(Book# 114/١٦٨)-৩৭০ www.motaher21.net إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِن بَعْدِهِ নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট। (Verily, We have inspired you (O Muhammad) as We inspired Nuh and the Prophets after him).” সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৬৩- ১৬৫

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٦٨)-৩৭০
www.motaher21.net

إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِن بَعْدِهِ

নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট।
(Verily, We have inspired you (O Muhammad) as We inspired Nuh and the Prophets after him).”

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৬৩- ১৬৫

اِنَّاۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلَیْكَ كَمَاۤ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰى نُوْحٍ وَّ النَّبِیّٖنَ مِنْۢ بَعْدِهٖۚ وَ اَوْحَیْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرٰهِیْمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ وَ الْاَسْبَاطِ وَ عِیْسٰى وَ اَیُّوْبَ وَ یُوْنُسَ وَ هٰرُوْنَ وَ سُلَیْمٰنَۚ وَ اٰتَیْنَا دَاوٗدَ زَبُوْرًاۚ

হে মুহাম্মাদ! আমি তোমার কাছে ঠিক তেমনিভাবে অহী পাঠিয়েছি, যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীদের কাছে পাঠিয়ে ছিলাম। আমি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইয়াকুব সন্তানদের কাছে এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের কাছে অহী পাঠিয়েছি। আমি দাউদকে যবূর দিয়েছি।

আয়াত নং :-১৬৪

وَ رُسُلًا قَدْ قَصَصْنٰهُمْ عَلَیْكَ مِنْ قَبْلُ وَ رُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَیْكَؕ وَ كَلَّمَ اللّٰهُ مُوْسٰى تَكْلِیْمًاۚ

এর পূর্বে যেসব নবীর কথা তোমাকে বলেছি তাদের কাছেও আমি অহী পাঠিয়েছি এবং যেসব নবীর কথা তোমাকে বলিনি তাদের কাছেও। আমি মূসার সাথে কথা বলেছি ঠিক যেমনভাবে কথা বলা হয়।

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৬৫

رُسُلًا مُّبَشِّرِیْنَ وَ مُنْذِرِیْنَ لِئَلَّا یَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّٰهِ حُجَّةٌۢ بَعْدَ الرُّسُلِؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیْزًا حَكِیْمًا

এই সমস্ত রসূলকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছিল, যাতে তাদেরকে রসূল বানিয়ে পাঠাবার পর লোকদের কাছে আল্লাহর মোকাবিলায় কোন প্রমাণ না থাকে। আর আল্লাহ‌ সর্বাবস্থায়ই প্রবল পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।

১৬৩-১৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সাকীন ও আদী ইবনে যায়েদ বলেছিল, “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমরা স্বীকার করি না যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর পরে আল্লাহ তা’আলা কোন মানুষের উপর কিছু অবতীর্ণ করেছেন। তখন এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব কারাযী (রঃ) বলেন। যে, যখন (আরবী) (৪:১৫৩-১৫৬) পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং ইয়াহূদীদের দুষ্কার্যাবলী তাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হয়, তখন তারা স্পষ্টভাবে বলে যে, আল্লাহ তা’আলা কোন মানুষের উপর নিজের কোন কালাম অবতীর্ণই করেননি, না মূসা (আঃ)-এর উপর, না ঈসা (আঃ)-এর উপর, না অন্য কোন নবীর উপর। সেই সময় আল্লাহ তা’আলা। (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। কিন্তু এ উক্তিটি সন্দেহযুক্ত। কেননা, সূরা-ই-আনআমের এ আয়াতটি মাক্কী’। আর সূরা-ই-নিসার উপরোক্ত আয়াতটি ‘মাদানী’ যা তাদের ‘আপনি আকাশ হতে কোন কিতাব আনয়ন করুন এ কথার খণ্ডনে অবতীর্ণ হয়। তাদের এ কথার উত্তরে বলা হয় যে, তারা হযরত মূসাকে এর চেয়েও বড় প্রশ্ন করেছিল। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাদের দোষগুলো বর্ণনা করেন এবং তাদের পূর্বের ও বর্তমানের জঘন্য কার্যাবলী প্রকাশ করেন।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তিনি স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে প্রত্যাদেশ করেন যেমন প্রত্যাদেশ করেছিলেন তিনি অন্যান্য নবীদের উপর। ‘যাবুর ঐ আসমানী কিতাবের নাম যা হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল। ঐ নবীদের ঘটনা আমরা ইনশাআল্লাহ সূরা-ই-কাসাসে বর্ণনা করবো।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এ আয়াত অর্থাৎ মাক্কী সূরার আয়াতের পূর্বে বহু নবীর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এবং বহু নবীর ঘটনা বর্ণিত হয়নি। যে নবীগণের নাম কুরআন কারীমের মধ্যে এসেছে সেগুলো নিম্নরূপঃ

হযরত আদম (আঃ), হযরত ইদরীস (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত হযরত হূদ (আঃ), হযরত সালিহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত নূত (আঃ), হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইয়াকূব। (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত আইয়ূব (আঃ), হযরত শুআইব (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারূন (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সুলাইমান (আঃ), হযরত ইলিয়াস (আঃ), হযরত ইয়াসাআ (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহইয়া (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) ও অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে হযরত যুলকিফল (আঃ) এবং সর্বশেষ ও নবীগণের নেতা হযরত মুহাম্মাদ মোস্তাফা (সঃ)।

বহু নবী এমনও রয়েছেন যাদের নাম কুরআন কারীমে উল্লিখিত হয়নি। এ কারণেই রাসূল ও নবীগণের সংখ্যায় মতভেদ রয়েছে। এ ব্যাপারে সুপ্রসিদ্ধ হাদীস হচ্ছে হযরত আবু যার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি। হাদীসটি তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! নবী কতজন? তিনি বলেনঃ “এক লক্ষ চব্বিশ হাজার।” হযরত আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূল কতজন? তিনি বলেনঃ “তিনশ তেরোজন। বড় একটি দল।” পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করেন, সর্বপ্রথম কে? তিনি বলেনঃ “হযরত আদম (আঃ)। তিনি বলেন, তিনি কি রাসূল ছিলেন? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যা! আল্লাহ তা’আলা তাঁকে স্বহস্তে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার মধ্যে রূহ্ ঠুকে দেন এবং ঠিকঠাক করে দেন।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ)! চারজন হচ্ছেন সূরইয়ানী। (১) হযরত আদম (আঃ), (২) হযরত শীষ (আঃ), (৩) হযরত নহ (আঃ) এবং (৪) হযরত খানখ (আঃ) যার প্রসিদ্ধ নাম হচ্ছে ইদরীস (আঃ)। তিনিই সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেন। আর চারজন হচ্ছেন আরবী। (১) হযরত হূদ (আঃ), (২) হযরত সালিহ্ (আঃ), (৩) হযরত শুআইব (আঃ) এবং (৪) তোমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সঃ)। হে আবু যার (রাঃ)! বানী ইসরাঈলের প্রথম নবী হচ্ছেন হযরত মূসা (আঃ) এবং শেষ নবী হচ্ছেন হযরত ঈসা (আঃ)। সমস্ত নবীর মধ্যে প্রথম নবী হচ্ছেন হযরত আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ নবী হচ্ছেন তোমাদের নবী (সঃ)”। এ সুদীর্ঘ হাদীসটি হাফিয আবূ হাতিম (রঃ) স্বীয় গ্রন্থ আল আনওয়া ওয়াত্তাফাসীমে বর্ণনা করেছেন যার উপর তিনি বিশুদ্ধতার চিহ্ন দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত ইমাম আবু ফারাজ ইবনে জাওযী ওটাকে সম্পূর্ণরূপে কল্পিত বলেছেন। ইবরাহীম ইবনে হাসিম ওর একজন বর্ণনাকারীকে কল্পনাকারী রূপে সন্দেহ করেছেন। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, খণ্ডনকারী ইমামগণের মধ্যে অনেকেই এ হাদীসের কারণে তার সমালোচনা করেছেন। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আর এ হাদীসটি অন্য সনদে হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। কিন্তু ওতে মাআন ইবনে রিফাআহ্ দুর্বল, আলী ইবনে ইয়াযিদও দুর্বল এবং কাসিম ইবনে আবদুর রহমানও দুর্বল।

আবু ইয়ালা (রঃ)-এর হাদীস গ্রন্থে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা আট হাজার নবী পাঠিয়েছেন। চার হাজার পাঠিয়েছেন বানী ইসরাঈলের নিকট এবং চার হাজার পাঠিয়েছেন অবশিষ্ট অন্যান্য লোকদের উপর”। এ হাদীসটিও দুর্বল। এতে যাইদী এবং তার শিক্ষক রুকাশী দু’জনই দুর্বল। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবূ ইয়ালার আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার ভাই আট হাজার নবী অতীত হয়েছেন। তাঁদের পরে হযরত ঈসা (আঃ) এসেছেন এবং তার পরে আমি এসেছি।” অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘আমি আট হাজার নবীর পরে এসেছি, তাঁদের মধ্যে চার হাজার ছিলেন বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত।’ এ হাদীসটি এ সনদে তো গারীব বটেই কিন্তু এর সমস্ত বর্ণনাকারী সুপরিচিত। শুধুমাত্র আহমাদ ইবনে তারিকের সততা বা দৌর্বল্য সম্পর্কে আমার অজানা রয়েছে।

নবীগণের সংখ্যা সম্পর্কে হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত সুদীর্ঘ হাদীসটিও এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে। হযরত আবু যার (রাঃ) বলেনঃ আমি মসজিদে প্রবেশ করি। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) একাকী মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমিও তার পার্শ্বে বসে পড়ি এবং বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি কি আমাকে নামাযের নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ হ্যা, নামায উত্তম কাজ। তাই, হয় তুমি নামায বেশী করে পড় না হয় কম করে পড়। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন্ আমল উত্তম? তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর পথে জিহাদ করা। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন্ মুমিন উত্তম। তিনি বলেনঃ “সর্বাপেক্ষা উত্তম চরিত্র বিশিষ্ট ব্যক্তি।” আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সর্বোত্তম মুসলমান কে? তিনি বলেনঃ “যার কথা ও হাত হতে মানুষ নিরাপদে থাকে।” আমি বলি, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন্ হিজরত উত্তম? তিনি বলেন :মন্দকে পরিত্যাগ করা। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন গোলাম আযাদ করা উত্তম? তিনি বলেনঃ “যে গোলামের মূল্য বেশী ও তার মনিবের নিকট বেশী পছন্দীয়। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন্ সাদকা সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ ‘অল্প মালের অধিকারী ব্যক্তির চেষ্টা করা ও গোপনে দরিদ্রকে দান করা। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কুরআন কারীমের মধ্যে সবচেয়ে বড় মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত কোনটি? তিনি বলেনঃ “আয়তুল কুরসী।”

অতঃপর তিনি বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ)! সাতটি আকাশ কুরসীর তুলনায় ঐরূপ যেরূপ কোন মরুপ্রান্তরে একটি বৃত্ত এবং কুরসীর উপর আরশের মর্যাদা ঐরূপ যেরূপ প্রশস্ত প্রান্তরের মর্যাদা বৃত্তের উপর। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! নবী কতজন? তিনি বলেনঃ ‘এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। আমি বলি, তাদের মধ্যে রাসূল কতজন? তিনি বলেনঃ ‘তিনশ জন, বড় পবিত্র দল। আমি জিজ্ঞেস করি, সর্বপ্রথম কে? তিনি বলেনঃ হযরত আদম (আঃ)। আমি বলি, তিনিও কি রাসূল ছিলেন? তিনি বলেনঃ হ্যা, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে স্বহস্তে সৃষ্টি করতঃ ওঁর মধ্যে রূহ্ কুঁকে দেন এবং তাঁকে ঠিকঠাক করেন।’

অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘জেনে রেখো যে, চারজন হচ্ছেন সুরইয়ানী। (১) হযরত আদম (আঃ), (২) হযরত শীষ (আঃ), (৩) হরত খানুখ (আঃ) তিনিই হচ্ছেন হযরত ইদরীস (আঃ), যিনি সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেছেন এবং (৪) হযরত নূহ (আঃ)। আর চারজন হচ্ছেন আরবী। (১) হযরত হূদ (আঃ), (২) হযরত শুআইব (আঃ), (৩) হযরত সালিহ (আঃ) এবং (৪) তোমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। সর্বপ্রথম রাসূল হচ্ছেন হযরত আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ রাসূল হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। আমি জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তা’আলা কতখানা কিতাব অবতীর্ণ করেছেন? তিনি বলেনঃ “একশ চারখানা। হযরত শীষ (আঃ)-এর উপর পঞ্চাশ খানা সহীফা, হযরত খানুখ (আঃ)-এর উপর তিনখানা সহীফা, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর দশখানা সহীফা, হযরত মূসা (আঃ) -এর উপর তাওরাতের পূর্বে দশখানা সাহীফা ও তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জীল, ও ফুরকান নাযিল করেন। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সাহীফায় কি ছিল? তিনি বলেনঃ ওর সম্পূর্ণটাই ছিল নিম্নরূপ-

‘হে বিজয়ী বাদশাহ! আমি তোমাকে দুনিয়া জমা করার জন্যে পাঠাইনি, বরং এ জন্যে পাঠিয়েছি যে, তুমি অত্যাচারিতের প্রার্থনা আমার সামনে হতে সরিয়ে দেবে। যদি তা আমার নিকট পৌছে যায় তবে আমি তা প্রখ্যাত্যান করবো না। তাতে নিম্নরূপ দৃষ্টান্তও ছিল- জ্ঞানীর এটা অপরিহার্য কর্তব্য যে, সে যেন তার সময় কয়েক ভাগে ভাগ করে। একটি অংশে সে নিজের জীবনের হিসেব গ্রহণ করবে। এক অংশে আল্লাহ তা’আলার গুণাবলী সম্বন্ধে চিন্তা করবে, একাংশে সে পানাহারের চিন্তা করবে। জ্ঞানীর নিজেকে তিনটি জিনিস ছাড়া অন্য কোন জিনিসে লিপ্ত রাখা উচিত নয়। প্রথম হচ্ছে পরকালের পাথেয়, দ্বিতীয় হচ্ছে জীবিকা লাভ এবং তৃতীয় হচ্ছে বৈধ জিনিসে আনন্দ ও মজা উপভোগ। জ্ঞানীর উচিত যে, সে যেন নিজের সময়কে দেখতে থাকে, স্বীয় কার্যে লেগে থাকে এবং স্বীয় জিহ্বাকে সংযত রাখে। যে ব্যক্তি স্বীয় কথাকে তার কাজের সঙ্গে মিলাতে থাকে সে খুব কম কথা বলবে। তোমরা শুধু ঐ কথাই বল, যাতে তোমাদের উপকার হয়।”

আমি জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হযরত মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে কি ছিল? তিনি বলেনঃ “ওটা শুধু উপদেশে পরিপূর্ণ। যেমন আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখে বিস্মিত হই যে মৃত্যুকে বিশ্বাস করে অথচ আনন্দে আত্মহারা হয়ে থাকে। ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রাখে অথচ হায় হায় করে। দুনিয়ার অস্থায়িত্ব অবলোকন করে অথচ নিশ্চিন্ত থাকে। কিয়ামতের দিন যে হিসাব দিতে হবে এটা জানে অথচ আমল করে না”। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! পূর্ববর্তী নবীদের গ্রন্থসমূহে যা কিছু ছিল ওগুলোর মধ্যে আমাদের গ্রন্থেও কিছু রয়েছে কি? তিনি বলেনঃ হ্যা, হে আবূ যার! দেখ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ মুক্তি পেয়েছে ঐ ব্যক্তি যে পবিত্র হয়েছে। আর তার প্রভুর নাম স্মরণ করতঃ নামায পড়েছে। বরং তোমরা ইহলৌকিক জীবনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছ, অথচ পারলৌকিক জীবন উত্তম ও চিরস্থায়ী। নিশ্চয়ই এটা পূর্ববর্তী সাহীফাগুলোতে রয়েছে। রয়েছে ইবরাহীম ও মূসার সাহীফায়।’ (৮৭:১৪-১৯)

আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ “আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি আল্লাহকে ভয় করতে থাক। এটাই হচ্ছে তোমার কার্যের প্রধান অংশ।” আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ কুরআন পাঠ ও আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাক।

এটা তোমার জন্যে আকাশসমূহে যিকিরের এবং পৃথিবীতে আলোকের কারণ হবে।’ আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও বলুন। তিনি বলেনঃ “সাবধান! অতিরিক্তি হাসি হতে বিরত হও। এর ফলে অন্তর মরে যায় এবং চেহারার ঔজ্জ্বল্য দূর হয়ে যায়।” আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ “জিহাদে লিপ্ত থাক, আমার উম্মতের জন্যে এটাই হচ্ছে সংসার ত্যাগ।” আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ “উত্তম কথা বলা ছাড়া মুখ বন্ধ রেখো। এতে শয়তান পলায়ন করে এবং ধর্মীয় কাজে বিশেষ সহায়তা লাভ হয়।

আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ ‘তোমা অপেক্ষা নিম্ন পর্যায়ের লোকদের দিকে দেখ, তোমা অপেক্ষা উচ্চ পর্যায়ের লোকদের দিকে দেখো না। এতে তোমার অন্তরে আল্লাহ তা’আলার নিয়ামতরাজীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে।’ আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও বলুন! তিনি বলেনঃ ‘দরিদ্রদের প্রতি ভালবাসা রেখো এবং তাদের সাথে উঠাবসা কর। এতে আল্লাহ তা’আলার করুণা তোমার কাছে খুব বড় বলে মনে হবে। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ ‘আত্মীয়দের সাথে মিলিত থাক যদিও তারা মিলিত না হয়। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আরও কিছু বলুন। তিনি বলেনঃ ‘সত্য কথা বলতে থাক যদিও তা কারও কাছে তিক্ত বলে মনে হয়। আমি তাঁর নিকট আরও উপদেশ যাঞা করি। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলার ব্যাপারে ভৎসনাকারীর ভৎসনাকে ভয় করো না। আমি বলি, আরও বলন। তিনি বলেনঃ “নিজের দোষ-ক্রটির। প্রতি লক্ষ্য কর। অন্যের দোষ-ক্রটির প্রতি লক্ষ্য রাখা হতে বিরত থাক।

অতঃপর তিনি আমার বক্ষে হাত রেখে বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ)! তদবীরের মত কোন বুদ্ধিমত্তা নেই, হারাম হতে বিরত থাকার মত কোন তাকওয়া নেই এবং উত্তম চরিত্রের মত কোন বংশ নেই। মুসনাদ-ই-আহমাদেও এ হাদীসটি কিছু কম-বেশীর সাথে বর্ণিত আছে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) জনগণকে জিজ্ঞেস করেনঃ “খারেজীগণও কি দাজ্জালকে স্বীকার করে? উত্তর আসেঃ না। তিনি তখন বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এক হাজার বরং তার চেয়েও বেশী নবীর শেষে এসেছি। প্রত্যেক নবী (আঃ) নিজ নিজ উম্মতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আমার সামনে তার এমন কতগুলো নিদর্শন বর্ণনা করেছেন যেগুলো অন্যান্য নবীদের নিকট বর্ণনা করেননি। জেনে রেখো যে, সে টেরা চক্ষু বিশিষ্ট হবে এবং প্রভু এরূপ হতে পারেন না। তার ডান চক্ষু কানা হবে ও উপর দিকে উঠে থাকবে যেমন চুনকামকৃত কোন পরিষ্কার দেয়ালে কোন ফুটা জায়গা থাকে। তার বাম চক্ষুটি উজ্জ্বল তারকার ন্যায় হবে। সে সমস্ত ভাষায় কথা বলবে। তার নিকট সবুজ শ্যামল জান্নাতের ছবি থাকবে যেখানে পানি প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তার নিকট জাহান্নামেরও ছবি থাকবে। তথায় কালো ধুয়া দেখা যাবে।’

অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এক লক্ষ বরং তার চেয়েও বেশী নবী (আঃ)-এর শেষে আগমন করেছি। আল্লাহ তাআলা যত নবী পাঠিয়েছেন প্রত্যেকেই স্বীয় গোত্রকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন।” তারপরে পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন।

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘এবং আল্লাহ প্রত্যক্ষ বাক্যে মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছেন। এটা তার একটা বিশেষ গুণ যে, তিনি কালীমুল্লাহ ছিলেন। একটি লোক হযরত আবু বকর ইবনে আয়্যাশ (রঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ একটি লোক এ বাক্যটিকে। (আরবী) এরূপ পড়ে থাকে। অর্থাৎ মূসা (আঃ) আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন।’ একথা শুনে হযরত আবু বকর ইবনে আয়্যাশ (রঃ) রাগান্বিত হয়ে বলেন :“কোন কাফির এভাবে পড়ে থাকবে। আমি হযরত আ’মাশ (রঃ) হতে, তিনি ইয়াহইয়া (রঃ) হতে, তিনি আবদুর রহমান (রঃ) হতে, তিনি হযরত আলী (রাঃ) হতে এবং হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে (আরবী) এরূপই পড়েছেন। মোটকথা ঐ লোকটির অর্থ ও শব্দের পরিবর্তন করে দেয়া দেখে তিনি এরূপ রাগান্বিত হন। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে, এটা কোন মুতাযেলীই হবে। কেননা, মুতাযেলীদের বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ তা’আলা না হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে কথা বলছেন না অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেছেন। কোন একজন মুতাযেলী কোন একজন মনীষীর নিকট এসে এ আয়াতটিকে এভাবে পাঠ করলে তিনি তাকে মন্দ বলেন। অতঃপর তাকে বলেনঃ “তাহলে তুমি (আরবী) অর্থাৎ ‘এবং যখন মূসা আমার প্রতিশ্রুত সময়ে আগমন করে এবং তার প্রভু তার সাথে কথা বলেন'(৭:১৪৩)-এ আয়াতটিকে কিভাবে অস্বীকার করবে”? ভাবার্থ এই যে, এখানে এ ব্যাখ্যা ও পরিবর্তন চলবে না।

“তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই’-এর একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে কথা বলেন তখন তিনি একটি কৃষ্ণ বর্ণের পিপীলিকার অন্ধকার রাত্রে কোন পরিষ্কার পাথরের উপর চলাও দেখতে পেতেন।” এ হাদীসটি দুর্বল এবং এর ইসনাদও সহীহ নয়। কিন্তু এটা যদি সহীহ ‘মাওকুফ’ হিসেবে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর উক্তি রূপে প্রমাণিত হয় তবে খুব ভাল কথা। মুসতাদরিক-ইহাকিম’ প্রভৃতি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে যে, যখন আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেন তখন তিনি পশমের চাদর, পায়জামা এবং যবাইহীন গাধার চামড়ার জুতো পরিহিত ছিলেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তিন দিনে হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কথা বলেন যেগুলোর সবই ছিল উপদেশ। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ)-এর কর্ণে মানুষের কথা প্রবেশ করেনি। কেননা তখন তার কর্ণে ঐ পবিত্র কালামই প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। এর ইসনাদও দুর্বল। তাছাড়া এতে ইনকিতা রয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই প্রভৃতি গ্রন্থের মধ্যে একটি হাদীস রয়েছে যে, হযরত জাবির (রাঃ) বলেনঃ ‘তুর দিবসে আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন ওর বিশেষণ ঐদিনের কথার বিশেষণ হতে সম্পূর্ণ পৃথক ছিল যে দিন তিনি তাঁকে আহ্বান করেছিলেন। তখন হযরত মূসা (আঃ) এর রহস্য জানতে চাইলে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে মূসা! এ পর্যন্ত তো আমি দশ হাজার ভাষার সমান ক্ষমতায় কথা বলেছি। অথচ আমার সমস্ত ভাষায় কথা বলারই ক্ষমতা রয়েছে, এমন কি এর চেয়েও বেশী ক্ষমতা রয়েছে।”

বানী ইসরাঈল হযরত মূসা (আঃ)-কে প্রভুর কালামের বিশেষণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি তো কিছুই বলতে পারি না। তখন তারা বলেঃ “আচ্ছা, কিছু সাদৃশ্য বর্ণনা করুন।” তিনি বলেনঃ “তোমরা তো বজের শব্দ শুনে থাকবে। ওটা অনেকটা ঐরূপ ছিল কিন্তু বেশী ছিল না।” এর একজন বর্ণনাকারী রুকাশী খুবই দুর্বল। হযরত কা’ব (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে যখন কথা বলেন তখন তিনি সমস্ত ভাষাতেই কথা বলেন। স্বীয় কথার মধ্যে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ পাককে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রভু! এটাই কি আপনার কথা?’ তিনি বলেনঃ না। তুমি আমার কথা সহ্য করতে পারবে না।’ হযরত মূসা (আঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রভু! আপনার মাখলুকের কারও কথার সঙ্গে আপনার কথার সাদৃশ্য আছে কি? আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘ভয়ংকর বজ্রধ্বনি ছাড়া আর কিছুরই সাদৃশ্য নেই।’ এ বর্ণনাটিও মাওকুফ এবং এটা স্পষ্ট কথা যে, হযরত কা’ব (রঃ) পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ হতে বর্ণনা করতেন, যেসব কিতাবে বানী ইসরাঈলের সত্য-মিথ্যা সব ঘটনাই থাকতো।

এরপর বলা হচ্ছে- তারা এমন রাসূল যারা আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য স্বীকারকারীদেরকে ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনাকারীদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে এবং তাঁর আদেশ অমান্যকারীদের ও তাঁর রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন কারীদেরকে জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করে থাকে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা যে স্বীয় গ্রন্থরাজি অবতীর্ণ করেছেন ও রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং তাদেরকে স্বীয় সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তা এ জন্যে যে, যেন কারও কোন প্রমাণ এবং ওর অবশিষ্ট না থাকে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ যদি আমি এর পূর্বেই তাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম তবে তারা অবশ্যই বলতো-হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদের নিকট রাসূল পাঠাননি কেন? তাহলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই আপনার নিদর্শনসমূহকে মেনে নিতাম।’ (২০:১৩৪)

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলার মত মর্যাদা বোধ আর কারও নেই। এ জন্যেই তিনি সমস্ত মন্দকে হারাম করেছেন তা প্রকাশ্যই হোক আর গোপনীয়ই হোক এবং এমনও কেউ নেই যার কাছে প্রশংসা আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা বেশী পছন্দনীয় হয়। এ কারণেই তিনি নিজের প্রশংসা নিজেই করেছেন। এমনও কেউ নেই যার নিকট ওযর আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা বেশী প্রিয় হয়। এ জন্যেই তিনি নবীগণকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছেন। অন্য বর্ণনায় নিম্নের শব্দগুলোও রয়েছে- “এ কারণেই তিনি রাসূল পাঠিয়েছেন ও গ্রন্থাবলী অবতীর্ণ করেছেন।”

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:২০৪) এখানে যে কথা বলতে চাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, মুহাম্মাদ ﷺ এমন কোন নতুন জিনিস আনেননি, যা ইতিপূর্বে আর কেউ আনেননি। তিনি দাবী করছেন না যে, তিনিই এই প্রথমবার একটি নতুন জিনিস পেশ করছেন। বরং পূর্ববর্তী নবীগণ জ্ঞানের যে উৎসটি থেকে হিদায়াত লাভ করেছেন তিনিও হিদায়াত লাভ করেছেন সেই একই উৎস থেকে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণকারী। পয়গাম্বরগণ হামেশা যা সত্যের বাণী প্রচার করে এসেছেন তিনিও সেই একই সত্য প্রচার করেছেন। অহী অর্থ হচ্ছে ইশারা করা, মনের মধ্যে কোন কথা প্রক্ষিপ্ত করা, গোপনভাবে কোন কথা বলা এবং পয়গাম পাঠানো।

টিকা:২০৫) বর্তমানে বাইবেলের মধ্যে ‘যাবুর’ (গীতসঙ্গিতা)) নামে যে অধ্যায়টি পাওয়া যায় তার সবটুকুই দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ যাবুর নয়। তার মধ্যে অন্যান্য লোকদের বহু কথা মিশিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেগুলোকে তাদের রচয়িতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। তবে যে সমস্ত বাণীতে (স্তোত্র) একথা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সেগুলো হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের, সেগুলোর মধ্য যথার্থই সত্য বাণীর উজ্জ্বল আলো অনুভূত হয়। অনুরূপভাবে বাইবেলে ‘আমসালে সুলাইমান’ (হিতোপদেশ) নামে যে অধ্যায়টি রয়েছে, তাতেও ব্যাপক মিশ্রণ পাওয়া যায়। তার শেষ দু’টি অনুচ্ছেদ যে পরে সংযোজন করা হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও তার বৃহত্তর অংশ নির্ভুল ও সত্য মনে হয়। এই দু’টি অধ্যায়ের সাথে সাথে হযরত ‘আইউব’ (ইয়োব) আলাইহিস সালামের নামেও আর একটি অধ্যায় বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে জ্ঞানের বহু অমূল্য তত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও সেটি পড়তে গিয়ে হযরত আইউবের সাথে তার সংশ্লিষ্ট করার ব্যাপারটি সত্য বলে বিশ্বাস করা যায় না। কারণ কুরআনেও এই অধ্যায়টির প্রথম দিকে হযরত আইউবের যে মহান সবরের প্রশংসা করা হয়েছে সমগ্র অধ্যায় ঠিক তার উলটো চিত্রই পেশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হযরত আইউব তাঁর সমগ্র বিপদকালে আল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বক্ষণ অভিযোগমুখর ছিলেন। এমনকি তার সহচর নাকি এই মর্মে তাঁকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতেন যে, আল্লাহ‌ জালেম নন; কিন্তু তিনি কোনক্রমেই তা মানতে প্রস্তুত হতেন না। এসব সহীফা ছাড়াও বনী ইসরাঈলদের নবীদের আরো ১৭ খানি সহীফা বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এগুলোর বেশীর ভাগ সঠিক বলে মনে হয়। বিশেষ করে ইয়াস’ঈয়াহ্ (যিশাইয়), ইয়ারমিয়াহ (যিরমিয়), হাযকী ইন (যিহিস্কেল), অমূস (আমোষ) ও আরো কয়েকটি সহীফার অধিকাংশ স্থান পড়ার পর মানুষের হৃদয় নেচে উঠে। এগুলোর মধ্যে খোদায়ী কালামের সুস্পষ্ট মাহাত্ম অনুভূত হয়। এগুলোতে শিরকের বিরুদ্ধে জিহাদ, তাওহীদের সপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি প্রদান এবং বনী ইসরাঈলের নৈতিক অধঃপতনের ওপর কড়া সমালোচনা পড়ার সময় একজন সাধারণ পাঠক একথা অনুভব না করে থাকতে পারে না যে, ইঞ্জীলে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষণসমূহ এবং কুরআন মজীদ ও এই সহীফাগুলো একই উৎস থেকে উৎসারিত স্রোতধারা ছাড়া আর কিছুই নয়।

টিকা:২০৬) অন্যান্য নবীদের ওপর যে পদ্ধতিতে অহী আসতো তা ছিল এই যে, একটি আওয়াজ আসতো অথবা ফেরেশতারা পয়গাম শুনাতেন এবং নবীগণ তা শুনতেন। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের সাথে একটি বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়। আল্লাহ‌ নিজে তাঁর সাথে কথা বলেন। আল্লাহ‌ ও বান্দার মধ্যে এমনভাবে কথাবর্তা হতো যেমন-দু’জন লোক সামনাসামনি কথা বলে থাকে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ সূরা ‘তা-হা’য় উদ্ধৃত কথোপকথনের বরাত দেয়াই যথেষ্ট মনে করি। বাইবেলেও হযরত মূসার এই বৈশিষ্ট্যটির উল্লেখ এভাবেই করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ “যেমন কোন ব্যক্তি কথা বলে তার বন্ধুর সাথে, ঠিক তেমনি খোদাবন্দ মূসার সাথে সামনাসামনি কথা বলতেন।” (যাত্রা ৩৩: ১১)

টিকা:২০৭) অর্থাৎ তাদের সবার একই কাজ ছিল। সে কাজটি ছিল এই যে, যারা আল্লাহর পাঠানো শিক্ষার ওপর ঈমান আনবে এবং সেই মোতাবেক নিজেদের দৃষ্টিভংগী ও কার্যকলাপ সংশোধন করে নেবে তাদের তাঁরা সাফল্য ও সৌভাগ্য লাভের সুখবর শুনিয়ে দেবেন। আর যারা ভুল চিন্তা ও কর্মের পথ অবলম্বন করবে তাদেরকে এই ভুল পথ অবলম্বন করার খারাপ পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করে দেবেন।

টিকা:২০৮) অর্থাৎ এই সমস্ত পয়গম্বর পাঠাবার একটিই মাত্র উদ্দেশ্য ছিল। সে উদ্দেশ্যটি ছিল এই যে, আল্লাহ‌ মানব জাতির কাছে নিজের দায়িত্ব পূর্ণ করার প্রমাণ পেশ করতে চাইছিলেন। এর ফলে শেষ বিচারের দিনে কোন পথভ্রষ্ট অপরাধী তাঁর কাছে এই ওজর পেশ করতে পারবে না যে, সে জানতো না এবং আল্লাহ‌ যথার্থ অবস্থা সম্পর্কে তাকে অবহিত করার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ‌ দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে পয়গাম্বর পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন। এ পয়গাম্বরগণ অসংখ্য লোকের নিকট সত্যের জ্ঞান পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন; কিন্তু এখানে রেখে গেছেন তাঁদের বিভিন্ন কিতাব। মানুষকে পথ দেখাবার জন্য অবশ্যি প্রতি যুগে এ কিতাবগুলোর মধ্য থেকে কোন না কোন কিতাব দুনিয়ায় মওজুদ থেকেছে। এরপর যদি কোন ব্যক্তি গোমরাহ হয়, তাহলে সেজন্য আল্লাহ‌ ও তাঁর পয়গাম্বরকে অভিযুক্ত করা যেতে পারে না। বরং এজন্য ঐ ব্যক্তি নিজেই অভিযুক্ত হবে। কারণ তার কাছে পয়গাম পৌঁছে গিয়েছিল কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি। অথবা সেইসব লোক অভিযুক্ত হবে যারা সত্য-সঠিক পথ জানতোঃ কিন্তু আল্লাহর বান্দাদের গোমরাহীতে লিপ্ত দেখেও তাদেরকে সত্য পথের সন্ধান দেয়নি।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] নবীগণের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নির্দেশ ও বাণীকে ওহী বলা হয়। হারিস ইবন হিশাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অহী কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত আমার নিকট আসে। আর ওটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টদায়ক অহী, এরপর ফেরেশতা আমার থেকে পৃথক হতো এমতাবস্থায় যে, তিনি যা বলেন তা শেষ হতেই তার কাছ থেকে আমি তা আয়ত্ব করে ফেলি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকারে এসে আমাকে যে অহী বলেন, আমি তা সাথে সাথে আয়ত্ব করে নেই। [বুখারীঃ ২]

[২] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, পূর্ববতী নবীগণের প্রতি যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়েছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তেমনি আল্লাহ্ তা’আলা ওহী নাযিল করেছেন। অতএব, পূর্ববর্তী নবীগণকে যারা মান্য করে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও মান্য করতে বাধ্য। আর যারা তাকে অস্বীকার করে তারা যেন অন্যসব নবীকে এবং তাদের প্রতি প্রেরিত ওহীকেও অস্বীকার করলো।

[৩] এ আয়াতে নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর পরে যেসব নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাদের সম্পর্কে প্রথমে সাধারণভাবে বলার পর তন্মধ্যে বিশিষ্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে যে, এরা সবাই আল্লাহর রাসূল এবং তাদের নিকটও বিভিন্ন পন্থায় ওহী প্রেরিত হয়েছে। কখনো ফিরিশতাদের মাধ্যমে ওহী পৌছেছে, কখনো লিপিবদ্ধ কিতাব আকারে এসেছে, আবার কখনো আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলের সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথোপকথন করেছেন। যে কোন পন্থায়ই ওহী পৌঁছুক না কেন, তদানুযায়ী আমল করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। অতএব, ইয়াহুদীদের এরূপ আবদার করা যে, তাওরাতের মত লিখিত কিতাব নাযিল হলে আমরা মান্য করবো, অন্যথায় নয় -সম্পূর্ণ আহম্মকী ও স্পষ্ট কুফরী। আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র শরীআতের অধিকারী রাসূলের সংখ্যা ছিল তিনশ’ তের জন’। [সিহীহ ইবন হিব্বানঃ ৩৬১]

[৪] আল্লাহ্ তা’আলা ঈমানদারদের ঈমান ও সৎকর্মশীলতার পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ দান করার জন্য এবং কাফের, বেঈমান ও দূরাচারদের কুফরী ও অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন কিয়ামতের শেষ বিচারের দিনে অবাধ্য ব্যক্তিরা অজুহাত উত্থাপন করতে না পারে যে, হে আল্লাহ! কোন কাজে আপনি সন্তুষ্ট আর কোন কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। জানতে পারলে অবশ্যই আমরা আপনার সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করতাম। অতএব, আমাদের অনিচ্ছাকৃত ক্রটি মার্জনীয় এবং আমরা নিরপরাধ। পথভ্রষ্ট লোকেরা যাতে এহেন অজুহাত পেশ করতে বা বাহানার আশ্রয় নিতে না পারে, তজ্জন্য আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট নিদর্শনসহ নবীগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তারা সর্বস্ব উৎসর্গ করে সত্য পথ প্রদর্শন করেছেন। অতএব, এখন আর সত্য দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোন অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না, কোন বাহানারও অবকাশ নেই। আল্লাহর ওহী এমন এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ যার মোকাবেলায় অন্য কোন প্রমাণই কার্যকর হতে পারে না। কুরআনুল কারম এমন এক অকাট্য দলীল যার সামনে কোন অযুক্তি টিকতে পারে না। এ আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য সূরা ত্বা-হা এর ১৩৪ এবং সূরা আল-কাসাস এর ৪৭ নং আয়াত দেখা যেতে পারে।

১৬৩-১৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করে এ আয়াতে তাদের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা যেমন পূর্ববর্তী নাবীদের প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন তেমনি নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিও ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন।

যে সকল নাবী রাসূলগণের নাম ও তাদের ঘটনাবলী কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তাদের সংখ্যা চব্বিশ অথবা পঁিচশজন। ১. আদম, ২. ইদরীস, ৩. নূহ, ৪. হূদ ৫. সালেহ ৬. ইবরাহীম ৭. লূত ৮. ইসমাঈল ৯. ইসহাক। ১০. ইয়া‘কূব। ১১. ইউসুফ ১২. আইয়ূব ১৩. শুআইব ১৪. মূসা ১৫. হারুন ১৬. ইউনুস ১৭. দাঊদ ১৮. সুলাইমান ১৯. ইলিয়াস ২০. ইয়াসা‘ ২১. যাকারিয়া ২২. ইয়াহইয়াহ ২৩. ঈসা ২৪. যুলকিফল (আঃ) (অধিকাংশ মুফাসসিরদের নিকট) ২৫. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

যে সকল নাবী-রাসূলগণের নাম ও ঘটনাবলী কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি তাদের সংখ্যা কত- এ বিষয় আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন।

তবে সাধারণ জনগণের নিকট প্রসিদ্ধ কথা যে, এক লাখ চব্বিশ হাজার এবং অন্য বর্ণনায় আট হাজার উল্লেখ রয়েছে যা দুর্বল, গ্রহণযোগ্য নয়। (ইবনে কাসীর, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৪)

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী রাসূলগণকে সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। নবুয়াতের এ ধারাবাহিকতায় শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেন।

তাই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরে যারা নবুওয়াত দাবী করবে তারাই মিথ্যুক ও দাজ্জাল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার পরে নাবী হলে উমার (রাঃ)‎ হত কিন্তু আমি শেষ নাবী, আমার পরে কোন নাবী আসবে না। (তিরমিযী হা: ৩৬৮৬, হাসান)

(وَكَلَّمَ اللّٰهُ مُوسٰي تَكْلِيمًا)

‘এবং মূসার সঙ্গে আল্লাহ অবশ্যই কথা বলেছিলেন।’ আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছেন। এটা মূসা (আঃ)-এর আলাদা বৈশিষ্ট্য। ইবনু হিব্বানের এক বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) আল্লাহ তা‘আলার সাথে সরাসরি কথোপকথনে আদম (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও শরীক করেছেন। (ইবনে কাসীর, সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াত)

(رُسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ)

‘সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি’ আল্লাহ তা‘আলা নবুওয়াত অথবা সুসংবাদ দান ও ভীতি প্রদর্শনের ধারাকে এজন্যই অব্যাহত রেখেছেন যাতে শেষ বিচার দিনে কেউ ওজর পেশ না করতে পারে যে, আমাদের নিকট কোন বার্তাবাহক আসেনি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَوْ أَنَّآ أَهْلَكْنٰهُمْ بِعَذَابٍ مِّنْ قَبْلِه۪ لَقَالُوْا رَبَّنَا لَوْلَآ أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُوْلًا فَنَتَّبِعَ اٰيٰتِكَ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَّذِلَّ وَنَخْزٰي)

“যদি আমি তাদেরকে ইতোপূর্বে শাস্তি‎ দ্বারা ধ্বংস করতাম তবে তারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবার পূর্বে তোমার নিদর্শন মেনে চলতাম।’ (সূরা ত্বহা ২০:১৩৪)

সুতরাং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সত্য নাবী; তার পর আর কোন নাবী আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা নাবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন যাতে কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি ওযর পেশ না করতে পারে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. অন্যান্য নাবীদের মত আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করেছেন।
২. সর্বপ্রথম রাসূল নূহ (আঃ), শেষ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
৩. আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন- এ গুণ প্রমাণিত।
৪. রাসূল প্রেরণের হিকমত হল, যাতে কিয়ামাতের দিন মানুষ অভিযোগ না করতে পারে।
৫. স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ও ফেরেশতারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সাক্ষী।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 163-165

Revelation Came to Prophet Muhammad , Just as it Came to the Prophets Before Him

Muhammad bin Ishaq narrated that Muhammad bin Abi Muhammad said that Ikrimah, or Sa`id bin Jubayr, related to Ibn Abbas that he said,

“Sukayn and Adi bin Zayd said, `O Muhammad! We do not know that Allah sent down anything to any human after Musa.’

Allah sent down a rebuttal of their statement,
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِن بَعْدِهِ
(Verily, We have inspired you (O Muhammad) as We inspired Nuh and the Prophets after him).”

Allah states that He sent down revelation to His servant and Messenger Muhammad just as He sent down revelation to previous Prophets.

Allah said,

إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِن بَعْدِهِ وَأَوْحَيْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإْسْحَقَ وَيَعْقُوبَ وَالَاسْبَاطِ وَعِيسَى وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ

Verily, We have sent the revelation to you as We sent the revelation to Nuh and the Prophets after him; We (also) sent the revelation to Ibrahim, Ismail, Ishaq, Yaqub, and Al-Asbat, (the offspring of the twelve sons of Yaqub) `Isa, Ayub, Yunus, Harun, and Suleiman;

وَاتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

and to Dawud We gave the Zabur.

The Zabur (Psalms) is the name of the Book revealed to Prophet Dawud, peace be upon him.
Twenty-Five Prophets Are Mentioned in the Qur’an

Allah said

وَرُسُلً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ

And Messengers We have mentioned to you before, and Messengers We have not mentioned to you.

Before the revelation of this Ayah.

The following are the names of the Prophets whom Allah named in the Qur’an. They are:

Adam,

Idris,

Nuh (Noah),

Hud,

Salih,

Ibrahim (Abraham),

Lut,

Ismail (Ishmael),

Ishaq (Isaac),

Yaqub (Jacob),

Yusuf (Joseph),

Ayub (Job),

Shu`ayb,

Musa (Moses),

Harun (Aaron),

Yunus (Jonah),

Dawud (David),

Suleiman (Solomon),

Ilyas (Elias),

Al-Yasa (Elisha),

Zakariyya (Zachariya),

Yahya (John) and

Isa (Jesus), and their leader,

Muhammad.

Several scholars of Tafsir also listed Dhul-Kifl among the Prophets.

Allah’s statement,

وَرُسُلً لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ

and Messengers We have not mentioned to you,

means, `there are other Prophets whom We did not mention to you in the Qur’an.’
The Virtue of Musa

Allah said,

وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا

and to Musa Allah spoke directly.

This is an honor to Musa, and this is why he is called the Kalim, he whom Allah spoke to directly.

Al-Hafiz Abu Bakr bin Marduwyah recorded that Abdul-Jabbar bin Abdullah said,

“A man came to Abu Bakr bin Ayyash and said, `I heard a man recite (this Ayah this way):
وَكَلَّمَ اللّهَ مُوسَى تَكْلِيمًا
“and to Allah, Musa spoke directly.”

Abu Bakr said, `Only a disbeliever would recite it like this.’

Al-A`mash recited it with Yahya bin Withab, who recited it with Abu Abdur-Rahman As-Sulami who recited it with Ali bin Abi Talib who recited with the Messenger of Allah,
وَكَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا
(and to Musa Allah spoke directly).”‘

Abu Bakr bin Abi Ayyash was so angry with the man who recited the Ayah differently, because he altered its words and meanings. That person was from the group of Mutazilah who denied that Allah spoke to Musa or that He speaks to any of His creation.

We were told that some of the Mutazilah once recited the Ayah that way, so one teacher present said to him,

“O son of a stinking woman! What would you do concerning Allah’s statement,

وَلَمَّا جَأءَ مُوسَى لِمِيقَـتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ

And when Musa came at the time and place appointed by Us, and his Lord spoke to him. (7:143)”

The Sheikh meant that the later Ayah cannot be altered or changed.
The Reason Behind Sending the Prophets is to Establish the Proof

Allah said
رُّسُلً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ

Messengers as bearers of good news as well as of warning,

meaning, the Prophets bring good news to those who obey Allah and practice the good things that please Him. They also warn against His punishment and torment for those who defy His commandments.

Allah said next,

لِيَلَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

in order that mankind should have no plea against Allah after the Messengers. And Allah is Ever All-Powerful, All-Wise.

Allah sent down His Books and sent His Messengers with good news and warnings. He explained what He likes and is pleased with and what He dislikes and is displeased with. This way, no one will have an excuse with Allah.

Allah said in other Ayat,

وَلَوْ أَنَّأ أَهْلَكْنَـهُمْ بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُواْ رَبَّنَا لَوْلا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولاً فَنَتَّبِعَ ءَايَـتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَى

And if We had destroyed them with a torment before this, they would surely have said:”Our Lord! If only You had sent us a Messenger, we should certainly have followed Your Ayat, before we were humiliated and disgraced.” (20:134)

and,

وَلَوْلا أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ

And if (We had) not (sent you to the people of Makkah) in case a calamity should seize them for (the deeds) that their hands have sent forth. (28:47)

It is recorded in the Two Sahihs that Ibn Mas`ud said that the Messenger of Allah said,

لَاا أَحَدَ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ مِنْ أَجْلِ ذلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

وَلَا أَحَدْ أَحَبْ إِلَيْهِ الْمَدْحُ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ أَجْلِ ذلِكَ مَدَحَ نَفْسَهُ

وَلَا أَحَدَ أَحَبْ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللهِ مِنْ أَجْلِ ذلِكَ بَعَثَ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِين

No one is more jealous than Allah. This is why He prohibited all types of sin committed in public or secret.

No one likes praise more than Allah, and this is why He has praised Himself.

No one likes to give excuse more than Allah, and this is why He sent the Prophets as bearers of good news and as warners.

In another narration, the Prophet said,

مِنْ أَجْلِ ذلِكَ أَرْسَلَ رُسُلَهُ وَأَنْزَلَ كُتُبَه

And this is why He sent His Messengers and revealed His Books.

Leave a Reply