أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৮৮)
[*মুশরিক ও তাদের শরীকরা কিভাবে একে অপরকে অভিযুক্ত করবে : -]
www.motaher21.net
সূরা:- আল্ ফুরকান।
সুরা:২৫
পারা:১৮
১৭-২০ নং আয়াত:-
২৫:১৭
وَ یَوۡمَ یَحۡشُرُہُمۡ وَ مَا یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ فَیَقُوۡلُ ءَاَنۡتُمۡ اَضۡلَلۡتُمۡ عِبَادِیۡ ہٰۤؤُلَآءِ اَمۡ ہُمۡ ضَلُّوا السَّبِیۡلَ ﴿ؕ۱۷﴾
যেদিন তিনি অংশীবাদীদেরকে একত্রিত করবেন এবং ওরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করত তাদেরকেও, সেদিন তিনি তাদের উপাস্যগুলিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তোমরাই কি আমার বান্দাগণকে বিভ্রান্ত করেছিলে, না ওরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?’
২৫:১৮
قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ مَا کَانَ یَنۡۢبَغِیۡ لَنَاۤ اَنۡ نَّتَّخِذَ مِنۡ دُوۡنِکَ مِنۡ اَوۡلِیَآءَ وَ لٰکِنۡ مَّتَّعۡتَہُمۡ وَ اٰبَآءَہُمۡ حَتّٰی نَسُوا الذِّکۡرَ ۚ وَ کَانُوۡا قَوۡمًۢا بُوۡرًا ﴿۱۸﴾
তারা বলবে, “পাক-পবিত্র আপনার সত্তা! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ-দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমনকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে।
২৫:১৯
فَقَدۡ کَذَّبُوۡکُمۡ بِمَا تَقُوۡلُوۡنَ ۙ فَمَا تَسۡتَطِیۡعُوۡنَ صَرۡفًا وَّ لَا نَصۡرًا ۚ وَ مَنۡ یَّظۡلِمۡ مِّنۡکُمۡ نُذِقۡہُ عَذَابًا کَبِیۡرًا ﴿۱۹﴾
এভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো, তারপর না তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে, না পারবে কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো।
২৫:২০
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَکَ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّاۤ اِنَّہُمۡ لَیَاۡکُلُوۡنَ الطَّعَامَ وَ یَمۡشُوۡنَ فِی الۡاَسۡوَاقِ ؕ وَ جَعَلۡنَا بَعۡضَکُمۡ لِبَعۡضٍ فِتۡنَۃً ؕ اَتَصۡبِرُوۡنَ ۚ وَ کَانَ رَبُّکَ بَصِیۡرًا ﴿٪۲۰﴾
তোমার পূর্বে আমি যে সব রসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই তো আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত। আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার প্রতিপালক সমস্ত কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই নবীদের সাথে রয়েছেন : যখন আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার প্রয়ােজনটি বুঝলেন, তার সতর্কতা ও দাওয়াতী কাজকে অগ্রসর করার একান্ত কামনা জানতে পারলেন তখন মেহেরবান মালিক তার দোয়া কবুল করলেন এবং সেই বিষয়ে তাকে নিশ্চিন্ত করলেন যে বিষয়ে তিনি আশংকা করছিলেন। এখানে তার দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারটিকে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে এবং হারুনের কাছে রেসালাত পাঠানাের ব্যাপারটিকেও অত্যন্ত অল্প কথায় পেশ করা হয়েছে। এরপর দেখা যায় মূসা(আ.)-এর মিসরে ফিরে যাওয়া এবং হারুনের সাথে তার সাক্ষাতের বিষয়টিকেও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; তারপর দেখা যাচ্ছে, মূসা ও হারুন(আ.) এমন যৌথভাবে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করছেন যে আল্লাহ রব্বুল আলামীন মূসা(আ.)-এর ওপর পুরােপুরি সন্তুষ্ট তা বুঝা যাচ্ছে। তারপর আল্লাহ তায়ালা কাল্লা শব্দটি ব্যবহার করে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে জানাচ্ছেন যে, না কিছুতেই তার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। দেখুন, আল্লাহর বাণী, ‘তিনি বললেন, না, অবশ্যই কেউ (তােমাদের ক্ষতি করতে); পারবে না, আমি বলছি, তােমরা দুজনে আমার নিদর্শন (মােজেযা)-গুলােসহ এগিয়ে যাও, আমি আছি তােমাদের সাথে কে কি (বলছে সবই) আমি শুনছি, তােমরা ফেরাউনের কাছে যাও, গিয়ে বল, আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের (কাছ থেকে) প্রেরিত রসূল (হিসাবে এসেছি। যাতে করে তুমি বনী ইসরাঈল জাতিকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিতে পারাে।’ অর্থাৎ অবশ্যই তােমাদের কেউ কোনাে ক্ষতি করতে পারবে না, সুতরাং কিছুতেই তােমার বুককে কোনাে বিপদ আপদ সংকীর্ণ করে দিতে পারবে না এবং তােমার জিহ্বা কোনাে কিছুই আড়ষ্ট করতে পারবে না, আর তোমাকে কেউ হত্যাও করতে পারবে না। সুতরাং তােমার মনমগজ থেকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এসব কথাকে দূর করে দাও এবং তুমি ও তােমার ভাই এগিয়ে যাও। তােমরা দু’জনে আমার নিদর্শনগুলাে নিয়ে যাও। ইতিমধ্যে মূসা(আ.) লাঠি ও তার শুভ্র ঝলমলে হাতের মােজেযা দেখে নিয়েছিলেন, এ দুটো মােজেযা সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে এখানে কিছু কথা এসেছে, কারণ এখানে আলােচ্য প্রসংগের প্রধান কথা হচ্ছে ফেরাউনের সাথে সাক্ষাত ও মুখােমুখি আলােচনা, যাদুকরদের হাযির করার প্রসংগ এবং লয়লস্কর সহ ফেরাউনের ডুবে মরা ও মূসা(আ.) সহ বনী ইসরাঈলদের পরিত্রান লাভ । দেখুন বলা হচ্ছে, ‘তােমরা দুজনে এগিয়ে যাও আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি সব কিছু শুনছি।’
*মুশরিক ও তাদের শরীকরা কিভাবে একে অপরকে অভিযুক্ত করবে : এরপর সে মিথ্যাবাদী ও হঠকারী নাদানরা কেয়ামত সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে তাদের যে অবিশ্বাস প্রকাশ করছে, তার দৃশ্যসমূহের মধ্য থেকে মােশরেকদের শাস্তির দৃশ্যটি তুলে ধরে আল কোরআন চুড়ান্তভাবে তাদেরকে সতর্ক করছে, স্পষ্টভাবে তাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তাদেরকে তাদের কল্পিত মাবুদদের সাথে একত্রিত করে সেদিন দোযখে হাযির করা হবে। সেখানে বান্দা ও তাদের কল্পিত মাবুদরা একত্রে থাকবে ও শাস্তি ভােগ করবে। তারা পরস্পরকে তাদের পরিণতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে থাকবে। দেখুন তাদের কথার উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরা হয়েছে, ‘যেদিন, তাদের এবং সে সব ব্যক্তি বা বস্তুদেরকে একত্রিত করা হবে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের আনুগত্য দাসত্ব করতাে, তাদের সবাইকে একত্রিত করা হবে….. আর যে তােমাদের মধ্য থেকে যুলুম করবে, তাকে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ বিরাট আযাবের স্বাদ গ্রহণ করাবাে…'(আয়াত ১৭-১৯) আল্লাহকে বাদ দিয়ে ওরা দাসত্ব আনুগত্য করে তারা বলতে কখনাে বুঝানোে হয়েছে ইট-পাথরের নির্মিত মূর্তিকে আবার কখনাে জিন ও ফেরেশতাদেরকে বুঝানাে হয়েছে। তাদেরকেও বুঝানাে হয়েছে যাদেরকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করে তারা নিরংকুশ অনুগত্য দিতে এবং তাদের রচিত আইন কানুন দিয়ে জীবন ও সমাজ পরিচালনা করতাে। কিন্তু আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যেখানে তাদের সবাইকে একত্রিত করা হবে, সেখানে তাদের অপরাধ সম্পর্কে ঘােষণা দেয়া হবে এবং তাদের ওপর উপর্যুপরি তিরস্কারবাণ নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। ভয়ানক আযাব দানের সাথে সাথে এ তিরস্কারও চলতে থাকবে। আল্লাহর যেসব নেক বান্দাদেরকে তাদের মৃত্যু পর তারা মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে বলা হবে তারা একমাত্র মহাশক্তিমান আল্লাহরই এবাদাত করেছে এবং কখনাে তারা কাউকে তাদের পূজা অর্চনা করতে বলেনি। আর যেসব নেতা নেতৃরা সাধারণ মানুষকে আল্লাহ তায়ালা ও তার রসূলের পথ থেকে সরিয়ে নিজেদের বানানাে মতবাদ মানতে প্ররােচিত করেছে তারা বলবে, নবী(স.) মিথ্যা কথা বলছেন কিংবা নিজের কথাকে আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন কখনাে তারা এমন কথা বলেনি কাউকে বলতে শেখায়নি। তাছাড়া তাদের বানানাে আইন কানুন বা মতবাদ কখনাে তাদেরকে তারা বলেনি। এমনকি সেদিন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারও এবাদাত করার কথাও তারা অস্বীকার করবে; মানবরচিত মতবাদের ধারক বাহকরা সেদিন সে মূৰ্খ নাদানদের প্রতি ঘৃণায় নাক কুঞ্চন করবে। ওরা বলবে, ‘পবিত্র তুমি হে মালিক, তােমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে আমরা বন্ধু বা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবো এ প্রশ্নই আসে না। আমাদের কল্পনাতেও কখনাে একথা জাগেনি, বরং তাদেরকে ও তাদের বাপ-দাদাদের তুমি যেসব নেয়ামত দানে ভূষিত করেছিলে, এগুলাে পেয়ে তারাই তােমাকে ভুলে গেছে এবং এইভাবে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।'(আয়াত ১৮) অতপর, দেখুন তাদেরকে এসব নেয়ামত কে দিয়েছে। তাদের জ্ঞান বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, স্মরণ শক্তি, শারীরিক সুস্থতা, অর্জিত ধন সম্পদ এবং সে সব সম্পদ সম্পত্তি যা তারা মৌরুসি সূত্রে পেয়েছে, তারা জানেনা কোত্থেকে এগুলাে এলাে, কেমন করে তারা পেলাে। হায়, মূর্খের দল, এসব কিছুর জন্যে শোকরগােযারি না করে এবং যিনি এসব কিছুর মালিক, বড়াে মেহেরবানী করে তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের পরিবর্তে এই নাফরমানী। এই না-শােকরীর কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে তাদের কর্তব্য ভুলিয়ে দিয়েছেন, ভুলিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে তাদের মালিককে স্মরণ করার কথা। এভাবে তাদের অন্তর তাদেরকে হতাশাপূর্ণ অবস্থায়, অভাব অভিযােগ ও ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। যেমন শুষ্ক মরুভূমিতে কোনাে সজীবতা থাকে না, কোনাে ফসল ও ফলমূল হয় না। সেখানে যারা যায়, ধ্বংস, মৃত্যু ও হতাশার চিহ্নসমূহ দেখতে পায়। এখানে যে শব্দগুলাে ব্যবহৃত হয়েছে তাতে বুঝা যায়, অজন্মা ও সর্বাত্মক অভাব- এ অভাব অন্তরের, এ অভাব জীবনের সব কিছুর ব্যাপারে। এই পর্যায়ে এসে সে মূর্খ, অপমানিত ও হতভাগা জনগােষ্ঠীকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, (যাদেরকে খুশী করার জন্যে তােমরা তাদের দাসত্ব আনুগত্য করেছ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের সাহায্য কামনা করেছ) ‘তােমাদেরকে এবং তোমাদের সেসব কথাকে যা তােমরা জীবন ভর বলতে থেকেছ, তারা আজ প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব আজ সেকথাগুলােকে তােমরা বদলে দিতে পারবে না এবং আজ তােমরা কারাে সাহায্য পাবে না।’ অর্থাৎ ওই সব কথা ও আচরণের দরুণ তােমাদের ওপর আজ যে আযাব নাযিল হওয়া অবধারিত হয়ে গেছে তা কিছুতেই তােমরা ফিরাতে পারবে না এবং কারাে কাছ থেকে কোনাে প্রকার সাহায্যও তােমরা আজ লাভ করতে পারবে না। আমরা হাশরের দিনে আখেরাতের সেই চিরন্তন যিন্দেগীর দৃশ্যটি কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি। আমরা নিজেরাই যেন সেই ময়দানে হাযির। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে মিথ্যাবাদী ও সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারী গােষ্ঠীকে অকস্মাৎ লক্ষ্য করে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হচ্ছে, কারণ এখনাে তারা পৃথিবীর বুকে আছে (এবং সংশােধনের এখনও কিছু সময় বাকি আছে), ‘আর তােমাদের মধ্যে যে যুলুম করবে (সীমার বাইরে কাজ ও আচরণ করবে), আমি তাকে মহা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবে।’ এ হচ্ছে কোরআনের মমস্পর্শী বর্ণনা ভংগি। এই বর্ণাভংগির কল্যাণেই কোরআন এতাে হৃদয়গ্রাহী হয় এবং মন মগজ কোরআনকে গ্রহণ করার যােগ্যতা অর্জন করে। সেই সাথে উল্লেখিত ভয়াবহ দৃশ্য দ্বারাও তা প্রভাবিত হয়। অবশেষে রসূল(স.)-কে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা, তার বিরুদ্ধে অপবাদ রটানাে, তাঁকে ব্যংগ বিদ্রুপ করা, তিনি ফেরেশতা না হয়ে মানুষ হয়ে কেন এলেন এবং কেন তিনি পানাহার করেন ও বাজারে যান ইত্যাকার প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার শেষ ফল সবাই প্রত্যক্ষ। তিনি নিজেও তা প্রত্যক্ষ করলেন, তার শত্রুরাও করলাে। এরপর কোরআন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ও সমবেদনা জানিয়ে বলছে যে, ‘তুমি কোনাে নতুন রসূল নও। ইতিপূর্বে যত নবী ও রসূল এসেছেন, তারা সবাই তােমার মতােই পানাহারও করতাে, হাট বাজারেও যেতাে।’ ‘আমি তােমার পূর্বে যতাে রসূলই পাঠিয়েছি। তারা সবাই পানাহারও করতাে এবং হাট বাজারেও যেতাে। আমি তােমাদের একজনকে অপরজনের জন্যে পরীক্ষাম্বরূপ বানিয়েছি। তােমরা কি ধৈর্যধারণ করবে? তােমার প্রতিপালক সব কিছুই দেখতে পান।’ অর্থাৎ তােমার এসব কার্যকলাপে যদি আপত্তি তােলা হয়ে থাকে তবে সেটা ব্যক্তিগভাবে শুধু তােমার বিরুদ্ধে নয়, বরং আল্লাহর একটা শাশ্বত রীতির বিরুদ্ধে তােলা হয়েছে। সেই রীতিটার উদ্দেশ্য হলাে, ‘আমি তােমাদের একজনকে অপরজনের জন্যে পরীক্ষাস্বরূপ বানিয়েছি।’ ফলে যে ব্যক্তি আল্লাহর মহৎ ও নিগুঢ় উদ্দেশ্য এবং তার কার্যকলাপের যৌক্তিকতা বুঝতে পারে না, সে আপত্তি তুলবেই। এই আপত্তিতে ধৈর্য হারালে চলবে না। যারা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তার কোনাে কাজই অযৌক্তিক নয় বলে বিশ্বাস করে এবং তার সাহায্য একদিন আসবেই বলে আস্থা রাখে, তাদের ধৈর্যধারণ করে যেতে হবে, আর দাওয়াতের কাজ মানবীয় পদ্ধতি অনুসারে এবং মানবীয় উপায়-উপকরণের সাহায্যে চালিয়ে যেতে হবে। এই কঠিন পরীক্ষায় তাদেরকে দৃঢ়তা ও অটুট মনােবল প্রদর্শন করতে হবে। ‘তােমরা কি ধৈর্যধারণ করবে। তােমার প্রভু সব কিছু দেখতে পান।’ অর্থাৎ মানুষের মনমানসিকতা, মেযাজ স্বভাব ও পরিণতি সবই জানেন। তােমার প্রভু এই সম্বদ্ধ পদটা দ্বারা বিশেষভাবে রসূলের প্রতি আল্লাহর মমত্ব ও সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন
বলেছেন:-
# সামনের দিকের আলোচনা স্বতই প্রকাশ করছে যে, এখানে উপাস্য বলতে মূর্তি নয় বরং ফেরেশতা, নবী, রসূল, শহীদ ও সৎলোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। বিভিন্ন জাতির মুশরিক সম্প্রদায় তাদেরকে উপাস্যে পরিণত করে রেখেছে। আপতদৃষ্টিতে এক ব্যক্তি وَمَا يَعْبُدُونَ শব্দাবলী পড়ে এর অর্থ মূর্তি বলে মনে করে। কেননা, আরবী ভাষায় সাধারণত ما শব্দটি নিষ্প্রাণ ও নির্বোধ জীবের জন্য এবং من শব্দটি বুদ্ধিমান জীবের জন্য বলা হয়ে থাকে। আমরা যেমন অনেক সময় কোন মানুষ সম্পর্কে তাচ্ছিল্যভরে বলি “সে কি” এবং এ থেকে এ অর্থ গ্রহণ করি যে, তার কোন সামান্যতমও মর্যাদা নেই, সে কোন বিরাট বড় ব্যক্তিত্ব নয়। ঠিক আরবী ভাষাতেও তেমনি বলা হয়ে থাকে। যেহেতু আল্লাহর মোকাবিলায় তাঁর সৃষ্টিকে উপাস্যে পরিণত করার ব্যাপার এখানে বক্তব্য আসছে তাই ফেরেশতাদের ও বড় বড় মনীষীদের মর্যাদা যতই উচ্চতর হোক না কেন আল্লাহর মোকাবিলায় তা যেন কিছুই নয়। এজন্যই পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এখানে من এর পরিবর্তে ما শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
# কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়বস্তুটি এসেছে। যেমন সূরা সাবার ৪০-৪১ আয়াতে বলা হয়েছেঃ وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ – قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ “যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন তারপর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই বন্দেগী করতো? তারা বলবেঃ পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, আমাদের সম্পর্ক তো আপনার সাথে, এদের সাথে নয়। এরা তো জিনদের (অর্থাৎ শয়তান) ইবাদাত করতো। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতিই ঈমান এনেছিল।” অনুরূপভাবে সূরা মায়েদার শেষ রুকূ’তে বলা হয়েছেঃ وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ………………………………مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ “আর যখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, হে মারয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্যে পরিণত করো? সে বলবে, পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, যে কথা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য কবে শোভন ছিল? …….. আমি তো এদেরকে এমন সব কথা বলেছিলাম যা বলার হুকুম আপনি আমাকে দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহর বন্দেগী করো, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব।” (দেখুন-সূরা আল মায়েদা ১১৬ ও ১১৭ )
# তারা ছিল সংকীর্ণমনা ও নীচ প্রকৃতির লোক। তিনি রিযিক দিয়েছিলেন যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু তারা সবকিছু খেয়েদেয়ে নিমকহারাম হয়ে গেছে এবং তাঁর প্রেরিত নবীগণ তাদেরকে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তা ভুলে গেছে।
# তোমাদের এ ধর্ম যাকে তোমরা সত্য মনে করে বসেছো তা একেবারেই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে এবং তোমাদের যে উপাস্যদের উপর তোমাদের বিপুল আস্থা, তোমরা মনে করো তারা হবে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারী তারাই উল্টো তোমাদের দোষী সাব্যস্ত করে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তোমরা নিজেদের উপাস্যদের যা কিছু গণ্য করেছো তা সব তোমাদের নিজেদেরই কার্যক্রম, তাদের কেউ তোমাদের একথা বলেনি যে, তাদের এভাবে মেনে চলতে হবে এবং তাদের জন্য এভাবে নযরানা দিতে হবে আর তাহলে তারা আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্য সুপারিশ করার দায়িত্ব নেবে। কোন ফেরেশতা বা কোন মনীষীর পক্ষ থেকে এমনি ধরনের কোন উক্তি এখানে তোমাদের কাছে নেই। এ কথা তোমরা কিয়ামতের দিন প্রমাণও করতে পারবে না। বরং তারা সবাই তোমাদের চোখের সামনে এসব কথার প্রতিবাদ করবে এবং তোমরা নিজেদের কানে সেসব প্রতিবাদ শুনবে।
# এখানে জুলুম বলতে সত্য ও ন্যায়ের উপর জুলুম বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুফরী ও শিরক। পূর্বাপর আলোচ্য বিষয় নিজেই একথা প্রকাশ করছে যে, নবীকে অস্বীকারকারী, আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের উপাসনাকারী এবং আখেরাত অস্বীকারকারীদের “জুলুম”কারী গণ্য করা হচ্ছে।
# মক্কার কাফেরদের এ বক্তব্য যে, এ কেমন রসূল যে আহার করে এবং বাজারে চলাফেরা করে, এর জবাবে একথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, মক্কার কাফেররা নূহ (আ), ইবরাহীম (আ), ইসমাঈল (আ), মূসা (আ) এবং অন্যান্য বহু নবী সম্পর্কে কেবল যে জানতো তা নয় বরং তাদের রিসালাতও স্বীকার করতো। তাই বলা হয়েছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে এ অভিনব আপত্তি জানানো হচ্ছে কেন? ইতিপূর্বে এমন কোন নবী এসেছেন যিনি আহার করতেন না ও বাজারে চলাফেরা করতেন না? অন্যদের কথা দূরে থাক, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, যাকে খৃস্টানরা আল্লাহর পুত্রে পরিণত করেছে (এবং যার মূর্তি মক্কার কাফেররাও কাবাগৃহের মধ্যে স্থাপন করেছিল) তিনিও ইনজীলের বর্ণনা অনুযায়ী আহারও করতেন এবং বাজারে চলাফেরাও করতেন।
# অস্বীকারকারীরা রসূল ও মু’মিনদের জন্য পরীক্ষা এবং রসূল ও মু’মিনরা অস্বীকারকারীদের জন্য। অস্বীকারকারীরা জুলুম, নিপীড়ন ও জাহেলী শত্রুতার যে আগুনের কুণ্ড জ্বালিয়ে রেখেছে সেটিই এমন একটি মাধ্যম যা থেকে প্রমাণ হবে রসূল ও তাঁর সাচ্চা ঈমানদার অনুসারীরা খাঁটি সোনা। যার মধ্যে ভেজাল থাকবে সে সেই আগুনের কুণ্ড নিরাপদে অতিক্রম করতে পারবে না। এভাবে নির্ভেজাল ঈমানদারদের একটি ছাঁটাই বাছাই করা গ্রুপ বের হয়ে আসবে। তাদের মোকাবিলায় এরপর দুনিয়ার আর কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারবে না। এ আগুনের কুণ্ড জ্বলতে না থাকলে সব রকমের খাঁটি ও ভেজাল লোক নবীর চারদিকে জমা হতে থাকবে এবং দ্বীনের সূচনাই হবে একটি অপরিপক্ক দল থেকে। অন্যদিকে অস্বীকারকারীদের জন্যও রসূল ও রসূলের সাহাবীগণ হবেন একটি পরীক্ষা। নিজেদেরই বংশ-গোত্রের মধ্য থেকে একজন সাধারণ লোককে হঠাৎ নবী বানিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া, তাঁর অধীনে কোন বিরাট সেনাদল ও ধন-সম্পদ না থাকা, আল্লাহর বাণী ও নির্মল চরিত্র ছাড়া তাঁর কাছে বিস্ময়কর কিছু না থাকা, বেশীরভাগ গরীব-মিসকীন, গোলাম ও নব্য কিশোর যুবাদের তাঁর প্রাথমিক অনুসারী দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর এ মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোককে যেন নেকড়ে ও হায়েনাদের মধ্যে অসহায়ভাবে ছেড়ে দেয়া—এ সবই হচ্ছে এমন একটি ছাঁকনি যা অসৎ ও অনভিপ্রেত লোকদের দ্বীনের দিকে আসতে বাঁধা দেয় এবং কেবলমাত্র এমন সব লোককে ছাঁটাই বাছাই করে সামনের দিকে নিয়ে চলে যারা সত্যকে জানে, চেনে ও মেনে চলে। এ ছাঁকনি যদি না বসানো হতো এবং রসূল বিরাট শান-শওকতের সাথে এসে সিংহাসনে বসে যেতেন, অর্থভাণ্ডারের মুখ তাঁর অনুসারীদের জন্য খুলে দেয়া হতো এবং সবার আগে বড় বড় সরদার ও সমাজপতির অগ্রসর হয়ে তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করতো, তাহলে দুনিয়া পূজারী ও স্বার্থবাদী মানুষদের মধ্যে তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর অনুগত ভক্তের দলে শামিল হতো না এমন নির্বোধ কোন লোক পাওয়া সম্ভব ছিল কি? এ অবস্থায় তো সত্যপ্রিয় লোকেরা সবার পেছনে থেকে যেতো এবং বৈষয়িক স্বার্থ পূজারীরা এগিয়ে যেতো।
# এ কল্যাণকর উপযোগিতাটি উপলব্ধি করার পর এখন কি তোমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারছো? যে কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে তোমরা কাজ করছো তার জন্য পরীক্ষার এ অবস্থার অতীব প্রয়োজন বলে কি তোমরা মরে করছো? এ পরীক্ষার সময় যেসব অবধারিত আঘাত লাগবে সেগুলোর মুখোমুখি হতে কি এখন তোমরা প্রস্তুত?
# এর দু’টি অর্থ এবং সম্ভবত এখানে দু’টিই প্রযোজ্য। এক, তোমাদের রব যা কিছু করছেন দেখে-শুনে করছেন। তাঁর দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে কোন অন্যায়, বেইনসাফী ও গাফলতি নেই। দুই, যে ধরনের আন্তরিকতা ও সত্যনিষ্ঠা নিয়ে তোমরা এ কঠিন কাজটি করছো তাও তোমাদের রবের চোখের সামনে আছে এবং যে ধরনের জুলুম, নির্যাতন ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তোমাদের কল্যাণ প্রচেষ্টার মোকাবিলা করা হচ্ছে তাও তাঁর অগোচরে নেই। কাজেই তোমাদের নিজেদের কাজের মর্যাদালাভ থেকে তোমরা বঞ্চিত হবে না এবং নিজেদের জুলুম ও বাড়াবাড়ির বিপদ থেকেও নিস্কৃতি পাবে না, এ ব্যাপারে তোমরা পূর্ণ নিশ্চিত থাকো।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে উপাসনা করত যেমনন ফেরেশতা, মানুষ, জিন, ঈসা, উযাইর ইত্যাদি মা‘বূদ ও যারা তাদের ইবাদত করত তাদেরকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: ‘তোমরা কি আমার এ বান্দাদেরকে তোমাদের ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছিলে, না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?’ সকল মা‘বূদ অস্বীকার করে বলবে: আপনাকে শরীক থেকে পবিত্র বর্ণনা করছি: আপনার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব! আপনিই তো এদেরকে এবং এদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলেন; পরিণামে তারা উপদেশ ভুলে গিয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে। যেমন ফেরেশতাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ يَقُوْلُ لِلْمَلَا۬ئِكَةِ أَهٰٓؤُلَا۬ءِ إِيَّاكُمْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ – قَالُوْا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُوْنِهِمْ ج بَلْ كَانُوْا يَعْبُدُوْنَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُّؤْمِنُوْنَ)
“যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন: এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে: আপনি পবিত্র, মহান! আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা পূজো করত জিনদের এবং তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী।” (সূরা সাবা ৩৪:৪০-৪১)
ঈসা (عليه السلام)-এর ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ قَالَ اللّٰهُ يَا عِيْسَي ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَأُمِّيَ إِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ ط قَالَ سُبْحٰنَكَ مَا يَكُوْنُ لِيْٓ أَنْ أَقُوْلَ مَا لَيْسَ لِيْ بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُه۫ فَقَدْ عَلِمْتَه۫ ط تَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِيْ وَلَآ أَعْلَمُ مَا فِيْ نَفْسِكَ ط إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ)
“আর (স্মরণ কর) আল্লাহ তা‘আলা যখন বললেন: ‘হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দু’ মা‘বূদরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে, ‘তোমার প্রবিত্রতা বর্ণনা করছি! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই; তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’’ (সূরা মায়িদাহ ৫:১১৬)
সুতরাং এ সকল মূর্খলোকেরা যাদেরই ইবাদত করত তারা প্রত্যেকেই তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَه۫ٓ إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَا۬ئِهِمْ غٰفِلُوْنَ - وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ أَعْدَا۬ءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كٰفِرِيْنَ)
“সে ব্যক্তির চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও সাড়া দেবে না। বরং তারা তাদের আহ্বান সম্পর্কে গাফেল। (হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন যারা তাদেরকে ডাকত তারা তাদের দুশমন হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (সূরা আহক্বাফ ৪৬:৫-৬) সুতরাং তারা সেখানে কোন সাহায্যকারী পাবে না এবং শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না। বরং তাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদান করানো হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ج فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظّٰلِمِيْنَ)
‘এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকেও ডেকো না, যারা তোমার কোন উপকার করে না, অপকারও করতে পারবে না; যদি তুমি এরূপ কর তাহলে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা ইউনুস ১০:১০৬)
অতএব উক্ত আলোচনা থেকে একথাই বুঝায় যে, দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে যাদেরই ইবাদত করা হোক না কেন তারা আখিরাতে তা অস্বীকার করবে। তাই আমাদের উচিত সকল বাতিল মা‘বূদদেরকে ছেড়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা।
২০ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা মূলত অত্র সূরার ৭ নং আয়াতে রাসূলের ব্যাপারে খাদ্যগ্রহণ করা, বাজারে যাওয়ার ওযর-আপত্তির জবাব উল্লেখ করেছেন যে, শুধু এ রাসূলই নয় বরং প্রত্যেক রাসূলই এরূপ করেছে। সুতরাং এটা কোন অবাস্তব বিষয় নয়।
আর এ কারণে যদি কেউ নবুওয়াত অস্বীকার করে তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বড় মূর্খতা।
(وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةً)
আল্লাহ তা‘আলা বলেনন আমি একজনকে অপরের জন্য করেছি পরীক্ষাস্বরূপ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَكَذٰلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِّيَقُوْلُوْآ أَهٰٓؤُلَا۬ءِ مَنَّ اللّٰهُ عَلَيْهِمْ مِّنْۭ بَيْنِنَا)
“আমি এভাবে তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি যেন তারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি এদের প্রতিই আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করলেন? আল্লাহ তা‘আলা কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন?” (আনআম ৬:৫৩)
ইমাম কুরতুবী এখানে فِتْنَةً শব্দের তাফসীর করেছেন যে, এর অর্থ হল: প্রত্যেক মানুষ তার সঙ্গী-সাথী দ্বারা পরীক্ষিত যেমন একজন গরীব লোক ধনী ব্যক্তির মাধ্যমে পরীক্ষিত। গরীব ব্যক্তি ধনী ব্যক্তির সম্পদ দেখে হিংসা করতে পারবে না এবং তাকে যা দিবে তা ব্যতীত কোন কিছু গ্রহণও করতে পারবে না। অনুরূপভাবে ধনী লোক গরীব লোকের মাধ্যমে পরীক্ষিত, সে তাকে ধমক দিবে না, ভর্ৎসনা করবে না এবং তাঁর প্রতি স্নেহপরায়ণ হবে। আর প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে ধৈর্যশীল হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যাদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে ইবাদত করা হয়েছে কিয়ামতের দিন সে সব মা‘বূদ তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে।
২. কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্রিত করা হবে এবং তাদের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে।
৩. মুশরিকদের জন্য কিয়ামতের দিন কোন সাহায্যকারী থাকবে না এবং কেউ জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিতে পারবে না।
৪. সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
৫. একজন মানুষ অন্য মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৭-১৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে, মুশরিকরা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য যেসব মা’রূদের ইবাদত করতো, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের সামনে শাস্তি প্রদান ছাড়াও মৌখিকভাবেও তিরস্কার করা হবে, যাতে তারা লজ্জিত হয়। হযরত ঈসা (আঃ), হযরত উযায়ের (আঃ) এবং ফেরেশতামণ্ডলী, যাদের যাদের উপাসনা করা হতো তারা সবাই সেদিন বিদ্যমান থাকবেন এবং সমাবেশে ইবাদতকারীরাও হাযির থাকবে। ঐ সময় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা ঐ উপাস্যদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ “তোমরা কি আমার এই বান্দাদেরকে তোমাদের উপাসনা করতে বলেছিলে, না তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই তোমাদের ইবাদত করতে শুরু করে দিয়েছিল?” হযরত ঈসা (আঃ)-কেও অনুরূপ প্রশ্ন করা হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে- তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে মা’বূদ রূপে গ্রহণ কর? সে বলবেঃ আপনিই মহিমান্বিত! যা বলার আমার অধিকার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরের কথা তো আপনি অবগত আছেন, কিন্তু আপনার অন্তরের কথা আমি অবগত নই; আপনি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। আপনি আমাকে যে আদেশ করেছেন তা ব্যতীত তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি। (শেষ পর্যন্ত)।”
দ্রুপ এসব উপাস্য যাঁদের মুশরিকরা আল্লাহ ব্যতীত উপাসনা করতো এবং ভরা আল্লাহর খাঁটি বান্দা ও শিরকের প্রতি অসন্তুষ্ট, উত্তরে বলবেনঃ “কোন মাখলুকের, আমাদের ও তাদের জন্যে এটা শোভনীয় ছিল না যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কখনো তাদেরকে শিরকের শিক্ষা দিইনি। তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই অন্যদের পূজা শুরু করে দিয়েছিল। আমরা তাদের থেকে এবং তাদের উপাসনা থেকে অসন্তুষ্ট। আমরা তাদের ঐ শিরক থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। আমরা তো নিজেরাই আপনার উপাসনাকারী। সুতরাং আমাদের পক্ষে উপাস্যের পদে অধিষ্ঠিত হওয়া কী করে সম্ভব? আমরা তো মোটেই এর যোগ্যতা রাখতাম না। আপনার সত্তা এর থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র যে, কেউ আপনার অংশীদার হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেন (আরবি)
অর্থাৎ “যেদিন তিনি তাদের সকলকে একত্রিত করবেন, অতঃপর ফেরেশতাদেরকে বলবেন- এরা কি তোমাদেরই উপাসনা করতো? তারা বলবেআমরা আপনার মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি।” (৩৪:৪০-৪১)
(আরবি) এর দ্বিতীয় পঠন (আরবি) ও রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের জন্যে এটা উপযুক্ত ছিল না যে, লোকেরা আমাদের উপাসনা করতে শুরু করে দেয় এবং আপনার ইবাদত পরিত্যাগ করে। কেননা, আমরা তো আপনার দ্বারের ভিখারী। দুই অবস্থাতেই ভাবার্থ কাছাকাছি একই।
তাদের বিভ্রান্তির কারণ আমরা এটাই বুঝি যে, তারা বয়স পেয়েছিল, তারা পানাহারের বস্তু যথেষ্ট পরিমাণে লাভ করেছিল, কাজেই তারা ভোগ-বিলাসে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এমনকি রাসূলদের মাধ্যমে যে উপদেশাবলী তাদের নিকট পৌঁছেছিল সেগুলোও তারা ভুলে বসেছিল। তারা আপনার উপাসনা ও তাওহীদ হতে সরে পড়েছিল। তারা এসব হতে ছিল সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। তাই তারা ধ্বংসের গর্তে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তাদের সর্বনাশ ঘটে। (আরবি) শব্দ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্তই বুঝানো হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ঐ মুশরিকদেরকে বলবেনঃ এখন তোমাদের উপাস্যরা তো তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। তোমরা তো তাদেরকে নিজের মনে করে এই বিশ্বাস রেখে তাদের উপাসনা শুরু করে দিয়েছিলে যে, তাদের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। কিন্তু আজ তো তারা তোমাদেরকে ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তোমাদের থেকে পৃথক হচ্ছে এবং তোমাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে যে আল্লাহ ব্যতীত এমন মা’রূদকে আহবান করে যে কিয়ামতের দিন তার আহ্বানে সাড়া দেবে না? আর তারা তাদের আহ্বান হতে উদাসীন থাকবে। যখন মানুষকে একত্রিত করা হবে। তখন তারা (উপাস্যরা) তাদের (উপাস্যদের) শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের উপাসনাকে পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করবে।” (৪৬: ৫-৬) সুতরাং কিয়ামতের দিন এই মুশরিকরা না নিজেদের থেকে আল্লাহর শাস্তি দূর করতে পারবে, না নিজেদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে, না কাউকেও নিজেদের সাহাযাকারীরূপে প্রাপ্ত হবে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে সীমালংঘন করবে আমি তাকে মহাশাস্তি আস্বাদন করাবো।
# আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ কাফিররা যে এ অভিযোগ উত্থাপন করে যে, নবী-রাসূলদের পানাহার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কি প্রয়োজন? তাদের একথার জবাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ পূর্ববর্তী সব নবীই মনুষ্যজনিত প্রয়োজন রাখতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জীবিকা উপার্জন ইত্যাদি সবকিছুই করতেন। এগুলো নবুওয়াতের পরিপন্থী নয়। হ্যাঁ তবে মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর বিশেষ সাহায্য দ্বারা তাঁদেরকে ঐ পবিত্র গুণাবলী, উত্তম চরিত্র, ভাল কথা, পছন্দনীয় কাজ, প্রকাশ্য দলীল এবং উন্নতমানের মুজিযা দান করেন যেগুলো দেখে প্রত্যেক জ্ঞানী ও চক্ষুষ্মন ব্যক্তি তাঁদের নবুওয়াত ও সত্যবাদিতাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ আয়াতের অনুরূপ আয়াত আরো রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যত নবী পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই শহরবাসী মানুষই ছিল।” (১২:১০৯) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট বানাইনি যে, তারা খাদ্য খাবে না।” (২১:৮)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে মানুষ! আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্যে পরীক্ষা স্বরূপ করেছি যাতে অনুগত ও অবাধ্যের পার্থক্য প্রকাশিত হয় এবং ধৈর্যশীল ও অধৈর্যের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তোমার প্রতিপালক সবকিছুই দেখেন এবং সবকিছু জানেন। নবুওয়াত প্রাপ্তির যোগ্য কে তা তিনি ভালরূপেই জানেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “রিসালাত প্রাপ্তির যোগ্য ব্যক্তি কে তা আল্লাহই খুব ভাল জানেন।” (৬: ১২৪) হিদায়াতের হকদার কে সেটাও তাঁরই জানা আছে। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা হলো বান্দাদের পরীক্ষা গ্রহণ করা। এই জন্যেই নবীদেরকে তিনি সাধারণ অবস্থায় রাখেন। অন্যথায় যদি তাদেরকে তিনি দুনিয়ার প্রাচুর্য দান করতেন তবে ধন-মালের লোভে বহু লোক তাঁর অনুগামী হয়ে যেতো, ফলে তখন সত্য ও মিথ্যা এবং খাঁটি ও নকল মিশ্রিত হয়ে যেতো।
সহীহ মুসলিমে হযরত আইয়াম ইবনে হাম্মাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি স্বয়ং তোমাকে এবং তোমার কারণে অন্যান্য লোকদেরকে পরীক্ষাকারী।”
মুসনাদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি চাইলে আল্লাহ তা’আলা আমার সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্যের পর্বত চালাতেন।”
সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ)-কে রাসূল ও বাদশাহ হওয়ার অথবা রাসূল ও বান্দা হওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি রাসূল ও বান্দা হওয়াই পছন্দ করেন।