أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٦٦)-৪৬৮
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১২৫ নং আয়াত:-
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلِسْلَمِ
অতএব আল্লাহ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তঃকরণ উন্মুক্ত করে দেন,
And whomsoever Allah wills to guide, He opens his breast to Islam;
فَمَنۡ یُّرِدِ اللّٰہُ اَنۡ یَّہۡدِیَہٗ یَشۡرَحۡ صَدۡرَہٗ لِلۡاِسۡلَامِ ۚ وَ مَنۡ یُّرِدۡ اَنۡ یُّضِلَّہٗ یَجۡعَلۡ صَدۡرَہٗ ضَیِّقًا حَرَجًا کَاَنَّمَا یَصَّعَّدُ فِی السَّمَآءِ ؕ کَذٰلِکَ یَجۡعَلُ اللّٰہُ الرِّجۡسَ عَلَی الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ
﴿۱۲۵﴾
অতএব আল্লাহ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তঃকরণ উন্মুক্ত করে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তিনি তার অন্তঃকরণ সংকুচিত করে দেন – খুবই সংকুচিত করে দেন, এমনভাবে সংকুচিত করেন যেন মনে হয় সে আকাশে আরোহণ করছে। এমনিভাবেই যারা ঈমান আনেনা তাদেরকে আল্লাহ কলুষময় করে থাকেন।
১২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
সঠিক পথের হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি যাকে হিদায়াত দেয়ার ইচ্ছা করেন তার বক্ষকে তিনি ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَفَمَنْ شَرَحَ اللّٰهُ صَدْرَه۫ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلٰي نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّه۪ ط فَوَيْلٌ لِّلْقٰسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللّٰهِ ط أُولٰ۬ئِكَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ )
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করেছেন, সে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত আলোয় রয়েছে, (সে কি তার সমান যে এরূপ নয়?) দুর্ভোগ তাদের জন্য যাদের কঠোর হৃদয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিমুখ। তারা রয়েছে প্রকাশ্য গুমরাহীতে।”(সূরা যুমার ৩৯:২২)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: এর অর্থ হল তাওহীদ ও তার প্রতি ঈমান আনার জন্য অন্তরকে প্রশস্তকরণ। (ইবনে কাসীর, ৩/৩৭৫)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে আল্লাহ তা‘আলা অন্তরকে প্রশস্ত করে দেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একটি আলো অন্তরে দিয়ে দেয়া হয়। ফলে অন্তর খুলে যায় ও (ইসলাম গ্রহণের জন্য) প্রশস্ত হয়ে পড়ে।
পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল, এর কি কোন আলামত আছে যে তা বুঝা যাবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সে পরকালের প্রতি ঝুঁকে পড়বে, দুনিয়ার প্রতি তার অনাসক্তি থাকবে এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে। (আযউয়াউল বায়ান, ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যে ব্যক্তির কল্যাণ চান তাকে দীনের জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৭১, সহীহ মুসলিম হা: ১০৩৭)
এর প্রমাণ দুনিয়াতে অনেক রয়েছে। কত বড় বড় ইসলামের দুশমন ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّ فِیْکُمْ رَسُوْلَ اللہِﺚ لَوْ یُطِیْعُکُمْ فِیْ کَثِیْرٍ مِّنَ الْاَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلٰکِنَّ اللہَ حَبَّبَ اِلَیْکُمُ الْاِیْمَانَ وَزَیَّنَھ۫ فِیْ قُلُوْبِکُمْ وَکَرَّھَ اِلَیْکُمُ الْکُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْیَانَﺚ اُولٰ۬ئِکَ ھُمُ الرّٰشِدُوْنَﭖﺫ)
“জেনে রেখ! তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল বিদ্যমান আছেন। যদি তিনি বেশির ভাগ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নেন, তাহলে তোমরা নিজেরাই মুশকিলে পড়ে যাবে; কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের জন্য হৃদয়গ্রাহীও করেছেন। আর কুফরী, ফাসেকী ও নাফরমানীর প্রতি তোমাদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি করেছেন। এরাই সৎ পথপ্রাপ্ত।”(সূরা হুজুরাত ৪৯:৭)
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করতে চান তার অন্তরকে ইসলামের জন্য সংকীর্ণ করে দেন। ইসলামের প্রতি তার খারাপ মনোভাব চলে আসে। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে তারই উদাহরণ তুলে ধরেছেন।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্টদের তরীকা উল্লেখ করার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ করেছেন সে ব্যাপারে সতর্ক করছেন যে, এটাই সঠিক দীন, সঠিক পথ।
যারা এ সঠিক পথের অনুসারী হবে তাদের জন্য রয়েছে “দারুস সালাম” নামক জান্নাত। এটা তাদের কর্মের ফলাফল। তাই আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে হিদায়াত কামনা করব। তিনি হিদায়াত দিলে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. إرادة الله বা “আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা করা” এ গুণ আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে বলে প্রমাণিত হল।
২. হিদায়াত দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা, দ্বিতীয় কেউ নয়।
৩. সঠিক পথের অনুসারীদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 125
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلِسْلَمِ
And whomsoever Allah wills to guide, He opens his breast to Islam;
Allah said,
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلِسْلَمِ
And whomsoever Allah wills to guide, He opens his breast to Islam;
He makes Islam easy for him and strengthens his resolve to embrace it, and these are good signs.
Allah said in other Ayat,
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلِسْلَـمِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِّن رَّبِّهِ
Is he whose breast Allah has opened to Islam, so that he is in light from His Lord (as he who is a non-Muslim). (39:22)
and,
وَلَـكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الايمَـنَ وَزَيَّنَهُ فِى قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَـيِكَ هُمُ الرَشِدُونَ
But Allah has endeared the faith to you and has beautified it in your hearts, and has made disbelief, wickedness and disobedience hated by you. Such are they who are the rightly guided. (49:7)
Ibn Abbas commented on Allah’s statement,
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلِسْلَمِ
(And whomsoever Allah wills to guide, He opens his breast to Islam),
“Allah says that He will open his heart to Tawhid and faith in Him.”
This is the same as was reported from Abu Malik and several others, and it is sound.
Allah’s statement,
فَمَن يُرِدِ اللّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلِسْلَمِ
(and whomsoever He wills to send astray, He makes his breast closed and constricted),
refers to inability to accept guidance, thus being deprived of beneficial faith.
وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا
and whomsoever He wills to send astray, He makes his breast closed and constricted,
كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاء
as if he is climbing up to the sky.
because of the heaviness of faith on him.
Sa`id bin Jubayr commented that in this case,
“(Islam) finds every path in his heart impassable.”
Al-Hakam bin Aban said that Ikrimah narrated from Ibn Abbas that he commented on:
كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاء
(…as if he is climbing up to the sky),
“Just as the Son of Adam cannot climb up to the sky, Tawhid and faith will not be able to enter his heart, until Allah decides to allow it into his heart.”
Imam Abu Jafar bin Jarir commented:
“This is a parable that Allah has given for the heart of the disbeliever, which is completely impassable and closed to faith. Allah says, the example of the disbeliever’s inability to accept faith in his heart and that it is too small to accommodate it, is the example of his inability to climb up to the sky, which is beyond his capability and power.”
He also commented on Allah’s statement,
كَذَلِكَ يَجْعَلُ اللّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ
Thus Allah puts the Rijs (wrath) on those who believe not.
“Allah says that just as He makes the heart of whomever He decides to misguide, closed and constricted, He also appoints Shaytan for him and for his likes, those who refused to believe in Allah and His Messenger. Consequently, Shaytan lures and hinders them from the path of Allah.”
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said that,
Rijs, refers to Shaytan,
Mujahid said that;
Rijs,refers to all that does not contain goodness.
Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said that,
Rijs, means, `torment’
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তাআলা বলেন যে, আল্লাহ যাকে হিদায়াত করার ইচ্ছা করেন অর অন্তরকে তিনি ইসলামের জন্যে খুলে দেন অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা তার জন্যে সহজ করে দেন। এটা ওরই নিদর্শন যে, তার ভাগ্যে মঙ্গল লিখিত আছে। যেমন তিনি বলেনঃ “ইসলামের জন্যে আল্লাহ যার অন্তর খুলে দেন, তার জন্যে তার প্রভুর পক্ষ থেকে নূর বা আলো নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ “কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের ভালবাসা স্থাপন করেছেন এবং ওটা তোমাদের অন্তরে শোভনীয় করেছেন, আর কুফর, পাপ ও অন্যায়াচরণের প্রতি তোমাদের অন্তরে ঘৃণার উদ্রেক করেছেন, এসব লোকই সুপথ প্রাপ্ত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাপারে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাওহীদ ও ঈমান কবূল করার মত প্রশস্ততা তার অন্তরে আনয়ন করেন। আবু মালিক ও অন্যান্যদের মতে এ ভাবার্থই বেশী প্রকাশমান। আবু জাফর হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ মুমিনদের মধ্যে কোন ব্যক্তি অধিক বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী?’ তিনি উত্তরে বলেনঃ “যে ব্যক্তি খুব বেশী মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্যে সবেচেয়ে বেশী প্রস্তুতি গ্রহণ করে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে (আরবী)-এই আয়াত সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হয়। জনগণ তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিভাবে অন্তরকে খুলে দেয়া হয়?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “একটা নূর অন্তরে নিক্ষেপ করা হয় যার ফলে অন্তর খুলে যায় ও প্রশস্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সংকীর্ণতা অবশিষ্ট থাকে না।” জনগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “কারো অন্তর যে খুলে গেছে এটা কি করে জানা যায়? তিনি জবাবে বলেনঃ “এর পরিচয় এইভাবে পাওয়া যায় যে, সে পরকালের দিকে ঝুঁকে পড়ে, দুনিয়ার প্রতি তার আসক্তি থাকে না এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই ওর জন্যে সে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।”
(আরবী) অর্থাৎ যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন তার অন্তরকে তিনি খুবই সংকীর্ণ করে দেন। (আরবী) শব্দটির (আরবী) অক্ষরের উপর (আরবী) হবে, (আরবী) অক্ষরের উপর (আরবী) হবে। কিন্তু অধিকাংশ লোক (আরবী) অক্ষরে (আরবী) ও (আরবী) দিয়ে পড়ে থাকেন। এ দু’টোর দৃষ্টান্ত হচ্ছে হাইয়ীনুন ও হাইনুন শব্দ (আরবী) শব্দটিকে কেউ কেউ (আরবী) ও (আরবী) সহ পড়েছেন। আবার অন্য কিরআতে (আরবী) এবং (আরবী) সহ রয়েছে। অর্থাৎ সে এতদূর পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে যে, তার অন্তর হিদায়াতের জন্যে মোটেই প্রশস্ত থাকে না। ঈমান সেখানে পথ পায় না । হযরত উমার (রাঃ) একজন বেদুইনকে জিজ্ঞেস করেনঃ কি জিনিস?” সে উত্তরে বলেঃ “ওটা একটা গাছ, গাছের ভিতরেই থাকে। কোন রাখাল ওটা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না, কোন জীবজন্তু এবং অন্য কোন জিনিসও ওর পাত্তা পায় না।” তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “মুনাফিকদের অন্তরও ঠিক এরূপই হয়ে থাকে। কোন ভাল কথা সেখানে প্রবেশই করতে পারে না।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরের উপর ইসলামকে সংকীর্ণ করে দেন। কেননা, ইসলাম তো একটা প্রশস্ত জিনিস। আর কাফিরের অন্তর সংকীর্ণ হয়ে থাকে। সুতরাং সেখানে ইসলামের জায়গা হবে কিরূপে? যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “দ্বীন কবূল করে নেয়ার পর তোমাদের অন্তরে কোন সংকীর্ণতা থাকতে পারে না। আর আল্লাহ তোমাদের দ্বীনের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা রাখেননি।” (২২:৭৮) কিন্তু মুনাফিকের অন্তর সন্দেহের মধ্যে জড়িত থাকে এবং অন্তরের সংকীর্ণতার কারণে (আরবী)-এর স্বীকারোক্তি সে করতেই পারে না। ঈমান আনয়ন করা তার উপর এমন কঠিন হয়ে পড়ে যেমন কারও উপর আকাশে আরোহণ কঠিন হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেরূপ আদম সন্তান আকাশে আরোহণ করতে পারে না, দ্রুপ তাওহীদের বিশ্বাস মুনাফিকের অন্তরে ঘর করতে পারে না। আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা যার অন্তরকে সংকীর্ণ করে দিয়েছেন সে কিভাবে ঈমান আনতে পারে? কাফিরের অন্তর সম্পর্কে এটা দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা হয়েছে যে, তার অন্তরে ঈমানের আরোহণ এমনই কঠিন যেমন কারও আকাশে আরোহণ করা কঠিন অর্থাৎ যেমন আকাশে চড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয় তদ্রূপ কাফিরের ঈমান আনয়নও সম্ভব নয়।
অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-যেমন তার অন্তরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়েছে তরূপ আল্লাহ শয়তানকে তার উপর বিজয়ী করে দিয়েছেন, যে তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে শয়তান। আর মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) হচ্ছে প্রত্যেক ঐ জিনিস যাতে কোন মঙ্গল নিহিত নেই।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আয়াতে বলা হয়েছে, “যাকে আল্লাহ হেদায়াত দিতে চান, তার বক্ষ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন”। বক্ষ উন্মুক্ত করার অর্থ, সহজ করে দেয়া, উদ্যমী করা। আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ “যার বক্ষকে আল্লাহ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ফলে সে তার প্রভূর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নূরের উপর থাকে” [সূরা আয-যুমার: ২২] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে পছন্দনীয় করে দিয়েছেন এবং তোমাদের অন্তরে তা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিয়েছেন আর তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন কুফরী, ফাসেকী এবং অবাধ্যতা [সূরা আল-হুজুরাতঃ ৭]। ইবনে আব্বাস বলেনঃ বক্ষ উন্মুক্ত করার অর্থ হলোঃ তাওহীদ ও ঈমানের জন্য তা প্রশস্ত হওয়া। [ইবন কাসীর] তারপর আল্লাহ বলছেনঃ “আর যাকে আল্লাহ্ তা’আলা পথভ্রষ্ট রাখতে চান, তার অন্তর সংকীর্ণ এবং অত্যাধিক সংকীর্ণ করে দেন। সত্যকে গ্রহণ করা এবং তদনুযায়ী কাজ করা তার কাছে এমন কঠিন মনে হয়, যেমন কারো আকাশে আরোহণ করা”। মুলত: বক্ষ সংকীর্ণ করার অর্থ, কঠিন, দুর্ভাদ্য করে দেয়া। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ মুনাফিকের কাল্ব হলো অনুরূপ সেখানে কোন ভাল কিছু পৌছুতে পারে না। [তাবারী; ইবন কাসীর] মুজাহিদ ও সুদী বলেন, এর অর্থ, সন্দেহে পড়ে থাকা। মানসিক অশান্তিতে বিরাজ করা। [ইবন কাসীর] আজ সমগ্র বিশ্ব এসব সন্দেহ ও সংশয়ের আবর্তে নিপতিত। তারা তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে এর মীমাংসা করতে সচেষ্ট। অথচ এটা এর নির্ভুল পথ নয়। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববতী মনীষীবৃন্দ যে পথ ধরেছিলেন, সেটাই ছিল যথার্থ পথ। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলার পরিপূর্ণ শক্তি ও নেয়ামত কল্পনায় উপস্থিত করে অন্তরে তার মাহাত্ম্য ও ভালবাসা সৃষ্টি করলে সন্দেহ সংশয় আপনা থেকেই দূর হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা তার রাসূল মূসা আলাইহিস সালাম-কে এ দু’আ করার আদেশ দিয়েছেনঃ “হে আমার রব! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন”। [সূরা ত্বা-হাঃ ২৫] |
[২] অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না, তাদের প্রতি ধিক্কার দেন। তাদের অন্তরে সত্য আসন পায় না এবং তারা প্রত্যেক মন্দ ও অপকর্মে সোল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে ‘রিজস’ বলে কি বুঝানো হয়েছে তাতে কয়েকটি মত বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এর দ্বারা শয়তানকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সংকীর্ণ বক্ষে শয়তান বেকে বসে থাকে, ফলে তার ঈমান আনা নসীব হয় না। মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ রিজস দ্বারা কল্যাণহীন বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা ঈমান আনবেনা তাদের মন সংকীর্ণ হওয়ার কারণে সেখানে কোন কল্যাণ নেই। আব্দুর রাহমান ইবনে যাইদ ইবনে আসলাম বলেনঃ এখানে রিজস দ্বারা আযাব বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা ঈমান আনবেনা তাদের উপর আযাব নির্ধারিত হয়ে আছে। [তাবারী; বাগভী; ইবন কাসীর]