(Book# 114/٢١٧)-৪১৯ www.motaher21.net لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء অবান্তর বিষয়াবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। Unnecessary Questioning is Disapproved of সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-১০১-১০২

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢١٧)-৪১৯
www.motaher21.net
لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء
অবান্তর বিষয়াবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করো না।

Unnecessary Questioning is Disapproved of

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-১০১-১০২

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَسْـَٔلُوا عَنْ أَشْيَآءَ إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِن تَسْـَٔلُوا عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْءَانُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللَّهُ عَنْهَا ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

হে মুমিনগণ, তোমরা এমন বিষয়াবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তা তোমাদেরকে পীড়া দেবে। আর কুরআন অবতরণ কালে যদি তোমরা সে সম্পর্কে প্রশ্ন কর তাহলে তা তোমাদের জন্য প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ তা ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল।
আয়াত:-১০২

قَدْ سَأَلَهَا قَوْمٌ مِّن قَبْلِكُمْ ثُمَّ أَصْبَحُوا بِهَا كٰفِرِينَ

তোমাদের পূর্বে একটি কওম এরূপ প্রশ্ন করেছিল; তারপর তারা এর কারণে কাফির হয়ে গেল।

১০১-১০২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

শানে নুযূল:

এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে তিনটি বর্ণনা পাওয়া যায়:

১. সাহাবী আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একজন লোক বলল: আমার পিতা কে? নাবী বলেছেন: অমুক, তখন

(لَا تَسْأَلُوْا عَنْ أَشْيَا۬ءَ)

১০১ নং আয়াতটি নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬১২)

২. সাহাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: মানুষেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঠাট্টা করে জিজ্ঞাসা করত। একজন বলল, আমার পিতা কে? অন্য লোক বলল: আমার উট হারিয়ে গিয়েছে। আমার উট কোথায়? তখন তাদের ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬২২)

(وَإِنْ تَسْأَلُوْا عَنْهَا)

‘‘যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কর’অর্থাৎ যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে সেসব বিষয়ে কুরআন অবতীর্ণের সময় প্রশ্ন করলে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর ওয়াহী করে জানিয়ে দিতেন। এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে সহজ। কেননা হতে পারে আমাদের প্রশ্নের কারণে এমন কোন বিধান চলে আসতে পারে, যা পালনে অক্ষম হব বা সংকীর্ণতা চলে আসতে পারে।

যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:

إِنَّ أَعْظَمَ الْمُسْلِمِينَ جُرْمًا من سَأَلَ عن شَيْءٍ لم يُحَرَّمْ فَحُرِّمَ من أَجْلِ مَسْأَلَتِهِ

সে মুসলিম সবচেয়ে বড় অপরাধী যে ব্যক্তি কোন কিছু জিজ্ঞাসা করল যা হারাম ছিল না ফলে তার প্রশ্নের কারণে হারাম করে দেয়া হল। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৯, সহীহ মুসলিম হা: ২৩৫৮)

(عَفَا اللّٰهُ عَنْهَا)

‘আল্লাহ সেসব ক্ষমা করেছেন’ অর্থাৎ যে সকল বস্তু বা বিষয় কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি সে বিষয়গুলো আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতএব সেসব বিষয়ে তোমরা চুপ থাক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

ذَرُوْنِيْ مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ الَّذِينَ من قَبْلِكُمْ بِسُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ علي أَنْبِيَائِهِمْ

আমি তোমাদেরকে যে বিষয়ে ছেড়ে দিয়েছি সে বিষয়ে তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর না; কেননা আমাদের পূর্ববর্তীগণ অধিক প্রশ্ন ও নাবীদের ব্যাপারে মতানৈক্য করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। (সহীহ বুখারী হা: ৭২৮৮, সহীহ মুসলিম হা: ৩৩৭)

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যা ফরয করার তা ফরয করে দিয়েছেন। অতএব তা বিনষ্ট করো না (অর্থাৎ যথাযথ আদায় কর)। তিনি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, অতএব তা অতিক্রম করো না। যে সমস্ত বস্তু হারাম করে দিয়েছেন তা ভঙ্গ করো না, আর যে সকল জিনিসের ব্যাপারে তিনি (কিছু বলেননি) নীরবতা অবলম্বন করেছেন তা তোমাদের প্রতি দয়াশীল হয়ে করেছেন। ==== ভুলে গিয়েছেন এমন নয়, সুতরাং সে বিষয়ে প্রশ্ন কর না। (মুসনাদ আহমাদ: ৪/১১৫, ফাতহুল বারী. ১৩/২৮০, ইবনু হাজার বলেন: এর শাহেদ রয়েছে)

পূর্ববর্তী জাতি এমন কিছু অবান্তর প্রশ্ন করেছিল যেমন বানী ইসরাঈলের গাভী বিষয়ে, ইয়াহূদীদের কিতাব নাযিলের ব্যাপারে ইত্যাদি। পরে নিজেরাই এর জন্য আফসোস করেছিল।

সুতরাং আমাদের উচিত এমন কোন প্রশ্ন না করা যার ফলে দশজনের কোন উপকার না হয়ে ক্ষতি হয়। অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু শরীয়তের বিষয়ে অজানা থাকলে কুরআন-সুন্নাহয় জ্ঞানীদেরকে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَاسْئَلُوْٓا اَھْلَ الذِّکْرِ اِنْ کُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ)

“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞেস কর‎”(সূরা নাহল ১৬:৪৩)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. অহেতুক প্রশ্ন করা দূষণীয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের প্রতি দয়ালু।
৩. পূর্ববর্তী জাতি অহেতুক প্রশ্ন করে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল।
৪. এমন কিছু কাজ রয়েছে যা বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 101-102

لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء

Unnecessary Questioning is Disapproved of

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُوْكُمْ

O you who believe! Ask not about things which, if made plain to you, may cause you trouble.

This Ayah refers to good conduct that Allah is teaching His believing servants, by forbidding them from asking about useless things. Since if they get the answers they sought, they might be troublesome for them and difficult on their ears.

Al-Bukhari recorded that Anas bin Malik said,

“The Messenger of Allah gave a speech unlike anything I heard before. In this speech, he said,

لَو تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا

If you but know what I know, you will laugh little and cry a lot.

The companions of Allah’s Messenger covered their faces and the sound of crying was coming out of their chests.

A man asked, `Who is my father?’

The Prophet said, `So-and-so’.

This Ayah was later revealed,
لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء
(Ask not about things…).”

Muslim, Ahmad, At-Tirmidhi and An-Nasa’i recorded this Hadith.

Ibn Jarir recorded that Qatadah said about Allah’s statement,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُوْكُمْ
(O you who believe! Ask not about things which, if made plain to you, may cause you trouble),

Anas bin Malik narrated that once, the people were questioning the Messenger of Allah until they made him angry. So he ascended the Minbar and said,

لَاا تَسْأَلُونِي الْيَوْمَ عَنْ شَيْءٍ إِلاَّ بَيَّنْتُهُ لَكُم

You will not ask me about anything today but I will explain it to you.

So the Companions of the Messenger of Allah feared that it was the commencement of a momentous event, and I looked to my right and left and found only people who covered their faces, crying.

An argumentative man who was said to be the son of someone other than his true father asked, “O Allah’s Messenger! Who is my father?

The Prophet said, `Your father is Hudhafah.”

Umar stood up (when he saw anger on the Prophet’s face) and said, “We accept Allah as our Lord, Islam as our religion and Muhammad as our Messenger, I seek refuge with Allah from the evil of the Fitan (trials in life and religion).”

The Messenger of Allah said,

لَمْ أَرَ فِي الْخَيْرِ وَالشَّرِّ كَالْيَومِ قَطُّ صُوِّرَتْ لِي الجَنَّةُ وَالنَّارُ حَتَّى رَأَيْتُهُمَا دُونَ الْحَايِط

I have never witnessed both goodness and evil like I have today. Paradise and the Fire were shown to me and I saw them before that wall.

This Hadith was recorded in the Two Sahihs from Sa`id.

Al-Bukhari recorded that Ibn Abbas said,

“Some people used to question the Messenger of Allah to mock him. One of them would ask, `Who is my father,’ while another would ask, `Where is my camel,’ when he lost his camel.

Allah sent down this Ayah about them,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُوْكُمْ
(O you who believe! Ask not about things which, if made plain to you, may cause you trouble…).”

Imam Ahmad recorded that Ali said,

“When this Ayah was revealed,

وَللَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَـعَ إِلَيْهِ سَبِيلً

And Hajj to the House is a duty that mankind owes to Allah, those who can bear the journey. (3:97)

they asked, `O Allah’s Messenger! Is it required every year?’

He did not answer them, and they asked again, `Is it every year?’

He still did not answer them, so they asked, `Is it every year?’

He said,

لَاا وَلَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَوْ وَجَبَتْ لَمَا اسْتَطَعْتُم

No, and had I said `yes’, it would have become obligated, and had it become obligated, you would not be able to bear it.

Allah sent down,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُوْكُمْ
(O you who believe! Ask not about things which, if made plain to you, may cause you trouble).”

At-Tirmidhi and Ibn Majah also recorded this Hadith.

The apparent wording of this Ayah indicates that we are forbidden to ask about things that if one has knowledge of, he would be sorry he had asked. Consequently, it is better to avoid such questions.

Allah’s statement,

وَإِن تَسْأَلُواْ عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْانُ تُبْدَ لَكُمْ

But if you ask about them while the Qur’an is being revealed, they will be made plain to you.

means, if you ask about things that you are prohibited from asking about, then when the revelation about them comes to the Messenger , they will be made plain for you,
وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
(Verily! That is easy for Allah). (64:7)

Allah said next,

عَفَا اللّهُ عَنْهَا

Allah has forgiven that,

what you did before this,

وَاللّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

and Allah is Oft-Forgiving, Most Forbearing.

Do not ask about things that do not have a ruling yet, for because of your questions, a difficult ruling may be ordained.

A Hadith states,

أَعْظَمُ الْمُسْلِمِينَ جُرْمًا مَنْ سَأَلَ عَنْ شَيْءٍ لَمْ يُحَرَّمْ فَحُرِّمَ مِنْ أَجْلِ مَسْأَلَتِه

The worst criminal among the Muslims is he who asks if a matter is unlawful (or not), and it becomes unlawful because of his asking about it.

It is recorded in the Sahih that the Messenger of Allah said,

أَنَّ اللهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَايِضَ فَلَ تُضَيِّعُوهَا وَحَدَّ حُدُودًا فَلَ تَعْتَدُوهَا وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ فَلَ تَنْتَهِكُوهَا وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً بِكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ فَلَ تَسْأَلُوا عَنْهَا

Allah, the Most Honored, has ordained some obligations, so do not ignore them; has set some limits, so do not trespass them; has prohibited some things, so do not commit them; and has left some things without rulings, out of mercy for you, not that He forgot them, so do not ask about them.

Allah said next,

قَدْ سَأَلَهَا قَوْمٌ مِّن قَبْلِكُمْ ثُمَّ أَصْبَحُواْ بِهَا كَافِرِينَ

Before you, a community asked such questions, then on that account they became disbelievers.

meaning, some people before your time asked such questions and they were given answers. They did not believe the answers, so they became disbelievers because of that. This occurred because these rulings were made plain to them, yet they did not benefit at all from that, for they asked about these things not to gain guidance, but only to mock and defy.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

মহান আল্লাহ এরপর বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না যে, যদি তা তোমাদের নিকট প্রকাশ করে দেয়া হয় তবে তোমাদের বিরক্তির কারণ হবে। এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে দ্রতা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে অপকারী ও ক্ষতিকর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কেননা, যদি ঐ বিষয়গুলো প্রকাশ করে দেয়া হয় তবে তারা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হবে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কেউ যেন আমার কাছে কারও কোন সংবাদ নিয়ে না আসে। আমি চাই যে, আমি তোমাদের সামনে বেরিয়ে আসি এবং তোমাদের সম্পর্কে আমার অন্তর সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার থাকে।” সহীহ বুখারীতে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা এমন এক খুতবা দেন যা আমি ওর পূর্বে কখনও শুনিনি। ঐ খুতবায় তিনি বলেনঃ “আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশী ।” একথা শুনে সাহাবীগণ মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করেন। একটি লোক জিজ্ঞেস করেঃ “আমার পিতা কে ছিলেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ অমুক। তখন (আরবী) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাইরে বের হন। সে সময় ক্রোধে তার চেহারা মোবারক রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল। ঐ অবস্থায় তিনি মিম্বরে উপবেশন করেন। একটি লোক দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন- আমার (মৃত) পিতা কোথায় আছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “জাহান্নামে।” আর একটি লোক দাড়িয়ে গিয়ে বলে- আমার পিতা কে? তিনি বলেনঃ “তোমার পিতা হচ্ছে আবূ হুযাফাহ্।” তখন হযরত উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “আমরা এতেই সন্তুষ্ট যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু, ইসলাম আমাদের ধর্ম, মুহাম্মাদ (সঃ) আমাদের নবী এবং কুরআন আমাদের ইমাম। হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সবেমাত্র আমরা অজ্ঞতা ও শিরকের যুগ অতিক্রম করেছি। আমাদের মৃত বাপ-দাদারা কোথায় আছে তা আল্লাহ পাকই ভাল। জানেন।” এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ক্রোধ প্রশমিত হয় এবং সেই সময় (আরবী) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সহীহ বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে (মাঝে মাঝে) কৌতুক করেও এসব কথা জিজ্ঞেস করতো। কেউ বলতোঃ “আমার পিতা কে?” আবার কেউ বলতোঃ “আমার হারানো উটনিটি কোথায় আছে?” তখন তাদেরকে এসব প্রশ্ন করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তা কতই না উত্তম! তা হচ্ছে এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেনঃ “তোমাদের কেউ যেন কারও কোন কথা আমার নিকট না পৌছায়। কারণ আমি তোমাদের সামনে সরলমনা রূপে বের হওয়া পছন্দ করি (অর্থাৎ তোমাদের কোন দোষ আমার কাছে ধরা না পড়ুক এটাই আমি ভালবাসি)।”

(আরবী) অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় যদি তোমরা এমন কিছু জিজ্ঞেস কর যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তবে আল্লাহ ওটা তোমাদের জন্যে বর্ণনা করে দেবেন, তখন তোমরা কি করবে? আর ওটা আল্লাহর নিকট খুবই সহজ। অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন (আরবী) অর্থাৎ পূর্বে তোমাদের দ্বারা যা কিছু সংঘটিত হয়েছে তা তিনি ক্ষমা করে দেবেন। কেননা, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও সহিষ্ণু। কাজেই তোমরা নতুনভাবে কোন কিছু প্রশ্ন করো না। নতুবা ঐ প্রশ্নের উত্তরে তোমাদের উপর কাঠিন্য ও সংকীর্ণতা নেমে আসবে। আবার ওটা হবে নিজের হাতে বিপদ ডেকে আনা। হাদীসে এসেছে যে, মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যার প্রশ্ন করার ফলে একটা হালাল জিনিস হারাম হয়ে গেছে এবং জনগণের উপর সংকীর্ণতা নেমে এসেছে। হ্যাঁ, তবে যদি কুরআনের কোন কথা সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে তোমাদের বোধগম্য না হয় এবং তোমরা তা বুঝবার প্রয়োজনীতা অনুভব কর তাহলে জিজ্ঞেস কর, আমি বর্ণনা করে দেবো। কেননা, হুকুম পালনের জন্যে তোমাদের ওটা জানবার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যদি তার কিতাবে কোনটার উল্লেখ না থাকে তবে সেটা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা ঐ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ না করে নীরব থাক, যেমন তিনি (আল্লাহ) ওটা বর্ণনা না করে নীরব রয়েছেন। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি যা বর্ণনা করিনি তা অবতীর্ণ অবস্থাতেই থাকতে দাও। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতেরা অধিক প্রশ্ন করা ও তাদের নবীদের হুকুমের ব্যাপারে মতানৈক্য সৃষ্টি করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।” সহীহ হাদীসে আরও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যেগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলো অতিক্রম করো না, কতগুলো জিনিস তিনি হারাম করেছেন, সেগুলো হালাল মনে করো না এবং তোমাদের উপর দয়াপরবশ হয়ে কতগুলো বিষয়ে ইচ্ছাপূর্বক তিনি নীরবতা অবলম্বন করেছেন, সুতরাং সেসব বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন উত্থাপন করো না।”

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ নিষেধকৃত মাসআলাগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, তখন তাদেরকে জবাব দেয়া হলে তারা ওগুলোর উপর ঈমান আনেনি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ, তারা হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেনি, বরং বিদ্রুপ ও হঠকারিতা করেই প্রশ্ন করেছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) জনগণের মধ্যে ঘোষণা করেন- “হে আমার কওম! তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করা হয়েছে। তখন বানী আসাদ গোত্রের একটি লোক দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! প্রত্যেক বছরেই কি (হজ্ব করা ফরয করা হয়েছে)। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভীষণ রাগান্বিত হন এবং বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! আমি যদি হ্যা বলি তবে অবশ্যই তা (প্রতি বছরেই) ফরয হয়ে যাবে। আর তা যদি (প্রত্যেক বছরের জন্যেই) ওয়াজিব হয়ে যায় তবে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না এবং কুফরী করবে। সুতরাং আমি তোমাদের জন্যে যা বর্ণনা করতে ছেড়ে দেই তা তোমরা ছেড়ে দাও। যখন আমি তোমাদেরকে কোন কিছু করার আদেশ করি তোমরা তা পালন কর এবং যা করতে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাক।” তখন আল্লাহ তাআলা এ কথার সমর্থনে এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “খ্রীষ্টানরা যেমন সওয়াল করেছিল তোমরা ঐ রূপ সওয়াল করা থেকে বিরত থাক। তারা খাদ্য যা করেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা কুফরী করেছিল, মায়িদাহ বা আকাশ থেকে অবতীর্ণ খাদ্যের মর্যাদা দেয়নি। তোমরা নিজেরা প্রশ্ন না করে স্বয়ং আমার বলে দেয়ার অপেক্ষা কর। তোমাদের প্রশ্ন ছাড়াই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় কুরআনে আয়াত নাযিল হয়ে যাবে।”

হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, তারা মু’জিযার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতো যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে বাগ-বাগিচা ও নদ-নদী যা করতো এবং বলতোঃ “সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়কে আমাদের জন্যে সোনা বানিয়ে দিন।” যেমন ইয়াহুদীরা হযরত মূসা (আঃ)-কে বলেছিল- “হে মূসা (আঃ)! আমাদের উপর আকাশ হতে কিতাব অবতীর্ণ করুন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখনই আমি তাদের চাওয়া অনুযায়ী মু’জিযা পাঠিয়েছি তখন পূর্ববর্তী লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।” (১৭:৫৯) আল্লাহ পাক আরও বলেনঃ “তারা কসম খেয়ে খেয়ে বলে যে, যদি তাদের কাছে মুজিযা এসে যায় তবে অবশ্যই তারা ঈমান আনবে। (হে নবী সঃ) তুমি বলে দাও যে, মু’জিযাসমূহ আল্লাহর কাছেই রয়েছে, তোমরা বুঝছনা যে, মু’জিযা তাদের কাছে আসলেও তারা ঈমান আনবে না।”

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১১৬) কোন কোন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অদ্ভুত ধরনের বিভিন্ন প্রশ্ন করতো। এ প্রশ্নগুলোর সাথে দ্বীনের কোন প্রয়োজন জড়িত থাকতো না এবং দুনিয়ার কোন প্রয়োজনের সাথেও এর সম্পর্ক থাকতো না। যেমন একবার এক ব্যক্তি প্রকাশ্য জন-সমাবেশে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “আমার আসল পিতা কে?” এমনিভাবে অনেক লোক শরীয়াতের বিধানের ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করতো এবং এভাবে অনর্থক জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন সব বিষয় নির্ধারণ করতে চাইতো যা প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ও সঙ্গত কারণেই শরীয়াতের বিধানদাতা নিজেই অনির্ধারিত রেখে দিয়েছেন। যেমন কুরআনে সংক্ষেপে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, হজ্জ তোমাদের ওপর ফরয করা হয়েছে। এক ব্যক্তি এ নির্দেশ শোনার সাথে সাথেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, “এ কি প্রত্যেক বছরে ফরয করা হয়েছে? তিনি এর কোন জবাব দিলেন না? ঐ ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো। তিনি এবারও চুপ করে রইলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেনঃ “তোমাদের প্রতি আফসোস, আমার মুখ থেকে হাঁ শব্দ বের হয়ে গেলে তোমাদের জন্য প্রতি বছর হজ্জ করার ফরয হয়ে যাবে। তখন তোমরাই তা মেনে চলতে পারবে না, ফলে নাফরমানি করতে থাকবে।” এ ধরনের সমস্ত অর্থহীন ও অবান্তর প্রশ্ন করা থেকে এ আয়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

নবী ﷺ নিজেও লোকদেরকে বেশী বেশী প্রশ্ন করতে ও অনর্থক প্রত্যেকটি ব্যাপারের গভীরে প্রবেশ করে ঘাটাঘাটি করতে নিষেধ করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বলা হয়েছেঃ إِنَّ أَعْظَمَ الْمُسْلِمِينَ فِى الْمُسْلِمِينَ جُرْمًا مَنْ سَأَلَ عَنْ أَمْرٍ لَمْ يُحَرَّمْ فَحُرِّمَ عَلَى النَّاسِ مِنْ أَجْلِ مَسْأَلَتِهِ

“মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধী হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে এমন একটি জিনিস সম্পর্কে প্রশ্ন করলো যা লোকদের জন্য হারাম ছিল না, অথচ নিছক তার প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসাবাদের কারণে সে জিনিসটি হারাম গণ্য করা হলো।”

অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ إِنْ اللَّهَ فَرَضَ فَرَائِضَ فَلاَ تُضَيِّعُوهَا وَحَرَّمَ حُرُمَاتٍ فَلاَ تَنْتَهِكُوهَا وَحَدَّ حُدُودًا فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ مِن غَيرِ نِسْيَانٍ فَلاَ تَبْحَثُوا عَنْهَا-

“আল্লাহ তোমাদের ওপর কিছু কাজ ফরয করে দিয়েছেন, সেগুলো ত্যাগ করো না। কিছু জিনিস হারাম করে দিয়েছেন, সেগুলোর ধারে কাছে ঘেঁষো না। কিছু সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলো লংঘন করো না। আবার কিছু জিনিসের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন কিন্তু তা ভুলে যাননি, কাজেই সেগুলোর অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়ো না।”

এ হাদীস দু’টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের সন্ধান দেয়া হয়েছে। শরীয়াতের বিধানদাতা যেসব বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এবং যেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেননি অথবা যে বিধানগুলো সংক্ষেপে দিয়েছেন এবং যেগুলোর পরিমাণ, সংখ্যা বা অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করেননি, সেগুলো সংক্ষেপে বা অবিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার কারণ এ নয় যে, বিধানদাতা সেগুলো বর্ণনা করতে ভুলে গিয়েছেন এবং বিস্তারিত বর্ণনা করার প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা করেননি বরং এর আসল কারণ হচ্ছে এই যে, বিধানদাতা এ বিষয়গুলোর বিস্তারিত রূপ সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ করতে চান না এবং এ বিধানগুলোর মধ্যে মানুষের জন্য প্রশস্ততা ও ব্যাপকতা রাখতে চান। এখন কোন বিষয়ে অযথা প্রশ্নের পর প্রশ্ন উত্থাপন করে তার বিস্তারিত রূপ, নির্দিষ্ট বিষয়াবলী ও সীমাবদ্ধতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে এবং বিধানদাতার বক্তব্য থেকে যদি বিষয়গুলো কোনক্রমে প্রকাশিত না হয়, তাহলে আন্দাজ-অনুমান করে কল্পনা ও উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে কোন না কোন প্রকারে সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত, ব্যাপককে সীমাবদ্ধ এবং অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্ট করেই ক্ষান্ত হয়, তবে সে আসলে মুসলমানদের বিরাট বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। কারণ অতি প্রাকৃতিক বিষয়সমূহ যত বেশী বিস্তারিত আকারে সামনে আসবে ঈমানদারদের জন্য জটিলতা তত বেশী বেড়ে যাবে। আর আল্লাহর নির্দেশ ও বিধানের সাথে যত বেশী শর্ত জড়িত হবে এবং এগুলোকে যত বেশী সীমাবদ্ধ করে দেয়া হবে আনুগত্যকারীদের জন্য নির্দেশ অমান্য করার সম্ভাবনা তত বেশী দেখা দেবে।

টিকা:১১৭) অর্থাৎ প্রথমে তারা নিজেরাই আকীদা বিশ্বাস ও বিধি বিধানের অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এবং এক একটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে নিজেদের জন্য বিস্তারিত অবয়ব ও শর্তাবলীর একটি জাল তৈরী করে। তারপর নিজেরাই সেই জালে জড়িত হয়ে আকীদাগত গোমরাহী ও নাফরমানীতে লিপ্ত হয়। একটি দল বলতে এখানে ইহুদীদের কথা বুঝানো হয়েছে। কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সতর্ক বাণী সত্ত্বেও মুসলমানরা তাদের পদাংক অনুসরণ করে চলার ব্যাপারে যে কোন প্রকার প্রচেষ্টা চালাতে কসূর করেনি।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর বিধি-বিধানে অনাবশ্যক চুলচেরা ঘাটাঘাটি করতে আগ্রহী হয়ে থাকে এবং যেসব বিধান দেয়া হয়নি সেগুলো নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন তুলতে থাকে। আয়াতে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন এরূপ প্রশ্ন না করে, যার ফলশ্রুতিতে তারা কষ্টে পতিত হবে কিংবা গোপন রহস্য ফাঁস হওয়ার কারণে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী ঐ ব্যক্তি যে এমন বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে, যা হারাম করা হয়নি। অতঃপর তার প্রশ্ন করার কারণে তা হারাম করে দেয়া হয়েছে।’ [বুখারীঃ ৭২৮৯, মুসলিমঃ ২৩৫৮]

আলোচ্য আয়াতসমূহের শানে-নুযুল এই যে, যখন হজ ফরয হওয়া সম্পর্কিত আদেশ নাযিল হয়, তখন আকরা ইবন হাবেস রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের জন্য কি প্রতি বছরই হজ করা ফরয? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। প্রশ্নকারী পুনর্বার প্রশ্ন করলেন। তিনি তবুও চুপ। প্রশ্নকারী তৃতীয় বার প্রশ্ন করলে তিনি শাসনের সুরে বললেন, যদি আমি তোমার উত্তরে বলে দিতাম যে, হ্যাঁ প্রতি বছরই হজ্জ ফরয, তবে তাই হয়ে যেত। কিন্তু তুমি এ আদেশ পালন করতে পারতে না। অতঃপর তিনি বললেন, যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে কোন নির্দেশ দেইনা, সেগুলোকে সেভাবেই থাকতে দাও- ঘাটাঘাটি করে প্রশ্ন করো না। তোমাদের পূর্বে কোন কোন উম্মত বেশী প্রশ্ন করে সেগুলোকে ফরয করিয়ে নিয়েছিল এবং পরে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়েছিল। আমি যে কাজের আদেশ দেই, সাধ্যানুযায়ী তা পালন করা এবং যে কাজ নিষেধ করি, তা পরিত্যাগ করাই তোমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। [মুসলিম:১৩৩৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে এক অভূতপূর্ব ভাষণে বললেন, যদি তোমরা জানতে, যা আমি জানি তবে তোমরা অল্প হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ মুখ ঢেকে কান্না আরম্ভ করলেন। তখন এক লোক ডেকে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাবা কে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অমুক। তখন এ আয়াত নাযিল হল।’ [বুখারীঃ ৪৬২১, মুসলিমঃ ২৩৫৯]

অপর আরেক বর্ণনায় এসেছে, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঠাট্টা করে প্রশ্ন করত। কেউ কেউ বলতঃ আমার বাবা কে? কেউ বলতঃ আমার উট হারিয়ে গেছে, তা কোথায় আছে? এসব ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারীঃ ৪৬২২]

[২] বলা হয়েছে, কুরআন অবতরণকালে যদি তোমরা এরূপ প্রশ্ন কর, যাতে কোন বিধান বুঝতে তোমাদের সমস্যা হচ্ছে, তবে ওহীর মাধ্যমে উত্তর এসে যাবে, যা একান্তই সহজ বিষয়। কিন্তু যদি অন্য সময় হয়, তবে তোমাদের উচিত এ ব্যাপারে চুপ থাকা। [সা’দী, ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যখন কুরআন নাযিল হচ্ছে, তখন তোমাদের প্রশ্নের উত্তর আসবেই। কিন্তু তোমরা নিজেরা নতুন করে প্রশ্ন করতে যেও না; কারণ, এতে করে তোমাদের উপর কোন কঠিন বিধান এসে যেতে পারে। [ইবন কাসীর]

এতে ‘কুরআন অবতরণকাল’ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কুরআন অবতরণ সমাপ্ত হলে নবুওয়াত ও ওহীর আগমনও বন্ধ করে দেয়া হবে। নবুওয়াতের আগমন খতম হয়ে যাওয়া ও ওহীর আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের প্রশ্নের ফলে যদিও নতুন কোন বিধান আসবে না এবং যা ফরয নয়, তা ফরয হবে না কিংবা ওহীর মাধ্যমে কারো গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে না, তথাপি অনাবশ্যক প্রশ্ন তৈরী করে সেগুলোর তথ্যানুসন্ধানে ব্যাপৃত হওয়া কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা নবুওয়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধই থাকবে। কেননা, এতে করে নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘মুসলিম হওয়ার একটি সৌন্দর্য এই যে, মুসলিম ব্যক্তি অনর্থক বিষয়াদি পরিত্যাগ করে।’ [তিরমিয়ীঃ ২৩১৭, ইবন মাজাহঃ ৩৯৭৬]

ইসলামের অন্যতম শিক্ষা এই যে, কোন দ্বীনী কিংবা জাগতিক উপকার লক্ষ্য না হলে যে কোন জ্ঞানানুশীলন, কর্ম অথবা কথায় ব্যাপৃত হওয়া উচিত নয়। তবে যদি কোন বিধানের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কোন সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এসে থাকে, তবে সেটার বিস্তারিত জ্ঞান জেনে নেয়ার জন্য প্রশ্ন করা হলে সে ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেয়া হবে। আর যদি কোন বিষয়ে কোন বর্ণনাই না এসে থাকে, তবে সেটার ব্যাপারে নিরবতা পালন করাই হচ্ছে সঠিক নীতি। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যতক্ষণ কোন বিষয় পরিত্যাগ করি ততক্ষণ তোমরা আমাকে ছাড় দাও; কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ তাদের নবীদেরকে বেশী প্রশ্ন এবং বেশী বাদানুবাদের কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’। [মুসলিম: ১৩৩৭] [ইবন কাসীর]

[৩] আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে, এক. আল্লাহ তোমাদের অতীতের প্রশ্নগুলোর কারণে পাকড়াও করা ক্ষমা করেছেন। [জালালাইন] দুই. যে সমস্ত বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করছ আল্লাহ তা’আলা সেগুলোর বর্ণনা করা ছেড়ে দিয়েছেন, যাতে বান্দাদেরকে এর পরিণতি থেকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারেন। [মুয়াসসার]
[৪] অর্থাৎ তারা বিভিন্ন বিধি-বিধান চেয়ে নিয়েছিল। তারপর সেগুলোর উপর আমল করা ত্যাগ করে কুফর করেছিল। [জালালাইন] ফলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। [বাগভী] অথবা তারা বিভিন্ন বিধি-বিধান চেয়ে নিয়েছিল, তারপর সেগুলোকে মানতে অস্বীকার করেছিল, যার কারণে তারা কুফরীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তাই অতিরিক্ত প্রশ্নই তাদের কুফরির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। [কাশশাফ]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] সুতরাং তোমরা যেন উক্ত প্রকার পাপে লিপ্ত হয়ে যেও না। যেমন, একদা রসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। একজন সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, প্রত্যেক বছরেই কি? তিনি নীরব থাকলেন। জিজ্ঞাসক পর পর তিনবার জিজ্ঞাসা করার পর নবী করীম (সাঃ) তার উত্তরে বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলি, তবে অবশ্যই তা (প্রতি বছরেই) ফরয হয়ে যাবে। আর যদি এমনটি হয়েই যায়, তাহলে প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে তোমরা অক্ষম হবে। (মুসলিমঃ হজ্জ অধ্যায় ৪১২নং, আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) এ জন্যেই কোন কোন ভাষ্যকার (عَفَا اللهُ عَنهَا) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, আল্লাহ যে জিনিসের উল্লেখ তার কিতাবে করেননি, সেটা ঐ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এ ব্যাপারে (জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে) নীরব থাক যেমন তিনি তা উল্লেখ করা থেকে নীরব রয়েছেন। (ইবনে কাসীর) এক হাদীসে নবী (সাঃ) এই অর্থকেই এই শব্দে বর্ণনা করেছেন, “তোমাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তোমরা আমাকেও ছেড়ে দাও। (যা তোমাদেরকে কিছু বলা হয়নি, তার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না।) কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ধ্বংসের মূল কারণ ছিল, বেশী বেশী প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতানৈক্যে লিপ্ত হওয়া।” (মুসলিম) (যেমন সূরা বাক্বারায় গাভী যবেহ করার ঘটনায় বানী ইস্রাঈল অনর্থক প্রশ্ন করেছিল।)
[২] সুতরাং তোমরা যেন উক্ত প্রকার পাপে লিপ্ত হয়ে যেও না। যেমন, একদা রসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। একজন সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, প্রত্যেক বছরেই কি? তিনি নীরব থাকলেন। জিজ্ঞাসক পর পর তিনবার জিজ্ঞাসা করার পর নবী করীম (সাঃ) তার উত্তরে বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলি, তবে অবশ্যই তা (প্রতি বছরেই) ফরয হয়ে যাবে। আর যদি এমনটি হয়েই যায়, তাহলে প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে তোমরা অক্ষম হবে। (মুসলিমঃ হজ্জ অধ্যায় ৪১২নং, আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) এ জন্যেই কোন কোন ভাষ্যকার (عَفَا اللهُ عَنهَا) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, আল্লাহ যে জিনিসের উল্লেখ তার কিতাবে করেননি, সেটা ঐ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এ ব্যাপারে (জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে) নীরব থাক যেমন তিনি তা উল্লেখ করা থেকে নীরব রয়েছেন। (ইবনে কাসীর) এক হাদীসে নবী (সাঃ) এই অর্থকেই এই শব্দে বর্ণনা করেছেন, “তোমাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তোমরা আমাকেও ছেড়ে দাও। (যা তোমাদেরকে কিছু বলা হয়নি, তার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না।) কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ধ্বংসের মূল কারণ ছিল, বেশী বেশী প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতানৈক্যে লিপ্ত হওয়া।” (মুসলিম) (যেমন সূরা বাক্বারায় গাভী যবেহ করার ঘটনায় বানী ইস্রাঈল অনর্থক প্রশ্ন করেছিল।)

Leave a Reply