أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٠٩)-৪১১
www.motaher21.net
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ امَنُواْ الْيَهُودَ
তুমি অবশ্যই মুমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে,
Verily, you will find the strongest among men in enmity to the believers the Jews.
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৮২
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدٰوَةً لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا ۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُم مَّوَدَّةً لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا الَّذِينَ قَالُوٓا إِنَّا نَصٰرٰى ۚ ذٰلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
তুমি অবশ্যই মুমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে শত্রুতায় অধিক কঠোর পাবে ইয়াহূদীদেরকে এবং যারা শিরক করেছে তাদেরকে। আর মুমিনদের জন্য বন্ধুত্বে তাদের মধ্যে নিকটতর পাবে তাদেরকে, যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’। তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ও সংসারবিরাগী আছে এবং তারা নিশ্চয় অহঙ্কার করে না।
৮২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৮২-৮৬ নং আয়াতে পূর্ববর্তী জাতির মধ্য হতে যারা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান শত্র“ এবং যারা বন্ধুত্বের দিক দিয়ে অধিক নিকটবর্তী তাদের পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান শত্র“ হল ইয়াহূদী ও মুশরিকরা। তাদেরকে বাহ্যিক মুসলিমদের কল্যাণকামী দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে এরা মুসলিমদের ক্ষতি ও সমূলে ধ্বংস করার নীল-নকশা করে থাকে। যেমন মদীনায় ইয়াহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার জন্য কয়েকবার অপচেষ্টা করেছিল। আজও মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত আছে, যার দরুন একের পর এক মুসলিম দেশগুলো দখল, তাদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
পক্ষান্তরে মুসলিমদের প্রতি সৌহার্দ্য, ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধূত্বের দিক থেকে অধিক নিকটবর্তী হল খ্রিস্টানগণ। এদের মধ্যে নম্রতা, উদারতা, ক্ষমাশীলতা ও ধর্মাবলম্বিতা তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে বেশি রয়েছে। এদের অধিকাংশ ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেমন হাবশার বাদশা নাজ্জাশী ও তাঁর সহচর্যগণ। বদর যুদ্ধে কুরাইশদের বড় বড় নেতারা নিহত হওয়ার পর তারা বলল: হাবশায় যে সকল মুসলিম রয়েছে তাদেরকে এনে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে পারো। অতএব বাদশা নাজ্জাশীর জন্য কিছু উপঢৌকনসহ দু’জন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রেরণ কর হয়তো তিনি সেখানকার মুসলিমদেরকে ফেরত দেবেন। কুরাইশরা আমর বিন আস ও আব্দুল্লাহ বিন রবী‘আহকে উপঢৌকনসহ প্রেরণ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা শুনে নাজ্জাশীর প্রতি একটি চিঠিসহ আমর বিন উমাইয়্যাহ আয-যমরীকে প্রেরণ করলেন। চিঠি নিয়ে আগমন করলে নাজ্জাশী তা পড়ার পর জাফর বিন আবূ তালেব ও মুহাজির সাহাবীদের ডাকলেন এবং তথাকার খ্রিস্টান পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের নিয়ে আসলেন।
অতঃপর জাফরকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বললেন, তিনি সূরা মারইয়াম-এর কিছু অংশ তেলাওয়াত করলেন। এতে তাদের চোখ দিয়ে অশ্র“ ঝঁরতে থাকে। এদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেছেন:
(وَلَتَجِدَنَّ اَقْرَبَھُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوا الَّذِیْنَ قَالُوْٓا اِنَّا نَصٰرٰی)
“এবং যারা বলে ‘আমরা খ্রিস্টান’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই তুমি মু’মিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখবে।” (কুরতুবী)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلْنَا فِیْ قُلُوْبِ الَّذِیْنَ اتَّبَعُوْھُ رَاْفَةً وَّرَحْمَةً)
“এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া।”(সূরা হাদীদ ৫৭:২৭)
মুসলিমদের প্রতি তাদের সৌহার্দ্য, ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্বের কয়েকটি কারণ আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরেছেন। (১)
(قِسِّیْسِیْنَ وَرُھْبَانًا)
‘পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগী’ অর্থাৎ তাদের মাঝে আলেম ও ইবাদতগুজারী মানুষ ছিল। তারা সত্য অনুধাবন করতে পেরেছে, তারা বুঝতে পেরেছে এ কুরআন সত্য এবং এর অনুসারীরাই সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত।
(২) (وَّاَنَّھُمْ لَا یَسْتَکْبِرُوْنَ)
‘আর তারা অহঙ্কারও করে না’অর্থাৎ সত্য গ্রহণ ও মেনে নিতে তাদের কোন অহংকার ও হঠকারিতা নেই। সত্য জানার পর অংকারবশত তা বর্জন করে না।
সুতরাং সত্য জানার পর মাথা পেতে নেয়া উচিত, কোন কিছুর দোহাই দিয়ে বা অহংকারবশত তা বর্জন করা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার নামান্তর মাত্র।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান শত্রু হল ইয়াহূদী জাতি।
২. অমুসলিমদের মধ্য হতে ইসলাম ও মুসিলমদের বন্ধুত্বের নিকটবর্তী হল খ্রিস্টানরা, যারা স্ব ধর্মের ওপর বহাল রয়েছে।
৩. সাধারণত নম্র, ভদ্র ও উদার মনের মানুষেরাই আল্লাহ তা‘আলার দীন গ্রহণে অগ্রগামী।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 82
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ امَنُواْ الْيَهُودَ
Verily, you will find the strongest among men in enmity to the believers the Jews.
The Reason Behind Revealing these Ayat
Sa`id bin Jubayr, As-Suddi and others said that;
these Ayat were revealed concerning a delegation that An-Najashi (King of Ethiopia) sent to the Prophet in order to hear his words and observe his qualities.
When the delegation met with the Prophet and he recited the Qur’an to them, they embraced Islam, cried and were humbled. Then they returned to An-Najashi and told him what happened.
Ata bin Abi Rabah commented,
“They were Ethiopians who embraced Islam when the Muslims who migrated to Ethiopia resided among them.”
Qatadah said,
“They were some followers of the religion of `Isa, son of Maryam, who when they saw Muslims and heard the Qur’an, they became Muslims without hesitation.”
Ibn Jarir said that;
these Ayat were revealed concerning some people who fit this description, whether they were from Ethiopia or otherwise.
Allah said,
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ امَنُواْ الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُواْ
Verily, you will find the strongest among men in enmity to the believers the Jews and those who commit Shirk,
This describes the Jews, since their disbelief is that of rebellion, defiance, opposing the truth, belittling other, people and degrading the scholars. This is why the Jews – may Allah’s continued curses descend on them until the Day of Resurrection – killed many of their Prophets and tried to kill the Messenger of Allah several times, as well as, performing magic spells against him and poisoning him. They also incited their likes among the polytheists against the Prophet.
Allah’s statement,
وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِينَ امَنُواْ الَّذِينَ قَالُوَاْ إِنَّا نَصَارَى
and you will find the nearest in love to the believers those who say:”We are Christians.”
refers to those who call themselves Christians, who follow the religion of the Messiah and the teachings of his Injil. These people are generally more tolerant of Islam and its people, because of the mercy and kindness that their hearts acquired through part of the Messiah’s religion. In another Ayah, Allah said;
وَجَعَلْنَا فِى قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً
And We ordained in the hearts of those who followed him, compassion, mercy, and monasticism… (57:27)
In their book is the saying; “He who strikes you on the right cheek, then turn the left cheek for him.”
And fighting was prohibited in their creed, and this is why Allah said,
ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
That is because among them are Qissisin (priests) and Ruhban (monks), and they are not proud.
This means that among them are Qissisin (priests).
The word Ruhban refers to one dedicated to worship.
Allah said,
ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
That is because among them are priests and monks, and they are not proud.
This describes them with knowledge, worship and humbleness, along with following the truth and fairness.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এ আয়াতটি এবং পরবর্তী চারটি আয়াত নাজ্জাসী এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। যখন তাঁদের সামনে হাবসা বা আবিসিনিয়া রাজ্যে হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) কুরআন মাজীদ পাঠ করেন তখন তাদের চক্ষু দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে, এমন কি তাঁদের দাড়ি ভিজে যায়। কিন্তু এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এ আয়াতগুলো মদীনায় অবতীর্ণ হয়। আর হযরত জাফর (রাঃ)-এর এ ঘটনাটি হিজরতের পূর্বের ঘটনা। এটাও বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতগুলো ঐ প্রতিনিধির ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যাকে বাদশাহ নাজ্জাসী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে প্রেরণ করেছিলেন। উদ্দেশ্যে এই যে, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তার অবস্থান ও গুণাবলী পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাঁর কথাগুলো শ্রবণ করেন। যখন তিনি নবী (সঃ)-এর সাথে। মিলিত হন এবং তার মুখ থেকে কুরআন কারীম শ্রবণ করেন তখন তাঁর অন্তর গলে যায়। তিনি খুবই ক্রন্দন করেন এবং ইসলাম কবুল করেন। ফিরে গিয়ে তিনি নাজ্জাসীর কাছে সমস্ত অবস্থা বর্ণনা করেন। নাজ্জাসী তখন রাজ্য ত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে মিলনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সঠিক বর্ণনায় সাব্যস্ত হয় যে, তিনি আবিসিনিয়ায় রাজত্ব করতে করতেই মত্যবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর দিনই নবী (সঃ) সাহাবায়ে কিরামকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ প্রদান করেন এবং তাঁর গায়েবানা জানাযার নামায আদায় করেন। কেউ কেউ তো বলেন যে, এ প্রতিনিধি দলে সাতজন আলেম ও পাঁচজন দরবেশ ছিলেন অথবা পাঁচজন আলেম ও সাতজন দরবেশ ছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা মোট পাচশ জন ছিলেন। আবার বলা হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ষাটের কিছু বেশী ছিল। একটি উক্তি এও আছে যে, তাঁরা সত্তরজন ছিলেন। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হযরত আতা’ (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতে যাদের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন হাবশের অধিবাসী। হাবশের মুহাজির মুসলমানগণ যখন তাঁদের কাছে আগমন করেন তখন তাঁরা সবাই মুসলমান হয়ে যান। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, প্রথমে তারা ঈসায়ী ধর্মের অনুসারী ছিলেন। যখন তারা মুসলমানদেরকে দেখতে পান ও কুরআন শ্রবণ করেন তখনই তারা মুসলমান হয়ে যান। ইবনে জারীর (রঃ)-এর ফায়সালা এসব উক্তিকে সত্য বলে সাব্যস্ত করছে। তিনি বলেন যে, এ আয়াতগুলো ঐসব লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যাদের মধ্যে এ গুণাবলী রয়েছে। তারা হাবশারই হোন বা অন্য কোন জায়গারই হোন। ইয়াহুদীদের মুসলমানদের সাথে যে ভীষণ শত্রুতা রয়েছে তার কারণ এই যে, তাদের মধ্যে দুষ্টামি, বিরোধিতা ও অস্বীকার করার মাদাহ বা মূল খুব বেশী আছে। তারা জেনে শুনে কুফরী করে থাকে এবং জেদের বশবর্তী হয়ে অন্যায় আচরণ করে থাকে। তারা হকের মোকাবিলায় বিগড়ে যায়। হক পন্থীদের উপর তারা ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। তাদের প্রতি হিংসা পোষণ করে। আলেমের সংখ্যা তাদের মধ্যে খুবই কম। আলেমদের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ে না। এ কারণে তারা বহু নবীকে হত্যা করেছিল। স্বয়ং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদকেও (সঃ) তারা হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। একবার নয়, বার বার। তারা তার খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করে, তার উপর যাদু করে এবং তাদের ন্যায় দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে তার উপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু প্রত্যেকবারই মহান আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “যখন কোন ইয়াহুদী কোন মুসলমানকে একাকী পায় তখন তার অন্তরে তাকে হত্যা করার ইচ্ছা পয়দা হয়ে যায়। অন্য এক সনদেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। কিন্তু তা অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল। তবে হ্যাঁ, মুসলমানদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে সবচেয়ে নিকটবর্তী ঐসব লোক, যারা নিজেদেরকে নাসারা বলে। যারা হযরত ঈসা (আঃ) -এর সত্য অনুসারী এবং ইঞ্জীলের আসল ও সঠিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তাদের মনে মোটের উপর মুসলমান ও ইসলামের প্রতি মহব্বত আছে। এর কারণ এই যে, তাদের মধ্যে নম্রতা রয়েছে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)-এর অনুসারীদের অন্তরে আমি নম্রতা ও দয়া সৃষ্টি করেছি।’ (৫৭:২৭) তাদের কিতাবে নির্দেশ আছে-যে তোমার ডান গালে থাপ্পড় মারে, তুমি তার সামনে তোমার বাম গালটিও এগিয়ে দাও। তাদের শরীয়তে যুদ্ধই নেই। এখানে তাদের বন্ধুত্বের কারণ এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের মধ্যে খতীব ও উপদেষ্টা রয়েছে। (আরবী) -এর বহু বচন হচ্ছে (আরবী) এর বহু বচন (আরবী) ও আসে (আরবী) শব্দটি ‘শব্দের (আরবী) বহু বচন। এটা (আরবী) শব্দ থেকে বের হয়েছে। রাহেব বলা হয় আবেদকে। এ শব্দের অর্থ হচ্ছে ভয়। যেমন (আরবী) -এর বহু বচন (আরবী) ‘এবং – (আরবী) এর বহু বচন (আরবী) এসে থাকে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, কখনও কখনও শব্দটি এক বচনের জন্যেও এসে থাকে। এর বহু বচন এসে থাকে। যেমন (আরবী) ও (আরবী) এবং (আরবী) ও (আরবী)। আবার কোন কোন সময় এর বহু বচন এসে থাকে। আরবীদের কবিতাতেও (আরবী) শব্দটি এক বচনে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি লোক (আরবী) ও (আরবী) পড়ে, একটি লোক হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)-কে এর অর্থ জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি উত্তরে বলেনঃ (আরবী) কে খানকান ও জনহীন স্থানে ছেড়ে এসো। আমাকে তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) ও (আরবী) পড়িয়েছেন। (বাযায ও ইবনে মিরদুওয়াই)
মোটকথা এখানে তাদের তিনটি গুণের কথা বলা হয়েছে। (১) তাদের মধ্যে আলেম বেশী থাকা, (২) তাদের মধ্যে আবেদের সংখ্যা বেশী হওয়া এবং (৩) তাদের মধ্যে নম্রতা ও ভদ্রতা থাকা।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] এই জন্য যে, ইয়াহুদীদের মধ্যে একগুঁয়েমি, হঠকারিতা, হক থেকে বিমুখতা, দাম্ভিকতা ও গর্ব এবং জ্ঞানী ও ঈমানদারদের অবজ্ঞা করার প্রবণতা ব্যাপক প্রচলিত। আর এ জন্যেই নবীগণকে হত্যা ও তাঁদেরকে মিথ্যাজ্ঞান করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এমনকি কয়েক বার তারা মহানবী (সাঃ)-কে হত্যা করার কুচক্রান্ত করে। তাঁকে যাদু করে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি সাধন করার মত জঘন্য অপচেষ্টাও করে। অনুরূপ কুকীর্তি মুশরিকদেরও।
[২] رهبان এর ভাবার্থ; সৎ, আবেদ, সংসার-বিরাগী বা নির্জনবাসী আর قسيسين এর ভাবার্থ; পন্ডিত। অর্থাৎ, এই খ্রিষ্টানদের মধ্যে জ্ঞান ও বিনয় আছে। আর এই জন্যই ইয়াহুদীদের মত তাদের হঠকারিতা ও দাম্ভিকতা ছিল না। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে নম্রতা, উদারতা ও ক্ষমাশীলতার শিক্ষার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মান আছে। এমন কি তাদের ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, কেউ যদি তোমার ডান গালে চড় মারে, তাহলে তার সামনে বাম গাল বাড়িয়ে দাও। অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ করবে না। এই কারণে ইয়াহুদীদের তুলনায় খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের নিকটতর। খ্রিষ্টানদের এই প্রশংসা ইয়াহুদীদের মোকাবেলায় করা হয়েছে। নচেৎ ইসলাম-বিদ্বেষের অভ্যাস কম-বেশী তাদের মধ্যেও আছে। যেমন এ কথা ক্রুস ও ক্রিসেণ্টের বহু শতাব্দী-ব্যাপী যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে স্পষ্ট এবং যা অদ্যাবধি চলে আসছে। আর বর্তমানে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সরগরম। এই কারণেই কুরআনে উভয় সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে।