(Book# 114/١٨٧)-৩৮৯ www.motaher21.net فَلَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ সুতরাং তুমি ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’। So do not grieve for the rebellious people. সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-২০-২৬

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٨٧)-৩৮৯
www.motaher21.net

فَلَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

সুতরাং তুমি ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’।

So do not grieve for the rebellious people.

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-২০-২৬

وَإِذْ قَالَ مُوسٰى لِقَوْمِهِۦ يٰقَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنۢبِيَآءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا وَءَاتٰىكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعٰلَمِينَ

আর যখন মূসা তার কওমকে বলল, ‘হে আমার কওম, স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী বানিয়েছেন এবং তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ বানিয়েছেন, আর তোমাদেরকে দান করেছেন এমন কিছু যা সকল সৃষ্টির মধ্যে কাউকে দান করেননি’।

আয়াত:- ২১

يٰقَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِى كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلٰىٓ أَدْبَارِكُمْ فَتَنقَلِبُوا خٰسِرِينَ

‘হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে’।

আয়াত:- ২২

قَالُوا يٰمُوسٰىٓ إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ وَإِنَّا لَن نَّدْخُلَهَا حَتّٰى يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِن يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِنَّا دٰخِلُونَ

তারা বলল, ‘হে মূসা, নিশ্চয় সেখানে রয়েছে এক শক্তিশালী জাতি এবং আমরা নিশ্চয় সেখানে প্রবেশ করব না, যতক্ষণ না তারা সেখান থেকে বের হয়। অতঃপর যদি তারা সেখান থেকে বের হয়, তবে নিশ্চয় আমরা প্রবেশ করব’।

আয়াত:- ২৩

قَالَ رَجُلَانِ مِنَ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوا عَلَيْهِمُ الْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غٰلِبُونَ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

যারা ভয় করে, তাদের মধ্য থেকে এমন দু’ব্যক্তি বলল, ‘যাদের উপর আল্লাহ নিআমত দিয়েছেন, ‘তোমরা তাদের নিকট দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। যখন সেখানে প্রবেশ করবে, তখন নিশ্চয় জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুমিন হও’।

5:24

قَالُوا يٰمُوسٰىٓ إِنَّا لَن نَّدْخُلَهَآ أَبَدًا مَّا دَامُوا فِيهَا ۖ فَاذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقٰتِلَآ إِنَّا هٰهُنَا قٰعِدُونَ

তারা বলল, ‘হে মূসা, আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না, যতক্ষণ তারা সেখানে থাকে। সুতরাং, তুমি ও তোমার রব যাও এবং লড়াই কর। আমরা এখানেই বসে রইলাম’।

5:25

قَالَ رَبِّ إِنِّى لَآ أَمْلِكُ إِلَّا نَفْسِى وَأَخِى ۖ فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفٰسِقِينَ

সে বলল, ‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই ছাড়া কারো উপরে অধিকার রাখি না। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন।

5:26

قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ ۛ أَرْبَعِينَ سَنَةً ۛ يَتِيهُونَ فِى الْأَرْضِ ۚ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفٰسِقِينَ

তিনি বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয় তা তাদের জন্য চল্লিশ বছর নিষিদ্ধ; তারা যমীনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে। সুতরাং তুমি ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’।

২০-২৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মূসা (আঃ)-এর সময়ের কথা স্মরণ করতে বলছেন যখন আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ) ও তাঁর জাতিকে ফির‘আউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিযার্তন ও দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে অনুগ্রহ করেছিলেন। তারা মুক্তি পাবার পর তাদের মাতৃভূমি বাইতুল মুক্বাদ্দাস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা দখলে আনার জন্য বের হয়েছিল, তাদের মাতৃভূমি থেকে শত্র“দেরকে হটানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর জিহাদ ফরয করে দিলেন। সে সময় মূসা (আঃ) জাতিকে নসিহত করলেন এবং আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন যাতে তারা জিহাদে বের হয়।

(اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ)

‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর’অর্থাৎ মূসা (আঃ) বললেন: তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যে নেয়ামত দান করেছেন তা স্মরণ কর আর আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করো না। বাণী ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন, এ সম্পর্কে সূরা বাকারার ৪৯-৫৭ নং আয়াতের তাফসীরে আলোচনা করা হয়েছে।

(إِذْ جَعَلَ فِيْكُمْ أَنْۭـبِيَا۬ءَ)

‘যখন তিনি তোমাদের মধ্য হতে নাবী করেছিলেন’অর্থাৎ বানী ইসরাঈলের যে সকল নেয়ামত দান করা হয়েছে, তার অন্যতম হল ধারাবাহিকভাবে তাদের মধ্য থেকে নাবী রাসূলগণের আগমন। এ সকল নাবী-রাসূল তাদেরকে হিদায়াত ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করতেন এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করতেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الْأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ

বানী ইসরাঈলের মাঝে ধারাবাহিকভাবে নাবীগণ আগমন করেছেন, যখনই কোন নাবী মারা গেছেন তখনই আরেকজন নাবী এসেছেন। কিন্তু আমার পর আর কোন নাবী আসবে না। তবে অনেক খলীফা হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৫৫) আর তাদেরকে আধিপত্য ও তৎকালীন পৃথিবীর এমন সব জিনিস দান করেছিলেন যা অন্য কাউকে প্রদান করেননি।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,

(وَجَعَلَكُمْ مُّلُوْكًا)

তোমাদেরকে বাদশা বানিয়েছেন, এর অর্থ হল: একজন খাদেম, স্ত্রী ও বাড়ি দিয়েছেন। কেননা যার খাদেম, স্ত্রী ও বাড়ি আছে তাকে বাদশা বলা হয়। (তাবারী ৯/১০৬)

তাছাড়া যখন ফির‘আউনের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেল তখন তাদের সব কিছুর মালিকানা ফিরে পেল, দাসত্ব থেকে মুক্তি পেল এবং নিজেদের দীন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হল।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ اٰتَيْنَا بَنِيْٓ إِسْرَا۬ئِيْلَ الْكِتٰبَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنٰهُمْ مِّنَ الطَّيِّبٰتِ وَفَضَّلْنٰهُمْ عَلَي الْعٰلَمِيْنَ)

“আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব (তাওরাত) বিধান ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিযিক ও বিশ্বজগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।”(সূরা জাসিয়া ৪৫:১৬)

এসব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে পবিত্র ভূমি উদ্ধারের জন্য জিহাদ করার নির্দেশ দিলেন। পবিত্র ভূমি বলতে কেউ বলেছেন, তুর পাহাড় ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা, কেউ বলেছেন, আরিহা। তবে অধিকাংশরাই বলেছেন, বাইতুল মুক্বাদ্দাস। বাইতুল মুক্বাদ্দাস ইয়া‘কূব (আঃ)-এর আবাসস্থল। কিন্তু ইউসুফ (আঃ) মিসরের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর তারা সকলেই মিসরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরিশেষে মূসা (আঃ) ফির‘আউনের কবল থেকে মুক্তি লাভের জন্য গোপনিয়ভাবে রাতারাতি বানী ইসরাঈলকে নিয়ে মিসরে চলে আসেন। সে সময় বাইতুল মুক্বাদ্দাস আমালিকা জাতির শাসনে ছিল। যারা বীর বাহাদুর ছিল। যখন মূসা (আঃ) বাইতুল মুক্বাদ্দাস গিয়ে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন আমালিকা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ যোঘণা করলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা জিহাদ ফরয করে দিলেন এবং এ জিহাদে পিছপা হতে বারণ করলেন। সাথে সাথে সুসংবাদ দিলেন যে, (الَّتِيْ كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ) এ ভূমির তোমরাই উত্তরাধিকারী হবে এ ওয়াদা বানী ইসরাঈলেরকে আল্লাহ তা‘আলা প্রদান করেছেন। সুতরাং তোমরা বিজয়ী হবে। কিন্তু তারপরেও মূসা (আঃ)-এর সাথে তাঁর সম্প্রদায় এ বেআদবীপূর্ণ আচরণ করল। তারা অবাধ্য হয়ে গেল।

(مَّا دَامُوْا فِيْهَا)

‘যতক্ষণ তারা সেখানে থাকবে।’অর্থাৎ তারা বলল: শক্তিশালী আমালিকা জাতি সেখান থেকে বের না হলে আমরা সেখানে প্রবেশ করব না।

(قَالَ رَجُلٰنِ مِنَ الَّذِيْنَ يَخَافُوْنَ)

‘যারা (আল্লাহকে) ভয় করত, তাদের মধ্য থেকে দু’ব্যক্তি বলল’ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তারা হলেন, ইউশা বিন নূন ও কালিব বিন ইউফানা। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) অর্থাৎ তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করল যে, যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা ওয়াদা দিয়েছেন সুতরাং যাও, জিহাদ কর, তোমরা অবশ্যই বিজয়ী হবে। তোমরা যদি মু’মিন হও তাহলে আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করা উচিত। কারণ, তোমরা কোন্ জাতি বা শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করছ সেটা লক্ষ্য করার বিষয় নয়, বরং ঈমান ও ভরসা নিয়ে জিহাদ করলে অবশ্যই বিজয় লাভ করবে। এ উম্মতকেও আল্লাহ তা‘আলা সে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَا تَهِنُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ)

আর তোমরা হীনবল ও দুঃখিত হয়ো না বস্তুত যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে। (সূরা আলি-ইমরান ৩:১৩৯)

সুতরাং মুসলিমরা যদি সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর অটল থাকে তাহলে পৃথিবীর যত বড় পরাশক্তিই হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে তাদের ওপর বিজয় দান করবেন।

তারপরেও তাদের ঔদ্ধত্য আরো বেড়ে গেল। তারা বলল:

(فَاذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقٰتِلَا)

‘অতএব তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও এবং দু’জনে লড়াই কর’ অর্থাৎ তাদেরকে বিজয়ের প্রতিশ্র“তি দেয়ার পরেও তারা কাপুরুষতা, অবাধ্যতা ও বিদ্রƒপ প্রকাশ করে বলল যে, তুমি ও তোমার প্রভু যাও, যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসে রইলাম।

কিন্তু নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীরা এরূপ ছিলেন না। বদরের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। আবূ বকর (রাঃ) উত্তম পরামর্শ দিলেন, এভাবে সকল মুহাজির সাহাবী উত্তম পরামর্শ দিলেন। তারপর আনসারদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কারণ আনসারদের সংখ্যা বেশি ছিল। সা‘দ বিন মুয়ায (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! হয়তো আপনি আমাদের মনের ইচ্ছা জানতে চাইছেন। তাহলে শুনুন! যে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ করে বলছি: আপনি যদি আমাদেরকে সমুদ্রের তীরে দাঁড় করিয়ে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন তাহলে আমরা আপনার কথামত নির্দ্বিধায় তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব। আপনি দেখবেন যে, একজন ব্যক্তিও তীরে দাঁড়িয়ে নেই। আপনি আগ্রহের সাথে আমাদেরকে শত্র“র মোকাবিলার জন্য নিয়ে চলুন। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে স্থির পদে টিকে থাকবো তা আপনি দেখতে পাবেন। আপনি আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে চলুন; আমাদের বীরত্ব ও ধৈর্য দেখে আপনার চক্ষু শীতল হবে ইনশা-আল্লাহ। আমরা সেরূপ কথা বলব না যেমন বানী ইসলাঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিল যে, “অতএব তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও এবং দু’জনে লড়াই কর, আমরা এখানেই বসে রইলাম।”(ইবনু হিশাম ২/২১৯)

(فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ)

‘তাদের জন্য এ দেশ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবৈধ করা হল’দেশ বলতে তীহ ময়দানকে বুঝানো হয়েছে। তাদের এরূপ আচরণের কারণে তীহ ময়দানে চল্লিশ বছর উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ানোর শাস্তি বদ্ধমূল করে দিলেন। এরপরেও এ ময়দানে মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করা হয়।

মূলত তাদেরকে কোন প্রাচীর দ্বারা ঘেরাও করা হয়নি এবং হাত পায়ে শিকল দ্বারা বাধাও ছিল না। বরং তারা ছিল উন্মুক্ত প্রান্তরে। তারা নিজ দেশ মিসরে ফিরে আসার জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথ চলত কিন্তু তারা নিজেদেরকে সেখানেই দেখতে পেত যেখান থেকে রওয়ানা করেছিল। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (রহঃ)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, এ অবাধ্য জাতির জন্য কোন দুঃখ কর না। এ তীহ প্রান্তরে মূসা ও হারুন (আঃ) ইনতেকাল করেন। তারপর ইউশা বিন নূনের নেতৃত্বে বায়তুল মুক্বাদ্দাস জয় করে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. পূর্ববর্তী নাবীদের সাথে তাদের উম্মাতের লোকেরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছিল।
২. নাবীদের অনুসরণে রয়েছে সফলতা। আর বিরোধীতায় রয়েছে অকল্যাণ।
৩. প্রত্যেক যুগেই সৎ ব্যক্তি বিদ্যমান ছিল।
৪. পাপাচারীদের ওপর শাস্তি নেমে আসলে তাতে আফসোস করা অনুচিত।
৫. মু’মিনরা ঈমানে ও আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসায় অটল থাকলে যেকোন শক্তিশালী জাতির বিরুদ্ধে জিহাদ করে বিজয়ী হবে ইনশা-আল্লাহ।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 20-26

فَلَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

So do not grieve for the rebellious people.

Musa Reminds His People of Allah’s Favors on Them; The Jews Refuse to Enter the Holy Land

Allah states that His servant, Messenger, to whom He spoke directly, Musa, the son of Imran, reminded his people that among the favors Allah granted them, is that He will give them all of the good of this life and the Hereafter, if they remain on the righteous and straight path.

Allah said,

وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنبِيَاء

And (remember) when Musa said to his people:”O my people! Remember the favor of Allah to you, when He made Prophets among you,

for whenever a Prophet died, another rose among them, from the time of their father Ibrahim and thereafter.

There were many Prophets among the Children of Israel calling to Allah and warning against His torment, until `Isa was sent as the final Prophet from the Children of Israel. Allah then sent down the revelation to the Final Prophet and Messenger, Muhammad, the son of Abdullah, from the offspring of Ismail, the son of Ibrahim, peace be upon them. Muhammad is the most honorable Prophet of all times.

Allah said next,

وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا

made you kings,

Abdur-Razzaq recorded that Ibn Abbas commented:

“Having a servant, a wife and a house.”

In his Mustadrak, Al-Hakim recorded that Ibn Abbas said,

“A wife and a servant,

وَاتَاكُم مَّا لَمْ يُوْتِ أَحَدًا مِّن الْعَالَمِينَ

and gave you what He had not given to any other among the nations (Alamin),

means, during their time.”

Al-Hakim said,

“Sahih according to the criteria of the Two Sahihs, but they did not collect it.”

Qatadah said,

“They were the first people to take servants.”

A Hadith states,

مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ امِنًا فِي سِرْبِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا

He among you who wakes up while healthy in body, safe in his family and having the provision for that very day, is as if the world and all that was in it were collected for him.

Allah’s statement,
وَاتَاكُم مَّا لَمْ يُوْتِ أَحَدًا مِّن الْعَالَمِينَ
(and gave you what He had not given to any other among the nations (Al-`Alamin)).

means, during your time, as we stated.

The Children of Israel were the most honorable among the people of their time, compared to the Greek, Copts and the rest of mankind.

Allah said in another Ayah,

وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا بَنِى إِسْرَءِيلَ الْكِتَـبَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَـهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَـتِ وَفَضَّلْنَـهُمْ عَلَى الْعَـلَمينَ

And indeed We gave the Children of Israel the Scripture, and the understanding of the Scripture and its laws, and the Prophethood; and provided them with good things, and preferred them above the nations (Al-`Alamin). (45:16)

Allah said,

لَّهُمْ قَالُواْ يَمُوسَى اجْعَلْ لَّنَأ إِلَـهًا كَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ

إِنَّ هَـوُلاءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَـطِلٌ مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

قَالَ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَـلَمِينَ

They said:”O Musa! Make for us a god as they have gods.” He said:”Verily, you are an ignorant people.” (Musa added:) “Verily, these people will be destroyed for that which they are engaged in (idol worship).” And all that they are doing is in vain. He said:”Shall I seek for you a god other than Allah, while He has given you superiority over the nations.” (7:138-140)

Therefore, they were the best among the people of their time. The Muslim Ummah is more respected and honored before Allah, and has a more perfect legislative code and system of life, it has the most honorable Prophet, the larger kingdom, more provisions, wealth and children, a larger domain and more lasting glory than the Children of Israel. Allah said,

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ

Thus We have made you, a just (the best) nation, that you be witnesses over mankind. (2:143)

We mentioned the Mutawatir Hadiths about the honor of this Ummah and its status and honor with Allah, when we explained Allah’s statement in Surah Al-Imran,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ
(You are the best of peoples ever raised up for mankind…). (3:110)

Allah next says;

يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الَارْضَ المُقَدَّسَةَ

“O my people! Enter the Holy Land,

Allah states that Musa encouraged the Children of Israel to perform Jihad and enter Jerusalem, which was under their control during the time of their father Yaqub. Yaqub and his children later moved with his children and household to Egypt during the time of Prophet Yusuf. His offspring remained in Egypt until their exodus with Musa. They found a mighty, strong people in Jerusalem who had previously taken it over. Musa, Allah’s Messenger, ordered the Children of Israel to enter Jerusalem and fight their enemy, and he promised them victory and triumph over the mighty people if they did so. They declined, rebelled and defied his order and were punished for forty years by being lost, wandering in the land uncertain of where they should go. This was their punishment for defying Allah’s command.

Allah said that Musa ordered them to enter the Holy Land,

الَّتِي كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ

which Allah has assigned to you

meaning, which Allah has promised to you by the words of your father Israil, that it is the inheritance of those among you who believe.

وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِكُمْ

and turn not back

in flight from Jihad.

فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ

قَالُوا يَا مُوسَى إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ وَإِنَّا لَن نَّدْخُلَهَا حَتَّىَ يَخْرُجُواْ مِنْهَا فَإِن يَخْرُجُواْ مِنْهَا فَإِنَّا دَاخِلُونَ

“. ..for then you will be returned as losers.”

They said, “O Musa! In it are a people of great strength, and we shall never enter it, till they leave it; when they leave, then we will enter.”

Their excuse was this, in this very town you commanded us to enter and fight its people, there is a mighty, strong, vicious people who have tremendous physique and physical ability. We are unable to stand against these people or fight them. Therefore, they said, we are incapable of entering this city as long as they are still in it, but if they leave it, we will enter it. Otherwise, we cannot stand against them.
The Speeches of Yuwsha` (Joshua) and Kalib (Caleb)

Allah said

قَالَ رَجُلَنِ مِنَ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِمَا

Two men of those who feared (Allah and) on whom Allah had bestowed His grace said…,

When the Children of Israel declined to obey Allah and follow His Messenger Musa, two righteous men among them, on whom Allah had bestowed a great bounty and who were afraid of Allah and His punishment, encouraged them to go forward.

It was also said that the Ayah reads in a way that means that these men were respected and honored by their people. Ibn Abbas, Mujahid, Ikrimah, Atiyah, As-Suddi, Ar-Rabi` bin Anas and several other Salaf and latter scholars stated that;

These two men were Yuwsha`, the son of Nun, and Kalib, the son of Yufna.

These two men said to their people,

ادْخُلُواْ عَلَيْهِمُ الْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَالِبُونَ وَعَلَى اللّهِ فَتَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّوْمِنِينَ

“Assault them through the gate, for when you are in, victory will be yours. And put your trust in Allah if you are believers indeed.”

Therefore, they said, if you rely on and trust in Allah, follow His command and obey His Messenger, then Allah will give you victory over your enemies and will give you triumph and dominance over them. Thus, you will conquer the city that Allah has promised you.

This advice did not benefit them in the least,

قَالُواْ يَا مُوسَى إِنَّا لَن نَّدْخُلَهَا أَبَدًا مَّا دَامُواْ فِيهَا فَاذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِل إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ

They said, “O Musa! We shall never enter it as long as they are there. So go, you and your Lord, and fight you two, we are sitting right here.”

This is how they declined to join Jihad, defied their Messenger, and refused to fight their enemy.
The Righteous Response of the Companions During the Battle of Badr

Compare this to the better response the Companions gave to the Messenger of Allah during the battle of Badr, when he asked for their advice about fighting the Quraysh army that came to protect the caravan led by Abu Sufyan. When the Muslim army missed the caravan and the Quraysh army, between nine hundred and one thousand strong, helmeted and drawing closer, Abu Bakr stood up and said something good. Several more Muhajirin also spoke, all the while the Messenger of Allah saying,

أشيروا علي أيها المسلمون

Advise me, O Muslims!

inquiring of what the Ansar, the majority then, had to say.

Sa`d bin Mu`adh said,

“It looks like you mean us, O Messenger of Allah! By He Who has sent you with the Truth! If you seek to cross this sea and went in it, we will follow you and none among us will remain behind. We would not hate for you to lead us to meet our enemy tomorrow. We are patient in war, vicious in battle. May Allah allow you to witness from our efforts what comforts your eyes. Therefore, march forward with the blessing of Allah.”

The Messenger of Allah was pleased with the words of Sa`d and was encouraged to march on.

Abu Bakr bin Marduwyah recorded that Anas said that;

when the Messenger of Allah went to Badr, he asked the Muslims for their opinion, and Umar gave his.

The Prophet again asked the Muslims for their opinion and the Ansar said, “O Ansar! It is you whom the Prophet wants to hear.”

They said, “We will never say as the Children of Israel said to Musa,
فَاذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِل إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ
(So go, you and your Lord, and fight you two, we are sitting right here).

By He Who has sent you with the Truth! If you took the camels to Bark Al-Ghimad (near Makkah) we shall follow you.”

Imam Ahmad, An-Nasa’i and Ibn Hibban also recorded this Hadith.

In the Book of Al-Maghazi and At-Tafsir, Al-Bukhari recorded that Abdullah bin Mas`ud said,

“On the day of Badr, Al-Miqdad said, `O Messenger of Allah! We will never say to you what the Children of Israel said to Musa,
فَاذْهَبْ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِل إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ
(So go, you and your Lord, and fight you two, we are sitting right here).

Rather, march on and we will be with you.’

The Messenger of Allah was satisfied after hearing this statement.”
Musa Supplicates to Allah Against the Jews

Musa said,

قَالَ رَبِّ إِنِّي لا أَمْلِكُ إِلاَّ نَفْسِي وَأَخِي فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

“O my Lord! I have power only over myself and my brother, so separate us from the rebellious people!”

When the Children of Israel refused to fight, Musa became very angry with them and supplicated to Allah against them,
رَبِّ إِنِّي لا أَمْلِكُ إِلاَّ نَفْسِي وَأَخِي
(O my Lord! I have power only over myself and my brother’), meaning, only I and my brother Harun among them will obey, implement Allah’s command and accept the call,
فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ
(So Ifruq us from the rebellious people!).

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said,

“Meaning, judge between us and them.”

Ali bin Abi Talhah reported similarly from him.

Ad-Dahhak said that the Ayah means,

“Judge and decide between us and them.”

Other scholars said that the Ayah means,

“Separate between us and them.”
Forbidding the Jews from Entering the Holy Land for Forty Years

Allah said

قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ أَرْبَعِينَ سَنَةً يَتِيهُونَ فِي الَارْضِ

Therefore it is forbidden to them for forty years; in distraction they will wander through the land.

When Musa supplicated against the Jews for refusing to fight in Jihad, Allah forbade them from entering the land for forty years. They wandered about lost in the land of At-Tih, unable to find their way out.

During this time, tremendous miracles occurred, such as the clouds that shaded them and the manna and quails Allah sent down for them. Allah brought forth water springs from solid rock, and the other miracles that He aided Musa bin Imran with.

During this time, the Tawrah was revealed and the Law was established for the Children of Israel and the Tabernacle of the Covenant was erected.
Conquering Jerusalem

Allah’s statement,
أَرْبَعِينَ سَنَةً
(for forty years),

defines,
يَتِيهُونَ فِي الَارْضِ
(in distraction they will wander through the land).

When these years ended, Yuwsha bin Nun led those who remained among them and the second generation, and laid siege to Jerusalem, conquering it on a Friday afternoon. When the sun was about to set and Yuwsha feared that the Sabbath would begin, he said (to the sun),

“You are commanded and I am commanded, as well. O Allah! Make it stop setting for me.”

Allah made the sun stop setting until Yuwsha bin Nun conquered Jerusalem.

Next, Allah commanded Yuwsha to order the Children of Israel to enter Jerusalem from its gate while bowing and saying Hittah, meaning, `remove our sins.’ Yet, they changed what they were commanded and entered it while dragging themselves on their behinds and saying, `Habbah (a seed) in Sha`rah (a hair).”

We mentioned all of this in the Tafsir of Surah Al-Baqarah.

Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas commented,
قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ أَرْبَعِينَ سَنَةً يَتِيهُونَ فِي الَارْضِ
(Therefore it is forbidden to them for forty years; in distraction they will wander through the land).

“They wandered in the land for forty years, during which Musa and Harun died, as well as everyone above forty years of age. When the forty years ended, Yuwsha son of Nun assumed their leadership and later conquered Jerusalem.

When Yuwsha was reminded that the day was Friday and the sun was about to set, while they were still attacking Jerusalem, he feared that the Sabbath might begin. Therefore, he said to the sun, `I am commanded and you are commanded.’

Allah made the sun stop setting and the Jews conquered Jerusalem and found wealth unseen before. They wanted to let the fire consume the booty, but the fire would not do that. Yuwsha said, `Some of you have committed theft from the booty.’ So he summoned the twelve leaders of the twelve tribes and took the pledge from them. Then, the hand of one of them became stuck to the hand of Yuwsha and Yuwsha said, `You committed the theft, so bring it forth.’ So, that man brought a cow’s head made of gold with two eyes made of precious stones and a set of teeth made of pearls. When Yuwsha added it to the booty, the fire consumed it, as they were prohibited to keep the booty.”

There is evidence supporting all of this in the Sahih.
Allah Comforts Musa

Comforting Musa, Allah said

فَلَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

So do not grieve for the rebellious people.

Allah said:Do not feel sorrow or sadness over My judgment against them, for they deserve such judgment. This story chastises the Jews, exposes their defiance of Allah and His Messenger, and their refusal to obey the order for Jihad. They were weak and could not bear the thought of fighting their enemy, being patient, and enduring this way.

This occurred although they had the Messenger of Allah and the one whom He spoke to among them, the best of Allah’s creation that time. Their Prophet promised them triumph and victory against their enemies.

They also witnessed the torment and punishment of drowning with which Allah punished their enemy Fir`awn and his soldiers, so that their eyes were pleased and comforted. All this did not happen too long ago, yet they refused to perform Jihad against people who had less than a tenth of the power and strength than the people of Egypt had. Therefore, the evil works of the Jews were exposed to everyone, and the exposure was such an enormous one that the night, or the tail, can never cover its tracks.

They were also blinded by their ignorance and transgression. Thus, they became hated by Allah, and they became His enemies. Yet, they claim that they are Allah’s children and His loved ones! May Allah curse their faces that were transformed to the shape of swine and apes, and may Allah’s curse accompany them to the raging Fire. May Allah make them abide in the Fire for eternity, and He did; all thanks are due to Him.

তাফসীরে‌ ইবনে কাসীর বলেছেন:-

২০-২৬ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে আল্লাহর নিয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। এরই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বললেনঃ “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ঐ নিয়ামতের একথা স্মরণ কর যে, তিনি তোমাদের মধ্যে তোমাদেরই মধ্য হতে একের পর এক নবী পাঠাতে রয়েছেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর পর হতে আজ পর্যন্ত তাঁরই বংশধরের মধ্যে নবুওয়াত রয়েছে। এসব নবী তোমাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে রয়েছেন।

এ ক্রমপরম্পরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর শেষ হয়েছে। অতঃপর নবী ও রাসূলদের নেতা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে পরিপূর্ণ নবুওয়াত দান করা হয়। তিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনিই ছিলেন সমস্ত নবী ও রাসূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। হে আমার কওম! তোমরা আরও স্মরণ কর যে, মহান আল্লাহ তোমাদেরকে বাদশাহ বানিয়ে দিয়েছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে বাদশাহ বানিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাদেরকে খাদেম, স্ত্রী এবং ঘরবাড়ী দান করেছেন। তিনি আরও বর্ণনা করেছেন যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে কোন লোকের স্ত্রী, খাদেম ও ঘরবাড়ী থাকলেই তাকে বাদশাহ বলা হতো। ইবনে জারীর (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তাকে একটি লোক জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি কি মুহাজির দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত নই।” তিনি (আবদুল্লাহ) উত্তরে বলেনঃ “তোমার কি স্ত্রী রয়েছে?” তিনি বলেনঃ ‘হ্যা। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার কি ঘরবাড়ী রয়েছে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা”; তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “তাহলে তো তুমি ধনীদেরই অন্তর্ভুক্ত।” লোকটি তখন বললেনঃ “আমার খাদেমও রয়েছে।” এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ “তুমি তাহলে বাদশাহদেরই অন্তর্ভুক্ত। হযরত হাসান বসরী (রাঃ) বলেন যে, যার সওয়ারী, খাদেম ও ঘরবাড়ী রয়েছে সেই বাদশাহ। কাতাদার (রঃ) উক্তি এই যে, প্রথম প্রথম বানী ইসরাঈলের মধ্যেই খাদেমদের প্রচলন হয়েছিল। একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, তাদের মধ্যে যার কাছে খাদেম, সওয়ারী ও স্ত্রী থাকতো তাকেই বাদশাহ বলা হতো। আর একটি মারফু হাদীসে আছে যে, যার ঘরবাড়ী ও খাদেম রয়েছে সে বাদশাহ। এ হাদীসটি মুরসাল’ ও ‘গারীব। একটি হাদীসে আছে- “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় সকাল করলো যে, তার শরীর সুস্থ, তার প্রাণে শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে এবং সারাদিনের জন্যে যথেষ্ট হয় এ পরিমাণ খাবারও তার কাছে রয়েছে, সে যেন সারা দুনিয়াকেই পেয়ে বসেছে। সেই সময় যে ইউনানী, কিবতী ইত্যাদি ছিল তাদের চেয়ে এদেরকে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আয়াতে রয়েছে- আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে সারা বিশ্বের উপর মর্যাদা দিয়েছিলাম। যখন বানী ইসরাঈল মুশরিকদের দেখাদেখি হযরত মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ বানাতে বললো তখন হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে উত্তরে বলেছিলেনঃ “তিনি তোমাদেরকে সারা বিশ্বের উপর মর্যাদা দান করেছেন।” এর ভাবার্থ সব জায়গায় একই যে, আল্লাহ পাক বানী ইসরাঈলকে সেই যুগের সমস্ত মানুষের উপর ফযীলত দান করেছিলেন। কেননা, এটাতো প্রমাণিত বিষয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদী তাদের অপেক্ষা সবদিক দিয়েই উত্তম। কেননা, স্বয়ং কুরআন কারীমে ঘোষণা করা হচ্ছে- (আরবী) (৩:১১০) এবং অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- (আরবী) (২:১২৪)

একথাও বলা হয়েছে যে, এ ফযীলতে উম্মতে মুহাম্মাদীকেও বানী ইসরাঈলদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন মান’ ও ‘সালওয়া’ নামক খাদ্য অবতরণ করা, মেঘ দ্বারা ছায়া দান করা ইত্যাদি, যা ছিল সত্যিই অস্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের উক্তি ওটাই যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে– তাদেরকে সেই সময়ের লোকদের উপর ফযীলত দেয়া হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

এরপর বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তাদের দাদা হযরত ইয়াকূব (আঃ)- এর যুগে বায়তুল মুকাদ্দাস প্রকৃতপক্ষে তাদেরই দখলে ছিল এবং যখন তারা সপরিবারে মিসরে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট চলে গিয়েছিল তখন তথায় আমালেকা জাতি তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। তাদের হাত পা ছিল অত্যন্ত শক্ত। তখন হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের উপর জয়যুক্ত করবেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরায় তোমাদের দখলে এনে দেবেন। কিন্তু বানী ইসরাঈল ভীরুতা প্রদর্শন করতঃ হযরত মূসা (আঃ)-এর কথা অমান্য করলো। এরই শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে তীহ ময়দানে উদ্বিগ্ন অবস্থায় অবস্থান করতে হলো (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্র। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা তূর পর্বত ও ওর চার পাশের ভূমিকে বুঝানো হয়েছে এবং ওটাকে ‘ঈলিয়া’ বলা হয়। একটি বর্ণনায় (আরবী) শব্দের উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা, (আরবী) কে জয় করা উদ্দেশ্যও ছিল না এবং ওটা তাদের পথের উপরেও ছিল না। কারণ, ফিরাউনের ধ্বংস সাধনের পর তারা মিসর শহর থেকেই আসছিল এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পথে ভ্রমণ করছিল। এটা হতে পারে যে, ওটা ঐ বিখ্যাত শহরই হবে যা তূর পর্বতের দিকে বায়তুল মুকাদ্দাসের পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল।

‘যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে লিখে দিয়েছেন’-এর ভাবার্থ এই যে, বানী ইসরাঈলকে বলা হচ্ছে- তোমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইসরাঈল (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ পাক ওয়াদা করেছিলেন যে, ঐ পুণ্যভূমি তিনি তার পরবর্তী মুমিন সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রদান করবেন। সুতরাং হে বানী ইসরাঈল! তোমরা যখন ওটাকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছ তখন তোমরা ধর্মত্যাগী হয়ে যেয়ো না। অর্থাৎ জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে পড়ো না, নতুবা তোমরা ভীষণ ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে।

তারা তখন উত্তরে হযরত মূসা (আঃ)-কে বললোঃ আপনি আমাদেরকে যে শহরে যেতে বলেছেন এবং যে শহরবাসীদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন, সে সম্পর্কে আমাদের অভিমত এই যে, তারা যে খুব শক্তিশালী বীর পুরুষ তা আমাদের বেশ ভালভাবেই জানা আছে। সুতরাং আমরা তাদের সাথে মোকাবিলা করতে পারবো না। আর যে পর্যন্ত তারা ঐ শহরে বিদ্যমান থাকবে। সে পর্যন্ত আমরা ওর মধ্যে প্রবেশ করতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম থাকবো। তবে যদি তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে আমরা তথায় প্রবেশ করবো। এটা ছাড়া আপনার নির্দেশ পালন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত মূসা (আঃ)‘আরীহা’র নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি বারোজন গুপ্তচর নিযুক্ত করলেন। বানী ইসরাঈলের প্রত্যেক গোত্র থেকে তিনি একজন করে গুপ্তচর গ্রহণ করলেন। অতঃপর সঠিক সংবাদ আনয়নের জন্যে তাদেরকে আরীহায় প্রেরণ করলেন। এ লোকগুলো তথায় গিয়ে তাদের মোটা দেহ ও শক্তি দেখে ভয় পেয়ে গেলো। তারা সবাই একটা বাগানে অবস্থান করছিল। ঘটনাক্রমে বাগানের মালিক ফল পাড়ার জন্যে তথায় আগমন করলো। সে ফল পেড়ে নিয়ে ফলের সাথে সাথে ঐগুলোকেও গাঁঠরির মধ্যে ভরে নিলো এবং বাদশাহর সামনে হাযির হয়ে ফলের গাঠরি খুলে ফেললো। গাঠরির মধ্যে এরা সবাই ছিল। বাদশাহ তাদেরকে বললেনঃ “এখন তো আমাদের শক্তি অনুমান করতে পেরেছো। আমি তোমাদেরকে হত্যা করছি না। যাও, তোমাদের লোকদের কাছে ফিরে আমাদের সম্পর্কে অবহিত কর।” সুতরাং তারা ফিরে গিয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলো, যার ফলে বানী ইসরাঈল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু এ হাদীসটির ইসনাদ ঠিক নয়।

আর একটি বর্ণনায় আছে যে, তাদের মধ্যে একটি লোক ঐ বারোজন লোককে ধরে ফেললো এবং স্বীয় চাদরের গাঠরিতে তাদেরকে বেঁধে ফেললো এবং শহরে নিয়ে গিয়ে জনগণের সামনে তাদেরকে নিক্ষেপ করলো। তারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলোঃ “তোমরা কোথাকার লোক?” তারা উত্তরে বললোঃ “আমরা হযরত মূসা (আঃ)-এর কওমের লোক। আপনাদের খবরাখবর নেয়ার জন্যে আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। তারা এমন একটি আঙ্গুর তাদেরকে প্রদান করলো যা একটি লোকের জন্যে যথেষ্ট ছিল। আর তারা তাদেরকে বললোঃ “যাও, তোমরা তোমাদের লোকদেরকে বলে দাও যে, এটা হচ্ছে তাদের ফল।” তারা ফিরে গিয়ে স্বীয় কওমের নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলো। তখন হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে ঐ শহরে প্রবেশ করার ও শহরবাসীদের সাথে জিহাদ করার নির্দেশ দিলেন। তারা তাঁকে স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিলো-আপনি ও আপনার প্রভু গমন করুন, অতঃপর যুদ্ধ করুন, আমরা এখান হতে নড়ছি না।

হযরত আনাস (রাঃ) একটি বাঁশ মেপে নেন যার দৈর্ঘ্য ছিল পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন হাত। অতঃপর তিনি ওটা গেড়ে দিয়ে বলেনঃ “ঐ আমালীকদের দেহ এ পরিমাণ লম্বা ছিল।” মুফাসসিরগণ অনেক ইসরাঈলী রিওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন যে, ঐ লোকগুলোর এ পরিমাণ শক্তি ছিল, তারা এ পরিমাণ মোটা ছিল এবং এতোটা লম্বা ছিল। আওজ ইবনে আনাক ইবনে হযরত আদম (আঃ) তাদেরই মধ্যে একজন ছিল যার দেহ ছিল তিন হাজার তিনশ তেত্রিশ গজ লম্বা এবং দেহের প্রস্থ ছিল তিন গজ। কিন্তু এসব একেবারেই বাজে কথা এবং এ কথা উল্লেখ করাই লজ্জাজনক ব্যাপার। এগুলো সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ)-কে ষাট হাত লম্বা করে সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর আজ পর্যন্ত মখলুকের দেহের দৈর্ঘ হ্রাস পেতে আছে। এই ইসরাঈলী রিওয়ায়াতগুলোতে এও রয়েছে যে, আওজ ইবনে আনাক কাফির ও জারজ ছিল। সে হযরত নূহ (আঃ)-এর তুফানের সময় বিদ্যামান ছিল। সে নূহ (আঃ)-এর সাথে নৌকায় উঠেনি। তথাপি পানি তার জানু পর্যন্ত পৌছেনি। এটাও একেবারে ভিত্তিহীন, বাজে ও মিথ্যা কথা। কুরআন কারীমের এটা সম্পূর্ণ উলটো। কুরআন মাজীদে হযরত নূহ (আঃ)-এর প্রার্থনার উল্লেখ আছে। তিনি প্রার্থনায় বলেছিলেনঃ “হে আমার প্রভু! ভূ-পৃষ্ঠে একজন কাফিরও যেন রক্ষা না পায়।” প্রার্থনা কবুলও হয়েছিল। আর হয়েছিলও তা-ই। কুরআনে কারীমে ঘোষিত হয়েছে- “আমি নূহ (আঃ)-কে এবং তার নৌকার আরোহীদেরকে রক্ষা করেছিলাম এবং সমস্ত কাফিরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।” স্বয়ং কুরআনে উল্লিখিত রয়েছে- “যাদের উপর আল্লাহর রহমত রয়েছে তারা ছাড়া আজকের দিন কেউই রক্ষা পাবে না।” বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, স্বয়ং নূহ (আঃ)-এর ছেলেও ঈমানদার ছিল না বলে রক্ষা পায়নি, অথচ কাফির ও জারজ সন্তান আওজ ইবনে আনাক বেঁচে গেল। এটা আকল ও নাকল উভয়েরই বিপরীত। বরং আওজ ইবনে আনাক বলে যে কোন লোক ছিল এটাই তো আমরা বিশ্বাস করি না। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

বানী ইসরাঈল যখন তাদের নবীকে মানলো না বরং বেআদবী করলো, তখন যে দু’ব্যক্তির উপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছিল তারা তাদেরকে বুঝাতে লাগলেন। তাঁদের অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল যে, বানী ইসরাঈলের শয়তানীর কারণে না জানি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে। এক কিরআতে (আরবী) শব্দের পরিবর্তে (আরবী) শব্দ রয়েছে, যার ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, কওমের মধ্যে ঐ দু’ব্যক্তির ইজ্জত ও সম্মান ছিল। একজনের নাম ছিল হযরত ইউশা ইবনে নূন এবং অপরজনের নাম ছিল হযরত কালিব ইবনে ইউফনা। তারা দু’জন তাদেরকে বললেনঃ “যদি তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা কর, তাঁর রাসূলের অনুগত হও, তবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে ঐ শক্রদের উপর জয়যুক্ত করবেন এবং স্বয়ং তিনি তোমাদেরকে শক্তি ও সাহায্য দান করবেন। তোমরা এই শহরে বিজয়ী বেশে প্রবেশ করবে। তোমরা দরজা পর্যন্ত তো চল এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, বিজয় লাভ তোমাদেরই হবে।” ঐ কাপুরুষের দল তখন তাদের প্রথম উত্তরকে আরও মজবুত করে বললোঃ “এই প্রতাপশালী কওমের বিদ্যমানতায় আমরা একটি কদমও বাড়াতে পারবো না।” হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ) তাদের এই অবস্থা দেখে তাদেরকে অনেক বুঝালেন এবং শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে বিনয়ও প্রকাশ করলেন। কিন্তু তারা কোনক্রমেই মানলো না। এই অবস্থা দেখে হযরত ইউশা এবং হযরত কালিব নিজেদের কাপড় ফেড়ে ফেললেন এবং তাদেরকে অনেক ভৎসনা করলেন। কিন্তু সেই হতভাগার দল অবাধ্যতার উপর অটল থাকলো। এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে, তারা ঐ মহান ব্যক্তিদ্বয়কে পাথর মেরে শহীদ করে দিয়েছিল। হঠকারিতার তুফান শুরু হয়ে গেল এবং তারা রাসূলের বিরুদ্ধাচরণে অবিচল থাকলো।

হযরত মূসা (আঃ)-এর কওম বানী ইসরাঈলের এই অবস্থাকে সামনে রেখে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবায়ে কিরামের প্রতি লক্ষ্য করা যাক। মক্কার ৯০০ বা ১০০০ কাফির যখন তাদের বাণিজ্যিক কাফেলাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে গমন করলো, তখন সেই কাফেলা তো অন্য পথ ধরে মক্কার পথে রওয়ানা হয়ে গেল, কিন্তু তাদেরকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে গমনকারী কাফিররা নিজেদের শক্তির দাপটের কারণে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ক্ষতি সাধন ব্যতিরেকে মক্কা ফিরে যাওয়া অপমানজনক মনে করে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে পদতলে পিষ্ট করার ইচ্ছায় মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলো। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন এই অবস্থা অবগত হলেন তখন তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সাহাবীদের নিকট পরামর্শ চাইলেন। তারা তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে নিজেদের জান, মাল এবং স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে রেখে দিয়ে বললেনঃ “আপনিই এগুলোর মালিক। আমরা সংখ্যাও দেখতে চাই না, বিজয়ও দেখতে চাই না, বরং আমরা চাই শুধু আপনার নির্দেশের প্রতি নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে।” সর্বপ্রথম হযরত আবূ বকর (রাঃ) এ ধরনের বক্তব্য পেশ করলেন। তারপর মুহাজির সাহাবীদের মধ্য থেকে কয়েকজন এ প্রকারের ভাষণ দিলেন। কিন্তু এর পরেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হে মুসলমানগণ! আপনারা আমাকে পরামর্শ দিন।” এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল আনসারদের আন্তরিক বাসনা অবগত হওয়া। কেননা, ওটা স্থান ছিল তাদেরই স্থান এবং তাঁরা ছিলেন মুহাজিরদের অপেক্ষা সংখ্যায় বেশী। তখন হযরত সা’দ ইবনে ‘মুআয (রাঃ) নামক আনসারী দাড়িয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মনে হয় আপনি আমাদের (আনসারদের) মনের ইচ্ছা জানতে চাচ্ছেন। তাহলে শুনুন! যে আল্লাহ আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তার শপথ! যদি আপনি আমাদেরকে সমুদ্রের তীরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। তাহলে আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে তাতে ঝাপিয়ে পড়বে। আপনি দেখবেন যে, আমাদের মধ্যে একজনও এমন থাকবে না যে সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকবে। আপনি আগ্রহের সাথে আমাদেরকে শত্রুর মোকাবিলার জন্যে নিয়ে চলুন, আমরা যে যুদ্ধক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে স্থির পদে টিকে থাকি তা আপনি দেখতে পাবেন। আপনি জেনে নেবেন যে, আমরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে সত্য বলে জানি। আপনি আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পড়ন। আমাদের বীরত্ব ও ধৈর্য দেখে ইনশাআল্লাহ আপনার চক্ষু ঠাণ্ডা হবে।”এ কথা শুনে আল্লাহর রাসূল (সঃ) খুশী হয়ে যান এবং আনসারদের এই কথা তার কাছে খুবই ভাল মনে হয় (আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন)। এক রিওয়ায়াতে আছে যে, বদরের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুসলমানদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করেন। হযরত উমার (রাঃ) কিছু বক্তব্য পেশ করেন। তার পর আনসারগণ বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আপনি আমাদের নিকট থেকে কিছু শুনতে চান তবে শুনুন! আমরা বানী ইসরাঈলদের মত নই যে, বলবো- আপনি এবং আপনার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে থাকছি। বরং আমাদের উত্তর হচ্ছে- আপনি আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জিহাদের জন্যে চলুন। আমরা আমাদের জান ও মালসহ আপনার সাথে রয়েছি।” হযরত মিকদাদ আনসারীও (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে এ কথাই বলেছিলেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত মিকদাদ (রাঃ)-এর এই কথায় খুবই খুশী হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যুদ্ধের সময় আপনি দেখে নেবেন যে, আপনার সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে আমরাই রয়েছি।” (হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন) “যদি আমি এমন সুযোগ পেতাম যাতে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে এ রকম সন্তুষ্ট করতে পারতাম (তবে কতই না ভাল হতো)।”একটি বর্ণনায় হযরত মিকদাদ (রাঃ)-এর এই উক্তিটি হুদায়বিয়ার সন্ধির দিনে বর্ণিত আছে, যখন মুশরিকরা তাঁকে উমরার জন্যে বায়তুল্লাহর দিকে যাওয়ার পথে বাধা প্রদান করেছিল এবং কুরবানীর জন্তুও যবেহ স্থলে পৌছতে পারেনি। সেই সময় তিনি বলেছিলেনঃ “আমি তো আমার কুরবানীর জন্তু নিয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে পৌছে কুরবানী করতে চাই।” তখন হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ) বলেনঃ আমরা হযরত মূসা (আঃ)-এর আসহাবের মত নই। এটা ওদের জন্যেই সম্ভব হয়েছে যে, ওরা ওদের নবীকে বলেছিল- “আপনি এবং আপনার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ করুন, আমরা এখানে বসে রয়েছি।” বরং আমরা বলি- হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি চলুন, আপনার প্রতি আল্লাহর সাহায্য থাকবে এবং আমরা সবাই আপনার সাথে রয়েছি। এ কথা শুনে অন্যান্য সাহাবীগণও তাঁর কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার ওয়াদা করতে শুরু করলেন। সুতরাং এই বর্ণনায় যদি হুদায়বিয়ার কথাই উল্লেখ থাকে তবে হতে পারে যে, তিনি (মিকদাদ) বদরের দিনও এ কথা বলেছিলেন এবং হুদায়বিয়ার দিনও এটা বলেছিলেন। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

এ কথা শুনে হযরত মূসা (আঃ)-এর তার উম্মতের উপর ভীষণ রাগ হয়। এবং তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতঃ, আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা জানান। “হে রাব্বল আলামীন! আমার অধিকার তো শুধু নিজের উপর এবং ভাই-এর উপর রয়েছে। সুতরাং আপনি আমাদের উভয়ের এবং এ অবাধ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মীমাংসা করে দিন। মহান আল্লাহ তাঁর এ প্রার্থনা কবুল করলেন এবং বললেনঃ এরা চল্লিশ বছর পর্যন্ত এখান থেকে যেতে পারবে না। তারা তীহ’ ময়দানে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে। কোনক্রমেই তারা এর সীমানার বাইরে যেতে পারবে না। এখানে তারা কতগুলো বিস্ময়কর ও অস্বাভাবিক বিষয়। অবলোকন করলো। যেমন তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া দান করণ, মান ও ‘সালওয়া’ অবতরণ, তাদের কাছে বিদ্যমান একটি পাথর হতে পানি বের হওয়া ইত্যাদি। হযরত মূসা (আঃ) ঐ পাথরকে লাঠি দ্বারা আঘাত করা মাত্রই ওর মধ্য হতে বারোটি প্রস্রবণ বেরিয়ে পড়লো। প্রত্যেক গোত্রের দিকে একটি করে ঝরণা বয়ে যেতে লাগলো। এ ছাড়াও বানী ইসরাঈল তথায় আরও মুজিযা দেখলো। এখানে তাওরাত অবতীর্ণ হলো, আল্লাহর আহকাম নাযিল হলো ইত্যাদি। চল্লিশ বছর পর্যন্ত তারা উদ্বিগ্নভাবে ঐ ময়দানেই ঘুরাফেরা করলো এবং সেখান থেকে বের হবার কোন পথ পেলো না। হ্যাঁ, তবে তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া করা হয়েছিল এবং মান’ ও ‘সালওয়া তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ফুনুনের লম্বা চওড়া হাদীসে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এসব বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর হযরত হারূনের মৃত্যু হয় এবং তার মৃত্যুর তিন বছর পর কালীমুল্লাহ হযরত মূসা (আঃ) ইন্তেকাল করেন। তারপর তাঁর খলীফা হযরত ইউশা ইবনে নূন (আঃ)-কে নবী করা হয়। এ সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে বহু বানী ইসরাঈলের মৃত্যু ঘটে। এমনকি বলা হয় যে, শুধুমাত্র হযরত ইউশা (আঃ) ও কালিব (আঃ) অবশিষ্ট থাকেন।

কোন কোন মুফাসসির ‘সানাতান’ শব্দের উপর পূর্ণভাবে (আরবী) করেন এবং আরবায়ীনা সানাতান শব্দ দুটিকে (আরবী) -এর অবস্থা মেনে থাকেন এবং বলেন যে, এর (আরবী) হচ্ছে ইয়াতীহুনা ফিল আরযে শব্দগুলো। এ চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর যে কয়জন বানী ইসরাঈল অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে নিয়ে হযরত ইউশা (আঃ) বেরিয়ে পড়েন। অন্যান্য পাহাড় থেকেও বাকী বানী ইসরাঈল তাঁর সাথী হয়ে যায়। হযতর ইউশা (আঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস অবরোধ করেন। জুমআর দিন আসরের পরে যখন বিজয়ের সময় উপস্থিত হয় তখন শক্রদের পাগুলো অচল হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হয়। জুমআর দিনের মর্যাদার কারণে সে যুগে সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে সেই দিন আর যুদ্ধ করা চলতো না। এ জন্যে আল্লাহর নবী (হযরত ইউশা) বললেনঃ “হে সূর্য! তুমিও তো আল্লাহরই দাস। আর আমি তারই অধীনস্থ বান্দা। হে আল্লাহ একে আরও কিছুক্ষণ আটকিয়ে রাখুন। সুতরাং আল্লাহর নির্দেশক্রমে সূর্য থেমে গেল এবং তিনি মনমত যুদ্ধ করে বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করে নিলেন। আল্লাহ পাকের নির্দেশ হলোঃ বানী ইসরাঈলকে বলে দাও যে, তারা যেন সিজদা করা অবস্থায় এ শহরের দরজায় প্রবেশ করে এবং (আরবী) (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের পাপ মার্জনা করুন!) বলে। কিন্তু তারা আল্লাহর এ হুকুমকে বদলিয়ে দিলো এবং হামাগুড়ি দিয়ে চললো, আর মুখে (আরবী) এ শব্দগুলো উচ্চারণ করতে থাকলো। বিস্তারিত ব্যাখ্যা সূরা বাকারায় করা হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় এটুকু বেশী রয়েছে যে, বানী ইসরাঈল এ যুদ্ধে এতো বেশী গনীমতের মাল লাভ করেছিল যা তারা ইতিপূর্বে কখনও দেখেনি। আল্লাহ তাআলার নির্দেশানুযায়ী ওগুলোকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্যে আগুনের পার্শ্বে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু ওগুলো আগুনে পুড়লো না। তখন হযরত ইউশা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ অবশ্যই এ মাল থেকে কিছু চুরি করেছে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেক গোত্রের নেতা যেন আমার নিকট এসে আমার হাতে হাত রাখে।” তাই করা হলো। একটি গোত্রের নেতার হাত নবীর হাতের সাথে লেগে গেলো। নবী (ইউশা আঃ) বললেনঃ এ খিয়ানতের জিনিস তোমার নিকট রয়েছে সুতরাং তুমি ওটা নিয়ে আসো।’ সে সোনার তৈরী গরুর একটি মাথা নিয়ে আসলো যার চক্ষুগুলো ছিল ইয়াকুতের তৈরী এবং দাঁতগুলো ছিল মুক্তার তৈরী। অন্য মালের সাথে ওটিকেও যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হলো তখন সমস্তই আগুনে পুড়ে গেল। ইমাম ইবনে জারীরও (রাঃ) এ উক্তিটি পছন্দ করেছেন।

আরবাঈনা সানাতান-এর (আরবী) হচ্ছে (আরবী) শব্দগুলো। বানী ইসরাঈলের এ দলটি চল্লিশ বছর পর্যন্ত ঐ তীহের ময়দানে উদ্বিগ্নভাবে ফিরতে থাকে। তারপর মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়ে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করে। পূর্ববর্তী ইয়াহূদী আলেমদের ইজমাই হচ্ছে এর দলীল যে, আউজ ইবনে আনাককে হযরত মূসাই (আঃ) হত্যা করেছিলেন। তাহলে যদি তার হত্যা আমালীকের এ যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা হতো তবে বানী ইসরাঈলের আমলীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করার কোনই কারণ থাকতো না। সুতরাং বুঝা গেল যে, এটা হচ্ছে ‘তীহ’ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার পরবর্তী ঘটনা।

ইয়াহুদী আলেমদের এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, বালআম ইবনে বাউর আমালীক সম্প্রদায়ের প্রতাপশালীদেরকে সাহায্য করেছিল এবং সে হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর বদদু’আ করেছিল। এ ঘটনাটিও ঐ ময়দান থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ঘটেছিল। কেননা, এর পূর্বে তো প্রতাপশালীদের হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর কওম হতে ভয়ই ছিল না। ইবনে জারীর (রঃ)-এর এটাই দলীল। তিনি এ কথাও বলেন যে, হযরত মূসা (আঃ)-এর লাঠি ছিল দশ হাত এবং তার দেহও ছিল দশ হাত। তিনি ভূমি হতে দশ হাত লাফিয়ে গিয়ে আউজ ইবনে আনাককে ঐ লাঠি দ্বারা মেরেছিলেন যা তার পায়ের গিটে লেগেছিল এবং তাতেই সে মারা গিয়েছিল। তার দেহ দ্বারা নীল নদের সাঁকো বানানো হয়েছিল যার উপর দিয়ে বহু বছর ধরে নীলবাসী যাতায়াত করতো। নাওফ বাককালী বলেন যে, তার সিংহাসনটি তিনশ গজের ছিল।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ তুমি তোমার কওম বানী ইসরাঈলের জন্যে কোন দুঃখ করো না। তারা ঐ জেলখানারই যোগ্য।

সুতরাং এ ঘটনায় ইয়াহূদীদেরকে ধমক দেয়া হয়েছে এবং এতে তাদের বিরুদ্ধাচরণের ও দুষ্টামির বর্ণনা রয়েছে যে, আল্লাহর এ শক্ররা বিপদের সময়ও তাঁর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকছে না। তারা রাসূলদের আনুগত্য স্বীকার করছে না ও আল্লাহর পথে জিহাদ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। যে সম্মানিত রাসূলের সঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ কথা বলেছিলেন তার বিদ্যমানতায় তার অঙ্গীকার ও আদেশের কোনই গুরুত্ব দিচ্ছে না। দিন রাত তারা তাঁর মুজিযা দেখতে রয়েছে এবং ফেরাউনের বিধ্বস্তি স্বচক্ষে দেখেছে, অথচ অল্প দিনও অতিবাহিত হয়নি এবং স্বয়ং সম্মানিত নবী সঙ্গে রয়েছেন, তথাপি তারা ভীরুতা ও কাপুরুষতাই প্রদর্শন করছে। তারা আল্লাহর নবীর সাথে বে-আদবী করছে এবং স্পষ্টভাবে জবাব দিয়ে দিচ্ছে। তারা তো স্বচক্ষে দেখেছে যে, আল্লাহ তা’আলা ফিরাউনের ন্যায় সাজ-সরঞ্জামপূর্ণ বাদশাহকেও তার সাজ-সরঞ্জাম, লোক-লস্কর ও প্রজাসহ ডুবিয়ে মেরেছেন! তথাপি তারা সেই আল্লাহর উপর ভরসা করে ঐ গ্রামবাসীর দিকে ধাবিত হচ্ছে না এবং তাঁর হুকুম পালন করছে না। অথচ তারা তো ফিরাউনের দশ ভাগের একভাগও ছিল না। ফলে তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হচ্ছে। পৃথিবীর বুকে তাদের কাপুরুষতা প্রকাশ পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তাদের লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা আরও বৃদ্ধি পাবে তারা নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র বলে মনে করলেও তা ছিল প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি থেকে তারা বেরিয়ে পড়েছিল। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রকার শাস্তিতে তারা পতিত হয়েছিল। তাদেরকে শূকর ও বানরে পরিণত করা হয়েছিল। এখানে তারা চিরস্থায়ী অভিশাপে পতিত হয়ে পারলৌকিক স্থায়ী শাস্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে যাঁর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলাই হচ্ছে সমস্ত কল্যাণের চাবিকাঠি।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:৪২) এখানে বনী ইসরাঈলের অতীত গৌরবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বহু পূর্বে কোন এক সময়ে তারা এ গৌরবের অধিকারী ছিল। একদিকে তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত ইবরাহীম, হযরত ইসহাক, হযরত ইয়াকুব ও হযরত ইউসুফের মতো নবী ও রসূলগণ এবং অন্যদিকে তারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের আমলে ও তার পরবর্তী কালে মিসরে ব্যাপক শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারাই ছিল তৎকালীন সভ্য জগতের সবচেয়ে প্রতাপশালী শাসক শক্তি এবং মিসর ও তার আশপাশের দেশে তাদেরই মুদ্রা প্রচলিত ছিল। সাধারণত ঐতিহাসিকগণ বনী ইসরাঈলের উত্থানের ইতিহাস শুরু করেন হযরত মূসার (আ) আমল থেকে। কিন্তু কুরআন এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছে যে, বনী ইসরাঈলের উত্থানের আসল যুগটি ছিল হযরত মূসার পূর্বে এবং হযরত মূসা নিজেই তাঁর জাতির সামনে তাদের এ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন।

টিকা:৪৩) এখানে ফিলিস্তিনের কথা বলা হয়েছে। এ দেশটি হযরত –ইবরাহীম, হযরত ইসহাক ও হযরত ইয়াকুবের আবাসভূমি ছিল। বনী ইসরাঈল মিসর থেকে বের হয়ে এলে আল্লাহ‌ তাদের জন্য এ দেশটি নির্দিষ্ট করেন এবং সামনে অগ্রসর হয়ে এ দেশটি জয় করার নির্দেশ দেন।

টিকা:৪৪) হযরত মূসা তাঁর জাতিকে নিয়ে মিসর থেকে বের হবার প্রায় দু’বছর পর যখন তাদের সাথে ফারানের মরু অঞ্চলে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছিলেন তখনই এ ভাষণটি দেন। এ মরু অঞ্চলটি উত্তরে ও ফিলিস্তিনের দক্ষিণ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট সাইনা উপদ্বীপে অবস্থিত।

টিকা:৪৫) ‘ভীরু লোকদের মধ্য থেকে দু’জন বললো’-এ বাক্যাংশটির দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, যারা শক্তিশালীদেরকে ভয় করছিল তাদের মধ্য থেকে দু’জন বলে উঠলো। দুই, যারা আল্লাহকে ভয় করতো তাদের মধ্য থেকে দু’জন বলে উঠলো।

( মানচিত্র )
টিকা:৪৬) এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বাইবেলের গণনা পুস্তক, দ্বিতীয় বিবরণ ও যিহোশূয় পুস্তকে পাওয়া যাবে। এর সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছেঃ হযরত মূসা ফিলিস্তিনের অবস্থা জানার জন্য ফারান থেকে বনী ইসরাঈলের ১২ জন সরদারকে ফিলিস্তিন সফরে পাঠান। তারা ৪০ দিন সফর করার পর সেখান থেকে ফিরে আসেন। জাতির এক সাধারণ সমাবেশে তারা জানান যে, ফিলিস্তিন তো খাদ্য ও অন্যান্য ভোগ্য সামগ্রীর প্রাচুর্যে ভরা এক সুখী সমৃদ্ধ দেশ, এতে সন্দেহ নেই। “কিন্তু সেখানকার অধিবাসীরা অত্যন্ত শক্তিশালী—–তাদের ওপর আক্রমণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই—–সেখানে আমরা যত লোক দেখেছি তারা সবাই বড়ই দীর্ঘদেহী। সেখানে আমরা বনী ইনাককেও দেখেছি। তারা মহাপরাত্রুমশালী ও দূর্ধর্ষ। তারা বংশ পরস্পরায় পরাক্রমশালী। আর আমরা তো নিজেদের দৃষ্টিতেই ফড়িংয়ের মতো ছিলাম এবং তাদের দৃষ্টিতেও।”—-এ বর্ণনা শুনে সবাই সমস্বরে বলে উঠেঃ “হায়, যদি আমরা মিসরেই মরে যেতাম! হায়, যদি এ মরুর বুকেই আমরা মরে যেতাম! আল্লাহ কেন আমাদের ঐ দেশে নিয়ে গিয়ে তরবারির সাহায্যে হত্যা করাতে চায়? এরপর আমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা তো লুটের মালে পরিণত হবে। আমাদের জন্য মিসরে ফিরে যাওয়াই কি মঙ্গলজনক হবে না? ” তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করতে থাকে এসো আমরা কাউকে নিজেদের সরদার বানিয়ে নিই এবং মিসরে ফিরে যাই। একথা শুনে ফিলিস্তিনে যাদেরকে পাঠানো হয়েছিল সেই বারো জন সরদারদের মধ্য থেকে দু’জন-ইউশা ও কালেব উঠে দাঁড়ান। তারা এ ভীরুতা ও কাপুরুষতার জন্য জাতিকে তিরস্কার করেন। কালেব বলেন, “চলো, আমরা অতর্কিতে আক্রমণ করে সে দেশটি দখল করে নিই। কারণ সে দেশটি পরিচালনা করার যোগ্যতা আমাদের আছে। তারপর তারা দু’জন এক বাক্যে বলে ওঠেন, “যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যি আমাদের সে দেশে পৌঁছাবেন।—-তবে তোমরা যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করো এবং সে দেশের লোকদের ভয়ে ভীত না হও।” “আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন, কাজেই ওদের ভয় পেয়ো না।” কিন্তু জাতি তার জবাব দিল একথা বলে, “ওদেরকে পাথর মেরে হত্যা করো।” অবশেষে আল্লাহর ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলো এবং তিনি ফয়সালা করলেন, এখন ইউশা ও কালেব ছাড়া এ জাতির বয়স্ক পুরুষদের মধ্য থেকে আর কেউ সে ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না। এ জাতি চল্লিশ বছর পর্যন্ত গৃহহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে থাকবে। অবশেষে যখন এদের মধ্যকার বিশ বছরের থেকে শুরু করে তার ওপরের বয়সের সমস্ত লোক মরে যাবে এবং নবীন বংশধররা যৌবনে প্রবেশ করবে তখনি এদেরকে ফিলিস্তিন জয় করার সুযোগ দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনী ইসরাঈলের ফারান মরুভূমি থেকে পূর্ব জর্দানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৩৮ বছর লেগে যায়। যেসব লোক যুব বয়সে মিসর থেকে বের হয়েছিল তারা সবাই এ সময়ের মধ্যে মারা যায়। পূর্ব জর্দান জয় করার পর হযরত মূসারও ইন্তিকাল হয়। এরপর হযরত ইউশা ইবনে নূনের খিলাফত আমলে বনী ইসরাঈল ফিলিস্তিন জয় করতে সমর্থ হয়।

টিকা:৪৭) বর্ণনার ধারাবাহিকতার প্রতি দৃষ্টি রেখে চিন্তা করলে এখানে এ ঘটনার বরাত দেবার উদ্দেশ্য পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। গল্পচ্ছলে একথা বর্ণনা করে বনী ইসরাঈলকে আসলে একথা বুঝানো হচ্ছে যে, মূসার সময় অবাধ্যতা, সত্য থেকে বিচ্যুতি ও কাপুরুষতার কাজ করে তোমরা যে শাস্তি পেয়েছিলে এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করলে তার চেয়ে অনেক বেশী শাস্তি ভোগ করবে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে বনী-ইসরাঈলের একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। ঘটনাটি এই যে, ফিরআউন ও তার সৈন্যবাহিনী যখন সমুদ্রে নিমজ্জিত হয় এবং মূসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায় বনী-ইসরাঈল ফিরআউনের দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করে তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে কিছু নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাদের পৈতৃক দেশ শামদেশকেও তাদের অধিকারে প্রত্যাৰ্পণ করতে চাইলেন। সেমতে মূসা ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে তাদেরকে জিহাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভূমি শাম (বর্তমান সিরিয়া, ফিলিস্তীন তথা বাইতুল মুকাদ্দাস) এলাকায় প্রবেশ করতে নির্দেশ দেয়া হল। সাথে সাথে তাদেরকে আগাম সুসংবাদও দেয়া হল যে, এ জিহাদে তারাই বিজয়ী হবে। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা এ পবিত্র ভূমির আধিপত্য তাদের ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু বনী-ইস্রাঈল প্রকৃতিগত হীনতার কারণে আল্লাহর বহু নেয়ামত তথা ফিরআউনের সাগরডুবি ও তাদের মিসর অধিকার ইত্যাদি স্বচক্ষে দেখেও এক্ষেত্রে অঙ্গীকার পালনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে সক্ষম হল না। তারা জিহাদ সম্পর্কিত আল্লাহ তা’আলার এ নির্দেশের বিরুদ্ধে অন্যায় জেদ ধরে বসে রইল। পরিণতিতে তারা চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় অবরুদ্ধ ও বন্দী হয়ে রইল। বাহ্যতঃ তাদের চারপাশে কোন বাধার প্রাচীর ছিল না এবং তাদের হাত-পা শেকলে বাধা ছিল না; বরং তারা ছিল উন্মুক্ত প্রান্তরে । তারা স্বদেশে অর্থাৎ মিসর ফিরে যাবার জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথও চলত; কিন্তু তারা নিজেদেরকে সেখানেই দেখতে পেত, যেখান থেকে সকালে রওয়ানা হয়েছিল । ইত্যবসরে মূসা ও হারূন ‘আলাইহিমাস্ সালামের ওফাত হয়ে যায় এবং বনী-ইসরাঈল তীহ্‌ প্রান্তরেই উদ্‌ভ্ৰান্তের মত ঘোরাফেরা করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের হেদায়াতের জন্য অন্য একজন নবী প্রেরণ করলেন। এমনিভাবে চল্লিশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বনী-ইসরাঈলের অবশিষ্ট বংশধর তৎকালীন নবীর নেতৃত্বে শাম দেশের সে এলাকা তথা সিরিয়া ও বায়তুলমুকাদাসের জন্যে জিহাদের সংকল্প গ্রহণ করে এবং আল্লাহ্ তা’আলার ওয়াদাও পূর্ণতা লাভ করে। [ইবন কাসীর]

[২] আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতকে স্বরণ কর। তিনি তোমাদের মধ্যে অনেক নবী পাঠিয়েছেন, তোমাদেরকে রাজ্যের অধিপতি করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন নেয়ামত দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কেউ পায়নি”। এতে তিনটি নেয়ামতের কথা বর্ণিত হয়েছে। একটি ঈমানী নেয়ামত; অর্থাৎ তার সম্প্রদায়ে অব্যাহতভাবে বহু নবী প্রেরণ। এর চাইতে বড় সম্মান আর কিছু হতে পারে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইসরাইল বংশীয়দেরকে নবীরা শাসন করতেন। যখনই কোন নবী মারা যেত, তখনই অন্য নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন’। [বুখারী ৩৪৫৫; মুসলিম: ১৮৪২]

আয়াতে বর্ণিত দ্বিতীয় নেয়ামতটি হচ্ছে পার্থিব ও বাহ্যিক। অর্থাৎ তাদেরকে রাজ্য দান। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বনী-ইসরাঈল সুদীর্ঘ কাল ফিরআউন ও ফিরআউনবংশীয়দের ক্রীতদাসরূপে দিনরাত অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। আজ আল্লাহ্ তা’আলা ফির’আউন ও তার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে বনী-ইস্‌রাঈলকে তার রাজ্যের অধিপতি করে দিয়েছেন। অথবা, এখানে রাজ্যদান বলতে রাজার হাল বোঝানো হয়েছে। কারণ, ইসরাইল বংশীয়দের মধ্যে ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম ব্যতীত তখনও আর কেউ রাজা হন নি। তাই এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, তারা খুবই অবস্থাসম্পন্ন মানুষ ছিল। তারা রাজার হালে থাকত। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বাড়ী, নারী ও দাস-দাসী নিয়ে জীবন যাপন করত বলেই তাদেরকে রাজা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর] তৃতীয় নেয়ামত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার নেয়ামতের সমষ্টি। বলা হয়েছেঃ তোমাদেরকে এমনসব নেয়ামত দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের আর কাউকে দেননি। আভ্যন্তরীণ সম্মান, নবুওয়াত এবং রেসালাতও এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া বাহ্যিক রাজত্ব এবং অর্থ-সম্পদও এরই মধ্যে পরিগণিত। প্রশ্ন হতে পারে, কুরআনের উক্তি অনুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায় অন্য সব উম্মতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। কুরআনের উক্ত

(كُنْتُمْ خَيْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ)

[সূরা আলে-ইমরানঃ ১১০]

(وَكَذٰلِكَ جَعَلْنٰكُمْ اُمَّةً وَّسَطًا)

[সূরা আল-বাকারাহঃ ১৪৩] -প্রভৃতি বাক্য এবং অসংখ্য হাদীসও এ বক্তব্য সমর্থন করে। এর উত্তর এই যে, আয়াতে সৃষ্টিকুলের ঐসব লোককে বোঝানো হয়েছে, যারা মূসা ‘আলাইহিস সালামের আমলে বিদ্যমান ছিল। তখন সমগ্র বিশ্বের কেউ ঐসব নেয়ামত পায়নি, যা বনী-ইসরাঈল পেয়েছিল। পরবর্তী যুগের কোন উম্মত যদি আরো বেশী নেয়ামত লাভ করে, তবে তা আয়াতের পরিপন্থী নয়। [ইবন কাসীর]

[৩] এখানে পবিত্র ভূমি বলতে কোন্‌ ভূমি বোঝানো হয়েছে, এ প্রশ্নে তাফসীরবিদগণের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে বায়তুল-মুকাদ্দাস, কারো মতে কুদস শহর ও ইলিয়া এবং কেউ কেউ বলেন, আরিহা শহর- যা জর্দান নদী ও বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যস্থলে বিশ্বের একটি প্রাচীনতম শহর যা পূর্বেও ছিল এবং এখনও আছে। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, পবিত্র ভূমি বলে দামেস্ক ও ফিলিস্তিনকে এবং কারো মতে জর্দানকে বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেনঃ সমগ্র শামই পবিত্র ভূমি। [ইবন কাসীর, আত-তাফসীরুস সহীহ]

আল্লাহ্ তা’আলা মূসা ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে বনী-ইসরাঈলকে আমালেকা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শামদেশ দখল করতে বলেছিলেন। সাথে সাথে এ সুসংবাদও দিয়েছিলেন যে, এ পবিত্র ভূখণ্ড তাদের জন্যে লেখা হয়ে গেছে। কাজেই তোমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তা সত্বেও বনী-ইসরাঈল চিরাচরিত ঔদ্ধত্য ও বক্র স্বভাবের কারণে এ নির্দেশ পালনে স্বীকৃত হল না; বরং মূসা ‘আলাইহিস সালামকে বললঃ হে মূসা, এ দেশে প্রবল পরাক্রান্ত জাতি বাস করে। যতদিন এ দেশ তাদের দখলে থাকবে, ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। যদি তারা অন্য কোথাও চলে যায়, তবে আমরা সেখানে যেতে পারি। বিভিন্ন তাফসীরে এসেছে, তখন সিরিয়া ও বায়তুল-মুকাদ্দাস আমালেকা সম্প্রদায়ের দখলে ছিল। তারা ছিল ‘আদ’ সম্প্রদায়ের একটি শাখা। দৈহিক দিক দিয়ে তারা অত্যন্ত সুঠাম, বলিষ্ঠ ও ভয়াবহ আকৃতিবিশিষ্ট ছিল। তাদের সাথেই জিহাদ করে বায়তুল-মুকাদাস অধিকার করার নির্দেশ মূসা ‘আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায়কে দেয়া হয়েছিল। মূসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্যে বনীইসরাঈলকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। কিন্তু বনী-ইসরাঈল যেখানে নবীর কথার প্রতিই কর্ণপাত করল না, সেখানে তাদের উপদেশের আর মূল্য কি? তারা পূর্বের জবাবেরই আরও বিশ্রী ভঙ্গিতে পুনরাবৃত্তি করে বললঃ “আপনি ও আপনার আল্লাহ উভয়ে গিয়েই যুদ্ধ করুন। আমরা এখানেই বসে থাকব”। কথাটি অত্যন্ত বিশ্রী ও পীড়াদায়ক। এ কারণেই তাদের এ বাক্যটি প্রবাদ বাক্যের রূপ পরিগ্রহ করেছে। বদরযুদ্ধে নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত মুসলিমদের মোকাবেলায় কাফেরদের এক হাজার সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে আল্লাহর দরবারে দোআ করতে লাগলেন। এতে সাহাবী মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ ‘ইয়া রসূলাল্লাহ আল্লাহর কসম, আমরা কস্মিন কালেও ঐকথা বলব না, যা মূসা ‘আলাইহিস সালামকে তার স্বজাতি বলেছিল; বরং আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে থেকে শক্রর আক্রমণ প্রতিহত করব। আপনি নিশ্চিন্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’ [বুখারীঃ ৩৭৩৬]

[৪] অর্থাৎ সে পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার অধিকার তারা চল্লিশ বছরের জন্য হারিয়েছে। কারণ তারা অবাধ্যতা করেছিল। এটা ছিল তাদের জন্য নির্ধারিত দুনিয়ার শাস্তি। হয়ত এর মাধ্যমে তাদের উপর আপতিত কোন কঠোর শাস্তি লাঘব করা হয়েছিল। চল্লিশ বছর নির্ধারনের কারণ সম্ভবত: এই ছিল যে, এ সময়ের মধ্যে সে জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের মৃত্যু সংঘটিত হবে, যারা ফিরআউনের দাসত্ব ও তাবেদারীর কারণে ইজ্জতের যিন্দেগী যাপন করার মত হিম্মত অবশিষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে যারা সেই কঠোর প্রতিকুল অবস্থায় জন্মলাভ করেছিল তারাই শক্রদের পরাভূত করার মত সাহসী হতে পেরেছিল। [সা’দী]

[৫] মহান আল্লাহ যখন জানলেন যে, মূসা ‘আলাইহিস সালাম সম্ভবত: তার কাওমের জন্য দয়াপরবশ হবেন এবং তাদের প্রতি নাযিলকৃত শাস্তির জন্য দুঃখবোধ করতে থাকবেন, তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা ‘আলাইহিস সালামকে এ ব্যাপারে আফসোস না করার নির্দেশ দিলেন। যাতে তিনি জানিয়ে দিলেন যে, এ শাস্তিটুকু তাদের অপরাধের কারণে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা বান্দার উপর সামান্যও জুলুম করেন নি। [সা’দী]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অধিকাংশ নবী-রসূল বানী ইসরাঈলের (বানী ইয়াকূবের) মধ্য হতেই আগমন করেছেন এবং তাঁদের সর্বশেষ নবী ছিলেন ঈসা (আঃ)। আর নবী ও রসূলগণের সর্বশেষ নবী আগমন করেন বানী ইসমাঈলের মধ্য হতে মুহাম্মাদ (সাঃ)। অনুরূপভাবে বানী ইসরাঈলের মধ্যে বহু রাজা-বাদশাহর আবির্ভাব ঘটেছে এবং কোন কোন নবীকে আল্লাহ বাদশাহীও দান করেছিলেন; যেমন সুলাইমান (আঃ)। আর এর অর্থ হল, নবুঅতের মতই বাদশাহীও আল্লাহ প্রদত্ত একটি অনুগ্রহ। অতএব সাধারণভাবে বাদশাহী বা রাজতন্ত্রকে খারাপ মনে করলে বড় ভুল হবে। যদি রাজতন্ত্র বা বাদশাহী কোন খারাপ জিনিস হত, তাহলে আল্লাহ কোন নবীকে রাজা-বাদশাহ বানাতেন না এবং এই বাদশাহীকে অনুগ্রহ ও নেয়ামত বলে উল্লেখ করতেন না। যেমনটি বর্তমানে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের বুকচাপা (ভূত) এমনভাবে মানুষের মন ও মস্তিষ্কে চেপে ধরে আছে এবং পাশ্চাত্যের চতুররা এমনভাবে তাদেরকে যাদু করেছে যে, পাশ্চাত্য চিন্তাধারার অন্ধভক্ত কেবল রাজনৈতিক নেতারাই নয়; বরং জুব্বা-পাগড়ী-ওয়ালারাও বটে। মোটকথা, রাজতন্ত্র বা শাহীতন্ত্র; যদি রাজা ও শাসক ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহ-ভীরু হন, তাহলে তা গণতন্ত্র থেকে হাজার গুণ উত্তম।

[২] আয়াতের এই অংশটিতে ঐ সকল অনুগ্রহ ও অলৌকিক ঘটনাবলীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বানী ইস্রাঈলকে দান করা হয়েছিল। যেমন, ‘মান্ন্ ও সালওয়া’র অবতরণ, মেঘমালার ছায়াদান এবং ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তির জন্য সাগরের মাঝে রাস্তা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই দিক দিয়ে এই জাতি নিজ যুগে মাহাত্ম্য ও মর্যাদায় শীর্ষস্থানে ছিল। কিন্তু শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের পর ঐ মাহাত্ম্য ও মর্যাদার অধিকারী শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদী হয়ে গেল। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, {كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاس} অর্থাৎ, তোমরাই মানবমন্ডলীর জন্যে শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়রূপে সমুদ্ভূত হয়েছ। তবে হ্যাঁ, এই মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তখনই হওয়া যাবে, যখন পরে বর্ণিত অংশের উপর আমল করা হবে। আল্লাহ বলেন, {تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِالله} অর্থাৎ, তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দেবে, মন্দ কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। (সূরা আলে ইমরান ৩:১১০) মহান আল্লাহর নিকট আকুল প্রার্থনা যে, তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার তাওফীক দান করেন; যাতে তাঁরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যকে অক্ষয় ও অম্লান রাখতে পারে।

[৩] বানী ইসরাঈলের প্রধান পুরুষ ইয়াকুব (আঃ)-এর বাসস্থান ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম)। কিন্তু তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) মিসরের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর তাঁরা সকলেই মিসরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরিশেষে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কবল থেকে মুক্তিলাভের জন্য গোপনভাবে রাতারাতি বানী ইস্রাঈলকে নিয়ে মিসর থেকে চলে আসেন। কিন্তু সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে আমালেকাদের শাসন ছিল, যারা এক বীর-বাহাদুর গোত্র রূপে পরিচিত ছিল। যখন মূসা (আঃ) পুনরায় বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন তার জন্য ক্ষমতাসীন আমালেকাদের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরী ছিল। সুতরাং মূসা (আঃ) নিজ গোত্রকে ঐ পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার নির্দেশ দিলেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্যের সুসংবাদও শুনালেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বানী ইস্রাঈল আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হল না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

[৪] এর উদ্দেশ্য, ঐ বিজয় ও সাহায্য; যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ জিহাদের শর্তে দিয়ে রেখেছিলেন।

[৫] অর্থাৎ জিহাদ থেকে বিমুখ হয়ো না।

[৬] বানী ইস্রাঈলগণ আমালেকাদের বীরত্ব-প্রসিদ্ধির কারণে তাদের ভয়ে ভীতু হয়ে যায় এবং প্রথম ধাপেই শক্তি ও সাহস হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা জিহাদ থেকে বিমুখ হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ আল্লাহর রসূল মূসা (আঃ)-এর হুকুমের কোন পরোয়া করল না এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতির প্রতি প্রত্যয় হল না। ফলে সেখানে যেতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে বসল।
[৭] মূসা (আঃ)-এর জাতির মধ্যে কেবল এই দুই ব্যক্তি প্রকৃত ঈমানদার ছিলেন, যাঁদের আল্লাহর শক্তি ও সাহায্যের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় ছিল। তাঁরা জাতিকে বুঝাতে লাগলেন যে, তোমরা সাহস তো কর। তারপর দেখ, কেমন করে আল্লাহ তোমাদেরকে (ঐ শত্রুদের উপর) বিজয় দান করেন।
[৮] কিন্তু এ সত্ত্বেও বানী ইস্রাঈল হীনতর কাপুরুষতা, বেআদবী, অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ প্রকাশ করে (বিদ্রূপের ভঙ্গিতে) বলল যে, ‘তুমি ও তোমার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসলাম!’ কিন্তু এর বিপরীত বদর যুদ্ধের সময়ে যখন সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)গণের নিকট রসূল (সাঃ) পরামর্শ চাইলেন তখন তাঁরা সংখ্যায় কম ও যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জামও অতি সামান্য থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য পূর্ণরূপে উৎসাহ ও সংকল্প প্রকাশ করলেন এবং এটাও বললেন যে, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনাকে ঐ কথা কখনও বলব না, যে কথা মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায় মূসা (আঃ)-কে বলেছিল। (বুখারীঃ মাগাযী ও তাফসীর অধ্যায়)

[৯] এ কথায় অবাধ্য ও বিদ্রোহী জাতির মোকাবেলায় নিজের অক্ষমতা ও দুর্বলতা প্রকাশ এবং তাদের সাথে তাঁর সম্পর্কহীনতার ঘোষণাও রয়েছে।
[১০] এই ভূ-পৃষ্ঠকে ময়দানে ‘তীহ’ বলা হয়। (‘তীহ’ গোলক-ধাঁধার ময়দানকে বলে।) এই ময়দানে চল্লিশ বছর পর্যন্ত এই জাতি নিজেদের বিদ্রোহের ও জিহাদ থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কারণে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এর পরেও (আল্লাহর পক্ষ থেকে) এই ময়দানে ‘মান্ন্’ ও ‘সালওয়া’ অবতরণ হয়। যা (খেতে খেতে) বিরক্ত হয়ে তারা তাদের নবী (মূসা (আঃ))-কে বলে, ‘প্রতিদিন একই খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের অরুচি হয়ে গেছে। অতএব আপনি আপনার প্রভুর নিকট দু’আ করুন যে, তিনি যেন আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সবজী ও ডাল উৎপন্ন করেন।’ এই ময়দানেই তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া দান করা হয়। এখানেই মূসা (আঃ) লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত করলে বারো গোত্রের জন্য বারোটি ঝর্ণা নিঃসৃত হয় এবং অনুরূপ তারা আরো বহুভাবে নিয়ামতপ্রাপ্ত হতে থাকে। পরিশেষে চল্লিশ বছর পর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তখন তারা বায়তুল মাকদিস প্রবেশ করে।

[১১] নবী (মূসা (আঃ)) দাওয়াত ও তাবলীগ করার পর যখন দেখেন যে, তাঁর গোত্র সোজা ও সরল পথ অবলম্বনে প্রস্তুত নয়; যার মধ্যে তাদের ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে, তখন প্রকৃতিগতভাবে তিনি বড় আক্ষেপ ও আন্তরিকভাবে দুঃখ-দুশ্চিন্তার শিকার হয়ে পড়েন। ঠিক একই অবস্থা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হত, যা কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে মূসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে যে, যখন তুমি তাবলীগের গুরুভার আদায় করেছ এবং আল্লাহর পয়গাম লোকদের নিকট পৌঁঁছে দিয়েছ, তুমি তোমার জাতিকে এক মহান সফলতার দ্বার প্রান্তে উপস্থিত করেছ, কিন্তু তারা তাদের হীনন্মন্যতা ও দুর্মতির কারণে তোমার কথা মান্য করে না, তখন তুমি তোমার কর্তব্য পালনের দায়িত্ব হতে নিষ্কৃতি পেয়ে গেছ। সুতরাং তোমাকে এ ব্যাপারে দুঃখিত ও চিন্তিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এমন পরিস্থিতিতে দুঃখিত ও চিন্তিত হওয়াটা একটা প্রকৃতগত ব্যাপার ছিল। কিন্তু সান্ত্বনা দানের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, দাওয়াত ও তাবলীগের পর আল্লাহর নিকটে তুমি দায়িত্বমুক্ত।

Leave a Reply