أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৭৪)
[أَنكِحُوا الاْأَيَامَى مِنكُمْ
তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী-স্ত্রী নেই, তাদের বিবাহ দাও।]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
৩২-৩৩ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:৩২
وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِہِمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۳۲﴾
তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী-স্ত্রী নেই, তাদের বিবাহ দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ, তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
২৪:৩৩
وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ الۡکِتٰبَ مِمَّا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ فَکَاتِبُوۡہُمۡ اِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِیۡہِمۡ خَیۡرًا ٭ۖ وَّ اٰتُوۡہُمۡ مِّنۡ مَّالِ اللّٰہِ الَّذِیۡۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ وَ لَا تُکۡرِہُوۡا فَتَیٰتِکُمۡ عَلَی الۡبِغَآءِ اِنۡ اَرَدۡنَ تَحَصُّنًا لِّتَبۡتَغُوۡا عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ مَنۡ یُّکۡرِہۡہُّنَّ فَاِنَّ اللّٰہَ مِنۡۢ بَعۡدِ اِکۡرَاہِہِنَّ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳۳﴾
যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীর মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও; যদি তোমরা জানো যে, ওদের মাঝে কোন কল্যাণ আছে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন, তা হতে তোমরা ওদেরকে দান কর। আর তোমাদের দাসিগণ সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদেরকে বাধ্য করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের উপর জবরদস্তির পর নিশ্চয় আল্লাহ তাদের প্রতি চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*বিয়ের ব্যবস্থা করা একটি সামাজিক দায়িত্ব : এ পর্যন্ত যা কিছু আলােচিত হয়েছে, তা ছিল সমস্যাটার মনস্তাত্ত্বিক ও নিরাপত্তমূলক তথা নেতিবাচক সমাধান। তবে নর নারীর পরপস্পরের প্রতি ঝোঁক ও আকর্ষণ যেহেতু একটা বাস্তব সমস্যা, তাই তার বাস্তব ও ইতিবাচক সমাধানও অপরিহার্য। এই বাস্তব সমাধান হলাে বিয়েকে সহজ করে দেয়া। বিয়ের কাজে সহায়তা ও সহযােগিতা করা এবং সেই সাথে যৌন সংগমের অন্য সকল পন্থাকে কঠিন করে দেয়া বা পুরােপুরিভাবে বন্ধ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তােমাদের মধ্যকার অবিবাহিতদেরকে… বিয়ে দাও…'(আয়াত ৩২-৩৩) বস্তুত বিয়ে হচ্ছে নর নারীর পারস্পরিক সহজাত আকর্ষণ ও আবেগ চরিতার্থ করার স্বাভাবিক পন্থা এবং এই আবেগ ও আকর্ষণের পবিত্র লক্ষ্য। তাই এই বিয়ের পথের সকল বাধা অপসারিত করা সকলের কর্তব্য, যাতে মানব জীবন তার স্বাভাবিক ও অকৃত্রিম গতিতে সচল থাকতে পারে। কিন্তু দাম্পত্য জীবন গড়া ও নর নারীর সতিত্ব ও শ্লীলতা রক্ষার পথের পয়লা বাধাই হলাে অর্থনৈতিক বাধা। অথচ ইসলাম একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সে সতিত্ব ও শ্লীলতা সংরক্ষণকে ফরজ করার আগে তার উপায় ও উপকরণ যােগাড় করার ব্যবস্থা করে থাকে এবং সমান অবস্থা সম্পন্ন নরনারীর জন্যে বিয়ে সহজ সাধ্যতা নিশ্চিত করে থাকে। ফলে একমাত্র সেই ব্যক্তিই ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে যে সহজ ও পবিত্র পন্থাকে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং কোনােরকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই উপেক্ষা করে। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা মুসলিম সমাজকে নির্দেশ দেন যে, যারা একমাত্র অর্থের অভাবে হালাল ও বৈধভাবে বিয়ে করতে অক্ষম, তাদেরকে বিয়ে করতে যেন তারা সর্বতােভাবে সাহায্য করে, ‘তােমরা তােমাদের মধ্যকার অবিবাহিতদের বিয়ে দিয়ে দাও এবং তােমাদের দাসদাসীদের মধ্যে যারা সৎ ও যােগ্য তাদেরও। তারা যদি দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেবেন…’ এখানে ‘আয়ামা’ শব্দটা দ্বারা সেসব স্বাধীন নারী ও পুরুষকে বুঝানাে হয়েছে যারা স্বামীহীন বা স্ত্রীহীন অবস্থায় রয়েছে। আয়ামা’র পরেই দাসদাসীর কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, আর তােমাদের দাসদাসীদের মধ্যে যারা বিয়ের যোগ্য তাদেরকেও। এই উভয় শ্রেণীর লােকদেরই অভিন্ন বৈশিষ্ট হলাে অর্থাভাব, যা পরবর্তী বাক্য দ্বারা বুঝা যায়, ‘তারা যদি দরিদ্র হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে ধনী বানিয়ে দেবেন।’ এখানে মুসলিম সমাজকে আদেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে বিয়ে দিতে। অধিকাংশ ইমাম ও তাফসীরকারের মতে এ আদেশ বাধ্যতামূলক নয়, বরং উপদেশমূলক। তাদের প্রমাণ এই যে, রসুল(স)-এর যুগে অনেক লােক স্বামীহীন বা স্ত্রীহীন অবস্থায় জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে বিয়ে দেয়া হয়নি। এ আয়াতের আদেশ যদি বাধ্যতামূলক হতাে, তবে তাদেরকে অবশ্যই বিয়ে দেয়া হতাে। কিন্তু আমার মত এই যে, এ আদেশ অবশ্যই বাধ্যতামূলক। তবে সেটা এ অর্থে নয় যে, রাষ্ট্র ও সরকার স্বামীহীন ও স্ত্রীহীন নরনারীকে বিয়ে করতে বাধ্য করবে। বরঞ্চ তার অর্থ এই যে, তাদের মধ্যে যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের সতিত্ব ও শ্লীলতাকে নিরাপদ করা ও সংরক্ষণ করা ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যে অবশ্য কর্তব্য বা ওয়াজিব। কেননা বিয়ে হচ্ছে সতিত্বকে কার্যকরভাবে সংরক্ষণ ও সমাজকে ব্যাভিচার ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র কর ও পবিত্র রাখার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পন্থা ও উপায় । সমাজকে ব্যাভিচার থেকে পবিত্র রাখা যখন ওয়াজিব, তখন তার পন্থা ও উপায় অবলম্বন করাও ওয়াজিব। এই সাথে আমাদের এ কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ইসলাম একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার মৌলিক সমাধান দিয়ে থাকে। তাই সে সকল সুস্থ ও সবল মানুষকে নিজের যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণের উপযােগী অর্থ ও জীবিকা উপার্জনে সমর্থ বানায় এবং সরকারী কোষাগারের মুখাপেক্ষী হতে দেয় না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সে সরকারী কোষাগারকেও কিছু কিছু সাহায্য করতে বাধ্য করে। ইসলামী ব্যবস্থায় মূল কথা হলাে প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ উপার্জনে স্বয়ম্ভর হবে এবং কারাে মুখাপেক্ষী থাকবে না। সকল নাগরিকের কর্ম সংস্থান ও পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করাকে সে রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে ধার্য করে। বাইতুল মাল বা সরকারী কোষাগার থেকে সাহায্য করাটা ব্যতিক্রমী বা বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য। এর ওপর ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নির্ভরশীল নয়। এতদসত্তেও ইসলামী সমাজে যদি কখনাে এমন কিছু বিবাহিত নর নারী বিদ্যমান থাকে, যাদের নিজস্ব সহায় সম্পদ বিয়ে করার জন্যে যথেষ্ট নয়, তাহলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দাসদাসীর ব্যাপারটাও তদ্রুপ। তবে তাদের মনিব বা অভিভাবক যতােক্ষণ তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে সক্ষম থাকবে, ততােক্ষণ এটা তাদেরই দায়িত্ব থাকবে। নারী হােক বা পুরুষ হােক যারা বিয়ের যােগ্য ও বিয়ে করতে ইচ্ছুক, তাদের বিয়ে শুধু অর্থাভাবে আটকে থাকবে এটা অন্যায় ও অবৈধ। মনে রাখতে হবে, জীবিকা আল্লাহর হাতে। আর আল্লাহ তায়ালাই তাদের অভাব দূর করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন যদি তারা নিজেদের সতিত্ব ও শ্লীলতা রক্ষার পবিত্র পথ অবলম্বন করে, তারা যদি অভাবী হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাব দূর করে দেবেন। রাসূল(স.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব, আল্লাহর পথে জেহাদকারী, যে পরাধীন ব্যক্তি মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি লাভে ইচ্ছুক এবং ব্যক্তি বিয়ে করে নিজের সতিত্ব ও শ্লীলতাকে নিরাপদ করতে চায় । (তিরমিযী ও নাসায়ী) সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বামীহীন নারী ও শ্রীহীন পুরুষদেরকে বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তারা যাতে নিজেদের সতিত্ব ও শ্লীলতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকে, সে জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পরবর্তী আয়াতে, ‘যারা বিয়ে করার সুযােগ পাচ্ছে না তাদের উচিত নিজ নিজ শ্লীলতা রক্ষা করা যতােক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন…’ বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সৎ জীবন যাপনে ইচ্ছুকদের পথ সংকীর্ণ করেন না। কেননা তিনি তাদের ইচ্ছা ও সততা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল। *দাস দাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণ ও পতিতাবৃত্তি দমনে ইসলামের কর্মসূচী : এভাবে ইসলাম এই সমস্যার বাস্তবানুগ সমাধান দেয়। বিয়ের যােগ্য কোনাে ব্যক্তি কেবল আর্থিক অক্ষমতার কারণে বিয়ে করতে না পারলে সে তাকে আর্থিক আনুকূল্য দিয়ে বিয়ে করার ক্ষমতা যােগায়। বিয়ে করার পথে সম্ভবত অর্থাভাবই সবচেয়ে বড় বাধা। যেহেতু সমাজে দাস দাসীদের অস্তিত্ব সমাজের সামগ্রিক নৈতিক মানের অবনতি ঘটানাের সহায়ক ছিল এবং এই শ্ৰেণীটির নিজের মানবিক মর্যাদা সংক্রান্ত চেতনা দুর্বল থাকার কারণে তাদের মধ্যে চারিত্রিক শৈথিল্য দেখা দেয়ার আশংকা ছিলাে। অথচ তৎকালে ইসলামের শত্রুরা মুসলিম যুদ্ধবন্দীদেরকে দাসদাসীতে পরিণত করার দরুণ তাদের যুদ্ধবন্দীদের সাথেও অনুরূপ আচরণ না করে অর্থাৎ তাদেরকেও দাস দাসীতে পরিণত না করে উপায় ছিলাে না, তাই ইসলাম সুযােগ পেলেই এসব দাস দাসীকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে। বিশ্ব পরিস্থিতি যতােক্ষণ দাস প্রথা সর্বতােভাবে বিলােপের অনুকূল না হয়, ততােক্ষণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম মুক্তিপণ গ্রহণ করে দাস মুক্তির অনুমতি দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তােমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে যদি কল্যাণ দেখতে পাও, তবে মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দাও…’ এই মুক্তিপণ নিয়ে মুক্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে ফকীহদের মতভেদ রয়েছে। আমার মতে এটা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। কেননা এ ব্যবস্থা স্বাধীনতা ও মানবীয় মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের মৌলিক বিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ। মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি লাভের চুক্তি সম্পাদিত হবার সময় থেকে শুরু করে দাস বা দাসীর উপার্জিত সকল অর্থ ও পারিশ্রমিক তার নিজের মালিকানাভুক্ত হয়ে যায়, যাতে সে তা দিয়ে মুক্তি অর্জন করতে পারে। যাকাতেরও একটা অংশ এরূপ ব্যক্তির প্রাপ্য, ‘আর আল্লাহ তােমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে কিছুটা তাদেরকে দাও।’ এই ব্যবস্থার জন্যে একমাত্র শর্ত এই যে, মনিব এতে দাস বা দাসীর জন্য কল্যাণকর মনে করে। আর কল্যাণের পয়লা বিষয় হলাে তার ইসলাম গ্রহণ । দ্বিতীয়. তার উপার্জনক্ষম হওয়া চাই। কেননা স্বাধীন হবার পর সে মানুষের ঘাড়ের ওপর বােঝা হয়ে চেপে বসুক-সেটা ইসলাম চায় না। সে উপার্জনের সর্বনিম্ন পন্থারও আশ্রয় নিতে পারে, যা তার মৌলিক প্রয়ােজন পূরণ করার নিশ্চয়তা দেয়। ইসলাম নাগরিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দানকারী একটা বাস্তব ব্যবস্থা। তার দৃষ্টিতে দাস মুক্তি লাভ করেছে এই প্রচারণাই বড় কথা নয়। কেননা নিছক লেবেলকে সে গুরুত্ব দেয় । তার দৃষ্টিতে বাস্তবতাই গুরুত্বপূর্ণ। কোনাে দাস কেবল তখনই মুক্তি পাবে, যখন এই মর্মে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে যে সে স্বাধীন হবার পর উপার্জনে সক্ষম হবে। সমাজের গলগ্রহ হয়ে রইবে না। কোনাে নােংরা পেশা অবলম্বন করে বেঁচে থাকবে না এবং এমন কোনাে জিনিস বিক্রি করতে বাধ্য হবে না, যা নাম সর্বস্ব স্বাধীনতার চেয়েও দামী। কেননা সে সমাজকে পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করার জন্যেই তাকে স্বাধীন করেছে, নতুন করে কলুষিত করার জন্যে নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কিছু দাসীর বেশ্যাবৃত্তির পেশায় নিয়ােজিত হওয়া খােদ দাস প্রথার চেয়েও মারাত্মক। জাহেলী যুগের মানুষের রীতি ছিলাে এ রকম যে, তাদের কারাে কোনাে দাসী থাকলে তাকে বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়ােগ করতা এবং তার ওপর কর ধার্য করে তা তার কাছ থেকে আদায় করতাে। আজও এই পেশা দেশে দেশে প্রচলিত রয়েছে। ইসলাম যখন সামাজিক পরিবেশকে বিশুদ্ধ করতে চাইলাে, তখন ব্যাভিচারকে সর্বতােভাবে নিষিদ্ধ ঘােষণা করলাে। তবে বল প্রয়ােগের মাধ্যমে ব্যাভিচারে নিয়ােগ করা সম্পর্কে বিশেষ বিধি জারী করলাে এভাবে, ‘তােমাদের দাসীদেরকে বলপূর্বক ব্যাভিচারে বাধ্য করাে না- যদি তারা সতী থাকতে ইচ্ছুক হয়…’ এখানে যারা এই অপকর্মে দাসীদেরকে বাধ্য করতাে, তাদেরকে বলপ্রয়ােগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এহেন জঘন্য পন্থায় দুনিয়ার সম্পদ উপার্জন করার জন্য তাদেরকে কঠোরভাবে ভৎর্সনা করা হয়েছে এবং যাদেরকে বাধ্য করা হতাে, তাদেরকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কেননা এই অপকর্মে তাদের কোনাে হাত ছিলাে না। তারা নিছক বলপূর্বক ব্যবহৃত হয়েছে। সুদ্দী বলেন, এ আয়াত মােনাফেক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সলুল সম্পর্কে নাযিল হয়। মুয়াযা নামে তার এক দাসী ছিলাে। তার কাছে কোনাে অতিথি এলে সে দাসীকে তার মনােরঞ্জনের জন্যে ও অর্থোপার্জনের জন্যে তার কাছে রাত যাপন করতে ও ব্যাভিচার করতে পাঠাতাে। দাসীটা হযরত আবু বকরের কাছে গিয়ে ফরিয়াদ জানালে তিনি রসূল(স.)-কে ব্যাপারটা জানান। রাসূল(স.) তাকে আটক করার জন্যে আবু বকর(রা.)-কে আদেশ দেন। আবদুল্লাহ এবনে উবাই এ নিয়ে হৈ চৈ করলাে। সে এই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলাে যে, ‘মােহাম্মদের অত্যাচার থেকে আমাদেরকে কে বাঁচাবে? সে আমাদের দাসীর ওপরও জোর খাটাচ্ছে।’ এই সময় আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন। সতিত্ব বজায় রাখতে ইচ্ছুক দাসীকে অর্থোপার্জনের নিমিত্তে ব্যাভিচারে বাধ্য করার বিরুদ্ধে। এই নিষেধাজ্ঞা সমাজ সংস্কারের কোরআনী কর্মসূচীর অংশ বিশেষ। এ দ্বারা সে যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ করার নােংরা পন্থাগুলাে রহিত করেছে। কেননা সমাজে বেশ্যাবৃত্তি চালু থাকলে তা অনেককে সেদিকে প্রলুব্ধ করে। কেননা এটা সহজ পন্থা। এটা যদি প্রচলিত না থাকতাে, তাহলে মানুষ পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পন্থায় এ কাজ সমাধা করতে উদ্বুদ্ধ হতাে। কেউ কেউ বলে যে, বেশ্যাবৃত্তি সমাজের নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং এ দ্বারা দরিদ্র পরিবারগুলাের ইযযত সম্ভ্রম রক্ষা পাচ্ছে। কেননা যাদের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়, তাদের স্বাভাবিক যৌন চাহিদা পূরণের জন্যে এই নােংরা পন্থার বিকল্প নেই। অন্য কথায় তারা বলতে চায়, যৌন ক্ষুধায় উন্মত্ত পশুগুলাের হাত থেকে সতী সাধ্বী নারীদের সম্ভ্রমকে বাঁচাতে হলে এই নােংরা খাদ্যগুলাে প্রস্তুত রাখা জরুরী। আসলে এই চিন্তাধারায় সম্পূর্ণ উল্টো যুক্তি প্রয়ােগ করে হয়েছে এবং কারণ ও ফলাফলকে উল্টোভাবে স্থাপন করা হয়েছে। যৌন সংযােগ ও সম্পর্ককে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও নতুন প্রজন্মের দ্বারােদঘাটক হিসাবে বহাল রাখা জরুরী। সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেষ্ট থাকতে হবে তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার সাধন পূর্বক এমন এক পরিবেশ গড়ার জন্যে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি সংগতভাবে জীবন যাপন ও বিয়ে শাদী করতে সমর্থ হবে। এরপরও যদি সেই সমাজে কোনাে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি দেখা দেয় তবে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে তার চিকিৎসা করতে হবে। এতে সমাজে বেশ্যাবৃত্তি বা অন্য এমন কোনাে নােংরা প্রথা থাকার প্রয়ােজন হয় না, যা যৌন চাহিদা পূরণের দায় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি লাভে ইচ্ছুক লােকেরা এ পন্থা অবলম্বন করে থাকে এবং সমাজের জ্ঞাতসারেই। এহেন দায়িত্বহীন কাজ তারা করে আসলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার এমনভাবে হওয়া প্রয়ােজন, যাতে এ ধরনের কদর্য কার্যকলাপের কোনাে অবকাশই না থাকে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকৃতির ওজুহাত দেখিয়ে মানবতার এমন অবমাননাকে বৈধ করার কসরত চালানাে না হয়। ইসলাম তার স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা দিয়ে এই মহৎ কাজই সমাধা করেছে। এ দ্বারা সে অধপতিত মানবতার অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে। এই পর্বের উপসংহার টানা হয়েছে পবিত্র কোরআনের সেই বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দানের মাধ্যমে, যা তার পটভূমি ও আলােচ্য বিষয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ। ‘আর আমি তােমাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি এবং আল্লাহ ভীরুদের অতীত জাতিগুলাের উদাহরণ এবং সদুপদেশকে এর অন্তর্ভুক্ত করেছি।’ বস্তুত কোরআনের আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন, এতে কোনাে জটিলতা ও দুর্বোধ্যতা নেই, সঠিক ও সােজা পথ থেকে বিচ্যুত হবারও কোনাে কারণ নেই। অতীতে যারা আল্লাহর বিধান থেকে বিচ্যুত হয়ে আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়েছে তাদের বিবরণও এতে রয়েছে। যারা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান এবং আল্লাহর ভয়ে সঠিক পথে চলে তাদের জন্যে এতে সদুপদেশ রয়েছে। এ পর্বে আলােচিত বিধিসমূহ এই উপসংহারের সাথে সংগতিশীল, যা কোরআন নাযিলকারী মহান আল্লাহর সম্পর্কে হৃদয়কে সজাগ করে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মূলে ايامى শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। একে সাধারণত লোকেরা নিছক বিধবা শব্দের অর্থে গ্রহণ করে থাকে। অথচ আসলে এ শব্দটি এমন সকল পুরুষ ও নারীর জন্য ব্যবহৃত হয় যারা স্ত্রী বা স্বামীহীন। ايامى শব্দটি ايم এর বহুবচন। আর ايم এমন প্রত্যেক পুরুষকে বলা হয় যার কোন স্ত্রী নেই এবং এমন প্রত্যেক নারীকে বলা হয় যার কোন স্বামী নেই। তাই আমি এর অনুবাদ করেছি “একা ও নিসঙ্গ।”
# তোমাদের প্রতি যাদের মনোভাব ও আচরণ ভালো এবং যাদের মধ্যে তোমরা দাম্পত্য জীবন যাপনের যোগ্যতাও দেখতে পাও। যে গোলাম ও বাঁদীর আচরণ মালিকের সাথে সঠিক নয় এবং যার মেজায দেখে বিয়ের পরে জীবন সঙ্গীর সাথে তার বনিবনা হবে বলে আশাও করা যায় না তাকে বিবাহ দেবার দায়িত্ব মালিকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি। কারণ এ অবস্থায় সে অন্য এক ব্যক্তির জীবন নষ্ট করে দেবার জন্য দায়ী হবে। এ শর্তটি স্বাধীন লোকদের ব্যাপারে আরোপ করা হয়নি। কারণ স্বাধীন ব্যক্তির বিয়েতে অংশ গ্রহণকারীর দায়িত্ব আসলে একজন পরামর্শদাতা, সহযোগী ও পরিচিত করাবার মাধ্যমের বেশী কিছু হয় না। বিবাহকারী ও বিবাহকারিনীর সম্মতির মাধ্যমে আসল দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু গোলাম ও বাঁদীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্ণ দায়িত্ব হয় মালিকের। সে যদি জেনে বুঝে কোন হতভাগিনীকে একজন বদ স্বভাব ও বদচরিত্র সম্পন্ন লোকের হাতে তুলে দেয় তাহলে এর সমস্ত দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
# বাহ্যত এখানে আদেশমূলক ক্রিয়াপদ দেখে একদল আলেম মনে করেছেন, এ কাজটি করা ওয়াজিব। অথচ বিষয়টির ধরণ নিজেই বলছে, এ আদেশটি ওয়াজিব অর্থে হতে পারে না। একথা সুস্পষ্ট, কোন ব্যক্তির বিয়ে করানো অন্যদের ওপর ওয়াজিব হতে পারে না। কার সাথে কার বিয়ে করানো ওয়াজিব? ধরা যাক, যদি ওয়াজিব হয়ও তাহলে যার বিয়ে হতে হবে তার অবস্থা কি? অন্য লোকেরা যার সাথেই তার বিয়ে দিতে চায় তার সাথে বিয়ে কি তার মেনে নেয়া উচিত? এটি যদি তার ওপর ফরয হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার বিয়ে তার নিজের আয়ত্তে নেই। আর যদি তার অস্বীকার করার অধিকার থাকে তাহলে যাদের ওপর এ কাজ ওয়াজিব তারা কিভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে? এসব দিক ভালোভাবে বিবেচনা করে অধিকাংশ ফকীহ এ রায় দিয়েছেন যে, আল্লাহর এ উক্তি এ কাজটিকে ওয়াজিব নয় বরং “মান্দুব” বা পছন্দনীয় গণ্য করে। অর্থাৎ এর মানে হবে, মুসলমানদের সাধারণভাবে চিন্তা হওয়া উচিত তাদের সমাজে যেন লোকেরা অবিবাহিত অবস্থায় না থাকে। পরিবারে সাথে জড়িত লোকেরা, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী সবাই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেবে এবং যার কেউ নেই তার এ কাজে সাহায্য করবে রাষ্ট্র্।
# এর অর্থ এ নয় যে, যারই বিয়ে হবে আল্লাহ তাকেই ধনাঢ্য করে দেবেন। বরং এখানে বক্তব্য হচ্ছে, লোকেরা যেন এ ব্যাপারে খুব বেশী হিসেবী না বনে যায়। এর মধ্যে মেয়ে পক্ষের জন্যও নির্দেশ রয়েছে। বলা হয়েছে, সৎ ও ভদ্র রুচিশীল ব্যক্তি যদি তাদের কাছে পয়গাম পাঠায়, তাহলে নিছক তার দারিদ্র দেখেই যেন তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। ছেলে পক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কোন যুবককে নিছক এখনো খুব বেশী আয়-রোজগার করছে না বলে যেন আইবুড়ো করে না রাখা হয়। আর যুবকদেরকেও উপদেশ দেয়া হচ্ছে, বেশী সচ্ছলতার অপেক্ষায় বসে থেকে নিজেদের বিয়ের ব্যাপারকে অযথা পিছিয়ে দিয়ো না। সামান্য আয় রোজগার হলেও আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিয়ে করে নেয়া উচিত। অনেক সময় বিয়ে নিজেই মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীর সহায়তায় খরচপাতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। দায়িত্ব মাথার ওপর এসে পড়ার পর মানুষ নিজেও আগের চাইতেও বেশী পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। অর্থকরী কাজে স্ত্রী সাহায্য করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কার জন্য কি লেখা আছে তা কেউ জানতে পারে না। ভালো অবস্থা খারাপ অবস্থায়ও পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং খারাপ অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে ভালো অবস্থায়। কাজেই মানুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিসেবী হওয়া উচিত নয়।
# এ প্রংসগে নবী ﷺ থেকে যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলোই এ আয়াতগুলোর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ বলেনঃ يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ “হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে বিয়ে করতে পারে তার বিয়ে করে নেয়া উচিত। কারণ এটি হচ্ছে চোখকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাবার এবং মানুষের সততা ও সতীত্ব রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়। আর যার বিয়ে করার ক্ষমতা নেই তার রোযা রাখা উচিত। কারণ রোযা মানুষের দেহের উত্তাপ ঠাণ্ডা করে দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّه عَوْنُهُمُ النَّاكِحُ يُرِيدُ الْعَفَافَ والْمُكَاتَبُ يُرِيدُ الأَدَاءَ وَالغازى فِى سَبِيلِ اللَّهِ- “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব। এক ব্যক্তি হচ্ছে, যে চারিত্রিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য বিয়ে করে। দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছে, মুক্তিলাভের জন্য যে গোলাম লিখিতভাবে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং তার মুক্তিপণ দেয়ার নিয়ত রাখে। আর তৃতীয় ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ। এছাড়া আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আন নিসা ২৫ আয়াত )।
# মূল শব্দ হচ্ছে مُكَاتَبَتْ এর শাব্দিক অর্থ লিপিবদ্ধ। কিন্তু পারিভাষিক দিক দিয়ে এ শব্দটি তখন বলা হয় যখন কোন গোলাম বা বাঁদী নিজের মুক্তির জন্য নিজের প্রভুকে একটি মূল্য দেবার প্রস্তাব দেয় এবং প্রভু সে প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয় তখন উভয়ের মধ্যে এর শর্তাবলী লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ইসলামে গোলামদের মুক্ত করার জন্য যেসব পথ তৈরী করা হয়েছে এটি তার অন্যতম। এ মূল্য অর্থ বা সম্পদের আকারে দেয়া অপরিহার্য নয়। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রভুর জন্য কোন বিশেষ কাজ করে দেয়াও মূল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। চুক্তি হয়ে যাবার পর কর্মচারীর স্বাধীনতায় অনর্থক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অধিকার প্রভুর থাকে না। মূল্য বাবদ দেয় অর্থ সংগ্রহের জন্য সে তাকে কাজ করার সুযোগ দেবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গোলাম যখনই তার দেয় অর্থ বা তার ওপর আরোপিত কাজ সম্পন্ন করে দেবে তখনই সে তাকে মুক্ত করে দেবে। হযরত উমরের আমলের ঘটনার। একটি গোলাম তার কর্ত্রীর সাথে নিজের মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে নিয়ে যায়। কর্ত্রী বলে, আমিতো সমুদয় অর্থ এক সাথে নেবো না। বরং বছরে বছরে মাসে মাসে বিভিন্ন কিস্তিতে নেবো। গোলাম হযরত উমরের (রা.) কাছে অভিযোগ করে। তিনি বলেন, এ অর্থ বায়তুল মালে দাখিল করে দাও এবং চলে যাও তুমি স্বাধীন। তারপর কর্ত্রীকে বলে পাঠান, তোমার অর্থ এখানে জমা হয়ে গেছে, এখন তুমি চাইলে এক সাথেই নিয়ে নিতে পারো অথবা আমরা বছরে বছরে মাসে মাসে তোমাকে দিতে থাকবো। (দারুকুত্নী, আবু সাঈদ মুকবেরীর রেওয়ায়াতের মাধ্যমে)।
# একদল ফকীহ এ আয়াতের এ অর্থ নিয়েছেন যে, যখন কোন বাঁদী বা গোলাম মুল্য দানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের লিখিত চুক্তি করার আবেদন জানায় তখন তা গ্রহণ করা প্রভুর জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। এটি আতা, আমর ইবনে দ্বীনার, ইবনে সীরান, মাসরূক, দ্বাহ্হাক, ’ইক্রামাহ, যাহেরীয়্যা ও ইবনে জারীর তাবারীর অভিমত। ইমাম শাফে’ঈও প্রথমে এরই প্রবক্তা ছিলেন। দ্বিতীয় দলটি বলেন, এটি ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব ও মান্দুব তথা পছন্দনীয়। এ দলে শা’বী, মুকাতিল ইবনে হাইয়ান, হাসান বাস্রী, আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ, সুফিয়ান সওরী, আবু হানীফা, মালেক ইবনে আনাসের মতো মনীষীগণ আছেন। শেষের দিকে ইমাম শাফে’ঈও এ মতের প্রবক্তা হয়ে উঠেছিলেন। প্রথম দলটির মতে সমর্থন করতো দু’টো জিনিস। এক, আয়াতের শব্দ كَاتِبُوهُمْ “তাদের সাথে লিখিত চুক্তি করো।” এ শব্দাবলী পরিষ্কার প্রকাশ করে যে, এটি আল্লাহর হুকুম। দুই, নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে প্রমাণ হয়, প্রখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস হযরত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের পিতা সীরীন যখন তাঁর প্রভু হযরত আনাসের (রা.) কাছে মূল্যের বিনিময়ে গোলামী মুক্ত হবার লিখিত চুক্তি করার আবেদন জানায় এবং তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তখন সীরীন হযরত ওমরের (রা.) কাছে নালিশ করে। তিনি ঘটনা শুনে দোর্রা নিয়ে আনাসের (রা.) ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বলেন, আল্লাহর হুকুম হচ্ছে, “গোলামী মুক্তির লিখিত চুক্তি করো।” (বুখারী) এ ঘটনা থেকে যুক্তি পেশ করা হয়ঃ এটি হযরত উমরের ব্যক্তিগত কাজ নয় বরং সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে তিনি এ কাজ করেছিলেন এবং কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাননি, কাজেই এটি এ আয়াতের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা। দ্বিতীয় দলটির যুক্তি হচ্ছে, আল্লাহ শুধুমাত্র كَاتِبُوهُمْ বলেননি, বলেন فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا “তাদের সাথে লিখিত চুক্তি করো যদি তাদের মধ্যে কল্যাণের সন্ধান পাও।” এ কল্যাণের সন্ধান পাওয়াটা এমন একটি শর্ত যা নির্ভর করে একমাত্র মালিকের রায়ের ওপর। এর এমন কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই যার ভিত্তিতে কোন আদালত এটা যাচাই-পর্যালোচনা করতে পারে। আইনগত বিধানের রীতি এ নয়। তাই হুকুমটিকে উপদেশের অর্থেই গ্রহণ করা হবে আইনগত হুকুমের অর্থে নয়। আর সীরীনের যে নজির পেশ করা হয়েছে তার জবাব তারা এভাবে দেনঃ সেকালে তো আর লিখিত চুক্তির আবেদনকারী গোলাম একজন ছিল না। নবীর যুগে ও খেলাফতে রাশেদার আমলে হাজার হাজার গোলাম ছিল এবং তাদের বিপুল সংখ্যক মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করেছিল। কিন্তু কেবলমাত্র সীরীনের ঘটনাটি ছাড়া কোন প্রভুকে আদালতের হুকুমের মাধ্যমে গোলামী মুক্তির লিখিত চুক্তি করতে বাধ্য করার আর একটিও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। কাজেই হযরত উমরের এ কাজটিকে আদালতের ফায়সালা মনে করার পরিবর্তে আমরা একে এ অর্থে গ্রহণ করতে পারি যে, তিনি মুসলমানদের মাঝখানে কেবল কাযীর ভূমিকায় অধিষ্ঠিত ছিলেন না বরং ব্যক্তি ও সমাজের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল পিতা ও সন্তানের মতো। অনেক সময় তিনি এমন অনেক বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতেন যাতে একজন পিতা হস্তক্ষেপ করতে পারেন কিন্তু একজন বিচারক পারেন না।
# কল্যাণ বলতে তিনটি জিনিস বুঝানো হয়েছেঃ
একঃ চুক্তিবদ্ধ অর্থ আদায় করার ক্ষমতা গোলামের আছে। অর্থাৎ সে উপার্জন বা পরিশ্রম করে নিজের মুক্তি লাভের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করতে পারে। যেমন একটি মুরসাল হাদীসে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ان علمتم فيهم حرفة ولاترسلوهم كلا على الناس “যদি তোমার জানো তারা উপার্জন করতে পারে তাহলে লিখিত চুক্তি করে নাও। তাদেরকে যেন লোকদের কাছে ভিক্ষা করতে ছেড়ে দিয়ো না।” (ইবনে কাসীর, আবু দাউদের বরাত দিয়ে)
দুইঃ তার কথায় বিশ্বাস করে তার সাথে চুক্তি করা যায়, এতটুকু সততা ও বিশ্বস্ততা তার মধ্যে আছে। এমন না হয় যে, লিখিত চুক্তি করার পর সে মালিকের খিদমত করা থেকে ছুটিও পেয়ে গেলো। আবার এ সময়ের মধ্যে যা কিছু আয়-রোজগার করে তাও খেয়ে পরে শেষ করে ফেললো।
তিনঃ মালিক তার মধ্যে এমন কোন খারাপ নৈতিক প্রবণতা অথবা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতার এমন তিক্ত আবেগ-অনুভূতি পাবে না যার ভিত্তিতে এ আশঙ্কা হয় যে, তার স্বাধীনতা মুসলিম সমাজের জন্য ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক হবে। অন্য কথায় তার ব্যাপারে আশা করা যেতে পারে যে, সে মুসলিম দেশের ও সমাজের একজন ভালো ও স্বাধীন নাগরীক হতে পারবে, কোন বিশ্বাসঘাতক ও ঘরের শত্রু আস্তিনের সাঁপে পরিণত হবে না। এ প্রসঙ্গে একথা সামনে রাখতে হবে যে, বিষয়টি ছিল যুদ্ধবন্দী সংক্রান্তও এবং তাদের সম্পর্কে অবশ্যি এ ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল।
# এটি একটি সাধারণ হুকুম। প্রভু, সাধারণ মুসলমান এবং ইসলামী হুকুমাত সবাইকে এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। প্রভুদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তির আবেদনকারীদের দেয় অর্থ থেকে কিছু না কিছু মাফ করে দাও। কাজেই বিভিন্ন রেওয়ায়াত থেকে প্রমাণ হয় সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের চুক্তিবদ্ধ গোলামদের দেয় অর্থ থেকে বেশ একটা বড় পরিমাণ অর্থ মাফ করে দিতেন। এমন কি হযরত আলী (রা.) হামেশা এক চতুর্থাংশ মাফ করেছেন এবং এরই উপদেশ দিয়েছেন। (ইবনে জারীর) সাধারণ মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে কোন লিখিত চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার দেয় অর্থ আদায় করার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানাবে, তাদেরকে যেন প্রাণ খুলে সাহায্য করে। কুরআন মজীদে যাকাতের যে ব্যয় ক্ষেত্র বর্ণনা করা হয়েছে فِي الرِّقَابِ তার মধ্যে একটি অর্থাৎ “দাসত্বের জোয়াল থেকে গর্দানমুক্ত করা।” (সূরা তওবা, ৬০ আয়াত) আর আল্লাহর নিকট فَكُّ رَقَبَةٍ “গর্দানের বাঁধন খোলা” একটি বড় নেকীর কাজ। (সূরা বালাদ, ১৩ আয়াত) হাদীসে বলা হয়েছে এক গ্রামীন ব্যক্তি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো, আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করবো। রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “তুমি অতি সংক্ষেপে অনেক বড় কথা জিজ্ঞেস করেছো। গোলামকে মুক্ত করে দাও, গোলামদের স্বাধীনতা লাভে সাহায্য করো, কাউকে পশু দান করলে অত্যধিক দূধেল পশু দান করো এবং তোমাদের যে আত্মীয় তোমাদের প্রতি জুলুম করে তুমি তার সাথে সৎ ব্যবহার করো। আর যদি তা না করতে পারো, তাহলে অভুক্তকে আহার করাও, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, মানুষকে ভালো কাজ করার উপদেশ দাও এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করো। আর যদি এও না করতো পারো, তাহলে নিজের মুখ বন্ধ করে রাখো। মুখ খুললে ভালোর জন্য খুলবে আর নয়তো বন্ধ করে রাখবে।” (বায়হাকী ফী শু’আবিল ঈমান, আনিল বারাআ ইবনে আযিব)। ইসলামী রাষ্ট্রকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বায়তুল মালে যে যাকাত জমা হয় তা থেকে লিখিত চুক্তিবদ্ধ গোলামদের মুক্তির জন্য একটি অংশ ব্যয় করো। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ, প্রাচীন যুগে তিন ধরনের গোলাম হতো। এক, যুদ্ধবন্দী। দুই, স্বাধীন ব্যক্তিকে ধরে গোলাম বানানো হতো এবং তারপর তাকে বিক্রি করা হতো। তিন, যারা বংশানুক্রমিকভাবে গোলাম হয়ে আসছিল, তাদের বাপ-দাদাকে কবে গোলাম বানানো হয়েছিল এবং ওপরে উল্লেখিত দু’ধরনের গোলামের মধ্যে তারা ছিল কোন্ ধরনের তা জানার কোন উপায় ছিল না। ইসলামের আগমনের সময় আরব ও আরবের বাইরের জগতের মানব সমাজ এ ধরনের গোলামে পরিপূর্ণ ছিল। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা শ্রমিক ও চাকর বাকরদের চাইতে এ ধরনের গোলামদের ওপর বেশী নির্ভরশীল ছিল। ইসলামের সামনে প্রথম প্রশ্ন ছিল, পর্ব থেকে এই যে গোলামদের ধারা চলে আসছে এদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল আগামীর জন্য গোলামী সমস্যার কি সমাধান দেয়া যায়? প্রথম প্রশ্নের জবাবে ইসলাম কোন আকস্মিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রাচীনকাল থেকে গোলামদের যে বংশানুক্রমিক ধারা চলে আসছিল হঠাৎ তাদের সবার ওপর থেকে মালিকানা অধিকার খতম করে দেয়নি। কারণ এর ফলে শুধু যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো তাই নয় বরং আরবকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের চাইতেও অনেক বেশী কঠিন ও ধ্বংসকর গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হতে হতো। এরপরও মূল সমস্যার কোন সমাধান হতো না, যেমন আমেরিকায় হয়নি এবং কালোদের (Negroes) লাঞ্ছনার সমস্যা সেখানে রয়েই গেছে। এ নির্বোধসুলভ ও অবিবেচনা প্রসূত সংস্কারের পথ পরিহার করে ইসলাম فَكُّ رَقَبَةٍ তথা দাসমুক্তির একটি শক্তিশালী নৈতিক আন্দোলন শুরু করে এবং উপদেশ, উৎসাহ-উদ্দীপনা, ধর্মীয় বিধি-বিধান ও দেশজ আইন-কানুনের মাধ্যমে লোকদেরকে গোলাম আজাদ করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাদেরকে আখেরাতে নাজাত লাভ করার জন্য স্বেচ্ছায় গোলাম আজাদ করার অথবা নিজের গোনাহের কাফ্ফারা দেবার জন্য গোলামদেরকে মুক্তি দানের কিংবা অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেবার ব্যাপারে উৎসাহিত করে। এ আন্দোলনের আওতাধীন নবী ﷺ নিজে ৬৩ জন গোলামকে মুক্ত করে দেন। তার স্ত্রীগণের মধ্য থেকে একমাত্র হযরত আয়েশারই (রা.) আজাদকৃত গোলামদের সংখ্যা ছিল ৬৭। রসূলুল্লাহর ﷺ চাচা হযরত আব্বাস (রা.) নিজের জীবনে ৭০ জন গোলামকে স্বাধীন করে দেন। হাকিম ইবনে হিযাম ১০০, আবদুল্লাহ ইবনে উমর ১০০০, যুল কিলাহ হিম্ইয়ারী ৮ হাজার এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ ৩০ হাজার গোলামকে আজাদ করে দেন। এমনি ধরনের ঘটনা অন্যান্য সাহাবীদের জীবনেও ঘটেছে। এদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমরের (রা.) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি সাধারণ প্রেরণা। এ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে লোকেরা ব্যাপকভাবে নিজেদের গোলামদেরকেও মুক্ত করে দিতেন এবং অন্যদের গোলাম কিনে নিয়ে এসে তাদেরকে আজাদ করে দিতে থাকতেন। এভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ শেষ হবার আগেই পূর্ব যুগের প্রায় সমস্ত গোলামই মুক্তিলাভ করেছিল।
এখন প্রশ্ন হলো ভবিষ্যতে কি হবে। এ ব্যাপারে ইসলাম কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গোলাম বানানো এবং তার কেনা বেচা করার ধারাকে পুরোপুরি হারাম ও আইনগতভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। তবে যুদ্ধবন্দীদেরকে শুধুমাত্র এমন অবস্থায় গোলাম বানিয়ে রাখার অনুমতি (আদেশ নয় বরং অনুমতি) দেয় যখন তাদের সরকার আমাদের যুদ্ধবন্দীদের সাথে তাদের যুদ্ধবন্দীদের বিনিময় করতে রাজী হয় না এবং তারা নিজেরাও নিজেদের মুক্তিপণ আদায় করে না। তারপর এ গোলামদের জন্য একদিকে তাদের মালিকদের সাথে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি লাভ করার পথ খোলা রাখা হয় এবং অন্যদিকে প্রাচীন গোলামদের ব্যাপারে যেসব নির্দেশ ছিল তা সবই তাদের পক্ষে বহাল থাকে, যেমন নেকীর কাজ মনে করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া অথবা গোনাহর কাফ্ফারা আদায় করার জন্য তাদেরকে আজাদ করা কিংবা কোন ব্যক্তির নিজের জীবদ্দশায় গোলামকে গোলাম হিসেবে রাখা এবং পরবর্তীকালের জন্য অসিয়ত করে যাওয়া যে, তার মৃত্যুর পরই সে আজাদ হয়ে যাবে (ইসলামী ফিকাহর পরিবভাষায় একে বলা হয় তাদবীর এবং এ ধরনের গোলমকে “মুদাব্বার” বলা হয়)। অথবা কোন ব্যক্তি নিজের বাঁদীর সাথে সঙ্গম করা এবং তার গর্ভে সন্তান জন্ম লাভ করা, এ অবস্থায় মালিক অসিয়ত করুক বা না করুক মালিকের মৃত্যুর সাথে সাথেই সে নিজে নিজেই স্বাধীন হয়ে যাবে। ইসলাম গোলামী সমস্যার এ সমাধান দিয়েছে। অজ্ঞ আপত্তিকারীরা এগুলো না বুঝে আপত্তি করে বসেন। পক্ষান্তরে ওজর পেশকারীগণ ওজর পেশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত এ বাস্তব সত্যটাকেই অস্বীকার করে বসেন যে, ইসলাম গোলামীকে কোন না কোন আকারে টিকিয়ে রেখেছিল। (তা যে কারণেই হোক না কেন)।
# এর অর্থ এ নয় যে, বাঁদীরা নিজেরা যদি সতী সাধ্বী না থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণে বাধ্য করা যেতে পারে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, বাঁদী যদি স্বেচ্ছায় ব্যভিচারের লিপ্ত হয়, তাহলে নিজের অপরাধের জন্য সে নিজেই দায়ী, তার অপরাধের জন্য আইন তাকেই পাকড়াও করবে। কিন্তু যদি তার মালিক জোর করে তাকে এ পেশায় নিয়োগ করে, তাহলে এজন্য মালিক দায়ী হবে এবং সে পাকড়াও হবে। আর একথা সুস্পষ্ট যে, জোর করার প্রশ্ন তখনই দেখা দেয় যখন কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করতে বাধ্য করা হয়। আর “দুনিয়াবী স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে” বাক্যাংশটি দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়নি যে, যদি মালিক তার উপার্জন না খায় তাহলে বাঁদীকে দেহ বিক্রয়ে বাধ্য করার কারণে সে অপরাধী হবে না বরং বুঝানো হয়েছে যে, এ অবৈধ বল প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত উপার্জনও হারামের শামিল।
কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞাটির পূর্ণ উদ্দেশ্য নিছক এর শব্দাবলী ও পূর্বাপর আলোচনা থেকে বুঝা যেতে পারে না। একে ভালোভাবে বুঝতে হলে যে পরিস্থিতিতে এ হুকুমটি নাযিল হয় সেগুলোও সামনে রাখা জরুরী। সেকালে আরব দেশে দু’ধরনের পতিতাবৃত্তির প্রচলন ছিল। এক, ঘরোয়া পরিবেশে গোপন বেশ্যাবৃত্তি এবং দুই, যথারীতি বেশ্যাপাড়ায় বসে বেশ্যাবৃত্তি।
ঘরোয়া বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত থাকতো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাঁদীরা, যাদের কোন পৃষ্ঠপোষক ছিল না। অথবা এমন ধরনের স্বাধীন মেয়েরা, কোন পরিবার বা গোত্র যাদের পৃষ্ঠপোষক ছিল না। তারা কোন গৃহে অবস্থান করতো এবং একই সঙ্গে কয়েকজন পুরুষের সাথে তাদের এ মর্মে চুক্তি হয়ে যেতো যে, তারা তাকে সাহায্য করবে ও তার ব্যয়ভার বহন করবে এবং এর বিনিময়ে পুরুষরা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করতে থাকবে। সন্তান জন্ম নিলে মেয়েরা যে পুরুষ সম্পর্কে বলে দিতো যে, এ সন্তান অমুকের। সে-ই সন্তানের পিতা হিসেবে স্বীকৃত হতো। এটি যেন ছিল জাহেলী সমাজের একটি স্বীকৃত প্রথা। জাহেলিয়াতের যুগে লোকেরা একে এক ধরনের ‘বিয়ে’ মনে করতো। ইসলাম এসে বিয়ের জন্য ‘এক মেয়ের এক স্বামী’ এ একমাত্র পদ্ধতিকেই চালু করলো। এছাড়া বাদবাকি সমস্ত পদ্ধতি আপনা আপনিই যিনা হিসেবে গণ্য হয়ে অপরাধে পরিণত হয়ে গেলো। (আবু দাউদ, বাবুন ফী অজুহিন নিকাহ আল্লাতী কানা ইয়াতানাকিহু আহলুল জাহেলিয়াহ)।
দ্বিতীয় অবস্থাটি অর্থাৎ প্রকাশ্য বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হতো বাঁদীদেরকেই। এর দু‘টি পদ্ধতি ছিল। প্রথমত লোকেরা নিজেদের যুবতী বাঁদীদের ওপর একটি নির্দিষ্ট অংক চাপিয়ে দিতো। অর্থাৎ প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে তাদেরকে দিতে হবে। ফলে তারা দেহ বিক্রয় করে তাদের এ দাবী পূর্ণ করতো। এছাড়া অন্য কোন পথে তারা এ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতেও পারতো না। আর তারা কোন পবিত্র উপায়ে এ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে এনেছে বলে তাদের মালিকরাও মনে করতো না। যুবতী বাঁদীদের ওপর সাধারণ মজুরদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী রোজগার করার বোঝা চাপিয়ে দেবার এছাড়া আর কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল না। দ্বিতীয় পদ্ধতি ছিল, লোকেরা নিজেদের সুন্দরী যুবতী বাঁদীদেরকে আলাদা ঘরে বসিয়ে রাখতো এবং তাদের দরজায় ঝাণ্ডা গেড়ে দিতো। এ চিহ্ন দেখে দূর থেকেই “ক্ষুধার্তরা” বুঝতে পারতো কোথায় তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে হবে। এ মেয়েদেরকে বলা হতো “কালীকীয়াত” এবং এদের গৃহগুলো “মাওয়াখীর” নামে পরিচিত ছিল। বড় বড় গণ্যমান্য সমাজপতিরা এ ধরনের বেশ্যালয় পরিচালনা করতো। স্বয়ং আবদুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিক প্রধান, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে মদীনাবাসীরা নিজেদের বাদশাহ করার সিদ্ধান্ত করে ফেলেছিল এবং যে হযরত আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর কাজে সবার আগে ছিল) মদীনায় এ ধরনের একটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিল। সেখানে ছিল ছয়জন সুন্দরী বাঁদী। তাদের মাধ্যমে সে কেবলমাত্র অর্থই উপার্জন করতো না বরং আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নামী দামী মেহমানদের আদর আপ্যায়নও তাদের দিয়েই করাতো। তাদের অবৈধ সন্তানদের সাহায্যে সে নিজের পাইক, বরকন্দাজ ও লাঠিয়ালের সংখ্যা বাড়াতো। এ বাঁদীদেরই একজনের নাম ছিল মু’আযাহ। সে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল এবং এ পেশা থেকে তাওবা করতে চাচ্ছিল। ইবনে উবাই তার ওপর জোর জবরদস্তি করলো। সে গিয়ে হযরত আবু বকরের (রা.) কাছে নালিশ করলো। তিনি ব্যাপারটি রসূলের ﷺ কাছে পৌঁছে দিলেন। (ইবনে জারীর, ১৮ খণ্ড, ৫৫-৫৮ এবং ১০৩-১০৪ পৃষ্ঠা, আল ইসতি’আব লি ইবনি আবদিল বার, ২ খণ্ড, ৭৬২ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, ৩ খণ্ড, ২৮৮-২৮৯ পৃষ্ঠা)। এ সময়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আয়াত নাযিল হয়। এ পটভূমি দৃষ্টি সমক্ষে রাখলে পরিষ্কার জানা যাবে, শুধুমাত্র বাঁদীদেরকে যিনার অপরাধে জড়িত হতে বাধ্য করার পথে বাধা সৃষ্টি করাই নয় বরং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে বেশ্যাবৃত্তির (Prostitution) ব্যবসায়ে সম্পূর্ণরুপে আইন বিরোধী গণ্য করা এবং একই সঙ্গে যেসব মেয়েকে জোর জবরদস্তি এ ব্যবসায়ে নিয়োগ করা হয় তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণাও এখানে এর মূল উদ্দেশ্য।
আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ফরমান এসে যাবার পর নবী ﷺ ঘোষণা করেন لاَ مُسَاعَاةَ فِى الإِسْلاَمِ “ইসলামে বেশ্যাবৃত্তির কোন অবকাশই নেই।” (আবু দাউদ, ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়াতের মাধ্যমে, বাবুন ফী ইদ্দিআয়ে ওয়ালাদিয যিনা) দ্বিতীয় যে হুকুমটি তিনি দেন সেটি ছিল এই যে, যিনার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হারাম, নাপাক ও পুরোপুরি নিষিদ্ধ। রাফে’ ইবন খাদীজের রেওয়ায়াত হচ্ছে, নবী করীম (সা.) مَهْرُ الْبَغِىِّ অর্থাৎ যিনার বিনিময়ে অর্জিত অর্থকে নষ্ট, সর্বাধিক অকল্যাণমূলক উপার্জন, অপবিত্র ও নিকৃষ্টতম আয় গণ্য করেন। (আবু দাউদ, তিরমিযি ও নাসাঈ) আবু হুজাইফা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) كَسْبِ الْبَغِىِّ অর্থাৎ দেহ বিক্রয়লব্ধ অর্থকে হারাম গণ্য করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ) আবু মাস’উদ উকবাহ ইবনে আমরের রেওয়ায়াত হচ্ছে, রসূলুল্লাহ (সা.) مَهْرُ الْبَغِىِّ তথা যিনার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের লেনদেনকে নিষিদ্ধ গণ্য করেছেন। (সিহাহে সিত্তা ও আহমদ) তৃতীয় যে হুকুমটি তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল এই যে, বাঁদীর কাছে থেকে বৈধ পন্থায় কেবলমাত্র হাত ও পায়ের শ্রম গ্রহণ করা যেতে পারে এবং মনিব তার ওপর এমন পরিমাণ কোন অর্থ চাপিয়ে দিতে বা তার কাছ থেকে আদায় করতে পারে না যে সম্পর্কে সে জানে না অর্থ সে কোথা থেকে ও কিভাবে উপার্জন করে। রাফে’ ইবনে খাদীজ বলেনঃ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ كَسْبِ الأَمَةِ حَتَّى يُعْلَمَ مِنْ أَيْنَ هُوَ- “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাঁদীর মাধ্যমে কোন উপার্জন নিষিদ্ধ গণ্য করেন যতক্ষণ না একথা জানা যায় যে, এ অর্থ কোথা থেকে অর্জিত হয়।” (আবু দাউদ, কিতাবুল ইজারাহ) রাফে’ ইবনে রিফা’আহ আনসারীর বর্ণনায় এর চাইতেও সুস্পষ্ট হুকুম পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছেঃ نَهَانَا نَبِىُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ كَسْبِ الأَمَةِ إِلاَّ مَا عَمِلَتْ بِيَدِهَا وَقَالَ هَكَذَا بِأَصَابِعِهِ نَحْوَ الْخَبْذى وَالْغَزْلِ وَالنَّفْشِ- “আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাঁদীর সাহায্যে অর্থোপর্জন করতে আমাদের নিষেধ করেছেন, তবে হাতের সাহায্যে পরিশ্রম করে সে যা কিছু কামাই করে তা ছাড়া। এবং তিনি হাতের ইশারা করে দেখান যেমন এভাবে রুটি তৈরী করা, সূতা কাটা বা উল ও তুলা ধোনা।” (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, কিতাবুল ইজারাহ)
একই বক্তব্য সম্বলিত একটি হাদীস আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে كسب الاماء (বাঁদীর কামাই) ও مهر البغى (ব্যভিচারের উপার্জন) গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এভাবে নবী ﷺ কুরআনের এ আয়াতের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সেকালে আরবে প্রচলিত বেশ্যাবৃত্তির সকল পদ্ধতিকে ধর্মীয় দিক দিয়ে অবৈধ ও আইনগত দিক দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। বরং আরো অগ্রসর হয়ে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই —এর বাঁদী মু’আযার ব্যাপারে যা কিছু সিদ্ধান্ত তিনি দেন তা থেকে জানা যায়, যে বাঁদীকে তার মালিক জোর করে এ পেশায় নিয়োগ করে তার ওপর থেকে তার মালিকের মালিকানা সত্বও খতম হয়ে যায়। এটি ইমাম যুহরীর রেওয়ায়াত। ইবনে কাসীর মুসনাদে আবদুর রাযযাকের বরাত দিয়ে তাঁর গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে বিবাহ সংক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে।
الْأَيَامٰي শব্দটি ايم শব্দের বহুবচন। অর্থন প্রত্যেক স্বাধীন এমন নর-নারী যার বিবাহ বর্তমান নেই। আসলেই বিবাহ করেনি, বা বিবাহের পর স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ মারা গেছে অথবা তালাকের কারণে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এমন নর-নারীদের বিবাহ দিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা অভিভাবকদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “বিবাহ দাও”, “বিবাহ কর” এ কথা বলেননি। সুতরাং বিবাহে কোন পুরুষ ও নারীর প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে অভিভাবকের মাধ্যমে এ কাজ সম্পাদন করাই বিবাহের মাসনূন ও উত্তম পন্থা। এতে ধর্মীয় ও পার্থিব উপকারিতা রয়েছে। বিশেষতঃ মেয়েদের বিবাহ তারা নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারবে না। এটা যেমন একটা নির্লজ্জ কাজ, তেমনি এতে অশ্লীলতার পথ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অভিভাবক ছাড়া যে সকল নারীদের বিবাহ হয়, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ খুব দ্রুত ও বেশি হয়ে থাকে।
যে সকল মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের বিবাহ দিয়ে থাকে তাদের বিবাহকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ، فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ، فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ
যে মহিলা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে তার সে বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। (তিরমিযী হা: ১১০২, সহীহ) সুতরাং অভিভাবকদের উচিত হবে যারা বিবাহের উপযুক্ত এবং যাদের বিবাহের প্রয়োজন তাদেরকে যথাসময়ে বিবাহ দিয়ে দেয়া। এতে দীন ও দুনিয়া উভয় জগতের উপকারিতা রয়েছে।
الصّٰلِحِيْنَ সৎন এখানে সৎ বলতে দীনদারিত্ব বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের যে সকল দাস-দাসী সৎ দীনদার, কোন ব্যভিচারে লিপ্ত নয়, বিবাহ করতে আগ্রহী তাদেরকে বিবাহ দিয়ে দাও। কিন্তু যদি দাস-দাসী ব্যভিচারী হয় তাদের বিবাহ দেয়া নিষেধ যতক্ষণ না তাওবাহ করে। দাস-দাসীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ‘সৎ’ শব্দটি ব্যবহার করা হল কিন্তু পূর্বে মুসলিমদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। কারণ অধিকাংশ দাস-দাসীরা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। আবার ‘সৎ’ বলতে এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, বিবাহের জন্য তারা উপযোগী ও বিবাহ করতে আগ্রহী। সুতরাং মালিক দাস-দাসীদেরকে বিবাহ করতে বাধ্য করতে পারবে, যদিও এ বিষয়ে মতামত রয়েছে।
(يُغْنِيَهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِه)
‘তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন’ এখানে আল্লাহ তা‘আলা স্বাধীন ও পরাধীন সকল দরিদ্র দম্পতিকে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন যে, তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে অভাব মোচন করে দেবেন। হাদীসেও এসেছে:
আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা‘আলার ওপর আবশ্যক হয়ে যায়।
(১) ঐ ব্যক্তি যে বিবাহের মাধ্যমে নিজেকে পূতঃপবিত্র রাখতে চায়।
(২) ঐ মুকাতাব গোলাম, যে তার মালিকের সাথে চুক্তিকৃত টাকা আদায় করার ইচ্ছা রাখে এবং
(৩) আল্লাহ তা‘আলার পথে মুজাহিদ।
(তিরমিযী হা: ১৬৫৫, নাসায়ী হা: ৩১২০, হাসান)
তবে এ বিবাহের দ্বারা উদ্দেশ্য থাকতে হবে নিজেকে মন্দ কার্য-কলাপ থেকে পূতঃপবিত্র রাখা।
স্বাধীন ব্যক্তি দাসীদেরকে বিবাহ করা প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা সূরা নিসার ২৫ নং আয়াতে করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের বর্ণনা দিচ্ছেন যাদের বিবাহ করার সার্মথ্য নেই। তারা যেন সামর্থ্যবান হওয়া পর্যন্ত নিজেকে পবিত্র রাখে, কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়িত হয়ে নিজেকে কলুষিত না করে। সামর্থ্য দু’ধরণেরন একটি হল আর্থিক, অন্যটি হল দৈহিক। এখানে মূলত আর্থিক সামর্থ্যরে কথা বলা হয়েছে। যেমন হাদীসে এসছে: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হে যুবকের দলেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে, কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে অবনত রাখে, লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখবে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা এটি তার যৌনশক্তিকে দমন করবে। (সহীহ বুখারী হা: ১৯০৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৪০০) সুতরাং যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই তাদের উচিত বেশি বেশি নফল রোযা রাখা।
استعفف নিজেকে পবিত্র রাখা,
(لَا يَجِدُوْنَ نِكَاحًا)
বা বিবাহের ব্যয়ভারন যেমন মাহর, ভরণ-পোষণ, বাসস্থান ইত্যাদি। অর্থাৎ যার এসব সামর্থ্য নেই সে যেন নিজেকে পবিত্র রাখে।
(وَالَّذِيْنَ يَبْتَغُوْنَ الْكِتٰبَ)
অর্থাৎ তোমাদের অধীনে যে সকল দাস-দাসী রয়েছে তারা যদি তোমাদের সাথে চুক্তি করতে চায় এমর্মে যে, কিছু অর্থ দিয়ে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিবে তাহলে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হও। কেননা ইসলাম চায় দাসপ্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাক, সেহেতু তোমরা তাদের মাঝে কোন কল্যাণ দেখতে পেলে চুক্তিতে রাজি হয়ে যাবে।
‘যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও’ অর্থাৎ সততা ও আমানতদারীর ওপর তোমাদের বিশ্বাস থাকে অথবা তারা কোন কাজে পারদর্শি হয় যাতে উপার্জন করে চুক্তির অর্থ পরিশোধ করে দিতে পারবে, যদি তাদের মাঝে অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য বুঝতে পারো তাহলে রাজি হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেছেন, এ আদেশ পালন করা ওয়াজিব আবার কেউ বলেছেন, মুস্তাহাব। বর্ণিত আছে যে, উমার (رضي الله عنه)-এর যুগে আনাস (رضي الله عنه)-এর সীরিন নামক একজন গোলাম তাঁর কাছে আবেদন জানায় যে, তিনি যেন তার সঙ্গে তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হন। আনাস (رضي الله عنه) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন গোলামটি উমার (رضي الله عنه)-এর নিকট গিয়ে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে। তখন উমার (رضي الله عنه) আনাসকে ডেকে বললেন চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন। উমার (رضي الله عنه) তাকে চাবুক মারেন এবং কুরআনের এ আয়াতটি পাঠ করেন। তখন আনাস (رضي الله عنه) চুক্তিতে আবদ্ধ হন। (সহীহ বুখারী হা: ৩/১৫১
بَابُ المُكَاتِبِ، وَنُجُومِهِ فِي كُلِّ سَنَةٍ نَجْمٌ)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন তা হতে তোমাদের দাস-দাসীদেরকে দান কর, এতে তোমাদের দান করাও হবে এবং তাদের উপকারও হবে যে, তাড়াতাড়ি তারা তোমাদের সাথে চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা যাকাত বন্টনের আটটি খাতের মধ্যে একটি দাসমুক্তির খাতও রেখেছেন।
(وَلَا تُكْرِهُوْا فَتَيٰتِكُمْ عَلَي الْبِغَا۬ءِ)
‘তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য কর না’ ইসলাম পূর্ব যুগের লোকেরা শুধু কিছু অর্থের লোভে নিজেদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত করত। এতে তাদের ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক। আল্লাহ মুসলিমদেরকে এ রকম কাজ করতে নিষেধ করে বলছেন, তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। ‘সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে’ একথা স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করে বলা হয়েছে। নচেৎ এর অর্থ এ নয় যে, তারা সতীত্ব রক্ষা করতে না চাইলে বা তারা ব্যভিচার পছন্দ করলে ব্যভিচার করতে দাও। বরং এ নির্দেশের উদ্দেশ্য এই যে, সামান্য পার্থিব অর্থের লোভে দাসীদেরকে ব্যভিচারে জড়ায়ো না। কারণ এ উপার্জন হারাম। তবে যদি তাদেরকে এ খারাপ কাজ করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তাদের কোন পাপ হবে না। আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদীসে এসেছে: আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি আর এমন কাজ যা করতে বাধ্য করা হয়, তা ক্ষমার যোগ্য। (ইবনু মাযাহ হা: ২০৪৩, সহীহ)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অভিভাবকদের উচিত ছেলে-মেয়েরা উপযুক্ত হলে বিবাহ দিয়ে দেয়া।
২. বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ লাভ করা যায়।
৩. যাদের বিবাহ করার আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের উচিত, সামর্থ্যবান হওয়া পর্যন্ত নিজেকে পবিত্র রাখা।
৪. কোন দাস যদি নিজেকে মুক্ত করণার্থে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তাহলে তার সাথে লিখিতভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়া উচিত।
৫. কোন দাস-দাসীকে ব্যভিচারের জন্য জবরদস্তি করা উচিত নয়।
৬. দাস-দাসীদেরকে নিজের সম্পদ থেকে দান করা যেতে পারে।
৭. কুরআন মূলত একটা উপদেশ বাণী।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ তা’আলা বহু কিছু হুকুম বর্ণনা করেছেন। প্রথমে তিনি বিবাহের বর্ণনা দিয়েছেন।
আলেম জামাআতের খেয়াল এই যে, যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তার জন্যে বিয়ে করা ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের বাণীটি গ্রহণ করেছেনঃ “হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার ক্ষমতা রাখে সে যেন বিয়ে করে। বিয়ে হলো দৃষ্টিকে নিম্নমুখীকারী এবং লজ্জাস্থানকে রক্ষাকারী। আর যে বিয়ে করার ক্ষমতা রাখে না সে যেন রোযা রাখে। এটাই তার জন্যে হলো অণ্ডকোষ কর্তিত হওয়া।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন)
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যেসব স্ত্রীলোক হতে অধিক সন্তান লাভের আশা আছে তোমরা ঐ সব স্ত্রীলোককে বিয়ে কর, যেন তোমাদের বংশ বৃদ্ধি হয়। আমি তোমাদের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মতের মধ্যে ফখর করবো।” এহদীসটি সুনানে বর্ণিত হয়েছে।
আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এমন কি অপূর্ণ অবস্থায় পড়ে যাওয়া (গর্ভপাত হওয়া) শিশুর সংখ্যা গণনা দ্বারাও আমি ফখর করবো।”
(আরবি) শব্দটি (আরবি) শব্দের বহু বচন। জাওহারী (রঃ) বলেন যে, ভাষাবিদদের মতে বিপত্নীক পুরুষ ও বিধবা নারীকে (আরবি) বলা হয়। সে বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আগ্রহ বৃদ্ধির জন্যে বলেনঃ যদি সে দচ্ছি হয় তবে আল্লাহ তাকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী বানিয়ে দিবেন। সে আবাদই হোক অথবা গোলামই হোক।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেনঃ “বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ মেনে চল, তাহলে তিনি তোমাদের কৃত ওয়াদা পুরো করবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন।”
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, বিবাহে তোমরা ঐশ্বর্য অনুসন্ধান কর। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা দরিদ্র হলে আল্লাহ তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-ও বর্ণনা করেছে)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোককে আল্লাহ তা’আলা সাহায্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তারা হলো-বিবাহকারী, যে ব্যভিচার হতে বাঁচবার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে থাকে, ঐ মুকাতাব গোলাম, যে তার চুক্তিকৃত টাকা আদায় করার ইচ্ছা রাখে এবং আল্লাহর পথের গাযী।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ ব্যক্তির বিবাহ একটি স্ত্রীলোকের সাথে দিয়ে দেন যার কাছে তার একটি মাত্র লুঙ্গী ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এমনকি তার কাছে একটি লোহার আংটিও ছিল না। তার এতো অভাব ও দারিদ্র সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার বিয়ে দিয়ে দেন এবং তার মহর এই ধার্য করেন যে, তার কুরআন কারীম হতে যা কিছু মুখস্থ আছে তাই সে তার স্ত্রীকে মুখস্থ করিয়ে দেবে। এটা একমাত্র এরই উপর ভিত্তি করে যে, মহান আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাকে এমন জীবিকা দান করবেন যা তার ও তার স্ত্রীর জন্যে যথেষ্ট হবে।
অধিকাংশ লোক একটি হাদীস আনয়ন করে থাকেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা দারিদ্রের অবস্থাতেও বিয়ে কর, আল্লাহ তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন।” (ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনঃ সবল সনদে বা দুর্বল সনদেও এ হাদীসটি আমার চোখে পড়েনি। আর এই বিষয়ে এরূপ ঠিকানা বিহীন হাদীসের আমাদের কোন প্রয়োজনও নেই। কেননা, কুরআন কারীমের এই আয়াতে এবং উপরোক্ত হাদীসসমূহে এটা বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ্য আছে সে যেন বিয়ে করে। বিবাহ দৃষ্টিকে নিম্নমুখী রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে এবং এটাই তার জন্যে খাসসী হওয়া (অণ্ডকোষ কর্তিত হওয়া)।” এই আয়াতটি সাধারণ। সূরায়ে নিসার আয়াতটি এর থেকে খাস বা বিশিষ্ট। ঐ আয়াতটি হলোঃ (আরবি) হতো (আরবি)
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কারো স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার নারীকে বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান, সুতরাং তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং যারা সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নয় ও উপপতি গ্রহণকারিণীও নয় তাদেরকে তাদের মহর ন্যায়সঙ্গতভাবে দিবে। বিবাহিতা হবার পর যদি তারা ব্যভিচার করে তবে তাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারকে ভয় করে এটা তাদের জন্যে; ধৈর্যধারণ করা তোমাদের জন্যে মঙ্গল।” (৪: ২৫) সুতরাং দাসীদেরকে বিয়ে করা অপেক্ষা ধৈর্যধারণই শ্রেয়। কেননা, এই অবস্থায় সন্তানদের উপর দাসত্বের দাগ পড়ে যায়।
হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, যে পুরুষ লোক স্ত্রীলোককে দেখে এবং দেখার পর তার অন্তরে কাম প্রবৃত্তি জেগে ওঠে, সে যেন তৎক্ষণাৎ তার স্ত্রীর কাছে চলে যায়, যদি তার স্ত্রী বিদ্যমান থাকে। আর যদি তার স্ত্রী না থাকে তবে সে যেন আল্লাহ তা’আলার সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ধৈর্যধারণ করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত করেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা গোলামদের মালিকদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তাদের দাসদাসীদের কেউ যদি তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে গন্ধ যেন তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, যদি তারা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পায়। গোলাম তার উপার্জনের মাধ্যমে ঐ মাল জমা করতঃ মনিবকে দিয়ে দেবে এবং এই ভাবে তারা আযাদ বা মুক্ত হয়ে যাবে। অধিকাংশ আলেম বলেন যে, এ হুকুম জরুরী নয়। এটা ফরযও নয় এবং ওয়াজিবও নয়, বরং মুস্তাহাব। মনিবের এ অধিকার আছে যে, তার গোলাম কোন শিল্পকার্য জানলে যদি তাকে বলে যে, তাকে সে এতো এতো টাকা দিবে এবং এর বিনিময়ে সে তাকে আযাদ করে দিবে। তবে এটা মনিবের ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা হলে সে তার সাথে চুক্তি করবে এবং না হলে না করবে। আলেমদের একটি জামাআত আয়াতের বাহ্যিক শব্দের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলেন যে, গোলাম যদি তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া তার মনিবের উপর ওয়াজিব।
বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর যুগে হযরত আনাস (রাঃ)-এর সীরীন নামক একজন সম্পদশালী গোলাম তার কাছে আবেদন জানায় যে, তিনি যেন তার সাথে তার মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হন। কিন্তু হযরত আনাস (রাঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন গোলামটি হযরত উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করে। হযরত উমার (রাঃ) তখন হযরত আনাস (রাঃ)-কে ডেকে গোলামের সাথে চুক্তি করতে নির্দেশ দেন। এবারেও হযরত আনাস (রাঃ) অস্বীকৃতি জানান। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁকে চাবুক মারেন এবং গোলামের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেন। অতঃপর তিনি কুরআনে কারীমের এ আয়াতটি তাঁর সামনে তিলাওয়াত করেন। (এটা সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আতা (রঃ) হতে দু’টি উক্তিই বর্ণিত আছে। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর প্রথম উক্তি এটাই ছিল। কিন্তু তাঁর নতুন উক্তি এই যে, চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মনিবের উপর ওয়াজিব নয়।
ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ “গোলাম তার মনিবকে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে আবেদন জানালে ঐ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া মনিবের উপর ওয়াজিব নয়। কোন ইমাম যে কোন মনিবকে গোলামের মুক্তির জন্যে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন এটা আমি শুনিনি। আল্লাহ তাআলার এ হুকুম অনুমতি হিসেবে, ওয়াজিব হিসেবে নয়। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের এটাই উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর মতে ওয়াজিব হওয়াই পছন্দনীয় উক্তি।
(আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং মাল উপার্জন করার ক্ষমতা ইদ্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের যেসব গোলাম তাদের মুক্তির জন্যে তোমাদের সাথে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে ইচ্ছা করে তাহলে তোমরা দেখো যে, তাদের মধ্যে মাল উপার্জনের যোগ্যতা আছে কি না। যদি তাদের মধ্যে তা দেখতে পাও তবে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ কর। আর তা দেখতে না পেলে নয়। কেননা, এমতাবস্থায় তারা নিজেদের বোঝা লোকদের উপর চাপিয়ে দেবে।” অর্থাৎ অর্থ যোগাড় করার জন্যে তাদের কাছে ভিক্ষা করবে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা হতে তোমরা তাদেরকে দান করবে। অর্থাৎ তার নিকট হতে যে অর্থ আদায়ের চুক্তি হয়েছে তা হতে কিছু ক্ষমা করে দেবে। তা এক চতুর্থাংশ হোক বা এক তৃতীয়াংশ হোক বা অর্ধাংশ হোক অথবা কিছু অংশ হোক। নিম্নরূপ ভাবার্থও বর্ণনা করা হয়েছেঃ তাদেরকে যাকাতের মাল হতে সাহায্য কর। অর্থাৎ তাদেরকে তাদের মনিব এবং অন্যান্য মুসলমান যাকাতের মাল থেকে সাহায্য করবে যাতে তারা চুক্তির অর্থ পূর্ণ করে আযাদ হয়ে যেতে পারে।
পূর্বে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, যে তিন প্রকারের লোককে সাহায্য করার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে এটাও এক প্রকার। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই প্রসিদ্ধতম উক্তি।
বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর গোলাম আবূ উমাইয়া তার সাথে মুক্তির চুক্তি করেছিল। সে যখন তার প্রথম কিস্তির অর্থ নিয়ে হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে তখন তিনি তাকে বলেনঃ “যাও তুমি তোমার চুক্তির এ অর্থ পূরণে অন্যদের নিকটও সাহায্য প্রার্থনা কর।” তাঁর এ কথা শুনে গোলামটি বলেঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! শেষ কিস্তি পর্যন্ত তো আমাকেই পরিশ্রম করতে দিন!” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “না, আমার ভয় হচ্ছে বে, না জানি হয়তো আমি আল্লাহ তা’আলার ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা হতে তোমরা তাদেরকে দান করবে এই নির্দেশকে ছেড়ে দেবো।” সুরাং এটা ছিল প্রথম কিস্তী যা ইসলামে আদায় করা হয়। এটা মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে।
বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) চুক্তিকৃত গোলামকে প্রথম কিস্তির সময় নিজেও কিছু দিতেন না এবং কিছু মাফও করতেন না, এই ভয়ে যে, সে হয়তো শেষ পর্যন্ত এই অর্থ আদায় করতে পারবে না, কাজেই তাঁর প্রদত্ত সাদকা তাঁকেই ফিরিয়ে দেয়া হবে। তবে শেষ কিস্তির সময় তিনি ইচ্ছামত মাফ করে দিতেন।
আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমাদের দাসীরা সততা রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করো না।
অজ্ঞতা যুগের জঘন্য পন্থাসমূহের মধ্যে একটি পন্থা এও ছিল যে, তাদের দাসীরা যেন ব্যভিচার করে অর্থ উপার্জন করতঃ ঐ অর্থ মনিবদেরকে প্রদান করে এ কাজে তারা তাদেরকে বাধ্য করতো। ইসলাম এসে এই কু-প্রথার বিলুপ্তি সাধন করে।
বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাল্ল মুনাফিকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। সে এ কাজই করতো। তার দাসীর নাম ছিল মুআযাহ। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার নাম ছিল মুসাইকাহ। সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজে অস্বীকৃতি জানায়। অজ্ঞতার যুগে তার দ্বারা এ কাজ চলতো। এমনকি তার অবৈধ সন্তানাদিও জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সে এ কাজ করতে অস্বীকার করে। তখন ঐ মুনাফিক তার উপর জোর জবরদস্তি করে। ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, বদরের এক কুরায়েশী বন্দী আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এর নিকট ছিল। সে তার দাসী মুআযার সাথে অবৈধভাবে মিলিত হতে চাচ্ছিল। কিন্তু মুআযা ইসলাম গ্রহণের কারণে এই অবৈধ কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই-এরও ইচ্ছা ছিল যে, তার ঐ দাসীটি যেন ঐ কুরায়েশী বন্দীর সাথে অবৈধভাবে মিলিত হয়। এ ব্যাপারে সে তার উপর জোর জবরদস্তি ও মারপিট করতো। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।. এটা মুসনাদে আবদির রাযযাকে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মুনাফিকদের এই নেতা তার ঐ দাসীটিকে তার অতিথিদের সেবার কার্যে পাঠিয়ে দিতে। দাসীটির ইসলাম গ্রহণের পর তাকে আবার এই কাজে পাঠাবার ইচ্ছা করলে সে প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার করে এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে তার এ বিপদের কথা বর্ণনা করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে এ খবর পৌছিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে নিষেধ করে দেন যে, সে যেন তার ঐ দাসীকে সেখানে না পাঠায়। ঐ মুনাফিক তখন জনগণের মধ্যে এই গুজব রটিয়ে দেয় যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তার দাসীকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন। তার ঐ কথার প্রতিবাদে এই আসমানী হুকুম নাযিল হয়।
আর একটি বর্ণনায় আছে যে, মুসাইকাহ ও মুআযাহ এ দু’জন দু’ব্যক্তির দাসী ছিল। তারা তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করতো। ইসলাম গ্রহণের পর মুসাইকা এবং তার মাতা এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করে। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
এটা যে বলা হয়েছে যে, যদি এ দাসীরা সততা রক্ষা করার ইচ্ছা করে, এর দ্বারা ভাবার্থ এটা নেয়া চলবে না যে, যদি তাদের সততা রক্ষার ইচ্ছা না হয় তবে এতে কোন দোষ নেই। কেননা, ঐ সময় ঘটনা এটাই ছিল। এ জন্যেই এইরূপ বলা হয়েছে। এটা কোন সীমাবদ্ধতা ও শর্ত হিসেবে বলা হয়নি। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধন-সম্পদ লাভ করা। আর এ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে, তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ঐ সন্তানদেরকে তারা তাদের দাসদাসী হিসেবে ব্যবহার করবে। হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সিংগা লাগানোর মজরী, ব্যভিচারের মজুরী এবং গণকের মজুরী গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ব্যভিচারের খরচা, সিঙ্গা লাগানো দ্বারা উপার্জন এবং কুকুরের মূল্য কলুষতাপূর্ণ।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি দাসীদেরকে ব্যভিচারিণী হতে বাধ্য করে, আল্লাহ ঐ দাসীদেরকে তাদের প্রতি জবরদস্তি করার কারণে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তাদের যে মনিবরা তাদের উপর জোর জবরদস্তি করেছে তাদেরকে তিনি কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন। এই অবস্থায় তারাই গুনাহগার হবে। এমনকি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ)-এর কিরআতে (আরবি) পরে (আরবি) এর রয়েছে। অর্থাৎ “ঐ দাসীদের গুনাহ পতিত হবে ঐ লোকেদের উপর যারা তাদেরকে বাধ্য করেছে।”
মারফু হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অল্লিাহ তা’আলা আমার উম্মতের ভুল করা, ভুলে যাওয়া এবং যে কাজের উপর তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে এগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।”
পরে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার পাক কালাম কুরআন কারীমের এই উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট আয়াত তোমাদের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি। পূর্ববর্তী লোকদের ঘটনাবলীও তোমাদের সামনে বিদ্যমান রয়েছে যে, সত্যের ঐ বিরুদ্ধাচরণকারীদের পরিণাম কি হয়েছে এবং কেমন হয়েছে! ওটাকে একটি কাহিনী বানিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী লোকদের জন্যে ওটাকে একটা শিক্ষা ও উপদেশমূলক ঘটনা করে দেয়া হয়েছে। যাতে আল্লাহভীরু লোকেরা এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আল্লাহ তা’আলার বিরুদ্ধাচরণ হতে বেঁচে থাকে।
হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “কুরআন কারীমে তোমাদের মতভেদের ফায়সালা বিদ্যমান রয়েছে। এতে রয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের সংবাদ এবং পরে সংঘটিত হবে এরূপ বিষয়ের অবস্থার বর্ণনা। এগুলো বাজে কথা নয়। এগুলোকে যে বেপরোয়াভাবে ছেড়ে দিবে তাকে আল্লাহ তা’আলা ধ্বংস করবেন এবং যে এটা ছাড়া অন্য কিতাব খোজ করবে, আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন।