أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٧٧)-৩৭৯
www.motaher21.net
ْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ
বল, ‘তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভাল বস্তু ,
Say, “Lawful unto you are At-Tayyibat…”
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৪-৫
یَسْــٴَـلُوْنَكَ مَا ذَاۤ اُحِلَّ لَهُمْؕ قُلْ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّیِّبٰتُۙ وَ مَا عَلَّمْتُمْ مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِیْنَ تُعَلِّمُوْنَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللّٰهُ٘ فَكُلُوْا مِمَّاۤ اَمْسَكْنَ عَلَیْكُمْ وَ اذْكُرُوا اسْمَ اللّٰهِ عَلَیْهِ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَؕ اِنَّ اللّٰهَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? বলে দাও, তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস হালাল করা হয়েছে। আর যেসব শিকারী প্রাণীকে তোমরা শিক্ষিত করে তুলেছো, যাদেরকে আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমরা শিকার করা শিখিয়েছো, তারা তোমাদের জন্য যেসব প্রাণী ধরে রাখে, তাও তোমরা খেতে পারো। তবে তার ওপর আল্লাহর নাম নিতে হবে। আর আল্লাহর আইন ভাঙ্গার ব্যাপারে সাবধান! অবশ্যি হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।
সুরা: আল-মায়িদাহ
আয়াত নং :-৫
اَلْیَوْمَ اُحِلَّ لَكُمُ الطَّیِّبٰتُؕ وَ طَعَامُ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ حِلٌّ لَّكُمْ۪ وَ طَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ٘ وَ الْمُحْصَنٰتُ مِنَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ الْمُحْصَنٰتُ مِنَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكُمْ اِذَاۤ اٰتَیْتُمُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ مُحْصِنِیْنَ غَیْرَ مُسٰفِحِیْنَ وَ لَا مُتَّخِذِیْۤ اَخْدَانٍؕ وَ مَنْ یَّكْفُرْ بِالْاِیْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ٘ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ۠
আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র বস্তু হালাল দেয়া হয়েছে। আহ্লি কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। আর সংরক্ষিত মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা এমন জাতিদের মধ্য থেকে হোক, যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না। আর যে ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে অস্বীকার করবে, তার জীবনের সকল সৎ কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এবং আখেরাতে সে হবে নিঃস্ব ও দেউলিয়া।
৪-৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য যে সব খাদ্য হালাল করে দিয়েছেন, অত্র আয়াতে সে সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
যা পবিত্র ও উপকারী কেবল সে খাদ্যগুলো মানুষের জন্য হালাল করা হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبٰ۬ئِثَ)
“তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন ও অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।“ (সূরা আ‘রাফ ৭:১৫৭)
আরো হালাল করা হয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী যা শিকার করে নিয়ে আসবে। তবে তার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে:
১. অবশ্যই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী বিসমিল্লাহ বলে ছাড়তে হবে।
২. যা শিকার করে নিয়ে আসবে তা যেন নিজে না খেয়ে মালিকের জন্য নিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী খায় তাহলে খেয়ো না; কারণ সে তা নিজের জন্য শিকার করেছে। (সহীহ বুখারী হা: ১৭৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৯২৯)
যদি প্রশক্ষিণপ্রাপ্ত প্রাণী কুকুর হয় তাহলে আরো কিছু শর্ত হল:
১. কুকুর কালো হবে না; কারণ কালো কুকুর শয়তান। (সহীহ মুসলিম হা: ৫১০)
২. যখন শিকার করার জন্য প্রেরণ করবে তখন দৌড়ে যাবে। আবার যখন থামতে বলবে তখন থেমে যাবে। যখন ফিরে আসতে বলবে তখন ফিরে আসবে।
৩. অন্য কোন কুকুর যেন তার সাথে শিকারে শরীক না হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৫৪৮৩)
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে কুকুর লালন-পালন করা যাবে, তবে কেবল শিকার করা, বাড়ি বা ফসল পাহারা দেয়ার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি শিকার করা অথবা ফসল পাহারা দেয়া ছাড়া কুকুর লালন-পালন করবে প্রতিদিন তার নেকী থেকে এক কিরাত পরিমাণ কমে যাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৪৮২, সহীহ মুসলিম হা: ১৫৭৪) সুতরাং উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়া খ্রিস্টানদের সভ্যতা পালনে কুকুর ঘরে রাখা অবশ্যই হারাম এবং এজন্য প্রতিদিন তার নেকী কর্তন করা হবে।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য কেবল পবিত্র ও সার্বিক উপযোগী খাদ্য হালাল করার কথা পুনরাবৃত্তি করেছেন যাতে তাঁর শুকরিয়া আদায় এবং বেশি বেশি তাঁকে স্মরণ করা হয়।
আরো হালাল করে দিয়েছেন ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানদের জবেহকৃত প্রাণী খাওয়া। যখন তারা তাদের শরীয়তসম্মত পন্থায় তা জবেহ করবে; কেননা সকল নাবীগণই বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হারাম ও শির্ক।
তাই যে সকল আহলে কিতাব আল্লাহ তা‘আলার নামে জবেহ করবে তাদের জবেহকৃত প্রাণী উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য খাওয়া হালাল। আহলে কিতাবদের পাত্রে পানাহার করাও বৈধ। সাহাবী আবূ সা‘লাবাহ আল খুশানী (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলাম এবং বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আহলে কিতাবদের এলাকায় বসবাস করি, আমরা তো তাদের পাত্রে খাই এবং যারা শিকার করে তাদের এলাকায় বসবাস করি, তাদের ধনুক দিয়ে শিকার করি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারা শিকার করি এবং অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারাও শিকার করি। আপনি আমাদের বলুন, এর মধ্যে কোন্টি আমাদের জন্য বৈধ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি যে বললে, আহলে কিতাবদের এলাকায় বসবাস কর এবং তাদের পাত্রে খাও, যদি তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও তাহলে তাদের পাত্রে খাবে না, আর না পেলে তাদের পাত্র ধুয়ে নেবে, তারপর খাবে। (আবূ দাউদ হা: ২৮৫৭, হাসান)
অনুরূপভাবে স্বীয় ধর্মের পুত-পবিত্র ও স্বাধীন নারীদেরকে এবং ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানদের পুত-পবিত্র ও স্বাধীন নারীদেরকে বিবাহ করা হালাল করেছেন। কেননা ব্যভিচারিণী ও খারাপ চরিত্রের মহিলা মু’মিনদের জন্য হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَي الْمُؤْمِنِيْنَ)
“ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারী ব্যতীত বিবাহ করে না এবং ব্যভিচারিণী ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষ ব্যতীত বিবাহ করে না, আর মু’মিনদের জন্য ব্যভিচার করা হারাম হয়েছে।” (সূরা নূর ২৪:৩)
তবে শর্ত হল যথাযথভাবে তাদের মোহর আদায় করে দেবে। তোমরা ব্যভিচার করবে না এবং তাদেরকে ব্যভিচারিণী ও গোপন সঙ্গিণী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
যে ব্যক্তি ঈমানের আবশ্যকীয় রুকন অস্বীকার করবে এবং তার ওপর মৃত্যু বরণ করবে তার সকল আমল বাতিল হয়ে যাবে। আর আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِه۪ فَيَمُتْ وَهُوَ كٰفِرٌ فَأُولٰ۬ئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ)
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”(সূরা বাক্বারাহ ২:২১৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে জানা না থাকলে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া শরীয়তের নিয়ম।
২. শর্ত সাপেক্ষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী দ্বারা শিকার করা বৈধ।
৩. আহলে কিতাব তথা ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা স্বধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত তাদের খাদ্য ও জবেহকৃত প্রাণী খাওয়া হালাল।
৪. আহলে কিতাব নারীদের বিবাহ করা বৈধ। শর্ত হল, স্বাধীন ও পুত পবিত্র হতে হবে।
৫. পরকিয়া, বিবাহের পূর্বে সম্পর্ক ও সাময়িক বিবাহ হারাম।
৬. মুরতাদের সকল আমল বাতিল হওয়ার কারণে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
৭. বিবাহের পর মাহর প্রদান করা আবশ্যক।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৮) এ জবাবের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম তত্ব নিহিত রয়েছে। ধর্মীয় ভাবাপন্ন লোকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন এক মানসিকতার শিকার হন যার ফলে তারা কোন জিনিসকে সুস্পষ্টভাবে হালাল গণ্য না করা পর্যন্ত দুনিয়ার সব জিনিসকেই হারাম গণ্য করে থাকেন। এ মানসিকতার ফলে মানুষের ওপর সন্দেহ প্রবণতা ও আইনের গৎবাঁধা রীতি চেপে বসে। জীবনের প্রত্যেকটি কাজে সে হালাল বস্তু ও জায়েজ কাজের তালিকা চেয়ে বেড়ায় এবং প্রত্যেকটি কাজ ও প্রত্যেকটি জিনিসকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকে, যেন সব কিছুই নিষিদ্ধ। এখানে কুরআন এ মানসিকতার সংশোধন করছে। প্রশ্নকারীদের উদ্দেশ্য ছিল, সমস্ত হালাল জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ তাদের জানিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা সেগুলো ছাড়া অন্য সব জিনিসকে হারাম মনে করতে পারে। জবাবে কুরআন হারাম জিনিসগুলো বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছে এবং এরপর সমস্ত পাক পবিত্র জিনিস হালাল, এ সাধারণ নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে পুরাতন ধর্মীয় মতাদর্শ সম্পূর্ণ রূপে উল্টে গেছে। পুরাতন মতাদর্শ অনুযায়ী সবকিছুই ছিল হারাম কেবলমাত্র যেগুলোকে হালাল গণ্য করা হয়েছিল সেগুলো ছাড়া। কুরআন এর বিপরীত পক্ষে এ নীতি নির্ধারণ করেছে যে, সবকিছুই হালাল কেবল মাত্র সেগুলো ছাড়া যেগুলোর হারাম হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এটি ছিল একটি অনেক বড় সংশোধন। মানুষের জীবনকে বাঁধন মুক্ত করে এ সংশোধন প্রশস্ত দুনিয়ার দুয়ার তার জন্য খুলে দিয়েছে। প্রথমে একটি গণ্ডীবদ্ধ ক্ষুদ্র পরিসরের কিছু জিনিস ছিল তার জন্য হালাল, বাকি সমস্ত দুনিয়া ছিল তার জন্য হারাম। আর এখন একটি গণ্ডিবদ্ধ পরিসরের কিছু জিনিস তার জন্য হারাম বাদবাকি সমস্ত দুনিয়াটাই তার জন্য হালাল হয়ে গেছে।
হালালের জন্য “পাক-পবিত্রতার” শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যাতে এ সাধারণ বৈধতার দলীলের মাধ্যমে নাপাক জিনিসগুলোকে হালাল গণ্য করার চেষ্টা না করা হয়। এখন কোন জিনিসের “পাক-পবিত্র” হবার বিষয়টি কিভাবে নির্ধারিত হবে, এ প্রশ্নটি থেকে যায়। এর জবাব হচ্ছে, যেসব জিনিস শরীয়াতের মূলনীতিগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি মূলনীতির আওতায় নাপাক গণ্য হয় অথবা ভারসাম্যপূর্ণ রুচিশীলতা যেসব জিনিস অপছন্দ করে বা ভদ্র ও সংস্কৃতিবান মানুষ সাধারণত যেসব জিনিসকে নিজের পরিচ্ছন্নতার অনুভূতির বিরোধী মনে করে থাকে সেগুলো ছাড়া বাকি সবকিছুই পাক।
টিকা:১৯) শিকারী প্রাণী বলতে বাঘ, সিংহ, বাজ পাখি, শিকরা ইত্যাদি এমনসব পশু-পাখি বুঝায় যাদেরকে মানুষ শিকার করার কাজে নিযুক্ত করে। শিক্ষিত পশু-পাখির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা যা কিছু শিকার করে সাধারণ পশু-পাখির মতো তাদেরকে ছিঁড়ে ফেড়ে খেয়ে ফেলে না বরং নিজের মালিকের জন্য রেখে দেয়। তাই সাধারণ পশু-পাখির শিকার করা প্রাণী হারাম কিন্তু শিক্ষিত পশু-পাখির শিকার করা প্রাণী হালাল। এ বিষয়ে ফকীহদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ আছে। এক দলের মতে, শিকারী পশু-পাখি তার শিকার করা প্রাণী থেকে যদি কিছুটা খেয়ে নেয় তাহলে তাহারাম হয়ে যাবে। কারণ তার খাওয়া প্রমাণ করে যে, শিকারটিকে সে মালিকের জন্য নয়, নিজের জন্য ধরেছে। ইমাম শাফেঈ এ মত অবলম্বন করেছেন। দ্বিতীয় দলের মতে, সে যদি তার শিকার করা প্রাণীর কিছুটা খেয়ে নেয় তাহলেও তা হারাম হয়ে যায় না। এমনকি এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্তখেয়ে নিলেও বাকি দু’-তৃতীয়াংশ হালালই থেকে যাবে। আর এ ব্যাপারে পশু ও পাখির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইমাম মালেক এ মত অবলম্বন করেছেন। তৃতীয় দলের মতে, শিকারী পশু যদি তার শিকার থেকে কিছু খেয়ে নেয় তাহলে তা হারাম হয়ে যাবে কিন্তু যদি শিকারী পাখি তার শিকার থেকে কিছু খেয়ে নেয় তাহলে তা হারাম হয়ে যাবে না। কারণ শিকারী পশুকে এমন শিক্ষা দেয়া যেতে পারে যার ফলে সে শিকার থেকে কিছুই না খেয়ে তাকে মালিকের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, শিকারী পাখিকে এ ধরনের শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর শাগরিদবৃন্দ এ মত অবলম্বন করেছেন। এর বিপরীত পক্ষে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, শিকারী পাখির শিকার আদৌ জায়েয নয়। কারণ শিকারকে নিজে না খেয়ে মালিকের জন্য রেখে দেবার ব্যাপারটি তাকে কোনক্রমেই শেখানো সম্ভব নয়।
টিকা:২০) অর্থাৎ শিকারী পশুকে শিকারের পেছনে লেলিয়ে দেবার সময় “বিসমিল্লাহ” বলো। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আমি কি কুকুরের সাহায্যে শিকার করতে পারি? ’ জবাবে তিনি বলেনঃ “যদি তাকে ছাড়ার সময় তুমি “বিসমিল্লাহ”বলে থাকো, তাহলে তা খেয়ে নাও অন্যথায় খেয়ো না। আর যদি সে শিকার থেকে কিছু খেয়ে নিয়ে থাকে, তাহলে তা খেয়ো না। কারণ সে শিকারকে আসলে তার নিজের জন্য ধরেছে,” তারপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আমি যদি শিকারের ওপর নিজের কুকুর ছেড়ে দেবার পর দেখি সেখানে আর একটি কুকুর আছে তাহলে? ’ তিনি জবাব দিলেনঃ “এ অবস্থায় ঐ শিকারটি খেয়ো না। কারণ আল্লাহর নাম তুমি নিজের কুকুরের ওপর নিয়েছিলে, অন্য কুকুরটির ওপর নয়? ”
এ আয়াত থেকে জানা যায়, শিকারের ওপর শিকারী পশুকে ছাড়ার সময় আল্লাহর নাম নেয়া জরুরী। এরপর যদি শিকারকে জীবিত পাওয়া যায় তাহলে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তাকে যবেহ করতে হবে। আর যদি জীবিত না পাওয়া যায় তাহলে যবেহ করা ছাড়াই তা হালাল। কারণ শুরুতে শিকারী পশুকে তার উপর ছাড়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছিল। তীর দিয়ে শিকার করার ব্যাপারেও এ একই কথা।
টিকা:২১) আহ্লি কিতাবদের খাদ্যের মধ্যে তাদের যবেহকৃত প্রাণীও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জন্য তাদের এবং তাদের জন্য আমাদের খাদ্য হালাল হবার মানে হচ্ছে এই যে, আমাদের ও তাদের মধ্যে পানাহারের ব্যাপারে কোন বাধ্য বা শুচি-অশুচির ব্যাপার নেই। আমরা তাদের সাথে খেতে পারি এবং তারা আমাদের সাথে খেতে পারে। কিন্তু এভাবে সাধারণ অনুমতি দেবার আগে এ বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যে, “তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস হালাল করে দেয়া হয়েছে।” এ থেকে জানা গেলো, আহলি কিতাব যদি পাক-পবিত্রতা ও তাহারাতের ব্যাপারে শরীয়াতের দৃষ্টিতে অপরিহার্য বিধানগুলো মেনে না চলে অথবা যদি তাদের খাদ্যের মধ্যে হারাম বস্তু অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে তা থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, যদি তারা আল্লাহর নাম না নিয়েই কোন প্রাণী যবেহ করে অথবা তার ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম নেয়, তাহলে তা খাওয়া আমাদের জন্য জায়েয নয়। অনুরূপভাবে যদি তাদের দস্তরখানে মদ, শূকরের গোশ্ত বা অন্য কিছু হারাম খাদ্য পরিবেশিত হয়, তাহলে আমরা তাদের সাথে আহারে শরীক হতে পারি না।
আহ্লি কিতাবদের ছাড়া অন্যান্য অমুসলিমদের ব্যাপারেও একই কথা। তবে সেখানে পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, আহলি কিতাবদের যবেহ করা প্রাণী জায়েয, যদি তারা যবেহ করার সময় তার ওপর আল্লাহর নাম নিয়ে থাকে কিন্তু আহলি কিতাব ছাড়া অন্যান্য অমুসলিমদের হত্যা করা প্রাণী আমরা খেতে পারি না।
এ একই মত পোষণ করেন। হানাফী ফকীহগণও এ মত অবলম্বন করেছেন। অন্যদিকে ইমাম শাফেঈর মতে, এখানে এ শব্দটি ক্রীতদাসীদের মোকাবিলায় ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এখানে এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, আহলি কিতাবদের এমন সব মেয়ে যারা ক্রীতদাসী নয়।
টিকা:২৩) আহলি কিতাবদের মেয়েদেরকে বিয়ে করার অনুমতি দেবার পর এখানে সতর্কবাণী হিসেবে এ বাক্যটি সন্নিবেশিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ অনুমতি থেকে লাভবান হতে চাইবে সে যেন নিজের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে। এমন যেন না হয়, কাফের স্ত্রীর প্রেমে আত্মহারা হয়ে অথবা তার আকীদা ও কর্মকাণ্ডে প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজের ঈমানের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে বসেন বা সামাজিক জীবন যাপন ও আচরণের ক্ষেত্রে ঈমান বিরোধী পথে এগিয়ে চলেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 4-5
ْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ
Say, “Lawful unto you are At-Tayyibat…”
Clarifying the Lawful
In the previous Ayah Allah mentioned the prohibited types of food, the impure and unclean things, harmful for those who eat them, either to their bodies, religion or both, except out of necessity,
وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ
(while He has explained to you in detail what is forbidden to you, except under compulsion of necessity), (6:119) after that, Allah said,
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ
They ask you what is lawful for them. Say, “Lawful unto you are At-Tayyibat…”
In Surah Al-A`raf Allah describes Muhammad allowing the good things and prohibiting the filthy things.
Muqatil said,
“At-Tayyibat includes everything Muslims are allowed and the various types of legally earned provision.”
Az-Zuhri was once asked about drinking urine for medicinal purposes and he said that it is not a type of Tayyibat.
Ibn Abi Hatim also narrated this statement.
Using Jawarih to Hunt Game is Permissible Allah said,
وَمَا عَلَّمْتُم مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ
And those Jawarih (beasts and birds of prey) which you have trained as hounds…
That is, lawful for you are the animals slaughtered in Allah’s Name, and the good things for sustenance. (The game you catch) with the Jawarih are also lawful for you. This refers to trained dogs and falcons, as is the opinion of the majority of the Companions, their followers, and the Imams.
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said that,
وَمَا عَلَّمْتُم مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ
(And those Jawarih (beasts and birds of prey) which you have trained as hounds…),
refers to trained hunting dogs, falcons and all types of birds and beasts that are trained to hunt, including dogs, wild cats, falcons, and so forth.
Ibn Abi Hatim collected this and said,
“Similar was reported from Khaythamah, Tawus, Mujahid, Makhul and Yahya bin Abi Kathir.”
Ibn Jarir recorded that Ibn Umar said,
“You are permitted the animal that the trained birds, such as falcons, hunt for you if you catch it (before it eats from it). Otherwise, do not eat from it.”
I say, the majority of scholars say that hunting with trained birds is just like hunting with trained dogs, because bird’s of prey catch the game with their claws, just like dogs. Therefore, there is no difference between the two.
Ibn Jarir recorded that Adi bin Hatim said that;
he asked the Messenger of Allah about the game that the falcon hunts and the Messenger said,
مَا أَمْسَكَ عَلَيْكَ فَكُل
Whatever it catches for you, eat from it.
These carnivores that are trained to catch game are called Jawarih in Arabic, a word that is derived from Jarh, meaning, what one earns. The Arabs would say, “So-and-so has Jaraha something good for his family,” meaning, he has earned them something good. The Arabs would say, “So-and-so does not have a Jarih for him,” meaning, a caretaker.
Allah also said,
وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ
(And He knows what you have done during the day…), (6:60), meaning, the good or evil you have earned or committed.
Allah’s statement,
مُكَلِّبِينَ
(trained as hounds),
those Jawarih that have been trained to hunt as hounds with their claws or talons. Therefore, if the game is killed by the weight of its blow, not with its claws, then we are not allowed to eat from the game.
Allah said,
تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللّهُ
training them in the manner as directed to you by Allah,
as when the beast is sent, it goes after the game, and when it catches it, it keeps it until its owner arrives and does not catch it to eat it itself.
This is why Allah said here,
فَكُلُواْ مِمَّا أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُواْ اسْمَ اللّهِ عَلَيْهِ
so eat of what they catch for you, but pronounce the Name of Allah over it,
When the beast is trained, and it catches the game for its owner who mentioned Allah’s Name when he sent the beast after the game, then this game is allowed according to the consensus of scholars, even if it was killed.
There are Hadiths in the Sunnah that support this statement.
The Two Sahihs recorded that `Adi bin Hatim said,
“I said, `O Allah’s Messenger! I send hunting dogs and mention Allah’s Name.’
He replied,
إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ الْمُعَلَّمَ وَذَكَرْتَ اسْمَ اللهِ فَكُلْ مَا أَمْسَكَ عَلَيْك
If, with mentioning Allah’s Name, you let loose your tamed dog after a game and it catches it, you may eat what it catches.
I said, `Even if it kills the game?’
He replied,
وَإِنْ قَتَلْنَ مَا لَمْ يَشْرَكْهَا كَلْبٌ لَيْسَ مِنْهَا فَإِنَّكَ إِنَّمَا سَمَّيْتَ عَلى كَلْبِكَ وَلَمْ تُسَمِّ عَلى غَيْرِه
Even if it kills the game, unless another dog joins the hunt, for you mentioned Allah’s Name when sending your dog, but not the other dog.
I said, `I also use the Mi`rad and catch game with it.’
He replied,
إِذَا رَمَيْتَ بِالْمِعْرَاضِ فَخَزقَ فَكُلْهُ وَإِنْ أَصَابَهُ بِعَرْضٍ فَإِنَّهُ وَقِيذٌ فَلَ تَأْكُلْه
If the game is hit by its sharp edge, eat it, but if it is hit by its broad side, do not eat it, for it has been beaten to death.
In another narration, the Prophet said,
وَإِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ فَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ فَإِنْ أَمْسَكَ عَلَيْكَ فَأَدْرَكْتَهُ حَيًّا فَاذْبَحُهُ وَإِنْ أَدْرَكْتَهُ قَدْ قَتَلَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْهُ فَكُلْهُ فَإِنَّ أَخْذَ الْكَلْبِ ذَكَاتُه
If you send your hunting dog, then mention Allah’s Name and whatever it catches for you and you find alive, slaughter it. If you catch the game dead and the dog did not eat from it, then eat from it, for the dog has caused its slaughter to be fulfilled.
In yet another narration of two Sahihs, the Prophet said,
فَإِنْ أَكَلَ فَلَإ تَأْكُلْ فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَكُونَ أَمْسَكَ عَلى نَفْسِه
If the dog eats from the game, do not eat from it for I fear that it has caught it as prey for itself.
Mention Allah’s Name Upon Sending the Predators to Catch the Game
Allah said,
فَكُلُواْ مِمَّا أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُواْ اسْمَ اللّهِ عَلَيْهِ
so eat of what they catch for you, but pronounce the Name of Allah over it,
meaning, upon sending it.
The Prophet said to `Adi bin Hatim,
إِذَا أَرَسَلْتَ كَلْبَكَ الْمُعَلَّمَ وَذَكَرْتَ اسْمَ اللهِ فَكُلْ مَا أَمْسَكَ عَلَيْك
When you send your trained dog and mention Allah’s Name, eat from what it catches for you.
It is recorded in the Two Sahihs that Abu Thalabah related that the Prophet said,
إِذَا أَرْسَلْتَ كَلْبَكَ فَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ وَإِذَا رَمَيْتَ بِسَهْمِكَ فَاذْكُرِ اسْمَ الله
If you send your hunting dog, mention Allah’s Name over it. If you shoot an arrow, mention Allah’s Name over it.
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented,
وَاذْكُرُواْ اسْمَ اللّهِ عَلَيْهِ
(but pronounce the Name of Allah over it),
“When you send a beast of prey, say, `In the Name of Allah!’ If you forget, then there is no harm.”
It was also reported that this Ayah commands mentioning Allah’s Name upon eating. It is recorded in the Two Sahihs that the Messenger of Allah taught his stepson Umar bin Abu Salamah saying,
سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيك
Mention Allah’s Name, eat with your right hand and eat from the part of the plate that is in front of you.
Al-Bukhari recorded that Aishah said,
“They asked, `O Allah’s Messenger! Some people, – recently converted from disbelief – bring us some meats that we do not know if Allah’s Name was mentioned over or not.’
He replied,
سَمُّوا اللهَ أَنْتُمْ وَكُلُوا
Mention Allah’s Name on it and eat from it.”
وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
and have Taqwa of Allah. Verily, Allah is swift in reckoning.
Permitting the Slaughtered Animals of the People of the Book
After Allah mentioned the filthy things that He prohibited for His believing servants and the good things that He allowed for them, He said next,
الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ
Made lawful to you this day are At-Tayyibat.
Allah then mentioned the ruling concerning the slaughtered animals of the People of the Book, the Jews and Christians,
وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ
The food of the People of the Scripture is lawful to you…,
Ibn Abbas, Abu Umamah, Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Ikrimah, Ata’, Al-Hasan, Makhul, Ibrahim An-Nakhai, As-Suddi and Muqatil bin Hayyan stated,
meaning, their slaughtered animals.
This ruling, that the slaughtered animals of the People of the Book are permissible for Muslims, is agreed on by the scholars, because the People of the Book believe that slaughtering for other than Allah is prohibited. They mention Allah’s Name upon slaughtering their animals, even though they have deviant beliefs about Allah that do not befit His majesty.
It is recorded in the Sahih that Abdullah bin Mughaffal said,
“While we were attacking the fort of Khyber, a person threw a leather bag containing fat, and I ran to take it and said, `I will not give anyone anything from this container today.’ But when I turned I saw the Prophet (standing behind) while smiling.”
The scholars rely on this Hadith as evidence that we are allowed to eat what we need of foods from the booty before it is divided.
The scholars of the Hanafi, the Shafii and the Hanbali Madhhabs rely on this Hadith to allow eating parts of the slaughtered animals of the Jews that they prohibit for themselves, such as the fat. They used this Hadith as evidence against the scholars of the Maliki Madhhab who disagreed with this ruling.
A better proof is the Hadith recorded in the Sahih that;
the people of Khyber gave the Prophet a gift of a roasted leg of sheep, which they poisoned. The Prophet used to like eating the leg of the sheep and he took a bite from it, but it told the Prophet that it was poisoned, so he discarded that bite. The bite that the Prophet took effected the palate of his mouth, while Bishr bin Al-Bara bin Ma`rur died from eating from that sheep.
The Prophet had the Jewish woman, Zaynab, who poisoned the sheep, killed. Therefore, the Prophet and his Companions wanted to eat from that sheep and did not ask the Jews if they removed what the Jews believed was prohibited for them, such as its fat.
Allah’s statement,
وَطَعَامُكُمْ حِلُّ لَّهُمْ
and your food is lawful to them.
means, you are allowed to feed them from your slaughtered animals.
Therefore, this part of the Ayah is not to inform the People of the Scriptures that they are allowed to eat our food — unless we consider it information for us about the ruling that they have — i.e., that they are allowed all types of foods over which Allah’s Name was mentioned, whether slaughtered according to their religion or otherwise.
The first explanation is more plausible. So it means:
you are allowed to feed them from your slaughtered animals just as you are allowed to eat from theirs, as equal compensation and fair treatment.
The Prophet gave his robe to Abdullah bin Ubayy bin Salul, who was wrapped with it when he died. They say that he did that because Abdullah had given his robe to Al-Abbas when Al-Abbas came to Al-Madinah.
As for the Hadith,
لَاا تَصْحَبْ إِلاَّ مُوْمِنًا وَلَاا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِي
Do not befriend but a believer, nor should other than a Taqi (pious person) eat your food.
This is to encourage such behavior, and Allah knows best.
The Permission to Marry Chaste Women From the People of the Scriptures
Allah said,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُوْمِنَاتِ
(Lawful to you in marriage) are chaste women from the believers.
The Ayah states:you are allowed to marry free, chaste believing women.
This Ayah is talking about women who do not commit fornication, as evident by the word `chaste’. Allah said in another Ayah,
مُحْصَنَـت غَيْرَ مُسَـفِحَـتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ
Desiring chastity not committing illegal sexual intercourse, nor taking them as boyfriends (lovers). (4:25)
Abdullah Ibn Umar used to advise against marrying Christian women saying,
“I do not know of a worse case of Shirk than her saying that `Isa is her lord, while Allah said,
وَلَا تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُوْمِنَّ
(And do not marry idolatresses till they believe).” (2:221)
Ibn Abi Hatim recorded that Abu Malik Al-Ghifari said that Ibn Abbas said that;
when this Ayah was revealed,
وَلَا تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُوْمِنَّ
(And do not marry idolatresses till they believe), the people did not marry the pagan women. When the following Ayah was revealed,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ
(Lawful to you in marriage) are chaste women from the believers and chaste women from those who were given the Scripture before your time) they married women from the People of the Book.”
Some of the Companions married Christian women and did not see any problem in this, relying on the honorable Ayah,
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ
((Lawful to you in marriage) are chaste women from those who were given the Scripture before your time), therefore, they made this Ayah an exception to the Ayah in Surah Al-Baqarah,
وَلَا تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُوْمِنَّ
(And do not marry the idolatresses till they believe), considering the latter Ayah to include the People of the Book in its general meaning. Otherwise, there is no contradiction here, since the People of the Book were mentioned alone when mentioning the rest of the idolators. Allah said,
لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ مُنفَكِّينَ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ الْبَيِّنَةُ
Those who disbelieve from among the People of the Scripture and the idolators, were not going to leave (their disbelief) until there came to them clear evidence. (98:1)
and,
وَقُل لِّلَّذِينَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ وَالاُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ فَإِنْ أَسْلَمُواْ فَقَدِ اهْتَدَواْ
And say to those who were given the Scripture and to those who are illiterates:”Do you (also) submit yourselves!” If they do, they are rightly guided. (3:20)
Allah said next,
إِذَا اتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ
When you have given them their due,
This refers to the Mahr, so just as these women are chaste and honorable, then give them their Mahr with a good heart.
We should mention here that Jabir bin Abdullah, `Amir Ash-Sha`bi, Ibrahim An-Nakhai and Al-Hasan Al-Basri stated that;
when a man marries a woman and she commits illegal sexual intercourse before the marriage is consummated, the marriage is annulled. In this case, she gives back the Mahr that he paid her.
Allah said,
مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ
Desiring chastity, not illegal sexual intercourse, nor taking them as girl-friends (or lovers).
And just as women must be chaste and avoid illegal sexual activity, such is the case with men, who must also be chaste and honorable. Therefore, Allah said,
غَيْرَ مُسَافِحِينَ
(…not illegal sexual intercourse) as adulterous people do, those who do not avoid sin, nor reject adultery with whomever offers it to them.
وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ
(nor taking them as girl-friends (or lovers),
meaning those who have mistresses and girlfriends who commit illegal sexual intercourse with them, as we mentioned in the explanation of Surah An-Nisa’.
وَمَن يَكْفُرْ بِالاِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الاخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
And whosoever rejects faith, then fruitless is his work; and in the Hereafter he will be among the losers.
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এখানে ‘আজ’ বলে এ দিনকে বোঝানো হয়েছে, যেদিন এ আয়াত ও এর পূর্ববর্তী আয়াত নাযিল হয়। অর্থাৎ দশম হিজরীর বিদায় হজ্জের আরাফার দিন। উদ্দেশ্য এই যে, আজ যেমন তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত পূর্ণতা লাভ করেছে, তেমনি আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বস্তুসমূহ, যা পূর্বেও তোমাদের জন্যে হালাল ছিল, চিরস্থায়ীভাবে হালাল রাখা হল। [কুরতুবী]
[২] এ আয়াতে (طيبات) অর্থাৎ পবিত্র ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বস্তু হালাল হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
(وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَـبٰىِٕثَ)
অর্থাৎ আল্লাহ হালাল করেন তাদের জন্যে (طيبات) এবং হারাম করেন (خَـبٰىِٕثَ) [সূরা আল-আরাফ: ১৫৭] এখানে (طيبات) এর বিপরীতে (خَـبٰىِٕثَ) ব্যবহার করে উভয় শব্দের মর্মার্থ বর্ণনা করা হয়েছে। অভিধানে (طيبات) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাম্য বস্তুসমূহকে এবং এর বিপরীতে (خَـبٰىِٕثَ) নোংরা ও ঘৃণাৰ্হ বস্তুসমূহকে বলা হয়। [জালালাইন] কাজেই আয়াতের এ বাক্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, যেসব বস্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, উপাদেয় ও পবিত্র, সেগুলো মানুষের জন্যে হালাল করা হয়েছে এবং যেসব বস্তু নোংরা, ঘৃণা ও অপকারী, সেগুলো হারাম করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপারে নবীদের সিদ্ধান্ত সবার জন্যে অকাট্য দলীলস্বরূপ। কেননা, মানুষের মধ্যে নবীগণই সবাধিক সুস্থ স্বভাবসম্পন্ন। কোন কোন মুফাসসির এখানে (طيبات) এর অর্থ আল্লাহর নামে যবাইকৃত হালাল প্রাণী অর্থ করেছেন। [বাগভী]
[৩] এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, আহলে কিতাব হওয়ার জন্য যে কিতাবটির অনুসারী বলে তারা দাবী করে, সে কিতাবটি আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা কিতাব কি না তা প্রমাণিত হতে হবে। সাথে সাথে স্বীয় কিতাবের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান থাকা এবং আমল করাও জরুরী। যেমন, তাওরাত, ইঞ্জল, যবুর, মূসা ও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের সহীফা ইত্যাদি। আর যাদের গ্রন্থ আল্লাহর কিতাব বলে কুরআন ও সুন্নাহর নিশ্চিত পন্থায় প্রমাণিত নয়, তারা আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। মূলতঃ কুরআনের পরিভাষায় ইহুদী ও নাসারা জাতিই আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের প্রতি বিশ্বাসী। [ইবন কাসীর]
[৪] এখানে ইয়াহুদী ও নাসারা মহিলাদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই ‘মুহসানাহ’ বা সংরক্ষিত মহিলা হতে হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সংরক্ষিত বা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারিনী নয়, তারা এর ব্যতিক্রম। [সা’দী]
[৫] আয়াতে আহলে কিতাবদের খাদ্য বলা হয়েছে। সর্বপ্রকার খাদ্যই এর অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগনের মতে ‘খাদ্য’ বলতে যবেহ করা জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] কেননা, অন্য প্রকার খাদ্যবস্তুতে আহলে-কিতাব, পৌত্তলিক, মুশরেক সবাই সমান। রুটি, আটা, চাল, ডাল ইত্যাদিতে যবেহ্ করার প্রয়োজন নেই। এগুলো যে কোন লোকের কাছ থেকে যে কোন বৈধ পন্থায় অর্জিত হলে মুসলিমের জন্যে খাওয়া হালাল। [সা’দী] অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদের মতে, কাফেরদের মধ্য থেকে আহলে কিতাব ইয়াহুদী ও নাসারাদের যবেহ করা জন্তু হালাল হওয়ার কারণ হচ্ছে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জন্তু যবেহ করাকে তারাও বিশ্বাসগতভাবে জরুরী মনে করে। এ ছাড়া মৃত জন্তুকেও তার হারাম মনে করে। [ইবন কাসীর]
[৬] ঈমানের সাথে কুফরী করার অর্থ, ইসলামী শরীআতের সাথে কুফরী করলো শরীআতের বিধি-বিধান মানতে অস্বীকার করল, তার সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। [ফাতহুল কাদীর, মুয়াচ্ছার, সাদী] যারাই এভাবে আল্লাহ ও তার দেয়া শরীআতের সাথে কুফরী করে সে অবস্থায় মারা যাবে। সে ঈমান অবস্থায় করা যাবতীয় আমল ধ্বংস করে ফেলবে। আখেরাতে সে কিছুরই মালিক থাকবে না। আলেমগণ এ আয়াত থেকে দলীল নিয়েছেন যে, যারাই মুর্তাদ হবে এবং সে অবস্থায় মারা যাবে, তাদের সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, “আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের হয়ে মারা যাবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে। আর এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে”। [সূরা আল-বাকারাহ: ২১৭] [সা’দী]
[৭] এ আয়াতে বর্ণিত (طيبات) শব্দের তিনটি অর্থ হয়ে থাকে। এক. যাবতীয় রুচিসম্পন্ন। দুই. যাবতীয় হালালকৃত। তিন. যাবতীয় যবাইকৃত প্রাণী। কারণ, যবাই করার কারণে সেগুলোতে পরিচ্ছন্নতা এসেছে। [ফাতহুল কাদীর]
[৮] আয়াতে শিকারী কুকুর, বাজ ইত্যাদি দ্বারা শিকার করা জন্তু হালাল হওয়ার জন্যে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম শর্তঃ কুকুর অথবা বাজ শিক্ষাপ্রাপ্ত হতে হবে। শিকার পদ্ধতি এই যে, আপনি যখন কুকুরকে শিকারের দিকে প্রেরণ করবেন, তখন সে শিকার ধরে আপনার কাছে নিয়ে আসবে- নিজে খাওয়া শুরু করবে না। বাজপাখীর বেলায় পদ্ধতি এই যে, আপনি ফেরৎ আসার জন্যে ডাক দেয়া মাত্রই সে কাল বিলম্ব না করে ফিরে আসবে- যদিও তখন কোন শিকারের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে। শিকারী জন্তু এমনভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে গেলে বোঝা যাবে যে, সে আপনার জন্যে শিকার করে, নিজের জন্যে নয়। এমতাবস্থায় এগুলোর ধরে আনা শিকার স্বয়ং আপনারই শিকার বলে গন্য হবে। যদি শিকারী জন্তু কোন সময় এ শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে যেমন, কুকুর নিজেই খাওয়া আরম্ভ করে কিংবা বাজপাখী আপনার ডাকে ফেরৎ না আসে, তবে এ শিকার আপনার শিকার নয়। কাজেই তা খাওয়াও বৈধ নয়। দ্বিতীয় শর্তঃ আপনি নিজ ইচ্ছায় কুকুরকে অথবা বাজকে শিকারের পেছনে প্রেরণ করবেন। কুকুর অথবা বাজ যেন স্বেচ্ছায় শিকারের পেছনে দৌড়ে শিকার না করে। আলোচ্য আয়াতে এ শর্তটি (مكلبين) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এটি (تكليب) ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর আসল অর্থ কুকুরকে শিক্ষা দেয়া। এরপর সাধারণ শিকার জন্তুকে শিক্ষা দেয়ার পর শিকারের দিকে প্রেরণ করা বা (ارسال) এর অর্থেও ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এর অর্থ শিকারের দিকে প্রেরণ করা। তৃতীয় শর্তঃ শিকার জন্তু নিজে শিকারকে খাবে না; বরং আপনার কাছে নিয়ে আসবে। এ শর্তটি (مِمَّا اَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ) বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে। চতুর্থ শর্তঃ শিকারী কুকুর অথবা বাজকে শিকারের দিকে প্রেরণ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। উপরে বর্ণিত চারটি শর্ত পূর্ণ হলে শিকার আপনার হাতে পৌঁছার পূর্বেই যদি মরে যায়, তবুও তা হালাল হবে; যবেহ্ করার প্রয়োজন হবে না। আর যদি জীবিত অবস্থায় হাতে আসে, তবে যবেহ্ ব্যতীত হালাল হবে না। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, শিকার হিসেবে ঐসব বন্য জন্তুর ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যে গুলো কারও করতলগত নয়। পক্ষান্তরে কোন বন্য জন্তু কারও করতলগত হয়ে গেলে, তা নিয়মিত যবেহ করা ব্যতীত হালাল হবে না। [ইবন কাসীর ও কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী আদী ইবন হাতিমকে বললেন, যখন তুমি শিকারের উদ্দেশ্যে তোমার কুকুরকে পাঠাবে এবং পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম নিবে, তারপর যদি সে কুকুর কোন শিকার পাকড়াও করে, তবে তা থেকে খাও, যদিও সে শিকারটিকে হত্যা করে ফেলে থাকে। তবে যদি কুকুর সেটা থেকে নিজে খেয়ে নেয় সেটা ভিন্ন। সেটা খেয়ো না। কারণ, সেটা সে নিজের জন্য শিকার করেছে এমন আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য কুকুর এর সাথে মিশে শিকার করলেও সেটা খেয়ো না। [বুখারী ৫৪৭৫; মুসলিম: ১৯২৯]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এখানে ঐ সমস্ত জিনিসের কথা উল্লেখ হয়েছে, যেগুলি বৈধ বা হালাল। শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, প্রত্যেক হালাল জিনিস পবিত্র ও উপাদেয়। আর প্রত্যেক হারাম জিনিস নোংরা ও অপবিত্র।
[২] جَوَارِحٌ শব্দটি جاَرِحٌ শব্দের বহুবচন, যা উপার্জনকারী অর্থে ব্যবহার হয়। এখানে এর ভাবার্থ হল, শিকারী কুকুর, বাজপাখী, শিকরে পাখী, চিতা এবং অন্যান্য শিকারী পাখী ও হিংস্রজন্তু। مكلبين এর সারমর্ম হল; শিকারের উপর ছাড়ার পূর্বে যাকে শিকার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন, যখন শিকার করার জন্যে তাকে প্রেরণ করা হবে, তখন সে দৌড়ে যাবে। আবার যখন তাকে থামতে বলা হবে, তখন সে থেমে যাবে। যখন তাকে ডাকা হবে, তখন সে (কাল বিলম্ব না করে) ফিরে আসবে।
[৩] (উপরে উল্লিখিত) এই শিক্ষিত শিকারী জন্তুর শিকার করা পশু-পাখী দুটি শর্ত সাপেক্ষে খাওয়া হালাল বা বৈধ। (ক) শিকারে প্রেরণ করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। (খ) শিকারী পশু শিকার করা জিনিস (পশু বা পাখী) মালিকের জন্য রেখে দিবে এবং তার অপেক্ষা করবে; নিজে তা ভক্ষণ করবে না। যদিও সে শিকারকৃত পশু বা পাখীকে মেরে ফেলেছে, তবুও তা খাওয়া হালাল এই শর্তে যে, সে যেন শিকারের ব্যাপারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং তাকে প্রেরণ করার সময় তার সাথে অন্য কোন পশু শরীক না থাকে। (সহীহ বুখারী ‘যবেহ’ অধ্যায় ও মুসলিম ‘শিকার’ অধ্যায়)
[৪] আহলে কিতাবদের যবেহকৃত সেই পশু হালাল বা বৈধ যার রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছে। অন্যথা তাদের মেশিন দ্বারা যবেহকৃত পশু হালাল নয়। কেননা তাতে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার যে শর্ত রয়েছে তা বিলুপ্ত।
[৫] এখানে আহলে কিতাবদের (ঈয়াহুদী ও খ্রিষ্টান) মহিলাকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়ার সাথে সাথে প্রথমতঃ এই শর্ত লাগানো হয়েছে যে, তাকে পবিত্রা (সতী) হতে হবে; যে শর্ত আজকাল অধিকাংশ আহলে কিতাবদের মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়তঃ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, যারা ঈমানের সাথে কুফরী (অস্বীকার) করে, তাদের আমল নষ্ট হয়ে যায়। এখানে সতর্ক করা উদ্দেশ্য যে, এমন মহিলাকে বিবাহ করার ফলে যদি ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে খুবই ক্ষতির (সম্পদ) ক্রয় করা হবে। বর্তমানে আহলে কিতাবদের মহিলাদের বিবাহ করার ফলে ঈমান যে চরমতম ক্ষতির শিকার হবে, তা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না। অথচ ঈমান বাঁচানো ফরয কর্তব্য। একটি অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মের জন্য ফরয কর্মকে বিপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন করা যেতে পারে না। কেননা এই অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মটি ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মে বাস্তবায়ন করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উপরে উল্লিখিত দু’টি জিনিস (অসতীত্ব ও ঈমানের সাথে কুফরী) বিলুপ্ত না হয়েছে। এ ছাড়া অধুনা কালের আহলে কিতাবরা তাদের ধর্মীয় ব্যাপারে অসচেতন; বরং সম্পর্কহীন ও বিদ্রোহী। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা কি আসলেই আহলে কিতাবের মধ্যে গণ্য হবে? (আল্লাহই ভালো জানেন।)
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
হালাল ও হারামের বর্ণনা দেয়ার পর এটাকে পরিষ্কার রূপে বর্ণনা করার জন্যে আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, সমুদয় পবিত্র বস্তু হালাল। তারপর তিনি ইয়াহূদ ও নাসারাদের যবেহকৃত জীবগুলোর বৈধতার বর্ণনা দিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবূ উমামাহ (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে যুবাইর (রঃ), ইকরামা (রঃ), আতা’ (রঃ), হাসান বসরী (রঃ), মাকহ্ল (রঃ), ইবরাহীম নাখঈ (রঃ), সুদ্দী (রঃ), মুকাতিল (রঃ) এবং ইবনে হাইয়ানও (রঃ) একথাই বলেন যে, এখানে এর ভাবার্থ হচ্ছে তাদের স্বহস্তে যবেহকৃত জানোয়ার। এটা খাওয়া মুসলমানদের জন্যে হালাল। কেননা, তারাও গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করাকে নাজায়েয মনে করে এবং যবেহ করার সময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেয় না। যদিও আল্লাহ সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে অমূলক, যা থেকে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা পবিত্র ও বহু। ঊর্ধ্বে। সহীহ হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমি চর্বি ভর্তি একটি মশক প্রাপ্ত হই। আমি ওটাকে নিজের অধিকারে নিয়ে নিই এবং বলি, আজ আমি কাউকেও এর অংশ দেবো না। তারপর এদিক ওদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। হঠাৎ দেখি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং মুচকি হাসছেন। এ হাদীসটি দ্বারা এ দলীলও গ্রহণ করা হয়েছে সে, গনীমতের মধ্য হতে পানাহারের কোন প্রয়োজনীয় জিনিস বন্টনের পূর্বেও নিয়ে নেয়া জায়েয। এ দলীল এ হাদীসের দ্বারা পরিষ্কার রূপে প্রকাশ পেয়েছে। তিন মাযহাবের ফকীহগণ মালেকীদের সামনে এ সনদ পেশ করে বলেছেনঃ তোমরা যে বলে থাক, আহলে কিতাবের নিকট যে খাদ্য হালাল সেই খাদ্য আমাদের নিকটও হালাল- এটা ভুল। দেখো, ইয়াহূদীরা চর্বিকে তাদের জন্যে হারাম মনে করে থাকে, অথচ মুসলমান ওটা গ্রহণ করছে। কিন্তু তাদের এ কথা বলা ঠিক নয়। কেননা, ওটা ছিল একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া এটাও হতে পারে যে, ওটা ছিল এমন চর্বি যা ইয়াহূদীরাও তাদের জন্যে হালাল মনে করে থাকে। অর্থাৎ পিঠের চর্বি, নাড়ি সংলগ্ন চর্বি এবং হাড়ের সাথে লেগে থাকা চর্বি। এর চেয়ে আরও বেশী প্রমাণযুক্ত ঐ দলীলটি যাতে রয়েছে যে, খায়বারবাসী সদ্য ভাজা একটি ছাগী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে উপঢৌকন দিয়েছিল যার একটি কাঁধে তারা বিষ মিশ্রিত করেছিল। কেননা, তাদের জানা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাদের গোশত পছন্দ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ গোশত মুখে দিয়ে দাঁত দ্বারা কাটা মাত্রই আল্লাহর নির্দেশক্রমে ঐ কাঁধ বলে উঠলোঃ “আমাতে বিষ মিশ্রিত রয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ ওটা থুথু করে ফেলে দিলেন। ওর ক্রিয়া তাঁর সামনের দাঁতে রয়েও গেল। আহারে তার সাথে হযরত বাসার ইবনে মারূরও (রাঃ) ছিলেন। ঐ বিষক্রিয়াতেই তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হলেন। এর প্রতিশোধ হিসেবে বিষ মিশ্রিতকারিণী মহিলাটিকেও হত্যা করা হলো, যার নাম ছিল যয়নব। এটা প্রমাণরূপে স্বীকৃত হওয়ার কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বয়ং সঙ্গীগণসহ ঐ গোশত ভক্ষণের দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এবং তারা যে চর্বিকে হারাম মনে করতো তা তারা বের করে ফেলেছে কি-না সেটাও তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন না। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, একজন ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দাওয়াত দেয় এবং তার সামনে যবের রুটি এবং পুরাতন শুষ্ক চর্বি হাযির করে। হযরত মাকহুল (রঃ) বলেন যে, যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া না হবে এটা খাওয়া হারাম করার পর আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের উপর দয়া পরবশ হয়ে তা মানসূখ বা রহিত করতঃ আহলে কিতাবের যবেহকৃত জন্তু তাদের জন্যে হালাল করে দেন। এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, আহূলে কিতাবের যবেহকৃত জন্তু তাদের জন্যে হালাল করার দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয় না যে, যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম নেয়া হবে না সেটাও হালাল হবে। কেননা, তাদের মধ্যে মুশরিকও ছিল, যারা যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিতো না, এমনকি তাদের গোশত ভক্ষণ যবেহর উপরই নির্ভরশীল ছিল না। বরং তারা মৃত জন্তুরও গোশত ভক্ষণ করতো। কিন্তু আহলে কিতাব এদের বিপরীত এবং এদের মত আরও কয়েকটি সম্প্রদায় রয়েছে। যেমন সামেরাহ, সায়েবাহ এবং ইবরাহীম (আঃ) ও শীষ (আঃ) প্রমুখ গয়গম্বরদের ধর্মের দাবীদার। যেমন আলেমদের দু’টি উক্তির মধ্যে একটি উক্তি রয়েছে। আর আরবের খ্রীষ্টান যেমন বানূ তাগলিব, তানূখ, বাহরা, জুযাম, লাখম, আমেলা এবং তাদের ন্যায় আরও। জমহুরের মতে এদের হাতে যবেহকত জানোয়ারের গোশত খাওয়া চলবে না। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা বা তাগলিবের হাতে যবেহকৃত জানোয়ারের গোশত ভক্ষণ করো না। কেননা, তারা তো শুধুমাত্র মদ্যপান ছাড়া খ্রীষ্টানদের নিকট হতে আর কিছুই গ্রহণ করেনি।”
তবে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ)-এর মতে বান্ তাগলিবের খ্রীষ্টানদের হাতে যবেহকৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণে কোন দোষ নেই। এখন বাকি থাকলো মাজুসীদের ব্যাপারটা, তাদেরকে খ্রীষ্টানদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে তাদের অনুগামী করতঃ তাদের নিকট জিযিয়া আদায় করা হলেও তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করা এবং তাদের যবেহকৃত জীবের গোশত ভক্ষণ করা জায়েয নয়। হ্যাঁ, তবে ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর সঙ্গী সাথীদের অনুসারী আবু সউর ইবরাহীম ইবনে খালিদ কালবী এর বিপরীত মত পোষণ করেন। যখন তিনি এ কথা বলেন এবং জনগণের মধ্যে এটা ছড়িয়ে পড়ে তখন ফকীহগণ এ কথার ভীষণভাবে প্রতিবাদ করেন। এমনকি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) তো একথাও বলে ফেলেন যে, এ মাসআলায় তিনি নিজের নামের মতই বটে অর্থাৎ বলদের পিতা। আবু সাউর একটি সাধারণ হাদীসকে সামনে রেখে একথা বলে দিয়েছেন যে, হাদীসে রয়েছেঃ “তোমরা মাজুসীদের সাথে আহলে কিতাবের ন্যায় ব্যবহার কর।” কিন্তু প্রথমতঃ এ বর্ণনা তো এ শব্দগুলো দ্বারা সাব্যস্তই নয়। দ্বিতীয়তঃ এ বর্ণনাটি মুরসাল’। হ্যাঁ, তবে সহীহ বুখারীতে শুধু এটুকু তো অবশ্যই রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হিজরের মাজুসীদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহণ করেছিলেন। এসব ছাড়া আমরা বলি যে, আবু সাউরের পেশকৃত হাদীসকে যদি আমরা মেনেও নেই তথাপি আমরা বলতে পারি যে, এর ‘উমুম’ দ্বারাও এ আয়াতের মাফহূম-মুখালিফের দলীলের মাধ্যমে আহলে কিতাব ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যবেহকৃত জন্তু আমাদের জন্যে হারাম সাব্যস্ত হচ্ছে।
এরপর বলা হচ্ছে-তোমাদের (মুসলমানদের) যবেহকৃত জীব তাদের (আহলে কিতাবদের) জন্যে হালাল। অর্থাৎ হে মুসলমানরা! তোমরা আহলে কিতাবদেরকে তোমাদের যবেহকৃত জীবের গোশত খাওয়াতে পার। এটা এ আমরের খবর নয় যে, তাদের ধর্মে তাদের জন্যে তোমাদের যবেহকৃত প্রাণী হালাল। হ্যা, তবে খুব বেশী বলা গেলে এটুকুই বলা যেতে পারেঃ এটা এ কথারই খবর হবে- তাদেরকেও তাদের কিতাবে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যে জীবকে আল্লাহর নামে যবেহ্ করা হয়েছে তা তারা খেতে পারে। এ ব্যাপারে এটা সাধারণ কথা যে, যবেহকারী তাদের ধর্মের অনুসারীই হোক বা অন্য কেউ হোক। কিন্তু প্রথম উক্তিটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী সুন্দর অর্থাৎ তোমাদের জন্যে অনুমতি রয়েছে যে, তোমরা আহ্লে কিতাবদেরকে তোমাদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণ করাও, যেমন তোমরা তাদের যবেহকৃত জন্তুর গোশত খেতে পার। এটা যেন অদল বদলের হিসেবে বলা হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালকে নিজের বিশেষ জামা দ্বারা কাফন পরিয়েছিলেন। কোন কোন গুরুজন যার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাকে নিজের জামাটি প্রদান করেছিল। তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বিনিময়ে তার কাফনের জন্যে স্বীয় জামাটি প্রদান করেছিলেন। হ্যাঁ, তবে একটি হাদীসে রয়েছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা মুমিন ছাড়া আর কারও সাথে উঠা বসা করো না এবং মুত্তাকীদের ছাড়া আর কাউকেও নিজেদের খাদ্য খেতে দিও না।” এ হাদীসটিকে এ অদল বদলের বিপরীত মনে করা ঠিক হবে না। কেননা, হতে পারে যে, মুস্তাহাব হিসেবে এ হুকুম দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
ঘোষিত হচ্ছে-সতী সাধ্বী মুসলিম নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে। এটা অবতরণিকা হিসেবে বলা হয়েছে। এ জন্যেই এর পরই বলা হচ্ছে-তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের সতী সাধ্বী নারীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে। এ উক্তিও রয়েছে যে, (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে স্বাধীনা নারীগণ। অর্থাৎ দাসী যেন না হয়। এ উক্তিটি হযরত মুজাহিদ (রঃ)-এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। মুজাহিদ (রঃ)-এর উক্তির শব্দগুলো হচ্ছে নিম্নরূপঃ
(আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে (আরবী) বা স্বাধীনা নারীগণ। ভাবার্থ যখন এটা হবে যে, দাসীরা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তখন এ অর্থও নেয়া যেতে পারে যে, সতী সাধ্বী নারীগণকে বিয়ে করা হালাল। কেননা, তার থেকে এ শব্দগুলো দ্বারাই অন্য একটি বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। জমহুরও এ কথা বলেন। আর এটাই সঠিকতমও বটে। এটা না হলে যিম্মীয়া এবং অসতী নারীও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে অবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিগড়ে যাবে এবং তার “শুধু পেট ভর্তি ও খারাপ পরিমাপ”-এ প্রবাদ বাক্যের নায়কে পরিণত হবে। সুতরাং এটাই সঠিক মনে হচ্ছে যে, এখানে (আরবী)-এর ভাবার্থ হবে ঐ সব নারী যারা সতী সাধ্বী ও ব্যভিচার থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। যেমন অন্য আয়াতে (আরবী) -এর সাথে (আরবী) শব্দগুলো রয়েছে। আলেম ও মুফাসৃসিরগণের মধ্যেএ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, আহলে কিতাবদের স্বাধীন ও দাসী সকল সতী সাধ্বী নারীই কি এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত? তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে পূর্ববর্তী গুরুজনদের একটি দলের উক্তি নকল করা হয়েছে। তারা বলেন যে, -এর অর্থ হচ্ছে সতী সাধ্বী। একটি উক্তি এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে যিম্মীয়া নারীগণ, স্বাধীনা নারীগণ। নয়। এর দলীল হিসেবে। (আরবী) অর্থাৎ “যারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর।” (৯:২৯)-এ আয়াতটি পেশ করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) খ্রীষ্টান নারীদেরকে বিয়ে করা নাজায়েয মনে করতেন এবং বলতেনঃ তারা বলে যে তাদের প্রভু হচ্ছে হযরত ঈসা (আঃ), এর চেয়ে বড় শিরক আর কি হতে পারে? আর তারা যখন মুশরিক রূপে পরিগণিত হলো তখন কুরআন কারীমের। (আরবী) (অর্থাৎ “মুশরিকা নারীগণ যে পর্যন্ত ঈমান না আনে সে পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না।” (২৪ ২২১)-এ আয়াতটি উপর অবশ্যই প্রযোজ্য হবে।
ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যে, যখন মুশরিকদেরকে বিয়ে না করার হুকুম নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কিরাম তা থেকে বিরত থাকেন। অতঃপর যখন আহলে কিতাবের সতী সাধ্বীদেরকে বিয়ে করার অনুমতি যুক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন জনগণ তাদেরকে বিয়ে করেন। সাহাবীদের একটি দল এ আয়াতটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করতঃ খ্রীষ্টান নারীদেরকে বিয়ে করেন এবং এটাকে কোন অপরাধমূলক কাজ মনে করেননি। তাহলে এটা যেন সূরায়ে বাকারায় নিষেধযুক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু পরে অন্য আয়াত একে বিশিষ্ট করে দিয়েছেন। এটা ঐ সময় প্রযোজ্য হবে যখন মেনে নেয়া হবে যে, নিষেধযুক্ত আয়াতের মধ্যে এটাও শামিল ছিল। নচেৎ এ দুটি আয়াতের মধ্যে কোনই বৈপরীত্ব নেই। কেননা, আরও বহু আয়াতে আলে কিতাবদেরকে মুশরিকদের হতে পৃথকরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ (আরবী) (৩:২০) আয়াত দু’টিতে তাদেরকে মুশরিকদের হতে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা তাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট মহর প্রদান কর। অর্থাৎ যেহেতু তারা নিজেদেরকে নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সেহেতু তোমরা তাদেরকে তাদের ন্যায্য মহর সন্তুষ্টচিত্তে দিয়ে দাও। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), আমির শা’বী (রঃ), ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ)-এর ফতওয়া এই যে, যদি কোন লোক কোন নারীকে বিয়ে করে এবং সহবাসের পূর্বে তার স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং স্বামী তার স্ত্রীকে যে মহর প্রদান করেছে তা তার নিকট থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। (তাফসীরে ইবনে জারীর)
বলা হচ্ছে-তোমরা তাদেরকে পত্নী রূপে গ্রহণ করে নাও, না প্রকাশ্যে ব্যভিচার কর, আর না গোপন প্রণয় কর। সুতরাং নারীদের জন্যে যেমন পবিত্রতা ও সতীত্বের শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তেমনই পুরুষদের জন্যেও এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আর সাথে সাথেই বলা হয়েছে যে, তারা যেন না প্রকাশ্য ব্যভিচারী হয়, না এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে এবং না বিশেষ সম্পর্কের কারণে হারাম কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সুরায়ে নিসার মধ্যে এরূপই নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদও (রঃ) এদিকেই গেছেন যে, ব্যভিচারিণী নারীর সাথে তাওবা করার পূর্বে কোন সৎ লোকের বিবাহ কখনও জায়েয নয়। আর তাঁর নিকট পুরুষদের ব্যাপারেও এ হুকুমই প্রযোজ্য যে, কোন ব্যভিচারী পুরুষের সাথে কোন সতী সাধ্বী নারীর বিবাহ জায়েয নয় যে পর্যন্ত না সে। খাটি অন্তরে তাওবা করে এবং জঘন্য কাজ থেকে বিরত হয়। তাঁর দলীল হিসেবে একটি হাদীসও রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, ব্যভিচারী লোক চাবুক দ্বারা প্রহৃত হওয়ার পর একমাত্র তার মত নারীকেই বিয়ে করতে পারে। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার ফারূক (রাঃ) একবার বলেনঃ “কোন মুসলমান যদি ব্যভিচার করে তবে আমি চাই যে, কোন সতী সাধ্বী মুসলমান নারীর সাথে তার বিয়ে কখনও হতে দেবো না।” হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! শিরকের পাপ তো এর চেয়ে অনেক বড় তথাপি মুশরিকদের তাওবাও তো ককূল হয়ে থাকে।”
এ মাসআলাকে আমারা (আরবী) (২৪:৩)-এ আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করবো। আয়াতের শেষে বলা হয়েছে-কাফিরদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং পরকালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।