أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৯৪)
[আপনি কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে বড় জিহাদ চালিয়ে যান। ]
www.motaher21.net
সূরা:- আল্ ফুরকান।
সুরা:২৫
পারা:১৯
৫১- নং আয়াত:-
২৫:৫১-৫৫
وَ لَوۡ شِئۡنَا لَبَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ قَرۡیَۃٍ نَّذِیۡرًا ﴿۫ۖ۵۱﴾
আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ককারী প্রেরণ করতে পারতাম।
২৫:৫২
فَلَا تُطِعِ الۡکٰفِرِیۡنَ وَ جَاہِدۡہُمۡ بِہٖ جِہَادًا کَبِیۡرًا ﴿۵۲﴾
কাজেই আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং আপনি কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে বড় জিহাদ চালিয়ে যান।
২৫:৫৩
وَ ہُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ ہٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّ ہٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَ جَعَلَ بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخًا وَّ حِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا ﴿۵۳﴾
তিনিই দুটি সাগরকে প্রবাহিত করেছেন, একটির পানি মিষ্ট, সুপেয় এবং অপরটির পানি লোনা, ক্ষারবিশিষ্ট। আর উভয়ের মধ্যে তিনি রেখে দিয়েছেন এক সীমারেখা, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।
২৫:৫৪
وَ ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ مِنَ الۡمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَہٗ نَسَبًا وَّ صِہۡرًا ؕ وَ کَانَ رَبُّکَ قَدِیۡرًا ﴿۵۴﴾
আর তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; তারপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন । আর আপনার রব হলেন প্রভূত ক্ষমতাবান।
২৫:৫৫
وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَنۡفَعُہُمۡ وَ لَا یَضُرُّہُمۡ ؕ وَ کَانَ الۡکَافِرُ عَلٰی رَبِّہٖ ظَہِیۡرًا ﴿۵۵﴾
ওরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর উপাসনা করে, যা ওদের উপকার করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না। আর অবিশ্বাসী তো স্বীয় প্রতিপালকের বিরোধী।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*কোরআনের সম্মোহনী শক্তি : ‘আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে প্রত্যেক গ্রামে এক একজন সতর্ককারী পাঠাতাম।’ এতে রসূলের পরিশ্রমটা বিভক্ত ও দায়িত্বটা হালকা হয়ে যেতাে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এ কাজের জন্যে একজন মাত্র বান্দাকেই মনােনীত করেছেন। তিনি শেষ নবী। তাই তাকে সারা দুনিয়াবাসী একক সতর্ককারী বানিয়েছেন। দুনিয়ার সকল গ্রামের জন্যে তিনিই একমাত্র রসূল। এক এক গ্রামে এক একজন রসুল পাঠালে তাদের বক্তব্যে কিছু না কিছু বিভিন্নতা থাকতাে। কিন্তু একমাত্র রসূলের ভাষায় ও বার্তায় কোনাে বিভিন্নতা নেই। তাকে কোরআন দিয়েছেন, যাতে তা দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে পারেন, অতএব আল্লাহর অবাধ্যদের আনুগত্য করাে না, বরং কোরআন দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে তুমুল জেহাদ চালাও।’ বস্তুত এই কোরআনে এতাে শক্তি ও প্রতাপ রয়েছে এবং এতাে গভীর প্রভাব ও এতাে মােহনীয় আকর্ষণ রয়েছে, যাকে প্রতিহত করা যায় না, যা তাদের মনকে প্রচন্ডভাবে কাঁপিয়ে, ঝাকিয়ে ও নাড়িয়ে দেয়। ফলে তার প্রভাব প্রতিপত্তি সর্বজয়ী হয় এবং কুফরী শক্তি কোনােভাবেই তাকে ঠেকাতে পারে না। শীর্ষস্থানীয় কোরায়শ নেতারা সাধারণ মানুষকে বলতাে, ‘এই কোরআন তােমরা শুনাে না, বরং তা পাঠকালে হৈ চৈ করাে। হয়তাে তােমরা বিজয়ী হবে। তাদের এই উক্তিই প্রমাণ করতাে কোরআনের প্রভাব তাদের ও তাদের অনুসারীদের হৃদয়ে কি সাংঘাতিক আতংকের সৃষ্টি করতাে। তারা দেখতাে, তাদের অনুসারীরা আব্দুল্লাহর ছেলে মােহাম্মদ(স.)-এর মুখ থেকে একটা দুটো আয়াত কিংবা একটা দুটো সূরা শুনে ক্ষণিকের মধ্যেই যেন যাদু প্রভাবিতের ন্যায় প্রভাবিত হয়ে যায় এবং মুহাম্মদ(স.)-এর অনুগত হয়ে যায়। পাঠের সময় হৈ চৈ করার নির্দেশ দিয়েছিলাে, সেটা তাদের কোরআনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা অবস্থায় নয়। নেতারা যদি অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনুভব না করতাে যে, জনগণ কোরআনের প্রভাবে অস্থির ও দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে, তাহলে এমন নির্দেশ কখনাে দিতাে না এবং এই সতর্কবাণী কখনাে উচ্চারণ করতাে না। কেননা খােদ এই সতর্কবাণী অন্য যে কোনাে কথার চেয়ে অধিকতর অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, কোরআনের প্রভাব অপ্রতিরােধ্য। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন যে, একদিন গভীর রাতে আবু সুফিয়ান, আবু জাহল ও আখনাস শােরায়ক- এই তিনজন শীর্ষস্থানীয় নেতা আলাদা আলাদাভাবে রসূল(স.)-এর কোরআন পাঠ শুনতে বের হলাে। তিনি রাতের বেলা নিজের বাড়ীতে বসে নামাযে কোরআন পাঠ করতেন। এই তিনজনের প্রত্যেকে সুবিধাজনক জায়গা দেখে বসে পড়লাে। তিনজনের কেউই অপর দু’জনের কথা জানতাে না। এভাবে সারা রাত কোরআন শােনার পর ফজরের সময় যখন তারা ফিরে যেতে লাগলাে, তখন পথে তাদের পরস্পরের সাথে দেখা হয়ে গেলাে। প্রত্যেকে প্রত্যেককে তিরস্কার করলাে এবং বললাে, খবরদার, আর কখনাে এখানে এসােনা। আমাদের নির্বোধ অনুসারীদের কেউ যদি তােমাদেরকে দেখে ফেলে, তাহলে তাদের মনে খুবই খারাপ ধারণা জন্ম নেবে। তারপর তারা চলে গেলাে, পরের দিন রাতে আবার তারা এলাে এবং রাতভর কোরআন শুনে সকালে বাড়ী ফেরার পথে আবার তাদের দেখা হয়ে গেলে। আবারাে আগের দিনের মতাে কথাবার্তা হলাে এবং সবাই চলে গেলাে। তৃতীয় দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলাে। তারা সারা রাত কোরআন শুনে সকালে পথে আবার মিলিত হলাে। এবার তারা বললাে, আর এখানে আসবাে না- এই মর্মে অংগীকারাবদ্ধ না হয়ে এবার আমরা যাবাে না। অতপর তারা অংগীকারে আবদ্ধ হলাে এবং ফিরে গেলাে। সকালে বাড়ীতে গিয়ে আখনাস বিন শােরায় নিজের লাঠিতে ভর করে বের হলাে। প্রথমে আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে গিয়ে তাকে বললাে, মােহাম্মদ-এর ওখানে গিয়ে যা শুনলে, সে সম্পর্কে তােমার মতামত জানাও। আবু সুফিয়ান বললাে, ইতিপূর্বে যা যা শুনেছি, তা তা আমার জানা ছিলাে এবং তার অর্থ ও মর্ম কিছুই বুঝলাম না। আখনাস বললাে, আমার অবস্থাও তদ্রুপ। এরপর সে আবু সুফিয়ানের কাছ থেকে বেরিয়ে আবু জাহলের কাছে গেলাে। তাকে বললাে, ওহে আবুল হেকাম (প্রাজ্ঞ ব্যক্তি) মােহাম্মদ(স.)-এর কাছে যা শুনলে, সে সম্পর্কে তােমার মত কী? আবু জাহল বললাে, কী আর শুনবাে? আমরা ও বনু আবদ মানাফ সব সময়ই সুনাম কুড়ানাের প্রতিযোগিতা করতাম। তারা যদি লােকজনকে দাওয়াত করে খাওয়াতাে, আমরাও খাওয়াতাম । তারা যদি দান করতাে, আমরাও করতাম। তারা যদি পরােপকার করতাে, আমরাও করতাম । এক সময় তারা বলে বসলাে, আমাদের মধ্যে একজন নবী আছে যার কাছে আকাশ থেকে ওহী আসে। এ ধরনের জিনিস আমরা কোথা থেকে পাবাে? আল্লাহর কসম, তার ওপর কখনাে ঈমান আনবাে না এবং তাকে কখনাে বিশ্বাস করবে না। এরপর আখনাস সেখান থেকে বিদায় হলাে। এভাবেই তারা নিজেদের মনকে জোর করে কোরআন থেকে ফিরিয়ে রাখতাে। তারা পরস্পরে অংগীকারাবদ্ধ না হলে তাদের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে এমন জিনিস কোরআনের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবে বলে তারা আতংকগ্রস্ত ছিলাে। অথচ কোরআন তাদেরকে যাদুর মতাে প্রভাবিত ও সম্মোহিত করে ফেলেছিলাে। কোরআনে এমন সহজ সরল সত্য রয়েছে, যা সরাসরি অন্তরের অন্তস্থলে প্রবেশ করে এবং যাকে প্রতিহত করার শক্তি কারাে নেই। এতে উপস্থাপিত কেয়ামতের দৃশ্য, প্রাকৃতিক দৃশ্য, কিসসা কাহিনী, ধ্বংসপ্রাপ্ত অতীত জাতিগুলাের ইতিহাস, এবং সমস্যা চিহ্নিতকরনের শক্তি মানুষের মনকে এমনভাবে নাড়া দেয় যে, তা আর স্থির থাকতে পারে না। একটা মাত্র সূরা মানুষের সমগ্র সত্ত্বাকে এমনভাবে আলােড়িত ও আন্দোলিত করতে পারে যে একটা প্রবল শক্তিধর সশস্ত্র সেনাবাহিনী করতে পারে না। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে কাফেরদের আনুগত্য না করতে, তার দাওয়াতের কাজে শৈথিল্য প্রদর্শন না করতে এবং তাদের সাথে এই কোরআনের সাহায্যে জেহাদ করতে যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে অবাক হবার কিছু নেই। কেননা কোরআনের সাহায্যে জেহাদ করার অর্থ এমন শক্তির সাহায্যে জেহাদ করা, যার সামনে কোনাে মানুষ বা অন্য কোনাে শক্তি টিকে থাকতে পারে না।
*আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন : এরপর পুনরায় প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। প্রথমে সৃষ্টির সুসংবাদবাহী বাতাস সম্পর্কে ও পবিত্র পানি সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে মিষ্টি ও লবণাক্ত পানি এবং তার মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধকের দৃশ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। বলা হয়েছে, ‘তিনি সেই সত্ত্বা, যিনি দুই সমুদ্রকে পৃথক করে রেখে দিয়েছেন, একটা মিষ্টি এবং অপরটা লবণাক্ত ও তিক্ত। দুটোই পাশাপাশি সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়, অথচ একটা অপরটার সাথে মিশ্রিত হয় না।’ উভয়ের মাঝখানে একটা আড়াল অবস্থা বিরাজ করে এবং আল্লাহ তায়ালা একটা বিশেষ প্রকৃতি দিয়েই তা সৃষ্টি করেছেন। যেমন নদ নদীকে আল্লাহ তায়ালা প্রধানত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চস্তরে সৃষ্টি করেছেন। এ জন্যে মিষ্টি পানির নদী লবনাক্ত সাগরে গিয়ে পড়ে- লবনাক্ত সাগরের পানি মিষ্টি নদীতে গিয়ে পড়ে না। এর ব্যতিক্রম অত্যন্ত বিরল। এই প্রাকৃতিক নিয়মের কারণেই সাগর অনেক বড় ও শক্তিধর হওয়া সত্তেও নদীর ওপর আগ্রাসন চালায় না। কেননা এই নদীর পানিই মানুষ পশু ও উদ্ভিদের জীবন রক্ষা করে। তাই আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে স্থায়ীভাবে এই ব্যবস্থা করেছেন। মহাবিশ্ব যে প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে চলে, তাতে এ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে যে, লবণাক্ত সাগর মহাসাগরের পানি ক্ষুদ্র নদীতে ও স্থলভাগে আগ্ৰাসন চালায় না। এমন কি জোয়ার ভাটার সময়েও যখন ভূ-পৃষ্ঠের পানি চাঁদের আকর্ষণে স্ফীত হয়ে অত্যধিক উঁচু হয়ে বইতে শুরু করে তখনও নয়। মানুষ একা জীবনধারণ করতে পারে না, শীর্ষক গ্রন্থের লেখক বলেন, চাঁদ আমাদের পৃথিবী থেকে দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করে। প্রতিদিন দু’বার নদীতে ও সমুদ্রে যে জোয়ার আসে,তা মৃদুডাবে চাঁদের অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মহা সাগরে যে জোয়ার আসে, তা স্থান বিশেষে ষাট ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এমনকি চাঁদের আকর্ষণে ভূ-পৃষ্ঠ প্রতিদিন দু’বার বাইরের দিকে কয়েক ইঞ্চি পরিমাণ বেঁকে যায়। অথচ আমাদের কাছে মনে হয় সব কিছু যথাযথভাবে বহাল রয়েছে। এমনকি সেই প্রচন্ড শক্তিও আমরা টের পাই না, যা সমগ্র মহাসাগরের আয়তন কয়েক ফুট বাড়িয়ে দেয়। আর যে পৃথিবীকে নিদারুণ শক্ত মনে হয়, তার পৃষ্ঠদেশও বেঁকে যায়। মঙ্গল গ্রহের ছোট একটা চাঁদ আছে। এই চাঁদ মংগল গ্রহ থেকে মাত্র ছয় হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। আমাদের চাঁদটা যদি আমাদের কাছ থেকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার মাইল দূরে থাকতাে এবং এখন যতাে দূরে রয়েছে অতােটা দূরে না থাকতাে, তাহলে জোয়ার এতাে শক্তিশালী হতাে যে, পানির স্তরের নীচে অবস্থিত সকল ভূখন্ড প্রতিদিন দু’বার অথৈ পানির নীচে ডুবে যেতাে। আর সেই প্লাবনের জোরে পাহাড় পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যেতাে। এমতাবস্থায় সম্ভবত পৃথিবীতে এমন একটা মহাদেশও থাকতাে না যা প্রয়ােজনীয় দ্রুততার সাথে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ওপরে উঠে আসতে পারতাে। আর এরূপ পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূপৃষ্ঠ সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যেতাে এবং বাতাসের জোয়ারের কারণে প্রতিদিনই ঝড় হতাে। এমতাবস্থায় আমরা যদি ধরে নেই যে, মহাদেশ গুলো পানিতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে, তাহলে একথাও নিশ্চিত মনে করতে হবে যে, ভূপৃষ্ঠের ওপর পানির গড় উচ্চতা দাঁড়াবে প্রায় দেড় মাইল। সেরূপ পরিস্থিতিতে জীবনের সম্ভাব্য অবস্থান একমাত্র সমুদ্রের গভীরতম তলদেশে কিন্তু যে সুনিপুণ হাত এই মহাবিশ্বকে পরিচালনা করে, তা উভয় সমুদ্রকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যপূর্ণ আড়াল স্থাপন করেছে। এই দুই সমুদ্রে, তাদের মধ্যবর্তী আড়ালে এবং সমগ্র বিশ্বে যে সমন্বয় ও ভারসাম্য স্থাপিত হয়েছে, তার মাত্রা ও অনুপাত নির্ধারণ করেছেন সুদক্ষ, সুনিপুন ও প্রাজ্ঞ স্রষ্টা মহান আল্লাহ। অতপর আকাশের পানি, সমুদ্রের পানি ও নদ নদীর পানির সূত্র ধরে বীর্য নামক পানির প্রসংগ তােলা হয়েছে যা থেকে সরাসরি মানব জীবনের উদ্ভব ঘটে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতপর তাকে পরিণত করেছেন জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও আত্মীয় পরিজনে। তোমার প্রতিপালক খুবই শক্তিশালী। এই পানি থেকেই ভ্রুণের জন্ম হয়। আর এই ভ্রুণ থেকে পুরুষ সন্তান জন্ম নিলে তা ধংশধরের সূচনা করে, আর নারী সন্তান জন্ম নিলে তা থেকে সূচনা হয় আত্মীয় স্বজনের। এই পানি থেকে জাত মানব জীবন আকাশের পানি থেকে জাত জীবনের চেয়ে ঢের বেশী বিস্ময়কর ও বৃহত্তর । পুরুষের এক ফোঁটা বীর্যে যে লক্ষ লক্ষ শুক্রকীট থাকে, তা থেকে একটা মাত্র কীট নারীর জরায়ুতে অবস্থানরত ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং তা থেকে মানুষ নামক জটিল, বহুমুখী ও সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে বিস্ময়কর সৃষ্টির জন্ম হয়। সম স্বভাবের শুক্রকীটসমূহ ও সম স্বভাবের ডিম্বানু সমূহ থেকে এমন বিস্ময়কর ভাবে পুরুষ ও নারী সন্তানের জন্ম হয়, যার রহস্য মানুষের অজানা। মানুষের আবিষ্কৃত বিজ্ঞান এর কোনাে ব্যাখ্যাও দিতে পারে না। এর নিয়ন্ত্রণেরও ক্ষমতা রাখে না। হাজার হাজার শুক্রকীটের মধ্যে এমন একটা শুক্রকীটও নেই, যার ভেতরে নারী বা পুরুষ সন্তান জন্মানাের উপযুক্ত সুপরিচিত বৈশিষ্ট্যগুলাে দেখা যেতে পারে। অনুরূপভাবে কোনাে একটা ডিম্বাণুর মধ্যেও সেই ধরনের বৈশিষ্ট্যাবলী পরিলক্ষিত হয় না। তথাপি শেষ পর্যন্ত একটা পুরুষে ও অপরটা নারীতে পরিণত হয়। আর তােমার প্রতিপালক খুবই শক্তিশালী। তার সীমাহীন ক্ষমতার একটা অংশ এই বিস্ময়কর কীর্তির মধ্যে প্রতিফলিত। যে বীর্য থেকে মানুষের উৎপত্তি তা নিয়ে মানুষ যদি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুসন্ধান চালায়, তাহলে সে তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশসমূহের মধ্যে সেই পূর্ণাংগ মানবীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ খুঁজে পাবে, যার মধ্যে সমগ্র মানব জাতির উত্তরাধিকারের উপকরণগুলাে নিহিত রয়েছে এবং পিতা মাতা ও তাদের নিকটতম পরিবারয়ের উত্তরাধিকারের উপাদানগুলাে রয়েছে। এসব উপকরণ পুরুষ ভ্রুণে ও নারী ভ্রুণে আল্লাহর নির্ধারিত মাত্রা অনুসারে বিদ্যমান থাকবে। এ প্রসংগে ‘মানুষ একা জীবন ধারণ করতে পারে না’ গ্রন্থে রয়েছে প্রতিটা কোষে চাই তা পুরুষ কোষ হােক বা নারী কোষ হােক বহুসংখ্যক ক্রোমােজম (‘ক্রোমজম’ হচ্ছে জীব বা উদ্ভিদ কোষস্থিত সেই তন্তু সদৃশ বস্তু, যা বংশীয় গুণাবলীর ক্রম বিস্তারে সক্রিয় অবদান রাখে।-সম্পাদক) ও জিন (উত্তরাধিকারের উপাদান) থাকে। আর ক্রোমজম থেকেই উৎপন্ন হয় সেই অতি ক্ষুদ্র ও অস্পষ্ট বীজ, যার ভেতরে জিন নিহিত থাকে। আর জিনই হলাে প্রতিটা মানুষ ও প্রাণীর অস্তিত্বের নিয়ামক সর্ব প্রধান উপাদান। আর সেটোপ্লাজম (সেটোপ্লাজম হচ্ছে প্রােটেপ্লাজম ঘটিত সেই উপাদান, যা প্রাণকোষের বীজের পার্কে বিরাজ করে। – সম্পাদক) হচ্ছে সেসব বিস্ময়কর রাসায়নিক যৌগিক পদার্থ, যা ক্রোমজম ও জিনকে পরিবেষ্টিত করে রাখে। ‘জ্বিন এতাে সুক্ষ্ম পদার্থ, যে তার সবগুলােকে যদি একত্রিত করে। এক জায়গায় রাখা হয়, তবে তার আয়তন সেলাই করার সময় সুচের আঘাত এড়ানাের জন্যে আংগুলে যে আবরণ পরা হয় সেই অংগষ্ঠানের সমানও হয় না। অথচ পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল প্রাণীর ব্যক্তিগত গুণাগুণ, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, বর্ণগত ও প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য এই জিনের ওপরই নির্ভরশীল। এই অতি সূক্ষ্ম অণুবিক্ষণী জিনই হচ্ছে সকল মানুষ, জীব ও উদ্ভিদের গুণ বৈশিষ্ট্যের চাবিকাঠি। আর যে অংগষ্ঠানটা দুই বিলিয়ন মানুষের ব্যক্তিগত গুণাবলী ধারণ করতে সক্ষম, তা নিসন্দেহে একটা অতি ক্ষুদ্রাকৃতির আধার। তথাপি এটা একটা অবিসংবাদি সত্য। আর ভ্রুণ তার ক্রমবিকাশের ধারায় বীর্যরূপী প্রােটোপ্লাজমের শৃংখলমুক্ত হয়ে উপ-প্রজাতির পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেবল একটা রেকর্ডকৃত ইতিবৃত্তই বর্ণনা করে। সে ইতিবৃত্ত সংরক্ষিত থাকে এবং জিন ও সেটোপ্লাজমের আকারে আণবিক সংঘবদ্ধকরণের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। আমরা দেখেছি যে, জিনগুলাে অণুবীক্ষণের সাহায্যে দর্শনযােগ্য অণুসমূহের চেয়েও ক্ষুদ্র, সকল প্রাণীর দেহের প্রাণ কোষের মধ্যে বর্তমান এবং তা নকসা, পূর্বপুরুষদের রেকর্ড এবং প্রত্যেক প্রাণীর বৈশিষ্ট্যসমূহ সংরক্ষণ করে, সে ব্যাপারে কোনাে দ্বিমতের অবকাশ নেই। আর এই জিন বিশদভাবে প্রত্যেক উদ্ভিদের বীজে, কান্ডে, পাতায়, ফুলে ও ফলে পূর্ণ কর্তৃত্ব চালায়। অনুরূপভাবে তা মানুষসহ সকল প্রাণীর আকৃতি, বহিরাবরণ, চুল ও ডানা কেমন হবে তাও স্থির করে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা জীবন জগতকে যে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যসমূহ দান করেছেন, তার আলােচনার আপাতত এখানেই ইতি টানছি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমার প্রভু সর্বশক্তিমান।
*বিপুল ক্ষমতাবান আল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্বল মানুষের বিদ্রোহ : সৃষ্টি ও সৃষ্টিজগত পরিচালনার এই প্রেক্ষাপটে, আকাশ থেকে আগত পানি ও বীর্যের পানি থেকে সৃষ্ট জীবনের এই সব তথ্যের প্রেক্ষাপটে, বিশেষত বীর্যের পানির সেসব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষাপট-যা বিশেষ বিশেষ কোষকে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও উত্তরাধিকারসহ পুরুষে ও বিশেষ বিশেষ কোষকে একইভাবে নারীতে পরিণত করে- আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কিছুর বা অন্য কারাে এবাদাত ও দাসত্ব করা একটা চরম ঘৃণ্য ও ধিক্কারযােগ্য কাজ বলে প্রতীয়মান হয়। এটা যে কোনাে সুস্থ বিবেকের কাছে অসহনীয় ও অবাঞ্ছিত ব্যাপার। এই প্রসংগেই মােশরেকদের আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যান্য বস্তু বা প্রাণীর এবাদাতের বিষয়টা আলােচনা করা হচ্ছে, ‘তারা আল্লাহ ছাড়া এমনসব বস্তু বা প্রাণীর এবাদাত করে, যা তাদের উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি কাফের, সে তাে তার প্রতিপালকের প্রতি বিদ্রোহী।'(আয়াত ৫৫) এখানে প্রত্যেক কাফেরের কথাই বলা হয়েছে। মক্কার মােশরেকরা এবং আইন রচনার অধিকার মানুষের ওপর ন্যস্ত করার মধ্যে দিয়ে যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তারা সবাই তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারা আল্লাহর সাথে যুদ্ধরত। অথচ তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সুঠাম গঠন দান করেছেন ও ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন। এটা কিভাবে সম্ভবপর হতে পারে? সে তাে আল্লাহর সামনে এতাে ক্ষুদ্র নগণ্য যে, আল্লাহর সাথে তার যুদ্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। সে যে বিদ্রোহী সুলভ আচরণ করে, সেটা তার ধর্মের বিরুদ্ধে, তার জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে জীবন ব্যবস্থা মনােনীত করেছেন তার বিরুদ্ধে। আসলে এ কথা দ্বারা তার অপরাধের বিশালত্বই ফুটিয়ে তােলা হয়েছে এবং তার অপরাধকে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার সমতুল্য আখ্যায়িত করা হয়েছে। বস্তুত কোন ব্যক্তি যখন আল্লাহর রাসূলের সাথে শত্রুতা করে, আল্লাহর রসূলের আনীত জীবন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে অন্য কোনাে মতবাদে বিশ্বাসী হয়। তখন সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথেই শত্রুতা করে। সুতরাং তার ব্যাপারে রাসূলের উদ্বিগ্ন হবার প্রয়ােজন নেই। তার যুদ্ধ তাে আল্লাহর সাথে। কাজেই তিনিই তাকে দেখে নেবেন এবং তিনিই এজন্যে যথেষ্ট।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এমনটি করা আমার ক্ষমতার বাইরে ছিল না। চাইলে আমি বিভিন্ন স্থানে নবীর আবির্ভাব ঘটাতে পারতাম। কিন্তু তা আমি করিনি। বরং সারা দুনিয়ার জন্য মাত্র একজন নবী পাঠিয়েছি। একটি সূর্য যেমন সারা দুনিয়ার জন্য যথেষ্ট ঠিক তেমনি সঠিক পথ প্রদর্শনের এ একমাত্র সূর্যই সারা দুনিয়াবাসীর জন্য যথেষ্ট।
# বৃহত্তম জিহাদের তিনটি অর্থ। এক, চূড়ান্ত প্রচেষ্টা, অর্থাৎ চেষ্টা ও প্রাণপাত করার ব্যাপারে মানুষের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া। দুই, বড় আকারের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ নিজের সমস্ত উপায়-উপকরণ তার মধ্যে নিয়োজিত করা। তিন, ব্যাপক প্রচেষ্টা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রচেষ্টার কোন দিক এবং মোকাবিলার কোন ময়দান ছেড়ে না দেয়া। প্রতিপক্ষের শক্তি যেসব ময়দানে কাজ করছে সেসব ময়দানে নিজের শক্তি নিয়োজিত করা এবং সত্যের শির উঁচু করার জন্য যেসব দিক থেকে কাজ করার প্রয়োজন হয় সেসব দিক থেকে কাজ করা। কণ্ঠ ও কলমের জিহাদ, ধন ও প্রাণের জিহাদ এবং বন্দুক ও কামানের যুদ্ধ সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
# যেখানে কোন বড় নদী এসে সাগরে পড়ে এমন প্রত্যেক জায়গায় এ অবস্থা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় মিঠা পানির স্রোত পাওয়া যায়। সমুদ্রের ভীষণ লবণাক্ত পানির মধ্যেও সে তার মিষ্টতা পুরোপুরি বজায় রাখে। তুর্কী নৌসেনাপতি সাইয়েদী আলী রইস তাঁর ষোড়শ শতকে লিখিত “মিরআতুল মামালিক” গ্রন্থে পারস্য উপসাগরে এমনি ধারার একটি স্থান চিহ্নিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, সেখানে লবণাক্ত পানির নিচে রয়েছে মিঠা পানির স্রোত। আমি নিজে আমাদের নৌসেনাদের জন্য সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করেছি। বর্তমান যুগে আমেরিকান কোম্পানী যখন সৌদি আরবে তেল উত্তোলনের কাজ শুরু করে তখন তারাও শুরুতে পারস্য উপসাগরের এসব স্রোত থেকে পানি সংগ্রহ করতে থাকে। পরে দাহরানের কাছে পানির কূয়া খনন করা হয় এবং তা থেকে পানি উঠানো হতে থাকে। বাহরাইনের কাছেও সমুদ্রের তলায় মিঠা পানির স্রোত রয়েছে। সেখান থেকে লোকেরা কিছুদিন আগেও মিঠা পানি সংগ্রহ করতে থেকেছে।
এ হচ্ছে আয়াতের বাহ্যিক বিষয়বস্তু। আল্লাহর শক্তিমত্তার একটি প্রকাশ থেকে এটি তাঁর একক ইলাহ ও একক রব হবার প্রমাণ পেশ করে। কিন্তু এর শব্দাবলীর অভ্যন্তর থেকে একটি সূক্ষ ইশারা অন্য একটি বিষয়বস্তুর সন্ধান দেয়। সেটি হচ্ছে, মানব সমাজের সমুদ্র যতই লোনা ও ক্ষার হয়ে থাক না কেন আল্লাহ যখনই চান তার তলদেশ থেকে একটি সংকর্মশীল দলের মিঠা স্রোত বের করে আনতে পারেন এবং সমুদ্রের লোনা পানির তরংগগুলো যতই শক্তি প্রয়োগ করুক না কেন তারা এই স্রোত গ্রাস করতে সক্ষম হবে না।
# নগণ্য এক ফোঁটা পানি থেকে মানুষের মতো এমনি ধরনের একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি তৈরি করাটা তো সামান্য কৃতিত্বের ব্যাপার ছিল না কিন্তু তার উপর আরো কৃতিত্ব হচ্ছে এই যে, তিনি মানুষের একটি নয় বরং দু’টি আলাদা আলাদা নমুনা (নর ও নারী) তৈরি করেছেন। তারা মানবিক গুণাবলীর দিক দিয়ে একই পর্যায়ভুক্ত হলেও দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বিভিন্নতা অনেক বেশী। কিন্তু এ বিভিন্নতার কারণে তারা পরস্পর বিরোধী ও বিপরীতমুখী নয় বরং পরস্পরের পুরোপুরি জোড়ায় পরিণত হয়েছে। তারপর এ জোড়াগুলো মিলিয়ে তিনি অদ্ভূত ভারসাম্য সহকারে (যার মধ্যে অন্যের কৌশল ও ব্যবস্থাপনার সামান্যতম দখলও নেই) দুনিয়ায় পুরুষও সৃষ্টি করছেন আবার নারীও। তাদের থেকে একদিকে পুত্র ও নাতিদের একটি ধারা চলছে। তারা অন্যের ঘর থেকে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে কন্যা ও নাতনীদের একটি ধারা চলছে। তারা স্ত্রী হয়ে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক পরিবারের সাথে অন্য পরিবার মিশে সারা দেশ এক বংশ ও এক সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত হয়ে যাচ্ছে।
এখানেও এ বিষয়বস্তুর দিকে একটি সূক্ষ ইঙ্গিত আছে যে, এ সমগ্র জীবন সেক্ষেত্রে যে কর্মকৌশলটি সক্রিয় রয়েছে তার কর্মধারাই কিছুটা এমনি ধরনের যার ফলে এখানে বিভিন্নতা ও বিরোধ এবং তারপর বিভিন্ন বিরোধীয় পক্ষের জোড়া থেকেই যাবতীয় ফলাফলের উদ্ভব ঘটে। কাজেই তোমরা যে বিভিন্নতা ও বিরোধের মুখোমুখি হয়েছো তাতে ভয় পাবার কিছু নেই। এটিও একটি ফলদায়ক জিনিস।
# আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত ও তাঁর আইন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দুনিয়ার যেখানে যা কিছু প্রচেষ্টা চলছে কাফেরের সমবেদনা তার প্রতি হবে না বরং তার সমবেদনা হবে এমন সব লোকদের প্রতি যারা সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।। অনুরূপভাবে কাফেরের সমস্ত আগ্রহ আল্লাহর হুকুম মেনে চলার ও তাঁর আনুগত্য করার সাথে সম্পৃক্ত হবে না বরং তাঁর হুকুম অমান্য করার সাথে সম্পৃক্ত হবে। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কাজ যে যেখানেই করবে কাফের যদি কার্যত তার সাথে শরীক না হতে পারে তাহলে অন্ততপক্ষে জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়েই দেবে। এভাবে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের বুকে সাহস যোগাবে। অপরদিকে, যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালন করতে থাকে তাহলে কাফের তাকে বাঁধা দেবার ব্যাপারে একটুও ইতস্তত করবে না। নিজে বাঁধা দিতে না পারলে তাকে হিম্মতহারা করার জন্য যা কিছু সে করতে পারে তা করে ফেলবে। এমনকি যদি তার শুধুমাত্র নাক সিটকাবার ক্ষমতা বা সুযোগ থাকে তাহলে তাও করবে। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার প্রতিটি খবর তার জন্য হবে হৃদয় জুড়ানো সুখবর। অন্যদিকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার প্রতিটি খবর যেন তার কলিজায় তীরের মত বিঁধবে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫১-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা ও আল্লাহ তা‘আলার অন্যান্য আরো কিছু গুণাবলীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে সম্বোধন করে বলেন, যদি আমি ইচ্ছা করতাম তাহলে প্রত্যেক জাতির নিকট একজন একজন করে রাসূল প্রেরণ করতাম কিন্তু তা না করে তোমাকেই সকলের জন্য প্রেরণ করেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ)
“আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” (সূরা সাবা ৩৪:২৮)
এবং তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করেছেন কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করতে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ اٰثِمًا أَوْ كَفُوْرًا)
“অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের জন্য ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাদের মধ্যকার পাপী অথবা কাফিরের আনুগত্য কর না।” (সূরা দাহর ৭৬:২৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللّٰهَ وَلَا تُطِعِ الْكٰفِرِيْنَ وَالْمُنٰفِقِيْنَ ط إِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِيْمًا حَكِيْمًا)
“হে নাবী! ভয় কর আল্লাহ তা‘আলাকে এবং অনুসরণ করবে না কাফিরদের ও মুনাফিকদের। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মহাজ্ঞানী, উৎকৃষ্ট।” (সূরা আহযাব ৩৩:১)
এবং তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে, যেমনভাবে তোমাকে সমগ্র মানুষের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি ও কুরআন দিয়ে সম্মানিত করেছি, অনুরূপভাবে তুমি কুরআনের মাধ্যমে তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে তাবলীগী কাজ চালিয়ে যাও। এ সূরাটি মক্কায় নাযিল হয় যা সশস্ত্র জিহাদের নির্দেশের পূর্বে ছিল। তাই কুরআনের মাধ্যমে জিহাদ করার উদ্দেশ্য হল কুরআনের বিধি-বিধান প্রচার করা, কুরআনের দিকে মানুষকে আহ্বান করা।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতার মধ্যে একটি ক্ষমতার কথা বর্ণনা করেছেন, তা হল সমুদ্র বিজ্ঞান। তিনি পাশাপাশি দু’প্রকার সাগরকে বাহ্যিক কোন পার্টিশন ছাড়াই প্রবাহিত করেছেন। একটির পানি মিষ্টি ও অন্যটি লবণাক্ত, কিন্তু একটির পানি অন্যটির সাথে মিশ্রিত হয় না। مَرَجَ শব্দের অর্থ স্বাধীন ছেড়ে দেয়া। এ কারণেই চারণভূমিকে مرج বলা হয়। সেখানে জীব জন্তু স্বাধীনভাবে বিচরণ করে ও ঘাস খায়। عَذْبٌ মিঠা পানিকে বলা হয়। فُرَاتٌ অর্থ সুপেয়, مِلْحٌ অর্থ লোনা এবং أُجَاجٌ এর অর্থ তিক্ত, বিস্বাদ। بَرْزَخٌ শব্দের অর্থ আড়াল ও প্রতিবন্ধক। আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, যেখানে দুটি ভিন্ন সমুদ্র এসে একত্রিত হয় সেখানে উভয়ের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় থাকে। এ অন্তরায় দুটি সমুদ্রকে বিভক্ত করে, ফলে প্রত্যেক সমুদ্রের নিজস্ব তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব অক্ষুণœ থাকে। কিন্তু যখন এক সমুদ্র থেকে পানি অন্য সমুদ্রে প্রবেশ করে তখন সে তার নিজস্ব পানির বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। এভাবে দুই ধরণের পানির মধ্যে পরিবর্তনমূলক একীভূতকারী প্রতিবন্ধক হিসেবে এ অন্তরায় কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا)
“দুই দরিয়ার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়” (সূরা নামল ২৭:৬১) এ অন্তরায় জিব্রাল্টার, ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মিলনস্থলসহ আরো অনেক স্থানে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কুরআন যখন মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে বিভক্তকারী অন্তরায় সম্পর্কে বলে তখন ঐ অন্তরায়ের সাথে নিষেধকারী প্রতিবন্ধকতার কথাই বলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلَ بَیْنَ الْبَحْرَیْنِ حَاجِزًاﺚ ءَاِلٰھٌ مَّعَ اللہِﺚ بَلْ اَکْثَرُھُمْ لَا یَعْلَمُوْنَ)
“ও দুই দরিয়ার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়; আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে অন্য কোন মা‘বূদ আছে কি? বরং তাদের অনেকেই জানে না।” (সূরা নামল ২৭:৬১)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরো একটি ক্ষমতার কথা বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি তাদের মধ্যে বৈবাহিক ও রক্ত সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন। পিতা-মাতার দিক থেকে যে আত্মীয়তা সম্পর্ক হয় তাকে نسب বলা হয় আর স্ত্রীর দিক থেকে যে সম্পর্ক হয় তাকে صهر বলা হয়। মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা মু’মিনূনের ১২ নং আয়াতে করা হয়েছে।
অতএব আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান, অন্য কেউ নয়। তাই আমাদের উচিত সকলকে বাদ দিয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করা।
#
প্রথমত আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের বোকামির কথা বর্ণনা করেছেন যে, তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত যেসব মূর্তি, গাছ, কবরে শায়িত ব্যক্তি ইত্যাদির ইবাদত করে তারা তাদের কোনই লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। সুতরাং এদের ইবাদত করা বোকামি ব্যতীত আর কিছুই নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ ط لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ)
“তারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অনেক মা‘বূদ গ্রহণ করেছে এ আশায় যে, তাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। এসব ইলাহ তাদের কোনই সাহায্য করতে সক্ষম নয়। এরা তাদের সৈন্য (সাহায্যকারী) হিসেবে উপস্থাপিত হবে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৭৪-৭৫) এ সম্পর্কে সূরা হাজ্জের ১২ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলাই সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।
২. মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩. কোন কাফির-মুশরিকের অনুসরণ করা যাবে না।
৪. মানুষের মাঝে তাবলীগের কাজ করতে হবে হিকমতের সাথে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫১-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমি যদি ইচ্ছা করতাম তবে প্রতিটি জনপদে একজন ভয়-প্রদর্শক প্রেরণ করতে পারতাম যে জনগণকে মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে আহ্বান করতো। কিন্তু হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমি তোমাকে সারা যমীনবাসীর নিকট প্রেরণের সাথে বিশিষ্ট করেছি এবং তোমাকে আমি আদেশ করেছি যে, তুমি তাদের কাছে এই কুরআনের বাণী পৌছিয়ে দেবে। যেমন নবী (সঃ)-কে বলতে বলা হয়েছেঃ “যাতে আমি তোমাদেরকে এর দ্বারা ভয় প্রদর্শন করি।” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “দলসমূহের মধ্যে যে এটাকে প্রত্যাখ্যান করবে তার প্রতিশ্রুত জায়গা হলো জাহান্নাম।” (১১:১৭) অন্য এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি বলে দাও- হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের নিকট আল্লাহর রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।” (৭:১৫৮)
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি রক্তিম (বর্ণের লোক) এবং কৃষ্ণ (বর্ণের লোক)-এর নিকট প্রেরিত হয়েছি।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অন্য নবীকে তার কওমের নিকট বিশিষ্টভাবে প্রেরণ করা হতো, কিন্তু আমি সাধারণভাবে সমস্ত মানুষের নিকট নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি।” এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি ওর সাহায্যে অর্থাৎ কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে প্রবল সগ্রাম চালিয়ে যাও। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাও।” (৬৬:৯)।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর। অর্থাৎ তিনি পানি দুই প্রকারের করে দিয়েছেন। একটি মিষ্ট ও অপরটি লবণাক্ত। নদী, প্রস্রবণ ও কূপের পানি সাধারণতঃ মিষ্ট, স্বচ্ছ এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। কতকগুলো স্থির সমুদ্রের পানি লবণাক্ত ও বিস্বাদ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলার এই নিয়ামতের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি মিষ্ট পানি চতুর্দিকে প্রবাহিত করে দিয়েছেন যাতে লোকদের গোসল করা, সবকিছু ধৌত করা এবং ক্ষেতে ও বাগানে পৌঁছিয়ে দেয়া সহজসাধ্য হয়। পূর্বে ও পশ্চিমে তিনি লবণাক্ত পানিবিশিষ্ট প্রশান্ত মহাসাগর প্রবাহিত করেছেন যা স্থির রয়েছে এবং এদিক ওদিকে প্রবাহিত হয় না। কিন্তু ওটা তরঙ্গায়িত হচ্ছে। কোন কোন সমুদ্রে জোয়ার ভাটা হয়ে থাকে। প্রতি মাসের প্রাথমিক দিনগুলোতে তাতে বর্ধন ও প্রবাহ থাকে। অতঃপর চন্দ্রের হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে ওটাও হ্রাস পায়। শেষ পর্যন্ত ওটা স্বীয় অবস্থায় এসে পড়ে। তারপর আবার চন্দ্র বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন ওটাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং চৌদ্দ তারিখ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে চাঁদের সাথে বাড়তেই থাকে। তারপর আবার কমতে শুরু করে। এই সমুদয় সমুদ্র আল্লাহ তা’আলাই সৃষ্টি করেছেন। তিনি পূর্ণ ও ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। লবণাক্ত ও গরম পানি পান কার্যে ব্যবহৃত হয় না বটে, কিন্তু ঐ পানি বায়ুকে নির্মল করে যার ফলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয় না। তাতে যে জন্তু মরে যায় ওর দুর্গন্ধে মানুষ কষ্ট পায় না। লবণাক্ত পানির কারণে ওর বাতাস স্বাস্থ্যের অনুকূল হয় এবং ওর স্বাদ পবিত্র ও উত্তম হয়। এজন্যেই যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “আমরা সমুদ্রের পানিতে অযু করতে পারি কি?” তখন তিনি উত্তর দেনঃ “সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং ওর মৃত হালাল।” (ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এবং আহলে সুনান এটা রিওয়াইয়াত করেছেন এবং এর ইসনাদও সঠিক ও উত্তম)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনি উভয়ের মধ্যে অর্থাৎ মিষ্ট ও লবণাক্ত পানির মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের অসীম ক্ষমতা যে, তিনি স্বীয় ক্ষমতাবলে মিষ্ট ও লবণাক্ত পানিকে পৃথক পৃথক রেখেছেন। না লবণাক্ত পানি মিষ্ট পানির সাথে মিশ্রিত হতে পারে, না মিষ্ট পানি লবণাক্ত পানির সাথে মিলিত হতে পারে। যেমন তিনি বলেছেনঃ
(আরবি)
অর্থাৎ “তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র যারা পরস্পর মিলিত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরায় যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?” (৫৫: ১৯-২১) আর এক আয়াতে রয়েছেঃ কে তিনি যিনি যমীনকে নিরাপদ স্থল বানিয়েছেন এবং তাতে স্থানে স্থানে সমুদ্র প্রবাহিত করে দিয়েছেন, পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছেন, আর দুই সমুদ্রের মাঝে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়? আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য রয়েছে কি? প্রকৃত ব্যাপার এই যে, ঐ মুশরিকদের অধিকাংশ লোকই জ্ঞান রাখে না।”
মহান আল্লাহর উক্তিঃ তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। অর্থাৎ তিনি মানুষকে দুর্বল শুক্র হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাকে ঠিকঠাক করেছেন এবং তাকে সুন্দরভাবে সৃষ্টি করে নর ও নারী বানিয়েছেন। কিছুদিন পরে বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। এ জন্যেই তিনি বলেনঃ তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।
#
আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের অজ্ঞতার খবর দিচ্ছেন যে, তারা বিনা দলীল প্রমাণে প্রতিমাগুলোর পূজা করছে যারা তাদের উপকার বা অপকার কিছুই করতে পারে না। শুধু পূর্বপুরুষদের দেখাদেখি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে তাদের প্রেম-প্রীতি তারা নিজেদের অন্তরে জমিয়ে নিয়েছে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতা করছে। তারা শয়তানের সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছে এবং আল্লাহর সেনাবাহিনীর বিরোধী হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত যে, পরিণামে আল্লাহর সেনাবাহিনীই জয়যুক্ত হবে। তারা এই আশায় পড়ে রয়েছে যে, এই মিথ্যা ও বাজে মা’বৃদরা তাদের সাহায্য করবে। কিন্তু এটা তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তারা অযথা তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মুমিনদের পরিণামই ভাল হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সাহায্য করবেন। এই কাফিরদেরকে তো শয়তান শুধু আল্লাহর বিরোধিতার উপর। উত্তেজিত করছে। সে তাদের অন্তরে সত্য আল্লাহর শত্রুতা সৃষ্টি করে দিচ্ছে এবং শিরকের মহব্বত পয়দা করছে। তাই তারা আল্লাহর নির্দেশাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছে।