أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٠٦)-৩০৮
www.motaher21.net
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ
আর যে আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হয়ে চলবে,
Those who obey Allah and His Apostle,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৩-১৪
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدْخِلْهُ جَنّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর যে আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হয়ে চলবে আল্লাহ তাকে বেহেশ্তে স্থান দান করবেন; যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এ মহা সাফল্য।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪
وَ مَنْ یَّعْصِ اللّٰهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ یَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ یُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِیْهَا ۪ وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیْنٌ۠
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানি করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে যাবে, তাকে আল্লাহ আগুনে ফেলে দেবেন। সেখানে সে থাকবে চিরকাল, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও অপমানজনক শাস্তি।
১৩-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর অবাধ্য হয় ও তাঁর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, যার মধ্যে সে সদা অবস্থান করবে। এরূপ লোকদের জন্যে অপমানজনক শাস্তি রয়েছে। অর্থাৎ এসব অবশ্য করণীয় কাজ এবং এ পরিমাণ যা আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন ও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণকে তাদের আত্মীয়তার নৈকট্য এবং তাদের প্রয়োজন অনুপাতে যার জন্যে যে অংশ নির্দিষ্ট করেছেন এগুলো হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার সীমারেখা, তোমরা ঐগুলো ভেঙ্গে দিয়ো না বা অতিক্রম করো না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশাবলী মেনে নেয়, কোন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে কোন উত্তরাধিকারীকে কম বেশী দেয়ার চেষ্টা করে না, বরং আল্লাহ পাকের নির্দেশ পুরোপুরি পালন করে, আল্লাহ তাআলা অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি তাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন যার তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী সমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। তারাই সফলকাম হবে এবং তাদেরই উদ্দেশ্য সফল হবে।
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ পাকের নির্দেশ পরিবর্তন করে দেয়, কোন ওয়ারিসের মীরাস কম বেশী করে, তার সন্তুষ্টি কামনা করে না, বরং তাঁর নির্দেশের বিপরীত কাজ করে বা তাঁর বন্টনকে ভাল চক্ষে দেখে না কিংবা তার আদেশকে ন্যায় মনে করে না, তারা চিরস্থায়ী অপমানজনক এবং বেদনাদায়ক শাস্তির মধ্যে অবস্থান করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “একটি লোক সত্তর বছর পর্যন্ত পুণ্যের কাজ করতে থাকে, অতঃপর সে অসিয়তে সময় অন্যায় ও অবিচার করে, ফলে তার পরিণতি খারাপ কার্যের উপর হয়ে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে।
অপরপক্ষে আর একজন লোক সত্তর বছর পর্যন্ত অসৎ কাজ করতে থাকে, অতঃপর সে স্বীয় অসিয়তে ন্যায় পন্থা অবলম্বন করে, ফলে তার পরিণতি ভাল কাজের উপর হয়ে থাকে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করে। অতঃপর এ হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ তোমরা (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াতটি পাঠ কর। সুনান-ই-আবি দাউদে (আরবী) -এর মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ একজন পুরুষ লোক বা স্ত্রীলোক ষাট বছর পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের কার্যে লেগে থাকে, অতঃপর সে মৃত্যুর সময় অসিয়তের ব্যাপারে কষ্ট ও ক্ষতিকর কাজ করে থাকে, তখন তার জন্যে জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যায়।
অতঃপর হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) (আরবী) হতে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। জামেউত্ তিরমিযী ও সুনান-ই-ইবনে মাজার মধ্যেও এ হাদীসটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেন। মুসনাদ-ইআহমাদের মধ্যে এ হাদীসটি পূর্ণভাবে বিদ্যমান রয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা তথা ওয়ারিশী নীতির ব্যাপারে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা লঙ্ঘন করবে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। কেননা সে আল্লাহর হুকুমকে পরিবর্তন করেছে, আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করেছে। তখনই কেউ এরূপ করতে পারে যখন সে আল্লাহর নির্দেশের উপর অসন্তুষ্ট থাকে। এজন্য আল্লাহ তাকে চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা দ্বারা শাস্তি দিবেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
আল্লাহর জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করার পেছনে এখানে দু’টি কারণ রয়েছে। এক, যদি এ আইন ও বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয় তাহলে মানুষ আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না। দুই, আল্লাহ যে অংশ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন তা একেবারেই নির্ভুল। কারণ যে বিষয়ে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা তা মানুষের চেয়ে আল্লাহ ভালো জানেন। এই সঙ্গে আল্লাহরধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা গুণের কথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, এ আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে আল্লাহ কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। বরং তিনি এমন নীতি-নিয়ম প্রবর্তন করেছেন যা মেনে চলা মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ এবং এর ফলে মানুষ কোন কষ্ট, অভাব ও সংকীর্ণতার মুখোমুখি হবে না।
(৪-নিসা:১৪.)
যারা আল্লাহ রচিত মীরাস আইন পরিবর্তন করে অথবা আল্লাহ তাঁর কিতাবে অন্যান্য যে সমস্ত আইনগত সুস্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছেন সেগুলো ভেঙে ফেলে, তাদের জন্য এ আয়াতে চিরন্তন আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে। এ দিক দিয়ে এটি একটি অত্যন্ত ভীতি সৃষ্টিকারী আয়াত। কিন্তু বড়ই আফসোসের সাথে বলতে হয়, এমন মারাত্মক ভীতি প্রদর্শন করার পরও মুসলমানরা পুরোপুরি ইহুদীদের কায়দায় নির্লজ্জভাবে আল্লাহর আইনে পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তার সীমারেখা ভেঙে ফেলার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ মীরাস আইনের ব্যাপারে যে নাফরমানি করা হয়েছে তা আল্লাহর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহের শামিল। কোথাও মেয়েদেরকে স্থায়ীভাবে মীরাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কোথাও কেবলমাত্র বড় ছেলেকে মীরাসের হকদার গণ্য করা হয়েছে। কোথাও কুরআন নির্ধারিত মীরাস বণ্টন পদ্ধতি পুরোপুরি পরিহার করে “যৌথ পারিবারিক সম্পত্তি” (Joint Family System) হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও মেয়েদের ও পুরুষদের অংশ সমান করে দেয়া হয়েছে। আর বর্তমানে এসব পুরাতন বিদ্রোহের সাথে নতুন আর একটা বিদ্রোহ যোগ হয়েছে। সেটি হচ্ছে, মুসলিম রাষ্ট্রে পাশ্চাত্যবাসীদের অনুকরণে মৃত্যুকর (eath uty) প্রবর্তন করা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, রাষ্ট্র এবং সরকারও মৃতের একজন ওয়ারিস। তার অংশ নির্ধারণ করতে (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ ভুলে গিয়েছিলেন। অথচ ইসলামী নীতির ভিত্তিতে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারের হাতে পৌঁছার একটাই মাত্র পথ। আর তা হচ্ছে, মৃতের যদি কোন নিকটতম বা দূরতম আত্মীয় না থাকে, তাহলে তার যাবতীয় পরিত্যক্ত সম্পত্তি Unclaime Properties –এর মতো রাষ্ট্রের বাইতুলমালে দাখিল হয়ে যাবে। অথবা মৃত ব্যক্তি তার সম্পত্তির একটা অংশ সরকারের নামে অসিয়ত করে গেলে সরকার তা পেতে পারে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা করে দিয়েছেন। এতে কোন বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য খাটবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা লঙ্ঘন করা হারাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে প্রতিটি মুসলিম নর-নারী বাধ্য, অন্যথায় ঈমান থাকবে না।