أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢١٩)-৪২১
www.motaher21.net
عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ
তোমাদের উপর তোমাদের নিজদের দায়িত্ব।
One is Required to Reform Himself First
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-১০৫
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর তোমাদের নিজদের দায়িত্ব। যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; তখন তিনি তোমরা যা আমল করতে তা তোমাদের জানিয়ে দেবেন।
১০৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে নিজেদের সংশোধন করে নেয়া ও কল্যাণকর কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নিয়েছে এবং ভাল কাজে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, পথভ্রষ্টরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তারা নিকটবর্তী হোক বা দূরবর্তী হোক।
অনেকে এ আয়াত দ্বারা মনে করে নিজেরাই সংশোধন হয়ে ভাল কাজ করলেই হবে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দেয়ার প্রয়োজন নেই। এরূপ ধারণা ভুল। কারণ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। এ ফরয ত্যাগ করলে অচিরেই আযাব আসতে পারে। আবূ বাকর (রাঃ)-এ আয়াতের মর্মার্থ যখন অবগত হলেন তখন তিনি বললেন: হে মানব সকল! তোমরা আয়াতকে ভুল জায়গায় ব্যবহার করছ। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি “লোকেরা যখন কাউকে কোন পাপ কাজে লিপ্ত দেখে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে না তখন সম্ভবত আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই আযাব দ্বারা পাকড়াও করবেন। (আহমাদ, তিরযিমী হা: ২১৭৮, আবূ দাঊদ হা: ৪৩৩৮, সহীহ ) সুতরাং আয়াতের সঠিক ভাবার্থ হল: অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বুঝানো সত্ত্বেও যদি তারা খারাপ কাজ থেকে বিরত না থাকে এবং সৎ পথ অবলম্বন না করে তাহলে এ অবস্থায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না। তোমরা সৎ পথে আছ এবং পাপ হতে বিরত রয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সর্ব প্রথম নিজেদেরকে সংশোধন করে নিয়ে সৎ পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
২. সৎ পথে আহ্বান করতে হবে অসৎ পথ হতে বাধা দিতে হবে।
৩. দাওয়াত দেয়ার পর কেউ সৎ পথ অবলম্বন না করলে তার জন্য চিন্তার কারণ নেই।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 105
عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ
One is Required to Reform Himself First
One is Required to Reform Himself First
Allah says;
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ إِلَى اللّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّيُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
O you who believe! Take care of yourselves. If you follow the right guidance, no hurt can come to you from those who are in error. The return of you all is to Allah, then He will inform you about (all) that you used to do.
Allah commands His believing servants to reform themselves and to do as many righteous deeds as possible. He also informs them that whoever reforms himself, he would not be affected by the wickedness of the wicked, whether they were his relatives or otherwise.
Imam Ahmad recorded that Qays said,
“Abu Bakr As-Siddiq stood up, thanked Allah and praised Him and then said, `O people! You read this Ayah,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ
(O you who believe! Take care of yourselves. If you follow the right guidance, no hurt can come to you from those who are in error).
You explain it the wrong way. I heard the Messenger of Allah say,
إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ وَلَا يُغَيِّرُونَهُ يُوشِكُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَعُمَّهُمْ بِعِقَابِه
If the people witness evil and do not change it, then Allah is about to send His punishment to encompass them.
I (Qays) also heard Abu Bakr say,
`O people! Beware of lying, for lying contradicts faith.”
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
(আরবী) আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় এবং সকার্য সম্পাদনে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। আর তিনি তাদেরকে এ সংবাদও দিচ্ছেন যে, যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, দুনিয়ার নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবাই ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হলেও তাদের কোনই ক্ষতি হবে না। এ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যখন বান্দা হারাম ও হালালের ব্যাপারে আমার নির্দেশ মেনে চলবে তখন যে যতই পথভ্রষ্ট হয়ে যাক না কেন তার কোনই ক্ষতি হবে না। তোমাদের সকলকেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃত ভাল ও মন্দ সম্পর্কে অবহিত করবেন। যার কাজ ভাল হবে তাকে ভাল বিনিময় প্রদান করা হবে এবং যার কাজ মন্দ হবে তাকে মন্দ বিনিময় দেয়া হবে। এ আয়াত দ্বারা এ দলীল গ্রহণ করা যেতে পারে না যে, ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করণ জরুরী নয়। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) একদা দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করার পর বলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা এ আয়াতটি পাঠ কর বটে, কিন্তু ওটাকে ওর নিজ স্থানে রাখছে না। আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে বলতে শুনেছি-‘মানুষ যখন কোন পাপের কাজ দেখে, অতঃপর ওর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করতঃ তার মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার না হয়, তখন হতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ সাধারণভাবে শাস্তি আনয়ন করবেন (সবাই সেই শাস্তির শিকার হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), আসহাবুস সুনান এবং ইবনে মাজা (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ইমাম তিরমিযী (রঃ) আবূ উমাইয়া শাবানী (রঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি আবু সা’লাবা খুশানী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এ আয়াতের কি ভাবার্থ গ্রহণ করে থাকেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ কোন আয়াত? আমি বললাম, (আরবী) এ আয়াতটি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! এ সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিকেই আপনি জিজ্ঞেস করেছেন। আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “তোমরা নিজ নিজ পাগড়ি সামলিয়ে নেয়ার পর নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থেকো না। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করণের কাজ অব্যাহত রাখো। তোমাদেরকে এ কাজ ঐ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে যে পর্যন্ত মানুষ সংকীর্ণমনা ও নিরুৎসাহী থাকে, যাকাত প্রদান না করে, কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়, প্রত্যেকে নিজ নিজ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং কোন উপদেষ্টার উপদেশবাণী শ্রবণ না করে। যখন অবস্থা এরূপ হবে, এ সময় তাদের থেকে পৃথক থাকবে। তাদেরকে তাদের নিজেদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেবে। তোমাদের পরেই এমন এক যুগ আসবে যে, তাতে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ব্যক্তি হাতে আগুন ধরে রাখার মত বিপদে পতিত হবে। ঐ সময় যে ব্যক্তি শুধু নিজেই ভাল কাজ করবে সে পঞ্চাশজন লোকের নেক আমলের সমান পুণ্য লাভ করবে। জিজ্ঞেস করা। হলোঃ আমাদের পঞ্চাশজন লোকের, না সেই দলের পঞ্চাশজন লোকের? তিনি উত্তরে বললেনঃ “না, না বরং তোমাদের মধ্যকার পঞ্চাশজন লোকের পুণ্যের সমান (সে পুণ্য লাভ করবে)।
ইমাম রাযী (রঃ) আবুল আলিয়া (রঃ) ও হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর মাধ্যমে (আরবী) -এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট লোকেরা বসেছিল, এমন সময় কোন দুটি লোকের মধ্যে ঝগড়া বাধে। তখন উপস্থিত জনতার মধ্য হতে একটি লোক বলেঃ আমি উঠে গিয়ে এদের দুজনের মধ্যে (একটা সমঝোতা করে দেয়ার মানসে) ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করার ব্রত পালন করবো। তার এ কথা শুনে তার পার্শ্ববর্তী একটি লোক বললোঃ তুমি স্ব-স্থানে বসে থাক। কেননা, আল্লাহ তা’আলা (আরবী) বলেছেন। তার একথা শুনে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তাকে বাধা দিয়ো না। এ আয়াতের উপর আমল করার স্থান এটা নয়। কুরআন যখন অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ছিল তখন অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআনের কতগুলো আয়াত এমন রয়েছে, যেগুলোর তাবীল আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর যুগে হয়ে গেছে। আর কতগুলো আয়াতের তাবীল কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিন কার্যকরী হবে। যতদিন পর্যন্ত তোমাদের মন ও অনুভূতি এক থাকবে, তোমাদের মধ্যে ভাঙ্গন না ধরবে, তোমরা একে অপরের ক্ষতি সাধন করা থেকে বিরত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে হবে। কিন্তু যখন তোমাদের মন বিগড়ে যাবে, তোমাদের একতায় ভাঙ্গন ধরবে এবং তোমরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়ে যাবে, তখন তোমরা জনগণ থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক থাকবে।” এ আয়াতের এ তাফসীরই বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে জারীর (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। ইবনে জারীর (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসান (রঃ) এ আয়াতটি পাঠ করার পর বলেনঃ ‘আল্লাহর জন্যে সমুদয় প্রশংসা যে, অতীত যুগেও মুনাফিক ছিল এবং বর্তমান যুগেও মুনাফিক রয়েছে, কিন্তু মুসলমানরা মুনাফিকদের কাজকে সদা খারাপ মনে করে থাকে।’ হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) বলেনঃ “যখন তুমি ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে তখন তুমি হিদায়াতের পথে রয়েছে বলে পথভ্রষ্ট লোকদের পথভ্রষ্টতা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।”
তফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১১৯) অর্থাৎ অমুক কি করছে, অমুকের আকীদার মধ্যে কি গলদ আছে এবং অমুকের কাজে কোন কোন ধরনের দোষ-ত্রুটি আছে, সবসময় এসব দেখার পরিবর্তে মানুষের দেখা উচিত, সে নিজে কি করছে। তার নিজের চিন্তাধারার এবং নিজের চরিত্র ও কার্যাবলীর কথা চিন্তা করা উচিত সেগুলো যেন খারাপ ও বরবাদ না হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি নিজে যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে থাকে, তার ওপর আল্লাহ ও বান্দার যেসব অধিকার আরোপিত হয় সেগুলো আদায় করতে থাকে এবং সততা ও সঠিক পথ অবলম্বন করার দাবী পূর্ণ করে যেতে থাকে এবং এই সঙ্গে সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখা তার কর্মসূচীর অপরিহার্য অংশরূপে বিবেচিত হতে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে অন্য কোন ব্যক্তির গোমরাহী ও বক্র পথে চলা তার জন্য কোন ক্ষতির কারণ হতে পারে না।
তাই বলে মানুষ কেবলমাত্র নিজের নাজাত ও মুক্তির কথা ভাববে, অন্যের সংশোধন করার কথা ভাববে না, এটা নিশ্চয়ই এ আয়াতের উদ্দেশ্য নয়। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে এক ভাষণে বলেনঃ “হে লোকেরা! তোমরা এ আয়াতটি পড়ে থাকো এবং এর ভুল ব্যাখ্যা করে থাকো। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি, যখন লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, তারা অসৎকাজ দেখবে কিন্তু তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে না, জালেমকে জুলুম করতে দেখবে কিন্তু তার হাত টেনে ধরবে না তখন অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাঁর আযাব সকলের ওপর চাপিয়ে দেবেন। আল্লাহর কসম! তোমরা লোকদেরকে ভাল কাজ করার হুকুম দাও এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখো, নয়তো আল্লাহ তোমাদের ওপর এমন সব লোককে চাপিয়ে দেবেন যারা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং তারা তোমাদেরকে ভীষণ কষ্ট দেবে। তখন তোমাদের সৎলোকেরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে কিন্তু তা কবুল হবে না।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতের বাহ্যিক শব্দের দ্বারা বোঝা যায় যে, প্রতিটি মানুষের পক্ষে নিজের ও কর্ম সংশোধনের চিন্তা করাই যথেষ্ট। অন্যরা যা ইচ্ছা করুক, সেদিকে ভ্রক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। অথচ এ বিষয়টি কুরআনের যে সব আয়াতে ‘সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’ করাকে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এবং মুসলিম জাতির একটি স্বাতন্ত্র্যমূলক বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার পরিপন্থি হয়ে যায়। এ কারণেই আয়াতটি নাযিল হলে কিছু লোকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সামনে প্রশ্ন রাখেন এবং তিনি উত্তরে বলেন যে, আয়াতটি ‘সৎকাজে আদেশ দান’-এর পরিপন্থী নয়। তোমরা যদি সৎকাজে আদেশ দান’ পরিত্যাগ কর, তবে অপরাধীদের সাথে তোমাদেরকেও পাকড়াও করা হবে। [ইবন কাসীর; সাদী] আবুবকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ভাষণে বলেন, তোমরা আয়াতটি পাঠ করে একে অস্থানে প্রয়োগ করছ। জেনে রাখ, আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে শুনেছিঃ যারা কোন পাপকাজ হতে দেখেও তা দমন করতে চেষ্টা করে না, আল্লাহ তা’আলা সত্ত্বরই হয় তো তাদেরকেও অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করে আযাবে নিক্ষেপ করবেন। [আবু দাউদঃ ৪৩৪১, তিরমিযীঃ ৩০৫৮, ইবন মাজাহঃ ৪০১৪] তাই মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, তোমরা স্বীয় কর্তব্য পালন করতে থাক। সৎকাজে আদেশ দান’ও এ কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো করার পরও যদি কেউ পথভ্রষ্ট থেকে যায়, তবে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। [সা‘দী] কুরআনের (اِذَا اهْتَدَيْتُمْ) শব্দে চিন্তা করলে এ তাফসীরের যথার্থতা ফুটে উঠে। কেননা, এর অর্থ এই যে, যখন তোমরা সঠিক পথে চলতে থাকবে, তখন অন্যের পথ ভ্রষ্টতা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এখন একথা সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি সৎকাজে আদেশ দান’-এর কর্তব্যটি বর্জন করে, সে সঠিক পথে চলমান নয়। সা’য়ীদ ইবন মুসাইয়্যাব বলেন, এর অর্থ, যদি সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ কর, তাহলে কেউ পথভ্রষ্ট হলে, তাতে তোমার ক্ষতি নেই, যখন তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত হলে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] কিছু লোকের মনে বাহ্যিক এই শব্দাবলীর কারণে সংশয়ের সৃষ্টি হয় যে, নিজেকে সংশোধন করে নেওয়াই যথেষ্ট। আর সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ ধরনের ধারণা সঠিক নয়, তার কারণ হচ্ছে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফরয বিষয়। যদি একজন মুসলিম এই ফরয ত্যাগ করে, তাহলে পথভোলাকে কে পথ দেখাবে? (এই কাজ ত্যাগ করলে কেউ কি সৎপথে থাকতে পারে?) অথচ কুরআন শর্তারোপ করেছে যে, যদি তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও তবে। এই আয়াতের মর্মার্থ সম্পর্কে যখন আবু বাকর (রাঃ) অবগত হলেন, তখন তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আয়াতকে ভুল জায়গায় ব্যবহার করছ। আমি তো রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, “লোকেরা যখন কাউকে কোন পাপ কাজে লিপ্ত দেখে এবং পরিবর্তন করার পরিকল্পনা বা চেষ্টা না করে, সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদেরকে অচিরেই আযাব দ্বারা গ্রেফতার করবেন।” (আহমাদ, তিরমিযী ২১৭৮, আবু দাউদ ৪৩৩৮নং) সুতরাং আয়াতের সঠিক ভাবার্থ এই যে, তোমাদের বুঝানো সত্ত্বেও যদি তারা পাপ থেকে বিরত না থাকে এবং সৎপথ অবলম্বন না করে, তাহলে এই অবস্থায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না; বরং তোমরা সৎপথে আছ এবং পাপ করা হতে বিরত আছ। অবশ্য একটি অবস্থায় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ, যদি কেউ সে কাজে নিজের মধ্যে দুর্বলতা পায় এবং জীবননাশের আশঙ্কা থাকে, তাহলে এই অবস্থায় “তাতে যদি সক্ষম না হয়, তাহলে হৃদয় দ্বারা; আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক” হাদীসের ভিত্তিতে অনুমতি আছে। উক্ত আয়াতও এই অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত বহন করতে পারে।