أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٦١)-৪৬৩
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১১৮-১১৯ নং আয়াত:-
فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ
অতএব যে জীবকে আল্লাহর নাম নিয়ে যবাহ করা হয়েছে তা তোমরা আহার কর,
So eat of that on which Allah’s Name has been mentioned,
فَکُلُوۡا مِمَّا ذُکِرَ اسۡمُ اللّٰہِ عَلَیۡہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ بِاٰیٰتِہٖ مُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۸﴾
অতএব যে জীবকে আল্লাহর নাম নিয়ে যবাহ করা হয়েছে তা তোমরা আহার কর, যদি তোমরা আল্লাহর বিধানের প্রতি ঈমান রাখ।
وَ مَا لَکُمۡ اَلَّا تَاۡکُلُوۡا مِمَّا ذُکِرَ اسۡمُ اللّٰہِ عَلَیۡہِ وَ قَدۡ فَصَّلَ لَکُمۡ مَّا حَرَّمَ عَلَیۡکُمۡ اِلَّا مَا اضۡطُرِرۡتُمۡ اِلَیۡہِ ؕ وَ اِنَّ کَثِیۡرًا لَّیُضِلُّوۡنَ بِاَہۡوَآئِہِمۡ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُعۡتَدِیۡنَ ﴿۱۱۹﴾
যে জন্তুর উপর যবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে, তা আহার না করার তোমাদের কাছে কি কারণ থাকতে পারে? অথচ আল্লাহ তোমাদের উপর যা কিছু হারাম করেছেন তা তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, তবে নিরূপায় অবস্থায় তোমরা উক্ত হারাম বস্তুও আহার করতে পার, নিঃসন্দেহে কোন দীনী জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ইচ্ছা, বাসনা ও ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে অনেকে বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে, নিশ্চয়ই তোমার রাব্ব সীমা লংঘনকারীদের সম্পর্কে ভালভাবেই ওয়াকিফহাল।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
১১৮-১১৯ নং আয়াতের শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কিছু মানুষ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল। অতঃপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা যা হত্যা করি তা খাব আর আল্লাহ তা‘আলা যা হত্যা করেন তা খাব না? তখন
(فكلوا مما ذكر…….لمشركون)
নাযিল হয়। (তিরমিযী, হা: ৩০৬৯, সহীহ।)
ইবনু আব্বাস থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে: (শয়তানরা) বলে: আল্লাহ তা‘আলা যা জবাই করে দেন তা খাও না আর নিজেরা যা জবাই কর কেবল তা খাও? তখন
(وَإِنَّ الشَّيٰطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلٰٓي أَوْلِيَآئِهِمْ)
নাযিল হয়। (নাসাঈ হা: ৪৪৩৭, সনদ সহীহ)
(فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ)
‘তোমরা তাঁর নিদর্শনে বিশ্বাসী হলে যা আল্লাহর নাম নিয়ে (জবেহ করা) হয়েছে তা হতে খাও।’যেসব জন্তু আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে জবেহ করা হয় তা খাওয়া মুসলিমদের জন্য তিনি বৈধ করে দিয়েছেন। আর যা জবেহ করার সময় তাঁর নাম নেয়া হয়নি তা হারাম করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا تَأْكُلُوْا مِمَّا لَمْ يَذْكُرِ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ)
‘যাতে আল্লাহর নাম নিয়ে (জবেহ করা) হয়নি তার কিছুই তোমরা খেও না।’
তাই কোন শিকার ধরে নিয়ে আসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণী প্রেরণ করলে অবশ্যই ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পাঠাতে হবে। আর যদি এমন এলাকা থেকে কোন জবেহকৃত প্রাণী বা গোশত আসে যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়েছে কি না তা জানা যায়নি, তা হলে ‘বিসমিল্লাহ’বলে খাওয়া বৈধ হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫০৭)
যা হারাম তা আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করে দিয়েছেন। তবে কেউ নিরুপায় হয়ে হারাম খেতে বাধ্য হলে তাও তার জন্য জায়েয রয়েছে। এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
যা আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে জবেহ করা হবে কেবল তা-ই খাওয়া মুসলিমদের জন্য বৈধ।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 118-119
فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ
So eat of that on which Allah’s Name has been mentioned,
Allowing What was Slaughtered in the Name of Allah
Allah says;
فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ بِأيَاتِهِ مُوْمِنِينَ
So eat of that on which Allah’s Name has been mentioned, if you are believers in His Ayat.
This is a statement of permission from Allah, for His servants, allowing them to eat the slaughtered animals wherein His Name was mentioned when slaughtering them. It is understood from it that He has not allowed that over which Allah’s Name was not mentioned when slaughtering. This was the practice of the pagans of Quraysh who used to eat dead animals and eat what was slaughtered for the idols.
Allah next encourages eating from the meat of sacrificed animals on which His Name was mentioned upon slaughtering.
وَمَا لَكُمْ أَلاَّ تَأْكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ
And why should you not eat of that on which Allah’s Name has been mentioned, while He has explained to you what is forbidden to you…
meaning, He has explained and made clear to you what He has prohibited for you in detail,
إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ
except under compulsion of necessity.
In which case, you are allowed to eat whatever you can find.
Allah next mentions the ignorance of the idolators in their misguided ideas, such as eating dead animals and what was sacrificed while other than Allah’s Name was mentioned when slaughtering them.
Allah said,
وَإِنَّ كَثِيرًا لَّيُضِلُّونَ بِأَهْوَايِهِم بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِينَ
And surely, many do lead astray by their own desires through lack of knowledge. Certainly your Lord knows best the transgressors.
He has complete knowledge of their transgression, lies and inventions.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১১৮-১১৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মুমিন বান্দারদেরকে অনুমতি দিচ্ছেন যে, কোন জীবকে যবাই করার সময় বিসমিল্লাহ বলা হলে তারা সেই জীবের গোশত খেতে পারে। অর্থাৎ যে জন্তুকে আল্লাহর নাম না নিয়ে যবাই করা হয় তা হারাম। যেমন কাফির কুরায়শরা মৃত জন্তুকে ভক্ষণ করতো এবং যে জন্তুগুলোকে মূর্তি ইত্যাদির নামে যবাই করা হতো সেগুলোকেও খেতো। মহান আল্লাহ বলেন, যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাবে না কেন? তিনি তো হারাম জিনিসগুলো তোমাদের জন্যে বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ ফাস্সালা অর্থাৎ তাশদীদসহ পড়েছেন এবং কেউ কেউ ফাসালা অর্থাৎ তাখফীফসহ পড়েছেন। দু’টোরই অর্থ হচ্ছে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা। আল্লাহ পাক বলেনঃ তবে হ্যা, অত্যন্ত নিরুপায় অবস্থায় পতিত হলে সবকিছুই তোমাদের জন্যে হালাল।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মতবাদের উল্লেখ করে বলেনঃ তারা কিভাবে নিজেদের জন্যে এবং গায়রুল্লাহর নামে যবাইকৃত জন্তুকে হালাল করে নিয়েছে! তাদের অধিকাংশই অজ্ঞতার কারণে স্বীয় কুপ্রবৃত্তির পিছনে পড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ ঐ সব সীমা অতিক্রমকারীকে ভালরূপেই অবগত আছেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ কোনটি হারাম আর কোনটি হালাল তার বিশদ বিবরণ আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত , আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ্ করা পশু, গলা চিপে মারা যাওয়া জন্তু, প্রহারে মারা যাওয়া জন্তু, উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া জন্তু , অন্য প্রাণীর শিং এর আঘাতে মারা যাওয়া জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা যবেহ্ করতে পেরেছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দিয়ে ভাগ নির্ণয় করা, এসব পাপ কাজ। …অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-মায়িদাহ ৩] তবে সূরা আল মায়িদার এ আয়াতটি মদীনায় আবতীর্ণ হয়েছে। পক্ষান্তরে সূরা আল-আন’আমের এ আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সে জন্য কুরতুবী বলেন, এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন বলে ‘বিস্তারিত বর্ণনা করবেন’ বুঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] তাছাড়া এ সূরাতেই ১৪৫ নং আয়াতে হারাম বস্তুসমূহের কিছু বর্ণনা এসেছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ]
[২] অর্থাৎ উপরোক্ত হারামকৃত বস্তুসমূহও তোমাদের অপারগ অবস্থায় খাওয়ার অনুমতি রয়েছে। যেমন কেউ ক্ষুধায় কাতর হয়ে হালাল বস্তু না পেলে নিরুপায় অবস্থায় তার জন্য মৃত বস্তুও খাওয়ার বিধান দেয়া হয়েছে। [ সাদী, আত-তাফসীরুস সহীহ]
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৮৪) দুনিয়ার বেশীর ভাগ মানুষ নিজেদের ধারণা, কল্পনা ও আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে যেসব ভুল কর্মপন্থা অবলম্বন করেছে এবং যেগুলো ধর্মীয় বিধি-নিষেধের পর্যায়ভুক্ত হয়ে গেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে পানাহার সামগ্রী সম্পর্কিত। বিভিন্ন জাতির মধ্যে এ জাতীয় বিধি-নিষেধের প্রচলন রয়েছে। অনেক জিনিসকে লোকেরা নিজেরাই হালাল গণ্য করেছে। অথচ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সেগুলো হারাম। আবার অনেক জিনিসকে লোকেরা নিজেরাই হারাম করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ সেগুলো হালাল করে দিয়েছেন। বিশেষ করে আল্লাহর নাম নিয়ে যেসব পশু যবেহ করা হবে সেগুলোকে হারাম ঠাওরানো হয়েছে এবং আল্লাহর নাম না নিয়ে যেগুলো যবেহ করা হবে সেগুলোকে একেবারেই হালাল মনে করা হয়েছে। এ ধরনের নিদারুণ অজ্ঞতাপ্রসূত দৃষ্টিভংগীর ওপর অতীতেও কোন কোন দল জোর দিয়েছিল এবং বর্তমানেও দুনিয়ার একদল লোক জোর দিয়ে চলছে। এরই প্রতিবাদে আল্লাহ এখানে মুসলমানদেরকে বলছেন, যদি সত্যি তোমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনে থাকো এবং তাঁর বিধানসমূহ মেনে নিয়ে থাকো, তাহলে কাফের ও মুশরিকদের মধ্যে যেসব কুসংস্কার ও বিদ্বেষমূলক রীতি-প্রথার প্রচলন রয়েছে সেগুলো পরিহার করো, আল্লাহর বিধানের পরোয়া না করে মানুষ নিজেই যেসব বিধি-নিষেধের প্রাচীর তৈরি করেছে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলো এবং আল্লাহ যে জিনিস হারাম করেছেন কেবল তাকেই হারাম মনে করো আর আল্লাহ যে জিনিস হালাল করেছেন কেবল তাকেই হালাল মনে করো।
সুরা: আন্-নহল
আয়াত নং :-১১৬
وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّ هٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَى اللّٰهِ الْكَذِبَؕ اِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَى اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَؕ
আর এই যে, তোমাদের কণ্ঠ ভুয়া হুকুম জারী করে বলতে থাকে এটি হালাল এবং ওটি হারাম, এভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনোই সফলকাম হবে না।
তাফসীর :
টিকা:১১৬) এ আয়াতটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে, হালাল ও হারাম করার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। অথবা অন্য কথায়, একমাত্র আল্লাহই আইন প্রণেতা। অন্য যে ব্যক্তিই বৈধতা ও অবৈধতার ফায়সালা করার ধৃষ্টতা দেখাবে। সে নিজের সীমালঙ্ঘন করবে। তবে যদি সে আল্লাহর আইনকে অনুমতিপত্র হিসেবে মেনে নিয়ে তার ফরমানসমূহ থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে বলে, অমুক জিনিসটি অথবা কাজটি বৈধ এবং অমুকটি অবৈধ তাহলে তা হতে পারে। এভাবে নিজের হালাল ও হারাম করার স্বাধীন ক্ষমতাকে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ বলে অভিহিত করার কারণ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি এ ধরনের বিধান তৈরী করে তার এ কাজটি দু’টি অবস্থার বাইরে যেতে পারে না। হয় সে দাবী করছে যে, যে জিনিসকে সে আল্লাহর কিতাবের অনুমোদন ছাড়াই বৈধ বা অবৈধ বলছে তাকে আল্লাহ বৈধ বা অবৈধ করেছেন। অথবা তার দাবী হচ্ছে, আল্লাহ নিজের হালাল ও হারাম করার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে মানুষকে স্বাধীনভাবে তার নিজের জীবনের শরীয়াত তৈরী করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। এ দু’টি দাবীর মধ্য থেকে যেটিই সে করবে তা নিশ্চিতভাবেই মিথ্যাচার এবং আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ ছাড়া আর কিছুই হবে না।