(বই#৯৭৩) [قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ।] সূরা:- আন-নূর। সুরা:২৪ পারা:১৮ ৩০-৩১ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৭৩)
[قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ।]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
৩০-৩১ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:৩০
قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ ﴿۳۰﴾
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
২৪:৩১
وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اٰبَآئِہِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِہِنَّ اَوۡ نِسَآئِہِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡہَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ ؕ وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۱﴾
আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ; আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে । আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে । আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা , তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা- রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে । হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আস , যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*চারিত্রিক বিকৃতি রােধে কোরআনের কর্মসূচী : এরপর চলাচলের পথে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সেই আপদটি নিয়ে আলােচনা শুরু করা হচ্ছে, যা দৃষ্টি ও চলাচলের মধ্য দিয়ে বিপথগামিতায় প্ররোচিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে…'(আয়াত ৩০-৩১) ইসলাম এমন একটা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে সর্বক্ষণ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয় না এবং সর্বক্ষণ যৌন ভাবাবেগকে উদ্দীপিত করার কার্যক্রম চালু থাকে। কেননা অব্যাহত যৌন সুড়সুড়িমূলক তৎপরতা সমাজে এমন কামােন্মাদনা সৃষ্টি করে, যা কখনাে প্রশমিত ও পরিতৃপ্ত হয় না। দৃষ্টি নিক্ষেপ, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ভংগিতে চলাফেরা, সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলা এবং নগ্নতা এর কোনােটাই পাশবিক কামােন্মত্ততা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনাে সুফল বয়ে আনে না। মানুষের আত্মসংযমের ক্ষমতাকে বিনষ্ট করে দেয়াই হচ্ছে এগুলাের একমাত্র স্বার্থকতা। আত্মসংযমের এই ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়ার পর যদি অবাধ যৌনাচারের সুযােগ দেয়া হয়, তাহলে সেটা হবে সমাজকে এক উদ্দাম উচ্ছৃংখলতা, বেলেল্লাপনা ও নৈরাজ্যের মধ্যে নিক্ষেপ করার শামিল। আর উত্তেজিত করার পর যদি কঠোর দমন নীতি অবলম্বন করা হয়, তাহলে স্নায়বিক রোগ ও মানসিক বৈকল্য দেখা দেয়া অবশ্যম্ভাবী। এই শেষােক্ত ব্যাপারটা হবে এক ধরনের নির্যাতনমূলক কার্যক্রম। যৌন আবেগকে প্ররােচিত ও উত্তেজিত করার এ জাতীয় তৎপরতা প্রতিহত করা, নর নারীর স্বাভাবিক যৌন আবেগকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বহাল রাখা এবং কোনাে কৃত্রিম উপায়ে তাকে উস্কে না দিয়ে তার পবিত্র ও নিরাপদ প্রয়ােগ অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করাই ইসলামের পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ার অন্যতম কর্মপন্থা। এক সময়ে বলা হতাে যে নরনারীর অবাধ দৃষ্ট বিনিময়, নিয়ন্ত্রণহীন আলাপ ও ভাবের আদান প্রদান, অবাধ মেলামেশা, পরস্পরের গােপনীয় অংগ প্রত্যংগ সম্পর্কে অবগতি, ও নর নারীর মধ্যে অবাধ যােগাযােগ ইত্যাদি তাদের সম্পর্ককে স্বাভাবিকতা ও স্বাচ্ছন্দ দান করে, তাদের অবরুদ্ধ কামনা বাসনাগুলােকে স্বাধীন ও মুক্ত করে, মানসিক পীড়ন ও মনস্তাত্বিক জটিলতা থেকে রক্ষা করে, যৌন উৎপীড়ন ও চাপজনিত উত্তাপ ও উত্তেজনাকে প্রশমিত করে এবং অন্যান্য অবাঞ্ছিত দৈহিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করে। নর নারীর সম্পর্ককে অবাধ ও বল্লাহীন করার স্বপক্ষে এই প্রচারণা ফ্রয়েড ও তার সমমনা দার্শনিকদের রচিত বিভিন্ন মতবাদ প্রচারিত হবার ফলেই ব্যাপকতা লাভ করে। সেসব মতবাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সেই সমস্ত গুণ বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত করা, যা তাকে পশু থেকে পৃথক ও উন্নত এক প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করে। মানুষকে পুরােপুরি পশুতে রূপান্তরিত করাই ছিলাে সেসব মতবাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু উল্লেখিত প্রচারণা নিছক তাত্ত্বিক আন্দাজ অনুমান ছাড়া আর কিছু নয়। যেসব দেশে নর নারীর সম্পর্ক সবচেয়ে অবাধ, বাহীন ও স্বেচ্ছাচারিতায় পূর্ণ এবং সব রকমের সামাজিক, নৈতিক, ধর্মীয় ও মানবীয় কড়াকড়ি বর্জিত, সেসব দেশে আমি স্বচক্ষে যা দেখেছি, তা সে প্রচারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসার প্রতিপন্ন করে। আমি সেসব দেশে প্রত্যক্ষ করেছি যে, নগ্নতা ও অবাধ মেলামেশা যতাে রকমের ও যতাে আকারের হতে পারে, তার সবই সেখানে বিদ্যমান এবং তাতে বিন্দুমাত্রও কোনাে কড়াকড়ি ও বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এর ফলে যৌন আবেগ কিছুমাত্র পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত হয়নি, বরং এর ফলে যৌনতা আরাে বল্লাহীন, উদ্দাম, অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। এ উন্মত্ততা ও স্বেচ্ছাচারিতা কোনােক্রমেই শান্ত ও পরিতৃপ্ত তাে হয়নি, উপরন্তু তা আরাে উগ্র ও আরাে তৃষ্ণার্ত রূপ ধারণ করেছে। যে সমস্ত মানসিক রােগ ও জটিলতা নিছক পর্দা প্রথার কারণে নারী সংগ লাভে ব্যর্থ ও বঞ্চিত থাকার কারণে সৃষ্ট হয় বলে মনে করা হতাে। সেগুলাে প্রচুর পরিমাণে দেখেছি। সেই সাথে সব ধরনের যৌন বিকৃতির হিড়িকও দেখেছি। এ সবই দেখা দিয়েছে সীমাহীন, বল্লাহীন ও অবাধ মেলামেশা ও প্রেম প্রণয়ের প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে, যার উপস্থিতিতে কোনাে কিছুই আর নিষিদ্ধ থাকে না। প্রকাশ্য রাস্তাঘাটে নগ্ন দেহের প্রদর্শনী, যৌন সুড়সুড়ি দানকারী কার্যকলাপ- যার বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার অবকাশ এখানে নেই এবং অনুরূপ অন্যান্য উত্তেজক কর্মকান্ডই এ সব বিড়ম্বনার ফল। এ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফ্রয়েড ও তার সমমনাদের সে সব মতবাদ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়ােজন হয়ে পড়েছে। কেননা চাক্ষুস বাস্তবতাই গুলোকে মিথ্যা ও ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে। প্রাণীজগতের জন্ম ও বিকাশে নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ সহজাত ও মজ্জাগত। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ পদ্ধতিতেই পৃথিবীতে জীবনের বিস্তার ও মানুষের খেলাফত বাস্তবায়িত করেছেন। নর নারীর এই পারস্পরিক টান ও আকর্ষণ একটা স্থায়ী জিনিস। স্বাভাবিকভাবে তা কখনাে উত্তেজিত এবং কখনাে প্রশমিত হয়ে থাকে। তাকে ক্রমাগতভাবে উত্তেজিত করতে থাকলে তার তেজ ও তীব্রতা বাড়তেই থাকে এবং তাকে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। কিন্তু সেই মিলন যখন সম্ভব হয় না, তখন উত্তেজিত স্নায়ুমন্ডলী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটা একটা সার্বক্ষণিক নির্যাতনে পর্যবসিত হয়। যৌন উত্তেজনা নানাভাবে সৃষ্টি হয়। কখনাে চাহনি দ্বারা, কখনাে আচরণ দ্বারা, কখনাে হাসি দ্বারা এবং কখনাে কৌতুক ও রসিকতা দ্বারা এর সৃষ্টি হয়ে থাকে। কখনাে বা আকর্ষণ প্রকাশকারী কথাবার্তা দ্বারাও এর সৃষ্টি হয়। এসব উত্তেজক উপকরণকে কমিয়ে রাখাই নিরাপদ, যাতে পারস্পরিক আকর্ষণ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকে এবং স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করে। এটাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও কল্যাণময় পথ। এর সাথে সাথে সে স্বভাব চরিত্রকে পরিশীলিতও করে এবং মানবীয় শক্তিকে শুধু রক্ত মাংসের চাহিদা পূরণের কাজে নিয়ােজিত না করে জীবনের। অন্যান্য কাজেও নিয়ােজিত করে। ফলে শুধু যৌন চাহিদা পূরণই মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় না। এ আয়াত দুটোতে নর নারী উভয়ের পক্ষ থেকে উত্তেজনা, প্ররােচনা ও বিকৃতির সুযােগ কিভাবে কমাতে হয়, তার কিছু নমুনা পেশ করা হয়েছে। যেমন, ‘ঈমানদার পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম ব্যবস্থা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত।’ পুরুষদের পক্ষ থেকে দৃষ্টি সংযত রাখা রিপু ও কূ-প্রবৃত্তি দমনের একটা উৎকৃষ্ট উপায় এবং নারীর চেহারা ও দেহের সুন্দর ও প্রলুব্ধকারী বৈশিষ্ট্যসমূহ জানার ইচ্ছা ও দেখার কৌতুহল সংযত করার এক স্বার্থক প্রচেষ্টা। এটা বিপথগামিতা ও অশ্লীলতার পথ বন্ধ করারও অব্যর্থ পন্থা। লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ দৃষ্টি সংযমেরই স্বাভাবিক ফল। অন্য কথায়, এটা মনােবাসনা নিয়ন্ত্রণ, আত্মসংযম এবং কু-প্রবৃত্তি দমনের পথের প্রাথমিক পদক্ষেপ। এ জন্যে এই দুটোকে একই আয়াতে একত্রিত করা হয়েছে। কারণ এ দুটোর একটা কারণ ও অপরটা ফল। মনােজগতে ও বাস্তবতার জগতে এ দুটো পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ। এভাবে দুটোই পরস্পরের কাছাকাছি। ‘এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম ব্যবস্থা।’ অর্থাৎ মনের ইচ্ছা ও আবেগকে পবিত্র রাখার সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থা, অবৈধ ও অপবিত্র স্থানে যৌন চাহিদা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকার নিশ্চয়তার ব্যবস্থা এবং মানুষের ভাবাবেগকে পশুত্বের পর্যায়ে নেমে যাওয়া থেকে বিরত রাখার প্রকৃষ্ট উপায়। এটা সমাজ জীবনের শালীনতা, পরিচ্ছন্নতা, নারীদের মানসম্ভ্রম ও পরিবেশে সুস্থতা বজায় রাখারও সর্বোত্তম পন্থা। যেহেতু আল্লাহ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও স্বভাবগত গঠন এবং তাদের দেহ ও মনের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, তাই তিনিই তাদের চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার এই ব্যবস্থা করেছেন। ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত।’  *পর্দার বিধান অপরাধ দমনের নিশ্চিত গ্যারান্টি : আল্লাহ তায়ালা পুনরায় বলেন, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত ও লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে…’ অর্থাৎ পুরুষদের মনের সুপ্ত কদর্য বাসনাকে উস্কে দেয় এমন চোরা চোরা ও বুভূক্ষু চাহনি এবং ইংগিতপূর্ণ ও উত্তেজক দৃষ্টি নিক্ষেপ থেকে যেন বিরত থাকে। আর এমন পবিত্র ও বৈধ পন্থায়ই যেন লজ্জাস্থানকে ব্যবহৃত হতে দেয়, যা পরিচ্ছন্ন ও নিরুদ্বেগ পরিবেশে দেহের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করে এবং এভাবে যে সন্তান জনুগ্রহণ করবে, তারা যেন সমাজের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা না পায়। ‘আর তাদের সাজ সজ্জাকে যেন প্রকাশ না করে, কেবল আপনা থেকে যা প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা ছাড়া।’ বস্তুত নারীর স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগত দাবী অনুসারেই সাজ-সজ্জা করা বৈধ। সুন্দরী হওয়া ও সুন্দরী সাজা প্রত্যেক নারীর মজ্জাগত ইচ্ছা। সময়ের ব্যবধানে আকৃতিগতভাবে সাজ গােছের রকম ফের হতে পারে, কিন্তু তার স্বভাবগত ও প্রকৃতিগতভাবে তা মূলত একই রকম। সেটা এই যে, প্রত্যেক নারীই পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করার জন্যে সৌন্দর্যমন্ডিত হতে চায়, আর জন্মগত সৌন্দর্য পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্যে যথেষ্ট না হলে সাজ সজ্জা দ্বারা সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করতে চায়। ইসলাম এই সহজাত ইচ্ছাকে প্রতিহত করে না। সে শুধু একে সুশৃংখল ও পরিশীলিত করে। সে চায় প্রত্যেক নারী তার সাজ সজ্জা ও সৌন্দর্য শুধু একজন পুরুষকে দেখতে দিক, যে তার জীবন সংগী। কেননা এই জীবন সংগী তার জীবনের এমন অনেক কিছুই দেখবার অধিকারী, যা অন্য কেউ দেখবার অধিকারী নয়। তবে তার সৌন্দর্য ও সাজ সজ্জার কিছু অংশ জীবন সংগী ছাড়া মহররম ও এই আয়াতের পরবর্তী অংশে বর্ণিত পুরুষরাও দেখতে পারে। কেননা তাতে এসব। পুরুষের মধ্যে কামাে্তেজনার সৃষ্টি হয় না। পক্ষান্তরে সৌন্দর্যের যে অংশটুকু এমনিতেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তা হচ্ছ হাত ও মুখের সৌন্দর্য। এটুকু উন্মুক্ত করা জায়েজ আছে। কারণ রাসূল(স.) হযরত আবু বকরের মেয়ে আসমাকে বলেছিলেন, ‘হে আসমা, একজন বয়ােপ্রাপ্তা মেয়ের হাত ও মুখমন্ডল ছাড়া আর কিছু খােলা বৈধ নয়।’ আর তারা যেন তাদের চাদর বুকের ওপর জড়িয়ে রাখে।’ ‘জাইব’ শব্দটা দ্বারা এখানে বুকের ওপর কাপড়ের সংযােগস্থলকে বুঝানাে হয়েছে। আর ‘খেমার হলাে মাথা, গলা ও বুক ঢাকার চাদর বা ওড়না। এই ওড়না বা চাদর দিয়ে বুক ঢাকতে বলার উদ্দেশ্য নারীর দেহের বিপজ্জনক স্থানগুলােকে শিকারী চোখ থেকে এমনকি আকস্মিক দৃষ্টি থেকেও নিরাপদ রাখা। এগুলােকে উন্মুক্ত রাখা হলে এগুলাের ওপর যাদের নযর পড়তাে, তাদের জন্যে তা পরবর্তী সময়ে কূ-প্ররােচনার উৎস হতে পারতাে। মােমেনদের মনকে আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করতে চান না। যে সকল ঈমানদার নারীর প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছিলাে, তাদের অন্তর আল্লাহর জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় ছিলাে এবং সৌন্দর্য ও সাজ সজ্জা প্রকাশের স্বাভাবিক আগ্রহ তাদের মধ্যে থাকলেও তাদের ভেতর স্বামীর আনুগত্য কোনো কমতি ছিলাে না। জাহেলী যুগের নারীরা পুরুষদের সামনে বুক ফুলিয়ে চলতাে এবং তাতে কোনাে আবরণ জড়াতাে না। তারা তাদের ঘাড়, চুল কান খােলা রেখেই চলাফেরা করতাে। যখন আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে চাদর দিয়ে বুক ঢাকার নির্দেশ দিলেন এবং আপনা থেকে প্রকাশিত হওয়া অংশ ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা অপর পুরুষের সামনে খুলতে নিষেধ করলেন, তখন তারা এই নিষেধাজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। হযরত আয়শা বলেন, প্রাথমিক যুগের মােহাজের মহিলাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করুন। কেননা আল্লাহ তয়ালা যখনই নাযিল করলেন যে, তারা যেন তাদের বুকের ওপর চাদর বা ওড়না জড়িয়ে নেয়।’ অমনি তারা তাদের ব্যবহারের অন্যান্য কাপড় ছিড়ে তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে বুক ঘাড় ইত্যাদি ঢাকতে শুরু করলেন। (বােখারী) হযরত সফিয়া বিনতে শায়বা বর্ণনা করেন যে, আমরা একদিন হযরত আয়েশা(রা.)-এর কাছে বসেছিলাম। তিনি কোরায়শ বংশীয় নারীদের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, কোরায়েশী নারীদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর কসম, আমি আনসারদের স্ত্রীদের চেয়ে আল্লাহর কেতাবের ভক্ত ও বিশ্বাসী আর কাউকে দেখিনি। যখন সূরা নূরের এই অংশ নাযিল হলাে, তারা যেন চাদর দিয়ে তাদের বুক ঢাকে তখন তাদের পুরুষরা তাদের কাছে ছুটে এলাে, সদ্য নাযিল হওয়া বিধানগুলাে তাদেরকে পড়ে শােনালেন এবং প্রত্যেক পুরুষ নিজ নিজ স্ত্রী, মেয়ে, বােন ও প্রত্যেক আত্মীয়কে তা পড়ে শােনাতে লাগলেন। এ আয়াত নাযিল হবার পর কোনাে মুসলিম মহিলা বসে থাকেনি। প্রত্যেকে নিজ নিজ কোমরবন্দ খুলে ওড়না বানিয়ে নিয়েছে, যাতে আল্লাহর নাযিল করা বিধান বাস্তবায়িত করা যায়। তারপর রসূল(স.)-এর পেছনে ফজরের সময় যতাে মহিলা নামাযে দাড়িয়েছে, তাদের সবাই ওড়না পরিহিত ছিলাে। (আবু দাউদ) বস্তু ইসলাম মুসলিম সমাজের রুচির উন্নতি ঘটিয়েছে এবং তার সৌন্দর্যবােধকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করেছে। সৌন্দর্যবােধের যে অশালীন রূপ রয়েছে, সেটা তার মনােপুত নয়। সুসভ্য মানবীয় সৌন্দর্যবােধই তার পছন্দনীয়। দেহকে অনাবৃত রাখার মাধ্যমে যে সৌন্দর্যবােধের প্রকাশ ঘটে সেটা অশালীন ও অসভ্যজনােচিত সৌন্দর্যবােধ। এ সৌন্দর্যের প্রতি কোনাে মানুষ যখন আকৃষ্ট হয়, তখন সে পাশবিক আবেগ অনুভূতি নিয়েই আকৃষ্ট হয়, চাই তা যতােই সুষ্ঠু ও সর্বাংগীন সুন্দর হােক না কেন। পক্ষান্তরে লজ্জা ও শালীনতার মধ্য দিয়ে যে সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে, সেটাই পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন সৌন্দর্য, সেটাই সৌন্দর্যবােধকে সমুন্নত করে, সেটাই মানুষের উপযােগী এবং সেটাই মানুষের চেতনা অনুভূতি ও মানসিকতাকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে। আজও ইসলাম মুসলিম নারীদের মধ্যে এই পরিবর্তন সূচিত করে থাকে। যদিও সর্বত্র নিম্নমানের রুচিবােধ ও মানসিকতার ছড়াছড়ি, যদিও সমাজের অশালীন ও পাশবিক স্বভাবের ব্যাপক প্রচলন, যদিও সর্বত্র নগ্নতা, নির্লজ্জতা ও পশুসুলভ বেহায়ামি প্রকট তথাপি মুসলিম নারীরা স্বতস্ফূর্তভাবেই নিজ নিজ দেহের সৌন্দর্যকে ও আকর্ষণীয় অংশকে লুকিয়ে রাখতে সদা সচেষ্ট। যে সমাজের সর্বত্র নগ্নতা, অবাধ মেলামেশা, ঢলাঢলি ও বেলেল্লাপনার হিড়িক চলছে, যে সমাজে পশুদের মত নারীরা পুরুষদেরকে কুরুচিপূর্ণ ইংগিত দিতে অভ্যস্ত, সেই একই সমাজে বাস করে মুসলিম নারীদের এই শালীন ও পবিত্র চাল চলন বিস্ময়কর বৈ কি? এই লজ্জা, শালীনতা ও কঠোর পর্দা ব্যক্তি ও সমাজের নিরাপত্তার অন্যতম ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে যেখানে বিপদের আশংকা নেই, সেখানে কোরআন পর্দার কড়াকড়ি শিথিল করে। এ জন্যে সাধারণত যাদের মধ্যে যৌন আকর্ষণ একেবারেই জাগে না, সেসব মহররম পুরুষ থেকে পর্দা না করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেমন বাপ দাদা, ছেলে, স্বামীদের বাপ দাদা ও ছেলেরা, ভাইরা ও ভাইয়ের ছেলেরা, বােনদের ছেলেরা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে মুসলিম নারীদের বেলায়ও এই বিধি শিথিল। তবে অমুসলিম নারীদের বেলায় নয়। কেননা তারা তাদের স্বামী, ভাই ও তাদের স্বজাতীয় পুরুষদের কাছে নিজেদের দেখা মুসলিম নারীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে। বােখারী ও মুসলিম বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল(স.) বলেছেন, কোনাে নারীর অন্য (বিধর্মী) নারীর সামনে নিজের দেহকে অনাবৃত করা উচিত নয়। তাহলে হয়তাে সে নিজ স্বামীর কাছে তার এমন বিবরণ দেবে যে তাকে তার স্বচক্ষে দেখার মতােই মনে হবে। এ ব্যাপারে মুসলিম নারীরা যথেষ্ট বিশ্বস্ত। ইসলাম তাদেরকে নিজ স্বামীর কাছে অন্য কোনাে মুসলিম নারীর দেহ ও সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে নিষেধ করে। ইসলাম দাসদের বেলায়ও পর্দার বিধিনিষেধ শিথিল করে। কেউ কেউ বলেন, শুধু দাসীদের বেলায়। আবার কেউ কেউ বলেন, দাসদের বেলায়ও। কেননা কোনাে দাস তার মহিলা। মনীবের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে না। তবে প্রথম মতটাই ভালাে। অর্থাৎ পর্দার শিথীলতা শুধু দাসীর মধ্যে সীমিত রাখাই উত্তম। কেননা দাস তাে রক্ত মাংসেরই মানুষ। সাময়িকভাবে তার অবস্থা যতােই ভিন্নতর হােক না কেন তার মধ্যে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হতেও পারে। পর্দার বিধান আরাে শিথিল করা হয়েছে, সেসব পুরুষের ক্ষেত্রেও, যারা কোনো কারণবশত নারীদের প্রতি যৌন আকর্ষণ পােষণ করে না। যেমন নপুংশক, নির্বোধ, পাগল কিংবা অন্য এমন কোনাে প্রতিবন্ধী পুরুষ, যার নারীর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিতে কোনাে গুরুতর বাধা রয়েছে। কেননা এক্ষেত্রে কোনাে বিপদ বা প্রলুব্ধতার আশংকা নেই। অনুরূপভাবে ‘যে শিশু নারী দেহের গােপনীয়তা সম্পর্কে অবহিত নয়।’ তাকেও এই কড়াকড়ির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সেসব শিশু যাদের নারীর দেহ কোনাে যৌন অনুভূতি জাগে না। যখন এই অনুভূতি জাগবে, তখন তাদের যৌবন প্রাপ্তি না ঘটলেও তারা এই কড়াকড়ির আওতায় পড়বে। একমাত্র স্বামী ছাড়া এসব বিপদমুক্ত পুরুষকে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যতীত শরীরের সকল অংশ দেখতে দেয়া জায়েয এবং তাদেরও শরীরের সকল অংশ দেখা নারীর জন্যে বৈধ। কারণ যে বিপদ থেকে আত্মরক্ষা করা এই পর্দার উদ্দেশ্য, তা এখানে অনুপস্থিত। অবশ্য স্বামীর জন্যে স্ত্রীর দেহের সকল অংশ দেখা জায়েয। আর যেহেতু নারীর সতিত্ব ও সম্ভ্রমের সুরক্ষাই এই বিধানের উদ্দেশ্য, তাই আয়াতে নারীর এমন কার্যকলাপও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা তার গুপ্ত সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে অন্যের সুপ্ত যৌন আবেগকে উস্কে দেয়, যদিও সরাসরি তারা তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। ‘তারা যেন এমন জোরে জোরে পা না ফেলে, যাতে তাদের লুকানাে সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে।’ এ উক্তি থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের মন মানসিকতা, গঠন প্রক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান কতো গভীর যার ভিত্তিতে তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন। এ দ্বারা বুঝা যায় যে, অনেক সময় চাক্ষুস দর্শনের চেয়ে কল্পনা যৌন আবেগ উস্কে দেয়ার ব্যাপারে অধিকতর শক্তিশালী হয়ে থাকে। কেউ কেউ এমনও আছে, যাদের যৌন আবেগ নারীর দেহ দর্শনের চেয়েও তার জুতাে, পােশাক বা গহনা দর্শনে অধিকতর উত্তেজিত হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে, অনেকে এমনও আছে, যার সামনে নারীর প্রকাশ্য উপস্থিতির চেয়ে তার কল্পনা তাকে অধিকতর উত্তেজিত করে থাকে। এসব উপসর্গ আধুনিক মনােব্যাধি বিশেষজ্ঞদের কাছে সুপরিচিত। এ ছাড়া দূর থেকে গহনার শব্দ শ্রবন ও আতর বা সেন্টের সুবাস গ্রহণ বহু পুরুষের অনুভূতিকে জাগ্রত করে, তাদের স্নায়ুতন্ত্রীকে উত্তেজিত করে এবং তাদেরকে এমনভাবে আলােড়িত ও প্রলুব্ধ করে যে, তা থেকে তারা কিছুতেই নিস্তার পায় না। কোরআন এই সমস্ত জটিল সমস্যার সমাধান দেয়। কেননা যিনি এ কোরআন নাযিল করেছেন তিনিই মানুষ সহ যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা এবং তিনি তার সৃষ্টি সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত। তিনি সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ। সবার শেষে সকল মােমেনের অন্তরকে আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে এবং কোরআন নাযিল হবার পূর্বে কৃত সকল গুণাহ থেকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে তাওবার সুযােগ উন্মুক্ত করা হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা তােমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, হয়তাে তােমরা সফলকাম হবে।’ এভাবে আল্লাহর তদারকী, তত্ত্বাবধান ও দয়াশীলতা সম্পর্কে সকলকে সচকিত করা হয়েছে, বিপরীত লিংগের প্রতি মানুষের সুগভীর স্বাভাবিক দুর্বলতায় তিনিই যে একমাত্র সাহায্যকারী এবং তার অনুভূতি ও ভীতিই যে তাকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতে পারে, সে কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৩০-৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

অন্যের বাড়িতে প্রবেশের শিষ্টাচার বর্ণনা করার পর অত্র আয়াতদ্বয়ে মু’মিন নর-নারীর দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান সম্পর্কে করণীয় কী সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

یَغُضُّوْا শব্দের অর্থ অবনত করা, নিচু করে রাখা, দৃষ্টি অবনত রাখার অর্থ হলন দৃষ্টিকে এমন বস্তু থেকে ফিরিযে নেয়া যা দেখা শরীয়ত নিষিদ্ধ ও অবৈধ করে দিয়েছে। (ইবনু কাসীর)

সুতরাং বেগানা নারীকে সরাসরি বা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা, কারো গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করা, কারো বাড়িতে উঁিক মারা এবং অশ্লীল দৃশ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করা এতে শামিল। সাঈদ বিন আবূল হাসান হাসানকে বলেন: অনারবের মহিলারা বুক ও মাথা খুলে রাখে, তোমার দৃষ্টি তাদের থেকে ফিরিয়ে রাখবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইসতিযান, মুআল্লাক হাদীস)

জারীর বিন আবদুল্লাহ আল বাজালী (رضي الله عنه) বলেন: আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন আমি যেন আমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নেই। (সহীহ মুসলিম হা: ২১৫৯)

এমনকি এ দৃষ্টিপাত হতে বাঁচতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ সাহাবাদেরকে রাস্তায় বসা থেকেও নিষেধ করেছেন।

আবূ সাঈদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বলেন: তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক। তখন সাহাবারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটি ছাড়া তো আমাদের বসে কথা বলার জায়গা নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বললেন: যদি তোমরা বাধ্যই হও তাহলে রাস্তার হক আদায় কর। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, রাস্তার হক কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বললেন: দৃষ্টিকে অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস সরানো, সালামের উত্তর দেয়া, সৎ কাজের আদেশ দেয়া, অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা। (সহীহ বুখারী হা: ২৪৬৬, ৬২২৯, সহীহ মুসলিম হা: ১১৪)

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (رضي الله عنه)-কে বললেন: একবার দৃষ্টি চলে গেলে পুনরায় দৃষ্টিপাত করবে না, কারণ প্রথমবার দৃষ্টিপাত ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয়বার দৃষ্টি তোমার নয় (শয়তানের পক্ষ থেকে হয় সেজন্য তোমাকে পাকড়াও করা হবে)। (তিরমিযী হা: ২৭৭৭, আবূ দাঊদ হা: ২১৪৯, হাসান)

দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা লজ্জাস্থানের হেফাযতের নির্দেশ দিচ্ছেন। কারণ অধিকাংশ সময় লজ্জাস্থানের খিয়ানত হয় দৃষ্টির খেয়ানতের কারণে। সুতরাং দৃষ্টি সংযত করার সাথে লজ্জাস্থান হেফাযত করতে হবে। অর্থাৎ নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত অন্যের সাথে যৌন চাহিদা নিবারণ করাই হল লজ্জাস্থানের খিয়ানত করা। তা নারীর সাথে হোক বা পুরুষের সাথে হোক অথবা অন্য যে কোন কিছুর সাথে হোক না কেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَ -‏ إِلَّا عَلٰٓي أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ)‏

“এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করেন তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।” (সূরা মা‘আরিজ ৭০:২৯-৩০)

আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বানী আদমের ওপর যিনার একটি অংশ লিখে দেয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই তাকে পেয়ে বসবে। দুই চোখের যিনা হল দেখা, জিহ্বার যিনা হল কথা বলা, দু’ কানের যিনা হল শ্রবণ করা, দু’ হাতের যিনা হল ধরা, দু’ পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওয়া, অন্তর তার আকাক্সক্ষা করবে এবং চাইবে। আর লজ্জাস্থান হয় এটিকে সত্য প্রমাণিত করবে, না হয় মিথ্যা প্রমাণিত করবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৪৩, ৬৬১২)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি নারীদেরকেও সতর্ক করছেন। অথচ আমরা জানি কুরআন যেখানে পুরুষদেরকে সম্বোধন করে নির্দেশ দিয়েছে সেখানে নারীরাও শামিল। তারপরেও এখানে নারীদেরকে আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হল বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং তাদেরকেও বিশেষ সতর্ক করা। কারণ শুধু পুরুষেরাই দৃষ্টি সংযত করলে এবং লজ্জাস্থান হেফাযত করলে হবে না, সাথে সাথে নারীদেরকেও করতে হবে। অন্যথায় সমাজ থেকে অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা দূর করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সমাজে অন্যায়, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বিস্তারে নারীদের ভূমিকা অগ্রণী। কারণ আজ আধুনিকতার নামে নারীরা অবাধ মেলামেশা, অশ্লীল পোশাক পরিধান করে বাহিরে চলা ফেরা করা, চলচ্চিত্রের নামে দেহ ব্যবসা ও যুবকদেরকে খারাপ কাজে প্ররোচিত করা ইদ্যাদির মাধ্যমে নিজেদের লজ্জাস্থানের খিয়ানত করছে। যেখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَي قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ

যে নারী আতর ব্যবহার করে কোন জাতির পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা সুগদ্ধি পায় তাহলে সে নারী ব্যভিচারিণী। (নাসায়ী হা: ৫১২৬, তিরমিযী হা: ২৭৮৬, হাসান) সেখানে যারা এভাবে অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে বের হয় তাদের কী অবস্থা হবে?

فُرُوْجَهُنَّ

নারীদের লজ্জাস্থান আপদমস্তক তথা সারা শরীর। একজন নারী বাইরে বের হলে সারা শরীক ঢেকে বের হবে এবং এমনভাবে ঢাকবে যাতে শরীরের উচু-নিঁচু অঙ্গের তারতম্য বুঝা না যায়। সুতরাং নারীরাও পর পুরুষ হতে নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে।

(وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا)

‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে’ -সাধারণত প্রকাশ থাকে কোন্ সৌন্দর্য যা পর্দা করা সম্ভব নয়; এ ব্যাপারে আলেমদের তিনটি মত রয়েছে:

১. নারীদের শরীরের অন্তর্গত সৌন্দর্য, যেমন হাতের তালু ও চেহারা। এগুলো সাধারণত প্রকাশ পেয়ে যায়, ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না। যেমন সালাত আদায় করতে গেলে, হজ্জ করতে গেলে, কারো সাথে কিছু আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। এতটুকু পরিমাণ নারীর শরীর থেকে প্রকাশ পেয়ে গেলে গুনাহ হবে না। এ পক্ষে মত দিয়েছেন ইমাম কুরতুবী, যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী (رحمه الله)। আয়িশাহ (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, আসমা বিনতে আবূ বকর (رضي الله عنها) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রবেশ করলেন, এমনবস্থায় তার গায়ে পাতলা পোশাক ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তাকে বললেন: হে আসমা! একজন নারী যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তার থেকে এরূপ বেশি দেখা বৈধ নয়। এ কথা বলে তিনি চেহারা ও দুই হাতের তালুর দিকে ইশারা করলেন। (আবূ দাঊদ হা: ৪১০৪, মিশকাত হা: ৪৩৭২, হাসান)

২. বাইরের সৌন্দর্য যা শরীরের অঙ্গ নয়, এ সৌন্দর্য প্রকাশ পেলে শরীরের প্রতি দৃষ্টি যাবে না। যেমনন ইবনু মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন: মহিলাদের গায়ের সব পোশাকের ওপর যে কাপড় থাকে বা চাদর। ইমাম শানকিত্বী (رحمه الله) বলেন; আমাদের কাছে এ কথাই বেশি প্রাধান্যযোগ্য এবং সংশয় ও ফেতনা থেকে অধিক সতর্কতা।

৩. শরীরের সাথে সম্পৃক্ত এমন বহিরাগত সৌন্দর্য, কিন্তু এ সৌন্দর্য প্রকাশ পেলে শরীরের অঙ্গ দেখা যাবে। যেমন মেহেদী. সুরমা ও অনুরূপ।

(وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰي جُيُوْبِهِنَّ)

‘তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে’ যাতে মাথা, ঘাড়, গলা ও বুকের পর্দা হয়ে যায়। কারণ এ সমস্ত অঙ্গ খুলে রাখার অনুমতি নেই। সুতরাং যে সকল নারীরা বুকে, মাথায় কাপড় না দিয়ে বের হয় তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে এ ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে।

আয়িশাহ (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল স্ত্রীলোকদের ওপর রহম করুন যারা প্রথমে হিজরত করেছিল। যখন এ আয়াত নাযিল হয় তখন তারা নিজেদের চাদর ফেড়ে দোপাট্টা বানিয়েছিল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৫৮)

(وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ)

অর্থাৎ বেগানা পুরুষের সামনে যে সৌন্দর্য প্রকাশ করা নিষিদ্ধ ছিল ততটুকু পরিমাণ সৌন্দর্য আয়াতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সামনে প্রকাশ করতে পারবে। অর্থাৎ হাত, পা, চেহারা সাধারণত উক্ত ব্যক্তিদের সামনে খুলে রাখা যাবে। তবে স্বামীর কথা ভিন্ন। কারণ স্বামীর সাথে কোনরূপ পর্দা নেই। যেভাবে ইচ্ছা চলাফেরা করতে পারবে।

পিতা বলতে পিতা ও তার ওপরে দাদা এবং আরো যারা রয়েছে, শ্বশুর বলতে শ্বশুর ও তার ওপরে শ্বশুরের পিতা এবং আরো যারা রয়েছে। ছেলে বলতে নিজ ছেলে ও নাতি-নাতনীসহ আরো নিচে যারা রয়েছে। স্বামীর পুত্র বলতে অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত বেটা ও তার নিচে যারা রয়েছে। ভাই বলতে সহোদর, বৈমাত্রিয় ও বৈপিত্রেয় তিন প্রকার ভাই বুঝানো হয়েছে।

نِسَا۬ئِهِنَّ তাদের নারী বলতে মুসলিম নারীদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে যে, তারা যেন কোন মহিলার শোভা-সৌন্দর্য, রূপ-লাবণ্য, দৈহিক আকার-আকৃতি নিজেদের স্বামীর কাছে বর্ণনা না করে। (সহীহ বুখারী হা: ৫২৪০) এছাড়া যে কোন কাফির মহিলার সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা নিষেধ।

ইমাম আহমাদ (رحمه الله)-সহ অনেকে এমত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন: তাদের নারীগণ বলতে যারা তাদের খিদমতে বা বাড়ির কাজ করে থাকে।

(مَا مَلَكَتْ أَيْمٰنُهُنَّ)
অর্থাৎ মুসলিম ও আহলে কিতাবের কৃতদাস-দাসী উভয়েই শামিল। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা -এর বাড়িতে একজন গোলাম নিয়ে আসলেন যে নিজেকে ফাতিমার জন্য হেবা করে দিয়েছে। সে সময় ফাতিমার কাপড়ের এমন অবস্থা ছিল যে মাথা ঢাকলে পা খুলে যায়, আর পা ঢাকলে মাথা খুলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কোন সমস্যা নেই, এখানে আমি তোমার পিতা ও তোমার গোলাম। (আবূ দাঊদ হা: ৪১০৬, ইরওয়া হা: ১৭৯৯, সহীহ)

(التّٰبِعِيْنَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ) الْإِرْبَةُ-

যৌন চাহিদা, অর্থাৎ যে সকল পুরুষের যৌন চাহিদা নেই তা অতি বৃদ্ধ হওয়ার কারণে হোক আর অন্য যেকোন কারণেই হোক, আবার কেউ বলেছেন তারা হল হিজড়া, তবে যারাই হোক তাদের যদি যৌন কামনা না থাকে এবং অন্যের কাছে পরনারীর সৌন্দর্যের কথা বলে না বেড়ায় তাহলে উক্ত পরিমাণ সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে। অন্যথায় তাও নিষিদ্ধ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৩২৪, সহীহ মুসলিম হা: ২১৮০)

الطِّفْلِ অর্থাৎ যারা সাবালক হয়নি বা নারী সংক্রান্ত জ্ঞান হয়নি।

(وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ)

অর্থাৎ এমনভাবে চলাফেরা করবে না যাতে গোপন সৌন্দর্য মানুষ জেনে যায়। যেমন পায়ে নূপুর পরে শব্দ করে চলা।

নারী পুরুষের সম্মান, সম্ভ্রম ও মর্যাদা সংরক্ষণের এ দিক-নির্দেশনা দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা সকলকে তাওবাহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কারণ পূর্বে এ সংক্রান্ত যত অপরাধ রয়েছে, তাওবাহ করলে আল্লাহ তা‘আলা সেসবকে ক্ষমা করে দেবেন, ফলে তোমরা সফলকাম হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. নারী-পুরুষ সকলকে দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে।
২. হারাম কোন কিছুর প্রতি দৃষ্টি গেলে সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে হবে।
৩. লজ্জাস্থানের হিফাযত করতে হবে।
৪. মহিলাদেরকে তাদের বক্ষদেশসহ আপাদমস্তক ভালভাবে ঢেকে চলাফেরা করতে হবে।
৫. আয়াতে যে সকল পুরুষের কথা বলা হয়েছে এরা ব্যতীত অন্যদের সাথে দেখা করা হারাম।
৬. সৌন্দর্য প্রকাশ করণার্থে জোরে জোরে পদক্ষেপ করা যাবে না।
৭. বিধর্মী মহিলাদের নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

*** আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা আমি হারাম করেছি ওগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করো না। হারাম জিনিস হতে চক্ষু নীচু করে নাও। যদি আকস্মিকভাবে দৃষ্টি পড়েই যায় তবে দ্বিতীয়বার আর দৃষ্টি ফেলো না।

হযরত জারীর ইবনে আবদিল্লাহ বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) দৃষ্টি নিম্নমুখী করা, এদিক ওদিক দেখতে শুরু না করা, আল্লাহর হারামকত জিনিসগুলোকে না দেখা এই আয়াতের উদ্দেশ্য।

হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্যে ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্যে ক্ষমার যোগ্য নয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সহীহ হাদীসে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “পথের উপর বসা হতে তোমরা বেঁচে থাকো।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাজ কর্মের জন্যে এটা তো জরুরী?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে পথের হক আদায় কর।” সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! পথের হক কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ “দৃষ্টি নিম্নমুখী করা, কাউকেও কষ্ট না দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, ভাল কাজের আদেশ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা।”

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “তোমরা ছ’টি জিনিসের দায়িত্ব নিয়ে যাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্যে জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছ’টি জিনিস হলোঃ কথা বলার সময় মিথ্যা বলো না, আমানতের খিয়ানত করো না, ওয়াদা ভঙ্গ করো না, দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, হাতকে যুলুম করা হতে বাঁচিয়ে রাখবে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। (এ হাদীসটি আবুল কাসেম আল বাগাভী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের (রক্ষার) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জন্যে জান্নাতের দায়িত্ব নেবো।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত উবাইদাহ (রাঃ) বলেন যে, যে কাজের পরিণাম হলো আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা ওটাই কবীরা গুনাহ।

দৃষ্টি পড়ার পর অন্তরে ফাসাদ সৃষ্টি হয় বলেই লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার জন্যে দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দৃষ্টিও ইবলীসের তীরসমূহের মধ্যে একটি তীর। সুতরাং ব্যভিচার হতে বেঁচে থাকা জরুরী এবং দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখাও জরুরী। যেমন হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিজের লজ্জাস্থানের হিফাযত কর, তোমার পত্নী অথবী অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া (সবারই সংস্পর্শ থেকে)।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ ও সুনান গ্রন্থে বর্ণিত আছে)

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এটাই তাদের জন্যে উত্তম। অর্থাৎ তাদের অন্তর পবিত্র রাখার ব্যাপারে এটাই উত্তম পন্থা। যেমন বলা হয়েছেঃ যে ব্যক্তি স্বীয় দৃষ্টিকে হারাম জিনিসের উপর নিক্ষেপ করে না, আল্লাহ তার চক্ষু জ্যোতির্ময় করে তোলেন এবং তার অন্তরও আলোকময় করে দেন।

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার দৃষ্টি কোন স্ত্রীলোকের সৌন্দর্যের প্রতি পতিত হয়, অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তাকে এমন এক ইবাদত দান করেন যার মজা বা স্বাদ সে তার অন্তরেই উপভোগ করে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) (এ হাদীসের সনদগুলো দুর্বল বটে কিন্তু এটা উৎসাহ প্রদানের হাদীস। এসব হাদীসের সনদের প্রতি তেমন বেশী লক্ষ্য রাখা হয় না)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে মারফু’রূপে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হয় তোমরা তোমাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখবে এবং মুখমণ্ডলকে সোজা রাখবে, না হয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা বদলিয়ে দিবেন।” (এ হাদীসটি তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দৃষ্টি শয়তানী তীরসমূহের মধ্যে একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আল্লাহ তার অন্তরে এমন ঈমানের জ্যোতি সৃষ্টি করে দেন যে, সে ওর মজা উপভোগ করে থাকে।” (এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ পাক বলেনঃ তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। তাদের কোন কাজ তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি চোখের খিয়ানত এবং অন্তরের গোপন রহস্যের খবরও রাখেন।

সহীহ হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইবনে আদমের যিম্মায় ব্যভিচারের অংশ লিখে দেয়া হয়েছে, সে অবশ্যই তা পাবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, মুখের ব্যভিচার বলা, কানের ব্যভিচার শুনা, হাতের ব্যভিচার ধরা এবং পায়ের ব্যভিচার চলা। অন্তর কামনা ও বাসনা রাখে। অতঃপর যৌন অঙ্গ এ সবগুলোক সত্যবাদী করে অথবা সবগুলোকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দেয়। (ইমাম বুখারী (রঃ) এ হাদীসটি তা’লীকরূপে বর্ণনা করেছেন) পূর্বযুগীয় অনেক মনীষী বালকদের ঘোরা ফেরাকেও নিষেধ করতেন। সুফী ইমামদের অনেকেই এই ব্যাপারে বহু কিছু কঠোরতা করেছেন। আহলে ইলম এটাকে সাধারণভাবে হারাম বলেছেন। আর কেউ কেউ এটাকে কবীরা গুনাহ বলেছেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে, শুধুমাত্র ঐ চোখ কাঁদবে না যেই চোখ আল্লাহ তা’আলার হারামকৃত জিনিস না দেখে বন্ধ থেকেছে, আর ঐ চোখ যা আল্লাহর পথে জেগে থেকেছে এবং ঐ চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে, যদিও এ চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমানও হয়।” (এ হাদীসটি ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এখানে আল্লাহ তা’আলা ঈমান আনয়নকারিণী নারীদেরকে হুকুম করছেন যাতে মর্যাদাশীল পুরুষদের মনে সান্ত্বনা আসে এবং অজ্ঞতাযুগের জঘন্য প্রথার অবসান ঘটে।

বর্ণিত আছে যে, হযরত আসমা বিনতে মুরসিদ (রাঃ)-এর বাড়ীটি বানু হারিসার মহল্লায় ছিল। তার কাছে স্ত্রীলোকেরা আগমন করতো এবং তখনকার প্রথা অনুযায়ী তাদের পায়ের অলংকারাদি এবং বক্ষ ও চুল খুলে রাখা অবস্থায় আসতো। হযরত আসমা (রাঃ) বলেনঃ “এটা কতই না জঘন্য প্রথা!” ঐ সময় এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।

সুতরাং নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, মুসলমান নারীদেরকেও তাদের চক্ষু নিম্নমুখী তে হবে। স্বামী ছাড়া আর কারো দিকে কাম-দৃষ্টিতে তাকানো চলবে না। অপরিচিত লোকের দিকে তো তাকানোই চলবে না, কাম-দৃষ্টিতেই হোক অথবা এমনিই হোক।

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি এবং হযরত মায়মূনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট ছিলেন এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) তথায় আগমন করেন। এটা ছিল পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ “তোমরা পর্দা কর।” তাঁরা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! উনি তো অন্ধ লোক। তিনি আমাদেরকে। দেখতেও পাবেন না এবং চিনতেও পারবেন না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা তো অন্ধ নও যে তাকে দেখতে পাবে না?” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তবে কোন কোন আলেম বলেন যে, কাম-দৃষ্টি ছাড়া তাকানো হারাম নয়। তাদের দলীল হলো ঐ হাদীসটি যাতে রয়েছে যে, ঈদের দিন হাবশী লোকেরা অস্ত্রের খেলা দেখাচ্ছিল। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি তাদের খেলা দেখছিলেন এবং মনভরে দেখার পর ক্লান্ত হয়ে চলে আসেন।

স্ত্রীলোকদেরকেও সতীত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। নিজেদের আভরণ কারো সামনে প্রকাশ করা যাবে না। পর পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্যের কোন অংশই প্রকাশ করা যাবে না। হ্যা, তবে যেটা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সেটা অন্য কথা। যেমন চাদর ও উপরের কাপড় ইত্যাদি। এগুলোকে গোপন রাখা স্ত্রীলোকের পক্ষে সম্ভব নয়। এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুখমণ্ডল, হাতের কজি এবং আংটিকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হতে পারে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ সৌন্দর্যের স্থান যেটা প্রকাশ করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা যেন নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করে’-এর অর্থ হলোঃ তারা যেন তাদের বালি, হার, পায়ের অলংকার ইত্যাদি প্রদর্শন না করে।

বর্ণিত আছে যে, আভরণ অর্থাৎ অলংকার বা আকর্ষণীয় পোশাক দুই প্রকারের রয়েছে। এক তো হলো ওটাই যা শুধু স্বামীই দেখে। যেমন আংটি ও কংকন। আর দ্বিতীয় আভরণ হলো ওটাই যা অপরও দেখে থাকে। যেমন উপরের কাপড়।

যুহরী (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতে যেসব আত্মীয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাদের সামনে কংকন, দোপাট্টা এবং বালি প্রকাশিত হয়ে গেলে কোন দোষ নেই। আর অপর লোকদের সামনে যদি শুধু আংটি প্রকাশ পায় তবেও কোন দোষ হবে না। অন্য রিওয়াইয়াতে আংটির সাথে পায়ের মলেরও উল্লেখ রয়েছে। হতে পারে যে, (আরবি)-এর তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন মুখমণ্ডল এবং হাতের কজি করেছেন। যেমন সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, একদা হযরত আসমা বিনতে আবি বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন। ঐ সময় তিনি পাতলা কাপড় পরিহিতা ছিলেন। তাঁকে এভাবে আসতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ “নারী যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছে যায় তখন ওটা এবং ওটা ছাড়া অর্থাৎ চেহারা ও হাতের কজি ছাড়া তার আর কোন অঙ্গ দেখানো উচিত নয়।” (এ হাদীসটি মুরসাল। খালেদ ইবনে দারীক এটা হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁর হযরত আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা যেন তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। এর ফলে বক্ষ ও গলার অলংকার টাকা থাকবে। অজ্ঞতার যুগে তাদের এ অভ্যাস ছিল না। স্ত্রীলোকেরা তাদের বক্ষের উপর কিছুই দিতো না। মাঝে মাঝে গ্রীবা, চুল, বালি ইত্যাদি সবই পরিষ্কারভাবে দেখা যেতো। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল- তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়; এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।”

(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহুবচন। প্রত্যেক ঐ জিনিসকে (আরবি) বলা হয় যা ঢেকে ফেলে। দো-পাট্টা মাথাকে ঢেকে ফেলে বলে ওটাকেও (আরবি) বলা হয়। সুতরাং স্ত্রীলোকদের উচিত যে, তারা যেন নিজেদের ওড়না দিয়ে বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে তাদের গ্রীবা ও বক্ষকে আবৃত করে রাখে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা ঐ স্ত্রীলোকদের উপর রহম করুন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিল। যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তারা নিজেদের চাদর ফেড়ে দো-পাট্টা বানিয়েছিল। কেউ কেউ নিজের তহবন্দের পা কেটে নিয়ে ওটা দ্বারা মাথা ঢেকে নেয়।

একবার স্ত্রীলোকেরা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে কুরায়েশ মহিলাদের ফযীলত বর্ণনা করতে শুরু করলে তিনি বলেনঃ “তাদের ফযীলত আমিও স্বীকার করি। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আনসার মহিলাদের অপেক্ষা বেশী ফযীলত আমি কোন মহিলার দেখিনি। তাদের অন্তরে আল্লাহর কিতাবের সত্যতা ও ওর উপর পূর্ণ ঈমান যে রয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। সূরায়ে নূরের আয়াত (আরবি) যখন অবতীর্ণ হয় এবং তাদের পুরুষ লোকেরা তাদেরকে এটা শুনিয়ে দেয় তখন ঐ মুহূর্তে তারা ঐ আয়াতের উপর আমল করে। ফজরের নামাযে তারা হাযির হলে দেখা যায় যে, সবারই মাথায় দো-পাট্টা বিদ্যমান রয়েছে। দেখে মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর বালতি রাখা আছে।

এরপর আল্লাহ তাআলা ঐ পুরুষ লোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদের সামনে নারীরা থাকতে পারে। খুব সাজসজ্জা ছাড়া লজ্জাবনতা অবস্থায় তাদের সামনে তারা যাতায়াত করতে পারে। যদিও বাহ্যিক কোন আভরণের উপর তাদের দৃষ্টি পড়ে যায় তবে এতে কোন অপরাধ হবে না। তবে স্বামী এর ব্যতিক্রম। কেননা নারী তার সামনে পূর্ণ সাজসজ্জার সাথে থাকতে পারবে। চাচা ও মামার সাথেও বিবাহ নিষিদ্ধ, তথাপি তাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়নি, এর কারণ এই যে, তারা হয়তো তাদের ছেলেদের সামনে তাদের ভ্রাতুস্পুত্রী ও ভাগিনেয়ীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করবে। এজন্যেই তাদের সামনেও দোপাট্টা বাধা ছাড়া আসা উচিত নয়।

এ আয়াতে নারীদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমান নারীরা পরস্পরের সামনে নিজেদের আভরণ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু অমুসলিম নারীর সামনে মুসলিম নারী তার আভরণ প্রকাশ করতে পারে না। এর কারণ এই যে, খুব সম্ভব ঐ অমুসলিম নারীরা তাদের স্বামীদের সামনে ঐ মুসলিম নারীদের সৌন্দর্য বর্ণনা করবে। মুসলিম নারীদের ব্যাপারেও এই আংশকা আছে বটে, কিন্তু শরীয়ত এটা হারাম করে দিয়েছে বলে তারা এরূপ করতে পারে না। কিন্তু অমুসলিম নারীকে এর থেকে বাধা দিবে কিসে?

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন নারীর জন্যে বৈধ নয় যে, সে অন্য নারীর সাথে মিলিত হয়ে তার সৌন্দর্যের বর্ণনা তার স্বামীর সামনে এমনভাবে দেয় যেন তার স্বামী ঐ নারীকে স্বয়ং দেখতে রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন)

হযরত হাসির ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ)-কে লিখেনঃ “আমি অবগত হয়েছি যে, কোন কোন মুসলিম নারী গোসল খানায় যায় এবং তাদের সাথে মুশরিকা নারীরাও থাকে। কোন মুসলিম নারীর জন্যে বৈধ নয় যে, সে নিজের দেহ কোন অমুসলিম নারীকে প্রদর্শন করে।” (এটা সাঈদ ইবনে মানসূর (রঃ) তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন)

হযরত মুজাহিদও (রাঃ) (আরবি)-এর তাফসীরে বলেন যে, এর দ্বারা মুসলিম নারীদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং তাদের সামনে ঐ আভরণ প্রকাশ করা যাবে যা মুহরিম আত্মীয়দের সামনে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ গ্রীবা, বালি এবং হার। অতএব, মুসলিম নারীর জন্যে উলঙ্গ মাথায় মুশরিকা মহিলার সামনে থাকা বৈধ নয়।

হযরত আতা (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীগণ যখন বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছেন তখন স্ত্রীদের ধাত্রী তো ইয়াহুদী ও খৃষ্টান মহিলারাই ছিল। যদি এটা প্রমাণিত হয় তবে বুঝতে হবে যে, এটা প্রয়োজন বশতঃ ছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তবে মুশরিকা নারীদের মধ্যে যারা বাদী বা দাসী তারা এই হুকুম বহির্ভূত। কেউ কেউ বলেন যে, গোলামদেরও হুকুম এটাই।

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে দেয়ার জন্যে একটি গোলামকে নিয়ে তাঁর নিকট আগমন করেন। গোলামটিকে দেখে হযরত ফাতিমা (রাঃ) নিজেকে তাঁর দো-পাট্টার মাঝে আবৃত করতে থাকেন। কিন্তু ওটা ছোট ছিল বলে মাথা ঢাকলে পা খোলা থাকছিল এবং পা ঢাকলে মাথা খোলা থাকছিল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় কন্যা! তুমি এতো কষ্ট করছো কেন? আমি তো তোমার আব্বা এবং এতো তোমার গোলাম?” (এই হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইবনে আসাকির (রঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, ঐ গোলামটির নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে মাসআদাহ আল ফাযারী। তার দেহের রঙ ছিল খুবই কালো। হযরত ফাতিমা (রাঃ) তাকে লালন-পালন করে আযাদ করে দিয়েছিলেন। সিফফীনের যুদ্ধে সে হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষ অবলম্বন করেছিল এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর চরম বিরোধী ছিল।

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা স্ত্রীলোকদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যার মুকতাব গোলাম রয়েছে, যার সাথে এ শর্ত হয়েছে যে, সে যদি এতো টাকা দিতে পারে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে। অতঃপর তার কাছে ঐ পরিমাণ টাকা যোগাড়ও হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় তোমাদের ঐ গোলাম থেকে পর্দা করা উচিত। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

পুরুষদের মধ্যে যারা যৌন-কামনা রহিত তাদের সামনেও আভরণ প্রকাশ করা যাবে। অর্থাৎ কাজ কামকারী নওকর চাকরদের মধ্যে যাদের পুরুষত্ব নেই, স্ত্রীলোকদের প্রতি কোনই আকর্ষণ নেই তাদের হুকুম মুহরিম আত্মীয় পুরুষদের মতই। অর্থাৎ এসব আভরণ তাদের সামনে প্রকাশ করা চলবে। কিন্তু সেই খোজা, যার মুখের ভাষা খারাপ এবং সদা মন্দ কথা ছড়িয়ে বেড়ায় সে এই হুকুম বহির্ভূত।

হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন খোজা লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাড়ীতে আসে। তার পবিত্র স্ত্রীগণ এই আয়াতের মর্মানুযায়ী লোকটিকে আসতে নিষেধ করেননি। ঘটনাক্রমে ঐ সময়েই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে পড়েন। ঐ সময় সে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-এর ভাই হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলছিলঃ “আল্লাহ তা’আলা যখন তায়েফ জয় করাবেন তখন আমি তোমাকে গায়লানের মেয়ে দেখাবো। সে যখন আসে তখন তার পেটের উপর চারটি ভাঁজ পড়ে এবং যখন ফিরে যায় তখন আটটি ভাঁজ দৃষ্টিগোচর হয়। তার এ কথা শোনা মাত্রই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সাবধান! এরূপ লোককে কখনো আসতে দিবে না।” অতঃপর তাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সে তখন বায়দা নামক স্থানে বসবাস করতে থাকে। প্রতি শুক্রবারে সে আসতো এবং লোকদের কাছ থেকে পানাহারের কিছু জিনিস নিয়ে চলে যেতো।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের সামনে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যারা এখনো স্ত্রীলোকদের বিশেষ গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। স্ত্রীলোকদের প্রতি যাদের লোলুপ দৃষ্টি এখনো পতিত হয় না। হ্যা, তবে যদি তারা এমন বয়সে পৌছে যায় যে, স্ত্রীলোকদের সুশ্রী হওয়া বা বিশ্রী হওয়ার পার্থক্য তারা বুঝতে পারে এবং তাদের সৌন্দর্যে তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তবে তাদের থেকেও পর্দা করতে হবে। যদিও তারা পূর্ণ যৌবনে পদার্পণ না করে।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা স্ত্রীলোকদের নিকট প্রবেশ করা হতে বেঁচে থাকো।” প্রশ্ন করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! দেবর ও ভাসুর সম্পর্কে আপনার মত কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “দেবর ও ভাসুর তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ স্ত্রীলোকেরা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। অজ্ঞতার যুগে এরূপ প্রায় হতো যে, স্ত্রীলোকেরা চলার সময় যমীনের উপর সজোরে পা ফেলতো যাতে পায়ের অলংকার বেজে উঠে। ইসলামে এরূপ করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং নারীদেরকে প্রতিটি এমন কাজ থেকে নষেধ করে দেয়া হয় যাতে তাদের গোপন আভরণ প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই তার জন্যে আতর ও সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়াও নিষিদ্ধ।

হযরত আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক চক্ষু ব্যভিচারী, যখন নারী আতর মেখে, ফুল পরে, সুগন্ধি ছড়িয়ে পুরুষদের কোন মজলিসের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ (অর্থাৎ ব্যভিচারিণী)।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন এক নারীর সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। অমি তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ তুমি কি মসজিদ হতে আসছো? সে উত্তরে বললোঃ “হ্যাঁ।” পুনরায় আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? জবাবে সে বললোঃ “হ্যাঁ।” আমি তখন বললামঃ আমি আমার বন্ধু আবুল কাসিম (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ এমন স্ত্রীলোকের নামায কবূল করেন না যে এই মসজিদে আসার জন্যে সুগন্ধি মেখেছে, যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার গোসলের ন্যায় গোসল করে।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত মায়মূনা বিনতে সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অস্থানে সৌন্দর্য প্রকাশকারিণী নারী কিয়ামতের দিনের ঐ অন্ধকারের মত যেখানে কোন আলো নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু উসাইদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পথে পুরুষ ও নারীদেরকে একত্রে মিলে মিশে চলতে দেখে বলেনঃ “হে নারীরা! তোমরা এদিকে ওদিকে হয়ে যাও। মাঝপথ দিয়ে চলা তোমাদের জন্যে শোভনীয় নয়। তাঁর এ কথা শুনে নারীরা দেয়াল ঘেঁষে চলতে শুরু করে। এমনকি দেয়ালের সাথে তাদের কাপড়ের ঘর্ষণ লাগছিল। (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাঊদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আমার বাতলানো গুণাবলীর অধিকারী হয়ে যাও। অজ্ঞতার যুগের বদভ্যাসগুলো পরিত্যাগ কর। তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#973)
[قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ
Tell the believing men to reduce of their vision and guard their private parts.]
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 30-31
www.motaher21.net
24:30

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ ﴿۳۰﴾

Tell the believing men to reduce [some] of their vision and guard their private parts. That is purer for them. Indeed, Allah is Acquainted with what they do.

 

The Command to lower the Gaze

This is a command from Allah to His believing servants, to lower their gaze from looking at things that have been prohibited for them. They should look only at what is permissible for them to look at, and lower their gaze from forbidden things. If it so happens that a person’s gaze unintentionally falls upon something forbidden, he should quickly look away.

Muslim recorded in his Sahih that Jarir bin Abdullah Al-Bajali, may Allah be pleased with him, said,

“I asked the Prophet about the sudden glance, and he commanded me to turn my gaze away.

In the Sahih it is narrated that Abu Sa`id said that the Messenger of Allah said:

إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ عَلَى الطُّرُقَاتِ

Beware of sitting in the streets.

They said, “O Messenger of Allah, we have no alternative but to sit in the streets to converse with one another.”

The Messenger of Allah said:

إِنْ أَبَيْتُمْ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ

If you insist, then give the street its rights.

They asked, “What are the rights of the street, O Messenger of Allah!”

He said,

غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الاَْذَى وَرَدُّ السَّلَمِ وَالاَْمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ

Lower your gaze,

return the greeting of Salam,

enjoin what is good and forbid what is evil.

Abu Al-Qasim Al-Baghawi recorded that Abu Umamah said,

“I heard the Messenger of Allah say:

اكْفُلُوا لِي سِتًّا أَكْفُلْ لَكُمْ بِالْجَنَّةِ

إِذَا حَدَّث أَحَدُكُمْ فَلَ يَكْذِبْ

وَإِذَا ايْتُمِنَ فَلَإ يَخُنْ

وَإِذَا وَعَدَ فَلَإ يُخْلِفْ

وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ

وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ

وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ

Guarantee me six things and I will guarantee you Paradise:

when any one of you speaks, he should not lie;

if he is entrusted with something, he should not betray that trust;

if he makes a promise, he should not break it;

lower your gaze;

restrain your hands; and

protect your private parts.

Since looking provokes the heart to evil, Allah commanded (the believers) to protect their private parts just as he commanded them to protect their gaze which can lead to that.

So He said:

قُل لِّلْمُوْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ

Tell the believing men to lower their gaze, and protect their private parts.

Sometimes protecting the private parts may involve keeping them from committing Zina, as Allah says:

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَـفِظُونَ

And those who guard their chastity. (23:5)

Sometimes it may involve not looking at certain things, as in the Hadith in Musnad Ahmad and the Sunan:

احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ

Guard your private parts except from your wife and those whom your right hands possess.

ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ

That is purer for them.

means, it is purer for their hearts and better for their commitment to religion, as it was said:

Whoever protects his gaze, Allah will illuminate his understanding, or his heart.

إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

Verily, Allah is All-Aware of what they do.

This is like the Ayah :

يَعْلَمُ خَأيِنَةَ الاٌّعْيُنِ وَمَا تُخْفِى الصُّدُورُ

Allah knows the fraud of the eyes and all that the breasts conceal. (40:19)

In the Sahih it is recorded that Abu Hurayrah, may Allah be pleased with him, said that the Messenger of Allah said:

كُتِبَ عَلَى ابْنِ ادَمَ حَظُّهُ مِنَ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ النُّطْقُ وَزِنَا الاُْذُنَيْنِ الاْسْتِمَاعُ وَزِنَا الْيَدَيْنِ الْبَطْشُ وَزِنَا الرِّجْلَيْنِ الْخُطَى وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ أَوْ يُكَذِّبُهُ

The son of Adam has his share of Zina decreed for him, and he will commit that which has been decreed.

The Zina of the eyes is looking;

the Zina of the tongue is speaking;

the Zina of the ears is listening;

the Zina of the hands is striking; and

the Zina of the feet is walking.

The soul wishes and desires, and the private parts confirm or deny that.

It was recorded by Al-Bukhari without a complete chain.

Muslim recorded a similar report with a different chain of narration.

Many of the Salaf said,

“They used to forbid men from staring at beardless handsome boys.

24:31

وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اٰبَآئِہِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِہِنَّ اَوۡ نِسَآئِہِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡہَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ ؕ وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۱﴾

And tell the believing women to reduce [some] of their vision and guard their private parts and not expose their adornment except that which [necessarily] appears thereof and to wrap [a portion of] their headcovers over their chests and not expose their adornment except to their husbands, their fathers, their husbands’ fathers, their sons, their husbands’ sons, their brothers, their brothers’ sons, their sisters’ sons, their women, that which their right hands possess, or those male attendants having no physical desire, or children who are not yet aware of the private aspects of women. And let them not stamp their feet to make known what they conceal of their adornment. And turn to Allah in repentance, all of you, O believers, that you might succeed.

 

The Rulings of Hijab

This is a command from Allah to the believing women, and jealousy on His part over the wives of His believing servants. It is also to distinguish the believing women from the women of the Jahiliyyah and the deeds of the pagan women.

The reason for the revelation of this Ayah was mentioned by Muqatil bin Hayyan, when he said:

“We heard — and Allah knows best — that Jabir bin Abdullah Al-Ansari narrated that Asma’ bint Murshidah was in a house of hers in Bani Harithah, and the women started coming in to her without lower garments so that the anklets on their feet could be seen, along with their chests and forelocks. Asma’ said:`How ugly this is!’ Then Allah revealed:
وَقُل لِّلْمُوْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
(And tell the believing women to lower their gaze…).”

And Allah says:

وَقُل لِّلْمُوْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ

And tell the believing women to lower their gaze,

meaning, from that which Allah has forbidden them to look at, apart from their husbands.

(Some) scholars said that it is permissible for women to look at non-Mahram men without desire, as it was recorded in the Sahih that the Messenger of Allah was watching the Ethiopians playing with spears in the Masjid on the day of `Id, and A’ishah the Mother of the believers was watching them from behind him and he was concealing her from them, until she got bored and went away.

وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ

and protect their private parts.

Sa`id bin Jubayr said:

“From immoral actions.”

Abu Al-Aliyah said:

“Every Ayah of the Qur’an in which protecting the private parts is mentioned means protecting them from Zina, except for this Ayah —
وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
(and protect their private parts), which means protecting them from being seen by anybody.”

وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا

and not to show off their adornment except that which is apparent,

means, they should not show anything of their adornment to non-Mahram men except for whatever it is impossible to hide.

Ibn Mas`ud said:

“Such as clothes and outer garments,”

Meaning what the Arab women used to wear of the veil which covered their clothes and whatever showed from underneath the outer garment. There is no blame on her for this, because this is something that she cannot conceal. Similar to that is what appears of her lower garment and what she cannot conceal.

Al-Hasan, Ibn Sirin, Abu Al-Jawza’, Ibrahim An-Nakha`i and others also had the same view as Ibn Mas`ud.

وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ

and to draw their veils all over their Juyub,

means that they should wear the outer garment in such a way as to cover their chests and ribs, so that they will be different from the women of the Jahiliyyah, who did not do that but would pass in front of men with their chests completely uncovered, and with their necks, forelocks, hair and earrings uncovered. So Allah commanded the believing women to cover themselves, as He says:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لاَِّزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُوْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُوْذَيْنَ

O Prophet! Tell your wives and your daughters and the women of the believers to draw their cloaks all over their bodies. That will be better, that they should be known, so as not to be annoyed. (33:59)

And in this noble Ayah He said:
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
(and to draw their (Khumur) veils all over their Juyub.
Khumur (veils) is the plural of Khimar, which means something that covers, and is what is used to cover the head. This is what is known among the people as a veil.

Sa`id bin Jubayr said:

وَلْيَضْرِبْنَ
(and to draw), means to pull it around and tie it securely.

بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
(their veils all over their Juyub), means, over their necks and chests so that nothing can be seen of them.

Al-Bukhari recorded that A’ishah, may Allah be pleased with her, said:

“May Allah have mercy on the women of the early emigrants, when Allah revealed the Ayah:
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
(and to draw their veils all over their Juyub), they tore their aprons and Akhtamar themselves with them.”

He also narrated from Safiyyah bint Shaybah that A’ishah, may Allah be pleased with her, used to say:

“When this Ayah:
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ
(and to draw their veils all over their Juyub) was revealed, they took their Izars (waist sheets) and tore them at the edges, and Akhtamar themselves with them.”

وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ ابَايِهِنَّ أَوْ ابَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَايِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ

and not to reveal their adornment except to their husbands, or their fathers, or their husband’s fathers, or their sons, or their husband’s sons, or their brothers or their brother’s sons, or their sister’s sons,

All of these are a woman’s close relatives whom she can never marry (Mahram) and it is permissible for her to show her adornments to them, but without making a wanton display of herself.

Ibn Al-Mundhir recorded that Ikrimah commented on this Ayah,
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ ابَايِهِنَّ أَوْ ابَاء بُعُولَتِهِنَّ
(and not to reveal their adornment except to their husbands, or their fathers, or their husband’s fathers…),

“The paternal uncle and maternal uncle are not mentioned here, because they may describe a woman to their sons, so a woman should not remove her Khimar in front of her paternal or maternal uncle.”

With regard to the husband, all of this is for his sake, so she should try her best when adorning herself for him, unlike the way she should appear in front of others.

أَوْ نِسَايِهِنَّ

or their women,

this means that she may also wear her adornment in front of other Muslim women, but not in front of the women of Ahl Adh-Dhimmah (Jewish and Christian women), lest they describe her to their husbands.

This is prohibited for all women, but more so in the case of the women of Ahl Adh-Dhimmah, because there is nothing to prevent them from doing that, but Muslim women know that it is unlawful and so, would be deterred from doing it.

The Messenger of Allah said:

لَاا تُبَاشِرِ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتَهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا

No woman should describe another woman to her husband so that it is as if he is looking at her.

It was recorded in the Two Sahihs from Ibn Mas`ud.

أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ

or their right hand possessions.

Ibn Jarir said,

“This means from among the women of the idolators. It is permissible for a Muslim woman to reveal her adornment before such a woman, even if she is an idolatress, because she is her slave-girl.”

This was also the view of Sa`id bin Al-Musayyib.

Allah says;

أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الاِْرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ
Tabi`in among men who do not have desire,

such as hired servants and followers who are not at the same level as the woman and are feeble-minded and have no interest in or desire for women.

Ibn Abbas said,

“This is the kind of person who has no desire.”

Ikrimah said,

“This is the hermaphrodite, who does not experience erections.”

This was also the view of others among the Salaf.

It was narrated in the Sahih from A’ishah that a hermaphrodite, used to enter upon the family of the Messenger of Allah and they used to consider him as one of those who do not have desire, but then the Messenger of Allah came in when he was describing a woman with four rolls of fat in front and eight behind. The Messenger of Allah said,

أَلَا أَرَى هَذَا يَعْلَمُ مَا هَهُنَا لَا يَدْخُلَنَّ عَلَيْكُمْ

Lo! I think this person knows what is they are; he should never enter upon you.

He expelled him, and he stayed in Al-Bayda’ and only came on Fridays to get food.

أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء

or children who are not aware of the nakedness of women.

Because they are so young they do not understand anything about women or their `Awrah or their soft speech or their enticing ways of walking and moving.

If a child is small and does not understand that, there is nothing wrong with him entering upon women, but if he is an adolescent or approaching adolescence, so that he knows and understands these things, and can make a distinction between who is beautiful and who is not, then he should not enter upon women.

It was recorded in the Two Sahihs that the Messenger of Allah said:

إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ

Avoid entering upon women.

It was said, “O Messenger of Allah, what do you think about the male in-laws!”

He said:

الْحَمْوُ الْمَوْتُ

The male in-law is death.
The Etiquette of Women walking in the Street

Allah’s saying:

وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ

And let them not stamp their feet…

During Jahiliyyah, when women walked in the street wearing anklets and no one could hear them, they would stamp their feet so that men could hear their anklets ringing. Allah forbade the believing women to do this.

By the same token, if there is any other kind of adornment that is hidden, women are forbidden to make any movements that would reveal what is hidden, because Allah says:

وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ

And let them not stamp their feet so as to reveal what they hide of their adornment.

From that, women are also prohibited from wearing scent and perfume when they are going outside the home, lest men should smell their perfume.

Abu `Isa At-Tirmidhi recorded that Abu Musa, may Allah be pleased with him, said that the Prophet said:

كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ وَالْمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا

Every eye commits fornication and adultery, and when a woman puts on perfume and passes through a gathering, she is such and such — (meaning an adulteress).

He said,

“And there is a similar report from Abu Hurayrah, and this is Hasan Sahih.”

It was also recorded by Abu Dawud and An-Nasa’i.

By the same token, women are also forbidden to walk in the middle of the street, because of what this involves of wanton display.

Abu Dawud recorded that Abu Usayd Al-Ansari said that he heard the Messenger of Allah, as he was coming out of the Masjid and men and women were mixing in the street, telling the women:

اسْتَأْخِرْنَ فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تَحْقُقْنَ الطَّرِيقَ عَلَيْكُنَّ بِحَافَّاتِ الطَّرِيقِ

Keep back, for you have no right to walk in the middle of the street. You should keep to the sides of the road.

The women used to cling to the walls so much that their clothes would catch on the walls.

وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُوْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

And all of you beg Allah to forgive you all, O believers, that you may be successful.

means, practice what you are commanded in these beautiful manners and praiseworthy characteristics, and give up the evil ways of the people of Jahiliyyah, for the greatest success is to be found in doing what Allah and His Messenger command and avoiding what He forbids.

And Allah is the source of strength

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply