(Book# 114/٨٦)-২৮৯ www.motaher21.net وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ ۚ সে খিয়ানাতকৃত বস্তুসহ ক্বিয়ামাতের দিন উপস্থিত হবে, On the Day of Judgement, restore what he misappropriated; সুরা: আলে-ইমরান আয়াত নং :-১৬০-১৬১

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٨٦)-২৮৯
www.motaher21.net

وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ ۚ

সে খিয়ানাতকৃত বস্তুসহ ক্বিয়ামাতের দিন উপস্থিত হবে,

On the Day of Judgement, restore what he misappropriated;

সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-১৬০-১৬১

إِن يَنصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِى يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعْدِهِۦ ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তবে তোমাদের উপর কেউই বিজয়ী হতে পারবে না এবং যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, সে অবস্থায় এমন কে আছে যে, তোমাদেরকে সাহায্য করবে? মু’মিনদের আল্লাহর প্রতি নির্ভর করাই উচিত।

وَ مَا كَانَ لِنَبِیٍّ اَنْ یَّغُلَّؕ وَ مَنْ یَّغْلُلْ یَاْتِ بِمَا غَلَّ یَوْمَ الْقِیٰمَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ

খেয়ানত করা কোন নবীর কাজ হতে পারে না। যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে কিয়ামতের দিন সে নিজের খেয়ানত করা জিনিস সহকারে হাজির হয়ে যাবে। তারপর প্রত্যেকেই তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান পেয়ে যাবে এবং কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
১৬০-১৬১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

(وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَّغُلَّ)

শানে নুযূল:

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, বদর যুদ্ধে যেসব গনীমতের মাল পাওয়া গিয়েছিল তন্মধ্যে একটি লাল রঙের চাদর হারিয়ে যায়। তখন লোকেরা বলাবলি করতে লাগল: সম্ভবত এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই নিয়েছেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (আবূ দাঊদ হা: ৩৯৭১, তিরমিযী হা: ৩০০৯, সহীহ)

(يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ)

গনীমতের মাল চুরি করা কাবীরাহ গুনাহ। এ সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যে ব্যক্তি গনীমতের মাল চুরি করবে সে কিয়ামাতের দিন সে মাল নিয়ে উঠবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩০৭৩, সহীহ মুসলিম হা: ১৮৩১)

(لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَي الْمُؤْمِنِيْنَ)

আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মধ্য থেকে রাসূল প্রেরণ করেছেন, এটা মানব জাতির জন্য অনুগ্রহ; কেননা যদি রাসূল মানব জাতি থেকে না এসে অন্য জাতি থেকে আসতেন তা হলে মানুষের সমস্যা তারা বুঝতে পারত না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ إِلَّآ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُوْنَ الطَّعَامَ وَيَمْشُوْنَ فِي الْأَسْوَاقِ)

“তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই তো আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।” (সূরা ফুরকান ২৫:২০)

সুতরাং আমাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা যে অনুগ্রহ করেছেন তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তাঁর প্রেরিত রাসূলের অনুসরণ করা আবশ্যক।

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

‘আত্মসাত করা নবীর জন্য মোটেই শোভনীয় নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, বদর যুদ্ধে যে গনীমতের মাল পাওয়া গিয়েছিল, তন্মধ্য হতে একটি লাল রং-এর চাদর হারিয়ে যায়। তখন লোকেরা বলাবলি করে যে, সম্ভবতঃ এটা রাসূলুল্লাহ-ই (সঃ) নিয়েছেন। তখনই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (জামেউত তিরমিযী) অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কোন জিনিসের অপবাদ দিয়েছিল যার ফলে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুতরাং সাব্যস্ত হচ্ছে যে, রাসূলগণের নেতা হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সঃ) যে কোন প্রকারের বিশ্বাসঘাকতা ও আত্মসাৎ করণ হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। সেটা মাল বন্টনই হোক বা আমানত আদায় করার ব্যাপারেই হোক। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এও বর্ণিত আছেঃ নবী (সঃ) আত্মসাত করতে পারেন না বা তিনি পক্ষপাতিত্বও করেন না যে, সৈন্যদের মধ্যে কাউকে যুদ্ধলব্ধ মালের অংশ দেবেন এবং কাউকে বঞ্চিত রাখবেন। এ আয়াতের তাফসীর নিম্নরূপও করা হয়েছেঃ এটা হতে পারে না যে, নবী (সঃ) আল্লাহর নাযিলকৃত কোন কিছু গোপন করবেন এবং স্বীয় উম্মতের নিকট পৌছিয়ে দেবেন না।’ (আরবী) শব্দের (আরবী)-কে পেশ দিয়েও পড়া হয়েছে। তখন অর্থ হবেঃ নবী (সঃ)-এর ব্যক্তিত্ব এরূপ নয় যে, তার নিকটতম সহচরগণ তার বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। যেহেতু হযরত কাতাদাহ (রাঃ) এবং হযরত রাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বদরের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের মাল হতে কিছু মাল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কয়েকজন সহচর বন্টনের পূর্বেই গ্রহণ করেছিল। সে সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর-ই-ইবনে জারীর) অতঃপর আত্মসাতকারী লোকদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং ভীষণ শাস্তির সংবাদ দেয়া হচ্ছে। হাদীসসমূহে এ সম্পর্কে অনেক কিছু ভীতির কথা রয়েছে। যেমন মুসনাদ-ইআহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-‘সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে তার প্রতিবেশীর ক্ষেত্রের ভূমি বা ঘরের মাটি দাবিয়ে নেয়। যদি এক হাত মাটিও অন্যায়ভাবে নিজের দিকে চেপে নেয় তবে সাতটি যমীনের গলাবদ্ধ তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। মুসনাদ-ই-আহমাদের অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যাকে আমি শাসনকর্তা নিযুক্ত করি, তার বাড়ী না থাকলে বাড়ী করতে পারে, স্ত্রী না থাকলে স্ত্রী করতে পারে; খাদেম না থাকলে তা রাখতে পারে, সোয়ারী না থাকলে ওটাও সংগ্রহ করতে পারে এবং এগুলো ছাড়া যদি অন্য কিছু গ্রহণ করে তবে আত্মসাতকারী হিসেবে গণ্য হবে।’ এ হাদীসটি সুনান-ই-আবি দাউদের মধ্যেও অন্য শব্দে বর্ণিত আছে। ইবনে জারীরের মধ্যে হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি ঐ লোকটিকে চিনি যে কিয়ামতের দিন এমন ছাগল নিয়ে আগমন করবে যে ভ্যা ভ্যা চীৎকার করবে, লোকটি আমার নাম নিয়ে ডাক দেবে। আমি বলবো-আজ আমি আল্লাহর নিকট তোমার কোন কাজে আসবো না, আমি তো তোমার নিকট আল্লাহর বাণী পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। আমি ঐ লোকটিকেও চিনি যে শব্দকারী উট নিয়ে আগমন করবে। সে বলবেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ), হে মুহাম্মদ (সঃ)! আমি বলবো-আমি তোমার জন্যে আল্লাহর নিকট কোন কিছুরই অধিকারী নই। আমি তো তাবলীগ করেছিলাম। ঐ লোকটিকেও আমি চিনে। নেবো যে চিহি চিহি শব্দকারী ঘোড়া নিয়ে উঠবে। সেও আমাকে ডাক দেবে। আমি তাকেও বলবো- আমি তো (আল্লাহর বাণী) পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। আজ আমি কোন কাজে আসবো না। আমি ঐ লোকটিকেও চিনি যে চামড়া নিয়ে উপস্থিত হবে এবং বলতে থাকবে- “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! হে মুহাম্মাদ (সঃ)’! আমি বলবো-আমি আল্লাহর নিকট তোমার জন্যে কোন উপকারের অধিকারী নই। আমি তো তোমার নিকট (আল্লাহর বাণী) পৌছিয়েই দিয়েছিলাম। এ হাদীসটি ছয়খানা বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে নেই। মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইদ গোত্রের একজন লোককে শাসনকর্তা করে পাঠান। লোকটিকে ইবনুল লাবতিয়্যাহ বলা হতো। সে যাকাত আদায় করে এসে বলে- এগুলো আপনারদের এবং এটা আমার যা তারা আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলেন-ঐ লোকদের কি হয়েছে যে, যখন আমি তাদেরকে কোন কাজে প্রেরণ করি তখন এসে বলে- ‘এটা আপনাদের এবং এটা আমার উপঢৌকন? এরা বাড়িতেই এসে বসে থাকলে দেখা যেতো, কেউ তাদেরকে উপঢৌকন পাঠায় কি-না। যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে। সেই সত্তার শপথ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ ওর মধ্য হতে কোন কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন সে ওটা স্কন্ধে বহন করে আগমন করবে। উট হলে চীৎকার করবে, গরু হলে হাম্বা রব করবে এবং ছাগল হলে ভ্যা ভ্যা শব্দ করবে।’ অতঃপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় এত উঁচু করেন যে, তার বগলের সাদা অংশ চোখে পড়ে যায় এবং তিনবার বলেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি?’ মুসনাদ- ই-আহমাদের একটি দুর্বল হাদীসে রয়েছে যে, এসব আদায়কারী ও শাসনকর্তা যেসব উপঢৌকন প্রাপ্ত হয় তা আত্মসাতের মধ্যেই গণ্য। এ বর্ণনাটি শুধুমাত্র মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যেই রয়েছে এবং এটা দুর্বল। মনে হচ্ছে যেন এটা পূর্ববর্তী দীর্ঘ বর্ণনাগুলোরই সারাংশ। জামেউত তিরমিযীর মধ্যে রয়েছে, হযরত মুআহ্ ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ইয়ামেনে প্রেরণ করেন। আমি তথায় গমন করলে তিনি আমাকে ডেকে পাঠান। আমি তাঁর নিকট ফিরে আসলে তিনি আমাকে বলেনঃ “আমি শুধুমাত্র কথা বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি। তা হচ্ছে এই যে, আমার অনুমতি ছাড়া যেটা গ্রহণ করবে তা আত্মসাত এবং প্রত্যেক আত্মসাতকারী তার আত্মসাতকৃত জিনিস নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। এ টুকুই আমার বলার ছিল। যাও, নিজ কার্যে লেগে পড়।’ মুসনাদ-ইআহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা সাহাবীগণের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসঘাতকতা ও আত্মসাত করণের বর্ণনা দেন এবং ওর বড় বড় পাপ ও শাস্তির কথা বর্ণনা করে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। অতঃপর মানুষের কিয়ামতের দিন জন্তুসমূহ নিয়ে উপস্থিত হওয়া ও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট সাহায্যের জন্যে আবেদন করা এবং তাঁর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করারও উল্লেখ আছে, যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। তাতে সোনা-চাদিরও উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হে লোক সকল! আমি যাকে আদায়কারী নিযুক্ত করি সে যদি একটি সুচ বা তার চেয়েও হালকা জিনিস চুরি করে তবে তা আত্মসাত রূপেই গণ্য হবে এবং তা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। এ কথা শুনে হযরত সা’দ ইবনে উবাদাহ (রাঃ) নামক শ্যাম বর্ণের একজন আনসারী দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তাহলে আদায়কারী নিযুক্ত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করছি।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেন, “কেন?’ তিনি বলেন, আপনার এ উক্তির কারণে।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেন, হ্যাঁ, আরও জেনে রেখো যে, যার উপর আমি কোন কার্যের দায়িত্ব অর্পণ করি তার উচিত হবে কম বেশী সব কিছুই নিয়ে আসা। যা তাকে দেয়া হবে তা সে গ্রহণ করবে এবং যা হতে বিরত রাখা হবে তা হতে বিরত থাকবে।’ এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও সুনান-ই-আবি দাউদেও রয়েছে। হযরত আবু রাফে’ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আসর নামাযের পরে প্রায়ই বানু আব্দুল আসহালের ওখানে গমন করতেন এবং প্রায়ই মাগরিব পর্যন্ত তথায় জনসমাবেশ থাকতো। একদা মাগরিবের সময় তিনি তথা হতে ফিরে আসছিলেন। সময় সংকীর্ণ ছিল বলে তিনি দ্রুত পদে চলছিলেন। বাকীতে (জান্নাতুল বাকী নামক গোরস্থান) পৌছে তিনি বলেনঃ তোমার প্রতি অভিশাপ! তোমার প্রতি অভিশাপ!’ আমি মনে করি যে, তিনি আমাকেই বলছেন। তাই আমি আমার কাপড় ঠিকঠাক করতে গিয়ে তার পিছনে পড়ে যাই। তিনি আমাকে বললেনঃ ব্যাপার কি?’ আমি বলি- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার এ উক্তির কারণে আমি পিছনে থেমে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে বলিনি, বরং এটি অমুক ব্যক্তির সমাধি। আমি তাকে অমুক গোত্রের আদায়কারী করে পাঠিয়েছিলাম। সে একটি চাদর লুকিয়ে নিয়েছিল। ঐ চাদরটি এখন আগুন হয়ে তার উপর জ্বলতে রয়েছে।’ (মুসনাদ-ই-আহমাদ) হযরত উবাদা ইবনে সাবিদ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) গনীমতের মালের উষ্ট্রপৃষ্ঠের কিছু লোম গ্রহণ করতেন, অতঃপর বলতেনঃ ‘এতে আমার ঐ অধিকারই রয়েছে যে অধিকার তোমাদের কোন একজনের রয়েছে। তোমরা আত্মসাত হতে দূরে থাক। কিয়ামতের দিন আত্মসাতকারী লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। সুচ ও সূতাও পৌছিয়ে দাও এবং তদপেক্ষা নগণ্য জিনিসও (পৌছিয়ে দাও)। আল্লাহর পথে নিকটবর্তীদের সাথে এবং দূরবর্তীদের সাথে যুদ্ধ কর। যুদ্ধ স্বদেশেও কর এবং বিদেশেও কর। জিহাদ হচ্ছে জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যে একটি দরজা। জিহাদের কারণে আল্লাহ তা’আলা কাঠিন্য হতে এবং দুঃখ ও চিন্তা হতে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর শাস্তি নিকটবর্তীদের উপর ও দূরবর্তীদের উপর জারী কর। আল্লাহর কাজ হতে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কার যেন তোমাদেরকে বিরত না রাখে। (মুসনাদ-ই- আহমাদ) এ হাদীসের কিছু অংশ সুনান-ই-ইবনে মাজার মধ্যেও বর্ণিত আছে। হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে আদায়কারী করে পাঠাবার ইচ্ছে করে বলেনঃ “হে আবু মাসউদ! যাও আমি তোমাকে যেন কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় না পাই যে, তোমার পৃষ্ঠোপরি শব্দকারী উট থাকে যা তুমি আত্মসাত করে নিয়েছে। আমি বলি-হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি তাহলে যেতে চাই না। তখন তিনি বলেনঃ “আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে জোরপূর্বক পাঠাতেও চাইনে।’ (সুনান-ই-আবি দাউদ) ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যদি কোন পাথর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয় অতঃপর ওটা সত্তর বছর পর্যন্ত চলতে থাকে তথাপি জাহান্নামের তলদেশে পৌছতে পারবে না। আত্মসাতকৃত জিনিসকে ঐরূপভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং আত্মসাতকারীকে বলা হবে-যাও ওটা নিয়ে এসো’। আল্লাহ পাকের (আরবী)-এ উক্তির ভাবার্থ এটাই। মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, খাইবারের যুদ্ধের দিন সাহাবা-ই-কিরাম আসেন ও বলেন, অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। একটি লোক সম্বন্ধে এ কথা বলা হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘কখনই নয়, আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি। কেননা, সে গনীমতের মাল হতে একটি চাদর আত্মসাত করেছিল। অতঃপর তিনি বলেন, “হে উমার ইবনে খাত্তাব! তুমি যাও এবং জনগণের মধ্যে ঘোষণা করে দাও যে, শুধুমাত্র ঈমানদারগণই জান্নাতে যাবে।’ হযরত উমার (রাঃ) বলেন, আমি গিয়ে এটা ঘোষণা করে দেই।’ এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও জামেউত্ তিরমিযীর মধ্যেও রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, একদা হযরত উমার (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনায়েস (রাঃ)-এর সঙ্গে সাদকা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিম্নের ঘোষণা শুনেননি? তিনি সাদকার মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতাকারীর সম্বন্ধে বলেছেন, ‘ওর মধ্য হতে যে ব্যক্তি উট অথবা ছাগল নিয়ে নেবে, তাকে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে উঠতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) তখন বলেন, হ্যা’। এ বর্ণনাটি সুনান-ই-ইবনে মাজার মধ্যেও রয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের মধ্যে হযরত সা’দ ইবনে উবাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে সাদকা আদায়কারী হিসেবে পাঠাবার ইচ্ছে করে বলেন, “হে সা’দ! এরূপ যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন তুমি উচ্চ শব্দকারী উট বহন করে আগমন কর।’ তখন হযরত সা’দ (রাঃ) বলেন, “আমি এ পদ গ্রহণও করব না, সুতরাং এরূপ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। অতএব রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে এ কার্য হতে নিষ্কৃতি দান করেন। মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, রূম যুদ্ধে হযরত মুসলিম ইবনে আবদুল মালিকের সঙ্গে হযরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহও ছিলেন। এক ব্যক্তির মালপত্রের মধ্যে কিছু আত্মসাতের মালও পাওয়া যায়। সেনাপতি হযরত সালিমকে ঐ ব্যক্তির সম্বন্ধে ফতওয়া জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি বলেন, আমাকে আমার পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) এবং তাঁর পিতা হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘কারও মালপত্রের মধ্যে তোমরা চুরির মাল পেলে তা পুড়িয়ে ফেলবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, “আমার ধারণা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ কথাও বলেনঃ “এবং তাকে শাস্তি প্রদান করবে।’ ঐ লোকটির মাল বাজারের মধ্যে বের করা হলে ওর মধ্যে একখানা কুরআন মাজীদও পাওয়া যায়। হযরত সালিমকে পুনরায় ঐ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওটা বিক্রি করে মূল্য সাদকা করে দিন।’ এ হাদীসটি সুনান-ই-আবি দাউদ এবং জামেউত তিরিমিযীর মধ্যেও রয়েছে। ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (রঃ) এবং ইমাম বুখারী (রঃ) প্রভৃতি বলেন যে, এ হাদীসটি মুনকার। ইমাম দারেকুতনী (রঃ) বলেন, ‘সঠিক কথা এই যে, এটা হযরত সালিম (রঃ)-এর ফতওয়া। হযরত ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণেরও এটাই উক্তি। হযরত হাসান বসরীও (রঃ) এ কথাই বলেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, তার মালপত্র জ্বালিয়ে দেয়া হবে, তাকে দাসের ‘হদ্দ’ অপেক্ষা কম প্রহার করা হবে এবং তাকে গনীমতের কোন অংশ দেয়া হবে না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ), ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং জমহূরের মাযহাব এর বিপরীত। তারা বলেন যে, তার আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দিতে হবে না, বরং ওর তুল্য তাকে শাস্তি দেয়া হবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আত্মসাতকারীর জানাযার নামায পড়তে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তার আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দেননি। মুসনাদ-ইআহমাদে রয়েছে যে, যখন কুরআন কারীমের পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়া হয় তখন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) জনগণকে বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ পারলে যেন ওটা গোপন করে রাখে। কেননা, যে ব্যক্তি যে জিনিস গোপন করে রাখবে ঐ জিনিস নিয়েই সে কিয়ামতের দিন আগমন করবে। অতঃপর তিনি বলেন আমি সত্তর বার রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ভাষায় পাঠ করেছি। তবে কি আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পড়িয়ে দেয়া আয়াতকে পরিত্যাগ করবো?’ ইমাম অকী’ও স্বীয় তাফসীরে এটা এনেছেন। সুনান-ই-আবি দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, যখন গনীমতের মাল আসতো তখন তিনি হযরত বেলাল (রাঃ)-কে দিয়ে ঘোষণা করে দিতেনঃ যার কাছে যা আছে তা যেন সে নিয়ে আসে। অতঃপর তিনি তা হতে এক পঞ্চমাংশ বের করে নিতেন এবং অবশিষ্ট বন্টন করে দিতেন। একবার এক ব্যক্তি এর পরে একগুচ্ছ চুল নিয়ে হাযির হয় এবং বলে, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা আমার নিকট রয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেনঃ “হযরত বেলাল (রাঃ) যে তিনবার ঘোষণা করেছেন তা কি শুনতে পাওনি?’ সে বলেঃ “হাঁ, পেয়েছিলাম। তিনি বলেনঃ ‘তখন আননি কেন?’ সে ওযর পেশ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘আমি এটা আর কখনও নেব না। তুমি এটা কিয়ামতের দিন নিয়ে যেয়ো।’ এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর শরীয়তের উপর চলে তার সন্তুষ্টি লাভ করে, তার পুণ্যের অধিকারী হয় এবং তার শাস্তি হতে পরিত্রাণ পায় আর যারা তাঁর ক্রোধে পতিত হয় এবং মৃত্যুর পর জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয় এ দু’দল কি কখনও সমান হতে পারে? কুরআন কারীমের মধ্যে অন্য জায়গা রয়েছেঃ যারা আল্লাহর কথাকে সত্য বলে স্বীকার করেছে এবং যারা ওটা হতে অন্ধ রয়েছে তারা সমান নয়। অন্য স্থানে ইরশাদ হচ্ছে- ‘যাদের সঙ্গে আল্লাহর উত্তম ওয়াদা হয়ে গেছে এবং যা তারা প্রাপ্ত হবে, তারা এবং দুনিয়ার উপকার লাভকারীরা সমান নয়। এরপর আল্লাহ পাক বলেন-“ভাল ও মন্দের অধিকারীরা ভিন্ন সোপানের উপর রয়েছে; ওরা রয়েছে জান্নাতের সোপানে এবং এরা রয়েছে। জাহান্নামের সোপানে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্যে তাদের কার্য অনুযায়ী শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। তারপরে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা কার্যাবলী দেখতে রয়েছেন এবং অতিসত্বরই তিনি সকলকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন; না পুণ্য মারা যাবে, না পাপ বৃদ্ধি পাবে বরং আমল অনুযায়ী প্রতিদান ও শাস্তি দেয়া হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

পেছনের অংশের প্রতীক্ষার জন্য নবী ﷺ যে তীরন্দাজ বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন তারা যখন দেখলো শত্রুসৈন্যদের মালমাত্তা লুটে নেয়া হচ্ছে তখন তারা আশঙ্কা করলো, হয়তো সমগ্র ধন-সম্পদ তারাই পাবে যারা সেগুলো হস্তগত করছে এবং গনীমাত বণ্টনের সময় আমরা বঞ্চিত হবো। তাই তারা নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে শত্রু সেনাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেবার কাজে লেগে গিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরে এসে নবী ﷺ ঐ তীরন্দাজ বাহিনীর লোকদের ডেকে তাদের এ নাফরমানীর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তারা এমন কিছু ওজর পেশ করলো যা ছিল আসলে অত্যন্ত দুর্বল।
তাদের জবাবে নবী ﷺ বললেনঃبل ظننتم انا نغل ولانقسم لكم “আসল কথা হচ্ছে, আমাদের ওপর তোমাদের আস্থা ছিল না। তোমরা মনে করছিলে আমরা তোমাদের সাথে খেয়ানত করবো এবং তোমাদের অংশ দেবো না।”
এ আয়াতটিতে আসলে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহর বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নবী নিজেই যখন ছিলেন তোমাদের সেনাপতি এবং সমস্ত বিষয়ই ছিল তাঁর হাতে তখন তোমাদের মনে এ আশঙ্কা কেমন করে দেখা দিল যে, নবীর হাতে তোমাদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না? আল্লাহর নবীর ব্যাপারে তোমরা কি এ আশঙ্কা করতে পারো যে, তাঁর তত্ত্বাবধানের যে সম্পদ থাকবে তা বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ও ইনসাফের সাথে বণ্টন না করে অন্য কোনভাবে বণ্টন করা হবে?

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] গলুলের এক অর্থ হয় খেয়ানত করা, জোর করে দখল করে নেয়া। সে হিসেবেই এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নিকট বড় গলুল তথা খেয়ানত হল এক বিঘত যমীন নেয়া। তোমরা দু’জন লোককে কোন যমীনের বা ঘরের প্রতিবেশী দেখতে পাবে। তারপর তাদের একজন তার সার্থীর অংশের এক বিঘত যমীন কেটে নেয়। যদি কেউ এভাবে যমীন কেটে নেয় সে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সাত যমীন গলায় পেঁচিয়ে থাকবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৪১]

[২] ‘গলুল’ এর অন্য অর্থ সরকারী সম্পত্তি থেকে কোন কিছু গোপন করা। গনীমতের মালও সরকারী সম্পদ। সুতরাং তা থেকে চুরি করা মহাপাপ। কোন নবীর পক্ষে এমন পাপের সম্ভাব্যতা নেই। আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গনীমতের মাল চুরি করার বিষয়টিও এসে গেছে। ঘটনাটি ছিল এই যে, বদরের যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ গনীমতের মালের মধ্যে থেকে একটি চাদর খোয়া যায়। কোন কোন লোক বলল, হয়ত সেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে থাকবেন। [তিরমিযীঃ ৩০০৯, আবুদাউদঃ ৩৯৭১]

এসব কথা যারা বলত তারা যদি মুনাফেক হয়ে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। আর তা কোন অবুঝ মুসলমানের পক্ষে বলাও অসম্ভব নয়। তবে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে, সে হয়ত মনে করে থাকবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়, যাতে (غلول) বা গনীমতের মালের ব্যাপারে অনধিকার চর্চার ভয়াবহতা এবং কেয়ামতের দিন সে জন্য কঠিন শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, কোন নবী সম্পর্কে এমন ধারণা করা যে, তিনিই এহেন পাপ কাজ করে থাকবেন, একান্তই অনর্থক ধৃষ্টতা। কারণ, নবীগণ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত।

[৩] এখানে একটা বিষয় জানা আবশ্যক যে, গনীমতের মাল চুরি করা কিংবা তাতে খেয়ানত করা বা সরকারী সম্পদ থেকে কোন কিছু আত্মসাৎ করা, সাধারণ চুরি অথবা খেয়ানত অপেক্ষা বেশী পাপের কাজ। কারণ, এ সম্পদের সাথে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সংযুক্ত থাকে। কাজেই যে লোক এতে চুরি করবে, সে চুরি করবে শত-সহস্ৰ লোকের সম্পদ। যদি কখনো কোন সময় তার মনে তা সংশোধন করার খেয়াল হয়, তখন সবাইকে তাদের অধিকার প্রত্যাপন করা কিংবা সবার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়া একান্তই দুরূহ ব্যাপার। পক্ষান্তরে অন্যান্য চুরি মালের মালিক সাধারণতঃ পরিচিত ও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। কখনও কোন সময় আল্লাহ যদি তওবাহ করার তাওফীক দান করেন, তবে তার হক আদায় করে কিংবা তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিয়ে মুক্ত হতে পারে। সে কারণেই কোন এক যুদ্ধে এক লোক যখন কিছু পশম নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল, গনীমতের মাল বন্টন করার কাজ শেষ হয়ে গেলে যখন তার মনে হল, তখন সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে উপস্থিত হল। তিনি রহমাতুললিল আলামীন এবং উম্মতের জন্য পিতা-মাতা অপেক্ষা সদয় হওয়া সত্ত্বেও তাকে এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, এখন এগুলো কেমন করে আমি সমস্ত সেনাবাহিনীর মাঝে বন্টন করব? কাজেই কেয়ামতের দিনই তুমি এগুলো নিয়ে উপস্থিত হয়ো। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৪৮৫৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/২১৩, ৬/৪২৮]

তাছাড়া গনীমতের মাল বা সরকারী সম্পদ আত্মসাৎ করার ব্যাপারটি অন্যান্য চুরি অপেক্ষা কঠিন পাপ হওয়ার আরও একটি কারণ এই যে, হাশরের ময়দানে যেখানে সমগ্র সৃষ্টি সমবেত হবে, সবার সামনে তাকে সেখানে এমনভাবে লাঞ্ছিত করা হবে যে, চুরি করা বস্তু-সামগ্রী তার কাঁধে চাপানো থাকবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “দেখ, কেয়ামতের দিন কারো কাঁধে একটি উট চাপানো অবস্থায় থাকবে এবং ঘোষণা করা হবে যে, এ লোক গনীমতের মালের উট চুরি করেছিল, এমন যেন না হয়। যদি সে লোক আমার শাফা’আত কামনা করে, তবে আমি তাকে পরিস্কার ভাষায় জবাব দিয়ে দেব যে, আমি আল্লাহ্‌র যা কিছু নির্দেশ পেয়েছিলাম, তা সবই পৌঁছে দিয়েছিলাম, এখন আমি কিছুই করতে পারব না” [বুখারীঃ ৩০৭৩]

মনে রাখা আবশ্যক যে, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং ওয়াকফের মালের অবস্থাও একই রকম, যাতে হাজার-হাজার মুসলিমের চাঁদা বা দান অন্তর্ভুক্ত। ক্ষমাও যদি করাতে হয়, তবে কার কাছ থেকে ক্ষমা করাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘সরকারী কর্মচারীদের প্রাপ্ত হাদীয়া বা উপটৌকণ গলুলের শামিল’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৪২৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ইবনুল্লতুবিয়্যাহ নামক এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োগ দেন। সে ফিরে এসে বললঃ এগুলো তোমাদের আর এগুলো আমাকে হাদীয়া দেয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাড়ালেন এবং বললেনঃ ‘কি হলো কর্মচারীর তাকে আমরা কোন কাজে পাঠাই পরে সে এসে বলে, এগুলো তোমাদের আর ওগুলো আমাকে হাদীয়া দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে দেখে না তার জন্য হাদীয়া আসে কি না? যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তার শপথ করে বলছি, যে কেউ এর থেকে কিছু নিবে কিয়ামতের দিন সেটাই সে তার কাঁধে নিয়ে আসবে। [বুখারীঃ ৬৯৭৯, মুসলিমঃ ১৮৩২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ “হে মানুষ সকল! তোমাদের কাউকে কোন কাজে লাগালে যদি সে আমাদের থেকে কিছু লুকায় তবে সে তা কেয়ামতের দিন সাথে নিয়ে আসবে’। [মুসলিমঃ ১৮৩৩]

আবদুল্লাহ ইবন আমর বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিনিসপত্রের দায়িত্বে এক লোক ছিল, তাকে ‘কারকারাহ’ বলা হতো, হঠাৎ করে সে মারা গেল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামে গেছে। লোকেরা তার জিনিসপত্র তল্লাশী করে দেখতে পেল যে, সে একটি জামা চুরি করেছে।” [বুখারী: ৩০৭৪]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] উহুদ যুদ্ধের সময় যে তীরন্দাজরা ঘাঁটি ছেড়ে গনীমতের মাল একত্রিত করার জন্য চলে এসেছিলেন, তাঁদের ধারণা ছিল, আমরা যদি (মাল জমা করার জন্য) পৌঁছতে না পারি, তাহলে সমস্ত গনীমতের মাল অন্যরা নিয়ে নিবেন। তাই তাঁদেরকে চেতনা দেওয়া হচ্ছে যে, গনীমতের মালে তোমাদের কোন অংশ থাকবে না এ রকম ধারণা তোমরা কিভাবে করে নিলে? তোমাদের কি মহান নেতা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আমানতদারী ও তাঁর বিশ্বস্ততার উপর ভরসা নেই? মনে রেখো, একজন নবীর দ্বারা কোন প্রকারের খেয়ানত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, খেয়ানত হল নবুঅত-পরিপন্থী জিনিস। যদি নবীই খেয়ানতকারী ও আত্মসাৎকারী হয়ে যান, তাহলে তাঁর নবুঅতের উপর বিশ্বাস কিভাবে করা যেতে পারে? খেয়ানত করা হল মহাপাপ; হাদীসসমূহে কঠোরভাবে তার নিন্দা করা হয়েছে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা হারাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *