(Book# 114/٢٨٠)-৪৮২ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম সুরা:৬ ১৪৮-১৫০ নং আয়াত:- سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ মুশরিকরা অবশ্যই বলবেঃ Those who committed Shirk say:

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٨٠)-৪৮২
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৪৮-১৫০ নং আয়াত:-

سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ
মুশরিকরা অবশ্যই বলবেঃ
Those who committed Shirk say:

سَیَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡا لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ مَاۤ اَشۡرَکۡنَا وَ لَاۤ اٰبَآؤُنَا وَ لَا حَرَّمۡنَا مِنۡ شَیۡءٍ ؕ کَذٰلِکَ کَذَّبَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ حَتّٰی ذَاقُوۡا بَاۡسَنَا ؕ قُلۡ ہَلۡ عِنۡدَکُمۡ مِّنۡ عِلۡمٍ فَتُخۡرِجُوۡہُ لَنَا ؕ اِنۡ تَتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا تَخۡرُصُوۡنَ ﴿۱۴۸﴾

মুশরিকরা (তোমার কথার উত্তরে) অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে আমরা শির্‌ক করতামনা, আর না আমাদের বাপ-দাদারা করত, আর কোনো জিনিসও আমরা হারাম করতামনা। বস্তুতঃ এভাবেই তাদের পূর্ব যুগের কাফিরেরা(রাসূলদেরকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা আমার শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। তুমি জিজ্ঞেস করঃ তোমাদের কাছে কি কোন দলীল প্রমাণ আছে? থাকলে আমার সামনে পেশ কর। তোমরা ধারণা ও অনুমান ব্যতীত আর কিছুরই অনুসরণ করনা, তোমরা সম্পূর্ণ আনুমানিক কথা ছাড়া আর কিছুই বলছনা।
قُلۡ فَلِلّٰہِ الۡحُجَّۃُ الۡبَالِغَۃُ ۚ فَلَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۴۹﴾
তুমি বলে দাওঃ সত্য ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ দলীল প্রমাণতো একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে, তিনি চাইলে তোমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করতেন।

قُلۡ ہَلُمَّ شُہَدَآءَکُمُ الَّذِیۡنَ یَشۡہَدُوۡنَ اَنَّ اللّٰہَ حَرَّمَ ہٰذَا ۚ فَاِنۡ شَہِدُوۡا فَلَا تَشۡہَدۡ مَعَہُمۡ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ وَ ہُمۡ بِرَبِّہِمۡ یَعۡدِلُوۡنَ ﴿۱۵۰﴾٪
তুমি আরও বলঃ আল্লাহ এসব পশু হারাম করেছেন, এর সাক্ষ্য যারা দিবে সেই সাক্ষীদেরকে তোমরা নিয়ে এসো। তারা যদি সাক্ষ্য দেয় তাহলে তুমি তাদের সাথে সাক্ষ্য দিবেনা, তুমি এমন লোকদের খেয়াল খুশির (বাতিল ধ্যান ধারণার) অনুসরণ করনা যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, পরকালের প্রতি ঈমান আনেনা এবং তারা অন্যান্যদেরকে নিজেদের রবের সমমর্যাদা দান করে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

১৪৮-১৫০ নং আয়াতের তাফসীর:

تَخْرُصُوْنَ অর্থাৎ তোমরা মিথ্যা বলছ।

الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ

অর্থাৎ বাতিল দাবীর বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ।

يَعْدِلُوْنَ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সাথে মূর্তি ও অন্যান্য বাতিল মা‘বূদদেরকে সমতুল্য করে।

এ আয়াতগুলোতে একটি বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে। মুশরিকরা তাদের শির্ক ও হালালকে হারাম করে নেয়া সম্পর্কে যে দলীল প্রমাণ পেশ করে থাকে আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিচ্ছেন।

তাদের দাবী, আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে আমাদের মন পরিবর্তন করতে পারতেন। ঈমান আনার তাওফীক দিতে পারতেন। তিনিই ঈমান আনতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন তাই আমরা শির্কে লিপ্ত রয়েছি। অতএব আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় আমরা শির্ক করছি। অনুরূপভাবে তারা বলত:

(لَوْ شَا۬ءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنٰهُمْ)

“দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না।”(সূরা যুখরুফ ৪৩:২০)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَالَ الَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا لَوْ شَا۬ءَ اللّٰهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُوْنِه۪ مِنْ شَيْءٍ)

“মুশরিকরা বলে, ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা ও আমরা তাঁকে ব্যতীত অপর কোন কিছুর ‘ইবাদত করতাম না।’(সূরা নাহল ১৬:৩৫)

আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ দাবীর প্রতিবাদ করে বলেন:

(وَقَالُوْا لَوْ شَا۬ءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنٰهُمْ ط مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ق إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُوْن) ‏

“তারা বলে, দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।”(সূরা যুখরুফ ৪৩:২০)

তাদের এ সব দাবী ও সংশয় কয়েক দিকে থেকে অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত। ১. তাদের দাবী সত্য হলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দিতেন না। ২. দাবীর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ থাকতে হবে। তাদের দাবীর প্রমাণ কেবল ধারণা ও অনুমান যা সত্যের কোন উপকারে আসে না। ৩. সকল অকাট্য প্রমাণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, কারো কোন ওযর বাকি নেই। যে অকাট্য প্রমাণের ব্যাপারে সকল নাবী রাসূল, আসমানি কিতাব ও সুস্থ বিবেক একমত। ৪. আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি বান্দার ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেননি যা তাদের পক্ষে পালন করা সম্ভব হবে না আর এমন কিছু হারাম করে দেননি যা বর্জন করা অসম্ভব। ৫. আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে কোন কাজ করার জন্য বাধ্য করেননি। বরং তাদের ইখতিয়ারাধীন করে দিয়েছেন। ইচ্ছা হলে করবে, ইচ্ছা না হলে করবে না। (তাফসীর সা’দী পৃঃ ২৭৫-২৭৬)

এ সম্পর্কে এ সূরাতেই পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী যহহাক (রহঃ) বলেন: যারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য তাদের কোন প্রমাণ নেই বরং সকল প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে। আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করেন। তিনি বলেন:

(وَلَوْ شَا۬ءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَّاحِدَةً وَّلَا يَزَالُوْنَ مُخْتَلِفِيْنَ – إِلَّا مَنْ رَّحِمَ رَبُّكَ ط وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ ط وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ)

“তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমস্ত‎ মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে, তবে তারা নয়, যাদেরকে তোমার প্রতিপালক দয়া করেন এবং তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। ‘আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই; তোমার প্রতিপালকের এ কথা পূর্ণ হবেই।”(সূরা হূদ ১১:১১৮-১১৯)

আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর কাজের জন্য কৈফিয়ত চাওয়ার কেউ নেই। কিন্তু তিনি বান্দাদের কাজের জন্য কৈফিয়ত চাইবেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে দোষ দিয়ে পরকালে পার পাওয়া যাবে না, বরং নিজের কাজের জন্য নিজেকেই আসফোস করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. তাকদীরের দোহাই দিয়ে অপরাধ করা ও তার ওপর বহাল থাকা ইবলিসের স্বভাব।
২. যে প্রমাণের কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই তার কোন মূল্য নেই।
৩. সাক্ষ্য দেয়া ও সাক্ষী হাজির করা শরীয়তসম্মত বিষয়।
৪. যারা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে তাদের অনুসরণ করা হারাম।
৫. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন, তাঁর ইচ্ছার ওপর সব কিছু নির্ভর করে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 148-150

سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ

Those who committed Shirk say:

A False Notion and its Rebuttal

Allah tells;

سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ

Those who committed Shirk say:

Here Allah mentioned a debate with the idolators, refuting a false notion they have over their Shirk and the things that they prohibited.

They said, surely, Allah has full knowledge of the Shirk we indulge in, and that we forbid some kinds of wealth. Allah is able to change this Shirk by directing us to the faith, – they claimed – and prevent us from falling into disbelief, but He did not do that. Therefore – they said Allah indicated that He willed, decided and agreed that we do all this. They said,

لَوْ شَاء اللّهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا ابَاوُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن شَيْءٍ

“If Allah had willed, we would not have taken partners (in worship) with Him, nor would our fathers, and we would not have forbidden anything.”

Allah said in another Ayah,

وَقَالُواْ لَوْ شَأءَ الرَّحْمَـنُ مَا عَبَدْنَـهُمْ

And they said:”If it had been the will of the Most Gracious (Allah), we should not have worshipped them (false deities).” (43:20)

Similar is mentioned in Surah An-Nahl.

Allah said next,

كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم

Likewise belied those who were before them,

for by using and relying on this understanding, the misguided ones before them were led astray. This notion is false and ungrounded, for had it been true, Allah would not have harmed them, destroyed them, aided His honorable Messengers over them, and made them taste His painful punishment.

حَتَّى ذَاقُواْ بَأْسَنَا

till they tasted Our wrath.

قُلْ هَلْ عِندَكُم مِّنْ عِلْمٍ

Say:”Have you any knowledge…”

that Allah is pleased with you and with your ways,

فَتُخْرِجُوهُ لَنَا

that you can produce before us.

and make it plain, apparent and clear for us.

However,

إِن تَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ

Verily, you only follow the Zann,

doubts and wishful thinking,

وَإِنْ أَنتُمْ إَلاَّ تَخْرُصُونَ

and you do nothing but lie.

about Allah in the false claims that you utter.

Allah said next,

قُلْ فَلِلّهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ فَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ
Say:”With Allah is the perfect proof and argument; had He so willed, He would indeed have guided you all.”

Allah said to His Prophet;

قُلْ

Say, (O Muhammad, to them),

فَلِلّهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ

“With Allah is the perfect proof and argument…,”

the perfect wisdom and unequivocal proof to guide whom He wills and misguide whom He wills.

فَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ

had He so willed, He would indeed have guided you all.

All of this happens according to His decree, His will, and His choice. So in this way, He is pleased with the believers, and angry with the disbelievers. Allah said in other Ayat,

وَلَوْ شَأءَ اللَّهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدَى

And had Allah willed, He could have gathered them together (all) on true guidance, (6:35)

and,

وَلَوْ شَأءَ رَبُّكَ لامَنَ مَن فِى الاٌّرْضِ

And had your Lord willed, those on earth would have believed, all of them together. (10:99)

and,

وَلَوْ شَأءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ

إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبّكَ لَامْلَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

And if your Lord had so willed, He could surely have made mankind one Ummah, but they will not cease to disagree. Except him on whom your Lord has bestowed His mercy and for that did He create them. And the Word of your Lord has been fulfilled:”Surely, I shall fill Hell with Jinns and men all together.” (11:118-119)

Ad-Dahhak said,

“No one has an excuse if he disobeys Allah. Surely, Allah has the perfect proof established against His servants.”

Allah said

قُلْ هَلُمَّ شُهَدَاءكُمُ

Say:”Bring forward your witnesses,

produce your witnesses,

الَّذِينَ يَشْهَدُونَ أَنَّ اللّهَ حَرَّمَ هَـذَا

who can testify that Allah has forbidden this.”

which you have forbidden and lied and invented about Allah in this regard,

فَإِن شَهِدُواْ فَلَ تَشْهَدْ مَعَهُمْ

Then if they testify, do not testify with them.

because in this case, their testimony is false and untrue,

وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاء الَّذِينَ كَذَّبُواْ بِأيَاتِنَا وَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِالاخِرَةِ وَهُم بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ

And do not follow the vain desires of those who belie Our Ayat, and such as believe not in the Hereafter, and they hold others as equal with their Lord.

by associating others with Allah in worship and treating them as equals to Him.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

১৪৮-১৫০ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে একটা বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা নিজেদের শিরক ও হালালকে হারাম করে নেয়া সম্পর্কে যে সন্দেহ পোষণ করতে, আল্লাহ পাক তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি তাদের শিক ও হারাম করে নেয়া সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করছেন। সেই সন্দেহ ছিল এই যে, তারা বলতো-আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমাদের মনকে পরিবর্তন করতে পারতেন, তিনি আমাদেরকে ঈমানের তাওফীক প্রদানে সক্ষম ছিলেন এবং আমাদের প্রতিবন্ধক হয়ে তিনি আমাদেরকে কুফরী থেকে বিরত রাখতে পারতেন। কিন্তু এরূপ যখন তিনি করেননি তখন এটা প্রমাণিত হলো যে, তিনি এটাই চান এবং আমাদের এই কাজে তিনি সম্মত। তাই মহান আল্লাহ তাদের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে আমরা শিক করতাম এবং আমাদের বাপ-দাদারাও না, না আমরা কোন জিনিসকে হারাম করে নিতাম। অনুরূপভাবে তারা বলতোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ যদি চাইতেন তবে আমরা তাদের ইবাদত করতাম না।” (৪৩:২০) সুতরাং আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরূপই তাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।” ভাবার্থ এই যে, এভাবেই পূর্ববর্তী লোকেরাও পথভ্রষ্ট হয়েছিল। আর এটা হচ্ছে খুবই নিম্নমানের, ভিত্তিহীন ও ছেলেমি যুক্তি। যদি এটা সঠিক হতো তবে তাদের পূর্ববর্তীদের উপর কখনও আল্লাহর শাস্তি আসতো না এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হতো না। আর মুশরিকদেরকে প্রতিশোধের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে হতো না। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি ঐ কাফির ও মুশরিকদেরকে বলে দাও-তোমরা কি করে জানতে পারলে যে, আল্লাহ তোমাদের কাজে সন্তুষ্ট? যদি তোমাদের এ দাবীর পিছনে কোন দলীল থাকে তবে তা পেশ কর। তোমরা কখনও এটা প্রমাণ করতে পারবে না। তোমরা শুধু অনুমান ও মিথ্যা ধারণার পিছনে পড়ে রয়েছ। ধারণা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজে বিশ্বাস। তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছে। এই মুশরিকরা বলে- “আমরা শুধু এই উদ্দেশ্যে মূর্তির উপাসনা করছি যে, তাদের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবো।” আল্লাহ বলেন যে, তারা তাদের মাধ্যমে কখনও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে না ।

(আরবী) আল্লাহ যদি চাইতেন তবে তারা শিরক করতো না। (৬:১০৭) ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবাই যে হিদায়াত লাভ করতে এতে কোন সন্দেহ নেই। সত্যভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ দলীল প্রমাণ তো একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে সবাই সুপথ প্রাপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি বলে দাও যে, আল্লাহর হুজ্জত বা দলীল হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ দলীল এবং তাঁর হিকমত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ হিকমত। কে যে হিদায়াত লাভের অধিকারী এবং কে পথভ্রষ্ট হওয়ার যোগ্য তা তিনিই ভাল জানেন। সবকিছুই তার ক্ষমতা ও ইচ্ছার মধ্যে রয়েছে। তিনি মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং কাফিরদের প্রতি অসন্তুষ্ট। তিনি ইচ্ছা করলে ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত লোকই ঈমান আনতে। তিনি চাইলে সবকে একই কওম ও একই জাতি বানিয়ে দিতেন। তিনি যে ওয়াদা করেছেন যে, জাহান্নামকে তিনি দানব ও মানব দ্বারা পূর্ণ করবেন। তার এ ওয়াদা পূর্ণ হবেই। বিদ্রোহী ও বিরুদ্ধবাদীদের কোনই দলীল নেই। তাই আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তুমি তাদেরকে বলে দাও-যদি তোমাদের দাবীর অনুকূলে সাক্ষী থাকে তবে তাদেরকে হাযির কর, যারা সাক্ষ্য দেবে যে হ্যাঁ, আল্লাহ এসব জিনিস হারাম করেছিলেন। আর যদি তারা এ ধরনের মিথ্যাবাদী সাক্ষী হাযির করেও দেয় তবে হে নবী (সঃ)! তুমি কিন্তু এরূপ সাক্ষ্য দেবে না। কেননা তাদের এ সাক্ষ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক। তুমি ঐ লোকদের সঙ্গী হয়ো না যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে না এবং স্বীয় প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদেরকে তাঁর শরীক ও সমকক্ষ বানিয়ে নেয়।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-
[১] মহান আল্লাহ এখানে এটাই বলছেন যে, এ এমন একটি খোঁড়া দলীল যা প্রতিটি মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী উম্মত তাদের রাসূলদের সাথে ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে তারা রাসূলদের দাওয়াতকে প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট ছিল। কিন্তু এ জাতীয় দলীল-প্রমাণাদি ও যুক্তি-তর্কাদি তাদের কোন কাজে আসে নি। তারা এর মাধ্যমে সাময়িক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের উপর আল্লাহর কঠোর শাস্তি আপতিত হয়েছে, আর তারা ধ্বংস হয়েছে। যদি তাদের এসব যুক্তি-তর্ক সঠিক হত, তবে তা সে সমস্ত উম্মতের উপর আল্লাহর শাস্তি আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াত। আর যেহেতু তাদের উপর আযাব আপতিত হয়েছিল এবং এটাও জানা কথা যে, আল্লাহ তা’আলা শাস্তির অধিকারী না হলে কাউকে শাস্তি দেন না, এতেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাদের এ ধরনের যুক্তি-প্রমাণ অযৌক্তিক, বরং মিথ্যা সন্দেহ। কারণ: যদি তাদের যুক্তি সঠিক হত, তবে তাদের উপর শাস্তি আসত না।

যে কোন যুক্তি-প্রমাণ জ্ঞান ও দলীল নির্ভর হতে হয়, কিন্তু যদি সেটি হয় কেবল অনুমান ও ধারণা নির্ভর, তবে সেটা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। কেননা, ধারণা কখনো সত্য ও সঠিক পথের দিশা দেয় না। সুতরাং সেটি বাতিল হতে বাধ্য। আর এজন্যই আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াতে কাফেরদের দাবীর বিপরীতে বলছেন যে, ‘তোমাদের কাছে কি কোন জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? যদি তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান থাকত, তবে তাদের মত ভীষণ ঝগড়াটে লোক তা পেশ করা থেকে পিছপা হতো না। তারপরও যখন তারা জ্ঞান-ভিত্তিক দলীল প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে, তখন এটাই প্রমাণ করছে যে, তাদের দাবীর সপক্ষে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। বরং তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল”। আর যে তার প্রমাণাদি কল্পনা নির্ভর করেছে সে অবশ্যই ভুলের উপর আছে। তদুপরি যদি সে সীমালঙ্ঘন ও অনাচারের আশ্রয় নেয়, তাহলে সেটা যে কেমন অন্যায় তা বলাই বাহুল্য।

চুড়ান্ত প্রমাণাদির মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তা’আলা। যার প্রমাণ পেশের পরে আর কারও কোন ওজর-আপত্তি থাকতে পারে না। যার প্রদত্ত প্রমাণের সত্যতার উপর সমস্ত নবী-রাসূল, আসমানী কিতাবসমূহ, নবীদের মতামত, সঠিক বিবেক, সরল-সোজা মনের টান, উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীও সাক্ষ্য দিচ্ছে। সুতরাং এ সব অকাট্য প্রমাণের বিপরীতে কাফের ও মুশরিকদের যুক্তি অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল। কারণ, হক্কের বিপরীতে বাতিল ছাড়া আর কিছু নেই।

তাছাড়া আল্লাহ্ তা’আলা প্রতিটি সৃষ্টিকেই কোন কিছু করার ও ইচ্ছা করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। যার মাধ্যমে সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ তা’আলা কারও অসাধ্য কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেন নি। তাছাড়া এমন কিছুও হারাম করেন নি, যা ত্যাগ করা মানুষের জন্য অসম্ভব। সুতরাং এরপরও ভাগ্য ও পূর্ববর্তী ফয়সালার দোহাই দেয়া শুধু অন্যায়ই নয় বরং গোঁড়ামী।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে তাদের কাজের জন্য জবরদস্তি করেননি। বরং আল্লাহ তা’আলা তাদের কর্মকাণ্ডকে তাদেরই পছন্দ অনুসারে নির্ধারণ করেছেন। যদি তারা চায় করবে, না চাইলে করবে না। এটা এমন এক বিষয় যার বাস্তবতা অস্বীকার করার জো নেই। যদি কেউ অস্বীকার করে তবে সে অবশ্যই উদ্ধত ও গোঁয়ার। সে যেন একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুকে অস্বীকার করেছে। প্রতিটি মানুষই ইচ্ছাকৃত নড়াচড়া ও ইচ্ছাবহির্ভুত নড়াচড়ার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। যদিও সবই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার অধীন।

যারা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে অন্যায় কাজের পক্ষে দলীল পেশ করে, তারা স্ববিরোধিতায় লিপ্ত। তারা এ দোহাই সব জায়গায় মেনে নেয় না। যদি কেউ তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে কিংবা তাদের সম্পদ হরণ করে বা অনুরূপ কোন কাজ করে, এবং বলে যে, তোমার ভাগ্যে ছিল, তাহলে তারা সেটাকে গ্রহণ করে না। বরং তারা তাদের নিজেদের ঐ সমস্ত ব্যাপারে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে মোটেই পিছপা হয় না। সুতরাং তাদের জন্য আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না, তারা অন্যায় ও অপরাধের সময় শুধু ভাগ্যের দোহাই দেয়, অন্য সময় নয়।

তাদের ভাগ্যের দোহাই দেয়া উদ্দেশ্য নয়, তারা জানে যে এটি কোন প্রমাণও নয়। বরং এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হলো, হকের বিরোধিতা করা। তারা হক কথা ও কাজকে আক্রমনকারী মনে করে তা দূর করার জন্য মনে যা আসে তাই বলে, যদিও তারা নিশ্চিত যে তা ভুল। [সা’দী]
[২] অর্থাৎ আল্লাহর কাছেই চুড়ান্ত প্রমাণাদি। তাঁর প্রমাণাদি দ্বারা তিনি তোমাদের যাবতীয় ধারণা ও অনুমানের মুলোৎপাটন করতে পারেন। [মুয়াসসার]

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১২৪) অর্থাৎ অপরাধী ও অসৎলোকেরা নিজেদের অপরাধ ও অসৎকাজের স্বপক্ষে হামেশা যে ধরনের ওজর পেশ করে এসেছে তারাও সে একই ওযর পেশ করতে থাকবে। তারা বলবে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ‌ চান আমরা শির্‌ক করি এবং যে জিনিসগুলোকে আমরা হারাম করে নিয়েছি সেগুলো আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাক। নয়তো আল্লাহ‌ যদি চাইতেন আমরা এমনটি না করি তাহলে এ ধরনের কাজ করা আমাদের পক্ষে কেমন করে সম্ভবপর হতো? যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা এসব কিছু করছি তাই আমরা ঠিকই করছি। কাজেই এ ব্যাপারে কোন দোষ হয়ে থাকলে সেজন্য আমরা নই, আল্লাহ‌ দায়ী। আর আমরা যা কিছু করছি এমনটি করতে আমরা বাধ্য। কারণ এছাড়া অন্য কিছু করা আমাদের সাধ্যের বাইরে।

টিকা:১২৫) এটি তাদের ওজুহাতের পূর্ণাংগ জওয়াব। এ জওয়াবটি বুঝার জন্য এর যথার্থ বিশ্লেষণ করতে হবেঃ

এখানে প্রথম কথা বলা হয়েছে, নিজেদের অন্যায় কাজ ও গোমরাহীর জন্য আল্লাহর ইচ্ছাকে ওযর হিসেবে পেশ করা এবং এর বাহানা বানিয়ে সঠিক হেদায়াত ও পথনির্দেশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো অপরাধীদের প্রাচীন রীতি হিসেবে চলে আসছে। এর পরিণামে দেখা গেছে অবশেষে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সত্যের বিরুদ্ধে চলার অশুভ পরিণাম তারা স্বচক্ষে দেখে নিয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, তোমরা যে ওযরটি পেশ করছো তার পেছনে প্রকৃত জ্ঞানগত ও তথ্যগত কোন ভিত্তি নেই। বরং আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে তোমরা এটি পেশ করছো। তোমরা নিছক কোথাও আল্লাহর ইচ্ছার কথা শুনতে পেয়েছো তারপর তার ওপর অনুমানের একটি বিরাট ইমারত দাঁড় করিয়ে দিয়েছো। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা কি, একথা বুঝার চেষ্টাই তোমরা করোনি। তোমরা আল্লাহর ইচ্ছা বলতে মনে করছো, চোর যদি আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে চুরি করে তাহলে সে অপরাধী নয়। কারণ সে তো আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে চুরি করেছে। অথচ মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে এই যে, সে কৃতজ্ঞতা ও কুফরী, হেদায়াত ও গোমরাহী এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতার মধ্য থেকে যে পথটিই নিজের জন্য নির্বাচিত করবে, আল্লাহ‌ তার জন্য সে পথটিই উন্মুক্ত করে দেবেন। তারপর মানুষ ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুল যে কাজটিই করতে চাইবে, আল্লাহর নিজের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমের দৃষ্টিতে যতটুকু সঙ্গত মনে করবেন তাকে সে কাজটি করার অনুমতি ও সুযোগ দান করবেন। কাজেই তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে যদি শিরক ও পবিত্র জিনিসগুলোকে হারাম গণ্য করার সুযোগ লাভ করে থাকো তাহলে এর অর্থ কখনোই এ নয় যে, তোমরা নিজেদের এসব কাজের জন্য দায়ী নও এবং এর জন্য তোমাদের জওয়াবদিহি করতে হবে না। তোমরা নিজেরাই নিজেদের ভুল পথ নির্বাচন, ভুল সংকল্প গ্রহণ ও ভুল প্রচেষ্টার জন্য দায়ী।

সবশেষে একটি বাক্যের মধ্যে আসল কথাটি বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছেঃ

فَلِلَّهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ فَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ নিজেদের ওযর পেশ করতে গিয়ে তোমরা এ মর্মে যে যুক্তিটির অবতারণা করেছো যে, “আল্লাহ চাইলে আমরা শির্‌ক করতাম না।” এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ কথাটি ব্যক্ত হয়নি। সম্পূর্ণ কথাটি বলতে হলে এভাবে বলোঃ “আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করতেন।” অন্য কথায় তোমরা নিজেরা নিজেদের নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক পথ গ্রহণ করতে প্রস্তুত নও। বরং তোমরা চাও, আল্লাহ‌ যেভাবে ফেরেশতাদেরকে জন্মগতভাবে সত্যানুসারী বানিয়েছেন সেভাবে তোমাদেরকেও বানাতেন। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ‌ এ ইচ্ছা করলে অবশ্যি করতে পারতেন। কিন্তু এটি তাঁর ইচ্ছা নয়। কাজেই নিজেদের জন্য তোমরা নিজেরাই যে গোমরাহীটি পছন্দ করে নিয়েছো আল্লাহ‌ তার মধ্যেই তোমাদের ফেলে রাখবেন।

টিকা:১২৬) অর্থাৎ যদি তারা সাক্ষ্য দানের দায়িত্ব অনুধাবন করে এবং যে বিষয়ের জ্ঞান মানুষের আছে সে বিষয়ের সাক্ষ্যই তার দেয়া উচিত, এ সম্পর্কে অবহিত থাকে, তাহলে তাদের সমাজে পানাহারের ওপর বিধি-নিষেধের যে মনগড়া নিয়ম রীতি প্রচলিত রয়েছে, অমুক জিনিসটি অমুক ব্যক্তি খেতে পারবে না এবং অমুক জিনিসটি অমুক ব্যক্তি স্পর্শ করতে পারবে না, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যে আল্লাহ কর্তৃক আরোপিত হয়েছে, সেরূপ সাক্ষ্য দেবার সাহসই কখনো তারা করবে না। কিন্তু যদি তারা সাক্ষ্য দানের দায়িত্ব অনুধাবন না করেই আল্লাহর নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার মতো নির্লজ্জতার পরিচয় দিতে ইতস্তত না করে, তাহলে তাদের এ মিথ্যাচারে তুমি তাদের সহযোগী হয়ো না। কারণ তাদের কাছ থেকে এ সাক্ষ্য এজন্য চাওয়া হচ্ছে না যে, তারা যদি এ সাক্ষ্য দিয়ে দেয় তাহলে তুমি তাদের কথা মেনে নেবে। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের মধ্য থেকে যাদের মধ্যে কিছু মাত্র সত্যনিষ্ঠা আছে তাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করা হবে, সত্যই কি এ নিয়ম-কানুন ও বিধি-নিষেধগুলো আল্লাহ নির্ধারিত কিনা এবং তোমরা কি যথার্থ ঈমানদারীর সাথে এর সত্যতার সাক্ষ্য দিতে পারো? তখন তারা নিজেদের এ নিয়ম-রীতিগুলোর স্বরূপ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবে এবং যখন এগুলোর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হবার কোন প্রমাণই পাবে না তখন তারা এ অর্থহীন রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুনগুলোর আনুগত্য পরিহার করবে।

Leave a Reply