أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٨٢)-৪৮৪
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৫৪-১৫৭ নং আয়াত:-
فَقَدْ جَاءكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ
এখন তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট দলীল এবং পথ নির্দেশ ও রাহমাত সমাগত হয়েছে।
So now has come unto you a clear proof from your Lord, and a guidance and a mercy.
ثُمَّ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ تَمَامًا عَلَی الَّذِیۡۤ اَحۡسَنَ وَ تَفۡصِیۡلًا لِّکُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً لَّعَلَّہُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّہِمۡ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾٪
অতঃপর মূসাকে আমি এমন কিতাব প্রদান করেছিলাম, যা ছিল সৎ কর্মপরায়ণদের জন্য পূর্ণাঙ্গ কিতাব। আর তাতে ছিল প্রত্যেকটি বস্তুর বিশদ বিবরণ, পথ নির্দেশ সম্বলিত আল্লাহর রাহমাতের প্রতীক স্বরূপ, যাতে তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া সম্বন্ধে পূর্ণ বিশ্বাস লাভ করতে পারে।
وَ ہٰذَا کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ مُبٰرَکٌ فَاتَّبِعُوۡہُ وَ اتَّقُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ
আর আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা বারাকাতময় ও কল্যাণময়। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ কর এবং এর বিরোধিতা হতে বেঁচে থাক, হয়ত তোমাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হবে।
اَنۡ تَقُوۡلُوۡۤا اِنَّمَاۤ اُنۡزِلَ الۡکِتٰبُ عَلٰی طَآئِفَتَیۡنِ مِنۡ قَبۡلِنَا ۪ وَ اِنۡ کُنَّا عَنۡ دِرَاسَتِہِمۡ لَغٰفِلِیۡنَ ﴿۱۵۶﴾ۙ
যেন তোমরা না বলতে পার : ঐ কিতাবতো আমাদের পূর্ববর্তী দুই সম্প্রদায়ের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল এবং আমরা তাদের পঠন পাঠনে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলাম।
اَوۡ تَقُوۡلُوۡا لَوۡ اَنَّاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا الۡکِتٰبُ لَکُنَّاۤ اَہۡدٰی مِنۡہُمۡ ۚ فَقَدۡ جَآءَکُمۡ بَیِّنَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ ۚ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ کَذَّبَ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ وَ صَدَفَ عَنۡہَا ؕ سَنَجۡزِی الَّذِیۡنَ یَصۡدِفُوۡنَ عَنۡ اٰیٰتِنَا سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ بِمَا کَانُوۡا یَصۡدِفُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾
অথবা তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পার, আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করা হলে আমরা তাদের তুলনায় বেশি হিদায়াত লাভ করতাম। এখন তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট দলীল এবং পথ নির্দেশ ও রাহমাত সমাগত হয়েছে। এরপর আল্লাহর আয়াতকে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তা থেকে এড়িয়ে চলবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? যারা আমার আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলে, অতি সত্ত্বর তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দিব, জঘণ্য শাস্তি-তাদের এড়িয়ে চলার জন্য!
১৫৪-১৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
মূসা (আঃ)-এর নবুওয়াত ও তাঁর ওপর অবতীর্ণ কিতাব তাওরাতের স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তা অবতীর্ণ করেছিলাম, সৎ কর্মপরায়ণদের জন্য পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ যাতে ছিল সবকিছুর বিশদ বিবরণ। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ قَبْلِه۪ كِتٰبُ مُوْسٰٓي إِمَامًا وَّرَحْمَةً ط وَهٰذَا كِتٰبٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا)
“আর এর আগে মূসার কিতাব অনুসরণীয় ও রহমত হিসেবে এসেছিল। আর এ কিতাব (কুরআন) আরবি ভাষায় তার সত্যতা প্রমাণকারী।”(সূরা আহকাফ ৪৬:১২)
আর এ কুরআন যা অবতীর্ণ করেছেন নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর তা বরকতে পরিপূর্ণ; তাই সকলের জন্য তার অনুসরণ করা আবশ্যক করে দিয়েছেন।
এ কুরআন কী জন্য নাযিল করেছেন তার কারণ এখানে বর্ণনা করে দিয়েছেন, তা হল: মানুষ দু’টি অভিযোগ করতে পারে-
১. আমাদের পূর্বের দু’টি দল তথা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের ওপর কিতাব নাযিল করা হয়েছে। আমরা তাদের কিতাব পড়তে পারতাম না। তাই আমাদের ওপর কেন কিতাব নাযিল করা হল না?
২. অথবা আমাদের কাছে কিতাব নাযিল করা হলে আমরা তাদের তুলনায় বেশি সঠিক পথ প্রাপ্ত হতাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَقْسَمُوْا بِاللّٰهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِنْ جَا۬ءَهُمْ نَذِيْرٌ لَّيَكُوْنُنَّ أَهْدٰي مِنْ إِحْدَي الْأُمَمِ)
“আর তারা আল্লাহর নামে দৃঢ় শপথ করে বলত যে, যদি তাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসে তবে তারা অন্য যে কোন সম্প্রদায় অপেক্ষা অধিকতর হিদায়াত গ্রহণকারী হবে।”(সূরা ফাতির ৩৫:৪২)
যাতে এ দু’টি অভিযোগ না করতে পারে সে জন্য এ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এর পরেও যারা পথহারা হবে, আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার আয়াত অস্বীকারকারী এবং যারা মুখ ফিরিয়ে রাখে তারা সবচেয়ে বড় জালিম।
২. কুরআনুল কারীম সর্বশেষ আসমানী ও বরকতময় কিতাব, জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা একান্ত কর্তব্য।
৩. মুনাফিক ও কাফিরদের হঠকারিতা জানতে পেলাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 154-157
فَقَدْ جَاءكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ
So now has come unto you a clear proof from your Lord, and a guidance and a mercy.
Praising the Tawrah and the Qur’an
Allah says;
ثُمَّ اتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ
Then, We gave Musa the Book (the Tawrah),
After Allah described the Qur’an by saying,
وَأَنَّ هَـذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ
(And verily, this is My straight path, so follow it…), He then praised the Tawrah and its Messenger,
ثُمَّ اتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ
(Then, We gave Musa the Book…). Allah often mentions the Qur’an and the Tawrah together.
Allah said,
وَمِن قَبْلِهِ كِتَـبُ مُوسَى إِمَاماً وَرَحْمَةً وَهَـذَا كِتَـبٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَاناً عَرَبِيّاً
And before this was the Scripture of Musa as a guide and a mercy. And this is a confirming Book in the Arabic language. (46:12)
Allah said in the this Surah,
قُلْ مَنْ أَنزَلَ الْكِتَـبَ الَّذِى جَأءَ بِهِ مُوسَى نُوراً وَهُدًى لِّلنَّاسِ تَجْعَلُونَهُ قَرَطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيراً
Say:”Who then sent down the Book which Musa brought, a light and a guidance to mankind which you have made into paper sheets, disclosing (some of it) and concealing (much).” (6:91)
and
وَهَـذَا كِتَـبٌ أَنزَلْنَـهُ مُبَارَكٌ
And this is a blessed Book which we have sent down… (6:92)
Allah said about the idolators,
فَلَمَّا جَأءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُواْ لَوْلا أُوتِىَ مِثْلَ مَأ أُوتِىَ مُوسَى
But when the truth has come to them from Us, they say:”Why is he not given the like of what was given to Musa!” (28:48)
Allah replied,
أَوَلَمْ يَكْفُرُواْ بِمَأ أُوتِىَ مُوسَى مِن قَبْلُ قَالُواْ سِحْرَانِ تَظَـهَرَا وَقَالُواْ إِنَّا بِكُلٍّ كَـفِرُونَ
“Did they not disbelieve in that which was given to Musa of old!” They say:”Two kinds of magic (the Tawrah and the Qur’an), each helping the other!” And they say:”Verily, in both we are disbelievers.” (28:48)
Allah said about the Jinns that they said,
يقَوْمَنَأ إِنَّا سَمِعْنَا كِتَـباً أُنزِلَ مِن بَعْدِ مُوسَى مُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِى إِلَى الْحَقِّ
“O our people! Verily, we have heard a Book sent down after Musa, confirming what came before it, it guides to the truth.” (46:30)
Allah’s statement,
تَمَامًا عَلَى الَّذِيَ أَحْسَنَ وَتَفْصِيلً
complete for that which is best, and explaining all things in detail…”
means; `We made the Book that We revealed to Musa, a complete and comprehensive Book, sufficient for what he needs to complete his Law.’
Similarly, Allah said in another Ayah,
وَكَتَبْنَا لَهُ فِى الاٌّلْوَاحِ مِن كُلِّ شَىْءٍ
And We wrote for him on the Tablets the lesson to be drawn from all things. (7:145)
Allah’s statement,
عَلَى الَّذِيَ أَحْسَنَ
(for that which is best), means:
`as a reward for his doing right and obeying Our commands and orders.’
Allah said in other Ayat,
هَلْ جَزَاءُ الاِحْسَـنِ إِلاَّ الاِحْسَـنُ
Is there any reward for good other than what is best! (55:60)
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَـتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّى جَـعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا
And (remember) when the Lord of Ibrahim tried him with (certain) commands, which he fulfilled. He (Allah) said (to him), “Verily, I am going to make you an Imam for mankind.” (2:124)
and,
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَيِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُواْ وَكَانُواْ بِـَايَـتِنَا يُوقِنُونَ
And We made from among them (Children of Israel), leaders, giving guidance under Our command, when they were patient and believed with certainty in Our Ayat. (32:24)
Allah said;
وَتَفْصِيلً
لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً
and explaining all things in detail and a guidance and a mercy,
praising the Book that Allah sent down to Musa, while,
لَّعَلَّهُم بِلِقَاء رَبِّهِمْ يُوْمِنُونَ
وَهَـذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
that they might believe in the meeting with their Lord. And this is a blessed Book (the Qur’an) which We have sent down, so follow it and have Taqwa so that you may receive mercy.
This calls to following the Qur’an. Allah encourages His servants to follow His Book (the Qur’an) and orders them to understand it, adhere to it and call to it. He also describes it as being blessed, for those who follow and implement it in this life and the Hereafter, because it is the Firm Rope of Allah.
The Qur’an is Allah’s Proof Against His Creation
Allah says;
أَن تَقُولُواْ إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَى طَأيِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا
Lest you should say:”The Book was sent down only to two sects before us,
Ibn Jarir commented on the Ayah,
“The Ayah means, this is a Book that We sent down, so that you do not say,
إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَى طَأيِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا
(“The Book was sent down only to two sects before us).” This way, you will have no excuse.
Allah said in another Ayah,
وَلَوْلا أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُواْ رَبَّنَا لَوْلا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولاً فَنَتِّبِعَ ءايَـتِكَ
Otherwise, they would have suffered a calamity because of what their hands sent forth, and said:”Our Lord! Why did You not send us a Messenger We would then have followed Your Ayat.”” (28:47)
The Ayah,
عَلَى طَأيِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا
(to two sects before us),
According to Ali bin Abi Talhah who narrated it from Ibn Abbas,
refers to the Jews and Christians,
Similar was reported from Mujahid, As-Suddi, Qatadah and several others.
Allah’s statement,
وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ
“…and for our part, we were in fact unaware of what they studied.”
meaning:`we did not understand what they said because the revelation was not in our tongue. We, indeed, were busy and unaware of their message,’ so they said.
Allah said next
أَوْ تَقُولُواْ لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَى مِنْهُمْ
Or lest you should say:”If only the Book had been sent down to us, we would surely, have been better guided than they.”
meaning:We also refuted this excuse, had you used it, lest you say, “If a Book was revealed to us, just as they received a Book, we would have been better guided than they are.”
Allah also said.
وَأَقْسَمُواْ بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَـنِهِمْ لَيِن جَأءَهُمْ نَذِيرٌ لَّيَكُونُنَّ أَهْدَى مِنْ إِحْدَى الاٍّمَمِ
And they swore by Allah their most binding oath that if a warner came to them, they would be more guided than any of the nations (before them). (35:42)
Allah replied here,
فَقَدْ جَاءكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ
So now has come unto you a clear proof from your Lord, and a guidance and a mercy.
Allah says, there has come to you from Allah a Glorious Qur’an revealed to Muhammad, the Arab Prophet. In it is the explanation of the lawful and unlawful matters, guidance for the hearts and mercy from Allah to His servants who follow and implement it.
Allah said;
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَذَّبَ بِأيَاتِ اللّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا
Who then does more wrong than one who rejects the Ayat of Allah and Sadafa away therefrom,
This refers to the one who neither benefited from what the Messenger brought, nor followed what he was sent with by abandoning all other ways. Rather, he Sadafa from following the Ayat of Allah, meaning, he discouraged and hindered people from following it.
This is the explanation of As-Suddi for Sadafa, while Ibn Abbas, Mujahid and Qatadah said that Sadafa means, he turned away from it.
سَنَجْزِي الَّذِينَ يَصْدِفُونَ عَنْ ايَاتِنَا سُوءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُواْ يَصْدِفُونَ
We shall requite those who turn away from Our Ayat with an evil torment, because of their turning away.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৫৪-১৫৫ নং আয়াতের তাফসীর:
(আরবী) এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমার সম্পর্কে আবার বলে দাও, আমি মূসা (আঃ)-কে কিতাব দিয়েছিলাম। এটা (আরবী) -এই উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু এটা চিন্তা ভাবনার বিষয় বটে (আরবী) শব্দটি এখানে শুধুমাত্র একটি (আরবী) -এর পর আর একটি (আরবী) –এর (আরবী) বা সংযোগের জন্যে এসেছে। (আরবী) বুঝাবার জন্যে নয়। (আরবী) শব্দটি সাধারণতঃ বুঝাবার জন্যেই এসে থাকে)
এখানে আল্লাহ তা’আলা যখন স্বীয় উক্তি (আরবী) -এর মাধ্যমে কুরআন সম্পর্কে খবর দিলেন, তখন তিনি (আরবী) -এর প্রশংসায় দ্বারা (আরবী) করে বললেনঃ এখন আমি তোমাকে এ সংবাদও দিচ্ছি যে, আমি মূসা (আঃ)-কেও কিতাব দিয়েছিলাম। অধিকাংশ স্থানে আল্লাহ পাক মিলিতভাবে কুরআন ও তাওরাতের বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “এর পূর্বে মূসা (আঃ)-এর কিতাব ইমাম ও রহমত স্বরূপ ছিল, আর এই কিতাব (কুরআন) আরবী ভাষায় এর সত্যতা প্রতিপাদন করছে।” এই সূরার প্রথম দিকে তিনি বলেছেনঃ “হে নবী (সঃ) তুমি জিজ্ঞেস কর-যে কিতাব আমি মূসা (আঃ)-কে দিয়েছিলাম, যেটাকে আমি লোকদের জন্যে নূর ও হিদায়াত করে পেশ করেছিলাম সেটা কে অবতীর্ণ করেছিলেন ? যেটাকে তোমরা কাগজে লিখছো, যার মধ্য থেকে তোমরা কিছু গোপন করছে এবং কিছু ঠিক প্রকাশ করছো?”
এর পরেই তিনি বলেনঃ “এই কুরআনকে আমি কল্যাণময় রূপে পেশ করেছি।” এখন মুশরিকদের ব্যাপারে বলছেনঃ “যখন আমার পক্ষ থেকে সত্য অর্থাৎ কুরআন তাদের কাছে পেশ করা হলো তখন তারা বলতে লাগলো -যেরূপ কিতাব মূসা (আঃ)-কে দেয়া হয়েছিল সেরূপ কিতাব আমাদেরকে কেন দেয়া হয়নি?” তাই আল্লাহ তা’আলা এখন বলছেনঃ “মূসা (আঃ)-এর কিতাবের সাথে কি কুফরী করা হয়নি এবং এ কথা কি বলা হয়নি যে, এ দু’জন (মূসা আঃ ও হারূন আঃ) তো যাদুকর, আমরা তো তাদেরকে মানবো না?” এরপর মহান আল্লাহ জ্বিনদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন, তারা তাদের কওমকে বলেছিলঃ “হে আমাদের কওম! আমরা একটা কিতাব শুনেছি যা মূসা (আঃ)-এর পরে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাওরাতের বিষয়বস্তুর সত্যতা প্রতিপাদন করছে; আর হকের পথ প্রদর্শন করছে।” অতঃপর কুরআন সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ “এতে সমস্ত কথা সুন্দর ও বিস্তারিতভাবে লিখিত আছে এবং শরীয়তের সব কিছুরই উল্লেখ আছে। যেমন তিনি বলেছেনঃ “তাওরাতে আমি সমস্ত কথা বর্ণনা করে দিয়েছিলাম।” অনুরূপভাবে কুরআনকে (আরবী) বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন ইবরাহীম (আঃ)-কে তার প্রভু কতগুলো কথা দ্বারা পরীক্ষা করলেন তখন তিনি তা পূর্ণ করলেন, আল্লাহ বললেন-আমি তোমাকে লোকদের ইমাম নিযুক্তকারী।” (২:১২৪) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদের মধ্যে বহু ধর্মীয় নেতা করেছিলাম-যারা আমার নির্দেশক্রমে হিদায়াত করতো, যখন তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল, আর তারা আমার আয়াতসমূহকে বিশ্বাস করতো।”
(আরবী) অর্থাৎ আমি মূসা (আঃ)কে এমন কিতাব দিয়েছিলাম যা দানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দান ছিল, যা দুনিয়াতেও উত্তম এবং পরকালেও কামিল বা পূর্ণ। ইবনে জারীর (রঃ) এর অন্তর্নিহিত ভাষা (আরবী) বলেছেন। তিনি যেন (আরবী) -কে (আরবী) ধরেছেন। অর্থাৎ ঐ কিতাবটি কামিল বা পূর্ণ ছিল বা উত্তম হওয়ার দিক দিয়ে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) এখন এখানে (আরবী) এর (আরবী) হয়ে গেল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এখানে (আরবী) শব্দটি (আরবী) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) (আরবী) এরূপ কিরআত করতেন। মুজাহিদ (রঃ) (আরবী) দ্বারা (আরবী) ও (আরবী) উদ্দেশ্য গ্রহণ করতেন। বাগাভী (রঃ) (আরবী) এবং (আরবী) উদ্দেশ্য নিতেন। অর্থাৎ আমি মুমিন ও মুহসিনদের উপর তাওরাতের ফযীলত প্রকাশ করে দিয়েছিলাম। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মূসা (আঃ)! আমি তোমাকে স্বীয় রিসালাত ও কালামের মাধ্যমে সমস্ত লোকের উপর মনোনীত করেছি।” (৭:১৪৪) আল্লাহ তা’আলার এ উক্তি দ্বারা এটা অবশ্যম্ভাবী হচ্ছে না যে, হযরত মূসার এই ফযীলত হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এবং হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ)-এর উপরও রয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার (রঃ) (আরবী) -কে (আরবী) -এর পরিবর্তে (আরবী) দিয়ে আহসানু পড়তেন এবং বলতেন যে, এটা (আরবী) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং (আরবী) কে (আরবী) দিয়ে পড়াই যুক্তিযুক্ত। আবার কেউ এ কথাও বলেন যে, আরবী ভাষা হিসেবে এটা একটা বিশুদ্ধ রূপ হলেও এভাবে দিয়ে পড়া উচিত নয়। কেউ কেউ একথাও বলেছেন যে, এটা (আরবী)-এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইরশাদ হচ্ছে-এতে প্রত্যেকটি বস্তুর বিশদ বিবরণ রয়েছে। আর একটা হচ্ছে হিদায়াত ও রহমত । আশা যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া সম্বন্ধে পূর্ণ বিশ্বাস লাভ করবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি তা হচ্ছে বরকতময় ও কল্যাণময়, সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করে চল এবং আল্লাহকে ভয় কর। তাহলে তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। এতে কুরআনের অনুসরণ করার প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দাদেরকে স্বীয় কিতাবের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এতে চিন্তা ও গবেষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
১৫৬-১৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:
ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে, আমি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছি এই কারণে যে, যেন তোমরা বলতে না পার আমাদের পূর্বে তো ইয়াহূদী ও নাসারাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছিল এবং আমাদের উপর অবতীর্ণ করা হয়নি। তাদের ওযর আপত্তি শেষ করে দেয়ার জন্যেই এ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যদি ব্যাপার এটা না হতো যে, তাদের প্রতি আপতিত বিপদ তাদেরই কর্মের ফল তবে তারা বলতো-হে আমাদের প্রভু! যদি আপনি কোন রাসূল আমাদের কাছে পাঠাতেন তবে আমরাও আপনার নির্দেশ পালন করতাম।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) বা। দু’টি দল হচ্ছে ইয়াহুদী ও নাসারা। (এটা হচ্ছে মুজাহিদ (রঃ), সুদ্দী (রঃ), কাতাদা (রঃ) প্রমুখ পূর্ববতী গুরুজনেরও উক্তি)
(আরবী) অর্থাৎ আমরা এই ইয়াহুদী ও নাসারাদের ভাষা তো বুঝি না, কাজেই আমরা গাফেল ছিলাম এবং তাদের মত সঠিক আমল করতে পারিনি। আর তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পার-যদি আমাদের উপরও আমাদের ভাষায় কোন আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হতো তবে আমরা এই ইয়াহদী ও নাসারাদের চেয়ে বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত হতাম। তাই আমি তাদের এই ওযর আপত্তি খতম করে দিলাম। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “তারা শপথ করে করে বলে যে, যদি তাদের কাছে কোন রাসূল আসতেন তবে তারা সবচেয়ে বেশী ভাল আমল করতো এবং হিদায়াত প্রাপ্ত হতো। তাই তিনি বলেনঃ “এখন তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে হিদায়াত ও রহমতযুক্ত কিতাব এসে গেছে।” এই কুরআনে আযীম তোমাদের ভাষাতেই অবতারিত, এতে হালাল ও হারাম সবকিছুরই বর্ণনা রয়েছে। এটা ঐ লোকদের জন্যে রহমত, যারা এর অনুসরণ করে এবং সদা আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকে।
(আরবী) সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং তার থেকে এড়িয়ে চলে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? সে নিজেও তো কুরআন থেকে উপকার লাভ করলো না বা আহকাম মেনে চললই না, এমন কি অন্যান্য লোকদেরকেও আল্লাহর আয়াতের অনুসরণ থেকে ফিরিয়ে দিলো এবং হিদায়াতের পথ প্রাপ্তি থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করলো। যেমন সূরার শুরুতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “তারা নিজেরাও ঈমান আনয়ন থেকে বিরত থাকছে এবং অন্যদেরকেও বিরত রাখছে। তারা নিজেদের জীবনকে নিজেদের হাতেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
ইরশাদ হচ্ছে-যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথ থেকে অন্যান্য লোকদেরকেও বাধা প্রদান করে তাদের দ্বিগুণ শাস্তি হবে। আর এই আয়াতে। কারীমায় বলেনঃ “আমি ঐ লোকদেরকে ভীষণ শাস্তি প্রদান করবো যারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করে। যেমন তিনি বলেছেনঃ “সে বিশ্বাসও করেনি, নামাযও পড়েনি বরং মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
মোটকথা, বহু আয়াত এটা প্রমাণ করে যে, এই কাফিররা অন্তরে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও অবিশ্বাস করে এবং বাহ্যিকও ভাল কাজ করে না।