(Book# 114/١٩٢)-৩৯৩ www.motaher21.net َوَابْتَغُوٓا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, Seek the Wasilah to Him. সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৩৫-৩৭

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٩٢)-৩৯৩
www.motaher21.net

َوَابْتَغُوٓا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ
তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর,

Seek the Wasilah to Him.

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৩৫-৩৭

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوٓا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجٰهِدُوا فِى سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।
আয়াত:-৩৬
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِى الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُۥ مَعَهُۥ لِيَفْتَدُوا بِهِۦ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيٰمَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, যদি যমীনে যা আছে তার সব ও তার সাথে সমপরিমাণও তাদের জন্য থাকে, যাতে তারা তার মাধ্যমে কিয়ামতের আযাব থেকে রক্ষার মুক্তিপণ দিতে পারে, তাহলেও তাদের থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
আয়াত:-৩৭
يُرِيدُونَ أَن يَخْرُجُوا مِنَ النَّارِ وَمَا هُم بِخٰرِجِينَ مِنْهَا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

৩৫-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁকে ভয় করার এবং তাঁর কাছে ওসীলা বা নৈকট্য অন্বেষণ করার।

الوسيلة ওসীলা-এর আভিধানিক অর্থ হল মাধ্যম ও নৈকট্য। (আন-নিহায়াহতু ফী গারীবিল হাদীস ওয়াল আসার ৫/১৮৫, লিসানুল আরব ১১/৭২৪)

উপরে উল্লেখিত উভয় অর্থেই ওসীলা শব্দটি ব্যবহার হয়। তবে সাহাবী, তাবেঈ ও বিশিষ্ট মুফাসসিরগণ এ আয়াতে ওসীলা শব্দটিকে মাধ্যম অর্থে ব্যবহার না করে “নৈকট্য” অর্থে ব্যবহার করেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: الوسيلة অর্থ القربة বা নৈকট্য। ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন:

تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه

আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও যেসব কাজে তিনি খুশি হন, তার দ্বারা তাঁর নৈকট্য হাসিল কর। (ইবনু কাসীর, ৩/১২৪)

তাই আয়াতের অর্থ হল: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং তাঁর আনুগত্য ও সৎ আমলের মাধ্যমে নৈকট্য অন্বেষণ কর।

কুরআনে বর্ণিত ‘ওসীলা’শব্দের অপব্যাখ্যা:

এক শ্রেণির নামধারী মুসলিম ইসলামকে ব্যবসার বস্তু বানিয়ে নিজের জীবনোপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আর অপর শ্রেণি ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তাদের ব্যবসাকে ভাল মনে করে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সহজ কথায় ওসীলার দোহাই দিয়ে পীর-মুরিদীর ব্যবসা চালু করেছে।

সেসব নামধারী ধর্মীয় ব্যবসায়ীগণ বলে: শুধু ঈমান ও আমলের দ্বারা সাধারণ মানুষের পক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব নয় বরং একজন পীরের হাতে বাইআত নিতে হবে।

বান্দা যখন গুনাহ করতে করতে চরম পর্যায়ে চলে যায় তখন আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মাঝে আড়াল সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করতে চান না। পীর সাহেবের অনুনয়-বিনিয়ের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। জনৈক পীর সাহেব অত্র আয়াতের তাফসীরে তার বইতে লিখেছেন: “আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের জন্য একজন পীরের হাতে বাইআত কর।”(নাউযুবিল্লাহ)

মূলত কোন পীর, গাউস-কুতুব, বাবা, খাজার হাতে বাইআত করা অথবা মাজারে গিয়ে ওসীলা তালাশ করা সম্পূর্ণ শির্কী ও বিদ‘আতী কাজ। যা মক্কার তৎকালীন মুশরিকরা করত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَي اللّٰهِ زُلْفٰي)

“আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়।”(সূরা যুমার ৩৯:৩)

শরীয়তসম্মত ওসীলা তিন প্রকার:

১. আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও গুণাবলীর ওসীলায় দু‘আ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلِلہِ الْاَسْمَا۬ئُ الْحُسْنٰی فَادْعُوْھُ بِھَا)

“আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সে সকল নামেই ডাক।”(সূরা আরাফ ৭:১৮০) অনুরূপ সহীহ হাদীসে এসেছে:

يا حَيُّ يا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ

হে চিরঞ্জীব! হে সবকিছুর ধারক! আমি তোমার রহমতের ওসীলায় সাহায্য কামনা করছি। (নাসায়ী হা: ৩৫২৪, সহীহ)
২. সৎ আমলের দ্বারা ওসীলা করা। যেমন ঈমান, সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি।

সহীহ হাদীসে এসেছে- একদা বানী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি পথে চলছিল, ঝড় বৃষ্টির কারণে তারা একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গুহায় আশ্রয় নেয়। পাহাড়ের চূড়া থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা পরস্পর বলতে লাগল:

إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللّٰهُ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ

তোমাদের সৎ আমলের ওসীলায় আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান না করা ব্যতীত এ পাথর থেকে তোমাদের মুক্তির কোন উপায় নেই। (সহীহ বুখারী হা: ২২৭২, সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪৩) মানুষ তার কৃত শরীয়তসম্মত আমলের ওসীলায় আল্লাহ তা‘আলার কাছে মুক্তি ও সাহায্য চাইবে।

৩. কোন ব্যক্তির দু‘আর মাধ্যমে ওসীলা করা। তবে শর্ত হল:
(১) ব্যক্তি জীবিত থাকতে হবে।
(২) ব্যক্তি নেককার ও মুত্তাকী হতে হবে।
(৩) উপস্থিত থাকতে হবে।

যেমন সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতেকালের পর তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর দু‘আর ওসীলায় আল্লাহ তা‘আলার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী হা: ১০১০)

অতএব কোন মৃত ব্যক্তির ওসীলা গ্রহণ করা, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বত্ত্বা দ্বারা ওসীলা তালাশ করা, তার সম্মান ও মর্যাদা দ্বারা ওসীলা তালাশ করা ও কোন বুজুর্গ ব্যক্তি, কবর বা মাজারের ওসীলা তালাশ করা বিদআত এবং পর্যায়ক্রমে তা শির্কে পৌঁছে দেয়া।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা আবশ্যক।
২. ঈমান ও সৎ আমল দ্বারা ওসীলা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত।
৩. শর্ত সাপেক্ষে জীবিত ব্যক্তির ওসীলা গ্রহণ বৈধ।
৪. সমাজে প্রচলিত ওসীলার অপব্যাখ্যা ও পীর-মুরিদীর অসারতা সম্পর্কে জানলাম।
৫. কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কোন প্রকার বিনিময় দেয়া যাবে না।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 35-37

وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ

Seek the Wasilah to Him.

Commanding Taqwa, Wasilah, and Jihad

Allah commands;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ

O you who believe! Have Taqwa of Allah,

Allah commands His faithful servants to fear Him in Taqwa, which if mentioned along with acts of obedience, it means to refrain from the prohibitions and the prohibited matters.

Allah said next,

وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ

and seek the Wasilah to Him.

Sufyan Ath-Thawri said that Talhah said that Ata said that Ibn Abbas said that;
Wasilah means `the means of approach’.

Mujahid, Abu Wa’il, Al-Hasan, Qatadah, Abdullah bin Kathir, As-Suddi, Ibn Zayd and others gave the same meaning for Wasilah.

Qatadah said that the Ayah means,

“Seek the means of approach to Him by obeying Him and performing the acts that please Him.”

أُولَـيِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ

Those whom they call upon seek a means of access to their Lord (Allah). (17:57)
Wasilah is a means of approach to achieve something, and it is also used to refer to the highest grade in Paradise, and it is the grade of the Messenger of Allah, his residence and the nearest grade in Paradise to Allah’s Throne.

Al-Bukhari recorded that Jabir bin Abdullah said that the Messenger of Allah said,

مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ

Whoever, after hearing to the Adhan says,

اللَّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَةِ الْقَايِمَةِ اتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

“O Allah! Lord of this perfect call and of the regular prayer which is going to be established! Grant Muhammad the Wasilah and superiority and send him (on the Day of Judgment) to the praiseworthy station which You have promised him,”

إِلاَّ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَة

then intercession from me will be permitted for him on the Day of Resurrection.

Muslim recorded that Abdullah bin `Amr bin Al-`As said that he heard the Prophet saying,

إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُوَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَة

When you hear the Mu’adhdhin, repeat what he says, and then ask for Salah (blessing, mercy from Allah) for me. Verily, whoever asks for Salah for me, then Allah will grant ten Salah to him. Then, ask for the Wasilah for me, for it is a grade in Paradise that only one servant of Allah deserves, and I hope that I am that servant. Verily, whoever asks (Allah) for Wasilah for me, he will earn the right of my intercession.

Allah said,

وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

and strive hard in His cause as much as you can. So that you may be successful.

After Allah commanded Muslims to avoid the prohibitions and to work towards obedience, He commanded them to fight against their enemies, the disbelievers and idolators who have deviated from the straight path and abandoned the correct religion. Allah encouraged the believers by reminding them of the unending success and great happiness that He prepared for them for the Day of Resurrection, which will never change or decrease for those who join Jihad in His cause. They will remain in the lofty rooms of Paradise that are safe and beautiful. Those who live in these dwellings will always be comfortable and will never be miserable, living, never dying, and their clothes will never grow thin, nor will their youth ever end.
No Amount of Ransom Shall Be Accepted from the Disbelievers on the Day of the Judgment and They Will Remain in the Fire

Allah then describes the painful torment and punishment that He has prepared for His disbelieving enemies for the Day of Resurrection.

Allah said,

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِي الَارْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لِيَفْتَدُواْ بِهِ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

Verily, those who disbelieve, if they had all that is in the earth, and as much again therewith to ransom themselves thereby from the torment on the Day of Resurrection, it would never be accepted of them. And theirs would be a painful torment.

So if a disbeliever brought the earth’s fill of gold, and twice as much as that amount on the Day of Judgment to ransom himself from Allah’s torment that has surrounded him, and he is certain that he will suffer from it, it will not be accepted of him. Rather, there is no escaping the torment, and he will not be able to evade or save himself from it.
They will long to get out of the Fire, but never will they get out therefrom, and theirs will be a lasting torment.

In another Ayah, Allah said,

كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا

Every time they seek to get away therefrom, in anguish, they will be driven back therein. (22:22)

Therefore, they will still long to leave the torment because of the severity and the pain it causes. They will have no way of escaping it. The more the flames lift them to the upper part of Hell, the more the angels of punishment will strike them with iron bars and they will fall down to its depths,

وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

And theirs will be a lasting torment.

meaning, eternal and everlasting, and they will never be able to depart from it or avoid it.

Anas bin Malik said that the Messenger of Allah said,

يُوْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ لَهُ

يَا ابْنَ ادَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَضْجَعَكَ

A man from the people of the Fire will be brought forth and will be asked, `O son of Adam! How did you find your dwelling!’

فَيَقُولُ شَرَّ مَضْجَعٍ

He will say, `The worst dwelling.’

فَيُقَالُ هَلْ تَفْتَدِي بِقُرَابِ الاَْرْضِ ذَهَبًا

He will be told, `Would you ransom yourself with the earth’s fill of gold!’

فَيَقُولُ نَعَمْ يَارَبِّ

He will say, `Yes, O Lord!’

فَيَقُولُ اللهُ كَذَبْتَ قَدْ سَأَلْتُكَ أَقَلَّ مِنْ ذلِكَ فَلَمْ تَفْعَلْ فَيُوْمَرُ بِهِ إِلَى النَّار

Allah will say to him, `You have lied. I asked you for what is less than that and you did not do it,’ and he will be ordered to the Fire.

Muslim and An-Nasa’i recorded it.

Hence Allah’s statement,

وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
(And theirs would be a painful torment),

meaning, hurtful,

يُرِيدُونَ أَن يَخْرُجُواْ مِنَ النَّارِ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنْهَا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

They will long to get out of the Fire, but never will they get out therefrom, and theirs will be a lasting torment.

In another Ayah, Allah said,

كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا

Every time they seek to get away therefrom, in anguish, they will be driven back therein. (22:22)

Therefore, they will still long to leave the torment because of the severity and the pain it causes. They will have no way of escaping it. The more the flames lift them to the upper part of Hell, the more the angels of punishment will strike them with iron bars and they will fall down to its depths,

وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

And theirs will be a lasting torment.

meaning, eternal and everlasting, and they will never be able to depart from it or avoid it.

Anas bin Malik said that the Messenger of Allah said,

يُوْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ لَهُ

يَا ابْنَ ادَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَضْجَعَكَ

A man from the people of the Fire will be brought forth and will be asked, `O son of Adam! How did you find your dwelling!’

فَيَقُولُ شَرَّ مَضْجَعٍ

He will say, `The worst dwelling.’

فَيُقَالُ هَلْ تَفْتَدِي بِقُرَابِ الاَْرْضِ ذَهَبًا

He will be told, `Would you ransom yourself with the earth’s fill of gold!’

فَيَقُولُ نَعَمْ يَارَبِّ

He will say, `Yes, O Lord!’

فَيَقُولُ اللهُ كَذَبْتَ قَدْ سَأَلْتُكَ أَقَلَّ مِنْ ذلِكَ فَلَمْ تَفْعَلْ فَيُوْمَرُ بِهِ إِلَى النَّار

Allah will say to him, `You have lied. I asked you for what is less than that and you did not do it,’ and he will be ordered to the Fire.

Muslim and An-Nasa’i recorded it.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৩৫-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে তাকওয়া ও সংযমশীলতার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এবং সেটাও আবার আনুগত্যের সাথে মিশ্রিতভাবে। ভাবার্থ এই যে, মানুষ যেন আল্লাহ পাকের নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। ‘ওয়াসীলা’র অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটাই বর্ণিত আছে। হযরত মুজাহিদ, হযরত আবু ওয়ায়েল, হযরত হাসান, হযরত যায়েদ (আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি সদয় হোন) প্রমুখ মুফাসৃসিরগণ হতেও এটাই বর্ণিত আছে।

কাতাদাহ (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- আল্লাহ পাকের আনুগত্য স্বীকার করে এবং তার মর্জি মুতাবিক আমল করে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। ইবনে যায়েদ (রঃ) নিম্নের আয়াতটিও পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা তো ওরাই যারা তাদের প্রভুর নৈকট্য অনুসন্ধান করে থাকে। (১৭:৫৭) এ ইমামগণ শব্দটির যে অর্থ করেছেন তার উপর সমস্ত মুফাসসিরেরই ইজমা রয়েছে। তাঁদের কেউ এর বিপরীত অর্থ করেননি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এর উপর একটি আরবী কবিতাও পেশ করেছেন, যাতে ওয়াসীলাহ্ শব্দটি নৈকট্যের অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। ওয়াসীলাহ-এর অর্থ ঐ জিনিস যার দ্বারা আকাংখিত বস্তু লাভ করা যায়। ওয়াসীলাহ্ জান্নাতের ঐ উচ্চ ও মনোরম জায়গার নাম যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জায়গা এবং সেটা আরশের অতি নিকটে। সহীহ বুখারীতে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনে (আরবী)-এ দু’আটি পাঠ করে তার জন্যে কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত হালাল হয়ে যাবে।” সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আযান শুনবে তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তা-ই বল, তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ কর, এক দরূদের বিনিময়ে তোমাদের উপর আল্লাহ দশটি রহমত নাযিল করবেন। এরপর আমার জন্যে তোমরা আল্লাহর নিকট ওয়াসীলা যাজ্ঞা কর। ওটা হচ্ছে জান্নাতের একটি মনযিল যা শুধু একটি বান্দা লাভ করবে। আশা করি যে, ঐ বান্দা আমিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্যে ওয়াসীলা প্রার্থনা করলো তার জন্যে আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে গেল।” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করবে তখন আমার জন্যে ওয়াসীলাও প্রার্থনা করবে।” তখন জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ওয়াসীলা কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ওটা হচ্ছে জান্নাতের একটি উঁচু স্থান যা একটিমাত্র লোক লাভ করবে। আমি আশা করি যে, সেই লোকটি আমিই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমার জন্যে আল্লাহর নিকট ওয়াসীলা যা কর। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আমার জন্যে এ প্রার্থনা করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার জন্যে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হয়ে যাব।” অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে ওয়াসীলা অপেক্ষা বড় জায়গা আর নেই। অতএব, তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্যে ওয়াসীলা প্রাপ্তির প্রার্থনা কর।” একটি গারীব ও মুনকার হাদীসে এতটুকু বেশীও রয়েছে যে, জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করলোঃ এই ওয়াসীলায় আপনার সাথে আর কে থাকবেন? উত্তরে তিনি হযরত ফাতিমা (রাঃ) এবং হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর নাম উচ্চারণ করেন। আর একটি অত্যন্ত গারীব হাদীসে আছে যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) কুফার মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেনঃ জান্নাতে দু’টি মুক্তা রয়েছে, একটি সাদা ও অপরটি হলদে। হলদেটি তো আরশের নীচে রয়েছে। আর মাকামে মাহমুদ হচ্ছে সাদা মুক্তার তৈরী, যাতে সত্তর হাজার প্রাসাদ রয়েছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি তিন মাইলের সমান। ওর দরজা, জানালা, আসন ইত্যাদি যেন একই মূলের তৈরী। ওরই নাম হচ্ছে ওয়াসীলা। ওটাই হচ্ছে মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তার আহূলে বায়তের জন্যে।

(আরবী) তাকওয়া অর্থাৎ নিষিদ্ধ বিষয়গুলো হতে বিরত থাকা এবং আদিষ্ট বিষয়গুলো মেনে চলার নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। মুশরিক, কাফির অর্থাৎ যারা তার শত্রু, যারা তার দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তাঁর সরল সঠিক পথ থেকে সরে পড়েছে, তোমরা তাদেরকে হত্যা কর। আর এসব মুজাহিদ হচ্ছে সফলকাম। কৃতকার্যতা, সৌভাগ্য এবং মর্যাদা তাদেরই। জান্নাতের উচ্চ উচ্চ অট্টালিকা এবং আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত তাদেরই জন্যে। তাদেরকে এ জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যেখানে মৃত্যু ও ধ্বংস নেই, যেখানে ঘাটতি ও লোকসান নেই, যেখানে রয়েছে চির যৌবন, অটুট স্বাস্থ্য এবং চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তি।

স্বীয় প্রিয়পাত্রদের উত্তম পরিণাম বর্ণনা করার পর এখন আল্লাহ পাক তার শক্রদের মন্দ পরিণামের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন- তাদেরকে এমন কঠিন ও জঘন্য শাস্তি দেয়া হবে যে, সেই সময় যদি তারা সারা বিশ্বের অধিপতি হয়ে যায় এমনকি আরও এরই সমান হয় এবং এমতাবস্থায় সেই কঠিনতম শাস্তি থেকে বাচার জন্যে বিনিময় হিসেবে এ সবগুলো দিতেও চায় তবুও তাদের থেকে সেগুলো গ্রহণ করা হবে না। বরং যে শাস্তি তাদের উপর হবে তা হবে চিরস্থায়ী শাস্তি। তা হতে কোনক্রমেই রক্ষা পাওয়া যাবে না। অন্য জায়গায় রয়েছেজাহান্নামীরা যখন জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখন পুনরায় তাদেরকে ওরই মধ্যে ফিরিয়ে আনা হবে। জ্বলন্ত অগ্নিশিখার সাথে যখন তারা উপরে উঠে আসবে তখন তাদেরকে লোহার হাতুড় মেরে মেরে পুনরায় জাহান্নামের গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। মোটকথা তাদের সেই চিরস্থায়ী শাস্তি থেকে বের হওয়া অসম্ভব। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নামের একটি লোককে আনয়ন করা হবে। তারপরে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে-হে আদম সন্তান! তোমার জায়গা কেমন পেয়েছো?” সে উত্তরে বলবেঃ ‘আমার জায়গা অত্যন্ত খারাপ পেয়েছি।” আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তুমি কি এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ প্রদানে সম্মত আছ?” সে উত্তর দেবেঃ “হে আমার প্রভু! হ্যা (আমি সম্মত আছি।)” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “তুমি মিথ্যা বলছে। আমি তো তোমার কাছে এর চেয়েও বহু কম চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি সেটাও দাওনি।” অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম ও ইমাম নাসাঈ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে
মাররূপে বর্ণনা করেছেন) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক দল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।” বর্ণনাকারী হযরত ইয়াযীদ ফকীর (রঃ) বলেনঃ আমি যখন হযরত জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে (আরবী) অর্থাৎ তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে কিন্তু তা থেকে তারা বের হতে পারবে না-এ আয়াতের অর্থ কি হবে? তখন তিনি বললেনঃ এর পূর্বের আয়াতটি (আরবী) পাঠ কর। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এরা কাফির। সুতরাং কখনও জাহান্নাম হতে বের হতে পারবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে-হযরত ইয়াযীদেরও এ বিশ্বাস ছিল যে, জাহান্নাম থেকে কেউই বের হতে পারবে না, কাজেই উপরোক্ত হাদীসটি শুনে তিনি হযরত জাবির (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললেন, আমার অন্য লোকের উপর তো কোন দুঃখ নেই। আমার দুঃখ শুধু আপনাদের ন্যায় সাহাবীদের উপর যে, আপনারাও কুরআন কারীমের বিপরীত কথা বলে থাকেন? ঐ সময় আমার খুব রাগও হয়েছিল। আমার এ কথা শুনে হযরত জাবির (রাঃ)-এর সঙ্গীগণ আমাকে খুব ধমক দেন। কিন্তু হযরত জাবির (রাঃ) অত্যন্ত সহিষ্ণু ছিলেন বলে আমাকে বুঝিয়ে বললেনঃ “কুরআন কারীমে যাদের জাহান্নাম থেকে বের না হওয়ার বর্ণনা রয়েছে তারা হচ্ছে কাফির। তুমি কি কুরআন পড়নি?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা, পড়েছি। আমার সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ আছে। তখন তিনি বলেনঃ তাহলে তোমার কি কুরআনের (আরবী) (১৭:৭৯)-এ আয়াতটি স্মরণ নেই? এ আয়াতে মাকামে মাহমুদের উল্লেখ রয়েছে। আর এটা হচ্ছে শাফাআতের জায়গা। আল্লাহ তাআলা কতক লোককে তাদের পাপের কারণে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং যতদিন ইচ্ছা জাহান্নামে রাখবেন। তারপর যখন ইচ্ছা তাদেরকে তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। হযরত ইয়াযীদ (রঃ) বলেন-এরপর থেকে আমার ধারণা শুধরে যায়। (এটা হাফিয ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত তলাক ইবনে হাবীব (রঃ) বলেনঃ “আমিও জাহান্নামীদের জন্যে শাফাআতের অস্বীকারকারী ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি। অতঃপর আমার দাবী সাব্যস্তকরণে যেসব আয়াতে জাহান্নামে চির অবস্থানের বর্ণনা রয়েছে সেগুলো পাঠ করে শুনাই। তিনি শুনে বলেনঃ “হে তলাক! তুমি কি আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সুন্নাতের ইলমের বিষয়ে নিজেকে আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে কর? জেনে রেখো যে, যেসব আয়াত তুমি পাঠ করে শুনালে সেগুলো হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী অর্থাৎ মুশরিকদের ব্যাপারে প্রযোজ্য। কিন্তু যারা জাহান্নাম থেকে বের হবে তারা ঐসব লোক যারা মুশরিক নয়, তবে পাপী। পাপ অনুযায়ী শাস্তি ভোগের পর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।” হযরত জাবির (রাঃ) এসব বলার পর স্বীয় হাত দুটি দ্বারা স্বীয় কান দু’টির দিকে ইশারা করে বলেনঃ আমি যদি আল্লাহর রাসূল (সঃ) থেকে শুনে না থাকি যে, জাহান্নামে প্রবেশের পরও মানুষকে তা থেকে বের করা হবে তবে আমার এ দু’টি (কান) বধির হয়ে যাক। আল-কুরআনের আয়াতগুলো যেমন তোমরা পড় তেমন আমিও পড়ি। (এ হাদীসটি ইবনে মিরদুওয়াই বর্ণনা করেছেন)

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৫৮) অর্থাৎ এমন প্রত্যেকটি উপায় অনুসন্ধান করতে থাকো যার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারো।

টিকা:৫৯) মূলে (جَاهِدُوا) “জাহিদু” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে নিছক ‘প্রচেষ্টা ও সাধনা’ শব্দ দু’টির মাধ্যমে এর অর্থের সবটুকু প্রকাশ হয় না। আর (مُجَاهِدُه) ‘মুজাহাদা’ শব্দটির মধ্যে মুকাবিলার অর্থ পাওয়া যায়। এর সঠিক অর্থ হচ্ছেঃ যেসব শক্তি আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা তোমাদের আল্লাহর মর্জি অনুসারে চলতে বাধা দেয় এবং তাঁর পথ থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে, যারা তোমাদের পুরোপুরি আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন যাপন করতে দেয় না এবং নিজের বা আল্লাহর ছাড়া আর কারোর বান্দা হবার জন্য তোমাদের বাধ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্ভাব্য সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাও। এ প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ওপর তোমাদের সাফল্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ নির্ভর করছে।

এভাবে এ আয়াতটি মু’মিন বান্দাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে চতুর্মুখী ও সর্বাত্মক লড়াই করার নির্দেশ দেয়। একদিকে আছে অভিশপ্ত ইবলীস এবং তার শয়তানী সেনাদল। অন্যদিকে আছে মানুষের নিজের নফস ও তার বিদ্রোহী প্রবৃত্তি। তৃতীয় দিকে আছে এমন এক আল্লাহ বিমুখ মানব গোষ্ঠী যাদের সাথে মানুষ সব ধরনের সামাজিক, তামাদ্দুনিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সূত্রে বাঁধা। চতুর্থ দিকে আছে এমন ভ্রান্ত ধর্মীয় তামাদ্দুনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যার ভিত্তিভূমি গড়ে উঠেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ওপর এবং তা সত্যের আনুগত্য করার পরিবর্তে মিথ্যার আনুগত্য করতে মানুষকে বাধ্য করে। এদের সবার কৌশল বিভিন্ন কিন্তু সবার চেষ্টা একমুখী। এরা সবাই মানুষকে আল্লাহর পরিবর্তে নিজের অনুগত করতে চায়। বিপরীত পক্ষে, মানুষের পুরোপুরি আল্লাহর অনুগত হওয়া এবং ভিতর থেকে বাইর পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহর নির্ভেজাল বান্দায় পরিণত হয়ে যাওয়ার ওপরই তার উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মর্যাদার উন্নীত হওয়া নির্ভর করে। কাজেই এ সমস্ত প্রতিবন্ধক ও সংঘর্ষশীল শক্তির বিরুদ্ধে একই সাথে সংগ্রামমুখর হয়ে, সবসময় ও সব অবস্থায় তাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত থেকে এবং এ সমস্ত প্রতিবন্ধককে বিধ্বস্ত ও পর্যুদস্ত করে আল্লাহর পথে অগ্রসর না হলে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো তার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ কর । (الْوَسِيْلَةَ) শব্দটি (وسل) ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ সংযোগ স্থাপন করা। পূর্ববর্তী মনীষী, সাহাবী ও তাবে’য়ীগণ ইবাদাত, নৈকট্য, ঈমান সৎকর্ম দ্বারা আয়াতে উল্লেখিত (وسيلة) শব্দের তাফসীর করেছেন। হাকেমের বর্ণনা মতে হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ ‘ওসীলা শব্দ দ্বারা নৈকট্য ও আনুগত্য বোঝানো হয়েছে’। ইবন জরীর আ’তা, মুজাহিদ ও হাসান বসরী রাহিমাহুমুল্লাহ থেকে এ অর্থই বর্ণনা করেছেন। এ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

(تَقَرَّبُوْا اِلَيْهِ بِطَاعَتِهِ وَالعَمَلِ بِمَا يُرْضِيْهِ)

অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর তাঁর আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কাজ করে। [তাবারী; ইবন কাসীর] অতএব, আয়াতের সারব্যাখ্যা এই দাড়ায় যে, ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অন্বেষণ কর। অন্য বর্ণনায় হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে এ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে বললেন যে, ওসীলা অর্থ, নৈকট্য। তারপর তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে যারা সংরক্ষণকারী তারা সবাই এটা ভালভাবেই জানেন যে, ইবন উম্ম আব্দ (ইবন মাসউদ) তিনি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১২ অনুরূপ তিরমিযী:৩৮০৭: মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯৫]

এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতের একটি উচ্চ স্তরের নাম ‘ওসীলা’। এর উর্ধ্বে কোন স্তর নেই। তোমরা আল্লাহর কাছে দো’আ কর যেন তিনি এ স্তরটি আমাকে দান করেন। [মুসনাদে আহমাদঃ১১৩৭৪ আবু সাঈদ আল-খুদরী হতে]

অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘যখন মুয়ায্‌যিন আযান দেয়, তখন মুয়াযযিন যা বলে, তোমরাও তাই বল। এরপর দুরূদ পাঠ কর এবং আমার জন্য ওসীলার দোআ কর’। [মুসলিম: ৩৮৪] উপযুক্ত ওসীলা শব্দের আভিধানিক ব্যাখ্যা এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তাফসীর থেকে জানা গেল যে, যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ হয়, তাই অসীলা। পক্ষান্তরে শরীআতের পরিভাষায় তাওয়াস্সুলের অর্থ হল – আল্লাহ যা বৈধ করেছেন তা পালন করে এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা ও জান্নাতে পৌঁছা।

‘ওসীলা’ শব্দটি কুরআন কারীমে দুটি স্থানে এসেছেঃ সূরা আল-মায়েদার ৩৫ নং আয়াত এবং সূরা আল-ইসরার ৫৭ নং আয়াত। আয়াতদ্বয়ে ওসীলার অর্থ হলঃ আল্লাহকে সন্তুষ্টকারী কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। হাফেয ইবন কাসীর রাহেমাহুল্লাহ প্রথম আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, ওসীলার অর্থ নৈকট্য। অনুরূপ তিনি মুজাহিদ, আবু ওয়ায়িল, হাসান বসরী, আবদুল্লাহ ইবন কাসীর, সুদ্দী, ইবন যায়েদ ও আরো একাধিক ব্যক্তি হতেও তা বর্ণনা করেন। আর সম্মানিত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু দ্বিতীয় আয়াতটি নাযিল হওয়া প্রসংগে বলেছেনঃ আয়াতটি আরবদের কিছুসংখ্যক লোকের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা কিছুসংখ্যক জিনের উপাসনা করত। অতঃপর জিনেরা ইসলাম গ্রহণ করল, অথচ তাদের উপাসনাকারী মানুষেরা তা টেরই পেল না। [মুসলিম:৩০৩০; বুখারী ৪৭১৪]

অসীলার প্রকারভেদঃ
অসীলা দু’ প্রকারঃ শরীআতসম্মত অসীলা ও নিষিদ্ধ অসীলা।

১. শরীআতসম্মত অসীলাঃ
তা হল শরীআত অনুমোদিত বিশুদ্ধ ওসীলা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। আর তা জানার সঠিক পন্থা হল কুরআন ও সুন্নার দিকে প্রত্যাবর্তন এবং ওসীলা সম্পর্কে এতদুভয়ে যা কিছু এসেছে সেগুলো জেনে নেয়া। অতএব যে বিষয়ে কুরআন ও সুন্নায় এ দলীল থাকবে যে, তা শরীআত অনুমোদিত, তাহলে তাই হবে শরীআতসম্মত অসীলা। আর এতদ্ব্যতীত অন্য সব অসীলা নিষিদ্ধ। শরীআতসম্মত অসীলা তিন প্রকারঃ

প্রথমঃ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের কোন একটি নাম অথবা তার মহান গুণাবলীর কোন একটি গুণ দ্বারা আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন। যেমন মুসলিম ব্যক্তি তার দোআয় বলবেঃ হে আল্লাহ! আপনি যে পরম করুণাময় ও দয়ালু সে ওসীলা দিয়ে আমি আপনার কাছে আমাকে সুস্থতা দানের প্রার্থনা করছি। অথবা বলবে আপনার করুণা যা সবকিছুতে ব্যপ্ত হয়েছে, তার ওসীলায় আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, যেন আমায় ক্ষমা করে দেন এবং দয়া করেন, ইত্যাদি। এ প্রকার তাওয়াসসুল শরীআতসম্মত হওয়ার দলীল হল আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সে সব নামেই ডাক”। [সূরা আল-আ’রাফঃ ১৮০]

দ্বিতীয়ঃ সে সকল সৎ কর্ম দ্বারা আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন, যা বান্দা পালন করে থাকে। যেমন এরকম বলা যে, ‘হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমার ঈমান, আপনার জন্য আমার ভালবাসা ও আপনার রাসূলের অনুসরণের ওসীলায় আমায় ক্ষমা করুন অথবা বলবেঃ ‘হে আল্লাহ! আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য আমার ভালবাসা এবং তাঁর প্রতি আমার ঈমানের ওসীলায় আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি যেন আমায় বিপদমুক্ত করেন’। এর দলীল আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন”। [সূরা আলে-ইমরানঃ ১৬] আর এ বিষয়ের দলীলের মধ্যে রয়েছে তিন গুহাবাসীর কাহিনীও, যা সহীহ বুখারীতে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। [বুখারীঃ ৩৪৬৫]

তৃতীয়ঃ এমন সৎ ব্যক্তির দোআর ওসীলায় আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, যার দোআ কবুলের আশা করা যায়। যেমন এমন ব্যক্তির কাছে কোন মুসলিমের যাওয়া, যার মধ্যে সততা, তাকওয়া ও আল্লাহর আনুগত্যের হেফাযত লক্ষ্য করা যায় এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দো’আর আবেদন করা যাতে বিপদ থেকে মুক্তি ঘটে ও তার বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। শরীআতে এ প্রকার অনুমোদিত হওয়ার দলীল হল, সাহাবাগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ব্যাপক ও নির্দিষ্ট সকল প্রকার দো’আ করার আবেদন জানাতেন। হাদীসে রয়েছে, “এক ব্যক্তি জুমার দিন মিম্বরমুখী দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দাড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সকল পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে দো’আ করুন, যেন তিনি আমাদের জন্য বৃষ্টি অবতরণ করেন। আনাস বলেনঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তদ্বয় উঠিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের পানি দিন, হে আল্লাহ! আমাদের পানি দিন”। আনাস বলেনঃ আল্লাহর কসম, আমরা আকাশে কোন মেঘ, ছড়ানো ছিটানো মেঘের খণ্ড বা কোন কিছুই দেখিনি। আমাদের মধ্যে ও সেলা পাহাড়ের মধ্যে কোন ঘর-বাড়ী ছিলো না। তিনি বললেনঃ এরপর সেলা পাহাড়ের পেছন থেকে ঢালের মত একখণ্ড মেঘের উদয় হল। মেঘটি আকাশের মাঝ বরাবর এসে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর বৃষ্টি হল। [বুখারীঃ ১০১৩; মুসলিমঃ ৮৯৭] তবে এ প্রকার অসীলা গ্রহণ শুধু ঐ ব্যক্তির জীবদ্দশায়ই হতে পারে, যার কাছে দোআ চাওয়া হয়। তবে তার মৃত্যুর পর এটা জায়েয নেই; কেননা মৃত্যুর পর তার কোন আমল নেই।

২.নিষিদ্ধ অসীলাঃ তা হল- যে বিষয়টি শরীআতে ওসীলা হিসাবে সাব্যস্ত হয়নি, তা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন। এটি কয়েক প্রকার, যার কোন কোনটি অন্যটি থেকে অধিক বিপজ্জনক। তন্মধ্যে রয়েছে-

মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আহবান করার মাধ্যমে, তাদের দ্বারা পরিত্রাণের আবেদন এবং তাদের কাছে অভাব মোচন, বিপদ থেকে মুক্তিদান প্রভৃতি প্রার্থনা করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন। এটা শির্কে আকবার বা বড় শির্ক যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়।

কবর ও মাযারের পাশে ইবাদাত পালন ও আল্লাহকে ডাকা, কবরের উপর সৌধ তৈরী করা এবং কবরে প্রদীপ ও গেলাফ দেয়া প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। এটা ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত, যা তাওহীদ পরিপূর্ণ হওয়ার অন্তরায় এবং বড় শির্কের দিকে পৌঁছিয়ে দেয়ার মাধ্যম।

নবীগণ ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গের সম্মান এবং আল্লাহর কাছে তাদের মান ও মর্যাদার ওসীলায় আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। এটা হারাম। বরং তা নবআবিস্কৃত বেদ’আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা এমনই তাওয়াস্‌সুল যা আল্লাহ বৈধ করেননি এবং এর অনুমতিও দেননি। এ ধরনের ওসীলা অবলম্বন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের যুগে পরিচিত ছিল না। ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘দো’আকারী এ কথা বলা মাকরুহ যে, ‘আমি আপনার কাছে অমুক ব্যক্তির যে হক্ব রয়েছে কিংবা আপনার অলীগণ ও রাসূলগণের যে হক্ব রয়েছে কিংবা বায়তুল্লাহ আল-হারাম (কাবা শরীফ) ও মাশ’আরুল হারামের যে হক্ব রয়েছে তার ওসীলায় প্রার্থনা করছি’। [আত-তাওয়াসসুল ওয়াল অসীলা থেকে সংক্ষেপিত]

[২] জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ আয়াত কাফেরদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। [ইবনে হিব্বান, (আল-ইহসান) ১৬/৫২৭, ৭৪৮৩]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অসীলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে, ঐ জিনিস যার মাধ্যমে আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করা যায় অথবা কোন বস্তুর নিকটবর্তী হওয়া যায়। ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর’ এর ভাবার্থ হচ্ছে; এমন কর্ম সম্পাদন করা, যার দ্বারা তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য অর্জন করতে পার। ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেন; অসীলা শব্দটি নৈকট্য লাভের অর্থ বুঝায়, তা ছাড়া সংযম (তাকওয়া) ও অন্যান্য ভালো কর্মের সাথে সম্পৃক্ত যার দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। অনুরূপভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম কর্ম করা থেকে বিরত থাকার দ্বারাও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। কেননা নিষিদ্ধ ও হারাম কর্ম বর্জন করাও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। কিন্তু অজ্ঞরা প্রকৃত অসীলাকে বাদ দিয়ে কবরে সমাধিস্থ মানুষদেরকে নিজেদের অসীলা বানিয়ে নিয়েছে; যার শরীয়তে কোন ভিত্তি নেই। অনুরূপ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতের সুউচ্চ স্থানকেও ‘অসীলা’ বলা হয়; যা নবী (সাঃ)-কে প্রদান করা হবে । আর এই জন্যেই নবী (সাঃ) বলেছেন ; যে ব্যক্তি আযানের পর এই দু’আ পাঠ করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ হালাল হয়ে যাবে। (বুখারীঃ আযান অধ্যায় ও মুসলিমঃ নামায অধ্যায়) অসীলার দু’আ যা আযানের পর পঠনীয়, তা হচ্ছে; “আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ দা’অতিত্ তা-ম্মাহ, অসস্বালা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল অসীলাতা অলফাযীলাহ, অবআসহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী অআত্তাহ।”

[২] হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামের একটি লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে। তারপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তুমি তোমার বাসস্থান কেমন পেয়েছ?’ সে উত্তরে বলবে; ‘অত্যন্ত খারাপ জায়গা।’ তারপর আল্লাহ আবার বলবেন, ‘তুমি কি এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ প্রদানে সম্মত আছ?’ সে উত্তরে বলবে, ‘হ্যাঁ।’ তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘আমি তো তোমার নিকট পৃথিবীতে এর চেয়েও বহু কম চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সেটাও দাওনি বা পরোয়া করনি।’ অতঃপর পুনরায় তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

(মুসলিম, কিয়ামত অধ্যায় ও বুখারী রিক্বাক ও আম্বিয়া অধ্যায়)

[৩] উক্ত আয়াতটি কাফেরদের জন্যই, কেননা মুমিনগণকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যেমন; বহু হাদীস থেকে প্রমাণিত।

Leave a Reply