(বই#৯৭৮) [أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ তুমি কি দেখ না যে,আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? ] সূরা:- আন-নূর। সুরা:২৪ পারা:১৮ ৪১-৪৬ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৭৮)
[أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ
তুমি কি দেখ না যে,আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? ]
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
৪১-৪৬ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৪:৪১
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُسَبِّحُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ الطَّیۡرُ صٰٓفّٰتٍ ؕ کُلٌّ قَدۡ عَلِمَ صَلَاتَہٗ وَ تَسۡبِیۡحَہٗ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌۢ بِمَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۴۱﴾
তুমি কি দেখ না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড়ন্ত পাখীদল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? সকলেই তাঁর প্রশংসা এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। আর ওরা যা করে, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
২৪:৪২
وَ لِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ اِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ ﴿۴۲﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
২৪:৪৩
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُزۡجِیۡ سَحَابًا ثُمَّ یُؤَلِّفُ بَیۡنَہٗ ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ رُکَامًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ وَ یُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنۡ جِبَالٍ فِیۡہَا مِنۡۢ بَرَدٍ فَیُصِیۡبُ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَصۡرِفُہٗ عَنۡ مَّنۡ یَّشَآءُ ؕ یَکَادُ سَنَا بَرۡقِہٖ یَذۡہَبُ بِالۡاَبۡصَارِ ﴿ؕ۴۳﴾
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তা একত্রিত করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন। অতঃপর তুমি দেখতে পাও, তা থেকে নির্গত হয় বারিধারা; আকাশের শিলাস্তুপ হতে তিনি বর্ষণ করেন শিলা এবং এ দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তার উপর হতে তা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন। মেঘের বিদ্যুৎ-ঝলক যেন দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিতে চায়।
২৪:৪৪
یُقَلِّبُ اللّٰہُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّاُولِی الۡاَبۡصَارِ ﴿۴۴﴾
আল্লাহ দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকেদের জন্য এতে শিক্ষা রয়েছে।
২৪:৪৫
وَ اللّٰہُ خَلَقَ کُلَّ دَآبَّۃٍ مِّنۡ مَّآءٍ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی بَطۡنِہٖ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی رِجۡلَیۡنِ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰۤی اَرۡبَعٍ ؕ یَخۡلُقُ اللّٰہُ مَا یَشَآءُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۴۵﴾
আল্লাহ সমস্ত জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন; ওদের কিছু পেটে ভর দিয়ে চলে, কিছু দু’পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান ।
২৪:৪৬
لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اٰیٰتٍ مُّبَیِّنٰتٍ ؕ وَ اللّٰہُ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۴۶﴾
আমি অবশ্যই সুস্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*বিশ্ব প্রকৃতিতে বিরাজমান আল্লাহর কিছু নিদর্শন : এতাে গেলাে মানব জগতে কুফরী, গোমরাহী ও অন্ধকারের দৃশ্য। এরপরই আসছে সুবিশাল বিশ্ব প্রকৃতিতে ঈমান, হেদায়াত ও জ্যোতির দৃশ্য। এই দৃশ্যপটে গােটা বিশ্বজগত ও তার যাবতীয় বস্তু ও প্রাণী আল্লাহর তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় দৃশ্যমান। জ্বিন, মানুষ সহায় সম্পদ আকাশ, জীব ও জড় সবই এখানে আল্লাহর গুণকীর্তনরত এবং তা উপলব্ধি করলে মানুষের স্নায়ূমন্ডলী শিউরে ওঠে, ‘তুমি কি দেখােনি যে, আকাশ ও পৃথিবীতে বিরাজমান সব কিছু এবং কাতারে কাতারে উড্ডয়নরত পাখিকুল আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? সকলেই নিজ নিজ নামায ও তাসবীহ কিরূপ, তা জেনে নিয়েছে। তােমরা যা যা করাে, তা আল্লাহ জানেন।'(আয়াত ৪১) এই সুপরিসর প্রকৃতির জগতে মানুষ একা নয়। তার চার পাশে, তার ডানে বামে, ওপরে নীচে, যে দিকে তার চোখ যায় এবং যে দিকে তার কল্পনা বিস্তৃত হয়, সর্বত্রই তার ভাইয়েরা রয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যেই এই সব ভাইয়েরা রয়েছে। তাদের হরেক রকম স্বভাব, হরেক রকম আকৃতি এবং হরেক রকম চেহারা। কিন্তু এতদসত্তেও তারা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে একাকার, আল্লাহর দিকে নিবিষ্ট চিত্ত এবং আল্লাহর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবহিত। কোরআন মানুষকে তার চার পাশে আকাশ ও পৃথিবীর অভ্যন্তরে আল্লাহর যতাে সৃষ্টি রয়েছে, সেই সব সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যে আল্লাহর প্রশংসা করে ও আল্লাহকে ভয় করে তা উপলব্ধি করতে বলেছে এবং যা সে প্রতিনিয়তই দেখে, কিন্তু তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। সেই দৃশ্যটা হলাে আল্লাহর তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় ডানা মেলে উড্ডয়নরত পাখিকুলের দৃশ্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ নামায ও তাসবীহ কি রকম তা জেনে নিয়েছে। আর মানুষই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র সৃষ্টি, যে স্বীয় প্রভুর তাসবীহ সম্পর্কে সচেতন নয়। অথচ ঈমান, তাসবীহ ও নামায পড়ার দায়িত্বটা মানুষেরই সবচেয়ে বেশী। সমগ্র সৃষ্টিজগত মহান আল্লাহর অনুগত, তার তাসবীহ পাঠরত ও নামায পাঠরত। এটা সকল সৃষ্টির স্বভাবগত। আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধির আনুগত্যের মধ্য দিয়েই সে আল্লাহর আনুগত্য করে। মানুষের মন যখন স্বচ্ছ ও নির্মল থাকে, তখন সে সৃষ্টিজগতের এই আনুগত্য এমনভাবে উপলব্ধি করে যেন সে তা দেখতে পায়। সৃষ্টি জগতের প্রতিটি ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়াকে সে এমনভাবে শুনতে পায় যে, তা তার কাছে আল্লাহর তাসবীহের মতােই মনে হয়। মহাবিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টি অপর সৃষ্টির তাসবীহ ও নামাযে অংশীদার হয়। রসূল(স.)ও চলার পথে নিজের পায়ের নীচের পাথরের টুকরােগুলাের তাসবীহ শুনতে পেতেন। হযরত দাউদ(আ.)ও যখন আল্লাহর কেতাব পাঠ করতেন তখন তার সাথে পাহাড় পর্বত ও পাখিকুলও শরীক হতাে। ‘আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহর এবং আল্লাহর দিকেই (প্রতিটি সৃষ্টিকে) প্রত্যাবর্তন ( করতে হবে)’ তাই আল্লাহর দিকেই সকলের চিত্ত নিবিষ্ট করতে হবে, তার কাছেই সকলকে আশ্রয় নিতে হবে, তার মুখােমুখি না হয়ে কারাে গত্যন্তর নেই, তার আযাব থেকে কেউ কাউকে রক্ষা করতে পারে না এবং আল্লাহর দিকেই সকলের শেষ প্রত্যাবর্তন করতে হবে। সৃষ্টি জগতের আরাে একটা দৃশ্য এমন রয়েছে, যা মানুষ দেখেও না দেখার ভান করে উদাসীনভাবে চলে যায়। অথচ এতে চোখের জন্যেও আনন্দ রয়েছে, মনের জন্যেও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। এতে আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শন নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনার সুযােগ রয়েছে এবং হেদায়াত জ্যোতি ও ঈমানের সাক্ষ্য প্রমাণগুলােতে চিন্তা গবেষণার বিষয় রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি কি দেখােনি যে, আল্লাহ তায়ালা মেঘমালাকে পরিচালিত করেন, অতপর এক মেঘকে অপর মেঘের সাথে মিলিত করেন, অতপর সেগুলােকে স্তুপীকৃত করেন, অতপর…'(আয়াত ৪৩) এখানে দৃশ্যটা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার আহ্বান জানানাে হচ্ছে। এ সব বিবরণের আসল উদ্দেশ্য হলাে মানুষের অন্তরকে সচকিত করা ও জাগ্রত করা, তাকে চিন্তা ভাবনা করতে ও শিক্ষা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং তার পশ্চাতে আল্লাহর যে গভীর সৃষ্টি রহস্য লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী করে তােলা। আল্লাহর হাত মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করে, অতপর সেগুলােকে একত্রিত করে। এভাবে মেঘমালার স্তুপ জমা হয়। এই স্তুপ যেই ভারী হয়, অমনি তা থেকে পানি বের হয়। পানি ভর্তি মেঘমালা প্রকান্ড পর্বতের আকার ধারণ করে এং তাতে ছােট ছােট তুষার খন্ড থাকে। মেঘমালার দৃশ্য পাহাড় পর্বতের দৃশ্যের মতই। এ দৃশ্য বিমান আরােহীরা যেমন নিখুঁতভাবে দেখতে পায়, তেমন আর কেউ দেখতে পায় না। বিমান মেঘের ওপরে চলে গেলে বা মেঘের ভেতর দিয়ে চলতে থাকলে তা যথাযথই পাহাড় পর্বতের মতাে দেখা যায়। পাহাড় পর্বতের মতােই তার বিশালত্ব, তার চড়াই-উৎরাই ও খাদ দেখা যায়। এখানে এমন একটা সত্য ছবির আকারে দেখানাে হয়েছে, যা মানুষ বিমানে আরােহণ করার আগে কখনাে দেখেনি। এই সব পাহাড় পর্বত আল্লাহর হুকুমের অনুগত। আল্লাহর যে প্রাকৃতিক বিধান সৃষ্টিজগতকে পরিচালনা করে, সেই বিধান অনুসারেই এসব পাহাড় পর্বত চলে। আর এই প্রাকৃতিক বিধান অনুসারেই আল্লাহ তায়ালা যাকে চান বৃষ্টি দেন এবং যাকে চান তা থেকে বঞ্চিত করেন। এই বিশাল দৃশ্যপটের বিবরণ যে বাক্য দ্বারা পূর্ণতা লাভ করেছে তা হলাে, সে মেঘের বিদ্যুতের চমক এমন যেন সে দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিতে চায়। এভাবে বিশাল জ্যোতির্ময় বিশ্বের পরিবেশের সাথে পূর্ণ সমন্বয় সাধিত হয়েছে। এরপর আসছে তৃতীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য। এটা হলাে রাত ও দিনের দৃশ্য। ‘আল্লাহ তায়ালা রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান। নিশ্চয়ই এতে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লােকদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।’ যে অটুট শৃংখলার মধ্য দিয়ে রাত ও দিনের আবর্তন চলছে, তা মানুষ মাত্রেরই অন্তরে সাড়া জাগায় এবং সৃষ্টি জগতকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রাকৃতিক বিধান ও আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্র্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার প্রেরণা যােগায়। কোরআন এই সব প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকে মানুষকে মনােনিবেশ করার নির্দেশ দেয়, যাতে সে নিত্য নতুন চেতনা ও অনুভূতি নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে। বস্তুত দিন ও রাতের আবর্তনের বিস্ময়কর দৃশ্য নিয়ে মানুষ যখন প্রথম চিন্তা গবেষণা করে, তখন সেটা তার কাছে খুবই আনন্দদায়ক লাগে । অথচ এই আবর্তন আবহমান কাল ধরে যেমন ছিলাে তেমনি আছে। এতে কোনােই পরিবর্তন আসেনি। এর সৌন্দর্য ও মনােহরত্বে কোনাে রদবদল হয়নি। কেবল মানুষের মনেই মরিচা ধরেছে এবং নির্জীবতা এসেছে। তাই তার ভেতরে এর আর কোনাে উপলব্ধি জন্মে না। প্রকৃতির এসব বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের প্রথম অনুভূতিকে আনন্দ দিয়েছিলাে, এসব বৈশিষ্ট্যের কাছ দিয়ে উদাসীনভাবে অতিক্রম করার সময় আমাদের আয়ুষ্কালের বিরাট অংশ নষ্ট হয়ে যাবে এবং এই সৃষ্টি জগতের সৌন্দর্যের অনেকাংশই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। কোরআন আমাদের নির্জীব অনুভূতিকে সজীব ও ঘুমন্ত স্নায়ুতন্ত্রীকে জাগ্রত করে, যাতে আমরা এই সৃষ্টি জগতকে প্রথমবার যেভাবে দেখেছিলাম, সেভাবে দেখি ও উপভােগ করি। প্রত্যেকটা প্রাকৃতিক দৃশ্যের সামনে আমরা দাঁড়াবাে এবং তার অন্তর্নিহিত রহস্য নিয়ে তার কাছে প্রশ্ন করবাে। তাহলে আমাদের চার পাশে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর সৃজনশীল হাতকে সক্রিয় দেখতে পাবাে, তাঁর সৃষ্টি নৈপুন্য লক্ষ্য করবে এবং সমগ্র সৃষ্টিতে ছড়িয়ে থাকা তার নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবাে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাহায্য করতে চান। আমরা যখনই কোনাে সৃষ্টির একটি বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকাই, তখনই একবার সে সৃষ্টিটাকে আমাদের হাতে অর্পণ করেন। এই সময় আমরা সে সৃষ্টিকে উপলব্ধি করার নেয়ামতটাকে এমনভাবে উপভােগ করি, যেন তাকে প্রথম দেখলাম। এভাবে গােটা সৃষ্টিকে আমরা অসংখ্যবার দেখি ও উপভােগ করি। এভাবে প্রতিবারই যেন তাকে নতুন করে পাই এবং নতুন করে ভোগ করি। এই সৃষ্টিজগত বড়ই সুন্দর এবং মনােরম। এ সৃষ্টিজগতের স্বভাব প্রকৃতির সাথে আমাদের স্বভাবেরও মিল রয়েছে। কেননা এ জগতের ও আমাদের উৎসও অভিন্ন এবং উভয়কে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী প্রাকৃতিক বিধানও অভিন্ন। তাই এই সৃষ্টিজগতের সাথে তাল মিলিয়ে চললে আমরা শান্তি ও সখ্যতা অনুভব করি এবং অদেখা নিকটাত্মীয়ের সাথে পরিচিত ও মিলিত হলে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি আনন্দ পাই। সেখানে আমরা আল্লাহর জ্যোতিও পাই। কেননা আল্লাহ তায়ালা আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। তাকে আমরা প্রকৃতির মাঝেও পাই, নিজেদের সত্ত্বার মাঝেও পাই। যে মুহূর্তে সচেতন অনুভূতি দিয়ে এ বিশ্ব জগতকে প্রত্যক্ষ করি, ঠিক সেই মুহূর্তেই আল্লাহর জ্যোতিকে দেখতে পাই। উন্মুক্ত হৃদয় ও শানিত চিন্তার মাধ্যমে যখনই সৃষ্টিকে অবলােকন করি, তখন তা দেখতে পাই। এ জন্যেই কোরআন আমাদেরকে বারংবার জাগ্রত করে, আমাদের আজ্ঞা ও চেতনাকে সৃষ্টির বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে চিন্তা গবেষণা করতে উদুদ্ধ করে, যাতে আমরা অবচেতন ও উদাসীনভাবে চোখ বুজে সেগুলাের কাছ দিয়ে অতিক্রম না করি। কেননা এরূপ করলে আমাদের পার্থিব জীবনের সফরটা হবে সম্পূর্ণ নিস্ফল অথবা স্বল্প লাভজনক। এরপরও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী তুলে ধরা অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে আমাদেরকে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার কাজও। পরবর্তী আয়াত আমাদের কাছে জীবনের অভিন্ন উৎস, অভিন্ন স্বভাব ও প্রকৃতি, অতপর সেই উৎস ও স্বভাবের অভিন্নতা সত্ত্বেও বিভিন্ন বৈচিত্রের উল্লেখ করেছে। যেমন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তাদের কেউ পেটের ওপর ভর করে চলে, কেউ দু’পায়ে এবং কেউ চার পায়ে চলে…'(আয়াত ৪৫) এতাে সহজ ভাষায় যে বিরাট সত্যটা কোরআন পেশ করছে, অর্থাৎ সকল প্রাণীর পানি থেকে সৃষ্টি হওয়ার সত্যটা, এ দ্বারা এ কথাও বুঝানাে হয়ে থাকতে পারে যে, যাবতীয় প্রাণীর সৃষ্টির ক্ষেত্রে পানিই অভিন্ন মৌল উপাদান। আবার এ দ্বারা এ কথাও বুঝানাে হয়ে থাকতে পারে, যা আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করতে সচেষ্ট যে, প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে সমুদ্র থেকে এবং মূলত পানির মধ্যেই তা জন্মেছে। অতপর তা বিচিত্র রূপ ধারণ করেছে ও বিভিন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছে। তবে যেহেতু আমি এই নীতি অনুসরণ করে আসছি যে, কোরআনের চিরস্থায়ী সত্যগুলােকে বিজ্ঞানের পরিবর্তনযােগ্য ও সংশােধনযােগ্য মতবাদগুলাের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা চলবে না। তাই এ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশী কিছু উল্লেখ করতে চাই না। শুধুমাত্র কোরআনের প্রমাণিত শাশ্বত সত্যকেই যথেষ্ট মনে করি। সেটা এই যে, আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রাণীর মূল উপাদান এক ও অভিন্ন। অতপর তা বিভিন্ন আকার ধারণ করেছে, যেমন চাক্ষুস দেখা যায়। যেমন, পেটের ওপর ভর করে চলা সরিসৃপ, দু’পায়ে চলা পাখি ও মানুষ এবং চার পায়ে চলা পশু। এ সবই আল্লাহর ইচ্ছা ও তারই প্রাকৃতিক নিয়ম ও রীতি অনুসারে হয়ে থাকে কোনাে আকস্মিক দুর্ঘটনা বা অপরিকল্পিত কোনাে কাকতালীয় ব্যাপার হিসেবে নয়। এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আল্লাহ যা চান, তাই সৃষ্টি করেন।’ অর্থাৎ তিনি কোনাে ছক বাঁধা নিয়মের অধীন নন। মহাবিশ্বে যেসব প্রাকৃতিক নিয়ম ও রীতি চালু আছে, তাও আল্লাহর স্বাধীন ইচ্ছা অনুসারেই সৃষ্ট। ‘নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ একই মৌল উপাদান থেকে জন্ম নিয়েও প্রাণীর এতাে বিচিত্র রূপ, রং ও আকৃতি প্রকৃতি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত ইচ্ছা ও উদ্যোগ, কোনো কাকতালীয় বা আকস্মিক কার্যকারণ নয়। নচেত এতসব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা কোনাে কাকতালীয় বা আকস্মিক ঘটনা থেকে জন্ম নিলাে? এ সবই হলাে মহা বিজ্ঞানী ও মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সুনিপুণ সৃষ্টিকর্ম, যিনি প্রত্যেক জিনিসকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর তাকে সুপথ প্রদর্শন করছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
#.ওপরে বলা হয়েছে, আল্লাহ সমগ্র-জাহানের আলো কিন্তু একমাত্র সৎ মু’মিনরাই এ আলো লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, বাদবাকি সব লোকেরাই এ পূর্ণাঙ্গ আলোর দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকেও ঘোর অন্ধকারে অন্ধের মতো হাতড়ে মরে। এখন এ আলোর দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে নমুনা স্বরূপ মাত্র কয়েকটি এখানে পেশ করা হচ্ছে। মনের চোখ খুলে কেউ সেগুলোর দিকে তাকালে সবসময় সবদিকে আল্লাহকেই সক্রিয় দেখতে পাবে। কিন্তু যাদের মনের চোখ অন্ধ তারা কপালের দুটো চোখ বিস্ফোরিত করে দেখলেও জীববিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যার বিভিন্ন রকম বিদ্যা তাদের চোখে ভালমতোই সক্রিয় রয়েছে বলে তাদের চোখে ঠেকবে কিন্তু আল্লাহকে কোথাও সক্রিয় দেখতে পাবে না।

# এর অর্থ ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া মেঘপুঞ্জও হতে পারে রূপক অর্থে একেই হয়তো আকাশের পাহাড় বলা হয়েছে। আবার পৃথিবীর পাহাড়ও হতে পারে, যা শূন্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলোর চূড়ায় জমে থাকা বরফের প্রভাবে অনেক সময় বাতাস এত বেশী ঠাণ্ডা হয়ে যায় যে, মেঘমালা জমে গিয়ে শিলা বৃষ্টি হতে থাকে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৪৩-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরো কিছু ক্ষমতার কথা বর্ণনা করেছেন, যা কেবলমাত্র তিনিই করতে সক্ষম। এ ব্যাপারে আর কেউ ক্ষমতাবান নয়। يُزْجِيْ অর্থ-হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া, سَحَابًا অর্থ খণ্ড খণ্ড মেঘ, يُؤَلِّفُ অর্থ খণ্ড খণ্ড মেঘগুলোকে একত্রিত করা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা খণ্ড খণ্ড মেঘগুলো হাকিয়ে নিয়ে একত্রিত করে পাহাড়ের ন্যায় মেঘমালায় পরিণত করেন, অতঃপর তা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এছাড়া তিনি আকাশের শিলাস্তুপ হতে শিলা বর্ষণ করেন। এর দ্বারা কাউকে আঘাত হানেন আবার কাউকে এর আঘাত হতে রক্ষা করেন।

আবার কেউ এর অর্থ নিয়েছেন যে, এ আঘাত বলতে শিলাবৃষ্টি দ্বারা ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া। আর যার ওপর রহমত করেন তাকে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেন।

আর এ মেঘমালার মধ্যে এমন বিদ্যুৎ ঝলক রয়েছে যাতে মানুষের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْطكُلَّمَآ أَضَآءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ لاق وَإِذَآ أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْا ط وَلَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ط إِنَّ اللّٰهَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)

“মনে হয় যেন বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিবে, যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্জ্বলিত করেন তখন তাতে তারা চলতে থাকে এবং যখন তাদের ওপর অন্ধকারাচ্ছন্ন করেন তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে। আর যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন নিশ্চয় তাদের শ্রবণ শক্তি ও তাদের দর্শন শক্তি হরণ করতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্ব বিষয়ের ওপর শক্তিমান।” (সূরা বাকারাহ ২:২০)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক যিনি দিবস ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। যার ফলে কখনো রাত বড় হয়, আবার কখনো দিন বড় হয়। অথবা কখনো দিনের উজ্জ্বলতাকে কালো করে দেন মেঘের অন্ধকার দিয়ে এবং রাতের অন্ধকারকে চাঁদের আলো দিয়ে বদলে দেন। যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তাদের জন্য এগুলোর মাঝে শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ)

“নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে”। (সূরা আলি ইমরান ৩:১৯০)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি বিভিন্ন প্রজাতির সকল জীব-জন্তু ও তরুলতা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টির মূল উপাদান হল পানি, যে সকল প্রাণীর প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হয় তারা বীর্য দ্বারা সৃষ্টি হয় যা হল পানি। আর যেসকল তরুলতা মাটি থেকে সৃষ্টি হয় তার মূল উপাদান হল মানুষের সেচ দেয়া পানি অথবা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত পানি।

(فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰي بَطْنِه)

অর্থাৎ যেমন সাপ পেটের ওপর ভর করে চলে, মানুষ ও অনেক প্রাণি দু’পায়ের ওপর চলাচল করে। গরু, ছাগল ও অনেক প্রাণি চার পায়ের ওপর চলাচল করে। তবে অনেক প্রাণি আছে যাদের পা চারের অধিক। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা পরে বলেছেন, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَا۬ئِرٍ يَّطِيْرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ ط مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتٰبِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلٰي رَبِّهِمْ يُحْشَرُوْنَ)

“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল যত জীব আছে এবং উভয় ডানার সাহায্যে উড্ডয়নশীল যত পাখী আছে সবই তাদের মত একটি জাতি। কিতাবে (লাওহে মাহফূজে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকে একত্র করা হবে।” (সূরা আনআম ৬:৩৮)

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছামত যা খুশি তাই সৃষ্টি করতে পারেন। এগুলো দেখে যারা সুপথ পাওয়ার তারা সুপথ পায়, আর যারা গোমরাহ হওয়ার তারা গোমরাহ হয়ে যায়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আকাশে শিলাস্তুপ রয়েছে।
৩. দিবা-রাত্রি পরিবর্তনশীল।
৪. পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার প্রাণী রয়েছে যারা পেট দিয়ে, দু’পা দিয়ে আবার কোন প্রজাতি চার পা দিয়েও চলাফেরা করে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৪১-৪২ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে। অর্থাৎ মানুষ, জ্বিন, ফেরেশতা এমনকি অজৈব বস্তুও আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণায় লিপ্ত রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “সপ্ত আকাশ ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যত কিছু রয়েছে সবাই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে থাকে। (শেষ পর্যন্ত)।”

উড্ডীয়মান পক্ষীকুলও আল্লাহ তা’আলার মহিমা ঘোষণা করে থাকে। এ সবগুলোর জন্যে যথাযোগ্য তাসবীহ তিনি এগুলোকে শিখিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের ইবাদতের বিভিন্ন পন্থাও তিনি তাদেরকে শিখিয়ে রেখেছেন। তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। কোন কিছুই তার কাছে গোপন নেই। তিনি শাসনকর্তা, ব্যবস্থাপক, একচ্ছত্র মালিক, প্রকৃত উপাস্য এবং আসমান ও যমীনের বাদশাহ একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। তাঁর হুকুম কেউ টলাতে পারে না। কিয়ামতের দিন সবাইকে তাঁরই সামনে হাযির হতে হবে। তিনি যা চাইবেন তাঁর সৃষ্টজীবের মধ্যে হুকুম জারী করে দিবেন। মন্দ লোকে মন্দ বিনিময় পাবে এবং ভাল লোক ভাল বিনিময় লাভ করবে। সৃষ্টিকর্তা ও অধিপতি তিনিই। তিনিই দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত হাকেম। তাঁরই সত্তা প্রশংসা ও গুণকীর্তনের যোগ্য।

৪৩-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন। এই মেঘমালা তাঁর শক্তিবলে প্রথম প্রথম পাতলা ধোয়ার আকারে উঠে। তারপর ওগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে মোটা ও ঘন হয়ে যায় এবং একে অপরের উপর জমে যায়। তারপর ওগুলোর মধ্য হতে বৃষ্টি ধারা নির্গত হয়। বায়ু প্রবাহিত হয়, যমীনকে তিনি যোগ্য করে তুলেন। এরপর পুনরায় মেঘকে উঠিয়ে নেন এবং আবার মিলিত করেন। পুনরায় ঐ মেঘমালা পানিতে পূর্ণ হয়ে যায় এবং বর্ষিতে শুরু করে। আকাশস্থিত শিলাপ হতে তিনি শিলা বর্ষণ করেন।

এই বাক্যে প্রথম (আরবি) টি (আরবি) -এর জন্যে, দ্বিতীয়টি (আরবি)-এর জন্যে এবং তৃতীয়টি (আরবি) -এর বর্ণনার জন্যে। এটা এই তাফসীরের উপর ভিত্তি করে যে, আয়াতের অর্থ করা হবেঃ শিলার পাহাড় আকাশে রয়েছে। আর যাদের মতে এখানে (আরবি) বা পাহাড়’ শব্দটি রূপক অর্থে ‘মেঘ’ রূপে ব্যবহৃত, তাঁদের নিকট দ্বিতীয়(আরবি) টিও (আরবি) -এর জন্যে এসেছে। কিন্তু ওটা প্রথম হতে বদল হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ।

পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ হচ্ছেঃ বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি আল্লাহ তা’আলা যেখানে বর্ষাবার ইচ্ছা করেন সেখানেই তা তাঁর রহমতে বর্ষে থাকে এবং তিনি যেখানে চান না সেখানে বর্ষে না। অথবা ভাবার্থ এই যে, এই শিলা দ্বারা যার ক্ষেত্র ও বাগানকে তিনি নষ্ট করার ইচ্ছা করেন নষ্ট করে দেন এবং যার উপর তিনি মেহেরবানী করেন তার ক্ষেত্র ও বাগানকে তিনি বাঁচিয়ে নেন।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বিদ্যুতের চমক ও শক্তির বর্ণনা দিচ্ছেন যে, ওটা দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তিনিই দিবস ও রজনীর পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকেন। যখন তিনি ইচ্ছা করেন দিন ছোট কবেন ও রাত্রি বড় করেন এবং ইচ্ছা করলে পিন বড় করেন ও রাত্রি হোট করেন। এই সমুদয় নিদর্শনের মধ্যে অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এগুলো মহাক্ষমতাবান আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ করছে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন (আরবি)

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রজনীর পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্যে।” (৩:১৯০)

# আল্লাহ তাআলা স্বীয় ব্যাপক ক্ষমতা ও আধিপত্যের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি একই পানি দ্বারা নানা প্রকারের মাখলূক বা সৃষ্টজীব সৃষ্টি করেছেন। সাপ প্রভৃতি প্রাণীকে দেখা যায় যে, ওগুলো পেটের ভরে চলে। মানুষ ও পাখী দুই পায়ে চলে এবং জন্তুগুলো চলে চার পায়ে। তিনি বড়ই ক্ষমতাবান। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা কখনো হয় না।

# এই নৈপুণ্যপূর্ণ আহকাম ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্তসমূহ এই কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলাই বর্ণনা করেছেন। তিনি জ্ঞানীদেরকে বুঝবার তাওফীক দিয়েছেন। মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন সরল সঠিক পথ-প্রদর্শন করেন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#978)
[أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ
Everything glorifies তত Allah, ]
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 41-46
www.motaher21.net
24:41

اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُسَبِّحُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ الطَّیۡرُ صٰٓفّٰتٍ ؕ کُلٌّ قَدۡ عَلِمَ صَلَاتَہٗ وَ تَسۡبِیۡحَہٗ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌۢ بِمَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۴۱﴾

Do you not see that Allah is exalted by whomever is within the heavens and the earth and [by] the birds with wings spread [in flight]? Each [of them] has known his [means of] prayer and exalting [Him], and Allah is Knowing of what they do.

 

Everything glorifies Allah, may He be exalted, and to Him belongs the Sovereignty

Allah tells:

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ

See you not that Allah, He it is Whom glorify whosoever is in the heavens and the earth,

Allah tells us that whosoever is in the heavens and on the earth, i.e., the angels, mankind, Jinn, animals and even inanimate objects, all glorify Him.

This is like the Ayah:

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَـوَتُ السَّبْعُ وَالاٌّرْضُ وَمَن فِيهِنَّ

The seven heavens and the earth and all that is therein, glorify Him. (17:44)

وَالطَّيْرُ صَافَّاتٍ

and the birds with wings outspread,

means, while they are flying they glorify their Lord and worship Him with the glorification with which they are inspired and to which they are guided.

Allah knows what they are doing, and so He says:

كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَتَهُ وَتَسْبِيحَهُ
.

Of each one He knows indeed his Salah and his glorification;

meaning, He has guided every creature to its own way of worshipping Allah, may He be glorified.

..
وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ

and Allah is All-Aware of what they do.

Allah tells us that He knows all of that and nothing at all is hidden from Him.

He says

24:42

وَ لِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ اِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ ﴿۴۲﴾

And to Allah belongs the dominion of the heavens and the earth, and to Allah is the destination.

 

وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ

And to Allah belongs the sovereignty of the heavens and the earth,

Allah tells that to Him belongs the sovereignty of heaven and earth, and that He is the Ruler and Controller, the God Who is worshipped and besides Whom none other is to be worshipped, and there is none to put back His judgement.

وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ

and to Allah is the return.

means, on the Day of Resurrection, when He will judge as He wills,

لِيَجْزِىَ الَّذِينَ أَسَاءُواْ بِمَا عَمِلُواْ

that He may requite those who do evil with that which they have done… (53:31)

He is the Creator and Sovereign, and His is indeed the Authority in this world and the next. To Him be praise at the beginning and in the end

24:43

اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُزۡجِیۡ سَحَابًا ثُمَّ یُؤَلِّفُ بَیۡنَہٗ ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ رُکَامًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ وَ یُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مِنۡ جِبَالٍ فِیۡہَا مِنۡۢ بَرَدٍ فَیُصِیۡبُ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَصۡرِفُہٗ عَنۡ مَّنۡ یَّشَآءُ ؕ یَکَادُ سَنَا بَرۡقِہٖ یَذۡہَبُ بِالۡاَبۡصَارِ ﴿ؕ۴۳﴾

Do you not see that Allah drives clouds? Then He brings them together, then He makes them into a mass, and you see the rain emerge from within it. And He sends down from the sky, mountains [of clouds] within which is hail, and He strikes with it whom He wills and averts it from whom He wills. The flash of its lightening almost takes away the eyesight.

 

The Power of Allah to create the Clouds and that which comes from Them

Allah tells:

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُزْجِي سَحَابًا

See you not that Allah drives the clouds gently,

Allah tells us that He drives the clouds from the beginning, when they are formed and are still weak. This is the “Gentle driving.”

ثُمَّ يُوَلِّفُ بَيْنَهُ

then joins them together,

means, He brings them together after they have been scattered.

ثُمَّ يَجْعَلُهُ رُكَامًا

then makes them into a heap of layers,

means, He piles them up on top of one another.

فَتَرَى الْوَدْقَ

and you see the Wadq,

meaning the rain,

يَخْرُجُ مِنْ خِلَلِهِ

come forth from between them;

means, from the gaps between them.

This is how it was understood by Ibn Abbas and Ad-Dahhak.

Ubayd bin Umayr Al-Laythi said:

“Allah sends the scatterer (wind), which stirs up that which is on the surface of the earth.

Then he sends the generator (wind), which forms the clouds.

Then He sends the joiner (wind) which brings them together.

Then He sends the fertilizer (wind) which fertilizes or `seeds’ the clouds.”
This was recorded by Ibn Abi Hatim and Ibn Jarir.

وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاء مِن جِبَالٍ فِيهَا مِن بَرَدٍ

and He sends down from (Min) the sky, from (Min) mountains in it of (Min) ice,

Some of the grammarians said that the first Min describes the place from which it is coming, the second specifies from which part of the sky it comes, and the third means some kind of mountains.
This is based on the view of those scholars of Tafsir who say that,
مِن جِبَالٍ فِيهَا مِن بَرَدٍ
from (Min) mountains in it of (Min) ice,

means that there are mountains of hail in the sky from which Allah sends down ice.

As for those who say that “mountains” here is used as a metaphor for clouds, they think that the second Min is also used to describe the place from which the ice is coming, and is thus interchangeable with the first.

And Allah knows best.

فَيُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاء وَيَصْرِفُهُ عَن مَّن يَشَاء

and strikes therewith whom He wills, and averts it from whom He wills.

It may be that the phrase
فَيُصِيبُ بِهِ
(and strikes therewith),

means, with what He sends down from the sky of different kinds of rain and hail.

So then the phrase
فَيُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاء
(and strikes therewith whom He wills) means, by His mercy towards them,

and
وَيَصْرِفُهُ عَن مَّن يَشَاء
(and averts it from whom He wills) means, He withholds rain from them.

Or it may be that
فَيُصِيبُ بِهِ
(and strikes therewith),

means, with hail, as a punishment towards whomever He wills, striking their fruits and destroying their crops and trees. And He averts it from whomever He wills as a mercy towards them.

يَكَادُ سَنَا بَرْقِهِ يَذْهَبُ بِالاَْبْصَارِ

The vivid flash of its lightning nearly blinds the sight.

the brightness of its lightning almost takes away their sight if the eyes follow it and try to look at it

24:44

یُقَلِّبُ اللّٰہُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّاُولِی الۡاَبۡصَارِ ﴿۴۴﴾

Allah alternates the night and the day. Indeed in that is a lesson for those who have vision.

 

يُقَلِّبُ اللَّهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

Allah causes the night and the day to succeed each other.

He is controlling them, so that He takes something from the length of one and adds it to the other, which is short, until they become equal, then He does the opposite so that the one which was short becomes long and vice versa. Allah is the One Who is controlling that by His command, power, might and knowledge.

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لاُِّوْلِي الاَْبْصَارِ

Truly, in this is indeed a lesson for those who have insight.

means, this is an indication of His greatness, may He be exalted.

This is like the Ayah:

إِنَّ فِى خَلْقِ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ وَاخْتِلَـفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لاّيَـتٍ لاٌّوْلِى الاٌّلْبَـبِ

Verily, in the creation of the heavens and the earth, and in the alternation of night and day, there are indeed signs for men of understanding. (3:190)

24:45

وَ اللّٰہُ خَلَقَ کُلَّ دَآبَّۃٍ مِّنۡ مَّآءٍ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی بَطۡنِہٖ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰی رِجۡلَیۡنِ ۚ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّمۡشِیۡ عَلٰۤی اَرۡبَعٍ ؕ یَخۡلُقُ اللّٰہُ مَا یَشَآءُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۴۵﴾

Allah has created every [living] creature from water. And of them are those that move on their bellies, and of them are those that walk on two legs, and of them are those that walk on four. Allah creates what He wills. Indeed, Allah is over all things competent.

 

Allah’s Power in His creation of the Animals

Allah tells:

وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِن مَّاء

Allah has created every moving creature from water.

Allah mentions His complete and almighty power to create all the different kinds of animals with their various forms, colors and ways of moving and stopping, from one kind of water.

فَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى بَطْنِهِ

Of them there are some that creep on their bellies,

like snakes and so on;

وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى رِجْلَيْنِ

and some that walk on two legs,

like humans and birds;

وَمِنْهُم مَّن يَمْشِي عَلَى أَرْبَعٍ

and some that walk on four,

like cattle and all kinds of animals.

Allah says:

يَخْلُقُ اللَّهُ مَا يَشَاء

Allah creates what He wills.

meaning by His power, because what He wills happens and what He does not will does not happen.

So he says:

إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

Verily, Allah is able to do all things

24:46

لَقَدۡ اَنۡزَلۡنَاۤ اٰیٰتٍ مُّبَیِّنٰتٍ ؕ وَ اللّٰہُ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۴۶﴾

We have certainly sent down distinct verses. And Allah guides whom He wills to a straight path.

 

Allah states:

لَقَدْ أَنزَلْنَا ايَاتٍ مُّبَيِّنَاتٍ

We have indeed sent down manifest Ayat.

Allah states that in this Qur’an He has revealed many clear and unambiguous rulings, words of wisdom and parables, and that He guides people of understanding, insight and intellect to ponder and understand them.

He says:

وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

And Allah guides whom He wills to the Straight Path

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply