أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٣١)-৩৩৩
www.motaher21.net
يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓا إِلَى الطّٰغُوتِ
তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়?
They wish to go for judgement to the Taghut?
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-৬০-৬৩
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِیْنَ یَزْعُمُوْنَ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَ مَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یَّتَحَاكَمُوْۤا اِلَى الطَّاغُوْتِ وَ قَدْ اُمِرُوْۤا اَنْ یَّكْفُرُوْا بِهٖؕ وَ یُرِیْدُ الشَّیْطٰنُ اَنْ یُّضِلَّهُمْ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا
হে নবী! তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা এই মর্মে দাবী করে চলেছে যে, তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি যা তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং সেই সব কিতাবের প্রতি যেগুলো তোমরা পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল কিন্তু তারা নিজেদের বিষয়সমূহ ফায়সালা করার জন্য ‘তাগুতে’র দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদেরকে তাগুতকে অস্বীকার করার হুকুম দেয়া হয়েছিল? শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
আয়াত নং :-৬১
وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا اِلٰى مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ وَ اِلَى الرَّسُوْلِ رَاَیْتَ الْمُنٰفِقِیْنَ یَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْدًاۚ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো সেই জিনিসের দিকে, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং এসো রসূলের দিকে, তখন তোমরা দেখতে পাও ঐ মুনাফিকরা তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছ।
আয়াত নং :-৬২
فَكَیْفَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌۢ بِمَا قَدَّمَتْ اَیْدِیْهِمْ ثُمَّ جَآءُوْكَ یَحْلِفُوْنَ ط بِاللّٰهِ اِنْ اَرَدْنَاۤ اِلَّاۤ اِحْسَانًا وَّ تَوْفِیْقًا
তারপর তখন তাদের কী অবস্থা হয় যখন তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ তাদের ওপর কোন বিপদ এসে পড়ে? তখন তারা কসম খেতে খেতে তোমার কাছে আসে এবং বলতে থাকেঃ আল্লাহর কসম, আমরা তো কেবল মঙ্গল চেয়েছিলাম এবং উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো প্রকারে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক, এটিই ছিল আমাদের বাসনা।
An-Nisa’ ৪:৬৩
أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَعْلَمُ ٱللَّهُ مَا فِى قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِىٓ أَنفُسِهِمْ قَوْلًۢا بَلِيغًا
ওরা হল সেসব লোক, যাদের অন্তরে কি আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং তাদেরকে সদুপদেশ দাও। আর তাদেরকে তাদের নিজদের ব্যাপারে মর্মস্পর্শী কথা বল।
৬০-৬৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
উপরের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকদের দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন। যারা মুখে স্বীকার করে যে, আল্লাহ তাআলার পূর্বের সমস্ত কিতাবের উপর এবং এ কুরআন কারীমের উপর আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। কিন্তু যখন কোন বিবাদের মীমাংসা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন তারা কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফের দিকে প্রত্যাবর্তন করে না, বরং অন্য দিকে যায়। এ আয়াতটি ঐ দু’ব্যক্তির ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যাদের মধ্যে কিছু মতভেদ দেখা দিয়েছিল। একজন ছিল ইয়াহূদী এবং অপর জন ছিল আনসারী। ইয়াহদী আনসারীকে বলছিল, চল আমরা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নিকট হতে এর মীমাংসা করিয়ে নেবো। আনসারী বলছিল চল আমরা কা’ব ইবনে আশরাফের নিকট যাই। এও বলা হয়েছে যে, এ আয়াতটি ঐ মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা বাইরে ইসলাম প্রকাশ করতো বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অজ্ঞতা যুগের আহকামের দিকে আকৃষ্ট হতে চাচ্ছিল। এ ছাড়া আরও উক্তি রয়েছে। আয়াতটি স্বীয় আদেশ ও শব্দসমূহ হিসেবে সাধারণ। এ সমুদয় ঘটনা এর অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াত প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির দুর্নাম ও নিন্দে করছে, যে কিতাব ও সুন্নাহূকে ছেড়ে অন্য কোন বাতিলের দিকে স্বীয় ফায়সালা নিয়ে যায়। এখানে এটাই হচ্ছে তাগুত’-এর ভাবার্থ। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ তা’আলা যা অবতীর্ণ করেছেন তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে-বরং আমরা অনুসরণ করবো ঐ জিনিসের যার উপরে আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি।'(২:১৭০) মুমিনদের এ উত্তর হতে পারে না। বরং তাদের উত্তর অন্য আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ মুমিনদেরকে যখন তাদের মধ্যে ফায়সালার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর দিকে আহ্বান করা হয় তখন তাদের এ উত্তরই হয় যে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।'(২৪:৫১)
এরপর মুনাফিকদেরকে নিন্দে করা হচ্ছে যে, হে নবী (সঃ)! যখন তারা তাদের পাপের কারণে বিপদে পড়ে এবং তোমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তখন তারা দৌড়িয়ে তোমার নিকট আগমন করে এবং ওযর পেশ করতঃ শপথ করে করে বলে- ‘আমরা কল্যাণ ও সম্মিলন ব্যতীত কিছুই কামনা করিনি এবং আপনাকে ছেড়ে আমাদের মোকদ্দমা অন্যের নিকট নিয়ে যাওয়ার আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাদের মন যোগানো ও তাদের সাথে বাহ্যিক মিল রাখা। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক আস্থা মোটেই নেই। যেমন আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে বলেনঃ (আরবী) পর্যন্ত। অর্থাৎ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তুমি তাদেরকে (মুনাফিকদেরকে) দেখবে যে, তারা তাদের (ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান) সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের সর্বপ্রকারের চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং বলবে- আমাদের বিপদে পড়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে, সুতরাং খুব সম্ভব আল্লাহ বিজয় আনয়ন করবেন অথবা নিজের কোন হুকুম জারী করবেন এবং এর ফলে তারা তাদের অন্তরে লুক্কায়িত উদ্দেশ্যের কারণে লজ্জিত হবে। (৫:৫২)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আবু বারযা আসলামী ছিল একজন যাদুকর। ইয়াহদীরা তাদের কতক মোকদ্দমার মীমাংসা তার দ্বারা করিয়ে নিত। একটি ঘটনায় মুশরিকেরাও তার নিকট দৌড়িয়ে আসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এরপর বলা হচ্ছে- এ প্রকারের লোকের অর্থাৎ মুনাফিকদের অন্তরে কি রয়েছে তা আল্লাহ তা’আলা ভালভাবেই জানেন। তাঁর নিকট ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম কোন জিনিসও গুপ্ত নয়। তিনি তাদের ভেতরের ও বাইরের সব খবরই রাখেন। সুতরাং হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের দিক হতে নির্লিপ্ত থাক এবং তাদেরকে তাদের অন্তরের খারাপ উদ্দেশ্যের কারণে শাসন-গর্জন করো না। তারা যেন কপটতা দ্বারা অন্যদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি না করে তজ্জন্যে তাদেরকে সদুপদেশ দিতে থাক এবং তাদের সাথে হৃদয়স্পর্শী ভাষায় কথা বল ও তাদের জন্যে প্রার্থনাও কর।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১:-
এখানে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফয়সালা করে এবং এমন বিচার ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ (Final Authority) হিসেবে স্বীকৃতিও দেয় না। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভূমিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া যে একটি ঈমান বিরোধী কাজ এ ব্যাপারে এ আয়াতটির বক্তব্য একেবারে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবী অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকৃত জানানোই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দু’টি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকী।
টিকা:২:-
এ থেকে জানা যায়, মুনাফিকদের সাধারণ রীতি ছিল, যে মামলার ব্যাপারে তারা আশা করতো যে, ফয়সালা তাদের পক্ষে যাবে সেটি তারা নিয়ে আসতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কিন্তু যে মামলাটির ফয়সালা তাদের বিপক্ষে যাবে বলে তারাআশঙ্কা করতো সেটি তাঁর কাছে আনতে অস্বীকার করতো। বর্তমান কালের বহু মুনাফিকেরও এই একই অবস্থা। শরীয়াতের ফায়সালা যদি তাদের অনুকূল হয় তাহলে তারা নত মস্তকে তা মেনে নেয়। অন্যথায় যে আইন, প্রচলিত রীতি-রেওয়াজ ও আদালতের মাধ্যমে তারা নিজেদের মন-মাফিক ফায়সালা লাভের আশা রাখে, তারই কোলে তারা আশ্রয় নেয়।
টিকা:৩:-
সম্ভবত এর অর্থ হচ্ছে এই যে, যখন মুসলমানরা তাদের মুনাফেকী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারে এবং তারা জবাবদিহি করার ও শাস্তি লাভেরআশঙ্কা করতে থাকে তখন কসম খেয়ে খেয়ে নিজেদের ঈমানের নিশ্চয়তা দিতে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই আয়াতগুলি এমন লোকদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়, যারা নিজেদের ফায়সালা ইসলামী আদালত থেকে গ্রহণ করার পরিবর্তে ইয়াহুদীদের অথবা কুরাইশদের সর্দারদের কাছ থেকে গ্রহণ করতে চাইত। তবে আয়াতের নির্দেশ ব্যাপক; এতে এমন সব লোক শামিল, যারা কিতাব ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ফায়সালার জন্য এ দু’টিকে বাদ দিয়ে অন্য কারো শরণাপন্ন হয়। মুসলিমদের অবস্থা তো এ রকম হওয়া উচিত যে, [إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ المُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ] “মু’মিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যে, যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম।” (সূরা নূর ২৪:৫১) এই ধরনের লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, [وَأُولَئِكَ هُمُ المُفْلِحُونَ] “এরাই সফলকাম।”
[২] অর্থাৎ, যখন তারা নিজেদের ঐ কৃতকর্মের কারণে আল্লাহর আযাবের শিকার হয়ে বিপদাপদে ফেঁসে যায়, তখন বলতে শুরু করে যে, অন্যত্র যাওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের এই নয় যে, আমরা সেখান থেকে ফায়সালা গ্রহণ করব অথবা আমরা সেখানে তোমার চেয়ে বেশী সুবিচার পাব বরং আমাদের উদ্দেশ্য কল্যাণ, সম্প্রীতি ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।
[৩] মহান আল্লাহ বললেন, যদিও আমি তাদের অন্তরের সমূহ গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অবহিত (যার শাস্তি তাদেরকে আমি দেব), তবুও হে নবী! তুমি তাদের বাহ্যিক অবস্থাকে সামনে রেখে তাদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওয়ায-নসীহত ও কল্যাণকর কথার মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরীণ সংশোধনের প্রচেষ্টা জারী রাখুন। এ থেকে জানা যায় যে, উপেক্ষা, ক্ষমা, ওয়ায-নসীহত এবং হৃদয়স্পর্শী উত্তম কথা দ্বারা শত্রুদের ষড়যন্ত্রসমূহকে ব্যর্থ করার প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবূ বারযাতা আল-আসলামী নামে একজন গণক ছিল। তার কাছে ইয়াহূদীগণ যে সকল বিচার নিয়ে আসত সে তার ফায়সালা করত। একদা কিছু মুসলিম তার কাছে বিচার নিয়ে আসে। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়
(أَلَمْ تَرَ إِلَي الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ……………… إِلَّآ إِحْسَانًا وَّتَوْفِيْقًا) ।
(লুবানুল নুকূল ফী আসবাবে নুযূল, পৃঃ ৮৬, সহীহ) বিশিষ্ট তাবেয়ী শা’বী (রহঃ) বলেন: জনৈক মুনাফিক ও ইয়াহূদীর মাঝে কোন বিষয়ে বিবাদ ছিল। ইয়াহূদী বলল: আমরা ফায়সালার জন্য মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে যাব। কারণ সে ইয়াহূদী জানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুষ নেন না। মুনাফিক বলল: আমরা ইয়াহূদীর কাছে যাব। সম্ভব সে ঘুষ নিয়ে আমার পক্ষে ফায়সালা দেবে। তারপর তারা উভয়ে একমত হল যে, তারা জুহায়না গোত্রের এক গণকের কাছে যাবে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। এছাড়াও উমার (রাঃ) যে মুনাফিককে হত্যা করেছেন বলে জানা যায় তার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে বলে বর্ণনা রয়েছে। (কিতাবুত তাওহীদ, তাফসীর কুরতুবী ৫/১৯৯)
যারা দাবী করে আল্লাহ তা‘আলা, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছে- আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঈমানকে নাকচ করে দিয়ে বলেন: তারা ঈমানদার নয়, তারা মুনাফিক। প্রকৃত ঈমানদার হলে তারা কুরআন ও সুন্নাহর বিচার-ফায়সালা প্রতিষ্ঠিত থাকার পরেও অন্য কোন মানব রচিত বিধানের দিকে ধাবিত হত না।
আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহীহ সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কিছুর কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া তাগুতকে মাথা পেতে মেনে নেয়ার শামিল।
অথচ এ তাগুতকে বর্জন করা ওয়াজিব। অন্যথায় প্রকৃত ঈমানদার হওয়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَدْ أُمِرُوْآ أَنْ يَّكْفُرُوْا بِه۪)
তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ তাগুতের সাথে কুফরী করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْۭ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰي)
“সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল।”(সূরা বাকারাহ ২:২৫৬)
ইসলাম বিনষ্টের অন্যতম একটি কারণ হলো: যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদর্শিত পথ ব্যতীত অন্যের প্রদর্শিত পথ অধিক পরিপূর্ণ অথবা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিচার ফায়সালা থেকে অন্যের বিচার ফায়সালা অতি উত্তম, তাঁর বিচার ফায়সালা বাদ দিয়ে অন্যের কাছে বিচার ফায়াসালা চাওয়া বৈধ, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কেননা এ ব্যক্তি দীনের জরুরী হারাম বিষয়কে হালাল মনে করছে।
এদের কথা হলো তাদের কথার মত, যারা বলে: ব্যভিচার করা বৈধ, কিন্তু আমি তা করি না, অথবা বলে সুদ খাওয়া বৈধ কিন্তু আমি সুদী লেনদেন করি না। এ ব্যক্তিও কাফির হয়ে যাবে। কেননা ব্যভিচার, সুদ ইসলামে হারাম, আপনি তা হালাল মনে করছেন অথচ তা দীনের জরুরী জ্ঞাত হারাম বিষয়। এটা কুফরী কাজ।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বলে: মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা জায়েয, তবে শরয়ী বিধান অধিক উত্তম, আমরা বলব: না; আপনি মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার ফায়াসালা বৈধ করে দিচ্ছেন, এটা কুফরী ও বর্জনীয়। কেননা আপনি দীনের জরুরী জ্ঞাত হারামকে হালাল মনে করছেন। তাই মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করা ও গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন ব্যভিচার, সুদ সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যে ব্যক্তি বলবে : সুদ, ব্যভিচার হালাল, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যদি বলে : মানব রচিত বিধান দ্বারা বিচার-ফায়াসালা করা বৈধ সে কাফির হয়ে যাবে। যদিও সে বিশ্বাস করে শরয়ী বিচার ফায়াসালা অধিক উত্তম।
তাই যারা মুখে ঈমানের কথা বলে বেড়ায় আর বিচার-ফায়সালার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ অগ্রাহ্য করে, সাথে সাথে বলে বর্তমান যুগে কুরআন-সুন্নাহ অকেজো হয়ে গেছে তা দ্বারা বিচার করা সম্ভব নয়, কিংবা তাগুতের ফায়সালাকে কুরআন ও সুন্নাহ সমতুল্য মনে করে, তারা কখনো ঈমানদার থাকতে পারে না। তারা ইসলামের গণ্ডির বাইরে। যতই মুখে ঈমানের কথা বলুক।
এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যাদেরকে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দিকে ডাকা হলে বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের পরিচয় দিয়ে থাকে।
বরং একজন প্রকৃত ঈমানদারকে যখন কুরআন ও সুুন্নাহর দিকে আহ্বান করা হবে তখন সে তা শুনবে এবং মেনে নেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَي اللّٰهِ وَرَسُوْلِه۪ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا)
“মু’মিনদের উক্তি তো কেবল এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম।’ (সূরা নূর ২৪:৫১)
মুনাফিকরা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে যখন আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত আযাবে নিপতিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে শপথ করে বলে আমরা তো তাদের কাছে গিয়েছিলাম একটি সুরাহা ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য। এরা মুখে যা বলে অন্তরে তা করে না ও ভাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা এদের অন্তরের খবর জানেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সদুপদেশ প্রদান করতে বলেছেন।
তাই যারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদের সাথে মু’মিনরা আন্তরিক কোন সম্পর্ক রাখবে না। তাদেরকে সদুপদেশ ও নসীহত করাই মু’মিনের একমাত্র কর্তব্য হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন ও সুন্নাহ ব্যতীত অন্য কোন মানব রচিত বিধানের নিকট ফায়সালার জন্য যাওয়া শির্ক ও কুফরী।
২. তাগুতকে বর্জন করা ওয়াজিব।
৩. কেবল মুনাফিকরাই আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করতে পারে।
৪. মু’মিনদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহকে মেনে চলা।
৫. কোন মত-বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালার ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দিকে আহ্বান করার পরে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মুনাফিকদের পরিচয়।