أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيمبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই নং #৮২৬)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১১৪-১১৯ নং আয়াত:-
[فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا
আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র, তা তোমরা আহার কর,
Then eat of what Allah has provided for you lawful and good.]
www.motaher21.net
فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا ۪ وَّ اشۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ ﴿۱۱۴﴾
আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র, তা তোমরা আহার কর এবং তোমরা যদি শুধু আল্লাহরই ইবাদত কর, তবে তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
Then eat of what Allah has provided for you [which is] lawful and good. And be grateful for the favor of Allah, if it is [indeed] Him that you worship.
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَ الدَّمَ وَ لَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۵﴾
আল্লাহ তো শুধু মৃত, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যার যবেহকালে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের নাম নেওয়া হয়েছে তা-ই তোমাদের জন্য অবৈধ করেছেন; কিন্তু কেউ অন্যায়কারী কিংবা সীমালংঘনকারী না হয়ে (তা খেতে) অনন্যোপায় হলে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
He has only forbidden to you dead animals, blood, the flesh of swine, and that which has been dedicated to other than Allah . But whoever is forced [by necessity], neither desiring [it] nor transgressing [its limit] – then indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَا تَصِفُ اَلۡسِنَتُکُمُ الۡکَذِبَ ہٰذَا حَلٰلٌ وَّ ہٰذَا حَرَامٌ لِّتَفۡتَرُوۡا عَلَی اللّٰہِ الۡکَذِبَ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ الۡکَذِبَ لَا یُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۱۶﴾ؕ
তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করবার জন্য তোমরা বলো না, ‘এটা হালাল এবং এটা হারাম।’ যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে, তারা সফলকাম হবে না।
And do not say about what your tongues assert of untruth, “This is lawful and this is unlawful,” to invent falsehood about Allah . Indeed, those who invent falsehood about Allah will not succeed.
مَتَاعٌ قَلِیۡلٌ ۪ وَّ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۱۷﴾
তাদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদয়ক শাস্তি।
[It is but] a brief enjoyment, and they will have a painful punishment.
وَ عَلَی الَّذِیۡنَ ہَادُوۡا حَرَّمۡنَا مَا قَصَصۡنَا عَلَیۡکَ مِنۡ قَبۡلُ ۚ وَ مَا ظَلَمۡنٰہُمۡ وَ لٰکِنۡ کَانُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۱۱۸﴾
ইয়াহুদীদের জন্য আমি তো শুধু তাই নিষিদ্ধ করেছিলাম, যা তোমার নিকট আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং আমি তাদের উপর কোন যুলুম করিনি; বরং তারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করত।
And to those who are Jews We have prohibited that which We related to you before. And We did not wrong them [thereby], but they were wronging themselves.
ثُمَّ اِنَّ رَبَّکَ لِلَّذِیۡنَ عَمِلُوا السُّوۡٓءَ بِجَہَالَۃٍ ثُمَّ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِکَ وَ اَصۡلَحُوۡۤا ۙ اِنَّ رَبَّکَ مِنۡۢ بَعۡدِہَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۹﴾٪
যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কর্ম করে, তারা পরে তওবা করলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্য তোমার প্রতিপালক অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Then, indeed your Lord, to those who have done wrong out of ignorance and then repent after that and correct themselves – indeed, your Lord, thereafter, is Forgiving and Merciful.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১১৪-১১৯ নং আয়াত:-
[فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا
আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার মধ্যে যা বৈধ ও পবিত্র, তা তোমরা আহার কর,
Then eat of what Allah has provided for you lawful and good.]
www.motaher21.net
১১৪-১১৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা যেন হালাল ও পবিত্র রিযিক আহার করে, তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে আর তিনি যে সকল জিনিস হারাম করেছেন ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকে।
(إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ)
এ সম্পর্কে আরো তিনবার আলোচনা হয়েছে। সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতে, সূরা মায়িদার ৩ নং আয়াতে এবং সূরা আন‘আমের ১৪৫ নং আয়াতে। এখানে চতুর্থবার উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে খুব সতর্ক করছেন যেন তারা এসব কর্ম ও আকীদার কাছে না যায়। বিশেষ করে
(وَمَآ أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰهِ بِه)
তথা জবেহকালে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা। এটি মারাত্মক শিরক। যা অনেক মুসলিম ব্যক্তিরা করে থাকে, কিন্তু তারা বুঝে এটা শিরক। যে পশু আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা হয় তার কয়েকটি অবস্থা হতে পারে ১. আল্লাহ তা‘আলার ছাড়া অন্যের নৈকট্য হাসিলের জন্য এবং জবেহ করার সময় সে ব্যক্তির নাম নেয়া। ২. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের নৈকট্য লাভ করা উদ্দেশ্য কিন্তু জবেহ করে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে। যেমন মাযার, কবর দরগাহ ইত্যাদিতে করা হয়। অনেকে মনে করে আল্লাহ তা‘আলার নামেই তো জবেহ করছি, সুতরাং পাপ বা শিরক হবে না। কিন্তু না, এটা প্রকাশ্য শিরক। আল্লাহ তা‘আলার নামে যেমন জবাই করতে হবে তেমনি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য জবাই করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمٰتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ)
“বল: ‘আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ শুধুমাত্র জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’’ (সূরা আন‘আম ৬:১৬২)
এমনকি যে জায়াগায় শিরকী ও জাহিলী যুগের কোন কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে সে জায়গায় আল্লাহ তা‘আলার জন্য কোন ইবাদত ও পশু জবেহ করা যাবে না। কারণ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: আমি বুওয়ানা নামক স্থানে উট জবাই করার মানত করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সেখানে জাহিলী যুগের কোন দেব-দেবী ছিল কি, যার পূজো করা হত? সাহাবী বললেন: না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন সেখানে তাদের কোন ঈদ-অনুষ্ঠান হয়ে থাকে কি? সাহাবী বললেন: না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন: তুমি তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। (আবূ দাউদ হা: ৩৩১৫, সহীহ) সুতরাং বুঝা যাচ্ছে দেব দেবী সরিয়ে নেয়ার পরেও অথবা কোন স্থান থেকে জাহিলী যুগের আনন্দ অনুষ্ঠান উঠে যাওয়ার পরেও সেখানে ইবাদত করা ঠিক নয়। তাহলে ঐ সকল আস্তানায় ও মাযারে কিভাবে পশু জবেহ করা বৈধ হতে পারে, যা শিরক ও গাইরুল্লাহর ইবাদতের আড্ডাখানা?
(وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ…)
মুশরিকরা কিছু কিছু হালাল জন্তুকে নিজেদের জন্য হারাম করে নিত এবং কিছু কিছু হারাম জন্তুকে হালাল করে নিত। যেমন বাহীরা, ওয়াসিলা, সায়েবা, হাম ইত্যাদি জন্তু থেকে দুধ দোহন, তাদের ওপর বোঝা বহনসহ অন্যান্য উপকার হারাম করে নিত এবং দেব-দেবীর নামে ছেড়ে দিত। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: তোমরা নিজেরাই হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করো না। এরূপ করেছিল ‘আমর বিন লুহাই’। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর লা‘নত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَّآ أَنْزَلَ اللّٰهُ لَكُمْ مِّنْ رِّزْقٍ فَجَعَلْتُمْ مِّنْهُ حَرَامًا وَّحَلٰلًا ط قُلْ آٰللّٰهُ أَذِنَ لَكُمْ أَمْ عَلَي اللّٰهِ تَفْتَرُوْنَ)
“বল: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বল: ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছ?’’ (সূরা ইউনুস ১০:৫৯)
এ সম্পর্কে সূরা মায়িদার ১০৩ নং এবং সূরা আনয়ামের ১৪০ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
لَا يُفْلِحُوْنَ অর্থাৎ যারা এভাবে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করে, আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেননি তা হারাম করে নেয়, আল্লাহ তা‘আলা যা বলেননি তা বলেছেন বলে উল্লেখ করে ইত্যাদি তারা কক্ষনো আখিরাতে সফলকাম হবে না। তারা দুনিয়াতে হয়তো কিছু দিন দুনিয়ার সামগ্রী উপভোগ করবে কিন্তু আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَي اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ – مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيْقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيْدَ بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)
“বল: ‘যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তারা সফলকাম হবে না।’ পৃথিবীতে তাদের জন্য আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর কুফরীর কারণে তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব।” (সূরা ইউনুস ১০:৬৯-৭০)
(حَرَّمْنَا مَا قَصَصْنَا عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ)
ইয়াহূদীদের ওপর যা হারাম করা হয়েছিল সে সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ১৪৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(ثُمَّ تَابُوْا مِنْۭ بَعْدِ ذٰلِكَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে তাওবার উৎসাহ প্রদান করছেন। بجهالة বা অজ্ঞতাবশত। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাগণ এ বিষয়ে একমত যে, প্রত্যেক অবাধ্য কাজ অজ্ঞতাবশত হয়। সে ইচ্ছায় করুক আর অনিচ্ছায় করুক।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন: প্রত্যেক আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য ব্যক্তি অজ্ঞ যখন সে অবাধ্যতা করে। (তিরমিযী: ৩৫৩৭, হাসান। তাফসীর ইবনে কাসীর, ২/২৬২) তবে সঠিক কথা হল: যদি গুনাহ স্বেচ্ছায় বারবার এবং বেপরোয়াভাবে না করে। (আয়সারুত তাফাসীর, ১/৩৭৬)
উপরোক্ত যে সকল বিধানাবলী জানতে পারলাম আমাদের উচিত তা মেনে চলা এবং খেয়াল রাখতে হবে আমার দ্বারা যেন শিরক না হয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হারাম জিনিস ভক্ষণ করা যাবে না।
২. হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল গণ্য করা যাবে না।
৩. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যা আরোপ করা যাবে না।
৫. অন্যায় করার পর সঠিক তাওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ থেকে জানা যায় ওপরে যে দুর্ভিক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এ সূরা নাযিলের সময় তা খতম হয়ে গিয়েছিল।
# যদি সত্যিই তোমরা আল্লাহর বন্দেগীর স্বীকৃতি দিয়ে থাকো, যেমন তোমরা দাবী করছো, তাহলে তোমরা নিজেরাই কোন জিনিসকে হালাল ও কোন জিনিসকে হারাম করার অধিকার গ্রহণ করো না। বরং যে রিযিককে স্বয়ং আল্লাহ হালাল ও পবিত্র ঘোষণা করেছেন তা খাও এবং তাঁর শোকর করো। আর যা কিছু আল্লাহর আইনে হারাম অপবিত্র ও কলুষিত তা থেকে দূরে থাকো।
# এ হুকুমটি ইতিপূর্বে সূরা বাকারার ৩ , সূরা মায়েদার ১৭৩ এবং সূরা আন’আমের ৩৫ আয়াতেও এসেছে।
# এ আয়াতটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে, হালাল ও হারাম করার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। অথবা অন্য কথায়, একমাত্র আল্লাহই আইন প্রণেতা। অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার ধৃষ্টতা দেখাবে। সে নিজের সীমালঙ্ঘন করবে। তবে যদি সে আল্লাহর আইনকে অনুমতিপত্র হিসেবে মেনে নিয়ে তার ফরমানসমূহ থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে বলে, অমুক জিনিসটি অথবা কাজটি বৈধ এবং অমুকটি অবৈধ তাহলে তা হতে পারে। এভাবে নিজের হালাল ও হারাম করার স্বাধীন ক্ষমতাকে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ বলে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি এ ধরনের বিধান তৈরী করে তার এ কাজটি দু’টি অবস্থার বাইরে যেতে পারে না। হয় সে দাবী করছে যে, যে জিনিসকে সে আল্লাহর কিতাবের অনুমোদন ছাড়াই বৈধ বা অবৈধ বলছে তাকে আল্লাহ বৈধ বা অবৈধ করেছেন। অথবা তার দাবী হচ্ছে, আল্লাহ নিজের হালাল ও হারাম করার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে মানুষকে স্বাধীনভাবে তার নিজের জীবনের শরীয়াত তৈরী করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। এ দু’টি দাবীর মধ্য থেকে যেটিই সে করবে তা নিশ্চিতভাবেই মিথ্যাচার এবং আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ ছাড়া আর কিছুই হবে না।
# ওপরে উল্লেখিত হুকুমের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উত্থাপন করা হচ্ছিল তার জবাবে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে। মক্কার কাফেরদের প্রথম আপত্তি ছিলঃ তুমি যেসব জিনিস হালাল করে রেখেছো বনী ইসরাঈলদের শরীয়াতে তো তেমনি ধরনের আরো বহু জিনিস হারাম হয়ে আছে। যদি ঐ শরীয়াতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করছো। যদি ঐ শরীয়াতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত হয়ে থাকে এবং তোমার শরীয়াত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় তাহলে উভয়ের মধ্যে এ বিরোধ কেন? দ্বিতীয় আপত্তিটি ছিলঃ বনী ইসরাঈলের শরীয়াতে শনিবারের সমস্ত দুনিয়াবী কাজ কারবার হারাম হবার যে আইনটি ছিল তাকেও তুমি উড়িয়ে দিয়েছো। এটা কি তোমার স্বেচ্ছাকৃত কাজ, না আল্লাহ নিজেই তাঁর দু’টি শরীয়াত দু’ধরনের পরস্পর বিরোধী হুকুম রেখেছেন?
# এখানে সূরা “আন ’আম”–এর ১৪৬ আয়াতঃ
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ الايه
—এর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ আয়াতে ইহুদীদের নাফরমানির কারণে বিশেষ করে কোন্ কোন্ জিনিস তাদের জন্য হারাম করা হয়েছিল তা বলা হয়েছে।
এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। সূরা নাহলের এ আয়াতে সূরা আন’আমের একটি আয়াতের বরাত দেয়া হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, সুরা আন’আম এ সূরার আগে নাযিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সূরা আন’আমে এক জায়গায় বলা হয়েছে: وَمَا لَكُمْ أَلَّا تَأْكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ (ايت : 119) এখানে সূরা নাহলের দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কারণ মক্কী সূরাগুলোর মধ্যে আন’আম ছাড়া এই একটি মাত্র সূরাতেই হারাম জিনিসগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, এর মধ্যে কোন্ সূরাটি আগে নাযিল হয়েছিল এবং কোনটি পরে? আমাদের মতে এর সঠিক জবাব হচ্ছে এই যে, প্রথমে নাযিল হয়েছিল সূরা নাহল। সূরা আন’আমের উপরোল্লিখিত আয়াতে এরই বরাত দেয়া হয়েছে। পরে কোন এক সময় মক্কার কাফেররা সূরা নাহলের এ আয়াতগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের ইতিপূর্বে বর্ণিত আপত্তিগুলো উত্থাপন করে। সে সময় সূরা আন’আম নাযিল হয়ে গিয়েছিল। তাই তাদেরকে জবাব দেয়া হয়েছে, আমরা পূর্বেই অর্থাৎ সূরা আন’আমে বলে এসেছি যে, ইহুদীদের জন্য কয়েকটি জিনিস বিশেষভাবে হারাম করা হয়েছিল। আর যেহেতু এ আপত্তি সূরা নাহলের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল তাই এর জবাবও সূরা নাহলেই প্রাসঙ্গিক বাক্য হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন : আলােচ্য আয়াতে তৎকালীন মক্কার অবস্থাই দৃষ্টান্তের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে। এই মক্কায়ই আল্লাহর ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এটাকে নিরাপদ নগরী হিসাবে ঘােষণা করা হয়েছে। এ নগরে যে প্রবেশ করবে সে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। সে হত্যাকারী হলেও তাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ তার ক্ষতি করার সাহস পাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর পবিত্র ঘরের সান্নিধ্যে থাকবে। কাবা ঘরের আশে-পাশে লােকজনকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হতাে, তাদেরকে অপহরণ করা হতাে। কিন্তু মক্কার বাসিন্দারা ওই পবিত্র ঘরের সান্নিধ্যে বসবাস করার কারণে তারা নিরাপদ ছিলাে, সুখে-শান্তিতে ছিলাে। বিভিন্ন কাফেলা ও বহিরাগত হজযাত্রীদের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রচুর ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী আসত পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থেকে। তারা যে বেলাভূমিতে বাস করতাে তা ছিলাে অত্যন্ত শুষ্ক ও অনুর্বর। সেখানে কোনাে শস্যই উৎপন্ন হতাে না। তাই তাদের কাছে জীবিকা স্বরূপ পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফলমূল আসতাে প্রচুর পরিমাণে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের আদি পিতা হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর দোয়ার বরকতে অত্যন্ত সুখ-শান্তিতে বসবাস করছিলাে, আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করছিলে। পরবর্তীতে তাদেরই বংশ থেকে একজন সত্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে নবী হিসাবে পাঠানাে হয়। তারা তাকে ভাল করেই চিনত ও জানত। তার চরিত্রে কোনাে দোষ তারা খুঁজে পায়নি। তাকে তাদের জন্যে এবং গােটা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠানাে হয়েছিলাে। তার প্রচারিত মতবাদ ইবরাহীম(আ.)-এর মতবাদেরই অনুরূপ ছিলাে। সেই ইবরাহীম(আ.) যিনি কাবা ঘরে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং যে পবিত্র ঘরের সান্নিধ্যে ও ছায়াতলে বসবাস করার কারণে তারা সুখে-শান্তিতে ছিলো, আরাম-আয়েশের মধ্যে দিন গুজরান করছিলাে। অথচ তারাই এই সত্য নবীকে অস্বীকার করে বসলাে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ ছড়াতে লাগলাে, তার ওপর এবং তার অনুসারীদের ওপর যুলুম-অত্যাচার চালাতে লাগলাে। যালিম ও অত্যাচারী না হলে এ ধরনের আচরণ তাদের পক্ষে সম্ভব হতাে না। যে দৃষ্টান্তটি আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করছেন সেটা পরিপূর্ণভাবে তাদের অবস্থার সাথে মিলে যাচ্ছে। এমনকি দৃষ্টান্তে যে করুণ পরিণতির কথা বলা হয়েছে, সেটাও তাদের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হচ্ছে। তাদের অবস্থা সেই গ্রামের বাসিন্দাদের অবস্থার ন্যায় যারা ছিলো নিরাপদ। তাদের কাছে সকল স্থান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী আসতাে। কিন্তু তারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করলাে, তার প্রেরিত রাসূল কে অস্বীকার করলাে। ফলে তাদের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির স্বাদ গ্রহণ করালেন। আলােচ্য আয়াতে ক্ষুধা ও ভীতিকে মূর্ত করে তুলে ধরার জন্যে পোশাক এর আকৃতিতে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এই পােশাকের স্বাদ যখন তারা গ্রহণ করবে তখন এর প্রভাব হবে গভীর যা অনুভূতির প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তৃত হবে এবং হৃদয়ের গভীরে রেখাপাত করবে। কারণ, ত্বকের সাথে পােশাকের স্পর্শ দ্বারা যে অনুভূতির সৃষ্ট হয়, আস্বাদনের অনুভূতি তার তুলনায় অনেক গভীর ও প্রভাব সৃষ্টিকারী । ফলে এই ভয়াবহ পরিণতির ঘটনা জেনে ওরা যেন সতর্ক হয়ে যায়। জীবিকা ও নেয়ামতের বর্ণনা এবং একই সাথে নিষেধাজ্ঞা ও বঞ্চনার বর্ণনা প্রদানের পর আল্লাহ পাক তাদেরকে লক্ষ্য করে একটা নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে বলা হচ্ছে যে, তােমরা যদি আল্লাহর প্রতি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো, এই বিশ্বাসের ওপর অটল ও দৃঢ় থাকতে চাও, একান্তভাবে কেবল আল্লাহরই আনুগত্য ও দাসত্ব করতে চাও এবং সকল প্রকার শিরকী ও কুফুরী কাজ কর্ম থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে চাও, তাহলে আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তােমাদের জন্যে জীবিকা হিসাবে হালাল করেছেন সেগুলাে গ্রহণ করাে এবং এই নেয়ামতের শােকর আদায় করাে। আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘তিনিই সমুদ্রকে (তােমাদের) অনুগত করে দিয়েছেন-যেন তার মধ্য থেকে তােমরা তাজা (মাছ ও তার) গােস্ত খেতে পারে এবং তা থেকে (মনিমুক্তার) গহনা আহরণ করে যা দিয়ে তোমরা অলংকৃত হতে পারাে। তােমরা দেখতে পাচ্ছে, কিভাবে ওর বুক চিরে জলযানগুলাে এগিয়ে চলে এবং (তা একারণে যে) তােমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর (রিযিকের) অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারবে (সবচাইতে বড়াে কথা) তােমরা যেন তার (এসব নেয়ামতের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।'(আয়াত ১১৪)
# *হালাল হারামের সীমা : এরপর যে সব বস্তু তাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে সেগুলাের একটা বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, এর বাইরে আর কোনাে কিছুই হারাম বলে গণ্য করা যাবে না-ঐ কথাটি তাদেরকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া। আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘তিনিই যমীনের মধ্যে সুদূর পাহাড় সমূহকে রেখে দিয়েছেন, যাতে করে (যমীন) তােমাদের নিয়ে (এদিকে সেদিক) ঢলে না পড়ে, তিনিই নদী (প্রবাহিত করেছেন) পথঘাট (বানিয়ে দিয়েছেন) যাতে করে তোমরী (জলে স্থলের সব জায়গা দিয়ে) গন্তব্যস্থলে পৌছুতে পারাে'(আয়াত ১১৫) মৃত জানােয়ার, রক্ত, শুকরের মাংস এবং গায়রুল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর মাংসকে হারাম করা হয়েছে। কারণ এগুলাে হয় দেহের জন্যে ও মনের জন্যে ক্ষতিকর অথবা আকীদা-বিশ্বাসের জন্যে ক্ষতিকর। মৃত পশু, রক্ত এবং শুকরের মাংস দেহ ও মনের জন্যে ক্ষতিকর, আর গারুল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর মাংস আকীদা-বিশ্বাসের জন্যে ক্ষতিকর। তাই এগুলােকে হারাম করা হয়েছে। তবে কেউ যদি কেবল জীবন রক্ষার খাতিরেই সেগুলাে গ্রহণ করে তাহলে আল্লাহ পাক তাদেরকে পাকড়াও করবেন না, বরং তাদের এই বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ, তিনি তাে দয়ালু ও ক্ষমাশীল। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, এই ধর্ম কত সহজ ও বাস্তবধর্মী। তবে এসব হারাম বস্তু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এবং মূলনীতির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা চলবে না এবং প্রয়ােজনের অতিরিক্তও গ্রহণ করা যাবে না। এ বিষয়ে ইসলামী আইন বিশারদের মাঝে কিছুটা মতপার্থক্য আছে যার বর্ণনা ইতিপূর্বে এসেছে। খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের সীমারেখা ওই পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বাইরে আর কোনাে হালাল হারামের বিধান নেই। কাজেই শিরকী মতবাদ ঘারা প্রভাবিত হয়ে এই সীমারেখা লংঘন করবে না এবং হালালকে হারাম বলতে যাবে না। কারণ, হালাল-হারাম ও বৈধ-অবৈধের চূড়ান্ত মীমাংসা আল্লাহর নির্দেশেই হয়ে থাকে। এটা একটা বিধি-বিধানের বিষয়। আর এই বিষয়টি নির্ধারণের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত। যারা এই কর্তৃত্বের অধিকারী বলে দাবী করে অথচ এই দাবীর পেছনে আল্লাহর কোনাে সমর্থন নেই, কোনাে নির্দেশ নেই তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। তারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বেড়ায়। এই শ্রেণীর লােকেরা কখনও স্বীয় উদ্দেশ্যে সফলকাম ও কামিয়াব হতে পারবে না। এ কথাই এই আয়াতটিতে বলা হচ্ছে।
# তােমাদের জিহ্বা আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরােপ করে বলেই কখনাে একথা বলাে না যে, এটা হালাল ও এটা হারাম, (জেনে রেখাে,) যারাই আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরােপ করে, তারা কখনােই সাফল্য লাভ করতে পারবে না।'(আয়াত ১১৬) অর্থাৎ নিজেরা পরস্পর যেমন মিথ্যা কথা বলে থাকে, সে ধরনের মিথ্যা কথা দিয়ে বলে বেড়িয়ােনা যে, এটা হালাল আর ওটা হারাম। কারণ, আল্লাহর সুস্পষ্ট বিধান ব্যতীত কোনাে কিছুকে হালাল বা হারাম বলে আখ্যায়িত করা জঘন্য মিথ্যাচার বৈ আর কিছু নয়। আর এ ধরনের মিথ্যাচার স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে বলেই গণ্য হবে। সুতরাং যারা স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত হবে তাদের ভাগ্যে এই ক্ষণস্থায়ী স্বল্প পার্থিব আরাম-আয়েশ ব্যতীত আর কিছুই জুটবে না। এর পর তাে তাদের ভাগ্যে মর্মান্তিক শান্তি, ব্যর্থতা ও দুর্দশাই জুটবে। এর পরও মানুষ আল্লাহর নির্দেশ ও বিধানের আশ্রয় ছাড়াই আইন-কানুন রচনা করে চলছে আর আশা করছে এর মাধ্যমে তারা ইহকালে ও পরকালে পুরস্কৃত হবে, সফলকাম হবে! সূরায়ে আনয়ামের ১৪৬ নং আয়াতে ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্যে যে সব জীব-জন্তু ও দ্রব্যাদি হারাম বলে ঘােষণা করা হয়েছে সেগুলাে মুসলমানদের বেলায় প্রযােজ্য হবে না। কারণ, আল্লাহ পাক ইহুদী জাতিকে শায়েস্তা করার জন্যেই এসব বস্তু তাদের জন্যে হারাম বলে ঘােষণা করেছেন। এ কথাই পুনরায় এই আয়াতটিতে ব্যক্ত করা হয়েছে। (আয়াত ১১৮-১১৯) আল্লাহ পাক পবিত্র ও হালাল বস্তুগুলো হারাম করে দিয়ে ইহুদী জাতিকে যে শাস্তি দিয়েছেন, তা ওদের জন্যে একটা উপযুক্ত শাস্তিই বটে। কারণ, ওরা সীমালংঘন করেছিলাে, আল্লাহর সুস্পষ্ট বিধানের পরিপন্থী কাজে লিপ্ত ছিলাে। কাজেই ওরা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে; আল্লাহ পাক তাদের ওপর যুলুম করেননি। তবে অজ্ঞতা বশত এই অপকর্মের জন্য যারা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করবে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর এ ধরনের কোনাে অপকর্মে লিপ্ত হবে না, বরং নিজেকে পরিপূর্ণপে সংশােধন করে নেবে এবং সদা সৎকাজে লিপ্ত থাকবে, তারা আল্লাহর ক্ষমা, দয়া ও সুদৃষ্টি লাভে সক্ষম হবে। এখানে কেবল ইহুদী গােনাহগারদের কথাই বলা হয়নি বরং কেয়ামত পর্যন্ত সকল গােনাহগার বান্দাদের কথাও এতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তওবা ও সৎকাজের মাধ্যমে সকলেই আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভে সক্ষম হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৪-১১৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাঁর হালাল ও পবিত্র রিযক ভক্ষণ করে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কেননা, সমস্ত নিয়ামতদাতা একমাত্র তিনিই। এই কারণে ইবাদতের যোগ্যও একমাত্র তিনই। তাঁর কোন অংশীদার নেই।
অতঃপর আল্লাহ তাআ’লা হারাম জিনিসগুলির বর্ণনা দিচ্ছেন। ঐ সব জিনিসে তাদের দ্বীনেরও ক্ষতি এবং দুনিয়ারও ক্ষতি। ওগুলো হচ্ছে নিজে নিজেই মৃত জন্তু, যবাহ করার সময় প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত এবং যে সব জন্তুকে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদের নামে যবাহ করা হয়। কিন্তু যারা অনন্যোপায় হয়ে যায়, তারা ঐ অবস্থায় ওগুলি থেকে যদি কিছু খেয়ে নেয় তবে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। সূরায়ে বাকারায় এই ধরণের আয়াত গত হয়েছে এবং সেখানে ওর পূর্ণ তাফসীরও বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন প্রয়োজন নেই। অতএব সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
এরপর মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে কাফিরদের রীতিনীতি হতে বিরত রাখছেন। তিনি বলেছেনঃ “তারা যেমন নিজেদের বিবেক অনুযায়ী হালাল ও হারাম বানিয়ে নিয়েছে, তোমরা তদ্রুপ করো না। তারা পরস্পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, অমুক নামের জন্তু বড়ই সম্মান ও মর্যাদার পাত্র। যেমন ‘বাহীরা’, ‘সায়েবা’, ওয়াসীলা ইত্যাদি।” তাই, মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করে তোমরা কোন কিছুকে হালাল ও হারাম বানিয়ে নিয়ো না।” এর মধ্যে এটাও থাকলো যে, কেউ যেন নিজের পক্ষ হতে কোন বিদআত বের না করে যার কোন শরীয়ী দলীল নেই। কিংবা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল এবং যা হালাল করেছেন তা হারাম করে না নেয়। কেউ যেন নিজের মতানুসারে কোন হুকুম আবিস্কার না করে।
(আরবি) এর মধ্যে (আরবি) টি রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের জিহবার মিথ্যা বর্ণনার দ্বারা হালালকে হারাম করে নিয়ো না। এই ধরনের লোক দুনিয়ার সফলতা এবং আখেরাতের পরিত্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। দুনিয়ায় যদিও কিছুটা সুখভোগ করে, কিন্তু মৃত্যুর সাথে সাথেই ভয়াবহ শাস্তির তারা শিকার হয়ে যাবে। এই পার্থিব জগতে সামান্য সুখের স্বাদ তারা গ্রহণ করুক, পরকালে ভীষণ শাস্তি তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। যখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তারা পরিত্রাণ পাবে না।” অর্থাৎ দুনিয়াতেও নয়, আখেরাতেও নয়। আর এক আয়াতে রয়েছেঃ “নিশ্চয় যারা মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফলকাম হবে না। দুনিয়ায় তারা সামান্য সুখভোগ করবে, আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল; অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কুফরীর কারণে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।”
#
উপরে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করলেন যে, এই উম্মতের উপর মৃতজন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যান্যদের নামে উৎসর্গীকৃত জিনিস হারাম। তারপর যার জন্যে এগুলো খাওয়ার অনুমতি রয়েছে তা প্রকাশ্যভাবে বর্ণনা করার পর এই উম্মতের উপর যে শরীয়তের কাজ হালাল ও সহজ করা হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। ইয়াহুদীদের উপর তাদের শরীয়তে যা হারাম ছিল এবং যে সংকীর্ণতা এবং অসুবিধা তাদের উপর ছিল এখানে। তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ “তাদের উপর হারামকৃত জিনিসের বর্ণনা ইতিপূর্বেই তোমার কাছে দিয়েছি।” অর্থাৎ সূরায়ে আনআমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “ইয়াহূদীদের জন্যে নখরযুক্ত সমস্ত পশু নিষিদ্ধ করেছিলাম, এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছিলাম তবে এইগুলির পৃষ্ঠের অথবা অন্ত্রের কিংবা অস্থি সংলগ্ন চর্বি ব্যতীত, তাদের অবাধ্যতার দরুণ তাদেরকে এই প্রতিফল দিয়েছিলাম, আমি তো সত্যবাদী।” (৬:১৪৬)
এখানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাদের উপর কোন যুলুম করি নাই, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করেছিল। তাদের অবিচারের কারণে ঐ পবিত্র জিনিসগুলি তাদের উপর হারাম করে দিই, যা তাদের জন্যে হালাল ছিল। দ্বিতীয় কারণ ছিল এই যে, তারা আল্লাহর পথ থেকে অন্যদেরকে বাধা প্রদান করতো।
এরপর মহান আল্লাহ তার ঐ দয়া ও করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন, যা তিনি তাঁর পাপী বান্দাদের উপর করে থাকেন। একদিকে তারা তাওবা করে আর অপর দিকে তিনি তাদের জন্যে রহমতের অঞ্চল ছড়িয়ে দেন।
পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের উক্তি এই যে, যে আল্লাহর অবাধ্য হয় সে মুখই হয়ে থাকে। তাওবা বলা হয় পাপকার্য হতে সরে আসাকে। আর ইসলাহ বলে তাঁর আনুগত্যের কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়াকে। যে এরূপ করে, তার পাপ ও পদস্থলনের পরেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার উপর দয়া করেন।
(Book# 826)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 114-119
[فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا
Then eat of what Allah has provided for you lawful and good.]
www.motaher21.net
English Tafsir Ibne Kasir said that:-
The Command to eat Lawful Provisions and to be Thankful, and an Explanation of what is Unlawful
Allah says:
فَكُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ حَللاً طَيِّبًا وَاشْكُرُواْ نِعْمَتَ اللّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالْدَّمَ وَلَحْمَ الْخَنزِيرِ
So eat of the lawful and good food which Allah has provided for you. And be grateful for Allah’s favor, if it is He Whom you worship.
He has only forbidden dead flesh, blood, the flesh of swine, and any animal which is slaughtered as a sacrifice for other than Allah.
Allah orders His believing servants to eat the good and lawful things that He has provided, and to give thanks to Him for that, for He is the Giver and Originator of all favors, Who alone deserves to be worshipped, having no partners or associate.
Then Allah mentions what He has forbidden things which harm them in both religious and worldly affairs, i.e., dead meat, blood and the flesh of pigs.
وَمَأ أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ
and any animal which is slaughtered as a sacrifice for other than Allah.
meaning, it was slaughtered with the mention of a name other than that of Allah.
Nevertheless,
فَمَنِ اضْطُرَّ
But if one is forced by necessity,
meaning, if one needs to do it,
غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ
without willful disobedience, nor transgressing,
i.e. without deliberately disobeying or transgressing, then,
فَإِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
Allah is Pardoning, Most Merciful.
We have already discussed a similar Ayah in Surah Al-Baqarah, and there is no need to repeat it here. And to Allah be praise.
Then Allah forbids us to follow the ways of the idolators who declare things to be permitted or forbidden based upon their own whims and whatever names they agree on, such as;
the Bahirah (a she-camel whose milk was spared for the idols and nobody was allowed to milk it),
the Sa’ibah (a she-camel let loose for free pasture for their false gods, idols, etc., and nothing was allowed to be carried on it),
the Wasilah (a she-camel set free for idols because it has given birth to a she-camel at its first delivery and then again gives birth to a she-camel at its second delivery), and
the Ham (a stallion camel freed from work for the sake of their idols, after it had finished a number of acts of copulation assigned for it), and so on.
All of these were laws and customs that were invented during jahiliyyah.
Then Allah says
وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَـذَا حَلَلٌ وَهَـذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُواْ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ
And do not describe what your tongues have lied about, saying:”This is lawful and this is forbidden,” to invent lies against Allah.
This includes everyone who comes up with an innovation (Bid`ah) for which he has no evidence from the Shariah, or whoever declares something lawful that Allah has forbidden, or whoever declares something unlawful that Allah has permitted, only because it suits his opinions or whim to do so.
لِمَا تَصِفُ
(describe what…),
meaning, do not speak lies because of what your tongues put forth.
Then Allah warns against that by saying:
إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
Verily, those who invent lies against Allah, will never succeed.
meaning, either in this world or the Hereafter.
مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
A passing brief enjoyment (will be theirs), but they will suffer a painful torment.
As for this world, it is transient pleasure, and in the Hereafter, theirs will be a severe punishment, as Allah says:
نُمَتِّعُهُمْ قَلِيلً ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلَى عَذَابٍ غَلِيظٍ
We let them enjoy for a little while, then in the end We will drive them into an unrelenting punishment. (31:24)
and,
قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
مَتَـعٌ فِى الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُواْ يَكْفُرُونَ
Verily, those who invent a lie against Allah, will never be successful. (A brief) enjoyment in this world! and then to Us will be their return, then We shall make them taste the severest torment because they disbelieved. (10:69-70)
Some Good Things were Forbidden for the Jews
After mentioning that He has forbidden us to eat dead meat, blood, the flesh of swine, and any animal which is slaughtered as a sacrifice for others than Allah, and after making allowances for cases of necessity – which is part of making things easy for this Ummah, because Allah desires ease for us, not hardship – Allah then mentions what He forbade for the Jews in their laws before they were abrogated, and the restrictions, limitations and difficulties involved therein.
He tells us:
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا مَا قَصَصْنَا عَلَيْكَ مِن قَبْلُ
And for those who are Jews, We have forbidden such things as We have mentioned to you before.
meaning in Surah Al-An`am, where Allah says:
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلاَّ مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوِ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ
ذَلِكَ جَزَيْنَاهُم بِبَغْيِهِمْ وِإِنَّا لَصَادِقُونَ
And unto those who are Jews, We forbade every (animal) with undivided hoof, and We forbade them the fat of the ox and the sheep except what adheres to their backs or their Hawaya, or is mixed up with a bone. Thus We recompensed them for their rebellion. And verily, We are Truthful. (6:146)
Hence Allah says here:
وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ
And We did not wrong them,
meaning, in the restrictions that We imposed upon them.
وَلَـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
but they wronged themselves.
meaning, they deserved that.
This is like the Ayah:
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَـتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيراً
Because of the wrong committed of those who were Jews, We prohibited certain good foods which had been lawful for them – and (also) for their hindering many from Allah’s way. (4:160)
Then Allah tells us, honoring and reminding believers who have sinned of His blessings, that whoever among them repents, He will accept his repentance, as He says-
ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُواْ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ
Then, your Lord for those who did evil out of ignorance,
Some of the Salaf said that this means that everyone who disobeys Allah is ignorant.
ثُمَّ تَابُواْ مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُواْ
and afterward repent and do righteous deeds,
meaning, they give up the sins they used to commit and turn to doing acts of obedience to Allah.
إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا
verily, after that, your Lord is…
means, after that mistake
لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
Pardoning, Most Merciful.