أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٩٤)-৩৯৫
www.motaher21.net
لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسٰرِعُونَ فِى الْكُفْرِ
তোমাকে যেন তারা চিন্তিত না করে, যারা কুফরে দ্রুত ছুটছে-
Let not those who hurry to fall into disbelief grieve you,
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৪১-৪৪
يٰٓأَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسٰرِعُونَ فِى الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوٓا ءَامَنَّا بِأَفْوٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ ۛ وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا ۛ سَمّٰعُونَ لِلْكَذِبِ سَمّٰعُونَ لِقَوْمٍ ءَاخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ ۖ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِنۢ بَعْدِ مَوَاضِعِهِۦ ۖ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا ۚ وَمَن يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُۥ فَلَن تَمْلِكَ لَهُۥ مِنَ اللَّهِ شَيْـًٔا ۚ أُولٰٓئِكَ الَّذِينَ لَمْ يُرِدِ اللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ ۚ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْىٌ ۖ وَلَهُمْ فِى الْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
হে রাসূল, তোমাকে যেন তারা চিন্তিত না করে, যারা কুফরে দ্রুত ছুটছে- তাদের থেকে, যারা তাদের মুখে বলে ‘ঈমান এনেছি’ কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। আর যারা ইয়াহূদী তারা মিথ্যা অধিক শ্রবণকারী, অন্যান্য কওমের প্রতি, যারা তোমার নিকট আসেনি তাদের পক্ষে তারা কান পেতে থাকে। তারা শব্দগুলোকে যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও আপন স্থান থেকে বিকৃত করে। তারা বলে, ‘যদি তোমাদেরকে এটি প্রদান করা হয়, তবে গ্রহণ কর। আর যদি তা তোমাদেরকে প্রদান না করা হয়, তাহলে বর্জন কর’; আর আল্লাহ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তুমি তার পক্ষে আল্লাহর বিরুদ্ধে কিছুরই ক্ষমতা রাখ না। এরাই হচ্ছে তারা, যাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব।
আয়াত:-৪২
سَمّٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكّٰلُونَ لِلسُّحْتِ ۚ فَإِن جَآءُوكَ فَاحْكُم بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ ۖ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًٔا ۖ وَإِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
তারা মিথ্যার প্রতি অধিক শ্রবণকারী, হারামের অধিক ভক্ষণকারী। সুতরাং যদি তারা তোমার কাছে আসে, তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা কর অথবা তাদেরকে উপেক্ষা কর আর যদি তাদেরকে উপেক্ষা কর, তবে তারা তোমার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না, আর যদি তুমি ফয়সালা কর, তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা কর ন্যয়ভিত্তিক। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যয়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।
আয়াত:-৪৩
وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ التَّوْرٰىةُ فِيهَا حُكْمُ اللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنۢ بَعْدِ ذٰلِكَ ۚ وَمَآ أُولٰٓئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ
আর কীভাবে তারা তোমাকে ফয়সালাকারী বানায়? অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত, যাতে আছে আল্লাহর বিধান, তা সত্ত্বেও তারা এরপর মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা মুমিনও নয়।
আয়াত:-৪৪
إِنَّآ أَنزَلْنَا التَّوْرٰىةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبّٰنِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتٰبِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَآءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِـَٔايٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْكٰفِرُونَ
নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নবীগণ এবং রববানী ও ধর্মবিদগণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
শানে নুযূল:
৪১-৪৪ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হবার কারণ হিসেবে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়:
(১) বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী ইয়াহূদীর ঘটনা। একদিকে তারা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করেছিল। অন্যদিকে অনেক বিধান অমান্য করে চলত। তার অন্যতম একটি হল রজমের বিধান। তাদের মধ্যে বিবাহিত নারী পুরুষ ব্যভিচার করলে মনগড়া বিধান দিয়ে ফায়সালা দিত। রজম করত না। তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করত, উদ্দেশ্য ছিল যদি তাদের মনপুত মত ফায়সালা হয় তাহলে মানবে অন্যথায় মানবে না।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: ইয়াহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল। তারা তাদের দু’জন ব্যভিচারীর কথা উল্লেখ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাওরাতে রজমের বিষয়ে কিছু পেয়েছ? তারা বলল: ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে চাবুক মারা ও লাঞ্ছিত করার কথা আছে। (এ কথা শুনে) আবদুল্লাহ বিন সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে রজমের কথা আছে। তারা তাওরাত নিয়ে আসল এবং খুলে পাঠ করতে লাগল। তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রাখল, আর পূর্বাপর অংশ পাঠ করল। আবদুল্লাহ বিন সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও, তার হাত উঠাল। দেখা গেল সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। তারা বলল: সত্য বলেছেন হে মুহাম্মাদ! সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে রজম করার (পাথর মেরে হত্যার) নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৬৩৫)
(২) ইয়াহূদীদের এক গোত্র অপর গোত্র অপেক্ষা বেশি মর্যাদাসম্পন্ন মনে করত। আর এ কারণেই এক গোত্রের লোক খুন হলে অপর গোত্রের নিকট একশত ওসাক রক্তপণ দাবী করত। আর অন্য গোত্রের কেউ খুন হলে পঞ্চাশ ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করত। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করলেন, তখন যাদের পঞ্চাশ ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করা হত তারা খুশি হল যে, এবার তাদেরও একশত ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করা হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হবার উপক্রম হল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদ আহমাদ১/২৪৬,সহীহ) প্রথমটিই বেশি প্রাধান্যযোগ্য।
কাফির ও মুশরিকদের ঈমান গ্রহণ না করা এবং সঠিক পথ অবলম্বন না করার ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুবই অস্থিরতা ও আক্ষেপের শিকার হয়েছিলেন, সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা নিজে নাবীকে সান্ত্বনা দিয়ে অধিক চিন্তা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হন যে, এ লোকেদের ব্যাপারে তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে জিজ্ঞাসিত হবেন না।
سَمَّاعُوْنَ
শব্দের অর্থ হল: অধিক শ্রবণকারী। এর দুটি অর্থ হতে পারে:
১. গুপ্তচর হিসেবে শ্রবণ করা।
২. অন্যের কথা মান্য ও গ্রহণ করার জন্য শ্রবণ করা।
কেউ প্রথমটি আবার কেউ দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন।
أسلموا ক্রিয়াপদটি نبيين (নাবীগণ) এর বিশেষণ। সকল নাবীগণই ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন, যার দিকে নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ সকল নাবীদের ধর্ম এক ও অভিন্ন। আর ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হল তাওহীদ। প্রত্যেক নাবী স্বজাতিকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا نُوْحِيْٓ إِلَيْهِ أَنَّه۫ لَآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنَا فَاعْبُدُوْنِ)
“আমি তোমার পূর্বে যখন কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তার প্রতি এ ওয়াহী করেছি, ‘আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই; সুতরাং আমারই ইবাদত কর।’ (সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৫)
(اَلَّذَيْنَ هَادُوْا)
আয়াতের এ অংশের সম্পর্ক يحكم (ফায়সালা দেবেন) ক্রিয়ার সাথে। অর্থাৎ যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যাপারেও ফায়সালা দিতেন।
(وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ ….هُمُ الْكَافِرُوْنَ)
‘যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারাই কাফির’এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। এ বিধান কি মুসলিমদের ব্যাপারে না কাফিরদের ব্যাপারে? তাবেয়ী শা‘বী (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ বিধান মুসলিমদের ব্যাপারে। তাওস থেকেও এরূপ বর্ণনা রয়েছে।
কিন্তু কুফরী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এমন কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। শা‘বী (রহঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, এ বিধান ইয়াহূদীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
ليس الكفر الذي تذهبون إليه
এ কুফরীর দ্বারা সে কুফরী না যা তোমরা মনে কর। (ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা করেছেন, ইমাম হাকিম বলেছেন: বর্ণনাটি বুখারী, মুসলিমের শর্তানুপাতে)
কোন কোন আলেম বলেছেন: কুরআন প্রমাণ করে এ আয়াত ইয়াহূদীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। কেননা পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের কথা উল্লেখ করেছেন যারা আল্লাহ তা‘আলার কালাম বিকৃত করেছে। আবার পরের আয়াতে তাদের কথাই উল্লেখ রয়েছে। এ মত পোষণ করেছেন বারা বিন আযেব, হুযাইফা বিন ইয়ামান, ইবনু আব্বাস (রাঃ), ইকরিমা ও হাসান বসরী (রহঃ)-সহ অনেকে।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন:
(وَمَنْ لَّمْ یَحْکُمْ بِمَآ اَنْزَلَ اللہُ فَاُولٰ۬ئِکَ ھُمُ الْکٰفِرُوْنَ ، الظَالِمُوْنَ وَ الفَاسِقُون)
কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। সহীহ মুসলিমে বারা বিন আযেব থেকে প্রমাণ রয়েছে। এ হিসেবে কোন মুসলিম কাবীরা গুনাহর কারণে কাফির হয় না।
আবার কেউ বলেছেন: এখানে কিছু কথা উহ্য রয়েছে যার অর্থ হল: যদি কেউ কুরআনকে প্রত্যাখ্যান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীকে অস্বীকার করতঃ আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধান দ্বারা ফায়সালা না করে তাহলে সে কাফির। এ কথা ইবনু আব্বাস ও মুজাহিদও বলেছেন।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও হাসান বসরী (রহঃ) বলেছেন: আয়াতটি মুসলিম, ইয়াহূদ ও কাফির সকলের জন্য ব্যাপক। যারাই আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত বিধান ছাড়া অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা বৈধ মনে করবে এবং সে অনুপাতে বিশ্বাস রাখবে তারাই কাফির।
এসব আলোচনার পর ইমাম শানক্বিতী (রহঃ) বলেন: জেনে রাখুন, এ আলোচ্য বিষয়ে সঠিক কথা হল- কুফর, জুলুম ও ফিসক (পাপাচার) প্রত্যেকটি শব্দ শরীয়তে অবাধ্য কাজ করা অর্থে ব্যবহার হয়, আবার ইসলাম থেকে বের করে দেয় এমন কুফরী কাজ করার অর্থেও ব্যবহার হয়। যদি এমন বিধান দ্বারা ফায়সালা করে যা রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ ও আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে বাতিল করে দেয় তাহলে কুফর, জুলুম ও ফিসক (পাপাচার) প্রত্যেকটি ইসলাম থেকে বের করে দেয় এমন গুনাহর অর্থে ব্যবহার হবে। আর যদি তার বিশ্বাস থাকে সে হারাম কাজে লিপ্ত এবং অন্যায় করছে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না, শুধু অপরাধী বলে গণ্য হবে। (তাফসীর আযওয়াউল বায়ান ২/৭১)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চিন্তা আসতে পারে এমন কর্ম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে চিন্তা মুক্ত থাকা মুস্তাহাব।
২. মিথ্যা বলা ও শ্রবণ করা হারাম।
৩. আল্লাহ কথা বিকৃত করা এবং ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য অন্য কিছুর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হারাম।
৪. মুসলিম বিচারকগণ কর্তৃক আহলে কিতাবদের বিবাদের বিচার করা ইচ্ছাধীন।
৫. ন্যায় বিচার করা ওয়াজিব। যদিও অমুসলিমদের মাঝে হয়।
৬. আল্লাহ তা‘আলার বিধান অস্বীকার করতঃ বা হেয় প্রতিপন্ন করতঃ অথবা তার সমপর্যায় মনে করে মানব রচিত বিধান দ্বারা ফায়সালা করা কুফরী কাজ।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 41-44
لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ
Let not those who hurry to fall into disbelief grieve you,
Do Not Feel Sad Because of the Behavior of the Jews and Hypocrites
Allah says;
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ
O Messenger! Let not those who hurry to fall into disbelief grieve you,
These honorable Ayat were revealed about those who rush into disbelief, deviating from the obedience of Allah, His Messenger, preferring their opinions and lusts to what Allah has legislated.
مِنَ الَّذِينَ قَالُواْ امَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُوْمِن قُلُوبُهُمْ
of such who say, “We believe” with their mouths but their hearts have no faith.
These people pretend to be faithful with their words, but their hearts are empty from faith, and they are the hypocrites.
وَمِنَ الَّذِينَ هِادُواْ
And of the Jews…,
the enemies of Islam and its people, they and the hypocrites all.
سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ
listen much and eagerly to lies…,
and they accept and react to it positively.
سَمَّاعُونَ لِقَوْمٍ اخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ
listening to others who have not come to you,
meaning, they listen to some people who do not attend your meetings, O Muhammad.
Or, the Ayah might mean, they listen to what you say and convey it to your enemies who do not attend your audience.
The Jews Alter and Change the Law, Such As Stoning the Adulterer
Allah says;
يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِن بَعْدِ مَوَاضِعِهِ
They change the words from their places:
by altering their meanings and knowingly distorting them after they comprehended them.
يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَـذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُوْتَوْهُ فَاحْذَرُواْ
they say, “If you are given this, take it, but if you are not given this, then beware!”
It was reported that;
this part of the Ayah was revealed about some Jews who committed murder and who said to each other, “Let us ask Muhammad to judge between us, and if he decides that we pay the Diyah, accept his judgment. If he decides on capital punishment, do not accept his judgment.”
The correct opinion is that;
this Ayah was revealed about the two Jews who committed adultery. The Jews changed the law they had in their Book from Allah on the matter of punishment for adultery, from stoning to death, to a hundred flogs and making the offenders ride a donkey facing the back of the donkey.
When this incident of adultery occurred after the Hijrah, they said to each other, “Let us go to Muhammad and seek his judgment. If he gives a ruling of flogging, then implement his decision and make it a proof for you with Allah. This way, one of Allah’s Prophets will have upheld this ruling amongst you. But if he decides that the punishment should be stoning to death, then do not accept his decision.”
There are several Hadiths mentioning this story.
Malik reported that Nafi said that Abdullah bin Umar said,
“The Jews came to Allah’s Messenger and mentioned that a man and a woman from them committed adultery. Allah’s Messenger said to them,
مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الرَّجْمِ
What do find of the ruling about stoning in the Tawrah?
They said, `We only find that they should be exposed and flogged.’
Abdullah bin Salam said, `You lie. The Tawrah mentions stoning, so bring the Tawrah.’
They brought the Tawrah and opened it but one of them hid the verse about stoning with his hand and recited what is before and after that verse.
Abdullah bin Salam said to him, `Remove your hand,’ and he removed it, thus uncovering the verse about stoning. So they said, He (Abdullah bin Salam) has said the truth, O Muhammad! It is the verse about stoning.’
The Messenger of Allah decided that the adulterers be stoned to death and his command was carried out.
I saw that man shading the woman from the stones with his body.”
Al-Bukhari and Muslim also collected this Hadith and this is the wording collected by Al-Bukhari.
In another narration by Al-Bukhari, the Prophet said to the Jews,
مَا تَصْنَعُون بِهِمَا
What would you do in this case?
They said, “We would humiliate and expose them.”
The Prophet recited,
قُلْ فَأْتُواْ بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Bring here the Tawrah and recite it, if you are truthful. (3:93)
So they brought a man who was blind in one eye and who was respected among them and said to him, “Read (from the Tawrah).”
So he read until he reached a certain verse and then covered it with his hand. He was told, “Remove your hand,” and it was the verse about stoning.
So that man said, “O Muhammad! This is the verse about stoning, and we had hid its knowledge among us.”
So the Messenger ordered that the two adulterers be stoned, and they were stoned.
Muslim recorded that;
a Jewish man and a Jewish woman were brought before Allah’s Messenger because they committed adultery. The Messenger of Allah went to the Jews and asked them,
مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ عَلى مَنْ زَنَى
What is the ruling that you find in the Tawrah for adultery?
They said, “We expose them, carry them (on donkeys) backwards and parade them in public.”
The Prophet recited;
قُلْ فَأْتُواْ بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Bring here the Tawrah and recite it, if you are truthful. (3:93)
So they brought the Tawrah and read from it until the reader reached the verse about stoning. Then he placed his hand on that verse and read what was before and after it.
Abdullah bin Salam, who was with the Messenger of Allah, said, “Order him to remove his hand,” and he removed his hand and under it was the verse about stoning.
So the Messenger of Allah commanded that the adulterers be stoned, and they were stoned.
Abdullah bin Umar said, “I was among those who stoned them and I saw the man shading the woman from the stones with his body.”
Abu Dawud recorded that Ibn Umar said,
“Some Jews came to the Messenger of Allah and invited him to go to the Quff area. So he went to the house of Al-Midras and they said, `O Abu Al-Qasim! A man from us committed adultery with a woman, so decide on their matter.’
They arranged a pillow for the Messenger of Allah and he sat on it and said,
ايْتُونِي بِالتَّوْرَاة
Bring the Tawrah to me.
He was brought the Tawrah and he removed the pillow from under him and placed the Tawrah on it, saying,
امَنْتُ بِكِ وَبِمَنْ أَنْزَلَك
I trust you and He Who revealed it to you.
He then said,
ايْتُونِي بِأَعْلَمِكُم
Bring me your most knowledgeable person.
So he was brought a young man… ”
and then he mentioned the rest of the story that Malik narrated from Nafi.
These Hadiths state that the Messenger of Allah issued a decision that conforms with the ruling in the Tawrah, not to honor the Jews in what they believe in, for the Jews were commanded to follow the Law of Muhammad only. Rather, the Prophet did this because Allah commanded him to do so. He asked them about the ruling of stoning in the Tawrah to make them admit to what the Tawrah contains and what they collaborated to hide, deny and exclude from implementing for all that time. They had to admit to what they did, although they did it while having knowledge of the correct ruling.
What made them go to the Prophet for judgment in this matter was their lusts and desires, hoping that the Prophet would agree with their opinion, not that they believed in the correctness of his judgment. This is why they said,
إِنْ أُوتِيتُمْ هَـذَا
(If you are given this), referring to flogging, then take it,
وَإِن لَّمْ تُوْتَوْهُ فَاحْذَرُواْ
(but if you are not given this, then beware!) and do not accept or implement it.
Allah said next,
وَمَن يُرِدِ اللّهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللّهِ شَيْيًا أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ لَمْ يُرِدِ اللّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّالُونَ لِلسُّحْتِ
And whomsoever Allah wants to put in Fitnah, you can do nothing for him against Allah. Those are the ones whose hearts Allah does not want to purify; for them there is a disgrace in this world, and in the Hereafter a great torment. They (like to) listen to falsehood, to devour Suht.
Ibn Mas`ud and others stated that;
`Suht’ refers to bribes.
The Ayah states that if one is like this, how can Allah cleanse his heart and accept his supplication.
Allah said to His Prophet,
فَإِن جَأوُوكَ
So if they come to you…,
so that you judge between them,
فَاحْكُم بَيْنَهُم أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْيًا
either judge between them, or turn away from them. If you turn away from them, they cannot hurt you in the least.
meaning, there is no harm if you do not judge between them. This is because when they came to you to judge between them, they did not seek to follow the truth, but only what conformed to their lusts.
We should mention here that Ibn Abbas, Mujahid, `Ikrimah, Al-Hasan, Qatadah, As-Suddi, Zayd bin Aslam, Ata Al-Khurasani, and several others said that;
this part of the Ayah was abrogated by Allah’s statement,
وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَأ أَنزَلَ اللّهُ
And so judge among them by what Allah has revealed. (5:49)
وَإِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُم بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ
And if you judge, judge with justice between them.
and with fairness, even if the Jews were unjust and outcasts from the path of fairness,
إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
Verily, Allah loves those who act justly.
Chastising the Jews for Their Evil Lusts and Desires, While Praising the Tawrah
Allah then chastises the Jews for their false ideas and deviant desires to abandon what they believe is true in their Book, and which they claim is their eternal Law that they are always commanded to adhere to. Yet, they do not adhere to the Tawrah, but they prefer other laws over it, although they believe that these other laws are not correct and do not apply to them.
Allah said,
وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيهَا حُكْمُ اللّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُوْلَـيِكَ بِالْمُوْمِنِينَ
But how do they come to you for decision while they have the Tawrah, in which is the decision of Allah; yet even after that they turn away. For they are not believers.
Allah next praises the Tawrah that He sent down to His servant and Messenger Musa, son of Imran.
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ
Verily, We did send down the Tawrah (to Musa), therein was guidance and light, by which the Prophets who submitted themselves to Allah’s will, judged the Jews.
and these Prophets did not deviate from the law of the Tawrah, change or alter it,
وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالَاحْبَارُ
And (also) the Rabbaniyyun and the Ahbar…,
wherein Rabbaniyyun refers to the worshippers who are learned and religious,
and Ahbar refers to the scholars,
بِمَا اسْتُحْفِظُواْ مِن كِتَابِ اللّهِ
for to them was entrusted the protection of Allah’s Book,
meaning, they were entrusted with the Book of Allah, and they were commanded to adhere to it and not hide any part of.
وَكَانُواْ عَلَيْهِ شُهَدَاء فَلَ تَخْشَوُاْ النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُواْ بِأيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلً وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
and they were witnesses thereto. Therefore fear not men but fear Me and sell not My verses for a miserable price. And whosoever does not judge by what Allah has revealed, such are the disbelievers.
There are two ways to explain this Ayah and we will mention the later.
Another Reason Behind Revealing these Honorable Ayat
Imam Ahmad recorded that Ibn Abbas said,
“Allah sent down the Ayat,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
(And whosoever does not judge by what Allah has revealed, such are the disbelievers),
فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
(Such are the unjust), (5:45) and,
فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
(Such are the rebellious), (5:47) about two groups among the Jews.
During the time of Jahiliyyah, one of them had defeated the other. As a result, they made a treaty that they would pay blood money totaling fifty Wasaq (of gold) (each Wasaq approx. 3 kg) for every dead person from the defeated group killed by the victors, and a hundred Wasaq for every dead person the defeated group killed from the victors.
This treaty remained in effect until the Prophet came to Al-Madinah and both of these groups became subservient under the Prophet. Yet, when the mighty group once suffered a casualty at the hands of the weaker group, the mighty group sent a delegation demanding the hundred Wasaq. The weaker group said, `How can two groups who have the same religion, one ancestral lineage and a common land, have a Diyah that for some of them is half of that of the others We only agreed to this because you oppressed us and because we feared you. Now that Muhammad has come, we will not give you what you asked.’
So war was almost rekindled between them, but they agreed to seek Muhammad’s judgment in their dispute. The mighty group among them said (among themselves), `By Allah! Muhammad will never give you double the Diyah that you pay to them compared to what they pay to you. They have said the truth anyway, for they only gave us this amount because we oppressed and overpowered them. Therefore, send someone to Muhammad who will sense what his judgment will be. If he agrees to give you what you demand, accept his judgment, and if he does not give you what you seek, do not refer to him for judgment.’
So they sent some hypocrites to the Messenger of Allah to try and find out the Messenger’s judgment. When they came to the Messenger, Allah informed him of their matter and of their plot. Allah sent down,
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ
(O Messenger! Let not those who hurry to fall into disbelief grieve you), (5:41) until,
الْفَاسِقُونَ
(Such are the rebellious). (5:47)
By Allah! It is because of their problem that Allah sent down these verses and it is they whom Allah meant.”
Abu Dawud collected a similar narration for this Hadith.
Abu Jafar Ibn Jarir recorded that Ibn Abbas said that;
the Ayah in Surah Al-Ma’idah,
فَاحْكُم بَيْنَهُم أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ
(either judge between them, or turn away from them…) until,
الْمُقْسِطِينَ
(Those who act justly), (5:42) was revealed concerning the problem of blood money between Bani An-Nadir and Bani Qurayzah.
The dead of Bani An-Nadir were being honored more and they received the full amount of Diyah, while Qurayzah received half the Diyah for their dead. So they referred to the Messenger of Allah for judgment and Allah sent down these verses about them.
The Messenger of Allah compelled them to adhere to the true judgment in this matter and made the Diyah the same for both groups and Allah knows best about that matter.”
Ahmad, Abu Dawud and An-Nasa’i also recorded this Hadith from Abu Ishaq. Al-Awfi and Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said that these Ayat were revealed about the two Jews who committed adultery, and we mentioned the Hadiths about this story before.
It appears that both of these were the reasons behind revealing these Ayat, and Allah knows best.
This is why Allah said afterwards,
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ
(And We ordained therein for them:Life for life, eye for eye) until the end of the Ayah, (5:45) which strengthens the opinion that the story of the Diyah was behind revealing the Ayat as we explained above.
Allah knows best.
Allah said,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
And whosoever does not judge by what Allah has revealed, such are the disbelievers.
Al-Bara’ bin Azib, Hudhayfah bin Al-Yaman, Ibn Abbas, Abu Mijlaz, Abu Raja’ Al-Utaridi, Ikrimah, Ubaydullah bin Abdullah, Al-Hasan Al-Basri and others said that;
this Ayah was revealed about the People of the Book.
Al-Hasan Al-Basri added that;
this Ayah also applies to us.
Abdur-Razzaq said that Ath-Thawri said that Mansur said that Ibrahim said that;
these Ayat, “Were revealed about the Children of Israel, and Allah accepted them for this Ummah.”
Ibn Jarir recorded this statement.
Ali bin Abi Talhah also stated that Ibn Abbas commented on Allah’s statement,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
(And whosoever does not judge by what Allah has revealed, such are the disbelievers),
“Whoever rejects what Allah has revealed, will have committed Kufr, and whoever accepts what Allah has revealed, but did not rule by it, is a Zalim (unjust) and a Fasiq (rebellious) and a sinner.”
Ibn Jarir recorded this statement.
Abdur-Razzaq said,
“Ma`mar narrated to us that Tawus said that Ibn Abbas was asked about Allah’s statement,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم
(And whosoever does not judge…).
He said, `It is an act of Kufr.’
Ibn Tawus added,
`It is not like those who disbelieve in Allah, His angels, His Books and His Messengers.’
Ath-Thawri narrated that Ibn Jurayj said that Ata said,
`There is Kufr and Kufr less than Kufr, Zulm and Zulm less than Zulm, Fisq and Fisq less than Fisq.”‘
Waki` said that Sa`id Al-Makki said that Tawus said that,
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـيِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
(And whosoever does not judge by what Allah has revealed, such are the disbelievers),
“This is not the Kufr that annuls one’s religion.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতসমূহে ঐ লোকদের নিন্দে করা হচ্ছে যারা স্বীয় অভিমত, কিয়াস এবং প্রবৃত্তিকে আল্লাহর শরীয়তের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য পরিত্যাগ করে কুফরীর দিকে দৌড়ে যায়। তারা মুখে শুধু ঈমানের দাবী করে বটে, কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান শূন্য। মুনাফিকদের অবস্থা তো এটাই যে, তারা মুখে খুব সাধুতা প্রকাশ করে, কিন্তু অন্তর তাদের সম্পূর্ণ কপট।
ইয়াহূদীদের স্বভাবও তদ্রুপ। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। তারা মিথ্যা ও বাজে কথা খুব মজা করে শুনে তাকে এবং অন্তরের সাথে ককূল করে থাকে। পক্ষান্তরে সত্য কথা থেকে তারা দূরে সরে থাকে, এমনকি ঘুণাও করে। তারা নবী (সঃ)-এর মজলিসে উপস্থিত হয় বটে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য থাকে মুসলমানদের গোপনীয় কথা নিজেদের মধ্যে নিয়ে যাওয়া, তাদের পক্ষ থেকে তারা গুপ্তচরের কাজ করে। সবচেয়ে বড় দুষ্টুমি তাদের এই যে, তারা কথাকে বদলিয়ে দেয়। ভাবার্থ হবে একরূপ, কিন্তু তারা অন্য অর্থ করে জনগণের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়। উদ্দেশ্য এই যে, সেটা যদি তাদের মর্জি মোতাবেক হয় তবে তো মানবে, আর উল্টো হলে তা থেকে দূরে থাকবে। কথিত আছে যে, এ আয়াত ঐ সব ইয়াহূদীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা একে অপরকে হত্যা করেছিল। অতঃপর তারা পরস্পর বলাবলি করে-“চল, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করি। যদি তিনি রক্তপণ ও জরিমানার নির্দেশ দেন তবে তো মনে নেবো। আর যদি কিসাস বা হত্যার বদলে হত্যার নির্দেশ দেন তবে মানবো না।” কিন্তু সর্বাধিক সঠিক কথা এই যে, তারা এক ব্যভিচারিণী মহিলাকে নিয়ে এসেছিল। তাদের কিতাব তাওরাতে তো এ হুকুমই ছিল যে, ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী বিবাহিত বা বিবাহিতা হলে তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করে দিতে হবে। কিন্তু তারা এটাকে বদলিয়ে দিয়েছিল এবং একশ চাবুক মেরে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে এবং গাধায় উল্টো করে সওয়ার করিয়ে লাঞ্ছিত করতো। আর এরূপ শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিতে। নবী (সঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পর তাদের কোন একজন ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হয়ে গ্রেফতার হয়। তখন তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “চল, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করি এবং তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। যদি তিনি আমাদের শাস্তি দানের মতই শাস্তির নির্দেশ দেন তবে আমরা তা মেনে নেবো এবং আল্লাহর কাছেও এটা আমাদের জন্যে সনদ হয়ে যাবে। আর যদি রজম বা পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দেন তবে তা মানবো না।” সুতরাং তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করে বললোঃ “আমাদের এক মহিলা ব্যভিচার করেছে। তার ব্যাপারে আপনি কি নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের তাওরাতে কি নির্দেশ রয়েছে? তারা বললোঃ “আমরা তাকে লাঞ্ছিত করি এবং চাবুক মেরে ছেড়ে দেই।” এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বললেনঃ “তোমরা মিথ্যা কথা বলছে। তাওরাতে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ রয়েছে, তাওরাত নিয়ে এসে দেখি।” তারা তাওরাত খুলে দিল বটে, কিন্তু রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে দিয়ে পূর্বাপর সমস্ত পড়ে শুনালো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) সব কিছু বুঝে ফেললেন এবং তাদেরকে বললেন, হাত সরিয়ে নাও। হাত সরালে দেখা গেল যে, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তখন তাদেরকেও স্বীকার করতে হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে ব্যভিচারীদ্বয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করে দেয়া হলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম যে, ব্যভিচারী পুরুষ লোকটি ব্যভিচারিণী মহিলাটিকে পাথর থেকে বাঁচাবার জন্যে আড়াল হয়ে দাড়িয়েছিল।
অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীরা বলেছিল, আমরা তো তাদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে এবং কিছু মারপিট করে ছেড়ে দেই।’ অতঃপর রজমের আয়াত প্রকাশ হওয়ার পর তারা বলে, রয়েছে তো এ হুকুমই কিন্তু আমরা তা গোপন করে রেখেছিলাম।’ যে পাঠ করেছিল সে-ই রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে দিয়েছিল। যখন তার হাত সরিয়ে ফেলা হলো তখন রজমের আয়াত প্রকাশ হয়ে পড়লো। এ দু’জনকে রজমকারীদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমারও (রাঃ) বিদ্যমান ছিলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ইয়াহূদীরা লোক পাঠিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ডেকে নিয়েছিল। তারা তাকে তাদের শিক্ষাগারে গদির উপর বসিয়েছিল। তাদের যে লোকটি তাওরাত পাঠ করেছিল সে তাওরাতের বড় পণ্ডিত ছিল। আর একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে কসম দিয়ে বলেছিলেনঃ ‘তোমরা তাওরাতে বিবাহিত ব্যভিচারীর কি শাস্তি দেখেছ?’ তারা উপরোক্ত উত্তরই দিয়েছিল। কিন্তু একটি যুবক কিছুই না বলে নীরবে দাঁড়িয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টিপাত করে পুনরায় কসম দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেন এবং উত্তর চাইলেন। সে বললো, “আপনি যখন এমন কসমই দিলেন তখন আমি মিথ্যা কথা বলবো না। বাস্তবিক তাওরাতে এ প্রকারের অপরাধীর শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যাই রয়েছে।” তিনি বললেনঃ “আচ্ছা তাহলে এটাও সত্যি করে বল যে, তোমরা সর্বপ্রথম এ রজমকে কার উপর থেকে উঠিয়ে দিয়েছ?” সে উত্তরে বললো, জনাব! আমাদের বাদশাহর কোন এক সম্ভ্রান্ত্র বংশীয় আত্মীয় ব্যভিচার করে। তার পদমর্যাদা এবং বাদশাহী প্রভাবের ফলে তাকে রজম করা হয়নি। তারপর এক সাধারণ লোক ব্যভিচার করে। তাকে রজম করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তার গোত্রের সমস্ত লোক প্রতিবাদ করে বলে, পূর্ববর্তী লোকটিকেও রজম করতে হবে, না হলে একেও ছেড়ে দিতে হবে। তখন আমরা সবাই মিলে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, এ ধরনের কোন শাস্তি নির্ধারণ করা হোক। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাওরাতের হুকুমকেই জারী করেন। এ ব্যাপারেই (আরবী) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহও (সঃ) ঐ আহকাম জারীকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবি দাউদ)
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, ইয়াহূদীরা একটি লোককে চুনকালি মাখাবার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তারা তাকে চাবুকও মারছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তারা উত্তরে বলে, “এ লোকটি ব্যভিচার করেছে।” তিনি জিজ্ঞেস করলেন-“তোমাদের বিধানে কি ব্যভিচারের শাস্তি এটাই?” তারা উত্তর দিলো, হ্যা। তিনি তখন তাদের এক আলেমকে ডাকলেন এবং তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখন সে বললো, “আপনি যদি আমাকে এরূপ কসম না দিতেন তবে আমি কখনও বলতাম না। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আমাদের বিধানে বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যাই বটে। কিন্তু আমীরুল উমারা ও সম্ভ্রান্ত লোকদের মধ্যে এ পাপকার্য খুব বেশী ছড়িয়ে পড়লে তাদেরকে এ ধরনের শাস্তি দেয়া আমরা সমীচীন মনে করলাম না। তাই তাদেরকে তো ছেড়ে দিতাম। আর আল্লাহর নির্দেশও যাতে বৃথা না যায় তজ্জন্য দরিদ ও কম মর্যাদা সম্পন লোকদেরকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করে দিতাম। তারপর আমরা পরামর্শ করলাম যে, এমন এক শাস্তি নির্ধারণ করা যাক যা ধনী-গরীব, ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সকলের উপর সমানভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অবশেষে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে চাবুক মারা হবে।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ “তাদের উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করে ফেল।’ সুতরাং তাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করে ফেলা হয়। সেই সময় তিনি বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি প্রথম ঐ ব্যক্তি যে আপনার একটি মৃত হুকুমকে জীবিত করলো।” তখন (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এ ইয়াহূদীদেরই সম্পর্কে অন্য আয়াতে রয়েছে- ‘আল্লাহর নাযিলকৃত হুকুম অনুযায়ী যারা মীমাংসা করে না তারা অত্যাচারী।’ অন্য আয়াতে ফাসিক শব্দ রয়েছে। (সহীহ মুসলিম ইত্যাদি) অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ব্যভিচারের ঘটনাটি ফিদকে ঘটেছিল। সেখানকার ইয়াহূদীরা মদীনার ইয়াহূদীদের নিকট একজন আলেমকে পাঠিয়ে ব্যভিচারের শাস্তি জানতে চেয়েছিল। তথাকার যে আলেমটি মদীনায় এসেছিল তার নাম ছিল ইবনে সূরিয়া। তার চক্ষু টেরা ছিল। তার সাথে আর একজন আলেমও ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে কসম দিলে তারা দুজনই তা কবূল করেছিল। তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “আমি তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কসম দিচ্ছি যিনি বানী ইসরাঈলের জন্যে পানিতে রাস্তা করে দিয়েছিলেন, তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া। করেছিলেন, তাদেরকে ফিরাউন থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের উপর মান’ ও সালওয়া’ অবতীর্ণ করেছিলেন।” এ কসমে তারা চমকে ওঠে এবং পরস্পর বলাবলি করে, এটাতো বড়ই কঠিন কসম। এরূপ স্থলে মিথ্যে বলা মোটেই ঠিক হবে না। তাই তারা বললো, জনাব! তাওরাতে রয়েছে যে, খারাপ নযরে দেখাও যেনাতুল্য, গলায় গলায় মিলনও যেনার মত এবং চুম্বন দেয়াও যেনাতুল্য। যদি এর উপর চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, তারা পুংঙ্গিলকে স্ত্রীলিঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করতে ও বের হতে দেখেছে, যেমন শলাকা সুরমাদানীর ভেতর যাতায়াত করে, তবে রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ মাসআলা তো এটাই। অতঃপর তিনি উক্ত যেনাকার পুরুষ ও নারীকে রজম করে দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই সময় (আরবী) -এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সুনানে আবি দাউদ ইত্যাদি) আর একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, যে দু’জন আলেমকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে আনয়ন করা হয়েছিল, তারা ছিল সূরিয়ার দুইপুত্র। এ বর্ণনায় ইয়াহুদীদের হদ পরিত্যাগ করার কারণ তাদের পক্ষ থেকে নিম্নরূপ বর্ণনা করা হয়েছে- আমাদের মধ্যে যখন সালতানাত বা রাজত্ব রইলো না তখন আমরা আমাদের লোকদেরকে হত্যা করা সমীচীন মনে করলাম না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাক্ষীদেরকে ডাকিয়ে নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তারা বলে, আমরা তাদের দু’জনকে এ কু-কাজ করতে স্পষ্টভাবে দেখেছি, যেমনভাবে শলাকা সুরমাদানীর ভেতর প্রবেশ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তাওরাত ইত্যাদি চেয়ে পাঠানো এবং তাদের আলেমদেরকে ডেকে পাঠাননা তাদেরকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্যে ছিল না এবং উদ্দেশ্য এটাও ছিল না যে, তারা ওটা মানবার মুকাল্লাফই নয়, বরং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশই অবশ্য পালনীয়। এটা দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল প্রথমতঃ তাঁর সত্যতা প্রকাশ। তা এই যে, তাওরাতেও যে এ নির্দেশই রয়েছে তা তিনি অহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। আর প্রকাশ পেলও তা-ই। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে লজ্জিত করা যে, তারা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তাদেরকে স্বীকার করতেই হলো এবং দুনিয়ায় এটা প্রকাশ পেয়ে গেলো যে, তারা আল্লাহর বিধানকে গোপনকারী এবং নিজেদের মত ও কিয়াসের উপর আমলকারী। তাছাড়া উদ্দেশ্য এও ছিল যে, ঐ ইয়াহূদীরা সরল মনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আসেনি যে, তাঁর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে। বরং তাদের আগমনের উদ্দেশ্য শুধু এই ছিল যে, যদি তিনিও তাদের ইজমা’ মোতাবেক নির্দেশ দেন তবে তারা মেনে নেবে, নচেৎ কিছুতেই মানবে না। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান তার সুপথ প্রাপ্তি কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তাদের অপবিত্র অন্তরকে পবিত্র করার আল্লাহর ইচ্ছাই নেই। তারা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে এবং পরকালেও তাদের জন্যে রয়েছে ভীষণ শাস্তি।
বলা হচ্ছে-তারা মিথ্যা কথা কান লাগিয়ে শুনতে এবং হারাম বস্তু অর্থাৎ সুদ খেতে অভ্যস্ত। সুতরাং কিরূপে তাদের অপবিত্র অন্তর পবিত্র হবে? আর তাদের দুআই বা আল্লাহ কি করে শুনবেন? হে নবী (সঃ)! যদি তারা তোমার কাছে মীমাংসার জন্যে আসে তবে তাদের ফায়সালা করা না করার তোমার অধিকার রয়েছে। তুমি যদি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তথাপি তারা তোমার কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। কেননা, তাদের উদ্দেশ্য সত্যের অনুসরণ নয়, বরং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ। কোন গুরুজন বলেন যে, এ আয়াতটি (আরবী) (৫:৪৯)-এ আয়াতটি দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। এরপর ইরশাদ হচ্ছে-হে নবী (সঃ)! যদি তুমি তাদের মধ্যে মীমাংসা কর তবে ন্যায়ের সাথে মীমাংসা করো, যদিও এরা নিজেরা অত্যাচারী এবং আদল ও ইনসাফ থেকে বহু দূরে রয়েছে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা’আলা ন্যায় বিচারকদেরকে ভালবাসেন।
অতঃপর ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতা, অন্তরের কলুষতা এবং বিরুদ্ধাচরণের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, একদিকে তো তারা আল্লাহ পাকের এ কিতাবকে ছেড়ে দিয়েছে যার আনুগত্য স্বীকার ও সত্যতার কথা তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে। দ্বিতীয়তঃ তারা ঐ দিকে ঝুঁকে পড়েছে যাকে তারা নিজেরাও মানে না এবং ওটাকে মিথ্যা বলে ছড়িয়ে দিয়েছে। আবার সেখানেও তাদের নিয়ত ভাল নয়। কারণ তাদের উদ্দেশ্য এই যে, যদি সেখানে গিয়ে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক হুকুম পায় তবে তো তা মেনে নেবে, নতুবা ছেড়ে দেবে। তাই, আল্লাহ তা’আলা নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তারা কি করে তোমার হুকুম মানতে পারে? তারা তো তাওরাতকেও ছেড়ে দিয়েছে। তাতে আল্লাহর হুকুম রয়েছে, এটা তো তারাও স্বীকার করেছে, অথচ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তারপর এ তাওরাতের প্রশংসা করা হচ্ছে যা তিনি স্বীয় মনোনীত রাসূল হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। এর মধ্যে হিদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর হুকুমবাহী নবীগণ ওর মাধ্যমেই ফায়সালা করে থাকেন এবং ইয়াহূদীদের মধ্যে ওরই আহকাম জারী করেন। তারা ওর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন থেকে বেঁচে থাকেন এবং আল্লাহওয়ালা লোকেরাও এ নীতির উপর থাকেন। কেননা, এ পবিত্র গ্রন্থ তাঁদেরকে সমর্পণ করা হয়েছিল এবং ওটা প্রকাশ করে দেয়া ও ওর উপর আমল করার তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা ওর উপর সাক্ষী ছিলেন।
হচ্ছে-এখন তোমাদের উচিত যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করবে না। তোমরা প্রতি মূহূর্তে এবং পদে পদে আল্লাহকে ভয় করতে থাকবে এবং তাঁর আয়াতগুলোকে সামান্য মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি করবে না। জেনে রেখো যে, আল্লাহর নাযিলকৃত অহী মোতাবেক যারা ফায়সালা করে না তারা কাফির। এতে দু’টি উক্তি রয়েছে, যা ইনশাআল্লাহ এখনই বর্ণিত হচ্ছে। এ আয়াতগুলোর আরও একটি শানে নমূল নিম্নরূপঃ
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতে এ লোকদেরকে কাফির, দ্বিতীয় আয়াতে যালিম এবং তৃতীয় আয়াতে ফাসিক বলা হয়েছে। ব্যাপার এই যে, ইয়াহূদীদের দু’টি দল ছিল। একটি বানূ নাযীর এবং অপরটি বানূ কুরাইযা। প্রথমটি ছিল সবল এবং দ্বিতীটি ছিল দুর্বল। তাদের পরস্পরের মধ্যে এ কথার উপর সন্ধি হয়েছিল যে, সবল দলটির কোন লোক যদি দুর্বল দলটির কোন লোককে হত্যা করে তবে তাকে পঞ্চাশ ওয়াসাক রক্তপণ দিতে হবে। পক্ষান্তরে যদি দুর্বল দলটির কোন লোক সবল দলটির কোন লোককে হত্যা করে তবে তাকে একশ ওয়াসাক রক্তপণ আদায় করতে হবে। এ প্রথাই তাদের মধ্যে চলে আসছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মদীনায় আগমনের পর এরূপ এক ঘটনা ঘটে যে, দুর্বল ইয়াহূদীদের এক ব্যক্তি সবল ইয়াহুদীদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। তখন এদের পক্ষ থেকে এক লোক ওদের কাছে গিয়ে বলে, এখন একশ’ ওয়াসাক আদায় কর।’ তারা উত্তরে বলে, “এটা তো প্রকাশ্যভাবে অন্যায় আচরণ। আমরা তো সবাই একই গোত্রের, একই ধর্মের, একই বংশের এবং একই শহরের লোক। অথচ আমরা রক্তপণ পাবো কম আর তোমরা পাবে বেশী! এতদিন পর্যন্ত তোমরা আমাদেরকে দাবিয়ে রেখেছিলে। আমরা বাধ্য ও অপরাগ হয়ে তোমাদের এ অন্যায় সহ্য করে আসছিলাম। কিন্তু এখন যেহেতু এখানে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর ন্যায় একজন ন্যায়পরায়ণ লোক এসে গেছেন সেহেতু আমরা তোমাদেরকে সেই পরিমাণ রক্তপণই প্রদান করবো। যে পরিমাণ তোমরা আমাদেকে প্রদান করে থাক।” এ নিয়ে চতুর্দিকে গোলমান শুরু হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত পরস্পরের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এর মীমাংসাকারী নিযুক্ত করা হোক। কিন্তু সবল লোকেরা যখন নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করলো তখন তাদের কয়েকজন বুদ্ধিমান লোক তাদেরকে বললো, তোমরা এ আশা করো না যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অন্যায়ের আদেশ প্রদান করবেন। এটাতো স্পষ্ট বাড়াবাড়ি যে, আমরা দেবো অর্ধেক এবং নেবো পুরোপুরি! আর বাস্তবিকই এ লোকগুলো অপারগ হয়েই এটা মেনে নিয়েছিল। এক্ষণে যখন তোমরা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে মীমাংসাকারী নির্বাচন করলে তখন অবশ্যই তোমাদের হক মারা যাবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিলো, গোপনে কোন লোককে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দাও। তিনি কি ফায়সালার করবেন তা সে জেনে আসুক। সেটা যদি আমাদের অনুকূলে হয় তবে তো ভাল কথা। আমরা তাদের নিকট থেকে আমাদের হক আদায় করে নেবো। আর যদি ওটা আমাদের প্রতিকূলে হয় তবে আমাদের পৃথক থাকাই বাঞ্ছণীয় হবে। এ পরামর্শ অনুযায়ী তারা মদীনার কয়েকজন মুনাফিককে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট প্রেরণ করলো। তারা তাঁর নিকট পৌছার পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করে স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে তাদের কু-মতলব সম্পর্কে অবহিত করলেন। (সুনানে আবি দাউদ)
আর একটি বর্ণনায় আছে যে, বানূ নাযীর গোত্র পুরোপুরি রক্তপণ গ্রহণ করতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) উভয় গোত্রকে রক্তপণ সমান সমান দেয়ার ফায়সালা করলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, বানু কুরাইযার কোন লোক বানু নাযীরের কোন লোককে হত্যা করলে তার কিসাস নেয়া হতো। পক্ষান্তরে বান্ নাযীরের কোন লোক বানূ কুরাইযার কোন লোককে হত্যা করলে কিসাসের কোন ব্যবস্থাই ছিল না, বরং রক্তপণ ছিল একশ ওয়াসাক। এটা খুবই সম্ভব যে, এদিকে এ ঘটনা ঘটে এবং ঐদিকে ব্যভিচারের ঘটনা ঘটে যায়। আর দু’টো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হ্যাঁ, তবে আরও একটি কথা রয়েছে, যদ্দ্বারা এ দ্বিতীয় শানে নফুলটির প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এরপরেই এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
(আরবী) (অর্থাৎ আর আমি তাদের প্রতি তাতে (তাওরাতে) এটা ফরয করেছিলাম যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিমযে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাতের বিনিময়ে দাঁত এবং (জ্রপ অন্যান্য) বিশেষ যখমেরও বিনিময় রয়েছে; অনন্তর যে ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয় তবে এটা তার জন্যে (পাপের) কাফফারা হয়ে যাবে; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত বিধান অনুযায়ী হুকুম না করে তবে তো এমন ব্যক্তি পূর্ণ যালিম।) আল্লাহ পাকই সবচেয়ে বেশী জানেন।
অতঃপর যারা আল্লাহর শরীয়ত এবং তাঁর অবতারিত অহী অনুযায়ী ফায়সালা করে না তাদেরকে কাফির বলা হয়েছে। এ আয়াতটি মুফাসসিরদের উক্তি অনুযায়ী শানে নকূল হিসেবে আহলে কিতাবের ব্যাপারে অবতীর্ণ হলেও হুকুমের দিক দিয়ে এটা সমস্ত লোকের ব্যাপারেই প্রযোজ্য। এটা বানূ ইসরাঈলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল বটে; কিন্তু এ উম্মতেরও এটাই হুকুম। ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, ঘুষ খেয়ে কোন শরঈ মাসআলার ব্যাপারে উল্টো ফতওয়া দেয়া কুফরী। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, যদি ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহর অহীর বিপরীত ফতওয়া দেয়, জানা সত্ত্বেও তার উল্টো করে তবে সে কাফির। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ফরমানকে অস্বীকার করবে তার হুকুম এটাই। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করলো না বটে, কিন্তু তা মোতাবেক বললো না, সে যালিম ও ফাসিক। সে আহলে কিতাবই হোক বা আর কেউ হোক। শাবী (রঃ) বলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের বিপরীত ফতওয়া দেবে সে কাফির, ইয়াহূদীদের মধ্যে দেবে সে যালিম এবং খ্রীষ্টানদের মধ্যে দেবে সে ফাসিক। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তার কুফরী হচ্ছে এ আয়াতের সঙ্গে। তাউস (রাঃ) বলেন যে, তার কুফরী ঐ ব্যক্তির কুফরীর মত নয় যে আল্লাহ, রাসূল (সঃ), কুরআন এবং ফেরেশতাদেরকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। আতা’ (রঃ) বলেন যে, কুফরীর মধ্যে যেমন কম বেশী আছে তেমনই যুলম ও ফিসকের মধ্যেও কম বেশী আছে। এ কুফরীর কারণে সে মিল্লাতে ইসলাম হতে বের হয়ে যাবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা যে দিকে যাচ্ছ এর দ্বারা ঐ কুফরী উদ্দেশ্য নয়।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৬২) অর্থাৎ যারা জাহেলিয়াতের অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার এবং ইসলামের এ সংস্কারমূলক দাওয়াত যাতে ঐ সমস্ত বিকৃতি ও গলদ দূর করতে সক্ষম না হয় সেজন্য নিজেদের সকল প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি ও কর্মতৎপরতা নিয়োজিত করে। তারা সমস্ত নৈতিক বাঁধনমুক্ত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে সব রকমের নিকৃষ্টতম চক্রান্ত চালাচ্ছিল। তারা জেনে বুঝে সত্যকে বেমালুম হজম করে যাচ্ছিল। অত্যন্ত নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা ও দুঃসাহসের সাথে ধোঁকা, প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যার অস্ত্র ব্যবহার করে এমন এক পবিত্র ও নিষ্কলুষ ব্যক্তির কার্যক্রমকে পরাস্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল যিনি একান্ত নিস্বার্থভাবে পরোপকার ও নিছক কল্যাণাকাংখার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের এবং তাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য দিনরাত মেহনত করে যাচ্ছিলেন। তাদের এ তৎপরতা দেখে নবী ﷺ মনে অত্যন্ত মর্মজ্বালা অনুভব করতেন। তাঁর এ মর্মজ্বালা ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। যখন কোন পবিত্র ও নিষ্কলুষ ব্যক্তি নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী লোকদের মুখোমুখি হন এবং তারা নিছক নিজেদের মূর্খতা, সংকীর্ণমনতা ও স্বার্থন্ধতার কারণে তাঁর কল্যাণকর ও শুভাকাংখামূলক প্রচেষ্টাবলীর পথ রোধ করার জন্য নিকৃষ্ট ধরনের চালবাজী ও কুটকৌশল অবলম্বন করতে থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি মনে ব্যাথা পান। কাজেই এখানে আল্লাহর বক্তব্যের উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদের ঐসব কর্মতৎপরতার কারণে রসূলের মনে স্বাভাবিকভাবে যে ব্যাথা ও মর্মবেদনার সৃষ্টি হয় তা না হওয়া উচিত বরং আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, তাঁর মন খারাপ করার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি যেন মনোবল না হারিয়ে ফেলেন এবং সবরের সাথে আল্লাহর বান্দাদের সংস্কার ও সংশোধনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এসব লোকের ব্যাপারে বলা যায় যে, এরা যে ধরনের নিকৃষ্ট নৈতিক গুণাবলী নিজেদের মধ্যে লালন করেছে তাতে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যবহারই আশা করা যেতে পারে এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন ব্যবহারই অপ্রত্যাশিত নয়।
টিকা:৬৩) এর দু’টি অর্থ হতে পারে। এরা যেহেতু প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়ে গেছে তাই সত্যের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। এরা মিথ্যাই পছন্দ করে এবং মনোযোগ সহকারে মিথ্যাই শুনে থাকে। কাজেই এতেই এদের মনের তৃষ্ণা মেটে। আর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, এরা নবী ﷺ ও মুসলমানদের মজলিসে এসে বসে মিথ্যাচারের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য। এখানে এসে এরা যা কিছু দেখে ও শোনে সেগুলোকে বিপরীত অর্থে প্রয়োগ করে অথবা নিজেদের পক্ষ থেকে মিথ্যার মিশ্রণ দিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে নবী ﷺ ও মুসলমানদের দুর্নাম রটাবার জন্য লোকদের মধ্যে ছড়াতে থাকে।
টিকা:৬৪) এরও দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে, এরা গোয়েন্দা হয়ে আসে। এরা নবী ﷺ ও মুসলমানদের মজলিসে ঘোরাফেরা করে। কোন গোপন কথা কানে পড়লে তা নিয়ে মুসলমানদের শত্রুদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এরা মিথ্যা দোষারোপ ও নিন্দা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে বেড়ায় এবং যেসব লোক সরাসরি নবী ﷺ ও মুসলমানদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তাদের মধ্যে ভুল ধারণা এবং নবী ও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত হয়।
টিকা:৬৫) অর্থাৎ তাওরাতের যেসব বিধান তাদের মনমাফিক নয়, সেগুলোর মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে রদবদল করে এবং শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছামাফিক বিধান তৈরী করে।
টিকা:৬৬) অর্থাৎ মূর্খ জনগণকে বলে, আমরা যে বিধান শুনাচ্ছি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যদি এই একই বিধান তোমাদের শোনায় তাহলেই তা গ্রহণ করো, অন্যথায় প্রত্যাখ্যান করো।
টিকা:৬৭) আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ কোন খারাপ প্রবণতা লালিত হতে দেখেন তার সামনে একের পর এক এমন সব সুযোগ সৃষ্টি করে দেন যার ফলে সে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। সে ব্যক্তি যদি এখনো অসৎকর্মের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে না পড়ে থাকে তাহলে এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে সে নিজেকে সামলে নেয়। তার মধ্যে অসৎপ্রবৃত্তির মোকাবিলা করার জন্য সৎপ্রবৃত্তির যে শক্তিগুলো থাকে সেগুলো তীব্র হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু যদি সে অসৎকর্মের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ে থাকে এবং তার সৎপ্রবণতা তার অসৎপ্রবণতার কাছে পরাজিত হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের প্রত্যেকটি পরীক্ষার সময় সে আরো বেশী অসৎপ্রবণতা ও অসৎকর্মের ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে থাকবে। এটিই হচ্ছে আল্লাহর সেই ফিতনা বা পরীক্ষা যার হাত থেকে কোন বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন মানুষকে বাঁচানোর ক্ষমতা তার কোন কল্যাণাকাংখীর নেই। আর এ ফিতানার মধ্যে কেবল ব্যক্তিরাই নয় জাতিরাও নিক্ষিপ্ত হয়।
টিকা:৬৮) কারণ তারা নিজেরাই পবিত্র হতে চায়নি। যে নিজে পবিত্র হতে চায় এবং এজন্য প্রচেষ্টা ও সাধনা করে তাকে পবিত্রতা থেকে বঞ্চিত করা আল্লাহর নীতি নয়। যে নিজে পবিত্র হতে চায় না আল্লাহ তাকে পবিত্র করতে চান না।
টিকা:৬৯) এখানে বিশেষ করে তাদের সে সব মুফতী ও বিচারপতিদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য নিয়ে ও মিথ্যা বিবরণ শুনে এমন সব লোকদের পক্ষে ইনসাফ ও ন্যায়নীতি বিরোধী ফায়সালা করতো যাদের কাছ থেকে তারা ঘুষ নিতো অথবা যাদের সাথে তাদের অবৈধ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকতো।
টিকা:৭০) ইহুদীরা তখনো পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়মিত প্রজা হিসেবে গণ্য হয়নি। বরং সন্ধি ও চুক্তির ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ চুক্তিগুলোর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহে স্বাধীনতা ভোগ করতো এবং তাদের মামলার ফায়সালা তাদের আইন অনুযায়ীই তাদের নিজেদের বিচারপতিরাই করতো। নবী ﷺ বা তাঁর নিযুক্ত বিচারপতিদের কাছে নিজেদের মামলা-মোকদ্দমা আনার ব্যাপারে আইনের দিক দিয়ে তারা বাধ্য ছিল না। কিন্তু যেসব ব্যাপারে তারা নিজেদের দর্শীয় আইন অনুযায়ী ফায়সালা করতে চাইতো না যেসব ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্য তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতো। তারা আশা করতো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীয়াতে হয়তো তাদের জন্য অন্য কোন বিধান আছে এবং এভাবে নিজেদের ধর্মীয় আইনের আনুগত্য করা থেকে তারা নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে।
এখানে বিশেষ করে যে মামলাটির দিকে ইশারা করা হয়েছে সেটি ছিল খয়বরের সম্ভ্রান্ত ইহুদী পরিবার সংক্রান্ত। এ পরিবারগুলোর এক মহিলার সাথে এক পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল। তাওরাতের বিদান অনুসারে তাদের শাস্তি ছিল ‘রজম’ অর্থাৎ উভয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। (দ্বিতীয় বিবরণী পুস্তক ২২: ২৩-২৪) কিন্তু ইহুদীরা এ শাস্তি প্রয়োগ করতে চাচ্ছিল না। তাই তারা পারস্পরিক পরামর্শক্রমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শালিস মানার সিদ্ধান্ত করলো এবং একথাও স্থির করলো যে, যদি তিনি রজম ছাড়া অন্য কোন হুকুম দেন তাহলে তা নেয়া হবে আর যদি রজমেরই হুকুম দেন তাহলে তা মানা হবে না। কাজেই রসূলের সামনে মামলা পেশ করা হলো। তিনি রজমের হুকুম দিলেন। তারা এ হুকুম মানতে অস্বীকার করলো। তখন রসূল ﷺ তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের ধর্মে এর শাস্তির ব্যাপারে কি বিধান আছে? তারা জবাব দিলঃ বেত্রাঘাত করা এবং মুখে কালি মাখিয়ে গাধার পিঠে চড়িয়ে প্রদক্ষিণ করানো। তিনি তাদের আলেমদেরকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ব্যাপারে তাওরাতে কি এ বিধানই আছে? তারা আবার সেই মিথ্যা জবাব দিলেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে একজন নীরব থাকলেন। তার নাম ছিল ইবনে সূরিয়া। ইহুদীদের বর্ণনা অনুযায়ী সে সময় তাওরাতের তার চেয়ে বড় আলেম আর দ্বিতীয় কেউ ছিল না। নবী ﷺ তাকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি তোমাকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যিনি তোমাদের বাঁচিয়েছিলেন ফেরাউনের কবল থেকে এবং তুর পাহাড়ে তোমাদের শরীয়াত দান করেছিলেন, সত্যিই কি তাওরাতে ব্যভিচারের জন্য এ শাস্তির বিধান আছে? ইবনে সূরিয়া জবাব দিলেনঃ “আপনি আমাকে এ ধরনের কঠিন কসম না দিলে আমি বলতাম না। প্রকৃতপক্ষে রজমই ব্যভিচারের শাস্তি। কিন্তু আমাদের এখানে যখন ব্যভিচার বেড়ে যেতে লাগলো তখন আমাদের শাসকরা এ রীতি অবলম্বন করলো যে, কোন বড় লোক ব্যভিচার করলে তাকে ছেড়ে দিতো এবং গরীবরা এ দুষ্কর্ম করলে তাদেরকে রজম করতো। তারপর এতে যখন জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো তখন আমরা তাওরাতের আইনের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে বেত্রাঘাত করার এবং তাদের মুখে কালি দিয়ে উল্টো মুখে গাধার পিঠে চড়াবার শাস্তির বিধান দিলাম।” এরপর ইহুদীদের আর কিছু বলার অবকাশ রইলো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হলো।
টিকা:৭১) এ আয়াতে আল্লাহ ইহুদীদের দুর্নীতির মুখোস পুরোপুরি উন্মোচন করে দিয়েছেন। এ “ধর্মীয় লোকেরা” সারা আরবে এরূপ প্রচারণার জাল বিস্তার করে রেখেছিল যে, ঐ সামজে দ্বীনদারী ও “কিতাবী-জ্ঞানের” ব্যাপারে তাদের কোন জুড়ি নেই। এদের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিল যে, যে কিতাবকে তারা নিজেরা আল্লাহর কিতাব বলে মানতো এবং তারা যার প্রতি ঈমান রাখে বলে দাবী করতো, তার বিধান পরিহার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিজেদের মামলা নিয়ে এসেছিল। অথচ তাঁকে নবী বলে মেনে নিতেও তারা কঠোরভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এ থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এ ইহুদীরা আসলে কোন জিনিসের ওপরই যথার্থ ঈমান রাখতো না। আসলে তাদের ঈমান ছিল নিজেদের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর। আল্লাহর কিতাব বলে তারা যাকে মানে তার নির্দেশ তাদের নফস ও প্রবৃত্তির কাছে অপছন্দনীয় বলেই তারা তাকে মানতে অস্বীকার করে। আর (নাউযুবিল্লাহ) যাকে তারা মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার বলে প্রচার করে বেড়ায় সেখান থেকে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী কোন ফায়সালা লাভ করা যায় কিনা কেবলমাত্র এ আশায় তার কাছে ধর্ণা দেয়।
টিকা:৭২) এখানে প্রসঙ্গক্রমে এ সত্যটিও প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে যে, সকল নবীই ছিলেন মুসলিম। অন্যদিকে এ ইহুদীরা ইসলাম থেকে সরে এসে সাম্প্রদায়িক দলাদলিতে লিপ্ত হয়ে কেবলমাত্র “ইহুদী” হিসেবেই থেকে গিয়েছিল।
টিকা:৭৩) রব্বানী মানে আলেম এবং আহবার মানে ফকীহ।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এরা হচ্ছে মুনাফিক। তারা মুখে ঈমানের কথা বললেও অন্তরে ঈমানের কোন অস্তিত্ব নেই। তারা মিথ্যা শুনতে অভ্যস্ত। [ইবন কাসীর]
[২] প্রাচীন কাল থেকেই ইয়াহুদীরা কখনো স্বজন-প্রীতির বশবর্তী হয়ে এবং কখনো নাম-যশ ও অর্থের লোভে ফতোয়াপ্রার্থীদের মনমত ফতোয়া তৈরী করে দিত। বিশেষতঃ অপরাধের শাস্তির ক্ষেত্রে এটিই ছিল তাদের সাধারণ প্রচলিত পদ্ধতি। কোন ধনী ব্যক্তি অপরাধ করলে তারা তাওরাতের গুরুতর শাস্তিকে লঘু শাস্তিতে পরিবর্তন করে দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন এবং ইসলামের অভূতপূর্ব সুন্দর ব্যবস্থা ইয়াহুদীদের সামনে এল, তখন তারা একে একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইল। যেসব ইয়াহুদী তাওরাতের রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক নিযুক্ত করতে প্রয়াস পেত -যাতে একদিকে ইসলামের সহজ ও নরম বিধি-বিধান দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং অন্য দিকে তাওরাত পরিবর্তন করার অপরাধ থেকেও অব্যাহতি পাওয়া যায়। কিন্তু এ ব্যাপারেও তারা একটি দুস্কৃতির আশ্রয় নিত। নিয়মিত বিচারক নিযুক্ত করার পূর্বে কোন না কোন পন্থায় মোকাদ্দমার রায় ফতোয়া হিসাবে জেনে নিতে চাইত। উদ্দেশ্য এ রায় তাদের আকাঙ্ক্ষিত রায়ের অনুরূপ হলে বিচারক নিযুক্ত করবে, অন্যথায় নয়। এসব কিছুই তাদের অন্তরের কলুষতা প্রমাণ করত। [দেখুন, তাফসীর সা’দী] বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশ দিয়ে এক ইয়াহুদীকে মুখ কালো ও বেত্ৰাঘাত করা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা কি ব্যভিচারের শাস্তি এরকমই তোমাদের কিতাবে পাও? তারা বললঃ হ্যাঁ। তখন তিনি তাদের আলেমদের একজনকে ডেকে বললেন, “যে আল্লাহ মূসার উপর তাওরাত নাযিল এটাই ব্যভিচারের শাস্তি? সে বলল, না। তবে যদি আপনি আমাকে এর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস না করতেন, তাহলে আমি কখনই তা বলতাম না। আমাদের কিতাবে আমরা এর শাস্তি হিসেবে ‘প্রস্তারাঘাতকেই দেখতে পাই। কিন্তু এটা আমাদের সমাজের উঁচু শ্রেণীর মধ্যে বৃদ্ধি পায়। ফলে আমাদের উঁচু শ্রেণীর কেউ সেটা করলে তাকে ছেড়ে দিতাম। আর নিম্নশ্রেণীর কেউ তা করলে তার উপর শরীআত নির্ধারিত হদ (তথা রজমের শাস্তি) প্রয়োগ করতাম। তারপর আমরা বললাম, আমরা এ ব্যাপারে এমন একটি বিষয়ে একমত হই যা আমাদের উঁচু-নীচু সকল শ্রেণীর উপর সমভাবে প্রয়োগ করতে পারি। তা থেকেই আমরা রজম বা প্রস্তারাঘাতের পরিবর্তে মুখ কালো ও চাবুক মারা নির্ধারণ করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি প্রথম আপনার সেই মৃত নির্দেশকে বাস্তবায়ন করব, যখন তারা তা নিঃশেষ করে দিয়েছে। তখন তাকে রজম করার নির্দেশ দেয়া হল এবং তা বাস্তবায়িত হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। [মুসলিম: ১৭০০]
[৩] অনুরূপভাবে ইয়াহুদীদেরও একটি বদভ্যাস হলো যে, তারা মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথাবার্তা শোনাতে অভ্যস্ত। [ইবন কাসীরা] এসব ইয়াহুদী তাদের ধর্মীয় আলেমদের দ্বারা তাওরাতের নির্দেশাবলীর প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ দেখা সত্বেও তারা তাদেরই অনুসরণ এবং তাদের বর্ণিত মিথ্যা ও অমূলক কিসসা-কাহিনীই শুনতে থাকত। দ্বীনে তাদের মজবুতির অভাবে যে কোন মিথ্যা বলার জন্য বলা হলে, তারা তাতে অগ্রণী হয়ে যেত। [সা’দী]
[৪] এখানেও ইয়াহুদী ও মুনাফিকদের দ্বিতীয় একটি বদঅভ্যাস বর্ণনা করা হচ্ছে যে, এরা বাহ্যতঃ আপনার কাছে একটি দ্বনী বিষয় জিজ্ঞেস করতে এসেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধর্ম তাদের উদ্দেশ্য নয় এবং ধর্মীয় বিষয় জানার জন্যেও আসে নি। বরং তারা এমন একটি ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের গুপ্তচর, যারা অহংকারবশতঃ আপনার কাছে আসেনি। তাদের বাসনা অনুযায়ী আপনার মত জেনে এরা তাদেরকে বলে দিতে চায়। এরপর মানা না মানা সম্পর্কে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। [ইবন কাসীর]
[৫] ইয়াহুদীদের তৃতীয় একটি বদ অভ্যাস হচ্ছে, তারা আল্লাহর কালামকে যথার্থ পরিবেশ থেকে সরিয়ে তার ভুল অর্থ করত এবং আল্লাহর নির্দেশকে বিকৃত করত। এ বিকৃতি ছিল দ্বিবিধঃ তাওরাতের ভাষায় কিছু হেরফের করা এবং ভাষা ঠিক রেখে তদস্থলে অযৌক্তিক ব্যাখ্যা ও পরিবর্তন করা। ইয়াহুদীরা উভয় প্রকার বিকৃতিতেই অভ্যস্ত ছিল। [ইবন কাসীর]
[৬] অর্থাৎ ইয়াহুদীরা তাদের লোকদেরকে নবীজীর কাছে পাঠানোর সময় বলে দিত, যদি তোমাদেরকে ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে মুখ কালো ও চাবুক মারার কথা বলে তবে তোমরা গ্রহণ করো, আর যদি তোমাদেরকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যার কথা বলে তবে সাবধান হয়ে যাবে, অর্থাৎ তা গ্রহণ করো না। [মুসলিম: ১৭০০]
[৭] ইয়াহুদীদের চতুর্থ বদভ্যাস হচ্ছে, উৎকোচ গ্রহণ। তারা ‘সুহত’ খাওয়ায় অভ্যস্ত। সুহতের শাব্দিক অর্থ কোন বস্তুকে মূলোৎপাটিত করে ধ্বংস করে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বলা হয়েছে, (فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍ) -অর্থাৎ “তোমরা কুকর্ম থেকে বিরত না হলে আল্লাহ্ তা’আলা আযাব দ্বারা তোমাদের মূলোৎপাটন করে দেবেন। [সূরা ত্বা-হা: ৬১] অর্থাৎ তোমাদের মূল শিকড় ধ্বংস করে দেয়া হবে। অধিকাংশ মুফাসসির এখানে সুহত এর অর্থ করেছেন, হারাম খাওয়া। [তাফসীর সা’দী, ইবন কাসীর, মুয়াসসার] এর অর্থে এক হাদীসে এসেছে, ‘নিশ্চয় বেশ্যার বেশ্যাবৃত্তির পয়সা, কুকুর-বিড়াল বিক্রির মূল্য এবং শিংগা লাগানোর বিনিময়ে অর্জিত সম্পদ সুহত তথা হারাম সম্পদের অন্তর্ভুক্ত’। [সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৯৪১]
তবে কোন কোন মুফাসসির বলেন, আলোচ্য আয়াতে ‘সুহত’ বলে উৎকোচকে বোঝানো হয়েছে। তাবারী; বাগভী; জালালাইন) উৎকোচ বা ঘুষ সমগ্র দেশ ও জাতিরও মূলোৎপাটন করে এবং জননিরাপত্তা ধ্বংস করে। যে দেশে অথবা যে বিভাগে ঘুষ চালু হয়ে পড়ে, সেখানে আইনও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ আইনের উপরই দেশ ও জাতির শান্তি নির্ভরশীল। আইন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে কারো জানমাল ও ইজ্জত-আবরু সংরক্ষিত থাকে না। ঘুষের উৎসমুখ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে পদস্থ কর্মচারী ও শাসকদেরকে প্রদত্ত উপটৌকনকেও সহীহ হাদীসে ঘুষ বলে আখ্যায়িত করে হারাম করে দেয়া হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার প্রতি অভিসম্পাত করেন এবং ঐ ব্যক্তির প্রতিও, যে উভয়ের মধ্যে দালালী বা মধ্যস্থতা করে’। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪/১১৫, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৭৯]
[৮] আলোচ্য আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমতা দিয়ে বলা হয়েছে যে, আপনি ইচ্ছা করলে তাদের মোকাদ্দমার ফয়সালা করুন, নতুবা নির্লিপ্ত থাকুন। আরো বলা হয়েছে যে, আপনি যদি নির্লিপ্ত থাকতে চান তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। পরে বলা হয়েছে, যদি আপনি ফয়সালাই করতে চান, তবে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার সহকারে ফয়সালা করুন। অর্থাৎ নিজ শরীআত অনুযায়ী ফয়সালা করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হওয়ার পর পূর্ববর্তী সমস্ত শরীআত রহিত হয়ে গেছে। কুরআনে যেসব আইন বহাল রাখা হয়েছে, সেগুলো অবশ্য রহিত হয়নি। [বাগভী]
[৯] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ বনু-নদ্বীর এবং বনু-কুরাইযার মধ্যে যুদ্ধ হত। বনু-নদ্বীর বনু-কুরাইযা থেকে নিজেদেরকে সম্মানিত দাবী করত। বনু-কুরাইযার কোন লোক যদি বনু-নদ্বীরের কাউকে হত্যা করত তাহলে তাকেও হত্যা করা হত। কিন্তু বনু-নদ্বীর যদি বনু-কুরাইযার কাউকে হত্যা করত তাহলে এর বিনিময়ে একশ’ ওসাক খেজুর রক্তপণ হিসাবে আদায় করত। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা’আলা মদীনায় পাঠালেন, তখন বনু-নদ্বীরের এক লোক বনু-কুরাইযার এক ব্যক্তিকে হত্যা করল। বনু-কুরাইযা তাদের লোকের হত্যার বিনিময়ে কেসাস দাবী করল। তারা বললঃ আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাব এবং শেষ পর্যন্ত তার কাছেই আসল। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [আবু দাউদঃ ৪৪৯৪]
[১০] আলোচ্য আয়াতে নবীদের প্রতিনিধিবর্গকে দুই ভাগে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ ‘রব্বানী’গণ এবং দ্বিতীয় ভাগ ‘আহবার’। তন্মধ্যে ‘রব্বানী’ শব্দটির অর্থ নিয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, (رَبَّاني) শব্দটি (رَبّ) এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এর অর্থ আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহভক্ত। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মতে, শব্দটি (رُبَّانُ السَّفِيْنَة) বা জাহাজের নাবিক ও কর্ণধার অর্থে। [মাজমু ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়্যা] পক্ষান্তরে আহবার শব্দটি ‘হিবর’ বা ‘হাবর’ এর বহুবচন। ইয়াহুদীদের বাক পদ্ধতিতে আলেমকে (حبر) বলা হত। কাতাদা বলেন, রব্বানী হচ্ছে ফকীহগণ। আর আহবার হচ্ছে, আলেমগণ। ইবন যায়দ বলেন, রাব্বানী হচ্ছেন শাসকগণ, আর আহবার হচ্ছে আলেমগণ [তাবারী] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, রাব্বানী ঐ সমস্ত জ্ঞানীদেরকে বলা হয়, যারা বড় কোন ইলম দেয়ার পূর্বে ছোট ইলম প্রদান করে, উম্মতকে প্রস্তুত করে নেন। [ফাতহুল কাদীর]
[১১] অর্থাৎ তারা এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছিল। [জালালাইন] অথবা, তারা এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে বলে সাক্ষ্য দিচ্ছিল। [কুরতুবী] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর অর্থ তাদেরকে তাওরাতের সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আর তারা এটা স্বীকার করতেও বাধ্য যে, যখনই এর কোন ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সন্দেহ হবে, তারা সে সমস্ত ব্যাপারে আলেমদের মুখাপেক্ষী হবে। সাধারণ মানুষ যেখানে সালাত, সাওম, যাকাত, যিকর ইত্যাদি ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমেই নাজাত পাবে, সেখানে আলেমদের দায়িত্ব আরও বেশী। তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হচ্ছে, উপরোক্ত ইবাদাতসমূহ সম্পন্ন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যা যা প্রয়োজন হবে, যেখানে যেখানে তাদেরকে সাবধান করার দরকার হবে, সেখানে তাদেরকে তাও করতে হবে। [সা’দী]
[১২] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে কেউ আল্লাহ যা নাযিল করেছে তা অস্বীকার করবে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। আর যে কেউ তা স্বীকার করবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করে তদনুসারে বিধান দিবে না সে যালেম ও ফাসেক হবে। [তাবারী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] কাফের ও মুশরিকদের ঈমান গ্রহণ না করা এবং সঠিক পথ অবলম্বন না করার ফলে নবী (সাঃ) যে অস্থিরতা ও আক্ষেপের শিকার হয়েছিলেন, তার জন্য আল্লাহ নিজ নবীকে অধিক চিন্তা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে এ ব্যাপারে তিনি সান্ত্বনা পান যে এই লোকদের ব্যাপারে তিনি আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হবেন না।
[২] ৪১ থেকে ৪৪নং আয়াতগুলির অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে দু’টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়; (ক) বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী ইয়াহুদীর ঘটনা। এমনিতে তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করেছিল, তার উপর তার অনেক বিধান অনুযায়ী আমল করত না। তার মধ্যে (একটি বিধান) রজম বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার দন্ডবিধান; যা তাদের গ্রন্থে বিবাহিত ব্যভিচারী নারী-পুরুষের জন্য বিদ্যমান ছিল এবং যা আজও বিদ্যমান আছে। সুতরাং যেহেতু তারা এই শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে চাচ্ছিল, সেহেতু তারা আপোসে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল যে, ‘চল, আমরা মুহাম্মাদের নিকট যাই। তিনি যদি আমাদের মনগড়া শাস্তি দানের মতই চাবুক মেরে লাঞ্ছিত করার শাস্তির নির্দেশ দেন, তাহলে আমরা তা মান্য করে নেব। অন্যথা তিনি যদি রজম বা পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন, তাহলে আমরা তা মান্য করব না।’ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন; ইয়াহুদীগণ রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের তাওরাতে রজমের ব্যাপারে কি নির্দেশ রয়েছে?’ তারা বলল, ‘তাওরাতে ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে তাকে চাবুক মারা ও লাঞ্ছিত করার কথা উল্লেখ আছে।’ (এ কথা শুনে) আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে পাথর ছুঁড়ে হত্যার নির্দেশ রয়েছে। যাও, তাওরাত নিয়ে এসো দেখি!’ তারা তাওরাত নিয়ে এসে পড়তে শুরু করল বটে; কিন্তু রজমের আয়াতের উপর হাত রেখে দিয়ে পূর্বাপর সমস্ত পড়ে শুনালো। আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বললেন, ‘হাত সরিয়ে নাও!’ হাত সরালে দেখা গেল যে, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তখন তাদেরকেও স্বীকার করতেই হল যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্যই বলছেন, তাওরাতে রজমের আয়াত আছে।(অতঃপর রসূল (সাঃ)-এর নির্দেশক্রমে) ব্যভিচারীদ্বয়কে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করে দেওয়া হল। (বুখারী ও মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
(খ) একটি অন্য ঘটনাও বর্ণনা করা হয় যে, ইয়াহুদীদের একটি গোত্র অন্য গোত্র অপেক্ষা বেশী সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন মনে করত। আর এই কারণেই নিজেদের লোক খুন হলে অপর গোত্রের নিকট হতে একশ’ অসাক রক্তপণ দাবী করত। পক্ষান্তরে অন্য গোত্রের কেউ খুন হলে পঞ্চাশ অসাক রক্তপণ নির্ধারিত করত। যখন নবী (সাঃ) মদীনায় আগমন করলেন, তখন ইয়াহুদীদের দ্বিতীয় দল যাদের রক্তপণ অর্ধেক ছিল তারা উৎসাহ পেল। (অর্থাৎ তারা ভাবল যে, এবার আমরা ন্যায় বিচার পাব।) এবং তারা একশ’ অসাক রক্তপণ দিতে অস্বীকার করল। আর এ নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার উপক্রম ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন বুদ্ধিমান লোক রসূল (সাঃ)-এর নিকট বিচার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে ঐ সময় এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়। যার মধ্যে একটি আয়াতে রক্তপণের বিধান সকলের জন্য সমান বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ ১/২৪৬, আহমাদ শাকের হাদীসটির সূত্রকে সহীহ বলেছেন।) ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন, সম্ভবতঃ উভয় ঘটনাই একই সময়ের এবং উক্ত সকল কারণের জন্যই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
[৩] سماعون শব্দের অর্থ হচ্ছে; অধিক শ্রবণকারী। আর এ কারণেই এর দুটি অর্থ হতে পারে (ক) গোয়েন্দাগিরি বা গুপ্তচরবৃত্তির জন্য শ্রবণ করা অথবা (খ) অন্যের কথা মান্য ও গ্রহণ করার জন্য শ্রবণ করা। কেউ কেউ প্রথম অর্থটি গ্রহণ করেছেন, আবার কেউ দ্বিতীয় অর্থটি।
[৪] أسلموا ক্রিয়াপদটি نبيين এর বিশেষণ। অর্থাৎ, মুসলিম বা আল্লাহর অনুগত নবীগণ। যেহেতু সমস্ত নবীগণই ইসলাম ধর্মেরই অনুসারী ছিলেন, যার দিকে মুহাম্মাদ (সাঃ) দাওয়াত দিচ্ছেন। অর্থাৎ, সমস্ত নবীগণের দ্বীন বা ধর্ম এক ও অভিন্ন। আর ইসলামী দাওয়াতের মূল ভিত্তি হলো (তাওহীদ); অর্থাৎ, একমাত্র এক আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে আর তাঁর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার করা যাবে না। আর প্রত্যেক নবীই স্ব স্ব গোত্রকে সর্বপ্রথম তাওহীদের এই একনিষ্ঠ বাণীই পেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন; {وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ} অর্থাৎ, আমি তোমার পূর্বে ‘আমি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমারই উপাসনা কর’-এ প্রত্যাদেশ ছাড়া কোন রসুল প্রেরণ করিনি। (সূরা আম্বিয়া ২১:২৫) আর কুরআনে একে দ্বীনও বলা হয়েছে, যেমন সূরা শু’রার ৪২:১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, {شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا} যাতে ঐ একই বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমার জন্য আমি ঐ জীবন-বিধানই নির্ধারিত করেছি যা তোমার পূর্বে নবীগণের উপর নির্ধারিত করেছিলাম।
[৫] للذين هادوا এর সম্পর্ক يحكم ক্রিয়াটির সাথে। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের ব্যাপারেও ফায়সালা করতেন।
[৬] সুতরাং তাঁরা তাওরাতের মধ্যে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেননি, যেমনটি তাঁদের পরবর্তী লোকেরা করেছিল।
[৭] এই যে, এ গ্রন্থ অর্থাৎ কুরআন কারীম পরিবর্ধন ও হ্রাস থেকে সংরক্ষিত আছে এবং আল্লাহর নিকট থেকে (সর্বশেষ) অবতীর্ণ গ্রন্থ।
[৮] অর্থাৎ, লোকের ভয়ে ভীত হয়ে তাওরাতের আসল বিধান গোপন করো না এবং পার্থিব সামান্য সম্পদ লাভের জন্য তাতে কোন প্রকার রদবদল করো না।
[৯] সুতরাং কিভাবে তোমরা ঈমানের পরিবর্তে কুফরীর উপর সন্তুষ্ট রয়ে গেলে?