أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٥٩)-৩৬১
www.motaher21.net
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا
অবশ্যি যেসব লোক ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে,
Verily, those who believe, then disbelieve,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৩৭-১৪০
اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ اٰمَنُوْا ثُمَّ كَفَرُوْا ثُمَّ ازْدَادُوْا كُفْرًا لَّمْ یَكُنِ اللّٰهُ لِیَغْفِرَ لَهُمْ وَ لَا لِیَهْدِیَهُمْ سَبِیْلًاؕ
অবশ্যি যেসব লোক ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, আবার ঈমান এনেছে আবার কুফরী করেছে, তারপর নিজেদের কুফরীর মধ্যে এগিয়ে যেতে থেকেছে, আল্লাহ কখনো তাদেরকে মাফ করবেন না এবং কখনো তাদেরকে সত্য-সঠিক পথও দেখাবেন না।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত:- ১৩৮
بَشِّرِ الْمُنٰفِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
মুনাফিকদের সুসংবাদ দাও যে, নিশ্চয় তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৩৯
الَّذِیْنَ یَتَّخِذُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَؕ اَیَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَاِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِیْعًاؕ
যারা ঈমানদারদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধু বানায় । এরা (অর্থাৎ এসব মৌখিক ঈমানের দাবিদার মুনাফিক্বেরা ) কি মর্যাদা লাভের সন্ধানে তাদের কাছে ( অর্থাৎ কাফেরদেরে কাছে ) যায়?অথচ সমস্ত মর্যাদা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪০
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِى الْكِتٰبِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ءَايٰتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتّٰى يَخُوضُوا فِى حَدِيثٍ غَيْرِهِۦٓ ۚ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنٰفِقِينَ وَالْكٰفِرِينَ فِى جَهَنَّمَ جَمِيعًا
আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।
১৩৭-১৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে, আবার ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং কুফরীর ওপর অটল থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করবেন না। কারণ এরা মুনাফিক; এদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে জাহান্নাম।
পক্ষান্তরে ঈমান আনার পর ঈমানের ওপর অটল থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সকল প্রকার ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত রাখবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلٰ۬ئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা বলে: আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলেঃ তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও।”(সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩০)
(أَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ)
‘তারা কি তাদের নিকট ইযযত চায়?’ অর্থাৎ যারা মু’মিনদেরকে ত্যাগ করে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তারা কি তাদের নিকট কোন সম্মান অন্বেষণ করে? তাদের জেনে রাখা উচিত যে, সম্মান কেবল আল্লাহ তা‘আলার জন্যই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَقُوْلُوْنَ لَئِنْ رَّجَعْنَآ إِلَي الْمَدِيْنَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ ط وَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه۪ٓ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ)
“তারা বলে: আমরা যদি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি, তবে সেখান হতে সম্মানিতরা অবশ্যই হীনদেরকে বহিস্কার করবে; কিন্তু মান-সম্মান তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৮)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা এমন মজলিসে বসতে নিষেধ করেছেন যেখানে আল্লাহ তা‘আলাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاِذَا رَاَیْتَ الَّذِیْنَ یَخُوْضُوْنَ فِیْٓ اٰیٰتِنَا فَاَعْرِضْ عَنْھُمْ حَتّٰی یَخُوْضُوْا فِیْ حَدِیْثٍ غَیْرِھ۪ﺚ وَاِمَّا یُنْسِیَنَّکَ الشَّیْطٰنُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّکْرٰی مَعَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَﮓ)
“তুমি যখন দেখ, তারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন তখন তুমি তাদের হতে সরে পড়, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে (এ নির্দেশ) ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হবার পরে যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না।”(সূরা আন‘আম ৬:৬৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও শেষ দিবসের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন এমন দাওয়াতে শরীক না হয় যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়। (তিরমিযী হা: ২৮০১, মুসনাদ আহমাদ হা: ৩৩৯)
যদি কেউ জেনে-শুনে তাদের সাথে বসে তাহলে সে তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমান আনার পর তার ওপর অটল থাকা আবশ্যক।
২. ঈমানের রুকনসমূহের বিবরণ জানতে পারলাম।
৩. যারা ঈমান আনার পর কাফির হয়ে যায় তারা মুরতাদ।
৪. সম্মান প্রদানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৬৮) এখানে সেইসব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা দ্বীনকে নিছক একটি হাল্কা প্রমোদ ও চিত্তবিনোদন হিসেবে গ্রহণ করে। যারা দ্বীনকে একটি খেলনা বানিয়ে নিজেদের কল্পনা ও কামনার রশি দিয়ে ইচ্ছেমতো তাকে ঘোরাতে থাকে তাদের কথাই এখানে আলোচিত হয়েছে। চিন্তার জগতে একটা আলোড়ন উঠলো আর অমনি মুসলমান হয়ে গেলো। তারপর আর একটা আলোড়ন উঠলো আর অমনি কাফের হয়ে গেলো। অথবা যখন দেখা গেলো মুসলমান হয়ে গেলে বৈয়ষিক স্বার্থ হাসিল করা যাবে তখন মুসলমান হয়ে গেলো। আবার যখন স্বার্থের খুঁটি ঘুরে গেলো তখন তার পদসেবা করার জন্য নির্দ্বিধায় সেদিকে চলে গেলো। এ ধরনের লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাত বা হিদায়াত কিছুই নেই। “তারপর নিজেদের কুফরীর মধ্যে তারা এগিয়ে যেতেই থাকলো”-এখানে একথা বলার অর্থ হচ্ছেঃকোন ব্যক্তি কেবল কাফের হয়ে গিয়েই ক্ষান্ত হয় না। বরং এরপর সে অন্য লোকদেরকেও ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। ইসলামের বিরুদ্ধে গোপন চক্রান্ত করে এবং প্রকাশ্যে নানা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। কুফরীর শির উন্নত করার এবং তার মোকাবিলায় আল্লাহর দ্বীনের ঝাণ্ডা ধূলায় লুণ্ঠিত করার জন্য নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালায়। এটিকেই বলে কুফরীতে আরো উন্নতি হওয়া, কুফরী আরো বেড়ে যাওয়া এবং একটি অপরাধের পর আর একটি অপরাধ তারপর আর একটি অপরাধ-এভাবে অপরাধের ফিরিস্তি ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া। পরিণামে এ শাস্তিও নিছক কুফরী থেকে অনেক বেশী হতে হবে।
টিকা:১৬৯) এখানে মূল আয়াতে ‘ইজ্জত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় ‘ইজ্জত’ শব্দের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। সাধারণত ইজ্জত শব্দটি বললে মান, মর্যাদা, সম্মান ইত্যাদি বুঝানো হয়; কিন্তু আরবীতে ‘ইজ্জত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে,কোন ব্যক্তির মর্যাদা এতই উন্নত ও সংরক্ষিত হয়ে যাওয়া যার ফলে কেউ তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। অন্য কথায় ‘ইজ্জত’ শব্দটির অর্থে বলা যায়, যে মর্যাদা বিনষ্ট করার ক্ষমতা কারো নেই।
টিকা:১৭০) অর্থাৎ এক ব্যক্তি মুসলিম হবার দাবী করা সত্ত্বেও যদি কাফেরদের এমন সব বৈঠকে-সমাবেশে-আলোচনায় শরীক হয় যেখানে আল্লাহর আয়াতের বিরুদ্ধে কুফরী বাক্য উচ্চারিত হয় এবং সে ঠাণ্ডা মাথায় নিশ্চিত মনে আল্লাহ ও রসূলের বিরুদ্ধে লোকদের বিদ্রূপাত্মক উক্তি ও সমালোচনা শুনতে থাকে, তাহলে তার ও ঐ কাফেরদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। (এই আয়াতে যে হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সূরা আন আমের ৬৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে)।
সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-৬৮
وَ اِذَا رَاَیْتَ الَّذِیْنَ یَخُوْضُوْنَ فِیْۤ اٰیٰتِنَا فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتّٰى یَخُوْضُوْا فِیْ حَدِیْثٍ غَیْرِهٖؕ وَ اِمَّا یُنْسِیَنَّكَ الشَّیْطٰنُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَ
আর হে মুহাম্মাদ! যখন তুমি দেখো, লোকেরা আমার আয়াতের মধ্যে দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন তাদের কাছ থেকে সরে যাও, যে পর্যন্ত না তারা এ আলোচনা বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি কখনো শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তাহলে যখনই তোমার মধ্যে এ ভুলের অনুভূতি জাগে তারপর আর এ জালেম লোকদের কাছে বসো না।
টিকা:৪৪) অর্থাৎ যদি কখনো আমার এ নির্দেশ ভুলে যাও এবং ভুলবশত এ ধরনের লোকদের সাহচর্যে গিয়ে বসো।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতের তাৎপর্য এই যে, বার বার কুফরীর মধ্যে লিপ্ত হওয়ার ফলে সত্যকে উপলব্ধি করার এবং গ্রহণ করার যোগ্যতা রহিত হয়ে যায়। ভবিষ্যতে তাওবা করা ও ঈমান আনার সৌভাগ্য হয় না। তবে কুরআন-হাদীসের অকাট্য দলীলাদির দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, যত বড় কট্টর কাফের বা মুরতাদই হোক না কেন, যদি সত্যিকারভাবে তাওবা করে, তবে পূর্ববর্তী সমুদয় গোনাহ মাফ হয়ে যায়। অতএব, বার বার কুফরী করার পরও যদি তারা সত্যিকারভাবে তাওবা করে, তবে তাদের জন্য এখনো ক্ষমার আইন উন্মুক্ত রয়েছে। এখানে তাওবাহ্ কবুল না করার অর্থ এই যে, তারা কোন কোন গোনাহ থেকে তাওবা করলেও মূল গোনাহ অর্থাৎ শির্ক ও কুফর থেকে তাওবাহ্ করতে সমর্থ হয় না। সুতরাং তাদের তাওবাহ্ গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
[২] এ আয়াতে কাফের ও মুশরিকদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য স্থাপন করাকে নিষিদ্ধ করে এ ধরণের আচরণে লিপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সাথে সাথে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উৎস ও মূল কারণ বর্ণনা করে একেও অযথা অবান্তর প্রতিপন্ন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ “তারা কি ওদের কাছে গিয়ে ইজ্জত-সম্মান লাভ করতে চায়? তবে ইজ্জত-সম্মানতো সম্পূর্ণভাবে আল্লাহরই মালিকানাধীন”। কাফের ও মুশরিকদের সাথে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা এবং অন্তরঙ্গ মেলা-মেশার প্রধান কারণ এই যে, তাদের বাহ্যিক মানমর্যাদা, শক্তি-সামর্থ্য, ধনবলে প্রভাবিত হয়ে হীনমন্যতার শিকার হয় এবং মনে করে যে, তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় আমাদেরও মানমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে বলেন যে, তারা এমন লোকদের সাহায্যে মর্যাদাবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছে, যাদের নিজেদেরই সত্যিকারের কোন মর্যাদা নেই। তাছাড়া যে শক্তি ও বিজয়ের মধ্যে সত্যিকারের ইজ্জত ও সম্মান নিহিত, তা তো একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই মালিকানাধীন। অন্য কারো মধ্যে যখন কোন ক্ষমতা বা সাফল্য পরিদৃষ্ট হয়, তা সবই আল্লাহ প্রদত্ত। অতএব, মানমর্যাদা দানকারী মালিককে অসন্তুষ্ট করে তাঁর শক্রদের থেকে ইজ্জত হাসিল করার অপচেষ্টা কত বড় বোকামী। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “আর ইজ্জত-সম্মান একমাত্র আল্লাহ, রাসূল এবং ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু মুনাফেকরা তা অবগত নয়”। [সূরা আল-মুনাফিকুন:৮]
এখানে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিনদের উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে, ইজ্জতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। তিনি যাকে ইচ্ছা আংশিক মর্যাদা দান করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিনগণ যেহেতু আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগত, পছন্দনীয় ও প্রিয়পাত্র, তাই তিনি তাঁদেরকে সম্মান দান করেন। পক্ষান্তরে কাফের ও মুশরিকদের ভাগ্যে সত্যিকার কোন ইজ্জত নেই। অতএব, তাদের সাথে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক স্থাপন করে সম্মান অর্জন করা সুদূর পরাহত। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি বান্দাদের (মাখলুকের) মর্যাদাবান হওয়ার বাসনা করে আল্লাহ তা’আলা তাকে লাঞ্ছিত করেন’। [বাইহাকী, শু’আবুল ঈমান: ৭৪২১] সুতরাং আয়াতের মর্ম এই যে, কাফের, মুশরিক, পাপিষ্ঠ ও পথভ্রষ্টদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে মর্যাদা ও প্রতিপত্তি অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা করা অন্যায় ও অপরাধ।
[৩] এ আয়াতের মর্ম এই যে, যদি কোন প্রভাবে কতিপয় লোক একত্রিত হয়ে আল্লাহ তা’আলার কোন আয়াত বা হুকুমকে অস্বীকার বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকে, তবে যতক্ষণ তারা এহেন গৰ্হিত ও অবাঞ্ছিত কাজে লিপ্ত থাকবে, ততক্ষণ তাদের মজলিশে বসা বা যোগদান করা মুসলিমদের জন্য হারাম। বাতিলপন্থীদের মজলিশে উপস্থিত ও তার হুকুম কয়েক প্রকার। প্রথমতঃ তাদের কুফরী চিন্তাধারার প্রতি সম্মতি ও সন্তুষ্টি সহকারে যোগদান করা। এটা মারাত্মক অপরাধ ও কুফরী। দ্বিতীয়তঃ গৰ্হিত আলোচনা চলাকালে বিনা প্রয়োজনে অপছন্দ সহকারে উপবেশন করা। এটা অত্যন্ত অন্যায় ও ফাসেকী। তৃতীয়তঃ পার্থিব প্রয়োজনবশতঃ বিরক্তি সহকারে বসা জায়েয। চতুর্থতঃ জোর-জবরদস্তির কারণে বাধ্য হয়ে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বসা ক্ষমার যোগ্য। পঞ্চমতঃ তাদের সৎপথে আনয়নের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হওয়া সওয়াবের কাজ।
[৪] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, এমন মজলিশ যেখানে আল্লাহ তা’আলার আয়াত ও আহকামকে অস্বীকার, বিদ্রুপ বা বিকৃত করা হয়, সেখানে হৃষ্টচিত্তে উপবেশন করলে তোমরাও তাদের সমতুল্য ও তাদের গোনাহর অংশীদার হবে। অর্থাৎ আল্লাহ না করুন, তোমরা যদি তাদের কুফরী কথা-বার্তা মনে প্রাণে পছন্দ কর, তাহলে বস্তুতঃ তোমরাও কাফের হয়ে যাবে। কেননা, কুফরী পছন্দ করাও কুফরী। আর যদি তাদের কথা-বার্তা পছন্দ না করা সত্ত্বেও বিনা প্রয়োজনে তাদের সাথে উঠাবসা কর এমতাবস্থায় তাদের সমতুল্য হবার অর্থ হবে তারা যেভাবে শরী’আতকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, তোমরা তাদের আসরে যোগদান করে সহযোগিতা করায় তাদের মতই ইসলামের ক্ষতি সাধন করছ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] কোন কোন মুফাসসির এ থেকে ইয়াহুদীদের বুঝিয়েছেন। তারা মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান এনেছিল, কিন্তু উযায়ের (আঃ)-কে অস্বীকার করেছিল। আবার উযায়ের (আঃ)-এর উপর ঈমান আনলে ঈসা (আঃ)-কে অস্বীকার করেছিল। এইভাবে তাদের কুফরী ও অবিশ্বাস বাড়তেই থাকল। এমনকি তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতকেও অস্বীকার করে বসল। কেউ কেউ এ থেকে মুনাফিকদেরকে বুঝিয়েছেন। কেননা, তাদের কেবল লক্ষ্য ছিল মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করা। তাই তারা বারবার ভান করে নিজেদেরকে মুসলিম প্রকাশ করত। পরিশেষে তাদের কুফরী ও ভ্রষ্টতা এত বেড়ে গেল যে, তাদের হিদায়াত লাভের আশাই শেষ হয়ে গেল।
[২] যেমন সূরা বাক্বারার প্রথমেই (২:১৪ নং আয়াতে) আলোচিত হয়েছে যে, মুনাফিকরা কাফেরদের কাছে গিয়ে বলত, ‘আমরা তো প্রকৃতপক্ষে তোমাদের সাথেই আছি। মুসলিমদের সাথে আমরা তো হাসি-ঠাট্টা করি।’
[৩] অর্থাৎ, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা করলে সম্মান পাওয়া যাবে না। কারণ, এটা আল্লাহর এখতিয়ারধীন এবং তিনি সম্মান কেবল তাঁর অনুসারীদেরকেই দান করে থাকেন। তিনি অন্যত্র বলেছেন, [مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعِزَّةَ فَلِلَّهِ الْعِزَّةُ جَمِيعًا ] অর্থাৎ, কেউ সম্মান চাইলে জেনে রেখো, সমস্ত সম্মান আল্লাহরই জন্য। (সূরা ফাত্বির ৩৫:১০) তিনি আরো বলেন, [وَلِله الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ المُنَافِقِينَ لا يَعْلَمُونَ] অর্থাৎ, সম্মান তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের জন্যই, কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৮) অর্থাৎ, তারা মুনাফিক ও কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে সম্মান কামনা করত। অথচ এটা হল লাঞ্ছনা ও অপমানের পথ, ইজ্জত ও সম্মানের পথ নয়।
[৪ অর্থাৎ, নিষেধ করা সত্ত্বেও যদি তোমরা এমন মজলিসে বস, যেখানে আল্লাহর আয়াতের সাথে ঠাট্টা ও বিদ্রূপ করা হয় এবং তার যদি কোন প্রতিবাদ না কর, তাহলে তোমরাও তাদের মত পাপে সমান সমান শরীক হবে। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন এমন দাওয়াতে শরীক না হয়, যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২০, ৩/৩৩৯) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এমন সব মজলিস ও অনুষ্ঠানে শরীক হওয়া মহাপাপ, যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিধানের সাথে কথায় ও কাজের মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হয়। যেমন, বর্তমানে বহু নেতা, আধুনিক ও পাশ্চাত্য সভ্যতায় প্রভাবিত লোকদের মজলিসে সাধারণতঃ হয়ে থাকে। অনুরূপ যা বিবাহ ও বার্ষিক বহু অনুষ্ঠানে ঘটে থাকে। [اِنَّكُمْ اِذًا مِّثْلَهُمْ] (তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে) কুরআনের এই ধমক ঈমানদারদের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, অবশ্য অন্তরে ঈমান থাকলে তবেই।
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
4:137
إِنَّ الَّذِينَ ءَامَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ءَامَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلًۢا
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, আবার ঈমান এনেছে তারপর কুফরী করেছে, এরপর কুফরীকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করার নন এবং তাদেরকে পথ প্রদর্শন করার নন।
১৩৭-১৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
ইরশাদ হচ্ছে-‘যে ঈমান আনয়নের পর পুনরায় ধর্মত্যাগী হয়ে যায়, অতঃপর আবার মুমিন হয়ে পুনরায় কাফির হয়ে যায়, তারপর কুফরীর উপরেই প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং ঐ অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করে, তার প্রার্থনা গৃহীত হবে না, তার ক্ষমার ও মুক্তির কোন আশা নেই এবং তাকে আল্লাহ তা’আলা সরল সঠিক পথে আনয়ন করবেন না।’ হযরত আলী (রাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে বলতেনঃ ধর্মত্যাগীকে তিনবার বলা হবে- তাওবা করে নাও?’ এরপর আল্লাহ তা’আলা। বলেন-এ মুনাফিকদের অবস্থা এই যে, শেষে তাদের অন্তরে মোহর লেগে যায়। তাই, তারা মুনিমদের ছেড়ে কাফিরদেকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। এদিকে বাহ্যতঃ মুমিনদের সাথে মিলেমিশে থাকে আর ওদিকে কাফিরদের নিকট বসে তাদের সামনে মুমিনদের সম্পর্কে উপহাসমূলক কথা বলে বেশ আনন্দ উপভোগ করে। তাদেরকে বলে-“আমরা মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে দিয়েছি। আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি।’
সুতরাং আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য তাদের সামনে পেশ করতঃ তাতে তাদের অকৃতকার্যতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“তোমরা চাও যে, কাফিরদের নিকট যেন তোমাদের সম্মান লাভ হয়। কিন্তু তোমাদের ধারণা মমাটেই ঠিক নয়। তারা তোমাদের সাথে প্রতারণা করছে। জেনে রেখো যে, সম্মানের মালিক হচ্ছেন এক এবং অংশীবিহীন আল্লাহ তা’আলা। তিনি যাকে ইচ্ছে করেন, সম্মান দান করেন। যেমন তিনি অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যে সম্মান যাজ্ঞা করে তবে সমস্ত সম্মান আল্লাহরই জন্যে। (৩৫:১০) আর একটি আয়াতে রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ ‘সম্মান আল্লাহর জন্যে, তাঁর রাসূলের জন্যে এবং মুমিনদের জন্যে, কিন্তু মুনাফিকরা জানে না।’ (৬৩:৮) ভাবার্থ এই যে, হে মুনাফিকের দল! যদি তোমরা প্রকৃত সম্মান পেতে চাও তবে আল্লাহর সৎ বান্দাদের সাথে মিলিত হও, তাঁর ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড় এবং তাঁর নিকট সম্মান যা কর তাহলেই তিনি তোমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান দান করবেন।
মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু রাইহানা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অহংকারের বশবর্তী হয়ে স্বীয় মর্যাদা প্রকাশের উদ্দেশ্যে স্বীয় বংশের সংযোগ তার কাফির বাপ-দাদার সঙ্গে জুড়ে দেয় এবং নবম পর্যন্ত পৌছে যায়, সেও তাদের সঙ্গে দশম জাহান্নামী।’ এরপর আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে বলেন-“আমি যখন তোমাদেরকে নিষেধ করেছি যে, যে মজলিসে আল্লাহ তা’আলার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং ওগুলোকে উপহাস করে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তোমরা সে মজলিসে বসো না। এরপরেও তোমরা ঐ রূপ মজলিসে অংশগ্রহণ কর তবে তোমাদেরকেও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত মনে করা হবে এবং তাদের পাপে তোমরাও অংশীদার হবে। যেমন একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে দস্তরখানায় মদ্যপান করা হচ্ছে তার উপর কোন এমন এক ব্যক্তির উপবেশন করা উচিত নয়, যে আল্লাহর উপর ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস করে থাকে। এ আয়াতে যে নিষেধাজ্ঞার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে মক্কায় অবতীর্ণ সূরা-ই-আনআমের এ আয়াতটি (আরবী) অর্থাৎ যখন তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তারা আমার নির্দেশাবলী সম্বন্ধে বিতর্ক করছে, তখন তুমি তাদের দিক হতে বিমুখ হও।’ (৬:৬৮)
হযরত মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রঃ) বলেনঃ এ আয়াতের (আরবী)-এ ঘোষণাটি আল্লাহ তা’আলার (আরবী)-এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ মুত্তাকীদের উপর তাদের (মুনাফিকদের) হিসেবের কোন বোঝা নেই, কিন্তু রয়েছে শুধু উপদেশ যে হয় তো তারা বেঁচে যাবে।’ (৬:৬৯)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-“আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মুনাফিক ও কাফিরকে জাহান্নামে একত্রিত করবেন।’ অর্থাৎ যেমন এ মুনাফিকেরা এখানে ঐ কাফিরদের কুফরীতে অংশীদার রয়েছে, তেমনই কিয়ামতের দিন চিরস্থায়ী ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির মধ্যে, কয়েদখানার লৌহ শৃংখলে, গরম পানি ও রক্ত-পুঁজ পানে তাদের সঙ্গেই থাকবে এবং তাদের সকলকেই একই সাথে চিরস্থায়ী শাস্তির ঘোষণা শুনিয়ে দেয়া হবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verses:- 137-140
4:137
Characteristics of the Hypocrites and Their Destination
Allah says;
إِنَّ الَّذِينَ امَنُواْ ثُمَّ كَفَرُواْ ثُمَّ امَنُواْ ثُمَّ كَفَرُواْ ثُمَّ ازْدَادُواْ كُفْرًا
Verily, those who believe, then disbelieve, then believe (again), and (again) disbelieve, and go on increasing in disbelief;
Allah states that whoever embraces the faith, reverts from it, embraces it again, reverts from it and remains on disbelief and increases in it until death, then he will never have a chance to gain accepted repentance after death. Nor will Allah forgive him, or deliver him from his plight to the path of correct guidance.
This is why Allah said,
لَّمْ يَكُنِ اللّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلً
Allah will not forgive them, nor guide them on the (right) way.
Ibn Abi Hatim recorded that his father said that Ahmad bin Abdah related that Hafs bin Jami said that Samak said that Ikrimah reported that Ibn Abbas commented;
ثُمَّ ازْدَادُواْ كُفْرًا
(and go on increasing in disbelief),
“They remain on disbelief until they die.”
Mujahid said similarly.
Allah then said,
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
Give to the hypocrites the tidings that there is for them a painful torment.
Hence, the hypocrites have this characteristic, for they believe, then disbelieve, and this is why their hearts become sealed
4:139
الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُونِ الْمُوْمِنِينَ
Those who take disbelievers for friends instead of believers,
Allah describes the hypocrites as taking the disbelievers as friends instead of the believers, meaning they are the disbelievers’ supporters in reality, for they give them their loyalty and friendship in secret.
They also say to disbelievers when they are alone with them, “We are with you, we only mock the believers by pretending to follow their religion.”
Allah said, while chastising them for being friends with the disbelievers,
أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ
do they seek honor, with them,
فَإِنَّ العِزَّةَ لِلّهِ جَمِيعًا
Verily, then to Allah belongs all honor.
Allah states that honor, power and glory is for Him Alone without partners, and for those whom Allah grants such qualities to.
Allah said,
مَن كَانَ يُرِيدُ الْعِزَّةَ فَلِلَّهِ الْعِزَّةُ جَمِيعاً
Whosoever desires honor, then to Allah belong all honor, (35:10)
and,
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُوْمِنِينَ وَلَـكِنَّ الْمُنَـفِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
But honor belongs to Allah, and to His Messenger, and to the believers, but the hypocrites know not. (63:8)
The statement that honor is Allah’s Alone, is meant to encourage the servants to adhere to their servitude to Allah and to be among His faithful servants who will gain victory in this life and when the Witnesses stand up to testify on the Day of Resurrection.
4:140
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ايَاتِ اللّهِ يُكَفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ
And it has already been revealed to you in the Book that when you hear the verses of Allah being denied and mocked at, then sit not with them, until they engage in talk other than that; certainly in that case you would be like them.
The Ayah means, if you still commit this prohibition after being aware of its prohibition, sitting with them where Allah’s Ayat are rejected, mocked at and denied, and you sanction such conduct, then you have participated with them in what they are doing.
So Allah said, (But if you stayed with them)
إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ
(certainly in that case you would be like them), concerning the burden they will earn. What has already been revealed in the Book — as the Ayah says — is the Ayah in Surah Al-An`am, which was revealed in Makkah,
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِى ءَايَـتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ
And when you see those who engage in false conversation about Our verses (of the Qur’an) by mocking at them, stay away from them. (6:68)
Muqatil bin Hayyan said that;
this Ayah (4:140) abrogated the Ayah in Surah Al-An`am, referring to the part that says here,
إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ
((But if you stayed with them) certainly in that case you would be like them), and Allah’s statement in Al-An`am,
وَمَا عَلَى الَّذِينَ يَتَّقُونَ مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَىْءٍ وَلَـكِن ذِكْرَى لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
Those who fear Allah, keep their duty to Him and avoid evil, are not responsible for them (the disbelievers) in any case, but (their duty) is to remind them, that they may have Taqwa. (6:69)
Allah’s statement,
إِنَّ اللّهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا
Surely, Allah will collect the hypocrites and disbelievers all together in Hell.
means, just as the hypocrites participate in the Kufr of disbelievers, Allah will join them all together to reside in the Fire for eternity, dwelling in torment, punishment, enchained, restrained and in drinking boiling water.