৃহবাসীর অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে…'(আয়াত ২৭-২৮) আল্লাহ তায়ালা গুহাকে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন। মানুষ বাইরের কাজ কর্ম সেরে বিশ্রামের জন্যে নিজের বাড়ীতে ফিরে আসে। তখন তাদের মন তৃপ্ত ও নিশ্চিন্ত হয় এবং নিজেদের গােপনীয়তা ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা সম্পর্কে আশ্বস্ত হয়। বাইরে সতর্কতা ও সচেতনতার যে চাপ তার স্নায়ুকে ভারাক্রান্ত করে রাখে। বাড়ী এসে তা ঝেড়ে ফেলে সে হাপ ছেড়ে বাঁচে। বাড়ী যদি এতােটা নিরাপদ ও সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল না হতাে যে, বাড়ীর অধিবাসীদের অনুমতি ছাড়াই যে কেউ সেখানে ঢুকে পড়তে পারে, তাহলে তা এরূপ তৃপ্তিকর জায়গায় পরিণত হতাে না। বিনা অনুমতিতে অপরের বাড়ীতে প্রবেশের ফল দাঁড়ায় এই যে, আকস্মিকভাবে কোনাে গােপনীয় ও অবাঞ্ছিত দৃশ্য চোখে পড়ে যেতে পারে, কোনাে আপত্তিকর ও কামােত্তেজনা সৃষ্টিকারী ব্যাপারও দৃষ্টিগােচর হয়ে যেতে পারে এবং অনিচ্ছাকৃত আকস্মিক দৃষ্টিপাত একাধিকবার হয়ে তা ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাতে রূপান্তরিত হয়ে বিপথগামীতার সুযােগ সৃষ্টি করতে পারে। অতপর ক্রমশ তা পাপাচারমূলক ও অবৈধ সম্পর্কের জন্ম দিতে পারে। জাহেলী যুগে এরূপ রীতি প্রচলিত ছিলাে যে, একজন আরব অতর্কিতে অন্যের বাড়ীতে ঢুকে পড়তে এবং বলতাে, ‘ঢুকে পড়েছি!’ এভাবে কখনাে কখনাে গৃহকর্তাকে স্বীয় স্ত্রীর সাথে এমন অবস্থায় দেখতে পেতো যা অন্য কারাে দেখা উচিত নয়, অথবা নারী বা পুরুষকে নগ্ন কিংবা দেহের গােপনীয় অংশ অনাবৃত অবস্থায় দেখতে পেতাে। এটা গৃহকর্তার জন্যে বিব্রতকর ও কষ্টদায়ক হতাে এবং গৃহের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বিনীত হতাে। তা ছাড়া উত্তেজনাকর দৃশ্য বহিরাগতদের চোখে পড়ার কারণে জায়গায় জায়গায় গােলযােগ ও উচ্ছৃংখলতার ঘটনাও ঘটতাে। এ সব কারণেই আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে এই উঁচুমানের আদব তথা ভদ্র আচরণ শিক্ষা দিয়েছেন যে, অন্যের বাড়ীতে প্রবেশের আগে গৃহবাসীর কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে, তাদেরকে সালাম দিয়ে তাদেরকে আপন করে নিতে হবে এবং তাদের মন থেকে বিরূপ মনােভাব দূর করতে হবে, ‘হে ঈমানদাররা! তােমরা অন্যের বাড়ীতে ততােক্ষণ প্রবেশ করাে না যতােক্ষণ না সে বাড়ীর অধিবাসীদের অনুমতি গ্রহণ ও তাদেরকে সালাম করো…’ লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এখানে অনুমতি গ্রহণ বুঝানাের জন্যে ইসতিনাস শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, যার ধাতুগত অর্থ দাঁড়ায়, বন্ধুসুলভ অভ্যর্থনা পাওয়া, ঘনিষ্ঠ হওয়া, আন্তরিকতা সহকারে অভ্যর্থনা পাওয়া, আপন হওয়া বা করা, পােষ মানানাে, বিনীত হওয়া, বশীভূত হওয়া, ইত্যাদি। অর্থাৎ শুধু অনুমতি গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আন্তরিকভাবে ও বন্ধুসুলভ মনােভাব নিয়ে অভ্যর্থনা জানানাে চাই, এ দ্বারা সচ্ছন্দে ও সাদরে অনুমতি দান এবং আগন্তুকের ভদ্রজনােচিতভাবে আগমন ও অনুমতি প্রার্থনাও বুঝায়, যা গৃহবাসীর মনে তার প্রতি স্বতস্ফূর্ত সহৃদয়তা ও অভ্যর্থনার মানসিক প্রস্তুতি জন্মায়। এভাবে যে বিষয়টির দিকে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা এই যে, আগন্তুক অতিথিকে অন্যের বাড়ীতে প্রবেশের আগে বাড়ীওয়ালার মানসিক অবস্থা, সাংসারিক অবস্থা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সেসব অত্যাবশ্যকীয় বিষয়কে বিচেনায় আনতে হবে, যা দিনে কিংবা রাতে আগত অতিথির সামনে প্রকাশ পাক এটা বাড়ীওয়ালা পছন্দ করে না বা প্রকাশ পেলে কিছুটা বিব্রত বােধ করে। অনুমতি চাওয়ার পর দু’রকম অবস্থা দেখা দিতে পারে, বাড়ীর অধিবাসীরা কেউ বাড়ীতে নেই অথবা আছে। যদি কেউ না থাকে, তাহলে সাড়াশব্দ না পাওয়া সত্তেও অনুমতি চাওয়ার পরই ঢুকে পড়া জায়েয নয়। কেননা অনুমতি প্রাপ্তি ছাড়া প্রবেশ বৈধ নয়। যদি সেসব বাড়ীতে তােমরা কাউকে না পাও, তাহলে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত প্রবেশ করাে না। আর যদি অধিবাসীদের কেউ বাড়ীতে থেকে থাকে এবং অনুমতি না দেয়, তাহলেও প্রবেশ করা যাবে না। কেননা অনুমতি চাইলেই প্রবেশ বৈধ হয়ে যায় না। অনুমতি না দিলে অপেক্ষা করা ও ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকার পরিবর্তে ফিরে যাওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যদি তােমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও,’ তাহলে তােমরা ফিরে যাবে। এটাই তােমাদের জন্যে উত্তম।’ অর্থাৎ কোনাে রকম অপমান বােধ বা কুন্ঠাবােধ না করে এবং বাড়ীওয়ালা খারাপ ব্যবহার করলাে বা ঘৃণা ও অবজ্ঞা প্রকাশ করলাে ইত্যাদি না ভেবে সরাসরি ফিরে যাওয়া উচিত। কেননা মানুষের অনেক অজানা সমস্যা, অসুবিধা বা ওযর আপত্তি থাকতেই পারে। মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদেরকে বিব্ৰত না করে একাকী থাকতে দেয়া উচিত। ‘আর তােমরা যা কিছুই করো, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে অবগত।’ অর্থাৎ মানুষের মনের যাবতীয় গােপন অবস্থা এবং যাবতীয় আবেগ ও উত্তেজনা সম্পর্কে তিনি অবহিত। পক্ষান্তরে যে সমস্ত ঘর বাড়ীতে সব সময় লােকজন বসবাস করে না, যেমন হােটেল, মোটেল ও অতিথিশালা ইত্যাদি, সেগুলােতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ দূষণীয় নয়। কেননা অতিথিদের কষ্ট লাঘবের জন্যে প্রবেশ অপরিহার্য। আর যে যে কারণে অনুমতি গ্রহণ জরুরী, তা এখানে অনুপস্থিত। যেসব ঘর বাড়ীতে কেউ বাস করে না, কিন্তু তােমাদের জিনিসপত্র রয়েছে, সেগুলােতে তােমাদের প্রবেশে আপত্তি নেই। আল্লাহ তায়ালা জানেন তােমরা যা কিছু গােপন করাে এবং যা কিছু প্রকাশ করাে। বস্তুত সমগ্র ব্যাপারটা মানুষের গোপন ও প্রকাশ্য উভয় অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহর অবগত থাকা ও উদয় অবস্থা তার নিয়ন্ত্রণে থাকার ওপরই নির্ভরশীল। এই নিয়ন্ত্রণ ও অবগতিই হৃদয়ের আনুগত্য ও উল্লেখিত উন্নতমানের ভদ্র আচরণ নিশ্চিত করে যার উল্লেখ আল্লাহ তায়ালা স্বীয় গ্রন্থে করেছেন। এই গ্রন্থই মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যে বিধান দিয়ে থাকে। বস্তুত কোরআন একটা পূর্ণাংগ জীবন বিধান। সমাজ জীবনের এই ক্ষুদ্র বিধানটা এতে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সন্নিবেশিত হয়েছে। কেননা মানব জীবনের জন্যে মৌলিক ও খুঁটিনাটি উভয় প্রকারের জরুরী নিয়ম বিধি বর্ণনা করা তার আওতাভুক্ত। কেননা সে তার মৌলিক চিন্তাধারা ও খুঁটিনাটি বিধির মাঝে সমন্বয় বিধান করতে চায়। অন্যের বাড়ীতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণের কড়াকড়ি ও বাধ্যবাধকতা সে সব গৃহের নিরাপত্তা ও পবিত্রতা নিশ্চিত করে। আর এই নিরাপত্তা ও পবিত্রতা নিশ্চিত হওয়ার ফলেই মানুষের বাড়ি ঘর বসবাসের যােগ্য হয়েছে, এর অধিবাসীরা আকস্মিক জনসমাগমজনিত সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ ও গােপনীয় বিষয়গুলাে নিয়ে যখন তখন বিব্রত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। মানুষের আভ্যন্তরীণ ও গােপনীয় বিষয় শুধু যে শরীরের সাথে সংশ্লিষ্ট তা নয়, বরং পােশাক পরিচ্ছদ, খাদ্য দ্রব্য ও আসবাবপত্রের সাথেও এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যে কোনাে বাড়ীর অধিবাসীদের জন্যে এটা অবাঞ্ছিত, অরুচিকর ও বিব্রতকর বােধ হওয়া বিচিত্র নয় যে, কোনাে অতিথি আকস্মিকভাবে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে তাদের দ্রব্য সামগ্রীকে অগােছালাে অপরিপাটি ও অপরিষ্কার অবস্থায় দেখে ফেলুক। তা ছাড়া গৃহবাসীর মানসিক অবস্থা ও ভাবাবেগেরও গােপনীয়তা থাকতে পারে। যেমন : আমাদের অনেকেই এমন স্পর্শকাতর রুচির অধিকারী থাকতে পারে যে, সে বাড়ীর ভেতরে কোনাে ভাবাবেগের বশবর্তী হয়ে কান্নাকাটি করছে, কিংবা কোনাে উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনায় কারাে ওপর ক্রোধান্বিত হয়ে আছে অথবা কোনাে কারণে বেদনায় কাতর হয়ে ছটফট করছে, অথচ এসব দৃশ্য বা এর কারণ সে কোনাে বহিরাগতকে দেখতে বা জানতে দিতে ইচ্ছুক নয়। এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে কোরআন এই উচ্চাংগের আচরণবিধি তথা অনুমতি ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশে কড়াকড়ি সম্বলিত বিধি রচনা করেছে। সেই সাথে আকস্মিক দৃষ্টি বিনিময়ের ও দেখা-সাক্ষাতের সুযােগ যাতে কম হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিয়েছে। কেননা এগুলাে অনেক সময় মানুষের মনের সুপ্ত কামনা-বাসনাকে জাগিয়ে তােলে, এ থেকে অনেক অবাঞ্ছিত সম্পর্ক ও সংযােগের সৃষ্টি হয় এবং শয়তান এ সবের সুযােগ গ্রহণ করে নানা স্থানে নানা রকমের ফেতনা-ফাসাদের জন্ম দিয়ে থাকে। এ আয়াতগুলাে নাযিল হবার সময়ই মুসলমানরা এই সূক্ষ্ম সমস্যাগুলােকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। সবার আগে উপলব্ধি করেছিলেন স্বয়ং রাসূল(সা.)। আবু দাউদ ও নাসায়ী শরীফে বর্ণিত হাদীসে হযরত সা’দ বিন ওবাদার ছেলে কায়েস বর্ণনা করেন যে, একবার রসূল(স.) আমাদের বাড়ীতে এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে দরজায় করাঘাত করলেন। সা’দ অস্ফুট স্বরে জবাব দিলেন এবং অনুমতি দিলেন না। কায়েস বলেন, আমি বললাম, আপনি কি রসূল(স.)-কে বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন না? সা’দ বললেন, একটু অপেক্ষা করাে। তাকে আমাদের ওপর বেশী করে সালাম দেয়ার সুযােগ দাও। কিছুক্ষণ পর রসূল(স.) পুনরায় বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ এবারও সা’দ অস্ফুট স্বরে সালামের জবাব দিলেন এবং অভ্যর্থনা না জানিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। রসূল(স.) আবারাে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ এবারও বাড়ীর ভেতর থেকে কোনাে সাড়া না পেয়ে রসূল(স.) ফিরে চললেন। সা’দ তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এলেন এবং রসূল(স.)-এর পিছু পিছু চললেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল, আমি আপনার প্রতিটি সালাম শুনছিলাম ও চুপিসারে তার জবাব দিচ্ছিলাম, যাতে আপনি আমাদের ওপর আরাে বেশী করে সালাম দিতে থাকেন। এ কথা শুনে রাসূল(স.) সা’দের সাথে তার বাড়ীর দিকে ফিরে চললেন। সা’দ রসূল(স.)-এর গােছলের ব্যবস্থা করলেন। গােছলের পর তাকে জাফরান রঞ্জিত একটা পশমী পোশাক-খুমাইসা’ পরতে দিলেন। অতপর রাসূল(স.) হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, সা’দের পরিবার পরিজনের ওপর তােমার রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করাে। আবু দাউদে বর্ণিত অপর একটা হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে বিশর বর্ণনা করেন যে, রসূল(স.) কারাে বাড়ীতে গেলে দরজার মুখের ওপর গিয়ে দাঁড়াতেন না বরং দরজার ডান কোণে বা বাম কোণে দাঁড়াতেন এবং উচ্চ স্বরে বলতেন, আস্সালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম। কেননা তৎকালে দরজায় কোনাে পর্দা টানানাে থাকতাে না। তাই দরজার মাঝখানে দাঁড়ালে বাড়ীর ভেতরে দৃষ্টি চলে যেতাে। আবু দাউদে আরাে বর্ণিত আছে যে, একবার এক ব্যক্তি এসে রসূল(স.)-এর বাড়ীর দরজার ওপর দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে লাগলাে। রসূল(স.) তাকে বললেন, এভাবে দাঁড়াও অথবা এভাবে। (অর্থাৎ দরজার ডান কোণে বা বাম কোণে) কেননা দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যেই অনুমতি প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(স.) বলেছেন, কেউ যদি তােমার বাড়ীতে উঁকি ঝুঁকি মারে, তাহলে তুমি যদি তাকে পাথর মেরে চোখ ফুটো করে দাও, তাহলেও তোমার কোনাে দোষ হবে না। আবু দাউদে বর্ণিত আছে যে, বনু আমের গােত্রের এক ব্যক্তি এসে রসূল(স.)-এর বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি চাইলাে। রসূল(স.) তখন বাড়ীতেই ছিলেন। সে বললাে, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? রসূল(স.) তখন বাড়ীতেই ছিলেন। সে বললাে, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? রাসূল(স.) স্বীয় ভৃত্যকে বললেন, তুমি আগন্তুকের কাছে যাও এবং তাকে অনুমতি চাওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দাও। তাকে বলাে, তুমি বলাে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? লােকটি পদ্ধতিটা শিখে নিয়ে বললাে, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? তখন রাসূল(স.) তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে প্রবেশ করলাে। মােজাহেদ বর্ণনা করেন যে, ইবনে ওমর কোনাে একটা প্রয়ােজনে ফুসতাতে এক কোরেশী মহিলার কাছে এসেছিলেন। রৌদ তপ্ত পথ দিয়ে হেঁটে আসতে তার বেশ কষ্ট হয়েছিলাে । তথাপি তিনি কোনাে তাড়াহুড়াে না করে শান্তভাবে বললেন, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? মহিলা বললাে, শান্তির সাথে প্রবেশ করুন। ইবনে ওমর পুনরায় অনুমতি চাইলেন এবং সে মহিলাও আগের জবাবের পুনরাবৃত্তি করলেন। এই সময়ে ইবনে ওমর বাইরেই পায়চারি করতে লাগলেন। তিনি তৃতীয়বার বললেন, বলুন, আমি ভেতরে আসতে পারি? মহিলা বললেন, ভেতরে আসুন। অতপর ইবনে ওমর ভেতরে প্রবেশ করলেন। আতা ইবনে আবি রাবাহ হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমার কিছু এতিম বোন রয়েছে, যারা আমার সাথেই লালিত পালিত হয়েছে এবং আমি একই বাড়ীতে থাকি। তাদের কাছে যেতেও কি আমার অনুমতি নেয়া প্রয়ােজন? তিনি বললেন, হা। আমি আবারও তাকে জিজ্ঞেস করলাম, যাতে আমাকে অনুমতি দেন। কিন্তু তিনি অনুমতি দিলেন না। তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে উলংগ দেখতে চাও? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। আমি আবারও তার মতামত জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আল্লাহর আদেশ মানতে চাও? আমি বললাম হাঁ। তিনি বললেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। সহীহ বােখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসুল(স.) গভীর রাতে নিজ পরিবারের কাছে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে বিব্রত করতে নিষেধ করেছেন। অপর এক হাদীসে আছে যে, রসূল(স.) দিনের বেলায় মদিনায় উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাত ভেতরে প্রবেশ না করে মদিনার উপকণ্ঠে যাত্রা বিরতি করেন এবং নিজের সফরসংগীদেরকে বলেন, তােমরা অপেক্ষা করো, আমরা দিনের শেষ ভাগে শহরে প্রবেশ করবাে, যাতে তার অধিবাসীরা নিজেদের সাজগােছ পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন করার সুযােগ পায়। রাসূল(স.) ও সাহাবায়ে কেরামের অনুভূতি যে এতােখানি তীব্র ও সংবেদনশীল হয়েছিলাে তার কারণ এই যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এরূপ উন্নতমানের আচরণ পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। অথচ আজ আমরা মুসলমান হওয়া সত্তেও এ ধরনের সূক্ষ্ম বিষয়ে আমাদের অনুভূতি ভােতা হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যকার কোনাে ব্যক্তি তার কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির কাছে দিনের বা রাতের যে কোনাে প্রহরে ও যে কোনাে মুহূর্তে অতর্কিতে অতিথি হতে কিছুমাত্র কুন্ঠাবােধ করে না, একবার অতিথি হয়ে এলে আর বিদায় হবার নামটিও মুখে আনি না। যতােক্ষণ বাড়ীওয়ালা বিরক্ত হয়ে বিদায় না দেয়, ততােক্ষণ যেতেই চায় না। অনেকের বাসায় টেলিফোন থাকে। কারাে বাড়ীতে যাওয়ার আগে টেলিফোনের মাধ্যমে অনুমতি চাওয়ার সুযােগ থাকে। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি পাওয়া যেতে পারে, আবার সময়টা অনুপযােগী এই ওজুহাতে তা বিলম্বিতও হতে পারে। অথচ আমরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে সময় অসময় বিবেচনা না করে যখন তখন আমাদের আত্মীয়স্বজনের ঘাড়ে সওয়ার হই। তারপর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এমন রীতিও চালু নেই যে, গৃহস্থ এরূপ অতর্কিত অতিথির আগমনে বিরক্ত হলে আগন্তুক ফিরে যাবে। আমরা এমন মুসলমান যে, ঠিক খাওয়া দাওয়ার সময়েও যে কোনাে আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে হাযির হয়ে যাই। গৃহস্থ যদি খাবার না দেয় তবে তাতেও অসন্তুষ্ট হই। কখনাে বা রাতের বেলা হাযির হয়ে যাই এবং গৃহস্থ যদি রাতে থাকতে না বলে তবে অসন্তুষ্ট হই। তাদের সুবিধা অসুবিধার কোনাে তােয়াক্কা করি না। এর কারণ এই যে, আমরা ইসলামী রীতিনীতির অনুশীলন করতে অভ্যস্ত হইনি। রসূলের শিক্ষাকে আমরা নিজেদের খেয়াল খুশীর উর্ধে স্থান দিতে প্রস্তুত নই। আমরা নিছক একটা ভ্রান্ত সমাজ ব্যবস্থার দাসে পরিণত হয়ে গিয়েছি, যার সপক্ষে আল্লাহ তায়ালা কোনাে প্রমাণ নাযিল করেননি। অথচ অমুসলিমদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তারা ইসলামী রীতিনীতির অনেকটা কাছাকাছি রীতিনীতি অনুসরণ করে। তাদের রীতিনীতি আমাদেরকে অনেক সময় মুগ্ধ করে। আর আমরা নিজেদের আসল দ্বীন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি না। যদি তা করতাম তাহলে তার দিকে ফিরে গিয়েই আমরা সাচ্ছন্দ ও তৃপ্তি অনুভব করতাম। অন্যের বাড়ীতে প্রবেশ করার আগে অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত ইসলামী আচরণ নিয়ে আলােচনা এখানে শেষ করা হয়েছে। এটা শুধু যে একটা সুসভ্য নৈতিক আচরণ তা নয়, বরং ভাবাবেগ ও মনমানসিকতাকে পবিত্র কর ও পবিত্র রাখা এবং এ ক্ষেত্রে বিশৃংখলা ও অরাজকতার উপকরণগুলাে থেকে সমাজকে রক্ষা করার নিশ্চয়তা দানকারী একটা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাও বটে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৭-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মানুষ সামাজিক জীব, সমাজে বসবাস করতে হলে একজনের সাথে অপরজনের উঠা-বসা, চলা-ফেরা ও বাড়িতে গমনাগমনের প্রয়োজন হয়। নিজের বাড়িতে যেমন চলাফেরা করা যায় অপরের বাড়িতে তো সেভাবে আসা-যাওয়া করা যায় না। সেজন্য ইসলাম অপরের বাড়িতে প্রবেশের কিছু শিষ্টাচার দিয়েছে, যা মেনে চলার মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন (১) মানুষের স্বাধীনতায় বিঘœ সৃষ্টি ও কষ্টদান থেকে বিরত থাকা, যা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে হয়ে থাকে। (২) অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে আগন্তুক ব্যক্তির সম্মান বজায় থাকবে, কেননা কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে বাড়ির ভিতরের লোকজন স্বভাবতই তার ওপর রাগ করতে পারেন। (৩) নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা দমন। (৪) মানুষ মাঝে মাঝে নিজ বাড়িতে নির্জনে এমন কাজ করে যা অন্যকে অবগত করতে চায় না। যদি কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে তাহলে গোপন বিষয়ে প্রকাশ হয়ে যাবে।
استيناس শব্দের অর্থ জানা, অর্থাৎ যতক্ষণ না তোমরা জানতে পেরেছ যে, ঘরে কে আছে এবং সে তোমাদেরকে ভিতরে আসার অনুমতি দিয়েছে, ততক্ষণ তোমরা ভিতরে প্রবেশ করবে না। কেউ কেউ تَسْتَأْنِسُوْا কে অনুমতি অর্থে ব্যবহার করেছেন। আয়াতে অন্যের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি নেয়ার কথা আগে বলা হয়েছে তারপর সালামের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হাদীস থেকে জানা যায়, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে সালাম দিতেন এবং পরে প্রবেশ করার অনুমতি নিতেন। অনুরূপ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি তিনবার অনুমতি চাইতেন। অতঃপর কোন উত্তর না পেলে তিনি ফেরত আসতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো অভ্যাস ছিল যে, অনুমতি চাওয়ার সময় দরজার ডানে বা বামে দাঁড়াতেন, একেবারে সামনে দাঁড়াতেন না যাতে দরজা খোলা থাকলে অথবা খোলা হলে সরাসরি ভিতরে নজর পড়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬২৪৫)
অনুরূপ তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে উঁকি মারতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এমনকি বাড়ির ভিতরে যে উঁকি মারে সে ব্যক্তির চোখ বাড়ির লোকে নষ্ট করে দিলেও তার কোন অপরাধ নেই। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯০২, সহীহ মুসলিম হা: ২১৫৮)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এটাও অপছন্দ ছিল যে, ভেতর থেকে বাড়ির মালিক ‘কে তুমি’ জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে নাম না বলে কেবল ‘আমি’ বলা। অর্থাৎ ‘কে’ জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে নিজের নামসহ পরিচয় দিতে হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬২৫০)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না, আর যদি ফিরে যেতে বলে তাহলে প্রবেশ না করে ফিরে যেও, এটাই উত্তম হবে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আরো একটি বিধান বর্ণনা করেছেনন যে গৃহে কোন লোক বসবাস করে না ঐ গৃহে যদি কোন দ্রব্য-সামগ্রী থাকে তাহলে ঐ গৃহ থেকে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে আসতে হলে তাতে প্রবেশ করার জন্য কোন অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
সুতরাং আমরা যদি এ বিধানগুলো মেনে চলি তাহলে সমাজে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব, কোন বিশৃংখলা হবে না এবং কোন ভুল বুঝা-বুঝিরও সৃষ্টি হবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অন্যের বাড়িতে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
২. সর্বোচ্চ তিনবার সালাম দিয়ে অনুমতি চাইতে হবে, যদি অনুমতি না দেয় তাহলে ফিরে যেতে হবে।
৩. সালামের উত্তর দেয়ার পরেও যদি বলে যে ফিরে যাও, তাহলেও ফিরে যাওয়াটা উত্তম।
৪. মানব বসবাসহীন যে গৃহে কোন দ্রব্যসামগ্রী রাখা হয় তাতে প্রবেশের জন্য কোন অনুমতি লাগবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৭-২৯ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে শরীয়ত সম্মত আদব বা ভদ্রতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। ঘোষিত হচ্ছেঃ কারো বাড়ীতে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি প্রার্থনা কর। অনুমতি পেলে কর। প্রথমে সালাম বল। প্রথমবারের অনুমতি প্রার্থনায় যদি অনুমতি না দিলে তবে দ্বিতীয়বার অনুমতি চাও। এবারেও অনুমতি না পেলে তৃতীয়বার অনুমতি প্রার্থনা কর। যদি এই তৃতীয়বারেও অনুমতি না পাও তবে ফিরে যাও। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আবূ মূসা (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন। তিনবার তিনি তার বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি চান। যখন কেউই তাঁকে ডাকলেন না তখন তিনি ফিরে আসলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত উমার (রাঃ) লোকদেরকে বললেনঃ “দেখো তো, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ) ভিতরে আসতে চাচ্ছেন। তাঁকে ভিতরে ডেকে নাও।” এক লোক বাইরে এসে দেখে যে, তিনি ফিরে গেছেন। লোকটি গিয়ে হযরত উমার (রাঃ)-কে এ খবর দিলো। পরে হযরত উমার (রাঃ)-এর সাথে হযরত আবু মূসা (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হলে হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি ফিরে গিয়েছিলেন কেন?” উত্তরে হযরত আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশ এই যে, তিনবার অনুমতি প্রার্থনার পরেও অনুমতি না পেলে ফিরে আসতে হবে। আপনার ওখানে গিয়ে আমি ভিতরে প্রবেশের জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে হাদীসের উপর আমল করে ফিরে এসেছি।” হযরত উমার (রাঃ) তখন তাঁকে বলেনঃ “আপনি এ হাদীসের পক্ষে সাক্ষী আনয়ন করুন, অন্যথায় আমি আপনাকে শাস্তি প্রদান করবো।” এই কথা অনুযায়ী হযরত আবু মূসা (রাঃ) ফিরে এসে আনসারের এক সমাবেশে হাযির হন এবং তাদের সামনে ঘটনাটি বর্ণনা করেন এবং বলেনঃ “আপনাদের মধ্যে কেউ এই হাদীসটি শুনে থাকলে তিনি যেন আমার সাথে গিয়ে হযরত উমারের সামনে এটা বর্ণনা করেন।” আনসারগণ বলেনঃ “এটা তো সাধারণ মাসআলা। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ কথা বলেছেন এবং আমরা শুনেছি। আমরা আমাদের মধ্যকার সবচেয়ে অল্প বয়সী ছেলেটিকেই আপনার সাথে পাঠাচ্ছি। সেই সাক্ষ্য দিয়ে আসবে।” অতঃপর হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) গেলেন এবং হযরত উমার (রাঃ)-কে বললেনঃ “আমিও রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে একথা শুনেছি।” ঐ সময় হ্যরত উমার (রাঃ) আফসোস করে বলেনঃ “বাজারের আদান-প্রদান আমাকে এই মাসআলা থেকে উদাসীন রেখেছে।”
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত সা’দ ইবনে উবাদা (রাঃ)-এর কাছে (তার বাড়ীতে প্রবেশের) অনুমতি চান। তিনি আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলেন। হযরত সা’দ (রাঃ) উত্তরে ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলেন। কিন্তু তিনি এমন স্বরে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) শুনতে পাননি। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার সালাম দেন এবং তিনবারই একই অবস্থা ঘটে। তিনি সালাম করেন এবং হযরত সা’দ জবাবও দেন। কিন্তু তিনি শুনতে পান না। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখান থেকে ফিরে আসতে শুরু করেন। এ দেখে হযরত সা’দ (রাঃ) তার পিছনে দৌড় দেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার প্রত্যেক সালামের শব্দই আমার কানে পৌঁছেছে এবং প্রত্যেক সালামের আমি জবাবও দিয়েছি, কিন্তু আপনার দুআ ও বরকত বেশী প্রাপ্তির আশায় এমন স্বরে সালামের জবাব দিয়েছি যেন আপনার কানে না পৌঁছে। সুতরাং মেহেরবানী করে এখন আমার বাড়ী ফিরে চলুন।” তাঁর একথায় রাসূলল্লাহ (সঃ) তার (হযরত সা’দের রাঃ) বাড়ীতে ফিরে আসেন। হযরত সা’দ (রাঃ) তাঁর সামনে কিশমিশ পেশ করেন। তিনি তা খেয়ে নিয়ে বলেনঃ “তোমার এ খাদ্য সৎ লোকে খেয়েছেন এবং ফেরেশতামণ্ডলী তোমার প্রতি রহমতের জন্যে প্রার্থনা করেছেন। তোমার এ খাদ্য দ্বারা রোযাদারগণ রোযার ইফতার করেছেন।”এহদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, যে সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) সালাম বলেন এবং হযরত সাদ (রাঃ) নিম্নস্বরে জবাব দেন তখন তার পুত্র হযরত কায়েস (রাঃ) তাঁর পিতাকে বলেনঃ “আপনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি কেন দিচ্ছেন না?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “চুপ থাকো, দেখো, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়বার সালাম দিবেন এবং দ্বিতীয়বার আমরা তাঁর দুআ পাবো।” ঐ রিওয়াইয়াতে এও আছে যে, সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোসল করেন। হযরত সা’দ (রাঃ) তাঁর সামনে যাফরান বা ওয়ারসের রঙে রঞ্জিত একখানা চাদর পেশ করেন যেটা তিনি নিজের দেহ মুবারকে জড়িয়ে নেন। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে হযরত সা’দ (রাঃ)-এর জন্যে দু’আ করেনঃ “হে আল্লাহ! সা’দ ইবনে উবাদা (রাঃ)-এর বংশধরের উপর দরূদ ও রহমত বর্ষণ করুন!” অতঃপর তিনি সেখানে আহার করেন। তিনি সেখান থেকে বিদায় হওয়ার ইচ্ছা করলে হযরত সা’দ (রাঃ) তার গাধার পিঠে গদি কষে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আনয়ন করেন এবং তাঁর ছেলে কায়েস (রাঃ)-কে বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাথে যাও।” তিনি তখন তাঁর সাথে সাথে চললেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত কায়েস (রাঃ)-কে বললেনঃ “কায়েস (রাঃ)! তুমিও সওয়ার হয়ে যাও।”
হযরত কায়েস (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “দুটোর মধ্যে একটা তোমাকে অবশ্যই করতে হবে। সওয়ার হও, না হয় ফিরে যাও।” তখন হযরত কায়েস (রাঃ) ফিরে আসাই স্বীকার করেন।
এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, বাড়ীতে প্রবেশের জন্যে অনুমতি প্রার্থনাকারীকে দর্যর সামনে দাঁড়ানো চলবে না। বরং তাকে ডানে বা বামে একটু সরে দাড়াতে হবে। কেননা, সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কারো বাড়ীতে যেতেন তখন তিনি তার বাড়ীর দরযার ঠিক সামনে দাঁড়াতেন না। বরং এদিক-ওদিক একটু সরে দাঁড়াতেন। আর তিনি উচ্চস্বরে সালাম বলতেন। তখন পর্যন্ত দরযার উপর পর্দা লটকানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না।
রাসূলুলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীর দরযার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে একটি লোক ভিতরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাকে শিক্ষা দিবার জন্যে বলেনঃ “(স্ত্রীলোকের প্রতি) দৃষ্টি যেন না পড়ে এজন্যেই তো অনুমতি প্রার্থনার ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলে দরার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি প্রার্থনার কি অর্থ হতে পারে? হয় এদিকে একটু সরে দাঁড়াবে, না হয় ওদিকে একটু সরে দাঁড়াবে।”
অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ “কেউ যদি তোমার বাড়ীতে তোমার অনুমতি ছাড়াই উঁকি মারতে শুরু করে এবং তুমি তাকে কংকর মেরে দাও আর এর ফলে তার চক্ষু বিদীর্ণ হয়ে যায় হবে তোমার কোন অপরাধ হবে না।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত জাবির (রাঃ) তাঁর পিতার ঋণ আদায়ের চিন্তায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হন। তিনি দরযায় করাঘাত করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “কে?” হযরত জাবির (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “আমি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি, আমি?” তিনি যেন ‘আমি’ বলাকে অপছন্দ করলেন। কেননা, ‘আমি’ বলাতে ঐ ব্যক্তি কে তা জানা যায় না যে পর্যন্ত
নাম বা কুনিয়াত বলা হবে। আমি তো প্রত্যেকেই নিজের জন্যে বলতে পারে। কাজেই এর দ্বারা প্রকৃত অনুমতি প্রার্থনাকারীর পরিচয় লাভ করা যেতে পারে না।
(আরবি) এবং (আরবি) একই কথা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) কথাটি লেখকদের ভুল। (আরবি) বলা উচিত ছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কিরআত এটাই ছিল। আর হযরত উবাই ইবনে কাবেরও (রাঃ) কিরআত এটাই। কিন্তু এটা খুবই গরীব বা দুর্বল উক্তি। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর মাসহাফে (আরবি) এইরূপ রয়েছে।
সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রাঃ) মুসলমান হওয়ার পর একদা কিলদাহ ইবনে। হাম্বল (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন। তিনি ঐ সময় উপত্যকার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। কিলদাহ ইবনে হাম্বল (রাঃ) সালাম প্রদান ও অনুমতি প্রার্থনা ছাড়াই তাঁর নিকট পৌছে যান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “ফিরে যাও এবং বল-আসসালামু আলাইকুম। আমি আসতে পারি কি?” এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। (ইমাম আবু দাউদ (রাঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
বর্ণিত আছে যে, বানু আমির গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে তার বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করে। সে বলেঃ “আমি ভিতরে আসতে পারি কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এক গোলামকে বলেনঃ “তুমি বাইরে গিয়ে তাকে অনুমতি প্রার্থনা করার পদ্ধতি শিখিয়ে এসো। সে যেন প্রথমে সালাম দেয় এবং পরে অনুমতি প্রার্থনা করে। লোকটি তার একথা শুনে নেয় এবং ঐভাবেই সালাম দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে অনুমতি দেন এবং সে ভিতরে প্রবেশ করে।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেন)
আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একটি লোক এসে সালাম না দিয়েই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীতে প্রবেশের জন্যে তার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) রওযাহ নামী তাঁর একটি দাসীকে বলেনঃ “লোকটি অনুমতি প্রার্থনার পদ্ধতি ভালরূপে অবগত নয়। তুমি উঠে গিয়ে তাকে বল যে, সে যেন আসসালামু আলাইকুম বলার পর বলে-“আমি প্রবেশ করতে পারি কি?” লোকটি এ কথা শুনে নেয় এবং ঐ ভাবেই সে সালাম দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করে।
হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কথা বলার পূর্বে সালাম রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, এটি দুর্বল হাদীস)
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) একদা হাজত পুরো করে আসছিলেন। কিন্তু রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই তিনি এক কুরাইশীর কুটিরের নিকট এসে বলেনঃ “আসসালামু আলাইকুম। আমি ভিতরে আসতে পারি কি?” কুরাইশী বলেঃ “শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে আসুন!” তিনি তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করেন। লোকটি ঐ একই উত্তর দেয়। তার পা পুড়ে যাচ্ছিল। কখনো তিনি আশ্রয় নিচ্ছিলেন এই পায়ের উপর কখনো ঐ পায়ের উপর। তিনি তাকে বলেনঃ বল- ‘আসুন’। সে তখন বলেঃ “ আসুন।” এরপর তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন।
হযরত উম্মে আইয়াস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা চারজন স্ত্রীলোক হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করে বলি-আমরা ভিতরে আসতে পারি কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ “না, তোমাদের মধ্যে অনুমতি প্রার্থনা করার পদ্ধতি যার জানা আছে তাকে অনুমতি প্রার্থনা করতে বলো।” তখন আমাদের মধ্যে একজন মহিলা সালাম বলে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি আমাদেরকে অনুমতি প্রদান করলেন এবং (আরবি)-এই আয়াতটি পাঠ করে শুনালেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা তোমাদের মা ও ভগ্নীর নিকট প্রবেশের সময়ও অনুমতি প্রার্থনা করবে।”
হযরত আদী ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আনসারের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলে- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন কোন সময় আমি বাড়ীতে এমন অবস্থায় থাকি যে, ঐ সময় আমার কাছে আমি আমার পিতা ও পুত্রের আগমনও পছন্দ করি না। কেননা, ঐ সময় আমি এমন অবস্থায় থাকি না যে তাদের দৃষ্টি আমার উপর পড়া আমি অপছন্দ না করি। এমতাবস্থায় পরিবারের কোন লোক এসেই পড়ে (সুতরাং কি করা যায়?)।” ঐ সময় (আরবি)-এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনটি আয়াত এমন রয়েছে যেগুলোর আমল মানুষ পরিত্যাগ করেছে। একটি এই যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকট ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু।” অথচ লোকদের ধারণায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ঐ ব্যক্তি যার বাড়ী বড় (এবং যে সম্পদ ও শাসন ক্ষমতার অধিকারী)। আর আদব ও ভদ্রতার আয়াতগুলোর উপর আমলও মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। হযরত আতা (রঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমার বাড়ীতে আমার পিতৃহীন বোনেরা রয়েছে, যারা একই বাড়ীতে থাকে এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব আমারই উপর ন্যস্ত রয়েছে। তাদের কাছে গেলেও কি আমাকে অনুমতি নিতে হবে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, অবশ্যই তোমাকে অনুমতি নিতে হবে।” হযরত আতা (রঃ) দ্বিতীয়বার তাঁকে ঐ প্রশ্নই করেন যে, হয় তো কোন ছুটির সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু এবারও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “তুমি কি তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখা পছন্দ কর?” তিনি জবাবে বলেনঃ “না।” তিনি বললেনঃ “তাহলে অবশ্যই তোমাকে অনুমতি নিতে হবে।” হযরত আতা (রঃ) তৃতীয়বার ঐ প্রশ্নই করেন। তিনি জবাবে বলেনঃ “তুমি কি আল্লাহর হুকুম মানবে না?” তিনি উত্তর দেনঃ “হ্যাঁ, অবশ্যই মানবো।” তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে খবর না দিয়ে তুমি তাদের পাশেও যাবে না।”
হযরত তাউস (রঃ) বলেনঃ “যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ নিষিদ্ধ তাদেরকে আমি তাদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলি এর চেয়ে জঘন্য বিষয় আমার কাছে আর কিছুই নেই।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “সংবাদ না দিয়ে তোমার মায়ের কাছেও যেয়ো না।”
হযরত আতা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “অনুমতি না নিয়ে কি স্ত্রীর কাছেও যাওয়া চলবে না?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এখানে অনুমতির প্রয়োজন নেই।” এই উক্তিরও ভাবার্থ এই যে, স্ত্রীর নিকট অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নেই বটে, কিন্তু তাকেও সংবাদ অবশ্যই দিতে হবে। এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, ঐ সময় হয় তো স্ত্রী এমন অবস্থায় রয়েছে যে অবস্থায় তার স্বামী তাকে দেখুক এটাও সে পছন্দ করে না।
হযরত যয়নব (রাঃ) বলেনঃ “আমার স্বামী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ঘরে যখন আমার কাছে আসতেন তখন তিনি গলা খাঁকড়াতেন। কখনো কখনো তিনি দরার বাইরে কারো সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলতেন যাতে বাড়ীর লোকেরা তার আগমন সংবাদ জানতে পারে।” হযরত মুজাহিদ (রঃ)। -এর অর্থও এটাই করেন যে, এটা হলো গলা খাঁকড়ানো, থুথু ফেলা ইত্যাদি। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ যখন তার বাড়ীতে প্রবেশ করবে তখন তার বাইরে থেকে গলা খাঁকড়ানি দেয়া বা জুতার শব্দ শুনিয়ে দেয়া মুস্তাহাব।
একটি হাদীসে এসেছে যে, সফর হতে ফিরে এসে রাত্রিকালে পূর্বে না জানিয়ে আকস্মিকভাবে বাড়ীতে প্রবেশ করতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিষেধ করেছেন। কেননা, এটা যেন গোপনীয়ভাবে বাড়ীর লোকদের বিশ্বাসঘাতকতার সন্ধান নেয়া।
অন্য একটি হাদীসে এসেছে যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) সকালে সফর হতে ফিরে আসেন। তখন তিনি সঙ্গীদেরকে নির্দেশ দেন যে, তারা যেন বস্তির পাশে অবতরণ করেন যাতে মদীনায় তাদের আগমন সংবাদ প্রচারিত হয়ে যায়। আর সন্ধ্যার সময় যেন তারা নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ করেন। যাতে এই অবসরে মহিলারা নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সুন্দররূপে সাজিয়ে নিতে পারে।
আর একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “সালাম তো আমরা জানি, কিন্তু এর পদ্ধতি কি (আরবি) জবাবে তিনি বলেনঃ “উচ্চ স্বরে সুবহানাল্লাহ বা আলহামদুলিল্লাহ অথবা আল্লাহু আকবার বলা কিংবা গলা খাঁকড়ানো, যাতে বাড়ীর লোকেরা জানতে পারে আসছে।”
হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “তিনবার অনুমতি প্রার্থনা এই জন্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে যে, প্রথমবারে বাড়ীর লোকেরা জানতে পারবে যে, এ ব্যক্তি অমুক। কাজেই তারা নিজেদেরকে সামলিয়ে নিবে ও সতর্ক হয়ে যাবে। আর তৃতীয়বারে ইচ্ছা হলে তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেবে, না হলে ফিরিয়ে দেবে। অনুমতি না পেয়ে দরযার উপর দাঁড়িয়ে থাকা বদভ্যাস। কোন কোন সময় মানুষের কাজ ও ব্যস্ততা এতো বেশী হয় যে, ঐ সময় তারা অনুমতি দিতে পারে ।”
মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রাঃ) বলেন যে, অজ্ঞতার যুগে সালামের কোন প্রচলন ছিল না। একে অপরের সাথে মিলিত হতো, কিন্তু তাদের মধ্যে সালামের আদান-প্রদান হতো না। কেউ কারো বাড়ী গেলে অনুমতি নিতো না, এমনিতেই প্রবেশ করতো। প্রবেশ করার পরে বলতো: “আমি এসে গেছি। এর ফলে কোন কোন সময় বাড়ীর লোকদের বড়ই অসুবিধা হতো। এমনও হতো যে, বাড়ীতে তারা এমন অবস্থায় থাকতো যে অবস্থায় তারা কারো প্রবেশকে খুবই খারাপ ভাবতো। আল্লাহ তা’আলা এই কু-প্রথাগুলো সুন্দর আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দূর করে দেন। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম। এতে আগমনকারী ও বাড়ীর লোক উভয়ের জন্যেই শান্তি ও কল্যাণ রয়েছে। এগুলো তোমাদের জন্যে উপদেশ ও শুভাকাঙ্ক্ষা।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যদি তোমরা গৃহে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। কেননা, এটা হলো অন্যের মালিকানায় হস্তক্ষেপ করা, যা বৈধ নয়। বাড়ীর মালিকের এ অধিকার রয়েছে যে, ইচ্ছা হলে সে অনুমতি দেবে, না হলে দেবে না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়ঃ ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। বরং এটা তো বড়ই উত্তম পন্থা।
কোন কোন মুহাজির (রাঃ) দুঃখ করে বলতেনঃ “আমাদের জীবনে এই আয়াতের উপর আমল করার সুযোগ হলো না। যদি কেউ আমাদেরকে বলতো, ফিরে যাও, তবে আমরা এই আয়াতের উপর আমল করতঃ ফিরে যেতাম!”
অনুমতি না পেলে দরযার উপর দাঁড়িয়ে থাকতেও নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ যে গৃহে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের দ্রব্য-সামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনও পাপ নেই। এ আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াত হতে বিশিষ্ট। এতে ঐ ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অবকাশ রয়েছে যে ঘরে কেউ বাস করে না এবং ওর মধ্যে কারো কোন আসবাবপত্র থাকে। যেমন অতিথিশালা ইত্যাদি। এখানে প্রবেশের একবার যখন অনুমতি পাওয়া যাবে তখন বারবার আর অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাহলে এ আয়াতটি যেন পূর্ববর্তী আয়াত হতে স্বতন্ত্র। কেউ কেউ বলেছেন যে, এর দ্বারা। ব্যবসায়িকদের ঘর বুঝানো হয়েছে। যেমন গুদাম ঘর, মুসাফিরখানা ইত্যাদি। প্রথম কথাটি বেশী প্রকাশমান। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা কবিতার ঘরকে বুঝানো হয়েছে।
اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#972)
[تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
Seek permission with Salam.]
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 27-29
www.motaher21.net
24:27
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ بُیُوۡتِکُمۡ حَتّٰی تَسۡتَاۡنِسُوۡا وَ تُسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَہۡلِہَا ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۲۷﴾
O you who have believed, do not enter houses other than your own houses until you ascertain welcome and greet their inhabitants. That is best for you; perhaps you will be reminded.
Seeking Permission and the Etiquette of entering Houses
Allah says:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا لَاا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
O you who believe! Enter not houses other than your own, until you have asked permission and greeted those in them;
This is the Islamic etiquette. Allah taught these manners (of seeking permission) to His believing servants and commanded them not to enter houses other than their own until they had asked permission, i.e., to ask for permission before entering and to give the greeting of Salam after asking.
One should seek permission three times, and if permission is given, (he may enter), otherwise he should go away.
It was reported in the Sahih that when Abu Musa asked `Umar three times for permission to enter and he did not give him permission, he went away. Then Umar said, “Did I not hear the voice of Abdullah bin Qays asking for permission to enter Let him come in.”
So they looked for him, but found that he had gone. When he came later on, Umar said, “Why did you go away?”
He said, “I asked for permission to enter three times, but permission was not given to me, and I heard the Prophet say,
إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلَثًا فَلَمْ يُوْذَنْ لَهُ فَلْيَنْصَرِفْ
If any one of you asks for permission three times and it is not given, then let him go away.”
Umar said, “You should certainly bring me evidence for this or I shall beat you!”
So he went to a group of the Ansar and told them what Umar said.
They said, “No one will give testimony for you but the youngest of us.” So Abu Sa`id Al-Khudri went with him and told Umar about that.
Umar said, “What kept me from learning that was my being busy in the marketplace.”
Imam Ahmad recorded a narration stating that Anas or someone else said that the Messenger of Allah asked for permission to enter upon Sa`d bin Ubadah.
He said:
السَّلَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ
As-Salamu `Alayka wa Rahmatullah,
Sa`d said, “Wa `Alaykas-Salam Wa Rahmatullah,” but the Prophet did not hear the returned greeting until he had given the greeting three times and Sa`d had returned the greeting three times, but he did not let him hear him (i.e., Sa`d responded in a low voice). So the Prophet went back, and Sa`d followed him and said,
“O Messenger of Allah, may my father and mother be ransomed for you! You did not give any greeting but I responded to you, but I did not let you hear me. I wanted to get more of your Salams and blessings.”
Then he admitted him to his house and offered him some raisins. The Prophet ate, and when he finished, he said,
أَكَلَ طَعَامَكُمُ الاَْبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَيِكَةُ وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّايِمُونَ
May the righteous eat your food, may the angels send blessings upon you and may those who are fasting break their fast with you.
It should also be known that the one who is seeking permission to enter should not stand directly in front of the door; he should have the door on his right or left, because of the Hadith recorded by Abu Dawud from Abdullah bin Busr, who said,
“When the Messenger of Allah came to someone’s door, he would never stand directly in front of it, but to the right or left, and he would say,
السَّلَمُ عَلَيْكُمْ
السَّلَمُ عَلَيْكُمْ
As-Salamu `Alaykum,
As-Salamu `Alaykum.
That was because at that time the houses had no covers or curtains over their doorways.”
This report was recorded by Abu Dawud only.
In the Two Sahihs, it is recorded that the Messenger of Allah said:
لَوْ أَنَّ امْرَءًا اطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ إِذْنٍ فَخَذَفْتَهُ بِحَصَاةٍ فَفَقَأْتَ عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنْ جُنَاحٍ
If a person looks into your house without your permission, and you throw a stone at him and it puts his eye out, there will be no blame on you.
The Group recorded that Jabir said,
“I came to the Prophet with something that was owed by my father and knocked at the door. He said,
مَنْ ذَا
Who is that?
I said, “I am!”
He said,
أَنَا أَنَا
I, I, as if he disliked it.”
He did not like it because this word tells you nothing about who is saying it, unless he clearly states his name or the name by which he is known, (nickname) otherwise everyone could call himself “Me”, and it does not fulfill the purpose of asking permission to enter, which is to put people at their ease, as commanded in the Ayah.
Al-`Awfi narrated from Ibn Abbas,
“Putting people at ease means seeking permission to enter.”
This was also the view of others.
Imam Ahmad recorded from Kaladah bin Al-Hanbal that at the time of the Conquest (of Makkah), Safwan bin Umayyah sent him with milk, a small gazelle, and small cucumbers when the Prophet was at the top of the valley. He said, “I entered upon the Prophet and I did not give the greeting of Salam nor ask for permission to enter.
The Prophet said,
ارْجِعْ فَقُلْ السَّلَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ
Go back and say:”As-Salamu `Alaykum, may I enter?”
This was after Safwan had become Muslim.”
This was also recorded by Abu Dawud, At-Tirmidhi and An-Nasa’i.
At-Tirmidhi said, “Hasan Gharib.”
Ibn Jurayj said that he heard Ata’ bin Abi Rabah narrating that Ibn Abbas, may All�h be pleased with him, said,
“There are three Ayat whose rulings people neglect.
Allah says,
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
(Verily, the most honorable of you with Allah is the one who has the most Taqwa. (49:13), But (now) they say that the most honorable of them with Allah is the one who has the biggest house.
As for seeking permission, the people have forgotten all about it.”
I said, “Should I seek permission to enter upon my orphan sisters who are living with me in one house?”
He said, “Yes.”
I asked him to make allowances for me but he refused and said, “Do you want to see them naked?”
I said, “No.”
He said, “Then ask for permission to enter.”
I asked him again and he said, “Do you want to obey Allah!”
I said, “Yes.”
He said, “Then ask for permission.”
Ibn Jurayj said,
“Ibn Tawus told me that his father said, `There are no women whom I hate to see naked more than those who are my Mahrams.’
He was very strict on this point.”
Ibn Jurayj narrated that Az-Zuhri said,
“I heard Huzayl bin Shurahbil Al-Awdi Al-A`ma (say that) he heard Ibn Mas`ud say, `You have to seek permission to enter upon your mothers.”‘
Ibn Jurayj said,
“I said to Ata’:`Does a man have to seek permission to enter upon his wife?’
He said, `No, it can be understood that this is not obligatory, but it is better for him to let her know that he is coming in so as not to startle her, because she may be in a state where she does not want him to see her.”‘
Abu Ja`far bin Jarir narrated from the nephew of Zaynab — the wife of Abdullah bin Mas`ud — that Zaynab, may Allah be pleased with her, said,
“When Abdullah came back from some errand and reached the door, he would clear his throat and spit, because he did not want to come suddenly and find us in a state he disliked.”
Its chain of narration is Sahih.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا لَاا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
O you who believe! Enter not houses other than your own, until you have asked permission and greeted those in them;
Muqatil bin Hayyan said:
“During the Jahiliyyah, when a man met his friend, he would not greet him with Salam; rather he would say “Huyyita Sabahan” or “Huyyita Masa’an” (equivalent to “Good morning” or “Good evening”).
This was the greeting among the people at that time. They did not seek permission to enter one another’s houses; a man might walk straight in and say, “I have come in,” and so on. This was difficult for a man to bear, as he might be with his wife. So Allah changed all that by enjoining covering and chastity, making it pure and free of any sin or impropriety. So Allah said:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا لَاا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا
O you who believe! Enter not houses other than your own, until you have asked permission and greeted those in them…
What Muqatil said is good.
Allah said:
ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ
that is better for you,
meaning, seeking permission to enter in is better for you because it is better for both parties, the one who is seeking permission to enter and the people inside the house.
لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
in order that you may remember
24:28
فَاِنۡ لَّمۡ تَجِدُوۡا فِیۡہَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدۡخُلُوۡہَا حَتّٰی یُؤۡذَنَ لَکُمۡ ۚ وَ اِنۡ قِیۡلَ لَکُمُ ارۡجِعُوۡا فَارۡجِعُوۡا ہُوَ اَزۡکٰی لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ﴿۲۸﴾
And if you do not find anyone therein, do not enter them until permission has been given you. And if it is said to you, “Go back,” then go back; it is purer for you. And Allah is Knowing of what you do.
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَإ تَدْخُلُوهَا حَتَّى يُوْذَنَ لَكُمْ
And if you find no one therein, still enter not until permission has been given.
This has to do with the way in which one deals with other people’s property without their permission. If he wants to, he can give permission, and if he wants to he can refrain from giving permission.
وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ
And if you are asked to go back, go back, for it is purer for you.
means, if you are turned away at the door, before or after permission has been given,
فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ
(go back, for it is purer for you),
means, going back is purer and better for you.
وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
And Allah is All-Knower of what you do.
Qatadah said that one of the emigrants said:
“All my life I tried to follow this Ayah, but if I asked for permission to enter upon one of my brothers and he asked me to go back, I could not do so happily, although Allah says,
وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
And if you are asked to go back, go back, for it is purer for you. And Allah is All-Knower of what you do.”
وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا
(And if you are asked to go back, go back….), Sa`id bin Jubayr said,
“This means, do not stand at people’s doors.
24:29
لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ مَسۡکُوۡنَۃٍ فِیۡہَا مَتَاعٌ لَّکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تُبۡدُوۡنَ وَ مَا تَکۡتُمُوۡنَ ﴿۲۹﴾
There is no blame upon you for entering houses not inhabited in which there is convenience for you. And Allah knows what you reveal and what you conceal.
لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍ
فِيهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
There is no sin on you that you enter houses uninhabited,
This Ayah is more specific than the one that comes before it, because it states that it is permissible to enter houses where there is nobody, if one has a reason for doing so, such as houses that are prepared for guests — if he has been given permission once, then this is sufficient.
Ibn Jurayj said,
“Ibn Abbas said:
لَاا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ
(Enter not houses other than your own),then this was abrogated and an exception was made, and Allah said:
لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍ
فِيهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ
There is no sin on you that you enter houses uninhabited, (when) you have any interest in them.
This was also narrated from Ikrimah and Al-Hasan Al-Basri.
وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
And Allah has knowledge of what you reveal and what you conceal
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran