أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৮০)[ মুনাফিকরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, বই নং ২৬]
www.motaher21.net
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
৫৩-৫৪ নং আয়াত:-
২৪:৫৩
وَ اَقۡسَمُوۡا بِاللّٰہِ جَہۡدَ اَیۡمَانِہِمۡ لَئِنۡ اَمَرۡتَہُمۡ لَیَخۡرُجُنَّ ؕ قُلۡ لَّا تُقۡسِمُوۡا ۚ طَاعَۃٌ مَّعۡرُوۡفَۃٌ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۵۳﴾
এ মুনাফিকরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, “আপনি হুকুম দিলে আমরা অবশ্যই ঘর থেকে বের হয়ে পড়বো।” তাদেরকে বলো, “কসম খেয়ো না, তোমাদের আনুগত্যের অবস্থা জানা আছে। তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন।
২৪:৫৪
قُلۡ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ ۚ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡہِ مَا حُمِّلَ وَ عَلَیۡکُمۡ مَّا حُمِّلۡتُمۡ ؕ وَ اِنۡ تُطِیۡعُوۡہُ تَہۡتَدُوۡا ؕ وَ مَا عَلَی الرَّسُوۡلِ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ ﴿۵۴﴾
বল, ‘আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর।’ অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে।আর রসূলের দায়িত্ব তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
মােমেন ও মােনাফেকদের আচরণ ও মন-মানসিকতার পার্থক্য তুলে ধরার পর এখন মােনাফেকদের প্রসংগ আর একবার আলােচিত হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ‘তারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর কসম খেয়ে বলে… রসূলের দায়িত্ব তাে কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছিয়ে দেয়া'(আয়াত ৫৩-৫৪) রসূলুল্লাহ(স.)-এর সামনেও এই মােনাফেক গােষ্ঠী কসম খেয়ে বলতাে, তারা রসূলের সাথে অবশ্যই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে, অথচ তারা যে মিথ্যাবাদী সে কথা আল্লাহ তায়ালা ভালােভাবেই জানেন, তাই অত্যন্ত অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যভরে বলছেন, ‘ওদেরকে বলে দিন ওরা যেন কসম না খায়, ওদের আনুগত্যের বিষয় জানা আছে’ যারা ওয়াদা করে ওয়াদা রক্ষা করে না, যারা সত্য কথার আবরনে মিথ্যা কথা বলে, যারা প্রতারণা ও প্রবঞ্চনায় অভ্যস্ত, তারা শতবার কসম খেলেও তাদের কথা বিশ্বাস করা যায় না, তাদের প্রতি আস্থা রাখা যায় না, তাই কোনাে মিথ্যাবাদী কারও সামনে নিজেকে সত্যবাদী প্রমাণ করতে গিয়ে কসমের আশ্রয় নিতে গেলে তাকে বলা হয়, ‘দোহাই তােমার, আর কসম খেয়াে না, তােমার সম্বন্ধে ভালই জানা আছে,’ ঠিক আল্লাহ তায়ালাও এভাবে ওদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, ওদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে তিনি ভালােই জানেন। তাই কসম খেলেও কোনাে কাজ হবে না। এ কারণেই তিনি ওদেরকে সত্যিকার আনুগত্যের নির্দেশ দিয়ে বলছেন, ‘বলাে, তােমরা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য কর’ যদি তারা এতে সাড়া না দেয় অথবা মােনাফেকীর আশ্রয় নেয় তাহলে এর দায়দায়িত্ব ও প্রায়শ্চিত্ত তারা নিজেরাই বহন করবে ও ভােগ করবে। রসূলের কোনাে দায়-দায়িত্ব এ ব্যাপারে থাকবে না, কারণ, তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব যথাযর্থরূপে পালন করেছেন। এর অতিরিক্ত তার আর কিছুই করার নেই। আর যদি তারা সত্যিকার অর্থে রসূলের আনুগত্য করে তাহলে তারা সত্য আদর্শের সন্ধান পাবে যে আদর্শ ইহকাল ও পরকালের সাফল্য ও কামিয়াবীর চাবিকাঠি। রাসূল তাদের ঈমানের ব্যাপারে দায়বদ্ধ নন। এমনকি তাদের অবাধ্যতার জন্যেও তিনি দায়ী নন। বরং তারা নিজেরাই এ সব ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে দায়ী, কাজেই এর শুভ ও অশুভ পরিণতির দায়ভারও তাদেরকেই বহন করতে হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# দ্বিতীয় অর্থ এও হতে পারে, মু’মিনদের থেকে কাংখিত আনুগত্য হচ্ছে এমন পরিচিত ধরনের আনুগত্য যা সকল প্রকার সন্দেহ-সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকে। তা এমন ধরনের আনুগত্য নয় যার নিশ্চয়তা দেবার জন্য কসম খাবার প্রয়োজন হয় এবং এরপরও তার প্রতি অবিশ্বাস থাকে। যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আদেশের অনুগত হয় তাদের মনোভাব ও কর্মনীতি গোপন থাকে না। প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কার্যধারা দেখে অনুভব করে, এরা আনুগত্যশীল লোক। তাদের ব্যাপারে এমন কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশই নেই যে, তা দূর করার জন্য কসম খাবার প্রয়োজন দেখা দেবে।
# সৃষ্টির মোকাবিলায় এ প্রতারণা হয়তো সফল হয়ে যেতে পারে কিন্তু আল্লাহর মোকাবিলায় কেমন করে সফল হতে পারে? তিনি তো প্রকাশ্য ও গোপন সকল অবস্থা বরং মনের প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা, চিন্তা ও আশা-আকাংখাও জানেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৩-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
যাদের অন্তরে ঈমানের ব্যাপারে দুর্বলতা রয়েছে তারাই আল্লাহতা‘আলার নামে বেশি বেশি শপথ করে। কারণ তাদের মনে যে দুর্বলতা রয়েছে তা যেন কোনক্রমেই প্রকাশ না পায়। সে জন্য হাদীসে বেশি বেশি শপথ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে মুনাফিকদের কথাই বলা হচ্ছে, যে সকল মুনাফিকরা জিহাদে যায়নি, মুসলিমরা জিহাদ থেকে ফিরে আসার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সে-সব মুনাফিকরা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে: আমাদেরকে নির্দেশ দিলে আমরাও যেতাম। আল্লাহ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিয়ে বলছেন: বলে দাও; শপথ করার বা ওজর পেশ করার কোন দরকার নেই। আল্লাহ তোমাদের অভ্যন্তরীণ খবর বা তোমরা কতটুকু আনুগত্য কর তা জানিয়ে দেবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ ج فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللّٰهَ لَا يَرْضٰي عَنِ الْقَوْمِ الْفٰسِقِيْنَ)
“তারা তোমাদের নিকট শপথ করে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ তা‘আলা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না।” (সূরা তাওবাহ ৯:৯৬) এ ব্যাপারে সূরা হাশরের ১১-১২ নং আয়াতেও বলা হয়েছে।
এর দ্বারা মূল উদ্দেশ্য মুসলিমদের সহানুভূতি অর্জন করা। মূলত তারা জিহাদে বের হবে না। সুতরাং হে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বলে দিন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা নির্দেশ দেন তা পালন কর আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেন তা বর্জন কর। আর যদি তা না কর, তাহলে জেনে রেখ ‘তবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী’ অর্থাৎ তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, আর তিনি তো দায়িত্ব পালন করছেন। আর তোমাদের ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। তবে সাবধান থেকো, হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে রাসূলের অবাধ্য হয়ো না বরং তাঁর আনুগত্য কর, তাহলে হিদায়াত পাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কেবল মুনাফিকরাই অন্তরের গোপন বিষয় ঢাকার জন্য বেশি বেশি শপথ করে।
২. আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা ফরয ও তাঁদের আনুগত্যেই হিদায়াত রয়েছে। অন্য কোন পীর, বাবা বা ব্যক্তির মতাদর্শে হিদায়াত নেই বরং তাদের তরীকা ধরলে গোমরাহ হতে হবে।
৩. প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
৪. রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া, কোন জোর-জবরদস্তি করা নয়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৩-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে নিজেদের ঈমানদারী ও শুভাকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করতো এবং শপথ করে করে বলতো যে, তারা জিহাদে গমনের জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু হুকুমের অপেক্ষায় রয়েছে। হুকুম হওয়া মাত্রই ঘরবাড়ী ও ছেলে মেয়ে ছেড়ে জিহাদের মাঠে পৌছে যাবে। আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “তোমরা শপথ করো না। তোমাদের আনুগত্যের মূলতত্ত্ব আমার জানা আছে। তোমাদের অন্তরে এক কথা, মুখে এক কথা। সুতরাং তোমাদের শপথের হাকীকত আমার অজানা নয়। তোমাদের মুখ যতটা মুমিন তোমাদের অন্তর ততটা কাফির। তোমাদের এই শপথগুলো শুধু মুসলমানদের সহানুভূতি লাভ করার জন্যে। হে মুমিনগণ! এই মুনাফিকরা তাদের শপথকে ঢাল বানিয়ে রেখেছে। তারা যে শুধু তোমাদের সামনে কসম করছে তা নয়, বরং কাফিরদের সামনেও তারা তাদের পক্ষ অবলম্বনের ও তাদের সাহায্য সহযোগিতার কসম খেয়ে থাকে। কিন্তু তারা এতো ভীরু ও কাপুরুষ যে, তাদের সাথেও তারা থাকতে পারে না।
এর ভাবার্থ এও হতে পারেঃ “হে মুনাফিকরা! তোমাদের জ্ঞানসম্মত ও পছন্দনীয় আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করা উচিত ছিল, এভাবে শপথ করা মোটেই শোভনীয় নয়। তোমাদের সামনে মুসলমানরা বিদ্যমান রয়েছে। তাদেরকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ যে, তারা না শপথ করছে, না বেড়ে বেড়ে কথা বলছে, বরং কাজের সময় তারা সবারই আগে বেরিয়ে পড়ছে। বেশী কথা না বলে কাজই তারা বেশী করছে। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। তোমাদের কোন কাজই তাঁর কাছে গোপন নেই। প্রত্যেক অবাধ্য ও অনুগত তার কাছে প্রকাশমান। প্রত্যেকের ভিতরের খবর তিনি তেমনই জানেন যেমন জানেন বাইরের খবর। তোমরা বাইরে যা কিছুই প্রকাশ কর না কেন, তিনি তোমাদের অন্তরের লুক্কায়িত খবরও পূর্ণমাত্রায় রাখেন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও- তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য কর। অর্থাৎ তোমরা কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রেখো যে, তোমাদের এই অপরাধের শাস্তি নবী (সঃ)-এর উপর পতিত হবে না। তার কাজ তো শুধু আল্লাহর পয়গাম মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। তোমাদের উপর অর্পিত দায়িতের জন্যে তোমরাই দায়ী। আর তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব হচ্ছে রাসূল (সঃ)-এর কথা মেনে নেয়া এবং এর উপর আমল করা ইত্যাদি। হিদায়াত শুধু রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যেই রয়েছে। কেননা, সরল সঠিক পথের দিকে আহ্বানকারী তিনিই। এই সরল সোজা পথ ঐ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে যার রাজত্ব সমস্ত যমীন ও আসমানব্যাপী। রাসূল (সঃ)-এর দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। সবারই হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব মহামহিমান্বিত আল্লাহর। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “অতএব তুমি উপদেশ দাও; তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নও।” (৮৮: ২১-২২)।
অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বানী ইসরাঈলের নবীদের মধ্যে হযরত শাইয়া (আঃ) নামক একজন নবীর নিকট অহী করেনঃ “তুমি বানী ইসরাঈলের সমাবেশে দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমার মুখ দিয়ে যা বের করার বের করবো।” আল্লাহ তা’আলার এই নির্দেশক্রমেই হযরত শাইয়া (আঃ) দাঁড়িয়ে যান। তখন আল্লাহর হুকুমে তার মুখ দিয়ে নিম্ন লিখিত ভাষণ বের হয়ঃ
“হে আকাশ! শুন, এবং হে যমীন! চুপ থাকো। আল্লাহ তা’আলা একটা শান বা মাহাত্ম্য পূর্ণ করতে এবং একটা বিষয়ের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ইচ্ছা করেন। ওটা তিনি পূর্ণ করবেন। তিনি চান যে, জঙ্গলকে বাসযোগ্য করবেন, জনহীন মরুপ্রান্তরকে করবেন জনবসতিপূর্ণ, বালুকায়ময় মরুভূমিকে করবেন শ্যামল-সবুজ, দরিদ্রদেরকে করবেন সম্পদশালী এবং রাখালদেরকে তিনি বাদশাহ বানিয়ে দেবেন। তিনি অশিক্ষিতদের মধ্য হতে একজন নিরক্ষর লোককে নবী করে পাঠাবেন, যিনি চরিত্রহীন হবেন না এবং কর্কশ ভাষীও হবেন না। তিনি বাজারে হট্টগোল ও গোলমাল করবেন না। তিনি এতো বিনয়ী ও নম্র হবেন যে, তাঁর বস্ত্রের অঞ্চলের বাতাসে ঐ প্রদীপ নির্বাপিত হবে না যার পার্শ্ব দিয়ে তিনি গমন করবেন। তিনি যদি শুষ্ক বাঁশের উপর পা রেখেও চলেন তবুও ঐ বাঁশের চড়চড়ি শব্দ কারো কানে পৌঁছবে না। আমি তাকে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে পাঠাবো। তার মুখের ভাষা হবে মধুর ও পবিত্র। তাঁর আবির্ভাবের ফলে অন্ধ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে এবং বধির ফিরে পাবে শ্রবণশক্তি। তার বরকতে মোহরযুক্ত অন্তর খুলে যাবে। সমস্ত ভাল কাজ দ্বারা আমি তাকে শোভনীয় করবো। তাঁকে আমি সর্বদিক দিয়ে মধুর ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী করবো। সাকীনা বা চিত্ত প্রশান্তি হবে তাঁর পোশাক। পুণ্য হবে তাঁর রীতি-নীতি এবং তাঁর অন্তর হবে আল্লাহভীতিতে পরিপূর্ণ। তার কথা হবে জ্ঞানপূর্ণ এবং সত্যবাদিতা ও প্রতিজ্ঞা-পালন হবে তার স্বভাব। তার অভ্যাস ও প্রকৃতি হবে মার্জনা ও ক্ষমা এবং মঙ্গল কামনা। হক ও সত্য হবে তার শরীয়ত এবং আদল ও ইনসাফ হবে তার চরিত্র। হিদায়াত হবে তাঁর ইমাম এবং ইসলাম হবে তার মিল্লাত। তার নাম হবে আহমাদ (সঃ)। তাঁর কারণে আমি পথভ্রষ্টতার পরে হিদায়াত ছড়িয়ে দিবো। অজ্ঞতার পরে জ্ঞান বিকশিত হবে। তার কারণে অবনতির পরে উন্নতি হবে। তার মাধ্যমে অজানা জানার সাথে পরিবর্তিত হবে। স্বল্পতা আধিক্যে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। তারই কারণে আমি দারিদ্রকে পরিবর্তিত করবো ঐশ্বর্যে। যারা পরস্পর পৃথক পৃথক রয়েছে, তার মাধ্যমে আমি তাদেরকে পরস্পর মিলিত করবো। তার মাধ্যমে আমি পরস্পরের মধ্যে প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি করবো। তাদের পরস্পরের মতানৈক্যের পর তার মাধ্যমে আমি তাদেরকে মতৈক্য পৌছিয়ে দিবো। তাঁর মাধ্যমে আমি পৃথক পৃথক হৃদয়কে এক হৃদয়ে পরিণত করবো। অর্থাৎ তারা পরস্পর শত্রুতা ভুলে গিয়ে একে অপরের বন্ধুতে পরিণত হয়ে যাবে, মনে হবে যেন একই হৃদয়। আল্লাহর অসংখ্য বান্দা ধ্বংস হতে রক্ষা পেয়ে যাবে। তার উম্মতকে আমি সমস্ত উম্মতের উপর মর্যাদা দান করবো, যারা জনগণের জন্যে উপকারী হবে। তারা ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখবে। তারা হবে একত্ববাদী খাঁটি মুমিন। আল্লাহ তাআলার যতগুলো রাসূল আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে যত কিছু এনেছেন, এই শেষ নবী (সঃ) তাদের সকলকেই স্বীকার করবেন, কাউকেও অস্বীকার করবেন না।