أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٧٥)-৩৭৭
www.motaher21.net
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحِلُّواْ شَعَأيِرَ اللّهِ
হে মুমিনগণ, তোমরা অসম্মান করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহের,
O you who believe! Violate not the sanctity of Sha’a’ir Allah (the symbols of Allah),
সুরা: আল-মায়িদাহ
আয়াত নং :-২
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحِلُّوْا شَعَآئِرَ اللّٰهِ وَ لَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَ لَا الْهَدْیَ وَ لَا الْقَلَآئِدَ وَ لَاۤ مِّیْنَ الْبَیْتَ الْحَرَامَ یَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رِضْوَانًاؕ وَ اِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْاؕ وَ لَا یَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ اَنْ صَدُّوْكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اَنْ تَعْتَدُوْاۘ وَ تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَ التَّقْوٰى ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য ও ভক্তির নিদর্শনগুলোর অমর্যাদা করো না। হারাম মাসগুলোর কোনটিকে হালাল করে নিয়ো না। কুরবানীর পশুগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করো না। যেসব পশুর গলায় আল্লাহর জন্য উৎসর্গীত হবার আলামত স্বরূপ পট্টি বাঁধা থাকে তাদের ওপরও হস্তক্ষেপ করো না। আর যারা নিজেদের রবের অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টির সন্ধানে সম্মানিত গৃহের (কাবা) দিকে যাচ্ছে তাদেরকেও উত্যক্ত করো না। হ্যাঁ, ইহরামের অবস্থা শেষ হয়ে গেলে অবশ্যি তোমরা শিকার করতে পারো। আর দেখো, একটি দল তোমাদের জন্য মসজিদুল হারামের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, এ জন্য তোমাদের ক্রোধ যেন তোমাদেরকে এতখানি উত্তেজিত না করে যে, তাদের বিরুদ্ধে তোমরা অবৈধ বাড়াবাড়ি করতে শুরু কর। নেকী ও আল্লাহভীতির সমস্ত কাজে সবার সাথে সহযোগিতা করো এবং গুনাহ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। তাঁর শাস্তি বড়ই কঠোর।
২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
(شَعَا۬ئِرَ اللّٰهِ) ‘আল্লাহর নিদর্শন’ শব্দটি شعيرة এর বহুবচন। অর্থ হল চিহ্ন, নিদর্শন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: এখানে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন বলতে হাজ্জের নিদর্শনাবলীকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেন: এর দ্বারা সাফা ও মারওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
মোটকথা হল, এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ ও সম্মানীত সকল বস্তু শামিল যা আল্লাহ তা‘আলা পালন করার ও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং লংঘন করতে নিষেধ করেছেন। (তাফসীরে সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
الشَّهْرَ الْحَرَامَ
‘হারাম মাস’অর্থাৎ হারাম মাসের সম্মান নষ্ট করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيْهِ ط قُلْ قِتَالٌ فِيْهِ كَبِيْرٌ)
“তারা আপনাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করে; আপনি বলুন, তাতে যুদ্ধ করা বড় অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:২১৭)
হারাম মাসসমূহ হল: যুলকাদা, যুলহাজ্জ, মুহাররম ও রজব। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৯৭)
(وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَا۬ئِدَ)
‘কুরবানীর জন্য কা‘বায় প্রেরিত পশু, গলায় পরিহিত চিহ্নবিশিষ্ট পশু’হাদী ঐ পশুকে বলা হয়, যা কুরবানী দেয়ার জন্য হাজীগণ সঙ্গে করে হারামে নিয়ে আসেন।
قلائد শব্দটি قلادة এর বহুবচন। যার অর্থ গলায় ঝুলানো হয় এমন হার, মালা ও সুতা। এখানে হজ্জ ও উমরায় কুরবানীর জন্য নিয়ে আসা পশুকে বুঝানো হয়েছে, যাদের গলায় আলামত বা চিহ্ন স্বরূপ জুতা বা ফিতা বেধে দেয়া হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ সমস্ত পশুকে কেউ যেন ছিনতাই না করে এবং মাসজিদুল হারাম পর্যন্ত পৌঁছার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে।
এসব হাদী ও চিহ্নিত পশুকে হালাল মনে করে তার ওপর আক্রমণ বা হস্তক্ষেপ করো না; বরং তাদের সম্মান রক্ষা করবে, এসব নিদর্শনকে সম্মান দেখানো তাক্বওয়ার পরিচায়ক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذٰلِكَ وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَا۬ئِرَ اللّٰهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَي الْقُلُوْبِ)
“এটা আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে নিশ্চয়ই এটা তার হৃদয়ের তাক্বওয়ার পরিচয়।”(সূরা হজ্জ ২২:৩২)
(وَلَآ اٰ۬مِّیْنَ الْبَیْتَ الْحَرَامَ ……..وَرِضْوَانًاﺚ)
‘নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় পবিত্র গৃহ অভিমুখে যাত্রী’ অর্থাৎ যারা হজ্জ করার জন্য কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে তাদের সাথে যুদ্ধ করা বৈধ মনে কর না, যাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং জীবনোপকরণ স্বরূপ তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করা।
কোন কোন মুফাসসিরের নিকট এ বিধান ঐ সময়ের জন্য ছিল, যখন মুসলিম ও মুশরিকগণ একত্রে হজ্জ ও উমরা আদায় করত। কিন্তু যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল:
(أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا)
“হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র; সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকট না আসে।”(সূরা তাওবাহ ৯:২৮)
তখন থেকে মুশরিকদের জন্য মাসজিদে হারামে প্রবেশ করা হারাম হয়ে গেল। আবার কেউ বলেছেন: এ আয়াতের বিধান রহিত নয় বরং এ হুকুম মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। (ফাতহুল কাদীর, ২/২)
(وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا)
‘যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার।’ অর্থাৎ যখন ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে তখন শিকার কর। এখানে (فاصطادوا শিকার কর) ক্রিয়া আদেশসূচক হলেও মূলত আদেশ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং শিকার করার অনুমতি বা বৈধতা প্রদান করা যেমন শিকার করা বৈধ ছিল ইহরামের পূর্বে। অর্থাৎ ইহরাম থেকে হালাল হবার পর শিকার করা কোন অপরাধ নয় যেমন ইহরামের পূর্বে শিকার করা অপরাধ ছিল না।
(وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ)
‘কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে।’অর্থাৎ কোন জাতির সাথে শত্র“তা, ক্রোধ ও তোমাদের ওপর সীমালংঘন ইত্যাদির কারণে তোমরাও তাদের ওপর সীমালংঘন করবে এটা যেন না হয়। যেমন ষষ্ঠ হিজরীতে মক্কার মুশরিকরা তোমাদেরকে উমরা থেকে বারণ করতে মাসজিদে হারামে পৌঁছতে বাধা দিয়েছিল। সুতরাং এখন তোমরা তাদের ওপর জুলুম করবে বা সীমালঙ্ঘন করবে তা যেন না হয়।
(….وَتَعَاوَنُوْا عَلَي الْبِرِّ)
‘সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর’অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করার ও অসৎ কাজে সহযোগিতা না করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
যে ব্যক্তি সৎ কাজ করে আর যে সহযোগিতা করে উভয় প্রতিদানের দিক দিয়ে সমান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ دَلَّ عَلَي خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
সৎ কাজে দিকনির্দেশনাদানকারী প্রতিদানের দিক দিয়ে সৎ কাজ সম্পাদনকারীর মত। (আবূ দাঊদ হা: ৫১২৯, তিরমিযী হা: ২৬৭০, হাসান)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষকে সৎ পথে আহ্বান করে আর ঐ সৎ পথ যত ব্যক্তি অনুসরণ করবে, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তি তাদের সমান নেকী পাবে। তাতে তাদের নেকীর কোন কমতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষকে অসৎ পথে আহ্বান করে আর তার আহ্বানে ঐ অসৎ পথে যত ব্যক্তি চলবে, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তি তাদের সমান গুনাহগার হবে। তাতেও তাদের পাপের কোন কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৬০৯, তিরমিযী হা: ২৬৭৪)
সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাক্বওয়ার নির্দেশ প্রদান করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তোমরা যা কিছু করছ সব কিছুর তিনি তরিৎ হিসাব নেবেন। সুতরাং কোনক্রমেই অন্যের প্রতি জুলুম করো না এবং মানুষকে খারাপ কাজে সহযোগিতা করো না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর সম্মান করা ওয়াজিব।
২. সীমালঙ্ঘন করা হারাম, এমনকি কাফিরদের সাথেও।
৩. সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা ওয়াজিব। আর অসৎ কাজে সহযোগিতা হারাম।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৫) যে জিনিসটি কোন আকীদা-বিশ্বাস, মতবাদ, চিন্তাধারা, কর্মনীতি বা কোন ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে তাকে তার “শেআ’র” বলা হয়। কারণ সেটি তার আলামত, নিদর্শন বা চিহ্নের কাজ করে। সরকারী পতাকা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রভৃতির ইউনিফরম, মুদ্রা, নোট ও ডাকটিকিট সরকারের “শেআ’র” বা নিশানীর অন্তর্ভুক্ত। সরকার নিজের বিভিন্ন বিভাগের কাছে বরং তার অধীনস্থ সকলের কাছে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দাবী জানায়। গীর্জা, ফাঁসির মঞ্চ ও ক্রুশ খৃস্টবাদের শেআ’র বা নিশানী। টিকি, পৈতা ও মন্দির ব্রাহ্মণ্যবাদের নিশানী। ঝুঁটি চুল, হাতের বালা ও কৃপাণ ইত্যাদি শিখ ধর্মের নিশানী। হাতুড়ি ও কাস্তে সমাজতন্ত্রের নিশানী। স্বস্তিকা আর্য বংশ-পূজার নিশানী। এ ধর্ম বা মতবাদগুলো তাদের নিজেদের অনুসারীদের কাছে এ নিদর্শনগুলোর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের দাবী করে। যদি কোন ব্যক্তি কোন ব্যবস্থার নিশানীসমূহের মধ্য থেকে কোন একটি নিশানীর অবমাননা করে, তাহলে এটি মূলত তার ঐ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করার আলামত হিসেবে বিবেচিত হয়। আর ঐ অবমাননাকারী নিজে যদি ঐ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তার এ কাজটি তার নিজের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সমার্থক বলে গণ্য হয়।
“শাআইর” হচ্ছে “শে’আর” শব্দের বহুবচন। “শাআইরুল্লাহ” বলতে এমন সব আলামত বা নিশানী বুঝায় যা শিরক, কুফরী ও নাস্তিক্যবাদের পরিবর্তে নির্ভেজাল আল্লাহ আনুগত্য সূচক মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। এ ধরনের আলামত ও চিহ্ন যেখানে যে মতবাদ ও ব্যবস্থার মধ্যে পাওয়া যাবে, প্রত্যেক মুসলমানকে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে শর্ত হচ্ছে তাদের মনস্তাত্বিক পটভূমিতে নির্ভেজাল আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের মানসিকতা বিরাজ করা চাই এবং সকল প্রকার মুশরিকী ও কুফরী চিন্তার মিশ্রণ থেকে তাদের মুক্ত হওয়া চাই। কোন ব্যক্তি, সে কোন অমুসলিম হলেও, যদি তার নিজের বিশ্বাস ও কর্মের মধ্যে এক আল্লাহর আরাধনা ও ইবাদাতের কোন অংশ থেকে থাকে তাহলে অন্তত সেই অংশে মুসলমানদের উচিত তার সাথে একাত্ম হওয়া এবং সেই অধ্যায়ে তার যে সমস্ত “শ’আর” নির্ভেজাল আল্লাহর ইবাদাত উপসনার আলামত হিসেবে বিবেচিত হবে সেগুলোর প্রতিও পূর্ণ মর্যাদা প্রদর্শন করা। এ বিষয়ে তার ও আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বরং সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্য আছে সে আল্লাহর বন্দেগী করে কেন, এটা বিরোধের বিষয় নয়। বরং বিরোধের বিষয় হচ্ছে এই যে, আল্লাহর বন্দেগীর সাথে সে অন্য কিছুর বন্দেগীর মিশ্রণ ঘটাচ্ছে কেন?
মনে রাখতে হবে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এ নির্দেশ এমন এক সময় দেয়া হয়েছিল যখন আরবে মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। মক্কা ছিল মুশরিকদের দখলে। আরবের প্রত্যক এলাকা থেকে মুশরিক গোত্রের লোকেরা হজ্জ ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কাবাগৃহের দিকে আসতো। এ জন্য অনেক গোত্রকে মুসলমানদের এলাকা অতিক্রম করতে হতো। তখন মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা মুশরিক হলেও তোমাদের এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও তারা যখন আল্লাহর ঘরের দিকে যাচ্ছে তখন তাদেরকে বাধা দিয়ো না। হজ্জের মাসগুলোয় তাদের ওপর আক্রমণ করো না এবং আল্লাহর সমীপে নজরানা পেশ করার জন্য যে পশুগুলো তারা নিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করো না। কারণ তাদের বিকৃত ধর্মে আল্লাহর আরাধনার যতটুকু অংশ বাকি রয়ে গেছে তা অবশ্যি সম্মান লাভের যোগ্য, অসম্মান লাভের নয়।
টিকা:৬) আল্লাহর নিশাণীসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সাধারণ নির্দেশ দেবার পর কয়েকটি নিশানীর নাম উল্লেখ করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ তৎকালীন যুদ্ধাবস্থার দরুন মুসলমানদের হাতে ঐগুলোর অবমাননা হবার আশংকা দেখা দিয়েছিল। এ কয়েকটি নিশানীর নাম উল্লেখ করার অর্থ এ নয় যে, কেবল এ ক’টিই মর্যাদা যোগ্য।
টিকা:৭) ইহ্রামও আল্লাহর একটি অন্যতম নিশানী। এ ব্যাপারে যে বিধিনিষেধগুলো আরোপিত হয়েছে তার মধ্যে থেকে কোন একটি ভঙ্গ করার অর্থই হচ্ছে ইহ্রামের অবমাননা করা। তাই আল্লাহর নিশানী প্রসঙ্গে একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ তোমরা ইহ্রাম বাঁধা অবস্থায় থাকো ততক্ষণ শিকার করা আল্লাহর ইবাদাতের নিশানীগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি নিশানীর অবমাননা বুঝাবে। তবে শরীয়াতের বিধি অনুযায়ী ইহ্রামের সীমা খতম হয়ে গেলে তোমাদের শিকার করার অনুমতি আছে।
টিকা:৮) যেহেতু কাফেররা সে সময় মুসলমানদেরকে কাবা ঘরের যিয়ারতের বাধা দিয়েছিল এবং আরবের প্রাচীন রীতির বিরুদ্ধাচরণ করে মুসলমানদেরকে হজ্জ থেকেও বঞ্চিত করেছিল, তাই মুসলমানদের মনে এ চিন্তার উদয় হলো যে, যেসব কাফের গোত্রকে কাবা যাবার জন্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার কাছ দিয়ে যেতে হয়, তাদের হজ্জযাত্রার পথ তারা বন্ধ করে দেবে এবং হজ্জের মওসুমে তাদের কাফেলার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালাবে। কিন্তু এ আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তাদেরকে এ সংকল্প থেকে বিরত রাখলেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ হে মুমিনগন, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অবমাননা করো না। এখানে (شَعَائِر) শব্দটি – (شَعِيْرَةٌ) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ, চিহ্ন। যেসব অনুভূত ও প্রত্যক্ষ ক্রিয়াকর্মকে সাধারণের পরিভাষায় মুসলিম হওয়ার চিহ্নরূপে গণ্য করা হয়, সেগুলোকে (شَعَائِرُ الاسْلام) তথা ‘ইসলামের নিদর্শনাবলী’ বলা হয়। যেমন, সালাত, আযান, হজ, দাড়ী ইত্যাদি। অনুরূপভাবে সাফা, মারওয়া, হাদঈ ও কুরবানীর জন্তু ইত্যাদিও আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। [আত-তাফসীরুস সহীহ] আয়াতে উল্লেখিত ‘আল্লাহর নিদর্শনাবলী’র ব্যাখ্যা বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত আছে। সব উক্তির নির্যাস হলো এই যে, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অর্থ সব শরীআত এবং ধর্মের নির্ধারিত ফরয, ওয়াজিব ও এদের সীমা। [ফাতহুল কাদীর]
আলোচ্য আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অবমাননা করো না। আল্লাহর নিদর্শনাবলীর এক অবমাননা হচ্ছে, প্রথমতঃ এসব বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে চলা। দ্বিতীয়তঃ এসব বিধি-বিধানকে অসম্পূর্ণভাবে পালন করা এবং তৃতীয়তঃ নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া। আয়াতে এ তিন প্রকার অবমাননাকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [সা’দী] আল্লাহ তা’আলা এ নির্দেশটিই অন্যস্থানে এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তা অন্তরের তাকওয়ারই লক্ষণ”। [সূরা আল-হাজ: ৩২] তাছাড়া আয়াতের বাকী অংশে এ নিদর্শণাবলীর কিছু বিবরণ প্রদান করা হয়েছে।
[২] অর্থাৎ পবিত্র মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে এগুলোর অবমাননা করো না। [আততাফসীরুস সহীহ] পবিত্র মাস হচ্ছে জিলকদ, জিলহজ, মুহাররাম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা শরীআতের আইনে অবৈধ ছিল। অধিকাংশ আলেমের মতে পরবর্তী কালে এ নির্দেশ রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আতা, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ এবং ইবনুল কাইয়্যেম মনে করেন যে, এ আদেশ রহিত হয় নি। যদি কেউ আক্রমণ করে বা যুদ্ধ এর আগে থেকেই চলে আসে তবে এ মাসে যুদ্ধ করা যাবে, নতুবা নয়। [সা’দী, ইবন কাসীর]
এ আয়াতে পরবর্তী নির্দেশ হচ্ছে, কুরবানী করার জন্তু, বিশেষতঃ যেসব জন্তুকে গলায় কুরবানীর চিহ্নস্বরূপ কিছু পরানো হয়েছে, সেগুলোর অবমাননা করো না। এসব জন্তুর অবমাননার এক পন্থা হচ্ছে এদের হারাম পর্যন্ত পৌছতে না দেয়া অথবা ছিনিয়ে নেয়া। দ্বিতীয় পন্থা এই যে, এগুলো কুরবানীর পরিবর্তে অন্য কোন কাজে নিয়োজিত করা। আয়াত এসব পস্থাকেই অবৈধ করে দিয়েছে। আয়াতে আরও বলা হয়েছে যে, তোমরা ঐসব লোকেরও অবমাননা করো না, যারা হজের জন্যে পবিত্র মসজিদের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেছে। এ সফরে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বীয় পালনকর্তার রহমত, দয়া ও সন্তুষ্টি অর্জন করা। অর্থাৎ পথিমধ্যে তাদের গতিরোধ করো না এবং তাদের কোনরূপ কষ্ট দিয়ো না। [সা’দী]
[৩] এখানে ইহরাম অবস্থায় শিকার করতে যে নিষেধ করা হয়েছিল, সে নিষেধাজ্ঞার সীমা বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তোমরা ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে যাও, তখন শিকার করার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে। অতএব, তখন শিকারও করতে পারবে। [সা’দী]
[৪] অর্থাৎ যে সম্প্রদায় হুদায়বিয়ার ঘটনার সময় তোমাদের মক্কায় প্রবেশ করতে এবং ওমরা পালন করতে বাধা প্রদান করেছিল এবং তোমরা তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছিলে, এখন শক্তি-সামর্থ্যের অধিকারী হয়ে তোমরা তাদের কাছ থেকে এভাবে প্রতিশোধ নিও না যে, তোমরা তাদের কাবাগৃহে ও পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করতে এবং হজ্জ করতে বাধা দিতে শুরু করবে। এটাই হবে যুলুম। আর ইসলাম যুলুমের উত্তরে যুলুম করতে চায় না। বরং ইসলাম যুলুমের প্রতিদানে ইনসাফ এবং ইনসাফে কায়েম থাকার শিক্ষা দেয়। এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম হক দ্বীন। [আদওয়াউল বায়ান]
[৫] আলোচ্য আয়াতে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার ভিত্তি কি হবে সেটা আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন সৎকর্ম ও আল্লাহর ভয়কে আসল মাপকাঠি করেছে, এর ভিত্তিতেই পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার আহবান জানিয়েছে। এর বিপরীতে পাপ ও অত্যাচার উৎপীড়নকে কঠোর অপরাধ গণ্য করেছে এবং এতে সাহায্যসহযোগিতা করতে নিষেধ করেছে। মূলতঃ সৎকর্ম ও তাকওয়াই হলো শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। কারণ, সমস্ত মানুষ এক পিতা-মাতার সন্তান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়টির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিদায় হজ্জের ভাষণে ঘোষণা করেন যে, ‘কোন আরবের অনারবের উপর অথবা কোন শ্বেতাঙ্গের কৃষ্ণাঙ্গের উপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই। আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর আনুগত্যই শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি।’ [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৪১১]
আয়াতে বর্ণিত সৎকাজ ও পাপকাজ এর সংজ্ঞায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বির বা সৎকাজ হচ্ছে, সচ্চরিত্ৰতা। আর পাপ হচ্ছে, যা তোমার অন্তরে উদিত হয় অথচ তুমি চাও না যে, মানুষ সেটা জানুক’। [মুসলিম: ২৫৫৩]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বি’র বা সৎকাজ হচ্ছে, যাতে অন্তর শান্ত হয়, চিত্তে প্রশান্তি লাভ হয়। আর পাপ হচ্ছে, যাতে অন্তরে শান্ত হয় না এবং চিত্তেও প্রশান্তি লাভ হয় না, যদিও ফতোয়াপ্রদানকারীরা তোমাকে ফতোয়া দিয়ে থাকুক’। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১৯৪]
আর সহযোগিতার ধরণ সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত’। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে তো আমরা সাহায্য করে থাকি। কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব? রাসূল বললেন, ‘তার দু’হাতে ধরে রাখবে’। [বুখারী: ২৪৪৪]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ কোন মুসলিমের সম্মান-ইজ্জত-আব্রু নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। [তিরমিয়ী: ১৯৩১; মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৫০] তাকওয়া ও বির এর মধ্যে পার্থক্য করে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নির্দেশিত বিষয় করার নাম বির, আর নিষেধকৃত বিষয় থেকে বেঁচে থাকার নাম তাকওয়া। [তাবারী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] شعائر শব্দটি شعيرة এর বহুবচন। যার ভাবার্থ, আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ ও সম্মানীয় বস্তুসমূহ। (অর্থাৎ, যাদের মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত)। কিছু উলামাগণ মনে করেন যে, এই মর্যাদাযোগ্য ও সম্মানীয় বস্তুগুলি ব্যাপক। কিছু উলামাগণের নিকট হজ্জ ও উমরার ইবাদত ও স্থানসমূহ উদ্দিষ্ট। অর্থাৎ, তার অমর্যাদা ও অসম্মান করো না। অনুরূপ হজ্জ ও উমরাহ পালনের ব্যাপারে অপরকে বাধা দিয়ো না। কেননা এটাও এক প্রকার অমর্যাদা ও অসম্মান প্রদর্শন।
[২] الشهر الحرام একবচন বলে শ্রেণী উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, নিষিদ্ধ, পবিত্র বা সম্মানীয় শ্রেণীর চারটি মাস (অর্থাৎ, রজব, যুল-ক্বা’দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহার্রম) এই মাসগুলির মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা কর এবং তাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করো না। কেউ কেউ মনে করেন যে, নিষিদ্ধ ও সম্মানীয় মাস শুধু যুল-হিজ্জাহ মাস। আবার কেউ মনে করেন যে, উক্ত নির্দেশ কুরআনের এই আয়াত {فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ} (অর্থাৎ, মুশরিকদেরকে যখন যেথায় পাবে হত্যা কর) দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। অথচ রহিত মনে করার কোন প্রয়োজনই হয় না। কারণ, উভয় নির্দেশ নিজ নিজ জায়গায় বহাল আছে; উভয়ের মধ্যে কোন রকম পরস্পরবিরোধ নেই।
[৩] هَدْيٌ হাদ্ঈ ঐ পশুকে বলা হয়, যাকে কুরবানী দেওয়ার জন্য হাজীগণ সঙ্গে করে হারামে নিয়ে যেতেন । قلائد শব্দটি قلادة শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলায় ঝুলানো কিছু। আর এখানে হজ্জ ও উমরাহর সময় কুরবানীযোগ্য পশুকে বুঝানো হয়েছে, যাদের গলায় আলামত ও চিহ্নের জন্য জুতা বা ফিতা বেঁধে দেওয়া হত। (যাতে লোকে বুঝতে পারে যে, এটা কুরবানীর পশু)। সুতরাং قلائد এর ভাবার্থ হল, ঐ সমস্ত পশু, যেগুলিকে কুরবানী করার জন্য মক্কার হারামে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা ‘হাদঈ’র অতিরিক্ত তাকীদ। উদ্দেশ্য হল, ঐ সমস্ত পশুকে কেউ যেন ছিনতাই না করে এবং হারাম পর্যন্ত পৌঁছনোর ব্যাপারে কেউ যেন কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না করে।
[৪] অর্থাৎ, হজ্জ ও উমরাহর নিয়তে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মের উদ্দেশ্যে হারামের যাত্রীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা ও সঙ্কীর্ণতার সৃষ্টি করো না। কোন কোন ভাষ্যকারের মন্তব্য হল, এই বিধান ঐ সময়ের জন্য ছিল, যখন মুসলমান ও মুশরিকগণ একত্রে হজ্জ ও উমরাহ পালন করত। কিন্তু যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল; {إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا} অর্থাৎ, মুশরিকরা অপবিত্র, সুতরাং তারা যেন এ বছরের পর মাসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয়। (সূরা তাওবা ৯:২৮ নং আয়াত) তখন এই আয়াত মুশরিকদের ক্ষেত্রে রহিত বা মানসুখ হয়ে গেল। আবার কোন কোন ভাষ্যকারের মতে এই আয়াতের বিধান রহিত নয় এবং এই হুকুম বা বিধান মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। (অর্থাৎ, তোমরা হারামের মুসলিম যাত্রীদের জন্য প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর খাড়া করো না।) (ফাতহুল ক্বাদীর)
[৫] আলোচ্য আয়াতে আজ্ঞাসূচক ক্রিয়াটি অনুমতি বা জায়েযের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ; যখন ইহরাম খুলে দেবে (অর্থাৎ হালাল হয়ে যাবে), তখন তোমাদের জন্য শিকার করা বৈধ।
[৬] অর্থাৎ; মুশরিকরা তোমাদেরকে ৬ষ্ঠ হিজরীতে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেছিল। কিন্তু তাদের বাধাদানের কারণে তোমরা তাদের সাথে সীমালংঘনমূলক ও অন্যায় আচরণ করবে না। শত্রুদের সাথেও ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা অবলম্বনের সবক ও শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
[৭] এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নীতি, যা প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি পদক্ষেপে পথপ্রদর্শন করতে পারে। হায়! মুসলিমরা যদি এই মৌলিক নীতি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারত!
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
(আরবী) অর্থাৎ তোমরা কা’বা গৃহের দিকে কুরবানীর পশু পাঠানো হতে বিরত থেকো না। কারণ এতে আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রকাশ পায়। আর তোমরা কুরবানীর পশুর গলায় কালাদা (চেইন) পরানো হতে বিরত থেকো না। কারণ এর দ্বারা এ পশুগুলোকে অন্যান্য পশু হতে পৃথক করা হয়। আর এর দ্বারা এটাও প্রকাশ পায় যে, পশুগুলো কুরবানীর উদ্দেশ্যে কা’বা গৃহে পাঠানো হয়েছে। ফলে মানুষ এ পশুগুলোর ক্ষতি করা হতে বিরত থাকে। আর পশুগুলোকে দেখে অন্যান্যরা এ জাতীয় পশু কুরবানী পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবে। আর যে ব্যক্তি অন্যকে কুরবানী করার প্রতি উৎসাহদান করে, তাকে তার অনুসরণকারীর অনুরূপ প্রতিদান দেয়া হয়। অথচ অনুসরণকারীর পুরষ্কার কোন অংশেই কম করা হয় না। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর বিদায় হজ্বের সময় যুলহুলাইফাতে রাত্রি যাপন করেন। এ যুলহুলাইফাকে ওয়াদিউল আকীকও বলা হয়। অতঃপর তিনি সকাল বেলা তার ৯ জন স্ত্রীর নিকট গমন করেন এবং গোসল শেষে খোশবু ব্যবহার করেন ও দু’রাকআত নফল নামায আদায় করেন। অতঃপর কুরবানীর পশুর চুটি ক্ষত করেন এবং ওর গলায় কালাদা (চেইন) পরান। এরপর হজ্ব এবং উমরার জন্যে তিনি ইহরাম বাঁধেন। তাঁর কুরবানীর পশুর সংখ্যা ছিল ষাটটির অধিক। তাদের গায়ের রং ও শারীরিক গঠন ছিল অতি উত্তম। যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তবে সেটা তার অন্তরের তাকওয়া প্রকাশ করে। কেউ কেউ সম্মান প্রদর্শন শব্দটির দ্বারা কুরবানীর পশুকে উত্তম স্থানে রাখা, ভাল খাওয়ানো এবং তাকে মোটা তাজা করানোর প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে কুরবানীর পশুর চোখ ও কানকে ভালভাবে লক্ষ্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” মুকাতিল ইবনে হাইয়ান বলেনঃ (আরবী) দ্বারা জাহেলিয়া যুগের লোকদের মত কালাদা ব্যবহার করাকে হালাল মনে করো না। কারণ জাহেলিয়া যুগে হারাম শরীফের বাইরে বসবাসকারী আরবরা যখন নিষিদ্ধ মাস ব্যতীত অন্য মাসে তাদের গৃহ হতে বের হতো তখন তারা তাদের গলায় কালাদা স্বরূপ পশম ও চুল ব্যবহার করতো। আর হারাম শরীফের মুশকির অধিবাসীগণ যখন তাদের গৃহ হতে বের হতো তখন তারা তাদের গলায় কালাদা স্বরূপ হারাম শরীফের গাছের ছাল ব্যবহার করতো। এর ফলে লোকেরা তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করতো। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরা মায়িদাহ্র দু’টি আয়াত মানসূখ হয়ে গেছে। একটি কালাদার আয়াত, আর অপরটি হচ্ছে (আরবী) (৫:৪২)-এ আয়াতটি। ইবনে আউফ (রঃ) বলেনঃ আমি হাসান (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম- সূরা মায়িদাহ্র কি কোন অংশ মানসূখ বা রহিত হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন :“না।” আতা (রঃ) বলেন যে, হারাম শরীফের অধিবাসীগণ বৃক্ষের ছাল দ্বারা কালাদা ব্যবহার করতো। ওটা দ্বারা তারা নিরাপত্তা লাভ করতো, ফলে আল্লাহ পাক হারাম শরীফের বৃক্ষ কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মুতরাফ ইবনে আবদুল্লাহ ও মত পোষণ করেন।
(আরবী) -এ অংশের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারক বলেন যে, আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে যারা রওয়ানা হয় তাদের সাথে যুদ্ধ করা হালাল মনে করো না। কারণ, ঐ ঘরে যে ব্যক্তি প্রবেশ করে সে শত্রু হতে নিরাপত্তা লাভ করে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর দয়া ও সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়, তোমরা তাকে বাধা দিও না, বিরত রেখো না এবং কোন প্রকার কুৎসা রটনা করো না। কাতাদা, মুজাহিদ, আতা প্রমুখ মুফাসিরদের মতে আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণের অর্থ ব্যবসা করা। পবিত্র কুরআনের পূর্ববর্তী আয়াত (আরবী) (২:১৯৮) দ্বারাও ব্যবসাকে বুঝানো হয়েছে। আর শব্দের ব্যখ্যায়-ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হজ্বে গমনকারী ব্যক্তিগণ হজ্বের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে থাকেন। ইকরামা ও ইবনে জারীর প্রমুখ তাফসীরকারকগণ বলেন যে, এ আয়াতটি হাতিম ইবনে হিন্দ আল বাকরীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। একদা সে মদীনার একটি চারণভূমি লুণ্ঠন করে এবং পরবর্তী বছর সে বায়তুল্লাহ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এ সময় কোন কোন সাহাবী পথিমধ্যে তাকে বাধা দেয়ার মনস্থ করলে আল্লাহ পাক এ আয়াত নাযিল করেন। ইবনে জারীর আলেমদের ইজমার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, কোন মুশরিক ব্যক্তিকে যদি কোন মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তা প্রদান করা না হয় তবে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে। যদিও সে বায়তুল্লাহ বা বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কেননা, উল্লিখিত আয়াতের নির্দেশ মুশরিকদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়। এমনিভাবে যে ব্যক্তি নাফরমানী, শিরক ও কুফরী করার উদ্দেশ্যে কাবা শরীফের দিকে রওয়ানা হয় তাকেও বাধা দেয়া বৈধ। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র। অতএব তারা যেন এ বছরের পর আর কখনও কা’বা গৃহের নিকটবর্তী না হয়।” এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) নবম হিজরীতে যখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে আমীরুল ইজ্ব হিসেবে পাঠান তখন হযরত আলী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান এবং তাকে এ ঘোষণা করতে। নির্দেশ দেন যে, মুসলমান ও মুশরিক একে অপর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, এ বছরের পর যেন কোন মুশরিক হজ্ব করতে না আসে এবং কোন ব্যক্তি যেন উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, প্রথমে ঈমানদার ও মুশরিকগণ একত্রে হজ্ব করতো এবং আল্লাহ পাক কাফিরদেরকে বাধা প্রদান না করতে ঈমানদারদের প্রতি নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে (আরবী) (৯:২৮)-এ, আয়াত দ্বারা কাফিরদেরকে হজ্ব করতে নিষেধ করেন। আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ “যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে একমাত্র তারাই আল্লাহর ঘরকে আবাদ করবে।” অতএব উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা মুশরিকদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাতাদা বর্ণনা করেন যে, (আরবী)-এ আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। অজ্ঞতার যুগে যখন কোন ব্যক্তি হজ্বের উদ্দেশ্যে তার গৃহ হতে বের হতো তখন সে বৃক্ষের ছাল দ্বারা কালাদা পরিধান করতো। ফলে কেউ তাকে কষ্ট দিতো না। আবার ঘরে ফেরার সময় চুলের তৈরী কালাদা পরিধান করতো। এর ফলে কোন লোক তাকে কষ্ট দিতো না। ঐ সময় মুশরিকদেরকে হজ্ব করতে নিষেধ করা হতো না। আর মুসলমানদেরকে নিষিদ্ধ মাসসমূহে এবং কা’বা গৃহের আশে পাশে যুদ্ধ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অতঃপর এ আয়াতের নির্দেশকে আল্লাহর অপর আয়াত (আরবী) (৯:৫) দ্বারা মানসূখ করা হয়েছে। ইবনে জারীর এ মত পোষণ করেন যে, (আরবী) দ্বারা যদি মুশরিকরা হারামেরু বৃক্ষের ছাল দ্বারা কালাদা ব্যবহার করে তবে তোমরা তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান কর’- এটাই বুঝানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, এ জন্যেই যে ব্যক্তি এ নির্দেশের অবমাননা করতো আরবরা তাকে সর্বদাই লজ্জা দিতো। তিনি এ পর্যায়ে হত্যাকারীদের প্রতি একজন কবির ব্যাঙ্গোক্তির উল্লেখ করেছেন।
(আরবী)-এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারক বলেন যে, যখন তোমরা তোমাদের ইহরাম খুলে ফেল এবং মুক্ত হয়ে যাও তখন তোমাদের জন্যে পূর্বে ইহরাম অবস্থায় যা হারাম ছিল এখন তা হালাল করা হলো। অর্থাৎ এখন শিকার করা হালাল ও হালাল হওয়ার এ নির্দেশটি অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর আবার বৈধ ঘোষিত হয়েছে। আর এ ব্যাপারে সঠিক মত এই যে, কোন বস্তু অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর বৈধ ঘোষিত হলে তা অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পূর্বাবস্থা (বৈধতা) ফিরে পাবে। সুতরাং পূর্বে যা ওয়াজিব ছিল পরে তা ওয়াজিব হবে, মুস্তাহাব মুস্তাহাব হবে এবং মুবাহ মুবাহ হবে। কারও মতে নির্দেশটি শুধু ওয়াজিবের জন্যে এবং কারও মতে শুধু মুবাহ কাজের জন্যে প্রযোজ্য। কিন্তু এ উভয় মতেরই বিপক্ষে পবিত্র কুরআনে যথেষ্ট আয়াত রয়েছে। সুতরাং আমরা যা বর্ণনা করেছি সেটাই সঠিক মত। আর এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কোন কোন উসুলবিদও এ মত পোষণ করেন।
(আরবী) তাফসীরকারক এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ যে জাতি তোমাদেরকে হুদায়বিয়ার বছর কা’বা গৃহে যেতে বাধা দিয়েছিল, তোমরা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে আল্লাহর হুকুম লংঘন করো না, বরং আল্লাহ তোমাদেরকে যেভাবে প্রত্যেকের সাথে ন্যায় বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন কর। আর পবিত্র কুরআনের আর একটি আয়াতও এ অর্থ বহন করে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ কোন জাতির শত্রুতা তোমাদেরকে যেন ন্যায় বিচার না করতে উৎসাহিত না করে, বরং তোমরা ন্যায় বিচার কর। আর এটাই তাকওয়ার অতি নিকটবর্তী।’ অর্থাৎ কোন সম্প্রদায়ের হিংসা-বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার না করতে উৎসাহিত না করে। কারণ, যে ন্যায় বিচার করা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব, ওটা যে কোন অবস্থায়ই প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব। পূর্ববর্তী আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি তোমার ব্যাপারে আল্লাহর নাফরমানী করে তবে তোমার উচিত হবে তার ব্যাপারে আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ করা। ন্যায়-নীতির উপরই আসমান-যমীন প্রতিষ্ঠিত ইবনে আবি হাতিম যায়েদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ যখন মুশরিকগণ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হুদায়বিয়া প্রান্তরে কষ্টকর অবস্থায় কালাতিপাত করছিলেন তখন পূর্বাঞ্চলীয় একদল মুশরিক কাবা ঘর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।
এমতাবস্থায় সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “আমরা এ লোকগুলোকে কা’বা গৃহে যেতে বাধা দেবো যেমন তাদের সাথীরা আমাদেরকে বাধা দিয়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। এখানে শব্দ দ্বারা হিংসা-বিদ্বেষকে বুঝানো হয়েছে। এটাই ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও অন্যান্যদের মত। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, কোন কোন আরব (আরবী)-এর (আরবী) কে (আরবী) এর পরিবর্তে (আরবী) দিয়ে পড়েছেন এবং আরবী কবিতায়ও এ জাতীয় পঠনের রীতি দেখা যায়। অবশ্য কোন কারী এভাবে পড়েছেন কি-না তা আমাদের জানা নেই।
(আরবী) আল্লাহ পাক এ আয়াতের দ্বারা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে উত্তম কাজে পরস্পরকে সাহায্য করতে এবং খারাপ কাজ পরিহার করে নৈকট্য ও পরহেযগারী অর্জন করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে শরীয়ত পরিপন্থী কাজ, পাপ কাজ এবং অবৈধ কাজে পরস্পরকে সাহায্য করতে নিষেধ করছেন। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ যে কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পরিহার করাকেই পাপ কাজ বলা হয় এবং (আরবী) বা সীমালংঘন করার দ্বারা ধৈর্যের নির্দষ্ট সীমা অতিক্রম করা এবং নিজের ও অন্যের ব্যাপারে অবশ্যকরণীয় কাজের সীমালংঘন করাকেই বুঝানো হয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর যদিও সে অত্যাচারী বা অত্যাচারিত হয়।” তখন কোন কোন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অত্যাচারিত ভাইকে সাহায্য করার অর্থ তো আমরা বুঝলাম, কিন্তু অত্যাচারী ভাইকে কি করে আমরা সাহায্য করবো?” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তুমি তাকে অত্যাচার করা হতে বাধা প্রদান কর ও নিষেধ কর। আর এটাই তাকে সাহায্য করা হবে।” ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করেন যে, যে ঈমানদার ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া কষ্ট সহ্য করে সেই ব্যক্তি ঐ ঈমানদার ব্যক্তি হতে অধিক প্রতিদান পাবে যে মানুষের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের দেয়া কষ্টও সহ্য করে না। এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে অন্য একটি সনদেও এসেছে। ইমাম তিরযিমীও (রঃ) হাদীসটিকে অন্য আর একটি সনদে তাঁর গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। আবু বকর আল বাযযার তাঁর হাদীস গ্রন্থে আবদুল্লাহ হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে সকাজের প্রতি পথ-প্রদর্শন করে সে সকর্মকারীর ন্যায় প্রতিদান পাবে।” ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসের অনুরূপ আর একটি সহীহ হাদীস আছে। তা হচ্ছে- “যে ব্যক্তি মানুষকে সৎপথে আহ্বান করে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ঐ সৎপথ যত ব্যক্তি অনুসরণ করবে তাদের সকলের প্রতিদানের অনুরূপ প্রতিদান দেয়া হবে। অথচ এ ব্যাপারে সৎপথ অনুসরণকারীদের প্রতিদান কমানো হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষকে অসৎ পথে আহ্বান করে, তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ঐ অসৎ পথ যত লোক অনুসরণ করবে তাদের সকলের পাপের অনুরূপ পাপ প্রদান করা হবে। অথচ এ ব্যাপারে অসৎ পথ অনুসরণকারীদের পাপ কোন অংশে কমানো হবে না।” ইমাম তিবরানী আবুল হাসান ইবনে সাখার হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন অত্যাচারীর সাথে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে চলাফেরা করে, অথচ সে জানে যে, ঐ ব্যক্তি একজন অত্যাচারী, তাহলে সে ইসলাম হতে বহিস্কৃত বলে গণ্য হবে।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 2
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحِلُّواْ شَعَأيِرَ اللّهِ
O you who believe! Violate not the sanctity of Sha’a’ir Allah (the symbols of Allah),
Ibn Abbas said,
“Sha`a’ir Allah means the rituals of Hajj.”
Mujahid said,
“As-Safa and Al-Marwah, and the sacrificial animal are the symbols of Allah.”
It was also stated that;
Sha`a’ir Allah is what He prohibited. Therefore, it means, do not violate what Allah prohibited.
Allah said afterwards,
وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ
nor of the Sacred Month,
for you are required to respect and honor the Sacred Month and to refrain from what Allah forbade during it, such as fighting. This also lays emphasis on avoiding sins during that time.
As Allah said;
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ
They ask you concerning fighting in the Sacred Month. Say, “Fighting therein is a great (transgression).” (2:217)
and,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا
(Verily, the number of months with Allah is twelve months (in a year). (9:36)
Al-Bukhari recorded in his Sahih that Abu Bakrah said that the Messenger of Allah said during the Farewell Hajj,
إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْيَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَواتِ وَالاَْرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَان
The division of time has returned as it was when Allah created the Heavens and the earth. The year is twelve months, four of which are sacred:Three are in succession, (they are:) Dhul-Qa’dah, Dhul-Hijjah and Muharram, and (the fourth is) Rajab of (the tribe of) Mudar which comes between Jumada (Ath-Thaniyah) and Sha’ban.)
This Hadith testifies to the continued sanctity of these months until the end of time.
Taking the Hady to the Sacred House of Allah, Al-Ka`bah
Allah’s statement,
وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَليِدَ
nor of the Hady brought for sacrifice, nor the garlands,
means, do not abandon the practice of bringing the Hady (sacrificial animals) to the Sacred House, as this ritual is a form of honoring the symbols of Allah.
Do not abandon the practice of garlanding these animals on their necks, so that they are distinguished from other cattle. This way, it will be known that these animals are intended to be offered as Hady at the Ka`bah, and thus those who might intend some harm to them would refrain from doing so. Those who see the Hady might be encouraged to imitate this ritual, and indeed, he who calls to a type of guidance, will earn rewards equal to the rewards of those who follow his lead, without decrease in their own rewards.
When the Messenger of Allah intended to perform Hajj, he spent the night at Dhul-Hulayfah, which is also called Wadi Al-Aqiq. In the morning, the Prophet made rounds with his wives, who were nine at that time, performed Ghusl (bath), applied some perfume and performed a two Rak`ah prayer. He then garlanded the Hady and announced aloud his intention to perform Hajj and Umrah. The Prophet’s Hady at the time consisted of plenty of camels, more than sixty, and they were among the best animals, the healthiest and most physically acceptable, just as Allah’s statement proclaims,
ذلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَـيِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
Thus it is, and whosoever honors the symbols of Allah, then it is truly, from the piety of the hearts. (22:32)
Muqatil bin Hayyan said that Allah’s statement,
وَلَا الْقَليِدَ
(nor the garlands) means,
“Do not breach their sanctity.”
During the time of Jahiliyyah, the people used to garland themselves with animal hair and pelts when they left their areas in months other than the Sacred Months. The idolators of the Sacred House Area used to garland themselves with the tree-stems of the Sacred Area, so that they were granted safe passage.”
This statement was collected by Ibn Abi Hatim, who also recorded that Ibn Abbas said,
“There are two Ayat in this Surah (Al-Ma’idah) that were abrogated, the Ayah about the garlands (5:2), and
فَإِن جَأوُوكَ فَاحْكُم بَيْنَهُم أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ
(So if they come to you (O Muhammad), either judge between them, or turn away from them).” (5:42)
The Necessity of Preserving the Sanctity and Safety of those who Intend to Travel to the Sacred House
Allah said,
وَلا امِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلً مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا
nor the people coming to the Sacred House (Makkah), seeking the bounty and good pleasure of their Lord.
The Ayah commands:Do not fight people who are heading towards the Sacred House of Allah, which if anyone enters it, he must be granted safe refuge. Likewise, those who are heading towards the Sacred House seeking the bounty and good pleasure of Allah, must not be stopped, prevented, or frightened away from entering the Sacred House.
Mujahid, Ata, Abu Al-Aliyah, Mutarrif bin Abdullah, Abdullah bin Ubayd bin Umayr, Ar-Rabi bin Anas, Muqatil bin Hayyan, Qatadah and several others said that,
يَبْتَغُونَ فَضْلً مِّن رَّبِّهِمْ
(seeking the bounty of their Lord),
refers to trading.
A similar discussion preceded concerning the Ayah;
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُواْ فَضْلً مِّن رَّبِّكُمْ
There is no sin on you if you seek the bounty of your Lord (during pilgrimage by trading). (2:198)
Allah said;
وَرِضْوَانًا
(and pleasure).
Ibn Abbas said that the word `pleasure’ in the Ayah refers to, “seeking Allah’s pleasure by their Hajj.”
Ikrimah, As-Suddi and Ibn Jarir mentioned that;
this Ayah was revealed concerning Al-Hutam bin Hind Al-Bakri, who had raided the cattle belonging to the people of Al-Madinah. The following year, he wanted to perform Umrah to the House of Allah and some of the Companions wanted to attack him on his way to the House. Allah revealed,
وَلا امِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلً مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا
(nor the people coming to the Sacred House (Makkah), seeking the bounty and good pleasure of their Lord).
Hunting Game is Permissible After Ihram Ends
Allah said,
وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُواْ
But when you finish the Ihram, then hunt,
When you end your Ihram, it is permitted for you to hunt game, which was prohibited for you during Ihram.
Although this Ayah contains a command that takes effect after the end of a state of prohibition (during Ihram in this case), the Ayah, in fact, brings back the ruling that was previously in effect. If the previous ruling was an obligation, the new command will uphold that obligation, and such is the case with recommended and permissible matters. There are many Ayat that deny that the ruling in such cases is always an obligation. Such is also the case against those who say that it is always merely allowed. What we mentioned here is the correct opinion that employs the available evidence, and Allah knows best.
Justice is Always Necessary
Allah said,
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَأنُ قَوْمٍ أَن صَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَن تَعْتَدُواْ
and let not the hatred of some people in (once) stopping you from Al-Masjid Al-Haram (at Makkah) lead you to transgression (and hostility on your part).
The meaning of this Ayah is apparent, as it commands:Let not the hatred for some people, who prevented you from reaching the Sacred House in the year of Hudaybiyyah, make you transgress Allah’s Law and commit injustice against them in retaliation. Rather, rule as Allah has commanded you, being just with every one. We will explain a similar Ayah later on,
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَأنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى
And let not the enmity and hatred of others make you avoid justice. Be just:that is nearer to piety, (5:8)
which commands:do not be driven by your hatred for some people into abandoning justice, for justice is ordained for everyone, in all situations.
Ibn Abi Hatim recorded that Zayd bin Aslam said,
“The Messenger of Allah and his Companions were in the area of Al-Hudaybiyyah when the idolators prevented them from visiting the House, and that was especially hard on them. Later on, some idolators passed by them from the east intending to perform Umrah. So the Companions of the Prophet said, `Let us prevent those (from Umrah) just as their fellow idolators prevented us.’ Thereafter, Allah sent down this Ayah.”
Ibn Abbas and others said that;
“Shana’an” refers to enmity and hate.
Allah said next,
وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى الاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
Help you one another in Al-Birr and At-Taqwa; but do not help one another in sin and transgression.
Allah commands His believing servants to help one another perform righteous, good deeds, which is the meaning of `Al-Birr’, and to avoid sins, which is the meaning of `At-Taqwa’.
Allah forbids His servants from helping one another in sin, `Ithm’ and committing the prohibitions.
Ibn Jarir said that,
“Ithm means abandoning what Allah has ordained, while transgression means overstepping the limits that Allah set in your religion, along with overstepping what Allah has ordered concerning yourselves and others.”
Imam Ahmad recorded that Anas bin Malik said that the Messenger of Allah said,
انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا
Support your brother whether he was unjust or the victim of injustice.
He was asked, “O Messenger of Allah! We know about helping him when he suffers injustice, so what about helping him when he commits injustice?”
He said,
تَحْجُزُهُ وَتَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ فَذَاكَ نَصْرُه
Prevent and stop him from committing injustice, and this represents giving support to him.
Al-Bukhari recorded this Hadith through Hushaym.
Ahmad recorded that one of the Companions of the Prophet narrated the Hadith,
الْمُوْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ وَلَا يَصْبِرُ عَلى أَذَاهُم
The believer who mingles with people and is patient with their annoyance, earns more reward than the believer who does not mingle with people and does not observe patience with their annoyance.
Muslim recorded a Hadith that states,
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الاَْجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنِ اتَّبَعَهُ إِلى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْيًا
وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الاِْثْمِ مِثْلُ اثَامِ مَنِ اتَّبَعَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ اثَامِهِمْ شَيْيًا
He who calls to a guidance, will earn a reward similar to the rewards of those who accept his call, until the Day of Resurrection, without decreasing their rewards.
Whoever calls to a heresy, will carry a burden similar to the burdens of those who accept his call, until the Day of Resurrection, without decreasing their own burdens.
وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
And have Taqwa of Allah. Verily, Allah is severe in punishment.