أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٥٠)-৩৫২
www.motaher21.net
مَن يَعْمَلْ سُوٓءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه
যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে,
Warning those who Falsely Accuse Innocent People.
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১১০-১১৩
وَمَن يَعْمَلْ سُوٓءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُۥ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত:-১১১
وَمَن يَكْسِبْ إِثْمًا فَإِنَّمَا يَكْسِبُهُۥ عَلٰى نَفْسِهِۦ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
আর যে পাপ কামাই করবে, বস্ত্তত, সেতো নিজের বিরুদ্ধেই তা কামাই করবে। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
আয়াত:- ১১২
وَمَن يَكْسِبْ خَطِيٓـَٔةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِۦ بَرِيٓـًٔا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتٰنًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
আর যে ব্যক্তি কোন অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।
আয়াত:-১১৩
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُۥ لَهَمَّت طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمْ ۖ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَىْءٍ ۚ وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
আর তোমার উপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না হত তবে তাদের মধ্য থেকে একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল! আর তারা নিজদের ছাড়া কাউকে পথভ্রষ্ট করে না এবং তারা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।
১১০-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমার সাগরের কথা বলেছেন।
যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ করল বা নিজের প্রতি জুলুম করল অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজের গুনাহ স্বীকার করতঃ তাওবাহ করল আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْآ أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ)
“এবং যখন কেউ অশ্লীল কার্য করে কিংবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে, তৎপর আল্লাহকে স্মরণ করে অপরাধসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১৩৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْ۬ءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه۫ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّٰهَ يَجِدِ اللّٰهَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا)
“যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করতঃ পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।”(সূরা নিসা ৪:১১০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কোন মুসলিম ব্যক্তি অপরাধ করল অতঃপর ওযূ করে দু’রাকআত সালাত আদায় করল। তারপর আল্লাহ তা‘আলার কাছে কৃত গুনাহর ক্ষমা চাইল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করলেন। (আহমাদ হা: ৪৮, সহীহ)
পক্ষান্তরে যদি কেউ অপরাধ করার পরেও নিজেকে অপরাধ থেকে মুক্ত মনে করে, সে মূলত মিথ্যা অপবাদ ও পাপের বোঝা বহন করল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ج وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰ)
“প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো (পাপের) ভার গ্রহণ করবে না।”(সূরা আন‘আম ৬:১৬৪)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেন, হে রাসূল! যদি তোমার প্রতি আমার রহমত না থাকত তাহলে বানী উবাইরিকের একদল (যাদের কথা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি) তোমাকে পথভ্রষ্ট করে ফেলত। আল্লাহ তা‘আলার অশেষ রহমত যে, তিনি তোমাকে তাদের প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দিয়ে সঠিক ফায়সালায় উপনীত হবার তাওফীক দান করেছেন।
আবার দ্বিতীয় আরেকটি অনুগ্রহ হল:
আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) অবতীর্ণ করেছেন। বুঝা গেল সুন্নাহ বা সহীহ হাদীস আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মনগড়া কথা নয় (তাফসীর মুয়াসসার, অত্র আয়াতের তাফসীর)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي ط إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰي)
“এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না। এটা তো এক ওয়াহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।” (সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
(وَعَلَّمَکَ مَا لَمْ تَکُنْ تَعْلَمُ)
‘তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন’এখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছেন যা তিনি জানতেন না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন:
(وَكَذٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا ط مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتٰبُ وَلَا الْإِيْمَانُ وَلٰكِنْ جَعَلْنٰهُ نُوْرًا نَّهْدِيْ بِه۪ مَنْ نَّشَا۬ءُ مِنْ عِبَادِنَا ط وَإِنَّكَ لَتَهْدِيْٓ إِلٰي صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ)
“আর এভাবেই আমি তোমার প্রতি ওয়াহী করেছি রূহ (কুরআন) আমার নির্দেশে; তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা সঠিক পথনির্দেশ করি; তুমি অবশ্যই প্রদর্শন কর সরল পথ।” (সূরা শুরা ৪২:৫২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. তাওবাহ করলে আল্লাহ তা‘আলা অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
২. অপরাধ করেও নিজেকে পবিত্র মনে করা কাবীরা গুনাহ।
৩. বাহ্যিক কথা অন্তরে প্রভাব ফেলে।
৪. জুলুমের পরিণতি জালেমের উপরেই বর্তায়।
English Tafsir:-
Surah Annisa(4):-
Verses:- 110-113
Tafsir Ibn Kathir:-
The Encouragement to Seek Allah’s Forgiveness, and Warning those who Falsely Accuse Innocent People
Allah emphasizes His generosity and kindness, in that He forgives whoever repents to Him from whatever evil they commit.
Allah said,
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
And whoever does evil or wrongs himself but afterwards seeks Allah’s forgiveness, he will find Allah Oft-Forgiving, Most Merciful.
Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas commented about this Ayah,
“Allah informs His servants of His forgiveness, forbearing generosity and expansive mercy. So whoever commits a sin, whether minor or major,
ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
(but afterwards seeks Allah’s forgiveness, he will find Allah Oft-Forgiving, Most Merciful), even if his sins were greater than the heavens, the earth and the mountains.”
Imam Ahmad recorded that Ali said,
“Whenever I hear anything from the Messenger of Allah, Allah benefits me with whatever He wills of that. Abu Bakr told me, and Abu Bakr has said the truth, that the Messenger of Allah said,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا ثُمَّ يَتَوَضَّأُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللهَ لِذلِكَ الذَّنْبِ إِلاَّ غَفَرَ لَه
No Muslim commits a sin and then performs ablution, prays two Rak`ahs and begs Allah for forgiveness for that sin, but He forgives him.
He then recited these two Ayat,
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ
(And whoever does evil or wrongs himself), (4:110) and,
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُواْ أَنْفُسَهُمْ
(And those who, when they have committed Fahishah or wronged themselves with evil).” (3:135)
Allah’s statement
وَمَن يَكْسِبْ إِثْمًا فَإِنَّمَا يَكْسِبُهُ عَلَى نَفْسِهِ
And whoever earns sin, he earns it only against himself.
is similar to His statement,
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى
And no bearer of burdens shall bear the burden of another. (35:18)
So no one will avail anyone else. Rather, every soul, and none else, shall carry its own burden.
This is why Allah said,
وَكَانَ اللّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
And Allah is Ever All-Knowing, All-Wise.
meaning, this occurs due to His knowledge, wisdom, fairness and mercy.
وَمَن يَكْسِبْ خَطِييَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِييًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
And whoever earns a fault or a sin and then blames it on someone innocent, he has indeed burdened himself with falsehood and a manifest sin.
وَلَوْلَا فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّأيِفَةٌ مُّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاُّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
Had not the grace of Allah and His mercy been upon you, a party of them would certainly have made a decision to mislead you, but they mislead none except their own selves, and no harm can they do to you in the least. Allah has sent down to you the Book, and the Hikmah,
.
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
and taught you that which you knew not,
before this revelation was sent down to you.
Similarly, Allah said,
وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَأ إِلَيْكَ رُوحاً مِّنْ أَمْرِنَا مَا كُنتَ تَدْرِى مَا الْكِتَـبُ
And thus We have sent to you (O Muhammad) a Ruh (a revelation, and a mercy) of Our command. You knew not what is the Book) until the end of the Surah. (42:52-53)
Allah said,
وَمَا كُنتَ تَرْجُو أَن يُلْقَى إِلَيْكَ الْكِتَـبُ إِلاَّ رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ
And you were not expecting that the Book (this Qur’an) would be sent down to you, but it is a mercy from your Lord. (28:86)
So Allah said;
وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
And ever great is the grace of Allah unto you (O Muhammad)
১১০-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা এখানে স্বীয় অনুগ্রহ ও করুণার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, কেউ কোন পাপকার্য সম্পাদনের পর তাওবা করলে আল্লাহ তা’আলা দয়া করে তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হন। যে ব্যক্তি পাপ করার পর অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহ তাআলার দিকে ঝুঁকে পড়ে, আল্লাহ পাক তাকে স্বীয় অনুগ্রহ ও সীমাহীন করুণা দ্বারা ঢেকে নেন এবং তার ছোট ও বড় গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন। যদিও সে পাপ আকাশ, যমীন ও পর্বত থেকেও বড় হয়।
বানী ইসরাঈলের মধ্য যখন কেউ কোন পাপ করতো তখন তার দরজার উপর কুদরতী অক্ষরে ওর কাফফারা লিখা হয়ে যেতো। সে কাফফারা তাকে আদায় করতে হতো। তাদের কাপড়ে প্রস্রাব লেগে গেলে তাদের উপর ঐ পরিমাণ কাপড় কেটে নেয়ার নির্দেশ ছিল। আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উম্মতের উপর এ সহজ ব্যবস্থা রেখেছেন যে, ঐ কাপড় পানি দ্বারা ধৌত করলেই পবিত্র হয়ে যাবে এবং পাপের জন্য তাওবা করলেই তা মাফ হয়ে যাবে।
একটি স্ত্রীলোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফালকে একটি স্ত্রীলোক সম্বন্ধে ফওয়া জিজ্ঞেস করে যে ব্যভিচার করেছিল এবং এর ফলে একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছিল, তাকে সে হত্যা করে ফেলেছে। হযরত মুগাফফাল (রাঃ) তখন বলেন যে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। তখন স্ত্রীলোকটি কাঁদতে কাঁদতে ফিরে। যায়। হযরত মুগাফফাল তখন তাকে ডেকে (আরবী)-এ আয়াতটি পড়ে শুনিয়ে দেন। অর্থাৎ যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করার পর আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয় সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় প্রাপ্ত হবে। তখন স্ত্রীলোকটি চোখের অশ্রু মুছে ফেলে এবং তথা হতে ফিরে যায়।
মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমান কোন পাপ করার পর অযু করে দু’রাকআত নামায আদায় করতঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা’আলা তার পাপ মার্জনা করে থাকেন। অতঃপর তিনি (আরবী) (৩:১৩৫)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। আমরা মুসনাদ-ই-আবু বকর’-এ এর পূর্ণ বর্ণনা দিয়েছি এবং কিছু বর্ণনা সূরা আলে ইমরানের তাফসীরে দেয়া হয়েছে।
হযরত আবু দারদা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল এই যে, তিনি মাঝে মাঝে মজলিস হতে উঠে নিজের কোন কাজের জন্য যেতেন এবং ফিরে আসার ইচ্ছে থাকলে জুতা বা কাপড় কিছু না কিছু অবশ্যই ছেড়ে যেতেন।
একদা তিনি স্বীয় জুতা রেখে এক বরতন পানি নিয়ে গমন করেন। আমিও তার পিছনে চলতে থাকি। কিছু দূর গিয়ে তিনি হাজত পুরো না করেই ফিরে আসেন এবং বলেনঃ ‘আমার প্রভুর পক্ষ হতে আমার নিকট একজন আগন্তুক এসেছিলেন এবং তিনি আমাকে এ পয়গাম দিয়ে গেলেন যে, (আরবী) অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন দুষ্কার্য করে বা স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচার করে অতঃপর আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয় সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় রূপে প্রাপ্ত হবে। আমি আমার সাহাবীগণকে এ সুসংবাদ দেয়ার জন্যে রাস্তা হতেই ফিরে আসছি।’ কেননা এর পূর্বে (আরবী) অর্থাৎ যে খারাপ কাজ করবে তাকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।'(৪:১২৩) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ফলে ওটা সাহাবীগণের নিকট খুব কঠিন বলে মনে হয়েছিল। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে, অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করে তবুও কি আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন? তিনি বলেনঃ ‘হ্যা। আমি দ্বিতীয়বার এ কথাই বলি। তিনি বলেনঃ হ্যা। তৃতীয়বারও ঐ কথাই আমি বলি। তখন তিনি বলেনঃ যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবুও আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করবেন। যদিও আবুদ্দারদার নাক ধূলায় ধূসরিত হয়। এরপর যখনই হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হাদীসটি বর্ণনা করতেন তখনই স্বীয় নাকের উপর হাত মেরে বলতেন। হাদীসটির ইসনাদ দুর্বল এবং এটা গারীবও বটে।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন- যে কেউ পাপ অর্জন করে সে নিজের উপরই এর প্রতিক্রিয়া পৌছিয়ে থাকে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কেউ কারো বোঝা বহন করবে না।” (৬:১৬৫) অর্থাৎ একে অপরের কোন উপকার করতে পারবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কর্মের ফল ভোগ করতে হবে। তার কর্মের ফল অন্য কেউ ভোগ করবে না। এ জন্যে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘তিনি মহাজ্ঞানী; বিজ্ঞানময়। তাঁর জ্ঞান, তাঁর নিপুণতা, তার ন্যায়নীতি এবং তাঁর করুণা এর উল্টো যে, একের পাপের কারণে তিনি অপরকে ধরবেন।
অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন- যে কেউ অপরাধ অথবা পাপ অর্জন করে, তৎপর নিরপরাধের প্রতি দোষারোপ করে, সে নিজেই সেই অপরাধ ও প্রকাশ্য পাপ বহন করবে। যেমন বানূ উবাইরিক হযরত লাবিদ ইবনে সহল (রাঃ)-এর নাম করেছিল- যে ঘটনাটি এ আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অথবা এর দ্বারা যায়েদ ইবনে সামীনকে বুঝানো হয়েছে, যেমন এটা কোন কোন মুফাস্সীরের ধারণা যে, ঐ ইয়াহুদীর গোত্র একজন নিরপরাধ ব্যক্তির উপর চুরির অপবাদ দিয়েছিল, অথচ স্বয়ং তাদের লোকই ছিল বিশ্বাসঘাতক ও অত্যাচারী। আয়াতটি শান-ই-নকূল হিসেবে বিশিষ্ট হলেও হুকুমের দিক দিয়ে এটা সাধারণ, যে কেউই এ কাজ করবে সেই আল্লাহ তা’আলার শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। এর পরবর্তী (আরবী)-এ আয়াতের সম্পর্কও এ ঘটনার সঙ্গেই রয়েছে। অর্থাৎ উসাইদ ইবনে উরওয়া এবং তার সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে বানু উবাইরিকের চোরকে নিরপরাধ সাব্যস্ত করতঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রকৃত রহস্য হতে সরিয়ে দেয়ার সমস্ত কার্যপ্রণালীই শেষ করে ফেলেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ হচ্ছেন তাঁর প্রকৃত রক্ষক। তাই তিনি স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে এ বিপজ্জনক অবস্থায় বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষপাতি করার দোষ হতে বাঁচিয়ে নেন এবং প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে দেন।
এখানে ‘কিতাব’ শব্দ দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে এবং (আরবী) শব্দ দ্বারা সুন্নাহকে বুঝানো হয়েছে। অহী অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যা জানতেন না, আল্লাহ তা’আলা অহীর মাধ্যমে তাঁকে তা জানিয়ে দেন। তাই তিনি বলেন, (আরবী) অর্থাৎ তিনি তোমাকে তা শিখিয়ে দিয়েছেন। যা তুমি জানতে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) (৪২:৫২) হতে সূরার শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। আর এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) (২৮:৮৬) এজন্যে এখানেও বলেছেন (আরবী) অর্থাৎ তোমার প্রতি আল্লাহর অসীম করুণা রয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৪২) অর্থাৎ যদি তারা মিথ্যা বিবরণী পেশ করে তোমার মনে ভুল ধারণা সৃষ্টিতে সক্ষমও হতো এবং নিজেদের পক্ষে প্রকৃত সত্য ও ইনসাফ বিরোধী ফয়সালা করিয়ে নিতে পারতো তাহলে তাতে প্রকৃত ক্ষতি তাদেরই হতো। তোমার কোন ক্ষতি হতো না। কারণ আল্লাহর কাছে তুমি নও, তারাই হতো অপরাধী। যে ব্যক্তি বিচারককে ধোঁকা দিয়ে নিজের পক্ষে সত্যের বিপরীত ফয়সালা করিয়ে নেয় সে আসলে নিজেকে এই ভুল ধারণার শিকার করে যে, এই ধরনের কলা-কৌশল অবলম্বন করার ফলে সত্য তার পক্ষে এসে গেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্য যার দিকে মূলত তার দিকেই থেকে যায়। এক্ষেত্রে প্রতারিত বিচারপতির ফায়সালার কারণে আসল সত্যের ওপর কোন প্রভাবপড়ে না।
সুরা বাকারা:-
আয়াত নং :-১৮৮
وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَ تُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ۠
আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পদ্ধতিতে খেয়ো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোন উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও।
টিকা: 197
এই আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, শাসকদেরকে উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হবার চেষ্টা করো না। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জানো এগুলো অন্যের সম্পদ তখন শুধুমাত্র তার কাছে তার সম্পদের মালিকানার কোন প্রমাণ না থাকার কারণে অথবা একটু এদিক সেদিক করে কোন প্রকারে প্যাঁচে ফেলে তার সম্পদ তোমরা গ্রাস করতে পারো বলে তার মামলা আদালতে নিয়ে যেয়ো না। মামলার ধারা বিবরণী শোনার পর হয়তো তারই ভিত্তিতে আদালত তোমাকে ঐ সম্পদ দান করতে পারে। কিন্তু বিচারকের এ ধরনের ফায়সালা হবে আসলে সাজানো মামলার নকল দলিলপত্র দ্বারা প্রতারিত হবার ফলশ্রুতি। তাই আদালত থেকে ঐ সম্পদ বা সম্পত্তির বৈধ মালিকানা অধিকার লাভ করার পরও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তা তোমার জন্য হারামই থাকবে।
হাদীসে বিবৃত হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃانما انا بشر وانتم تختصمون الى ولعل بعضكم يكون الحن بحجته من بعض فاقضى له على نحو ما اسمع منه- فمن قضيت له بشئ من حق اخيه فانما اقضى له قطعة من النار“আমি তো একজন মানুষ। হতে পারে, তোমরা একটি মামলা আমার কাছে আনলে। এক্ষেত্রে দেখা গেলো তোমাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের তুলনায় বেশী বাকপটু এবং তাদের যুক্তি-আলোচনা শুনে আমি তাদের পক্ষে রায় দিতে পারি। কিন্তু জেনে রাখো, তোমার ভাইয়ের অধিকারভুক্ত কোন জিনিস যদি তুমি এভাবে আমার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাভ করো, তাহলে, আসলে তুমি দোজখের একটি টুকরা লাভ করলে।”
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, বান্দার হকের সাথে কিংবা আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কযুক্ত সব গোনাহই তাওবা ও ইস্তেগফারের দ্বারা মাফ হতে পারে। তবে তাওবা ও ইস্তেগফারের স্বরূপ জানা জরুরী। শুধু মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি’ বলার নাম তাওবা ও ইস্তেগফার নয়। তাই আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি যদি সে জন্য অনুতপ্ত না হয় এবং তা পরিত্যাগ না করে কিংবা ভবিষ্যতে পরিত্যাগ করতে সংকল্পবদ্ধ না হয়, তবে মুখে মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা তাওবার সাথে উপহাস বৈ কিছু নয়। তাওবার জন্য মোটামুটি তিনটি বিষয় জরুরীঃ (এক) অতীত গোনাহর জন্য অনুতপ্ত হওয়া, (দুই) উপস্থিত গোনাহ অবিলম্বে ত্যাগ করা এবং (তিন) ভবিষ্যতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে দৃঢ়সংকল্প হওয়া। তাছাড়া বান্দাহর হকের সাথে যেসব গোনাহর সম্পর্ক, সেগুলো বান্দাহ্র কাছ থেকেই মাফ করিয়ে নেয়া কিংবা হক পরিশোধ করে দেয়া তাওবার অন্যতম শর্ত।
[২] এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, যে লোক নিজে পাপ করে এবং অপর নিরপরাধ ব্যক্তিকে সেজন্য অভিযুক্ত করে, সে নিজ গোনাহকে দ্বিগুণ ও অত্যন্ত কঠোর করে দেয় এবং নির্মম শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। একে তো নিজের আসল গোনাহর শাস্তি, দ্বিতীয়তঃ অপবাদের কঠোর শাস্তি।
[৩] এ আয়াতে ‘কিতাব’-এর সাথে ‘হেকমত’ শব্দটি উল্লেখ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও শিক্ষার নাম যে হেকমত তাও আল্লাহ্ তা’আলারই নাযিলকৃত। পার্থক্য এই যে, সুন্নাহর শব্দাবলী আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এ কারণেই তা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টিরই তথ্যসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত। তাই উভয়ের বাস্তবায়নই ওয়াজিব। সে জন্যই আলেমগণ বলেন, ওহী দুই প্রকারঃ (এক) (مَتْلُو) যা তিলাওয়াত করা হয় এবং (দুই) (غَيْرُ مَتْلُو) যা তিলাওয়াত করা হয় না। প্রথম প্রকার ওহী কুরআনকে বলা হয়, যার অর্থ ও শব্দাবলী উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। দ্বিতীয় প্রকার ওহী হাদীস বা সুন্নাহ। এর শব্দাবলী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং মৰ্ম আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই বিষয়ের আর একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, [وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى] (الاسراء: ১৫) অর্থাৎ “কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না।” (বানী ইসরাঈলঃ ১৫) অর্থাৎ, কিয়ামতে কেউ কারো দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। প্রত্যেক মানুষ তা-ই পাবে, যা সে কামিয়ে সাথে নিয়ে যাবে।
[২] যেমন উবাইরিক গোত্রের লোকেরা নিজেরা চুরি করে অপরের উপর চুরির অপবাদ চাপিয়ে দিয়েছিল। এ ধমক সকলের জন্য ব্যাপক; যা বানী উবাইরিক এবং তাদের মত সকল মানুষকেই শামিল, যারা তাদের মত অসদাচরণে জড়িত হবে এবং ওদের অনুরূপ অন্যায় কার্যাদি সম্পাদন করবে।
[৩] এখানে আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে, যা তিনি কেবল নবীদের জন্য প্রয়োগ করেছেন। আর এটা ছিল তাঁর নবীদের উপর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া স্বরূপ। طَائِفَةٌ (দল) বলতে সেই লোক, যারা বানী উবাইরিকের সমর্থনে রসূল (সাঃ)-এর নিকট তাদের নির্দোষ হওয়ার বার্তা পেশ করছিল। যার ভিত্তিতে আশঙ্কা ছিল যে, নবী করীম (সাঃ) তাকে চুরির অপবাদ থেকে মুক্ত ঘোষণা করবেন, যে প্রকৃতপক্ষে চোর ছিল।
[৪] এ হল দ্বিতীয় অনুগ্রহের কথা, যা কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) অবতীর্ণ করে এবং জরুরী বিষয়ের জ্ঞান দান করে রসূল (সাঃ)-এর প্রতি করা হয়েছিল। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেন, [وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلا الْأِيمَانُ] অর্থাৎ, এভাবে আমি নিজ নির্দেশে তোমার প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) করেছি রূহ। তুমি তো জানতে না গ্রন্থ কি, ঈমান (বিশ্বাস) কি। (শূরাঃ ৫২) [وَمَا كُنْتَ تَرْجُو أَنْ يُلْقَى إِلَيْكَ الْكِتَابُ إِلَّا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ] “তুমি আশা করতে না যে, তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হবে। এটা কেবল তোমার পালনকর্তার রহমত।” (ক্বাস্বাসঃ ৮৬) এই সমস্ত আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, মহান আল্লাহ রসূল (সাঃ)-এর উপর দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন এবং তাঁকে কিতাব ও হিকমতও দান করেছেন। এ ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের জ্ঞান (আল্লাহর পক্ষ হতে) তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, যে ব্যাপারে তিনি অবহিত ছিলেন না। এ থেকেও প্রমাণিত হয় যে, তিনি গায়েব জানতেন না। কেননা, তিনি নিজেই যদি অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত হতেন, তাহলে অন্য কারো কাছে জ্ঞানার্জন করার প্রয়োজন হত না। যিনি অপরের থেকে জানতে পারেন, অহী অথবা অন্য কোন মাধ্যমে, তিনি অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাতা হতে পারেন না।