أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٦٤)-৩৬৬
www.motaher21.net
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ
Verily, those who disbelieve in Allah and His Messengers…,
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫০-১৫২
4:150
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيلًا
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায় ।
আয়াত:-১৫১
أُولٰٓئِكَ هُمُ الْكٰفِرُونَ حَقًّا ۚ وَأَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব।
আয়াত:-১৫২
وَالَّذِينَ ءَامَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ أُولٰٓئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করেনি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৫০-১৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা দু’শ্রেণির লোকেদের কথা উল্লেখ করেছেন। একশ্রেণি যারা প্রকৃত কাফির। এরা কতক নাবীদের প্রতি ঈমান রাখে আর কতক নাবীদেরকে অস্বীকার করে। যেমন ইয়াহূদীগণ ঈসা ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া সকল নাবীদের প্রতি ঈমান রাখে, আর খ্রিস্টানগণ সকল নাবীদের ওপর ঈমান রাখে কিন্তু শেষ নাবীকে অস্বীকার করে। এভাবে পার্থক্য সৃষ্টি করে অথচ এটা জানা কথা একজন নাবীকে অস্বীকার করা সকল নাবীকে অস্বীকার করার নামান্তর। ঈমানের দাবী সকল নাবীদের প্রতি ঈমান রাখা। যারা হিংসা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে কতক নাবীদের অস্বীকার করে তারাই প্রকৃত কাফির। তাদের জন্যই জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান রাখে এবং রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করে না বরং সকলের প্রতি সমানভাবে ঈমান রাখে তারাই প্রকৃত মু’মিন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
(اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَآ أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه۪ وَالْمُؤْمِنُوْنَ ط كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ…..)
“রাসূল বিশ্বাস করেছেন যা তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে এবং ঈমানদাররাও…..।” (সূরা বাকারাহ ২:২৮৫) তিনি এদেরকেই উত্তম প্রতিদান দেবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানগণ কাফির, তাদের ভ্রান্ত আকীদাহ ও বাতিল আমলের কারণে।
২. যারা কতক নাবীদের ওপর ঈমান রাখে আর কতক নাবীদের ওপর ঈমান রাখে না তারা কাফির।
৩. একজন নাবীকে প্রত্যাখ্যান করা সকল নাবীকে প্রত্যাখ্যান করার শামিল।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৭৮) অর্থাৎ যারা আল্লাহকে মানে না এবং তাঁর রসূলদেরকেও মানে না আবার যারা আল্লাহকে মানে কিন্তু রসূলদেরকে মানে না অথবা রসূলকে মানে কিন্তু আর কাউকে মানে না তারা সবাই কাফের। কাফের হবার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাদের কারো কাফের হবার ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহও নেই।
টিকা:১৭৯) অর্থাৎ যারা আল্লাহকে নিজেদের একমাত্র মাবুদ ও মালিক বলে স্বীকার করে নেয় এবং তার প্রেরিত সমস্ত নবীর আনুগত্য স্বীকার করে একমাত্র তারাই নিজেদের কাজের প্রতিদান লাভ করার অধিকার রাখে। তারা যে পর্যায়ের সৎকাজ করবে সেই পর্যায়ের প্রতিদান পাবে। আর যারা আল্লাহকে কোনো প্রকার অংশীদারবিহীন মাবুদ ও রব হিসেবে মেনে নেয়নি অথবা যারা আল্লাহর প্রতিনিধিদের মধ্যে কাউকে মেনে নেয়ার ও কাউকে প্রত্যাখ্যান করার বিদ্রোহাত্মক কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তাদের কোনো কাজের প্রতিদান দেবার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আল্লাহর দৃষ্টিতে এই ধরনের লোকদের কোনো কাজের আইনগত মূল্য নেই।
টিকা:১৮০) অর্থাৎ যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনবে তাদের হিসেব নেবার ব্যাপারে আল্লাহর মোটেই কড়াকড়ি করবেন না। বরং তাদের ব্যাপারে কোমলতা ও ক্ষমার নীতি অবলম্বন করবেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] কাতাদা বলেন, এরা হচ্ছে, আল্লাহর দুশমন ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়। কারণ, তাদের মধ্যে ইয়াহুদীরা তাওরাত ও মূসার উপর ঈমান আনে কিন্তু ইঞ্জীল ও ঈসার উপর ঈমান আনে না। আর নাসারারা ইঞ্জীল ও ঈসার উপর ঈমান আনে কিন্তু কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান আনে না। এভাবে এ দুটি সম্প্রদায় ইয়াহুদী ও নাসারা হয়েছে। অথচ এ দুটি মতই বিদ’আত বা নব উদ্ভাবিত। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এভাবে তারা সমস্ত নবী-রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ইসলামকে পরিত্যাগ করেছে। [তাবারী]
[২] পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত স্পষ্ট ঘোষণা ঐসব বিভ্রান্ত লোকদের হীনমন্যতা ও গোঁজামিলকেও ফাঁস করে দিয়েছে, যারা অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজেদের দ্বীন ও দ্বীনী বিশ্বাসকে বিজাতির পদমূলে উৎসর্গ করতে ব্যগ্র। যারা কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট ফয়সালাকে উপেক্ষা করে অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরকেও মুক্তি লাভ করবে বলে বুঝাতে চায়। অথচ তারা অধিকাংশ রাসূলকে অথবা অন্তত কোন কোন নবীকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের কাফের ও জাহান্নামী হওয়ার কথা অত্র আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
অমুসলিশদের প্রতি ইনসাফ, ন্যায়নীতি, সমবেদনা, সহানুভূতি, উদারতা ও ইহসান বা হিতকামনার দিক দিয়ে ইসলাম নজীরবিহীন। ইসলাম একদিকে মুসলিমদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও পরমসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যেমন উদার ও অবারিত দ্বার, অপরদিকে স্বীয় সীমারেখা সংরক্ষণের ব্যাপারে অতি সতর্ক, সজাগ ও কঠোর। ইসলাম অমুসলিমদের প্রতি উদারতার সাথে সাথে কুফর ও কু-প্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম ও অমুসলিমরা দুটি পৃথক জাতি এবং মুসলিমদের জাতীয় প্রতীক ও স্বাতন্ত্র্য সযত্নে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। শুধু ইবাদাতের ক্ষেত্রেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখলে চলবে না, বরং সামাজিকতার ক্ষেত্রেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। এ কথা কুরআন ও হাদীসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীম ও ইসলামের অভিমত যদি এই হতো যে, যে কোন ধর্মমতের সাহায্যে মুক্তি লাভ করা সম্ভব, তাহলে ইসলাম প্রচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের জিহাদ পরিচালনা করা এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত ও কুরআন নাযিল করারও কোন প্রয়োজন থাকতো না।
পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, “নিশ্চয় যারা সত্যিকারভাবে ঈমান এনেছে (মুসলিম হয়েছে) এবং যারা ইয়াহুদী হয়েছে এবং নাসারা (খৃষ্টান) ও সাবেয়ীনদের মধ্যে যারা আল্লাহ তা’আলার প্রতি ও কেয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান এনেছে আর সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তার সমীপে তাদের জন্য পূর্ণ প্রতিদান সংরক্ষিত রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না”। [সূরা আল-বাকারাহ: ৬২]
এ আয়াত থেকেও ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। কেননা, কুরআনের পরিভাষায় আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি ঈমান শুধু তখনই গ্রহণযোগ্য ও ধর্তব্য হয় যখন তার সাথে নবী-রাসূল, ফিরিশতা ও আসমানী কিতাবের প্রতিও ঈমান আনা হয়। তাই তাদের প্রত্যেককে সাধারণ মুসলিমদের মত পুরোপুরি ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমানের পাশাপাশি নবী-রাসূলগণের প্রতিও ঈমান আনা অপরিহার্য। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে (চিনে রাখুন যে) তারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা’আলাই তাদের মোকাবেলায় যথেষ্ট এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৩৭]
সূরা আন-নিসার আলোচ্য আয়াতে আরো স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত কোন একজন নবীকেও যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে সে প্রকাশ্য কাফের, তার জন্য জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব অবধারিত। রাসূলের প্রতি ঈমান ছাড়া আল্লাহ তা’আলার প্রতি সত্যিকার ঈমান সাব্যস্ত হয় না। শেষ আয়াতে পুনরায় দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আখেরাতের মুক্তি ও কামিয়াবী শুধু ঐসব লোকের জন্যই সংরক্ষিত যারা আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমানের সাথে সাথে তার নবী ও রাসূলগণের প্রতি যথার্থ ঈমান রাখে। বস্তুত: কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা ও তাফসীর করে। কুরআনী তাফসীরের পরিপন্থী কোন তাফসীর বর্ণনা কারো জন্য জায়েয নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] আহলে কিতাবদের সম্পর্কে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা কিছু নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আর কিছু নবীগণকে অমান্য করে। যেমন, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি এবং খ্রিষ্টানরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, নবীগণের মধ্যে পার্থক্যকারীগণ (ঈমানদার নয়); বরং পুরোপুরি কাফের।
[২] এই আয়াতে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাঁরা সকল নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। যেমনটি মুসলিমরা কোন নবীকে অমান্য করে না। কুরআন কারীমের উপরোক্ত স্পষ্ট ঘোষণায় ঐ সব বিভ্রান্ত লোকদের মতবাদ খন্ডন করা হয়েছে, যারা বলে, ‘সব ধর্ম সমান।’ যারা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজেদের ধর্মমত ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিজাতির পদমূলে ‘উৎসর্গ’ দিতে চায়। যারা কুরআনের স্পষ্ট বিধানকে উপেক্ষা করে অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরকে বুঝাতে চায় যে, ইসলামই একমাত্র মুক্তির সনদ নয়, বরং অমুসলিমরাও তাদের নিজ নিজ ধর্মে-কর্মে স্থির থেকে পরকালে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে! অথচ কুরআনের এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরী। সুতরাং কেউ যদি শেষ রসূলের রিসালতকে অমান্য করে, তাহলে আল্লাহর উপর তার ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না। (আরো দেখুন সূরা বাক্বারার ২:৬২ নং আয়াতের টীকা)
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৫০-১৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে যে, মাত্র একজন নবীকেও যে মানে না সেও কাফির। ইয়াহুদীরা হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ছাড়া অন্যান্য সমস্ত নবীকেই মানতো। খ্রীষ্টানেরা শুধুমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ছাড়া সমস্ত নবীকেই বিশ্বাস করতো। সামেরীরা হযরত ইউশা’ (আঃ)-এর পরে অন্য কোন নবী (আঃ)-কে স্বীকার করতো না। হযরত ইউশা (আঃ) হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ)-এর খলীফা ছিলেন। মাজুসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের নবী যারাদাশতকে স্বীকার করতো। কিন্তু তারা যখন তাঁর শরীয়তকে অস্বীকার করে তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের শরীয়তকে উঠিয়ে নেন। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে বেশী জানেন। সুতরাং এ লোকগুলো যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে প্রভেদ আনয়ন করতো অর্থাৎ কোন নবীকে মানতো ও কোন নবীকে মানতো না, তা যে, আল্লাহ প্রদত্ত দলীলের উপর ভিত্তি করে তা নয়। বরং শুধুমাত্র মনের ইচ্ছা, অত্যন্ত গোঁড়ামি এবং পূর্ব পুরুষের কথার উপর অন্ধ বিশ্বাসের কারণেই তারা এরূপ করতো। এর দ্বারা এটাও জানা গেল যে, যে ব্যক্তি মাত্র একজন নবীকে মানে না সে আল্লাহ তাআলার নিকট সমস্ত নবীকেই অস্বীকারকারী। সুতরাং তারা নিঃসন্দেহেই কাফির। প্রকৃতপক্ষে শারঈ ঈমান তাদের কারও উপরেই নেই, বরং রয়েছে শুধু গোঁড়ামি ও প্রবৃত্তির ঈমান। আর এরূপ ঈমান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব এ কাফিরদের জন্যে অপমানজনক শাস্তি রয়েছে। কেননা, যাদের উপর ঈমান না এনে তাঁদের মর্যাদার হানি করেছে তার প্রতিফল এটাই যে, তাদেরকে লাঞ্ছনাজনক শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তারা যে তাদের উপর ঈমান আনছে না তা তাদের চিন্তা-শক্তির অভাবের কারণেই হোক বা সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর ইহলৌকিক কোন স্বার্থের কারণেই হোক, যেমন ইয়াহূদী আলেমদের রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ব্যাপারে এ অভ্যাস ছিল যে, তারা একমাত্র হিংসার বশবর্তী হয়ে তাঁর নবুওয়াতকে অস্বীকার করেছিল এবং তার বিরুদ্ধাচরণ ও শত্রুতার কাজে উঠে পড়ে লেগেছিল। তাই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত করেন এবং পরকালেও রয়েছে তাদের জন্যে অপমানকর শাস্তি।
অতঃপর মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উম্মতের প্রশংসা করা হচ্ছে যে, তারা আল্লাহ তা’আলার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতঃ সমস্ত নবীকেই বিশ্বাস করে এবং তাঁদের মধ্যে কোন ভিন্নতা সৃষ্টি করে না। আল্লাহ তাআলার শেষ গ্রন্থ কুরআন কারীমের উপর ঈমান এনে অন্যান্য সমস্ত আসমানী কিতাবকেও তারা বিশ্বাস করে থাকে। যেমন আল্লাহ তাআলা। (আরবী) (২:২৮৫)-এ আয়াতে বলেছেন। এরপর তাদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তিনি তাদেরকে তাদের আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়নের কারণে সত্বরই প্রতিদান প্রদান করবেন। তারা যদি কোন পাপকার্যও করে বসে তবুও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদের উপর স্বীয় করুণা বর্ষণ করবেন। কেননা তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 150-152
Believing in Some Prophets and Rejecting Others is Pure Kufr
Allah threatens those who disbelieve in Him and in His Messengers, such as the Jews and Christians, who differentiate between Allah and His Messengers regarding faith.
They believe in some Prophets and reject others, following their desires, lusts and the practices of their forefathers. They do not follow any proof for such distinction, because there is no such proof. Rather, they follow their lusts and prejudices.
The Jews, may Allah curse them, believe in the Prophets, except `Isa and Muhammad, peace be upon them.
The Christians believe in the Prophets but reject their Final and Seal, and the most honored among the prophets, Muhammad, peace be upon him.
In addition, the Samirah (Samaritans) do not believe in any Prophet after Yuwsha (Joshua), the successor of Musa bin Imran.
The Majus (Zoroastrians) are said to believe only in a Prophet called Zoroaster, although they do not believe in the law he brought them casting it behind them, and Allah knows best.
Therefore, whoever rejects only one of Allah’s Prophets, he will have disbelieved in all of them, because it is required from mankind to believe in every prophet whom Allah sent to the people of the earth. And whoever rejects one Prophet, out of envy, bias and personal whim, he only demonstrates that his faith in other Prophets is not valid, but an act of following desire and whim.
This is why Allah said,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ
Verily, those who disbelieve in Allah and His Messengers…,
Thus, Allah describes these people as disbelievers in Allah and His Messengers;
وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيْنَ اللّهِ وَرُسُلِهِ
and wish to make distinction between Allah and His Messengers, (in faith),
وَيقُولُونَ نُوْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلً
saying, “We believe in some but reject others,” and wish to adopt a way in between.
Allah then describes them
4:151
أُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا
They are in truth disbelievers.
meaning, their disbelief in the Prophet they claim to believe in is clear. This is because their claimed faith in a certain Messenger is not true, for had they truly believed in him, they would have believed in other Messengers, especially if the other Messenger has a stronger proof for his truthfulness. Or at least, they would have strived hard to acquire knowledge of the truth of the other Messenger.
Allah said,
وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
And We have prepared for the disbelievers a humiliating torment.
This is just punishment for belittling the Prophets whom they disbelieved in, by ignoring what the Prophet brought to them from Allah, and because they are interested in the insignificant possessions of this world. Or, their behavior could be the result of their disbelief in the Prophet after they were aware of his truth, just as the Jewish rabbis did during the time of Muhammad, the Messenger of Allah. The Jews envied the Messenger because of the great Prophethood that Allah gave him, and as a consequence, they denied the Messenger, defied him, became his enemies and fought against him. Allah sent humiliation upon them in this life, that shall be followed by disgrace in the Hereafter,
وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَأوُوْاْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ
(And they were covered with humiliation and misery, and they drew on themselves the wrath of Allah), (2:61) in this life and the Hereafter.
Allah’s statement
4:152
وَالَّذِينَ امَنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُواْ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ
And those who believe in Allah and His Messengers and make no distinction between any of them,
This refers to the Ummah of Muhammad who believe in every Book that Allah has revealed and in every Prophet whom Allah has sent. Allah said,
ءَامَنَ الرَّسُولُ بِمَأ أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُوْمِنُونَ كُلٌّ ءَامَنَ بِاللَّهِ
The Messenger believes in what has been revealed to him from his Lord, and (so do) the believers. All of them believe in Allah. (2:285)
Allah then states that He has prepared great rewards for them, tremendous favor and a handsome bounty,
أُوْلَـيِكَ سَوْفَ يُوْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ
We shall give them their rewards;
because of their faith in Allah and His Messengers.
وَكَانَ اللّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
and Allah is Ever Forgiving, Most Merciful.
for their sin, if they have any.