(Book# 114/٦٢)-২৬৪ www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٦٢)-২৬৪
www.motaher21.net

قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا۠ مَعَكُم مِّنَ الشّٰهِدِينَ

তিনি বললেন, ‘তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম’।

He said: “Then bear witness, and I am with you among the witness.”

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৮১-৮২

وَ اِذْ اَخَذَ اللّٰهُ مِیْثَاقَ النَّبِیّٖنَ لَمَاۤ اٰتَیْتُكُمْ مِّنْ كِتٰبٍ وَّ حِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَ لَتَنْصُرُنَّهٗؕ قَالَ ءَاَقْرَرْتُمْ وَ اَخَذْتُمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِیْؕ قَالُوْۤا اَقْرَرْنَاؕ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَ اَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشّٰهِدِیْنَ

স্মরণ করো, যখন আল্লাহ‌ নবীদের থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, “আজ আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমত দান করেছি, কাল যদি অন্য একজন রসূল এই শিক্ষার সত্যতা ঘোষণা করে তোমাদের কাছে আসে, যা আগে থেকেই তোমাদের কাছে আছে, তাহলে তোমাদের তার প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তাকে সাহায্য করতে হবে।” এই বক্তব্য উপস্থাপন করার পর আল্লাহ‌ জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কি এ কথার স্বীকৃতি দিচ্ছো এবং আমার পক্ষ থেকে অঙ্গীকারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে প্রস্তুত আছো?” তারা বললো, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ্‌ বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম,

فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ

এরপর যারাই এ অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তারাই হবে ফাসেক।”

৮১-৮২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

এখানে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে- হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবী (আঃ)-এর নিকট আল্লাহ তা’আলা এই অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, কোন সময় যখন তাদের মধ্যে কাউকে আল্লাহ পাক গ্রন্থ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করবেন এবং তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন, তখন যদি তার যুগেই অন্য কোন নবী এসে যান তবে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাকে সাহায্য করা এ নবীর অবশ্য কর্তব্য। এই নয় যে, স্বীয় জ্ঞান ও নবুওয়াতের প্রতি লক্ষ্য করতঃ তিনি তাঁর পরবর্তী নবী (আঃ)-এর অনুসরণ ও সাহায্য হতে বিরত থাকবেন। অতঃপর তিনি নবীদেরকে বলেনঃ “তোমরা কি এটা স্বীকার করলে এবং আমার সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করলে?’ তারা তখন বললেনঃ আমরা স্বীকার করলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও সাক্ষী থাকলাম। অতঃপর যে কেউ এই অঙ্গীকার হতে ফিরে যাবে সে নিশ্চিতরূপে দুষ্কার্যকারী।

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক নবী (আঃ)-এর নিকট এই অঙ্গীকার নেন যে, যদি তিনি তাঁর যুগে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে প্রেরণ করেন তবে তাঁর অবশ্যকর্তব্য হবে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁকে সাহায্য করা, আর স্বীয় উম্মতকেও উপদেশ দেয়া যে, তারাও যেন তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতঃ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে থাকে। হযরত তাউস (রঃ), হযরত হাসান বসরী (রঃ) এবং হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা নবীদের (আঃ) নিকট অঙ্গীকার নেন যে, তারা যেন একে অপরের সত্যতা প্রতিপাদন করেন। কেউ যেন এটা মনে না করেন যে, এ তাফসীর উপরের তাফসীরের বিপরীত বরং এটা ওরই পষ্ঠপোষক। এ জন্যেই হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত বর্ণনার মতই হযরত তাউস (রঃ) হতে তার পূর্বের বর্ণনাও বর্ণিত আছে।

মুসনাদ-ই-আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আমার এক কুরাইযী ইয়াহূদী বন্ধুকে বলেছিলাম যে, সে যেন আমাকে তাওরাতের সমস্ত কথা লিখে দেয়। আপনার অনুমতি হলে আমি ঐগুলো পেশ করি।’ একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা মুবারক পরিবর্তিত হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সাবিত (রাঃ) তখন হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ “আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখমণ্ডলের অবস্থা লক্ষ্য করছেন না?’ তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহকে প্রভুরূপে, মুহাম্মাদ (সঃ)-কে রাসূলরূপে এবং ইসলামকে ধর্মরূপে আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিচ্ছি। এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ক্রোধ বিদূরিত হয় এবং তিনি বলেনঃ “যে আল্লাহর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি হযরত মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে আগমন করেন এবং তোমরা আমাকে ছেড়ে তার অনুসরণ কর তবে তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমার অংশের উম্মত তোমরাই এবং সমস্ত নবী (আঃ)-এর মধ্যে তোমাদের অংশের নবী আমি।’

মুসনাদ-ই-আবু ইয়ালার মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ তোমরা কিতাব ধারীদেরকে কিছুই জিজ্ঞেস করো না। তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট, সুতরাং তোমাদেরকে কিরূপে তারা সুপথ প্রদর্শন করবে? বরং সম্ভবতঃ তোমরা কোন মিথ্যার সত্যতা প্রতিপাদন করবে এবং কোন সত্যকে মিথ্যা বলে দেবে। আল্লাহর শপথ! যদি হযরত মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকতেন তবে তার জন্যে আমার আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছু বৈধ হতো না। কোন কোন হাদীসে রয়েছেঃ যদি হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তবে তাঁদেরও আমার আনুগত্য ছাড়া কোন উপায় ছিল না। সুতরাং সাব্যস্ত হলো যে, আমাদের রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবীদের (আঃ) সমাপ্তকারী এবং সবচেয়ে বড় ইমাম। যে কোন যুগে তিনি নবী হয়ে আসলে তার আনুগত্য স্বীকার করা সবারই জন্যে অবশ্য কর্তব্য হতো। আর সেই যুগের সমস্ত নবী (আঃ)-এর আনুগত্যের উপর তার আনুগত্য অগ্রগণ্য হতো। এ কারণেই মিরাজের রাত্রে বায়তুল মুকাদ্দাসে তাঁকেই সমস্ত নবী (আঃ)-এর ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছি। অনুরূপভাবে হাশরের মাঠেও আল্লাহ তাআলার নিকট একমাত্র সুপারিশকারী তিনিই হবেন। এটাই ঐ মাকাম-ই-মাহমুদ’ যা তিনি ছাড়া আর কারও জন্যে উপযুক্ত নয়। সমস্ত নবী এবং প্রত্যেক রাসূল সেদিন এ কাজ হতে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। অবশেষে তিনিই বিশেষভাবে এ স্থানে দণ্ডয়ামান হবেন। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা সদা-সর্বদার জন্য তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

এর অর্থ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আর যে অঙ্গীকার নবীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ও অনিবার্যভাবে তাঁর অনুসারীদের ওপরও আরোপিত হয়ে যায়। অঙ্গীকারটি হচ্ছে, যে দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে তোমাদের নিযুক্ত করা হয়েছে সেই একই দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আমার পক্ষ থেকে যে নবীকে পাঠানো হবে তার সাথে তোমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তার প্রতি কোন হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। নিজেদেরকে দ্বীনের ইজারাদার মনে করো না। সত্যের বিরোধিতা করবে না। বরং যেখানে যে ব্যক্তিকেই আমার পক্ষ থেকে সত্যের পতাকা উত্তোলন করার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে সেখানেই তার পতাকা তলে সমবেত হয়ে যাবে। এখানে আরো এতটুকু কথা জেনে নিতে হবে যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে যে নবীই এসেছিলেন তাঁর কাছ থেকে এই অঙ্গীকারই নেয়া হয়েছে। আর এরই ভিত্তিতে প্রত্যেক নবী নিজের উম্মাতকে তাঁর পরে যে নবী আসবেন তার খবর দিয়েছেন এবং তাঁর সাথে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে এ ধরনের কোন অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে এমন কোন কথা কুরআনে ও হাদীসে কোথাও উল্লেখিত হয়নি। অথবা তিনি নিজের উম্মাতকে পরবর্তীকালে আগমনকারী কোন নবীর খবর দিয়ে তার প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়ে গেছেন বলে কোন কথাও জানা যায়নি।

এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে আহলি কিতাবদের এই মর্মে সতর্ক করা যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করছো এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার ও তাঁর বিরোধিতা করে তোমাদের নবীদের থেকে যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধাচরণ করছো। কাজেই এখন তোমরা ফাসেক হয়ে গেছো। অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যের শিকল কেটে বের হয়ে গেছো।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার কাছ থেকে তিনটি অঙ্গীকার নিয়েছেন। একটি সূরা আল-আ’রাফের
(اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ) আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। সে অঙ্গীকারের উদ্দেশ্য এই যে, সমগ্র মানবজাতি আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও রবুবিয়াতে বিশ্বাসী হবে। দ্বিতীয় অঙ্গীকার শুধু আহলে-কিতাব পণ্ডিতদের কাছ থেকেই নেয়া হয়েছে, যাতে তারা সত্য গোপন না করে। যার আলোচনা

(وَاِذْ اَخَذَ اللّٰهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ)

আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৭]

অনুরূপভাবে এ অঙ্গীকারের কথা সূরা আল-বাকারাহ্‌র ৮৩ এবং সূরা আল-মায়েদার ১২ ও ৭০ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তৃতীয় অঙ্গীকার আলোচ্য সূরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াতে (وَاِذْ اَخَذَ اللّٰهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّٖنَ) বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ (مِيْثَاقَ) বা অঙ্গীকার কি? এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আলী ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা সব রাসূলগণের কাছ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অঙ্গীকার নেন যে, তারা স্বয়ং যদি তার আমলে জীবিত থাকেন, তবে যেন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং তাকে সাহায্য করেন। স্বীয় উম্মতকেও যেন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে যান। [তাবারী] পক্ষান্তরে তাউস, হাসান বসরী, কাতাদাহ্‌ প্রমুখ তফসীরবিদগণ বলেনঃ রাসূলগণের কাছ থেকে এ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল– যাতে তারা পরস্পরকে সাহায্য ও সমর্থন দান করেন। [তাবারী] বস্তুত উভয় তাফসীরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। এ কারণে আয়াতের অর্থ উভয়টিই হতে পারে।

[২] আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা সব রাসূলের কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নেন যে, আপনাদের মধ্য থেকে কোন রাসূলের পর যখন অন্য রাসূল আগমন করেন- যিনি অবশ্যই পূর্ববর্তী রাসূল ও আল্লাহ্‌র গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী হবেন, তখন পূর্ববর্তী নবীর জন্যে জরুরী হবে নতুন নবীর সত্যতা ও নবুওয়তের প্রতি নিজে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং অন্যকেও বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়ে যাওয়া। কুরআনের এ সামগ্রিক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কেও এমনি ধরনের অঙ্গীকার পূর্ববর্তী রাসূলগণের কাছ থেকে নিয়ে থাকবেন। তাই যখন ঈসা ‘‘আলাইহিস্‌ সালাম পৃথিবীতে পুনরায় নেমে আসবেন, তখন তিনিও কুরআন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধি-বিধানই পালন করবেন। এতে বুঝা যায় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত বিশ্বজনীন। তার শরীয়তের মধ্যে পূর্ববর্তী সব শরীয়ত পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলেছেন, ‘আমি সমগ্র মানবজাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছি’ [বুখারী: ৪৩৮; অনুরূপ মুসলিম: ৫২১]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ, প্রত্যেক নবীর কাছ থেকে এই অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর নবুঅতকালে যদি অন্য নবীর আবির্ভাব ঘটে, তাহলে এই নবাগত নবীর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর সহযোগিতা করা অত্যাবশ্যক হবে। যদি নবী বিদ্যমান থাকা অবস্থায় নবাগত নবীর উপর ঈমান এই নবীর উপর জরুরী হয়, তাহলে এই নবীর উম্মতের উপর নবাগত নবীর উপর ঈমান আনা তো আরো বেশী জরুরী হয়ে যায়। কোন কোন মুফাসসির رَسُوْلٌ مُصَدِّقٌ (সমর্থক রসূল) থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ব্যাপারে অন্য সমস্ত নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে যে, যদি তাঁর যুগে তিনি এসে যান, তাহলে নিজের নবুঅতের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে এই নবীর উপর ঈমান আনতে হবে। কিন্তু আসলে প্রথম অর্থের সাথে এই দ্বিতীয় অর্থ আপনা-আপনিই এসে যায়। সুতরাং কুরআনের শব্দের দিক দিয়ে প্রথম অর্থই সঠিক এবং এই অর্থের দিক থেকে এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতের সূর্য উদিত হওয়ার পর আর কোন নবীর (নবুঅতের) প্রদীপ উজ্জ্বল থাকবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে যে, একদা উমার (রাঃ) তাওরাতের কয়েকটি পাতা নিয়ে পড়ছিলেন। তা দেখে নবী করীম (সাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসা (আঃ)ও জীবিত হয়ে এসে যান আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসারী হয়ে যাও, তাহলে অবশ্য অবশ্যই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে কাসীর) বলা বাহুল্য, এখন কিয়ামত পর্যন্ত অপরিহার্য অনুসরণ কেবল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এরই করতে হবে। তাঁর আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে মুক্তি, কোন ইমামের অন্ধ অনুকরণ অথবা কোন বুযুর্গের হাতে বায়াত করার মধ্যে নয়। কোন পয়গম্বরের সিক্কা যদি না চলে, তাহলে অন্য কোন ব্যক্তিত্ব শর্তহীন আনুগত্যের অধিকারী কিভাবে হতে পারে?

[২] এখানে আহলে-কিতাব (ইয়াহুদী- খ্রিষ্টান) এবং অন্য সকল ধর্মাবলম্বিদের সতর্ক করা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রেরণের পরও তাঁর উপর ঈমান না এনে স্ব স্ব দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সেই অঙ্গীকারের বিপরীত, যা মহান আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে প্রত্যেক উম্মতের কাছ থেকে নিয়েছেন এবং এই অঙ্গীকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কুফরী। আর এখানে ‘ফাসে্ক’এর অর্থঃ কাফের। কেননা, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবূওয়াতের অস্বীকৃতি কেবল ‘ফিসক্ব’ নয়, বরং একেবারে কুফরী।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

إِصْرِيْ অর্থ আমার অঙ্গীকার, ওয়াদা।

আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) থেকে ঈসা (আঃ) পর্যন্ত প্রত্যেক নাবীর কাছ থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর নবুওয়াতকালে যদি কোন নাবীর আগমন ঘটে, তাহলে নবাগত নাবীর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সহযোগিতা করবে। যদি নাবী বিদ্যমান থাকা অবস্থায় নবাগত নাবীর ওপর ঈমান আনা জরুরী হয় তাহলে তার উম্মাতের মাঝে নবাগত নাবীর ওপর ঈমান আনা আরো বেশি জরুরী। কেউ কেউ رسول مصدق বলতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মুহাম্মাদ এর ব্যাপারে অন্যান্য সমস্ত নাবীর কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে যে, যদি তাঁর যুগে তিনি এসে যান তাহলে নিজের নবুওয়াতের সমাপ্তি ঘটিয়ে এ নাবীর ওপর ঈমান আনবে। প্রথম অর্থের মাঝে দ্বিতীয় অর্থ এমনিই এসে যায়। কেননা সকল নাবীর দাওয়াতের মূল বস্তু একটাই। সকলেই তাওহীদ, ন্যায় ও সত্যের দিকেই আহ্বান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ যদি আজ মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার আনুগত্য ছাড়া তাঁর কোন পথ ছিল না। (ইরওয়াউল গালীল হা: ১৫৮৯, সহীহ)

আল্লাহ তা‘আলা এ অঙ্গীকার নেয়ার পর স্বীকারোক্তি নিলেন এবং নিজেও তাদের সাথে সাক্ষী রইলেন। এরপরেও যারা (বিশেষ করে ইয়াহূদী-খ্রিস্টান) অমান্য করবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনবে না বরং নিজেদের স্ব-স্ব ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল। অর্থাৎ কাফির, কেননা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবূওয়াতের অস্বীকৃতি কেবল ‘ফিসক্ব’ নয় বরং একেবারে কুফরী।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. নাবীদের ধর্ম ছিল একটাই, তা হল ইসলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলার নিকট অঙ্গীকারের গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. রাসূলগণ একে অপরের সমর্থক ও সত্যায়নকারী।
৪. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমনের পর অন্য কোন ধর্ম অবলম্বন করার সুযোগ নেই।

Leave a Reply