أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٧٩)-৪৮১
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৪৬-১৪৭ নং আয়াত:-
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ
ইয়াহুদীদের প্রতি আমি সর্ব প্রকার অবিভক্ত নখ বিশিষ্ট জীব হারাম করেছিলাম।
And unto those who are Jews, We forbade every (animal) with undivided hoof,
وَ عَلَی الَّذِیۡنَ ہَادُوۡا حَرَّمۡنَا کُلَّ ذِیۡ ظُفُرٍ ۚ وَ مِنَ الۡبَقَرِ وَ الۡغَنَمِ حَرَّمۡنَا عَلَیۡہِمۡ شُحُوۡمَہُمَاۤ اِلَّا مَا حَمَلَتۡ ظُہُوۡرُہُمَاۤ اَوِ الۡحَوَایَاۤ اَوۡ مَا اخۡتَلَطَ بِعَظۡمٍ ؕ ذٰلِکَ جَزَیۡنٰہُمۡ بِبَغۡیِہِمۡ ۫ۖ وَ اِنَّا لَصٰدِقُوۡنَ ﴿۱۴۶﴾
ইয়াহুদীদের প্রতি আমি সর্ব প্রকার অবিভক্ত নখ বিশিষ্ট জীব হারাম করেছিলাম। আর গরু ও ভেড়া হতে উৎপন্ন উভয়ের চর্বি তাদের জন্য আমি হারাম করেছিলাম, কিন্তু পৃষ্ঠদেশের চর্বি, নাড়ি ভুড়ির চর্বি ও হাড়ের সাথে মিশ্রিত চর্বি এই হারামের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। তাদের বিদ্রোহমূলক আচরণের জন্য আমি তাদেরকে এই শাস্তি দিয়েছিলাম, আর আমি নিঃসন্দেহে সত্যবাদী।
فَاِنۡ کَذَّبُوۡکَ فَقُلۡ رَّبُّکُمۡ ذُوۡ رَحۡمَۃٍ وَّاسِعَۃٍ ۚ وَ لَا یُرَدُّ بَاۡسُہٗ عَنِ الۡقَوۡمِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۴۷﴾
সুতরাং এ সব বিষয়ে যদি তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করে তাহলে তুমি বলে দাওঃ তোমাদের রাব্ব খুবই করুণাময়, আর অপরাধী সম্প্রদায় হতে তাঁর শাস্তির বিধান কখনই প্রত্যাহার করা হবেনা।
আয়াতের ১৪৬-১৪৭ নং:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১২২) এ বিষয়টি কুরআন মজীদের তিনটি স্থানে বিবৃত হয়েছে। সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ “এ সমস্ত খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীয়ায় যা হালাল হিসেবে গণ্য) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল। তবে কিছু জিনিস এমন ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিলের পূর্বে ইসরাঈলীরা নিজেরাই নিজেদের ওপর হারাম করে নিয়েছিল। ওদেরকে বলো, তাওরাত আনো এবং তার কোন উদ্ধৃতি পেশ করো, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো।” (৯৩ আয়াত) সূরা আন নিসায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈলদের অপরাধের কারণে “আমি এমন বহু পাক-পবিত্র বস্তু তাদের ওপর হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল।” (১৬০-১৬১ আয়াত) আর এখানে বলা হয়েছেঃ এদের অবাধ্যতার কারণে আমি সমস্ত নখরধারী প্রাণী এদের জন্য হারাম করে দিয়েছি এবং ছাগল ও গরুর চর্বিও এদের জন্য হারাম গণ্য করেছি। এ তিনটি আয়াত একত্র করলে জানা যায়, শরীয়াতে মুহাম্মাদী ও ইহুদী ফিকাহর মধ্যে আহার যোগ্য প্রাণীদের হালাল ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে দু’টি কারণে পার্থক্য দেখা যায়।
একঃ তাওরাত নাযিল হবার শত শত বছর আগে ইয়াকুব (ইসরাইল) আলাইহিস সালাম কোন কোন জিনিসের ব্যবহার ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পরে তাঁর সন্তানরাও সেগুলো ত্যাগ করেছিল। এমনকি ইহুদী ফকীহগণ এগুলোকে রীতিমত হারাম মনে করতে থাকে এবং এগুলোর হারাম হওয়ার বিষয়টি তাওরাতে লিখে নেয়। উট, খরগোশ ও শাফনও এ হারামের তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমান বাইবেলে আমরা তাওরাতের যে অংশটুকু পাই তাতে এ তিনটিরই হারাম হবার বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। (লেবীয় পুস্তক ১১: ৪-৬ এবং দ্বিতীয় বিবরণ ১৪: ৭ ) কিন্তু কুরআন মজীদে ইহুদীদের এ বলে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিলঃ আনো তাওরাত এবং দেখাও কোথায় এ জিনিসগুলো হারাম বলে লেখা হয়েছে, তা থেকে জানা যায় যে, তাওরাতে এ বিধানগুলো বৃদ্ধি করা হয়েছে এ ঘটনার পর। কারণ তখন যদি তাওরাতে এ বিধানগুলো থাকতো, তাহলে বনী ইসরাঈল সঙ্গে সঙ্গেই তাওরাত এনে তা দেখিয়ে দিতো।
দুইঃ দ্বিতীয় পার্থক্যটি সৃষ্টি হবার কারণ হচ্ছে এই যে, ইহুদীরা যখন আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো এবং নিজেদের আইন নিজেরাই প্রণয়ন করতে শুরু করলো তখন নিজেদের চুলচেরা আইনগত বিশ্লেষণ ও বাড়াবাড়ির মাধ্যমে তারা অনেক পাক-পবিত্র জিনিসকে নিজেরাই হারাম করে নিয়েছিল এবং এর শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাদেরকে এ বিভ্রান্তির মধ্যে অবস্থান করতে দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নখরধারী প্রাণী। অর্থাৎ উটপাখি, বক, হাঁস ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, গরু ও ছাগলের চর্বি। এ দু’ ধরনের হারামকে বাইবেলে তাওরাতের বিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। http://alquranindex114.blogspot.com/2018/05/blog-post_19.html (লেবীয় পুস্তক ১১: ১৬-১৮, দ্বিতীয় বিবরণ ১৪: ১৪-১৫-১৬, লেবীয় পুস্তক ৩: ১৭ এবং ৭: ২২-২৩) কিন্তু সূরা নিসা থেকে জানা যায়, এ জিনিসগুলো তাওরাতে হারাম ছিল না। বরং হযরত ইসা আলাইহিস সালামের পর এগুলো হারাম হয়েছে। ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয় বর্তমান ইহুদী শরীয়াত লিপিবদ্ধ করার কাজ দ্বিতীয় খৃস্টাব্দের শেষের দিকে রাব্বি ইয়াহুদার হাতে সম্পন্ন হয়।
এখন বাকি থাকে এ প্রশ্নটি, তাহলে মহান আল্লাহ এ জিনিসগুলো সম্পর্কে এখানে এবং সূরা নিসায় (আমি হারাম করেছি) শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? এর জওয়াব হচ্ছে, আল্লাহ কেবলমাত্র নবী ও কিতাবের মাধ্যমে কোন জিনিস হারাম করেন না। বরং তিনি কখনো তাঁর বিদ্রোহী বান্দাদের ওপর বানোয়াট বিধান রচয়িতা ও আইন প্রণেতাদের চাপিয়ে দেন এবং তারা পাক-পবিত্র জিনিসগুলো তাদের জন্য হারাম করে দেয়। প্রথম ধরনের হারামটি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে প্রবর্তিত হয় এবং দ্বিতীয় ধরনের হারামটি প্রবর্তিত হয় তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি ও লানত হিসেবে।
সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-93
كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسْرَآءِیْلُ عَلٰى نَفْسِهٖ مِنْ قَبْلِ اَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرٰىةُؕ قُلْ فَاْتُوْا بِالتَّوْرٰىةِ فَاتْلُوْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ
এসব খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে যেগুলো হালাল) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল।তবে এমন কিছু বস্তু ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈল নিজেই নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তার কোন বাক্য পেশ করো।
তাফসীর :
টিকা:৭৬) ইহুদী আলেমরা কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার বিরুদ্ধে যখন কোন নীতিগত আপত্তি জানাতে পারলো না (কারণ যেসব বিষয়ের ওপর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত ছিল, তার ব্যাপারে পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষা ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার মধ্যে সামান্য চুল পরিমাণ পার্থক্যও ছিল না) তখন তারা ফিকাহ্ ভিত্তিক আপত্তি উত্থাপন করতে লাগলো। এ প্রসঙ্গে তারা এই বলে আপত্তি জানালো-আপনি পানাহার সামগ্রীর মধ্যে এমন কিছুকে হালাল গণ্য করেছেন, যা পূর্ববর্তী নবীদের সময় থেকে হারাম হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। এখানে এই আপত্তিটির জবাব দেয়া হয়েছে।
টিকা:৭৭) ইসরাঈল বলতে যদি এখানে বনী ইসরাঈল বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে এর অর্থ হবে, তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈলরা কিছু জিনিস নিছক প্রথাগতভাবে নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। আর একথায় যদি হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ হবে, নিজের প্রকৃতিগত অপছন্দ অথবা কোন রোগের কারণে তিনি কোন কোন জিনিস পরিহার করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানরা সেগুলো নিষিদ্ধ মনে করে নিয়েছিল। এ শেষোক্ত বক্তব্যটি বেশী প্রচলিত। পরবর্তী আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, বাইবেলে উট ও খরগোশ হারাম হবার যে বিধান লিখিত হয়েছে তা মূল তাওরাতের বিধান নয়। বরং ইহুদী আলেমরাই পরবর্তীকালে এ বিধান কিতাবের অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-160
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ كَثِیْرًاۙ
মোটকথা এই ইহুদী মতাবলম্বীদের এহেন জুলুম নীতির জন্য, তাদের মানুষকে ব্যাপকভাবে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার জন্য
তাফসীর :
টিকা:১৯৮) মধ্যবর্তী প্রাসঙ্গিক বিচ্ছিন্ন বাক্য খতম হবার পর এখান থেকে আবার পূর্বে বর্ণিত ভাষণের সিলসিলা শুরু হচ্ছে।
টিকা:১৯৯) অর্থাৎ তারা কেবল নিজেরা আল্লাহর পথ থেকে সরে গিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বরং এই সঙ্গে তারা এতবড় দুঃসাহসিক অপরাধ প্রবণতায় লিপ্ত হযে পড়েছে যে, দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যতগুলো আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে তাদের অধিকাংশের পেছনে ইহুদী মস্তিষ্ক ও ইহুদী পুঁজিকে সক্রিয় দেখা গেছে। হকের পথে ও সত্যের দিকে আহবান করার জন্য যে আন্দোলনই শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে ইহুদীরাই সবচেয়ে বড় বাধার প্রাচীর দাঁড় করিয়েছে। অথচ এই দুর্ভাগা জাতিটির কাছে আল্লাহর কিতাব আছে এবং তারা নবীদের উত্তরাধীকারী। তাদের সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে কমিউনিষ্ট আন্দোলন। ইহুদী মস্তিস্ক এ আন্দোলনটির স্রষ্টা। ইহুদী নেতৃত্বের ছত্রছায়ায় এ আন্দোলন অগ্রগতি লাভ করেছে। আল্লাহকে সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করে, প্রকাশ্যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে এবং আল্লাহর আনুগত্য ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দেবার বিঘোষিত সংকল্পের ভিত্তিতে সমগ্র মানবতার ইতিহাসে দুনিয়ার বুকে প্রথম খোদাদ্রোহী জীবন বিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠার অপরাধও এই তথাকথিত আহলে কিতাব জাতিটির দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সালামের উম্মত এই ইহুদীজাতিই ছিল এর উদগাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। আধুনিক যুগে কমিউনিজমের পরে গোমরাহীর সবচেয়ে বড় খুঁটি ফ্রয়েডের দর্শন, মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ফ্রয়েডও বনী ইসরাঈলেরই এক সন্তান।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-161
وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِؕ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا
তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য, আমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছি, যা পূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল। আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।
তাফসীর :
টিকা:২০০) তাওরাতে সুস্পষ্ট ভাষায় এ নির্দেশটি লিখিত রয়েছেঃ “যদি তুমি আমার লোকদের মধ্য থেকে যে তোমার কাছে থাকে এমন কোন অভাবীকে ঋণ দাও তাহলে তার সাথে ঋণদাতার ন্যায় ব্যবহার করো না। তার কাছে থেকে সুদও নিয়ো না। যদি তুমি কখনো নিজের প্রতিবেশীর কাপড় বন্ধকও রাখো তাহলে সূর্য ডোবার আগেই তারটা তাকে ফেরত দাও। কারণ সেটিই তার একমাত্র পরার কাপড়। সেটিই তার শরীর ঢাকার জন্য একমাত্র পোশাক। তা না হলে সে কি গায়ে দিয়ে ঘুমাবে? কাজেই সে ফরিয়াদ করলে আমি তার কথা শুনবো। কারণ আমি করুণাময়।” (যাত্রা পুস্তক ২২: ২৫-২৭)। এছাড়াও তাওরাতের আরো কয়েক স্থানে সুদ হারাম হবার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই তাওরাতের প্রতি ঈমানের দাবীদার ইহুদী সমাজ আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সুদখোর, সংকীর্ণমনা ও পাষাণ হৃদয় জাতি হিসেব সর্বত্র পরিচিত এবং এসব ব্যাপারে তাদেরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা হয়ে থাকে।
টিকা:২০১) সামনের দিকে সূরা আন আমের ১৪৬ আয়াতে যে বিষয়বস্তুর আলোচনা আসছে এখানে সম্ভবত সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ বনী ইসরাঈলদের ওপর এমন সব প্রাণী হারাম করে দেয়া হয় যাদের নখর রয়েছে। গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের ওপর হারাম করে দেয়া হয়। এছাড়াও সম্ভবত ইহুদী ফিকাহ শাস্ত্রে অন্য যে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতার সন্ধান পাওয়া যায়, এখানে সেদিকেও ইশারা করা হয়েছে। কোন দলের জীবন যাপনের ক্ষেত্র সংকীর্ণ করে দেয়া আসলে তার জন্য একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
টিকা:২০২) অর্থাৎ এ জাতির যেসব লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আনুগত্য পরিহার করে বিদ্রোহ ও অস্বীকৃতির পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রাখা হয়েছে। দুনিয়ায় যে ভীষণ শাস্তি তারা পেয়েছে ও পাচ্ছে তা আজ পর্যন্ত অন্য কোন জাতি পায়নি। দু’হাজার বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখনো দুনিয়ার কোথাও তারা সম্মানজনক কোন ঠাঁই করতে পারেনি। দুনিয়ায় তাদের বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সর্বত্র তারা বিদেশী। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি যুগও অতিক্রান্ত হয়নি যখন দুনিয়ার কোথাও না কোথাও তাদের লাঞ্ছিত ও বিধ্বস্ত হতে হয়নি। নিজেদের বিপুল ধনাঢ্যতা সত্ত্বেও কোথাও তাদের সম্মানের চোখে দেখা হয় না। আর সবচাইতে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন জাতির জন্ম হয় তারপর তারা খতম হয়ে যায় কিন্তু এ জাতিটির মৃত্যু হচ্ছে না। একে দুনিয়ায় তাদের لايموت فيها ولا يحيى অর্থাৎ ‘না জীবিত না মৃত’-জীবন্মৃত অবস্থার শাস্তি দেয়া হয়। এ জাতিটি যাতে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির জন্য একটি জীবন্ত শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয় এবং নিজের সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে এ শিক্ষাদান করতে থাকে যে, আল্লাহর কিতাব বগলে দাবিয়ে রেখে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা উঁচু করার পরিণাম এমনিই হয়ে থাকে-এটিই হচ্ছে এ জাতিটিকে জীবন্মৃত অবস্থায় টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য। আর আখেরাতের আযাব হবে ইনশাআল্লাহ এর চাইতেও বেশী কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক।
টিকা:১২৩) অর্থাৎ এখনো যদি তোমরা নিজেদের নাফরমানীর নীতি ও কার্যক্রম পরিহার করে বন্দেগীর সঠিক দৃষ্টিভংগী গ্রহণ করো, তাহলে তোমাদের রবের অনুগ্রহের ক্ষেত্র নিজেদের জন্য অনেক বেশী বিস্তৃত পাবে। কিন্তু যদি তোমরা নিজেদের এই অপরাধ বৃত্তি ও বিদ্রোহী মানসিকতার ওপর অবিচল থাকো তাহলে ভালভাবে জেনে রাখো, তাঁর গযব থেকে তোমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 146-147
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ
And unto those who are Jews, We forbade every (animal) with undivided hoof,
Allah says,
فَإِن كَذَّبُوكَ
If they deny you,
Allah says, if your opponents among the idolators, Jews and their likes reject you, O Muhammad,
قُل رَّبُّكُمْ ذُو رَحْمَةٍ وَاسِعَةٍ
Say:”Your Lord is the Owner of vast mercy…”
encouraging them to seek Allah’s vast mercy and follow His Messenger,
وَلَا يُرَدُّ بَأْسُهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ
and never will His wrath be turned back from the people who are criminals.
discouraging them from defying the Messenger, the Final Prophet, Muhammad.
Allah often joins encouragement with threats in the Qur’an. Allah said at the end of this Surah:
إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
Surely, your Lord is swift in retribution, and certainly He is Oft-Forgiving, Most Merciful. (6:165)
Allah also said,
وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ
But verily, your Lord is full of forgiveness for mankind in spite of their wrongdoing. And verily, your Lord is (also) severe in punishment. (13:6)
and,
نَبِّىءْ عِبَادِى أَنِّى أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ وَأَنَّ عَذَابِى هُوَ الْعَذَابُ الاٌّلِيمُ
Declare unto My servants, that truly, I am the Oft-Forgiving, the Most Merciful. And that My torment is indeed the most painful torment. (15:49-50)
and,
غَافِرِ الذَّنبِ وَقَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ الْعِقَابِ
The Forgiver of sin, the Acceptor of repentance, the Severe in punishment. (40:3)
and,
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ إِنَّهُ هُوَ يُبْدِىءُ وَيُعِيدُ وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ
Verily, the punishment of your Lord is severe and painful. Verily, He it is Who begins and repeats. And He is Oft-Forgiving, full of love. (85:12-14)
There are many other Ayat on this subject.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
ইরশাদ হচ্ছে-আমি ইয়াহূদীদের উপর সর্বপ্রকার নখ বিশিষ্ট জন্তু হারাম করে দিয়েছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের উপর হারাম করেছিলাম। কিন্তু পিঠের চর্বি, নাড়িভুড়ির চর্বি এবং হাড়ের সাথে মিশ্রিত চর্বি এই হারামের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই নখ বিশিষ্ট জীব হচ্ছে সেই পশু এবং পাখী যেগুলোর অঙ্গুলি কাটা কাটা এবং পৃথক পৃথক নয়। যেমন উট, উট পাখী, রাজ হাঁস এবং পাতি হাঁস। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ঐ জন্তুগুলো উদ্দেশ্য যেগুলোর অঙ্গুলি চিরা ও ফাটা হয় না। আবার অন্য এক বর্ণনায় সাঈদ (রঃ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা ঐ জন্তুগুলোকে বুঝানো হয়েছে যেগুলোর অঙ্গুলি বিচ্ছিন্ন ও পৃথক পৃথক। যেমন মোরগ । কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উট, উট পাখী, পাখী এবং মাছ উদ্দেশ্য। তাঁর থেকে আর একটি বর্ণনা আছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পাখী ও পাতি হাঁস এবং অনুরূপভাবে ঐ জন্তুগুলো যেগুলো উম্মুক্ত অঙ্গুলি বিশিষ্ট নয়। সুতরাং ইয়াহূদীরা ঐসব জন্তু এবং পাখী খেত যেগুলো উন্মুক্ত থাবা বিশিষ্ট। তারা বন্য গাধাও খেত না। কেননা, ওর থাবাও উটের মতই উন্মুক্ত নয়।
গরু এবং ছাগলের চর্বি দ্বারা ঐ চর্বি বুঝানো হয়েছে যা পাছার উপর পৃথকভাবে জমা হয়ে থাকে। ইয়াহূদীরা বলত-হযরত ইয়াকুব (আঃ) এগুলো হারাম মনে করতেন বলে আমরাও হারাম মনে করে থাকি। পিঠের চর্বি হারাম ছিল না। ইমাম আবু জাফর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দটি বহুবচন। একবচন হচ্ছে (আরবী) শব্দ। পেটের মধ্যকার জিনিসগুলোকে (আরবী) বলা হয়, যেমন নাড়িভুড়ি ইত্যাদি। হাড়ের সঙ্গে যে চর্বি মিশ্রিত থাকে সেটাও হালাল ছিল। অনুরূপভাবে , বক্ষ, মাথা এবং চোখের চর্বিও হালাল ছিল। আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি যে তাদের উপর এই সংকীর্ণতা আনয়ন করেছিলাম তার একমাত্র কারণ ছিল তাদের বিদ্রোহ ও বিরুদ্ধাচরণ। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী)| -অর্থাৎ “যে বস্তুগুলো তাদের উপর পূর্বে হালাল ও পবিত্র ছিল সেগুলো তাদের উপর হারাম করে দিয়েছিলাম, কারণ ছিল এই যে, তারা বিদ্রোহ ও বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথে যেতে বাধা দিয়েছিল। সুতরাং এটা ছিল তাদের উপর আমার শাস্তি । আর এই শাস্তি প্রদানে আমি সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ।” (৪:১৬০)
ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এর অবৈধতা সম্পর্কে তোমাকে আমি যা বললাম এটাই সত্য ও সঠিক। আর ইয়াহূদীরা যে বলছে হযরত ইয়াকুব (আঃ) ওগুলো হারাম মনে করতেন বলেই তারা হারাম মনে করছে এটা মোটেই সত্য নয়।
হযরত উমার (রাঃ) যখন সংবাদ পান যে, সুমরা মদ বিক্রী করেছে তখন তিনি বলেনঃ আল্লাহ সুমরাকে ধ্বংস করুন! সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ ইয়াহুদীদের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন, কেননা তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেয়া হয়েছিল, তখন তারা তা বের করে পরিষ্কার করতঃ বিক্রী করে দিতো। ”
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মক্কা বিজয়ের বছরে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ) মদ্য, মৃত, শূকর এবং মূর্তির বিক্রয়ও হারাম করে দিয়েছেন।” তখন জিজ্ঞেস করা হলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মৃতজন্তুর চর্বি দ্বারা চামড়ায় তেল লাগানো, নৌকায় ঐ চর্বি মাখানো এবং ওটা জ্বালিয়ে আলো লাভ করণ সম্পর্কে আপনার মত কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “না, ওটা হারাম।” তারপর তিনি বললেনঃ “আল্লাহ ইয়াহূদীদেরকে ধ্বংস করুন! কেননা, যখন তাদের জন্যে চর্বি হারাম করে দেয়া হয় তখন তারা ওটা পরিষ্কার করে বিক্রী করতে শুরু করে এবং ওর মূল্য খেতে লাগে।” (একটি দল কয়েক পন্থায় এটা তাখরীজ করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন-“আল্লাহ ইয়াহূদীদেরকে ধ্বংস করুন, তাদের উপর চর্বি হারাম করা হয়, তখন তারা ওটা বিক্রী করে এবং ওর মূল্য খেতে লাগে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাকামে ইবরাহীমের পিছনে বসেছিলেন। এমন সময় তিনি স্বীয় চক্ষু আকাশের দিকে উঠিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ ইয়াহুদীদের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন।” একথা তিনি তিনবার বলেন। তার পর তিনি বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের উপর চর্বি হারাম করেছিলেন, তখন তারা ওটা বিক্রী করতঃ ওর মূল্য ভক্ষণ করে। অথচ আল্লাহ যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর কোন জিনিস হারাম করেন তখন ওর মূল্যও তাদের উপর হারাম হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে মারফু রূপে বর্ণনা করেছেন)
ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মসজিদে হারামে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে বসেছিলেন। এমন সময় তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠেন। অতঃপর বলেনঃ “আল্লাহ ইয়াহুদীদের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন! তাদের উপর চর্বি হারাম করা হলে তারা ওটা বিক্রী করে এবং ওর মূল্য ভক্ষণ করে। অথচ, নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোন কওমের উপর কোন কিছু হারাম করেন তখন ওর মূল্যও তাদের উপর হারাম হয়ে যায়।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে এটা তাখরীজ করেছেন)
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট আগমন করি। সে সময় তিনি রুগ্ন ছিলেন। আমরা তাঁর ইয়াদত (রোগী পরিদর্শন) করছিলাম। তিনি শায়িত ছিলেন এবং আপন চাদর দ্বারা স্বীয় মুখমণ্ডল ঢেকে ছিলেন। অতঃপর তিনি চাদর খানা সরিয়ে দিয়ে বলেনঃ “ইয়াহূদীদের উপর চর্বি হারাম করা হলে তারা ওটা বিক্রী করে ওর মূল্য খেতে শুরু করে, সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! যা খাওয়া হারাম তা বিক্রী করাও হারাম।”
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার বিরুদ্ধবাদী দল ইয়াহূদী এবং মুশরিকরা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তাদেরকে বলে দাও তোমাদের প্রভু বড়ই করুণাময়! একথা বলে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যে, তারাও যেন তার সুপ্রশস্ত ও ব্যাপক করুণা যা করে, তাহলে রাসূল (সঃ)-এর অনুসরণের তাদেরকে তাওফীক প্রদান করা হবে। কেননা, যদি তিনি অনুগ্রহ না করেন তবে পাপী ও অপরাধীদের থেকে আল্লাহর শাস্তি কেউই টলাতে পারবে না। এখানে আগ্রহ উৎপাদন ও ভয় প্রদর্শন উভয়ই হচ্ছে। ভাবার্থ হচ্ছে-তোমরা রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ কর না, নতুবা তার শাস্তিতে পাকড়াও হয়ে যাবে। সব জায়গাতেই আল্লাহ তা’আলা আগ্রহ উৎপাদন ও ভয় প্রদর্শন এক সাথেই এনেছেন। যেমন এই সূরার শেষে রয়েছে- “আল্লাহ সত্বর শাস্তি প্রদানকারী এবং ক্ষমাশীল।” অর্থাৎ তিনি লোকদের পাপরাশি ক্ষমাকারী আবার তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদানকারীও বটে। অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! আমার বান্দাদেরকে তুমি জানিয়ে দাও-আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু আর আমার শাস্তিও হচ্ছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “তিনি পাপ মার্জনাকারী, তাওবা কবুলকারী এবং কঠোর শাস্তি প্রদানকারী।” আল্লাহ তা’আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “নিশ্চয়ই তোমার প যত্রভুর পাকড়াও অত্যন্ত কঠোর। তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং পুনর্বারও সৃষ্টি করবেন। আর তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল, অত্যন্ত স্নেহ পরায়ণ।” এ সম্পর্কীয় বহু আয়াত রয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
১৪৬-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:
ذِيْ ظُفُرٍ ‘নখবিশিষ্ট জীব’বলতে যে প্রাণীর নখ পৃথক নয়, বরং এক সাথে মিশে থাকে। যেমন উট। الْحَوَايَآ ‘নাড়ি-ভুঁড়ির চর্বি’ যে চর্বি নাড়িভুঁড়ির সাথে মিশে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের জুলুমের কারণে যে সকল প্রাণী ও বস্তু খাওয়া হারাম করেছিলেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন। সূরা নিসার ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِيْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبٰتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ كَثِيْرًا)
“ভাল ভাল যা ইয়াহূদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি তাদের সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেয়ার কারণে।”
তাদের ওপর হারামকৃত প্রাণীর অন্যতম হল: ذو ظفر অর্থাৎ নখবিশিষ্ট পশু। নখবিশিষ্ট পশু বলতে এমন প্রাণী যার আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক নয়। যেমন: উট, উটপাখি, হাঁস ইত্যাদি। জুলুমের কারণে এসব হারাম ছিল। কেবল সেসব প্রাণী বৈধ ছিল যাদের পায়ের ক্ষুর বা আঙ্গুল ফাঁক ফাঁক হত। (আয়সারুত তাফাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অনুরূপভাবে গরু-ছাগলের চর্বিও তাদের জন্য হারাম ছিল। তবে যে চর্বি গরু অথবা ছাগলের পিঠে হয় কিংবা নাড়ীভুড়ির সাথে মিশে থাকে অথবা হাড়ের সাথে মিশে থাকে তা হালাল ছিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللّٰهُ الْيَهُوْدَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمُ فَجَمَّلُوْهَا فَبَاعُوْهَا
ইয়াহূদীদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত, কারণ তাদের ওপর চর্বি হরাম করা হয়েছিল। কিন্তু (নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে) চর্বি রিফাইন করত অতঃপর বিক্রি করত। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৬০, সহীহ মুসলিম হা: ১৫৮২)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
قَاتَلَ اللَّهُ الْيَهُودَ حُرِّمَتْ عَلَيْهِمْ الشُّحُومُ فَبَاعُوهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا
ইয়াহূদীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করুক। তাদের ওপর চর্বি হারাম করা হয়েছিল। কিন্তু (নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে) তা বিক্রি করত এবং তার মূল্য ভোগ করত। (সহীহ বুখারী হা: ২২২৪)
পরের আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমার দুশমনদের বলে দাও: আল্লাহ তা‘আলা যেমন দয়ালু তেমনি পাপিষ্ঠদের শাস্তি দানে কঠোর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ)
“তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানে তো কঠোর।”(সূরা রা‘দ ১৩:৬)
نَبِّئْ عِبَادِيْٓ أَنِّيْٓ أَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ – وَأَنَّ عَذَابِيْ هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيْمُ
“আমার বান্দাদেরকে বলে দাও যে, আমি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তি- সে অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি!” (সূরা হিজর ১৫:৪৯-৫০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইয়াহূদীদের জুলুমের কারণে তাদের ওপর শাস্তিস্বরূপ এসব বিধান দেয়া হয়েছিল।
২. আল্লাহ তা‘আলা যেমন দয়ালু তেমন শাস্তি দানে কঠোর, সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার দয়ার আশা রাখতে হবে এবং আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির কথাও ভাবতে হবে।