أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٧٨)-৩৮০
www.motaher21.net
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلةِ
যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও,
When you stand for (intend to offer) the Salah,
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৬
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَ اَیْدِیَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَ امْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَ اَرْجُلَكُمْ اِلَى الْكَعْبَیْنِؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْاؕ وَ اِنْ كُنْتُمْ مَّرْضٰۤى اَوْ عَلٰى سَفَرٍ اَوْ جَآءَ اَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَآئِطِ اَوْ لٰمَسْتُمُ النِّسَآءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَ اَیْدِیْكُمْ مِّنْهُؕ مَا یُرِیْدُ اللّٰهُ لِیَجْعَلَ عَلَیْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّ لٰكِنْ یُّرِیْدُ لِیُطَهِّرَكُمْ وَ لِیُتِمَّ نِعْمَتَهٗ عَلَیْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দু’টি গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। যদি তোমরা ‘জানাবাত’ অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।
৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
শানে নুযূল:
৫ম অথবা ৬ষ্ঠ হিজরীতে অনুষ্ঠিত গাযওয়াতুল মুরাইসি বা বানী মুসতালিক যুদ্ধে আয়িশাহ (রাঃ) এর গলার হার হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা মদীনায় প্রবেশ করার উপক্রম ছিলাম তখন আমার গলার হারটি বায়দা নামক স্থানে পড়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় বাহন বসালেন এবং নামলেন। পরে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যান। ইত্যবসরে আবূ বাকর (রাঃ) আমার কাছে এসে আমাকে শক্তভাবে আঘাত করলেন এবং বললেন: একটি হারের কারণে মানুষকে আটকে রেখেছ? তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সজাগ হলেন এবং ফজরের সালাতের সময় হল; কিন্তু পানি খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হল। সাহাবী উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ) বললেন: হে আবূ বাকরের পরিবার! আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য তোমাদেরকে কল্যাণময় বানিয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৪)
অত্র আয়াতে সালাত কবুল হবার পূর্বশর্ত ওযূর পদ্ধতি এবং ওযূর পানির অনুপস্থিতিতে তায়াম্মুমের বিধান ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতে ওযূর ছয়টি ফরয উল্লেখ করা হয়েছে:
১. সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা। ২. উভয় হাত কুনই পর্যন্ত ধৌত করা। ৩. সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। ৪. উভয় পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।
এছাড়াও দুটি ফরয রয়েছে; ৫. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং ৬. একটি অঙ্গ ধৌত করার পর দ্বিতীয় অঙ্গ ধৌত করতে দেরি না করা এবং এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
এসব হল ওযূর ফরয। অসংখ্য সহীহ হাদীসে ওযূর পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত।
(اِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ)
‘যখন তোমরা সালাতে দাড়াঁনোর ইচ্ছা করবে’ অর্থাৎ যখন সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে তখন ওযূবিহীন থাকলে ওযূ কর। কেননা ওযূ ছাড়া সালাত কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
لَا يَقْبَلُ اللَّهُ صَلَاةَ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّي يَتَوَضَّأَ
তোমাদের কারো ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার সালাত কবূল করবেন না। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯৫৪) ওযূ করার সময় অবশ্যই ভালভাবে খেয়াল করতে হবে যে, ভালভাবে ওযূ হচ্ছে কি- না, প্রত্যেক অঙ্গ যথাযথভাবে ধৌত করা হচ্ছে কি- না। কারণ যারা ভালভাবে ওযূ করে না তাদের ধমক দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنْ النَّارِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا
যারা ওযূ করার সময় ভালভাবে পায়ের গোড়ালী ধৌত করে না তাদের জন্য জাহান্নাম, এ কথাটি দুই অথবা তিনবার বললেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬০)
এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে এবং অধিকাংশ আলেম সমাজ বলেন, ওযূ করার সময় নিয়ত করা আবশ্যক। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
প্রত্যেক আমল (সঠিক হওয়া না হওয়া) নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (সহীহ বুখারী হা: ০১)
(فَاغْسِلُوْا وُجُوْھَکُمْ)
‘তোমাদের চেহারা ধৌত কর’। চেহারার সীমারেখা হল- কপালের যেখান থেকে মাথার চুল শুরু হয়েছে সেখান থেকে দাড়ি গজানোর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। আর প্রশস্ততায় এক কান হতে অন্য কান পর্যন্ত। চেহারা ধৌত করার সময় দাড়ি ধৌত ও খিলাল করা কর্তব্য তা যতই লম্বা হোক না কেন।
(وَاَیْدِیَکُمْ اِلَی الْمَرَافِقِ)
‘হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে’ অর্থাৎ কনুইসহ উভয় হাত ধৌত করা ফরয। আরো বেশি ধৌত করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে তাদের ওযূর অঙ্গের শুভ্রতা দেখে ডাকা হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তার শুভ্রতা বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন তা করে। (সহীহ বুখারী হা: ১৩৬)
(وَامْسَحُوْا بِرُؤُوْسِكُمْ)
‘তোমাদের মাথা মাসেহ কর’ এখানে মাথা সম্পূর্ণ মাসাহ করতে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওযূর পদ্ধতির যে বিবরণ পাওয়া যায় তাতে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করার কথা রয়েছে। “তারপর দু’হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করতেন। এ মাসাহের সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের তালুসহ আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে উভয় হাত কপালের পার্শ্বে রেখে মাথার ওপর দিয়ে পিছনের দিকে চুলের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পিছন হতে উভয় হাত টেনে ঐ স্থানে পৌঁছাতেন যেখান হতে আরম্ভ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৮৫) সুতরাং মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা সঠিক নয়, বরং সুন্নাতী নিয়ম হল পূর্ণ মাথা মাসাহ করা।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
(وَاِنْ کُنْتُمْ جُنُبًا)
‘তোমরা যদি অপবিত্র থাক’অপবিত্রতা বলতে স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সহবাস ও মহিলাদের মাসিক ও নিফাসজনিত অপবিত্রতা।
এ জাতীয় অপবিত্রতা হলে অথবা মহিলাদের মাসিক বা নিফাস বন্ধ হয়ে গেলে তখনই গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা জরুরী। পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করতে হবে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (আইসারুত তাফাসীর, ১/৫০৫) কেউ যদি এমন অসুস্থ হয় যে, পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি হবে অথবা সফরে থাকে এবং পানি না পায় বা প্রস্রাব পায়খানা থেকে আগমন করে অথবা স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে কিন্তু পানি না পায় তাহলে তায়াম্মুম করবে, এতে পবিত্র হয়ে যাবে। তায়াম্মুমের নিয়ম হল: বিসমিল্লাহ বলে উভয় হাত একবার পবিত্র মাটিতে মেরে মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একদা উমার (রাঃ)-কে বললেন: আপনার কি মনে আছে যে, আমি ও আপনি সফরে ছিলাম এবং উভয়েই অপবিত্র হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সালাত আদায় করলেন না। আমি মাটিতে গড়াগড়ি করলাম ও সালাত আদায় করলাম। তারপর আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বললেন: এটিই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল- এ কথা বলে তিনি তার দু’হাতের তালু মাটিতে মারলেন এবং ফুঁ দিয়ে ঝাড়লেন। তারপর মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয় মাসাহ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৮) এ সম্পর্কে সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(لٰمَسْتُمُ النِّسَا۬ئَ)
‘অথবা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলন কর’ – لَمسٌ এর শাব্দিক অর্থ হল স্পর্শ করা। এখানে অর্থ হল স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করা। অর্থাৎ কেউ স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করার পর পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নেবে, এতে সে পবিত্র হয়ে যাবে এবং সালাত আদায় করতে পারবে।
(مَا یُرِیْدُ اللہُ لِیَجْعَلَ عَلَیْکُمْ مِّنْ حَرَجٍ)
‘আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা বিধি-বিধান দিয়ে মানুষের ওপর সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না বরং তিনি চান পবিত্র করতে ও তার নেয়ামতরাজি পূর্ণ করে দিতে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ)
“তিনি তোমাদের ওপর দীনের ব্যাপারে কোন সংর্কীণতা সৃষ্টি করেননি।”(সূরা হজ্জ ২২:৭৮)
হাদীসে এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ
দীন সহজ, কেউ দীনের ব্যাপারে কঠোরতা করলে দীন তার ওপর জয়ী হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৯)
হাদীসে আরো এসেছে: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একজন মুসলিম বান্দা যখন ওযূ করার সময় তার চেহারা ধৌত করে তখন তার চেহারা থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার চোখ দ্বারা করেছে। যখন হাত ধৌত করে তখন হাত দ্বারা যত গুনাহ করেছে তা বের হয়ে যায়। যখন পা ধৌত করে তখন পা দ্বারা যত গুনাহ হয়েছে সব বের হয়ে যায়, এমনকি সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৬০০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা, ওযূর পদ্ধতি ও বিকল্প পদ্ধতি তায়াম্মুম সম্পর্কে জানতে পারলাম।
২. পানির অনুপস্থিতিতে বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে তায়াম্মুম।
৩. ওযূ ও তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে নিয়ত করা আবশ্যক।
৪. ওযূর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যক।
৫. বিনা পবিত্রতায় সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না।
৬. ওযূ নষ্ট হয়ে গেলেই ওযূ করতে হবে এমন নয়, বরং সালাতের জন্য সালাতে দাঁড়ানোর পূর্বে ওযূ করতে হবে। তবে সর্বদা ওযূ অবস্থায় থাকতে পারলে উত্তম।
৭. ছোট ও বড় সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনে তায়াম্মুমের পদ্ধতি একটিই, তাহল- মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করা।
৮. ওযূর ক্ষেত্রে সমস্ত মাথা মাসাহ করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতি।
৯. এসব বিধি বিধান দেয়ার হিকমত জানলাম, তাহল- আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দেয়া ও অপবিত্রতার কলুষতা থেকে পবিত্র করা।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:২৪) নবী ﷺ এ হুকুমটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায়, কুল্লি করা ও নাক সাফ করা ও মুখ ধোয়ার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মুখমণ্ডল ধোয়ার কাজটি কখনই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর কান যেহেতু মাথার একটি অংশ তাই মাথা মসেহ করার মধ্যে কানের ভেতরের ও বাইরের উভয় অংশও শামিল হয়ে যায়। তাছাড়া অযু শুরু করার আগে দু’হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। কারণ যে হাত দিয়ে অযু করা হচ্ছে সে হাতেরই তো আগে পাক-পবিত্র হবার প্রয়োজন রয়েছে।
টিকা:২৫) স্ত্রী সহবাসের কারণে ‘জানাবাত ’ হোক বা স্বপ্নে বীর্য স্খলনের কারণে হোক উভয় অবস্থায়ই গোসল ওয়াজিব। এ অবস্থায় গোসল ছাড়া নামায পড়া বা কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়।
সূরা আন্ নিসার :-
টিকা:৬৭:- কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ হচ্ছে, ‘জুনুবান’। এর মানে হচ্ছে, দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা। এ থেকে ‘আজনবী’ (অপরিচিত) শব্দটি বের হয়েছে। শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত অর্থ হচ্ছে, যৌন প্রয়োজন পূর্ণ করার এবং স্বপ্নের মধ্যে বীর্যপাত হবার ফলে যে, ‘নাজাসাত’ বা নাপাকী সৃষ্টি হয়। কারণ এর ফলে মানুষ তাহারাত বা পবিত্রতা শূন্য হয়ে পড়ে।
টিকা:৬৮ :- ফকীহ ও মুফাস্সিরগণের একটি দল এই আয়াতের অর্থ এভাবে গ্রহণ করেছেন যে, জুনুব (নাপাক) অবস্থায় মসজিদে না যাওয়া উচিত। তবে কোন কাজে মসজিদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আনাস ইবনে মালিক, হাসান বসরী, ইবরাহীম নাখঈ প্রমুখ ফকীহগণ এই মত অবলম্বন করেছেন। অন্য এক দলের মতে এর অর্থ হচ্ছে সফর। অর্থাৎ যদি কেউ সফরে থাকে এবং এ অবস্থায় সে জুনুবী হয়ে পড়ে তাহলে তায়াম্মুম করতে পারে। আর মসজিদের ব্যাপারে তাদের মত হচ্ছে এই যে, জুনুবীর জন্য অযু করে মসজিদে বসে থাকা জায়েয। এই মত অবলম্বন করেছেন হযরত আলী, ইবনে আব্বাস, সাঈদ ইবনে জুবাইর এবং অন্যান্য কতিপয় ফকীহ। যদিও এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত যে, কোন ব্যক্তি যদি সফল অবস্থায় জুনুবী হয়ে পড়ে এবং তার পক্ষে গোসল করা সম্ভবপর না হয়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারে। কিন্তু প্রথম দলটি এ বিষয়টি গ্রহণ করে হাদীস থেকে আর দ্বিতীয় দলটি এর ভিত্তি রাখেন কুরআনের উপরোল্লিখিত আয়াতের ওপর।
টিকা:২৬) সূরা আন নিসার :-
টিকা:৬৯:- এখানে কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে ‘লামাস’। ‘লামাস’ অর্থ স্পর্শ করা। ফকীহগণ এই ‘স্পর্শ করা’ শব্দটির অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন। হযরত আলী, ইবনে আব্বাস, আবু মূসা আশআরী, উবাই ইবনে কা’ব, সাইদ ইবনে জুবাইর, হাসান বসরী এবং বিভিন্ন ইমামদের মতে এর অর্থ হচ্ছে সহবাস। ইমাম আবু হানীফা, তাঁর শাগরিদবৃন্দ ও ইমাম সুফিয়ান সওরীও এই মতটি অবলম্বন করেছেন। এর বিপরীত মত গ্রহণ করেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর। এছাড়াও কোন কোন রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, হযরত উমর ইবনে খাত্তাবেরও এই অভিমত ছিল। অর্থাৎ তিনি এর অর্থ কেবল মাত্র ‘স্পর্শ করা’ বা ‘হাত লাগানো’ নিয়েছেন। ইমাম শাফেঈও এ মতটি গ্রহণ করেছেন। আবার কোন কোন ইমাম মাঝামাঝি পথও অবলম্বন করেছেন। যেমন ইমাম মালেকের মতে, যদি নারী বা পুরুষ পরস্পরকে স্পর্শ করে যৌন আবেগ সহকারে, তাহলে তাদের অযু ভেঙে যাবে এবং নামাযের জন্য নতুন করে অযু করতে হবে। কিন্তু যৌন আবেগের তাড়না ছাড়াই যদি তাদের দেহ পরস্পরকে স্পর্শ করে তাহলে এতে কোন ক্ষতি নেই।
টিকা:৭০:- এই নির্দেশটির বিস্তারিত অবস্থা হচ্ছে এই যে, যদি কোন ব্যক্তি অযুবিহীন অবস্থায় থাকে অথবা তার গোসলের প্রয়োজন হয় এবং পানি না পাওয়া যায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারে। যদি সে অসুস্থ হয় এবং গোসল বা অযু করলে তার জন্য ক্ষতিরআশঙ্কা থাকে, তাহলে পানি থাকা সত্ত্বেও সে তায়াম্মুমের অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
তায়াম্মুম অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা পাওয়া গেলেও তার ব্যবহার সম্ভব না হয়, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি ব্যবহার করার সংকল্প করা।
তায়াম্মুমের পদ্ধতির ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। একটি দলের মতে এর পদ্ধতি হচ্ছে, একবার মাটির ওপর দুই হাত ঘসে নিয়ে মুখ মণ্ডলের ওপর বুলিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার দুই হাত ঘসে নিয়ে তা দুই হাতের কুনই পর্যন্ত বুলিয়ে নিতে হবে। এটিই ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালেক এবং অধিকাংশ ফকীহের মাযহাব। আর সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে থেকে হযরত আলী, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, হাসান বসরী, শা’বী সালেম ইবনে আবদুল্লাহ এবং আরো অনেকে এই মত পোষন করতেন। দ্বিতীয় দলের মতে, মাটিতে কেবলমাত্র একবার হাত ঘসে নেয়াই যথেষ্ট, সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর বুলানো যাবে এবং তারপর কব্জি পর্যন্ত দুই হাতের ওপরও বুলানো যাবে। কনুই পর্যন্ত বুলাবার প্রয়োজন হবে না। এটি আতা, মাকহূল, আওযাঈ ও আহমাদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ ফকীহগণের মাযহাব। সাধারণত আহলে হাদীসগণও এই মতের প্রবক্তা।
তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত ঘসা অপরিহার্য নয়। যে জায়গার ওপর ধূলো পড়ে আছে এবং শুকনো মাটি সম্বলিত যেকোনো জায়গায় হাত ঘসে নেয়া এজন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
অনেকে প্রশ্ন করেন, এভাবে মাটিতে হাত ঘসে সেই হাত চেহারা ও হাতের ওপর বুলালে তাহারাত তথা পাক-পবিত্রতা অর্জিত হয় কিভাবে? কিন্তু আসলে এটি মানুষের মধ্যে তাহারাতের অনুভূতি এবং নামাযের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্বিক কৌশল বিশেষ। এতে যে লাভটুকু অর্জিত হয় তা হচ্ছেঃ দীর্ঘদিন পর্যন্ত পানি ব্যবহার সমর্থ্য না হলেও মানুষের মধ্যে তাহারাতের অনুভূতি জাগ্রত থাকবে। শরীয়াত পাক-পবিত্রতার যে আইন প্রবর্তন করেছে সে বরাবর তা মেনে চলবে। তার মন থেকে নামায পড়ার যোগ্য হবার অবস্থা ও নামায পড়ার যোগ্য না হবার অবস্থায় মধ্যকার পার্থক্যবোধ কখনো বিলুপ্ত হবে না।
টিকা:২৭) আত্মার পবিত্রতা যেমন একটি নিয়ামত ঠিক তেমনি শরীরের পবিত্রতাও একটি নিয়ামত। আর মানুষের ওপর আল্লাহর নিয়ামত তখনই সম্পূর্ণ হতে বা পূর্ণতা লাভ করতে পারবে যখন সে আত্মা ও শরীর উভয়ের তাহারাত ও পাক-পবিত্রতা অর্জনের জন্য পূর্ণ হেদায়াত লাভ করতে সক্ষম হবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 6
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلةِ
When you stand for (intend to offer) the Salah,
5:6
The Order to Perform Wudu
Allah said,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ
O you who believe!
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلةِ
When you stand for (intend to offer) the Salah,
Allah commanded performing Wudu for the prayer. This is a command of obligation in the case of impurity, and in the case of purity, it is merely a recommendation.
It was said that in the beginning of Islam, Muslims had to perform Wudu for every prayer, but later on, this ruling was abrogated.
Imam Ahmad bin Hanbal recorded that Sulayman bin Buraydah said that his father said,
“The Prophet used to perform Wudu before every prayer. On the Day of Victory, he performed Wudu and wiped on his Khuffs and prayed the five prayers with one Wudu.
Umar said to him, `O Messenger of Allah! You did something new that you never did before.’
The Prophet said,
إني عمدا فعلته يا عمر
`I did that intentionally O Umar!”‘
Muslim and the collectors of the Sunan also recorded this Hadith.
At-Tirmidhi said, “Hasan Sahih.”
Ibn Jarir recorded that Al-Fadl bin Al-Mubashshir said,
“I saw Jabir bin Abdullah perform several prayers with only one Wudu. When he would answer the call of nature, he performed Wudu and wiped the top of his Khuffs with his wet hand. I said, `O Abu Abdullah! Do you do this according to your own opinion?’
He said, `Rather, I saw the Prophet do the same thing. So, I do what I saw the Messenger of Allah doing.”‘
Ibn Majah also recorded this Hadith.
Ahmad recorded that;
Ubaydullah bin Abdullah bin Umar was asked; “Did you see Abdullah bin Umar perform Wudu for every prayer, whether he was in a state of purity or not,”
So he replied, “Asma bint Zayd bin Al-Khattab told him that Abdullah bin Hanzalah bin Abi `Amir Al-Ghasil told her that the Messenger of Allah was earlier commanded to perform Wudu for every prayer, whether he needed it or not. When that became hard on him, he was commanded to use Siwak for every prayer, and to perform Wudu when Hadath (impurity) occurs. Abdullah (Ibn Umar) thought that he was able to do that (perform Wudu for every prayer) and he kept doing that until he died.”
Abu Dawud also collected this narration.
This practice by Ibn Umar demonstrates that it is encouraged, not obligatory, to perform Wudu for every prayer, and this is also the opinion of the majority of scholars.
Abu Dawud recorded that;
Abdullah bin Abbas said that when the Messenger of Allah once left the area where he answered the call of nature, he was brought something to eat. They said, “Should we bring you your water for Wudu?”
He said,
إنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَة
I was commanded to perform Wudu when I stand up for prayer.
At-Tirmidhi and An-Nasa’i also recorded this Hadith and At-Tirmidhi said, “This Hadith is Hasan.”
Muslim recorded that Ibn Abbas said,
“We were with the Prophet when he went to answer the call of nature and when he came back, he was brought some food. He was asked, `O Messenger of Allah! Do you want to perform Wudu?”
He said,
لِمَ
أَأُصَلِي فَأَتَوَضَّأ
`Why? Am I about to pray so that I have to make Wudu.”‘
The Intention and Mentioning Allah’s Name for Wudu
Allah said;
فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ
then wash your faces…,
The obligation for the intention before Wudu is proven by this Ayah;
إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ
(When you stand (intend) to offer the Salah then wash your faces…). This is because it is just like the Arabs saying; “When you see the leader, then stand.”
Meaning stand for him.
And the Two Sahihs recorded the Hadith,
الاَْعْمَالُ بِالنِّــيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِىءٍ مَانَوَى
Actions are judged by their intentions, and each person will earn what he intended.
It is also recommended before washing the face that one mentions Allah’s Name for the Wudu.
A Hadith that was narrated by several Companions states that the Prophet said,
لَاا وُضْوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْه
There is no Wudu for he who does not mention Allah’s Name over it.
It is also recommended that one washes his hands before he puts his hands in the vessel of water, especially after one wakes up from sleep, for the Two Sahihs recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلَ يُدْخِلْ يَدَهُ فِي الاِْنَاءِ قَبْلَ أَنْ يَغْسِلَهَا ثَلَثًا فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَا يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُه
If one of you wakes up from his sleep, let him not put his hand in the pot until he washes it thrice, for one of you does not know where his hand spent the night.
The face according to the scholars of Fiqh starts where the hair line on the head starts, regardless of one’s lack or abundance of hair, until the end of the cheeks and chin, and from ear to ear.
Passing the Fingers through the Beard While Performing Wudu
Imam Ahmad recorded that Abu Wa’il said,
“I saw Uthman when he was performing Wudu… When he washed his face, he passed his fingers through his beard three times. He said, `I saw the Messenger of Allah do what you saw me doing.”‘
At-Tirmidhi and Ibn Majah also recorded this Hadith.
At-Tirmidhi said “Hasan Sahih.” while Al-Bukhari graded it Hasan.
How to Perform Wudu
Imam Ahmad recorded that;
Ibn Abbas once performed Wudu and took a handful of water and rinsed his mouth and nose with it. He took another handful of water and joined both hands and washed his face. He took another handful of water and washed his right hand, and another handful and washed his left hand with it. He next wiped his head. Next, he took a handful of water and sprinkled it on his right foot and washed it and took another handful of water and washed his left foot. When he finished, he said,
“This is how I saw the Messenger of Allah (performing Wudu).”
Al-Bukhari also recorded it.
Allah said,
وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ
and your hands (forearms) up to (Ila) the elbows…,
meaning, including the elbows.
Allah said in another Ayah (using Ila)
وَلَا تَأْكُلُواْ أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
And devour not their substance to (Ila) your substance (by adding or including it in your property). Surely, this is a great sin. (4:2)
It is recommended that those who perform Wudu should wash a part of the upper arm with the elbow.
Al-Bukhari and Muslim recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ اثَارِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَل
On the Day of Resurrection, my Ummah will be called “those with the radiant appendages” because of the traces of Wudu. Therefore, whoever can increase the area of his radiance should do so.
Muslim recorded that Abu Hurayrah said,
“I heard my intimate friend (the Messenger) saying,
تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُوْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوء
The radiance of the believer reaches the areas that the water of (his) Wudu reaches.”
Allah said next,
وَامْسَحُواْ بِرُوُوسِكُمْ
Rub your heads.
It is recorded in the Two Sahihs that;
Malik bin `Amr bin Yahya Al-Mazini said that his father said that a man said to Abdullah bin Zayd bin Asim, the grandfather of `Amr bin Yahya and one of the Companions of the Messenger,
“Can you show me how the Messenger of Allah used to perform Wudu?”‘
Abdullah bin Zayd said, “Yes.”
He then asked for a pot of water. He poured from it on his hands and washed them twice, then he rinsed his mouth and washed his nose (with water) thrice (by putting water in it and blowing it out). He washed his face thrice and after that he washed his forearms up to the elbows twice. He then passed his wet hands over his head from its front to its back and vice versa, beginning from the front and taking them to the back of his head up to the nape of the neck and then brought them to the front again from where he had started. He next washed his feet.
A similar description of the Wudu of the Messenger of Allah was performed by Ali in the Hadith by Abdu Khayr.
Abu Dawud recorded that;
Mu`awiyah and Al-Miqdad bin Ma`dikarib narrated similar descriptions of the Wudu of the Messenger of Allah.
These Hadiths indicate that it is necessary to wipe the entire head.
Abdur-Razzaq recorded that Humran bin Aban said,
“I saw Uthman bin Affan performing Wudu, and he poured water over his hands and washed them thrice, and then rinsed his mouth and washed his nose (by putting water in it, and then blowing it out). Then he washed his face thrice, and then his right forearm up to the elbows thrice, and washed the left forearm thrice. Then he passed his wet hands over his head, then he washed his right foot thrice, and next his left foot thrice. After that Uthman said, `I saw the Prophet performing Wudu like this, and said,
مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُويِي هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه
If anyone performs Wudu like that of mine and offers a two-Rak`ah prayer during which he does not think of anything else, then his past sins will be forgiven.”‘
Al-Bukhari and Muslim also recorded this Hadith in the Two Sahihs.
In his Sunan, Abu Dawud also recorded it from Uthman, under the description of Wudu, and in it, that he wiped his head one time.
The Necessity of Washing the Feet
Allah said,
وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ
and your feet up to ankles.
Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas stated that;
the Ayah refers to washing (the feet).
Abdullah bin Mas`ud, Urwah, Ata, Ikrimah, Al-Hasan, Mujahid, Ibrahim, Ad-Dahhak, As-Suddi, Muqatil bin Hayyan, Az-Zuhri and Ibrahim At-Taymi said similarly.
This clearly indicates the necessity of washing the feet, just as the Salaf have said, and not only wiping over the top of the bare foot.
The Hadiths that Indicate the Necessity of Washing the Feet
We mentioned the Hadiths by the two Leaders of the Faithful, Uthman and Ali, and also by Ibn Abbas, Mu`awiyah, Abdullah bin Zayd bin Asim and Al-Miqdad bin Ma`dikarib, that the Messenger of Allah washed his feet for Wudu, either once, twice or thrice.
It is recorded in the Two Sahihs that Abdullah bin `Amr said,
“The Messenger of Allah was once late during a trip we were taking, and he caught up with us when the time remaining for the Asr prayer was short. We were still performing Wudu (in a rush) and we were wiping our feet. He shouted at the top of his voice,
أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلَْعْقَابِ مِنَ النَّار
Perform Wudu thoroughly. Save your heels from the Fire.”
The same narration was also collected in the Two Sahihs from Abu Hurayrah.
Muslim recorded that Aishah said that the Prophet said,
أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلَْعْقَابِ مِنَ النَّار
Perform Wudu thoroughly. Save your heels from the Fire.
Abdullah bin Al-Harith bin Jaz said that he heard the Messenger of Allah saying,
وَيْلٌ لِلَْعْقَابِ وَبُطُونِ الاَْقْدَامِ مِنَ النَّار
Save your heels and the bottom of the feet from the Fire.
It was recorded by Al-Bayhaqi and Al-Hakim, and this chain is Sahih.
Muslim recorded that Umar bin Al-Khattab said that;
a man once performed Wudu and left a dry spot the size of a fingernail on his foot. The Prophet saw that and he said to him,
ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَك
Go back and perform proper Wudu.
Al-Hafiz Abu Bakr Al-Bayhaqi also recorded that;
Anas bin Malik said that a man came to the Prophet, after he performed Wudu’ and left a dry spot the size of a fingernail on his foot. The Messenger of Allah said to him,
ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَك
Go back and perform proper Wudu.
Imam Ahmad recorded that some of the wives of the Prophet said that;
the Prophet saw a man praying, but noticed a dry spot on his foot, the size of a Dirham. The Messenger of Allah ordered that man to perform Wudu again.
This Hadith was also collected by Abu Dawud from Baqiyyah, who added in his narration,
“And (the Prophet ordered him) to repeat the prayer.”
This Hadith has a strong, reasonably good chain of narrators.
Allah knows best.
The Necessity of Washing Between the Fingers
In the Hadith that Humran narrated,
Uthman washed between his fingers when he was describing the Wudu of the Prophet.
The collectors of the Sunan recorded that Laqit bin Sabrah said,
“I said, `O Messenger of Allah! Tell me about Wudu.’
The Messenger replied,
أَسْبِغِ الْوُضُوءَ وَخَلِّلْ بَيْنَ الاَْصَابِعِ وَبَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَايِمًا
Perform Wudu thoroughly, wash between the fingers and exaggerate in rinsing your nose, unless you are fasting.”
Wiping Over the Khuffs is an Established Sunnah
Imam Ahmad bin Hanbal recorded that Aws bin Abi Aws said,
“I saw the Messenger of Allah perform Wudu and wipe over his Khuffs. He then stood up for prayer.”
Abu Dawud recorded this Hadith by Aws bin Abi Aws, who said in this narration,
“I saw the Messenger of Allah, after he answered the call of nature, perform Wudu and wipe over his Khuffs and feet.”
Imam Ahmad recorded that Jarir bin Abdullah Al-Bajali said,
“I embraced Islam after Surah Al-Ma’idah was revealed and I saw the Messenger of Allah wipe over his Khuffs after I became Muslim.”
It is recorded in the Two Sahihs that Hammam said,
“Jarir answered the call of nature and then performed Wudu and wiped over his Khuffs.
He was asked, `Do you do this?’
He said, `Yes. I saw the Messenger of Allah, after he answered the call of nature, perform Wudu and wipe on his Khuffs.”‘
Al-Amash commented that Ibrahim said,
“They liked this Hadith because Jarir embraced Islam after Surah Al-Ma’idah was revealed.”
This is the wording collected by Muslim.
The subject of the Messenger of Allah wiping over his Khuffs, instead of washing the feet, if he had worn his Khuffs while having Wudu, reaches the Mutawatir grade of narration, and they describe this practice by his words and actions.
Allah said,
وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ
If you are in a state of Janaba, purify yourselves (bathe your whole body).
Performing Tayammum with Clean earth When There is no Water and When One is Ill
Allah said,
وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَايِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ
But if you are ill or on a journey or any of you come from the Gha’it (toilet), or you have touched women and you find no water, then perform Tayammum with clean earth and rub therewith your faces and hands.
We discussed all of this in Surah An-Nisa’, and thus we do not need to repeat it here.
We also mentioned the reason behind revealing this Ayah. Yet, Al-Bukhari mentioned an honorable Hadith here specifically about the Tafsir of this noble Ayah.
He recorded that Aishah said,
“Upon returning to Al-Madinah, a necklace of mine was broken (and lost) in Al-Bayda’ area. Allah’s Messenger stayed there and went to sleep with his head on my lap.
Abu Bakr (Aishah’s father) came and hit me on my flank with his hand saying, `You have detained the people because of a necklace!’ So I wished I were dead because (I could not move) the Messenger was sleeping on my lap and because of the pain Abu Bakr caused me.
Allah’s Messenger got up when dawn broke and there was no water. So Allah revealed,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ
(O you who believe! When you stand (intend) to offer As-Salah (the prayer), then wash your faces) until the end of the Ayah.
Usayd bin Al-Hudayr said, `O the family of Abu Bakr! Allah has blessed the people because of you. Therefore, you are only a blessing for the people.”
Allah said,
مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ
Allah does not want to place you in difficulty,
This is why He made things easy and lenient for you. This is why He allowed you to use Tayammum when you are ill and when you do not find water, to make things comfortable for you and as mercy for you. Allah made Tayammum in place of Wudu, and Allah made it the same as ablution with water for the one who it is legitimate for, except for certain things, as we mentioned before. For example; Tayammum only involves one strike with the hand on the sand and wiping the face and hands.
Allah said,
وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
but He wants to purify you, and to complete His favor on you that you may be thankful.
for His bounties on you, such as His easy, kind, merciful, comfortable and lenient legislation.
Supplicating to Allah after Wudu
The Sunnah encourages supplicating to Allah after Wudu and states that those who do so are among those who seek to purify themselves, as the Ayah above states.
Imam Ahmad, Muslim and the collectors of Sunan narrated that Uqbah bin `Amir said,
“We were on watch, guarding camels, and when my turn to guard came, I took the camels back at night. I found that the Messenger of Allah was giving a speech to the people. I heard these words from that speech:
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبلًا عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّة
Any Muslim who performs Wudu properly, then stands up and prays a two Rak`ah prayer with full attention in his heart and face, will earn Paradise.
I said, `What a good statement this is!’
A person who was close by said, `The statement he said before it is even better.’
When I looked, I found that it was Umar, who said, `I saw that you just came.
The Prophet said,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْفَيُسْبِغُ الْوُضُوءَ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَاا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاء
When any of you performs Wudu properly and says, `I bear witness that there is no deity worthy of worship except Allah and that Muhammad is His servant and Messenger’, the eight doors of Paradise will be opened for him so that he can enter from any door he wishes.”
This is the wording collected by Muslim.
The Virtue of Wudu
Malik recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُوْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِييَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِييَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِييةٍ مَشَتْهَا رِجْلَهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ اخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوب
When the Muslim or the believing servant performs Wudu and washes his face, every sin that he looked at with his eyes will depart from his face with the water, or with the last drop of water. When he washes his hands, every sin that his hands committed will depart from his hands with the water, or with the last drop of water. When he washes his feet, every sin to which his feet took him will depart with the water, or with the last drop of water. Until, he ends up sinless.
Muslim also recorded it.
Muslim recorded that Abu Malik Al-Ashari said that the Messenger of Allah said,
الطُّهُور شَطْرُ الاِْيمَانِ وَالْحَمْدُ للهِ تَمْلَُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ تَمْلَُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالاَْرْضِ
وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالصدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالقُرْانُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا
Purity is half of faith and Al-Hamdu Lillah (all the thanks are due to Allah) fills the Mizan (the Scale). And Subhan Allah and Allahu Akbar (all praise is due to Allah, and Allah is the Most Great) fills what is between the heaven and earth.
As-Sawm (the fast) is a Junnah (a shield), Sabr (patience) is a light, Sadaqah (charity) is evidence (of faith) and the Qur’an is proof for, or against you.
Every person goes out in the morning and ends up selling himself, he either frees his soul or destroys it.
Muslim recorded that Ibn Umar said that the Messenger of Allah said,
لَاا يَقْبَلُ اللهُ صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ وَلَاا صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُور
Allah does not accept charity from one who commits Ghulul, or prayer without purity.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
অধিকাংশ মুফাসির বলেছেন যে, মানুষের যখন অযু থাকবে না সে সময়। তার জন্যে অযুর নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। একটি দল বলেন যে, যখন তোমরা দণ্ডায়মান হও অর্থ হচ্ছে-যখন তোমরা ঘুম থেকে জাগরিত হও। এ দু’টি উক্তির ভাবার্থ প্রায় একই। অন্যান্য মনীষীরা বলেন যে, আয়াত তো সাধারণ, সুতরাং তা নিজের সাধারণত্বের উপরই থাকবে। কিন্তু যার অযু থাকবে না তার জন্যে অযুর নির্দেশ ওয়াজিব হিসেবে প্রযোজ্য হবে। আর যার অযু থাকবে তার জন্যে অযুর নির্দেশ হবে মুস্তাহাব হিসেবে। একটি দলের ধারণা এই যে, ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযুর নির্দেশ ছিল। কিন্তু পরে তা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি অযু করে মোজার উপর মাসেহ্ করেছিলেন এবং ঐ একই অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করেছিলেন। এটা দেখে হযরত উমার (রাঃ) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ আপনি এমন কাজ করলেন যা ইতিপূর্বে কখনও করেননি। তখন তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ, আমি ভুলে এরূপ করিনি, ববং জেনে শুনে ইচ্ছে করেই করেছি।” সুনানে ইবনে মাজা ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে যে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) এক অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়তেন। তবে প্রস্রাব করলে বা অযু ভেঙ্গে গেলে নতুনভাবে অযু করতেন এবং অযুরই অবশিষ্ট পানি দ্বারা মোজার উপর মাসেহ করতেন। এটা দেখে হযরত ফযল ইবনে বাশীর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কি আপনি নিজের মতানুযায়ী করেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ না, আমি নবী (সঃ)-কে এরূপ করত দেখেছি। মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন, অযু নষ্ট হোক বা না হোক। এটা দেখে তাঁর পুত্র হযরত উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় এর সনদ কি? উত্তরে তিনি বলেন যে, তার কাছে হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা, যিনি এমন লোকের পুত্র ছিলেন যাকে ফেরেশতাগণ গোসল দিয়েছিলেন। বর্ণনাটি এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অযু থাক বা নষ্ট হয়ে যাক। কিন্তু এটা তার জন্যে কষ্টকর হলে প্রত্যেক নামাযে অযু করার পবিরর্তে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হয়। হ্যাঁ, তবে অযু ভেঙ্গে গেলে নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করা জরুরী। এটাকে সামনে রেখে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর খেয়াল হয় যে, তার তো শক্তি রয়েছে, এজন্যে তিনি প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তার সেই অবস্থাই থাকে। এর একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রাঃ)। কিন্তু যেহেতু তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন সেহেতু দলীস’ এর ভয়ও দূর হয়ে গেল। তবে ইবনে আসাকিরের বর্ণনায় এ শব্দগুলো নেই। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর এই কাজ এবং তাঁর এতে সদা লেগে থাকা। এটাই প্রমাণ করে যে, এটা অবশ্যই মুস্তাহাব এবং জমহূরের এটাই মাযহাব। তাফসীরে ইবনে জারীরে রয়েছে যে, খলীফাগণ প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন। হযরত আলী (রাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন এবং দলীল হিসেবে এ আয়াতটি পাঠ করতেন। একদা তিনি যোহরের নামায আদায় করে জনসমাবেশে উপস্থিত হন। অতঃপর তার নিকট পানি আনা হলে তিনি মুখ ও হাত ধৌত করেন এবং মাথা ও পা মাসেহ করেন। এরপর বলেনঃ “এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির অযু যার অযু রয়েছে। একবার তিনি হালকাভাবে অযু করে একথাই বলেছিলেন। হযরত উমার ফারূক (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। সুনানে আবি দাউদ তায়ালেসীর মধ্যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, অযু থাকা অবস্থায় অযু করা বাড়াবাড়ি। তবে প্রথমতঃ সনদের দিক দিয়ে এ উক্তিটি খুবই দুর্বল। দ্বিতীয়তঃ এটা ঐ ব্যক্তির জন্যে প্রযোজ্য যে একে ওয়াজিব মনে করে। আর যে ব্যক্তি একে মুস্তাহাব মনে” করে পালন করে সে তো হাদীসের উপরই আমলকারী। সহীহ বুখারী, সুনান প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন। একজন আনসারী এ কথা শুনে হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ আপনারা কি করতেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমরা অযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একই অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করতাম।” তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশ বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি অযু থাকতে অযু করে তার জন্যে দশটি পুণ্য লিখা হয়। জামেউত তিরমিযী ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের মধ্যেও এ বর্ণনা রয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে দুর্বল বলেছেন। একটি দল বলেন, আয়াতের উদ্দেশ্য শুধু এটাই যে, অন্য কোন কাজের সময় অযু করা ওয়াজিব নয়, শুধুমাত্র নামাযের জন্যেই অযু ওয়াজিব। এ নির্দেশ এ জন্যেই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু ভেঙ্গে যাওয়ার পর নতুনভাবে অযু না করা পর্যন্ত কোন কাজ করতেন না। এটাই ছিল তাঁর নীতি। হাদীসে ইবনে আবি হাতিম প্রভৃতির মধ্যে একটি দুর্বল বর্ণনা রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রস্রাবের ইচ্ছে করতেন তখন আমরা তাঁকে কিছু বললে তিনি উত্তর দিতেন না এবং সালাম দিলে সালামের জবাবও দিতেন না। অবশেষে রুখসাতের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুনানে আবি দাউদের মধ্যে রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পায়খানা হতে বের হন এবং তাঁর সামনে খাদ্য হাযির করা হয়। আমরা তাঁকে বললাম-আপনার নির্দেশ
হলে অযুর পানি নিয়ে আসি। তখন তিনি বললেনঃ “যখন আমি নামাযের মধ্যে দাঁড়াই তখনই শুধু আমার প্রতি অযুর নির্দেশ রয়েছে।” ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান বলেছেন। অন্য একটি রিওয়ায়াতে রয়েছে, নবী (সঃ) বলেনঃ “আমাকে এমন খুব কম নামাযই পড়তে হয় যাতে আমি অযু করে থাকি।” যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাড়াও তখন অযু করে নাও’ -আয়াতের এ শব্দগুলো দ্বারা উলামায়ে কিরামের একটি দল দলীল গ্রহণ করেছেন যে, অযুতে নিয়ত ওয়াজিব। কালামুল্লাহর ভাবার্থ হচ্ছে তোমরা নামাযের জন্যে অযু করে নাও। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকে, যখন তোমরা আমীরকে দেখ তখন দাঁড়িয়ে যাও অর্থাৎ আমীরের জন্যে দাঁড়িয়ে যাও। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে- “আমলের পরিণাম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষের জন্যে শুধু ওটাই রয়েছে যার সে নিয়ত করেছে। অযুতে মুখমণ্ডল ধৌত করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। কেননা, একটি খুবই বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অযুতে বিসমিল্লাহ বললো না তার অযু হলো না।” এটাও স্মরণীয় বিষয় যে, অযুর পানির বরতনে হাত প্রবেশ করানোর পূর্বে হাত ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব। আর যখন কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠবে তার জন্যে তো এ ব্যাপারে খুবই তাগীদ রয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠবে তখন যেন সে তার হাত তিনবার ধুয়ে নেয়ার পূর্বে বরতনে প্রবেশ না করায়, কেননা তোমাদের কেউই জানেনা যে, রাত্রে তার হাতটি কোথায় ছিল।” মুখমণ্ডলের সীমা দৈর্ঘে সাধারণতঃ মাথার চুল গজাবার যেটা জায়গা সেখান থেকে নিয়ে দাড়ির হাড় ও থুতনি পর্যন্ত এবং প্রস্থে এক কান থেকে নিয়ে অপর কান পর্যন্ত। কপালের দু’দিকে চুল গজিয়ে ওঠার জায়গাটা মাথার অন্তর্ভুক্ত কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আর দাড়ির লটকে থাকা চুল ধৌত করা মুখমণ্ডল ধৌত করার ফরযিয়াতের অন্তর্ভুক্ত কি না এ ব্যাপার দু’টি উক্তি রয়েছে। এক তো এই যে, ওর উপর পানি বইয়ে দেয়া ওয়াজিব। কেননা, মুখমণ্ডল সামনে করার সময় ওটাও সামনে হয়ে থাকে। একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে দাড়ি ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখে বলেনঃ “ওটা খুলে ফেল, কেননা ওটা মুখমণ্ডলেরই অন্তর্ভুক্ত।” হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ আরবাসীদেরও অভ্যাস এই যে, ছেলেদের যখন দাড়ি গজিয়ে ওঠে তখন তারা বলে (অর্থাৎ
তার চেহারা প্রকাশ পেয়েছে)। সুতরাং বুঝা গেল যে, আরববাসী দাড়িকেও মুখের অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকে। দাড়ি ঘন হলে ওটা খিলাল করাও মুস্তাহাব। হযরত উসমান (রাঃ)-এর অযুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় তিনবার দাড়ি খিলাল করেছেন এবং বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে অযু করতে দেখলে ঠিক সেভাবেই আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অযু করতে দেখেছি।” (জামেউত তিরমিযী ইত্যাদি) এ রিওয়ায়াতকে ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাসান বলেছেন। সুনানে আবি দাউদে হযরত হাসান ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় এক অঞ্জলী পানি নিয়ে থুতনির নীচে দিতেন এবং দাড়ি মুবারক খিলাল করতেন ও বলতেনঃ “আমাকে আমার মহিমান্বিত প্রভু এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন।” ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেন যে, দাড়ি খিলাল করা হযরত আম্মার (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে এবং একে ছেড়ে দেয়ার রুখসত হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ), হযরত নাখঈ (রঃ) এবং তাবেঈগণের একটি জামআত হতে বর্ণিত রয়েছে। সিহাহ ইত্যাদিতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন অযু করতে বসতেন তখন তিনি কুলি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। এ দু’টো কাজ অযু ও গোসলে ওয়াজিব কি মুস্তাহাব এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর মাযহাবে এটা ওয়াজিব। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও ইমাম মালিক (রঃ) এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে সুনানের ঐ সহীহ হাদীসটি যাতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাড়াতাড়ি নামায আদায়কারী লোকটিকে বলেছিলেনঃ “তুমি সেভাবে অযু কর যেভাবে আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।” ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর মাযহাব এই যে, এই দু’টো কাজ গোসলে ওয়াজিব, অযুতে ওয়াজিব নয়। ইমাম আহমাদ (রঃ) হতে একটি রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে যে, নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব কিন্তু কুলি করা মুস্তাহাব। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অযু করবে সে যেন নাকে পানি দেয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- “তোমাদের কেউ যখন অযু করবে তখন সে যেন তার নাকের দু’টি ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে দেয়, তারপরে যেন নাক ঝাড়ে।” অর্থাৎ যেন নাকের ছিদ্রে ভালভাবে পানি প্রবেশ করিয়ে দিয়ে উত্তম রূপে নাক পরিষ্কার করে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি অযু করতে বসে মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। এরপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা দ্বারা কুলি করলেন ও নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত ধুলেন। এরপর আর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম হাত ধুলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ডান পায়ে ঢেলে দিলেন এবং পা ধৌত করলেন। অতঃপর আর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধুয়ে ফেললেন। এরপর বললেনঃ “এভাবেই আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে অযু করতে দেখেছি।” (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছেঅর্থাৎ কনুইসহ। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের মালসহ তাদের (ইয়াতীমদের) মাল ভক্ষণ করো না, নিশ্চয়ই এটা গুরুতর পাপ। দ্রুপ এখানেও অর্থ হবে তোমরা হাতকে কনুই পর্যন্ত নয় বরং কনুইসহ ধৌত কর। ইমাম দারেকুতনী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় স্বীয় কনুইদ্বয়ের উপর পানি বইয়ে দিতেন। কিন্তু এ হাদীসের দু’জন বর্ণনাকারীর সমালোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
অযু কারীর জন্যে এটা উত্তম যে, সে যেন অযুতে কনুই-এর সাথে বাহুকেও ধুয়ে নেয়। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমার উম্মত অযুর চিহ্নের কারণে উজ্জ্বল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট অবস্থায় আগমন করবে। সুতরাং তোমাদের কারও সম্ভব হলে সে যেন তার ঔজ্জ্বল্যের দূরত্ব বাড়িয়ে নেয়।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু (সঃ)-কে বলতে শুনেছি- মুমিনকে ঐ স্থান পর্যন্ত অলংকার পরানো হবে যে স্থান পর্যন্ত তার অযুর পানি পৌছবে।
(আরবী) -এর মধ্যে (আরবী) অক্ষরটি (আরবী) বা মিলিয়ে দেয়ার জন্যে হওয়াই সুস্পষ্ট। কিন্তু এটা (আরবী) বা কিছু অংশের জন্যে হওয়ার মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে। কোন কোন মূলনীতি বিশারদ বলেন যে, যেহেতু আয়াত হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সেহেতু সুন্নাহ এর ব্যাখ্যা যা দিয়েছে সেটাই কর্তব্য এবং সেদিকেই ফিরে যেতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সায়েদ ইবনে ‘আসিম (রাঃ) নামক সাহাবীকে একটি লোক বলেনঃ আপনি অযু করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। তখন তিনি পানি চাইলেন এবং হাত দু’টি দু’বার করে ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। এরপর চেহারা ধৌত করলেন। তারপর কনুইসহ হাত দু’টি দু’বার ধুলেন। অতঃপর দু’হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করলেন, মাথার প্রথম অংশ থেকে শুরু করে গ্রীবা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ফিরিয়ে আনলেন। তারপর পা দু’টি ধৌত করলেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অযুর নিয়ম হযরত আলী (রাঃ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে। সুনানে আবি দাউদে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এবং হযরত মিকদাদ (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত রয়েছে। এ হাদীসগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা ফরয হওয়ার দলীল। হযরত ইমাম মালিক (রঃ) এবং হযরত আহমাদ (রঃ)-এর এটাই মাযহাব। আর এটাই মাযহাব ঐ সব গুরুজনেরও যারা আয়াতকে সংক্ষিপ্ত বলে মেনে থাকেন এবং হাদীসকে এর ব্যাখ্যাকারী মনে করে থাকেন। হানাফীদের ধারণা এই যে, মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেই করা ফরয যা হচ্ছে মাথার প্রথম অংশ। আমাদের সাথী বলেন যে, ফরয শুধু ঐ টুকু যার উপর মাসেহর প্রয়োগ হয়ে থাকে। তার কোন সীমা নির্ধারিত নেই। মাথার কতক চুলের উপর মাসেহ হলেও ফরয আদায় হয়ে যাবে। এ দু’দলের দলীল হচ্ছে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি। তিনি বলেনঃ (একবার সফরে) রাসূলুল্লাহ (সঃ) পেছনে রয়ে যান এবং আমিও তার সাথে পেছনে থেকে যাই। যখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করে ফেলেন তখন আমার নিকট পানি চান। আমি লোটা (পানি পাত্র) নিয়ে আসি। তিনি হাতের কজি দু’টি ধুলেন। তারপর মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। এরপর কজি হতে কাপড় সরিয়ে ফেললেন এবং কপালের সাথে মিলে থাকা চুল ও পাগড়ির উপর মাসেহ করলেন। (সহীহ মুসলিম) ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ এর উত্তর দেন যে, তিনি মাথার প্রথম অংশের উপর মাসেহ করে অবশিষ্ট মাসেই পাগড়ির উপর পুরো করেন। এর বহু দৃষ্টান্ত হাদীসে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বরাবরই পাগড়ির উপর ও মাথার উপর মাসেহ করতেন। সুতরাং এটাই উত্তম এবং এটা কোনক্রমেই প্রমাণ করে না যে, মাথার কিছু অংশের উপর বা শুধুমাত্র কপালের চুলের উপর মাসেহ করতে হবে, আর এর পূর্ণতা পাগড়ির উপর হবে না। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আবার মাথার উপর মাসেহ তিনবার হবে কি একবারই হবে এ ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর মতে মাসেহ তিনবার করতে হবে। কিন্তু ইমাম আহমাদ (রঃ) ও তাঁর অনুসারীদের মতে মাসেহ একবারই করতে হবে। তাদের দলীল এই যে, হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) অযু করতে বসে দু’হাতের উপর তিনবার পানি ঢালেন ও হাত দুটি তিনবার ধৌত করেন, তারপর কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। এরপর তিনবার হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন, প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত। তারপর মাথা মাসেহ করেন। এরপর তিনবার করে পা দু’টি ধৌত করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এ অযুর মত অযু করে শুদ্ধ অন্তরে দু’রাকআত নামায আদায় করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসিলম) সুনানে আবি দাউদের মধ্যে এ রিওয়ায়াতেই মাথা মাসেহ করার সাথে সাথে এ শব্দও রয়েছে যে, তিনি মাথা একবার মাসেহ করেন। হযরত আলী (রাঃ) থেকেও এরূপই বর্ণিত আছে। আর যারা মাথা মাসেহকেও তিনবার করার কথা বলেন তাঁরা ঐ হাদীস থেকে দলীল নিয়েছেন যাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার করে অযুর অঙ্গগুলো ধুয়েছিলেন। হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি অযু করেন। তারপর এরূপই রিওয়ায়াত রয়েছে এবং তাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার উল্লেখ নেই। আর তাতে আছে যে, অতঃপর তিনি তিনবার মাথা মাসেহ করেন এবং তিনবার স্বীয় পা দু’টি ধৌত করেন। অতঃপর বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এভাবেই অযু করতে দেখেছি।” তিনি আরও বলেনঃ “যে ব্যক্তি এরূপভাবে অযু করে, তার জন্যে এটাই যথেষ্ট। কিন্তু হাদীস গ্রন্থে যে হাদীসগুলো হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে সেগুলো দ্বারা মাথা মাসেহ একবার করাই সাব্যস্ত হচ্ছে।
(আরবী) -এর কে (আরবী) -এর উপর (আরবী) করে (আরবী) পড়া হয়েছে এবং এভাবে ধৌত করার দিকে ফিরোনো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এরূপভাবেই পাঠ করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে। মাসউদ (রাঃ) এটাই করতেন। হযরত উরওয়া (রঃ), হযরত আতা’ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত হাসান (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইবরাহীম (রঃ), হযরত যহহাক (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) এবং হযরত ইবরাহীম তাইমীরও (রঃ) এটাই উক্তি। আর সুস্পষ্ট কথা এটাই যে, পা ধুতেই হবে। পূর্ববর্তী গুরুজনদেরও এটাই নির্দেশ যে, পা ধুতেই হবে। এখান থেকেই জমহুর এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, অযুতে তরতীব ওয়াজিব। একমাত্র ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি অযুতে তরতীব বা ক্রমান্বয়ে করাকে শর্ত মনে করতেন না। তাঁর মতে যদি কেউ প্রথমে পা ধুয়ে নেয়, এরপর মাথা মাসেহ করে, তারপর হাত ধৌত করে, অতঃপর মুখমণ্ডল ধৌত করে তবুও জায়েয হবে। কেননা, আয়াতে এ অঙ্গগুলোকে ধৌত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (আরবী) -এর (আরবী) কখনও তরতীবের উপর হয় না। জমহুর এর কয়েকটি জবাব দিয়েছেন। একটি এই যে, অক্ষরটি তরতীবের উপর (আরবী) করে। আয়াতের শব্দগুলোতে নামায আদায়কারীকে মুখমণ্ডল ধৌত করার নির্দেশ (আরবী) শব্দ দ্বারা হচ্ছে। তাহলে কমপক্ষে মুখমণ্ডলকে প্রথম ধৌত করা তো শব্দগুলো দ্বারাই সাব্যস্ত হচ্ছে। এখন এর পরের অঙ্গগুলোতে তরতীব ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে। এটা বিবেক বিরুদ্ধও নয়। অতঃপর (আরবী) অক্ষরটি যা (আরবী) বা অনুসরণের জন্যে আসে এবং যা (আরবী) বা ক্রমান্বয়ের দাবীদার, যখন। একটির উপর এসেছে তখন একটির তরতীব মেনে নিয়ে অন্যটির তরতীব কেউ অস্বীকার করে না, বরং হয়তো বা সবকটির তরতীব স্বীকারকারী হয়, নয় তো কোন একটিরও তরতীব স্বীকারকারী হয় না। সুতরাং এ আয়াতটি নিশ্চিতরূপে তাঁদের উপর দলীল হচ্ছে যারা মোটেই তরতীব স্বীকার করেন না। দ্বিতীয় উত্তর এই যে, (আরবী) অক্ষরটি তরতীবের উপর (আরবী) করে না এটাও আমরা স্বীকার করি না। বরং ওটা তৱতীবের উপর (আরবী) করে। যেমন ব্যাকরণবিদগণের একটি দলের এবং ফিকাহশাস্ত্রবিদদের কারও কারও মাযহাব এটাই। তাছাড়া এ বিষয়টিও চিন্তা ভাবনার যোগ্য যে, আভিধানিক অর্থে এটা তরতীবের উপর করে না (আরবী) এটা যদি মেনে নেয়াও হয়, তথাপি শরীয়তের অর্থে যে জিনিসগুলোতে তরতীব হতে পারে সেগুলোতে এর (আরবী) তরতীবের উপর হয়ে থাকে। সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে সাফার দরজা হতে বের হন, তখন (আরবী) (২:১৫৮)-এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “আমি সেখান থেকেই শুরু করবো যার বর্ণনা আল্লাহ তা’আলা প্রথম দিয়েছেন।” সুতরাং তিনি সাফা থেকে দৌড় শুরু করেন। সুনানে নাসাঈতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ নির্দেশও বর্ণিত আছে- “তোমরা সেখান থেকেই শুরু কর যেখান থেকে আল্লাহ শুরু করেছেন।” এর ইসনাদও বিশুদ্ধ এবং এতে আমর বা নির্দেশ রয়েছে। অতএব জানা গেল যে, যার বর্ণনা পূর্বে হয়েছে তাকে পূর্বে করা এবং যার বর্ণনা পরে হয়েছে তাকে পরে করা ওয়াজিব। সুতরাং সুস্পষ্টরূপে সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, এরূপ স্থলে শরীয়তের দিক দিয়ে তরতীব উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
তৃতীয় দল উত্তরে বলেন যে, হাত কনুইসহ ধৌত করার হুকুম এবং পা ধৌত করার হুকুমের মধ্যভাগে মাথা মাসেহ করার হুকুম বর্ণনা করা এ কথারই স্পষ্ট দলীল যে, তরতীবকে বাকী রাখাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। নতুবা নামে কালাম বা কথার ছন্দ উলট পালট করা হতো না। এর প্রথম উত্তর এটাও যে, সুনানে আবি দাউদ ইত্যাদির মধ্যে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযুর অঙ্গগুলো একবার একবার করে ধৌত করেন। অতঃপর বলেনঃ “এটাই হচ্ছে অযু যা ছাড়া আল্লাহ নামায কবুল করেন না। এখন অবস্থা হলো দু’টি, হয় ঐ অযুতে তরতীব ছিল, নয় তো ছিল না। যদি বলা হয় যে, নবী (সঃ)-এর ঐ অযু তরতীবসহ ছিল অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে একটি অঙ্গের পর আর এক অঙ্গ ছিল তাহলে বুঝতে হবে যে, যে অযুতে আগা পিছা হবে এবং সঠিকভাবে তরতীব থাকবে না সেই অযুতে নামায গ্রহণীয় হবে না। তাহলে জানতে হবে যে, অযুতে তরতীব ওয়াজীব ও ফরয। আর যদি মেনে নেয়া হয় যে, ঐ অযুতে তরবীত ছিল না, বরং এলোমেলো ছিল, যেমন পা ধুয়েছিলেন, তারপর কুলি করেছিলেন, এর পর মাসেহ করেছিলেন, তারপর মুখ ধুয়েছিলেন ইত্যাদি, তাহলে তরতীব না করাই ওয়াজিব হয়ে যাবে! অথচ এরূপ মত পোষণকারী উম্মতের মধ্যে একজনও নেই। অতএব, সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, অযুতে তরতীব ফরয। আয়াতের এ অংশের একটি কিরআত ওয়া আরজুলিকুম অর্থাৎ কে যের দিয়েও রয়েছে। আর এটা থেকেই শী’আ সম্প্রদায় এ দলীল গ্রহণ করেছে। যে, পায়ের উপর মাসেহ্ করা ওয়াজিব। কেননা, তাদের নিকট এর (আরবী) বা সংযোগ (আরবী)-এর উপর হয়েছে। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজন হতেও এরূপ উক্তি বর্ণিত আছে। যার ফলে পা মাসেহ করার কল্পনা জেগে ওঠে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন-মূসা ইবনে আনাস জনসমাবেশে হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলেন যে, হাজ্জায আহ্ওয়ায নামক স্থানে ভাষণ দিতে গিয়ে তাহারাত ও অযুর আহকামের ব্যাপারে বলেছেনঃ “তোমরা মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং পা ধুয়ে ফেল। সাধারণতঃ পায়েই ধূলা ময়লা লেগে যায়। সুত্রং পায়ের তলা, উপরিভাগ ও গোড়ালিকে উত্তমরূপে ধৌত কর।” তখন হযরত আনাস (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সত্যবাদী এবং হাজ্জায মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) হযরত আনাস (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি পায়ের মাসেহ করতেন তখন পা সম্পূর্ণরূপে ভিজিয়ে দিতেন। অথচ তার থেকেই বর্ণিত আছে যে, কুরআন কারীমে পায়ের উপর মাসেহ করার হুকুম রয়েছে। হাঁ, তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সুন্নাত হচ্ছে পা ধৌত করা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, অযুতে দু’টো অঙ্গ ধুতে হয় এবং দু’টো অঙ্গ মাসেহ করতে হয়। হযরত কাতাদাহ (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আয়াতটিতে পায়ের উপর মাসেহ করার বর্ণনা রয়েছে। ইবনে উমার (রাঃ), আলকামাহ। (রঃ), আবু জাফর (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে আলী (রঃ) এবং এক রিওয়ায়াতে হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত জাবির ইবনে যায়েদ (রঃ) এবং আর এক রিওয়ায়াতে হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। হযরত ইকরামা (রাঃ) পায়ের উপর মাসেহ করতেন। শাবী (রঃ) বলেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে মাসেহর হুকম নাযিল হয়েছে। তার থেকে এটাও বর্ণিত আছে- “তোমরা কি দেখছো না যে, যে অঙ্গগুলোর উপর বোয়ার নির্দেশ ছিল, ঐগুলোর উপর তো তায়াম্মুমের সময় মাসেহ করার হুকুম রয়েছে। আর যেগুলোর উপর মাসেহ করার হুকুম ছিল, তায়াম্মুমের সময় ওগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছে।” হযরত আমির (রাঃ)-কে কেউ বললেনঃ “লোকেরা বলছেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) পা ধোয়ার হুকুম নিয়ে এসেছেন।” হযরত আমির (রাঃ) একথা শুনে বললেনঃ “হযরত জিবরাঈল (আঃ) মাসেহ করার হুকুম নিয়ে নাযিল হয়েছিলেন। সুতরাং এসব আছার সম্পূর্ণরূপেই গারীব এবং ঐ বিষয়ের উপর মাহমুল যে, এখানে মাসেহর ভাবার্থ হচ্ছে ঐ গুরুজনদের হালকাভাবে ধৌতকরণ। কেননা, সুন্নাত দ্বারা এটা পরিষ্কারভাবে সাব্যস্ত আছে যে, পা ধৌত করা ওয়াজিব। স্মরণ রাখতে হবে যে, যেরের কিরআতটি হয় তো ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ও সৌষ্ঠবের জন্যেই হবে। যেমন আরবদের কথায় আছে (আরবী) এবং আল্লাহ পাকের কালামে রয়েছে (আরবী) (৭৬:২১) আরবদের ভাষায় এটা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এ কারণে উভয় শব্দকে একই দিয়ে দেয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। হযরত ইমাম শাফিঈ (রঃ) এর একটি কারণ এও বর্ণনা করেছেন যে, এ হুকুম ঐ সময় প্রযোজ্য হবে যখন পায়ে মোজা থাকবে। কেউ কেউ বলেন যে, এখানে মাসেহর অর্থ হচ্ছে হালকাভাবে ধৌত করা, যেমন কতক রিওয়ায়াতে সুন্নাত দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে। মোটকথা পা ধোয়া ফরয, এটা ছাড়া অযুই হবে না, আয়াতেও এটাই আছে এবং হাদীসেও তাই আছে। যেগুলো আমরা পেশ করছি। ইনশাআল্লাহ।
হাদীসে বায়হাকীতে রয়েছে, একদা হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) যোহরের নামায আদায় করার পর বসে থাকেন এবং আসর পর্যন্ত জনগণের কাজ কামে লিপ্ত থাকেন। তারপর পানি আনিয়ে নেন এবং অঞ্জলি দ্বারা মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয়, মাথা ও পদদ্বয় মাসেহ করেন এবং অবশিষ্ট পানি দাড়িয়ে পান করে নেন। অতঃপর বলেনঃ “লোকেরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে অপছন্দনীয় মনে করে। অথচ আমি যা করলাম তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে করতে দেখেছি।”এরপর তিনি বলেনঃ “এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির অযু যার অযু রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) শী’আদের মধ্যে যারা পায়ের মাসেহ মোজার মাসেহর মত বলেছেন তারা অবশ্যই ভুল করেছেন এবং জনগণকে ভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। তদ্রুপ তারাও ভুল করেছেন যারা মাসেহ করা ও ধৌত করা দুটোকেই জায়েয বলেছেন। আবার যারা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করেছেন যে, তিনি হাদীসসমূহের উপর ভিত্তি করে পা ধোয়া এবং আয়াতে কুরআনীর উপর ভিত্তি করে পায়ের উপর মাসেহ করাকে ফরয বলেছেন তাঁদের তাহকীক বা বিশ্লেষণও ঠিক নয়। তাফসীরে ইবনে জারীর আমাদের নিকট বিদ্যমান রয়েছে। তার কথার ব্যাখ্যা এই যে, পা দু’টিকে রগড়ানো ওয়াজিব। কিন্তু অন্য অঙ্গগুলোর ব্যপারে এটা ওয়াজিব নয়। কেননা, পা দ্বারা মাটিতে চলাফেরা করতে হয়। কাজেই পায়ে ময়লা মাটি ভরে যায়। তাই পা ধোয়া জরুরী, যাতে পায়ে কিছু লেগে থাকলে ধোয়ার ফলে তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এ রগড়ানোর জন্যে তিনি মাসেহ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন। আর এতেই কতক লোকের মনে সন্দেহ জেগে ওঠে এবং তারা বুঝে নেন যে, তিনি ধৌত করা ও মাসেহ করাকে এভাবে জমা করে দিয়েছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে এর কোন অর্থই হয় না। মাসেহ তো ধৌত করারই অন্তর্ভুক্ত, তা আগেই তোক বা পরেই হোক। সুতরাং আসলে ইমাম সাহেবের ইচ্ছা ওটাই যা আমি উল্লেখ করলাম। আর একে না বুঝে অধিকাংশ ফেকাহ শাস্ত্রবিদ ওটা মুশকিল জেনেছেন। আমি খুব চিন্তা ভাবনা করলে আমার কাছে এটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইমাম সাহেব উভয় কিরআতকে একত্রিত করারই পন্থা খুঁজছিলেন। সুতরাং তিনি যেরের কিরআত অর্থাৎ মাসেহকে তো মাহমুল করেছেন , বা ভালভাবে রগড়িয়ে পরিষ্কার করার উপর আর যবরের কিরআত তো বা ধৌত করার উপর আছেই। সুতরাং তিনি ধৌত করা ও রগড়ানো উভয়কেই ওয়াজিব বলেছেন, যাতে যের ও যবর উভয় কিরআতের উপর একই সাথে আমল হয়ে যায়। এখন পা ধৌত করা জরুরী হওয়া সম্পর্কে যে হাদীসগুলো এসেছে। সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে-
আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ), আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এবং হযরত মিকদাদ ইবনে মাদীকারব (রাঃ)-এর বর্ণনাগুলো ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় স্বীয় পদদ্বয় একবার, দু’বার বা তিনবার ধুয়েছেন। হযরত আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করেছেন এবং স্বীয় পা দু’টি ধুয়েছেন। তারপর বলেছেনঃ “এটা হচ্ছে অযু, যা ব্যতীত আল্লাহ তাআলা নামায কবূল করেন না।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন। যখন তিনি আগমন করেন তখন আমরা তাড়াতাড়ি অযু করছিলাম। আমরা তাড়াহুড়া করে আমাদের পাগুলো স্পর্শ করা শুরু করে দেই। সেই সময় তিনি খুবই উচ্চৈঃস্বরে বললেনঃ “অযু পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন কর। আগুনে পায়ের গোড়ালির অমঙ্গল রয়েছে। অন্য একটি হাদীসে আছে-“আগুনে পায়ের গোড়ালির ও পায়ের তলার অমঙ্গল রয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) ও ইমাম হাকিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আর একটি হাদীসে রয়েছেঃ “আগুনের কারণে পায়ের গিটের অমঙ্গল রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর মুসনাদে রয়েছে) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একটি লোকের পায়ের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা শুষ্ক দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আগুনের কারণে পায়ের গোড়ালির জন্যে অমঙ্গল রয়েছে।” ইবনে জারীর (রঃ) হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সম্প্রদায়কে নামায পড়তে দেখেন যাদের একজনের পায়ের গোড়ালির এক দিরহাম পরিমাণ জায়গায় বা নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌছেনি, তখন তিনি বলেনঃ “আগুনের কারণে গোড়ালির জন্যে অমঙ্গল রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, এরপর মসজিদে ইতর দ্র এমন কেউ থাকতো না যে ঘুরে ফিরে নিজের গোড়ালির দিকে চেয়ে দেখতো না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এমন একটি লোককে নামায পড়তে দেখেন যার পায়ের গোড়ালির এক দিরহাম পরিমাণ চামড়া শুষ্ক ছিল। এ দেখে তিনি উক্ত রূপ মন্তব্য করেন। তখন অবস্থা এই দাঁড়ালো যে, কারও যদি সামান্য পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থেকে যেতো তবে সে পুনরায় শুরু থেকে অযু করতো। সুতরাং এই হাদীসসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, পা ধৌত করা ফরয। যদি মাসেহ করা ফরয হতো তবে সামান্য পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থাকায় আল্লাহর নবী (সঃ) জাহান্নামের আগুনের ভয় প্রদর্শন করতেন না। কেননা, মাসেহর সময় পায়ের সব জায়গায় হাত পৌছানোই হয় না, বরং মোজার উপর যেভাবে মাসেহ করা হয় সেভাবেই পায়ের উপর মাসেহ করা হয়। এ কথাটাই ইবনে জারীর (রঃ), শী’আদের মোকাবিলায় পেশ করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে অযু করতে দেখতে পান যার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌছেনি, বরং শুষ্ক রয়ে গিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি ফিরে যাও এবং ভালভাবে অযু করে এসো।” ইমাম বায়হাকীও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত খালিদ ইবনে মি’দান (রঃ)-এর মাধ্যমে নবী (সঃ)-এর কোন একজন স্ত্রী হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) এমন একজন। লোককে দেখতে পান যার পায়ের গোড়ালির উপরিভাগের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা শুষ্ক রয়ে গিয়েছিল, সেখানে পানি পৌছেনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে পুনরায় অযু করার নির্দেশ দেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (আরবী) বা নামায শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। এ ইসনাদটি উত্তম, মজবুত ও বিশুদ্ধ। আল্লাহই ভাল জানেন।
হযরত উসমান (রাঃ) হতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অযুর যে নিয়ম বর্ণিত হয়েছে তাতে এও রয়েছে যে, তিনি অঙ্গুলিগুলোর খিলালও করেছিলেন। সুনান গ্রন্থগুলোতে রয়েছে যে, হযরত সাবরা (রাঃ) রাসূল্লাহ (সঃ)-কে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “অযু পূর্ণভাবে ও উত্তমরূপে কর, অঙ্গুলিগুলোর মধ্যে খিলাল কর এবং নাকে উত্তমরূপে পানি দাও। তবে যদি রোযার অবস্থায় থাক তাহলে অন্য কথা।”
ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে, তিনি হযরত আমর ইবনে আবসা’ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (আমর ইবনে আবসা’) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (স)! আমাকে অযু সম্পর্কে সংবাদ দিন! তিনি বললেনঃ “যে ব্যক্তি অযুর পানি নিয়ে কুলি করে ও নাকে পানি দেয়, পানির সাথে সাথে ও নাক ঝাড়ার সাথে সাথে তার মুখ ও নাকের ছিদ্র হতে পাপরাশি ঝরে পড়ে। তারপর আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন দাড়ির ধার ও দাড়ির চুল হতে পানি ঝরে পড়ার সাথে সাথে তার মুখের পাপরাশি ঝরে পড়ে। অতঃপর যখন সে কনুইসহ হাত দু’টি ধৌত করে তখন তার অঙ্গুলির দিক থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। এর পর যখন সে মাথা মাসেহ্ করে তখন তার চুলের ধার দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার মাথার পাপরাশি ঝরে পড়ে। তারপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পা দু’টি গোড়ালিসহ ধৌত করে তখন পায়ের অঙ্গুলি দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়ার সাথে সাথেই তার পায়ের পাপরাশি দূর হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণ বর্ণান করতঃ দু’রাকআত নামায আদায় করে তখন সে পাপ থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যায় যে, যেন সে আজকেই জন্মগ্রহণ করলো।” এটা শুনে হযরত আবু উমামা (রাঃ) হযরত আমর ইবনে আবসা (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি কি বলছেন তা খুব চিন্তা করে দেখুন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে আপনি এরূপই শুনেছেন তো? এ সব কিছুই কি মানুষ একই স্থানে লাভ করে থাকে। হযরত আমর (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “দেখুন আবু উমামা! আমি বুড়িয়ে গেছি। আমার অস্থিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমার মৃত্যু নিকটবর্তী হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করায় আমার লাভ কি? একবার নয়, দু’বার নয়, তিনবার নয়, আমি এটা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর মুখে সাতবার বরং তার চেয়েও অধিকবার শুনেছি।” এ হাদীসের ইসনাদ সম্পূর্ণরূপেই বিশুদ্ধ। সহীহ মুসলিমের অন্য সনদযুক্ত হাদীসে রয়েছেঃ “তারপর সে স্বীয় পদদ্বয় ধৌত করে যেমনভাবে ধৌত করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং জানা গেলো যে, কুরআন কারীমের হুকুম হচ্ছে পা ধুয়ে নেয়। আবু ইসহাক সাবীঈ হযরত হারিসের মাধ্যমে হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ “স্বীয় পদদ্বয় গোড়ালির উপর পর্যন্ত ধৌত কর যেমন তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা এটাও জানা গেল যে, যে রিওয়ায়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্বীয় পদদ্বয় জুতার মধ্যেই ভিজিয়ে নেয়া হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। ওর ভাবার্থ হচ্ছে জুতার মধ্যে হালকাভাবে ধুয়ে নেয়া। আর চটি জুতা পায়ে থাকলে এভাবে পা ধোয়া যেতে পারে। মোটকথা এ হাদীসও পা ধোয়ার দলীল। অবশ্য এর দ্বারা সংশয়ে পতিত লোকদের খণ্ডন হয়ে থাকে যারা সীমা ছাড়িয়ে যায়। এমনিভাবে অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সম্প্রদায়ের ময়লা ও খড়কুটা ফেলার জায়গায় দাড়িয়ে প্রস্রাব করেন। তারপর পানি চেয়ে নিয়ে অযু করেন এবং স্বীয় স্যাণ্ডেলের উপর মাসেহ করেন। কিন্তু এ হাদীসটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে এবং তাতে রয়েছে যে, তিনি স্বীয় মোজার উপর মাসেহ করেন। এগুলো এভাবে একত্রিত করা যেতে পারে যে, তাঁর পায়ে মোজা ছিল এবং মোজার উপর স্যাণ্ডেল ছিল। ঐ দু’টোর উপর তিনি মাসেহ করেছিলেন। এ হাদীসেরও ভাবার্থ এটাই হবে। মুসনাদে আহমাদে আউস ইবনে আবি আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “আমি দেখতে ছিলাম এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করেন এবং স্বীয় স্যান্ডেলের উপর মাসেহ করেন। তারপর নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হন।” এ রিওয়ায়াতটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে এবং তাতে তার খড়কুটোর উপর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, তারপর অযু করা এবং স্যাণ্ডেলদ্বয় ও পদদ্বয়ের উপর মাসেহ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হাদীসটি এনেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ “এটা মাহমুল হচ্ছে ওর উপর যে, ঐ সময় তার প্রথম অযু ছিল।” কোন মুসলমান এটা কিরূপে মেনে নিতে পারে যে, আল্লাহর ফরয ও তাঁর নবী (সঃ)-এর সুন্নাতের মধ্যে বৈপরীত্ব দেখা দেবে। আল্লাহ এক কথা বলবেন এবং নবী (সঃ) অন্য কিছু করবেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চিরস্থায়ী কাজ হিসেবে অযুতে পা ধৌতকরণ দ্বারা এর ফরয হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে। আর আয়াতের সহীহ মতলবও এটাই। যার কান পর্যন্ত এ দলীলগুলো পৌঁছে যাবে, তার উপর আল্লাহর হুজ্জত পূর্ণ হয়ে যাবে। যবরের কিরআত দ্বারা পা ধৌত করা এবং যেরের কিরআতও এরই উপর মাহমুল হওয়ার ফলে ওটা যে ফরয তা অকাট্যভাবে সাব্যস্ত হয়ে গেল। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী কোন কোন মনীষী তো একথাও বলেছেন যে, এ আয়াত দ্বারা মোজার উপর মাসেহ মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। যদিও হযরত আলী (রাঃ) হতেও এরূপ একটি রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে, কিন্তু ওর ইসনাদ বিশুদ্ধ নয়, বরং স্বয়ং তাঁর থেকেই বিশুদ্ধতার সাথে এর বিপরীত সাব্যস্ত হয়েছে। আর যাঁরই কথা এটা হোক না কেন, তার এ ধারণাই ঠিক নয়। কেননা, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মোজার উপর মাসেহ করা সাব্যস্ত আছে। মুসনাদে আহমাদে হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “সূরায়ে মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরই আমি মুসলমান হই। আমার ইসলাম গ্রহণের পরে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি।”
[8/7, 10:29 AM] Engr Motaher: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত হাম্মাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, হযরত জারীর (রাঃ) প্রস্রাব করেন, তারপর অযু করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনি এরূপ করে থাকেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এরূপই করতে দেখেছি।” হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, জনগণের কাছে এ হাদীসটি খুবই ভাল লাগতো। কেননা, হযরত জারীরের ইসলাম গ্রহণই সূরায়ে মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা ছিল। আহকামের বড় বড় কিতাবগুলোতে ধারাবাহিকতার সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথা ও কাজের দ্বারা মোজার উপর মাসেহ সাব্যস্ত রয়েছে। এখন মাসেহর জন্যে মুদ্দত বা সময়ের দৈর্ঘ্য আছে কি নেই তা আলোচনার জায়গা এটা নয়। আহকামের কিতাবগুলোতে এর বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। রাফেযীগণ এতেও মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের কাছে এর কোন দলীল প্রমাণ নেই, আছে শুধু অজ্ঞতা ও ভ্রান্তি। স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এটা সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু রাফেযীরা তা মানে না। যেমন হযরত আলী (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত দ্বারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের নিকাহে মুতআর নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হয়েছে, তথাপি শী’আরা ওটাকে বৈধ বলেছে। ঠিক দ্রুপ এ আয়াতে কারীমা পদদ্বয় ধৌত করার উপর স্পষ্টভাবে পথ নির্দেশ করছে এবং এই কাজটিই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ধারাবাহিক হাদীসসমূহ দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে, তথাপি শী’আ সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করছে। প্রকৃতপক্ষে এ মাসায়েলের ব্যাপারে তাদের হাত দলীল-প্রমাণ হতে সম্পূর্ণ শূন্য। আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। অনুরূপভাবে এ লোকগুলো পায়ের গিঠদ্বয়ের ব্যাপারেও আয়াতের ও পূর্ববর্তী গুরুজনদের বিরোধিতা করেছে। তারা বলে যে ওটা পায়ের পিঠের উপর রয়েছে। সুতরাং তাদের নিকট প্রত্যেক পায়ে একটি মাত্র গিঁঠ রয়েছে। আর জমহুরের নিকট গিঠের ঐ হাড়গুলো যা পায়ের গোছা ও পায়ের মধ্যভাগে রয়েছে ঐগুলো হচ্ছে (আরবী)। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর ফরমান এই যে, যে (আরবী) -এর আলোচনা এখানে হয়েছে ওটা গিঁঠের ঐ হাড় দু’টি যা দু’দিকেই প্রকাশমান রয়েছে, তা একই পায়ে দু’টি গিঁঠ। এটা জনগণের মধ্যেও সুপরিচিত। আর হাদীসের পথ নির্দেশও এর উপরই। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত উসমান (রাঃ) অযু করার সময় ডান পা (আরবী) বা গিঁঠ দু’টিসহ ধৌত করেন। তারপর বাম পাটিও এভাবেই ধৌত করেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা এবং সুনানে আবি দাউদের মধ্যে রয়েছে, বর্ণনাকারী নোমান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! হয় তোমরা তোমাদের সারিগুলো সোজা করে নাও, নয়তো আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করে দেবেন।” হাদীসের বর্ণনাকারী নো’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেনঃ তখন থেকে এই অবস্থা দাঁড়ালো যে, প্রতিটি লোক তার পার্শ্ববর্তী লোকের গিঠের সাথে গিঠ, জানুর সাথে জানু এবং কাধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাখতো। এ বর্ণনা দ্বারা পরিষ্কারভাবে জানা গেল যে, (আরবী) ঐ হাড়ের নাম নয় যা পায়ের পিঠের দিকে রয়েছে। কেননা, পাশাপাশি দাঁড়ানো দু’টি লোকের পক্ষে ওটা মিলানো সম্ভব নয়। বরং ওটা ঐ দু’টি উথিত হওয়া হাড় যা পায়ের গোছার শেষ ভাগে রয়েছে। আহলে সুন্নাতের মাযহাব এটাই। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ইয়াহইয়া ইবনে হারিস তাইমী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ “যায়েদের যে শীআ সঙ্গীটিকে হত্যা করা হয়েছিল তাকে আমি দেখেছি। তার গিঁঠটি পায়ের পিঠের উপর পেয়েছি। এটা ছিল তার কুদরতী শাস্তি, যা তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সত্যের বিরোধিতা ও সত্য গোপন করার প্রতিফল দেয়া হয়েছে।”
এরপর তায়াম্মুমের নিয়মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে নিসায় হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে আর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। আয়াতে তায়াম্মুমের শানে নকূলও সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে আমীরুল মুমিনীন ইমাম বুখারী (রঃ) এ আয়াত সম্পর্কে একটি বিশেষ হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি নিম্নে দেয়া হলোঃ
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার গলার হারটি বায়দা নামক স্থানে পড়ে যায়। আমরা মদীনায় প্রবেশকারী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সওয়ারীটি থামিয়ে দেন এবং আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। ইত্যবসরে আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) আমার নিকট আগমন করেন এবং আমাকে তিরস্কারের সূরে বলেনঃ “তুমি হার হারিয়ে দিয়ে লোকদেরকে থামিয়ে দিয়েছো?” এ কথা বলে তিনি আমাকে প্রহার করতে শুরু করেন যার ফলে আমার কষ্টবোধ হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে মনে করে আমি নড়াচড়া করা হতে বিরত থাকি। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে ওঠেন এবং ইতিমধ্যে ফজরের নামাযের সময় হয়ে যায়। সুতরাং তিনি পানি খোঁজ করেন। কিন্তু পানি পাওয়া গেল না। সেই সময় এ পূর্ণ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন হযরত উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বলে ওঠেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)-এর বংশধর, আল্লাহ জনগণের জন্যে তোমাদেরকে কল্যাণময় বানিয়ে দিয়েছেন। তোমরা তাদের জন্যে পুরোপুরি কল্যাণময় হয়ে গেলে।” (সুইউতী (রঃ) বলেনঃ হাদীসটি এটাই প্রমাণ করছে যে, আয়াতটি নাযিল হওয়ার পূর্বেই তাদের উপর অযু ওয়াজিব ছিল। এ কারণেই পানিশূন্য জায়গায় অবতরণ করাকে তারা খুবই বড় করে দেখেছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ এ মত পোষণ করেন যে, আয়াতের প্রথম অংশ অযু ফরয হওয়ার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। তারপর বাকী অংশ তায়াম্মুমের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তবে প্রথমটি বেশী ঠিক, কেননা মক্কায় নামায ফরয হওয়ার সাথে সাথে অযুও ফরয করা হয়। আর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় মদীনায়)
এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা ও অসুবিধায় ফেলতে চান না। এজন্যেই তিনি দ্বীনকে সহজ ও হালকা করে দিয়েছেন, কঠিন ও মুশকিল করেননি। হুকুমতো ছিল এই যে, তোমরা পানি দ্বারা অযু করবে। কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায় কিংবা তোমরা রোগাক্রান্ত হয়ে পড় তবে তোমাদেকে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেয়া হলো। বাকী হুকুমের জন্যে আহকামের কিতাবগুলো দ্রষ্টব্য।
ইরশাদ হচ্ছে-বরং আল্লাহ তোমাদেরকে পবিত্র করতে এবং তোমাদের উপর স্বীয় নিয়ামত পরিপূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। অর্থাৎ তার প্রশস্ত আহকাম, কোমলতা, দয়া, সহজকরণ এবং অবকাশ দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অযুর পরে আল্লাহর রাসূল (সঃ) একটি দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন, তা যেন এ আয়াতেরই আওতাভুক্ত রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ, সুনান। এবং সহীহ মুসলিমে হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমরা পালাক্রমে উট চরাতাম। আমি আমার পালার দিন রাত্রে ইশার সময় আগমন করে দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাড়িয়ে জনগণকে কিছু বলতে রয়েছেন। আমি যখন পৌছে গেলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট থেকে শুনতে পেলামঃ “যে মুসলমান ভালভাবে অযু করে আন্তরিকতার সাথে দু’রাকআত নামায পড়বে তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব।” এ কথা শুনে আমি বললাম, বাঃ বাঃ! এটা তো খুবই ভাল কথা। আমার এ কথা শুনে আমার সামনে উপবিষ্ট একজন সাথী বললেনঃ “এর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কথাটি বলেছিলেন তা এর চেয়েও অধিক উত্তম।” আমি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করে বুঝলাম যে, তিনি হচ্ছেন হযরত উমার ফারূক (রাঃ)। আমাকে তিনি বললেন, তুমি তো এখনই আসলে। তোমার আসার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর বলে- (আরবী) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা-ই খুলে যায়, সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন কোন মুসলমান বা মুমিন অযু করতে বসে, অতঃপর তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে তার চক্ষুদ্বয়ের সমুদয় পাপ ঝরে পড়ে। অনুরূপভাবে হাত ধোয়ার সময় হাতের সমুদয় পাপ এবং এভাবেই পা ধোয়ার সময় পায়ের সমুদয় পাপ পানির সাথে সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে ঝরে পড়ে। অবশেষে সে পাপসমূহ থেকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র হয়ে যায়।” ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তি “অযু করার সময় যখন হাত দুটি ধৌত করে তখন হাত হতে পাপরাশি বিদূরিত হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন মুখমণ্ডল হতে পাপসমূহ দূর হয়ে যায়। যখন মাথা মাসেহ করে তখন মাথার গুনাহ দূরীভূত হয়। যখন পা ধুয়ে নেয় তখন পা হতে পাপরাশি ঝরে পড়ে।” অন্য সনদে মাসেহ করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হয়, তার কান হতে, চোখ হতে, হাত হতে এবং পা হতে সমস্ত গুনাহ ঝড়ে পড়ে।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অযু হচ্ছে অর্ধেক ঈমান। আল-হামদুলিল্লাহ’ বলার কারণে পুণ্যের পাল্লা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে ফেলে। রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ, ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি স্বরূপ এবং সাদকা হচ্ছে দলীল স্বরূপ। কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। প্রত্যেক লোক সকালে উঠেই স্বীয় প্রাণকে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। অতঃপর সে ওকে মুক্ত করে দেয় অথবা ধ্বংস করে ফেলে।” সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হারাম মালের সাদকা আল্লাহ কবুল করেন না এবং অযু ছাড়া নামাযও কবুল করেন না।”
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হুকুমটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায়, কুলি করা ও নাক পরিস্কার করাও মুখমণ্ডল ধোয়ার অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া মুখমণ্ডল ধোয়ার কাজটি কখনোই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর কান যেহেতু মাথার একটি অংশ, তাই মাথা মাসেহ করার মধ্যে কানের ভেতরের ও বাইরের উভয় অংশও শামিল হয়ে যায়। তাছাড়া অযু শুরু করার আগে দু’হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। কারণ, যে হাত দিয়ে অযু করা হচ্ছে, তা পূর্ব থেকেই পবিত্র থাকার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি অযু করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অঙ্গসমূহ ধোয়ার মধ্যে বিলম্ব না করা উচিত। এসবের জন্যও হাদীসে বর্ণনা এসেছে। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিধি-বিধানের জন্য তাফসীরে ইবন কাসীর ও তাফসীর কুরতুবী দেখা যেতে পারে]
[২] নু’আইম আল-মুজমির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি ওযু করে বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মতদেরকে কেয়ামতের দিন তাদেরকে ‘গুররান-মুহাজ্জালীন’ বলে ডাকা হবে। (অর্থাৎ ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো উজ্জ্বল অবস্থায় উপস্থিত হবে) কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম, সে যেন তা (বৃদ্ধি) করে। [বুখারী ১৩৬]
[৩] স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাত হোক বা স্বপ্নে বীর্য স্থলনের কারণে হোক উভয় অবস্থায়ই গোসল ফরয। এ অবস্থায় গোসল ছাড়া সালাত আদায় করা ও কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি পানি না পাওয়া যায়, তবে তায়াম্মুমই যথেষ্ট। [সা’দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] ‘মুখমন্ডল ধৌত কর’ অর্থাৎ, একবার, দুইবার অথবা তিনবার করে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা, কুল্লী করা বা কুলকুচা করা অতঃপর নাকের ভিতরে পানি টেনে নিয়ে নাক ঝাড়ার পর — যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। মুখমন্ডল ধৌত করার পর দুই হাত (আঙ্গুলের ডগা হতে) কনুইসহ ধৌত করতে হবে।
[২] পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। যেমনটি হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, (দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুলগুলিকে মুখোমুখি করে) মাথার সামনের দিক থেকে (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের চুল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত, তারপর সেখান থেকে শুরু করে সামনের দিকে নিয়ে এসে যেখান থেকে শুরু করেছিল সে পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। ঐ সঙ্গে কানও মাসাহ করতে হবে। যদি মাথার উপর পাগড়ি বা শিরস্ত্রাণ থাকে, তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে মোজার উপর মাসাহর মত তার উপরেও মাসাহ বৈধ। (মুসলিমঃ পবিত্রতা অধ্যায়) মাসাহ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীসে একবার মাসাহ করাই যথেষ্ট বলা হয়েছে।
[৩] أَرْجُلَكُمْ এর সংযোগ وُجُوهَكُمْ এর সঙ্গে, যার ভাবার্থ হচ্ছে; পায়ের গাঁট বা গোড়ালির উপরের হাড় পর্যন্ত ধৌত কর। পক্ষান্তরে পায়ে যদি চামড়া বা কাপড়ের মোজা থাকে (এবং তা যদি ওযু থাকা অবস্থায় পরিধান করা হয়), তাহলে হাদীসের নির্দেশানুসারে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোজার উপর নিয়মিত মাসাহ করা বৈধ।
আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীঃ (ক) ওযু থাকলে পুনরায় ওযু করা জরুরী নয়। তবে প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুনভাবে ওযু করা উত্তম। (খ) ওযু করার পূর্বে নিয়ত করা ফরয। (গ) ওযু করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা জরুরী। (ঘ) দাঁড়ি ঘন বা জমাট হলে তা খেলাল করতে হবে। (ঙ) ওযুর অঙ্গগুলিকে পর্যায়ক্রমে ধৌত করতে হবে। (চ) একটি অঙ্গ ধোয়ার পর দ্বিতীয় অঙ্গ ধোওয়ায় যেন দেরী না হয়; বরং একের পর এক যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ধৌত করা হয়। (ছ) ওযুর অঙ্গগুলির মধ্যে কোন অঙ্গ যেন শুষ্ক না থেকে যায়, কেননা শুষ্ক থাকলে ওযু হবে না। (জ) ওযুর কোন অঙ্গকে তিনবারের বেশী যেন ধোওয়া না হয়, কারণ এটা সুন্নতের পরিপন্থী। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুত তাফাসীর)
[৪] অপবিত্রতা; ঐ অপবিত্রতাকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বপ্নদোষ অথবা স্ত্রী সহবাস (বা যৌনতৃপ্তির সাথে বীর্যপাতের) ফলে হয়। আর একই বিধান মহিলাদের মাসিক ও (প্রসবোত্তর) নিফাসজনিত অপবিত্রতারও। যখন মহিলার মাসিক বা নিফাস বন্ধ হয়ে যাবে, তখন পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা জরুরী। গোসলের পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করা বিধেয়; যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর ও আইসারুতর তাফাসীর)
[৫] আয়াতের এই অংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং তায়াম্মুমের পদ্ধতি সূরা নিসার ৪:৪৩ নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। সহীহ বুখারীতে এই আয়াতের শানে নুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, কোন এক সফরে আয়েশা (রাঃ) এর গলার হার বাইদা নামক স্থানে হারিয়ে যায়। তা খোঁজার জন্য তাঁদেরকে সেখানে থামতে হয়। ফজরের নামাযের জন্য তাঁদের নিকট পানি ছিল না এবং অনুসন্ধান করার পরও তাঁরা পানি সংগ্রহ করতে পারলেন না। এমতাবস্থায় (আল্লাহ তাআলা) এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হল। উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ) এই আয়াত শুনে বললেন, ‘হে আবু বাকরের বংশধর! তোমাদের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য বরকত অবতীর্ণ করেছেন। আর এটা তোমাদের প্রথম বরকত নয়। (বরং তোমরা মানুষের জন্য সর্বদাই বরকতময়)।’ (বুখারীঃ সূরা মায়েদার তাফসীর)
[৬] এই জন্যই তিনি তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদান করেছেন।
[৭] এই জন্যই হাদীসে ওযু করার পর দু’আ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। দু’আর বই-পুস্তক থেকে এই দু’আ মুখস্থ করে নিন।