أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٥٤)-৪৫৬
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১০৬-১০৭ নং আয়াত:-
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে যে অহী নাযিল হয়েছে, তুমি তারই অনুসরণ করে চল, what has been inspired to you from your Lord,
اِتَّبِعۡ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ ۚ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ﴿۱۰۶﴾
তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে যে অহী নাযিল হয়েছে, তুমি তারই অনুসরণ করে চল, তিনি ছাড়া অন্য কেহই মা‘বূদ নেই, আর অংশীবাদীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ مَاۤ اَشۡرَکُوۡا ؕ وَ مَا جَعَلۡنٰکَ عَلَیۡہِمۡ حَفِیۡظًا ۚ وَ مَاۤ اَنۡتَ عَلَیۡہِمۡ بِوَکِیۡلٍ ﴿۱۰۷﴾
আর আল্লাহর যদি অভিপ্রায় হত তাহলে এরা শির্ক করতনা; আর আমি তোমাকে এদের রক্ষক নিযুক্ত করিনি এবং তুমি তাদের উপর ক্ষমতাপ্রাপ্ত নও।
১০৬-১০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর প্রতি যা ওয়াহী করা হয়েছে তার অনুসরণের নির্দেশ দিচ্ছেন, সাথে সাথে মুশরিকদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদেরও আদেশ দিচ্ছেন। মূলতঃ এর মাধ্যমে সকল মু’মিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা বড়দেরকে সম্বোধন করে ছোটদেরকে শিক্ষা দেয়ার মত। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِتَّبِعُوْا مَآ اُنْزِلَ اِلَیْکُمْ مِّنْ رَّبِّکُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اَوْلِیَا۬ئَﺚ قَلِیْلًا مَّا تَذَکَّرُوْنَ)
তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাঁকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ কর না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ‘রাফ ৭:৩)
(وَلَوْ شَا۬ءَ اللّٰهُ مَآ أَشْرَكُوْا)
‘আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তবে তারা শির্ক করত না’ অর্থাৎ যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা না করতেন তাহলে তারা শির্ক করত না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা জানেন তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করার কারণে ও তাদেরকে স্বাধীনতা দেয়ার কারণে তাদের কার্যকলাপ এরূপই হবে। যার কারণে তারা শির্কে লিপ্ত হয়েছে। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১৪১)
আল্লামা আবদুর রহমান আস্সা‘দী (রহঃ) বলেন, এখানে ঈমান শব্দটি উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যদি তাদের ঈমান চাইতেন তাহলে তারা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শির্ক করতে পারত না। যদি তারা ঈমান বেছে নিত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিদায়াত দিতেন, কিন্তু তারা শির্ক বেছে নিয়েছে ফলে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় শির্কে লিপ্ত হয়েছে। (তাফসীর সা‘দী পৃঃ ২৬৩)
এখানে জানা জরুরী যে, আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা (مشيئة الله) দু’ প্রকার:
১. إرادة كونية
অর্থাৎ জাগতিক বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা। এতে আল্লাহ তা‘আলা যা ভালবাসেন আর যা ভালবাসেন না সবই শামিল।
এর উদাহরণ এ আয়াত, কেউ আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করুক এটা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন না এবং তিনি এর নির্দেশও দেননি। কিন্তু কেউ শির্কে লিপ্ত হলে তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীতে কিছুই হয় না। তবে আল্লাহ তা‘আলা এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন, এরপরও করেছে তাই সে শাস্তি পাবে।
২. إرادة شرعية
শরীয়তের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা। এতে তা অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন এবং পালনের জন্য নির্দেশ দেন। (আক্বীদাহ ওয়াসিতিয়া, পৃঃ ১৪০, দারুল আক্বীদাহ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার অবতীর্ণ করা ওয়াহীর অনুসরণ সকলের জন্য ওয়াজিব। অন্য কোন তরিকা, মাযহাব বা ব্যক্তির তৈরি রীতি-নীতি নয়। সুতরাং সবকিছু বর্জন করে ওয়াহী তথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের পথে আসা সকলের জন্য একান্ত কর্তব্য।
২. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন- এ সিফাত বা গুণের প্রমাণ পাওয়া গেল।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 106-107
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
Follow what has been inspired to you from your Lord,
The Command to Follow the Revelation
Allah commands His Messenger and those who followed his path,
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
Follow what has been inspired to you from your Lord,
meaning, follow it, obey it and act according to it. What has been revealed to you from your Lord is the Truth, no doubt, and there is no deity worthy of worship except Him,
لاا إِلَـهَ إِلااَّ هُوَ
none has the right to be worshipped but He,
وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
and turn aside from the idolators.
meaning, forgive them, be forbearing and endure their harm until Allah brings relief to you, supports you and makes you triumphant over them. Know — O Muhammad — that there is a wisdom behind misleading the idolators, and that had Allah willed, He would have directed all people to guidance
وَلَوْ شَاء اللّهُ مَا أَشْرَكُواْ
Had Allah willed, they would not have taken others besides Him in worship.
Allah’s is the perfect will and wisdom in all decrees and decisions, and He is never questioned about what He does, while they all will be questioned.
Allah’s statement,
وَمَا جَعَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
And We have not made you Hafiz over them.
means, a watcher who observes their statements and deeds,
وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ
Nor are you set over them to dispose of their affairs.
or to control their provision. Rather, your only job is to convey, just as Allah said,
فَذَكِّرْ إِنَّمَأ أَنتَ مُذَكِّرٌَّسْتَ عَلَيْهِم بِمُسَيْطِرٍ
So remind them, you are only one who reminds. You are not a dictator over them. (88:21-22)
and,
فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَـغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ
Your duty is only to convey and on Us is the reckoning. (13:40)
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১০৬-১০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিচ্ছেন- তোমরা অহীরই অনুসরণ কর এবং ওর উপরই আমল কর। কেননা, এটাই সত্য এবং এতে কোন ভেজাল বা মিশ্রণ নেই। আর তোমরা এই মুশরিকদেরকে এড়িয়ে চল, তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তারা যে কষ্ট দিচ্ছে তা সহ্য করে নাও যে পর্যন্ত তোমাদেরকে আল্লাহ তাদের উপর জয়যুক্ত ও সফলকাম করেন। জেনে রেখো যে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার মধ্যে আল্লাহর নৈপুণ্য নিহিত রয়েছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তো সারা দুনিয়াবাসীই হিদায়াত লাভ করতো এবং মুশরিকরা শিরকই করতো না। এর মধ্যে মহান আল্লাহর বিশেষ নিপুণতা রয়েছে। তিনি যা কিছু করেন তাতে কোন প্রতিবাদ করো না। তবে হ্যাঁ, তিনি সবারই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিচার করতে সক্ষম। হে নবী (সঃ)! আমি তোমাকে তাদের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করিনি। তাদের মনে যা আসে তাই তাদেরকে বলতে ও করতে দাও। আমি তোমার উপর দেখা শোনার ভার অর্পণ করিনি। তুমি তাদেরকে আহার্যও প্রদান কর না। তোমার কাজ তো শুধু প্রচার করা। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তুমি শুধুমাত্র উপদেশ দিতে থাক, তুমি তো একজন উপদেষ্টা মাত্র। তুমি তাদের উপর দায়গ্রস্ত অধিকারী নও।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “তোমার কাজ শুধু পৌছিয়ে দেয়া, আর হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৭১) এর অর্থ হচ্ছে, তোমাকে আহবায়ক ও প্রচারকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কোতায়ালের দায়িত্ব নয়। লোকদের সামনে এ আলোকবর্তিকাটি তুলে ধরা এবং সত্যের পূর্ণ প্রকাশের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ত্রুটি না রাখাই তোমার কাজ। এখন কেউ এ সত্যটি গ্রহণ না করতে চাইলে না করুক। লোকদেরকে সত্যপন্থী বানিয়েই ছাড়তে হবে, এ দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয়নি। তোমাদের নবুওয়াতের প্রভাবাধীন এলাকার মধ্যে মিথ্যার অনুসারী কোন এক ব্যক্তিও থাকতে পারবে না, একথাটিকে তোমার দায়িত্ব ও জবাবদিহির অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কাজেই অন্ধদেরকে কিভাবে চক্ষুষ্মান করা যায় এবং যারা চোখ খুলে দেখতে চায় না তাদেরকে কিভাবে দেখানো যায়-এ চিন্তায় তুমি খামখা নিজের মন মস্তিস্ককে পেরেশান করো না। দুনিয়ায় একজনও বাতিলপন্থী থাকতে না দেয়াটাই যদি যথার্থই আল্লাহর উদ্দেশ্য হতো তাহলে এ কাজটি তোমাদের মাধ্যমে করাবার আল্লাহর কি প্রয়োজন ছিল? তাঁর একটি মাত্র প্রাকৃতিক ইঙ্গিতেই কি দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে সত্যপন্থী করার জন্য যথেষ্ট ছিল না? কিন্তু সেখানে এটা আদতে উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্তই নয়। সেখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের জন্য সত্য ও মিথ্যার মধ্য থেকে কোন একটিকে বাছাই করে নেবার স্বাধীনতা বজায় রাখা, তারপর সত্যের আলো তার সামনে তুলে ধরে উভয়ের মধ্য থেকে কোনটিকে সে গ্রহণ করে তা পরীক্ষা করা। কাজেই যে আলো তোমাকে দেখানো হয়েছে তার উজ্জ্বল আভায় তুমি নিজে সত্য-সরল পথে চলতে থাকো এবং অন্যদেরকে সে পথে চলার জন্য আহবান জানাও। এটিই হচ্ছে তোমার জন্য সঠিক কর্মপদ্ধতি। যারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরো এবং দুনিয়ার দৃষ্টিতে তারা যতই নগণ্য হোক না কেন তাদেরকে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন করো না। আর যারা এ দাওয়াত গ্রহণ করেনি তাদের পেছনে লেগে থেকো না। তারা যে অশুভ পরিণামের দিকে নিজেরাই চলে যেতে চায় এবং যাবার জন্য অতিমাত্রায় উদগ্রীব, সেদিকে তাদেরকে যেতে চাও।