(Book# 114/١٨٣)-৩৮৫ www.motaher21.net فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعنَّاهُمْ সুতরাং তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নত দিয়েছি٫ So because of their breach of their covenant, We cursed them…, সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-১৩-১৪

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٨٣)-৩৮৫
www.motaher21.net

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعنَّاهُمْ

সুতরাং তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমি তাদেরকে লা‘নত দিয়েছি٫
So because of their breach of their covenant, We cursed them…,

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-১৩-১৪

فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ لَعَنّٰهُمْ وَ جَعَلْنَا قُلُوْبَهُمْ قٰسِیَةًۚ یُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖۙ وَ نَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِهٖۚ وَ لَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اصْفَحْؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ

তারপর তাদের নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই আমি তাদেরকে নিজের রহমত থেকে দূরে নিক্ষেপ করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। এখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা শব্দের হেরফের করে কথাকে একদিক থেকে আর একদিকে নিয়ে যায়, যে শিক্ষা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল তার বড় অংশ তারা ভুলে গেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই তাদের কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতার খবর তুমি লাভ করে থাকো, তাদের অতি অল্প সংখ্যক লোকই এ দোষমুক্ত আছে (কাজেই তারা যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন তাদের যে কোন কুকর্ম মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়) । তাই তাদেরকে মাফ করে দাও এবং তাদের কাজকর্মকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো। আল্লাহ‌ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা সৎকর্মশীলতা ও পরোপকারের নীতি অবলম্বন করে।

সুরা: আল-মায়িদাহ
আয়াত নং :-১৪

وَ مِنَ الَّذِیْنَ قَالُوْۤا اِنَّا نَصٰرٰۤى اَخَذْنَا مِیْثَاقَهُمْ فَنَسُوْا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوْا بِهٖ۪ فَاَغْرَیْنَا بَیْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَ الْبَغْضَآءَ اِلٰى یَوْمِ الْقِیٰمَةِؕ وَ سَوْفَ یُنَبِّئُهُمُ اللّٰهُ بِمَا كَانُوْا یَصْنَعُوْنَ

এভাবে যারা বলেছিল আমরা “নাসারা” তাদের থেকেও আমি পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের স্মৃতিপটে যে শিক্ষা সংবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল তারও বড় অংশ তারা ভুলে গেছে। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও পারস্পরিক হিংসা –বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিয়েছি। আর এমন এক সময় অবশ্যি আসবে যখন আল্লাহ‌ তাদের জানিয়ে দেবেন তারা দুনিয়ায় কি করতো।

১৩-১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বানী ইসরাঈল তথা ইয়াহূদীদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাহায্য করবেন এবং জান্নাত দেবেন যদি তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, রাসূলদের প্রতি ঈমান আনে ও সহযোগিতা করে এবং আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করে। কিন্তু তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। অত্র আয়াতে সে অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। এ অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণতিস্বরূপ- (১) তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা লা’নত করেছেন; অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে তারা বঞ্চিত। (২) তাদের অন্তর কঠিন বানিয়ে দিয়েছেন ফলে কোন উপদেশবাণীর প্রভাব অন্তরে পড়ে না। (৩) আল্লাহ তা‘আলার কালাম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। এ পরিবর্তন দু’ধরনের ছিল, কখনো শব্দের পরিবর্তন, আবার কখনো অর্থের পরিবর্তন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা যে উদ্দেশ্যে তার কালাম নাযিল করেছেন সে উদ্দেশ্য বিকৃত করেছে। দুর্ভাগ্যবশতঃ উম্মাতে মুহাম্মাদীর একশ্রেণীর নামধারী আলেমরাও অন্তরের কঠোরতা এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণীতে পরিবর্তন সাধন করা থেকে বাঁচতে পারেনি। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ কিংবা সুনামের আশায় আয়াতের অপব্যাখ্যা করে নিজের দল বা মতের সমর্থন নেয়ার অপচেষ্টা করে থাকে। (৪) তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছে তা তারা ভুলে গিয়েছে, তার প্রতি আমল করেনি। (৫) সর্বদা খিয়ানত করত। সবচেয়ে বড় খিয়ানত ছিল সত্য গোপন ও মিথ্যার প্রসার।

(فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ)

“সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর ও ছাড় দাও”ক্ষমা ও মার্জনা করার নির্দেশ ঐ সময় দেয়া হয়েছিল যখন জিহাদের অনুমতি ছিল না। পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যায়, আর যুদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قَاتِلُوا الَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوْلُه۫ وَلَا يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ حَتّٰي يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَّدٍ وَّهُمْ صٰغِرُوْنَ)

“যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেন তারা তা হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দীন অনুসরণ করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযিয়া (কর) দেয়।”(সূরা তাওবাহ ৯:২৯)

কতক আলেমের মতে তা রহিত হয়নি বরং তা একটা স্বতন্ত্র নির্দেশ। অবস্থা ও স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পালন করা যেতে পারে।

(وَمِنَ الَّذِيْنَ قَالُوْآ إِنَّا نَصٰرٰٓي)

‘যারা বলে, ‘আমরা খ্রিস্টান’নাসারা শব্দটি নুসরাহ থেকে গৃহিত। যার অর্থ সাহায্য করা। ঈসা (আঃ)-এর কথা

(مَنْ أَنْصَارِي إِلَي اللّٰهِ )

‘আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে?’ এর প্রত্যুত্তরে তাঁর কিছু নিষ্ঠাবান সহচর্য বলেছিলেন:

(نَحْنُ أَنْصَارُ اللّٰهِ)

‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী।’(সূরা সফ ৬১:১৪) এখান হতেই তাদের নামকরণ করা হয়েছে ‘নাসারা’, বর্তমানে যাদেরকে খ্রিস্টান বলা হয় এরা ঈসা (আঃ)-এর অনুসারী ছিল।

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের মত খ্রিস্টানদের থেকেও অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, কিন্তু তারাও অঙ্গীকারের কথা ভুলে যায়। পরিণতিস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাঝে শত্র“তা ও বিদ্ধেষ বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। তাদের নিজেদের মাঝে এ শত্র“তা ও বিদ্বেষ কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।

সুতরাং মুসলিমদের সতর্ক হওয়া উচিত, পূর্ববর্তী দু’জাতির মত যেন আমরাও আল্লাহ তা‘আলার সাথে দেয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ না করি, তাহলে পরিণতি ভাল হবে না।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. বানী ইসরাঈল প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করার কারণে তাদের ওপর যে শাস্তি এসেছে সে সম্পর্কে অবগত হলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলার কালামের অপব্যাখ্যা করা পরিবর্তন করার শামিল।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জাতি থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন, যারা ভঙ্গ করেছে তাদের পরিণতি হয়েছে অত্যন্ত ভয়াবহ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:৩৬) অনেকে মনে করেন নাসারা (نَصَارَى) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে হযরত ঈসার জন্মভূমির নাম ‘নাসেরা’ (نَاصِره) থেকে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। আসলে নাসারা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘নুসরাত’ (نُصرَت) থেকে। ঈসা আলাইহিস সালামের উক্তি مَنْ أَنْصَارِى إِلَى اللَّهِ (আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? ) এর জবাবে তাঁর হাওয়ারীগণنَحنُ أَنصَارُ الله (আমরা হবো আল্লাহর কাজে সাহায্যকারী) বলে বক্তব্য পেশ করেছিলেন। সেখান থেকেই এর উৎপত্তি। খৃস্টান লেখকরা নিছক বাহ্যিক সাদৃশ্য দেখে এ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন যে, খৃস্টবাদের ইতিহাসের প্রথম যুগে নাসেরীয়া (Nazarenes) নামে একটি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল, তাদেরকে তাচ্ছিল্যের সাথে নাসেরী ও ইবূনী বলা হতো এবং কুরআন দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করছে যে, তারা নিজেরাই বলেছিলঃ ‘আমরা নাসার’। আর একথাও সুস্পষ্ট যে, খৃস্টানরা নিজেরা কখনো নিজেদেরকে নাসেরী বলে পরিচয় দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম কখনো নিজের অনুসারীদেরকে ‘ঈসায়ী’ ‘খৃস্টান’ বা ‘মসীহী’ নামে আখ্যায়িত করেননি। কারণ তিনি নিজের নামে কোন নতুন ধর্মের ভিত্তিস্থাপন করতে আসেননি। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর আগের ও পরের নবীগণ যে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন তারই পুনরুজ্জীবন ছিল তাঁর দাওয়াতের লক্ষ্য। তাই তিনি সাধারণ বনী ইসরাঈলদের এবং মূসার শরীয়াতের অনুসারীদের থেকে আলাদা কোন দলগঠন করেননি এবং তাদের কোন আলাদা নামও রাখেননি। তাঁর প্রাথমিক যুগের অনুসারীরা নিজেদেরকে ইসরাঈলী মিল্লাত থেকে আলাদা মনে করতেন না এবং নিজেরা কোন স্বতন্ত্র দল হিসেবেও সংগঠিত হননি। নিজেদের পরিচিতির জন্য তারা কোন বৈশিষ্ট্যমূলক নাম ও চিহ্ন গ্রহণ করেননি। তারা ইহুদীদের সাথে বাইতুল মাকদিসের হাইকেলেই (ধর্মধাম) ইবাদাত করতে যেতেন এবং মূসার শরীয়াতের বিধিবিধান মেনে চলাকেই নিজেদের কর্তব্য মনে করতেন। (দেখুন বাইবেল, প্রেরিতদের কার্য বিবরণ পুস্তক ৩: ১-১০, ৫: ২১-২৫)। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষ থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একদিকে হযরত ঈসার (আ) অনুসারীদের মধ্য থেকে সেন্টপল ঘোষণা করেন যে, শরীয়াতের বিধান অনুসরণের আর প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র ঈসার ওপর ঈমান আনাই নাজাতের তথা পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট। আবার অন্যদিকে ইহুদী আলেমগণও হযরত ঈসার অনুসারীদেরকে একটি পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় বলে ঘোষণা করে তাদেরকে সাধারণ বনী ইসরাঈলদের থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। কিন্তু এ বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও শুরুতে এ নতুন সম্প্রদায়ের কোন পৃথক নাম ছিল না। হযরত ঈসার অনুসারীরা নিজেদেরকে কখনো ‘শিষ্য’ বলে উল্লেখ করতেন, কখনো ‘ভ্রাতৃগণ’ (ইখওয়ান), ‘বিশ্বাসী’ (মু’মিন), ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে’ (আল্লাযীনা আমানূ) আবার কখনো ‘পবিত্রগণ’ বলেও উল্লেখ করেছেন (প্রেরিতদের কার্যবিবরণ পুস্তক, ২:৪৪, ৪:৩২, ৯:২৬, ১১:২৯, ১৩:৫২, ১৫:১ ও ২৩, রোমীয় ১৫:২৫, কলসীয় ১:১২)। অন্যদিকে ইহুদীরা এদেরকে কখনো ‘গালীলী’, কখনো ‘নাসেরী’ বা ‘নাসরতী’ আবার কখনো ‘বেদাতী সম্প্রদায়’ বলে অভিহিত করতো (প্রেরিতদের কার্য বিবরণ ২৪:৫, লুক ১৩:২)। নিছক নিন্দা ও বিদ্রূপচ্ছলে হযরত ঈসার অনুসারীদেরকে এ নামে ডাকার কারণ ছিল এই যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মভূমি ছিল নাসেরা এবং তা ছিল ফিলিস্তিনের গালীল জেলার অন্তর্গত। কিন্তু তাদের এ বিদ্রূপাত্মক শব্দগুলো খুব বেশী প্রচলিত হতে পারেনি। ফলে এগুলো হযরত ঈসার অনুসরীদের নামে পরিণত হতে সক্ষম হয়নি।

এ দলের বর্তমান নাম “খৃস্টান” (Christian) সর্বপ্রথম আন্তাকিয়াতে (أَنطَاكِيَّه) প্রদত্ত হয়। সেখানে ৪৩ বা ৪৪ খৃস্টাব্দে কতিপয় মুশরিক অধিবাসী হযরত ঈসার অনুসরীদেরকে এ নামে অভিহিত করে। সে সময় সেন্টপল ও বার্নাবাস সেখানে পৌঁছে ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত হন। (প্রেরিতদের কার্য ১১:২৬)। এ নামটিও মূলত বিরোধীদের পক্ষ থেকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপচ্ছলেই রাখা হয়েছিল। ঈসার অনুসারীরা নিজেরাও এটাকে তাদের নাম হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তাদের শত্রুরা যখন তাদেরকে ঐ নামে ডাকতে শুরু করলো তখন তাদের নেতারা বললেন, যদি তোমাদেরকে খৃস্টের সাথে যুক্ত করে খৃস্টান বলে ডাকা হয়। তাহলে তাতে তোমাদের লজ্জা পাবার কি কারণ থাকতে পারে? (১-পিতর ৪:১৬) এভাবে তারা নিজেরাই ধীরে ধীরে শত্রুদের বিদ্রূপচ্ছলে দেয়া এ নাম নিজদেরকে আখ্যায়িত করতে থাকে। অবশেষে তাদের মধ্যে এ অনুভূতিই খতম হয়ে যায় যে, এটি আসলে একটি খারাপ নাম এবং তাদেরকে শত্রুরা বিদ্রূপচ্ছলে এ নাম দিয়েছিল।

কুরআন এ কারণেই খৃস্টের অনুসারীদের ঈসায়ী, মসীহী বা খৃস্টান নাম আখ্যায়িত করেনি। বরং তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, তোমরা আসলে সেসব লোকদের অন্তর্গত যাদেরকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ‘মান আনসারী ইলাল্লাহ (কে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? ) বলে আহবান জানিয়েছিলেন এবং এর জবাবে সেই লোকেরা বলেছিল ‘নাহ্নু আনসারুল্লাহ (আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী)। তাই তোমরা নিজেদের প্রাথমিক ও মৌলিক তাৎপর্যের দিক দিয়ে নাসারা বা আনসার। কিন্তু আজকের খৃষ্টীয় মিশনারীরা এ বিস্মৃত বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেবার কারণে কুরআনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে উল্টো অভিযোগ জানাচ্ছে যে, কুরআন তাদেরকে খৃস্টান না বলে নাসারা বলছে কেন?

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

ইরশাদ হচ্ছে-আল্লাহ সৎকর্মশীদের ভালবাসেন। অর্থাৎ যারা অপরের দুর্ব্যবহার ক্ষমা করতঃ তার সাথে সৎ ব্যবহার করে, এরূপ লোককে আল্লাহ খুবই ভালবাসেন। কাতাদাহ্ (রঃ) বলেন যে, দুর্ব্যবহারকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার হুকুম জিহাদের আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।

ঘোষণ করা হচ্ছে-খ্রীষ্টানদের নিকট থেকেও আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম যে, তারা আমার প্রেরিত রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান আনবে, তাঁকে সাহায্য করবে এবং তার আনুগত্য স্বীকার করবে। কিন্তু ইয়াহূদীদের মত তারাও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এর শাস্তি স্বরূপ আমি তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে দিয়েছি এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। তারা আজ দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল অপর দলকে কাফির ও অভিশপ্ত বলছে এবং নিজেদের উপাসনালয়েও আসতে দেয় না। মালেকিয়াহ দল ইয়াকুবিয়্যাহ দলকে খোলাখুলিভাবে কাফির বলছে। এরূপ সমস্ত দলই করতে রয়েছে।

আল্লাহ পাক বলেনঃ অচিরেই আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সংবাদ দেবেন। এ কথা দ্বারা খ্রীষ্টানদেরকে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। কেননা, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে। তারা মহান আল্লাহর স্ত্রী ও সন্তান সাব্যস্ত করেছে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করা হবে। আল্লাহ তো হচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয়, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন। আর তাঁর সমতুল্য ও সমকক্ষ কেউই নেই।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, বনী-ইসরাঈল দুর্ভাগ্যবশতঃ এসব সুস্পষ্ট নির্দেশের প্রতি কৰ্ণপাত করেনি এবং অঙ্গীকারের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বিভিন্ন আযাবে নিক্ষেপ করেন। অবাধ্যতার ফলে তাদের অন্তর ও মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে যায়। তাতে চিন্তা-ভাবনা ও বুঝার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়। ফলে তারা পাপের পরিণামে আরও পাপে লিপ্ত হতে থাকে। [ইবন কাসীর]

[২] এ আয়াতে বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার ভঙ্গের পাঁচটি শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে দু’টি শাস্তির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেনঃ “আমরা বিশ্বাসঘাতকতা ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করার সাজা হিসেবে তাদেরকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিলাম”। ফলে এখন এতে কোন কিছুর সংকুলান রইল না। রহমত থেকে দূরে পড়া এবং অন্তরের কঠোরতাকেই সূরা আল-মুতাফফিফীনে ‘মরিচা’ শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহর আয়াত ও তাঁর উজ্জ্বল নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করার কারণ এই যে, তাদের অন্তরে পাপের কারণে ‘মরিচা’ পড়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেনঃ ‘মানুষ প্রথমে যখন কোন পাপ কাজ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এরপর যদি সে সতর্ক হয়ে তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে পাপ না করে, তবে এ দাগ মিটিয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যদি সে সতর্ক না হয় এবং উপর্যুপরি পাপ কাজ করেই চলে, তবে প্রত্যেক গোনাহর কারণে একটি করে কাল দাগ বেড়ে যেতে থাকে । শেষ পর্যন্ত তার অন্তর কাল দাগে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন তার অন্তরের অবস্থা ঐ পাত্রের মত হয়ে যায়, যা উপুড় করে রাখা হয় এবং কোন জিনিস রাখলে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে আসে। পরে পাত্রে কিছু থাকে না । ফলে কোন সৎ ও পুণ্যের বিষয় তার অন্তরে স্থান পায় না। তখন তার অন্তর কোন পুণ্য কাজকে পুন্য এবং মন্দ কাজকে মন্দ মনে করে না। [তিরমিযীঃ ৩৩৩৪, ইবন মাজাহঃ ৪২৪৪, মুসনাদে আহমাদঃ ২/২৯৭] অর্থাৎ ব্যাপার উল্টো হয়ে যায়। দোষকে গুণ, পুণ্যকে পাপ এবং পাপকে সওয়াব মনে করতে থাকে এবং অবাধ্যতা বেড়েই চলে। এভাবে বনী-ইসরাঈলরা অঙ্গীকার ভঙ্গের নগদ দুটি সাজা এই লাভ করে যে, মুক্তির সর্ববৃহৎ উপায় আল্লাহর রহমত থেকে তারা দূরে সরে যায় এবং অন্তর এমন পাষাণ হয়ে যায়। তৃতীয় সাজা হচ্ছে যে, আল্লাহর কালামকে তারা স্বস্থান থেকে ঘুরিয়ে দেয় অর্থাৎ আল্লাহর কালামে পরিবর্তন করে। কখনও শব্দে, কখনও অর্থে এবং কখনও তিলাওয়াতে পরিবর্তন করে। পরিবর্তনের এ প্রকারগুলো কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আজকাল পাশ্চাত্যের কিছু সংখ্যক নাসারাও তাদের মধ্যে যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে তা কিছু কিছু স্বীকার করে। তাদের চতুর্থ সাজা হচ্ছে যে, তারা তাদেরকে কিতাবের যে অংশ দেয়া হয়েছিল তার অনেকাংশ হারিয়ে ফেলে বা ভুলে যায়। এটাও তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ। তাদের পঞ্চম শাস্তি হচ্ছে যে, তারা সবসময় খেয়ানতে লিপ্ত থাকবে। আল্লাহর সাথেও তারা খেয়ানত করবে, তাঁর নির্দেশ ও নিষেধে ভ্রুক্ষেপ করবে না। অনুরূপভাবে তারা মানুষের সাথেও খেয়ানত করতে থাকবে। [সা’দী]

[৩] এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নাসারাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের সাজা বর্ণনা করে বলেছেন যে, তাদের পরস্পরের মধ্যে বিভেদ, বিদ্বেষ ও শক্রতা সঞ্চারিত করে দেয়া হয়েছে- যা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বর্তমানেও নাসারাদের মৌলিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বড় মতানৈক্য, পরস্পর বিভেদ ও বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত। নাসারাদের বিভিন্ন উপদলের মধ্যে যে সমস্ত বিভেদ তা বহুমাত্রিক। সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন কোনভাবেই সম্ভব নয়। [ইবন কাসীর]

কাতাদা বলেন, ‘এ সম্প্রদায় যখন আল্লাহর কিতাব ছেড়ে দিল, ফরযসমূহ নষ্ট করল, হদসমূহ বাস্তবায়ণ বন্ধ করল, তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত শক্রতা ও বিদ্বেষ জাগরুক করে দেয়া হলো, এটা তাদেরই খারাপ কর্মফলের কারণে তাদের উপর আপতিত হয়েছে। যদি তারা আল্লাহর কিতাব ও তার নির্দেশের বাস্তবায়ন করত, তবে তারা এ ধরনের মতপার্থক্য ও বিদ্বেষে লিপ্ত হতো না’। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, এ আয়াতে যাদের মধ্যে শক্রতা ও বিদ্বেষ জাগরুক রাখার কথা বলা হয়েছে, তারা হচ্ছে ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়। [আততাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ, এত বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা এবং অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির পরেও বানী-ইস্রাঈল তা ভঙ্গ করে, যার ফলে তারা আল্লাহর অভিশাপের শিকার হয়। অভিশাপের পরিণাম ইহকালে এটাই প্রকাশ পায় যে, (এক) তাদের হৃদয় কঠোর করে দেওয়া হয়। যার কারণে তাদের হৃদয় প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয় এবং নবীগণের উপদেশবাণী তাদের কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে। (দুই) আল্লাহর বাণীকে তারা হেরফের ও পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তন দুই ধরনের ছিল, কখনও শব্দের পরিবর্তন, আবার কখনও অর্থের পরিবর্তন। আর তা এ কথার প্রমাণ যে, বুদ্ধি ও বুঝ-শক্তিতে বক্রতা এসেছিল এবং তাদের দুঃসাহসিকতা এত বেশী বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, আল্লাহর আয়াতকে পর্যন্ত হেরফের করতে তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদিয়ারও কিছু লোক অন্তরের উক্ত কঠোরতা এবং আল্লাহর বাণীতে পরিবর্তন সাধন করা থেকে বাঁচতে পারেনি। মুসলমান দাবীদার কোন সাধারণ লোক নয়; বরং বিশিষ্ট লোক এবং মূর্খ নয়; বরং উলামা (শিক্ষিত) শ্রেণীর মানুষ, এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, উপদেশ ও নসীহত এবং আল্লাহর বিধানের স্মরণ দানও তাঁদের নিকট অর্থহীন। শ্রবণ করার পরও তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব বিস্তার করে না এবং যে ঔদাস্য ও ত্রুটি-বিচ্যুতে তাঁরা নিমজ্জিত, তা থেকে তারা তওবা ও প্রত্যাবর্তন করে না। অনুরূপভাবে নিজেদের মনগড়া বিদআত ও কল্পনাপ্রসূত মতবাদ এবং (আয়াত ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট উক্তির) অপব্যাখ্যা প্রমাণ করার লক্ষ্যে দুঃসাহসিকতার সাথে আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করে ফেলে!

[২] (তিন) আল্লাহর বিধানের উপর আমল করার ব্যাপারে তাদের তেমন কোন আগ্রহ ও কৌতূহল নেই; বরং সৎকর্মহীনতা ও কুকর্ম তাদের জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আর তারা হীনতার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, না তাদের হৃদয় সুস্থ আছে, আর না তাদের প্রকৃতি সরল।

[৩] এই অল্প সংখ্যক লোক ইয়াহুদীদের মধ্য থেকে মুসলমান হয়েছিলেন, তাঁদের সংখ্যা দশ থেকেও কম ছিল।

[৪] অর্থাৎ, বিশ্বাসঘাতকতা বা খেয়ানত এবং প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও ধূর্তামি তাদের চাল-চলনে ও আচরণের একটি অংশে পরিণত হয়েছে, যার নমুনা আপনার সম্মুখে সব সময় পেশ হতে থাকবে।

[৫] ক্ষমা ও মার্জনা করার নির্দেশ ঐ সময় দেওয়া হয়েছিল যখন জিহাদের অনুমতি ছিল না। পরবর্তীতে তা রহিত করে তার স্থলে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, {قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآَخِر} অর্থাৎ, তোমরা যুদ্ধ কর ঐ লোকদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। (সূরা তাওবা ৯:২৯) কিন্তু কিছু উলামাগণের নিকটে এই নির্দেশ রহিত হয়নি; বরং এটা একটা স্বতন্ত্র নির্দেশ বা হুকুম। আর অবস্থা ও কাল-পাত্র ভেদে (উল্লিখিত নির্দেশ) পালন করা যেতে পারে। পরন্তু এর মাধ্যমেও কতক সময় এমন পরিণাম সামনে আসে, যার জন্য যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
[৬] نصارى (নাসারা) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে نصرة ‘নুসরাহ’ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে, সাহায্য করা। ঈসা (আঃ)-এর উক্তি {مَنْ أَنْصاَرِى إِلَى الله} অর্থাৎ, আল্লাহর দ্বীনে কে আমার সাহায্যকারী হবে? এর প্রত্যুত্তরে তাঁর কিছু ন্যায়-নিষ্ঠাবান অনুগত শিষ্য বলেছিলেন, {نَحْنُ أَنْصاَرُ الله} অর্থাৎ, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। এখান হতেই তাদের নাম হয়েছে ‘নাসারা।’ এরাও ইয়াহুদীদের মতই আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। এদের নিকট থেকেও আল্লাহ তাআলা অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ঐ অঙ্গীকারের কোন পরোয়া করেনি। যার পরিণাম স্বরূপ তাদের হৃদয়ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া থেকে শূন্য এবং তাদের কর্ম মূল্যহীন হয়ে যায়।

[৭] এ হল আল্লাহর অঙ্গীকার হতে অপসরণ এবং আমল না করার শাস্তি যে, কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের হৃদয়ে পারস্পরিক শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। সুতরাং খ্রিষ্টানরাও কয়েক ফির্কাতে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যারা পারস্পরিক প্রচন্ড ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করে, একে অপরকে ‘কাফের’ বলে থাকে এবং এক ফির্কা অন্য ফির্কার উপাসনালয়ে উপাসনা করে না। মনে হচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহর উপরেও ঐ ধরণের শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ মুসলিমরাও বিভিন্ন ফির্কাতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যাদের মাঝে প্রচন্ড মতবিরোধ, মতানৈক্য, পারস্পরিক ঘৃণা, শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষের প্রাচীর খাড়া হয়ে আছে। আল্লাহ রহম করুন।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 13-14

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعنَّاهُمْ

So because of their breach of their covenant, We cursed them…,

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعنَّاهُمْ

So because of their breach of their covenant, We cursed them…,

Allah states, because of their breaking the promise that We took from them, We cursed them, deviated them away from the truth, and expelled them from guidance,

وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً

and made their hearts grow hard…,

and they do not heed any word of advice that they hear, because of the hardness of their hearts.

يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ

They change the words from their (right) places…,

Since their comprehension became corrupt, they behaved treacherously with Allah’s Ayat, altering His Book from its apparent meanings which He sent down, and distorting its indications.

They attributed to Allah what He did not say, and we seek refuge with Allah from such behavior.

وَنَسُواْ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِ

and have abandoned a good part of the Message that was sent to them.

by not implementing it and by ignoring it.

Allah said next,

وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىَ خَأيِنَةٍ مِّنْهُمْ

إِلاَّ قَلِيلً مِّنْهُمُ

And you will not cease to discover deceit in them, except a few of them.

such as their plots and treachery against you, O Muhammad, and your Companions.

Mujahid said that;

this Ayah refers to their plot to kill the Messenger of Allah.

فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ

But forgive them, and overlook (their misdeeds).

This, indeed, is the ultimate victory and triumph.

Some of the Salaf said,

“You would never treat those who disobey Allah with you better than obeying Allah with them.”

This way, their hearts will gather around the truth and Allah might lead them to the right guidance.

This is why Allah said,

إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

Verily, Allah loves the doers of good.

Therefore, forgive those who err against you.

Qatadah said that;

this Ayah was abrogated with Allah’s statement,

قَاتِلُواْ الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الاخِرِ

Fight against those who believe not in Allah, nor in the Last Day. (9:29)
The Christians Also Broke their Covenant with Allah and the Repercussion of this Behavior

Allah said

وَمِنَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّا نَصَارَى أَخَذْنَا مِيثَاقَهُمْ

And from those who call themselves Christians, We took their covenant,

Meaning:`From those who call themselves Christians and followers of `Isa, son of Maryam, while in fact they are not as they claim. We took from them the covenant and pledges that they would follow the Prophet, aid him, honor him and follow his footsteps.’ And that they would believe in every Prophet whom Allah sends to the people of the earth. They imitated the Jews and broke the promises and the pledges.

This is why Allah said,

فَنَسُواْ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

but they have abandoned a good part of the Message that was sent to them. So We planted amongst them enmity and hatred till the Day of Resurrection;

Meaning:`We planted enmity and hatred between them, and they will remain like this until the Day of Resurrection.’

Indeed, the numerous Christian sects have always been enemies and adversaries of each other, accusing each other of heresy and cursing each other. Each sect among them excommunicates the other sects and does not allow them entrance to their places of worship.

The Monarchist sect accuses the Jacobite sect of heresy, and such is the case with the Nestorians and the Arians. Each sect among them will continue to accuse the other of disbelief and heresy in this life and on the Day when the Witnesses will come forth.

Allah then said,

وَسَوْفَ يُنَبِّيُهُمُ اللّهُ بِمَا كَانُواْ يَصْنَعُونَ

and Allah will inform them of what they used to do.

warning and threatening the Christians because of their lies against Allah and His Messenger and their false claims about Allah, hallowed be He above what they say about Him. The Christians attribute a companion and a son to Allah, while He is the One and Only, the All-Sufficient, Who neither begets nor was He begotten, and there is none like unto Him.

Leave a Reply