(Book# 114/١٩١)-৩৯২ www.motaher21.net َيَسْعَوْنَ فِى الْأَرْضِ فَسَادًا পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, Do mischief in the land , সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৩৩-৩৪

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٩١)-৩৯২
www.motaher21.net

َيَسْعَوْنَ فِى الْأَرْضِ فَسَادًا

পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়,

Do mischief in the land ,

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৩৩-৩৪

إِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسْعَوْنَ فِى الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓا أَوْ يُصَلَّبُوٓا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلٰفٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذٰلِكَ لَهُمْ خِزْىٌ فِى الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِى الْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাআযাব।

আয়াত:- ৩৪

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُوا عَلَيْهِمْ ۖ فَاعْلَمُوٓا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

তারা ছাড়া, যারা তাওবা করে তোমরা তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভের পূর্বে; সুতরাং জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৩৩-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

শানে নুযূল:

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: উরাইনা এলাকার কিছু লোক মদীনায় আগমন করল কিন্তু আবহাওয়া তাদের অনুকূল হল না। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে যাকাতের উটের কাছে পাঠালেন আর নির্দেশ দিলেন, তোমরা উটের প্রস্রাব ও দুধ পান করবে। তারা তাই করল; ফলে সুস্থ হয়ে গেল এবং মুরতাদ হয়ে গেল। আর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো নিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাদেরকে ধরে নিয়ে আসা হলে তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটা হল। তাদের চোখ তুলে ফেলা হল এবং রৌদ্রে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাদের একজনকে দেখলাম তৃষ্ণায় জমিনে মুখ দিয়ে কামড়াতে কামড়াতে মারা গেল। এবং নাযিল হল:

(إِنَّمَا جَزٰ۬ؤُا الَّذِيْنَ يُحَارِبُوْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه۫ )।

(সহীহ বুখারী হা: ৬৮০২, ৬৮০৫)

ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: এ আয়াত কাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে এ মর্মে অনেক মতামত থাকলেও সঠিক কথা হল: এ আয়াতটি মুশরিক ও অন্যান্য যারাই এ অপরাধে জড়িত হবে তাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য। যেমন উক্ত হাদীস প্রমাণ বহন করে। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

ইসলাম চায় দুনিয়াতে সবাই শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করুক। কিন্তু কেউ যদি ইসলামের ওপর আঘাত হানে কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অর্থ হল: মুরতাদ হয়ে যাওয়া, মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে অস্ত্র ধারণ করা, মুসলিমদের হত্যা করা, তাদের সম্পদ হরণ করা এবং তাদের ওপর সীমালঙ্ঘন করা ইত্যাদি।

আর জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার অর্থ হল: মানুষকে ভয় প্রদর্শন করা, ডাকাতি করা, ছিনতাই করা, সন্ত্রাসী করা এবং মুসলিমদের মানহানী করা ইত্যাদি। (আইসারুত তাফাসীর ১/৫২৬)

অতএব যারা এসবের কোন একটি অপরাধের সাথে জড়িত হবে আর তাদের তাওবাহ করার পূর্বে ইসলামী সরকার পাকড়াও করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করবে অথবা শুলিতে চড়াবে, অথবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেবে। অথবা ইসলামী দেশ থেকে বহিস্কার করে দেবে।

ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) বলেন: যদি হত্যা করে তাকে হত্যা করা হবে, যদি সম্পদ হরণ করে নেয় তাহলে হত্যা না করে হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। আর সম্পদ হরণ ও হত্যা করলে তা শাসকের ইখতিয়ারাধিন; ইচ্ছা করলে তার হাত পা কাটতে পারেন, ইচ্ছা করলে হাত পা না কেটে হত্যা করবেন ও শূলিতে চড়াবেন। (তাফসীর কুরতুবী ৫/১১৫)

মোটকথা ইসলামী সরকার উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ফায়সালা দিতে পারে। আর এটা তাদের জন্য দুনিয়াতেই অপমান ও লাঞ্ছনা, আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।

তবে সরকার তাদের পাকড়াও করার পূর্বে যদি তাওবাহ করে এবং সংশোধন হয় তাহলে শাস্তিযোগ্য হবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلٰٓي أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ إِنَّ اللّٰهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا)

“বল: হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ- আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন।”(সূরা যুমার ৩৯:৫৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীদের পরিণতি অত্যন্ত শোচনীয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে কী করলে যুদ্ধ হয় তাও জানতে পারলাম।
৩. ইসলামী প্রশাসন যাকে যে শাস্তি প্রদান করা উপযোগী মনে করবে তাকে সে শাস্তি দেয়ার অধিকার রাখে। তবে দা শরীয়তসিদ্ধ হতে হবে।
৪. কেউ তাওবাহ করলে এবং সংশোধন হয়ে গেলে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 33-34

َيَسْعَوْنَ فِى الْأَرْضِ فَسَادًا

Do mischief in the land ,

إِنَّمَا جَزَاء الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الَارْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُواْ أَوْ يُصَلَّبُواْ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلفٍ أَوْ يُنفَوْاْ مِنَ الَارْضِ

The recompense of those who wage war against Allah and His Messenger and do mischief in the land is only that they shall be killed or crucified or their hands and their feet be cut off on the opposite sides, or be exiled from the land.

`Wage war’ mentioned here means, oppose and contradict, and it includes disbelief, blocking roads and spreading fear in the fairways. Mischief in the land refers to various types of evil.

Ibn Jarir recorded that Ikrimah and Al-Hasan Al-Basri said that the Ayat,
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ
(The recompense of those who wage war against Allah and His Messenger) until,
أَنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
(Allah is Of-Forgiving, Most Merciful),

“Were revealed about the idolators. Therefore, the Ayah decrees that, whoever among them repents before you apprehend them, then you have no right to punish them. This Ayah does not save a Muslim from punishment if he kills, causes mischief in the land or wages war against Allah and His Messenger and then joins rank with the disbelievers, before the Muslims are able to catch him. He will still be liable for punishment for the crimes he committed.”

Abu Dawud and An-Nasa’i recorded that Ikrimah said that Ibn Abbas said that the Ayah,
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الَارْضِ فَسَادًا
(The recompense of those who wage war against Allah and His Messenger and do mischief in the land…),

“Was revealed concerning the idolators, those among them who repent before being apprehended, they will still be liable for punishment for the crimes they committed.”

The correct opinion is that this Ayah is general in meaning and includes the idolators and all others who commit the types of crimes the Ayah mentioned.

Al-Bukhari and Muslim recorded that Abu Qilabah Abdullah bin Zayd Al-Jarmi, said that Anas bin Malik said,

“Eight people of the Ukl tribe came to the Messenger of Allah and gave him their pledge to follow Islam. Al-Madinah’s climate did not suit them and they became sick and complained to Allah’s Messenger. So he said,

أَلَا تَخْرُجُونَ مَعَ رَاعِينَا فِي إِبِلِهِ فَتُصِيبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا

Go with our shepherd to be treated by the milk and urine of his camels.

So they went as directed, and after they drank from the camels’ milk and urine, they became healthy, and they killed the shepherd and drove away all the camels. The news reached the Prophet and he sent (men) in their pursuit and they were captured. He then ordered that their hands and feet be cut off (and it was done), and their eyes were branded with heated pieces of iron. Next, they were put in the sun until they died.”

This is the wording of Muslim.

In another narration for this Hadith, it was mentioned that these people were from the tribes of Ukl or Uraynah.

Another narration reported that these people were put in the Harrah area (of Al-Madinah), and when they asked for water, no water was given to them.

Allah said,

أَن يُقَتَّلُواْ أَوْ يُصَلَّبُواْ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلفٍ أَوْ يُنفَوْاْ مِنَ الَارْضِ

they shall be killed or crucified or their hands and their feet be cut off on the opposite sides, or be exiled from the land.

Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas said about this Ayah,

“He who takes up arms in Muslim land and spreads fear in the fairways and is captured, the Muslim Leader has the choice to either have him killed, crucified or cut off his hands and feet.”

Similar was said by Sa`id bin Al-Musayyib, Mujahid, Ata, Al-Hasan Al-Basri, Ibrahim An-Nakhai and Ad-Dahhak, as Abu Jafar Ibn Jarir recorded.

This view is supported by the fact that the word Aw (or), indicates a choice. As Allah said,

فَجَزَاءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنْكُمْ هَدْياً بَـلِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَـكِينَ أَو عَدْلُ ذلِكَ صِيَاماً

The penalty is an offering, brought to the Ka`bah, of an eatable animal equivalent to the one he killed, as adjudged by two just men among you; or, for expiation, he should feed the poor, or its equivalent in fasting. (5:95)

Allah said,

فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ

And whosoever of you is ill or has an ailment in his scalp (necessitating shaving), he must pay a ransom of either fasting or giving charity or offering a sacrifice. (2:196)

and,

فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَـكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ
for its expiation feed ten of the poor, on a scale of the average of that with which you feed your own families, or clothe them, or free a slave. (5:89)

All of these Ayat offer a choice, just as the Ayah above.

As for Allah’s statement,
أَوْ يُنفَوْاْ مِنَ الَارْضِ
(or be exiled from the land).

Ibn Jarir recorded from Ibn Abbas, Anas bin Malik, Sa`id bin Jubayr, Ad-Dahhak, Ar-Rabi` bin Anas, Az-Zuhri, Al-Layth bin Sa`d and Malik bin Anas that,

it means, he is actively pursued until he is captured, and thus receives his prescribed punishment, or otherwise he escapes from the land of Islam.

Some said that;

the Ayah means these people are expelled to another land, or to another state by the Muslims authorities.

Sa`id bin Jubayr, Abu Ash-Sha`tha, Al-Hasan, Az-Zuhri, Ad-Dahhak and Muqatil bin Hayyan said that;

he is expelled, but not outside of the land of Islam, while others said that he is to be imprisoned.

Allah’s statement,

ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

That is their disgrace in this world, and a great torment is theirs in the Hereafter.

means, the punishment We prescribed, killing these aggressors, crucifying them, cutting off their hands and feet on opposite sides, or expelling them from the land is a disgrace for them among mankind in this life, along with the tremendous torment Allah has prepared for them in the Hereafter.

This view supports the opinion that these Ayat were revealed about the idolators. As for Muslims, in his Sahih, Muslim recorded that Ubadah bin As-Samit said,

“The Messenger of Allah took the same pledge from us that he also took from women:That we do not associate anything with Allah in worship, we do not steal, commit adultery, or kill our children, and that we do not spread falsehood about each other.

He said that he who keeps this pledge, then his reward will be with Allah. He who falls into shortcomings and was punished, then this will be his expiation. And those whose errors were covered by Allah, then their matter is for Allah:If He wills, He will punish them and If He wills, He will pardon them.”

Ali narrated that the Messenger of Allah said,

مَنْ أَذْنَبَ ذَنْبًا فِي الدُّنْيَا فَعُوقِبَ بِهِ فَاللهُ أَعْدَلُ مِنْ أَنْ يُثَنِّيَ عُقُوبَتَهُ عَلى عَبْدِهِ وَمَنْ أَذْنَبَ ذَنْبًا فِي الدُّنْيَا فَسَتَرهُ اللهُ عَلَيْهِ وَعَفَا عَنْهُ فَاللهُ أَكْرَمُ مِنْ أَنْ يَعُودَ عَلَيْهِ فِي شَيْءٍ قَدْ عَفَا عَنْه

He who sins in this life and was punished for it, then Allah is far more just than to combine two punishments on His servant. He who commits an error in this life and Allah hides this error and pardons him, then Allah is far more generous than to punish the servant for something that He has already pardoned.

Recorded by Ahmad, Ibn Majah and At-Tirmidhi who said, “Hasan Gharib.”

Al-Hafiz Ad-Daraqutni was asked about this Hadith, and he said that it was related to the Prophet in some narrations, and it was related to the Companions in others, and that this narration from the Prophet is Sahih.

Ibn Jarir commented on Allah’s statement,
ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا
(That is their disgrace in this world),

“Meaning, shame, humiliation, punishment, contempt and torment in this life, before the Hereafter,
وَلَهُمْ فِي الاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
(and a great torment is theirs in the Hereafter), if they do not repent from these errors until death overcomes them. In this case, they will be stricken by the punishment that We prescribed for them in this life and the torment that We prepared for them therein,
عَذَابٌ عَظِيمٌ
(a great torment) in the Fire of Jahannam.”
The Punishment of those who Wage War Against Allah and His Messenger is Annulled if They Repent Before their Apprehension

Allah said,

إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُواْ عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

Except for those who (having fled away and then) came back (as Muslims) with repentance before they fall into your power; in that case, know that Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

This Ayah is clear in its indication that it applies to the idolators.

As for the Muslims who commit this crime and repent before they are apprehended, the punishment of killing, crucifixion and cutting the limbs will be waved. The practice of the Companions in this regard is that all of the punishments prescribed in this case will be waved, as is apparent from the wording of the Ayah.

Ibn Abi Hatim recorded that Ash-Sha`bi said,

“Harithah bin Badr At-Tamimi was living in Al-Basra, and he committed the crime of mischief in the land. So he talked to some men from Quraysh, such as Al-Hasan bin Ali, Ibn Abbas and Abdullah bin Jafar, and they talked to Ali about him so that he would grant him safety, but Ali refused.

So Harithah went to Sa`id bin Qays Al-Hamadani who kept him in his house and went to Ali, saying, `O Leader of the Faithful! What about those who wage war against Allah and His Messenger and cause mischief in the land?’ So he recited the Ayah until he reached,
إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ مِن قَبْلِ أَن تَقْدِرُواْ عَلَيْهِمْ
(Except for those who (having fled away and them) came back (as Muslims) with repentance before they fall into your power).

So Ali wrote a document that granted safety, and Sa`id bin Qays said, `This is for Harithah bin Badr.”‘

Ibn Jarir recorded this Hadith.

Ibn Jarir recorded that `Amir Ash-Sha`bi said,

“A man from Murad came to Abu Musa, while he was the governor of Al-Kufah during the reign of Uthman, and said to him after he offered the obligatory prayer, `O Abu Musa! I seek your help. I am so-and-so from Murad and I waged war against Allah and His Messenger and caused mischief in the land. I repented before you had any authority over me.’

Abu Musa proclaimed, `This is so-and-so, who had waged war against Allah and His Messenger and caused mischief in the land, and he repented before we had authority over him. Therefore, anyone who meets him, should deal with him in a better way. If he is saying the truth, then this is the path of those who say the truth. If he is saying a lie, his sins will destroy him. So the man remained idle for as long as Allah willed, but he later rose against the leaders, and Allah punished him for his sins and he was killed.”

Ibn Jarir recorded that Musa bin Ishaq Al-Madani said that;

Ali Al-Asadi waged war, blocked the roads, shed blood and plundered wealth. The leaders and the people alike, sought to capture him, but they could not do that until he came after he repented, after he heard a man reciting the Ayah,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًاِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

O My servants who have transgressed against themselves! Despair not of the mercy of Allah, verily, Allah forgives all sins. Truly, He is Oft-Forgiving, Most Merciful. (39:53)

So he said to that man, “O servant of Allah! Recite it again.”

So he recited it again, and Ali put down his sword and went to Al-Madinah in repentance, arriving during the night. He washed up and went to the Masjid of the Messenger of Allah and prayed the dawn prayer. He sat next to Abu Hurayrah amidst his companions. In the morning, the people recognized him and went after him. He said, “You have no way against me. I came in repentance before you had any authority over me.”

Abu Hurayrah said, “He has said the truth,” and he held his hand and went to Marwan bin Al-Hakam, who was the governor of Al-Madinah during the reign of Muawiyah.

Abu Hurayrah said, “This is Ali and he came in repentance and you do not have a way against him, nor can you have him killed.”

So Ali was absolved of punishment and remained on his repentance and went to the sea to perform Jihad in Allah’s cause.

The Muslims met the Romans in battle, and the Muslims brought the ship Ali was in to one of the Roman ships, and Ali crossed to that ship and the Romans escaped from him to the other side of the ship, and the ship capsized and they all drowned.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

মহান আল্লাহ বলেনঃ বানী ইসরাঈলের কাছে আমার বহু রাসূলও স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে আগমন করেছিল, তবু এর পরেও তাদের মধ্য হতে অনেকেই ভূ-পৃষ্ঠে সীমালংঘনকারী রয়ে গেছে। যেমন ইয়াহুদী বানূ কুরাইযা ও বানূ নাযীর আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের সাথে মিলিত হয়ে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতো এবং নিহত ব্যক্তির মুক্তিপণ আদায় করতো। তাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশ্যে আয়াত নাযিল করা হয়- তোমাদের নিকট এই অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল যে, তোমরা তোমাদের লোকদেরকে হত্যা করবে না এবং তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে না। কিন্তু এই মজবুত আহাদ ও অঙ্গীকার সত্ত্বেও তোমরা তার উল্টো করেছে। যদিও মুক্তিপণ আদায় করেছে, কিন্তু তাদেরকে দেশ হতে বের করে দেয়াও তো হারাম ছিল। এর কি অর্থ হতে পারে যে, তোমরা কোন কোন হুকুম মানবে এবং কোন কোনটা মানবে না? এরূপ লোকদের শস্তি তো এটাই যে, তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম থেকে উদাসীন নন।

(আরবী) এ আয়াতে (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরুদ্ধাচরণ করা এবং হুকুমের বিপরীত করা। এর ভাবার্থ হচ্ছে কুফরী করা, ডাকাতি করা, ব্যভিচার করা এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রকারের অশান্তি সৃষ্টি করা। এমনকি পূর্ববর্তী অনেক মনীষী, যাঁদের মধ্যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াবও (রঃ) রয়েছেন, বলেন যে, রৌপ্যমুদ্রা ও স্বর্ণমুদ্রা অধিকার করে নেয়াও হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টি করার শামিল। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ যখন কাউকে কোন কাজের অলী বানিয়ে দেয়া হয় তখন সে ফাসাদ ও অশান্তি ছড়িয়ে দেয় এবং চাষাবাদের ভূমি ও মানবজাতিকে ধ্বংস করে ফেলে, আর আল্লাহ ফাসাদকে ভালবাসেন না। এ আয়াতটি মশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। কেননা, এতে এটাও আছে যে, যখন এরূপ লোক এ কাজগুলো করার পর মুসলমানদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তাওবা করে নেয় তবে তার কোন জবাবদিহি নেই। পক্ষান্তরে যদি কোন মুসলমান এমন কাজ করে এবং পলায়ন করে কাফিরদের নিকট চলে যায় তবে শরঈ হদ থেকে মুক্ত হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ যদি মুসলমানদের হাতে পড়ে যাওয়ার পূর্বে তাওবা করে নেয় তবে তার কৃতকর্মের দরুন যে হুকুম তার উপর সাব্যস্ত হয়ে গেছে তা টলতে পারে না। হযরত উবাই (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আহলে কিতাবের একটা দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারা তা ভঙ্গ করে এবং গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে স্বাধীনতা দেন যে, তিনি ইচ্ছে করলে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন, আবার ইচ্ছে করলে তাদের একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলতে পারেন। হযরত সা’দ (রাঃ) বলেন যে, আয়াতটি হারূরিয়া খারেজীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। সঠিক কথা এই যে, যে কেউই এ কাজ করবে তারই ব্যাপারে এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। যেহেতু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, উক্কাল গোত্রের কতগুলো লোক আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট আগমন করে এবং তাঁর কাছে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে। অতঃপর মদীনার আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের প্রতিকূল হয় এবং তাদের পেট মোটা হয়ে যায়। তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এর অভিযোগ পেশ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা চাইলে আমাদের রাখালের সাথে চলে যাও, তথায় উটের প্রস্রাব ও দুধ পান করবে। তারা বললোঃ “হ্যা (আমরা যেতে চাই।)” সুতরাং তারা বেরিয়ে পড়লো। অতঃপর তাদের রোগ সেরে গেলো। তখন তারা রাখালকে মেরে ফেললো এবং উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি সাহাবায়ে কিরামকে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে তাদেরকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। অতএব তাদেরকে পাকড়াও করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করা হয়। তখন তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হয় এবং চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়া হয়। অতঃপর তাদেরকে রৌদ্রে ফেলে রাখা হয় ফলে তারা ধড়ফড় করে মৃত্যুবরণ করে। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, ঐ লোকগুলো উক্কাল গোত্রের ছিল কিংবা উরাইনা গোত্রের ছিল। তারা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। তারা চুরিও করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনয়নের পর কুফরীও করেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাথে যুদ্ধ করেছিল এবং তারা রাখালের চোখে গরম শলাকাও ভরে দিয়েছিল। সেই সময় মদীনার আবহাওয়া ভাল ছিল না। তারা বারসাম’ নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের পিছনে ২০ জন ঘোড় সওয়ার আনসারীকে পাঠিয়েছিলেন। একজন পদব্রজে চলছিলেন, যিনি পদচিহ্ন দেখে দেখে পথ দেখিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুর সময় তারা পিপাসায় এতো কাতর হয়ে পড়েছিলো যে, মাটি চাটতে শুরু করেছিলো! তাদের ব্যাপারেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। একদা হাজ্জাজ হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাউকে সবচেয়ে বড় ও কঠিন যে শাস্তি দিয়েছিলেন তা বর্ণনা করুন।” তখন হযরত আনাস (রাঃ) এ ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাও রয়েছে যে, ঐ লোকগুলো বাহরাইন থেকে এসেছিল। রোগের কারণে তাদের রং হলদে বর্ণ ধারণ করেছিল। আর পেট বড় হয়ে গিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা সাদকার উটের নিকট গমন কর এবং ওগুলোর দুধ ও প্রস্রাব পান কর।” হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ “তারপর আমি দেখলাম যে, হাজ্জাজ এ রিওয়ায়াতকে নিজের অত্যাচারের দলীল বানিয়ে নিলো। আমি তখন খুবই লজ্জিত হলাম যে, আমি তার কাছে এ হাদীসটি কেন বর্ণনা করলাম।” অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, তাদের মধ্যে চারজন লোক ছিল উরাইনা গোত্রের এবং তিনজন ছিল ইকাল গোত্রের। এরা যখন সুস্থ হয়ে উঠলো তখন ধর্মত্যাগী হয়ে গেলো। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তারা রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ব্যভিচারীও ছিল। তারা যখন আগমন করে তখন দারিদ্রের কারণে তাদের পরনে কাপড় পর্যন্ত ছিল না। তারা হত্যা ও লুঠ করে নিজেদের শহরের দিকে যাচ্ছিল। হযরত জারীর (রাঃ) বলেনঃ তারা তাদের কওমের কাছে প্রায় পৌছেই গিয়েছিল এমতাবস্থায় আমরা তাদেরকে ধরে ফেলি। তারা পানি চাচ্ছিল, আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলছিলেনঃ “এখন তো পানির পরিবর্তে জাহান্নামের আগুন পাবে।” এ বর্ণনায় এটাও বলা হয়েছে যে, তাদের চোখে শলাকা ভরে দেয়াকে আল্লাহ তা’আলা অপছন্দ করেন। এ হাদীসটি দুর্বল ও গারীব। কিন্তু এর দ্বারা এটা জানা গেল যে, ঐ ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যে সৈন্যদল পাঠানো হয়ছিল তাঁদের সর্দার ছিলেন হযরত জারীর (রাঃ)। এ বর্ণনার এ অংশটি একেবারই বর্জনীয় যে, তাদের চোখে শলাকা ভরে দেয়াকে আল্লাহ তা’আলা অপছন্দ করেন। কেননা, সহীহ মুসলিমে এটা বিদ্যমান আছে যে, তারা রাখালের সাথে ঐ ব্যবহার করেছিল। সুতরাং ওটা ছিল তাদের কিসাস বা প্রতিশোধ গ্রহণ। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আর একটি বর্ণনায় আছে যে, ঐলোকগুলো বানূ ফারাহ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ শাস্তি আর কাউকেও দেননি। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইয়াসার নামক এক ক্রীতদাস ছিল। সে অত্যন্ত নামাযী ছিল বলে তিনি তাকে আযাদ করে দিয়েছিলেন। অতঃপর স্বীয় উটের পালে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সে ঐ উটগুলো দেখা শোনা করতো। তাকেই ঐ ধর্মত্যাগীরা হত্যা করে ফেলেছিল এবং তার চোখে কাটা গেড়ে দিয়ে উটগুলো নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। যে সেনাবাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করে এনেছিলেন তাদের মধ্যে একজন শক্তিশালী যুবক ছিলেন হযরত কুরম্ ইবনে ফাহরী (রাঃ)। হাফিয আবু বকর মিরদুওয়াই (রঃ) এ বর্ণনার সমস্ত তরীকা বা পন্থাকে একত্রিত করেছেন। আল্লাহ পাক তাকে উত্তম পুরস্কার প্রদান করুন। আবু হামযাহ ইবনে আবদুল করীম (রঃ) উটের প্রস্রাবের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি ঐ ধর্মত্যাগীদের কাহিনী বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাও আছে যে, ঐ লোকগুলো কপটতার সাথে ঈমান এনেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট মদীনার প্রতিকূল আবহাওয়ার অভিযোগ করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদের প্রতারণা, হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্মত্যাগের বিষয় জানতে পারেন তখন তিনি ঘোষণা দেন যে, আল্লাহর সৈন্যগণ যেন তাদের পশ্চাদ্ধাবনে বেরিয়ে পড়ে। এ ঘোষণা শোনা মাত্রই সাহাবীগণ কেউ কারও জন্যে অপেক্ষা না করেই তাদের পিছনে বেরিয়ে পড়েন। তাদেকে পাঠিয়ে দেয়ার পর স্বয়ং নবী করীম (সঃ) রওয়ানা হয়ে যান। ঐ বিদ্রোহী ও ডাকাতের দল তাদের নিরাপদ জায়গায় প্রায় পৌছেই গেছে, এমন সময় সাহাবায়ে কিরাম তাদেরকে ঘিরে ফেলেন। তাদের মধ্যে যে কয়েকজন গ্রেফতার হয় তাদেরকে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করেন। ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তাদেরকে দেশান্তরিত করা ছিল এই যে, তাদেরকে ইসলামী হুকুমতের সীমানা থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষামূলক শাস্তি দেয়া হয়েছিল। এর পর নবী করীম (সঃ) আর কোন দিনই কোন লোকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেহচ্যুত করেননি, বরং তিনি তা থেকে নিষেধ করেন। জন্তুর সাথেও এরূপ ব্যবহার নিষিদ্ধ। কেউ কেউ বলেন, হত্যার পর তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ওরা বানূ সালীম গোত্রের লোক ছিল। কোন কোন মনীষী বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদেরকে যে শাস্তি দিয়েছিলেন তা আল্লাহ তা’আলার পছন্দ হয়নি এবং এ আয়াত দ্বারা ওটা মানসূখ। বা রহিত করে দেয়া হয়েছে। তাদের মতে এ আয়াতে যেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ শাস্তি দেয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন (আরবী) -এ আয়াতটি। কারও কারও মতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) “মুসলা” অর্থাৎ নাক, কান কেটে নিতে যে নিষেধ করেছেন তা দ্বারা এ শাস্তি মানসূখ হয়ে গেছে। কিন্তু এতে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। তারপর এটাও জিজ্ঞাস্য বিষয় যে, মানসূখকারীর বিলম্বের দলীল কি? কেউ কেউ বলেন যে, এটা হচ্ছে ইসলামের হদ স্থিরীকরণের পূর্বেকার ঘটনা। কিন্তু এটাও মোটেই ঠিক নয়, বরং স্থিরীকরণের পরের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। কেননা, এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)। আর তিনি সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়ার ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ে গেল তখন তিনি তা থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু এটাও সঠিক কথা নয়। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ শব্দ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের চোখে গরম শলাকা ভরে দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনে আজলান বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে যে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন তা যে উচিত ছিল না এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। যাতে উচিত শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে আর তা হচ্ছে হাত-পা বিপরীতভাবে কেটে নেয়া এবং দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। আর দেখা যাচ্ছে যে, এরপর আর কোনদিন কারও চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়া হয়েছে বলে কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, তারা যা করেছিল তারই প্রতিফল তারা পেয়েছিল। এখন যে আয়াত নাযিল হলো তাতে এরূপ লোকদের জন্যে একটা বিশেষ হুকুম বর্ণনা করা হলো এবং তাতে চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়ার হুকুম দেয়া হলো না। এ আয়াত দ্বারা জমহুর উলামা এ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, পথ বন্ধ করে দিয়ে যুদ্ধ করা এবং শহরে যুদ্ধ করা দুটোই সমান। কেননা, আয়াতে (আরবী) শব্দগুলো রয়েছে। মালিক, আলঈ এবং শাফিঈর (আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হোন) এটাই মাযহাব যে, বিদ্রোহীরা শহরের ভেতরেই এসব হাঙ্গামা সৃষ্টি করুক বা শহরের বাইরেই করুক, তাদের শাস্তি এটাই। এমনকি ইমাম মালিক (রঃ) তো এতদূর পর্যন্ত বলেন যে, কোন লোক অপর কোন লোককে তার বাড়ীতে এ ধরনের প্রতারণা করে হত্যা করলে তাকে ধরে আনা হবে এবং তার কাছে যেসব মাল ও আসবাবপত্র রয়েছে সবগুলোই ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর সাথে সাথে তাকে হত্যা করে ফেলা হবে। সমসাময়িক ইমামই এ কাজ করবেন, নিহত ব্যক্তির অভিভাবকেরা নয়। এমনকি যদি তারা (অভিভাবকেরা) তাকে ক্ষমা করে দিতে চায় তবুও তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হবে না। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর মাযহাব এটা নয়। তিনি বলেন, যে ঐ সময় মেনে নেয়া হবে যখন কেউ শহরের বাইরে এরূপ হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। কেননা, শহরে তো সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শহরের বাইরে এর কোনই সম্ভাবনা নেই। এ বিদ্রোহীদের যে শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর তরবারী উঠাবে এবং পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে, তাকে মুসলমানদের ইমাম উল্লিখিত তিনটি শাস্তির যে কোন একটি দিতে পারেন। আরও অনেকেরই এটাই উক্তি। আর অন্যান্য আয়াতের হুকুমের মধ্যেও এ ধরনের অধিকার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন হজ্বের ইহরামের অবস্থায় কেউ শিকার করলে তাকে সেই শিকারের সমপর্যায়ের জন্তু কুরবানী করতে হয় বা মিসকীনদেরকে খানা খাওয়াতে হয় কিংবা সেই বরাবর রোযা রাখতে হয়। অনুরূপভাবে রোগ বা মাথার অসুখের কারণে কেউ ইহরামের অবস্থায় মাথা মুণ্ডন করালে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে রোযা, সাদকা বা কুরবানী করতে হয়। তদ্রপ কসমের কাফফারায় মধ্যমভাবে দশজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর বা তাদেরকে কাপড় পরানোর অথবা একটি গোলাম আযাদ করণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাহলে যেমন এখানে এ অবস্থাগুলোর মধ্য হতে যে কোন একটি পছন্দ করে নেয়ার অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনই বিদ্রোহী ধর্মত্যাগীদের শাস্তিও হচ্ছে হত্যা অথবা বিপরীতভাবে হাত-পা কেটে নেয়া কিংবা দেশ হতে বিতাড়িত করা। আর জমহরের উক্তি এই যে, এ আয়াতুটি কয়েক অবস্থার সাথে জড়িত। যখন ডাকাত হত্যা ও লুঠপাট উভয় অপরাধে অপরাধী হবে তখন সে শূলেও হত্যার যোগ্য হবে। আর যদি শুধু হত্যার দোষে দোষী হয় তবে হত্যার বদলে শুধু হত্যাই করা হবে। যদি শুধু মাল নেয় তবে উল্টোভাবে হাত-পা কেটে নিতে হবে অর্থাৎ এক দিকের হাত ও অপর দিকের পা- এভাবে কেটে নিতে হবে। আর যদি পথকে ভীতিপূর্ণ করে তোলে এবং জনগণের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, এছাড়া অন্য কোন পাপে লিপ্ত না হয় তবে শুধু তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। অধিকাংশ মনীষী ও ইমামদের মাযহাব এটাই। তারপর মনীষীদের মধ্যে এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে যে, তাকে শুধু শূলের উপর লটকিয়ে দিয়েই কি ছেড়ে দেয়া হবে, যাতে সে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মারা যাবে? না বর্শা ইত্যাদি দ্বারা হত্যা করা হবে, যাতে মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে? না তিন দিন পর্যন্ত শূলেই রাখা হবে, তারপর নামিয়ে নেয়া হবে? না এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? কিন্তু এটা তাফসীরের স্থান নয়। যে, আমরা ছোটখাটো মতভেদ নিয়েই পড়ে থাকব এবং প্রত্যেকেরই দলীল পেশ করব। হ্যা, তবে একটি হাদীসে শাস্তির কিছু বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। ওর সনদ যদি সহীহ হয় তাহলে তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ঐ বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদের সম্পর্কে জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি বললেনঃ “যারা মাল চুরি করবে এবং পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে তাদের হাত চুরির বদলে কেটে নেয়া হবে, যে হত্যা করবে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে। আর যে হত্যা করবে, পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে এবং ব্যভিচার করবে তাকে শূলের উপর চড়িয়ে দিবে।”

(আরবী) অথবা ভূ-পৃষ্ঠ হতে বের করে দেয়া হবে। অর্থাৎ তাদেরকে অনুসন্ধান করে তাদের উপর হদ কায়েম করা হবে অথবা দারুল ইসলাম থেকে বের করে দেয়া হবে, যেন তারা অন্য কোথায়ও চলে যায়। কিংবা এক শহর থেকে অন্য কোন শহরে এবং সেই শহর থেকে আর এক শহরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অথবা ইসলামী রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণরূপেই বের করে দেয়া হবে। শা’বী (রঃ) তো শুধু বের করেই দিতেন। আর আতা’ খোরাসানী (রঃ) বলেন যে, এক সেনাবাহিনী থেকে অন্য সেনাবাহিনীর মধ্যে পৌছিয়ে দেয়া হবে। এমনিভাবে তাকে কয়েক বছর পর্যন্ত যেখানে সেখানে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হবে। কিন্তু তাকে দারুল ইসলাম থেকে বের করা হবে না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং তাঁর সহচরগণ বলেন যে, তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। ইবনে জারীর (রঃ)-এর পছন্দনীয় কথা এই যে, তাকে তার নিজের শহর থেকে বের করে দিয়ে অন্য কোন শহরের জেলখানায় ভরে দেয়া হবে।

(আরবী) আয়াতের এ সব লোকের পক্ষপাতিত্ব করছে যারা বলেন যে, এ আয়াতটি মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানদের ব্যাপারে রয়েছে ঐ বিশুদ্ধ হাদীসটি যাতে আছে যে, বর্ণনাকারী হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট থেকে ঐ অঙ্গীকারই গ্রহণ করেন যা তিনি স্ত্রীলোকদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তা হচ্ছে-আমরা যেন চুরি না করি, ব্যভিচারে লিপ্ত না হই, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা না করি এবং একে অপরের নাফরমানী না করি। (অর্থাৎ কেউ যেন কারও উপর মিথ্যা অপবাদ না দেয়) যারা এ অঙ্গীকার পূর্ণ করবে তাদের পুরস্কার রয়েছে আল্লাহর দায়িত্বে। আর যারা এগুলোর মধ্যে কোন একটি পাপকার্যে লিপ্ত হবে এবং ওর শাস্তিও প্রাপ্ত হবে তবে সেটাই তার সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে। আর যদি আল্লাহ সেটা গোপন করেন তবে তার সে বিষয়ের দায়িত্ব তারই উপর থাকবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন এবং ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দেবেন। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন পাপকাজ করলো, অতঃপর তাকে শাস্তি দেয়া হলো, তাহলে আল্লাহ যে তাকে পুনরায় শাস্তি দেবেন এ থেকে তাঁর আদল ও ইনসাফ বহু ঊর্ধ্বে। আর যে ব্যক্তি কোন পাপ করলো, অতঃপর আল্লাহ তা ঢেকে নিলেন এবং ক্ষমা করে দিলেন, তবে আল্লাহর করুণা এর বহু ঊর্ধ্বে যে, তিনি তাঁর বান্দার কোন পাপ ক্ষমা করে দেয়ার পর আবার ওর শাস্তি ফিরিয়ে আনবেন। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ), তিরমিযী (রঃ) এবং ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তবে এ শাস্তিপ্রাপ্তির পর যদি তাওবা ছাড়াই মারা যায় তবে পরকালের শাস্তি বাকী থেকে যাবে, যার সঠিক কল্পনা করাও এখন অসম্ভব। হ্যা, তবে যদি তাওবা নসীব হয় তাহলে অন্য কথা। তারপর তাওবাকারীদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার প্রকাশ ঐ অবস্থায় তো স্পষ্ট যে, এ আয়াতকে মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ মেনে নেয়া হবে। কিন্তু যে মুসলমান বিদ্রোহী হবে এবং সে অধিকারে আসার পূর্বেই যদি তাওবা করে নেয় তবে তার উপর হত্যা, শূল এবং পা কেটে নেয়া তো প্রযোজ্য হবেই না, এমনকি তার হাতও কাটা যাবে কি না এ ব্যাপারে আলেমদের দুটি উক্তি রয়েছে। আয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা এটা জানা যাচ্ছে যে, সমস্ত শাস্তিই তার উপর থেকে উঠে যাবে। সাহাবীদের আমলও এরই উপর রয়েছে। যেমন জারিয়া ইবনে বদর তাইমী বসরী যমীনে ফাসাদ বা হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছিল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ ব্যাপারে কয়েকজন কুরাইশী হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট সুপারিশ করেন, যাদের মধ্যে হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফরও (রাঃ) ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে নিরাপত্তা দান করতে অস্বীকার করেন। জারিয়া ইবনে বদর তখন সাঈদ ইবনে কায়েস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। তিনি তাকে নিজের বাড়ীতে রেখে হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন এবং তাঁকে বলেনঃ আচ্ছা বলুন তো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে, অতঃপর তিনি এ আয়াতগুলো (আরবী) পর্যন্ত পাঠ করেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “এরূপ ব্যক্তির জন্যে তো আমি নিরাপত্তা দান করবো।” হযরত সাঈদ (রাঃ) তখন বলেনঃ “সে হচ্ছে জারিয়া ইবনে বদর।” এরপর জারিয়া তার প্রশংসায় কবিতাও রচনা করেন।

ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মুরাদ গোত্রের একটি লোক কুফার মসজিদে কোন এক ফরয নামাযের পরে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। সে সময় তিনি কুফার শাসনকর্তা ছিলেন। লোকটি এসে তাকে বলেঃ “হে আমীরে কুফা! আমি মুরাদ গোত্রের অমুকের পুত্র অমুক। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধে লড়েছি এবং ভূ-পৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনারা আমার উপর ক্ষমতা লাভ করার পূর্বেই তাওবা করেছি। আমি এখন আপনার আশ্রয়স্থলে দাড়িয়েছি।” একথা শুনে হযরত আব মুসা আশআরী দাড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “হে লোক সকল! এ তাওবার পরে তোমাদের কেউ যেন এর সাথে কোন প্রকারের দুর্ব্যবহার না করে। যদি সে তার তাওবায় সত্যবাদী হয় তবে তো ভাল কথা, আর যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার পাপই তাকে ধ্বংস করবে।” লোকটি কিছুকাল পর্যন্ত তো ঠিকভাবেই থাকলো। তারপর সে পুনরায় মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেল। আল্লাহ তা’আলাও তাকে তার পাপের কারণে ধ্বংস করে দিলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো।

ইবনে জারীর (রাঃ) আরও বর্ণনা করেছেন যে, আলী আসাদী নামক একটি লোক মানুষের পথকে বিপজ্জনক করে তোলে। সে মানুষকে হত্যা করে এবং তাদের মালধন লুঠপাট করতে থাকে। বাদশাহ, সেনাবাহিনী এবং জনসাধারণ সদা তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টায় থাকে, কিন্তু অকৃতকার্য হয়। একদা সে জঙ্গলে অবস্থান করছিল এমন সময় একটি লোককে কুরআন পাঠ করতে শুনলো। লোকটি সেই সময় (আরবী) (৩৯:৫৩)-এ আয়াটি পাঠ করছিল। এটা শুনে সে থমকে দাঁড়ালো এবং তাকে বললোঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এ আয়াতটি পুনরায় আমাকে পাঠ করে শুনাও। লোকটি আবার তা পাঠ করলো। তখন আলী স্বীয় তরবারীখানা খাপে রেখে দিল। তৎক্ষণাৎ সে বিশুদ্ধ মনে তাওবা করলো এবং ফজরের নামাযের পূর্বেই মদীনায় পৌছে গেল। তার পর গোসল করলো এবং মসজিদে নববীতে (সঃ) প্রবেশ করে জামাআতে ফজরের নামায আদায় করলো। নামায শেষে লোকেরা হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর পাশে বসে পড়লো। সেও তখন তাদেরই মধ্যে একধারে বসে গেল। ফর্সা হয়ে গেলে লোকেরা তাকে দেখে চিনে ফেললো এবং তাকে গ্রেফতার করতে উদ্যত হলো। সে বললোঃ “দেখুন, আমার উপর আপনাদের ক্ষমতা লাভ হওয়ার পূর্বেই আমি তাওবা করেছি এবং তাওবা করার পর আপনাদের নিকট হাযির হয়েছি। সুতরাং এখন আমার উপর আপনাদের বল প্রয়োগের কোন পথ নেই।” তখন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেনঃ “লোকটি সত্য কথাই বলেছে।” অতঃপর তিনি তার হাত ধরে মারওয়ান ইবনে হাকামের নিকট নিয়ে গেলেন। সে সময় তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁকে বললেনঃ “এ হচ্ছে আলী আসাদী, সে তাওবা করেছে সুতরাং এর উপর আপনি কোন বল প্রয়োগ করতে পারেন না।” ফলে কেউই তার সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার করলেন না। মুজাহিদের একটি দল যখন রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে রওয়ানা হলেন, তাঁদের সাথে এ আলী আসাদীও গেল। তাদের নৌকা সমুদ্রে চলছিল। তাদের সামনে রোমকদের কতগুলো নৌকা এসে পড়লো। তাদেরকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্যে সে নিজেদের নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে তাদের নৌকায় গিয়ে উঠলো। তারা তার তরবারীর চমক সহ্য করতে না পেরে পালে টান দিল। আলীও তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো। নৌকার ভারসাম্য নষ্ট হলো। ফলে নৌকা ডুবে গেলো এবং রোমকদের সবাই ডুবে মরলো। তাদের সাথে হযরত আলী আসাদীও (রাঃ) ডুবে গিয়ে শাহাদত বরণ করলো।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:৫৫) পৃথিবী বলতে এখানে পৃথিবীর সেই অংশ ও অঞ্চল বুঝাচ্ছে যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কায়েম করার দায়িত্ব ইসলামী সরকার গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ‌ ও রসূলের সাথে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী সরকার দেশে যে সৎ ও সত্যনিষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন করেছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা। পৃথিবীতে একটি সৎ ও সত্যনিষ্ঠ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই আল্লাহর ইচ্ছা এবং এ জন্য তিনি নিজের রসূল পাঠিয়েছিলেন। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে পৃথিবীতে অবস্থানকারী মানুষ, পশু, বৃক্ষ ইত্যাদি সমস্ত সৃষ্টি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে, মানবতা তার প্রকৃতির কাংখিত পূর্ণতায় পৌঁছতে সক্ষম হবে এবং পৃথিবীর সমুদয় উপায় উপকরণ এমনভাবে ব্যবহৃত হবে যার ফলে সেগুলো মানবতার ধ্বংস ও বিলুপ্তির নয় বরং তার উন্নতির সহায়ক হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা কোন ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চলানো, তা ক্ষুদ্র পরিসরে হত্যা, লুন্ঠন, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদির পর্যায়ে চাপানো হোক অথবা আরো বড় আকারে, এ সৎ ও সত্যনিষ্ঠ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে তার জায়গায় কোন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেই চালানো হোক না কেন, তা আসলে আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এটা ঠিক তেমনি যেমন ভারতীয় দণ্ডবিধিতে কোন ব্যক্তির ভারতে বৃটিশ সরকারের ক্ষমতা উচ্ছেদের প্রচেষ্টাকে “সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”(Waging War Against the king) করার অপরাধে অভিযুক্ত গণ্য করা হয়েছে–সে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন একজন মামুলি সিপাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু করলেও এবং সম্রাট তার নাগালের বহু দূরে অবস্থান করলেও তার অপরাধের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় না।

টিকা:৫৬) এ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা এখানে সংক্ষেপে বলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে কাযী বা সমকালীন ইসলামী শাসক নিজের ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের ধরণ ও মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা প্রকাশ করা যে, ইসলামী হুকুমাতের আওয়তায় বাস করে কোন ব্যক্তির ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালানো নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ এবং এ জন্য তাকে উল্লেখিত চরম শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে কোন শাস্তি দেয়া যেতে পারে।

টিকা:৫৭) অর্থাৎ যদি তারা বিপর্যয় সৃষ্টির প্রচেষ্টা থেকে বিরত হয়, সৎ ও সত্যনিষ্ঠ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন ও তাকে ছিন্নভিন্ন করার অপচেষ্টা পরিহার করে এবং তাদের পরবর্তী কর্মনীতি একথা প্রমাণ করে যে, তারা শান্তিপ্রিয়, আইনের অনুগত ও সদাচারী হয়ে গেছে আর তারপরই যদি তাদের আগের অপরাধের কথা জানা যায়, তাহলে ওপরে বর্ণিত শাস্তিগুলোর মধ্য থেকে কোন শাস্তি তাদেরকে দেয়া হবে না। তবে যদি তারা মানুষের অধিকারের ওপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করে থাকে, তাহলে তার দায়িত্ব থেকে তাদেরকে মুক্ত করা যাবে না। যেমন তারা কোন ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল অথবা কারোর সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করেছিল বা অন্য কোন অপরাধ করেছিল, এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে ঐ বিশেষ অপরাধ সংক্রান্ত ফৌজদারী মামলা চালানো হবে। কিন্তু বিদ্রোহ, বিশ্বাসঘাতকতা বা আল্লাহ ও রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা সম্পর্কিত কোন মামলা তাদের বিরুদ্ধে চালানো হবে না।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে কেউ ইসলামের শৃঙ্গে হাতিয়ার ব্যবহার করবে, যাতায়াতকে ভীতিপ্রদ করে দিবে, (ডাকাতি রাহাজানি করবে) তারপর যদি তাদেরকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়, তবে মুসলিম শাসকের এ ব্যাপারে ইখতিয়ার থাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে তাকে হত্যা করবেন, নতুবা শুলে চড়াবেন, অথবা তার হাত-পা কেটে দিবেন। [তাবারী] হাদীসে এসেছে, একদল লোক মদীনায় আসল, তারা মদীনার আবহাওয়া সহ্য করতে পারল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সাদকার উট যেখানে থাকে সেখানে অবস্থানের অনুমতি দিলেন। যাতে তারা উটের দুধ ও প্রস্রাব পান করতে পারে। কিন্তু তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলোকে নিয়ে চলে যেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পিছু ধাওয়া করতে নির্দেশ দিলেন। পরে তারা ধৃত হলো। তখন তাদের হাত-পা কেটে দেয়া হলো, চোখ উপড়ে ফেলা হলো, এবং তাদেরকে মদীনার কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকায় ফেলে রাখা হলো। [বুখারী: ১৫০১; মুসলিম: ১৬৭১]

[২] ইসলামী শরী’আতে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ হুদৃদ, কিসাস ও তাষীরাত। তন্মধ্যে যেসব অপরাধের শাস্তি কুরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করে দিয়েছে তা হচ্ছে, হুদুদ ও কিসাস । পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের কোন শাস্তি কুরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকদের অভিমতের উপর ন্যস্ত করেছে, সেসব শাস্তিকে শরীআতের পরিভাষায় ‘তা’যিরাত’ তথা দণ্ড বলা হয়। কুরআনুল কারীম হুদুদ ও কিসাস পূর্ণ বিবরণ ব্যাখ্যা সহকারে নিজেই বর্ণনা করে দিয়েছে। আর দণ্ডনীয় অপরাধের বিবরণকে রাসূলের বর্ণনা ও সমকালীন বিচারকদের অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষ বিশেষ অপরাধ ছাড়া অবশিষ্ট অপরাধসমূহের শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকের অভিমতের উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিচারক স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেরূপ ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করবেন, ততটুকুই দেবেন।

আলেমরা বলেন, কুরআনুল কারীম যেসব অপরাধের শাস্তিকে আল্লাহর হক হিসাবে নির্ধারণ করে জারি করেছে, সেসব শাস্তিকে ‘হুদূদ’ বলা হয় এবং যেসব শাস্তিকে বান্দার হক হিসেবে জারি করেছে, সেগুলোকে ‘কিসাস’ বলা হয়। কিসাসের শাস্তি হুদূদের মতই সুনির্ধারিত। প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ সংহার করা হবে এবং জখমের বিনিময়ে সমান জখম করা হবে। কিন্তু পার্থক্য এই যে, হুদূদকে আল্লাহর হক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষমা করলেও তা ক্ষমা হবে না। কিন্তু কিসাস এর বিপরীত। কিসাসে বান্দার হক প্রবল হওয়ার কারণে হত্যা প্রবল হওয়ার পর হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর এখতিয়ারে ছেড়ে দেয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে কেসাস হিসাবে তাকে মৃত্যুদণ্ডও করাতে পারে। যখমের কেসাসও তদ্রুপ। পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করেনি, সে জাতীয় শাস্তিকে বলা হয় ‘তা’যীর’ তথা ‘দণ্ড’। শাস্তির এ প্রকার তিনটির বিধান অনেক বিষয়েই বিভিন্ন। তন্মধ্যে তাযীর বা দণ্ডগত শাস্তিকে অবস্থানুযায়ী লঘু থেকে লঘুতর, কঠোর থেকে কঠোরতর এবং ক্ষমাও করা যায়। এ ব্যাপারে বিচারকদের ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক। কিন্তু হুদূদের বেলায় কোন বিচারকই সামান্যতম পরিবর্তন, লঘু অথবা কঠোর করার অধিকারী নয়। স্থান ও কাল ভেদেও এতে কোন পার্থক্য হয় না। শরী’আতে হুদুদ মাত্র পাঁচটিঃ ডাকাতি, চুরি, ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ -এ চারটির শাস্তি কুরআনে বর্ণিত রয়েছে। পঞ্চমটি মদ্যপানের হদ। এটি বিভিন্ন হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের ইজমা তথা ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত। এভাবে মোট পাঁচটি অপরাধের শাস্তি নির্ধারিত ও হুদৃদরূপে চিহ্নিত হয়েছে। [কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত]

[৩] হুদুদ জাতীয় শাস্তি যেমন কোন শাসক ও বিচারক ক্ষমা করতে পারে না, তেমনি তাওবা করলেও ক্ষমা হয়ে যায় না। তবে খাটি তাওবা দ্বারা আখেরাতের গোনাহ মাফ হতে অব্যাহতি লাভ হতে পারে। তন্মধ্যে শুধু ডাকাতির শাস্তির বেলায় একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। ডাকাত যদি গ্রেফতারীর পূর্বে তাওবা করে এবং তার আচার-আচরণের দ্বারাও তাওবার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে সে হদ থেকে রেহাই পাবে। কিন্তু গ্রেফতারীর পর তাওবা ধর্তব্য নয়। অন্যান্য হুদুদ তাওবা দ্বারাও মাফ হয় না, হোক সে তাওবা গ্রেফতারীর পূর্বে অথবা পরে। [ইবন কাসীর অনুরূপ বর্ণনা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] উক্ত আয়াত অবতীর্ণের কারণ এই যে, উকল বা উরাইনা গোত্রের কিছু লোক মুসলমান হয়ে মদীনায় আগমন করে এবং মদীনার আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের প্রতিকূল হয়। অতঃপর নবী (সাঃ) তাদেরকে মদীনার বাহিরে যেখানে সাদাকাহর উট ছিল সেখানে পাঠিয়ে দেন, সেখানে তারা উটের প্রস্রাব ও দুধ পান করবে, তাতে আল্লাহ আরোগ্যদান করবেন। সুতরাং কিছু দিনের মধ্যেই তাদের অসুখ ভালো হয়ে গেল। কিন্তু তারপর তারা উটের রাখালকে মেরে ফেললো এবং উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলে গেল। যখন রসূল (সাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল, তখন তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে তাদেরকে উট সহ ধরে আনার নির্দেশ দিলেন। (অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করে রসূল (সাঃ)-এর সামনে পেশ করা হল।) নবী (সাঃ) তাদের হাত-পা কেটে ফেলা এবং চোখে গরম শলাকা ফিরানোর নির্দেশ দিলেন। (কেননা তারাও রাখালদের সাথে অনুরূপ আচরণ করেছিল।) অতঃপর তাদেরকে রৌদ্রে রাখা হল, ফলে তারা ধড়ফড় করে মৃত্যুবরণ করল। সহীহ বুখারীতে এই শব্দ সহ বর্ণিত হয়েছে যে, তারা চুরিও করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরীও করেছিল, আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছিল।
[২] অর্থাৎ যে ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তওবা করে ইসলামী শাসনের আনুগত্যের কথা ঘোষণা করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে আর ইসলামী দন্ড-বিধি তার উপর প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও উলামাগণের মধ্যে এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে, যেমন কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল অথবা ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করল অথবা কারো মান-ইজ্জত হরণ করল, তাহলে কি এই অপরাধগুলি ক্ষমা হয়ে যাবে, অথবা তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা যাবে? কোন কোন উলামার উক্তি হচ্ছে, ক্ষমা হবে না; বরং প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। ইমাম শাওকানী (রঃ) ও ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) গণের উক্তি হচ্ছে, আয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা এটা জানা যাচ্ছে যে, সমস্ত শাস্তিই তার উপর থেকে উঠে যাবে। কিন্তু হ্যাঁ ! যদি গ্রেফতার হওয়ার পর তওবা করে, তাহলে তার অপরাধ ক্ষমার যোগ্য হবে না; বরং সে শাস্তির উপযুক্তই থাকবে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)

Leave a Reply