أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٦٧)-৩৬৯
www.motaher21.net
وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُواْ عَنْهُ
আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল,
And their taking of Riba though they were forbidden from taking it,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৬০-১৬২
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ كَثِیْرًاۙ
মোটকথা এই ইহুদী মতাবলম্বীদের এহেন জুলুম নীতির জন্য, তাদের মানুষকে ব্যাপকভাবে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার জন্য।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৬১
وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا
তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৬২
لٰكِنِ الرّٰسِخُوْنَ فِی الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَ مَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِؕ أُولَٰئِكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠
কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যারা পাকাপোক্ত জ্ঞানের অধিকারী ও ঈমানদার তারা সবাই সেই শিক্ষার প্রতি ঈমান আনে, যা তোমার প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল। এ ধরনের ঈমানদার নিয়মিতভাবে নামায কায়েমকারী, যাকাত আদায়কারী এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী লোকদেরকে আমি অবশ্যি মহাপুরস্কার দান করবো।
১৬০-১৬২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৯৮) মধ্যবর্তী প্রাসঙ্গিক বিচ্ছিন্ন বাক্য খতম হবার পর এখান থেকে আবার পূর্বে বর্ণিত ভাষণের সিলসিলা শুরু হচ্ছে।
টিকা:১৯৯) অর্থাৎ তারা কেবল নিজেরা আল্লাহর পথ থেকে সরে গিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বরং এই সঙ্গে তারা এতবড় দুঃসাহসিক অপরাধ প্রবণতায় লিপ্ত হযে পড়েছে যে, দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যতগুলো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে তাদের অধিকাংশের পেছনে ইহুদী মস্তিষ্ক ও ইহুদী পুঁজিকে সক্রিয় দেখা গেছে। হকের পথে ও সত্যের দিকে আহবান করার জন্য যে আন্দোলনই শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে ইহুদীরাই সবচেয়ে বড় বাধার প্রাচীর দাঁড় করিয়েছে। অথচ এই দুর্ভাগা জাতিটির কাছে আল্লাহর কিতাব আছে এবং তারা নবীদের উত্তরাধীকারী। তাদের সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে কমিউনিষ্ট আন্দোলন। ইহুদী মস্তিস্ক এ আন্দোলনটির স্রষ্টা। ইহুদী নেতৃত্বের ছত্রছায়ায় এ আন্দোলন অগ্রগতি লাভ করেছে। আল্লাহকে সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করে, প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে এবং আল্লাহর আনুগত্য ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দেবার বিঘোষিত সংকল্পের ভিত্তিতে সমগ্র মানবতার ইতিহাসে দুনিয়ার বুকে প্রথম খোদাদ্রোহী জীবন বিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠার অপরাধও এই তথাকথিত আহলে কিতাব জাতিটির দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সালামের উম্মত এই ইহুদীজাতিই ছিল এর উদগাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। আধুনিক যুগে কমিউনিজমের পরে গোমরাহীর সবচেয়ে বড় খুঁটি ফ্রয়েডের দর্শন, মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ফ্রয়েডও বনী ইসরাঈলেরই এক সন্তান।
টিকা:২০০) তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশটি লিখিত রয়েছেঃ “যদি তুমি আমার লোকদের মধ্য থেকে যে তোমার কাছে থাকে এমন কোন অভাবীকে ঋণ দাও তাহলে তার সাথে ঋণদাতার ন্যায় ব্যবহার করো না। তার কাছে থেকে সুদও নিয়ো না। যদি তুমি কখনো নিজের প্রতিবেশীর কাপড় বন্ধকও রাখো তাহলে সূর্য ডোবার আগেই তারটা তাকে ফেরত দাও। কারণ সেটিই তার একমাত্র পরার কাপড়। সেটিই তার শরীর ঢাকার জন্য একমাত্র পোশাক। তা না হলে সে কি গায়ে দিয়ে ঘুমাবে? কাজেই সে ফরিয়াদ করলে আমি তার কথা শুনবো। কারণ আমি করুণাময়।” (যাত্রা পুস্তক ২২: ২৫-২৭)। এছাড়াও তাওরাতের আরো কয়েক স্থানে সুদ হারাম হবার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই তাওরাতের প্রতি ঈমানের দাবীদার ইহুদী সমাজ আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সুদখোর, সংকীর্ণমনা ও পাষাণ হৃদয় জাতি হিসেব সর্বত্র পরিচিত এবং এসব ব্যাপারে তাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়ে থাকে।
টিকা:২০১) সামনের দিকে সূরা আন আমের ১৪৬ আয়াতে যে বিষয়বস্তুর আলোচনা আসছে এখানে সম্ভবত সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলদের ওপর এমন সব প্রাণী হারাম করে দেয়া হয় যাদের নখর রয়েছে। গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের ওপর হারাম করে দেয়া হয়। এছাড়াও সম্ভবত ইহুদী ফিকাহ শাস্ত্রে অন্য যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতার সন্ধান পাওয়া যায়, এখানে সেদিকেও ইশারা করা হয়েছে। কোন দলের জীবন যাপনের ক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়া আসলে তার জন্য একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।-(বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন সূরা আন’আম, ১২২ নম্বর টীকা)।
[[টিকা:১২২) এ বিষয়টি কুরআন মজীদের তিনটি স্থানে বিবৃত হয়েছে। সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ “এ সমস্ত খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীয়ায় যা হালাল হিসেবে গণ্য) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল। তবে কিছু জিনিস এমন ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিলের পূর্বে ইসরাঈলীরা নিজেরাই নিজেদের ওপর হারাম করে নিয়েছিল। ওদেরকে বলো, তাওরাত আনো এবং তার কোন উদ্ধৃতি পেশ করো, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো।” (৯৩ আয়াত) সূরা আন নিসায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈলদের অপরাধের কারণে “আমি এমন বহু পাক-পবিত্র বস্তু তাদের ওপর হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল।” (১৬০-১৬১ আয়াত) আর এখানে বলা হয়েছেঃ এদের অবাধ্যতার কারণে আমি সমস্ত নখরধারী প্রাণী এদের জন্য হারাম করে দিয়েছি এবং ছাগল ও গরুর চর্বিও এদের জন্য হারাম গণ্য করেছি। এ তিনটি আয়াত একত্র করলে জানা যায়, শরীয়াতে মুহাম্মাদী ও ইহুদী ফিকাহর মধ্যে আহার যোগ্য প্রাণীদের হালাল ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে দু’টি কারণে পার্থক্য দেখা যায়।
একঃ তাওরাত নাযিল হবার শত শত বছর আগে ইয়াকুব (ইসরাইল) আলাইহিস সালাম কোন কোন জিনিসের ব্যবহার ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পরে তাঁর সন্তানরাও সেগুলো ত্যাগ করেছিল। এমনকি ইহুদী ফকীহগণ এগুলোকে রীতিমত হারাম মনে করতে থাকে এবং এগুলোর হারাম হওয়ার বিষয়টি তাওরাতে লিখে নেয়। উট, খরগোশ ও শাফনও এ হারামের তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমান বাইবেলে আমরা তাওরাতের যে অংশটুকু পাই তাতে এ তিনটিরই হারাম হবার বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। (লেবীয় পুস্তক ১১: ৪-৬ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ১৪: ৭ ) কিন্তু কুরআন মজীদে ইহুদীদের এ বলে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিলঃ আনো তাওরাত এবং দেখাও কোথায় এ জিনিসগুলো হারাম বলে লেখা হয়েছে, তা থেকে জানা যায় যে, তাওরাতে এ বিধানগুলো বৃদ্ধি করা হয়েছে এ ঘটনার পর। কারণ তখন যদি তাওরাতে এ বিধানগুলো থাকতো, তাহলে বনী ইসরাঈল সঙ্গে সঙ্গেই তাওরাত এনে তা দেখিয়ে দিতো।
দুইঃ দ্বিতীয় পার্থক্যটি সৃষ্টি হবার কারণ হচ্ছে এই যে, ইহুদীরা যখন আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো এবং নিজেদের আইন নিজেরাই প্রণয়ন করতে শুরু করলো তখন নিজেদের চুলচেরা আইনগত বিশ্লেষণ ও বাড়াবাড়ির মাধ্যমে তারা অনেক পাক-পবিত্র জিনিসকে নিজেরাই হারাম করে নিয়েছিল এবং এর শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাদেরকে এ বিভ্রান্তির মধ্যে অবস্থান করতে দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নখরধারী প্রাণী। অর্থাৎ উটপাখি, বক, হাঁস ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, গরু ও ছাগলের চর্বি। এ দু’ ধরনের হারামকে বাইবেলে তাওরাতের বিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। http://alquranindex114.blogspot.com/2018/05/blog-post_19.html (লেবীয় পুস্তক ১১: ১৬-১৮, দ্বিতীয় বিবরণ ১৪: ১৪-১৫-১৬, লেবীয় পুস্তক ৩: ১৭ এবং ৭: ২২-২৩) কিন্তু সূরা নিসা থেকে জানা যায়, এ জিনিসগুলো তাওরাতে হারাম ছিল না। বরং হযরত ইসা আলাইহিস সালামের পর এগুলো হারাম হয়েছে। ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয় বর্তমান ইহুদী শরীয়াত লিপিবদ্ধ করার কাজ দ্বিতীয় খৃস্টাব্দের শেষের দিকে রাব্বি ইয়াহুদার হাতে সম্পন্ন হয়।
এখন বাকি থাকে এ প্রশ্নটি, তাহলে মহান আল্লাহ এ জিনিসগুলো সম্পর্কে এখানে এবং সূরা নিসায় (আমি হারাম করেছি) শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? এর জওয়াব হচ্ছে, আল্লাহ কেবলমাত্র নবী ও কিতাবের মাধ্যমে কোন জিনিস হারাম করেন না। বরং তিনি কখনো তাঁর বিদ্রোহী বান্দাদের ওপর বানোয়াট বিধান রচয়িতা ও আইন প্রণেতাদের চাপিয়ে দেন এবং তারা পাক-পবিত্র জিনিসগুলো তাদের জন্য হারাম করে দেয়। প্রথম ধরনের হারামটি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে প্রবর্তিত হয় এবং দ্বিতীয় ধরনের হারামটি প্রবর্তিত হয় তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি ও লানত হিসেবে।]]
টিকা:২০২) অর্থাৎ এ জাতির যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আনুগত্য পরিহার করে বিদ্রোহ ও অস্বীকৃতির পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রাখা হয়েছে। দুনিয়ায় যে ভীষণ শাস্তি তারা পেয়েছে ও পাচ্ছে তা আজ পর্যন্ত অন্য কোন জাতি পায়নি। দু’হাজার বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো দুনিয়ার কোথাও তারা সম্মানজনক কোন ঠাঁই করতে পারেনি। দুনিয়ায় তাদের বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সর্বত্র তারা বিদেশী। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি যুগও অতিক্রান্ত হয়নি যখন দুনিয়ার কোথাও না কোথাও তাদের লাঞ্ছিত ও বিধ্বস্ত হতে হয়নি। নিজেদের বিপুল ধনাঢ্যতা সত্ত্বেও কোথাও তাদের সম্মানের চোখে দেখা হয় না। আর সবচাইতে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন জাতির জন্ম হয় তারপর তারা খতম হয়ে যায় কিন্তু এ জাতিটির মৃত্যু হচ্ছে না। একে দুনিয়ায় তাদের لايموت فيها ولا يحيى অর্থাৎ ‘না জীবিত না মৃত’-জীবন্মৃত অবস্থার শাস্তি দেয়া হয়। এ জাতিটি যাতে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির জন্য একটি জীবন্ত শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয় এবং নিজের সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে এ শিক্ষাদান করতে থাকে যে, আল্লাহর কিতাব বগলে দাবিয়ে রেখে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা উঁচু করার পরিণাম এমনিই হয়ে থাকে-এটিই হচ্ছে এ জাতিটিকে জীবন্মৃত অবস্থায় টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য। আর আখেরাতের আযাব হবে ইনশাআল্লাহ এর চাইতেও বেশী কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক। (এ আলোচনার পর ফিলিস্তিনের ইসরাঈল রাষ্ট্রটি সম্পর্কে লোকদের মনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্য আলে ইমরানের ১১২ আয়াত দেখুন)।
ضُرِبَتْ عَلَیْهِمُ الذِّلَّةُ اَیْنَ مَا ثُقِفُوْۤا اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ حَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ ضُرِبَتْ عَلَیْهِمُ الْمَسْكَنَةُؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا یَكْفُرُوْنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا یَعْتَدُوْنَۗ
এদের যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই এদের ওপর লাঞ্ছনার মার পড়েছে। তবে কোথাও আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মিলে গেলে তা অবশ্যি ভিন্ন কথা, আল্লাহর গযব এদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এদের ওপর মুখাপেক্ষিতা ও পরাজয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব কিছুর কারণ হচ্ছে এই যে, এরা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করতে থেকেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানি ও বাড়াবাড়ির পরিণাম।
টিকা:৯০) অর্থাৎ দুনিয়ার কোথাও যদি তারা কিছুটা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে থাকে তাহলে তা তাদের নিজেদের ক্ষমতা বলে অর্জিত হয়নি বরং অন্যের সহায়তা ও অনুগ্রহের ফল। কোথাও কোন মুসলিম সরকার আল্লাহর নামে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছে এবং কোথাও কোন অমুসলিম সরকার নিজস্বভাবে তাদেরকে সহায়তা দান করেছে। এভাবে কোন কোন সময় দুনিয়ার কোথাও তারা শক্তিশালী হবার সুযোগও লাভ করেছে। কিন্তু তাও নিজের বাহু বলে নয়, বরং নিছক অপরের অনুগ্রহে তথা পরের ধনে পোদ্দারী করার মতো।
টিকা:২০৩) অর্থাৎ তাদের মধ্য থেকে যেসব লোক আসমানী কিতাবসমূহের যথার্থ শিক্ষা অবগত হয়েছে এবং সব ধরনের হিংসা বিদ্বেষ, জাহেলী জিদ-হঠধর্মিতা, বংশানুক্রমিক অন্ধ অনুসৃতি ও স্বার্থপূজা থেকে মুক্ত হয়ে আসমানী কিতাবসমূহ থেকে যে নিখাদ সত্যের প্রমাণ পাওয়া যায় তাকে সাচ্চা দিলে আন্তরিকতা সহকারে মেনে নেয়, তাদের ভূমিকা হয় কাফের ও জালেম ইহুদীদের সাধারণ ভূমিকা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। তারা এক নজরে অনুভব করে, পূর্ববর্তী নবীগণ যে দ্বীনের শিক্ষা দিয়েছিলেন কুরআন তারই শিক্ষা দিচ্ছে। তাই তারা নিরপেক্ষ সত্যপ্রীতি সহকারে উভয়টির ওপর ঈমান আনে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৬০-১৬২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতের দু’টি ভাবার্থ হতে পারে। একটি তো এই যে, এটা হুরমতে কাদরী’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এটা লিখেই রেখেছিলেন যে, এ লোকগুলো স্বীয় গ্রন্থকে পরিবর্তিত করবে এবং বৈধ জিনিসকে নিজেদের উপর অবৈধ করে নেবে। ওটা শুধুমাত্র তাদের কঠোরতার কারণেই ছিল। দ্বিতীয় ভাবার্থ এই যে, এটা ছিল শারঈ হুরমাত’ অর্থাৎ তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে যে কতক জিনিস তাদের উপর হালাল ছিল তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার সময় তাদের কিছু অপরাধের কারণে হারাম করে দেয়া হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক খাদ্যই বানী ইসরাঈলের জন্যে হালাল ছিল। কিন্তু তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইসরাঈল নিজের উপর যা হারাম করে নিয়েছিল তাই তাদের উপর হারাম করা হয়েছিল” (৩:৯৩) এ আয়াতের ভাবার্থ এই যে, তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বানী ইসরাঈলের উপর সমস্ত খাদ্যই বৈধ ছিল। কিন্তু হযরত ইসরাঈল (আঃ) নিজের উপর উটের গোশত ও দুধ হারাম করেছিলেন। সুতরাং তাওরাতে তাদের জন্য ঐ দুটো জিনিস হারাম করে দেয়া হয়। যেমন সূরা-ই আনআমে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এবং ইয়াহূদীদের জন্যে আমি সমস্ত খুর বিশিষ্ট পশু অবৈধ করেছিলাম এবং ছাগ, গরু ও ওদের চর্বি যা পৃষ্ঠে ও অন্ত্রে সংযুক্ত অথবা অস্থিতে সংলিপ্ত-তদ্ব্যতীত তাদের জন্যে হারাম করেছিলাম; এভাবে আমি তাদের অবাধ্যতার জন্যে তাদেরকে প্রতিফল প্রদান করেছিলাম এবং নিশ্চয়ই আমি সত্যপরায়ণ।” (৬:১৪৬)
সুতরাং এখানে আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তাদের অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি, নিজে আল্লাহ তা’আলার পথ হতে সরে যাওয়া ও অপরকে সরিয়ে দেয়া, যা তাদের চিরন্তন অভ্যাস ছিল, রাসূলগণকে হত্যা করা, তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, বিভিন্ন প্রকার কৌশল অবলম্বন করতঃ সুদ ভক্ষণ করা, অন্যায়ভাবে অপরের মাল আত্মসাৎ করা, এ সমস্ত কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর এমন কতগুলো জিনিস হারাম করেন যেগুলো তাদের জন্যে হালাল ছিল। ঐসব কাফিরদের জন্যে তিনি বেদনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সত্য ধর্মে পূর্ণ বিশ্বাসী, তারা কুরআন কারীম ও পূর্বের সমস্ত কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। এ বাক্যটির তাফসীর সূরা-ই-আলে ইমরানের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ), হযরত সা’লাবা ইবনে সাঈদ (রাঃ), হযরত যায়েদ ইবনে সাঈদ (রাঃ) এবং হযরত উসায়েদ ইবনে উবায়েদ (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নবুওয়াতকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। অগ্রবর্তী (আরবী) বাক্যটি সমস্ত ইমামের মাসহাফে’ ও হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ)-এর মাসহাফে এরূপই আছে। কিন্তু আল্লামা ইবনে জারীর (রঃ)-এর উক্তি অনুসারে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর সহীফায় (আরবী) রয়েছে। প্রথম পঠনটিই বিশুদ্ধ। যারা বলেন যে, এটা লিখার ভুল, তারা ভুল বলেছেন। কেউ কেউ তো বলেন যে, এর (আরবী) হচ্ছে (আরবী) -এর কারণে, যেমন (আরবী) (২৪:১৭৭)এ আয়াতে হয়েছে। তাছাড়া আরবাসীর কথা-বার্তায় এবং কবিতায়ও এ নিয়ম বরাবর চালু রয়েছে।
আবার কেউ বলেন যে, (আরবী) (২৪:৪)-এ বাক্যের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ তারা ওগুলোর উপরও বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠিত করার উপরও তাদের বিশ্বাস রয়েছে। অর্থাৎ তারা নামাযের অপরিহার্যতা ও সত্যতা স্বীকার করে। কিংবা এর ভাবার্থ হচ্ছে ফেরেশতা। অর্থাৎ তাদের কুরআন কারীমের উপর, অন্যান্য আসমানী কিতাবের উপর এবং ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস রয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু এতে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা সবেচেয়ে ভাল জানেন।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তারা যাকাত প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ মালের বা জীবনের যাকাত দিয়ে থাকে। ভাবার্থ দুটোও হতে পারে। আর তারা একমাত্র আল্লাহকেই ইবাদতের যোগ্য মনে করে থাকে এবং তারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের উপরও পূর্ণ বিশ্বাস রাখে যে, সেদিন প্রত্যেক ভাল-মন্দ কার্যের প্রতিদান দেয়া হবে। এ প্রকারের লোককেই আমি মহা প্রতিদান অর্থাৎ জান্নাত প্রদান করবো।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
১৬০-১৬২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ তিনটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইয়াহূদীদের চারটি অপরাধের কথা তুলে ধরেছেন। ১. তারা জুলুম করেছে, ২. তারা মানুষদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পথে আসতে বাধা দিত, ৩. সুদ খেত অথচ তা খেতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ৪. তারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করত। এসব অপরাধের কারণে আল্লাহ তা‘আলা যা তাদের জন্য হালাল ছিল তা হারাম করে দিয়েছেন। আর এ কথা পূর্বেও বলা হয়েছে যে, তাওরাত অবতীর্ণ হবার পূর্বে সকল বস্তু তাদের জন্য হালাল ছিল কেবল ইয়াকুব (আঃ) নিজের জন্য যা হারাম করে নিয়েছেন তা ব্যতীত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
(كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِيْٓ إِسْرَا۬ئِيْلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَا۬ئِيْلُ عَلٰي نَفْسِه۪ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرٰةُ)
“সব খাদ্যই বানী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল তবে তাওরাত নাযিল হবার আগে ইয়াকুব নিজের ওপর যা হারাম করেছিলেন তা ছাড়া।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯৩) তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাওরাতে অনেক বস্তু হারাম করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَعَلَي الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِيْ ظُفُرٍ ج وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُوْمَهُمَآ إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُوْرُهُمَآ أَوِ الْحَوَايَآ أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ ط ذٰلِكَ جَزَيْنٰهُمْ بِبَغْيِهِمْ وَإِنَّا لَصٰدِقُوْنَ )
“ইয়াহূদীদের প্রতি আমি সর্বপ্রকার নখবিশিষ্ট জীব হারাম করেছিলাম; আর গরু ও ছাগল হতে তাদের জন্য উভয়ের চর্বি হারাম করেছিলাম; কিন্তু পৃষ্ঠদেশের চর্বি, নাড়ি-ভুঁড়ির চর্বি ও হাড়ের সাথে মিশ্রিত চর্বি এ হারামের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তাদের বিদ্রোহমূলক আচরণের জন্য আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম, আর আমি নিঃসন্দেহে সত্যবাদী।” (সূরা আনআম ৬:১৪৬)
আর এসব আযাবের সম্মুখীন হবার আরো কারণ হল, তারা সুদ খেত যা নিষেধ করা হয়েছিল। এবং অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করত।
(لٰكِنِ الرّٰسِخُوْنَ فِي الْعِلْمِ)
‘কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর’ যারা ধর্মে গভীর জ্ঞানী ও সুপ্রতিষ্ঠিত এবং যারা ঈমান এনেছে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং পূর্ববতী নাবীদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তার প্রতি।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হয় আবদুল্লাহ বিন সালাম, ছা‘লাবাহ, আসাদ, জায়েদ ও প্রমূখ সাহাবাদের ব্যাপারে যারা স্বধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়েছিল। (ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২২)
الزكاة -যাকাত দ্বারা সম্পদের যাকাত হতে পারে, অথবা জানের যাকাত হতে পারে আবার উভয়ই হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা ভাল জানেন।
এসব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা উত্তম প্রতিদান দেবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অপরাধ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে।
২. যে কোন পদ্ধতিতে ইসলামের পথে বাধা দেয়া হারাম।
৩. অন্যায়ভাবে জনগণের সম্পদ খাওয়া হারাম।
৪. আহলে কিতাবের অনেক সৎলোক রয়েছে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
৫. অধিকাংশ জ্ঞানী ব্যক্তিগণ পদস্খলন থেকে মুক্ত থাকেন।
৬. সালাত কায়েম করার ফযীলত জানতে পারলাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 160-162
Some Foods Were Made Unlawful for the Jews Because of their Injustice and Wrongdoing
Allah says;
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ
وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللّهِ كَثِيرًا
For the wrongdoing of the Jews, We made unlawful for them certain good foods which had been lawful for them ـ and for their hindering many from Allah’s way;
Allah states that because of the injustice and transgression of the Jews, demonstrated by committing major sins, He prohibited some of the lawful, pure things which were previously allowed for them.
This prohibition could be only that of decree, meaning that Allah allowed the Jews to falsely interpret their Book and change and alter the information about what was allowed for them. They thus, out of exaggeration and extremism in the religion, prohibited some things for themselves.
It could also mean that in the Tawrah, Allah prohibited things that were allowed for them before.
Allah said,
كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِـلًّ لِّبَنِى إِسْرَءِيلَ إِلاَّ مَا حَرَّمَ إِسْرَءِيلُ عَلَى نَفْسِهِ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ
All food was lawful to the Children of Israel, except what Israil made unlawful for himself before the Tawrah was revealed. (3;93)
We mentioned this Ayah before, which means that all types of food were allowed for the Children of Israel before the Tawrah was revealed, except the camel’s meat and milk that Israil prohibited for himself. Later, Allah prohibited many things in the Tawrah. Allah said in Surah Al-An`am (chapter 6),
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا كُلَّ ذِى ظُفُرٍ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَأ إِلاَّ مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَأ أَوِ الْحَوَايَأ أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ ذَلِكَ جَزَيْنَـهُم بِبَغْيِهِمْ وِإِنَّا لَصَـدِقُونَ
And unto those who are Jews, We forbade every (animal) with undivided hoof, and We forbade them the fat of the ox and the sheep except what adheres to their backs or their entrails, or is mixed up with a bone. Thus We recompensed them for their rebellion. And verily, We are Truthful. (6:146)
This means, We prohibited these things for them because they deserved it due to their transgression, injustice, defying their Messenger and disputing with him.
So Allah said;
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ
وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللّهِ كَثِيرًا
For the wrongdoing of the Jews, We made unlawful to them certain good foods which had been lawful to them, and for their hindering many from Allah’s way.
This Ayah states that they hindered themselves and others from following the truth, and this is the behavior that they brought from the past to the present.
This is why they were and still are the enemies of the Messengers, killing many of the Prophets. They also denied Muhammad and `Isa, peace be upon them.
Allah said
وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُواْ عَنْهُ
And their taking of Riba though they were forbidden from taking it,
Allah prohibited them from taking Riba’, yet they did so using various kinds of tricks, ploys and cons, thus devouring people’s property unjustly.
وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ
and their devouring men’s substance wrongfully.
Allah said,
وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
And We have prepared for the disbelievers among them a painful torment.
Allah then said
لَّـكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ
But those among them who are well-grounded in knowledge…,
firm in the religion and full of beneficial knowledge.
We mentioned this subject when we explained Surah Al Imran.
The Ayah;
وَالْمُوْمِنُونَ
and the believers…,
refers to the well-grounded in knowledge;
يُوْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ
believe in what has been sent down to you and what was sent down before you;
Ibn Abbas said,
“This Ayah was revealed concerning Abdullah bin Salam, Thalabah bin Sayah, Zayd bin Sa`yah and Asad bin Ubayd who embraced Islam and believed what Allah sent Muhammad with.”
Allah said,
وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَةَ
and those who perform the Salah,
وَالْمُوْتُونَ الزَّكَاةَ
and give Zakah,
This could be referring to the obligatory charity due on one’s wealth and property, or those who purify themselves, or both.
Allah knows best.
وَالْمُوْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الاخِرِ
and believe in Allah and in the Last Day,
They believe that there is no deity worthy of worship except Allah, believe in Resurrection after death and the reward or punishment for the good or evil deeds.
Allah’s statement,
أُوْلَـيِكَ
It is they,
those whom the Ayah described above.
سَنُوْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
To whom We shall give a great reward.
means Paradise.