(বই#৯৮৯) [وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে,:-] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৮৯)
[وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ
যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে,:-]
www.motaher21.net
সূরা:- আল্ ফুরকান।
সুরা:২৫
পারা:১৯
২১-২৪ নং আয়াত:-
২৫:২১
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا الۡمَلٰٓئِکَۃُ اَوۡ نَرٰی رَبَّنَا ؕ لَقَدِ اسۡتَکۡبَرُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ وَ عَتَوۡ عُتُوًّا کَبِیۡرًا ﴿۲۱﴾
যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন? বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়।
২৫:২২
یَوۡمَ یَرَوۡنَ الۡمَلٰٓئِکَۃَ لَا بُشۡرٰی یَوۡمَئِذٍ لِّلۡمُجۡرِمِیۡنَ وَ یَقُوۡلُوۡنَ حِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا ﴿۲۲﴾
যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না। চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ! বাচাও, বাচাও”
২৫:২৩
وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰہُ ہَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا ﴿۲۳﴾
আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব।
২৫:২৪
اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ یَوۡمَئِذٍ خَیۡرٌ مُّسۡتَقَرًّا وَّ اَحۡسَنُ مَقِیۡلًا ﴿۲۴﴾
সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম।

তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

এ অধ্যায়টার সূচনা এবং প্রথম অধ্যায়টার সূচনা হয়েছে একইভাবে। উভয় ক্ষেত্রেই মােশরেকদের আপত্তি, অভিযােগ ও বাড়াবাড়ির জবাব দিয়ে রসূল(স.)-কে প্রবােধ ও সান্তনা দেয়া হয়েছে। পার্থক্য শুধু এই যে, এখানে মােশরেকদের বাড়াবাড়ির জন্যে আখেরাতে যে শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে, কেয়ামতের ধারাবাহিক দৃশ্যাবলী তুলে ধরতে গিয়ে সেই শাস্তির উল্লেখ অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে করা হয়েছে। আসলে এটা করা হয়েছে মোশরেকদের এই প্রশ্নের জবাবে যে, ‘আমাদের কাছে ফেরেশতা আনা হলাে না কেন বা আমরা আমাদের প্রভুকে দেখতে পাই না কেন?’ এরপর কিস্তিতে কিস্তিতে কোরআন নাযিল হওয়া সম্পর্কে তাদের আপত্তির বিবরণ দেয়া হয়েছে, কোরআনকে পর্যায়ক্রমে নাযিল করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে, এবং মােশরেকরা যে কোনাে বিতর্কে রসূল(স.)-কে চ্যালেঞ্জ দিলেই আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য করবেন বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে, তারা তােমার কাছে যখনই কোনাে দৃষ্টান্ত পেশ করবে, অমনি আমি তােমার কাছে প্রকৃত সত্য ও উত্তম ব্যাখ্যা তুলে ধরবো।’ এক পর্যায়ে তাকে ও মােশরেকদেরকে পূর্বেকার কাফের ও মােশরেকদের ধবংসের কাহিনী শােনানাে হয়েছে। বিশেষত হযরত লূত(আ.)-এর জাতির ধ্বংসের ইতিহাসের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কেননা তাদের এলাকা দিয়ে আরবের মােশরেকরা প্রতিনিয়ত চলাফেরা করে থাকে। তা সত্তেও সেই ধ্বংসের চিহ্নগুলাে তাদের বিবেককে কিছুমাত্র আলােড়িত না করায় তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এ সবই মূলত রসূল(স.)-এর প্রতি তাদের ব্যাংগ বিদ্রুপ ও ধৃষ্টতাপূর্ণ কটুক্তিগুলাে উল্লেখ করার ভূমিকা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আর এই আলােচনারই শেষ পর্যায়ে তাদের সম্পর্কে নিম্নরূপ কঠোর মন্তব্য করা হয়েছে, তারা পশু ছাড়া আর কিছু নয়, বরং পশুর চেয়েও পথভ্রষ্ট।’   *কাফেরদের ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য ও তার পরিণতি : ‘যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা করে না তারা বলে আমাদের কাছে ফেরেশতা আসে না কেন…'(আয়াত ২১-২৯) মুশরিকরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা করে না। অর্থাৎ সাক্ষাত করতে হবে বলে বিশ্বাস করে না, সে সাক্ষাতকে হিসাবে আনে না এবং তার ভিত্তিতে নিজেদের জীবন ও কর্মকান্ডকে পরিচালিত করে না। এ কারণে তাদের মনে আল্লাহর ভয় থাকে না এবং তারা মুখ দিয়ে এমন সব কথা উচ্চারণ ও এমন সব মনােভাব ব্যক্ত করে, যা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে হবে এ কথা বিশ্বাস করলে কেউ উচ্চারণ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা করে না তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা আসে না কেন? মানুষের রসূল হওয়াকে তারা অসম্ভব মনে করতাে। আর যদি কোনাে মানুষ রসূল হয়ে আসেই, তবে এই রাসূল যে আকীদা ও আদর্শে বিশ্বাস স্থাপনের দাওয়াত দেন, তাতে বিশ্বাস স্থাপনের জন্যে তারা শর্ত আরােপ করে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা এসে সাক্ষ্য দিক যে, রসুলের দাওয়াত সত্য, অথবা স্বয়ং আল্লাহকে দেখবার সুযােগ তাদেরকে দেয়া হােক। তাহলেই তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে, এটা আসলে আল্লাহর মহিমা ও মর্যাদার ওপর তাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশেরই নামান্তর। আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বকে অনুধাবন করে না এবং তার যথােচিত মূল্য দেয় না, এমন অজ্ঞ ও ধৃষ্ট লােকই এ ধরনের ঔদ্ধত্য ও অহংকার প্রকাশ করতে পারে। অহংকার ও ঔদ্ধ্যত্ব একমাত্র অধিকারী তার মহা প্রতাপান্বিত ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা। তারা তাে সেই আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তারই দাসানুদাস। তাঁর মহাসাম্রাজ্য ও বিশাল সৃষ্টিজগতে অতি তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র কণা মাত্র। তাদের কী অধিকার আছে সেই আল্লাহর সামনে অহংকার ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার তাদের একমাত্র করণীয় হলাে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মাধ্যমে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং তার কাছ থেকে যথােপযুক্ত মূল্য ও মর্যাদা লাভ করা। এ কারণেই আয়াতের শেষাংশে তাদের এই ধৃষ্টতার প্রকৃত উৎস ও কারণ চিহ্নিত করে তাদের জবাব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা অহংকারে ও নিদারুণ বিদ্রোহে লিপ্ত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের নিজেদের কাছে নিজেদেরকে খুবই বড় মনে হয়েছে। তাই তারা অহংকার করেছে ও মারাত্মক রকমের বিদ্রোহে লিপ্ত হয়েছে। নিজেদের সম্পর্কে তারা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ ধারণা পােষণ করেছে। ফলে নিজেদের প্রকৃত মূল্য ও মর্যাদা নিরূপণে তারা সক্ষম হচ্ছে না, তারা নিজেদেরকে এ মহাবিশ্বের এতাে বড় সৃষ্টি ভেবেছে যেন তারা স্বয়ং আল্লাহর সাক্ষাত লাভের যােগ্য, যাতে তার প্রতি তারা ঈমান আনতে পারে। এরপর তাদের সাথে ন্যায়সংগতভাবেই বিদ্রুপাত্মক ভংগীতে বলা হয়েছে যে, তারা ফেরেশতাদেরকে একদিন যথার্থই দেখতে পাবে। তবে সে দিন হবে তাদের জন্যে খুবই ভয়ংকর। সেদিন তাদের জন্যে এমন আযাব প্রকৃত থাকবে, যাকে প্রতিহত করা ও যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনাে ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। ওটা হবে হিসাব-নিকাশ ও শান্তির দিন। ‘যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্যে কোন সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবে, আশ্রয় চাই, পানাহ চাই।'(আয়াত ২২) অর্থাৎ যেদিন তাদের ফেরেশতা দেখার আবদার পূরণ করা হবে, সেদিন অপরাধীদেরকে কোনাে সংবাদ দেয়া হবে না, বরঞ্চ শাস্তি দেয়া হবে। সেদিন তারা যে, ‘আশ্রয় চাই, পানাহ চাই বলে ফরিয়াদ জানাবে, তাতে কেউ কর্ণপাতই করবে না। ‘হিজরাম মাহজুরা’ শব্দটার অর্থ আশ্রয় চাই, পানাহ চাই। সাধারণত শত্রুর আক্রমণ ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আরবরা এ কথাটা বলে থাকে। যেহেতু আকস্মিকভাবে শত্রুর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে এ কথাটা বলতে তারা অভ্যন্ত, তাই এ কথাটা কেয়ামতের দিনও তাদের মুখ থেকে আপনা আপনিই বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু তাতে কোনাে লাভ হবে না। এ ফরিয়াদ তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না।(‘হিজরাম মাহজুরান’ শব্দ দুটোর অর্থ অপ্রতিরােধ্য দেয়াল, চুড়ান্ত অঙ্গীকার, চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞাও হতে পারে। এই আয়াতের মূল অনুবাদ অংশ দ্রষ্টব্য-সম্পাদক) ‘আর তাদের করা সকল সৎ কর্মের কাছে আমি আসবো এবং সেগুলােকে বিক্ষিপ্ত ধুলােয় পরিণত করবো।'(আয়াত ২৩) এক নিমেষেই এ সব ঘটনা ঘটে যাবে। মানুষের করা সৎ কর্মগুলাের কাছে আল্লাহ তায়ালা সেদিন কিভাবে আগমন করবেন, তা কল্পনার মানসপটে চিত্রিত করা হয়েছে কোরআনের সুনিপুণ শৈল্পিক ভংগিতে। চিত্রিত করা হয়েছে কিভাবে তিনি মানুষের সংকর্মগুলােকে বাতাসে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। এর ফলে সমস্ত সংকর্ম উড়ন্ত ধুলি কনায় পরিণত হবে। কারণ তা ঈমানের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলাে না। যা কিনা মানুষের মনকে আল্লাহর সাথে সংযুক্ত করে দেয় এবং সৎ কর্মগুলােকে উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন, ও সাময়িক আবেগ তাড়িত কাজের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিশিষ্ট কাজে পরিণত করে। বস্তুত উদ্দেশ্যহীন ও লক্ষ্যহীন কাজের কোনাে মূল্য থাকতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের অস্তিত্ব, জীবন ও কর্ম সবই মূলত এই মহা বিশ্বের স্রষ্টার ইচ্ছা ও আজ্ঞার অধীন এবং যে নিয়ম কানুনের অধীনে মহাবিশ্ব পরিচালিত হয়, তার আওতাধীন। এই নিয়ম-কানুনগুলাে সবই আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক রচিত ও বাস্তবায়িত । স্বয়ং মানুষ এবং তার কার্যকলাপও এর আওতাধীন। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহর প্রতি কুফরী তথা তার হুকুমের অবাধ্যতা দ্বারা আল্লাহর এই বিশাল সম্রাজ্য ও তাঁর আইন কানুন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন সে একটা মূল্যহীন ও গুরুত্বহীন বাজে জিনিসে পরিণত হয় এবং তার সৎ কাজের কোনােই কার্যকারিতা ও গ্ৰহণযোগ্যতা থাকে না, এমনকি তার কর্মকান্ডের অস্তিত্বই থাকে না। একমাত্র ঈমানই মানুষকে তার প্রতিপালকের সাথে সম্পৃক্ত করে। আর এই সম্পর্কই তার কাজের গুরুত্ব ও গ্রহণযােগ্যতা সৃষ্টি করে এবং এই সৃষ্টি জগতে তার অবস্থান নিশ্চিত করে। এভাবেই মােশরেকদের্ত যাবতীয় সৎ কাজ নিস্ফল প্রতিপন্ন হয়। এই নিস্ফল হওয়ার ব্যাপারটাকে কোরআন এভাবে চিত্রিত করেছে, ‘আমি তাদের করা সৎ কাজগুলাের কাছে আসবো এবং সেগুলােকে বিক্ষিপ্ত ধুলােয় পরিণত করবে'(আয়াত ২৩) এরপর তাদের প্রতিপক্ষ জান্নাতবাসী মােমেনদের অবস্থার বিবরণ দেয়া হয়েছে, যাতে দৃশ্যটা পূর্ণাংগ হয়। ‘সেদিন জান্নাতবাসীর বাসস্থান হবে সর্বোত্তম স্থীতিশীল এবং তাদের বিশ্রামাগার হবে উৎকৃষ্টতম।'(আয়াত ২৪) তারা তাে ছায়াশীতল স্থায়ী বাসস্থানে পরম সুখে অবস্থান করবে। বাসস্থানের এই স্থীতি ও স্থায়িত্ব বিক্ষিপ্ত ধুলাের অস্থিতিশীলতার ঠিক বিপরীত। আর এ আয়াতে তাদের যে তৃপ্তিময় ও সুখময় বসবাসের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, তা জাহান্নামবাসীর দুর্দশা ও অস্থিরতার ঠিক বিপরীত।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

২১-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে মিথ্যা মনে করে, যাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির কোন ভয় নেই এবং যারা আখিরাতের সফলতা চায় না তারা বলেন আমাদের কাছে ফেরেশতা এসে কেন তোমার রিসালাতের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। অথবা আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে দেখব, আমরা তাঁর সাথে কথা বলব, তিনি আমাদেরকে বলে দেবেন ইনি হলেন রাসূল, তোমরা তার অনুসরণ কর। এটা মূলত আনুগত্য করার জন্য প্রশ্ন নয় বরং অহংকার ও প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্ন। এ সম্পর্কে সূরা ইসরার ৯২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদের না দেখাটাই কল্যাণকর। যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখবে সেদিন তাদের জন্য তারা সুসংবাদ নিয়ে আসবে না বরং তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য আসবে। সেদিনগুলোর প্রথম দিন হল তাদের মৃত্যুর দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَوْ تَرٰٓي إِذِ الظّٰلِمُوْنَ فِيْ غَمَرٰتِ الْمَوْتِ وَالْمَلٰٓئِكَةُ بَاسِطُوْا أَيْدِيْهِمْ ج أَخْرِجُوْآ أَنْفُسَكُمُ ط اَلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُوْنِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَي اللّٰهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ اٰيٰتِه۪ تَسْتَكْبِرُوْنَ‏)‏

“যদি তুমি দেখতে পেতে যখন জালিমগণ মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করবে। আর যখন ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, ‘তোমাদের প্রাণ বের কর। তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সম্বন্ধে অন্যায় বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, সেজন্য আজ তোমাদের অপমানকর শাস্তি দেয়া হবে।’’ (সূরা আন‘আম ৬:৯৩)

حِجْرًا এর শাব্দিক অর্থ সুরক্ষিত স্থান। পরের শব্দের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এখানে অর্থ হল حراما محرما তথা সম্পূর্ণরূপে হারাম। অর্থাৎ ফেরেশতারা কাফিরদেরকে বলবে জান্নাতের আরাম তোমাদের জন্য হারাম।

সুতরাং দুনিয়াতে তারা যে সমস্ত আমল করেছে যার দ্বারা তারা কল্যাণ আশা করত তা সবই নিষ্ফল হয়ে যাবে, কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِ نِاشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ ط لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰي شَيْءٍ ط ذٰلِكَ هُوَ الضَّلٰلُ الْبَعِيْدُ)

“যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের উপমা তাদের কর্মসমূহ ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা যা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো চরম গোমরাহী।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:১৮)

অনুরূপভাবে যারা শির্ক করে তাদের আমলও আল্লাহ তা‘আলা কবূল করবেন না, তাদের আমলগুলো নিষ্ফল হয়ে যাবে কোন উপকারে আসবে না।

পক্ষান্তরে যারা মু’মিন আল্লাহ তাদের আমলগুলো কবূল করে নিয়ে তাদেরকে জান্নাতে দেবেন এবং তারা সেখানে উত্তম আবাসন পাবে। مُّسْتَقَرّ শব্দের অর্থ স্বতন্ত্র আবাসস্থল। مَقِيْلًا শব্দটি قيلولة থেকে উদ্ভূত, অর্থ- দুপুরে বিশ্রাম নেয়ার স্থান। অর্থাৎ তারা উত্তম আবাসস্থল ও উত্তম বিশ্রামের জায়গা পাবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. যারা মু’মিন তারা আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাত লাভ করবে।
২. দুনিয়াতে মানুষের পক্ষে আল্লাহ তা‘আলাকে ও ফেরেশতাদেরকে দেখা সম্ভব নয়।
৩. কাফিরদের আমল আখিরাতে নিষ্ফল হয়ে যাবে।
৪. জান্নাতীরা আখিরাতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে আর কাফিররা শুধু কষ্ট আর কষ্ট ভোগ করবে।
৫. কোন প্রকার গর্ব-অহঙ্কার করা যাবে না।
৬. আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাতের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# যদি সত্যিই আল্লাহর ইচ্ছা হয়ে থাকে আমাদের কাছে তাঁর পয়গাম পৌঁছাবেন, তাহলে একজন নবীকে মাধ্যমে পরিণত করে তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো যথেষ্ট নয় বরং প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে একজন করে ফেরেশতা পাঠানো উচিত। ফেরেশতা এসে বলবে, তোমার রব তোমার কাছে এ পয়গাম পাঠাচ্ছেন। অথবা ফেরেশতাদের একটি প্রতিনিধদল প্রকাশ্যে জনসমাবেশে সবার সামনে এসে যাবে এবং সবাইকে আল্লাহর পয়গাম শুনিয়ে দেবে। সূরা আন’আমেও তাদের এ আপত্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবেঃ

وَإِذَا جَاءَتْهُمْ آيَةٌ قَالُوا لَنْ نُؤْمِنَ حَتَّى نُؤْتَى مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللَّهِ اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ

“যখন কোন আয়াত তাদের সামনে পেশ হতো, তারা বলতো আমরা কখনো মেনে নেবো না যতক্ষণ না আমাদের সেসব কিছু দেয়া হবে যা আল্লাহর রসূলদের দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহই ভালো জানেন কিভাবে তাঁর পয়গাম পৌঁছাবার ব্যবস্থা করবেন।” ( ১২৪ আয়াত )
# আল্লাহ‌ নিজে আসবেন এবং বলবেন, হে আমার বান্দারা! তোমাদের কাছে এ হচ্ছে আমার অনুরোধ।
# অন্য অনুবাদ এও হতে পারেঃ “নিজেদের জ্ঞানে তারা নিজেদেরকে অনেক বড় কিছু মনে করে নিয়েছে।”

# এ একই বিষয়বস্তু সূরা আন’আমের ৮ আয়াতে এবং সূরা হিজরের ৭-৮ এবং ৫১-৬৪ আয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০ থেকে ৯৫ পর্যন্ত আয়াতেও কাফেরদের অনেকগুলো অদ্ভূত এ অভিনব দাবীর সাথে এগুলোর উল্লেখ করে তার জবাব দেয়া হয়েছে।
# হাশরের ময়দানে জান্নাতের হকদার লোকদের সাথে অপরাধীদের থেকে ভিন্নতর ব্যবহার করা হবে। তাদের সম্মানের সাথে বসানো হবে। হাশরের দিনের কঠিন দুপুর কাটাবার জন্য তাদের আরাম করার জায়গা দেয়া হবে। সেদিনের সব রকমের কষ্ট ও কঠোরতা হবে অপরাধীদের জন্য। সৎকর্মশীলদের জন্য নয়। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে নবী ﷺ বলেছেন, وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ إِنَّهُ لَيُخَفَّفُ عَلَى الْمُؤْمِنِ حَتَّى يَكُونَ أَخَفَّ عَلَيْهِ مِنْ صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ يُصَلِّيهَا فِى الدُّنْيَا “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আবদ্ধ, কিয়ামতের মহা ও ভয়াবহ দিবস একজন মু’মিনের জন্য অনেক সহজ করে দেয়া হবে। এমনকি তা এতই সহজ করে দেয়া হবে, যেমন একটি ফরয নামায পড়ার সময়টি হয়।” (মুসনাদে আহমদ, আবু সাঈদ খুদরী কতৃক বর্ণিত)

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

২১-২৪ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্যপনা এবং হঠকারিতার সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা বলে- আমাদের নিকট ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় না কেন? অর্থাৎ রিসালাত দিয়ে ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হয় না যেমন নবীদের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল? যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে তাদের কথার উদ্ধৃতি দিয়েছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তারা বলে- আমরা কখনো ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না আমাদেরকে দেয়া হবে যা দেয়া হয়েছিল রাসূলদেরকে।” (৬:১২৪) আর এ সম্ভাবনাও আছে যে, (আরবি) দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ আমরা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে দেখতে চাই, তাহলে তারা আমাদেরকে সংবাদ দেবেন যে, মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল। যেমন তাদের উক্তিঃ (আরবি)

অর্থাৎ “অথবা তুমি আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে।” (১৭:৯২) সূরায়ে সুবহানাল্লাযীতে এর তাফসীর গত হয়েছে।

এ জন্যেই তারা বলেঃ অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন? আর এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তারা তাদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং তারা সীমালংঘন করেছে গুরুতররূপে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি তাদের নিকট ফেরেশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাযির করলেও যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা বিশ্বাস করবে না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।” (৬: ১১১)।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে সেদিন অপরাধীদের জন্যে সুসংবাদ থাকবে না এবং তারা বলবেঃ রক্ষা কর, রক্ষা কর। অর্থাৎ যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না সেদিনই তাদের জন্যে উত্তম। আর যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে সেদিন তাদের জন্যে সুসংবাদ থাকবে না। এটা বাস্তবে রূপলাভ করবে কিয়ামতের দিনে হাযিরীর
সময়, যখন ফেরেশতামণ্ডলী তাদেরকে জাহান্নাম ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্রোধের সুসংবাদ প্রদান করবেন। ঐ সময় ফেরেশতারা কাফিরকে তার প্রাণবায়ু বের হবার সময় বলবেনঃ “হে কলুষিত দেহের মধ্যে অবস্থিত কলুষিত আত্মা! তুমি বের হয়ে এসো! বের হয়ে এসো অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানির দিকে এবং কৃষ্ণবর্ণ ধূম্রছায়ার দিকে।” তখন ঐ আত্মা বের হতে অস্বীকার করবে এবং দেহের মধ্যে লুকাতে থাকবে। সুতরাং তারা ওকে প্রহার করবেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যদি তুমি দেখতে, যখন ফেরেশতারা কাফিরদের মৃত্যু ঘটাবে তখন তারা তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে প্রহার করবে।” (৮:৫০) তিনি আর এক আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যদি তুমি দেখতে যখন যালিমরা মৃত্যুর কাঠিন্যের মধ্যে থাকবে এবং ফেরেশতারা তাদের হাত বিস্তারকারী হবে।” (৬:৯৩) অর্থাৎ হাত বিস্তার করে তারা তাদেরকে মারতে থাকবেন। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতে কারীমায় বলেনঃ সেদিন অপরাধীদের জন্যে সুসংবাদ থাকবে না।

এটা মুমিনদের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদেরকে সেই দিন ফেরেশতারা কল্যাণের ও আনন্দ লাভের সুসংবাদ দিবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে- তোমরা ভীত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্যে আনন্দিত হও।

আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে; সেথায় তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেথায় তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটা হবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন।” (৪১:৩০-৩২)

সহীহ হাদীসে হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতারা মুমিনের আত্মাকে বলেনঃ “পবিত্র দেহের মধ্যে অবস্থিত হে পবিত্র আত্মা! বেরিয়ে এসো। বেরিয়ে এসো আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও এমন প্রতিপালকের দিকে যিনি রাগান্বিত নন।” সূরায়ে ইবরাহীমের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার ঐ উক্তির তাফসীরে বর্ণিত হাদীস গত হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা যালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন, আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।”(১৪:২৭) অন্যেরা বলেছেন যে, (আরবি) দ্বারা কিয়ামতের দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটা মুজাহিদ (রঃ), যহহাক (রঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেছেন। তবে এ কথা এবং পূর্বের কথা পরস্পর বিরোধী নয়। কারণ এই দুই দিন অর্থাৎ মৃত্যুর দিন ও কিয়ামতের দিন মুমিন ও কাফিরদের জন্যে তো জাজ্বল্যমান হবে। ফেরেশতারা মুমিনদেরকে করুণা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিবেন এবং কাফিরদেরকে সংবাদ দিবেন ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ততার। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে সেই দিন অপরাধীদের জন্যে কোন সুসংবাদ থাকবে না। আর সেই দিন তারা বলবেঃ রক্ষা কর, রক্ষা কর। অর্থাৎ ফেরেশতারা কাফিরদেরকে বলবেনঃ আজকে তোমাদের জন্যে মুক্তি ও পরিত্রাণ হারাম করে দেয়া হয়েছে। (আরবি) শব্দের মূল হচ্ছে (আরবি) অর্থাৎ নিষেধ করা বা বিরত রাখা। এর থেকেই বলা হয়। (আরবি) অর্থাৎ অমুকের উপর বিচারক নিষিদ্ধ করেছেন, যখন তিনি তার উপর খরচ নিষিদ্ধ করেন, হয়তো বা দারিদ্রের কারণে অথবা নির্বুদ্ধিতার কারণে বা বাল্যাবস্থার কারণে অথবা এ ধরনের অন্য কোন কারণে। আর এটা হতেই বায়তুল্লাহ শরীফের (কালো) পাথরের নাম (আরবি)

রাখা হয়েছে। কেননা, ওর মধ্যে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ওর পিছন দিয়ে তাওয়াফ করার নির্দেশ রয়েছে। এই একই কারণে (জ্ঞান) (আরবি) -কে বলা হয়। কেননা, এই জ্ঞান জ্ঞানীকে এমন কিছু গ্রহণ করা হতে বিরত রাখে যা তার পক্ষে উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নয়।

মোটকথা, (আরবি) -এর মধ্যে যে (আরবি) বা সর্বনাম রয়েছে ওটা (আরবি) (ফেরেশতাগণ)-এর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। এটা মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রাঃ), হাসান (রঃ), যহ্হাক (রঃ), কাতাদা (রঃ), আতিয়্যা আওফী (রঃ), আতা খুরাসানী (রঃ) এবং খাসীফ (রঃ)-এর উক্তি। ইবনে জারীর (রঃ) এটাকে পছন্দ করেছেন।

(আরবি) এই উক্তি সম্পর্কে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন যে, মুত্তাকীদেরকে যে জিনিসের সুসংবাদ দেয়া হবে সে জিনিসের সুসংবাদ কাফির ও অপরাধীদেরকে দেয়া হারাম করে দেয়া হবে, এর অর্থ এটাই। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ইবনে জুরায়েজ (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ এটা হবে মুশরিকদের কথা। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) (যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ করবে), অর্থাৎ তারা ফেরেশতাদের হতে আশ্রয় কামনা করবে। আরববাসীদের এটা নিয়ম ছিল যে, যখন তাদের কারো উপর কোন বিপদ আসতো বা তারা কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতো তখন তারা (আরবি) একথা বলতো। একথা বলার কারণ ও যৌক্তিকতা থাকলেও এটা বাকরীতি ও রচনাভঙ্গীর বিপরীত কথা। তা ছাড়া জমহুর উলামা এর বিপক্ষে দলীল এনেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণায় পরিণত করবো। এটা কিয়ামতের দিন হবে, যখন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদের ভালমন্দ কার্যের হিসাব গ্রহণ করবেন। ঐ সময় তিনি খবর দিবেন যে, এই মুশরিকরা তাদের যে কৃতকর্মগুলোকে তাদের মুক্তির মাধ্যম মনে করেছিল সেগুলো সবই বিফলে গেছে। আজ ওগুলো তাদের কোনই উপকারে আসবে না। এটা এই কারণে যে,

ওগুলো শরীয়তের শর্তকে হারিয়ে ফেলেছে। শর্ত ছিল যে, ওগুলোতে আন্তরিকতা থাকতে হবে এবং আল্লাহর শরীয়তের অনুগামী হতে হবে। সুতরাং যে আমলে আন্তরিকতা থাকবে না এবং আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী যে আমল হবে না তা বাতিল ও বিফল হয়ে যাবে। কাফিরদের আমলে এ দু’টির কোনটাই নেই। কাজেই তা কবূল হওয়া সুদূর পরাহত। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেছেনঃ আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলি-কণায় পরিণত করবো।

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে (আরবি) -এর অর্থ হলো সূর্যের কিরণ যা দেয়ালের ছিদ্রে প্রবেশ করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও অনুরূপ উক্তি বর্ণিত আছে।

হযরত উবায়েদ ইবনে ইয়ালা (রঃ) বলেন যে, (আরবি) হলো ঐ ভস্ম যাকে বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়, ফলে তা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। মোটকথা, এসব হচ্ছে সতর্কতামূলক কথা যে, কাফির ও মুশরিকরা তাদের কৃত আমলগুলোকে নাজাতের মাধ্যম মনে করে নিয়েছে বটে, কিন্তু যখন ওগুলোকে মহাবিজ্ঞানময় ও ন্যায় বিচারক আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে তখন তারা দেখবে যে, সবগুলোই বিফলে গেছে। ওগুলো তাদের কোনই উপকারে আসবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের উপমা এই যে, তাদের কর্মসমূহ ভস্ম সদৃশ যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘেরি বিভ্রান্তি।” (১৪:১৮) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং ক্লেশ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করো না যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্যে ব্যয় করে থাকে, এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না। তার উপমা একটি মসৃণ পাথর যার উপর কিছু মাটি থাকে, অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাত ওকে পরিষ্কার করে রেখে দেয়। যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারবে না।” (২:২৬৪) মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য এক আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, পিপাসার্ত যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখবে ওটা কিছু নয়।” (২৪: ৩৯) এ আয়াতের তাফসীরে এ সম্পর্কে সবকিছু বর্ণনা গত হয়েছে। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্যেই।

আল্লাহ পাক বলেনঃ সেই দিন হবে জান্নাতবাসীদের বাসস্থান উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল মনোরম। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।” (৫৯:২০) ওটা এই যে, জান্নাত বাসীরা উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে এবং শান্তি ও আরামদায়ক কক্ষে অবস্থান করবে। তারা থাকবে নিরাপদ স্থানে যা সুদৃশ্য ও মনোরম মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ “সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে ওটা কতই না। উৎকৃষ্ট।” (২৫:৭৬) পক্ষান্তরে জাহান্নামবাসীরা অতি জঘন্য ও নিকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে, হা-হুতাম করবে এবং বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ও যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে ওটা কতই না নিকৃষ্ট!” (২৫:৬৬) অর্থাৎ তাদের অবতরণ স্থল দেখতে কতই না খারাপ এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে ওটা কতই না জঘন্য! এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সেই দিন হবে জান্নাতবাসীদের বাসস্থান উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল মনোরম। অর্থাৎ তারা যে গ্রহণীয় আমল করেছে তার বিনিময়ে তারা যা পাওয়ার তা পেয়েছে এবং যে স্থানে অবস্থান করার সে স্থানে অবস্থান করেছে। কিন্তু জাহান্নামীদের অবস্থা এর বিপরীত। কারণ তাদের একটি আমলও এমন নেই যার মাধ্যমে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা ভাগ্যবানদের অবস্থা দ্বারা হতভাগ্যের অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন যে, তাদের নিকট কোনই কল্যাণ নেই। হযরত যহহাক (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ওটা এমন এক সময় যে সময়ে আল্লাহর ওলীরা সিংহাসনের উপর সুলোচনা হুরদের সাথে অবস্থান করবে। আর আল্লাহর শত্রুরা তাদের শয়তান সঙ্গীদের সাথে লাঞ্ছিত অবস্থায় বসবাস করবে।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, দিনের অর্ধভাগে আল্লাহ তা’আলা হিসাব হতে ফারেগ হবেন। অতঃপর জান্নাতবাসীরা জান্নাতে বিশ্রাম গ্রহণ করবে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে বিশ্রাম নেবে।

হযরত ইকরামা (রঃ) বলেনঃ ঐ সময় আমার জানা আছে যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন দুনিয়া দিবসের প্রথম অংশের উঁচুতে অবস্থান করবে (দিনের প্রথম ভাগে সূর্য অনেকটা উপরে উঠে ববে)। যেই সময় মানুষ দুপুরের বিশ্রামের সময় তাদের পরিবারের (স্ত্রীদের) কিট গমন করে থাকে। সুতরাং ঐ সময় জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামে গমন কবে। পক্ষান্তরে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। কাজেই তাদের দরে বিশ্রামস্থল হবে জান্নাত। সেখানে তাদেরকে মাছের কলিজা আহার করানো হবে এবং তারা সবাই তাতে পরিতৃপ্ত হবে। এর উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সেই দিন হবে জান্নাতবাসীদের বাসস্থান উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল মনোরম।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ অর্ধ দিন হবে না যে পর্যন্ত না এরা এবং ওরা বিশ্রামস্থল গ্রহণ করবে। অতঃপর তিনি পাঠ করেন (আরবি)-এ আয়াতটি এবং পরে পাঠ করেন। (আরবি)-এ আয়াতটি। “আর তাদের (জাহান্নামীদের) গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্বলিত অগ্নির দিকে।” (৩৭: ৬৮)

(আরবি) এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন যে, এর দ্বারা জান্নাতের কক্ষসমূহ বুঝানো হয়েছে। যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে একবার পেশ করা হবে তখন তাদের হিসাব খুবই সহজভাবে গ্রহণ করা হবে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যাকে তার আমলনামা দক্ষিণ হস্তে দেয়া হবে তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হবে। আর সে তার স্বজনদের নিকট প্রফুল্ল চিত্তে ফিরে যাবে।” (৮৪: ৮-৯) কাতাদা (রঃ) বলেন যে, (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আশ্রয়স্থল ও অবতরণস্থল।

সাফওয়ান ইবনে মুহরিম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন এমন দু’জন লোককে আনয়ন করা হবে যাদের একজন দুনিয়ায় লাল-সাদাদের নিকট বাদশাহ রূপে ছিল। তার হিসাব গ্রহণ করা হবে। কিন্তু সে এমনই এক বান্দা যে, জীবনে কখনো সে একটি সৎ কাজও করেনি। সুতরাং তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। আর অপর লোকটি এতো দরিদ্র ছিল যে, পরিধেয় বস্ত্রটি ছিল তার একমাত্র সম্বল। তার হিসাব গ্রহণ করা হলে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি এমন কিছু দেননি যার হিসেব আমার কাছে নিবেন।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “আমার বান্দা সত্য কথা বলেছে। সুতরাং (হে আমার ফেরেশতামণ্ডলী)! তোমরা তাকে পাঠিয়ে দাও।” অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করার নির্দেশ দেয়া হবে। তারপর আল্লাহ যতদিন চাবেন তাদেরকে তাদের নিজ নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিবেন। এরপর তিনি জাহান্নামবাসী লোকটিকে ডেকে পাঠাবেন। সে মহান আল্লাহর সামনে হাযির হলে দেখা যাবে যে, সে অত্যন্ত কালো কয়লার মত হয়ে গেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তুমি কেমন বিশ্রামস্থল পেয়েছো?” উত্তরে সে বলবেঃ “আমার বিশ্রামস্থল অত্যন্ত জঘন্য।” তখন তাকে বলা হবেঃ “তুমি সেখানেই ফিরে যাও।” অতঃপর জান্নাতবাসী ঐ লোকটিকে ডাকা হবে। তার চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল। তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তোমার বাসস্থান তুমি কেমন পেয়েছো?” উত্তরে সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমি উত্তম বাসস্থান পেয়েছি। তাকে তখন বলা হবেঃ “তুমি (তোমার ঐ জায়গাতেই) ফিরে যাও।” (ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সাঈদ আস্ সওয়াফ (রঃ)-এর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কিয়ামতের দিনটি মুমিনের নিকট খুবই ছোট অনুভূত হবে। এমনকি তাদের মনে হবে যে, ওটা আসর হতে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়। তারা জান্নাতের বাগানে ঘোরাফেরা করবে। আল্লাহ তাআলার উক্তির তাৎপর্য এটাই যে, সেই দিন হবে জান্নাতবাসীদের বাসস্থান উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল মনোরম। ২৫। যেদিন আকাশ মেঘপুঞ্জ সহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেয়া হবে।

Leave a Reply