(বই নং #৮২৮) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ১২৬-১২৮ নং আয়াত:- [ وَ اِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُوۡا بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبۡتُمۡ بِہٖ ؕ যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তাহলে ঠিক ততখানি, And if you punish punish with an equivalent.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই নং #৮২৮)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১২৬-১২৮ নং আয়াত:-
[ وَ اِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُوۡا بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبۡتُمۡ بِہٖ ؕ
যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তাহলে ঠিক ততখানি,
And if you punish punish with an equivalent.]
www.motaher21.net
وَ اِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُوۡا بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبۡتُمۡ بِہٖ ؕ وَ لَئِنۡ صَبَرۡتُمۡ لَہُوَ خَیۡرٌ لِّلصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۲۶﴾
যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তাহলে ঠিক ততখানি করবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর, তাহলে অবশ্যই ধৈর্যশীলদের জন্য সেটাই উত্তম।
And if you punish [an enemy, O believers], punish with an equivalent of that with which you were harmed. But if you are patient – it is better for those who are patient.
وَ اصۡبِرۡ وَ مَا صَبۡرُکَ اِلَّا بِاللّٰہِ وَ لَا تَحۡزَنۡ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا تَکُ فِیۡ ضَیۡقٍ مِّمَّا یَمۡکُرُوۡنَ ﴿۱۲۷﴾
তুমি ধৈর্যধারণ কর; আর তোমার ধৈর্য তো হবে আল্লাহরই সাহায্যে। তাদের (অবিশ্বাসের) জন্য তুমি দুঃখ করো না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।
And be patient, [O Muhammad], and your patience is not but through Allah . And do not grieve over them and do not be in distress over what they conspire.
اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا وَّ الَّذِیۡنَ ہُمۡ مُّحۡسِنُوۡنَ ﴿۱۲۸﴾٪
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে থাকেন, যারা সংযম অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ।
Indeed, Allah is with those who fear Him and those who are doers of good.
www.motaher21.net
১২৬-১২৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوْا…)

শানে নুযূল:

মক্কার কুরাইশরা যখন উহুদের মাঠে হামযা (রাঃ)-কে হত্যা করার পর তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে এবং তার সাথে যারা শহীদ হয়েছিল। তাদের এ অবস্থা দেখে মুসলিমরা বলল: যদি আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বিজয় দান করেন তাহলে আমরাও ঐরূপ আচরণ করব। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অতঃপর সাহাবীরা প্রতিদানের কথা শুনে ধৈর্য ধারণ করে। (তাফসীর আযআউল বায়ান)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কিসাস গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন। তবে যদি কেউ ক্ষমা করে দেয় তাহলে তা তার জন্য আরো উত্তম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَجَزَا۬ؤُا سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا ج فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُه۫ عَلَي اللّٰهِ ط إِنَّه۫ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِيْنَ)‏

“মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয়, তার বিনিময় আল্লাহর নিকট আছে।” (সূরা শুরা ৪২:৪০)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিলেন এবং তাদের ষড়যন্ত্রে মনঃক্ষুণত্ন হতে নিষেধ করলেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা অধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন না। বরং তিনি তার সাথে আছেন যারা তাকে ভয় করে ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং সৎ কর্ম করে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللّٰهَ مَعَنَا)

‘চিন্তা কর না, নিশ্চয়ই‎ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা তাওবা ৯:৪০)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(قَالَ كَلَّا ج إِنَّ مَعِيَ رَبِّيْ سَيَهْدِيْنِ)

“মূসা বলল:‎ ‘কখনই নয়! আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।’’ (সূরা শু‘আরা ২৬:৬২)

অতএব সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. প্রতিশোধ গ্রহণ করা অপেক্ষা ক্ষমা করে দেয়াই উত্তম।
২. আল্লাহ তা‘আলা সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তিদেরকেই সাহায্য করেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা সৎ বান্দাদের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে সাথে রয়েছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# যারা আল্লাহকে ভয় করে সব ধরনের খারাপ পথ থেকে দূরে থাকে এবং সর্বদা সৎকর্মনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। অন্যেরা তাদের সাথে যতই খারাপ আচরণ করুক না কেন তারা দুষ্কৃতির মাধ্যমে তার জবাব দেয় না বরং জবাব দেয় সুকৃতির মাধ্যমে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*দাওয়াতের উত্তম কৌশল : পূর্বের আয়াতে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর তাওহিদী মতবাদ এবং ইহুদী ও মােশরেক সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত ও বিকৃত মতবাদের মাঝে সন্দেহের যে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছিলাে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। তাতে বলা হয়েছে যে, উভয় মতবাদের মাঝে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ(স.)-কে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তাকে বলা হচ্ছে, তিনি যেন তাওহিদ বা একত্ববাদ এর প্রতি, আল্লাহর দেখানাে সঠিক পথের প্রতি হেকমত, বিচক্ষণতা এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে আহ্বান করেন। প্রয়োজন হলে সেই মতবাদের পক্ষে সঠিক ও সুন্দর পদ্ধতিতে তর্ক বিতর্ক লিপ্ত হন। যদি বিরূদ্ধবাদীরা তাঁর ওপর এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করে বসে তাহলে ওদেরকে প্রতিহত করবেন, তাদের সমুচিত জবাব দেবেন। তবে শক্তি-সামর্থ থাকা সত্তেও ওদেরকে ক্ষমা করে দিলে সেটা হবে একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত। এক্ষত্রে মনে মনে আক্ষেপ করার কিছুই নেই। ওরা সত্যের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না বলে দুঃখ করার কিছুই নেই। মােমেনদের বিরুদ্ধে ওদের ষড়যন্ত্র ও কুট কৌশলের কারণে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, উত্তম পরিণতি কেবল মােমেন-মােত্তাকীন তথা সত্যের অনুসারী ও ধারক-বাহকদের জন্যেই নির্ধারিত। এই বাস্তব কথাটাই নিচের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘(হে নবী,) তুমি তােমার মালিকের পথে (মানুষদের) প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করাে, (কখনাে তর্কে যেতে হলে) তুমি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তিতর্ক করাে যা সবচাইতে উৎকৃষ্ট পন্থা; তােমার মালিক (এটা) ভালাে করেই জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথগামী হয়ে গেছে, (আবার) যে ব্যক্তি (হেদায়াতের) পথে রয়েছে তিনি তার সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত আছেন। যদি তােমরা কাউকে শাস্তি দাও তাহলে ঠিক ততােটুকু শাস্তিই দেবে যতােটুকু (অন্যায়) তােমাদের সাথে করা হয়েছে; অবশ্য যদি তােমরা ধৈর্য ধারণ করাে তাহলে (জেনে রেখাে,) ধৈর্যশীলদের জন্যে তাই হচ্ছে উত্তম। (হে নবী,) তুমি (নির্যাতন নিপীড়নে) ধৈর্য ধারণ করাে, তােমার ধৈর্য (সম্ভব হবে) শুধু আল্লাহ তায়ালার সাহায্য দিয়েই, এদের (আচরণের) ওপর দুঃখ করাে না, এরা যে সব ষড়যন্ত্র করে চলেছে তাতে তুমি মনােক্ষুন্ন হয়াে না। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে রয়েছেন যারা (জীবনের সর্বত্র) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলে, (সর্বোপরি) তারা হবে সৎকর্মশীল'(আয়াত ১২৫-১২৮) আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের নীতি ও পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। এই দাওয়াতের উপায় উপকরণ কি হবে, কোন নীতি ও পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে রসূলুল্লাহ(স.) এবং পরবর্তীতে তাঁর উম্মতের মােবাল্লেগরা দাওয়াতী কাজ পরিচালনা কবেন তার রূপরেখাও উক্ত আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত, দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব পালন করার পূর্বে আমরা যেন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই মূলনীতিগুলাের প্রতি দৃষ্টিপাত করি। দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা; স্বয়ং মােবাল্লেগের প্রতি বা তার জাতির প্রতি আহ্বান করা নয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মােবাল্পেগ তাঁর দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যই পালন করছেন। এটা কেবলই একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই এই দায়িত্ব পালন করার দ্বারা কোনাে মােবাল্লেগ কারও প্রতি কোনাে দয়া বা করুণা করছে না, খােদ দাওয়াত ও তাবলীগের প্রতিও নয় এবং যারা তার মাধ্যমে হেদায়াত প্রাপ্ত হচ্ছে-তাদের প্রতিও নয়। তবে এই মহান কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্যে সে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পাবে। আলোচ্য আয়াতে বিচক্ষণতার সাথে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, যাদের সামনে দাওয়াত পেশ করা হবে তাদের অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কতােটুকু বক্তব্য তাদের সামনে উপস্থাপন করলে তারা বিরক্ত হবে না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মানসিক প্রস্তুতির পূর্বেই তাদেরকে যেন কোনাে ধর্মীয় বিধান পালনে বাধ্য করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন পদ্ধতিতে বক্তব্য পেশ করলে অধিক ফলপ্রসূ হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি শ্রোতাদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্যের ধরন-ধারণের বৈচিত্র আনতে হবে। সাথে সাথে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বক্তব্যের মাধ্যমে অহেতুক উত্তেজনা, অনাকাংখিত চাঞ্চল্য এবং ধর্মীয় উগ্রতা সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় দাওয়াত ও তাবলীগের আসল উদ্দেশ্যেই ব্যহত হবে যা হেকমত ও বিচক্ষণতার পরিপন্থী। আলােচ্য আয়াতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আঞ্জাম দিতে বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, নরম ও সুন্দর ভাষায় কথা বলতে হবে যেন তা মানুষের মনের গভীরে রেখাপাত করে এবং তাদের অনুভূতিকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। অহেতুক সুরে এবং চিৎকার করে বক্তব্য প্রদান করা উচিত নয়। তদ্রুপ কারও কোনাে দোষ-ক্রটি নিয়ে প্রকাশ্য মজলিসে আলােচনা করাও উচিত নয়। মনে রাখতে হবে নরম ও মার্জিত ভাষায় উপদেশ প্রদান করলে তা অনেক সময় কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দেয়, ধর্ম বিমুখ লােকদের মনেও সাড়া জাগায় এবং এসব লােকদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। নরম ও সুন্দর উপদেশ যতটুকু মঙ্গল বয়ে আনে ততােটুকু ধমক, উত্তেজনাকর বক্তব্য এবং ভৎর্সনা-গঞ্জনা দ্বারা তা কখনােই সম্ভব হয় না। প্রয়ােজন হলে সুন্দর ও সঠিক পদ্ধতিতে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হতে হবে। তবে তর্ক করতে গিয়ে কখনও বিপক্ষের লােকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে তদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। তারা যেন উপলব্ধি করতে পারে যে, এই তর্ক-বিতর্কের উদ্দেশ্য কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই নয়, বরং তাকে সন্তুষ্ট চিত্তে সত্য ও বাস্তবতাকে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ প্রত্যেকের মনেই কিছুটা অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা থাকে। ফলে মানুষ সহজেই অন্যের মতামতকে বিনা বাক্যে মেনে নিতে চায় না। তবে ভদ্রতা ও নম্রতার সাথে বুঝালে মানুষ বুঝতে চেষ্টা করে এবং অন্যের মতামত গ্রহণ করতেও প্রস্তুত হয়। কারণ এক্ষেত্রে পরাজয়ের কোনাে মনােভাব তার মাঝে সৃষ্টি হয় না। মানুষের সামনে যখন কোনাে ভিন্ন মত ও বক্তব্য পেশ করা হয় তখন সে চিন্তা করে দেখে যে, মানুষের কাছে এর মূল্য কি। যখন সে বুঝতে পারে যে, নিজস্ব মতামত ত্যাগ করে ভিন্ন কোনাে মত ও রায়কে মেনে নেয়া এক ধরনের পরাজয় তখন সে ওই ভিন্ন মত গ্রহণ করাকে নিজের ব্যক্তিত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও মান-সম্মানের জন্যে ক্ষতিকর মনে করে। তবে মার্জিত ভাষায়, ভদ্র ও নম্র ভাষায় তর্কের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করলে প্রতিপক্ষের কাছে তা গ্রহণযােগ্য হয়। সে তখন বুঝতে পারে যে, তর্কের উদ্দেশ্য তার ব্যক্তিগত মান-মর্যাদাকে খাটো করা নয়। বরং তার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সত্য বিষয়কে প্রমাণিত করা এবং সেটাকে গ্রহণ করা। সে তখন আরও বুঝতে পারে যে, এই তর্কের উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর দ্বীন। ওই তার্কিক মােবাল্লেগের ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য দেয়া নয় এবং তার ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ও নয়। মােবাল্লেগ বা দাওয়াতী কাজে নিয়ােজিত ব্যক্তিরা যেন অহেতুক উত্তেজনা ও অতি উৎসাহের বশবর্তী না হয়ে পড়ে সে জন্যে আল্লাহ পাক স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন যে, কে পথহারা এবং কে সত্য পথের অনুসারী তা একমাত্র তিনিই ভালােভাবে অবগত আছেন। কাজেই প্রতিপক্ষের সাথে তর্ক করতে গিয়ে অহেতুক ঝগড়াঝাটি বা বাদানুবাদের প্রয়ােজন নেই। বরং সত্যকে সঠিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা ও প্রমাণিত করাই প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত। মৌখিক দাওয়াত এবং যুক্তি মাধ্যমে তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম-নীতি। তবে দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর আক্রমন হলে তখন নীতি পাল্টে যাবে এবং পন্থা ও পদ্ধতিও পাল্টে যাবে। কারণ আক্রমন হচ্ছে একটি ব্যবহারিক কর্মকান্ড। তাই সত্যের মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই এবং বাতিলের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ পন্থা ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। তবে বাতিলের মােকাবেলা করতে গিয়ে যাতে সীমালংঘন না হয়ে যায়, বাড়াবাড়ির পর্যায় গিয়ে না পৌছে-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, ইসলাম হচ্ছে একটি ন্যায়ভিত্তিক ধর্ম, ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম, শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। কাজেই এই ধর্মে যুলুম-অত্যাচার থেকে নিজেকে এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে রক্ষা করার অনুমতি আছে। তবে যুলুম-অত্যাচার করার অনুমতি নেই। এই জন্যেই বলা হয়েছে, তবে যদি তােমাদেরকে শান্তি দেয়া হয় তাহলে তােমরাও তাদের শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততােটুকু- যতােটুকু তােমাদের দেয়া হয়েছে, আর যদি তােমরা ধৈর্য্য…’ এমনটি করা দাওয়াত ও তাবলীগের আদর্শ মূলনীতির পরিপন্থী নয়; বরং এর একটা অংশ। ন্যায় ও সাম্যের চৌহদ্দির ভেতরে থেকে দাওয়াতী কাজকে রক্ষা করা হলে এর মান-মর্যাদা রক্ষা পাবে। মানুষের মনে এর স্থান তুচ্ছ ও নগণ্য বলে বিবেচিত হবে না। মনে রাখতে হবে, মানুষ কখনও তুচ্ছ ও মর্যাদাহীন কোনাে আদর্শের আহ্বানে সাড়া দেয় না। তারা এটাকে আল্লাহর দাওয়াত বলেও বিশ্বাস করে না। কারণ, আল্লাহর দাওয়াত কোনাে হেলা-খেলার বস্তু নয় যে, তা পদদলিত হতে থাকবে আর তাকে রক্ষা করার মতাে কেউ থাকবে না। তদ্রুপ যারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী তারা বিনা বাক্যে অন্যায় অবিচারকে মেনে নেবে, এমনটি নয়। কারণ, তারা আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত হয়েই তারা এই পৃথিবীর বুকে সত্যের প্রতিষ্ঠায় মানব সমাজে ন্যায় নীতির প্রতিষ্ঠায় এবং মানবতাকে সত্যের পথে পরিচালনায় নিজেদেরকে নিয়ােজিত রেখেছে। যদি তারা কেবলই অত্যাচারিত হতে থাকে, নির্যাতিত হতে থাকে আর এর প্রতিকারের ক্ষমতা তাদের না থাকে-তাহলে এসব গুরু দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে? যদিও ইসলাম ধর্মে সমতার ভিত্তিতে প্রতিশােধ গ্রহণ করার নীতি স্বীকৃত, তা সত্তেও পবিত্র কোরআন ধৈর্য ও ক্ষমার আদর্শেই মনুষকে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে অন্যায় ও অবিচারকে প্রতিহত করার মতাে ক্ষমতা ও শক্তি মুসলমানদের থাকা সত্তেও এই ক্ষমা ও ধৈর্যের নীতিই গ্রহণ করার জন্যে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যদি এর দ্বারা ভাল ফল লাভ হয় এবং দাওয়াতী কাজে এর প্রভাব ইতিবাচক হয়। যদি দাওয়াত ও আদর্শের স্বার্থে এই ক্ষমা আর সহিষ্ণুতাই ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থ আদৌ কোনাে বিবেচ্য বিষয় বলে গণ্য হবে না। আর যদি ক্ষমা ও ধৈর্য প্রদর্শনের ফলে আদর্শের মর্যাদাহানী ঘটে, আদর্শকে মানুষের চোখে হাল্কা করে ফেলে তাহলে প্রতিশােধের নীতি গ্রহণ করাই উত্তম। ধৈর্যের জন্যে প্রয়ােজন উত্তেজনাকে প্রতিহত করা, আবেগ-অনুভূতিকে দমন করা এবং একটি স্বভাবজাত প্রবৃত্তিকে দমন করা। কাজেই পবিত্র কোরআন এই কঠিন কাজটিকে আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট করে এর শুভ পরিণতির বার্তা শুনাচ্ছে। (আয়াত ১২৬-১২৭) অর্থাৎ আল্লাহর মেহেরবানী ও নেক দৃষ্টির বদৌলতেই মানুষের পক্ষে ধৈর্য ও আত্মসংযম প্রদর্শন করা সম্ভব হয়। কারণ তিনিই মানুষের মন থেকে প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার মতাে স্বভাবজাত প্রবৃত্তিকে মিটিয়ে দেন এবং ক্ষমা প্রদর্শনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। এখানে পবিত্র কোরআন রসূলুল্লাহ(স.)-কে একটি উপদেশ দিচ্ছে। উপদেশটি কেবল তাঁর জন্যেই নয়। বরং তার উম্মতের সকল মােবাল্লেগদের জন্যেই প্রযােজ্য। আর সেটা হলাে এই যে, মানুষ যদি তাদের আহ্বানে সাড়া না দেয় এবং তারা যদি সত্য পথের অনুসারী না হয় তাহলে এর কারণে যেন তারা মনক্ষুন্ন না হয়। কারণ তাদের দায়িত্ব কেবল মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করা। আর হেদায়াত ও গােমরাহীর ব্যাপারটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত। কারা হেদায়াত প্রাপ্ত হবে আর কারা হবে না-এসব বিষয় সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর নির্ধারিত বিধান মতেই হয়ে থাকে। এখানে মানুষের কোনাে হাত নেই। কাজেই এর কারণে মন খারাপ করার কিছুই নেই। একজন মােবাল্লেগ আল্লাহর পথের দিশারী, কাজেই আল্লাহই তাকে সব ধরনের অনিষ্ট ও অমঙ্গলের হাত থেকে রক্ষা করবেন। সে যদি প্রকৃত মােবাল্লেগ হয়, নিষ্ঠাবান ও নিবেদিত প্রাণ মােবাল্লেগ হয় তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনাে ষড়যন্ত্রই তার এতােটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা সর্বদা তার সহায়ক ও রক্ষক থাকবেন। হয়তাে কখনও তাকে পরীক্ষা করার জন্যে বিপদের সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহর প্রতি তার কতােটুকু আস্থা আছে-তা পরখ করার জন্যে আল্লাহর কাংখিত সাহায্য ও মদদ বিলম্বিতও হতে পারে। কিন্তু শেষ পরিণতি কি হবে, এবং কার স্বার্থে যাবে, এটা চূড়ান্ত ও নির্ধারিত। বলা হচ্ছে, (আয়াত ১২৮)। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আছেন, তাই কিসের ভয়? নিন্দুকেরা, ষড়যন্ত্রকারীরা তার কিইবা ক্ষতি করতে পারবে। এটাই হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত দাওয়াত ও তাবলীগের মূলনীতি। আর আল্লাহর ওয়াদা মােতাবেক দাওয়াতী কাজের সাফল্য এই মূলনীতির অনুসরণের মাঝেই নিহিত। আল্লাহর ওয়াদা সত্য হবে না তাে আর কার ওয়াদা সত্য হবে?

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২৬-১২৮ নং আয়াতের তাফসীর

প্রতিশোধ গ্রহণ ও হক? আদায় করার ব্যাপারে সমতা ও ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ইমাম ইবনু সীরীন প্রভৃতি গুরুজন (আরবি) আল্লাহ তাআলার এই উক্তির ভাবার্থ বর্ণনায় বলেনঃ “যদি কেউ তোমার নিকট থেকে কোন জিনিস নিয়ে নেয় তবে তুমিও তার নিকট থেকে ঐ সমপরিমাণ জিনিস নিয়ে নাও”। ইবনু যায়েদ (রঃ) বলেন যে, পূর্বে তো মুশরিকদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার নির্দেশ ছিল। তারপর যখন কতকগুলি প্রভাবশালী লোক মুসলমান হলেন তখন তারা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিতেন তবে অবশ্যই আমরা এই কুকুরদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতাম।” তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। পরে এটাও জিহাদের হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে যায়।

হযরত আতা’ ইবনু ইয়াসার (রঃ) বলেন যে, সূরায়ে নাহলের সম্পূর্ণটাই মক্কা মুকাররমায় অবতীর্ণ হয়। কিন্তু ওর শেষের এই তিনটি আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হয়। উহুদের যুদ্ধে যখন হযরত হামযাকে (রাঃ) শহীদ করে দেয়া হয় এবং শাহাদাতের পর তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিও কেটে নেয়া হয়, তখন রাসূলুল্লাহর (সঃ) যবান মুবারক থেকে হঠাৎ বেরিয়ে পড়েঃ “এরপর যখন আল্লাহ আমাকে এই মুশরিকদের উপর বিজয় দান করবেন, তখন আমি তাদের মধ্য হতে ত্রিশজন লোকের হাত পা এই ভাবে কেটে নেবো।” তাঁর এইকথা যখন সাহাবীদের (রাঃ) কানে পৌঁছলো, তখন তাঁরা ভাবাবেগে বলে উঠলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমরা তাদের উপর নিযুক্ত হলে তাদের মৃতদেহগুলিকে এমনভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলবো যা আরববাসী ইতিপূর্বে কখনো দেখে নাই।” (এটা ‘সীরাতে ইবনু ইসহাক’-এ রয়েছে। কিন্তু এ রিওয়াইয়াতটি মুরসাল এবং এতে একজন বর্ণনাকারী এমন রয়েছেন যার নামই নেয়া হয় নাই। হাঁ, তবে অন্য সনদে এটা মুত্তাসিলরূপেই বর্ণিত হয়েছে)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত হামযা ইবনু আবদিল মুত্তালিবকে (রাঃ) শহীদ করে দেয়া হয়, তখন তিনি তাঁর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন। হায়! এরচেয়ে হৃদয় বিদারক দৃশ্য আর কি হতে পারে যে, সম্মানিত পিতৃব্যের মৃতদেহের টুকরাগুলি চোখের সামনে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে! তাঁর যবান মুবারক থেকে বেরিয়ে পড়লোঃ “আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক! আমার জানা মতে আপনি ছিলেন আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্তকারী এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদনকারী। আল্লাহর শপথ! অন্য লোকদের দুঃখ-বেদনার খেলাপ না করলে আপনাকে আমি এভাবেই রেখে দিতাম, শেষ পর্যন্ত আপনাকে আল্লাহ তাআলা হিংস্ৰজন্তুর পেট হতে বের করতেন।” বা এই ধরনের কোন কথা উচ্চারণ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “এই মুশরিকরা যখন এ কাজ করেছে তখন আল্লাহর ছাড় লোকের দুরবস্থা এরূপই করবো।” তৎক্ষণাৎ হযরত জিবরাঈল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে আগমন করেন এবং এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় কসম পর্ণ করা হতে বিরত থাকেন এবং কসমের কাফফারা আদায় করেন। (এই হাদীসের সনদও দুর্বল। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন সালেহ বাশীর সুররী । আহলে হাদীসের নিকট তিনি দৃর্বল। ইমাম বুখারী (রঃ) তাকে মুনকারহাদীস বলেছেন) হযরত শাবী (রঃ) ও হযরত ইবনু জুরায়েজ (রঃ) বলেন যে, মুসলমানদের মুখ দিয়ে বের হয়েছিল “যারা আমাদের শহীদদের অসম্মান করেছে এবং তাঁদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি কেটে ফেলেছে, আমরা তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেই ছাড়বো।” তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেন।

হযরত উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, উহুদের যুদ্ধে ষাট জন আনসার এবং ছ’জন মুহাজির শহীদ হয়েছিলেন। এ সময় হযরত মুহাম্মদের (সঃ) যবান মুবারক থেকে বের হয়েছিলঃ “যখন আমরা এই মুশরিকদের উপর বিজয় লাভ করবো তখন আমরাও তাদেরকে টুকরা টুকরা করে ছাড়বো না।” (এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর পিতার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) অতঃপর যেই দিন মক্কা বিজিত হয়, সেই দিন এক ব্যক্তি বলেছিলেনঃ “আজকের দিন কুরায়েশদেরকে চেনাও যাবে না (অর্থাৎ তাদের মৃতদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি কেটে নেয়া হবে, তাই তাদেরকে চেনা যাবে না)।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘোষণা করেনঃ “অমুক অমুক ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত লোককে নিরাপত্তা দান করা হলো।” যাদেরকে নিরাপত্তা দেয়াহলো না তাদের নামগুলিও তিনি উচ্চারণ করলেন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ করেন। তখনই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমরা ধৈর্য ধারণ করলাম এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকলাম।” এই আয়াতের দৃষ্টান্ত কুরআন কারীমের মধ্যে আরো বহু জায়গায় রয়েছে। এতে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ শরীয়ত সম্মত হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর এ ব্যাপারে উত্তম পন্থা অবলম্বন করার প্রথম ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “মন্দের বদলা সমপরিমাণ মন্দ। (৪২:৪০) এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দানের পর তিনি বলেনঃ “যে ক্ষমা করে এবং সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহ তাআলার নিকট রয়েছে।” অনুরূপভাবে (আরবি) অর্থাৎ “যখমেরও বদলা রয়েছে একথা যখমের প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দানের পর মহান আল্লাহ বলেনঃ “সাদকা হিসেবে যে ক্ষমা করে দেয়, তার এই ক্ষমা তার গুণাহর কাফফারাহয়ে যায়।” অনুরূপভাবে এই আয়াতেও সমান সমান বদলা নেয়ার বৈধতার বর্ণনার পর বলেনঃ “যদি ধৈর্য ধারণ কর তবে ধৈর্যশীলদের জন্যে ওটাই উত্তম।

এরপর ধৈর্যের প্রতি আরো বেশী গুরুত্ব আরোপ করে বলেনঃ “ধৈর্য ধারণ করা সবারই কাজ নয়। এটা একমাত্র তারই কাজ যার উপর আল্লাহর সাহায্য থাকে এবং যাকে তার পক্ষ থেকে তাওফীক দান করা হয়।”

অতঃপর বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যারা তোমার বিরুদ্ধাচরণ করছে তাদের এ কাজের জন্যে তুমি দুঃখ করো না। তাদের ভাগ্যে বিরুদ্ধাচরণ লিখে দেয়াই হয়েছে। আর তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুন্ন হয়ো না। আল্লাহ তাআলাই তোমার জন্যে যথেষ্ট। তিনিই তোমার সাহায্যকারী। তিনিই তোমাকে সবারই উপর জয়যুক্ত করবেন। তিনিই তোমাকে তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তহতে রক্ষা করবেন। তাদের শত্রুতা এবং খারাপ ইচ্ছা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।

আল্লাহ তাআলার সাহায্য, তার হিদায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার তাওফীক তাদের সাথেই রয়েছে যাদের অন্তর আল্লাহর ভয়ে এবং যাদের আমল ইহসানের জওহর দ্বারা পরিপূর্ণ রয়েছে।

যেমন জিহাদের সময় আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের নিকট ওয়াহী করেছিলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি। সুতরাং তোমরা ঈমানদারদেরকে স্থিরপদে রাখো।” (৮:১২) অনুরূপভাবে তিনি হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণকে (আঃ) বলেছিলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা দুজন ভয় করো না, আমি তোমাদের দু’জনের সাথে রয়েছি। আমি শুনি ও দেখি।” (২০:৪৬) সওর পর্বতের গুহায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকরকে (রাঃ) বলেছিলেনঃ “তুমি চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। সুতরাং এই সঙ্গ ছিল বিশিষ্ট সঙ্গ। আর এই সঙ্গ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য সাথে থাকা। সাধারণ ‘সাথ’ দেয়ার বর্ণনা রয়েছে নিম্নের আয়াতেঃ
অর্থাৎ “তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথে রয়েছেন। তোমরা যেখানেই থাকো কেন, আর তোমরা যা কিছু করছে। আল্লাহ তা দর্শনকারী।” (৫৭:৪) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমাদের তিন জনের সলাপরামর্শে চতুর্থজন তিনি থাকেন, পাঁচ জনের সলাপরামর্শে ষষ্ঠ জন থাকেন তিনি এবং এর চেয়ে কম ও বেশীতেও। তারা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তাদের সাথেই থাকেন।” (৫৮:৭) যেমন মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি যে কোন অবস্থাতেই থাকো, কুরআন পাঠেই থাকো বা অন্য যে কোন কাজে লিপ্ত থাকে না কেন আমি তোমাদের দর্শন করে থাকি।” (১০:৬১)

সুতরাং এসব আয়াতে সাথ বা সঙ্গ দ্বারা বুঝানো হয়েছে শুনা এবং দেখাকে। তাকওয়া’-এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কারণে হারাম ও পাপের কাজগুলোকে পরিত্যাগ করা। আর ইহসানের অর্থ হলো প্রতিপালক আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের কাজে লেগে থাকা। যে লোকদের মধ্যে এই দু’টি গুণ বিদ্যমান থাকে তারা আল্লাহ তাআলার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে থাকে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ এ সব লোকের পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য করে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধাচরণকারীরা ও শত্রুরা তাদের কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারে না। বরং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সফলকাম করে থাকেন।

মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হযরত মুহাম্মদ ইবনু হাতিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “হযরত উসমান (রাঃ) ঐ লোকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন যারা ঈমানদার, খোদাভীরু এবং সৎকর্মশীল।”

(Book# 828)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 126-128
[ وَ اِنۡ عَاقَبۡتُمۡ فَعَاقِبُوۡا بِمِثۡلِ مَا عُوۡقِبۡتُمۡ بِہٖ ؕ
And if you punish punish with an equivalent.]
www.motaher21.net

The Command for Equality in Punishment

Allah says:

وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ وَلَيِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ

And if you punish them, then punish them with the like of that with which you were afflicted. But if you have patience with them, then it is better for those who are patient.

Allah commands justice in punishment and equity in settling the cases of rights.

Abdur-Razzaq recorded that Ibn Sirin said concerning the Ayah,
عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ
(then punish them with the like of that with which you were afflicted),

“If a man among you takes something from you, then you should take something similar from him.”

This was also the opinion of Mujahid, Ibrahim, Al-Hasan Al-Basri, and others.

Ibn Jarir also favored this opinion.

Ibn Zayd said:

“They had been commanded to forgive the idolators, then some men became Muslim who were strong and powerful. They said, `O Messenger of Allah, if only Allah would give us permission, we would sort out these dogs!’

Then this Ayah was revealed, then it was latter abrogated by the command to engage in Jihad.
وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلاَّ بِاللّهِ

And be patient, and your patience will not be but by the help of Allah.

This emphasizes the command to be patient and tells us that patience cannot be acquired except by the will, help, decree and power of Allah.

Then Allah says:

وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ

And do not grieve over them,

meaning, those who oppose you, for Allah has decreed that this should happen.

وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ

and do not be distressed,

means do not be worried or upset.

مِّمَّا يَمْكُرُونَ

by their plots.

meaning; because of the efforts they are putting into opposing you and causing you harm, for Allah is protecting, helping, and supporting you, and He will cause you to prevail and defeat them.

إِنَّ اللّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَواْ وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ
Truly, Allah is with those who have Taqwa, and the doers of good.

meaning; He is with them in the sense of supporting them, helping them and guiding them.

This is a special kind of “being with”, as Allah says elsewhere:

إِذْ يُوحِى رَبُّكَ إِلَى الْمَلَـيِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ ءَامَنُواْ

(Remember) when your Lord revealed to the angels, “Verily, I am with you, so support those who believe.” (8:12)

And Allah said to Musa and Harun:

لَا تَخَافَأ إِنَّنِى مَعَكُمَأ أَسْمَعُ وَأَرَى

Fear not, verily I am with you both, hearing and seeing. (20:46)

The Prophet said to (Abu Bakr) As-Siddiq when they were in the cave:

لَاا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا

Do not worry, Allah is with us.”

The general kind of “being with” some one, or something is by means of seeing, hearing and knowing, as Allah says:

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

And He is with you wherever you may be. And Allah sees whatever you do. (57:4)

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَـوَتِ وَمَا فِى الاٌّرْضِ مَا يَكُونُ مِن نَّجْوَى ثَلَـثَةٍ إِلاَّ هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلاَّ هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَى مِن ذَلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلاَّ هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُواْ

Have you not seen that Allah knows whatever is in the heavens and whatever is on the earth There is no secret counsel of three but He is their fourth, – nor of five but He is their sixth, – nor of less than that or more, but He is with them wherever they may be. (58:7)

وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُواْ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا

You will not be in any circumstance, nor recite any portion of the Qur’an, nor having done any deeds, but We are witnessing you. (10:61)

الَّذِينَ اتَّقَواْ

those who have Taqwa,

means, they keep away from that which is forbidden.

وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ

and the doers of good.

meaning they do deeds of obedience to Allah. These are the ones whom Allah takes care of, He gives them support, and helps them to prevail over their enemies and opponents.

This is end of the Tafsir of Surah Al-Nahl. To Allah be praise and blessings, and peace and blessings be upon Muhammad and his family and Companions.

Leave a Reply