أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٧٢)-৪৭৪
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১৩৩-১৩৫ নং আয়াত:-
وَيَسْتَخْلِفْ مِن بَعْدِكُم مَّا يَشَاء
এবং তোমাদের পরে তোমাদের স্থানে যাকে ইচ্ছা স্থলাভিষিক্ত করবেন,
And in your place make whom He wills as your successors,
وَ رَبُّکَ الۡغَنِیُّ ذُو الرَّحۡمَۃِ ؕ اِنۡ یَّشَاۡ یُذۡہِبۡکُمۡ وَ یَسۡتَخۡلِفۡ مِنۡۢ بَعۡدِکُمۡ مَّا یَشَآءُ کَمَاۤ اَنۡشَاَکُمۡ مِّنۡ ذُرِّیَّۃِ قَوۡمٍ اٰخَرِیۡنَ ﴿۱۳۳﴾ؕ
তোমার রাব্ব অমুখাপেক্ষী ও দয়াশীল, তাঁর ইচ্ছা হলে তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং তোমাদের পরে তোমাদের স্থানে যাকে ইচ্ছা স্থলাভিষিক্ত করবেন, যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য এক জাতির বংশধর হতে সৃষ্টি করেছেন।
اِنَّ مَا تُوۡعَدُوۡنَ لَاٰتٍ ۙ وَّ مَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِیۡنَ ﴿۱۳۴﴾
তোমাদের নিকট যে বিষয় সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম ও দুর্বল করতে পারবেনা।
قُلۡ یٰقَوۡمِ اعۡمَلُوۡا عَلٰی مَکَانَتِکُمۡ اِنِّیۡ عَامِلٌ ۚ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ مَنۡ تَکُوۡنُ لَہٗ عَاقِبَۃُ الدَّارِ ؕ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۱۳۵﴾
তুমি বলে দাওঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় ‘আমল করতে থাক, আমিও ‘আমল করছি, অতঃপর শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে যে, কার পরিণাম কল্যাণকর। নিঃসন্দেহে অত্যাচারীরা কখনও মুক্তি ও সাফল্য লাভ করতে পারবেনা।
১৩৩-১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকল মাখলুক তার মুখাপেক্ষী, তিনি দয়াময়। তাঁর ইচ্ছায় সবকিছু হয়। তিনি ইচ্ছা করলে দুনিয়ায় যারা রয়েছে এদেরকে ধ্বংস করে নতুন জাতি নিয়ে আসতে সক্ষম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ يَّشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ وَيَأْتِ بِاٰخَرِيْنَ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَلٰي ذٰلِكَ قَدِيْرًا)
“হে মানুষ! তিনি (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারিত করে অপরকে আনতে পারেন; আল্লাহ এটা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম।”(সূরা নিসা ৩:১৩৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاللّٰهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَا۬ءُ ج وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ لا ثُمَّ لَا يَكُوْنُوْآ أَمْثَالَكُمْ)
“আল্লাহ অভাবমুক্ত, তোমরাই অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে অন্য কাওমকে নিয়ে আসবেন। আর তারা তোমাদের মত হবে না।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৮)
তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই হবে এবং তোমাদের পুনরুত্থান ঘটবেই। এতে তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে অপারগ করতে পারবে না।
(اعْمَلُوْا عَلٰي مَكَانَتِكُمْ)
‘তোমরা যেখানে যা করছ, করতে থাক; অর্থাৎ এটা কুফরী ও অবাধ্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার এখতিয়ার বা অনুমতি নয় বরং এ হল কঠোর ধমক যা পরের শব্দ থেকে স্পষ্ট হয়। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقُلْ لِّلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ اعْمَلُوْا عَلٰي مَكَانَتِكُمْ ط إِنَّا عٰمِلُوْنَ – وَانْتَظِرُوْا ج إِنَّا مُنْتَظِرُوْنَ)
“যারা ঈমান আনে না তাদেরকে বল ‘তোমরা স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করতে থাক, আমরাও আমাদের কাজ করছি। ‘এবং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষা করছি।’(সূরা হূদ ১১:১২১-২২)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 133-135
وَيَسْتَخْلِفْ مِن بَعْدِكُم مَّا يَشَاء
And in your place make whom He wills as your successors,
If They Disobey, They Will Perish
Allah said,
وَرَبُّكَ
And your Lord…, (O Muhammad),
الْغَنِيُّ
is Al-Ghani,
Rich, free from needing His creatures in any way or form, while they stand in need of Him in all situations,
ذُو الرَّحْمَةِ
full of mercy;
towards creation.
Allah said in another Ayah,
إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
Truly, Allah is full of kindness, the Most Merciful towards mankind. (2:143)
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ
if He wills, He can destroy you.
if you defy His commandments,
وَيَسْتَخْلِفْ مِن بَعْدِكُم مَّا يَشَاء
And in your place make whom He wills as your successors,
who behave obediently,
كَمَأ أَنشَأَكُم مِّن ذُرِّيَّةِ قَوْمٍ اخَرِينَ
As He raised you from the seed of other people.
and surely, He is able to do this, and it is easy for Him. And just as Allah has destroyed the earlier nations and brought their successors, He is able to do away with these generations and bring other people in their place.
Allah has also said;
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ وَيَأْتِ بِـاخَرِينَ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى ذلِكَ قَدِيراً
If He wills, He can take you away, O people, and bring others. And Allah is Ever Capable over that. (4:133)
يأَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِىُّ الْحَمِيدُ
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُـمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ
وَمَا ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ
O mankind! It is you who stand in need of Allah. But Allah is Rich (free of all needs), Worthy of all praise. If He willed, He could destroy you and bring about a new creation. And that is not hard for Allah. (35:15-17)
and,
نَّفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِىُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِن تَتَوَلَّوْاْ يَسْتَبْدِلْ قَوْماً غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُواْ
But Allah is Rich (free of all needs), and you are poor. And if you turn away, He will exchange you for some other people and they will not be your likes. (47:38)
Muhammad bin Ishaq said that Yaqub bin Utbah said that he heard Aban bin Uthman saying about this Ayah,
كَمَأ أَنشَأَكُم مِّن ذُرِّيَّةِ قَوْمٍ اخَرِينَ
(As He raised you from the seed of other people),
“`The seed’ means the offspring and the children.”
Allah’s statement,
إِنَّ مَا تُوعَدُونَ لاتٍ وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
Surely, that which you are promised, will verily, come to pass and you cannot escape.
means, tell them, O Muhammad, that what they have been promised of Resurrection will surely occur,
وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
(and you cannot escape) from Allah. Rather, He is able to resurrect you even after you become dust and bones. Certainly, Allah is able to do all things and nothing ever escapes His power.
Allah said
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُواْ عَلَى مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
Say:”O my people! Work according to your way, surely, I too am working and you will come to know.”
This contains a stern warning and a sure promise, saying; remain on your way, if you think that you are rightly guided, for I will remain on mine.
Allah said in another Ayah,
وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ اعْمَلُواْ عَلَى مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَامِلُونَ
وَانْتَظِرُواْ إِنَّا مُنتَظِرُونَ
And say to those who do not believe:”Act according to Makanatikum, We are acting (in our way). And you wait! We (too) are waiting.” (11:121-122)
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said that,
عَلَى مَكَانَتِكُمْ
(according to Makanatikum…),
means, your way.
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُواْ عَلَى مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ
فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
مَن تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدِّارِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
And you will come to know for which of us will be the (happy) end in the Hereafter. Certainly the wrongdoers will not be successful.
You will come to know if the happy end will be mine (Muhammad’s) or yours (the disbelievers).
Allah has indeed kept His promise and allowed Muhammad to prevail in the land and rise above those who defied him. He conquered Makkah for him and made him triumphant over his people who rejected and showed enmity towards him. The Prophet’s rule soon spread over the Arabian Peninsula, Yemen and Bahrain, and all this occurred during his lifetime. After his death, the various lands and provinces were conquered during the time of his successors, may Allah be pleased with them all.
Allah also said,
كَتَبَ اللَّهُ لاّغْلِبَنَّ أَنَاْ وَرُسُلِى إِنَّ اللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
Allah has decreed:”Verily, it is I and My Messengers who shall be the victorious.” Verily, Allah is All-Powerful, Almighty. (58:21)
إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ فِى الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الاإٌّشْهَـدُ
يَوْمَ لَا يَنفَعُ الظَّـلِمِينَ مَعْذِرَتُهُمْ وَلَهُمُ الْلَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ
Verily, We will indeed make victorious Our Messengers and those who believe in this world’s life and on the Day when the witnesses will stand forth. The Day when their excuses will be of no profit to the wrongdoers. Theirs will be the curse, and theirs will be the evil abode. (40:51-52)
and,
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِى الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الاٌّرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِىَ الصَّـلِحُونَ
And indeed We have written in the Zabur after the Dhikr that My righteous servants shall inherit the land. (21:105).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৩৩-১৩৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার প্রতিপালক সমস্ত মাখলুকাত হতে সর্ব দিক দিয়েই অমুখাপেক্ষী। সমস্ত ব্যাপারে সবাই তারই মুখাপেক্ষী। তাছাড়া তিনি মহান ও দয়ালুও বটে। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ লোকদের প্রতি অত্যন্ত করুণাময় ও দয়ালু।” (২:১৪৩)
ইরশাদ হচ্ছে-যদি তোমরা তাঁর আদেশ নিষেধ অমান্য কর তবে তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন, অতঃপর যে কওমকে চাইবেন তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, যাতে এই অন্য কওম তাঁর বাধ্য ও অনুগত হয়ে। যায়।
(আরবী) যেমন তিনি তোমাদেরকে অন্য এক জাতির বংশধর হতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ এই কাজের উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান, তাঁর কাছে এটা খুবই সহজ। যেমন তিনি পূর্ব যুগকে ধ্বংস করে ওদের স্থলে অন্য কওমকে আনয়ন করতে সক্ষম। তিনি বলেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী এবং তার ফকীর। আর অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে ধ্বংস করে অন্য মাখলুক সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর কাছে মোটেই কঠিন কাজ নয়। তিনি বলেনঃ “যদি তোমরা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তোমাদের পরিবর্তে তিনি অন্য কওমকে আনয়ন করবেন, অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না।” আবান ইবনে উসমান এই আয়াত সম্পর্কে বলেন যে, (আরবী) মূলকেও বলা হয় এবং বংশকেও বলা হয়।
আল্লাহ পাকের উক্তি-(আরবী) অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তাদেরকে তুমি জানিয়ে দাও যে, কিয়ামত সম্পর্কে তাদেরকে যে কথার ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্য অবশ্যই পালিত হবে। তোমরা আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না। তিনি তো এ কাজের উপর ক্ষমতাবান যে, তোমরা মাটি হয়ে যাওয়ার পর এবং তোমাদের হাড়গুলো পচে গলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তোমাদেরকে তিনি পুনর্জীবিত করবেন। এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “হে আদম সন্তান! যদি তোমরা জ্ঞানবান হও তবে নিজেদেরকে মৃতদের মধ্যে গণনা কর। কেননা, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যম্ভাবী এবং তোমরা আল্লাহকে অক্ষম ও দুর্বল করতে পারবে না।”
ইরশাদ হচ্ছে- হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় আমল করতে থাক, আমিও আমল করছি। কার পরিণাম কল্যাণকর তা তোমরা শীঘই জানতে পারবে। এটা ভয়ানক ধমক ও ভীতি প্রদর্শন। অর্থাৎ যদি তোমরা ধারণা করে থাক যে, তোমরা সঠিক পথেই রয়েছে তবে ঐ পথেই চল এবং আমিও আমার পথে চলছি। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না তাদেরকে বলে দাও-তোমরা তোমাদের স্থানে আমল করে যাও এবং আমরাও আমল করে যাচ্ছি, তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করতে থাক, আমরাও তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করতে রয়েছি। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে যে কার পরিণাম কল্যাণকর। জেনে রেখো যে, যালিমরা কখনও মুক্তি ও সাফল্য লাভ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-এর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তার জন্যে বহু শহর জয় করিয়েছেন, দেশসমূহের উপর তাকে ক্ষমতা প্রদান করেছেন, বিরুদ্ধবাদীদের মাথা নীচু করিয়েছেন, মক্কার উপর তাঁকে বিজয়ী করেছেন, সারা মক্কাবাসীর উপর তাকে বিজয় দান করেছেন এবং সমস্ত আরব উপদ্বীপের উপর তার শাসন কায়েম করেছেন। অনুরূপভাবে ইয়ামন ও বাহরাইনের উপরও তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ সবকিছু তাঁর জীবদ্দশাতেই সংঘটিত হয়েছে। তাঁর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে শহরসমূহ এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডগুলো বিজিত হতে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- আমি এবং আমার রাসূল (সঃ) অবশ্যই জয়যুক্ত হবে, আল্লাহ ক্ষমতাবান ও প্রতাপশালী ।”
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি অবশ্যই স্বীয় রাসূল (সঃ) এবং মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনেও সাহায্য করবো এবং আখেরাতেও সাহায্য করবো, যেই দিন অত্যাচারীদের ওযর তাদের কোনই উপকার করবে না, তাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত ও জঘন্য বাসস্থান।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “যিকরের পর যায়ূরে আমি লিখে দিয়েছিলাম যে, আমার সৎ বান্দারা যমীনের উত্তরাধিকারী হবে।” আর তিনি স্বীয় রাসূলদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে বলেনঃ “আমি রাসূলদের কাছে অহী পাঠিয়েছিলাম যে, যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করে দেবো, অতঃপর তাদের পরে আমি তোমাদেরকে (মুমিনদেরকে) ভূ-পৃষ্ঠে রাজত্ব দান করবো, এটা ঐ লোকদের জন্যে যারা আমাকে ভয় করে।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে তাদের সাথে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে যমীনে তাঁর খলিফা বানাবেন যেমন তাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে স্বীয় খলিফা বানিয়েছিলেন, আর যে দ্বীনকে তিনি পছন্দ করেছেন সেই দ্বীনের উপর তাদেরকে পরিচালিত করবেন এবং ভয়ের পরে তাদের জীবনকে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে পরিবর্তন করবেন, কেননা তারা আমার ইবাদত করে এবং শির্ক করে না।” আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মাদিয়াকে এই বিশেষত্ব দান করেছেন। সুতরাং প্রথম ও শেষ এবং প্রকাশ্য ও গোপনীয় সমস্ত প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহর জন্যে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, নবী ও আসমানী কিতাবসমূহের অব্যাহত ধারা এজন্য ছিল না যে, বিশ্ব পালনকর্তা আমাদের ইবাদাত ও আনুগত্যের মুখাপেক্ষী কিংবা তাঁর কোন কাজ আমাদের আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল নয়, তিনি সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী ও অভাবমুক্ত। তবে পরিপূর্ণ অমুখাপেক্ষী হওয়ার সাথে সাথে তিনি দয়া গুণেও গুনান্বিত। সমগ্র বিশ্বকে অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব দান করা এবং বিশ্ববাসীর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব প্রয়োজন অযাচিতভাবে মেটানোর কারণও তাঁর এ দয়াগুণ। নতুবা মানুষ তথা গোটা সৃষ্টি নিজের প্রয়োজনাদি নিজে সমাধা করার যোগ্য হওয়া তো দূরের কথা, সে স্বীয় প্রয়োজনাদি চাওয়ার রীতি-নীতিও জানে না। বিশেষতঃ অস্তিত্বের যে নেয়ামত দান করা হয়েছে, তা যে চাওয়া ছাড়াই পাওয়া গেছে, তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। কোন মানুষ কোথাও নিজের সৃষ্টির জন্য দো’আ করেনি এবং অস্তিত্ব লাভের পূর্বে দো’আ করা কল্পনাও করা যায় না। এমনিভাবে অন্তর এবং যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে মানুষের সৃষ্টি হাত, পা, মন-মস্তিস্ক প্রভৃতি এগুলো কোন মানব চেয়েছিল কি?
মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে (وَرَبُّكَ الْغَنِيُّ) শব্দ দ্বারা বিশ্বপালকের অমুখাপেক্ষিতা বর্ণনা করার সাথেই (ذُو الرَّحْمَةِ) যোগ করে বলা হয়েছে যে, তিনি করুণাময়ও বটে। অমুখাপেক্ষিতা আল্লাহ্ তা’আলারই বিশেষ গুণ। মানুষের মধ্যে এ গুণ নেই, কেননা, মানুষ অপরের প্রতি অমুখাপেক্ষি হয়ে গেলে সে অপরের লাভ-লোকসান ও সুখ-দুঃখের প্রতি মোটেই ভ্রুক্ষেপ করত না বরং অপরের প্রতি অত্যাচার ও উৎপীড়ন করতে উদ্যত হত। আল্লাহ তা’আলা অন্য এক আয়াতে বলেন, “মানুষ যখন নিজেকে অমুখাপেক্ষি দেখতে পায়, তখন অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যে মেতে উঠে।” [সূরা আল-আলাক: ৬-৭] তাই আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে এমন প্রয়োজনাদির শিকলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দিয়েছেন, যেগুলো অপরের সাহায্য ব্যতিরেকে পূর্ণ হতে পারে না।
[২] এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলার অমুখাপেক্ষী হওয়া, করুণাময় হওয়া এবং সর্বশক্তির অধিকরী হওয়ার কথা উল্লেখ করার পর অবাধ্য ও নির্দেশ অমান্যকারীদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে যে শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন, তা অবশ্যই আগমণ করবে এবং তোমরা সব একত্রিত হয়েও আল্লাহর সে আযাব প্রতিরোধ করতে পারবে না।
[৩] অর্থাৎ যখন আল্লাহর আযাব নাযিল হবে, তখন কার পরিণাম ভালো সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। [মুয়াসসার]
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১০১) “তোমাদের রব কারো মুখাপেক্ষী নন।” অর্থাৎ তাঁর কোন কাজ তোমাদের জন্য আটকে নেই। তোমাদের সাথে তাঁর কোন স্বার্থ জড়িত নেই। কাজেই তোমাদের নাফরমানীর ফলে তাঁর কোন ক্ষতি হবে না। অথবা তোমাদের আনুগত্যের ফলে তিনি লাভবানও হবেন না। তোমরা সবাই মিলে কঠোরভাবে তাঁর হুকুম অমান্য করলে তাঁর বাদশাহী ও সার্বভৌম কর্তৃত্বে এক বিন্দু পরিমাণ কমতি দেখা দেবে না। আবার সবাই মিলে তাঁর হুকুম মেনে চললে এবং তাঁর বন্দেগী করতে থাকলেও তাঁর সাম্রাজ্যে এক বিন্দু পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটবে না। তিনি তোমাদের সেলামীর মুখাপেক্ষী নন। তোমাদের মানত-নযরানারও তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। তিনি তাঁর বিপুল ভাণ্ডার তোমাদের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন এবং এর বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে কিছুই চান না।
“দয়া ও করুণা তাঁর রীতি।” পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এখানে এ বাক্যটির দু’টি অর্থ হয়। একটি অর্থ হচ্ছে, তোমাদের রব তোমাদেরকে সত্য-সরল পথে চলার নির্দেশ দেন এবং প্রকৃত ও বাস্তব সত্যের বিপরীত পথে চলতে নিষেধ করেন। তাঁর এ আদেশ-নিষেধের অর্থ এ নয় যে, তোমরা সঠিক পথে চললে তাঁর লাভ এবং তোমরা ভুল পথে চললে তাঁর ক্ষতি। বরং এর আসল অর্থ হচ্ছে এই যে, সঠিক পথে চললে তোমাদের লাভ এবং ভুল পথে চললে তোমাদের ক্ষতি। কাজেই তিনি তোমাদের সঠিক কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দেন। তার সাহায্যে তোমরা উচ্চতম পর্যায়ে উন্নীত হবার যোগ্যতা লাভ করতে পার। তিনি তোমাদের ভুল কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখেন। এর ফলে তোমরা নিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়া থেকে রক্ষা পাও। এগুলো তাঁর করুণা ও মেহেরবানী ছাড়া আর কিছুই নয়। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমাদের রব কঠোরভাবে পাকড়াও করেন না। তোমাদের শাস্তি দেবার মধ্যে তাঁর কোন আনন্দ নেই, তোমাদের পাকড়াও করার ও আঘাত জন্য তিনি ওঁৎ পেতে বসে নেই। তোমাদের সামান্য ভুল হলেই অমনি তিনি তোমাদের ওপর চড়াও হবেন, তা নয়। আসলে নিজের সকল সৃষ্টির প্রতি তিনি বড়ই মেহেরবান। নিজের সার্বভৌম কর্তৃত্ব পরিচালনার ব্যাপারে তিনি চরম দয়া, করুণা, অনুগ্রহ ও অনুকম্পার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। মানুষের ব্যাপারেও তিনি এ নীতিই অবলম্বন করছেন। তাই তিনি একের পর এক তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে যেতে থাকেন। তোমরা নাফরমানী করে যেতে থাকো, গোনাহ করতে থাকো, অপরাধ করতে থাকো, তাঁর দেয়া জীবিকায় প্রতিপালিত হয়ে তাঁরই বিধান অমান্য করতে থাকো। কিন্তু তিনি ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার আশ্রয় নেন এবং তোমাদের উপলব্ধি করার ও সংশোধিত হবার জন্য ছাড় ও অবকাশ দিয়ে যেতে থাকেন। অন্যথায় তিনি যদি কঠোরভাবে পাকড়াও করতেন, তাহলে তোমাদের এ দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়ে তোমাদের জায়গায় অন্য একটি জাতির উত্থান ঘটানো অথবা সমগ্র মানব জাতিকে ধ্বংস করে দিয়ে আর একটি নতুন প্রজাতির জন্ম দেয়া তাঁর পক্ষে মোটেই কঠিন ছিল না।
টিকা:১০২) অর্থাৎ কিয়ামত। তখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষকে আবার নতুন করে জীবিত করা হবে। শেষ বিচারের জন্য তাদেরকে তাদের রবের সামনে পেশ করা হবে।
টিকা:১০৩) অর্থাৎ আমার বুঝাবার পরও যদি তোমরা না বুঝতে চাও এবং নিজেদের ভ্রান্ত পদক্ষেপ থেকে বিরত না হও, তাহলে যে পথে তোমরা চলছো সে পথে চলে যেতে থাকো আর আমাকে আমার পথে চলতে দাও। এর পরিণাম যা কিছু হবে তা তোমাদের সামনেও আসবে এবং আমার সামনেও।