(Book# 114/١٨٠)-৩৮২ www.motaher21.net يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। O you who believe! Stand out firmly for Allah… সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৮

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٨٠)-৩৮২
www.motaher21.net

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও।
O you who believe! Stand out firmly for Allah…

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৮

5:8

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُونُوا قَوّٰمِينَ لِلَّهِ شُهَدَآءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَـَٔانُ قَوْمٍ عَلٰىٓ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوٰى ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।

৮ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সম্বোধন করে বলেন, তোমরা কেবল তাঁর জন্যই হকের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়পরায়ণতার সাথে সাক্ষ্য দাও। আর কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে অবিচার করতে প্ররোচিত না করে। সর্বদা সকলের সাথে সুবিচার কর, কোনক্রমেই পার্থিব স্বার্থে কিংবা স্বজন-প্রীতি করে অবিচার করবে না, সে শত্র“ হোক আর মিত্র হোক। এটাই কল্যাণকর ও তাক্বওয়ার কাজ।

এ সম্পর্কে সূরা নিসার ১৩৫ নং আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে।

4:135

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُونُوا قَوّٰمِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلٰىٓ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوٰلِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلٰى بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰىٓ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُۥٓا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।

১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা এখানে মু’মিনদেরকে ন্যায়ের ওপর সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কোন অবস্থাতেই যেন ন্যায় থেকে বিচ্যুত হয়ে ডান-বামে সরে না যায় এবং ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে যেন কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনা প্রভাবিত না করে।

(شُھَدَا۬ئَ لِلہِ)

‘আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ’ অর্থাৎ ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ও ন্যায় সাক্ষ্য প্রদান করা যেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য হয়। যদিও এ ন্যায় সাক্ষ্য নিজের পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে যায়।

(فَاللّٰهُ أَوْلٰي بِهِمَا)

‘আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর’অর্থাৎ কোন ধনভাণ্ডারের ধন ও কোন দরিদ্রের দারিদ্রতার ভয় যেন তোমাদেরকে সত্য কথা বলার পথে বাঁধা না দেয়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তত্ত্বাবধায়ক, তাদের কল্যাণের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন।

(فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوٰٓي)

‘সুতরাং তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ কর‎ না’প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না অর্থাৎ প্রবৃত্তির অনুসরণ যেন তোমাদেরকে পক্ষপাতিত্ব বা বিদ্বেষ করতে বাধ্য না করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يیٰٓاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللہَ وَاٰمِنُوْا بِرَسُوْلِھ۪ یُؤْتِکُمْ کِفْلَیْنِ مِنْ رَّحْمَتِھ۪ وَیَجْعَلْ لَّکُمْ نُوْرًا تَمْشُوْنَ بِھ۪ وَیَغْفِرْ لَکُمْﺚ وَاللہُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌﭫ)‏

“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন এবং তিনি তোমাদেরকে দেবেন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(সূরা হাদীদ ৫৭:২৮)

আর যদি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সাক্ষ্য বিকৃতি ও পরিবর্তন কর তাহলে জেনে রেখ তোমরা যা কর আল্লাহ তা‘আলা সব জানেন। অতএব সাক্ষ্য ও বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সর্বস্তরের মু’মিনদের জন্যই আবশ্যক।

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ন্যায্য সাক্ষীর কত গুরুত্ব ছিল, তা এ ঘটনার দ্বারা অনুমান করা যায়। নুমান বিন বাশির (রাঃ) বলেন: আমার পিতা আমাকে কিছু হাদিয়া (দান) দিলেন। তা দেখে আমার মা বললেন: এ হাদিয়ার ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী না রাখবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হব না। এতে আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি তোমার সব সন্তানদের হাদিয়া দিয়েছ? উত্তরে তিনি বললেন: না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে সুবিচার কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বললেন: আমি জুলুমের ব্যাপারে সাক্ষী হতে পারব না।

বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর আমার পিতা ফিরে আসলেন এবং সে হাদিয়া বাতিল করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৫৮৬)

সুতরাং সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া, সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে উপস্থাপন না করা ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য। পরীক্ষার নম্বর, সনদ, নির্বাচনে ভোট দান করা এবং কারো বাদী হয়ে পক্ষে কথা বলা সবই সাক্ষ্যের শামিল। সবক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দেয়াটাই হল মু’মিনের একান্ত কর্তব্য।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. বিচার ফায়সালা ও সাক্ষ্য দানে ন্যায়ের অনুসরণ করা ওয়াজিব।
২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হারাম।
৩. সাক্ষ্য নিজের বিপক্ষে গেলেও সত্য কথা বলা উচিত।
৪. কোন কিছুর লোভ বা ভয় যেন সত্য সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিচ্যুত না করে।
৫. সর্বদা সকলের ক্ষেত্রে সত্য সাক্ষ্য দেয়া আবশ্যক।
৬. কথা, কাজ ও সাক্ষীর ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করা জরুরী।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 8

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ

O you who believe! Stand out firmly for Allah…

meaning, in truth for the sake of Allah, not for the sake of people or for fame,

شُهَدَاء بِالْقِسْطِ

as just witnesses,

observing justice and not transgression.

It is recorded in the Two Sahihs that An-Nu`man bin Bashir said,

“My father gave me a gift, but Amrah bint Rawahah, my mother, said that she would not agree to it unless he made Allah’s Messenger as a witness to it. So, my father went to Allah’s Messenger to ask him to be a witness to his giving me the gift. Allah’s Messenger asked,

أكل ولدك نحلت مثله

`Have you given the like of it to everyone of your offspring?’

He replied in the negative.

Allah’s Messenger said,

اتَّقُوا اللهَ وَاعْدِلُوا فِي أَوْلَادِكُم

Have Taqwa of Allah and treat your children equally.

And said;

إِنِّي لَا أَشْهَدُ عَلى جَوْر

I shall not be witness to injustice.

My father then returned and took back his gift.”

Allah said;

وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَأنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ

and let not the enmity and hatred of others make you avoid justice.

The Ayah commands:Do not be carried away by your hatred for some people to avoid observing justice with them. Rather, be just with every one, whether a friend or an enemy.

This is why Allah said,

اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى

Be just:that is nearer to Taqwa,

this is better than if you abandon justice in this case. Although Allah said that observing justice is `nearer to Taqwa’, there is not any other course of action to take, therefore `nearer’ here means `is’.

Allah said in another Ayah,

أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَيِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيلً

The dwellers of Paradise will, on that Day, have the best abode, and have the fairer of places for repose. (25:24)

Some of the female Companions said to Umar, “You are more rough and crude than the Messenger of Allah,” meaning, you are rough, not that the Prophet is rough at all.

Allah said next,

وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

and have Taqwa of Allah. Verily, Allah is Well Acquainted with what you do.

and consequently, He will reward or punish you according to your actions, whether good or evil.

Commanding Justice and Conveying the Witness for Allah

Allah commands;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاء لِلّهِ

O you who believe! Stand out firmly for justice, as witnesses to Allah,

Allah commands His believing servants to stand up for justice and fairness and not to deviate from it, right or left. They should not fear the blame of anyone or allow anyone to prevent them from doing something for the sake of Allah. They are also required to help, support and aid each other for Allah’s sake.

Allah’s statement,
شُهَدَاء لِلّهِ
(as witnesses to Allah) is similar to His statement,

وَأَقِيمُواْ الشَّهَـدَةَ لِلَّهِ

And establish the testimony for Allah. (65:2)

Testimony should be delivered precisely, for the sake of Allah, thus making the testimony correct, truly just, and free of alterations, changes or deletions.

This is why Allah said,

وَلَوْ عَلَى أَنفُسِكُمْ

even though it be against yourselves,

meaning, give correct testimony, and say the truth when you are asked about it, even if harm will effect you as a consequence. Indeed, Allah shall make a way out and give relief for those who obey Him in every matter.

Allah’s statement,

أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالَاقْرَبِينَ

or your parents, or your kin,

means, even if you have to testify against your parents and kin, do not compromise for their sake. Rather, give the correct and just witness even if they are harmed in the process, for the truth presides above everyone and is preferred to everyone.

Allah’s statement,

إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقَيرًا فَاللّهُ أَوْلَى بِهِمَا

be he rich or poor, Allah is a better Protector to both.

means, do not favor someone (in your testimony) because he is rich, or feel pity for him because he is poor, for Allah is their caretaker, a better Protector of them than you, and has better knowledge of what is good for them.

Allah’s statement,

فَلَ تَتَّبِعُواْ الْهَوَى أَن تَعْدِلُواْ

So follow not the lusts, lest you may avoid justice;

means, let not desire, lust or the hatred you have against others, lure you into injustice in your affairs. Rather, stand for justice in all situations.

Allah said;

وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَأنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى

And let not the enmity and hatred of others make you avoid justice. Be just:that is nearer to piety. (5:8)

when the Prophet sent Abdullah bin Rawahah to collect the tax on the fruits and produce of the Jews of Khyber, they offered him a bribe so that he would go easy on them. He said; “By Allah! I have come to you from the dearest of the creation to me (Muhammad), and you are more hated by me than an equivalent number of apes and swine. However, my love for him (the Prophet) and hatred for you shall not prevent me from being just with you.” On that, they said, “This (justice) is the basis which the heavens and earth were created.”

We will mention this Hadith later in Surah Al-Ma’idah (Surah 5) Allah willing.

Allah’s statement afterwards,

وَإِن تَلْوُواْ أَوْ تُعْرِضُواْ

and if you Talwu or Tu`ridu.

According to Mujahid and several others among the Salaf,

means, “Distort your testimony and change it.”
Talwu, includes distortion and intentional lying.

For instance, Allah said,

وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَـبِ

And verily, among them is a party who Yalwuna (distort) the Book with their tongues (as they read). (3:78)
Tu`ridu, includes hiding and withholding the testimony.

Allah said,

وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ ءَاثِمٌ قَلْبُهُ

Who hides it, surely, his heart is sinful. (2:283)

The Prophet said,

خَيْرُ الشُّهَدَاءِ الَّذِي يَأْتِي بِشَهَادَتِهِ قَبْلَ أَنْ يُسْأَلَهَا

The best witness is he who discloses his testimony before being asked to do so.

Allah then warned,

فَإِنَّ اللّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

Verily, Allah is Ever Well-Acquainted with what you do.

and will reward or punish you accordingly.

তাফসীরে‌ ইবনে কাসীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন ন্যায়ের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। সেটা থেকে যেন এক ইঞ্চি পরিমাণও এদিক ওদিক সরে না পড়ে। এরূপ যেন না হয় যে তারা কারও ভয়ে, কোন লোভে, কারও তোষামোদে, কারও প্রতি দয়া দেখিয়ে এবং কারও সুপারিশে ইনসাফকে ছেড়ে দেয়। তারা সম্মিলিতভাবে যেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করে। এ ব্যাপারে যেন তারা। একে অপরের সহযোগিতা করতঃ আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির মধ্যে ন্যায় বিচার কায়েম করে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর। (৬৫:২) সাক্ষ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হলেই তা হবে সম্পূর্ণ সঠিক, ন্যায় ভিত্তিক ও সত্য। তাতে থাকবে না কোন পরিবর্তন ও গোপন করার প্রবণতা। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমরা স্পষ্ট ও সত্য সাক্ষ্য প্রদান কর যদিও তা তোমাদের নিজেদের প্রতিকূল হয়। তোমরা সত্য কথা বলা হতে বিরত হয়ো না এবং বিশ্বাস রেখো যে, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় অনুগত দাসদের মুক্তির বহু উপায় বের করে থাকেন। তোমাদের মুক্তি যে মিথ্যা সাক্ষ্যের উপরই নির্ভর করে এমন কোন কথা নয়।

তারপর বলা হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ যদিও সত্য সাক্ষ্য পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের বিপক্ষে হয় তথাপি তোমরা সত্য সাক্ষ্য প্রদান হতে হাত মুখ ফিরিয়ে নিও না। কেননা, সত্য প্রত্যেকের উপর বিচারক। সাক্ষ্য প্রদানের সময় ধনীর প্রতি কোন লক্ষ্য রেখো না বা গরীবের উপরও দয়া প্রদর্শন করো না। তাদের মঙ্গলের বিবেচনা তোমাদের অপেক্ষা তাঁরই বেশী রয়েছে। তোমরা সর্বাবস্থায় সত্য সাক্ষ্যই প্রদান কর। চিন্তা করো, কারও ক্ষতি করতে গিয়ে নিজেরই ক্ষতি সাধন করো না, প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কারও প্রতি শত্রুতা করতঃ ন্যায় ও সাম্য হাত ছাড়া করো না। সদা-সর্বদা ন্যায়ের উপর অটল থাক। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে অন্যায় করতে উত্তেজিত না করে, তোমরা সুবিচার করতে থাক, এটাই হচ্ছে মুত্তাকী হওয়ার খুবই নিকটবর্তী।” (৫:৮)

রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-কে যখন খাইবারবাসীদের ক্ষেত্র ও শস্য পরিমাপের জন্যে প্রেরণ করেন তখন খাইবারবাসী তাকে এ জন্যে ঘুষ প্রদান করতে চায় যে, তিনি যেন পরিমাণ কম বলেন। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “তোমরা জেনে রেখো যে, আল্লাহর শপথ! সমস্ত মাখলুকের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়, পক্ষান্তরে তোমরা আমার নিকট কুকুর ও শূকর হতেও জঘন্য। কিন্তু এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রেমে পড়ে বা তোমাদের শত্রুতাকে সামনে রেখে আমি যে সুবিচার হতে সরে পড়বো ও তোমাদের প্রতি অন্যায় করবো, এটা সম্ভব নয়।” একথা শুনে তারা বলে, “এর দ্বারাই তো আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এ পূর্ণ হাদীসটি সূরা-ই-মায়েদার তাফসীরে ইনশাআল্লাহ আসবে।

অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন-তোমরা যদি সাক্ষ্যে পরিবর্তন আনয়ন কর, মিথ্যা কথা দ্বারা কার্য সাধন কর, প্রকৃত ঘটনার বিপরীত সাক্ষ্য দান কর, জিহ্বা বাঁকা করে পেঁচযুক্ত কথা বলে ঘটনা কম-বেশী কর, কিছু গোপন কর ও কিছু প্রকাশ কর তবে জেনে রেখো যে সর্বজ্ঞ মহাবিচারক আল্লাহ তাআলার সামনে কোন কৌশলে কাজ দেবে না। সেখানে গিয়ে এর প্রতিদান পাবে এবং শাস্তি ভোগ করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘোষণা করেনঃ সর্বোত্তম সাক্ষী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে জিজ্ঞাসার পূর্বেই সত্য সাক্ষ্য প্রদান করে।

এ বিরাট ধর্ম এবং এ মহান রাসূল (সঃ)-কে পাঠিয়ে আল্লাহ তা’আলা এ উম্মতের উপর যে ইহসান করেছেন সেটাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। আর সেই অঙ্গীকারের উপর দৃঢ় থাকার জন্যে তাদেরকে হিদায়াত করেছেন, যে অঙ্গীকার মুসলমানরা করেছিল, তারা আল্লাহর রাসূলের (সঃ) অনুগত হবে, তাঁকে সর্ব প্রকারের সাহায্য করবে, দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, নিজেরা তা কবুল করবে এবং অপরের নিকটও তা পৌছিয়ে দেবে। ইসলাম গ্রহণের সময় প্রতিটি মুমিন স্বীয় বায়আতে উক্ত জিনিসগুলো স্বীকার করতো। সাহাবায়ে কিরাম নিম্নলিখিত ভাষায় বলেছিলেনঃ “আমরা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করছি যে, আমরা শুনতে থাকবো, মানতে থাকবো। আমাদের মনের চাহিদা হোক বা না-ই হোক অথবা অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দেয়া হোক না কেন। কোন যোগ্য লোকের নিকট থেকে আমরা কোন কাজ ছিনিয়ে নেবো না।”

ইরশাদ হচ্ছে-তোমরা ঈমান আনছো না কেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর উপর ঈমান আনার আহ্বান জানাচ্ছেন! আর তিনি তোমাদের নিকট অঙ্গীকারও নিয়েছেন, যদি তোমাদের বিশ্বাস হয়। এটাও বলা হয়েছে যে, এ আয়াতে ইয়াহদীদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদেরকে বলা হচ্ছে- তোমরা তো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আনুগত্য স্বীকারের কথা দিয়েছো, এরপরেও তাঁকে মান্য না করার কি অর্থ হতে পারে? একথাও বলা হয়েছে যে, হযরত আদমের পৃষ্ঠ থেকে বের হবার পর আল্লাহ তা’আলা বানু আদমের নিকট থেকে যে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন- আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সবাই স্বীকারোক্তি করেছিল-হা, আমরা এর উপর সাক্ষী থাকলাম। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী প্রকাশমান। সুদ্দী (রঃ) ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) একে পছন্দনীয় বলেছেন। সর্বাবস্থায় মানুষের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। তিনি অন্তরের ও বক্ষের গোপনীয় কথাও পূর্ণভাবে অবগত রয়েছেন।

ঘোষিত হচ্ছে-হে মুমনিগণ! লোকদেরকে দেখাবার জন্যে নয়, বরং আল্লাহর জন্যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং ইনসাফের সাথে সঠিক সাক্ষী হয়ে যাও। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত নোমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ আমার পিতা আমাকে একটি দান দিয়ে রেখেছিলেন। তখন আমার মা উমরাহ বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেনঃ “আমি এ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারি না যে পর্যন্ত না রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এর উপর সাক্ষী বানানো হয়।’ এ কথা শুনে আমার পিতা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার অনান্য সন্তানদেরকেও কি এরূপ দান দিয়ে রেখেছো?” আমার পিতা উত্তরে বললেনঃ ‘না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “আল্লাহকে ভয় কর এবং স্বীয় সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম কর। যাও, আমি কোন অত্যাচারের উপর সাক্ষী হতে পারি না। আমার পিতা তখন ঐ দান আমার নিকট হতে ফিরিয়ে নেন।

ইরশাদ হচ্ছে- কোন সম্পদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে আদল ও ইনসাফের পথ থেকে সরিয়ে না দেয়। (এখানে কওম’ দ্বারা ইয়াহূদকে বুঝানো হয়েছে। তারা নবী (সঃ)-কে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল। যেমন ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আর সুহাইলী বলেন যে, এখানে কওম’ দ্বারা গাওরাস ইবনে হারিস গাতফানীকে বুঝানো হয়েছে) বন্ধু হোক বা শত্রু হোক, তোমাদের ইনসাফের পক্ষ অবলম্বন করা উচিত। এটাই হচ্ছে তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী। এখানে (আরবী) ঐ (আরবী)-এর উপর (আরবী) করেছে যার দিকে (আরবী) টি ফিরেছে। এ নযীর কুরআন মাজীদে আরও রয়েছে। আরবদের কথাতেও এর ব্যবহার দেখা যায়। কুরআন কারীমের এক জায়গায় রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ তোমরা যদি কোন বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা কর, “আর সে সময় তোমাদেরকে বলা হয়- ফিরে যাও, তাহলে তোমরা ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্যে অধিক পবিত্র থাকার কারণ হবে।”(২৪:২৮) সুতরাং এখানেও (আরবী) -এর (আরবী) -এর উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু (আরবী) এর (আরবী) বিদ্যমান রয়েছে। অর্থাৎ ফিরে যাওয়া। অনুরূপভাবে আয়াতেও এ (আরবী) অর্থাৎ “ইনসাফ করা বিদ্যমান রয়েছে। এটাও স্মরণীয় বিষয় যে, এখানে শব্দটি (আরবী) -এর রূপ। এটা এমন জায়গায় রয়েছে যে অন্যদিকে আর কিছুই নেই। যেমনঃ (আরবী) (২৫ ২৪)-এ আয়াতটিতে রয়েছে। আর যেমন এক মহিলার হযরত উমার (রাঃ)-কে (আরবী) -এ কথা বলা। এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের আমল সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি ভাল ও মন্দের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন। তিনি মুমিনদের পাপ ক্ষমা করে তাদেরকে মহান পুরস্কার অর্থাৎ জান্নাত দান করার অঙ্গীকার করেছেন। যদিও প্রকৃতপক্ষে তারা এ রহমত একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই লাভ করবে, কিন্তু এ রহমতের প্রতি মনোযোগ দেয়ার কারণ হবে তাদের আমল। অতএব, প্রকৃতপক্ষে সর্বপ্রকারের প্রশংসার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ এবং সব কিছুই তারই অনুগ্রহ ও দয়া মাত্র। জ্ঞান ও ইনসাফের দাবী তো এটাই যে, মুমিন ও সৎ লোকদেরকে জান্নাত দেয়া হোক এবং কাফির ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করা হোক। সুতরাং হবেও তাই।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৩৫

টিকা:১৬৪) আল্লাহ কেবল এতটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি যে, তোমরা ইনসাফের দৃষ্টিভংগী অবলম্বন করো এবং ইনসাফের পথে চলো বরং বলেছেন তোমরা ইনসাফের পতাকাবাহী হয়ে যাও। কেবল ইনসাফ করাই তোমাদের কাজ হবে না বরং ইনসাফের ঝাণ্ডা নিয়ে এগিয়ে চলাই হবে তোমাদের কাজ। জুলুম খতম করে তার জায়গায় আদল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে তোমাদের দৃঢ় সংকল্প হতে হবে। আদল ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সহায়ক শক্তির প্রয়োজন মু’মিন হিসেবে তোমাদের যোগান দিতে হবে সেই সহায়ক শক্তি।

টিকা:১৬৫) অর্থাৎ তোমাদের সাক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত। এতে কারো প্রতি দরদ ও সহানুভূতির কোন প্রশ্ন থাকবে না। কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জন তোমাদের লক্ষ্য হবে না।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এমনকি সস্তানদের মধ্যেও সুবিচার করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। নুমান ইবন বাশীর বলেন, তার পিতা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বললেন, আমি আমার এ সন্তানকে একটি দাস উপটৌকন দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এ রকম উপঢৌকন দিয়েছ? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল বললেন, তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও। [বুখারী: ২৫৮৬; মুসলিম: ১৬২৩]

[২] এ আয়াতের বিষয়বস্তু প্রায় এসব শব্দেই অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে। পার্থক্য এতটুকু যে, সেখানে বলা হয়েছিল,

(يٰٓاَيُّھَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلّٰهِ)

[সূরা আন-নিসা: ১৩৫] আর এখানে বলা হচ্ছেঃ

(يٰٓاَيُّھَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ)

সাধারণতঃ দুটি কারণ মানুষকে ন্যায় ও সুবিচারে বাধা-প্রদান এবং অন্যায় ও অবিচারে প্ররোচিত করে। (এক) নিজের অথবা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব। (দুই) কোন ব্যাক্তির প্রতি শক্রতা ও মনোমালিন্য। সূরা আন-নিসার আয়াতে প্রথমোক্ত কারণের উপর ভিত্তি করে সুবিচারের আদেশ দেয়া হয়েছে আর সূরা আল-মায়েদার আলোচ্য আয়াতে শেষোক্ত কারণ হিসেবে বক্তব্য রাখা হয়েছে। সূরা আন-নিসার আয়াতের সারমর্ম এই যে, ন্যায় ও সুবিচারের ক্ষেত্রে নিজের এবং পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনেরও পরওয়া করো না। যদি ন্যায় বিচার তাদের বিরুদ্ধে যায়, তবে তাতেই কায়েম থাক। সূরা আল-মায়েদার আয়াতের সারমর্ম এই যে, ন্যায় ও সুবিচারের ক্ষেত্রে কোন শক্রর শক্রতার কারণে পশ্চাদপদ হওয়া উচিত নয় যে, শক্রর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে সুবিচারের পরিবর্তে অবিচার শুরু করবে। [বাহরে-মুহীত] তাছাড়া সত্য সাক্ষ্য দিতে ত্রুটি না করার প্রতি পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত বিভিন্ন ভঙ্গিতে জোর দিয়েছে। এক আয়াতে অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “সাক্ষ্য গোপন করো না। যে সাক্ষ্য গোপন করে, তার অন্তর পাপী”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৮৩]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] প্রথম অংশের ব্যাখ্যা সূরা নিসার ৪:১৩৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী (সাঃ)-এর নিকট ন্যায্য সাক্ষীর কত বড় গুরুত্ব ছিল, তা এই ঘটনার দ্বারা অনুমান করা যায়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আমাকে কিছু হাদিয়া (দান) দিলেন, তা দেখে আমার মাতা বললেন, ‘এই হাদিয়া বা দানের উপর যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে সাক্ষী না রাখবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হব না।’ সুতরাং আমার পিতা রসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে, (ঘটনা বর্ণনা করলেন।) তখন রসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন; “তুমি তোমার সমস্ত সন্তানদেরকে অনুরূপভাবে হাদিয়া বা উপঢৌকন দিয়েছ কি?” প্রতি উত্তরে (আমার আব্বা) বললেন, ‘না।’ অতঃপর রসূল (সাঃ) বললেন, “আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে সমদৃষ্টিসম্পন্ন সুবিচার কর।” তিনি আরো বললেন, “আমি যুলুমের (অন্যায়ের) সাক্ষী হতে পারব না।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম / কিতাবুল হিবা বা দানপত্র নামক অধ্যায়)

 

Leave a Reply