أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٣٧)-৩৩৯
www.motaher21.net
مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللّٰه
যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো।
He who obeys the Messenger, has indeed obeyed Allah,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-৮০-৮১
مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللّٰهَۚ وَ مَنْ تَوَلّٰى فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًاؕ
যে ব্যক্তি রসূলের আনুগত্য করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের ওপর তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি।
আয়াত নং:-৮১
وَيَقُولُونَ طَاعَةٌ فَإِذَا بَرَزُوا مِنْ عِندِكَ بَيَّتَ طَآئِفَةٌ مِّنْهُمْ غَيْرَ الَّذِى تَقُولُ ۖ وَاللَّهُ يَكْتُبُ مَا يُبَيِّتُونَ ۖ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفٰى بِاللَّهِ وَكِيلًا
আর তারা বলে, ‘আনুগত্য (করি)’; অতঃপর যখন তারা তোমার কাছ থেকে বের হয়ে যায়, তাদের একদল যা বলে, রাতে তার বিপরীত পরিকল্পনা করে। আর আল্লাহ লিখে রাখেন, তারা রাতে যা পরিকল্পনা করে। সুতরাং তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চল এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর। কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
৮০-৮১ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলার ইরশাদ হচ্ছে- আমার বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর যে অনুগত প্রকারান্তরে সে আমারই অনুগত। তার যে অবাধ্য সে আমারই অবাধ্য। কেননা, আমরা নবী (সঃ) নিজের পক্ষ হতে কিছুই বলে না। আমার পক্ষ হতে তার উপর যে অহী করা হয় তাই সে বলে থাকে।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমাকে যে মানে সে আল্লাহূকে মানে এবং যে আমাকে অমান্য করে সে আল্লাহকে অমান্য করে। আর যে আমীরের অনুগত হয় সে আমারই অনুগত হয় এবং যে আমীরের অবাধ্য হয় সে আমারই অবাধ্য হয়। এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন- যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, হে নবী (সঃ)! তার পাপ তোমার উপর নেই। তোমার কাজ তো শুধুমাত্র পৌছিয়ে দেয়া। ভাগ্যবান ব্যক্তি মেনে নেবে এবং মুক্তি ও পুণ্য লাভ করবে। তবে তাদের ভাল কাজের পুণ্য তুমিও লাভ করবে। কেননা, তার পথপ্রদর্শক তো তুমিই এবং তার সকার্যের শিক্ষকও তুমিই। আর যে ব্যক্তি মানবে না সে হতভাগা। সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে।
তাদের পাপ তোমার উপর হবে না। কেননা, তুমি বুঝাতে ও সত্যপথ প্রদর্শনে কোন প্রকার ত্রুটি করনি। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর অনুগত ব্যক্তি সুপথ প্রাপ্ত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর অবাধ্য ব্যক্তি নিজের জীবনেরই ক্ষতি সাধনকারী।
এরপর মুনাফিকদের অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা বাহ্যিকভাবে তো আনুগত্য স্বীকার করছে এবং আনুগত্য প্রকাশ করছে কিন্তু যখনই দৃষ্টির অন্তরালে চলে যাচ্ছে, এখান হতে চলে গিয়ে নিজের জায়গায় পৌছে তখন এমন হয়ে যায় যে, তাদের রূপ যেন এরূপ ছিলই না। এখানে যা কিছু বলেছিল, রাত্রে গোপনে গোপনে তার সম্পূর্ণ বিপরীত পরামর্শ করতে থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা তাদের এ গোপন ষড়যন্ত্র সবই জানেন। তাঁর নির্ধারিত ফেরেশতাগণ তাদের এ কার্যাবলী এবং এসব কথা তাঁর নির্দেশক্রমে তাদের আমলনামায় লিখে নিচ্ছেন।
সুতরাং তাদেরকে ধমক দেয়া হচ্ছে যে, তাদের এ চাল-চলন কতই না জঘন্য। তোমাদেরকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট তোমাদের ঐ সব কাজ গুপ্ত নেই। তোমরা তোমাদের ভেতর ও বাহির যখন এক রাখতে পারছো না তখন তোমাদের ভেতর ও বাহিরের সমস্ত সংবাদ যিনি রাখেন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের এ নিকৃষ্ট কাজের জন্যে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের স্বভাব অন্য শব্দে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন (আরবী) অর্থাৎ তারা বলে- আমরা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছি ও। আনুগত্য স্বীকার করেছি।'(২৪:৪৭)।
অতঃপর আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ) কে নির্দেশ দিচ্ছেন- তুমি তাদের প্রতি বিমুখ হও; ধৈর্য অবলম্বন কর, তাদের ক্ষমা করে দাও এবং তাদের অবস্থা তাদের নাম করে করে তাদেরকে বলো না। তুমি তাদের হতে সম্পূর্ণরূপে নির্ভয় থাকো। আল্লাহ তাআলার উপর নির্ভর কর। যে ব্যক্তি তার উপর নির্ভর করে এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় আল্লাহ তাআলা তার জন্যে যথেষ্ট হয়ে যান।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অর্থাৎ তারা নিজেরাই নিজেদের কাজের জন্য দায়ী। তাদের কাজের জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তোমাকে কেবল এতকুটু কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যে, তুমি আল্লাহর নির্দেশ ও বিধানসমূহ তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। এ কাজটি তুমি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছো। এখন তাদের হাত ধরে জবরদস্তি সত্য-সরল পথে পরিচালিত করা তোমার কাজ নয়। তোমার মাধ্যমে যে হিদায়াত পৌঁছানো হচ্ছে তারা যদি তার অনুসরণ না করে, তাহলে তার কোন দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর থাকবে না। তারা কেন নাফরমানি করেছিল, এর জবাবদিহি করার জন্য তোমাকে পাকড়াও করা হবে না।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সকল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু যে অস্বীকার করেছে (সে জান্নাতবাসী হতে পারবে না)। জিজ্ঞাসা করা হলঃ কে অস্বীকার করেছে, হে রাসূল! উত্তরে বললেনঃ যে আমার অনুসরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করল না, সে অস্বীকার করল। [বুখারীঃ ৭২৮০]
অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে আমার আনুগত্য করল সে অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্য হলো সে আল্লাহর অবাধ্য হল। অনুরূপভাবে যে ক্ষমতাসীনের আনুগত্য করল সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ক্ষমতাসীনের অবাধ্য হলো সে আমার নাফরমানী করলো। ইমাম বা শাসক তো ঢালস্বরূপ, যার পিছনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করা যায় এবং যার দ্বারা বাঁচা যায়। যদি ইমাম বা শাসক আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেন এবং ইনসাফ করেন তা হলে সেটা তার জন্য সওয়াবের কাজ হবে। আর যদি অন্য কিছু করেন তবে সেটা তার উপরই বর্তাবে। [বুখারীঃ ২৯৫৭, মুসলিমঃ ১৮৩৫]
[২] মুনাফিকরা যখন আপনার নিকট আসে, তখন বলে যে, আমরা আপনার নির্দেশ কবুল করে নিয়েছি। কিন্তু যখন তারা নাফরমানী করার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বড় কষ্ট হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হেদায়াত দান করছেন যে, এসব বিষয়ে আপনি কোন পরোয়া করবেন না। আপনি আপনার যাবতীয় কাজ আল্লাহর উপর ভরসা করে চালিয়ে যেতে থাকুন। কারণ, আপনার জন্য তিনিই যথেষ্ট। এতে প্রতীয়মান হয় যে, যারা মানুষকে হেদায়াতের জন্য দাওয়াত দেবে তাদেরকে নানারকম জটিলতা অতিক্রম করতেই হবে। মানুষ তাদের প্রতি নানারকম উল্টা-সিধা অপবাদ আরোপ করবে। বন্ধুরূপী বহু শত্রুও থাকবে। এসব সত্বেও সে সংকল্প ও দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের কাজে নিয়োজিত থাকা উচিত। যদি তার লক্ষ্য ও কর্মপন্থা সঠিক হয়, তবে ইনশাআল্লাহ তারা কৃতকার্য হবেই।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ, এই মুনাফিকরা তোমার মজলিসে যে কথা প্রকাশ করে, রাতে তার বিপরীত কথা বলে এবং ষড়্যন্ত্রের জাল বোনে। তুমি তাদের ব্যাপারে বিমুখতা অবলম্বন কর এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। তাদের কথা এবং ষড়যন্ত্র তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, তোমার রক্ষাকর্তা হলেন আল্লাহ এবং তিনিই হলেন মহাশক্তিধর।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করা আল্লাহ তা‘আলাকে আনুগত্যের নামান্তর। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বলেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي – إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।” (সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলারই আনুগত্য করল, আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হল সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হল। (সহীহ বুখারী হা: ২৯৫৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৮৩৫)
এমনকি যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পূর্ণ দায়িত্ব মুক্ত।
(وَیَقُوْلُوْنَ طَاعَةٌ)ﺑ
‘তারা বলে, ‘আনুগত্য করি’ মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এসে বলে আমরা আপনার কথা মেনে নিলাম কিন্তু যখন বের হয়ে যায় তখন একদল বিপরীত পরামর্শ করে। তারা যতই ষড়যন্ত্র করুক ইসলাম ও মুসলিমের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা হলেন ইসলাম ও মুসলিদের রক্ষাকর্তা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করাই আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ও দ্বিমুখীনীতি অবলম্বনের কথা জানলাম।